Modern Story Archive | Best Shabdodweep Bangla Galpa

Sharing Is Caring:

অ-স্বয়ংবরা – লিপিকর (অমিতাভ ঘোষ)

।।১।।

শুক্রবার সন্ধ্যায় কর্মস্থল হইতে বাসস্থানে ফিরিয়া উষসী দ্বারের চাবি খুলিয়া কবাট উন্মোচন করিল। অন্ধকার কক্ষে প্রবেশ করিয়া ল্যাপটপের ব্যাগটি প্রথমে মেঝেতে রাখিল, তাহার পর তুলিয়া হস্তে লইল, তাহার পর পুনরায় মেঝেতে নামাইল। অত:পর নিজ দৈনন্দিন বহির্গমনের সঙ্গী বটুয়াটি খুলিয়া একটি লেফাফা নিষ্কাশন করিল। এ-হাত ও-হাত করিয়া লেফাফাটি লইয়া সে কক্ষের মধ্যে কিছুক্ষণ ঘুরিল। তাহার পরে কিংকর্তব্য স্থির করিবার অপারগতায় পার্শ্বস্থ শয্যামাঝে ঝাঁপাইয়া পড়িয়া নিজেকে বালিশের পেলবতায় নিমজ্জিত করিল। লেফাফা হইতে এরপরে উষসী সেই পত্রখানি ফের বাহির করিল, যাহা সে আজিকার দ্বিপ্রহর হইতে বহুবার পাঠ করিয়াছে।

যে সকল তত-সরলমতি-নহেন পাঠক একটি অনূঢ়া কন্যার একাকিনী সময়ে তাহার কক্ষে উদগ্রীব চক্ষু সঞ্চালন করিতেছেন, তাঁহারা অবগত হউন, ঐ পত্রের প্রেরক যে সুদর্শন প্রৌঢ়টি, তিনি উষসীর জনক। উষসীর পিতা পত্রের সহিত কিছু চিত্র-ও প্রেরণ করিয়াছেন, উষসী সেগুলি উনশততম বার নিরীক্ষণ করিল, এই প্রথম সংগোপনে, সময় লইয়া, অপর কাহারো দ্বারা নিরীক্ষণ-সময়ে-আবিষ্কৃত-হইবার-ভয় ব্যতিরেকে। অত:পর সে নিজ স্মার্টফোনটি হাতে লইয়া বোতাম টিপিয়া সচল করিল। এই সপ্তাহান্তটি তাহার ব্যস্ত কাটিবে।

।।২।।

— ”হ্যালো।”
— ”হ্যালো। আমার নাম উষসী । আমি একটু তন্ময় চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলতে চাই।”
— ”স্পি-ই-কিং। মোয়া এস ময়।”

বিজাতীয় উচ্চারণে সামান্য চমকিত হইলেও উষসী প্রথম চিত্রটিতে আরেকবার অক্ষিপাত করিয়া কহিল।

— ”আসলে আপনার ফ্যামিলির পক্ষ থেকে আমার বাবার দেওয়া ম্যাট্রিমোনিয়াল পোস্টের উত্তরে যোগাযোগ করা হয়েছিলো। তারপর দু-বাড়িতে ফোনে কথা হওয়ার পর আমাকে আপনার নাম্বার দেওয়া হয়েছে। আমরা কি এই উইকেন্ডে কোনো কফিশপে দেখা করতে পারি?”
— ”জাআআনি হানি। আব তেরি লাইফ বন জায়েগি। লেটস গো টু বিয়ার্স ফর চিয়ার্স পাব টুমরো নাইট। তেরে কো পতা হ্যায় না ও ক্যায়সে জানা হতা হ্যায়?”

সম্ভাষণ ও ভাষা উষসীর সামান্য হইলেও বিরক্তির উদ্রেক ঘটাইয়াছিল, সে কহিল:

— ”না: প্রথমদিন কোনো কফিশপেই যাওয়া যাক।”
— ”আই য়ুড টেক কেয়ার অফ ইয়োর কাভার চার্জেস। ডোন্ট ওরি এবৌট মানি, হানি।”
–”না, কাল রাতে আমি একটু ব্যস্ত আছি… আর প্রথম মিটটা তো আপনাকে বললাম-ই আমি কোনো ক্যাফেতেই করতে পছন্দ করব।”
— ”আ’ য়্যু ডেটিং সামবডি এল্স ?”
— ”না। এসব প্রশ্ন উঠছে কেন?” উষসী বিরক্তি গোপন রাখিবার কোনো চেষ্টা করিল না।
–”নো। আই নো আ লট অফ গার্ল্স হু ডেট ডুবে ডুবে য়্যান্ড দেয়ার ড্যাডস নো নাথিং য়্যাবা’ট ইট ।”
— ”আমার কেস-টা মোটেই সেরকম নয়।” উষসীর উত্তরে প্রথম শব্দে জোর পড়িল।
— ”হাউ বোরিং। লিস্ন বেব। আই ডোন্ট হ্যাভ উৎনা টাইম কে উই স্টার্ট ওভার কফি, স্পেন্ড অন টফি য়্যান্ড ব্রেড, বিফোর উই মুভ টু বেড। মাই অফার আভি ভি স্ট্যান্ডস। গেট্ রেডি, হিলা কে রাখ দুঙ্গা তেরে কো । সো টুমরো নাইট, দেন ?”
— ”সম্ভব নয়।” বলিয়া উষসী যোগাযোগটি ছিন্ন করিল।

পত্রে আরেকটি দূরভাষ সংখ্যা দেখিয়া উষসী নিজের যন্ত্রে টিপিল।

— ”হ্যালো।”
— ”হ্যালো। আমার নাম উষসী। আমি কি অভিজিৎ বোসের সঙ্গে কথা বলতে পারি?”
— ”হ্যাঁ, হ্যাঁ, বলো। বসে আছি পথ চেয়ে কখন তোমার আসবে টেলিফোন!”

উষসী চমকিত হইল।

— ”তার মানে?”
— “জানি তো তুমি কল করবে। মা’র কাছে শুনেছি তো।”
— “ও:” উষসী ক্ষণেক চুপ করিল। “আপনার সঙ্গে এই উইকেন্ডে কোথাও দেখা করা যায়?” বলিয়াই সে ঈষৎ ত্রস্তে যোগ করিল “কোনো কফিশপে?”
–”কাল? শপার্স প্যারাডাইস? সন্ধে ছটা?”

পলকের নিমিত্ত উষসী চমকাইল ‘এ কি টেলিপ্যাথি জানে নাকি রে বাবা’! সামলাইয়া কহিল

— “কাল একটু ব্যস্ত আছি। সারা সপ্তাহের বাজার-টাজার করতে হবে তো। পরশু দেখা করবেন?”
— “ওখানেই করে নেবে। একার রান্না করতে আর কত সব্জী লাগে?”
— “না, না, কথাবার্তার বিষয়ে আমি খুব সিরিয়াস, সঙ্গে অন্য কিছু রাখতে চাই না।”
— “ওক্কে। পরশু তাহলে। এক কাজ কোরো, কালকের বাজার থেকে পরশু রান্না করে নিয়ে এসো। তোমার কালিনারি স্কিলের পরীক্ষাও হয়ে যাবে।”

উষসী টেলিফোন কাটিতে উদ্যত হইয়াছিল, শেষ পংক্তিটি খট করিয়া কর্ণে বাজিল। সে হাস্যমুখর কন্ঠে বলিল

— “আমি স্যার একটুও রান্না করতে পারি না”
— “শিখে ফেলো, শিখে ফেলো। বিয়ের পরে তো ওটাই করতে হবে। তখন কিন্তু এসব বাজার-দোকান, চাকরি-বাকরি করা চলবে না।”

উষসীর কন্ঠ সামান্য গম্ভীর হইল

— “আমার বাড়ী থেকে বলেনি যে আমি বিয়ের পরেও চাকরি করতে চাই?”
— “তোমার কোনো অভাব-অভিযোগ থাকবে না।”
— “শুধুমাত্র অভাবের জন্যই মেয়েরা চাকরি করে না।”
— “আমাদের ফ্যামিলির হিস্ট্রি জানো? আমার দাদুর বাবা মিলিটারিতে ডাক্তার ছিলেন, দাদু বিলেতফেরৎ ব্যারিস্টার, ঠাকুর্দা আই-এফ-এস, আমাদের ফ্যামিলিতে বৌরা কক্ষণো ব্যাগ কাঁধে পয়সা রোজগারে বেরোয় নি, তুমিও বিয়ে হলেই পাতা ফেলে দেবে বুঝেছো!”

উষসী লক্ষ্য করিল, পূর্ববর্তী যুবকটির ন্যায় বর্তমানটিও প্রথম কথোপকথন থেকেই তাহাকে আদেশদানের আসন লইতে চেষ্টা করিতেছে। নিয়মিত বিক্রয়ালাপ করিয়া উষসী নিজ ক্রোধ ও অপমানবোধকে কন্ঠে অপ্রকাশিত রাখিবার দক্ষতা কিয়দংশে অর্জন করিয়াছে। সে নিজ বক্তব্য কম্বুকন্ঠে পুন:প্রকাশ করিল

— “আমি চাকরি ছাড়তে পারবো না।”
— “তাহলে আমাদের ফ্যামিলিতে বৌ হয়ে আসার আশা তোমাকে ছাড়তে হবে।”
— “বেশ তো! সেক্ষেত্রে, অভিজিত, আমাদের রোববার দেখা করার কোনো কারণ দেখছি না।”

অপরপক্ষ কি সামান্য বিচলিত হইলো?

— “না, না, রবিবারে মিট তো করা যাক। মা বলে দিয়েছে মিট করতে। মা বলেছে, ছবি দেখে বাড়ীর সকলের তোমাকে খুব পছন্দ হয়েছে।”
— “আমি কি বিয়ের পরে চাকরি করতে পারবো?”
— “পরশু দেখা তো করা যাক। তারপর তোমাকে বোঝানো যাবে খন।”
— “বোঝানোর কিছু তো নেই। এত্তো ফান্ডামেন্টাল ইনকমপ্যাটিবিলিটি যেখানে, সেখানে কোনো লং-টার্ম সম্পর্কের কথা ভাবা সম্ভব নয়।”

দূরভাষের অপর প্রান্তে পুনর্বার উত্তেজনা সঞ্চারিত হইল

— “ভেবে দ্যাখো তুমি কতকিছু মিস করবে! ফ্যামিলি, এরকম বর আর পাবে?”

উষসীর ধৈর্য বাঁধ ভাঙ্গিতে ছিল|

— “আমার ভাবা হয়ে গ্যাছে অভিজিত! এটাই আমাদের মধ্যে লাস্ট কনভার্সেশন।”
— “দাঁড়াও, দাঁড়াও …।”

উষসী ততক্ষণে দূরভাষ যন্ত্রে বোতাম টিপিয়া সংযোগ ছেদন করিয়াছে।

।।৩।।

তৃতীয়জনকে দূরভাষে ধরিবার পূর্বে উষসী একবার ভাবিল তাহার মাতৃদেবীর উপর ঈষৎ রাগ প্রকাশ করিয়া লয় কেন তিনি উষসীর বিবাহ-পরবর্তী-পেশাজীবন প্রত্যাশা লইয়া হবু পাত্রপক্ষের সহিত পরিষ্কার করিয়া বার্তালাপ করেন নাই। দূরভাষ যন্ত্রের উপর বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠটি তাহার বার দুই ছটফট করিয়া যাইবার পরে সে তাহার মতের পরিবর্তন করিল – আরো দুইটি মক্কেলের কথা শুনিয়া লইয়া সব শেষে জনক জননীর সহিত পর্যালোচনা করাই তাহার শ্রেয়তর বোধ হইল।

— “হ্যালো! আমি উষসী সেন বলছি। আপনার ফ্যামিলির পক্ষ থেকে আমার বাবার দেওয়া ম্যাট্রিমনিয়াল অ্যাডের উত্তরে যোগাযোগ করা হয়েছিল।”
— “শুনেছি। নমস্কার, আমার নাম রাধাপদ, রাধাপদ গোস্বামী।”

কন্ঠস্বর স্বাভাবিক, তাহাকে প্রথম বাক্যেই মুগ্ধ করিবার কোনো সচেতন প্রয়াস নাই দেখিয়া উষসী ঈষৎ স্বস্তি অনুভব করিল। সে সরাসরি কাজের কথায় আসিল –

— “দেখুন ব্যাপারটা নিয়ে এগোতে গেলে আমাদের দুজনের সামনাসামনি আলাপ ও কথাবার্তা হওয়া দরকার। আমরা কি এই উইকেন্ডে কোনো কফিশপে দেখা করতে পারি?”
— “আপনি কোথায় থাকেন?”

গোস্বামীর বিনয়ে উষসী চমৎকৃত হইল। বাব্বা, এক্কেবারে আপনি! তাহার পরে তাহার মনে হইল, ইহাই তো স্বাভাবিক, অপরিচিত মানুষের প্রাপ্য সৌজন্যমাত্র। সে আর রাধাপদকে তুমিতে নামিতে প্ররোচিত করিল না। তাহার ভালো লাগিল, তবে প্রথম আলাপেই ব্যক্তিগত তথ্যপ্রকাশ তাহার পছন্দ নহে। তাহার উত্তরটিকে সে একটু অরৈখিক রাখিয়া দিল।

— ”এই ধরুন শহরের দক্ষিণ দিকে। কেন বলুন তো?”
— ”না, আপনার বাড়ির কাছাকাছি কোথাও দেখা করা যায় কিনা ভাবছিলাম।”
— ”শপার্স প্যারাডাইস কমপ্লেক্স-টা চেনেন?”
— ”হ্যাঁ, হ্যাঁ। আমাদের অফিস তো ওর পাশেই। কাস্টমার ডিলাইট। আপনি ওখানেই থাকেন নাকি?”

উষসী কথার শেষের প্রশ্নটিকে উপেক্ষা করিল।

— “বা:, তাহলে তো ভালোই , এ সপ্তাহে একটু কষ্ট করে রোববার দিনটাও অফিস পাড়ায় চলে আসুন। সন্ধ্যেবেলা এই ধরুন ছটা নাগাদ? অসুবিধে হবে?”
— ”সপ্তাহে ছদিন তো যেতেই হয়, একটা দিন দুদিক মিলিয়ে পঞ্চান্ন কিলোমিটার না যেতে পারলেই ভালো হয় আর কী। অন্য কোনোদিন হয় না?”
— ”অন্যদিন তো আমার কাজ শেষ করে বেরোতে বেরোতেই আটটা, কখনো কখনো সাড়ে আটটা বাজে।এই উইকেন্ডে আপনার একদমই সময় হবে না?”

এইবারে তাহাকে অন্যপক্ষ অত্যন্ত বিবাহব্যাকুল ভাবিবে এরূপ একটি শঙ্কার মেঘ উষসীর ভাবনার দিগন্ত দিয়া ভাসিয়া গেল।

— ”বিকেল-সন্ধে-গুলো কাল পরশু একটু সমস্যা আছে।রোববার সকালেও…” অপর প্রান্ত নিশ্চুপে ভাবিল দু-একটি মুহূর্ত – “না: এই রোববার সকালে হবে না। এক কাল দুপুরে হতে পারে। আপনার কি শনিবারে অফিস খোলা থাকে?”
— ”না! তা থাকে না।আজকাল তো প্রায় সব কম্পানিতেই ফাইভ-ডেজ ওয়ার্ক-উইক।”
— ”আমাদের ছদিন যেতে হয়। তবে শনিবার দুপুরে ছুটি হয়ে যায়।” উষসীর অপ্রতিভ হইবার পূর্বেই রাধাপদ যোগ করিল – “আমি একটার একটু পরে অফিস থেকে বেরোতে পারব। দুটোর মধ্যে শপার্স প্যারাডাইস পৌঁছোতে পারব আশা করা যায়।একসঙ্গে লাঞ্চ করতে কি আপনার খুব আপত্তি হবে?”

— ”না, না, সে রকম কোনো ব্যাপার নেই।”
— ”ঠিক আছে তাহলে, কাল দুপুর দুটোতেই দেখা হবে।প্লিজ বেশী দেরী করবেন না, শনিবারের দুপুরে বেশীর ভাগ দিনই বাইরে খাওয়া হয় বলে সকালে মেসের ব্রেকফাস্টটা আমি কাটিয়ে দিই।”
— ”আমার দিক থেকে দেরী হবে না, চিন্তা করবেন না।”
— ”আর এই নম্বরেই আপনাকে পাওয়া যাবে তো?”

উষসীর প্রথমবার সন্দেহ হইল, ব্যক্তিগত দূরভাষ সংখ্যা হইতে আলাপ করিয়া সে হয়তো নিজস্ব গোপনীয়তার কিঞ্চিৎ হানি ঘটাইয়া ফেলিয়াছে, কিন্তু এখন আর উপায় নাই।

— ”হ্যাঁ।এটাই আমার নাম্বার। আমার নাম উষসী সেন। গুডনাইট, কাল দেখা হবে তাহলে।”

উষসী শেষ নামটিতে চোখ রাখিল।ইহারও নাম তনুময়। দূরভাষ যন্ত্রের অপর প্রান্তে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত বাজিতেছে। আলাপীর সাড়া মিলিল না। উষসী ৪ জনেরই নাম ও দূরভাষ ক্রমিক নিজের যন্ত্রে সংরক্ষণ করিয়া নৈশাহারের বন্দোবস্তে ব্যস্ত হইল।

।।৪।।

পরদিন দ্বিপ্রহর, বাহিরের রৌদ্রোজ্জ্বল উষ্ণতা শীতাতপনিয়ন্ত্রিত অশনভবনের আরামকে আরও পোক্ত করিয়াছে। উষসী ও রাধাপদ নিরামিষ আহারে দিবাভোজন সাঙ্গ করিতে করিতে হালকা কথোপকথনে রত। পেশাসংস্থা, বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ইত্যাদির নাম, পাশ করিবার সন, ভবিষ্যতে কী করিবার ঈপ্সা – গৎ-টি শুরুর গতানুগতিকতার পথ অতিক্রম করিয়া অবশেষে আসিয়াছে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের আলাপে। কার্য্যালয়-প্রত্যাগত রাধাপদ তার প্রেরিত চিত্রের অপেক্ষাও কৃষ্ণবর্ণ, দেহে সামান্য মেদও অনুপস্থিত নহে, দর্শনধারীর পরীক্ষায় অকৃতকার্য্য পাণিপ্রার্থীটিকে বার্তালাপে উষসীর মন্দ লাগিতেছিল না। প্রিয় লেখক, সঙ্গীতজ্ঞ, চিত্রতারকা নাম বিনিময় হইল। আপাত-আলগোছ এই সকল কথার গুরুত্ব সম্বন্ধে উষসী সচেতন – আর্থিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক মিল হইবে কিনা, কিম্বা অমিল কতদূর, তাহা বুঝিতে এই সকল মুক্তান্ত প্রশ্ন তাহার তূণের গোপন অস্ত্রবিশেষ। এখন পর্য্যন্ত, তাহাকে যাহা বলা হইয়াছে, যে ভাবে ও ভাষায় বলা হইয়াছে, তাহা তাহার অপছন্দ হয় নাই, বিশেষত: চাকরি করা নিয়ে রাধাপদ যখন নিজেই উপযাচক হইয়া জানাইয়াছে, উপার্জন করিবার এবং উপার্জিত অর্থ ব্যয় করিবার নি:শর্ত স্বাধীনতা তাহার চিরকাল থাকিবে, তাহার মাতৃদেবী এবং জনক-জননীর ষ্ব্সাগণ, প্রায় সকলেই শিক্ষকতা বা সরকারী কার্য্যে নিযুক্ত, কর্তব্যোপদেশে তাহার গৃহে ফিরিবার সময়টি অধিক রাত্রে হইলে তাঁহারা হয় তো বা চিন্তা করিবেন, কিন্তু আপত্তি করিবেন না। তবে অধিক রাত্রে পর্য্যন্ত আপিসে থাকিলে তাহার মাতা বারংবার তাহাকে ফোন করিয়া সময়ানুসারে নৈশাহার করিবার উপদেশ দান করেন, ইহাও সে মজার ছলে জানাইয়াছে ।

খাওয়া দাওয়া নিয়ে কথার মধ্যেই গোস্বামী প্রশ্ন করিল – “আপনার ফেভারিট ডিশ কী?”

— “মাছের যে কোন আইটেম, মাংসের মধ্যে রেড মিট। আপনার?”
— “আমাদের ফ্যামিলিতে সবাই নিরামিষাশী, আমরা নবদ্বীপের গোঁসাই। আমার পাস্তা ভলো লাগে। আরো অনেক কিছু যেমন ধোকলা, দোসা।”

উষসী প্রমাদ গণিল – “আমাকেও কি সারাজীবন ভেজ খেতে হবে নাকী?”

— “না: – বাড়ির বাইরে খেতেই পারেন। রান্নাঘরে ঢোকালে সেখান থেকে আমি কিছু খেতে পারব না, যতক্ষণ না সেটা ধুয়ে পরিষ্কার করে দুব্বো ছুঁইয়ে শুদ্ধ করা হচ্ছে। তবে খাবার টেবিলে আমি ছোঁয়া ছাড়া কিছু মানি না। এক টেবিলে বসে খেতে কোনো অসুবিধে নেই, যদি বাইরের আনা খাবার হয় আর আলাদা পাত্র থাকে আর সেগুলো আলাদা করে মেজে ফেলা যায়।”

উষসীর বিব্রত হইতে থাকার মাঝেই রাধাপদ ক্ষণমাত্র বিরাম লইল – “অবশ্য যখন নবদ্বীপ যাবো , তখন হয় তো কটা দিন…”

উষসীর সহসা দমিয়া যাওয়া তাহার আননে প্রকাশিত হইয়া থাকিবে। তাহা লক্ষ্য করিয়া রাধাপদ ম্লান হাসিল – “কেটে গেলাম তো? কী আর করি বলুন, এগুলো লুকিয়ে তো আর এগোনো যায় না।”

উষসী অপ্রতিভ হাসিল – “না, না! লুকোনোর তো কোনো দরকার নেই, আপনার যেটা অভ্যেস, প্রচলন সেটা জানাবেন বই কি!”

অত:পর আরো কয়েক মিনিট মত বিনিময় চলিল বটে, কিন্তু তাহাতে উভয়েরই যে মন নাই, তাহা বুঝিতে দারুন বুদ্ধির প্রয়োজন হয় না। ক্লান্তির অজুহাতে রাধাপদ লইল অনতিপরেই। সে চলিয়া যাইলে, কিছু অকারণেই উষসীর ভাবনায় একটু তিক্ত রসের সঞ্চার ঘটিল।

।।৫।।

শপার্স প্যারাডাইস-এর অভ্যন্তরস্থ একটি সুপারমার্কেটে উষসী তাহার সাপ্তাহিক প্রয়োজনীয় পণ্যগুলি ক্রয় করিয়া থাকে। পুনর্বার গৃহে প্রত্যাবর্তন করিবার পূর্বে সে এই ঝঞ্ঝাট চুকাইয়া ফেলিতে ঈপ্সু হইল। যদিচ তাহার অভ্যাস প্রথমে ক্রেতব্য বস্তুসমূহের তালিকা প্রস্তুত করিয়া তাহার পরে আপণগমন, কিন্তু পরিস্থিতি পর্যালোচনায় আপাতত পূর্বনির্ধারিত ফর্দ ব্যতিরেকেই সে বিপনিটিতে প্রবেশ করিয়া ফেলিল। সবে সে একটি ট্রলি লইয়াছে, আর ভাবিতেছে, কোন বিভাগ হইতে ক্রয় শুরু করিবে, এমন সময়ে কটিদেশে শিহরণ ও টুংটাং শব্দে দূরভাষ যন্ত্র জানান দিল, কেহ তাহার সঙ্গে বার্তালাপে উৎসুক।

–“হ্যালো” – অচেনা পুরুষ কন্ঠ, নম্বরটি দেখিল তাহার ঠিকানা তালিকার অন্তর্গত নহে। সে একটু সাবধানে কহিল –
— “হ্যালো”
— “হ্যালো”
— “হ্যালো”
— ”হ্যালো” – অপর প্রান্ত তাহার সাড়া পাইয়া উৎফুল্ল হইয়াছে যেন।
— ”হ্যালো! হু ইজ দিস?” উষসী বুঝিতে পারিতেছে না, ইহা কেহ মজা করিবার জন্য কল করিতেছে, না তাহার কর্মক্ষেত্রের কোনো খরিদ্দার-সংস্থার কোনো উপভোক্তা কোনো অভিযোগের সুরাহা করিবার আশা লইয়া তাহাকে কল করিয়াছে।এই অবসর দিনের দ্বিপ্রহরে স্বীয় কর্মসংস্থার কর্মসহযোগীদের অকর্ম-ফলের নিমিত্ত গালি শ্রবণের মানসিক স্থৈর্য তাহার এক্ষণে নাই।

— “আমার নাম তনুময়। এটা আমার আরেকটা নাম্বার।”

চিত্তবিক্ষেপ পূর্বেই ঘটিয়াছিল, উষসী এক্ষণে সামান্য অকারণেই হয় তো বা ক্রুদ্ধ হইয়া উঠিল।

— “দেখুন মিস্টার মোয়া, আপনার সঙ্গে কথা বলার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।কালকেই তো আপনাকে একবার বলেছি কোনো নাইট ক্লাব কী হোটেলরুমে দেখা করা আমার পোষাবে না। বারবার আমাকে বিরক্ত করবেন না।”
–”ঠিক আছে, করব না। যদিও আপনার সঙ্গে এর আগে আমার কোনো কথাই হয় নি।”

দূরভাষ ও উষসী একইসঙ্গে স্তব্ধ হইলো। তাহার স্মরণ হইয়াছে গতকল্য যে চতুর্থ জন তাহার কলটি ধরে নাই, তাহারও নাম তনুময় বা ঐরূপ কিছু। হস্তধৃত দূরভাষ যন্ত্রে অঙ্গুলি চালাইয়া কলব্যাক করিতে করিতে সে সচেতন হইল শপার্স প্যারাডাইস-এর অভ্যন্তরে সে অনেক কৌতুকপূর্ণ কৌতূহলদৃষ্টি আকর্ষণ করিতেছে।

যোগাযোগ পুন:স্থাপন করিয়া সে প্রশ্ন করিল –

— “হ্যালো! আপনি তনুময় চৌধুরী তো?” যদিচ তাহার জানা এই প্রশ্নের উত্তর নেতিবাচক আসিবে।
— “নো …,নো …, নেহি,” অপর পক্ষ কাটিয়া কাটিয়া জানাইল “আমা-র না-ম তনু-ম-য় সিং-হ-রায়।” তাহার বাকবিন্যাসের ধরণে স্পষ্ট সে অপর পক্ষের ধীশক্তিতে খুব একটা আস্থা রাখিতে পারিতেছে না।স্বভাববিরুদ্ধভাবে উষসী কথা কাটিয়া বলিয়া উঠিল –
— “ও: সরি! আমি আসলে আপনাকে অন্য একজনের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেছিলাম। সেই ছেলেটি আমাকে কদিন ধরে খুব নাইটক্লাবে যাওয়ার জন্যে বিরক্ত করে মারছে। কিছু মাইন্ড করবেন না।”
— “ইনভাইট করছে যখন, তখন গেলেই হয়।”

কথোপকথনের ধারাটি উষসীর মনোমত হইল না, কিন্তু এক্ষেত্রে ভ্রান্তি তাহার-ই। সে সশব্দে শ্বাস টানিয়া ক্ষণেক নিশ্চুপ রহিল।

— “আপনাকে কি প্রায়ই ছেলেরা নাইটক্লাবে নিয়ে যেতে চেয়ে বিরক্ত করে?”
— “না: সেরকম নয়। কিন্তু সে প্রশ্নটা উঠছে কেন?”
— “আপনি কি প্রায়ই ছেলেদের সঙ্গে ‘দেখা’ করেন?” কেন উঠছে তাহা পরিষ্কার করিতে সময় লাগিল না।
— “না, না, আমাদের মধ্যবিত্ত ফ্যামিলি। ওসবে একদমই ইন্টারেস্ট নেই। আসলে, ওর সঙ্গেও বাড়ী থেকে বিয়ের ব্যাপারে কথা চলছিল।”
— ”বাড়ী থেকে?” অপরপক্ষের প্রশ্ন করিবার পদ্ধতিটি বড়ই বেশী শাণিত হইয়া উঠিতেছে। উষসী বাহুল্যবোধে নিরুত্তর রহিল।
— ”হুঁ। আপনার বাড়ী থেকে আমার বাবাকে কি জানানো হয়েছিলো যে মার্কেটে আরো কম্পিটিশন আছে?”

উষসীর উষ্মা প্রত্যাবর্তন করিল।

— ”অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ-এ সন্বন্ধ করতে গিয়ে অনেকের সঙ্গে কথা চলবে এটাই স্বাভাবিক নয় কি?” সে প্রখররূপে সচেতন হইয়াছে যে সে একটি সুপারমার্কেট-এর অভ্যন্তরে অধিষ্ঠিত, তাই কন্ঠস্বর স্বাভাবিক রাখিয়া কথা বলিবার জন্যে উষসী সবটুকু মনোযোগ ঢালিয়া দিল।
— ”হুঁ। অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ-এ কিন্তু দেওয়া-থোওয়ারও ব্যাপার থাকে। আপনি নিজেকে মিডল ক্লাস বললেন, আপনার বাবা আপনাকে রিভার্স অকশন করছেন না তো? মানে সবচেয়ে সস্তা বর-ই সব চেয়ে ভালো টাইপস!”
— ”আপনি — আপনারা পণ চাইছেন?” সমস্ত মানসিক সংকল্পের দৃঢ়তা ভেদ করিয়া উষসীর গলার স্বর উঠিল, তাহার ট্র্লিটি আংশিক নিয়ন্ত্রণ হারাইয়া এক প্রৌঢ়ার ট্র্লিকে ধাক্কা মারিল। ভদ্রমহিলা বিরক্ত আননে অনতিঅনুচ্চ কন্ঠে নিজ মাতৃভাষায় উষসীর মুন্ডপাত করিতে করিতে অন্য অভিমুখে গমন করিলেন।

— ”লুক হিয়ার মিস রুড মিডলক্লাস।” ভাষাতে আগুন ফুটিলেও দূরভাষের অপর প্রান্তের স্বর হিমশীতল, “আমরা পাঁচ জেনারেশনের বিজনেস ফ্যামিলি। ব্যবসা যখন যেমন ওঠায়, উঠি আর উড়ি, যখন ফেলে দেয়, তখন রাস্তার ধুলো খেয়ে পেট ভরাই। আপাতত আমার বাবার বাজারে কয়েক কোটি দেনা, তাই আপনার ফ্যামিলির মত কারো সঙ্গে আমার বাবা কথা বলতে রাজি হয়েছে, কারণ একমাত্র পুত্রটিকে হায়েস্ট বিডারের কাছে নিলাম করে বাবা নিজের দেনা কমাতে চায়, আর আমি তাতে রাজি হয়েছি, কারণ সুসময়ে আমি যখন টাকা নিয়েছি, নিজের লাইফ আর লাইফস্টাইল নিয়ে কিছু বাকি রাখি নি, তখন এই সময়ে আমার সেটা ফেরৎ দেওয়া উচিৎ। আপনি দিতে পারবেন ২-৩ কোটি? ইন ক্যাশ? চিন্তা নেই, শুধু ইন্ডাইরেক্ট নয়, ব্যবসা আবার ঘুরে দাঁড়ালে ডায়রেক্ট ডিভিডেন্ড-ও যাবে আপনার বাপ-মায়ের কাছে। পারবেন বের করতে?”

উষসীর সহসা প্রচন্ড ক্লান্ত বোধ হইতে লাগিল, সে ম্লানস্বরে কহিল,

— ”সম্ভব নয়, মিস্টার সিংহরায়, অত্ত টাকা বের করার ক্ষমতা থাকলে এই বিদেশ-বিভুঁইতে এসে এখানে চাকরি করতাম না।”

অপরপক্ষ বিনা সম্ভাষণে যোগাযোগ ছিন্ন করিল।

।।৬।।

দেবেশ-দার বাংলা পুস্তক সংগ্রহটি ঈর্ষণীয।প্রত্যেক সোমবার উষসীর এই সহকর্মীটি তাহাকে নুতন বহির যোগান দেন, উষসী তাঁহার সঙ্গে কফির পেয়ালা লইয়া দুদন্ড বার্তালাপ করে, অত:পর পুরাতন বহিটি ফিরাইয়া নুতনটিকে উল্টাইতে পাল্টাইতে সে নিজের কর্মের আসনটিতে ফিরিয়া যায়। সপ্তাহান্তের পরের সোমবারে উষসী তাঁহার সঙ্গে অভিজ্ঞতা ভাগ করিতেছিল। সব বর্ণনা, অভিযোগ, কফি পেয়ালার ধুম নি:শেষ হইলে উষসীর আংশিক শান্তি হইলো। দেবেশ নিশ্চুপে সব শুনিলেন, অনন্তর কহিলেন:

— ”কিন্তু ঠগ বাছতে যে গাঁ উজাড় হয়ে যাবে উষসী। এদের মধ্যে থেকেই তো তোমাকে কাউকে বিয়ে করতে হবে।”
— ”এদের মধ্যে থেকেই কেন দেবেশ-দা? এদের একজন-ও জানতে চায় নি, লাইফ নিয়ে আমার কী প্ল্যান, আমার কিছু ইচ্ছে অনিচ্ছে, বাধা নিষেধ আছে কীনা, সবাই নিজের পছন্দ, পরিবারের সংস্কার, প্রয়োজন সব আমাকে মেনে নিতে বলেছে, একজনও জিজ্ঞেস করে নি, আমার সঙ্গে থাকতে গেলে তাদের কোনো শর্ত মানতে হবে কীনা, আমি আমার পার্টনারের থেকে কী চাই।”

দেবেশ-দা হাসিলেন:

— ”দূর পাগলি। মাথা ঠান্ডা করো। সোনার আংটি আবার সোজা আর ব্যাঁকা।”
— ”যদি বিয়ে না-ই করি, তাতেই বা কী যায় আসে?”
— ”তা বললে হয়? সমাজে বাস করতে হবে তো? তাছাড়া বাবা-মা-র ইচ্ছে, বয়সের চাহিদা সব কিছুই মানতে হবে তো?”
— ”সমাজের নিকুচি করেছে!” উষসী ভিতরে ভিতরে উষ্ণ হইতেছিল।

দেবেশ-দা ক্ষণকাল চুপ রহিলেন। উষসী তাঁহার দিকে তাকাইল। দেবেশ-দা ঈষৎ সংকোচ দেখাইয়া কহিলেন –

— ”তার চেয়ে আমি বলি কি, বিয়ে-টা আমাকেই করে ফেল।”

মধ্য চত্বারিংশের বিপত্নীক-এর ইন্দ্র্লুপ্তের পানে উষসী নির্বাক চাহিয়া রহিল। কথার আকস্মিকতায় তাহার ওষ্ঠে প্রত্যুত্তর যোগাইল না। দেবেশ-দা নি:স্তব্ধতা ভঙ্গ করিয়া প্রশ্ন করিলেন –

— ”মৌনং সম্মতি ধরে নিই তাহলে। আমি কিন্তু সিরিয়াসলিই বলেছি।”
— ”না, দেবেশ-দা, সেটা হয় না।” উভয় পুস্তক কফি-টেবলের উপর দেবেশ-দার পানে ঠেলিয়া উষসী দ্রুতবেগে প্যানট্রি হইতে নির্গত হইল। তাহার জিহ্বায় সমস্ত দিন যে তিক্ত কটু স্বাদ সঙ্গী হইয়া রহিল, অনুমান করা দু:সাধ্য নহে যে তাহা নিতান্তই কফি হইতে উৎপন্ন নহে।

ভুলে যাওয়া চাবিশব্দ – লিপিকর (অমিতাভ ঘোষ)

।।১।।

একেকটি দিন এমনই কাটে। যে অন্তর্জালপত্রে প্রবেশ ও প্রস্থান করেন সুজাত নিত্যদিন, একাধিকবার, আজ সেখানেই তাঁহার চাবিশব্দটি ভুল হইল।

কর্মের বহর, ব্যবসার হিসাব দৈনন্দিন মিলাইবার মানসিক চাপ এবং বিগত তিমিরের অত্যার্দ্র উষ্ণতা – ত্রিবিধ আক্রমণে ত্রিযামানিদ্রাটি সুজাত’র হয় নাই একেবারেই। অথচ বিশ্রামের অন্য উপায়ও নাই – এখন নবম ঘটিকা পঞ্চচত্বারিংশ মিনিটের গনগনে প্রভাতে কাৰ্য্যকক্ষে উপবিষ্ট তাঁহার ভাবনাটি ঈষৎ অবিন্যস্ত, যন্ত্রগণকে ডাক লিখিতে লিখিতে টাইপোরা পয়সা-বাগাইতে-উন্মুখ-ভাইপোদের ন্যায় ঘেঁষিয়া আসিতেছে, শরীরে ভার ও ভারসাম্য – দুই-ই তাঁহার নিজের অনুভূতিতেই ঈষৎ হ্রস্ব। দেশাইসাহেব অবসর লইবার পরে মালিক সুজাতকে রকফুল প্রাইভেট লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজার করিয়াছেন। তাহাতে দায়িত্ব বর্ধিত হইয়াছে, কাজের পরিধি;, মাসান্তে মাহিনাটিও শ্রী পাইয়াছে, কিন্তু সর্বাপেক্ষা বাড়িয়াছে চিন্তা ও ব্যস্তানুপাতে কমিয়াছে নিদ্রাসুখটি।

আর্থিক লেনদেনে অধুনা সুজাত’র প্রধান অস্ত্র একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের অন্তর্জালিক পরিষেবা, যদিও এই ভার তিনি অধীনস্থ কাউকে অর্পণ করিতেই পারেন, নিজেই চাবিটি আগলানোই তাঁহার পছন্দ। আজি এ ঝিমধরা প্রভাতে সেই পরিষেবার চাবিশব্দটিই তিনি ভুলিয়াছেন।

সুজাত আরো একবার স্মরণে থাকা চাবিশব্দটি টিপিলেন, বৈদ্যুতিন কবাটপ্রহরী একইভাবে জানান দিলো, তাঁহার চিচিংফাঁকটি বেঠিক হইয়াছে, সেই পর্দার দিকে তাকাইয়া সুজাত নিজের থার্ডম্যান-ফাইনলেগ-এর সম্মুখের ইন্দ্রলুপ্তটি হইতে স্বেদ মোক্ষণ করিলেন। চাবিগুলির উপরে আলগোছে একবার অঙ্গুলি বুলাইলেন, আর একবার ভুল করিলেই সর্বনাশ! ত্রিশটি মিনিটের জন্য নেটব্যাঙ্কিং রুদ্ধ হইয়া যাইবে। একটি একটি করিয়া চাবিশব্দের অক্ষরগুলি টিপিলেন, তাহার পরে ক্ষণিক দ্বিধায় সেগুলি সব মুছিয়া দিলেন। এই পত্রটি তাঁহার বড় পরিচিত! শুধু সংস্থার নহে, তাঁহার ব্যক্তিগত সঞ্চয়-এর মূল শিখী-টিও ইহাদের পুচ্ছেই যে আবদ্ধ।

অবশেষে সঙ্কোচ অতিক্রম করিয়া কর্ম-তাগিদ বড় হইল। গণকের পর্দাতেই চক্ষু গাঁথিয়া সুজাত ঈষৎ বিব্রত স্বরে কহিলেন “শ্রীমতী, নেটব্যাঙ্কিং-এর পাসওয়ার্ড-টা একটা কাগজে লিখে দাও তো। আমার মনে পড়ছে না।”

বিভাগীয় অধস্তন শ্রীমতী দিবসের প্রথম পেয়ালা চা-টি সেবন করিতেছিল। এই উপরোধে সে ক্ষুদ্র একটি বিষম খাইল, কারণ সুজাত’র ন্যায় দক্ষ মানুষ প্রাত্যহিক-ব্যবহার্য চাবিশব্দ ভুলিবেন, তাহা তাঁহার পরিচিতদের নিকট বেশ আকস্মিক। এক চুমুকে পেয়ালা নিঃশেষ করিয়া সে একটি হরিদ্রাবর্ণের চিরকুটে চাবিশব্দটি লিখিয়া বাড়াইয়া দিল। সুজাত সেটি দেখিয়া বিড়বিড় করিলেন – “এটাই তো দিলুম, নিচ্ছে নাতো।” তিনি আসন ছাড়িয়া উঠিতে সম্মুখে আসিয়া শ্রীমতী যন্ত্র-গণক-পর্দার উপরে ঝুঁকিল – “‘ওয়েলকাম সুজাত’, … আপনি বুকমার্ক দিয়ে এখানে এসেছিলেন তো? নাকি ইউআরএল হাতে টাইপ করেছিলেন?”

— “বুকমার্ক, রোজ যেমন করি!”
শ্রীমতী পর্দায় নাসিকা প্রায় ঠেকাইয়া শুধাইল – “আমি একবার দিয়ে দেখবো?”
সুজাত হাঁহাঁ করিয়া উঠিলেন – “ আরেকবার ভুল হলে আধঘন্টার জন্য লক হয়ে যাবে।”
শ্রীমতী তাঁহার মতই দুই একটি চাবি আলগোছে খুটখাট করিয়া দ্বিধাগ্রস্ত স্বরে কহিল -”তাহলে কি কী-টা রিসেট করবো?”

নিদ্রা’র সমস্ত অনুভূতি সুজাত’র স্নায়ু হইতে অপনোদিত হইয়া গিয়াছে, সেখানে স্থান লইয়াছে ক্লান্তি আর পেশাজাত বিরক্তি, তিনি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া বলিলেন – “তাছাড়া আর উপায় কী?” তৎপরে হাঁক পাড়িলেন – “যমুনা-দি! এক কাপ কফি, চিনি ছাড়া।” এমন সময়ে ক্রয়-দপ্তরের বিভাস ঘরে ঢুকিতেছিলো, তার হস্তের কাগজগুলি দেখিয়াই সুজাত তাহাকে ফিরাইয়া দিলেন – “এখন যাও যাও, দশটা বাজতে না বাজতেই টাকা কিসের, চেক ইস্যু পরে হবে।”

।।২।।

ক্যাফেনের কটুস্বাদ ধাতস্থ করে। যেসকল স্নায়ুকোষ এতক্ষণ তাঁহাকে নিদ্রাভিমুখী করিতেছিল, তাহারাই এইবার নিদ্রাবিমুখতার গান ধরিতেছে। শ্রীমতী ইতিমধ্যে একবার চেষ্টা করিয়াছে, চিচিং অর্ধঘন্টার জন্য রুদ্ধ হইয়াছে, তাঁহারা দুইজনে এখন শব্দচাবি পরিবর্তনে মনোনিবেশ করিয়াছেন। শ্রীমতী কিছুটা আপনমনেই বলিতেছিল – “সব কটা ব্রাউজার উইন্ডো বন্ধ করলাম। এটা ফ্রেশ সেশন, নেটব্যাঙ্কিং খুললাম, এবার পাসওয়ার্ড রিসেট, একাউণ্ট নম্বর … টু নাইন … তেরোটা ডিজিট তো, … এক দুই, তিন …সাত … এগারো, বারো, তেরো। ওকে ক্লিক করলাম। এবার … ও মল্লিক-দা এতো ডেট অফ বার্থ জানতে চাইছে, কোম্পানির আবার জন্ম-তারিখ কি?”

— “সে কোথায় পাবো” বলিয়াই সুজাত’র খেয়াল হইলো সেই তথ্য-হস্তান্তর ফাইলটিতে দেশাইসাহেব নিজহস্তে এবিষয়ের সমস্ত প্রশ্নোত্তর লিপিবদ্ধ করিয়া গিয়াছেন। “দাঁড়াও, ওটা ডেট অফ ইনকর্পোরেশন হবে বোধ হয় …’ বলিয়া সুজাত দেশাই-সাহেব অর্পিত চিরকুট-সন্ধানে কাগজ রাখিবার দেরাজখানিতে টান দিলেন। চাবিবদ্ধ পাল্লা তাঁহার সহিত উত্তেজনায় পাল্লা দিয়া ক্যাঁ করিয়া উঠিল, কিন্তু দ্বার উন্মোচন করিল না। নিজ টেবিলের দরাজ হইতে লৌহশলাকার গুচ্ছ লইয়া বড় দেরাজ খুলিতে উদ্যত হইলেন, গুচ্ছটি বড় হইলেও প্রতিটি চাবি কোন রন্ধ্রের জন্য, তাহা শ্রীমতী ও সুজাত’র মুখস্থ, কিন্তু আজ প্রথম চাবিটি ভুল চয়নে রন্ধ্রের খাঁজে আটকাইল, তাহা নিষ্কাশনের জন্য অনতীষৎ আকর্ষণ ও বলপ্রয়োগ প্রয়োজন হইলো এবং পুরা ঘটনা দেখিয়া শ্রীমতী-র দৃষ্টিতে বিস্ময় ছায়া ফেলিল। অতিসচেতন হইয়া পরের চাবিটি সুজাত ঠিক চয়ন করিলেন বটে, কিন্তু তাঁহার হস্ত দুইবার রন্ধ্রের উপর পিছলাইল, ফলত: শ্রীমতীর আননে বিস্ময় স্পষ্ট হইল। দেরাজ খুলিলে প্রথম ফাইলটি খাতকদের ঠিকানা-ঠিকুজি, দ্বিতীয়টি অগ্রিম যে সকল কর ভবিষ্যতে ছাড় হইবে তাহার তথ্যের আকর। তৃতীয় – না:, চতুর্থ – না:, পঞ্চম – সুজাত মনে মনে অস্থির হইবার উপক্রমমুহূর্তে একটি অকিঞ্চিৎকর বাদামীবর্ণের ফাইল দেখিলেন, সেটি টানিয়া মলাট তুলিয়া বেশী সন্ধান প্রয়োজন হইল না, দ্বিতীয় পত্রেই দেশাই-এর আণুবীক্ষণিক হস্তাক্ষর চক্ষে ভাসিল। সুজাত কম্পিউটার সম্মুখে আসীনা শ্রীমতীকে কহিলেন – “লেখো, তেরোই জুলাই, উনিশশো বত্রিশ।” দুজনেরই সেক্ষণে স্মরণ হইল, ইহা রকফুলের পুরাতন পাপীদের স্মর্তব্য, কারণ ঐ দিনে অধিকর্তা সংস্থার সকলের জন্য নিরামিষ পলান্নর ব্যবস্থা প্রতি বৎসর করিয়া থাকেন, যে কারণে তিথিটি কর্মীদিগের নিকট দীপঙ্কর-ভাষিত “পাথর-পুষ্প-ডে পোলাও-প্যাকেট দে” পদ্যে অভিহিত।

তারিখটি নেটব্যাঙ্কি-এর পত্রে চয়ন করিতে গিয়া শ্রীমতী আর্তনাদ করিল – “ও মল্লিকদা, এ তো থার্টি ফাইভের চেয়ে পুরনো কোনো ডেট নিচ্ছে না।” সুজাত হতভম্বভাবে তাকাইয়া বলিলেন “তাহলে?, এখানে তো থার্টিটুই দেখছি, প্ল্যাটিনাম জুবিলী হলো সাতে, সে হিসেবেও তো বত্তিরিশই হচ্ছে।” শ্রীমতী একটু ভাবিয়া কহিল – ‘দাঁড়ান, ড্রপডাউন ইউজ না করে, ডেট-টা এমনি টাইপ করে দেখি তো।” অত:পর সে লিখিল ১৩/০৭/৩২ – জন্মতারিখের খোপ দপদপ করিতে লাগিল, কোনো উত্তর নাই। শ্রীমতী লিখিল ১৩/০৭/১৯৩২ – উত্তর আসিল, তবে ভ্ৰমশাসনের, “তারিখটি অবৈধ, দয়া করে সঠিক দিন দিন”।

শ্রীমতী একটু ভাবিয়া লিখিল – ‘০৭/১৩/১৯৩২’ – নেটব্যাঙ্কিং চাবিশব্দ পরিবর্তনের পরবর্তী ধাপে যাইল – এবারে একটি সাময়িক চাবিশব্দ দূরভাষে প্রেরিত হইবে, তাহা দুই মিনিটে নির্দিষ্ট খোপে লিপিবদ্ধ করিলে পছন্দের চাবিশব্দটি চয়ন করা যাইবে। শ্রীমতী পাঠ করিয়া পুনরায় ফাঁপরে পড়িল – “কোম্পানির মোবাইল আবার কোনটা, মল্লিকদা?” সুজাত দেশাই-এর চিরকুট হইতে পড়িলেন – “নাইন সিক্স … থ্রি ওয়ান টু, এটা তো বোধহয় ছোটকর্তা ব্যবহার করেন, তাই না?” বিভাগীয় নিত্য-ব্যবহার্য্য দূরভাষ-তালিকায় অক্ষিপাত করিয়া শ্রীমতী বলিল – “হ্যাঁ , এটা স্যারের নাম্বার”, অনন্তর সুজাত’র অস্বস্তি উপলব্ধি করিয়া সে স্বত:ই কহিল – “দাঁড়ান, আমি ওঁর টেবিল থেকে নিয়ে আসছি।” সে অর্থবিভাগের কক্ষ হইতে নিষ্ক্রান্ত হইতেই ক্রয়বিভাগের উপপ্রধান হেমন্তবাবু ঢুকিয়ে পড়িলেন। বিনা সৌজন্য-ভুমিকায় – “রকফুল তো সরকারী ফার্ম হয়ে গেলো, নিজেদের অফিসেও এবারে সিন্নি চড়াতে হবে কিনা আলিম স্যার জানতে চেয়েছেন!” মন্তব্যটি ছুঁড়িয়া দিতেই সুজাত ও হেমন্তবাবুর মধ্যে মৌখিক ধুন্ধুমার লাগিয়া গেলো।

।।৩।।

মালিকের ভ্রাতুষ্পুত্র স্বল্প আদানপ্রদানেই স্পষ্ট করিয়াছে, রোজকার রোজগার-ব্যয় সংক্রান্ত জটিলতা সকলই বুঝিলেও পশ্চিমালব্ধ বাণিজ্যশিক্ষাটিকে দৈনন্দিন যোগবিয়োগের ত্রুটি ধরিতে প্রয়োগ না করিয়া সংস্থায় অধুনা-নিশ্রীমতীবেশকারী কয়েকটি আর্থিক-সংস্থাকে তুষ্ট রাখিবার প্ৰয়াসকেই সে প্রাধান্য দিতে ইচ্ছুক।

হেমন্তবাবুর সহিত অন্তর্বিভাগীয় বিতণ্ডায় যখন বিভাস ও দীপঙ্কর আসিয়া সুজাত’কে কোণঠাসা করিয়া ফেলিবার উপক্রম করিতেছে, শ্রীমতী কক্ষে ফিরিল, তাহার অনুসরণে নিজ দূরভাষযন্ত্রটি লুফিতে লুফিতে স্বয়ং ছোটকর্তা। মালিক-গোত্রভুক্ত প্রাণীকে আসিতে দেখিয়া চক্ষের অগ্নিতে “পরে দেখে নেবো” বার্তাদান করিয়া ক্রয়বিভাগের প্ৰতিভূরা দ্রুত নিষ্ক্রান্ত হইলেন। সংস্থার কোন দফতর বাস্তুঘুঘুর বাসা, তাহা মালিকের খুব অজ্ঞাত নহে।

— “কী ব্যাপার মল্লিকদা?”
— “স্যার, পাসওয়ার্ডটা কাজ করছে না, রিসেট করার ট্রাই করছি।”

ছোটবাবু বিনাবাক্যে গণক-পর্দায় ইঙ্গিত করিলেন। তপ্ত বাক্যালাপের অবসরে অন্তর্জাল-পত্রটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হইয়াছিল, শ্রীমতী পুনর্বার নতুন ব্রাউজার-গবাক্ষ চালু করিয়া পুরা পদ্ধতি অনুসরণ করিয়া প্রথম ধাপটি অতিক্রম করিল। দ্বিতীয় ধাপে “ওকে” টিপিতে দূরভাষে সাময়িক চাবিশব্দ আসিল, তাহা নির্দিষ্ট খোপে জোগাইয়া পরবর্তী পৃষ্ঠায় যাইবার অনুমতি মিলিল, কিন্তু নতুন চাবিশব্দ অনুমোদনের পূর্বে নেটব্যাঙ্কিং আরো প্রশ্নের উত্তর দাবী করিল-
“সংস্থার প্রতিষ্ঠাতার নাম বলুন?”

সুজাত নথি দেখিয়া ছোটবাবুর প্রপিতামহের নাম টিপিলেন, সন্তর্পণে, দেশাই যেরূপে ছোটহাতের ও বড়হাতের আখরগুলি চিরকুটে লিপিবদ্ধ করিয়াছেন, তাহার মক্ষিকা-মারণ অনুসরণ করিয়া। ছোটবাবুর হস্তধৃত যন্ত্রে পিঁপিঁ করিয়া বার্তা আসিল – শ্রীমতী দেখিয়া তাহা টিপিতে নেটব্যাঙ্কিং অনুমতি দিল – এইবারে তুমি নতুন চাবিশব্দ দিতে পারো।

সুজাত দ্রুতহস্তে লিখিলেন – rock123full
‘উঁহু, ছোটো হাতের, বড়হাতের অক্ষর, সংখ্যা, বিশেষ চিহ্ন সব চাই।”
Rock#123
উঁহু, অভিধানের কোনো শব্দ চলবে না।

সম্মুকের গবাক্ষে বাহিরের দিনমণি নূতন শব্দের প্রেরণা যোগাইলেন – Esplanade*1 (ইহা রকফুল-এর মূল কার্যালয়ের অন্ত:শাখা সঙ্কেত, এবং বিভাগবিশেষে পত্রালাপে বহুল ব্যবহৃত।)

— উহু অভিধানের কোনো শব্দ চলবে না। আপনার তিনটে সুযোগ শেষ। চাবিশব্দ বদল করতে আবার প্রশ্নের উত্তর দিন। আপনার সংস্থার সবচেয়ে বড় গ্রাহকের নাম কী?

সুজাত’র সহিত ছোটবাবু ও শ্রীমতীও ফাইলে লক্ষ্য ফিরাইলেন। অক্ষরসারিটি পড়িতে তিনজনেরই সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময় লাগিল। সুজাত দ্রুতহস্তে ফাইল ঢাকিয়া উত্তরটি টিপিলেন, ছোটবাবু মৃদু হাস্যে মন্তব্য করিলেন – “ভিন্টেজ দেশাই। রসিক বুড়ো বিজনেস ঠিকই বুঝতো।” আর আদ্যন্ত নারী-বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ে বাগ্দেবীর আরাধনাকারিণী শ্রীমতী বিস্মিতকন্ঠে শুধাইল – “সাম আরশোলা? আমরা আরশোলাদেরও মাল বিক্রি করি নাকি, মল্লিকদা?”

ছোটবাবু প্রত্যুৎপন্নমতিত্বে সামাল দিলেন – “আরে, রোচ প্রাইভেট লিমিটেড-এর নাম শোনেন নি? যেমন ক্যাটার্পিলার। এবারে কী পাসওয়ার্ড দিচ্ছেন মল্লিকদা?”
— ”যেটা আগে ছিল, সেটাই আরেকবার ট্রাই করে দেখি!”

কিন্তু আজ নেটব্যাঙ্কিং অসহযোগিতার পণ করিয়াছে।

— “আপনার নতুন চাবিশব্দটি বর্তমান চাবিশব্দের থেকে আলাদা হতে হবে।”
ছোটবাবু ও সুজাত দৃষ্টি বিনিময় করিলেন। দুজনের মনের ভাবটি ছোটবাবুর কন্ঠে প্রকাশ পাইল – “আরেকবার ফ্রেশ করে লগইন করুন তো?”

অত:পর চালু সমস্ত ব্রাউজার-গবাক্ষ বন্ধ করা হইল, নতুন করিয়া নেটব্যাঙ্কিং-এর পৃষ্ঠা আনীত হইল, শ্রীমতী তাহাতে একটি একটি করিয়া অক্ষর টিপিয়া ব্যবহার-নাম ও চাবিশব্দ টিপিল – এবং চিচিং ফাঁক! পরিষেবার এতক্ষণের বন্ধ দ্বারটি খুলিয়া গেল।

কয়েক মিনিট উৎকণ্ঠিতভাবে সমস্ত অর্থসম্পত্তি হিসাবমত আছে কিনা তাহার পরীক্ষা সাঙ্গ হইলে ছোটবাবু “আইটির শাসমলকে দিয়ে একটু হ্যাকিং আটকানোর কোনো সফটওয়্যার ইনস্টল করিয়ে নেবেন” বলিয়া কক্ষ হইতে নিষ্ক্রান্ত হইলেন।

শ্রীমতী আসনে ফিরিয়া প্রশ্ন করিল – “রোচ আর ককরোচ কী এক মল্লিকদা? আর তাদের টার্নওভার-ও তো বেশি নয় … মল্লিকদা! দেশাই-স্যার কি আদৌ বাংলা জানতেন?”

ঠিক সেই মুহূর্তে সুজাত বুঝিলেন ঘটনাটি কি ঘটিয়াছিল – তিনি তন্দ্রালু অবশে সংস্থার নয়, নিজ ব্যক্তিগত ব্যবহার সংখ্যাটি চাবিবদ্ধ করিয়াছিলেন, যেহেতু ব্যাংকের বার্তা উভয় ক্ষেত্রেই তাঁহার নামে সম্বোধিত এবং পত্রের অন্যসকল ছবি ও শব্দ একই প্রকার, তাই তাহা কাহারো প্রথমবারে খেয়াল হয় নাই, আর পরবর্তী সমস্ত বারে তাঁহারা চাবিশব্দটি পরিবর্তনের চেষ্টা করিতেছিলেন, দ্বিতীয়বার সংযোগ করিবার চেষ্টা করেন নাই। তাঁহার ব্যক্তিগত সংযোগ-এর চাবিশব্দটি হয় তো অব্যবহার্য্য হইয়া গিয়াছে, কিন্তু তাহা পরিবর্তন করিবার অভিজ্ঞতা তাঁহার আছে। তাঁহার আননে স্বস্তির হাস্য ফুটিল।

এমন সময়ে হেমন্তবাবু আরো কিছু ভাউচার লইয়া কক্ষে প্রবেশ করিলেন।

লিপিকর (অমিতাভ ঘোষ) | Amitava Ghosh (Lipikar)

Kolkata to Kashmir Trip | আবেগের নাম কাশ্মীর | 2023

Is Cheetah and Leopard same? | Anindya Paul | 2023

Gaja-Uddharana besha | গজ-উদ্ধারণ বেশ | অভিজিৎ পাল

Nagarjuna besha or Parashurama besha | নাগার্জুন বেশ | অভিজিৎ পাল

Short bengali story | Bengali story pdf | pratilipi bengali story | Short Stories for Children | English Stories for Kids | Moral Stories for Kids | story in english | story hindi | story book | story for kids | short story | story for girls | short story in english | short story for kids | bangla Modern Story Archive pdf | Bangla golpo pdf | Bangla golpo story | bangla romantic golpo | choto golpo bangla | bengali story | Sunday suspense golpo | sunday suspense mp3 download | suspense story in hindi | suspense story in english 200 words | Modern Story Archive in english

suspense story in english 300 words | Suspense story examples | suspense story in english 100 words | suspense story writing | very short suspense stories for students | Modern Story Archive | Top Bangla Golpo Online Reading | New Read Online Bengali Story | Top Best Story Blogs | Best Story Blogs in pdf | Sabuj Basinda | High Challenger | Famous Bangla Golpo Online Reading | Shabdodweep Read Online Bengali Story | Shabdodweep Writer | Bangla Golpo Online Reading pdf | Famous Story – Modern Story Archive | Pdf Modern Story Archive | Modern Story Archive App | Full Modern Story Archive Reading | Bangla Golpo Online Reading Blogs

Best Story Blogs in Bengali | Live Bengali Story in English | Bangla Golpo Online Reading Ebook | Full Bangla Galpo online | Modern Story Archive 2024 | New Modern Story Archive – Episode | Golpo Dot Com Series | Modern Story Archive Video | Story – Modern Story Archive | New Bengali Web Story Audio | New Bengali Web Story Video | Modern Story Archive Netflix | Audio Story – Modern Story Archive | Video Story – Modern Story Archive | Shabdodweep Competition | Story Writing Competition | Bengali Writer | Bengali Writer 2024 | Trending Bangla Golpo Online Reading | Recent Modern Story Archive | Top Modern Story Archive | Modern Story Archive Web Story | Best Read Online Bengali Story | Read Online Bengali Story 2024

Shabdodweep Bangla Golpo Online Reading | New Modern Story Archive | Bengali Famous Story in pdf | Modern Online Bangla Galpo Download | Bangla Golpo Online Reading mp3 | Horror Adult Story | Read Online Bengali Story Collection | Modern Online Bangla Galpo mp4 | Modern Online Bangla Galpo Library | New Bengali Web Story Download | Full Live Bengali Story | Bengali Famous Story 2023 | Shabdodweep Bengali Famous Story | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Bengali Famous Story – video | Bengali Famous Story mp3 | Full Bengali Famous Story | Bengali Literature | Shabdodweep Magazine | Shabdodweep Web Magazine | Live Bengali Story Writer | Shabdodweep Writer | Story Collection – Modern Story Archive

Leave a Comment