Nagarjuna besha or Parashurama besha | নাগার্জুন বেশ | অভিজিৎ পাল

Sharing Is Caring:

নাগার্জুন বেশ | Nagarjuna besha or Parashurama besha

জগন্নাথ সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করা হয় মহাপ্রভু জগন্নাথ সমগ্র মহাবিশ্বের পালক ও শাসক। জগন্নাথ স্বয়ং পরমব্রহ্ম বা পরমাত্মাতত্ত্ব। জগন্নাথ যেমন বৈচিত্র্যময় পুরুষ তেমনই তাঁর বৈচিত্র্যময় সাজসজ্জা। তিনি যখন যেভাবে প্রকাশিত হন তখন সেভাবেই তাঁর শৃঙ্গার করানো হয়। জগন্নাথ মহাপ্রভু যেমন ভক্তের কাছে আকর্ষণীয় ঠিক তেমনই তিনি বিভিন্ন বিশেষ তিথিতে যে যে পোশাকে সজ্জিত হন সেগুলিও সমান দর্শনীয় তথা আকর্ষণীয়। জগন্নাথের সমস্ত বিশেষ বেশ শৃঙ্গারের মধ্যে তাঁর নাগার্জুন বেশ (Nagarjuna besha) ভক্তদের কাছে সবচেয়ে দর্শনীয় এবং জাঁকজমকপূর্ণ হয়ে উঠেছে। জগন্নাথের নাগার্জুন বেশ (Nagarjuna besha) অন্যতম দুর্লভ বেশ। পুরীর শ্রীমন্দিরে প্রতিবছর নাগার্জুন বেশ (Nagarjuna besha) অনুষ্ঠিত হয় না। জগন্নাথের নাগার্জুন বেশকে কেন্দ্র করে অজস্র রহস্যময় ঘটনাও রয়েছে। সাধারণত, ওড়িআ বর্ষপঞ্জি বা পাঁজি অনুযায়ী পবিত্র কার্তিক মাসের শেষ পাঁচ দিন (তিথি) পাঁচুকা বা পাঁচুচা বা পঞ্চুকা নামে পরিচিত। এই পাঁচুকা হলো কার্তিক শুক্লার বর্ধিত তিথি দশমী, একাদশী, দ্বাদশী, ত্রয়োদশী ও চতুর্দশী। এই তালিকায় থাকা অতিরিক্ত একটি দিনে শ্রীমন্দিরের রত্নসিংহাসনে বিরাজমান দেবদেবীরা দুর্লভ নাগার্জুন বেশে (Nagarjuna besha) শৃঙ্গার করেন। পাঁচুকার সময় জগন্নাথ প্রতিদিন বিশেষ বিশেষ শৃঙ্গারে সজ্জিত হন। যে বছর কার্তিক মাসের শেষে জগন্নাথের নাগার্জুন বেশের (Nagarjuna besha) তিথি আসে সে বছর পাঁচুকা ছয়দিনের জন্য পালন করা হয়। এই সময়ের পাঁচুকাকে তাৎপর্যপূর্ণ, বিশাল ও সমৃদ্ধময় করে তোলে মহাপ্রভু জগন্নাথের নাগার্জুন বেশে (Nagarjuna besha) সাজসজ্জা। তবে, এই আয়োজনের সুযোগ ঘটে খুব কমই। ২০২০তে জগন্নাথের নাগার্জুন বেশের আয়োজন হয়েছে একটানা ছাব্বিশ বছর পর। এর আগে শেষবার জগন্নাথের নাগার্জুন বেশের (Nagarjuna besha) আয়োজন হয়েছিল ১৯৯৪ সালে। অনেক বছর বাদে পাঁচুকায় একটি অতিরিক্ত দিন যুক্ত হওয়ায় ২০২০তে পাঁচুকা ছয় দিনের জন্য পালন করা হয়। কিন্তু দুর্লভ নাগার্জুন বেশের আয়োজন করা হলেও সাধারণ ভক্তরা জগন্নাথের নাগার্জুন বেশ (Nagarjuna besha) দর্শন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন দেশে অতিমারীর প্রকোপ থাকার জন্য। এছাড়াও ১৯৬৬, ১৯৬৭, ১৯৬৮, ১৯৯৩তে পরপর তিন বছর পঞ্চুকার অতিরিক্ত তিথি বা মল তিথি থাকায় নাগার্জুন বেশে (Nagarjuna besha) জগন্নাথ ও বলভদ্রের শৃঙ্গার হয়েছিল। প্রাচীন নথিপত্রে প্রতিটি তারিখ পেয়েছি, ইংরেজি বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী সেগুলি হলো যথাক্রমে, ২৬-১১-১৯৬৬, ১৬-১১-১৯৬৭, ০৩-১১-১৯৬৭, ২৬-১১-১৯৯৩, ১৬-১১-১৯৯৪ ও ২৮-১১-২০২০ বলভদ্র ও জগন্নাথের নাগার্জুন বেশ (Nagarjuna besha) সম্পর্কে পৌরাণিক ও ঐতিহাসিক দুটি পৃথক কাহিনী সূত্র রয়েছে।

পৌরাণিক মতানুসারে ব্যাসদেব প্রণীত মহাভারতের মধ্যম পাণ্ডব অর্জুন নাগসম্রাট বাসুকি নাগের কন্যা উলুপী সঙ্গে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। তাঁদের দুজনের দাম্পত্যের ফলস্বরূপ একটি সুপুত্র জন্ম নিয়েছিল। সেই পুত্রের নাম নাগার্জুন। নাগার্জুনের মধ্যে সমগ্র নাগ সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠ পরাক্রম ও পিতা অর্জুনের মতো যশস্বী যোদ্ধার শক্তি প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু নাগার্জুনকে অর্জুন বিশেষভাবে কাছে পাননি। এমনকি তিনি দীর্ঘদিন জানতেও পারেননি অর্জুন তাঁর পিতা। পরবর্তীতে অর্জুন ও নাগার্জুনের মধ্যে বিবাদকালেও তাঁরা পরস্পরকে চিনতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। নাগার্জুনও পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন। নাগার্জুনের মাতা উলুপীর সঙ্গে বিবাহের কাছাকাছি সময়ে অর্জুন মণিপুররাজের কন্যা চিত্রাঙ্গদার সঙ্গেও পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হয়েছিলেন। চিত্রাঙ্গদা ও অর্জুনের সম্পর্ক আলগা হওয়ার ক্ষেত্রেও উলুপীর অনেকখানি কূটনৈতিক ভূমিকা ছিল।

মহাদেব শিব নাগপৌত্র নাগার্জুনকে পরবর্তী সময়ে পর্বতরাজ হিমালয়ের একটি সুন্দর মনোরম পার্বত্য উদ্যানের দায়িত্বে অভিষিক্ত করেন। উদ্যান রক্ষার ভারপ্রাপ্ত হওয়ার পর থেকে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত নাগার্জুনই ছিলেন সেই পার্বত্য উদ্যানের প্রধান রক্ষক l উদ্যানের সুরক্ষায় নাগার্জুন সবসময় সচেতন থাকতেন। সামান্যতম বিচ্যুতিও তাঁর কাছে অজানা থাকত না।

এমনই একদিন অর্জুন একটি বিশেষ প্রয়োজনে বন্য একশৃঙ্গ গণ্ডারের অনুসন্ধানে বহু পার্বত্যভূমি ও অরণ্যলোকে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে কোথাও একটিও একশৃঙ্গ গণ্ডার না পেয়ে অবশেষে নাগার্জুন রক্ষিত হিমালয়ের প্রাগুক্ত উদ্যানে প্রবেশ করেন। এই অরণ্যসম উদ্যানে ভ্রমণ করতে না করতেই অর্জুন একটি একশৃঙ্গ গণ্ডারের দেখাও পান। উদ্যানে ধনুকের শরসন্ধান করে অর্জুন খড়্গধারী গণ্ডার শিকার করতে উদ্যত হতে না হতেই সেই উদ্যানের রক্ষক নাগার্জুন অর্জুনকে সাবধান করেন। কিন্তু অর্জুন দৃঢ়সংকল্প থাকায় নাগার্জুনের সঙ্গে তাঁর বিরোধ বাঁধে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে নাগার্জুন ও অর্জুনের মধ্যে প্রবল যুদ্ধ শুরু হয় l আদতে পিতা-পুত্রের যুদ্ধ হলেও তাঁরা দুজনেই পরস্পরের প্রকৃত পরিচয় ও সম্পর্ক জানতেন না। নাগার্জুন অর্জুনের মতোই যুদ্ধে দক্ষ। তিনি যুদ্ধকৌশলে অবলীলায় অর্জুনকে পরাস্ত করতে সক্ষম হন। নাগার্জুনের কাছে আহত হয়ে মৃতসম মূর্ছা যান অর্জুন l নাগার্জুন বিজয় উল্লাসে ফেটে পড়লে সেখানে উপস্থিত হন উলুপী। উদ্যানে মূর্ছিত অর্জুনকে দেখতে পেয়েই উলুপী আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন। নাগার্জুনও জানতে পারেন তিনি যাঁর সঙ্গে এতক্ষণ যুদ্ধ করেছেন তিনিই তাঁর পিতা! নিজের স্বামীকে চিনতে পেরে উলুপী বীরেন্দ্র নাগার্জুনকে অজ্ঞাতসারে পিতৃহন্তার গর্হিত অপরাধ থেকে রক্ষা করতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। স্বামীকে বাঁচাতে সূর্যদেবের কাছে অর্জুনের জীবন দান করার অনুরোধ করেন l অনাদি কাল থেকে প্রচলিত জগতের নিয়মানুসারে অতিরিক্ত দিবসে প্রাণদানের প্রক্রিয়া সুসম্পন্ন হয়। কিন্তু নিয়ত গমনশীল সূর্যের একদিন পিছিয়ে আসা বা থেমে থাকা সম্ভব না। এমন অনর্থ হলে জগৎ অচল হয়ে যাবে। পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠলে সমস্ত নাগ একজোট হয়ে ভগবান কৃষ্ণ ও বলরামকে সেখানে আহ্বান করতে থাকেন l বলরাম ও কৃষ্ণ সেখানে উপস্থিত হন। কৃষ্ণ তাঁর গুহ্য দৈবীশক্তিতে তখন পঞ্চুকা তিথির আহ্বান করেন। আকাশে সাতাশ নক্ষত্রের অবস্থান অদ্ভুত রূপলাভ করে। একটি অতিরিক্ত তিথি তথা দিন তৈরি হলে তার মধ্যেই অর্জুনের প্রাণসঞ্চারে সচেষ্ট হন কৃষ্ণ। নাগদের নাগমণিকে এই সময় ব্যবহার করেছিলেন অর্জুন। চেতনা ফিরে পেয়ে অর্জুন খুবই দুঃখ অনুভব করেন। অর্জুনের বিমর্ষ ভাব দেখে কৃষ্ণ তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করেন। অর্জুন তাঁকে বলেন, অর্জুনের ইচ্ছে ছিল শুধুমাত্র কৃষ্ণই যেন তাঁকে পরাজিত করতে পারেন। আর এখানে এক সামান্য তরুণ নাগার্জুন তাঁকে পরাস্ত করেছেন। তখন অর্জুনকে কৃষ্ণ প্রবোধ দিয়ে বলেন, তিনিই নাগার্জুন স্বরূপে রয়েছেন। নাগার্জুন রূপে তিনিই জন্ম নিয়েছেন। সখার এমন বাক্যে অর্জুন আংশিক শান্ত হলেও সম্পূর্ণ বিশ্বাস করতে সংশয় প্রকাশ করেন। আর এতেই ক্রোধান্বিত হয়ে বলরাম কৃষ্ণের বিরাট নাগার্জুন মূর্তির আহ্বান করেন। সঙ্গে সঙ্গে ষোড়শ প্রাণঘাতী অস্ত্রসজ্জিত কৃষ্ণ-বলদেবের রুদ্ররূপ প্রকাশিত হয়। ভয়ে ত্রস্ত হয়ে অর্জুন কৃষ্ণ-বলরামকে এই ভীষণ রূপ সংহার করতে বলেন।

Nagarjuna Besha

জগন্নাথের নাগার্জুন বেশকে (Nagarjuna besha) অনেকেই পরশুরাম বেশও বলেন। ব্রাহ্মণরুদ্র পরশুরাম বিভিন্ন অস্ত্রচালনায় দক্ষ ছিলেন। জগন্নাথের নাগার্জুন বেশেও (Nagarjuna besha) মোট ষোলোটি অস্ত্র তিনি ধারণ করেন। কোমড়ে তাঁর বাঘছাল দেখা যায়। এমনকি জগন্নাথের মুখে পাকানো দাড়িও দেখা যায়। জগন্নাথের এই বেশ যুদ্ধসাজকে চিহ্নিত করে।

তবে পুরীর জগন্নাথদেবের নাগার্জুন বেশ (Nagarjuna besha) কবে থেকে শুরু হয় এই বিষয়ে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। কোনো লিপিবদ্ধ তথ্যও নেই। তবে ওড়িশার অজস্র জগন্নাথ গবেষক মনে করেন প্রাচীন উৎকলের গজপতি মহারাজা অনঙ্গভীম দেব জগন্নাথ-সংস্কৃতিতে প্রথম নাগার্জুন বেশের (Nagarjuna besha) আয়োজন করেছিলেন।

ঐতিহাসিক তথ্যানুসারে, গজপতি মহারাজা অনঙ্গভীম দেব তাঁর রাজত্বকালে একবার যুদ্ধে পরাস্ত হন। ফিরে এসে তিনি জগন্নাথ মহাপ্রভুর শরণে গিয়ে নিজের দুঃখের কথা বলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন জগতের যা কিছু ঘটে সবই ঈশ্বরের ইচ্ছায় ঘটে। জগন্নাথের ইচ্ছে ছাড়া একটি পাতার নড়ে ওঠার সাধ্য নেই। সমস্ত জীবের মধ্যে তিনি ব্যক্তচেতন রূপে বিরাজমান, সমস্ত জড়ের মধ্যে তিনি সুপ্তচেতন রূপে প্রকাশিত। জগন্নাথের কাছে অনুযোগ করে আসার পর অনঙ্গভীম দেবের রাজগুরু তাঁকে গুহ্য দৈবীশক্তি সমৃদ্ধ নাগার্জুন মন্ত্রে সাধনার নির্দেশ দেন। এই নাগার্জুন মন্ত্র মানুষকে অজেয় করে তোলে। তন্ত্রপদ্ধতিতে নাগার্জুন মন্ত্রের বিশুদ্ধ সাধনা করতে হয়। নাগার্জুন মন্ত্র সাধনা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। কিন্তু এই মন্ত্রে একবার সিদ্ধি অর্জন করলে সাধক জলে-স্থলে-আকাশে অজেয় হয়ে ওঠেন। রাজা অনঙ্গভীম দেব গুপ্ত সাধনায় নাগার্জুন মন্ত্র সাধন করতে শুরু করেন। নির্দিষ্ট সময়ে তিনি নাগার্জুন মন্ত্রের সাধনা সম্পূর্ণ করেন। স্বয়ং দেবতা তাঁকে কৃপা করেন। সিদ্ধ অনঙ্গভীম দেব অজেয় হয়ে ওঠেন। এরপর গজপতি অনঙ্গভীম দেব আর যুদ্ধে হারেননি। কথিত স্বয়ং জগন্নাথ যুদ্ধকালে তাঁর পক্ষে লড়েছিলেন। নাগার্জুন মন্ত্র সাধনা পর প্রথম যুদ্ধে জয়লাভ করে যেদিন অনঙ্গভীম দেব উৎকলে ফিরে এসেছিলেন সেদিনও ছিল পাঁচুকা বা পঞ্চুকার অতিরিক্ত তিথি। আপাত দৃষ্টিতে কাকতালীয় মনে হলেও ঘটনাটি বাস্তবে ঘটেছিল। রাজা অনঙ্গভীম দেব পঞ্চুকা তিথিতেই জগন্নাথকে বিশেষ নাগার্জুন বেশে সাজানোর ইচ্ছে প্রকাশ করেন। অচিরেই সমস্ত আয়োজন শুরু হয়। কালিয়াঠাকুর জগন্নাথ ও বড়ঠাকুর বলদেব সেজে ওঠেন নাগার্জুন বেশে। জগন্নাথকে অনঙ্গভীম দেব উৎকলের প্রকৃত রাজার মর্যাদা দিয়েছিলেন এবং তিনি বিশ্বাস করতেন জগন্নাথের প্রতিনিধি স্বরূপ তিনি উৎকল রাজ্য শাসন করেন। কালক্রমে জগন্নাথ-বলরামের নাগার্জুন বেশ ওড়িশার ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ-সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে ওঠে। সেই ঐতিহ্য আজও পুরীর শ্রীমন্দির সহ জগন্নাথের অন্য সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্দির বহন করে চলেছে। এমনকি ওড়িশার বহু পুরুষ দেবতার মন্দিরে নাগার্জুন বেশে (Nagarjuna besha) দেববিগ্রহ সাজানো হয়ে আসছে।

শ্রীক্ষেত্রের শ্রীমন্দিরে শুধুমাত্র জগন্নাথ ও বলদাউ নাগার্জুন বেশে (Nagarjuna besha) সাজেন। জগন্নাথ ও বলভদ্রের নাগার্জুন রূপের সঙ্গে উপজাতি নাগ সম্প্রদায়ের বেশভূষার আংশিক মিল রয়েছে। অনেকে মনে করেন জগন্নাথের নাগার্জুন বেশ (Nagarjuna besha) উপজাতি বা অন্ত্যজ বা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্মারক। জগন্নাথ যেমন আর্যের তেমনই অনার্যের। জগন্নাথ ও বলভদ্র নাগার্জুন বেশে (Nagarjuna besha) মূলত যুদ্ধযাত্রী যোদ্ধাদের মতো সজ্জিত হন। দেববিগ্রহের মাথায় শিরস্ত্রাণের অনুকরণে মুকুট দেখা যায়। সাধারণ বস্ত্রের ওপর লেখা বাঘের ছাল। জগন্নাথ ও বলভদ্র নাগার্জুন বেশ (Nagarjuna besha) শৃঙ্গার করলেও দেবী সুভদ্রা সোনা বেশ শৃঙ্গারের অনুরূপ সাজসজ্জা করেন। প্রাচীনকালে সাধারণত নারীগণ যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করতেন না। কিন্তু প্রাচীন ভারতে বীরাঙ্গনা নারী ছিলেন না, এমন নয়। আদি সাহিত্য রামায়ণেই রয়েছেন কৈকেয়ী দেবী, যিনি রাজা দশরথের সঙ্গে যুদ্ধের প্রান্তরে অংশ নিয়েছিলেন।

অবকাশ বেশ ত্যাগ করে অনতিবিলম্বে নাগার্জুন বেশে (Nagarjuna besha) জগন্নাথ ও বলভদ্র আপাদমস্তক যুদ্ধসাজে সজ্জিত হন। জগন্নাথ ও বলভদ্রের মাথায় কালো রঙের হাণ্ডিয়া মুকুট শোভা পায়। এই বিশেষ মুকুটের প্রধান রঙ কালো, তার ওপর সোনালী ও রূপোলী জরির কাজ করা থাকে। এই মুকুট তৈরিতে কাগজ, কাপড়, রঙ, পাতলা বেত ও বাঁশের চটার ব্যবহার করা হয়। এটি দেখতে অনেকটা প্রাচীনকালে যুদ্ধে ব্যবহৃত হেলমেট বা শিরস্ত্রাণের মতো। অনেকাংশে টুপির মতো করে এই মুকুটটি পরানো হয়। এই মুকুটের একেবারে চূড়ার অংশে বসানো হয় একটি নাগফুল। এছাড়াও মুকুটের সঙ্গে গাঁথা থাকে ঐতিহ্যবাহী চন্দ্র-সূর্য, আদকানি অলংকার। দুই দেবতারই কপালে সোনার তিলক সাজানো হয়। জগন্নাথ ও বলরাম নাগার্জুন বেশে দাড়ি পরেন। কালো রঙের পাকানো দাড়ি বিগ্রহের গালের ধার বরাবর অর্ধচন্দ্রাকৃতিতে সাজানো হয়। বলাবাহুল্য নাগার্জুন বেশ ছাড়া আর কোনো বেশেই জগন্নাথ ও বলভদ্রের মুখে দাড়ি লাগানোর আয়োজন করা হয় না। রত্নসিংহাসনের দেবতারা সকলেই কানে কুণ্ডল পরেন। জগন্নাথ ও বলভদ্রের গলায় রকেটের মতো করে ঝুলে থাকে বাঘনখী অলংকার। তাঁদের কোমড়ে সোনার কোমড়বন্ধন দেওয়া হয়। এর ঠিক নিচে তাঁরা বাঘছাল ধারণ করেন। শোনা যায়, পূর্বে আসল বাঘছালের আয়োজন করা হতো। কিন্তু এখন বাঘছাল প্রিন্টের কাপড়ের ব্যবহার করা হয়। শাহী যাত্রায় নাগ সম্প্রদায় বা নাগারা যেমন কাঁধে পালকের গুচ্ছ পরেন ঠিক যেন তার অনুসরণে জগন্নাথ ও বলভদ্রের কাঁধে কলমি ফুলের সজ্জা থাকে। জগন্নাথ ও বলভদ্র কোমড়ে ধারণ করেন বাঁকা ছুরি, কাটারি, ঢাল, শিঙা, খড়্গ, রঞ্জকদান ইত্যাদি। নাগার্জুন বেশে (Nagarjuna besha) জগন্নাথ ও বলভদ্র হাত-পা ধারণ করেন। জগন্নাথের ডান হাতে চক্র ও বাঁ হাতে শঙ্খ থাকে এবং বলদাউ-এর ডান হাতে মুষল ও বাঁ হাতে হল থাকে। জগন্নাথ ও বলভদ্রের পীঠের দিকে ধনুকের মতো করে সাজানো হয় নাগাতাতি বা ধেনু। এর মধ্যে রক্ষিত থাকে অনেকগুলি অস্ত্র। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ত্রিশূল, বর্শা, শর, ত্রিকোণ পতাকা ইত্যাদি। অস্ত্র সহ নাগার্জুন বেশের প্রতিটি সাজই উৎকলের শিল্পীরা হাতে তৈরি করেন। বিভিন্ন কাগজ, কাপড়, বেত, বাঁশ, রঙ ও আঠার ব্যবহার করা হয়। জগন্নাথ ও বলভদ্রের নাগার্জুন বেশ বীর ভাবের উদ্রেক করে। তিনি ভক্তকে আশ্বস্ত করেন ভক্তের সঙ্কটে, বিপদে সর্বক্ষণ তিনি তার সঙ্গে রয়েছেন। লোকবিশ্বাস রয়েছে জগন্নাথের নাগার্জুন বেশ (Nagarjuna besha) দর্শন করলে ঐহিক ও পারৈহিক শত্রুহানি হয় এবং পার্থিব ও অপার্থিব সমস্ত সঙ্কট নাশ হয়। জগন্নাথ ও বলভদ্র নাগার্জুন বেশে ভক্তের কাছে বার্তা দেন ভক্তকে রক্ষা করতে তিনি সবসময় প্রস্তুত রয়েছেন এবং ভক্তের যাবতীয় সংগ্রামে তিনি সহযোদ্ধা হয়ে সহযোগিতা করেন। জগন্নাথের নাগার্জুন বেশ বার্তা দেয় তিনি অনাথের নাথ, অধনের ধন, অবলের বল হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন, আমাদের শুধু নির্ভর করার মতো মানসিক স্থিরতা প্রয়োজন।

অভিজিৎ পাল | Avijit Pal

Living next to tiger | বাঘের পাশে বাস করা | 2023

The legend of Jagannath | জগন্নাথের কিংবদন্তি

New Bengali Poetry 2023 | কবিতাগুচ্ছ | জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়

Andaman Cellular Jail | আন্দামানের কুখ্যাত সেলুলার জেল | 2023

The legend of Jagannath | Legend of Jagannath Puri | Puri – Legend of Jagannath | History Legend of Jagannath | Legend of Jagannath History | News Legend of Jagannath | Legend of Jagannath in puri | Legend of Jagannath pdf | Pdf book Legend of Jagannath | Legend of Jagannath pdf download | Legend of Jagannath pdf bengali | Legend of Jagannath – temple puri | Legend of Jagannath 2023 | New Legend of Jagannath | Legend of Jagannath – video | Legend of Jagannath video | Legend of Jagannath viral video | New video Legend of Jagannath | Full video Legend of Jagannath | Article Legend of Jagannath | Legend of Jagannath article | Legend of Jagannath article bengali | Legend of Jagannath article pdf | Legend of Jagannath article video | Bengali article – Legend of Jagannath | English Article – Legend of Jagannath | Top article – Legend of Jagannath | Article history – Legend of Jagannath | 2023 article – Legend of Jagannath | Trending article – Legend of Jagannath | Viral article – Legend of Jagannath | Trending videos – Legend of Jagannath | new article – Legend of Jagannath | pdf article – Legend of Jagannath | new song – Legend of Jagannath | long article – Legend of Jagannath | trailer Legend of Jagannath | viral trailer – Legend of Jagannath | video clip – Legend of Jagannath | Legend of Jagannath video clip | new clip – Legend of Jagannath | top clip – Legend of Jagannath | best clip – Legend of Jagannath | short video – Legend of Jagannath | full video – Legend of Jagannath | news – Legend of Jagannath | Legend of Jagannath web story | Shabdodweep Founder | Shabdodweep Web Magazine

Leave a Comment