Lord Jagannath and Chaitanya Mahaprabhu | Best Article

Sharing Is Caring:

চৈতন্য মহাপ্রভু ও বাংলার মাটির জগন্নাথ – অভিজিৎ পাল

তুর্কি আক্রমণ পরবর্তী সময়ের বিধ্বস্ত বঙ্গীয় হিন্দুসমাজ যখন দুই শতাব্দী ব্যাপী সামাজিক অস্থিরতা ও রাজনৈতিক অপশাসনের বিরুদ্ধে আর্তির চরম সীমায় পৌঁছেছিল তখন আবির্ভাব ঘটেছিল গৌরসুন্দর শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর। হতশ্রী বৃহত্তর বাঙালি জাতিকে ঐশীবোধের অমোঘ স্পর্শ দিয়ে ঐক্যবদ্ধ করে এক নবজাগ্রত চেতনায় উজ্জীবিত করে তুলেছিলেন মহাপ্রভু চৈতন্যদেব। পূর্ব-সন্ন্যাসজীবনে নবদ্বীপের শ্রেষ্ঠ নৈয়ায়িক পণ্ডিত রূপে তিনি সম্যক প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন। দিগ্বিজয়ী পণ্ডিত তাঁর কাছে এসে তর্কযুদ্ধে পরাজিত হয়ে নতিস্বীকার করেছিলেন। কিন্তু বৈরাগ্যের আগুন তাঁকে স্পর্শ করেছিল। বৈরাগ্যাগ্নি স্পর্শের পর তিনি অবলীলায় গৃহ-জন-মান-যশ সমস্ত কিছু নিমেষের মধ্যে ত্যাগ করে কেশব ভারতীর কাছে সন্ন্যাস গ্রহণ করেছিলেন।১ সন্ন্যাস গ্ৰহণের পর তাঁর সন্ন্যাসনাম হয়েছিল শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য ভারতী। চৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাবের ঠিক আট বছর পর গৌড়বঙ্গের সিংহাসনে বসেন হোসেন শাহ। এরপর থেকে বঙ্গের সামাজিক অস্থিরতা খুব ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে।

কেশব ভারতীর কাছে সন্ন্যাসগ্ৰহণের অনেক আগে থেকেই সাধারণ মানুষের চোখে মহাপ্রভু চৈতন্যদেব যে উচ্চতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন তাতে চৈতন্যদেব চাইলেই তৎকালীন বঙ্গসমাজে প্রচলিত লোকসংস্কার বা লোকাচার অতিক্রম করে সন্ন্যাসের পরেও নবদ্বীপে অবস্থান করতে পারতেন। অদ্বৈত আচার্য, নিত্যানন্দ প্রভু সহ শান্তিপুর ও নবদ্বীপের অনেক বৈষ্ণবই চেয়েছিলেন সন্ন্যাসী চৈতন্যদেব যেন এই অঞ্চল ছেড়ে অন্যত্র না চলে যান। চৈতন্যদেব কিন্তু সন্ন্যাসীর প্রচলিত আদর্শ থেকে বিচ্যুত হতে তিনি চাননি। তিনি সন্ন্যাসের পর বৃন্দাবনবাসী হতে চেয়েছিলেন। জননী শচী দেবীর ‘‘নীলাচলে নবদ্বীপে যেন দুই ঘর।/ লোক গতাগতি বার্তা পাব নিরন্তর।।’’২ পরামর্শ মেনে স্বভূমি ত্যাগ করে তিনি শ্রীক্ষেত্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তৎকালীন সময়ে বঙ্গের নবদ্বীপ, সপ্তগ্রাম, অগ্ৰদ্বীপ প্রভৃতি বৈষ্ণব অধ্যুষিত জনপদ থেকে বহু মানুষ পুরীধামে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। শিবানন্দ সেন পথপ্রদর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে গৌড়ীয় বৈষ্ণবদের দলে দলে একাধিকবার পুরীতীর্থে নিয়ে গিয়েছিলেন। নবদ্বীপের মানুষের পুরীতীর্থে নিয়মিত যাতায়াত থাকায় চৈতন্যদেবের সংবাদ সহজেই শচী দেবী পাবেন এই আশা রেখেছিলেন। চৈতন্যদেব সমকালের রাজনৈতিক পরিস্থিতির জটিলতা সম্পর্কে সচেতন হলেও জগন্নাথদর্শনের অধীর আকাঙ্ক্ষা ও শ্রীক্ষেত্রের প্রতি তাঁর আকর্ষণ সমসাময়িক রাজনৈতিক জটিলতা‌‌ তাঁর মনে বিশেষ একটা দাগ ফেলতে দিতে পারেনি। পুরীধামে পৌঁছে প্রথমবার দারুব্রহ্ম পুরুষোত্তম জগন্নাথের দর্শন করেই তিনি বাহ্যচেতনা হারিয়ে আত্মস্থ হয়ে পড়েছিলেন।৩ এই সময় চৈতন্যদেব যেন জগন্নাথের মধ্যে আত্মদর্শন করেছিলেন।

পুরীধামে প্রথমবার অবস্থানের শুরুতেই নবীন সন্ন্যাসী চৈতন্যদেবের সঙ্গে পণ্ডিত বাসুদেব সার্বভৌমের পরিচয় হয়েছিল। বাসুদেব সার্বভৌমের সঙ্গে উৎকলের গজপতি মহারাজা প্রতাপরুদ্র দেবের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। বাসুদেব সার্বভৌমের কাছে কিছুদিন অবস্থান করার পরে চৈতন্যদেব দাক্ষিণাত্যে পরিব্রজ্যায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।৪ দাক্ষিণাত্যে পরিব্রাজক অবস্থায় চৈতন্যদেব একাধিক তীর্থদর্শন করেছিলেন। দাক্ষিণাত্যে পরিব্রজ্যাকালে চৈতন্যদেব শ্রীরঙ্গমে দীর্ঘ সময় অবস্থান করতে মনস্থির করেছিলেন। এই সময়ে তাঁর সঙ্গে রামানুজপন্থী ব্রাহ্মণ বেঙ্কট ভট্টের পরিচয় হয়েছিল। চৈতন্যদেব বেঙ্কট ভট্টের অনুরোধে তাঁর গৃহে আতিথ্য গ্রহণ করেছিলেন। ৫ পুরীতে প্রথমবার জগন্নাথদর্শনেই জগন্নাথের প্রতি মহাপ্রভুর যে দিব্যপ্রেমের সঞ্চার হয়েছিল জগন্নাথের প্রতি সেই প্রেম তিনি পরিব্রাজক অবস্থাতেও হৃদয়ে বহন করে এনেছিলেন। জগন্নাথের থেকে কায়িক দূরত্ব বাহ্যভাব অবস্থায় তাঁর মনে বিরহ জাগিয়ে তুলতে শুরু করেছিল। জগন্নাথের বিরহতাপ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য চৈতন্যদেব মাটি দিয়ে নিজে হাতে জগন্নাথের বিগ্রহ তৈরি করে বেঙ্কট ভট্টের পরিবারে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।৬ চৈতন্য মহাপ্রভুর প্রতিষ্ঠিত এই জগন্নাথ বিগ্রহের মুখমণ্ডলে বাংলার মাটির জগন্নাথের মতো চোখ, নাক, ঠোঁট, কান, গলা নিখুঁতভাবে রয়েছে। এই মন্দিরের জগন্নাথ বিগ্ৰহের বসার ভঙ্গিমাতে বঙ্গীয় মৃৎবিগ্ৰহের নিজস্ব শৈলী প্রতিফলিত হয়েছে। এছাড়া জগন্নাথ বিগ্ৰহের পরিধানে বঙ্গীয় বস্ত্ররীতির ছাপ রয়েছে। তবে পার্থক্য রয়েছে জগন্নাথ বিগ্ৰহের মাথার চূড়া বা মুকুটের অংশে। দাক্ষিণাত্যের দেববিগ্রহের মুকুট ও অন্য অলংকারের গড়ন বঙ্গের নিজস্ব অলংকারের শৈলী থেকে অনেকটা আলাদা। চৈতন্যদেব প্রতিষ্ঠিত এই জগন্নাথ বিগ্রহের মাথায় যে মুকুটের মতো অংশটি রয়েছে তাতে দক্ষিণ ভারতীয় শিল্পরীতিতে তৈরি অলংকারের আভাস রয়েছে। অনুমিত হয়, জগন্নাথের এই মৃৎবিগ্রহ তৈরির সময় বঙ্গীয় মৃৎশিল্পের প্রকরণ চৈতন্য মহাপ্রভু গ্ৰহণ করার পাশাপাশি জগন্নাথের অলংকার বিন্যাসে দক্ষিণ ভারতীয় প্রকরণের ব্যবহার করে উভয় ধারার সংস্কৃতির প্রতিই সম্মান জ্ঞাপন করেছিলেন। চৈতন্যদেব শ্রীরঙ্গমে বসবাসের সময় শ্রীরঙ্গনাথ স্বামীর নিত্যসেবা দেখতেন।৭

মহাপ্রভুর অবস্থানভূমির থেকে শ্রীরঙ্গম মন্দিরের দূরত্ব বেশি ছিল না। বঙ্গের কৃষ্ণ, উৎকলের জগন্নাথ, দক্ষিণের শ্রীরঙ্গনাথ স্বামী চৈতন্য মহাপ্রভুর দৃষ্টিতে আলাদা ছিলেন না। হয়তো তাই চৈতন্যদেবের হাতে গড়া মাটির তৈরি এই জগন্নাথ বিগ্রহে এমন একটি মিশ্র ভাব দেখা যায়। আবার এমন ঘটাও খুব অস্বাভাবিক নয় যে, বেঙ্কট ভট্টের পরিবারের জগন্নাথ বিগ্রহ তৈরির সময় চৈতন্যদেব তত্ত্বাবধান করেছিলেন এবং তিনি মূর্তি নির্মাণের সময় তাঁর সহযোগী কোনো দক্ষিণ ভারতীয় শিল্পীকে জগন্নাথের অলংকার বিন্যাসের সময় যথেষ্ট স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। ফলে জগন্নাথ বিগ্রহে বঙ্গীয় ও দক্ষিণ ভারতীয় উভয় ধারার শিল্পরীতির সরাসরি প্রভাব পড়েছে। চৈতন্যদেব প্রতিষ্ঠিত এই সপার্ষদ জগন্নাথ বিগ্রহের জগন্নাথের প্রায় উচ্চতায় একই ভঙ্গিতে রয়েছে বলভদ্রদেবের বিগ্রহ এবং জগন্নাথ-বলভদ্রের মধ্যে অবস্থিত সুভদ্রা দেবীর বিগ্রহ জগন্নাথ-বলরামের থেকে সামান্য একটু ছোট উচ্চতার। তবে সুভদ্রা দেবীর মাথায় দক্ষিণ ভারতীয় দেবীবিগ্রহের রীতিতে একদিকে হেলানো চুলের খোঁপা রয়েছে। বাংলার অনেক জগন্নাথ মন্দিরেই সুভদ্রা দেবীর মাথায় চুলের বিন্যাস দেখা যায়, তবে এই রীতিটি ওড়িশায় নেই। জগন্নাথ বিগ্রহের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে সুদর্শন বিগ্রহের আয়োজন ওড়িশায় রয়েছে, এই রীতিটি দীর্ঘদিন ধরে বঙ্গে ও অন্যত্র অপ্রচলিত ছিল। এমনকি হুগলির মাহেশের জগন্নাথ বিগ্রহের সঙ্গেও দণ্ডবৎ কোনো সুদর্শন বিগ্রহ দেখা যায় না। মাহেশের জগন্নাথ চৈতন্য-পূর্ববর্তী সময়ের দারুবিগ্রহ।৮ চৈতন্য পূর্ববর্তী সময়ের বঙ্গের জগন্নাথ বিগ্রহের মধ্যে একমাত্র মাহেশের জগন্নাথের বিগ্রহই কোনোদিন নবকলেবর না হওয়ায় এখনও পর্যন্ত সম্পূর্ণ অবিকৃত রয়েছে। চৈতন্য মহাপ্রভু প্রতিষ্ঠিত বেঙ্কট ভট্টের পরিবারের জগন্নাথ বিগ্রহের রঙ নীল। নীল রঙের জগন্নাথ ওড়িশায় দেখা যায় না। ওড়িশায় জগন্নাথ মাত্রেই ঘন কালো। তবে বহু নীল জগন্নাথ সারা পূর্ববঙ্গে এখনও বিভিন্ন মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত রয়েছেন। পূর্ববঙ্গের অন্যতম প্রাচীন নীল জগন্নাথ রয়েছেন হাণ্ডিয়ালের জগন্নাথ মন্দিরে।৯ কথিত হাণ্ডিয়ালের জগন্নাথ মন্দিরের দারুনির্মিত জগন্নাথ বিগ্রহ চৈতন্যদেবের সমসাময়িক। তবে এই বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে। হাণ্ডিয়ালের জগন্নাথ যদি বাস্তবিকই চৈতন্যদেবের সমসাময়িক হয়ে থাকে, তবে স্বসংস্কৃতি-সচেতন চৈতন্যদেবের কাছে হাণ্ডিয়ালের জগন্নাথ বিগ্রহের কথা অজানা ছিল বলে মনে হয় না। বেঙ্কট ভট্টের পরিবারে চৈতন্য মহাপ্রভুর জগন্নাথ প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই তাই জগন্নাথের মৃৎবিগ্রহের রঙ নীল হওয়া অস্বাভাবিক নয়। মহাপ্রভু প্রতিষ্ঠিত জগন্নাথের এই মৃৎবিগ্রহ এত বছরে ধরে বহুবার অঙ্গরাগ করা হলেও তাঁর নীল রঙটি পূর্ব ঐতিহ্য স্মরণে রেখে বদল করা হয়নি।

মহাপ্রভু চৈতন্যদেব বাঙালির ধর্ম-কর্ম-কৃষ্টি-সংস্কৃতির স্বচ্ছ ধারণা রাখতেন। অখণ্ড বঙ্গদেশের নিজস্ব মৃৎশিল্প ও মাটি দিয়ে প্রতিমা নির্মাণের পরম্পরার সঙ্গে তাঁর পরিচয়ও নিশ্চয়ই ছিল। বঙ্গদেশের প্রাচীন মন্দিরে পাথরের তৈরি বিগ্রহের সংখ্যা খুবই কম।‌ পাথরের বিগ্রহ নির্মাণ করার জন্য উপযুক্ত পাথর গাঙ্গেয় বদ্বীপে তথা বঙ্গে পাওয়া যেত না। পাশ্ববর্তী প্রদেশ থেকে তা নিয়ে আসার ব্যবস্থা করতে হতো। অন্যপ্রদেশ থেকে ওজনদার বড় পাথর আনানোর ব্যয়ও ছিল যথেষ্ট। হিন্দুবৌদ্ধ যুগ পর্যন্ত বাংলার শাসকরা এই বিপুল ব্যয় সানন্দে বহন করেছেন। কিন্তু তুর্কি আক্রমণের পরে এই পট পরিবর্তন হয়ে যায়। বঙ্গদেশের নতুন শাসকের চোখে অন্য ধর্মের আরাধ্য দেবতার মূর্তি নির্মাণ ও মূর্তিপূজা হয়ে ওঠে দোষের। ফলে বঙ্গের শাসকের পক্ষ থেকে নতুন করে পাথরের দেববিগ্রহ তৈরি করার আর অবসরও অবশিষ্ট ছিল না। অথচ এই কঠিন সময়েও বঙ্গদেশের মৃৎশিল্পের ধারাটি লোকসমাজে বজায় ছিল। কিন্তু মৃৎবিগ্রহ অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি ক্ষণভঙ্গুর হওয়ায় পাথরের দীর্ঘস্থায়ী মূর্তি নির্মাণের বিকল্প পথ হয়ে ওঠে দারুবিগ্রহ নির্মাণ। এর ফলে মূলত পরিণত চন্দন, আম, কাঁঠাল ও নিম গাছের কাঠ দিয়ে দেববিগ্রহ তৈরির প্রবণতা তৈরি হয়েছিল এই পর্ব থেকে। অখণ্ড বঙ্গপ্রদেশের প্রাচীন দারুবিগ্রহের মধ্যে বিশেষ করে যশমাধবের দারুবিগ্রহ এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। বাংলার আর্দ্র জলবাতাস দারুবিগ্রহের দীর্ঘস্থায়ীত্বের উপযোগী নয়। ফলে বহু ব্যয় করে তৈরি করা দারুবিগ্রহ কয়েক দশকের মধ্যে ফেটে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের একাধিক সরকারি সংগ্রহশালায় এমন কয়েকটি প্রাচীন দারুবিগ্রহ সংগ্রহ করা হয়েছে। হয়তো এরই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রতিফলনে বৃহত্তর বঙ্গদেশে ক্ষণস্থায়ী মৃৎবিগ্রহ ও দীর্ঘস্থায়ী ধাতুবিগ্ৰহের ব্যবহার বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছিল। নদীমাতৃক বঙ্গভূমিতে পবিত্র গঙ্গা নদীর মাটি দেববিগ্রহ তৈরির প্রধান উপকরণ হয়ে উঠেছিল। সেই ধারা এখনও চলছে। প্রাচীন সময় থেকেই বঙ্গের নদিয়া অঞ্চলে মৃৎশিল্পের রমরমা ছিল। চৈতন্য পরবর্তী যুগে নদিয়ার কৃষ্ণনগর অঞ্চল মৃৎশিল্প চর্চার পীঠস্থান হয়ে উঠেছিল। নদিয়া জেলার মৃৎশিল্পের সেই সুনাম ও যশ আজও পর্যন্ত সমান রয়েছে। বঙ্গদেশে চৈতন্য-পূর্ববর্তী ও চৈতন্য সমসাময়িক সময়ের বিভিন্ন মন্দিরের আরাধ্য দেবতার দারুবিগ্রহগুলি দেখলেই বোঝা যায় বঙ্গীয় মৃৎশিল্পের আঙ্গিনায় তৈরি হওয়া দেবদেবীর মৃৎপ্রতিমার অনুকরণে বাংলার প্রথম পর্বের দারুমূর্তিগুলি গড়ে উঠতে শুরু করেছিল। মহাপ্রভু চৈতন্যদেবের সমকালে অখণ্ড বঙ্গদেশে দারুবিগ্রহের অসামান্য প্রসার যে ঘটেছিল তার অন্যতম সাক্ষী হয়ে রয়েছেন সাক্ষাৎ ধামেশ্বর মহাপ্রভু।‌ অনিন্দ্যসুন্দর দীর্ঘদেহী আয়তনয়ন আজানুলম্বিত এই চৈতন্য-বিগ্ৰহ শাস্ত্রীয় মূর্তিশিল্পের নির্দেশ মতো তৈরি করা হয়েছিল। চৈতন্য মহাপ্রভুর এমন অনন্য দারুবিগ্ৰহ সমগ্র বঙ্গময় খুব কমই রয়েছে বলে মনে হয়। সংস্কৃত শাস্ত্রভাণ্ডারের মধ্যে বিশেষ করে বিষ্ণুপুরাণ, গরুড়পুরাণ, অগ্নিপুরাণ, ভাগবতপুরাণ, বৃহৎ সংহিতা, শুক্রনীতিসার, হরিভক্তিবিলাস প্রভৃতিতে দেবদেবীর প্রতিমা বা দেবতার মূর্তির বেশ কিছু লক্ষ্মণ নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ভারতীয় শাস্ত্রীয় দেবদেবীর বিগ্রহ নির্মাণে প্রধান সাত রকমের বাহ্য উপাদানের স্বীকৃতি রয়েছে। এই উপাদানগুলি হলো শিলা (মূলত কৃষ্ণবর্ণের পাথর), দারু (কাঠ), মৃত্তিকা (মূলত নদীজাত), ধাতু‌ (সোনা-রূপা-তামাদি অষ্টধাতু), সৈকতী (বালি), মণি (রত্ন) ও পট (চিত্র)। এর মধ্যে প্রথম ছয়টি উপাদান সরাসরি দেবদেবীর বিগ্রহ তৈরির সময় কাজে লাগে। শেষ উপাদানে তৈরি হয় বিভিন্ন দেবদেবীর চিত্রপট। এছাড়া ‘মনোময়ী’ দেববিগ্রহ নির্মাণের আর একটি শাস্ত্রীয় নির্দেশ রয়েছে। এই ধরনের দেববিগ্রহ ভক্তের মনে তৈরি হওয়া মানসবিগ্ৰহ। শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণের এগারোতম স্কন্ধের সাতাশ নম্বর অধ্যায়ের বারো সংখ্যক শ্লোকে দেববিগ্রহের বাহ্য ও মানস উপাদান সম্পর্কিত বিস্তারিত বিবরণ বর্ণিত রয়েছে। দেববিগ্রহের অঙ্গবিন্যাস, আসনবিন্যাস, পা ও হাতের মুদ্রাবিন্যাস, অস্ত্রবিন্যাস ও বাহনবিন্যাসের বহু নির্দিষ্ট শাস্ত্রীয় পদ্ধতি থাকলেও দারুব্রহ্ম জগন্নাথ এই সব নিয়মকানুন নিজে হাতে ভেঙে বসে আছেন। জগন্নাথ নিজের নিয়মে নিজে চলেন। জগন্নাথ শাস্ত্রোত্তীর্ণ মহাদেবতা। প্রচলিত দেববিগ্রহ নির্মাণের সমস্ত নিয়ম জগন্নাথদেবের বিগ্রহে দেখা যায় না।

চৈতন্য মহাপ্রভু পুরীর জগন্নাথের দারুবিগ্রহের সমস্ত ইতিবৃত্ত জানতেন। নিয়মোত্তীর্ণ জগন্নাথকে মহাপ্রভু চৈতন্যদেব পুরীর নির্দিষ্ট নিয়মের বাইরে নিয়ে গিয়েছিলেন। চৈতন্য মহাপ্রভু সজ্ঞানে দেববিগ্রহ নির্মাণের শাস্ত্রীয় বিধানকে মান্যতা দিয়ে ও উৎকলের রীতিতে জগন্নাথের দারুবিগ্রহ তৈরি না করে সহজলভ্য মৃত্তিকা দিয়ে বেঙ্কট ভট্টের বাড়িতে সপার্ষদ জগন্নাথের বিগ্রহ তৈরি করেছিলেন। খুব সম্ভবত সারা ভারতে এই প্রথম নিয়মিত পূজার জন্য জগন্নাথের বিগ্রহ প্রচলিত নিমদারুর বদলে মৃত্তিকা দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। এই ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে দেখা হলে, জগন্নাথের প্রথম মৃৎপ্রতিমা নির্মাণের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন একজন বাঙালি যুগপুরুষ। মহাপ্রভু চৈতন্যদেবের প্রতিটি কাজই তাঁর অনুগামী গৌড়ীয় বৈষ্ণবরা অনুসরণ করেছিলেন। চৈতন্যদেবের অনুসরণে বঙ্গদেশে জগন্নাথের মৃৎবিগ্রহ তৈরির প্রথা গড়ে ওঠাটা তাই খুব বেশি অস্বাভাবিক নয়। তাছাড়া নিমদারুর বিগ্রহ অপেক্ষা মৃৎবিগ্রহ ছিল সহজলভ্য ও কম ব্যয়বহুল। বঙ্গদেশে জগন্নাথের মৃৎবিগ্রহ যে ধীরে ধীরে বৃহত্তর জনতার কাছে জগন্নাথ-আহ্লাদনের প্রিয় উপকরণ হয়ে উঠেছিল তার প্রথম পোক্ত লিখিত প্রমাণ পাওয়া যায় কালীপ্রসন্ন সিংহের ‘হুতোম প্যাঁচার নক্‌শা’য়। হুতোম প্যাঁচা ওরফে কালীপ্রসন্ন সিংহ লিখেছেন : “…সহরে রথ পার্ব্বণে বড় একটা ঘটা নাই; কিন্তু কলিকাতায় কিছুই ফাঁক যাবার নয়; রথের দিন চিৎপুর রোড লোকারণ্য হয়ে উঠ্‌লো,… মাটির জগন্নাথ, কাঁঠাল, তালপাতার ভেঁপু, পাখা ও সোলার পাখি বেধড়ক বিক্রি হচ্চে…।”১০ কালীপ্রসন্ন সিংহের এই বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হয়, খোদ ঊনবিংশ শতাব্দীর কলকাতাতে এই ধরনের ছোট ছোট আকারের জগন্নাথের মৃৎবিগ্রহ সাধারণ মানুষের ঘরে প্রবেশ করত। প্রাগুক্ত ‘বেধড়ক’ বিক্রি হওয়ার শব্দবন্ধ থেকে আরও বোঝা যায় যে, ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যেই বাংলার মৃৎবিগ্রহ উপাসনার বৃহত্তর বলয়ে জগন্নাথও প্রবেশ করেছিলেন। মাটির জগন্নাথ তৈরি ও বিক্রির সেই রীতি এখনও অক্ষুণ্ন রয়েছে। বর্তমান সময়ে আন্তর্জাল বাণিজ্যের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে পুরীর ঘরাণায় তৈরি হওয়া জগন্নাথের দারুবিগ্রহ পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে সংগ্রহ করা যায়। কিন্তু তারপরও বাংলার জগন্নাথের মৃৎবিগ্রহের জনপ্রিয়তা কোনো অংশে কমেনি। আষাঢ় মাসের রথযাত্রার কাছাকাছি সময়ে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা সহ অন্যান্য জেলায় কাঠের তৈরি ছোট ছোট রথ বিক্রি হতে দেখা যায়। সাধারণত শিশু ও কিশোর বয়সী ছেলেমেয়েরা এই ধরনের ছোট ছোট রথ টেনে রথোৎসব পালন করে।

রথযাত্রা ও উল্টোরথের তিথিতে কাঠের তৈরি রথগুলিকে রঙিন কাপড়, পতাকা, ফুল, লতা, মালা দিয়ে সাজানো হয়। এই ধরনের ছোট ছোট রথের উপযোগী মাটি বা কাঠের তৈরি ছোট উচ্চতার জগন্নাথ বিগ্রহ রথের ভেতরে স্থাপন করে রথযাত্রার সূচনা করা হয়। বর্তমান সময়ে বাংলার জেলায় জেলায় জগন্নাথের মৃৎবিগ্রহের বৈচিত্র্য রয়েছে। জগন্নাথের ছোট মৃৎবিগ্রহগুলি সাধারণত কাঠ, প্যারিস বা রবারের ছাঁচে ফেলে তৈরি করা হয়। এক এক শিল্পীর তৈরি করা এক এক রকমের ছাঁচে স্বভাবতই জগন্নাথের অলংকার ও বস্ত্রের শৈলীতে ছোট-বড় রকমের পার্থক্য ধরা পড়ে। এবিষয়গুলি ব্যতিরেকে মাটির তৈরি জগন্নাথের রঙ, মুখ, চোখ, নাক, ঠোঁট, হাত, পোশাক, তিলক, বসার ভঙ্গি, যানবাহন, বিগ্রহের আসন, পার্শ্বদেবতা ও সহায়ক-দেবতা, কৃষ্ণানুসঙ্গ, চৈতন্যানুসূত্র ইত্যাদি বৈচিত্র্যের নিরিখে বর্তমান সময়ে প্রাপ্ত জগন্নাথের মৃৎবিগ্রহগুলিতে বৈচিত্র্য এসেছে।
মৃৎশিল্পের বলয়ে ছোট ছোট উপকরণের পার্থক্যে জগন্নাথ বিগ্রহে বৈচিত্র্য আসে। তবে গড়নের দিক থেকে জগন্নাথ বিগ্রহ মূলত দুই প্রকারের। একক জগন্নাথ ও সপার্ষদ জগন্নাথ। একক জগন্নাথের মৃৎবিগ্রহ কম তৈরি করা হলেও নদিয়ার শান্তিপুর অঞ্চলে একক জগন্নাথ উপাসনার রীতি প্রচলিত রয়েছে। তবে বঙ্গের অধিকাংশ জগন্নাথের মৃৎবিগ্ৰহই সপার্ষদ। মৃৎশিল্পের বলয়ে জগন্নাথের সঙ্গে একত্রে সুভদ্রা দেবী ও বলরামের উপস্থিতিই সহজলভ্য। জগন্নাথের মুখাবয়বের দিক থেকে বিচার করলে জগন্নাথের মুখ নির্মাণের প্রধানত দুই রকমের রীতি বঙ্গে প্রচলিত রয়েছে।

কৃষ্ণমুখের জগন্নাথই বঙ্গে বেশি দেখা যায়। এটিই প্রাচীন বঙ্গীয় শৈলী। এক্ষেত্রে জগন্নাথকে ভ্রুযুক্ত আয়তনয়ন, উন্নত নাসা ও দ্বিবিভক্ত ঠোঁট সংযুক্ত অবস্থায় দেখা যায়। অনেক শিল্পী জগন্নাথের কানও তৈরি করেন। বর্তমান সময়ে পুরীর শ্রীমন্দিরের শৈলীতে জগন্নাথের মুখ নির্মাণের প্রবণতা তৈরি হয়েছে। এই ধরনের বিগ্রহে সরাসরি রঙের সাহায্যে জগন্নাথের মুখের অংশে দুটি গোলাকার চোখ ও আকর্ণ বিস্তৃত অবিভক্ত ঠোঁট আঁকা হয়। জগন্নাথের মুখাবয়ব আরও একটু আকর্ষণীয় করে তুলতে ভ্রুমধ্যে এক বিন্দু তিলক, কপালের কেন্দ্র থেকে গাল পর্যন্ত অর্ধবৃত্তাকারে বধূতিলক ও কপাল থেকে নাসা পর্যন্ত ঐতিহ্যবাহী গৌড়ীয় তিলকের আয়োজন দেখা যায়। বঙ্গের অধিকাংশ অঞ্চলেই জগন্নাথের মৃৎবিগ্ৰহ তৈরির সময় তাঁকে মোগল-রাজপুত শৈলীর বস্ত্রে সাজানো হয়। ফলে জগন্নাথের মৃৎবিগ্রহগুলিতে তাঁর আজানুলম্বিত বস্ত্রের আড়ালে থাকা তাঁর পা দেখা না গেলেও হাতের অংশটি প্রকাশিত থাকে। বাংলার মৃৎশিল্পের ঘরাণায় মূলত তিনটি ধরনের শৈলীতে জগন্নাথের হাত তৈরি করা হয়। জগন্নাথের অনেক বিগ্রহে দেখা যায় তাঁর পূর্ণবাহু। সাধারণত এই ধরনের বিগ্রহে জগন্নাথের হাত দুটি ঊর্দ্ধে তোলা থাকে। এর সঙ্গে কীর্তনরত চৈতন্যদেবের অবয়বের যথেষ্ট মিল রয়েছে। ঊর্দ্ধবাহু শৈলী ছাড়া অর্ধবাহু শৈলীর জগন্নাথ বিগ্রহও যথেষ্ট সংখ্যক দেখা যায় দক্ষিণবঙ্গে। এক্ষেত্রে জগন্নাথকে সম্পূর্ণ বাহুতে সাজানো না হলেও হাতের অর্ধেকটি ওপরের বা নিচের দিকে তুলে অথবা সামনের দিকে এগিয়ে রাখতে দেখা যায়। এছাড়াও বঙ্গে আর একটি শৈলী প্রচলিত রয়েছে যেখানে জগন্নাথ মহাপ্রভুর হাতের মাত্র কণাংশ দেখা যায়। এক্ষেত্রে বস্ত্রের ওপর কালো রঙের গোলকে শুধুমাত্র বাহুমূলটুকু আঁকা হয়। মৃৎবিগ্রহগুলিতে জগন্নাথ মহাপ্রভুর শরীরে অলংকারের বাহুল্য না থাকলেও মাটির তৈরি মুকুট, কুণ্ডল, কণ্ঠহার, মালা, কটিবন্ধ দেখা যায়। বর্তমান সময়ে মুকুটের পরিবর্তে পাঞ্জাবি শৈলীর পাগড়ির ব্যবহার শুরু হয়েছে। একটু বড় মাপের বিগ্রহে বঙ্গের প্রসিদ্ধ ডাকের সাজ এবং হলুদ রঙের কাগজের ওপর জরির নক্‌সা তোলা সাজের অলংকার ব্যবহার করা হয়। তাঁর মাথায় ময়ূরের পালক লাগানো হয় বেশ কিছু বিগ্ৰহে। বঙ্গের জগন্নাথের সঙ্গে রথের একটি সরাসরি সংযোগ রয়েছে। ফলে মাটির জগন্নাথের বিগ্ৰহে অনেক সময় তাঁকে ঘোড়া, হাতি, হরিণ, রাজহাঁস চালিত রথে বসা অবস্থায় দেখা যায়। শুধুমাত্র চারচাকা বিশিষ্ট সোনালী রথের ওপর জগন্নাথের বসা বিগ্ৰহও সহজলভ্য। রথের সঙ্গে প্রায় আবশ্যিকভাবে একটি জয়ধ্বজ দেখা যায়। আধুনিক সময়ে জগন্নাথের বিন্যাসের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য এসেছে। বলভদ্র ও সুভদ্রা ছাড়াও জগন্নাথের অনুসঙ্গে সংযুক্ত হয়েছেন হনুমান, গরুড়, কৃষ্ণ ও চৈতন্যদেব। এর মধ্যে চৈতন্যদেবের কোলে স্থিত জগন্নাথ বিগ্রহই বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এই ধরনের বিগ্ৰহে চৈতন্যদেব এক হাতে জগন্নাথকে আলিঙ্গন করে থাকেন অন্যহাতে তিনি মালা জপ করেন। জগন্নাথকে আরও একটু সাজিয়ে তুলতে বিগ্ৰহের সঙ্গে কখনও রাজছত্র, রাজসিংহাসন যেমন ব্যবহার করা হয় তেমনই বড় পদ্মফুল, সপুষ্প কদমগাছের ব্যবহার করা হয়। বাংলার অধিকাংশ মৃৎ-জগন্নাথই কৃষ্ণবর্ণের। তবে বঙ্গেই স্থানভেদে কাঁচা সবুজ ও আকাশী নীল রঙে মাটির তৈরি জগন্নাথকে রাঙিয়ে তোলার রীতিও রয়েছে। বিশেষত শান্তিপুরের সবুজ জগন্নাথ এদিক থেকে বিশিষ্টতা অর্জন করতে পেরেছে। শান্তিপুরের বড় গোস্বামীদের নবদুর্বাদল বর্ণের রঘুনাথ ও জগন্নাথ একত্রে মিশে গেছেন। তাই জগন্নাথ এখানে রামের মতোই সবুজ। উত্তরবঙ্গের কিছু অঞ্চলে সাদা রঙের জগন্নাথ বিগ্রহ পাওয়া গেলেও এই শিল্পরীতিটি বহুল প্রচলিত নয়।

চৈতন্য-পূর্ব সময়ে বঙ্গদেশের তুঙ্গভূমে ওড়িশা প্রবাসী মানুষের হাত ধরে বঙ্গভূমিতে প্রথম মহাপ্রভু জগন্নাথদেবের যেদিন প্রতিষ্ঠা ঘটেছিল তারপর থেকে বাংলার ধর্ম, সমাজ, কৃষ্টি ও সংস্কৃতিতে জগন্নাথ মহাপ্রভুর অবাধ গতাগতি রয়েছে। জগন্নাথ যতটা ওড়িশার, ততটাই বঙ্গের এবং ততটা সমগ্র ভারত ও বিশ্বের। বিদেশে অবস্থিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক হিন্দু সংগঠন প্রতিনিয়ত জগন্নাথ সংস্কৃতির প্রসার ঘটাচ্ছে। যখন সমগ্র বিশ্বময় জগন্নাথ সংস্কৃতির এমন একটি বৃহত্তর প্রসার ঘটেছে তখন জগন্নাথের দ্বিতীয় নীলাচলের (মাহেশকে জগন্নাথের দ্বিতীয় নীলাচল ও নব নীলাচল বলা হয়) বঙ্গদেশে তার অন্যথা হবে কীভাবে? পশ্চিমবঙ্গের মূলধারার সংস্কৃতি ও লোকায়ত সংস্কৃতির উভয় ধারায় জগন্নাথ তাঁর অনন্য যাতায়াত বজায় রেখে চলেছেন। বাংলার মৃৎশিল্পীরা নিজস্ব অধ্যাবসায়ে জগন্নাথকে নিত্যনতুন করে সাজিয়ে তোলার সাধনা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাংলার মৃৎনির্মিত জগন্নাথের যে অভিযাত্রা বঙ্গ-তনয় মহাপ্রভু চৈতন্যদেব শ্রীরঙ্গমে বসবাসের সময় সূচনা করেছিলেন সেই ধারা বঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে নানাভাবে বিবর্তিত হয়ে, নানা নতুন অনুসঙ্গে সজ্জিত হয়ে আজও ইতিহাসকে জীবন্ত করে রেখেছে। বিশ্বায়নের যুগে বঙ্গদেশে জগন্নাথের দারুবিগ্রহের যথেষ্ট প্রসার ঘটেছে কিন্তু তাতে বাংলার নিজস্ব শৈলীতে নির্মিত মৃৎনির্মিত জগন্নাথের জনপ্রিয়তা কোনো অংশে কমেনি। এ যে বাংলার মৃৎশিল্পের সাধকদের জগন্নাথ-সাধনা। এই সাধনা কখনও কি আর বিফলে যেতে পারে? পারে না, কখনই পারে না। বাংলার মৃৎশিল্পীদের এই সাধনেই জগন্নাথ প্রতি বছর আরও নিত্যনতুন হয়ে আমাদের নয়নপথগামী হয়ে ওঠেন।

তথ্যসূত্র

১. গোস্বামী, শ্রীল কৃষ্ণদাস কবিরাজ, ‘শ্রীশ্রীচৈতন্যচরিতামৃত’, প্রথম সংস্করণ, গীতা প্রেস, গোরক্ষপুর, ২০২১, পৃ. ১৫৯
২. তদেব, পৃ. ১৯৫
৩. পৃ. ১৭৭-১৮০
৪. তদেব, পৃ. ২২৯-২৩০
৫. তদেব, পৃ. ২৬২-২৬৩
৬. Lord Chaitanya’s Jagannath Deities, Publishing Date : 11-08-2016, Internet archive edition, Visiting Date : 06-08-2023, Time : 01.26 PM, weblink: https://www.bvmlu.org/SCM/deities/index.html
৭. গোস্বামী, শ্রীল কৃষ্ণদাস কবিরাজ, ‘শ্রীশ্রীচৈতন্যচরিতামৃত’, গীতা প্রেস, পৃ. ২৬৩-২৬৫
৮. রায় ভট্ট, অমূল্যধন, ‘শ্রীশ্রীদ্বাদশ গোপাল বা শ্রীপাটের ইতিবৃত্ত’, প্রথম সংস্করণ, মানসী প্রেস, কলিকাতা, ১৩৩১ বঙ্গাব্দ, পৃ. ৮৯
৯. মুখোপাধ্যায়, সোমা, ‘বাংলার জগন্নাথ’, প্রথম সংস্করণ, তবুও প্রয়াস, কলকাতা, ২০২২, পৃ. ৭৬-৭৭
১০. বন্দ্যোপাধ্যায়, ব্রজেন্দ্রনাথ ও সজনীকান্ত দাস (সম্পাদিত), ‘হুতোম প্যাঁচার নক্‌শা ও অন্যান্য সমাজচিত্র’, প্রথম সংস্করণ (নূতন), বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ, কলিকাতা, ১৩৬৩ বঙ্গাব্দ , পৃ. ১১১

অভিজিৎ পাল | Avijit Pal

Speed of Mind Psychology | মনের বিচিত্র গতি | Best 2023

Songs of Ramakrishna Mission | রামকৃষ্ণ মিশনের গানগুলো | Best 2023

Story of 2 Kingfishers | Halcyon days ও মেঘহও-এর গল্প | Best Story

Patriotism of Rabindranath Tagore | রবীন্দ্রনাথের স্বদেশচিন্তা | Best 2023

Article – Lord Jagannath and Chaitanya Mahaprabhu | Who was Chaitanya in Jagannath Puri? | Why is Jagannath called Mahaprabhu? | Who was the real Chaitanya Mahaprabhu? | The Philosophy – Lord Caitanya – Lord Jagannatha | Lord Chaitanya at Ratha-yatra | chaitanya mahaprabhu in jagannath puri | chaitanya mahaprabhu death | Lord Jagannath and Chaitanya Mahaprabhu | Definite article | Which God is Chaitanya? | Who is Lord Chaitanya in Iskcon? | Who is the guru of Lord Chaitanya? | Sri Chaitanya Mahaprabhu – ISKCON Blog

Life of Sri Chaitanya Mahaprabhu | chaitanya mahaprabhu original photo | chaitanya mahaprabhu biography pdf | chaitanya mahaprabhu son | chaitanya mahaprabhu first wife | chaitanya mahaprabhu family | teachings of chaitanya mahaprabhu | chaitanya mahaprabhu story | sri chaitanya wikipedia | Lord Jagannath and Chaitanya Mahaprabhu pdf book | Audio – Lord Jagannath and Chaitanya Mahaprabhu | Connection between Lord Jagannath and Chaitanya Mahaprabhu | Ten Characteristics of Lord Caitanya’s Mercy | Chaitanya Mahaprabhu Biography | Lord Chaitanya His Life & Teachings

Life of Lord Jagannath and Chaitanya Mahaprabhu | Blessings of Lord Jagannath and Chaitanya Mahaprabhu | Shree Jagannath Temple | Know About Lord Jagannath – Lord of Universe | History of Lord Jagannath | lord jagannath temple | lord jagannath story | lord jagannath photo | jagannath puri | lord jagannath wallpaper | lord jagannath drawing | lord jagannath father mother name | lord jagannath puri | Story of Lord Jagannath and Chaitanya Mahaprabhu | Lord Jagannath and Chaitanya Mahaprabhu in Bengali | Lord Jagannath and Chaitanya Mahaprabhu – Biography

Leave a Comment