Competition in Business Plan | Pros and Cons | Best Ideas

Sharing Is Caring:

ব্যবসায় প্রতিযোগিতাঃ সুফল ও কুফল – প্রদ্যোৎ পালুই

এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ। তার উপর সারা বছর ভ্রমণার্থীদের ভিড় লেগে থাকে। কাছাকাছি একটি মাত্র হোটেল। তারও তেমন ‘শ্রী’ নেই। মানুষের চাহিদা থাকায় তাতেই কোনমতে কাজ চালিয়ে নিতে হয়। হঠাৎ পাশাপাশি গজিয়ে উঠল একটি ছিমছাম হোটেল-কাম রেস্টুরেন্ট। চারদিকে বিজ্ঞাপনে ভরিয়ে দেওয়া হল। মেনুচার্ট-সহ দামের তালিকা টাঙিয়ে দেওয়া হল। খদ্দেরের নজর পড়ল সেদিকে। তারা সেদিকে বাঁক নিতে শুরু করল।

কমতে থাকল পুরানো শ্রীহীন হোটেলটির খদ্দের। মালিক প্রমাদ গুনলেন। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পারলে হোটেল বন্ধ করে দিতে হবে। মালিক হোটেলের সংস্কার করে আধুনিক করতে উদ্যোগী হলেন। মেঝেতে টালি, দেওয়ালে পুট্টি, দরজা জানালায় রঙ, হাতধোয়ার বেসিন ইত্যাদির মাধ্যমে নানাভাবে শ্রীহীন হোটেলের কিছুটা শ্রী ফেরাতে বাধ্য হলেন মালিক। নতুন গজিয়ে ওঠা হোটেলের সঙ্গে পাল্লা দিতে তিনিও দাম-সহ মেনুচার্ট টাঙিয়ে দিলেন। দেখা গেল, নতুন হোটেলের চেয়ে দাম কিছুটা কম রেখে তালিকা টাঙানো হয়েছে। নতুন হোটেলের পক্ষে এটা অশনিসংকেত। নতুন হোটেলও তার মূল্যতালিকা সংশোধন করে দাম কিছুটা কমিয়ে দিতে বাধ্য হল। বেশ বোঝা গেল, শুরু হয়েছে দুই হোটেলের অঘোষিত প্রতিযোগিতা। মাঝখান থেকে খদ্দের পরিচ্ছন্নতা, অপেক্ষাকৃত ভাল খাবার তুলনামূলকভাবে কম দামে পেতে লাগলেন। একমাত্র হোটেলের একচ্ছত্র আধিপত্য খর্ব হল।

উপরে বর্ণিত গল্পটি কোন কাল্পনিক ঘটনা নয়। কিম্বা একটি মাত্র ঘটনা নয়, একটু চোখ-কান খোলা রাখলে দেখতে পাওয়া যাবে ব্যবসার বাজারে এমন আরও অনেক অঘোষিত প্রতিযোগিতা। বর্তমানে তীব্র বেকারত্ব আর প্রতিযোগিতার বাজারে এই ছবি এখন সর্বত্র, সর্বস্তরে। কোন কাজ খুঁজে না পেয়ে কিছু একটা ব্যবসা করার জন্য অনেকে নিজের সাধ্য অনুযায়ী একটা দোকান করে বসে যাচ্ছেন। দোকানের পাশে দোকান, তার পাশে আবার একই রকমের দোকান। খদ্দেরের সংখ্যা ততটা বাড়েনি, যতটা বেড়ে যাচ্ছে দোকানের সংখ্যা। শহর আধা শহরের ফুটপাত ভরে যাচ্ছে ছোট ছোট অস্থায়ী দোকানে। কেউ কেউ আবার দরমার বেড়া দিয়ে ত্রিপল টাঙ্গিয়ে আধা স্থায়ী করে নিচ্ছে। কেউ কেউ ক্রেতাকে আরও একটু সুবিধা করে দিতে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় দোকান চালানোর পরিবর্তে ঠেলাগাড়িতে ভ্রাম্যমাণ দোকান নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

ক্রেতাকে দোকানে যেতে হচ্ছে না। দোকান ক্রেতার বাড়িতে এসে পৌঁছে যাচ্ছে। সকাল থেকে তাই এখন সবজি, মাছ, ফলমূল, স্টেশনারি সামগ্রী, বেকারি সামগ্রী ভর্তি একের পর এক ঠেলাগাড়ি পৌঁছে যাচ্ছে বাড়ির দরজার সামনে। বাড়িতে পৌঁছে দিলেও কেউ দু’টাকা বেশি দাম সহজে চাইতে পারছে না। কারণ অন্য কেউ একটু কম দামে দিলে খদ্দেরটি হাতছাড়া হয়ে যাবে। এভাবে ঘরে-বাইরে সর্বত্র চলছে ব্যবসায় অঘোষিত তীব্র প্রতিযোগিতা। তার পরেও স্বস্তি নেই। কারণ অর্থনৈতিক অসম বৃদ্ধি।

বর্তমানে দেশের মোট উৎপাদন বা জিডিপি ৩.৬ লক্ষ ট্রিলিয়ন ডলার যা বর্তমানে বিশ্বে পঞ্চম (আমেরিকা, চিন, জাপান, জার্মান-এর পরে) অর্থনীতির দেশ হলেও মাথা পিছু উৎপাদনে আমাদের দেশের অবস্থান (বিশ্বে ১৪০তম) মোটেই সন্তোষজনক নয়। আমাদের বিরাট জনসংখ্যার দেশে মোট উৎপাদনকে দেশের বিরাট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করে দিলেই মাথাপিছু উৎপাদন তলানিতে এসে ঠেকছে। আমাদের রাজ্যের মাথাপিছু জিডিপিও দেশের অন্যান্য অনেক রাজ্যের চেয়ে কম (বর্তমানে ২১তম)। তার উপর সকলের আয় সমান হারে বাড়ছে না।

একশ্রেণীর মানুষের আর্থিক উন্নতি তরতরিয়ে হলেও দেশের বৃহৎ অংশের মানুষের নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। তাঁরা টেনেটুনে সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছেন। অর্থাৎ একদিকে দোকানের সংখ্যা বেশি, অন্যদিকে অনেকের হাতে অর্থের টানাটানি। দুইয়ে মিলে আশানুরূপ বিক্রি নেই। তাছাড়া বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে খুচরো ব্যবসায়ীরা এঁটে উঠতে না পারার প্রতিযোগিতা তো আছেই। বড় ব্যবসায়ী পাইকারি রেটে মাল কিনে তুলনামূলক কম দামে মাল বিক্রি করে খদ্দের ধরে নিতে সক্ষম। ছোট ব্যবসায়ীদের ক্ষমতা সীমিত। ফলে তাঁদের কোণঠাসা অবস্থা।

বড় ব্যবসায়ীরাও যে খুব শান্তিতে আছেন তা নয়। তাঁদের মাথার উপরেও আশঙ্কার কাল মেঘ। কারণ ফ্লিপকার্ট, অ্যামাজনের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইন ব্যবসা এখন রমরমা। কী নেই এদের ব্যবসায়? পোশাক-আশাক, ষ্টেশনারী, গ্রোসারি, ইলেক্ট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক-সহ বিবিধ জিনিস মুহূর্তে বুকিং করে ফেলা যায় এদের ওয়েবসাইটে গিয়ে।

অনলাইন পেমেন্ট হওয়ায় আর্থিক লেনদেনের সমস্যা নেই। আবার ডেলিভারি শেষে দাম মেটানোর সুযোগও আছে। এমনকি ক্রয়ের পরে মাল খারাপ বের হলে ফেরত দিয়ে মূল্য ফেরত নেওয়া যায়। এইসব সংস্থা এলাকার বড় বড় দোকানদারের চেয়েও কম দামে বাড়িতে মাল পৌঁছে দেয়। ফলে যাঁদের বাড়িতে বাজারে যাওয়ার লোকের অভাব, কিম্বা অফিসের কারণে বাজারে যেতে পারেন না তাঁরা তো করেনই, দামের সুবিধার জন্য আরও অনেকে অনলাইন কেনাকাটার সুবিধা গ্রহণের দিকে ঝুঁকছেন। ফলে এলাকার স্থায়ী দোকানদার এবং ভ্রাম্যমাণ দোকান উভয়ের উপরেই তার কুপ্রভাব পড়ছে। কমছে বিক্রিবাটা। কারণ একটাই, উন্মুক্ত বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতা।

ব্যবসার এমন তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্যে প্রশ্ন উঠতে পারে, এই প্রতিযোগিতার সুফল কী কিছু নেই? অবশ্যই আছে, ক্রেতাদের সুবিধালাভ। ব্যবসাদারদের যখন নাভিশ্বাস উঠছে তখন ক্রেতারা কিন্তু অনেক সুবিধা লাভ করেছেন। এখন দাম যাচাইয়ের পাশাপাশি জিনিসের গুনমান যাচাই করে কেনার প্রভূত সুযোগ। এই সুযোগকে যতই কাজে লাগাচ্ছেন ক্রেতা, ততই একচেটিয়া বানিজ্যের দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে। এখন বিক্রেতার কাছে যেটা মাথাব্যথার কারণ, ক্রেতার কাছে তা হয়ে উঠছে আশীর্বাদ। বিশ্বায়নের যুগে খোলা বাজারে সরাসরি বাণিজ্যের সুযোগ এসে যাওয়ায় আলপিন-সেপ্টিপিন থেকে চাল-আটা সব ধরণের ব্যবসায় তীব্র প্রতিযোগিতা। এমনকি ফুটপাতে সামান্য তেলেভাজার দোকান থেকে চিকেনের দোকানেও চলছে প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতায় একটাই সুফল এসেছে ক্রেতাদের কাছে, তা হল দামের ন্যায্যতা এবং জিনিসের গুনমান।

আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন সভায় চা, টিফিন, তেলেভাজা ইত্যাদির ছোট ছোট দোকান করে লাভের কড়ি ঘরে তোলার উপদেশ দেন। পছন্দ না হলেও বাধ্য হয়ে সেই পথে অনেকে নেমেও পড়ছেন। এতে ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের মধ্যে ক্রেতার তুলনায় ব্যবসার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আবার বহুজাতিক সংস্থাকে খুচরো বাজারে নেমে পড়তে দেওয়ায় ছোট ব্যবসায়ীরা ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত এবং আতঙ্কিত। বেকার হয়ে যাবেন জেনেও বিক্রিবাটা কমে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে অনেকে একসময় দোকান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। বেশ বোঝা যাচ্ছে, মানুষে মানুষে যেমন তীব্র অসাম্য তেমনই ব্যবসার ক্ষেত্রেও অসাম্য ক্রমবর্ধমান। ফলে ব্যবসায় অঘোষিত প্রতিযোগিতা ক্রেতার কাছে সুযোগ এনে দিলেও বিক্রেতার কাছে তা অভিশাপ।

আর কে না জানে, একটা সেক্টরে যিনি ক্রেতা অন্য সেক্টরে তিনিই আবার বিক্রেতা। ফলে ক্রেতা হিসাবে যিনি কিছুটা সুবিধা পাচ্ছেন, বিক্রেতা হিসাবে তিনিই আবার ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছেন। ফলে মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনের চাপ ক্রমশ তীব্র হচ্ছে সন্দেহ নেই। এই অবস্থা থেকে বেরোতে হলে বেকারদের সামনে ব্যবসার গাজর ঝুলিয়ে রেখে লাভ নেই। বরং ছোট-বড় উৎপাদনমুখী শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে অধিক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা দরকার। সেটাই বেকার সমস্যার সমাধান এবং কর্মসংস্থানের সর্বোৎকৃষ্ট পথ।

প্রদ্যোৎ পালুই | Pradyut Palui

Padma besha | পদ্ম বেশ | অভিজিৎ পাল

Gaja-Uddharana besha | গজ-উদ্ধারণ বেশ | অভিজিৎ পাল

Nagarjuna besha or Parashurama besha | নাগার্জুন বেশ | অভিজিৎ পাল

Foodie Jagannath | ভোজনরসিক জগন্নাথ | New Article 2023

Business Plan | Pros and Cons of Business | Business Strategy | Competition in Business Plan 2024 | Competition in Business Plan – Pros & Cons | Marketing Plan | Competitors analysis pdf | competitors analysis example | competitors analysis example pdf | Competition in Business Plan – online pdf | Pdf Competition in Business Plan | Market Competitor | Business Competitor | Competition in Business Plan in India | Worldwide Competition in Business Plan

Leave a Comment