Famous Places in Murshidabad | Best Travel Story 2023

Sharing Is Caring:

রাজাধিরাজ – পুনম মায়মুনী [Famous Places in Murshidabad]

ভ্রমণ করতে কার না ভালো লাগে! কেউ হয়তো পারিবারিক কোনো অসুবিধের কারণে, কেউবা অর্থনৈতিক কারণে আবার কারোর সখ-ই নেই বেড়াবার। তবে এ শ্রেণীর মানুষ মনে হয় খুব কমই আছে। ছোটবেলা থেকে ভ্রমণের খুব আকর্ষণ ছিল সেই থেকেই যেখানেই যাই দর্শনীয় স্থানগুলো এখনো সুযোগ পেলে সেগুলো দেখতে চেষ্টা করি।আর মনে হয় সৃষ্টিকর্তা তাঁর বান্দার আশা কখনই অপূরণ রাখেন না।

২০১৮ সালে গিয়েছিলাম পশ্চিমবাংলার মুর্শিদাবাদে “হাজার দুয়ারী”। যেখানে মুঘল সম্রাটদের রাজত্ব ছিল। আলিবর্দি খা, সিরাজুদৌল্লার কথা আমরা প্রায় সকলেই ইতিহাসে পড়েছি আর সিরাজদৌল্লা বলতেই যেন আনোয়ার হোসেন, লুতফুন্নেসা-রোজি সামাদ, আলেয়া-আনোয়ারা এদেরই মুখয়ব ভেসে উঠে। ছাত্র জীবনে আমার আব্বাও সিরাজদৌল্লার পাঠ করেছিল সে গল্প আমাদের বলতো। এ প্রজন্মের সন্তানেরাও সেই নবাবের পাঠ করে যাচ্ছে। ইতিহাস ইতিহাস-ই সেটা পরিবর্তনের নয়,যুগ যুগ ধরে থেকে যাবে। যাক্‌ বাংলার প্রাচীন কীর্তি কথা না জানলে এবং দর্শনীয় স্থানগুলো না দেখলে বাংলার গৌরবময় অধ্যায় অজানা থেকে যায়। দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার মুর্শিদাবাদ সেই সম্রাটদের বাসস্থানে যেখানে নবাবদের রাজত্ব ছিল। তাঁদের খাট, পালঙ্ক ব্যবহারিক আসবাবপত্র , নবাবদের কৃতিত্বের স্বাক্ষর অনেক কিছুই যা এখনও ইতিহাস বহন করে চলেছে। একদিনে তাঁদের সেই রাজত্ব দেখা সম্ভব নয়। যেখানে ছিল পরিবারের বসবাস সেখান থেকে তাঁদের জলসাঘর বা শাসন ব্যবস্থার কোথায় যে কী হচ্ছে স্ত্রীদের জানার কোনোই সম্ভাবনা নেই, এটাই আমার মাথায় খেলেছিল সেদিন! অনেক দূরত্ব রেখে রেখে ছিল সেই জায়গাগুলো। ভিতরের অনেক কিছুই ছবি নেওয়া নিষেধ তাই অনেক কিছুই তোলা হয়নি।

অনেক কিছুই লেখার ছিল কিন্তু স্বল্প পরিসরে তা সংক্ষেপে জেনে নেই ইতিহাস ও নবাবদের কিছু কথা। কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদের দূরত্ব ২০৪ কিলোমিটার। শিয়ালদহ স্টেশন থেকে লোকাল, লালগোলা প্যাসেঞ্জার এবং এক্সপ্রেস ট্রেন করে মুর্শিদাবাদ যাওয়া যায়।তবে বাই ইয়ারে যাওয়ার কোন ব্যবস্থা নাই। আমরা গিয়েছিলাম বীরভূম থেকে সরাসরি গাড়ি নিয়ে । বীরভূম থেকে মুর্শিদাবাদ কাছেরই পথ।

মুর্শিদাবাদ এবং নবাব আলিবর্দি খাঁ

মুর্শিদাবাদ নবাবী আমলে বাংলার বর্তমানে বিহার ঝাড়খণ্ড ওড়িশা পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল। এই জেলার উত্তরে মালদহ জেলা ও বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা, উত্তর-পূর্বে বাংলাদেশের রাজশাহী জেলা, দক্ষিণে নদীয়া জেলা, দক্ষিণ-পশ্চিমে পূর্ব বর্ধমান জেলা, পশ্চিমে বীরভূম জেলা এবং উত্তর-পশ্চিমে ঝাড়খণ্ডের পাকুড় জেলা অবস্থিত ৷জেলার বেশিরভাগ জনগোষ্ঠী বাংলাভাষায় কথা বলে। বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার রাজধানী মুর্শিদাবাদ ন্যূনাধিক অর্ধশতাব্দী অর্ধ যাবৎ এক বৃহৎ জনবহুল সমৃদ্ধ নগরীরূপে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। বাংলার নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ এর প্রতিষ্ঠাতা এবং এর পূর্বনাম মুকসুদাবাদ।

১৭০৬ খ্রিস্টাব্দে দেওয়ান মুর্শিদকুলি খাঁ বাংলার প্রথম নবাব রূপে পরিগণিত হন এবং তিনিই ছিলেন বাংলার প্রথম স্বাধীন নবাব। প্রাদেশিক দেওয়ান, বাংলা এবং উড়িষ্যার তখন থেকেই মুর্শিদাবাদে এর সমৃদ্ধির সূত্রপাত। ১৭৫৭ খ্রীঃ পলাশী যুদ্ধের পর হতেই এর গৌরব ম্লান হতে থাকে। কথিত আছে আনুমানিক ১৬৬০ সালে মুর্শিদকুলি খাঁ দাক্ষিণাত্য মালভূমির এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং মাত্র দশ বছর বয়সে ইস্পাহান শহরের হাজী শফি নামক একজন পদস্থ মুগল কর্মকর্তা তাঁকে ইরানে নিয়ে পিতৃস্নেহে লালন-পালন ও প্রয়োজনীয় শিক্ষাদান করেন।

হাজী শফির মৃত্যুর পর তিনি ভারতে এসে গোলকুন্ডার দীউয়ান ও ফৌজদার হিসেবে মুগল সরকারের চাকরিতে যোগদান করেন এবং মনসবদারি লাভ করেন। সম্রাট আওরঙ্গজেব বাংলার প্রদেশের জন্য একজন সৎ ও দক্ষ দীউয়ান খুঁজছিলেন। তিনি তরুণ মুর্শিদকুলী খানকে এ পদের যোগ্য মনে করেন এবং ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে সম্মানসূচক করতলব খান উপাধি দিয়ে দীউয়ান হিসেবে বাংলায় নিয়োগ প্রদান করেন।

নতুন নিয়োগ পেয়ে করতলব খান ঢাকায় পৌঁছেন। তিনি রাজস্ব ও অর্থনৈতিক প্রশাসনে স্বীয় যোগ্যতার পরিচয় দেন। তিনি ছিলেন সৎ এবং সম্রাটের অত্যন্ত বিশ্বস্ত। কিন্তু রাজকীয় স্বার্থ রক্ষা করতে বাংলার নাজিম ও সম্রাটের দৌহিত্র আজিমুদ্দীনের (পরবর্তী সময়ে আজিম-উস-শান) সঙ্গে তাঁর বিবাদ বাঁধে। ফলে করতলব খানের জীবন হুমকির সম্মুখীন হয়।ফলে ১৭০২ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট তাঁকে গঙ্গার তীরবর্তী (ভাগীরথী শাখা) মকসুদাবাদে দফতর স্থানান্তরের অনুমতি দেন। ১৭০৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি সম্রাটের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দাক্ষিণাত্য যান এবং এ সাক্ষাতে তিনি ‘মুর্শিদকুলী খান’ উপাধি লাভ করেন। এভাবে তাঁর পদমর্যাদা আরও বৃদ্ধি পায়।সম্রাট মকসুদাবাদের নাম পরিবর্তন করে তাঁর নতুন উপাধি অনুসারে মুর্শিদাবাদ রাখার অনুমতি দেন।

বাংলায় নওয়াবী শাসনের প্রতিষ্ঠাতা মুর্শিদকুলী খানের কর্মজীবন শুরু হয় প্রাদেশিক দীউয়ান হিসেবে। একে একে বাংলা ও উড়িষ্যার নাজিম বা গভর্নর, বিহারের দীউয়ান এবং কয়েকটি জেলার ফৌজদারের পদ অলঙ্কৃত করার পর আঠারো শতকের প্রথম দিকে তাঁর কর্মজীবনের সমাপ্তি ঘটে। মুর্শিদকুলী খান মসজিদ নির্মাণে যত্নবান ছিলেন। তিনিই ঢাকার করতলব খান মসজিদ (বেগম বাজার মসজিদ ) নির্মাণ করেন।

কাটরা মসজিদ

মুর্শিদাবাদ শহরের উত্তর পূর্ব দিকে মুর্শিদকুলি খাঁর সমাধি বিখ্যাত কাটরা মসজিদে অবস্থিত। নবাবের ইচ্ছানুসারে এখানে একটি বাজার স্থাপন করা হয়। কাটরা শব্দের অর্থ গঞ্জ বা বাজার। এই কারণে কাটরা মসজিদ নামে পরিচিত। মসজিদের দুই প্রান্তে ৭০ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট গম্বুজ ভগ্নদশায় পড়ে আছে। এই গম্বুজের উপর থেকে মুর্শিদাবাদ নগরীর অনেকাংশ দেখা যায়। ভিতর চত্বরে এক সঙ্গে প্রায় দুই হাজার লোকের নামাজ পড়বার ব্যবস্থা ছিল।

ঐতিহাসিকগনের লিখিত অনুযায়ী জানা যায়, মুর্শিদকুলি খাঁ বার্দ্ধক্যে উপনীত হলে মসজিদ সংলগ্ন নিজের একটি সমাধি ভবন নির্মাণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ১৭২৫ খৃীঃ তিনি মৃত্যুবরণ করেন। দুষ্কর্মের জন্য শেষদিকে তিনি খুবই অনুতপ্ত হয়েছিলেন এবং সাধুজনের পদধূলি তাঁর পাপ দূর করবে মনে করে সোপান শ্রেণির নীচে সমাধি প্রকোষ্ঠ নির্মাণ করেছিলেন এবং তাঁর ইচ্ছানুযায়ী সেখানেই তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। মসজিদে কষ্টিপাথরের নির্মিত একখণ্ড ফলকে লেখা আছে; আরবের মুহাম্মদ উভয় জগতের গৌরব, যে ব্যক্তি তাঁর দ্বারের ধূলি লয়,তাঁর মাথায় ধূলি বৃষ্টি হউক।

মুর্শিদকুলি খাঁ ছিলেন নিঃসন্তান। তাঁর পালিত এক পুত্র ও দুই কন্যা ছিল। মৃত্যুর পর তাঁর পালিত কন্যার জামাতা (আজিমুন্নেসার স্বামী) সুজাউদ্দৌলা বাংলার সিংহাসনে আরোহণ করেন । তিনি ছিলেন তুর্কী বংশোদ্ভূত। তিনি দিল্লীর অনুকরণে শাহী মঞ্জিল, শাহী দরওয়াজা, দহপাড়া মসজিদ, ফরহাবাগ ও রোশনীবাগ নির্মাণ করেছিলেন। এই রোশনীবাগ বর্তমান হাজারদুয়ারী প্যালেসের সামনের দিকে ভাগীরথী নদীর পশ্চিমধারে অবস্থিত এবং এখানেই তিনি সমাহিত হন। নবাব সুজাউদ্দৌলার মৃত্যুর পর পুত্র সরফরাজ খাঁ সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি অত্যন্ত অলস, অকর্মণ্য ও ভোগবিলাসী নবাব ছিলেন।

১৭৪০ খ্রীস্টাব্দে নবাব আলীবর্দি খাঁ গিরিয়ার যুদ্ধে নবাব সরফরাজ খাঁ ও মারাঠা দূত ভাস্কর পণ্ডিতকে বিশ্বাসঘাতকতা পূর্বক হত্যা করে সিংহাসনে আরোহণ করেন। তাঁর পূর্বপুরুষেরা পারস্য দেশের খোরাসান নামক স্থানের অধিবাসী ছিলেন। তাঁর বেগম সরফুন্নেসা অত্যন্ত জ্ঞানী, বিচক্ষণ ও দূরদর্শীনি মহিলা ছিলেন। তিনি সব ব্যাপারে তাঁর বেগমের পরামর্শ গ্রহণ করে চলতেন। আলিবর্দি খাঁ নিষ্কলুষ চরিত্রের একজন মানুষ ছিলেন ।তাঁর আঠারো বৎসর রাজত্বকালে দেশে শান্তিশৃঙ্খলা বিরাজ করত। খোসবাগে আলিবর্দি খাঁ’র সমাধি বিদ্যমান আছে ।

নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা ছিলেন আলীবর্দী খান-এর নাতি। আলীবর্দী খানের কোন পুত্র সন্তান ছিল না ছিল তিন কন্যা।আলীবর্দী খাঁ যখন পাটনার শাসনভার লাভ করেন, তখন তার তৃতীয়া কন্যা আমেনা বেগমের গর্ভে সিরাজ-উদ-দৌলা’র- জন্ম হয়। এ কারণে তিনি সিরাজের জন্মকে সৌভাগ্যের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করে আনন্দের আতিশয্যে নবজাতককে নাতি হিসেবে গ্রহণ করেন। সিরাজ তার নানার কাছে ছিল খুবই আদরের।

নবাব আলিবর্দি খাঁ’র মৃত্যুর পর ১৭৫৬ খ্রীস্টাব্দে সিরাজদ্দৌলা নবাব হন । তাঁর দুই বেগম–লুতফুন্নেসা এবং ওমাতুন্নেসা। লুতফুন্নেসা প্রথমে নবাব আলিবর্দি খাঁ”র হারেমে ক্রীতদাসী ছিলেন। সিরাজ তাঁর অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বেগমরূপে গ্রহণ করেন। সিরাজ-উদ-দৌলা ছিলেন বাংলা-বিহার-ওড়িশার শেষ স্বাধীন নবাব। বাংলা ইতিহাসের এক প্রতিমূর্তি। পলাশীর যুদ্ধে তার পরাজয় ও মৃত্যুর পরই ভারতবর্ষে ১৯০ বছরের ইংরেজ শাসনের সূচনা হয়।

হাজারদুয়ারী প্রাসাদ

হাজারদুয়ারী প্রাসাদ, যা আগে বার কোঠি নামে পরিচিত ছিল, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদে কিলা নিজামতের ক্যাম্পাসে এটি গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। এই প্রাসাদ শহরের অন্যতম দর্শনীয় স্থান।

দুপুরে এক হোটেল থেকে লাঞ্চ সেরে আমরা গঙ্গা নদীর ধার ঘেঁষে চওড়া রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম । মাঝে মাঝে নদীর পাশে বসার জন্য পাকা করা পুস্তা আবার সিঁড়ি নেমে গেছে নদীর জলে। অনেকে গোসল করছে হয়তো স্থানীয়রা হবে আবার হিন্দুশাস্ত্র মতে গঙ্গার জলে স্নান করে তাঁরা পবিত্র হয়। তাই নারী পুরুষ সবাই পবিত্র হওয়ায় ব্যস্ত। কিনার ঘেঁষে বড় বড় গাছগাছালির ছায়ায় ঘেরা । এতো মনোরম দৃশ্য দেখে গাড়িতে কিছুতেই বসে থাকতে পারলাম না। অনেক লোকের সমাগম। আমরা নেমে কিছুটা হালকা জায়গায় বসলাম । চারিদিক পাখির কলকাকলি আবার খাবারেরও ছড়াছড়ি! আর বাঙালিতো ভোজনরসিক। পানিপুরি মানে আমাদের ফুচকার মত যা লোভ সামলানো যায় না । আর আরেকটা খাবার আছে আমার ভীষণ প্রিয় পাপড়িচাট আর কিছু টুকটাক নাস্তা কফি খেয়ে আবার রওয়ানা হলাম হাজার দুয়ারীর উদ্দেশ্যে ।

সাধারণভাবে এরূপ নামকরণের অর্থ এক হাজার দরজার জন্য উক্ত প্যালেসকে “হাজার দুয়ারী”আখ্যা দেওয়া হয়েছে। হাজার দুয়ার সমন্বিত, তাই নাম হাজার দুয়ারি, যদিও এই হাজার দুয়ারের কিছু দুয়ার নকল, দেয়ালের গায়ে দরজার অনুকরণে ছবি আঁকা। বর্তমানে এই প্রাসাদটিকে একটি জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়েছে। টিকিট কেটে ভিতরে যেতে হয় ।আমরাও টিকেট কেটে ভিতরে গেলাম বিরাট এরিয়া । অনেকটা হেঁটে যেতে হয়। পাকা রাস্তার দু’পাশে সবুজ মাঠ । নানান গাছের সুশোভিত । হাতের ডানদিকে বিরাট মাঠের উপর ইমামবাড়া । পরের পর্বে ইমামবাড়ার কথা লিখব। প্রাসাদের ভিতরে ঢোকার আগে নিচেই সবার পার্স, মোবাইল সব রেখে খালি হাতে যেতে হয় । আর ছবি তোলা তো একেবারেই নিষেধ। প্রাসাদের উপরতলায় আশ্চর্যের একটা বিরাট আয়না আছে আপনি সামনে দাঁড়ালে নিজেকে কিছুতেই দেখতে পারবেন না কিন্তু পাশেরজন ঠিকই আপনাকে দিব্যি দেখতে পারবে।

প্রাসাদের পিছনদিকে বেশ কিছু দূরে একটি গেট আছে তার পিছন দিয়েই অনেক ছোট ছোট দোকানের মার্কেট সেখানে ঐতিহ্যবাহী এবং রাজকীয় কারুকার্য খচিত অনেক জিনিষপত্র বিক্রয় হয়। আমার তো কেনাকাটা আর উপহার দেওয়া আরেকটা ভীষণ পছন্দের বিষয়। একেতো চোখ ধাঁধানো সব জিনিষগুলো ছিল। নিজের জন্য, শ্বশুরবাড়ি, বাপেরবাড়ি সবার জন্যই পছন্দ করে কিনলাম। ঘুরতে ঘুরতে প্রায় বিকেল গড়িয়ে যাচ্ছিল ।ফেরার পথে রাস্তার পাশে সব খাবারের স্টলগুলো ,গাড়িতে বসেই গরম গরম লুচি ঘূর্ণি মজাদার দু’তিন রকমের মিষ্টি চা খেয়ে আবার রওয়ানা দিলাম। ভারতে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি হয় সবাই জানি। নামগুলাও তেমন, লেংচা, বৈকুন্ডভোগ, খীরকদম্বো, চিত্তরঞ্জন, কালাকান্দ, দানাদার লড অরেঞ্জ, সিতাভোগ, রাজভোগ ক্ষীরভোগ অনেক নামের সমাহার, খেতেও দারুণ! স্নেক খাবারগুলাও ভীষণ সুস্বাদু খেতে। আমি বহুবার গিয়েছি ভারতে ঘুরাঘুরির সাথে সাথে সেখানকার খাবারগুলাও আমাকে খুব আকর্ষণ করে।

একদিনে এই নবাবদের রাজ্য দেখা সম্ভব না । তাই আমরা মুর্শিদাবাদ প্রাসাদের কাছাকাছিই আমার শ্বশুরবাড়ির এক আত্মীয়র হোটেলে গিয়ে উঠি অবশ্য আগে থেকেই বলা ছিল। এবার প্রাসাদের আরও কিছু জেনে নেই। এই প্রাসাদ ইতালির স্থাপত্যকলার এক জীবন্ত নিদর্শন।১৮২৯ খ্রীঃ ২৯ শে আগস্ট তদানীন্তন গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম ক্যাভেন্ডিস ও বহু স্বনামধন্য ব্যক্তিগনের উপস্থিতিতে নবাব নাজিম হুমায়ুন-জা এই প্রাসাদের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। গাঁথুনির কাজে বহু পরিমাণ ডিমের কুসুম ব্যবহার করা হয়েছিল বলে শোনা যায়।

এই প্রাসাদটি তিনতলা, প্রতিটি কক্ষের কারুকার্য অত্যন্ত মনোরম। একতলায় অস্ত্রাগার, অফিস-কাছারি, রেকর্ড রুম ইত্যাদি আছে। অস্ত্রাগারে মোট ২৬০০ টি অস্ত্র সজ্জিত আছে। এই অস্ত্রগুলির মধ্যে কতকগুলি বিখ্যাত অস্ত্র এবং যে ছোরার সাহায্যে মোহাম্মদীবেগ সিরাজ-উ-দ্দৌলাকে হত্যা করেছিল সেটিও সযত্নে রক্ষিত আছে। ২য় ও ৩য় তলায় আর্টগ্যালারী ও লাইব্রেরী আছে। আর্টগ্যালারীতে বহু বিখ্যাত চিত্রশিল্পীর চিত্রকলা স্থান লাভ করেছে। এদের মধ্যে “The buril of sir John More, Adom & Eve, Black Bent” বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

লাইব্রেরী ঘরে ছোটবড় আকারেরর বহু বিষয়ের এবং বিদেশী ভাষায় লিখিত নানান গ্রন্থ সংগৃহীত আছে। আবুল ফজল রচিত আইন- ই-আকবরির পাণ্ডুলিপিও এখানে দৃষ্ট হয়। একটি বিরাট আকৃতি বিশিষ্ট সুবিশাল এলবাম আছে যা দৈর্ঘ্যে তিন হাত, প্রস্থে দুই হাত আর ওজন প্রায় বিশ কেজি। তাছাড়া বাগদাদের বিখ্যাত লেখক হারুন-অর্-রশিদের হস্ত লিখিত কোরআন সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এই হাজার দুয়ারী প্যালেসের সম্মুখভাগে দু’পাশে মনোরম বাগান শোভা পায়। একতলা প্যালেসের সম্মুখভাগে বিশাল সিঁড়ি “দরবার কক্ষ” পর্যন্ত উঠেছে। সম্মুখে লম্বা গোলাকার স্তম্ভরাজি যাতে সুন্দর নক্সার কাজ রয়েছে। সিঁড়ির দু’পাশের সম্মুখভাগে অবস্থিত দুইটি সিংহ মূর্তি এর সৌন্দর্যকে আরও অপরূপ করেছে।

নবাবদের অনেক কিছু দেখার আছে, লিখার আছে যেমন জাফরাগঞ্জ সমাধি ক্ষেত্র মীরজাফর ও ফ্যামিলি, ওয়াসেফ মঞ্জিল, পলাশি মনুমেন্ট, কাশিমবাজার রাজবাড়ি, জগৎশেঠের বাড়ি, সিরাজের প্রাসাদ– হীরাঝিল ইত্যাদি। সল্প পরিসরে যেগুলো না লিখলেই না সেগুলোর সম্বন্ধে কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করেছি…

ইমাম বাড়া

হাজার দুয়ারী প্যালেসের পর ইমাম বাড়ার কথা না বললেই নয়, প্যালেসের ঠিক বিপরীত দিকে ইমাম বাড়া অবস্থিত। নবাব হুমায়ুন-জার পুত্র বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার শেষ নবাব নাজিম মনসুর আলী খাঁ ফেরাদুন-জা ১৮৪৭ খ্রীঃ প্রায় সাত লক্ষ টাকা ব্যয় করে বর্তমান ইমাম বাড়াটি নির্মাণ করেন। “মহরম উৎসব” প্রতি বছর মহরম মাসের প্রথম দশদিন ইমাম বাড়ার সম্মুখস্থ উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে জাঁকজমক সহকারে এক মেলার আয়োজন করা হয়।

মহরমের পঞ্চম ও শেষদিন গুলিতে তাজিয়াসহ বিরাট জৌলুস বেড় হয়।শেষদিন সকাল বেলা ইমাম বাড়া হতে হাসান হোসেনের নকল মৃতদেহ শবাধার ও তাজিয়াসহ প্রকাণ্ড জৌলুস কেল্লা ও শহরের রাস্তা অতিক্রম করে কারবালা অভিমুখে যাত্রা করে। ঐ শোভাযাত্রায় যুবকেরা ধারালো অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে নিজেদের বক্ষদেশে আঘাত করে ক্ষতবিক্ষত ও রক্তাক্ত করে ;হায় হোসেন হায় হোসেন বলে মাতন করে থাকেন। এই দৃশ্য খুবই মর্মান্তিক ও হৃদয় বিদারক।

আজিমুন্নেসা

হাজারদুয়ারীর পাশের রাস্তা দিয়ে, আজিমুন্নেসা বেগমের জীবন্ত সমাধি। নশীপুর যাওয়ার পথে মহিমাপুর ফাঁড়ির বিপরীত দিকে মুর্শিদকুলির খাঁর কন্যা ও সুজার খাঁর স্ত্রী আজিমুন্নেসার সমাধি অবস্থিত। শোনা যায় একবার তিনি ভয়ানক অসুস্থ হয়ে পরায় হেকিম সাহেবের নির্দেশমতো গাছের শিকড়ের সাথে রোজ একটি জীবন্ত মানুষের কলিজা থেকে ঔষধ তৈরি করে খাওয়ানো হতো। ফলে রোগ মুক্তি হলো কিন্তু তিনি নেশাগ্রস্থের মতো মানুষের কলিজা খাওয়ার প্রচণ্ড নেশায় মেতে উঠলেন! তারপর গোপনে নিজের ঘনিষ্ঠ লোক দিয়ে মানুষ মেরে তাঁদের কলিজা খাওয়া শুরু করে।

তাই তাঁকে “কলিজা খাকী বেগম” বলে অভিহিত করা হতো। এই সংবাদ স্বামী সুজা খাঁ এর কানে পৌঁছলে তিনি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে নরহত্যার অপরাধের জন্য বেগমকে জীবন্ত অবস্থায় সমাধিস্থ করার আদেশ দেন এবং অপরাধ মুক্তির জন্য ঐ সমাধির উপর একটি মসজিদ তৈরি করেন।

নশীপুর রাজবাড়ী

ইতিহাস প্রসিদ্ধ কুখ্যাত দেবী সিংহ এই রাজবাড়ী তৈরি করেন। দেবী সিংহের আদিবাড়ী ছিল পানিপথে। মুর্শিদাবাদ যখন চরম উন্নতির শিখরে দেবী সিংহ তখন সুদূর পানিপথ হতে ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে মুর্শিদাবাদে আগমন করেন । পরে তিনি দেওয়ান রেজা খাঁ’র অধীনে চাকরী গ্রহণ করেন এবং পরে ইংরেজ কোম্পানির অধীনে রেভিনিউ কালেক্টর পদে ভূষিত হন। ৭৬-এর মন্বন্তরের পরে রাজস্ব আদায়ের জন্য তিনি প্রজাদের উপর যেরূপ অত্যাচার উৎপীড়ন করেন তাঁর তুলনা হয় না। কৃতকর্মের ফল স্বরূপ তাঁর দুই পত্নী থাকা সত্ত্বেও তাঁর বংশরক্ষা হয় নি । তিনি বিভিন্ন উপায়ে প্রচুর ধনসম্পত্তির অধিকারী হন এবং বসতবাড়ির জন্য “হাজারদুয়ারীর” অনুরূপ প্রাসাদ তৈরি করেন। দেবী সিংহ ১৮০৫ খ্রীস্টাব্দে পরলোক গমন করেন। নশীপুর ‘ঝুলনযাত্রার” জন্য বিখ্যাত। ঐ উপলক্ষে এখানে জাঁকজমকপূর্ণ মালা বসত। তখন পুরাণ অবলম্বনে ‘পুতুলনাচ’ দেখানো হত।

কাঠগোলা বাগান

নশীপুর রাজবাড়ি হতে উত্তর পূর্ব দিকে ১ কিমি পথ গেলেই অত্যন্ত সুন্দর মনোরম পরিবেশে একটি প্যালেস, বাগান ও পরেশনাথের মন্দির চোখে পরে, এটাই কাঠগোলা বাগান নামে বিখ্যাত। বিশাল এই বাগানটিতে মূল্যবান গাছ ও ফুলের বাগানে সুশোভিত।

১৭৮০ সালে কাঠগোলা বাগানের প্রতিষ্ঠিত করেন লক্ষীপৎ সিং দুগর। প্রায় ২৫০বিঘা জায়গা নিয়ে বিশাল বাগানের মধ্যে দোতালা অট্টালিকার সামনে বড় পুকুর। সেই পুকুরে থাকত নানা ধরনের রঙ্গীন মাছ। এখানে জৈন মন্দির ও প্রাসাদ ছাড়াও রয়েছে চিড়িয়াখানা, হেরেম ও শ্বেত পাথরে বাঁধানো পুকুর। এই বাগানের মধ্যস্থিত প্রাসাদে বহু মূল্যবান আসবাবপত্র, তৈজসপত্র ও মর্মরমূর্তি রক্ষিত আছে। সেকালে কাঠগোলা বাগানে জলসা হতো এবং অনেক লোকের সমাগম হতো। বর্তমানে কাঠগোলা বাগান একটি দর্শনীয় স্থান। যেই দু’জনের কথা না লিখলেই না। (অতি সংক্ষেপে)

১) মীরজাফর

নাবাব মীরজাফর ছিলেন আলীবর্দি খাঁর ভগ্নীপতি তার পিতার নাম আহম্মদ নাজাফি। পিতামহ হুসেন নাজাফি আরব দেশের অধিবাসী ছিলেন। হুসেন নাজাফি, ইব্রাহিম তাবাতাবাই-এর ২২তম বংশধর। মীরজাফর আহম্মদ নাজাফির দ্বিতীয় পুত্র। তিনি অত্যন্ত কূটনীতিজ্ঞ ছিলেন এবং ছলে বলে কৌশলে দু’বার নবাব নিযুক্ত হয়েছিলান।

সিরাজ-উ-দ্দৌলার অধঃপতনের মূলে ছিল মীরজাফর। মীরজাফর অত্যন্ত বিলাস ও আড়ম্বর প্রিয় ছিলেন । তিনি বহু মূল্যবান পোষাক পরিচ্ছদ ও হীরা জহরত খচিত গলার হার পড়তেন। তিনি অদূরদর্শী ছিলেন । পলাশী যুদ্ধের পর তিনি বাংলার মসনদে অধিষ্ঠিত হয়ে ইংরেজদিগের অবিরত অর্থের দাবী মিটাতে অপারগ হন এবং এর ফলে অবলম্বে তাঁকে সিংহাসনচ্যুত হতে হয়।

মীরজাফর ৭৪ বৎসর বয়সে ১৭৬৫ খ্রীস্টাব্দে ১৭ই জানুয়ারি পরলোক গমন করেন।

২) ঘসেটি বেগম

নবাব আলিবর্দি খাঁর জ্যেষ্ঠ কন্যা । ঢাকার শাসনকর্তা নবাব নোয়াজিস মহম্মদ খাঁ ছিলেন তাঁহার স্বামী। তিনি নিঃসন্তান ছিলেন । এজন্য সিরাজের কনিষ্ঠ ভ্রাতা একরাউদ্দৌলাকে পুত্র রূপে গ্রহণ করেন । বেগমের অনু্রোধে নওয়াজিস মহম্মদ মোতিঝিল প্রাসাদ তৈরি করেন। এই প্রাসাদের সামনে একটি বিরাট ঝিল তৈরি করেন একসময় এই ঝিলে মুক্তার চাষ হতো। ঘসেটি বেগম ছিলেন ঐশ্বর্যশালিনী। তার ইচ্ছা ছিল তাঁর পালিত পুত্রকে মুর্শিদাবাদের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করা । সিরাজকে ঘসেটি বেগম কিছুতেই সহ্য করতে পারতেন না । সিরাজের ধ্বংসই ছিল তাঁর কাম্য। সেজন্য তিনি ষড়যন্ত্রকারী মীরজাফর, জগৎশেঠ, রাজবল্লব, উমিচাঁদ এবং ইংরেজদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছিলেন ।

পলাশির রণক্ষেত্রে পরাজিত হয়ে মিরণের আদেশে বন্দী অবস্থায় সিরাজ নিহত হন এবং মীরজাফর বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার মসনদে বসেন। এই সময় থেকে নবাব আলিবর্দি খাঁর পরিবারবর্গের প্রতি অত্যন্ত অত্যাচার আরম্ভ হয়। আলিবর্দির বেগম ও তাঁর কন্যাদ্বয় ঘসেটি ও আমেনা এবং সিরাজউদ্দৌলার স্ত্রী ও শিশুকন্যাকে অযথা কষ্ট প্রদান করে বন্দীভাবে রাখা হয়।

বন্দী অবস্থায় তাঁর চূড়ান্ত যন্ত্রণা ভোগ করলে তাঁদের মুর্শিদাবাদ থেকে ঢাকায় নির্বাসিত করা হয়। মিরণ তাঁদের জীবিত থাকা অসহ্য মনে করে তাঁদের বিনাশ সাধনে প্রবৃত্ত হন। আলিবর্দি খাঁর বেগম এবং সিরাজের বেগম ও কন্যা কোনরূপে অব্যাহতি পান। কিন্তু ঘসেটি ও আমেনা বেগমকে নৌকা থেকে নদীগর্ভে নিক্ষেপ করা হয়।

মুর্শিদাবাদ ঘুরে আমরা আসার পথে… মুর্শিদাবাদের বিখ্যাত কয়টা সিল্ক শাড়ি ও বিখ্যাত ছানাবড়া কিনে নিলাম…

পুনম মায়মুনী | Punom Mymoni

Godhuli | গোধূলি | রম্যরচনা | জয়ন্ত কুমার সরকার | Best 2023

দেবতা ৩৩ কোটি | 33 Crore Gods | প্রবোধ কুমার মৃধা

Chandannagar Jagadhatri | চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজার প্রবক্তা কে ??

Bengali Article 2023 | জীবানন্দ মহাশয়ের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া

Famous Places in Murshidabad | Murshidabad | Read Famous Places in Murshidabad | New Read Online Bengali Story | Top Best Story Blogs | Best Story Blogs in pdf | Sabuj Basinda | High Challenger | Best Famous Places in Murshidabad 2023 | Shabdodweep Read Online Bengali Story | Shabdodweep Writer | Famous Places in Murshidabad in India | World’s Famous Places in Murshidabad | Famous Places in Murshidabad in Online | Online Famous Places in Murshidabad | Full guide – Famous Places in Murshidabad | Famous Places in Murshidabad Blogs | Best Story Blogs in Bengali | Live Bengali Story in English | Famous Places in Murshidabad pdf guide | Full Bangla Galpo online | New Live Bengali Story | New Bengali Web Story – Episode | Golpo Dot Com Series | Horror Adult Story Video | Horror Live Bengali Story | New Bengali Web Story Audio | New Bengali Web Story Video | Famous Places in Murshidabad Netflix | Full Guide Famous Places in Murshidabad | Read Famous Places in Murshidabad | Shabdodweep Competition | Story Writing Competition | Bengali Writer | Bengali Writer 2023 | Trend Famous Places in Murshidabad | Recent Famous Places in Murshidabad | Top Live Bengali Story | Popular New Bengali Web Story | Best Read Online Bengali Story | Read Online Bengali Story 2023 | Shabdodweep Famous Places in Murshidabad Story | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Golpo Dot Com Download | Famous Places in Murshidabad – audio guide | Horror Adult Story | Read Online Bengali Story Collection | Famous Places in Murshidabad – video guide | Famous Places in Murshidabad Guide APK | New Bengali Web Story Download | Famous Places in Murshidabad mp3 guide | Full Live Bengali Story | Bengali Famous Story 2023 | Shabdodweep Bengali Famous Story | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Live Bengali Story – audio | Top Famous Places in Murshidabad | Bengali Famous Story – video | Bengali Famous Story mp3 | Full Bengali Famous Story | Bengali Literature | Shabdodweep Magazine | Shabdodweep Web Magazine | Live Bengali Story Writer | Shabdodweep Writer

Leave a Comment