Emperor Akbar Fond of Paan | Akbar er Ento Paan | Best Adult Story 2023

Sharing Is Caring:

[Emperor Akbar Fond of Paan]

আকবরের এঁটো পান – প্রীতম সরকার

।। ১ ।।

বিষয়টা যে এই জায়গাতে পৌঁছে যাবে সেটা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি ভারত সম্রাট আকবর। আগ্রার কেল্লাতে রোজ যেমন খাবার তিনি খেয়ে অভ্যস্ত, আজও তেমনই খেয়েছিলেন। খাবার পরে অভ্যাস মতো সুগন্ধী মশলা দিয়ে সাজানো তাম্বূলি চিবোতে চিবোতে কেল্লার ভিতরের বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছেন তিনি। দুপুরে আজ যেন গরমটা বেশ ভালোই পড়েছে। বারান্দা থেকে বাইরে তাকিয়ে দেখলেন সামনেই বয়ে চলেছে যমুনা নদী। কিন্তু অন্যদিনের মতো আজ যমুনার দিক থেকে যে হাওয়া আসছে, তাতে বেশ গরমের ভাব। এই গরম হাওয়ায় অস্বস্তি লাগছে সম্রাটের। মশলা যুক্ত পান এখনও মুখে রয়েছে তাঁর। মুখের ভিতরে তম্বুলির সঙ্গে মেশানো হরিণের নাভি কস্তূরীর গন্ধে বেশ আরাম হচ্ছিল সম্রাটের। তম্বুলির ভিতরে অন্যান্য মশলার সঙ্গে কস্তূরী মিশিয়ে কিছুদিন থেকে রোজ খাচ্ছেন তিনি। তাঁর যে একটা সমস্যা তৈরি হয়েছিল, রাজবৈদ্যের পরামর্শে সেটা নিয়ম করে পালন করায় অনেকটাই কেটে গিয়েছে। কিন্তু এখন দুপুরের এই গরম আবহাওয়ায় থাকার চেয়ে বিশ্রাম কক্ষে চলে যাওয়া ভালো বলে মনে হলো আকবরের।

আগ্রার কেল্লার প্রাসাদের ভিতরে যে ঘরে আকবর দুপুরে বিশ্রাম করেন, সেই ঘর প্রাকৃতিক ভাবে ঠাণ্ডা করার ব্যবস্থা রয়েছে। এই গরমের দুপুরে সেই ঠাণ্ডা ঘরে বিশ্রাম নিতে রওনা হওয়ার সময় আধ খাওয়া তাম্বূলি মুখ থেকে বের করে বারান্দার মেঝের একধারে ফেলে দিলেন তিনি। কেল্লায় অনেক দাসী রয়েছে। তারা কেউ সম্রাটের এই উচ্ছিষ্ট আধ খাওয়া তাম্বূলি বা পান পরিষ্কার করে নেবে। সেজন্য বারান্দায় উপস্থিত থাকা খোজাদের মাধ্যমে দাসীদের নির্দেশ দিয়ে ঘরের ভিতরে ঢুকে গেলেন।

আকবরের মাথায় এখন সে-ধরনের অন্য কোন চিন্তা নেই। সেদিক থেকে মানসিকভাবে অনেকটা হাল্কা মেজাজে রয়েছেন তিনি। এই মুহূর্তে তাঁর সাম্রাজ্যে কোথাও যুদ্ধ নেই। গুপ্তচররা এমন কোন খবর আনেনি, যে সামনে কোন যুদ্ধের সম্ভাবনা আছে। সেদিক দিয়ে এই মুহূর্তে অনেকটা নিশ্চিন্ত তিনি। যেটুকু ছোটখাটো সমস্যা রয়েছে, সেটা সেনাপতি মান সিং সামলে নিতে পারবেন এটুকু বিশ্বাস আকবরের রয়েছে।

আকবর তাঁর আগের মোঘল সম্রাটদের মতোই খেতে ভালোবাসেন। এবিষয়ে রীতিমতো শৌখিন তিনি। আগ্রার কেল্লার প্রাসাদে আকবরের জন্য যে খাবার রান্না হয়, সেখানে সব কিছু দেখভাল করেন একজন কোষাধ্যক্ষ, একজন গুদাম রক্ষক ও কয়েকজন কেরানি। রান্নার দায়িত্ব দেওয়া আছে একজন প্রধান পাচক আর চারশো জন রাঁধুনির উপরে। আকবর এই রাঁধুনিদের উত্তর ভারতের নানা জায়গা এবং পারস্য দেশ থেকে বেছে এনে পরীক্ষা নিয়েই রান্নার কাজে নিযুক্ত করেছেন। তবে সম্রাটের খাবার রান্না হয় খুব গোপনীয়তার সঙ্গে। কারণ, সম্রাটের মনে সন্দেহ আছে, তাঁর খাবার বিষ মেশানো হতে পারে। আকবরের দাদু সম্রাট বাবরকে এক ভোজ সভায় খাবারে বিষ মেশানো হয়েছিল। বাবর প্রাসাদে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছিল বাবরের। কয়েকবার বমিও করেছিলেন। অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পরে রাজ বৈদ্য বাবরকে সে যাত্রায় বাঁচিয়ে তোলেন। সেকথা মাথায় রেখেই আকবর নিজের রান্না ঘরটিতে সব সময় কড়া পাহারার জন্য রক্ষীদের নিযুক্ত করেছেন। সেখানে কোন বাদীদের তো বটেই, রাজকর্মচারী থেকে শুরু করে রাজসভার অন্য ব্যক্তিদেরও ঢুকতে দেওয়ায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন সম্রাট। তারপরেও রান্না শেষ হলে, একজন প্রচণ্ড বিশ্বস্ত রন্ধন পরীক্ষক প্রথমে সম্রাটের সব খাবার চেখে দেখে আরও একজন মীর বাকাওয়াল বা তত্ত্বাবধায়ক। এরপরেই সেই রান্না করা খাবার সম্রাটের সামনে হাজির করে প্রাসাদের খোজারা। এমনকি খাবারের পরে সম্রাটকে যে তাম্বূল দেওয়া হয়, সেটাও নানা পরীক্ষার পরে সম্রাট মুখে দেন।

গতকাল রাতে সম্রাট তাঁর নিজের হারেমের চারজন উপপত্নীর সঙ্গে কাটিয়েছেন। রাতে যোধা বাঈ এর সঙ্গে কিছুক্ষণ যৌন সঙ্গম করে আকবর নিজের ঘরে ফিরে অন্য বিবাহিতা রানীদের বা কখনও তাঁর হারেমের সুন্দরী উপপত্নীদের খবর পাঠাতেন। যোধা ছাড়াও আরও রানী বা তাঁর উপপত্নী তো কম নেই! আকবরের উপপত্নী আর রক্ষিতা মিলিয়ে পাঁচশোজন রয়েছে হারেমে। কিন্তু মান সিং এর বোন যোধার সঙ্গে আকবর যৌনক্রীয়া করে যে যৌন সুখ পান, সেটা অন্য পত্নী বা উপপত্নীদের থেকে আকবর পান না। সেজন্য রোজ রাতে কিছুটা সময় তাঁর রাখা আছে যোধার জন্য।

রাজসভার সব সভাসদরা জানেন, যে সম্রাট এই সব উপপত্নীদের ভেট পেয়েছেন বিভিন্ন রাজ্যে যুদ্ধ করে সেখানকার রাজাদের হারিয়ে। অধিকাংশ রাজারাই আকবরের বশ্যতা স্বীকার করে, সম্রাটকে হাতে রাখতে তাঁদের পরিবারের কোন অবিবাহিতা আত্মীয়ার সঙ্গে সম্রাটের বিয়ে দিয়েছেন। আর আকবর নিজে বুঝতে পেরেছিলেন, রাজপুতরা শত্রু হিসাবে যতটা ভয়ানক, আবার বন্ধু হিসাবে ততটাই উপকারী। সুষ্ঠুভাবে রাজকার্য চালাতে গেলে রাজপুতদের সঙ্গে মোঘলদের সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো রাখা প্রয়োজন। সেই কারণে নিজেই উদ্যোগ নিয়ে আম্বর রাজ্যের রাজকন্যা, মান সিং এর বোন যোধাকে বিয়ে করেছিলেন তিনি।

আকবর সাম্রাজ্য শাসনের দৈনন্দিন কাজে এত চাপে থাকেন, রাতে বেশ কয়েকবার যোধা, অন্য রানীদের আর হেরেমের উপপত্নীদের সঙ্গে সঙ্গম করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলেন। সম্রাট যৌনক্রীয়া করেন, সেই ঘরের তাপমাত্রাও প্রাকৃতিক ভাবে ঠাণ্ডা করা থাকে। মোঘল সম্রাটদের নিয়ম মতোই সেই ঘরের দরজার সামনে আলাদা দেওয়াল করা আছে। রাতে যখন সম্রাট এই ঘরে থাকেন, তখন সেই ঘরের আশেপাশে কোন দাসদাসীদের থাকা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। নরম মখমলি বিছানা, সুদৃশ্য পর্দা, হাজার মোমবাতির রঙিন ঝাড়বাতি, মৃগনাভির সুগন্ধেও সম্রাটের রমণ ক্লান্তি কাটছিল না। নিজের বিবাহিতা রানীদের পরে আর কিছুতেই হারেমের দু’ চারজন উপপত্নীর বেশি রমণ ক্রিয়ায় লিপ্ত হতে পারছেন না তিনি।

এখন রাজ বৈদ্যের দেওয়া পরামর্শ মেনে চলায় সেই ক্লান্তি কেটেছে। আজকের দুপুরের বারান্দার গরম থেকে আকবর ঠাণ্ডা ঘরে ঢুকে সেই কয়েক দিন আগের কথা মনে করছিলেন। এখন রাজ বৈদ্য তাঁকে যেন নতুন জীবনের উদ্দামতা এনে দিয়েছেন।

।। ২ ।।

শেষ পর্যন্ত রাজ হেকিমকে কথাটা গোপনে খুলেই জানিয়ে ছিলেন সম্রাট আকবর। একমাত্র রাজবৈদ্যকে এই সমস্যার কথা জানালেই তার সমাধান সম্ভব, সেই বিশ্বাস আকবরের ছিল। তিনি একদিন রাজবৈদ্যকে দেওয়ান-ই-আম থেকে ঘরে ফিরে এসে ডেকে নিলেন। সম্রাটের হঠাৎ তলবে পেয়ে রাজ বৈদ্য একটু অবাক হয়েছিলেন। রাজবৈদ্য ভাবলেন, সম্রাটকে তো দেওয়ান-ই-আম এ থাকার সময় দেখে মনে হয়নি, তাঁর শরীরে কোন অসুস্থতা রয়েছে! তাহলে হঠাৎ সম্রাটের তাঁকে তলব কেন! রাজবৈদ্য সম্রাটের ঘরে প্রবেশ করা মাত্র সেখানকার সব দাসদের ঘরের বাইরে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন আকবর। কথাটা অত্যন্ত গোপনে রাজবৈদ্যকে জানাতে হবে। সম্রাট চান না তাঁর শরীরের এই গোপন কথা পাঁচ কান হোক বা গুপ্তচররা কোনভাবে খবর বাইরে পাচার করুক।

“আমি চার, পাঁচবার সঙ্গমের পরেই কেমন যেন ক্লান্ত হয়ে পড়ছি বৈদ্য সাহেব! আমার এই ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কি কিছু করা যায় না! না হলে, এত উপপত্নীদের সামলাবো কিভাবে! প্রতিরাতেই তো তাঁরা আমার অপেক্ষাতে শৃঙ্গার করে অপেক্ষা করেন! আমি যোধা বা অন্য রানীদের সঙ্গে কাটিয়ে, পরে দু-তিনজনের বেশি উপপত্নীদের সঙ্গে যৌন সঙ্গম করতে পারছি না! খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ছি। কিছু একটা উপায় করুন আপনি!”

রাজবৈদ্য অবশ্য সম্রাটের যৌন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য স্বাভাবিক চেষ্টার ত্রুটি রাখেন না। প্রতিদিনই আকবরের খাবারের মেনু ঠিক করেন রাজবৈদ্য। সম্রাটের শরীর বুঝে এবং মরশুম অনুযায়ী রাজবৈদ্যের দায়িত্ব এই মেনু তৈরি করা। অত্যন্ত গোপনে রাখা হয় সম্রাটের এই আগাম খাবারের তালিকা। আগে থেকে সম্রাটের নিজস্ব রাজবৈদ্য ছাড়া আর কেউ ঘুণাক্ষরেও জানতে পারেনা সম্রাট সেদিন কি খাবার খেতে চেলেছেন। প্রতিদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে রাজবৈদ্য আগ্রা কেল্লার রন্ধনশালায় গিয়ে সম্রাটের খাবারের আলিকা অনুযায়ী রান্না করার নির্দেশ দেন। আগে থেকে যেহেতু রান্নার বিষয়ে কেউ কিছু জানতে পারে না, তাই সব ধরনের রান্নার জিনিস মজুত রাখতে হয় রান্না ঘরের গুদামে। যতক্ষণ সম্রাটের জন্য রান্না হয়, রাজবৈদ্য রান্না ঘর ছেড়ে নড়েন না। সম্রাটের খাবারে পুষ্টিকর জিনিসপত্র দেওয়া হচ্ছে কি না, সেটা নজর রাখেন রাজবৈদ্য। রাজবৈদ্যের কথা মতোই সম্রাট আকবরের বিরিয়ানির প্রতিটি চালের গায়ে লাগিয়ে দেওয়া হয় সিলভার অয়েল। এই সিলভার অয়েল গুরুপাক বিরিয়ানি হজমে যেমন সাহায্য করে, তেমনই সম্রাটের যৌন শক্তি বাড়াতেও কাজে লাগে। তাছাড়া আফগানিস্তান থেকে যে মুরগী নিয়ে আসা হয়, সেগুলিকে কয়েক মাস ধরে কেল্লার ভিতরেই খামারে বিশেষভাবে পালন করে তবেই রান্নার উপযোগী করা হয়। এমনকি সেই মুরগীগুলোর শরীরে নানারকম তেল, চন্দন তেল মালিশ করানো হয়। সমাট্র যেন খাবার সময় কোনরকম আঁশটে গন্ধ মুরগীর মাংস থেকে না পান, সেটা রাজবৈদ্যই হুকুম দিয়েছেন খামারের কর্মীদের। এই মুরগীগুলোকে নিয়মিত হাতে করে দানা খাওয়ায় খামারের কর্মচারীরা। এই দানায় জাফরান আর গোলাপ জল মেশানো থাকে। মুরগীগুলোকে সাধারণ জল খেতে দেওয়া হয় না। আলাদা পাত্রে নিয়মিত গোলাপ জল রেখে সম্রাটের জন্য রান্না হওয়ার আগে পর্যন্ত মুরগীগুলোকে খাওয়ানো হয়। রাজবৈদ্যের পরামর্শ মতো খামারের কর্মচারীরা এই কাজ করেন। এর ফলে মাংস নরম আর সুস্বাদু হয়ে ওঠে। তবে সপ্তাহে দু’দিন নিরামিষ খাবার খান সম্রাট। সেটা সপ্তাহের কোন দিন হবে, সেটাও ঠিক করেন রাজ বৈদ্য। সেদিন গুলোতে সম্রাট আকবর মদ্যপান করেন না। পান করেন গঙ্গা জল। সুদূর হিমালয়ে গঙ্গার উৎসস্থল থেকে অত্যন্ত গোপনে কড়া পাহারায় নিয়ে আসা হয় সম্রাটের জন্য এই গঙ্গা জল।

আকবরের সমস্যার কথা শুনে রাজবৈদ্য সম্রাটকে বললেন, “জাঁহাপনা, আপনার জন্য তো সব ধরনের সুস্বাদু খাবার আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে রন্ধন শালায় তৈরি করাই। তাতে যৌনশক্তি বাড়ার উপকরণ দেওয়া হচ্ছে কি না, দেখে নিই। তারপরেও আপনার এই সমস্যা হচ্ছে, এ তো বড় চিন্তার কথা! আমি নতুন ভাবে আবার পুঁথি দেখছি। কোন উপায় খুঁজে বের করতে পারি কি না!”
“আপনি কিন্তু খুব বেশি সময় নষ্ট করবেন না বৈদ্য সাহেব! আমাকে তাড়াতাড়ি এই অবস্থা থেকে কাটিয়ে উঠতে হবে!” বললেন মোঘল সম্রাট আকবর।

রাজবৈদ্য সম্রাটকে কুর্নিশ করে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে নিলে আকবর আবার রাজবৈদ্যকে পিছু ডেকে বললেন, “বিষয়টা কিন্তু অত্যন্ত গোপনীয়। আপনি সেই কথাটা খেয়াল রাখবেন।”

কেল্লায় নিজের ঘরে ফিরে এসে রাজবৈদ্য নিজের বানানো তালিকা বের করলেন। এই তালিকাতেই লেখা রয়েছে, আগামীকাল সম্রাটকে কি খেতে দেওয়া হবে। গভীর মনোযোগ দিয়ে তালিকা পরীক্ষা করে রাজবৈদ্য দেখলেন, আগামীকালে সম্রাটের খাবার মেনুতে রয়েছে হরিষা রয়েছে। হরিষা বানানো হবে মুলতানি ভেড়ার মাংস, ভাঙ্গা গম আর এলাচ দিয়ে। আর রয়েছে ঈয়াখানি। এটা এক ধরনের মাংসের স্টু। সম্রাট আকবরের বিশেষ পছন্দের খাবার। এছাড়াও পারস্যের রেসিপিতে তৈরি করা ভেড়ার মাংসের রোস্ট। আর সঙ্গে থাকবে মটন রোগান জোস্‌। পারস্যে এই খাবারের রঙ ছিল সাদা। কিন্তু আগ্রা কেল্লায় সম্রাটের কাশ্মীরী রান্নার রাঁধুনি এই খাবারে পিঁয়াজ রসুনের সঙ্গে মিশিয়ে দেয় কাশ্মীরের মোরগ চূড়া গাছের শুকনো ফুল। এইজন্য রোগান জোসের রঙ হয়ে যায় টকটকে লাল। ফলে এই খাবার থেকে দারুণ গন্ধ বের হয়। সঙ্গে থাকবে কাবুলি নামের এক ধরনের বিশেষ বিরিয়ানি। ইরানি ভেড়ার মাংসের সঙ্গে বাংলার কালো ছোলা শুকনো এফ্রিকন আর আমন্ড এবং বেসিন পাতা দিয়ে বানানো হয় এই কাবুলি বিরিয়ানি।

রাজবৈদ্য দেখলেন, তার পরের দিনের সম্রাটের রেসিপির তালিকা। ওই দিন বাদশার নিরামিষ খাবার খাবার পরিবেশন করা হবে। সম্রাট আকবর সপ্তাহে যেদিন গুলিতে নিরামিষ খাবার খান সেগুলোকেও দেখভাল করতে হয় রাজবৈদ্যকে। বৈদ্য দেখলেন, নিরামিষ মেনুতে সম্রাটের জন্য রয়েছে, পালং শাক। পালং শাক প্রচণ্ড মিহি করে কেটে তারমধ্যে লবঙ্গ, আদা, দারুচিনি, এলাচ মিশিয়ে রান্না করে কেল্লায় থাকা সম্রাটের বিশেষ রাঁধুনিরা। এই নিরামিষ খাবারে সম্রাটের পছন্দ সবুজ আর গোলাপি রঙের সুগন্ধঈ মিষ্টি ভাত সঙ্গে রকমারি ফিরনি। সঙ্গে সম্রাটের প্রিয় জর্দার বিরিঞ্চো। রাজবৈদ্য জানেন এই জর্দার বিরিঞ্চো কিভাবে তৈরি করে রাঁধুনিরা। দশ সের সুগন্ধী চালের সঙ্গে পাঁচ সের মিছরি, চার সের ঘি সঙ্গে আধ সের করে কিসমিস, কাজু বাদাম, পেস্তা মিশিয়ে বানানো হয় এই বিরিঞ্চো।

সম্রাট নিজে খাদ্য রসিক হলেও এত পদের রান্নার সবটা কখনোই খান না আকবর। শুধু সব রান্নাগুলি একটু একটু করে চেখে দেখেন। এটাই সম্রাটের অভ্যাস। তবে নিরামিষ বা আমিষ, যে খাবার সম্রাটের জন্য রান্না হয়, সেগুলি সোনা, রূপা আর পাথরের পাত্রে সম্রাটকে পরিবেশন করে খোজারা। এই সময় তাঁকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এমনকি, রান্নার পরে সমস্ত খাবার পরীক্ষার পরে সেগুলি ঠিকমতো সম্রাটের সামনে পৌঁছচ্ছে কি না সেটাও দেখভাল করেন রাজবৈদ্য। মসলিন কাপড়ের বিশেষ এক ধরনের ব্যাগ তৈরি করিয়েছেন সম্রাটের খাস নিরাপত্তা রক্ষীরা। কড়া পাহারায় খাবারের এই ব্যাগ সম্রাটের খাবার ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। সম্রাটের সামনে গিয়েই সেই ব্যাগ থেকে খাবার বাইরে বের করতে হয়।

রাজবৈদ্য নিজের ঘরে বসে নিজের তৈরি মেনু দেখতে দেখতে ভাবলেন, সম্রাট তো কথাটি গোপন রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু সম্রাটের রাঁধুনিরা ছাড়া অন্য কেউ তো বিস্তারিতভাবে বলতে পারবে না রান্নার পদের বিভিন্ন ব্যবহারিক জিনিসগুলি। দু-একটা মাত্র তিনি জানেন। তিনি নিজে প্রতিদিন সম্রাটের রেসিপি দিয়ে রান্নার সময় রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে থাকলেও, সেইভাবে কখনও খুঁটিয়ে দেখেননি রান্নায় কি মশলা ব্যবহার করা হয়। আর রাঁধুনিরা উত্তর প্রদেশ বা পারস্যের শুধু তো নয়, মোটামোটি ভারতের সব এলাকার ভালো রান্না জানা কিছু হাতে গোনা লোককেই সম্রাট নিজের রাঁধুনির কাজে রেখেছেন। নিজে খুব অল্প পরিমাণে খেলেও সম্রাটের জন্য প্রতিদিনই প্রচুর পরিমাণে রান্না করতে হয়। রাঁধুনিরা তো বটেই, অন্য কোন কর্মচারীর সম্রাটের জন্য তৈরি এই শাহী খাবারের স্বাদ নেওয়ার হুকুম নেই।

।। ৩ ।।

নিজের ঘরে চিকিৎসা শাস্ত্রের নানা পুঁথি সামনে খুলে রেখে একমনে সেগুলি পড়ে চলেছেন রাজবৈদ্য। যৌনশক্তি বাড়ানোর ওষুধের বিষয় নিয়ে বিস্তারিত পড়া শুরু করলেন তিনি। সম্রাটের বিরিয়ানির চালে যে সিলভার ওয়েল মেশানো হয়, তার উল্লেখ রয়েছে এখানে। এতে যৌনশক্তি বাড়ে সেকথাও লেখা রয়েছে। কিন্তু এর বেশি কিছু লেখা নেই।

তিনি চিন্তা করে রেখেছিলেন, পুঁথি দেখে যে ওষুধের ব্যবহারে সম্রাটের যৌনশক্তি বাড়ানোর উপায় পাওয়া যাবে, কেল্লার রান্না ঘরের মুল রাঁধুনিকে ডেকে নিয়ে সেই জিনিস সম্রাটের জন্য তৈরি খাবারে মেশানো বা সেই জিনিস সরাসরি রান্না করার নির্দেশ দেবেন। এই কারণে আগেই কেল্লার রাঁধুনিকে ডেকে পাঠাননি তিনি। তাঁর নিজের আগে এই বিষয়ে জেনে নিতে হবে! একটি পুঁথিতে রাজবৈদ্য দেখলেন, হিমালয়ের শীলাজিত নামে এক জিনিস মানুষের শরীরের যৌন ক্ষমতা বাড়ানো পক্ষে উপযুক্ত। কিন্তু জাঁহাপনার খাবারে নিয়মিত শীলাজিত ব্যবহার করা হয়। তবে কি শীলাজিতের পরিমাণ জাহাঁপনার জন্য তৈরি খাবারের সঙ্গে একটু বেশি পরিমাণে মিশিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেবেন! তার আগে আরও একটু খতিয়ে দেখার জন্য অন্য একটা প্রাচীন পুঁথি টেনে নিলেন রাজবৈদ্য।

যে পুঁথিটা রাজবৈদ্য পড়ার জন্য খুলেছেন, সেটা অনেক প্রাচীন পুঁথি। খুব সাবধানে ধীরে ধীরে সেই পুঁথির প্রতিটি পাতা উল্টাতে হচ্ছে। তাল পাতার উপরে লেখা রয়েছে বিভিন্ন শারীরিক রোগের প্রয়োজনীয় প্রতিকারের উপায়।

রাজবৈদ্য খুঁজে চলেছেন, যৌনশক্তি বাড়ানো বা সেই শক্তি বেশি সময় ধরে টিকিয়ে রাখার জন্য কি ওষুধের বিধান এখানে রয়েছে কি না! অনেক দিন আগের পুঁথির পাতাগুলোর অবস্থা রীতিমতো খারাপ! সেই পুঁথির মাঝ বরাবর হঠাৎ রাজ বৈদ্য দেখতে পেলেন, সেখানে হরিণের নাভি কস্তূরীর বিষয়ে লেখা রয়েছে।

কস্তূরীর নানা গুনাগুণ পড়তে পড়তে তাঁর নজরে এলো, এতক্ষণে তিনি যেটা খুঁজছেন, সে বিষয়েই পুঁথিতে লেখা রয়েছে। বৈদ্য মনোযোগ দিয়ে পড়ে দেখলেন, পুঁথিতে লেখা রয়েছে, কস্তূরী নিয়মিতভাবে খেলে মানুষের যৌন ক্ষমতা বেড়ে তো যায় বটেই, উপরন্তু যে ব্যক্তি কস্তূরী খান, সেই মুহূর্তে তাঁর যৌন কাতরতা কয়েক’শো গুন বেড়ে যায়। লেখাটা দেখেই পুঁথিটাকে রেশম কাপড়ে জড়িয়ে পুথিটাকে নিয়ে রওনা হলেন শাহেনশার প্রাসাদের দিকে।

।। ৪ ।।

সম্রাট আকবর তাকিয়ায় হেলান দিয়ে মরসুমি ফল খাচ্ছিলেন। এই মরসুমি ফলের তালিকাও সম্রাটকে রাজবৈদ্যই বানিয়ে দিয়েছেন। আকবরের ঘরের ভিতরে শাহেনশার হুকুম পালন করার জন্য দুজন খোজা দাঁড়িয়ে ছিল।

সম্রাটের প্রাসাদের দরজায় পাহারা দিচ্ছিল বল্লম হাতের চারজন পাহারাদার। রাজবৈদ্য পাহারাদারদের মধ্যে একজনকে দিয়ে তাঁর সম্রাটের সঙ্গে এই বিশ্রামের সময় সাক্ষাতের প্রার্থনা করে পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গে, তা মঞ্জুর করলেন আকবর। সম্রাটকে কুর্নিশ করে রাজবৈদ্য বললেন, “জাঁহাপনা, একটা খুব ভালো খবর আছে আপনার জন্য!”

রাজবৈদ্যকে দেখেই সম্রাট আন্দাজ করলেন, শাহেনশাহকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলতে এই সময়ে এসেছেন তিনি। সাধারণত এই সময় সম্রাট বিশ্রাম করেন। সেই কথাটা জানে প্রাসাদের সব দাসদাসী থেকে রাজ কর্মচারীরা পর্যন্ত। এমনকি, আকবরের রাজসভার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরা, নবরত্ন বলে যাঁদের খ্যাতি রয়েছে সারা ভারতবর্ষ জুড়ে, তাঁরাও এই ব্যক্তিগত সময়ে সম্রাটকে বিরক্ত করার সাহস দেখান না! এই অসময়ে আকবরের বিশ্রামের ঘরে রাজবৈদ্যের উপস্থিতিতে সেখানে সম্রাটের হুকুম তালিমের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা খোজা থেকে বাইরের দরজায় পাহারায় থাকা রক্ষীরাও অবাক হয়েছে!

রাজবৈদ্যকে দেখে আকবর সেই কর্মচারীদের ডেকে নির্দেশ দিলেন, “যতক্ষণ রাজবৈদ্য আমার কাছে থাকবেন, সেই সময় এখানে যেন কেউ ঢুকতে না পারে!”

গতকালই রাজবৈদ্যকে ডেকে নিয়ে গোপনে আকবর তাঁর শারীরিক সেই সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন। এরমধ্যেই কি সেই সমস্যার সমাধানের উপায় খুঁজে পেয়েছেন রাজবৈদ্য!

আকবর তাঁর বিশ্রামে ঘর ফাঁকা হতেই কৌতূহল চেপে জানতে চাইলেন, “বলুন বৈদ্য মশাই, কি ভালো খবর নিয়ে এসেছেন আমার জন্য!”

রাজবৈদ্য সম্রাটের থেকে অনুমতি পেয়ে বললেন, “আপনি আদেশ দেওয়ার পর থেকেই আমি চিকিৎসা শাস্ত্রের সব পুঁথি ঘেঁটে একটা উপায় পেয়েছি, যাতে আপনার যৌন ক্ষমতার সঙ্গে যৌন শক্তিও বৃদ্ধি পেতে পারে! আপনার হুকুম হলেই আমি সেগুলো জোগাড়ের ব্যবস্থা করতে পারি! সেই সঙ্গে আপনার দৈনন্দিন খাবারের সঙ্গে সেই জিনিস কিছু পরিমাণ খেলেই আপনি সেই শক্তি অর্জন করতে পারবেন!”

“কি সেই মহার্ঘ্য জিনিস!” জিজ্ঞাসা করলেন সম্রাট।

“আজ্ঞে সেই জিনিস হলো কস্তূরী! মানে হরিণের নাভি”, জবাব দিলেন রাজবৈদ্য।

“আপনি বলছেন পুঁথিতে সব কথা লেখা রয়েছে! সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন সেই পুঁথি!” ফের জিজ্ঞাসা করলেন আকবর। তবে তাঁর পুঁথি দেখেও যে কোন লাভ হবে না, সেটা ভালো করেই জানেন আকবর।

ভারত সম্রাট হলেও আকবর নিজে পড়াশোনা তেমন জানেন না! আসলে তিনি অক্ষর মনে রাখতে পারেন না! সেই কারণে রাজ বৈদ্যের কাছে তিনি পুঁথির লেখা দেখার কোন ইচ্ছাই দেখালেন না। খুব ছোটবেলাতে, তাঁর বাবা হুমায়ুন মারা গিয়েছিলেন। সেসময় আকবরকে সিংহাসনে বসতে হয়। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর। সেসময় আকবরকে রাজকার্য সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য সব রকম সাহায্য করতেন বৈরাম খান। সেই ছোটবেলা থেকে রাজকার্য পরিচালনার পাশাপাশি আকবরের নারী সংসর্গ পেতে কোন বেগ পেতে হয়নি। বেশ কয়েকবার যুদ্ধ করতে হয়েছে অবশ্য তাঁকে। প্রতিদিনই যুদ্ধের শেষে নারী সম্ভোগ ছিল আকবরের সেই ছোটবেলার অভ্যাস।

এখন যখন আকরর নিজেই অনুভব করেছেন, তাঁর যৌনশক্তি কমে যাচ্ছে, তিনি আর আগের মতো নারী সম্ভোগ করতে পারছিলেন না, সেসময় সম্রাটের মনে সন্দেহ দেখা দিয়েছিল, অত্যন্ত ছোট বয়স থেকে এক নাগাড়ে রোজ বহু নারী সম্ভোগের জন্য তাঁর কোন গোপন রোগ হয়েছে কি না! কিন্তু গতকাল সেই আশঙ্কার কথা তিনি জানাননি রাজবৈদ্যকে। কিন্তু রাজবৈদ্য সে-ধরনের কোন সম্ভাবনার কথা না শোনানোয় সম্রাট নিজের মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।

রাজ বৈদ্যের পরামর্শ শুনে আকবর বললেন, “এ আর এমন কি বড় ব্যাপার বৈদ্য মশাই। আমি তো নিয়মিত শিকারে যাই। শিকার করতে আমার নিজেরও খুব ভালো লাগে। আপনি তো জানেন, আমি হাতি পর্যন্ত শিকার করেছি। বাঘ, হরিণ তো শিকারে গেলেই পাওয়া যাবে। কস্তূরী সংগ্রহ করা কোন বড় ব্যাপার হবে না! কিন্তু আপনি নিশ্চিত তো যে, কস্তূরী খেলে আমার এই যৌন সমস্যা মিটে যাবে!”

“আজ্ঞে জাঁহাপনা, চিকিৎসা শাস্ত্রের পুঁথিতে তো তাই বলছে!” জানালেন রাজবৈদ্য।

আকবর বললেন, “বেশ! তবে আমি আগামীকালই শিকারে যাবো। এবার আমার প্রধান লক্ষ্য হবে হরিণ শিকার করার। এছাড়াও আমি রাজসভাতে ঘোষণা করছি, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে কস্তূরী যেন এই কেল্লায় নিয়ে আসা হয়!”

।। ৫ ।।

সেই সময় থেকে আকবরের জন্য যে রান্না করা হতো, সেখানে আগের মতোই নিয়মিত উপস্থিত থাকেন রাজবৈদ্য। রাজবৈদ্যের পরামর্শে সম্রাটের রান্নায় নিয়মিত কস্তূরী দেওয়া হচ্ছে কি না, সেটা দেখভাল করছেন রাজ তিনি। সম্রাটের জন্য তৈরি বিরিয়ানিতে যেমন কস্তূরী দেওয়া হচ্ছে, তেমনই কস্তূরীর ব্যবহার হচ্ছে ফিরনিতেও। ফলে সম্রাটের সমস্ত খাবার আগের থেকে সুগন্ধী হচ্ছে! কস্তূরীর তো এক আলাদা সুগন্ধ রয়েছে! এই কস্তূরীর গন্ধে পাগল হয়ে মেয়ে হরিণ তাদের সঙ্গম মরসুমে ছুটে যায় ছেলে হরিণের কাছে।

রাজবৈদ্য পুঁথিতে দেখেছেন, বিশেষ নিয়মে এই আসল কস্তূরী শাহেনশার জন্য তৈরি করতে হবে। যে পাহাড়ি হরিণের কস্তূরী খাবারের সঙ্গে ব্যবহার করা হবে, সেই হরিণের বয়স হতে হবে কমপক্ষে দশ বছরের বেশি। হরিণ মেরে সেই হরিণের থেকে কস্তূরী সহ নাভি তুলে নিয়ে এসে রোদে ভালো করে শুকোতে হচ্ছে। সেই কাজও দেখাশোনা করছেন তিনি নিজের উদ্যোগে। রোদে শুকোনোর পরে একটা প্রাপ্ত বয়স্ক হরিণের থেকে পাওয়া কস্তূরীর ওজন হয় ৬০ থেকে ৬৫ গ্রামের মতো। সম্রাটের খাবারের মধ্যে গত কয়েক মাস ধরে কস্তূরীর ব্যবহারের ফলে আকবর যে উপকার পেয়েছেন, সেটা দিন দু’য়েক আগে গোপনে রাজবৈদ্যকে ডেকে জানিয়েছেন। সম্রাটের জন্য দেওয়া তাঁর টোটকা যে কাজে লেগেছে, সেটা রাজ বৈদ্য জেনে যথেষ্ট খুশি হয়েছেন।

সম্রাট তাঁকে কয়েক দিন আগে দুপুরে বিশ্রাম ঘরে ডেকে পাঠিয়ে বলেছেন, “আমি এখন সম্ভোগে আর ক্লান্ত হচ্ছি না বৈদ্যি মশাই। আপনার পরামর্শে খাবারের সঙ্গে কস্তূরী খেয়ে, তার গুন মনে হয় আমার শরীরে ভালো কাজ করছে। এক এক সময় তো কস্তূরী গ্রহণের কিছুক্ষণের মধ্যে আমি যৌন কাতর হয়ে পড়ছি!”

রাজবৈদ্য কুর্নিশ করতে আকবর তাঁর দিকে একটা মখমলি কাপড়ের তৈরি ছোট বটুয়া ছুঁড়ে দিলেন। সেটা রাজবৈদ্যের হাতে তালুতে গিয়ে পড়তে ঝনঝন শব্দ করে উঠলো। রাজবৈদ্য বুঝতে পারলেন শাহেনশাহ তাঁর উপর সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে উপহার দিয়েছেন! মনে মনে আন্দাজ করলেন, যে বটুয়ার ভিতরে কয়েকটি মোহর রয়েছে। কিন্তু সম্রাটের সামনে সেগুলি বটুয়ার ভিতর থেকে বাইরে বের করে দেখা উচিত হবে না মনে করে বটুয়াটিকে কোমরে গুঁজে রাখলেন বৈদ্য সাহেব।

দুপুরের খাওয়ার পরে আকবর বিশ্রাম করেন, এটা তাঁর বরাবরের একটা অভ্যাস। বিশ্রামের জন্য কেদারার নরম গদিতে শরীর এলিয়ে দিয়েছেন। তখনই রাজবৈদ্য সম্রাটকে বললেন, “গুস্তাকি মাফ্‌ করবেন জাঁহাপনা, আপনার কস্তূরী খাওয়ার পরিমাণ আরও বাড়ানো প্রয়োজন।”

“কেন, পাচক তো জানালো সব রান্নাতেই সে কস্তূরীর ব্যবহার করছে!” আকবর বলে ওঠেন।

“আমার প্রস্তাব ছিল, দুপুরে খাবার খাওয়ার পরে আপনি একটা তাম্বূলি মুখে নিয়ে চিবোন। সেই তম্বুলি বা পান পাতার ভিতরে অন্যান্য মশলার সঙ্গে নিয়মিত কস্তূরী খান! এতে আপনার আরও বেশি যৌনশক্তি বাড়বে!”

“ঠিক আছে, তবে তাই হবে!” বলে সম্রাট অন্যদিকে তাকিয়ে রাজবৈদ্যকে বুঝিয়ে দিলেন, এই ঘর থেকে তাঁর চলে যাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে।

।। ৬ ।।

আজ দুপুরে বাইরে যে গরম হাওয়া দিচ্ছে, তাতে সম্রাট আকবর নিজের প্রাকৃতিকভাবে ঠাণ্ডা করা ঘরে বিশ্রাম করতে এসে একটু তন্দ্রাঞ্চন্ন হয়ে পড়েছিলেন। হঠাৎ তাঁর নিজস্ব খানসামা এক খোজা এসে আকবরের সামনে দাঁড়িয়েছে। শাহেনশাহকে চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম করতে দেখে, তাঁকে বিরক্ত করার সাহস পাচ্ছে না! সম্রাটকে এই অবস্থায় দেখে সেই খোজা ছুটলো বীরবলের প্রাসাদের দিকে। তাঁর সঙ্গে এরমধ্যে এসে জুটেছে প্রাসাদের কয়েকজন সেপাই। তাঁরা সবাই জানে, বীরবল দুপুরে বিশ্রাম করতে করতে বই পড়েন! সুতরাং বীরবলকে সহজেই পাওয়া যাবে!

বীরবলের প্রাসাদে এসে ফটকের পাহারাদারদের মাধ্যমে বীরবলকে খবর দেওয়া হলো, “সম্রাটের দুপুরের নিজস্ব বিশ্রাম ঘরের বারান্দায় এক বাঁদি উন্মাদের আচরণ করছে! সম্রাট তাঁর বিশ্রাম ঘরে রয়েছেন! সম্রাটের বিশ্রামের ব্যাঘাত ঘটতে পারে ওই বাঁদির উন্মাদনার কারণে! তাই এক্ষুনি কিছু করা প্রয়োজন!”

বীরবল খোজা এবং রাজরক্ষীদের কাছ থেকে সমস্ত ঘটনা শুনে কেল্লার বৈদ্যদের খবর দেওয়ার নির্দেশ দিলেও বিষয়টা নিজে সরজমিনে দেখার কৌতূহল সামলাতে পারলেন না! দুপুরেই ছুটে এলেন সম্রাটের প্রাসাদের বিশ্রাম ঘরের সামনে।

বীরবল এসে দেখলেন, কেল্লার কয়েকজন বৈদ্য ইতিমধ্যেই সেখানে উপস্থিত হয়েছেন। তাঁরা ওই বাঁদির শরীর পরীক্ষা করছেন।

বীরবল উপস্থিত পাহারাদারদের কাছে জানতে চাইলেন ঘটনা ঠিক কি ঘটেছে?

সম্রাট আকবরের ঘরের বাইরে পাহারায় থাকা রক্ষীরা বীরবলকে বললো, “এই বাঁদি দুপুরের পরে বারান্দা পরিষ্কার করতে এসেছিল। তারপর থেকেই এই রকম পাগলামো করছে! যেসব পুরুষকে সামনে পাচ্ছে, তাকেই জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করছে! সে রাজ কর্মচারী হোক বা সম্রাটের দুপুরের পাহারায় থাকা পাহারাদাররা। সম্রাটের ভয়ে সবাই বাঁদিটার থেকে দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছে, আর বাঁদিটা অসভ্যের মতো চিৎকার করছে! আমরা তো ভয়ে রয়েছি, এই চিৎকার চেঁচামেচিতে সম্রাটের বিশ্রাম যেন ব্যাহত না হয়। সেজন্যি পরামর্শের জন্য আপনার কাছে ছুটে যাওয়া হয়েছিল!”

বীরবল সব ঘটনা শুনে তো রীতিমতো অবাক! তিনি কখনও শোনেননি কোন বাঁদির সম্রাটের বিশ্রাম ঘরের সামনে এই ধরনের আচরণ করার সাহস পেয়েছে! সম্রাট জানতে পারলে, দাসীর গর্দান পর্যন্ত যেতে পারে!

বীরবল সেখানে উপস্থিত বৈদ্যদের কাছে গিয়ে যতটা আস্তে আওয়াজ সম্ভব সেই ভাবে কথা বলে জিজ্ঞাসা করলেন, “কি হয়েছে এই বাঁদির! কিছু অসুখের কারণ ধরতে পারছেন আপনারা!”

বৈদ্যরা সবাই এক যোগে দু’দিকে মাথা নেড়ে দুপাশে হেলিয়ে ‘না’ ইশারা করলো। এবার বীরবল প্রাসাদের সবচেয়ে বয়স্ক বৈদ্যকে ডেকে নিয়ে আসার হুকুম দিলেন। এই বয়স্ক বৈদ্য আর কেউ নন, স্বয়ং রাজ বৈদ্য! সম্রাটের দেখভাল ছাড়া তিনি আর কোন ব্যক্তির শারীরিক পরীক্ষা করেন না! তবে সম্রাটের প্রাসাদের বারান্দায় এই ঘটনা ঘটায় আর স্বয়ং বীরবলের তলব পেয়ে রাজবৈদ্য এলেন। তিনি বাঁদিকে ছুঁলেন না। শুধু জিজ্ঞাসা করলেন, “কি ধরনের অসুস্থতা অনুভব করছিস্‌?”

বাঁদি যা উত্তর দিলো, সেটা শুনে রাজবৈদ্য বললেন, “কি খেয়েছিস্‌ দুপুরে!”

দুপুর শেষ হয়ে এখন সূর্য পশ্চিম আকাশের দিকে চলেছে। সম্রাট আকবর এক্ষুনি ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে প্রাসাদের নিজের মসজিদে নমাজ পড়তে যাবেন। সবাই তটব্যস্ত হয়ে রয়েছেন কখন সম্রাট ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন সেই অপেক্ষায়।

রাজবৈদ্য ফের বাঁদিকে জিজ্ঞাসা করলেন, “কি রে, দুপুরে কি খেয়েছিস্‌, বল,!”

বাঁদি এবার কাঁদতে কাঁদতে ভয়ে উত্তর দিলো, “তেমন তো কিছু নয়! খাবার খেয়ে তো সুস্থই ছিলাম। এখানে বারান্দা পরিষ্কার করতে এসে দেখি, কিছুটা আধ খাওয়া চেবানো পানের টুকরো পড়ে রয়েছে! সেটা দিয়ে দারুণ সুগন্ধ বের হচ্ছে! মনে হলো, সম্রাটের এঁটো তাম্বূল! আমরা তো শাহী খাবার খেতে পাইনা! তাই লোভ সামলাতে না পেরে সেই আধ খাওয়া পানের টুকরো মুখে দেওয়ার পরেই শরীর যেন কেমন গরম হয়ে উঠলো!”

এরমধ্যেই সম্রাট আকবর বিশ্রাম ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে বাইরে বারান্দাতে বীরবল, রাজবৈদ্য সহ আরও লোকজন সহ বাঁদিকে দেখে অবাক হয়ে গেলেন! বীরবল সম্রাটকে সমস্ত ঘটনা খুলে জানালেন।

সব শুনে সম্রাট আকবর বললেন, “ওটা তো আমিই মুখ থেকে বের করে বারান্দাতে ফেলে গিয়ে ঘরে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। ওটা পরিষ্কারের জন্য হুকুম দিয়ে গিয়েছিলাম তো!”

“সেই হুকুম তামিল করে পরিষ্কার করতে এসেই তো এত বিপত্তি জাঁহাপনা!” উত্তর দিলেন রাজবৈদ্য। আপনি ঘরে চলুন, এর আসল কারণ আমি আপনাকে খুলে বলছি!”

এবার রাজবৈদ্য সেখানে উপস্থিত খোজা আর পাহারাদারদের বললেন, “এঁকে এক্ষুনি কেল্লার ভিতরে যে কুয়ো রয়েছে, সেই কুয়োর ঠাণ্ডা জলে নামিয়ে কিছুক্ষণ চুবিয়ে রাখো। এর অসুখ ভালো হয়ে যাবে।”

সবাই রাজবৈদ্যের কথা মতো সেই কাজে চলে যাওয়ার পরে আকবরের সঙ্গে ঘরের ভিতরে ঢুকে রাজবৈদ্য সম্রাটকে কুর্নিশ করে বললেন, “আপনার ওষুধের ফল দেখলেন জাঁহাপনা! আপনি যে তাম্বূল আধ খাওয়া অবস্থায় বাইরের বারান্দায় ফেলে এসেছিলেন, তারমধ্যে কস্তূরী মেশানো ছিল। একদিকে শাহী খাবারের লোভ, অন্যদিকে কস্তূরীর সুগন্ধীতে ওই বাঁদি লোভ সামলাতে না পেরে আপনার উচ্ছিষ্ট পান খেয়ে নিয়েছে। কস্তূরী খাওয়ার ফলে বাঁদি ভীষণ রকমের কামাতুরা হয়ে পড়েছে! কস্তূরী তো এঁদের শরীরে কোনদিন যায়নি! সেই কস্তূরীর কারণেই বাঁদিটি এই ধরনের কাণ্ড ঘটিয়েছে! যাইহোক, জাঁহাপনা, আমার চিকিৎসা আপনার জন্য যে ভুল হয়নি, সেটা আরও একবার প্রমাণ হয়ে গেলো!”।।

প্রীতম সরকার | Pritam Sarkar

100 questions and answers about Ramakrishna Mission | রামকৃষ্ণ মিশন সম্পর্কে প্রশ্ন ও উত্তর

Pralambasura badha besha of Jagannath | প্রলম্বাসুর বধ বেশ | অভিজিৎ পাল

Param Gyan O Sadhan Tathya | পরমজ্ঞান ও সাধন তত্ত্ব | New Article 2023

Pancha Byanjan | পঞ্চব্যঞ্জন | জয়ন্ত কুমার সরকার | রম্যরচনা | 2023

Emperor Akbar Fond of Paan Story | Top Bangla Golpo Online Reading | New Read Online Bengali Story | Top Best Story Blogs | Best Story Emperor Akbar Fond of Paan | Sabuj Basinda | High Challenger | Emperor Akbar Fond of Paan – Online Reading | Shabdodweep Read Online Bengali Story | Shabdodweep Writer | Bangla Golpo Online Reading pdf | Bengali Story Emperor Akbar Fond of Paan | Pdf Bengali Story – Emperor Akbar Fond of Paan | Natun Bangla Golpo – Emperor Akbar Fond of Paan | Full Bangla Golpo – Emperor Akbar Fond of Paan | Bangla Golpo Online Reading Blogs | Best Bengali Story Online Reading | Live Bengali Story in English | Bangla Golpo Online Reading Ebook | Full Bengali Story Online Reading | New Live Story – Emperor Akbar Fond of Paan | New Bengali Web Story – Episode | Golpo Dot Com Series | Horror Bengali Story Online Reading Video | Horror Live Bengali Story Online Reading | Emperor Akbar Fond of Paan Audio | Emperor Akbar Fond of Paan Video | Emperor Akbar Fond of Paan Netflix | Audio Emperor Akbar Fond of Paan | Video – Emperor Akbar Fond of Paan | Shabdodweep Competition | Story Writing Competition | Bengali Writer | Bengali Writer 2023 | Trending Bengali Story Online Reading | Emperor Akbar Fond of Paan Reading | Top Story Emperor Akbar Fond of Paan | Popular New Bengali Web Story | Best Read Online Bengali Story | Read Online Bengali Story 2023 | Shabdodweep Bangla Golpo Online Reading | New Bengali Story Online Reading | Emperor Akbar Fond of Paan in pdf | Golpo Dot Com Download | Emperor Akbar Fond of Paan mp3 | Horror Adult Story | Read Online Emperor Akbar Fond of Paan | Bangla Emperor Akbar Fond of Paan mp4 | Bangla Golpo Online Reading Library | New Bengali Web Story Download | Full Live Bengali Story | Bengali Famous Story 2023 | Shabdodweep Bengali Famous Story | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Live Bengali Story – audio | Bengali Famous Story – video | Bengali Famous Story mp3 | Full Bengali Famous Story | Bengali Literature | Shabdodweep Magazine | Shabdodweep Web Magazine | Live Emperor Akbar Fond of Paan | Shabdodweep Writer | Collection Bangla Golpo Online Reading

Leave a Comment