Violence against women and its solution | Best Article 2023

Sharing Is Caring:

নারী নির্যাতন ও তার সমাধান – প্রদ্যোৎ পালুই

প্রতিদিন সংবাদপত্রের পাতা ওল্টালে একাধিক নারী নির্যাতনের সংবাদ সামনে আসে। এমনকি কোন কোন নির্যাতন থেকে অপমৃত্যুর ঘটনাও ঘটে যায়। এইসব নারী নির্যাতনের ঘটনা যে শুধুমাত্র একটা শ্রেণির মধ্যে ঘটছে এমনটা নয়। গ্রাম-শহর, গরীব-ধনী, শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে সমস্ত শ্রেণির মধ্যে এই ঘটনা ক্রমবর্ধমান। কিছুদিন আগে একটি বহুল প্রচারিত সংবাদপত্রে পুরুলিয়া জেলাতে একই দিনে ঘটে যাওয়া এমন তিনটি ঘটনার উল্লেখ নজরে এল, যেখানে বধূ নির্যাতনের ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। পরের দিনেই আবার একই জেলার খবরে এসেছে বধূ নির্যাতনের ফলে এক বধূর অপমৃত্যু। শুধু একটি জেলায় নয়, সকল জেলাতেই বিভিন্ন কারণে এমন নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে চলেছে অহরহ। অনেকে সমস্যা আপোসে মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টার কারণে অভিযোগ জানান না। ফলে অনেক ঘটনা জনসমক্ষে আসে না। এমনও দেখা গেছে, নির্যাতনে মৃত্যুর পরেও দুই পক্ষের বোঝাপড়ায় পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হয় নি। এর পরেও যেসব ক্ষেত্রে থানায় অভিযোগ জানানো হয় সেখানে তদন্ত সাপেক্ষে অত্যাচারীরা গ্রেপ্তার হয়, জেলও খাটে। কিন্তু অত্যাচারীদের চেতনার পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না। অন্যান্য অনেকে এর থেকে শিক্ষাগ্রহণ করেন বলে মনে হয় না। উলটে সংসারে পুরুষের একচেটিয়া অধিকারকে মান্যতা দিয়ে অনেক পরিবার মেয়েকে একটু মানিয়ে চলার উপদেশ দেয়। নিজের চালচলন, পোশাক-পরিচ্ছদ, বাইরে বেরনো ইত্যাদি ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়া হয়। কয়েকজন সম্ভ্রান্ত পরিবারের মহিলাদের পথচলতি আলোচনায় একই ধরনের উপদেশ প্রবন্ধকারের কানে ভেসেও এসেছে। তাঁদের মতে, সংসারে শান্তি বজায় রাখতে গেলে মেয়েদেরকে একটু সয়ে যেতে হয়। যেন শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার সব দায় মেয়েদের। কথায় আছে, বীরভোগ্যা বসুন্ধরা। এ যেন পুরুষভোগ্যা বসুন্ধরার মতো অবস্থা। মেয়েদের যুক্তিসঙ্গত প্রতিবাদী হওয়ার পরিবর্তে এই সয়ে নেওয়া মনোভাবের ফলে অনেক নির্যাতন, অত্যাচার জনসমক্ষে আসে না, সরকারিভাবে নথিভুক্ত হয় না, সংবাদ শিরোনামেও আসে না। তার ফলে পুরুষের অত্যাচারের মাত্রায় লাগাম পরানো সম্ভব হয় না। উলটে অনেক সময় ছেলেদের ঔদ্ধত্য বেড়ে যায়। ফলস্বরূপ, নির্যাতনের সংখ্যা এবং মাত্রাতেও ছেদ পড়ে না। বেশির ভাগ মেয়েদের এমন সহনশীল ভাবনার একটা মূল কারণ অবশ্যই সংসার জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন না হওয়া। সাধারণ পরিবারের স্বামী-নির্ভর মেয়েদের স্বামীর অভাবে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠবে, এমনই ভাবনা। ভবিষ্যতে কেউ দেখার থাকবে না। তখন সন্তান-সন্ততি নিয়ে মেয়েরা অত্থৈ জলে পড়বেন। ছেলেরা সহজেই নতুন করে সংসার পাততে পারে। কিন্তু মেয়েদের পক্ষে সহজে সেটা সম্ভব হয় না। কোর্ট কাছারি করলেও হয়রান হতে হয় মেয়েকে। অনেকের অর্থবল এবং লোকবল দুটোর কোনটাই নেই। এই কারণে স্বামী অত্যাচারী জেনেও যতটা সম্ভব মেনে নেওয়াই মেয়েদের স্বাভাবিক পরিণতি বলে অনেকে মনে করেন।

মেয়েদের এই দুর্বলতার সন্ধান পেয়ে পুরুষদের একটা অংশ আরও বেশি করে নিজেদের পৌরুষত্ব জাহিরে উদ্যোগী হয়। স্ত্রী এবং তার পিতৃকুলকে শোষণ করার সুযোগ খুঁজে নেয়। নিজেকে স্বেচ্ছাচারী করে তোলে। শাস্তির খাঁড়াকে ভয় পর্যন্ত পায় না। জেল-জরিমানাও এখন অত্যাচারীদের গা সওয়া হয়ে গিয়েছে। নানা কারণে নারী নির্যাতন তাই ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পণপ্রথা, স্বামী বা স্ত্রীর অবৈধ সম্পর্ক থাকা বা সেই সম্পর্কে সন্দেহ থাকা, স্বামীর অতিরিক্ত নেশায় আসক্ত হয়ে পড়া, আর্থিক সঙ্কট, পুত্র সন্তানের পরিবর্তে একাধিক কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়া, সর্বোপরি পুরুষের আমিত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা নারী নির্যাতনের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে মেয়েরা স্বামীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অত্যাচারের অভিযোগ করে থাকেন। সেই প্রবণতা রুখতে সর্বোচ্চ আদালত ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮এ ধারায় বধূ নির্যাতনের অভিযোগের ক্ষেত্রে যথাযথ তদন্তের পরে দোষীকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছে। অভিযোগ পাওয়া মাত্রই গ্রেপ্তার করা যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চও হাওড়ার উলুবেড়িয়ায় একটি ধর্ষণের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জামিনের মামলার পর্যবেক্ষণে পকসো আইনের অপব্যবহারের কথা বলেছেন। পকসো কিম্বা ৪৯৮এ ধারার অপব্যবহার হতে থাকলে প্রকৃত নির্যাতিতারা আইনের দ্বারা প্রকৃত সুরাহা পাবেন না সেই বিষয়ে অনেক বিশেষজ্ঞ একমত। তা সত্ত্বেও স্বীকার করতেই হয়, পনেরো আনা ক্ষেত্রে মেয়েরা সত্যিকারের অত্যাচারিত হয় এবং বেশ কিছু ক্ষেত্রে প্রাণহানিও ঘটে। পারিবারিক হিংসা প্রতিরোধ আইন ২০০৫ এবং শিশু যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ আইন ২০১১ তৈরি হলেও হিংসার মাত্রা কমানো যায় নি। বরং তা উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। ২০২১ সালের জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো-র রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮এ ধারায় স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে ১৯৯৫২টি গার্হস্থ হিংসার ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে নথিভুক্ত হয়েছে যা দেশে এক নম্বরে। দ্বিতীয় স্থানে উত্তরপ্রদেশ এবং তৃতীয় স্থানে রাজস্থান। উল্টোদিকে এদেশেরই রাজ্য গোয়ায় ওই বছরে মাত্র একটি কেস, নাগাল্যান্ডে দুটি কেস নথিভুক্ত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে গার্হস্থ হিংসা ওই বছরে প্রতি লাখে ৪১.৫০ শতাংশ। দেশের গড় ২০.৫০ শতাংশ। ফলে আতঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। যদিও অনেকের মতে, পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যাটি প্রমাণ করে যে, এখানে অধিকাংশ নারী নির্যাতনের কেস নথিভুক্ত হয় যা অন্য রাজ্যে হয় না।

Violence against women

এই নিয়ে বিতর্কের অবকাশ আছে। সেই বিতর্কে না গিয়ে এই অবস্থা থেকে মুক্তির পথ খোঁজা দরকার। মেয়েদের উপর হিংসা এবং নির্যাতন রুখে দিতে হলে শুধুমাত্র আইনি সুরক্ষা পেতে পুলিশ-প্রশাসনের উপর নির্ভর করে থাকলে সব সমস্যার সমাধান হওয়া কঠিন। কারণ অনেক ক্ষেত্রে চার দেওয়ালের মধ্যে হিংসা, নির্যাতন, শোষণ হয়। তখন অভিযোগ না জানানো পর্যন্ত তা বাইরে প্রকাশ পায় না। সমস্যার কথা মেয়েরা যতটা সহজে নিজের পরিচিত বন্ধুমহলে খোলাখুলি বলতে পারেন ততটা সহজে অফিসমহলে জানানোর সাহস যোগাড় করতে পারেন না। তাই পরিচিত মেয়েদেরকে যৌথভাবে তাঁদের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে সরব হতে হবে। সরাসরি যৌথ প্রতিবাদ-ই অপরাধ দমনের মূল হাতিয়ার। গ্রাম-শহর সর্বত্র এখন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর রমরমা। অধিকাংশ মহিলা গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত। গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে সদস্যদের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে। তাঁদের শুধুমাত্র নিজেদের আর্থিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এগোলে চলবে না। নিজেদের সামাজিক সমস্যার দিকেও নজর দেওয়া জরুরি। গোষ্ঠীর সকল সদস্যের সার্বিক সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারাকেই উন্নয়ন তকমা দেওয়া যেতে পারে। সেজন্য প্রয়োজনে যৌথভাবে প্রশাসনের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হয়েও যদি গার্হস্থ হিংসা, পথেঘাটে, অফিস-আদালতে অনৈতিক অপমান এবং শোষণের শিকার হতে হয় তবে তা সার্বিক উন্নয়ন নয়। সমস্যা সামনে এলে তার সত্যাসত্য যাচাই করে গোষ্ঠীর ১০-১২ জন মহিলার যৌথ প্রতিবাদ হলে সমস্যার অনেকটাই সুরাহা হওয়া সম্ভব। তাতেও সম্ভব না হলে উপযুক্ত তথ্যসহ থানার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, দশের লাঠি, একের বোঝা। তাই একক অপেক্ষা যৌথ প্রতিবাদের গুরুত্ব অনেক বেশি। যে অন্যায়কারী সে অন্যায় যুক্তি দিয়ে বেশিক্ষণ ন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে পারে না। যৌথ শক্তির বিরুদ্ধে তো নয়ই। তাই যৌথ প্রতিবাদই গার্হস্থ হিংসা বা প্রাতিষ্ঠানিক হিংসা রোধে উপযুক্ত পদক্ষেপ। সমস্যার শেষলগ্নে তার সমাধানের চেষ্টা করার চেয়ে, আগে থেকে সদর্থক উদ্যোগী হওয়ার প্রয়োজন আছে। এজন্য মেয়েরাই মেয়ের শ্রেষ্ঠ রক্ষাকর্তা।

প্রদ্যোৎ পালুই | Pradyut Palui

ট্যাটুর ইতিহাস ও আমরা | History of Tattoo | Reasons for using tattoos | 2023

Is it possible to remove tattoo | ট্যাটু রিমুভ কি সম্ভব? | 2023

Emblem of Ramakrishna Mission | রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতীকের অর্থ | নক্‌শা ও তাৎপর্য | 2023

Travel Story 2022 | আমার বেড়ানো | পণ্ডিচেরী | মহাবলীপূরম | তিরুপতিধাম | কন্যাকুমারী

Violence against women and its solution | Short Article | Best Article – Violence against women and its solution | Short News | Viral News | News Article – Violence against women and its solution | Trending News | Trending Videos | Violence against women and its solution pdf | High Challenger | Full Article Review | Violence against women and its solution Review | Violence against women | Protect women from rape | Video – Violence against women and its solution | Women Protection Law | Audio – Violence against women and its solution | Violence against women and its solution mp3 | Sabuj Basinda | Violence against women and its solution reading | Pdf Violence against women and its solution

Leave a Comment