Best Bangla Golpo Online Reading | Shabdodweep Story

Sharing Is Caring:

চেয়ার – নাসির ওয়াদেন

“সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক, মৌলবাদ নিপাত যাক”, কোথাও আবার “শোষণহীন সমাজ ও দুর্নীতি মুক্ত দেশ গড়তে” এরিয়া সম্মেলন সফল করুন। দেওয়ালে দেওয়ালে বাহারি রঙের লিখনই জানান দিচ্ছে সম্মেলন আসছে। লেখা আর আঁকার সুতীব্র জৌলুস হারাচ্ছে। রেলস্টেশন থেকে নেমে সোজা উত্তর দিকে যে রাস্তাটা ভিনরাজ্যের দিকে চলে গেছে, সেই রাস্তার দু’পাশের দেওয়ালে চোখ রাখতে রাখতে আসছে সৌরভ। লেখার সেই জৌলুস কোথায়? আর চোখে পড়ে না মার্ক্স, লেনিনের বাণী, অনেকটাই ফিকে। মনে হচ্ছে দায়সারা গোছের যতসব লেখা, লিখে দিলেন উপরওয়ালার খুব খোশ। কাগুজে প্রচার খুব ভালোই চলছে। ভেতরে তুষের মতো ঘসঘসে, শুধুই ফক্কা বাজি। নেতাকে সন্তুষ্টি রাখতে হবে যে।

ফেরার সময়ে রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে সৌরভ তার বন্ধু অভীককে ‘কমরেড’ সম্বোধন করে বলে, জানিস অভীক, আজকাল সব সর্ষের ভেতর ভূতের বাসা। সর্ষের তেলে করণ্ডাফল মেশানো, ভেজালে ভর্তি। এই তো সেদিন ধর্মঘটের দিনে, মিছিলে হাতে গোনা কয়েকজন লোক দেখলাম । অধিকাংশের হাতে পতাকা নেই, আর যাদের হাতে আছে, তারা যেন করুণা করে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ভীষণ লজ্জা। পতাকা তো বইবে পদাতিক বাহিনী। নিচু গোছের মেম্বার। তুই বল,কমিউনিস্ট সাজব কিন্তু হাতের চুড়ি ডোবাব না জলে, তা কি করে হয়? অভীক অন্যকথা ভাবছিল মনে। লাল রাস্তার ধুলো উড়িয়ে বড় বড় মিছিল। কত লোক এসে জড়ো হত, আজ কোথায় তারা। কোথায় গেল সেসব। লোকে দূর থেকে সেলাম করত, কুর্ণিশ জানাত। সমাজ বিপ্লবের জন্য প্রাণ পর্যন্ত দিতে কুণ্ঠা ছিল না।
— কিছু কি ভাবছিস অভীক?

হতভম্ব খেয়ে অভীক বলে, হ্যাঁ রে! তুই ঠিক বলেছিস। সেদিন পার্টিতে চরিত্রের আর সততার মূল্য ছিল । আজ দেখ, ও সবের বালাই নেই । যে যত চালাকি মারতে পারবে, মিথ্যে ভাষণ ঝারতে পারবে, সে তত বড় নেতা। সোশ্যাল মিডিয়াতে আবার কে কত বড় কমিউনিস্ট তার প্রচার চলছে। ব্যক্তিগত প্রচারে হোয়াটস অ্যাপ ভারাক্রান্ত। কোথায় লোক না খেয়ে মারা যাচ্ছে, কোন রোগী চিকিৎসার অভাবে অকালে ঝরে যাচ্ছে,সে সব খবর নেই, কেবল নিজের ছবি আপলোড করার জন্য উদগ্রীব। আসল কাজ কই? শুধু আত্ম প্রচার, ভণ্ডামি। অবশ্য তুই ঠিক বলছিস।
— কিন্তু জানিস তো, এটাও চলছে উপরতলার নেতাদের কাছে ঘেঁষা, ফোনালাপে তার অপছন্দ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বলা। একরকম একটা প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তেল মারা, পা ধরার ব্যাপার আর কি?
— ঠিকই বলেছিস অভীক। কথা থামিয়ে দিতে বলে সৌরভ ।
— দেখবি, যারা সারাবছর কোন কর্মসূচিতে থাকল না, পার্টির ডাকে সাড়া দিল না, যেই সম্মেলন এল অমনি সেজে গুজে এসে হাজির। ভাবখানা এমন যেন ওর থেকে আর খাঁটি কমরেড নেই। এতদিন যারা মাটি কামড়ে পড়ে থাকল, তাদের কোন মূল্যই নেই ।
— তা ঠিক বলছিস সৌরভ। অভীক আরও বলে,- তবে জানিস, এবারে কিন্তু বয়স বেঁধে দেওয়া হয়েছে । নতুনদের জন্য জায়গা রাখতে বলেছে। পার্টি ছোট হয়েছে বলে অনেক এরিয়ার সংযুক্তিকরণও হচ্ছে। এতে একশ্রেণীর কমরেডদের ঘুম নেই, ঝরে পড়ার আশংকায় ভুগছে । সেও তো একধরনের জ্বালা। পদ হারালে নেতা কিসের।
— জ্বালা কেন বলছিস, বল প্রতিহিংসা — গোপনে গোপনে উপদল গঠনের কৌশল চলছে। এতে উপরওয়ালা কিছু নেতার মদদও থাকছে। কে কাকে ল্যাং মেরে তৈলাক্ত বাঁশের উপর উঠতে পারে তারই ঘোর প্রতিযোগিতা। এসব প্যানপ্যানানি দেখে পিত্তি জ্বলে যায়।

সামনের রাস্তা দিয়ে একখানা বাস হুস করে বেরিয়ে গেল। ও পাশের রাস্তার ধারে একটা চায়ের দোকান। সেখানে এক কাপ চা মুখে না গিলে যাওয়া চলে না । অফিস ফেরত কর্মচারী থেকে কলেজ ফেরত প্রফেসর, এমনকি পথচারী যেই হোক না কেন, এক কাপ চা পান না করে কেউ চলে যায় না। ধীরে ধীরে তারা দুজনেই একখানা বেঞ্চ-এ বসে পড়ল। কাঁধের শান্তিনিকেতনী ব্যাগটা কোলের উপর রাখে সৌরভ। বলে – “মোহন কাকা! দুটো চা”। হঠাৎ অভীক বলে ওঠে, বল না, একটা চা আর একটা সিদ্ধার্থ। হো হো করে হেসে ওঠে দুজনে। মোহনলাল অবাক হয়ে শুধায়, কী বললেন সৌরভ বাবু। নতুন বচন বুঝি। এর আগে তো একথা শুনিনি। অভীক হাসতে হাসতে বলে, তা শুনবেন কী করে। এসব তো পঁচাত্তরের পাঁচালী। না হয় একদিন হিস্ট্রিটা শুনিয়ে দেব।

কলেজ জীবনের অনেক কথা মনে আসে তাদের। ছাত্র রাজনীতি থেকে সমাজনীতি, গণতন্ত্র উপচিয়ে সমাজতন্ত্র আনার স্বপ্নকথা। কত কিছু তাদের স্মরণে আসে। একসময়ে ছাত্র নেতাও ছিল। কিন্তু পার্টি নেতা হতে পারেনি। কলেজ পাশ করে ইউনিভার্সিটিতে চলে যায় সৌরভ আর অভীক পিতৃহারা হয়ে চাকরির অন্বেষণে বেরিয়ে পড়ে। সরকারি দপ্তরে একটা কাজও জুটে যায় তার। ছাত্র রাজনীতি করলেও কারোরই পার্টি নেতা হওয়া হয়নি।

বিরোধী দলের হাতে শাসন চলছে রাজ্যে। দশ বছর অতিক্রান্ত, জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তাদের থেকে, সেই মুখ ফেরাতে হলে স্রোতের প্রতিকূলে তরি বাইতে হবে, চাট্টিখানি কথা। জনগণ জানলেও একশ্রেণীর নেতা মনে করে না, বলেই নিচুতলার কর্মীদের কথা তারা মনে দিয়ে শুনতে চায় না। কোন পরিবর্তন নেই তাঁদের আচরণের, শেষ নেই নির্দেশের। একটার পর একটা শুধুই সার্কুলার। ধীরে ধীরে পায়ের তলার মাটি কখন যে আলগা হয়ে গেছে, সড়ে গেছে শক্ত মাটির ভিত, অনেকেই তা মনে করতে পারছেন না। ক্ষমতা দখলের ক্রিয়া-বিশেষণ এখনও জাপটে ধরে রাখতেই ব্যস্ত। চেয়ার ধরে রাখতে মরিয়া। টানাটানি খেলা চলছে, উপরে নিচে সবজায়গাতেই। সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপরতলার নেতৃত্ব, পার্টি কংগ্রেসের গৃহীত সিদ্ধান্ত কার্যকর করতেই হবে। নতুনদের জায়গা ছেড়ে দে’য়া খুবই প্রাসঙ্গিক। হঠাৎ দুজন মধ্যবয়সী ব্যক্তি এসে বসল চায়ের দোকানে ।
— মোহনদা, দুটো বিনা চিনির চা ।
— সুগার বেড়েছে নাকি, ভোম্বলদা? মোহন শুধায়।
— আর বলবেন না দাদা, যা টেনশন, প্রেসার হাই। বর্ডার লাইনের উপর দিয়ে বয়ে চলেছে। বলল অপরজন।
— কী আবার হলো। তোমরা তো খেমতাতেও নাই, দায়িত্বও কমে গেছে । তাহলে টেনশন কিসের?

অন্যজন মোহনদার কথাটা লুফে নেয় ক্রিকেট বলের মতন। বল ছক্কা মারার ভঙ্গিতে বলে, টেনশন কি কম মোহনদা ? শালা, সারা বছর চার-ছয় মেরে মেরে ক্লান্ত। এখন মনে হচ্ছে উইকেট পড়ে যাবে। রান আউট হয়ে যাবে।
— চুপ কর, ভোঁদা। এটা চায়ের দোকান। এখানে সব বলতে নেই । কত ধরনের লোক আছে।
— কেন বলব না, বল ভোম্বল। শালা ইপার্টিতে কী আর প্রাইভেসি আছে, তুই বল? মিটিং শেষ হওয়ার আগেই সিদ্ধান্তের কথা মোহনদার মতন অনেকের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। মোহনদা না হয় এক নিরপেক্ষ গাছ। তা বলে যেখানে সেখানে,,,,

অভীক ইঙ্গিতে সৌরভকে কিছু বলতে চাইল। সৌরভ মুচকি হেসে বলল, ইস্, উইকেটটা পড়ে গেল বুঝি। পড়বেই বা না কেন, বাজে বোলারদের হাতে বল থাকলে তো বল এদিক ওদিক ফুলটস করে উইকেট ছিনিয়ে নিতে পারে। সৌরভ মৃদু হেসে বলে, তা তো হতেই পারে। তবে শূন্য মাঠে বল খেলতে যা মজা, ভরামাঠে কিন্তু ততটাই কঠিন। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দুজনে। ভোঁদা বলে, দাদা, কি বলতে চাইছেন? একটু খোলাসা করে বলবেন। সৌরভ উত্তর দেয়, না! না! ভাই, কিছু না । এই মনে এলো, তাই বললাম। সেদিন কলকাতা চেন্নাই খেলা দেখছিলাম তাই।
— আপনি কিন্তু আসল কথা চেপে যাচ্ছেন দাদা ।
— না, না, চাপতে যাব কেন বলুন তো ।
— আচ্ছা, বলুনতো আপনাদের রোগটা কি?
— আর বলবেন না, এইমাত্র মিটিং থেকে বেরিয়ে এলাম। মনে হচ্ছে অনেকের এবারে চাকরি যাবে । ছোট হচ্ছে, আরে ছোট হলে কি পার্টি বড় হয় ?

অভীক শুধায়, ও বুঝেছি, আপনি বুঝি এরিয়াতে আছেন?
— আছি তো। সেই নব্বই থেকেই ।
— তাহলে টেনশন কেন?

ভোম্বল বলতে থাকে, জানি না, থাকতে পারব কী না । হচ্ছে তো ছোট, সংখ্যা তের। দুটো এরিয়ার সংযুক্তি। ছিল একত্রিশ হবে তের – কী হবে বলুন তো ।
সৌরভ বলল, কেন, উল্টে নিন! হয়ে যাবে ।
— বুঝলাম না । আপনি কি বলতে চাইছেন?
— না বোঝার মত করে তো বলিনি। আপনার পারফরমেন্স যদি ঠিকঠাক থাকে, বন্ধুর চেয়ে পার্টি বড় মনে করে কাজ করেন, সমালোচনা করার সাথে সাথে আত্ম-সমালোচনা বেশি করে থাকেন, তাহলে তো আপনি আনলাকি থার্টিন।
ধ্যূস! আপনারা আবার তা বিশ্বাস করেন না। আমরাও করি না। একবার করবেন, না হয় ।
— আপনার হেঁয়ালি কথা বুঝতে পারছি না ।
— না বোঝার মত করে তো বলিনি। কেউ মেকি পোশাক পরে থাকলে, অকারণ বিতর্ক করলে, সময় দিতে না পারলে, ফটাস্।

ভোঁদা একটু চালাক। সারাদিন টো টো করে ঘোরে, আর ব্যক্তিগত কার্যের প্রতি মনোযোগ দিয়ে থাকে। মিটিং, মিছিল বের হওয়ার পর আসে, সবার আগে চলেও যায়। তর্কে তর্কে ঘর ভরিয়ে তোলে, তর্ক ঘর উপচিয়ে রাস্তার উপর আছড়ে পড়ে, ছাতার মতন ফুলে ফেঁপে ওঠে। মুখে বলে যোগ্য লোক চাই, লাইকিং, ডিসলাইকিং চলবে না ।

অফিস ঘর লোকে থৈ থৈ করছে । বসার চেয়ার সব ভর্তি। কিছু লোক মেঝেতেই বসে পড়েছে। অফিসঘরে ঢুকেই সৌরভ দেখে ঘর ভর্তি মানুষ । এত লোক! হবেই না কেন, পার্টি পাওয়ারে থাকলে ভাতের অভাব। কথায় বলে, কাকের উড়ে এসে জুড়ে বসা। ফোলিওর টাকা পকেট থেকে বের হচ্ছে , দাদা, এটা অমুকের, এটা তমুকের। ঘরের এককোণে এসে দাঁড়ায় সৌরভ। জোনাল সম্পাদকের কণ্ঠস্বর ভেসে আসে – কী, কী কর্মসূচি হলো, আগামীতে কি কি কর্মসূচি নিতে হবে, তার তালিকা এনেছ ? কতজন ছাত্র এসেছিল? কারা কারা ইগনোর করল? তালিকা তৈরি করে রাখো, পরে কাজে লাগবে, ইত্যাদি, ইত্যাদি।

সৌরভের হাতে একখানা তালিকা গোটানো। এই নিন, এতে সবকিছুই পরিষ্কার করে বলা আছে।
— থ্যাঙ্ক ইউ। ঠিক আছে, তুমি এখন এসো ।এদের কি সমস্যা দেখি ।
একটা মিনি আদালত বসে গেছে। সৌরভ ‘আচ্ছা ‘বলে বেরিয়ে পড়ে।

সেদিন কলেজে দুই ছাত্র সংগঠনের মধ্যে গণ্ডগোল বেঁধেছে। দুচারটে বোমা বারুদও ফেটেছে। হতাহত অবশ্য হয়নি। তবে মাঝেমধ্যে হাতাহাতি চলে। এসব মাথায় নিয়েই ওদের সংগঠনের কাজ চালিয়ে যেতে হয়। একবার বিরোধী সংগঠনের ছেলেদের সাথে ঝগড়া বাঁধে, মাথায় জোর আঘাত নিয়ে হাসপাতালে যেতে হয় । সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে কিছুদিন বিশ্রাম নিতে হয়েছিল। তারপর কলেজ ছেড়ে ইউনিভার্সিটিতে চলে আসে সৌরভ। জোনাল সম্পাদকের কি একটা কাজের জন্য তার হাত দিয়ে প্রফেসর অমল সরকারের কাছে একটা চিঠি পৌঁছে দিতে হয়। অমল সরকার ইউনিভার্সিটিতে জাঁদরেল প্রফেসর, ছাত্র ইউনিয়নের কন্ট্রোলার। তাঁর কথায় ইউনিভার্সিটি চলে। তাঁরই অনুরোধে একবার নির্বাচনেও দাঁড়ানো।

উলটপুরাণ দেখছে চারদিকে সৌরভ। পঞ্চায়েত প্রধান, সমিতির মেম্বার সব রঙ পাল্টিয়ে অন্যদলে। পদ চায় তাদের, পার্টি যখন ক্ষমতায় তখন তারা এক একটা বাঘ ছিল, এখন নেড়ি কুত্তা। চেয়ার দখলের প্রতিযোগিতা চলছে। কে কাকে কতটা ল্যাং মারতে পারে। অভীক তাড়া দেয় সৌরভকে। বলে, চল সৌরভ, গাড়ি ধরতে হবে।
মোহনকাকার হাতে চায়ের বিলটা মিটিয়ে দিয়ে সোজা রাস্তার দিকে হাঁটতে শুরু করে ।

যেতে যেতে অভীক প্রশ্ন ছোঁড়ে, কিছু বুঝলি ?
— বুঝতে আর বাকি কী আছে, এরা পার্টির চাইতে নিজের পদকে বেশি গুরুত্ব মনে করে। যত্তসব মেকি কমিউনিস্ট। পার্টি সদস্য পদ পাওয়ার সময়ে যে শপথবাক্য পাঠ করেছিল, এরা তা ভুলে গেছে। “আমি সাম্যবাদের আদর্শ উপযোগী জীবনযাপনের চেষ্টা করব, এবং সর্বদা পার্টির ও জনগণের স্বার্থকে ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে স্থান দিয়ে নিঃস্বার্থভাবে শ্রমিকশ্রেণি, মেহনতি জনগণ ও দেশের সেবা করে যাব।” এসব এখন কাগজে কলমে থেকে গেছে। তখন সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে আগত তরুণ-তরুণী পার্টি সদস্য ও অনুগামী প্রয়োজন। এদের জায়গা করে দিতে কাউকে না কাউকে তো চেয়ার ছাড়তেই হবে। নিষ্ক্রিয় মুক্ত পার্টি গড়া আশু দরকার। পার্টিকে নিষ্ক্রিয়তা মুক্ত করতে না পারলে পার্টির অভ্যন্তরে শত্রুর চরকে চিহ্নিত করার সমস্যা থেকেই যাবে । মানুষের জন্য কাজ করতে হলে চেয়ারের কি সত্যিই খুব দরকার? এসব কথা মনে পড়ে তার।

স্টেশনে ট্রেন ঢোকার শব্দ শোনা যাচ্ছে। দুজনে তাড়াতাড়ি পা চালাতে থাকে সেদিকে । মাথার উপর আকাশে এক বুনোপাখি বিশ্রী ও ব্যঙ্গ স্বরে চিৎকার করে ডেকে ওঠে, “চেয়ার, চেয়ার,একটা চাইই”।

নিজভূমে পরবাসী – নাসির ওয়াদেন

এক

সূর্য পুবদিকে লাল হয়ে উঠতে শুরু করেছে, কিছুক্ষণের মধ্যে ডিমের কুসুমের মতো সূর্যটা ফুটে উঠলেই পিসি ঘুম থেকে উঠে পড়বে। আলো-আঁধারির মাঝে পাখিদের কুজন কাকলিতে ভরে উঠে পাশের বাঁশবাগান। বাঁশের আগায় কয়েকদিন থেকে একটা কোকিল ঘুরঘুর করছে, পিসি সকালবেলায় ঘুম থেকে আড়মোড়া দিয়ে বসতেই ফাঁকা আকাশে দেখতে পেল কালো পাখিটাকে। পিসি মনে মনে ভাবে, পাখিটার মতলব কিছু আছে। নইলে ওইভাবে প্রত্যেকদিন সকালবেলায় এসে এদিক-ওদিক পাখা মেলে উড়ে কেন ? বাইরে বসন্তের ঢেউ, সারা আকাশ জুড়ে ঠান্ডা-গরমের আবরণ যেন চারিদিকটাকে রোদের চাদর দিয়ে ঘিরে রেখেছে। পাশের পলাশ গাছটার পাতলা পাতার ফাঁকে ফাঁকে ফুলের আগমন বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে। আর কয়েকদিন পরেই পুরো গাছটাই লাল আবিরে ছেড়ে যাবে।

কোকিল তো কুহু কুহু করে ডাকে বসন্তের আগমনে। বসন্ত এলে দোলখেলায় মেতে উঠে ছেলে-বুড়ো, মানুষজন।‌ আর কোকিলদের মনে নতুন রঙের ঝাপট এসে লাগে। কেউ যেন খুশির বান সরিয়ে দিতে আসছে বসন্তের সময়রেখাকে রাঙিয়ে দিতে। সকালের শীতল আলো এসে পড়েছে বাঁশবাগানের মাথার উপর। কাকেদের বাসায় শুরু হয়েছে সা-রে-গা-মা গানের সুর।‌ একটা দাঁড়কাক তার পৌরুষকণ্ঠে একটানা ডেকেই চলেছে, কা — কা — কা। দাঁড়কাকটার দায়িত্ব বাসাখানাকে সামলানো। মহিলা কাকগুলোর গায়ে নতুন আগমনের ঢেউ। সেই ঢেউ যেন শান্ত পুকুরের জলে ছোট্ট একটা ঢিল ছুঁড়ে মারার মতো। এক টুকরো ঢিল একটা শান্ত পুকুরকে কেমন ক্ষেপিয়ে দিতে পারে। সেই ঢেউয়ের তরঙ্গ একের পর এক আঘাত হেনে সূর্যের নরম রোদের কিরণ বিচ্ছুরিত হয়ে ছবি,প্রতিচ্ছবি আর প্রতিবিম্ব তৈরি করে। জলের উপর প্রতিবিম্বের ছড়াছড়ি। ক্যালেন্ডাইস্কোপ হয়ে পিসির চোখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে, যখন পিসি প্রায়ান্ধকারে বাঁশ ঝাড়ের আড়ালে প্রাতঃকৃত্য সেরে বাঁশড়ার ডোবায় জলকর্ম সম্পাদন করে আসে।

মহিলা কাকেরা একে একে উড়ে যায় খাবারের খোঁজে। ভোর ভোর বের হয়ে সারা গ্রামটা এক চক্কর ঘুরে আসে। দেখে, কোথাও উচ্ছিষ্ট খাবার পড়ে আছে কিনা। তারই সুলুক সন্ধান করে, জরিপ করতে থাকে আজকের খাবার কতখানি সংগ্রহ করতে পারবে। বাঁশের ডগায় ডগায় কাকেদের বাসা, মাঠ ঘাট থেকে খড়কুটো যোগাড় করে তারা নিরাপদ জায়গায় বাসা বাঁধে। পাড়ার হুলো বেড়ালটার ভয়ানক দৌরাত্ম্য। পিসি মেহেরজানের খুব পেয়ারের, সন্তান বলতে ওই একটাই, কানা-খোঁড়া হুলোটা। পিসি হুলোটাকে সকাল সকাল দুধ খাইয়ে বাড়ি পাহারা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে, তবেই হাটে যায়।

হাট থেকে শাক-সবজি আর কিছু খুচরো মাছ কিনে পাশের গাঁয়ে বাড়ি বাড়ি বিক্রি করে থাকে। সেখানে সবজি বিক্রি করে অ-বিক্রিত সবজিগুলোকে নিজের গাঁয়ে এনে বিক্রি করে। গাঁয়ের মেয়ে বউগুলো বড় ধ্যাগাবাজ। কিছুতেই ন্যায্য দাম দিয়ে কিনতে চাইবে না। মালাই-দলাই করে তবেই তারা আনাজ-সবজি কিনবে।

— বুবু, ওজন ঠিক করে দাও। হাতের আঙুলটা উপরে তোলো দিকিন — বলল মোড়ল গিন্নি।
— এইতো, এইতো। ঠিকই তো দিচ্ছি। কম দিবক নাই দিদি। উপরওয়ালা দাঁড়াঙ্ দেখছে। তিনি ক্ষেমা করবেন না । — বলে হাতের আঙ্গুল তুলে দাঁড়িপাল্লার দিকে তাকায় পিসি।
— না, না, তা বলছি না বুবু। আজকাল ঠকানো লোকের অভাব নেই। ওই যে হলদিওয়ালার কাছে সেদিনে পাঁচ সের গোটা হলদি কিনলাম। বাড়িতে মোড়ল ওজন করে দেখছে সাড়ে চার সের, তুমিই বলো,কাকে বিশ্বাস করবো, বলো?– বলে গিন্নিমা।
— সব্বাই কি এক হয় দিদি! — বলে মোড়ল গিন্নির দিকে তাকায় পিসি। এবং বলে,
— ল্যাও, ল্যাও। ধরো দিদি, আমাকে আবার সব মালপত্তর বেচতে হবে তো।
— না বুবু, তোমাকে বলছি না। মানুষকে বিশ্বাস করা খুব কঠিন।

সবজির ঝুড়ি মাথায় তুলে পিসি পা বাড়িয়ে দিল অন্য পাড়ার দিকে।

দুই

পিসির শরীরে জ্বর। সারাদিন খেয়ে না-খেয়ে গাঁয়ে গাঁয়ে টো টো করে ঘুরে শরীরখানা দুর্বল হয়ে পড়েছে। বিছানায় শুয়ে থাকে দিনরাত। হুলো বেড়ালটা পিসির চারপাশে ঘুরঘুর করে আর মেও মেও করে ডাকে। পাশের বাড়ির লোকেরা দয়া করে দুবেলা কিছু লাহারি মুড়ি দিয়ে যায়। ক্ষুদ-কুড়ো যা পায়, তাই খেয়ে দিন কাটে।

একদিন আরমান ডাক্তার এসে পিসিকে দেখে গেল। পিসির রোগ পরীক্ষা করে এক শিশি লাল ওষুধ ও অন্য এক শিশিতে হজমের সিরাপ দিয়ে চলে যায়। পিসির নিউমোনিয়া হয়েছে। গত শীতের প্রচণ্ড ঠান্ডায় প্রতিদিন ভোরবেলায় হাটে যাওয়ার জন্যেই ঠান্ডা লেগে কাশিটা বেড়ে গেছে। সেই ঠাণ্ডা কাশি থেকেই তার নিমোনিয়া অসুখ বেঁধেছে শরীরে। পিসি খ্যাক্ খ্যাক্ করে বার কয়েক কাশতেই কাশিতে সামান্য রক্ত উঠল। সে তখন বিছানা থেকে কোনরকমে উঠে উঠানের এককোণে গিয়ে আবার খক্ করে কেশে ফেলল। টকটকে তাজা একটু রক্ত এসে পড়ল মাটির উপর। আকাশের দিকে তাকায় পিসি। দেখতে পায় সেই কোকিলটাকে উড়ে বেড়াতে । তাই দেখে পিসি হাঁক ছাড়ে, হতচ্ছাড়া! তোর ঘরদোর নাই বুঝি? কেবলই ঘুরঘুর করছিস। তা তোর মতলবটা কি শুনি ? কোকিলটি উড়ে গিয়ে একটি কাকের বাসায় বসে পড়ে। দারোয়ান পুরুষ কাকটি তখন খুব সম্ভবত পাশের বাড়িতে উচ্ছিষ্ট সংগ্রহে ব্যস্ত। গতকাল রাতে পাশের বাড়ির ছেলেটার মুসলমানি হয়েছে। আত্মীয়-স্বজনের আগমনে এক ভুরি ভোজের আয়োজনের ব্যবস্থা ছিল।

কিছুক্ষণ পরেই কোকিলটা বাসা থেকে উড়ে গেল উত্তর দিকে। পিসি একদৃষ্টে ওই দিকেই তাকিয়ে দেখছে। মনে মনে চিন্তা করে, — না, কই তো? পাখিটা ডিম ঠোঁটে করে তুলে নিয়ে গেল না। বাসায় কোকিলটা তবে কি খুঁজছিল? হাজার প্রশ্ন মাথায় কিলবিল করতে থাকে। হুলো বেড়ালটা ততক্ষণে পাঁচিল টপকে ছমনলালের বাড়ি থেকে একটা মস্ত ধেড়ে ইঁদুর ধরে এনে উঠোনের একপাশে ছায়ায় বসে দিব্যি ভোজন কার্য সারছে। খেয়েদেয়ে নিমগাছটার ছায়ায় গিয়ে শুয়ে পড়ল। সাতপাঁচ না-ভেবে পিসি ধীরে ধীরে হেঁটে এসে বিছানার উপর বসলো। আকাশটা ভারী ভারী লাগছে। এই ফাগুনের মাটিতে বৃষ্টি হবে বলে মনে হচ্ছে পিসির। মনে মনে ভাবে ফাগুনের পানি আগুন। আমগাছের মইলগুলো সব পুড়ে যাবে। কথায় আছে, আগুনে বৃষ্টি, আমের নস্টি, চোতের পানি নয়নের মণি। আকাশ গুড় গুড় করে ডাকছে। পশ্চিম দিকের ঝঞ্ঝা এসে বেশ খানিকটা বৃষ্টি হয়ে উঠানটাকেই ভরে দিল।

ছমনলালের বউ বুড়িকে এক টুকি লাহারি আর আধ বাটি গুড় দিতে এসেছে। মুড়ির টুকি আর গুড়ের বাটি বিছানার পাশে হাতে নিয়ে দাঁড়য়। হাঁক দেয়,
— দিদি, উ–ঠো । একটু কিছু খেয়ে নাও। শরীরের যা হাল করেছো, তাতে অসুখ বাড়বে। একটু খাওয়া দাওয়া করো, বুঝেছো ! –বলে খাবারটা পিসির বিছানার পাশে রেখে দিয়ে পাশেই জল রাখা পিরোলী হতে একটা মাটির কলসি থেকে একগ্লাস জল এনে রাখলো তার সামনে।
— দিদি, তোমার তো ন্যাবা হয়েছে। শেরালি গোমস্তার কাছ থেকে একটা ন্যাবার মালা এনেছি। কোমরে জড়ানো শাড়ির আঁচল থেকে বের করে আনে মালাটি। তারপর বলে, এটা গলায় পিধি ল্যাও দিদি। এতে ন্যাবারোগ সেরে যাবে। দ্যাখ, চোখগুলান কেমন হোলদ্যা হোলছে, পেছাবো বুঝি হলদে হচ্ছে, তাই না দিদি ?
— হ্যাঁ, বহিন। তুমি ঠিকই কইয়াছো। কতদিন থেকে কেমন হলদা, হলদা পেছাব হোছে। আখের রস খেলে নাকি কমে শুনেছি, কোথা পাই বুলোত?
— তা ঠিক! দাঁড়াও, দেখছি। তোমার দাদাবাবুকে শালগড়্যা থেকি দু গেলাস আখের রস এনে দিতে বুলবো ।
— দেখো, যদি আনতে পারো, তা’লে খুব উপ-কার হয় । বলে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে পিসি অর্থাৎ মেহেরজান বেওয়া।
— তুমি ভেবো না দিদি, আমি কিছু একটা ব্যবস্থা করছি, — বলেই চলে যায় ছমনলালের বউ।

বিছানার উপর বসে পড়ে পিসি। খক্ খক্ করে বার কয়েক কেশে ফেলে মাটিতে। বিড়ালটা ততক্ষণে তার কাছে এসে বসে আছে,একেবারে বিছানার ধার ঘেঁসে। বুড়ি গ্লাসটা তুলে নিয়ে এক ঢোক জল গিলে মুড়ি চিবুতে লাগলো। নতুন গুড়ের স্বাদ তাকে অমৃত বলে মনে হয়।
দুই চোখ দিয়ে ঝরঝর করে জল বের হতে থাকে তার।

তিন

দিন কয়েক থেকেই বিছানা ছেড়ে আর উঠতে পারে না পিসি। এ জন্মে আপন বলতে কেউ নেই। ছিল একটা ছেলে দশ বছর বয়সের। ওলাওঠা রোগে মারা গেছে। পিসেমশাই দাদন খাটতে যেতো দুর্গাপুরে। তখন দুর্গাপুরে নতুন বাঁধ নির্মাণ হচ্ছে। মানিকপুরের ওসমান-গুলজারদের সাথে পিসেও গেছিল ক্যানেলের কাজ করতে। সেখানেই বছর দুই কাজ করে এসে কিছু টাকাও জমা করে। সেই টাকা দিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে এই বসতবাড়িখানা তৈরি করেছিল। একদিন দুর্গাপুরে কাজ করতে করতেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। চিকিৎসা করনের পরেও আর বাড়ি ফেরা হয়নি। একথা গাঁয়ের লোকেরা জানে।

সেদিন থেকেই পিসি একেলা। নতুন করে বাঁচার ইচ্ছে যেন তার হারিয়ে গেছে। তবু ডিহিখানাকে আগলে রেখে বেঁচে থাকতে চেয়েছিল পিসি। কোথা থেকে এক মা-মরা বেড়াল ছানাটাকে কুড়িয়ে এনে আদর যত্নে সুস্থ করে বড় করে তুলেছিল, সেদিন থেকেই পিসির মায়া পড়ে যায় ওই অবলা জীবটার উপর । হুলোটাও তখন থেকেই পিসিকে আপন মা মনে করে ডাকে।

চার

গাঁয়ে রটে গেল পিসির খবরটা। চারিদিক থেকে লোকজন এসে ভিড় জমালো পিসির ছোট্ট আঙিনায়। লোকে লোকারণ্য । তার ছোট্ট বাসঘরখানির একপাশে একটা বেতের চেয়ারে বসে আছেন মোড়ল মশাই। তার সাথে হাজির মাণিক আর হরোজ। ওরা মোড়লের খাস লোক, মোড়ল অন্ত প্রাণ । মোড়লের কথায় প্রাণ দিতে পারে, আবার প্রাণও নিতে পারে। হরোজ বলে, চাচার নুন খেয়েছি, নুন গাইতেই হবে। তাঁর কথায় খুন করতেও পারি। মাণিক বলে, নেমকহারাম হতে পারবনি। কাকার জন্যিই বেঁচে আছি। কাকা যদি সেদিনে তাকে তাঁর বাড়িতে বাগাল না রাখতো, তাহলে ওই কবেই সে মরে ভূত হয়ে যেত। কাকার দয়ায় দুমুঠো খেয়ে পড়ে বেঁচে আছি। তাই ঋণশোধ করতে, কাকা যা বলবে, তাই করবোক্।

মাণিকের মনে পড়ে, যেদিন মাণিকের বাবা অঘোরী রবিদাস, খাবারের অভাবে ছেলেপুলেদের দুমুঠো খেতে দিতে না-পারায় একদিন রাতের আঁধারে কোথায় যেন হারিয়ে যায়। কত বর্ষা গেল, কত শীত কাটল,কত বসন্তে ওদের পাড়ার শিমুল গাছে ফুল ফুটল, হর বছর চৈত্র মাসে খ্যাসারির ডাল দিয়ে বড়া-পিঠে খেলো, তার হিসেব নেই। তবুও অঘোরীকে বাড়ি ফিরে আসতে দিল না তার নিত্যদিনের অভাব-রাক্ষসেরা। তাকে গিলে খেয়ে নিলো অভাবের নদীতে, ক্ষুধার অমল হ্রদে, দারিদ্র্য-নামক সমুদ্রের গভীর তলপেটে। হরোজ পিসির মুখে হাত দিয়ে দেখে বলল, মুড়োল চাচা, বুড়ির দম আছে মুনে হোছে! কথাটা শুনেই মোড়ল চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়। শুধায়, কি বলছিস, মরে যায়নি ?

— হ্যা,গো চাচা, এখনো লিশ্বাস পড়ছে।

মাণিক বলে, এখুনই ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া দরকার কাকা। হয় তো,তাহলে এ-খেপ বেঁচি যেতে পারে। আমি বরং তোমার মোষজোড়া নিয়ে আসি। গাড়িটা বেঁধে ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাব।
মুড়োল বলে,তাই কর, যদি এযাত্রায় বেঁচে যায়।

কিছুক্ষণের মধ্যেই গাড়িখানা এসে গেল বাড়ির বাইরে। তোড়জোড় করে কয়েকজন হাত ধরাধরি করে পিসিকে আধমড়া অবস্থায় গাড়িতে তুলে দিল। তার আগেই গাড়িতে খড় দিয়ে উঁচু করা হয়েছে। একখানা সতেরঞ্চি বিছিয়ে বিছানা বানানো হয়েছে, যাতে পিসির শরীরে কোন আচড় না লাগে। গাড়িতে তোলা মাত্রই হুলোটা চারিদিকে ছোটাছুটি করতে লাগলো। মিউ মিউ করে কি যেন বলতে চাইছে। মানুষজন তখন পিসিকে নিয়েই ব্যস্ত। তার দিকে খেয়াল নেই কারো। মোড়ল মশাই ছমনলালকে একপাশে ডেকে নিয়ে গিয়ে বলল, ছমন! তুমিই ওর নিকট প্রতিবেশী। তোমার সাথে লেনাদেনা ছিল। ওর তো অবস্থা শেষের দিকে, কিছু টাকাপয়সা দাও, চিকিৎসা তো করাতে হবে। ছমনলাল বলে, কোথায় টাকা পাবো মোড়ল ভাই। আমার হাতে তো কিছুই নাই। যা ছিল তা তো আপনিই জানেন, ওর চিকিৎসা করাতেই অনেক টাকা খরচ করে ফেলেছি।

— জানি এসবই আমি জানি। তুমিও বিনিময়ে তার যেটুকু সম্পত্তি ছিল, সবটুকুই লিখে নিয়েছো। এখন আরও কিছু দাও। বসতবাটিটা না হয় তোমাকেই দেবো ।
— বসতবাড়ি! বলে চমকে উঠে ছমনলাল।
— চমকে উঠলে যে ছমন? যেখানে তুমি,আমি সবাই আমরা দাঁড়িয়ে আছি ।

এতক্ষণ ছমনলালের বউ আড়িপেতে কথাগুলো শুনছিল। দুজনের কথোপকথনের মাঝে তৃতীয় কোন ব্যক্তি ছিল না। অন্যেরা সকলেই পিসিকে হাসপাতালে পাঠানোর জন্য ব্যস্ত। মানিক মোষ দুটোকে গাড়িতে জুড়ে দিতে উদগ্রীব। হরোজ পিসিকে চেপে ধরে বসে আছে গাড়ির উপর। ছমনলালের বউ চিৎকার করে ওঠে এবং বলে,– না, না, মোড়ল চাচা, আমরা আর টাকা দিতে পারব না। অনেক দিয়েছি আর না,
— কেন বিনা কারণে তো দিচ্ছ না? বসতবাড়ির বদলে টাকাটা দেবে ?
— কিন্তু ! বলে থামলো ছমনলাল।
— কোন কিন্তু নয়। কমিশন এনে আজকেই তোমার নামে বাড়িটা রেজেস্ট্রি করে দেওয়ার ব্যবস্থা করব। দরকার পড়লে হাসপাতালেই কমিশন নিয়ে আসব, তোমার পাকা ব্যবস্থা করে দেব।
কি বলো তোমরা? — বলে সকলকে এই ব্যাপারটা জানালো। সকলেই ‘হ্যাঁ হ্যাঁ’ বলে সম্মতি দিলো।

ছমনলালের মুখে কোন রা শব্দ নেই, ভোঁতা মুখে কুলুপ এঁটে বসে রেখেছে। মনে মনে ভাবে, বুড়ি মরলো না কেন। মরে গেলে সব লেঠা চুকে যেত। ছমনলালের বউ এইবার মুখ খুলল,। সে যা বলল, তার অর্থ এইরকম যে ছমনলাল আর তার বউ মিলে বুড়িকে মুড়ি-গুড় খাইয়ে, চিকিৎসার নাম করে অনেক আগেই বসতবাড়িটা রেজেস্ট্রি করে নিয়েছে।
— বসত বাড়ি বলে তবে,তার কিছুই নেই, এতদিন ধরে নিজের বাড়িতে থেকেও সে বাস্তুহারা। বেশ কিছুদিন থেকেই সে আশ্রিতা হয়েই পড়ে রয়েছে।
মোড়ল ও উপস্থিত লোকজন হতভম্ব হয়ে পড়ল। ওদিকে মাণিক তাড়া দিয়ে বলে,জলদি করো কাকা, বুড়ি বুঝি মরেই যাচ্ছে।

নাসির ওয়াদেন | Nasir Waden

Bengali Article 2023 | পরিবেশবাদী দৃষ্টিকোণ ও রবীন্দ্রনাথের ‘মুক্তধারা’ নাটক

Chandannagar Jagadhatri | চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজার প্রবক্তা কে ??

New Bengali Article 2023 | কবিতা – কী, কেন এবং পাঠকের দায়িত্ব

মানব কল্যাণে রামকৃষ্ণ মিশন | Ramakrishna Mission | 2023

Bangla Golpo Online Reading 2023 | Top Bangla Golpo Online Reading | New Read Online Bengali Story | Top Best Story Blogs | Best Story Blogs in pdf | Sabuj Basinda | High Challenger | Famous Bangla Golpo Online Reading | Shabdodweep Read Online Bengali Story | Shabdodweep Writer | Bangla Golpo Online Reading pdf | World’s Famous Bangla Golpo Online Reading | Pdf Bangla Golpo Online Reading | Natun Bangla Golpo Online Reading | Full Bangla Golpo Online Reading | Bangla Golpo Online Reading Blogs | Best Story Blogs in Bengali | Live Bengali Story in English |Bangla Golpo Online Reading Ebook | Full Bangla Galpo online | New Live Bengali Story | New Bengali Web Story – Episode | Golpo Dot Com Series | Horror Adult Story Video | Horror Live Bengali Story | New Bengali Web Story Audio | New Bengali Web Story Video | Bangla Golpo Online Reading Netflix | Audio Bangla Golpo Online Reading | Video Bangla Golpo Online Reading | Shabdodweep Competition | Story Writing Competition | Bengali Writer | Bengali Writer 2023 | Trending Bangla Golpo Online Reading | Recent Bangla Golpo Online Reading | Top Live Bengali Story | Popular New Bengali Web Story | Best Read Online Bengali Story | Read Online Bengali Story 2023 | Shabdodweep Bangla Golpo Online Reading | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Golpo Dot Com Download | Bangla Golpo Online Reading mp3 | Horror Adult Story | Read Online Bengali Story Collection | Bangla Golpo Online Reading mp4 | Bangla Golpo Online Reading Library | New Bengali Web Story Download | Full Live Bengali Story | Bengali Famous Story 2023 | Shabdodweep Bengali Famous Story | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Live Bengali Story – audio | Bengali Famous Story – video | Bengali Famous Story mp3 | Full Bengali Famous Story | Bengali Literature | Shabdodweep Magazine | Shabdodweep Web Magazine | Live Bengali Story Writer | Shabdodweep Writer | Collection Bangla Golpo Online Reading

Leave a Comment