শওকত নূর – সূচিপত্র [Bengali Story]
অশান্ত বনভূমি – শওকত নূর [Ashanto Bonobhumi]
মাঝরাতে তামাম বনভূমি ভয়ঙ্কর শব্দে কেঁপে উঠল। চারদিকে বিচিত্র চেঁচামেচি; পশুপাখি, কীটপতঙ্গ কেউ নীরব নেই। সবারই মনোযোগ বনের মাঝবিন্দু বরাবর। ভালুকগুলো কাঁদছে খুব। মা ভালুকের সাথে বাচ্চা ভালুকগুলো। খরগোশরা দ্রুত দৌড়ে মর্মান্তিক খবরটা প্রচার করে যাচ্ছে। ঘুমন্ত ভালুকের ডেরে আচমকা আক্রমণ করেছে বগু বাঘা ও তার দল। খবর শুনে হ্যাদা বাঘ হাই তুলে বলল, কেন যে এই বাড়াবাড়ি? ওই নিরীহ ভালুকগুলোকে আক্রমণ করার কী দরকারটা ছিল? কেউ মরেছে নাকি? হ্যাদা বাঘার ভাই খ্যাদা বাঘা পিঠ চুলকে বলল, আহা শুনলে না, খরগোশরা বলে গেল গোটা পাঁচেক বাচ্চা মরেছে।
ও – তা কারণটা কী বলে তোর মনে হয় ?
কারণ আর কী? কারণ হল গিয়ে বগু বাঘার চির শত্রু হচ্ছে টগু বাঘা। টগু বাঘার সাথে খায়খাতির রাখত ওই ভালুক তিনটা। গত সপ্তাহে আবার তারা ছানাপোনা নিয়ে টগু বাঘার বাড়ি দাওয়াত খেতে গেছিল। বনে মহুয়া খেতে গিয়ে মহুয়ার একটা ডাল তারা ভেঙেছে। ওই ছুতায় বগুরা মেরে ছিল ওদের বাচ্চাগুলোকে। আসল ব্যাপার মহুয়ার ডাল ভাঙা নয়, আসল ব্যাপার হচ্ছে ওই টগু বাঘার সাথে সম্পর্ক রাখা। রেষারেষি বলতে যা বুঝায়। বড়র সাথে সম্পর্ক রাখতে গিয়ে ছোটকে মাশুল গুনতে হল।
ও – তবে তো ব্যাপার জটিল। এখন কী হবে ?
কী আর হবে, ঘটনা টগু বাঘার কানে উঠবে। সে আবার কী করে বসে তা কে জানে? শিষ্যের ওপর আঘাত বলে কথা।
ব্যাপারটা খরগোশদের মাধ্যমে রাতের মধ্যেই টগু বাঘার কানে গিয়ে পৌঁছল। টগু বাঘা দলবল নিয়ে ফোঁসতে লাগল। ঘোঁৎঘোঁৎ করে বলল, শয়তান বগু, তুই পারিস না আমার ধারেকাছে আসতে। আমার ওপর গায়ের ঝাল ঝাড়তে মারলি আমার শিষ্যগুলোকে। আমিও শোধ নিব দেখিস। শুধু সময়ের অপেক্ষা।
এক সপ্তাহ পর মাঝরাতে আবার বনজুড়ে তুমুল হইহল্লোর পড়ে গেল। খরগোশরা দৌড়ে দৌড়ে প্রচার করছে টগু বাঘা ও তার দল অতর্কিতে আক্রমণ করে সদু শুওর ও তার ভাইবেরাদরদের গোটা পাঁচেক বাচ্চা মেরেছে। এবারও হ্যাদা বাঘা হাই তুলে বলল, শুরুটা হল কী? এই নিরীহ শুওরগুলোকে আক্রমণের কী হেতু? কেউ মরেছে নাকি ? হ্যাদা বাঘার ভাই খ্যাদা বাঘা মৃদু কেঁশে বলল, কানে কম শুনতে শুরু করেছ তুমি বোধ করি। খরগোশরা জোরেশোরেই তো বলে গেল সদু শুওর ও তার জ্ঞাতিগোষ্ঠীর পাঁচ বাচ্চা মরেছে।
ও – তা এটা আবার কেন হল ?
বুঝলে না, এই শুওরগুলো হচ্ছে ওই বগু বাঘার শিষ্য। গেল সপ্তায় এরা সদলবলে গেছিল বগু বাঘার মেয়ের বিয়ে খেতে। কাল নাকি বনপ্রান্তের বড় কচুগাছগুলো এরা সাবাড় করেছে। এই ছুঁতায় এদের বাচ্চাগুলোর ঘাড় মটকে দিল টগু বাঘারা। বগু বাঘার ওপর প্রতিশোধ আর কি। তা নিজেরা নিজেরা শত্রুতা করে। অথচ মরছে দুই দলের শিষ্যরা। তাও আবার ওই নিষ্পাপ নিরীহ শিষ্যরা।
হিংসা রেষারেষিতে তো এমনই হয়। কে নিষ্পাপ, কে নিরীহ, সেই হিসাব কি আর থাকে ? কথায় আছে না উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে।
তা ঠিক বলেছিস। এরপর আবার কোন অশান্তি ঘটে তা কে জানে ? এত হানাহানি, সবাই শুধু শোনে আর চেয়ে চেয়ে দেখে। কেউ কিছুই বলে না কাউকে। ওই সিংহগুলোর ভাব দেখ। এসব নিয়ে কোন মাথা ব্যথাই নেই তাদের।
চলো ঘুমাতে যাওয়া যাক।
আচ্ছা চলো, ঘা-উ-র ঘড়!
বন ক দিন শান্ত গেল। সবাই মোটামুটি নির্বিঘ্নে চলছিল। কিন্তু ব্যাপারটা দূর প্রান্তের বিধু বাঘার ভালো লাগল না। কারণ, বগু বাঘা ও টগু বাঘা দুইই তার শত্রু। সে ভেবেছিল, লড়াই যখন লেগেছে, তখন তা আর শুধু দুই বাঘার শিষ্যদের ওপর আক্রমণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। শীঘ্রই রীতিমত বগু বাঘায় টগু বাঘায় লেগে যাবে লড়াই। ফলে বগু টগু উভয়েই ঝগড়া বিবাদে মরবে। পথ পরিষ্কার হয়ে যাবে তার। তখন সেই হয়ে উঠবে মহাশক্তিধর। কিন্তু বন শান্ত দেখে সে আশায় গুঁড়ে বালি হল তার। তাই শিষ্যদের নিয়ে শলাপরামর্শে বসে গেল সে। গোপন বৈঠকে সিদ্ধান্তও হল পাকাপোক্ত।
পরবর্তী সপ্তাহে মাঝরাতে দুদলে বিভক্ত হয়ে একযোগে ভল্লু ভালুক ও সদু শুওরের ডেরায় হামলা চালাল বিধু বাঘার সাঙ্গপাঙ্গরা। ফলে উভয় পক্ষের আরো তিনটা করে বাচ্চা মারা গেল। এতে করে বগু বাঘারা ভাবল, টগু বাঘারা বাহাদুরি দেখাতে তাদের শুওর শিষ্যদের ওপর হামলা করেছে। অপরদিকে টগু বাঘারা ভাবল, বাহাদুরি দেখাতে তাদের শিষ্য ভালুকদের ওপর হামলা করেছে বগু বাঘার দল। ফলে রাত পোহাতেই শুরু হল বগু বাঘা ও টগু বাঘার দলে লড়াই। লড়াই মানে কী ! মহা লড়াই।
এ লড়াই শুধু বাঘায় বাঘায় সীমাবদ্ধ রইল না, লড়াই ছড়িয়ে পড়ল ভালুক ও শুওরদের মধ্যেও। খুব শীঘ্রই বনমহিষরা ভালুকদের পক্ষ নিল, গণ্ডাররা নিল শুওরদের পক্ষ। ভয়ঙ্কর এক অবস্থা তৈরি হয়ে গেল। উভয় পক্ষে মরতে লাগল সমানে সমান। যতই দিন গড়াচ্ছে, উভয় পক্ষ পরস্পরের ওপর ততই হিংস্র হয়ে উঠছে। ফলে নিরীহরা দেদারছে মারা পড়ছে। বলতে গেলে কিছু সংখ্যক বাদে গোটা বন এখন দু’দল প্রাণীতে বিভক্ত। দুদলই ভয়ংকর যোদ্ধা। খ্যাদা বাঘা ও তার ভাই হ্যাদা বাঘা ভয়ে বনের এক প্রান্তে গিয়ে পুরনো এক গুহায় আত্মগোপন করে রইল।
জিরাফ আর হাতিরা এখনও কোন দলে বিভক্ত হয়নি। একদল জিরাফ হাতিদের মাতবরকে গিয়ে বলল, এভাবে বনের হানাহানি আর কতদিন? এভাবে চলতে থাকলে লড়াই করে তারা সব মরে গিয়ে বন উজাড় হবে। ব্যাপারটা ভালো দেখায় না। চল আমরা দল বেঁধে সিংহ রাজার কাছে যাই। গিয়ে লড়াই থামাতে একটা কিছু করতে বলি। ইচ্ছে করলে শুধু সিংহরাই এ লড়াই থামাতে পারে।
হাতি আর জিরাফ যথারীতি সিংহরাজ সিঙ্গোর কাছে গিয়ে হাজির হল। সিঙ্গো তাদের কথা শুনে লম্বা হাই তুলে বলল, আমি অতিরিক্ত বুড়া হয়ে গেছি। নড়াচড়া করতেই পারি না; চোখেও দেখি এক্কেবারে কম। গলায়ও আওয়াজ আগের মতো নেই। কেউ আর আমাকে দাম দেয় না, মানে ছানে না। কাজেই এ লড়াই থামাতে আমার আর কী করার আছে? কে শুনবে আমার কথা ? মরুক, লড়াই করে করে সবাই মরুক, সমূলে বিনাশ হোক!যত্ত সব!
কিন্তু হুজুর, এরা সবাই লড়াই করে মারা গেলে তো আপনাদেরও সমস্যা হবে।
কী সমস্যা আমাদের ? ঘোলা চোখে চাইল সিংহ। সবাই মরলে আপনারা খাবেন কী? যেভাবে মরছে তাতে একসময় ইদুর খরগোশরাও নিশ্চিহ্ন হবে। বনে আপনাদের মহাদুর্ভিক্ষ হবে। বনজীবনের যবনিকাপাত ঘটবে।
তা অবশ্য ঠিক বলেছিস। কিন্তু আমাদের ওই নির্বোধগুলো কি এসব নিয়ে ভাবছে? বেশতো কেশর দুলিয়ে ঘুরছে ফিরছে। আমার কী ? আছিই আর কয়দিন এ বনজগতে? এখন তাদের কে বোঝায় ?
আপনিই না হয় ডেকে বুঝান তাদের। বুঝিয়ে বললেই তারা মাতাব্বরি ভূমিকায় যাবে বলে আমাদের বিশ্বাস। মাতব্বরীর রক্ত তো বইছে আপনাদের শরীরে। বলেকয়ে একটু জানিয়ে দিলেই হল।
কিন্তু আমার কি আর ঘুরে ঘুরে তাদের বৈঠকে ডাকার সাধ্য আছে? তোরাও তো অতটা ভালো ঘুরতে ফিরতে জানিস না। হিউজ শরীর তোদের।
তবে এক কাজ করুন, হুজুর।
কী?
ওই বানরদেরকে কাজে লাগিয়ে দিন। ওরা এখনও কোন দলে যোগ দেয়নি। শুধু গাছের ডালে বসে নীরবে তামাশা দেখছে। শান্তির জন্য না হয় একটু খাটলো ওরা।
তা অবশ্য ঠিক বলেছিস।
তবে হুজুর, আমরা দুজন ব্যাদা বানর ও তার ছেলেদের বলে যাচ্ছি যে আপনি ওদের ডেকে পাঠিয়েছেন।
ঠিক আছে, তাই কর।
বানরদের পাঠানো খবর পেয়ে সিংহরা দলে দলে জড়ো হয়েছে তাদের বৃদ্ধ পিতামহের গুহার সামনে। বৃদ্ধ সিংহ এ যুদ্ধে তাদেরকে নীরব ভূমিকার ভয়াবহ পরিণতির কথা বুঝিয়ে বলে। সব বুঝতে পেরে সিংহরা বানরদেরকে দিয়ে ঢোল পিটিয়ে বনজুড়ে ঘোষণা করে দিল এক মহা বৈঠকের কথা। এও বলল বনের প্রতিটি প্রাণী যেন বৈঠকে উপস্থিত থাকে। বৈঠক হবে পরের মঙ্গলবার ঠিক দুপুর বারোটায়।
ঘোষণামতে, বনের সব প্রাণীরা দলে দলে সিঙ্গো সিংহের গুহার সামনের মাঠে জড়ো হলো। গুহার খুব কাছেই সারিবদ্ধভাবে বসল সিংহরা। বাঘেরা বসল মাঠের মাঝামাঝি দাঁড়ানো দুটো গাবগাছের চারধারে। গুহার মুখ থেকে বৃদ্ধ সিংহের শিখিয়ে দেয়া কথামত সিংহদের নেতা সদি সিংহ বলল, এই যে তোরা যে সব দুই দলে বিভক্ত হয়ে লড়াই করছিস, দলেদলে মারছিস, মরছিস তো তোদের সমস্যা কী বলতো। কী সমস্যা তোদের?
ভাইজান, সমস্যা ওই টগুর শিষ্য ভল্লু ভালুকরা ঘটিয়েছে মহুয়ার ডাল ভেঙে। বগু বাঘা দাঁত বের করে বলল।
বনের কটা ডাল ভেঙেছে তো কী হয়েছে তাতে? এর চে’ অনেক নিকৃষ্ট কাজ কিন্তু তোরা করিস, মনে করে দেখ। আর আসল ব্যাপার কিন্তু সেটা না,আসল ব্যাপার হচ্ছে রক্তের গরম, বীরগিরি দেখানো। বাহাদুরি দেখানো। ভালুকরা তোদের শত্রু টগুদের সম্মান করে এটাই তোদের আঁতে ঘা দেয়। যতসব রাবিশ !
ঠিক বলছেন, বড় ভাই, একদম ঠিক। টগু বাঘা চেঁচিয়ে উঠল।
তুই চুপ কর। তোর ভূমিকাও তো খুব ভালো না। পাল্টা শোধ নিতে না গিয়ে নালিশ করতে পারতি।
ভাইজান, ও তা করবে কেন? জাত ভালো হলে তো। রক্তের গরম বড় বেশি। বিধু বাঘা চেঁচিয়ে বলল।
চেঁচাস নে তুই। তুই তো সবচে’ বড় পাঁজী। ভেজা বেড়ালের বাপ। টগু বগুর লড়াই উস্কাতে তুই গোপনে সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে দুই দলে বিভক্ত হয়ে গোপন ছদ্মবেশে ওদের ডেরে হামলা করিসনি? কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে গিয়ে সবচে’ বড় শয়তানীটা তো তুইই করেছিস। নইলে ঘটনা এতদূর গড়াত না। আচ্ছা জঘন্য তুই। তুই মর।
শোন তোমরা সবাই, আমাদের সাথে তর্কে না এসে লড়াই থামাও। নিজেরা বাঁচ, অন্যদেরও বাঁচতে দাও। সিংহ নেতা বলল।
হুজুর, এরা যদি আপনার কথা অমান্য করে তো এদের শাস্তি কী? এক নির্জন কোনায় দাঁড়িয়ে হ্যাদা বাঘা মাথা নিচু করে বলল।
শাস্তি হচ্ছে, এই বগুটগুদের ডেরে আটকে আমরা অন্যদের রক্ষা করব। এসব মাতবর বনে থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো।
হুজুর, সে-ই ভালো। হ্যাদা বাঘার ভাই খ্যাদা বাঘা বলল।
আচ্ছা, আর এভাবে বসে না থেকে এবার ঝটপট তোমরা বলে ফেল কী করবে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত মানবে নাকি, মানবে না? চটজলদি বল। হাতি বলল।
বগু টগুরা হাতির প্রশ্নের কোন জবাব না দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে গাবগাছের গোড়ায় আচ্ছামত মাথা ঠুকতে লাগল। ঘনঘন ডিগবাজি খায় আর মাথা ঠোকে।
গুহার মুখ থেকে বৃদ্ধ সিংহ বিড়বিড় করে বলল, ওই রক্তের গরমের জন্যই তো এই অবস্থা। কী তেজের তেজ! যাও তোমরা সবাই। সভা ভঙ্গ কর। সবাইকে চলে যেতে বল।
বৃদ্ধ সিংহ গুহার মুখ থেকে ভেতরে চলে গেলে সিংহ নেতা হাত ইশরায় সবাইকে বাড়ি চলে যেতে বলল। ইশারা পেয়ে সমস্ত প্রাণী নিঃশব্দে সভা ত্যাগ করল।
বগু টগু মাটিতে বার কয়েক ডিগবাজি খেয়ে কিছুক্ষণ মৃদু ঘরর ঘরর শব্দ করল। তারপর পরস্পর বিপরীত দিকে হাঁটা ধরল। জায়গাটি মুহূর্তে ফাঁকা হয়ে গেল।
শওকত নূর | Shawkat Noor
Doob De Re Mon Kali Bole | ডুব দে রে মন কালী বলে | অভিজিৎ পাল | New 2023
Paribartan Bengali Story | পরিবর্তন | অঙ্গনদীপ চ্যাটার্জী | Top New 2023
Pancha Byanjan Galpo | পঞ্চব্যঞ্জন পর্ব ২ | জয়ন্ত কুমার সরকার | Top New 2023
From the Myanmar Diaries | অ-শরীরী | মায়ানমারের ডায়েরীর পাতা থেকে | 2023
Ashanto Bonobhumi 2023 | Ashanto Bonobhumi | Bengali Story 0 Ashanto Bonobhumi | Bangla Galpo – Ashanto Bonobhumi | Ashanto Bonobhumi pdf story | Pdf Story -Ashanto Bonobhumi | Ashanto Bonobhumi pdf download | Ashanto Bonobhumi – Web Stories | Ashanto Bonobhumi – Viral Video | Sabuj Basinda | High Challenger | Shabdodweep – Ashanto Bonobhumi | Shawkat Noor – Ashanto Bonobhumi | New Story – Ashanto Bonobhumi | Ashanto Bonobhumi in Bangladesh | Ashanto Bonobhumi in India | Ashanto Bonobhumi – Best seller