New Bangla Galper Library 2023 | Bipasha Chakraborty

Post Views: 575

বিপাশা চক্রবর্তী – সূচিপত্র [Bengali Story]

ঈশ্বরের সৃষ্টি – বিপাশা চক্রবর্তী [Bangla Galper Library]

এই বিশ্ব প্রকৃতিতে সব থেকে সুন্দর ও মনোরঞ্জন জিনিস হলো মিলন। প্রকৃতির সাথে পুরুষের মিলন। তারই মাধ্যমে আসে নব প্রজন্ম। জীব জগতে এমন কোনো প্রাণী নেই যাদের মিলন হয় না। প্রাণীর মিলন হয় প্রত্যক্ষ ভাবে আর উদ্ভিদের মিলন হয় পরোক্ষভাবে। আর তাদের মিলনে সহায়তা করে পতঙ্গ শ্রেণীর প্রাণী। আর প্রকৃতির সব থেকে সুন্দর পতঙ্গ হলো প্রজাপতি।যার ডানায় রয়েছে নানান রংয়ের মেলা। ঈশ্বর যেন তার পাখায় তুলির অঙ্কনে অঙ্কিত করে তাকে সুসজ্জিত করে তুলেছেন।যে ছিল আগে কুৎসিত শুঁয়োপোকা। যাকে দেখলে মানুষ ভয় পায়। ঘাসের সাথে গরু ছাগল যদি তাদের কোনোভাবে খেয়ে নেয় সাথে সাথে তাদের মৃত্যু হয়। আর সেই ভয়ংকর জীবটিকেই রূপ পরিবর্তন করে ভগবান তাকে বিশ্বের সব থেকে সেরা প্রাণী করে গড়ে তুলেছেন – প্রকৃতি প্রেমিক রূপে খেলে বেড়ানোর জন্য।তাইতো সে এক ফুল থেকে আরেক ফুলে ছুটে যায় মধু খাবার লোভে।তখনই তার পায়ে ফুলের পরাগ লেগে অন্য ফুলে বসে মিলন ঘটায় নিজের অজান্তেই।

‘রক্তগাঁদা ফুলে বসে খাচ্ছে প্রজাপতি মধু,
উড়ে যাবার সময় তার পায়ে লাগল রেণু শুধু।
সে জানতেও পারলো না হায়, কীভাবে তার মাধ্যমে ফুলে- ফুলে মিলন খেলা হয়ে যায়।
পরমেশ্বর তার মাধ্যমে রচিল প্রাণের মেলা এইভাবে বিশ্বজুড়ে চলছে গাছগাছালির খেলা’।

সুন্দর ভুবনে দেখা যায় কত রকমের ফুলের গাছ ও ফলের গাছ।তাদের মিলনে ও বংশ বিস্তারে সাহায্য করছে কতো প্রজাপতি। এ যেন ঈশ্বরের এক অপরূপ সৃষ্টি। আর এইসব দৃশ্য দেখেই অনুভব করা যায় ঈশ্বর আছেন। আর এইভাবেই তাঁর জগৎ সংসারকে সৃষ্টি করছেন ও রক্ষা করছেন।।

মন – বিপাশা চক্রবর্তী [Bangla Galper Library]

মন দুই অক্ষর বিশিষ্ট এমন একটা শব্দ যে ঝড়ের গতিবেগের আগেই ছুটে চলে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। কখনও গা ভাসিয়ে দেয় আনন্দের সুখ সাগরে আবার কখনও কোন অজান্তেই হারিয়ে যায় অতলান্ত গহ্বরে। তখন চারিদিকে দেখে শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার। যা কিছু পেতে ইচ্ছে করে তা না পেয়ে মনমরা হয়ে একাকী বসে থাকতে ইচ্ছে করে।যেন সব কিছু থেকেও কিছুই নেই জীবনে। কেন এমন হয়? প্রশ্ন জাগে মনে। আচ্ছা মন কি জিনিস? ওর কি কোনো আকার আছে? নাকি যে পাত্রে রাখা হয় সেই পাত্রের আকার ধারণ করে? ঠিক যেন তরল পদার্থের মতো। তবে জল যেমন ঢালু জায়গা দেখলেই গড়িয়ে যায় ঠিক তেমনি মন তার মনের মতো সঙ্গী পেলে আপনা হতেই ঢলে পড়ে। ভাবে না কে বড়ো কে ছোটো। জাতের বালাইতো দূরে থাক ভাবনাতেই আসেনা কাজটা ঠিক হচ্ছে না ভুল হচ্ছে। মনকে ভুল করতে দেখলে বিবেক বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু মনতো নিজের খেয়ালেই চলে সে কারও বাধা শুনতে রাজি নয় সে যেটা ভাববে যেটা ইচ্ছে করবে সেটাই সে করবে। আর এটাই তার ধর্ম। মনের ইচ্ছেকে দূরে রাখার ক্ষমতা সাধারণ মানুষতো দূরের কথা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পক্ষেও অসাধ‍্য ছিল। তিনিও মনের ইচ্ছাকে দমন করে রাখতে পারেননি। শত চেষ্টা করেও বারবার পরাজয় স্বীকার করেছেন মনের কাছে। আর সেই কারণে আঘাতের পর আঘাত সহ্য করে গেছেন আর জন্ম দিয়েছেন অনেক কাব‍্যের অনেক সঙ্গীতের। তাঁর নিদারুণ কষ্ট তাঁকে যতটা কাঁদিয়েছে ঠিক ততটাই তাঁকে প্রতিষ্ঠিত করেছে এই বিশ্ব-ভুবনে। কখনও তিনি আনন্দঘন মুহূর্ত সুন্দরভাবে পরিবেশন করেছেন পাঠকগণের কাছে আবার একাকীত্বের মুহূর্তগুলো পাঠকগণ,শ্রোতাগণ তাঁর গান শুনে অনায়াসেই সময় কাটাতে পারেন। আবার তাঁর লেখা কাব‍্য, গল্প, ছোটো গল্প, নাটক, গদ্য, উপন্যাস প্রবন্ধ মানুষের চলার পথের পাথেয় হয়ে উঠেছে। শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষণীয় হয়ে উঠেছে। প্রতিটা মানুষের জীবনেই রবীন্দ্রনাথ জেগে থাকা থেকে ঘুমানো পর্যন্ত বিরাজমান। এই সুন্দর শাশ্বত মানুষটি তাঁর প্রিয়জনদের অকালেই হারিয়েছেন। আবার নিজের ভুলেই শুধু নয় জেদের বশবর্তী হয়ে মনের প্ররোচনায় প্ররোচিত হয়ে তাঁর তিন মেয়ের খুব অল্প বয়সেই বিবাহ দিয়েছিলেন। আর এমন ব্যক্তিদের সাথে বিবাহ দিয়েছিলেন যারা অকর্মণ্যের ঢেঁকি ছিলেন। তারা সবসময়ই চাইতো কীভাবে শ্বশুর মশায়ের টাকা আত্মসাৎ করা যায় এবং কবিগুরুকে প্রতিমুহূর্তে অসম্মান ও অপমান করা যায়। তিন জামাতাই চেয়েছিলেন বিলেতে গিয়ে পড়াশোনা করতে।আর কবিগুরুও তাঁদের সব ইচ্ছে পূরণ করেছিলেন। কিন্তু তাতে কোনো ফল লাভ হয়নি। তাঁরা বিলেত থেকে ফিরে এসে উপার্জন করাতো দূরে শ্বশুর-মহাশয়ের কাছ থেকে মাসোয়ারা বাবদ টাকা নিতেন। আর না দিলেই মেয়েদের উপরেই অকথ‍্য অত‍্যাচার করতেন যা কবিকে বড়ো ব‍্যথিত করে তুলত। কবি তাঁর ছোটো মেয়েকে প্রাণের থেকেও বেশি ভালোবাসতেন। তিনি তাঁর ছোটো মেয়ের বিবাহ দিলেন নগেন্দ্রনাথ মহায়ের সাথে যা ছিল কবির সব থেকে বড়ো ভুল। তিনি ছোটো মেয়ে মীরার জীবনের দুঃখ ঘোচাতে গিয়ে অকালকুষ্মাণ্ড জামাতার চাহিদা মেটাতে গিয়ে নিজেই শেষ হয়ে যাচ্ছিলেন শুধু তাই নয় ছোটো জামাই বিলাসবহুল জীবন কাটাতে শ্বশুরের নাম করে টাকা ঋণ নিতে নিতে কবিগুরুকে ঋণের দায়ে পথে বসিয়েছিলেন। তাই কবি তাঁকে অসভ‍্য বর্বর মাকালফল ছাড়া আর কিছুই বলতেন না। কিন্তু জামাতার বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদও করতে পারতেন না শুধু সন্তান স্নেহের জন্য কারণ তাঁর নিজের ভুলেই দুই কন্যাকে অকালেই হারিয়েছেন।তাই ছোটো কন্যাকে তিনি হারাতে চাননি বা তার কষ্ট সহ্য করতে চাননি। কিন্তু সুখ কবির কপালে সহ্য হলো না। তাঁর ছোটো জামাতা ছোটো মেয়ে মীরাকে অর্ধমৃত করে অর্থাৎ শারীরিক অত‍্যাচার মানসিক নির্যাতনে নির্যাতিত করে খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করে সংসারজীবন ত‍্যাগ করলেন। কবি তখন মনের দুঃখেই বলে উঠলেন বা এক জায়গায় লিখেছিলেন “আমার মেয়ে মীরা যখন বিয়ের রাতে নাবার ঘরে ঢুকছিল তখন একটা গোখরো সাপ ফস করে ফণা ধরে উঠেছিল – আজ আমার মনে হয় সেই সাপ যদি তখনই তাকে কাটত তাহলে ও পরিত্রাণ পেত”। আসলে তিনি মীরার এখনকার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে দুঃখের সাথে এই কথাগুলো বলেছিলেন। আর নিজের মনের মতো জামাতা খুঁজতে গিয়ে তিনি যেভাবে অপমানিত ও অসম্মানিত হয়েছিলেন তার জন্য তিনি আত্মহননের পথও বেছে নিয়েছিলেন কিন্তু পারেননি মৃত্যু বরণ করতে। বিবেকের কাছে পরাজয় স্বীকার করতে বাধ‍্য হয়েছিলেন। ঠিক একই রকমভাবে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামও সন্তান হারিয়ে মনের দুঃখে দিশেহারা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন তখন কবিগুরু তাঁর কাছে গিয়ে তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন “কপালে যা থাকবে তাই ঘটবে তার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কারোর নেই আমারও না তোমারও না ভাই তাই শোক তাপ ভুলে তুলে নাও কলম। জন্ম দাও কাব‍্যের জন্ম দাও সঙ্গীতের। তুমিতো দারুণ শ্যামা সঙ্গীত লেখো সেই সঙ্গীতের মাধ‍্যমে ফুটিয়ে তোলো তোমার মনের আবেগ। জানবে এক একটি কাব‍্য এক একটি গান তোমার সন্তান। যার সৃষ্টিদাতা তুমি”।

এতো গেল উচ্চ মার্গের কবিদের কথা। আমরাও সাধারণ মানুষরা মনের কথা শুনতে বাধ‍্য। আমরাও কোনোভাবেই মনের কথা অগ্রাহ্য করতে পারিনা তাই কখনও সুখের সাগরে ভেসে যাই আবার কখনও সামান্য দুঃখ পেলেও মন অতলান্ত দুঃখের গহ্বরে পৌঁছে যায় তখন মনের রোগে রুগী হয়ে একাকীত্ব জীবন কাটাতে হয়। আর এটাই জীবন। মন সঞ্চালনে গঠিত জীবন সুখ দুঃখের সমন্বয়ে সঞ্চারিত।