1st Meeting of Rabindranath and Ramkinkar – Pritam Sarkar
রবীন্দ্রনাথ ও রামকিঙ্করের প্রথম সাক্ষাৎ – প্রীতম সরকার
শান্তিনিকেতনে রামকিঙ্কর বেইজ যখন প্রথম তাঁর শিল্পকর্ম শুরু করেছিলেন, তখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তা জানতেন না। সময়টা ছিল ১৯৩৮ সাল। সেসময় রামকিঙ্কর প্রথম এসেছিলেন বোলপুরের শান্তিনিকেতনে। রবীন্দ্রনাথও চিনতেন না রামকিঙ্করকে। কিভাবে তাঁদের দুজনের প্রথম পরিচয় হয়েছিল, সেকথাই আজ এখানে বলবো।
তখন শান্তিনিকেতনের আশ্রমে অজস্র ফাঁকা জায়গা খালি পড়ে রয়েছে। এমনই এক দিনের গ্রীষ্মকালের দুপুর বেলার কথা। চারিদিকে লাল-ধুলো মাটি- কাঁকরের সঙ্গে রোদের তেজও ছিল চরমে। চারদিকে বইছে আগুনের হলকা দেওয়া ঝোড়ো বাতাস। ওই অঞ্চলের সেই রুক্ষ মাটিতে তেমন ঘাম হয়না। তবে বাতাস যখন বন্ধ হয়ে যায়, তখন সারা শরীর রীতিমতো জ্বালা করে। রামকিঙ্কর দেখেছিলেন, ওই অঞ্চলে অনেক বড় বড় গাছ লাগানো রয়েছে। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, রুক্ষ লাল মাটির মধ্যে এই ধরনের গাছ লাগাতে এখানকার আসল মাটিকে সরিয়ে উপযুক্ত মাটি ফেলা হয়েছিল নিশ্চয়ই। আম, জাম, কাঠাল, আমলকী, হরিতকী, দেবদারু, শাল, মহুয়া, অশোক, বকুল, কদম গাছ না হলে এভাবে সতেজ থাকতো না। এই বিশাল উদ্যানের পাশেই রয়েছে এক আশ্রম। উদ্যান আশ্রমকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে গৃহস্থদের বসবাসের এলাকা।
বৈশাখ মাস শেষ হয়ে জ্যৈষ্ঠ মাস সবে তখন শুরু হয়েছে। সেই জ্যৈষ্ঠের এক দুপুরে নিজের ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে এলেন আশ্রমের কর্ণধার স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। উত্তর দক্ষিণ দিকে তৈরি কবির পুবমুখী দোতালা বাড়ির রঙ উজ্জ্বল হলুদ। বাড়ির দোতালার পুবদিকে খোলা বারান্দা রয়েছে। বাড়ির দক্ষিণ দিকেও ছিল একটি ব্যালকনি। তবে এই হলুদ বাড়িটি তেমন উঁচু নয়। দক্ষিণের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে কবি তাকিয়ে দেখছিলেন, তাঁর আশ্রমের নানা দিক। নীচে নেমে এসে রবীন্দ্রনাথ কাঁকড় ছড়ানো রাস্তা দিয়ে কয়েক পা হেঁটে এগিয়ে এলেন। তাঁর গায়ে এই গরমের মধ্যেও কাশ্মীরী ফেরনের হালকা কাপড়ের তৈরি জোব্বা। পিছনে দুহাত রাখলেও দীর্ঘ শরীর যেন বয়সের ভারে কিছুটা সামনের ডিকে ঝুঁকে পড়েছে। উন্নতনাসা ফর্সা রবীন্দ্রনাথের চোখ দুটি অসম্ভব রকমের উজ্জ্বল থাকলেও, অন্য মনস্কতার ভ্রু দুটিতে ছিল না কোন অকারণের গাম্ভীর্য বা বিরক্তি। দেখতে লাগছিল এক ঋষি পুরুষের মতোই। পায়ে ছিল ধুসর রঙের ভেলভেটের নাগরা জুতো।
কবি এবার দক্ষিণ দিকে এগিয়ে চললেন। তাঁর উজ্জ্বল হলুদ রঙের দোতালা বাড়ির পুব দিকে উত্তর থেকে দক্ষিণে যে লাল রাস্তা রয়েছে, সেটা ধরে। রাস্তার ওপাশে মেহেদি বেড়ার ওপাড়ে রয়েছে একটি হাল্কা হলুদ রঙের অর্ধগোলাকার বাড়ি। সেই বাড়ির লাল রঙের মেঝে কবির নজরে পড়ছে। কিন্তু তিনি চোখ ফিরিয়ে নিলেন পুবদিকে। তাঁর নজরে এলো একতলা একটি বাড়ির ঢালু ছাদ। এই বাড়িটির এটাই বৈশিষ্ট্য। মাঝে মাঝে তাল গাছ রয়েছে। লাল কাঁকড়ের মোরাম পারিয়ে তিনি আরও দক্ষিণ দিকে এগিয়ে চললেন। রাস্তার পশ্চিম দিকের গোলাপের বাগানে জল দিচ্ছে মালি। গোলাপ বাগানে ঢোকার মুখেই রয়েছে সিমেন্ট দিইয়ে ঢালাই করা তোরণ, যার ডিজাইন উত্তর-পূর্ব এশিয়ার বৌদ্ধ স্থাপত্যের আদলে তৈরি করা হয়েছে। সেখান থেকেই গাছগাছালির মোডয়ে দিয়ে দেখা যাচ্ছে, মাটির তৈরি একটি বাড়ি, যে বাড়ির ছাদ কিন্তু খড় দিয়ে তৈরি নয়। সেই ছাদ তৈরি মাটি দিয়েই। এখানকার বাড়ির সঙ্গে এটাই এই মাটির বাড়ির আলাদা বৈশিষ্ট্য। বাড়িটির দরজার দুদিকে পোড়া ইটের আদলে মাটির তৈরি দুটি সাঁওতাল দম্পতির মূর্তি। কালো রঙ করা।
কবি এবার সামনের দিকে এগিয়ে চললেন। যে মালিটি গোলাপের বাগানে জল দিচ্ছিল, সে তাঁকে দেখেই ঝারি রেখে দুহাত জোর করে ইটের জানালো। মালিকে প্রণামের প্রত্যুত্তর জানিয়ে কবি এগিয়ে চললেন পুব থেকে পশ্চিমে। সেখানে রাস্তায় এসে দাঁড়ালেন। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে গেট খুলে বাইরে বেরিয়ে এলেন। তিনি ছাত্রদের থাকার হোস্টেল বাড়ি পেরিয়ে এগিয়ে চললেন নতুন কলম দিয়ে তৈরি আম বাগানের দিকে। পূর্ব-পশ্চিম দিক করে লম্বা একটি বাড়ি রয়েছে সেখানে। উত্তর দিকে রয়েছে সেই বাড়ির দরজা। সেই বাড়ির উঠোনে এসে দাঁড়ালেন কবি। সেই উঠোনেই কবির চোখে পড়লো মাঝখানে কংক্রিটের ঢালাই করা উঁচু বেদির উপরে একটা মূর্তির মতন কিছুর। এক ঝলক দেখে কবির মনে হলো দুটি হাতের মতো কিছু যেন তৈরি করা হয়েছে। মূর্তির শরীরের মতো যেটা তৈরি করা হয়েছে, সেটা যেন হাট দুটো দিয়ে ফুলের পাপড়ি হয়ে রেণুগুলোকে আড়াল করে রেখেছে। কে বানালো এমন মূর্তি!!
কবি এবার মূর্তিটির কাছে গেলেন আর তাঁর মনে হলো, চোখের সামনে যেন ভেসে উঠেছে এক রমণীর মূর্তি। সেই মূর্তি যেন চুম্বনরতা কোন নারী। আবার মূর্তিটির অন্যদিক থেকে দেখে কবির মনে অনুভব এলো, এই মূর্তিটির রমণী কি মিলন প্রয়াসী! তিনি বেশ কয়েকবার মূর্তিটিকে প্রদক্ষিণ করলেন। কিন্তু সঠিক মানে আবিষ্কার করতে না পারলেও, অনুভব করলেন, যেই এই মূর্তি বানিয়ে থাকুক না কেন, এটা অতি উচ্চমানের এক শিল্পকর্ম।
এদিক ওদিক তাকিয়ে কবি খুঁজতে লাগলেন কোন লোককে, যে এই মূর্তির বিষয়ে তাঁকে জানাতে পারবে! ততক্ষণে সাঁওতাল রমণীদের নিজেদের বাড়ি ফেরার সময় হয়ে গিয়েছে। কবির নজরে এলো এমনই এক সাঁওতাল রমণী। তাকে জিজ্ঞাসা করে কবি জানতে পারলেন, যে মূর্তিটি তৈরি করেছে, তাঁকে এই সাঁওতাল রমণী চিনলেও তাঁর নাম জানে না। ততক্ষণে সেখানে কয়েকজন আরও সাঁওতাল রমণী এসে উপস্থিত হয়েছে। তারা কবিকে জানালো, যে লোকটা এটা তৈরি করেছে, সে নিজেকে ভাস্কর বলে।
কবি তখন একমনে মূর্তিটির দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। তিনি তাঁর জায়গায় এরকম একটা মূর্তি তৈরি করায় সন্তুষ্ট না অসন্তুষ্ট হয়েছেন, সেটা তাঁর অভিব্যক্তি দেখে বোঝা যাচ্ছিল না।
উপস্থিত হওয়া রমণীদের একজন বললো, ‘সে থাকে পুরানো মেথর পল্লীর এক চালায়। জায়গার নাম কদমতলা। সে কিনা এরকম একটা প্রাচীন বিখ্যাত জায়গাতে জমি দখল করে এই সব পেত্নীদের মূর্তি বানাচ্ছে! আমরা নিষেধ করেছিলাম। সে আমাদের কথা শোনেনি। উলটে আমাদের জানালো, এখন নাকি আরও কি সব ছাইভস্মের মূর্তি তৈরি করবে এখানে!’
অন্য একজন রমণী জানালো, ‘সে তো এসেছে, বাঁকুড়ার ইয়ে বাড়ি থেকে। তাই তো মেথর পল্লীতে থাকতে তাঁর জাত যায় না!’
কবি শুধু বললেন, “হুম, বুঝলাম। তা তাঁকে একবার আমার সঙ্গে দেখা করতে বোলো তো!”
কবির এই কথা মন্ত্রের মতো কাজ করলো সাঁওতাল রমণীদের ক্ষেত্রে। তারা আরও উৎসাহ পেলো ওই ভাস্করকে খবর দেওয়ার। কবিও নিজের থাকার জায়গার ডিকে চললেন চিন্তা করতে করতে পিছনে দুহাত দিয়ে।
পুরানো মেথর পল্লী হলেও মেথর আর এখন সেখানে থাকেনা। সেখানেই এক মাটির দেওয়াল, খড়ের চালার ঘরের সামনের জায়গাতে কাজ করছিলেন রামকিঙ্কর। কাজ বলতে আরও একটি মূর্তির খসরা তৈরি করছিলেন, মাটি দিইয়ে। যেটাকে পরে কংক্রিটের করে শান্তিনিকেতনের জমিতে তৈরি করার ইচ্ছা রয়েছে তাঁর। তাই আগে মাটি দিয়ে খসড়া মূর্তি বানাচ্ছিলেন এক মনে। তাঁর এক হাতে মাটির মূর্তির মাটি, অন্য হাতে রয়েছে বাঁশের একটি পাত। সেই বাঁশের পাত দিয়ে মাটির ডেলাতে মূর্তির অবয়ব তৈরির কাজ করছিলেন তিনি। মাটির মূর্তিটি এক সাঁওতাল রমণী, একপুরুষ আর এক পশুর। সাঁওতাল পুরুষটির কাঁধে বাঁক রয়েছে। রামকিঙ্কর মূর্তি তৈরিতে এতটাই মগ্ন চিলেন, কখন সূর্য ইউক্যালিপটাস গাছের মগডাল ছুঁয়েছে, সেটা খেয়াল করেননি। তাঁর কাজ এখনও শেষ হয়নি। একবার গড়ছেন, পছন্দ হচ্ছে না। তাই ভেঙ্গে আবার তৈরি করছেন।
এর মধ্যে বাড়ির উঠোনে ঢুকলো শুকনো কাঠ পাতা কুড়োনি কয়েকজন সাঁওতাল রমণী। তাদের মধ্যে থেকে একজন তাঁর উদ্দেশ্যে বললো, ‘তোমাকে তিনি ডেকেছেন।’
রামকিঙ্কর চমকে তাকালে এবার অন্য একজন সাঁওতাল রমণী বললো, ‘কি হে! কথাটা বুঝতে পারলে না। উনি তোমাকে ডেকেছেন! তিনি বাগানে এসে তোমার কীর্তি দেখেছেন! আজ তিনি নিজের থাকার বাড়ি থেকে বাগানে এসেছিলেন তো!’
রামকিঙ্কর অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমাকে দেখা করতে বলেছেন!”
এই কথাগুলো জানিয়েই সাঁওতাল রমণীরা বাড়ির ডিকে রওনা দিল কিন্তু সঙ্গে রামকিঙ্করকে বিদ্রুপ করতে ছাড়লো না! ‘ভাস্কর’ বলে।
অন্ধকার নেমে এসেছে। রামকিঙ্কর চলেছেন কবির সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু তাঁর কানে বেজেই চলেছে, সেই সাঁওতাল রমণীদের বিদ্রূপ ‘ভাস্কর, ভাস্কর’। রবীন্দ্রনাথের থাকার জায়গায় গিয়ে রামকিঙ্কর যখন কবির সাক্ষাৎ পেলেন, তখন কবি চোখে চশমা এঁটে টেবিলের ছোট খাতায় কলম দিয়ে কিছু লিখছেন। তার উপস্থিতি টের পেয়ে কবি চোখ থেকে চশমা সরিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কে!”
“আজ্ঞে! আপনি আমাকে আজ বিকালে দেখা করতে বলেছিলেন!” রামকিঙ্কর ভয়ের সঙ্গে জবাব দিলেন।
“ও, তুমি !”
“হ্যাঁ, তোমায় আমি ডেকেছি। আজ বিকালে বাগানে ঘুরতে ঘুরতে চোখে পড়লো তুমি কিছু একটা বানিয়েছো। কি বানিয়েছো ওটা!” রবীন্দ্রনাথ জিজ্ঞাসা করলেন।
“আজ্ঞে আমি জানি না”।
“নিজেই জানো না কি বানিয়েছো!” কবির চোখে অবাক প্রশ্ন!
রামকিঙ্কর বললেন, “জানি কি বানিয়েছি, কিন্তু কাউকে বোঝাতে পারবো না যে!”
রবীন্দ্রনাথ অভয় দিয়ে বললেন, “আমার তো মনে হলো এক নারীর মূর্তি। যে নীচু হয়ে রয়েছে চুম্বন দেওয়ার জন্য!”
“হবে হয়ত! আমার মনে যা এসেছিল, সেটাই বানিয়ে দিয়েছি।”
রামকিঙ্করের কথা শুনে রবীন্দ্রনাথ হেসে উঠলেন। মুখে বললেন, “তুমি আমার বাগানে যত ফাঁকা জায়গা রয়েছে, সব এই ধরনের নানা মূর্তি দিয়ে ভরিয়ে দাও! আর শোনো, একটা মূর্তির কাজ শেষ করবে, আবার একটা নতুন মূর্তি তৈরির কাজ ধরবে। কখনও পিছন দিকে তাকাবে না।”
প্রীতম সরকার | Pritam Sarkar
New Bengali Article 2023 | অযোধ্যা গ্রামে প্রাচীন জমিদারদের আশ্চর্য স্থাপত্য নিদর্শন
New Bengali Article 2023 | প্রেমাবতার ঠাকুর হরনাথ ও সহধর্মিণী কুসুমকুমারী কথা
Rabindranath Tagore’s love for art and literature
Emblem of Ramakrishna Mission | রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতীকের অর্থ | নক্শা ও তাৎপর্য | 2023
1st Meeting of Rabindranath and Ramkinkar | Article – 1st Meeting of Rabindranath and Ramkinkar | Best Article in Bengali | writing competition malaysia | writing competition london | writing competition hong kong | writing competition game | 1st Meeting of Rabindranath and Ramkinkar – essay | writing competition australia | writing competition prizes | writing competition for students | writing competition 2022 | Best Article – 1st Meeting of Rabindranath and Ramkinkar | Best Article in Bengali pdf | writing competitions in africa 2023 | writing competitions for high school students | writing competitions for teens | writing competitions 2023 | writing competitions uk | bengali article writing | bangla – 1st Meeting of Rabindranath and Ramkinkar | bengali article rewriter | article writing | 1st Meeting of Rabindranath and Ramkinkar – writing ai | bengali article writing app | Best Article in Bengali book | Best Article in Bengali – Online | bengali article writing description | bengali article writing example | article writing examples – 1st Meeting of Rabindranath and Ramkinkar | Viral Video – Best Article in Bengali | Best Article in Bengali Source | bengali article writing format | Best Article in Bengali News | bengali article writing generator | article writing global warming | article writing igcse | Ebook – 1st Meeting of Rabindranath and Ramkinkar | PDF 1st Meeting of Rabindranath and Ramkinkar | article writing jobs for students | article writing jobs work from home | article writing lesson plan | Best Article in Bengali Font | article writing on global warming | bengali article writing pdf | article writing practice | Best Article in Bengali Ebook 2023 | what is article writing | content writing topics 2023 | Bangla Prabandha | The Best Article in Bengali | Definite Article | Bengali Article Writer | Short Bengali Article | Long Article | Best Article in Bengali in pdf 2023 | Trending Best Article in Bengali | Bengali Article | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Shabdodweep Founder | Trend – 1st Meeting of Rabindranath and Ramkinkar | 1st Meeting of Rabindranath and Ramkinkar of life | 1st Meeting of Rabindranath and Ramkinkar – Article in Bengali