Pattern of Bengali Poetry | Best Bangla Kobita

Sharing Is Caring:

Pattern of Bengali Poetry – Aloke Mitra

এসেছিল জোছনা পৌষের ঘরে – অলোক মিত্র

ঝুলে আছে রোদগুলো, সোনঝরা ঘরে
হেঁটে যাচ্ছে দুপুর, দু’পায়ে মারিয়ে
ঝরাপাতার বিলাসী নূপুর।

একফালি মায়া ঢেলে বেনীবাঁধা চুলে
ডাহুকের ডাকে স্মৃতির সুগন্ধি ভুলে,
এসেছিলে তুমিও সেদিন!

জানিনা জীবন কেন দেয় কর দিয়ে ফাঁকি?
জোছনার আইল ধরে কয়েকটা জোনাকি
ডেকেছিলো সেদিন!

মধুমাখা ফুল এইতো শিমুল, বুকে তার লাল
কেন জানি সে দাঁড়িয়েছে, বোশেকের কালে
‘লিখেছিল সে চিঠি, ছিল সাথে প্রণয়ের খাম
সযতনে তার ওপরে,
লেখা ছিল আমারই সে নাম।

ভুল করে জানি ভুলে যাবো মরুপথ ধরে,
এসেছিল গতকাল জোছনা পৌষের ঘরে।

আমি ওদের ঘৃণা করি – অলোক মিত্র

পঁচাত্তর বয়সী বৃদ্ধা রমণীর
অন্তর্বাস হাতে যারা উল্লাস করে,
আমি ওদের ঘৃণা করি।

ওদের আমি চিনি না।
চিনতে চাই না।
কল্পনা করতেও চাই না,
ঐ বুনো শুয়োরের মুখগুলো।

তারা কেউ আমার ভাই
কিংবা ছোট যা কিছু হোক
আমি ওদের পরিচয় দিতে
ঘৃণা বোধ করি।

আমি লজ্জিত,
আমি দুঃখিত।
এ লজ্জার ভার
আমি বহন করতে অক্ষম
হে জন্মজননী, সবুজ শ্যামল
আমায় ক্ষমা করো।

ফ্যাসিজমে ম্যাটিকুলাস ভালোবাসা – অলোক মিত্র

পুড়ছে ধানমন্ডি বত্রিশ নম্বর
আমি ঝলসানো রুটি হয়ে
সময়ের বৃদ্ধাঙ্গুলে বসে আসি
দেখছি নূতন বাংলাদেশ।

নূতন স্বাধীনতা যাপিত
জীবনে রাজপথে বুনো উল্লাস।
আমি কান পেতে রই
ভূমধ্য-মহাসাগরে, একটা গর্জন
একটা হুঙ্কারের দীর্ঘ প্রতিক্ষায়,
কাটে আমার গ্রহ দিবানিশি।

অনিদ্রায় দ্রাক্ষারস হয়ে
জেগে ওঠে…
“বল বীর বল উন্নত মম শির”
কিংবা “জগন্নাথ বুঝে গেছে…
সব শালারা বাটপার।”
আমি ক্রুশবিদ্ধ মুখে
বুলি আওরাই স্বাধীনতার।

মুক্তির স্বাদ নিতে মাঝে তব
হয়ে যাই বিপ্লবী সাঁওতালী গান,
মুক্ত বিহঙ্গের কাছে যাই
পাহাড়ের কাছে যাই
মুক্তির স্বাদ নিতে।

পাহাড়ে ঝর্নার কান্নার শব্দে
গুমোট ভাঙে ঘুমের।
জেগে দেখি পাহাড়ি নদীর
টলমল জলে রক্তের স্রোত…
আমি বুনো ফুলের কাছে
পাঠাই আমার শান্তির বার্তা
সে আমায় শুধালো ধরিত্রীর
মলীনও মুখের কথা।

আমি নির্বাক, বাকরুদ্ধ
পড়ে আছি শ্বাসরুদ্ধ হয়ে
ধরিত্রীর গোপনও বন্দিশালায়।

জল কেটে চাই না বিভেদ – অলোক মিত্র

আমি চাই না কারো
স্বপ্নের মৃত্যু হোক
কারণে কিংবা অকারণে।
দিন শেষে সব পাখি
চাই মুক্তি…!
প্রাণভরে নিশ্বাস,
নিশ্চিত একটা যাপিত জীবন।
কারো অনুগ্রহ কিংবা দয়ায়
বেঁচে থাকার জন্য
কারো জন্ম হয়নি কোন ভূখণ্ডে।
চাই পাহাড় সমতলে শান্তির দেবদূত
নেমে আসুক হেঁটে হেঁটে।
চাই না জল কেটে জলের বিভেদ।
দিনশেষে সব পাখি ঘরে ফিরে,
প্রশান্তির দেবতা ছায়া ফেলে
শান্তির গৃহকোণে।
চাই না হত্যা হোক
কিংবা প্রাণ ঝড়ে পড়ুক,
আবার আরেকটা….
স্বজন যে হারায় সে জানে
কী তার ব্যথা?
আমি চাই না উপার্জনক্ষম
ব্যক্তিকে হারাক তার পরিবার
কিংবা মা তার ছেলেকে কিংবা মেয়েকে।
চাই না আমি আরেকটা বুলেট
কেড়ে নিক তাজা কোন প্রাণ।
যার একটা নিশ্চিত ভবিষ্যৎ ছিল
কিংবা দীর্ঘ একটা স্বপ্ন।
জল কেটে করতে চাই না
বিভেদ রক্তের হোলিতে।
সকল নিপীড়ন বন্ধ হোক,
হোক কমিশন সংখ্যালঘু
হোক না আদিবাসী।

শুধু অপেক্ষা, বাড়ে মায়া – অলোক মিত্র

মা বারবার ভুলে যাচ্ছেন যে, বাবা অসুস্থ ।
তার চিকিৎসা চলছে…

প্রথম দু’দিন সারা রাত বোন, কাজের সহকারী
যাকে পান ফোন দিয়ে একটু পর পর জিজ্ঞেস করছেন।

একবার বললেও ভুলে যান, একটু পর আবার ফোন
করে খোঁজ খবর নিচ্ছেন।

ওনার তো কথা বলার ইমুতে আর কেউ নেই।
আমিও বেশ ক’বছর হোল যেতে পারিনি ওনাকে দেখতে বাংলায়।
বাবার কাছেই থাকি বাবাকে নিয়েই আমার পরিবার, কলেজ থেকে ফিরে। অবকাশকালীন ছুটিও ভোগ করছি।
আজ জানলাম মার রুমের সামনে একটা লেখা।
এখন আর ফোন দিয়ে অযথা ডিস্টার্ব করে না কাউকে।
বোন গিয়েও ওনাকে এ লেখার সামনে দাঁড়ানো দেখলো।

বোনকে বললেন, তোমার বাবা কেমন আছেন? সুস্থ হয়ে কবে আসবেন? আর দেখা হবে?
বোন বলল, হ্যাঁ, বাবা নিশ্চয়ই সুস্থ হয়ে যাবেন। আবার আসবেন তোমার কাছে।
মা হাসলেন। কী যে মায়া!
আবার হেঁটে বেড়ালেন বাসায়।

ভুলে গেছেন হয়তো আবার।
আবার রুমের সামনে লেখা দেখলেন।
“বাবার চিকিৎসা চলছে…
সুস্থ হলে কথা বলবেন।”

বোনকে ,জিজ্ঞেস করলেন, তোমার বাবা আসবেন কবে?
আহারে!
সময় কত তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যায়…
বাড়ে আকাঙ্খা, বাড়ে মায়া…

শুধু অপেক্ষা!

আমার স্বর – অলোক মিত্র

যে আমার কন্ঠ
পড়ে থাক না;
আমার স্বর হয়ে।

ছায়ায় উড়ে যেন শঙ্খচিল
কথায় কথা হোক তার সনে
সে আমার অতি পরিচিত স্বজন,
কুজনে ভ্রমরের ডাক।

বিষাদগ্রস্থ মৌমাছিরা
হোক না দিকভ্রান্ত, হোক
একদিন ঘোর অমাবস্যায়
মেলে দিবে ডানা…
তার নিচে জন্মান্ধ আমি
মিটাবো জ্বালা কেবলই
মেলে দু’চোখের ডালা।

আহা! সব হয়ে যায় পর
যে আপন আমার ঘর,
কোজাগরী সন্ধ্যায়
নেমে আসুক পেঁচা
রাতভর হোক দলাদলি
না হয় সংঘাত।

প্রতিটি প্রত্যুষ হোক
বিনম্র, নত হোক শ্রদ্ধায়
শুধিতে চাই না ঋণ
বিহগের বেহালার ।

৭ই মার্চ – অলোক মিত্র

কবিতা খুলেছে দু’হাত
মেলেছে ডানা মুক্তির,
করেছে শপথ স্বাধীনতার
হোক মুক্তির সংগ্রাম।

জমিনে আঁকা বুকে রক্তের দাগ
দখিনা বাতাসে উড়ছে,
পতাকা লাল সবুজে
ছুঁইয়েছে মাথা শুভ্র আকাশ।

ভাগীরথী যোদ্ধার সাহস, হে স্বাধীনতা
প্রিয়ভাষিণীর বয়ে বেড়ানো লজ্জা
হাজারো বীরাঙ্গনার অশ্রু, হে স্বাধীনতা
ফয়জুরের রক্তে রঞ্জিত, হে স্বাধীনতা

কাকডাকা ভোরে ধান শালিকের
কলকাকলিতে ভেঙে যাওয়া,
একটা নিষ্পাপ শিশুর ঘুম।

শিশির সিক্ত ঘাসের বুকে
বইছে সুবাতাস মুক্তির…
পদ্মায় জোছনা রাতে
ছুটছে আনন্দে ইলিশের ঝাঁক।

মুক্তির স্বাদ যেন শত প্রাণের স্পন্দন
আর এই স্বাধীনতা শুধু একটা হুংকার
মেঘের গর্জন, সে বজ্রের ডাক…
‘এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার…”।

ভালোবাসা পুড়ে – অলোক মিত্র

হৃদয়ের তালুতে গেঁথে আছে যে চোখ
মেনে নিতে পারি না কেন?
তাঁর প্রস্থান।

পোড়া হাড়ে গন্ধ পাই বারুদের
করোটি আর পাঁজরে শেটে আছে
দু’একটা বুলেট।
ঝাঁঝরা করে লিখে দিল
প্রিয় স্বদেশ বাংলাদেশ তার নাম।

অন্তর পুড়ে ছাই হয়…
বুঝি ভালোবাসা হারিয়েছে
দেশপ্রেম তার নাম।

মায়া মমতার হাড় মাংস খুলি
অস্থিমজ্জায় এখনো দেখি
লুকিয়ে রাখে সে
বুকভরা স্বদেশ প্রেম।

মন পুড়ে, ভালোবাসা পুড়ে
তুমি উড়ে যাও বারুদের পারফিউম ঘ্রাণে
পারমাণবিক বিকট শব্দে।

সেদিনের সার্কিট হাউজের
প্রতিটি কক্ষ এখনো প্রকম্পিত
আত্মচিৎকারে স্বদেশের।

আমি কান পেতে এখনো শুনি
ক্রন্ধনরত বরষার গান….
একটা অচেনা পাহাড়ি পাখির কন্ঠে,
শুভ্রবসনে শূন্যতা ভেদ করে
জেগে থাকে শান্তির ডাক।

ভালোবাসা পুড়ে, মন পুড়ে
এখনো হৃদয়গহীনে…
কর্ণফুলী সেদিন ধুলোমাখা
দেহপাটে ধুয়েছিল রক্তের ছোপ ছোপ দাগ।

তুমি জেগে উঠলে কাঁপে সারা বাংলাদেশ
দশক আশিতে নূতন চেতনার গান।

আমি চেয়ে দেখি সেই নায়ক,
উঠে এসেছে….

ভালোবাসা পুড়ে, মন পুড়ে
গহীনে গহীনে
আমি মন্থন করে দেখি
হাজারো জনতার মনে
একটা নূতন জাগো চেতনা
বাংলাদেশ তার নাম।

এখন আর ভাবতে চাই না – অলোক মিত্র

বলতে হয় তাই কিছু বলছি
শুনতে হয় তাই কিছু শুনছি,
লিখতে হয় তাই কিছু লিখছি।

এগুলো এখন আর
সে ভাবে আমাকে টানছে না,
এগুলো এখন আর ভাল্লাগে না।

সবখানে কোন সরলতাকে খুঁজে পাই না,
যেমনটা পেয়েছি কৈশোর মাধুর্যে।
এখন আর তোকে ভাবতে ইচ্ছে করে না
শত ব্যস্ততারা এসে নানা তাল বাহানা করে,
এখন আর তোর স্পর্শ চায় না সময়।

এখন বলতে পারিস আমি দিব্যি আছি
এখন আর ভালো থাকার ইচ্ছে আসে না,
এখন আর কাউকে পরখ করে
দেখতে সেভাবে ইচ্ছে জাগে না।

এখন আমি ভাবতে শিখেছি
এখন আমি বুঝতে শিখেছি
এখন আমি, বলতে পারিস
ধৈর্যশীল হয়েছি, নানা বিশেষণে
নিজেকে জড়াতে চাই না।

এখন আমি কারো সাথে
সম্পর্কে জড়াতে চাই না,
এখন আমি বেশ আছি
ভালোই আছি, খুব ভালো নয়,
তারপরও বেশ আছি।
পরাজিত হতে হতে এখন আমি জয়ী..
দুঃখ কষ্ট ক্লেশ যাতনা আমাকে
তাড়িত করে না,
আমি অনুভব করতে শিখেছি,
জীবন মানে খানিকটা সুখ
দুঃখ আর বিষাদ।

এখন আমি বলতে পারিস
মেঘ দেখলে ভয় পাই না,
বৃষ্টি নামবে বলে, ঝড় উঠবে।
এখন আমি নিয়ম করে,
বৃষ্টিতে ভিজি, শুদ্ধ পরিতাপে
পরিশুদ্ধ হই আগুন দেহে,
ফাগুন টেনে আনন্দ বৈভবে
মাতাল সমীরণে শুধু ভাসি।

সন্ধ্যে নামলে ছায়া – অলোক মিত্র

ইদানীং অবাধ্য হতে শিখেছি
ইদানিং প্রচুর মিথ্যে কথা বলতে শিখেছি,
অথচ, এখনো তুমি আমায়
আবোল তাবোল বকো,
সরল লতার মতো বিশ্বাস করো।

এ পৃথিবীতে কাউকে না কাউকে
যেমনি বিশ্বাস করতে হয়,
তেমনি কারো না কারো ওপর
নির্ভরশীল হতে হয়।

নির্দিষ্ট একটা বয়সে এসে আমরা
সব কিছু ভুলে যেতে চাই,
উদাসীন হতে চাই, ক্ষমাশীল হতে চাই
উদার হতে চাই….

অথচ, এই আমি কিংবা আপনি
খামোখা একটা প্রিয় জিনিসের জন্য
জীবনটাকে একটা সময় বাজি ধরি,
আর এখন এসব ভাবতে গিয়ে,
দেখি বেলা শেষে সব ছেলেমানুষি
কিংবা অপ্রাপ্ত বয়সের পাগলামি
ছাড়া আর কিছুই না।

এখনো একটা ভীষণ মায়া
বুকের ভিতর চিনচিন করে,
উদাসী কোন মেঠো পথে
কলমিলতার ভরা যৌবনে প্রেম আসে।

সে হোক অগণতান্ত্রিক কিংবা এক তরফা
আসলে ওয়ন সাইড লাভ মানে মায়া
ভীষণ একটা মায়া, যাকে বাম পাঁজরে
আগলে রাখি সারাটি সকাল কিংবা দুপুর
এই অবেলায়, সে এখনো সন্ধ্যে নামলে ছায়া।

কাঁঠালিচাঁপার ঘ্রাণ – অলোক মিত্র

খুব কাছ থেকে নয়,
অবশ্য দূর থেকে দেখেছি তারে
আজও কাঁঠালিচাঁপার সুগন্ধি হয়ে
আছে মিশে একটা হৃদয়।

উপেক্ষার উদ্ভ্রান্ত উচ্চারণে
একদিন যাকে গিয়েছো এড়িয়ে
কিংবা পাশ কাটিয়ে কথার ধুম্রজালে।
অভিমানী চাতক ফিরে এসেছিল
সেদিন তৃষ্ণাহীন গৃহে।

আজ এই মহুয়া বাতাসের সুতীব্র ভ্রুকুটি,
ক্ষমাহীন জলের উচ্ছ্বাস
এই সব ডিঙিয়ে তুমি তাকে
খুঁজে পাবে না কোথাও।

যাপিত ক্লান্তির সব সূত্র এড়িয়ে
আনন্দ বৈভবে উড়ছে প্রজাপতি….
আর আমি ঘ্রাণের সবটুকু সুগন্ধি ,
নিয়ে যাচ্ছি প্রীতিলতা তোমার

নিয়তি যদি হয় নিয়ম,
তবে নিশ্চিত আমি তার কৃতদাস।

এবার হ তুই কবি – অলোক মিত্র

কবিতা লিখে হইনি জমিদার
হইনি কবি, পকেট কেটে
পালিয়ে যায় প্রকাশক,
বলে যায়, বেটা আমিই কবি
শালা তুই হ এবার দুখী।।

পদক নিয়ে অর্থ দিয়ে
চলছে কাড়াকাড়ি
আমি শালা নাম ভুলে যাই,
কেষ্ট বেটার ছেলে, রাম কানাই
পদক নিয়ে দেখছি মাতামাতি।।

বইমেলা আসলে প্রসব করে
শত সহস্র কবির ছবি
অনেকেরই নাম জানে না মধ্যবিত্ত,
দেশের পাঠক সমাজ, ভ্রু কুঁচকে
বলে এরাই নাকি কবি।।

রিলেশনে কনফিউশন – অলোক মিত্র

রিলেশন ফুরিয়ে যাওয়ার আগে,
অনুভূতির শব্দগুলো অসুস্থতা নিয়ে,
হারিয়ে যাক চিরতরে।
ভীষণ মায়া ধংসস্তুপে
পরিণত হোক অপরিচিত হয়ে,
চোখের জলপ্রপাতে স্মৃতিরা এসে
ভীড় করুক নিঃশেষ হয়ে।
এ জন্মে যেন আমাদের দেখা সাক্ষাৎ
না হোক অন্ততঃ একবারের জন্য হলেও।
তোমার প্রতি বিন্দুমাত্র মান অভিমান,
রাগ কিংবা ঘৃণা কোন অনুভূতি,
অভিযোগ না থাকুক।
আবার অচেনা হয়ে যাও,
পাশ থেকে হেঁটে যাওয়া
অপরিচিত কোন পথিকের মতো,
নগর যাপিত ব্যস্ত মহাসড়কের ভীড়ে।
তোমার সাথে অন্ততঃ আরেকটিবার
দেখা না হোক এই প্রার্থনা ঈশ্বরে,
পাথর হৃদয় তোমার কথা ভেবে
আরেকটিবার অসুস্থ না হোক।
বিচ্ছেদের অনলে পুড়ে,
ছাই হওয়ার চেয়ে আচমকা
কোন মহাবিস্ফোরণে রিলেশনের
সবটুকু রঙ ধূলিসাৎ হোক।
অন্ততঃ তোমাকে মুক্তির নামে ফানুস উড়িয়ে
তোমার প্রতি তেষ্টা সব জুড়িয়ে দিয়ে,
সবকিছু পুড়িয়ে দিয়ে চির-অশান্তিরা
এবার না হয় একটু ক্ষান্ত হোক।
তোমায় খানিকটা পথ পথচারী হয়ে
এগিয়ে দেয়ার শক্তি আবার জমুক
নিথর দেহের অস্থিপাথরে।
মনের মৃত্যুর শেষ ইচ্ছের মিছিলের
তালিকা ফাঁকা হোক অনুতাপে।
রিলেশনের শেষে অনুভূতিরাও
ভোতা হোক ব্যবহার্য ধারালো অস্ত্রের মতো।
হারানো রিলেশন আবার পুনরুদ্ধার না হোক
কোন চোখ ধাঁধানো আপোষে।
পাথর হৃদয়, কষ্টমন সব সবখানে
একটুখানি পরিবর্তন আসুক
বৃষ্টি হয়ে জোরেশোরে।
সমাপ্তিতে শুরু হোক নূতন করে
আবার পথচলা।

মেঘবতী চাঁদ – অলোক মিত্র

পা গুণে গুণে এগিয়ে যাচ্ছি ক্রমশঃ
নিমগ্ন শূন্যতার মৃত্যুর কোঠরে…

শীতদাহ রাত
দাহপোড়া উষ্ণতায়,
উষসীর ভেজা দুটি চোখ..

কামনার সমুদ্রে গন্ধহীন,
জ্যোৎস্নার তীব্র চাষাবাদ।

কুয়াশার শিশিরে
ফুটে আছে যে চুম্বন,
তার সুতীব্র ঘ্রাণে বুনোপ্রেম
খোলস পাল্টায় সরীসৃপের পায়ে।

এই শেষ গোধূলির
বাঁধভাঙা সন্ধ্যায়,
কেউ রাধা হলে
আমি তবে কৃষ্ণবিহগ।

আমাদের দিকে না হয়
এক ছটাক আলো,
বিছিয়ে দিও সারা রাত।
হে মেঘবতী চাঁদ,
হে পরমেশ্বর..!

বসন্ত – অলোক মিত্র

এই বসন্ত গতকালও এসেছিল
পলাশের শাঁখে শাঁখে,
শোভিত হয়েছিল তারপর
পাতাদের ভালোবাসার প্রণয়।

এই ভালোবাসা দিবস গেলবারও
এসেছিল চির বসন্তের ঝরাপাতার,
শিমুলের শাঁখে কোকিলের কুহুতানে…
মায়ায় ধরা পরেছি তাহার।

গতকাল তুমি বলেছিলে
তুমি আমি বুড়ো হয়ে যাচ্ছি,
বসন্ত সেদিনও হাত ধরেছিল
নাটকীয় সংলাপের শিরোনামে।

এখন সময় যে পারাপার
ভালোবাসা আসে নেমে
জোনাকির ধীর পায়,
গোলাপের সুতীব্র গন্ধে
প্রণয় সে গাঢ় হয়।

উড়াল দেয় তাহার লাগি – অলোক মিত্র

সরীসৃপের পায়ে সন্ধ্যে নামে
মন্দিরে এসে ঠাকুর মশাই বসেন,
শুভ্রবসনে নিজ আসনে।
এখন আর উদাত্ত কণ্ঠে গান
আসে না সেভাবে মায়ের,
গলায় ইদানীং অসুরের বসবাস….
সুর ওঠে না কিংবা আসে না।
বুকের ভিতর শুধু বৈশাখী ঝড় ওঠে
তিরতির করে ওঠে কেঁপে
মলিন দেহে, তালপাতার ঠোঁট…

তিনি বুঝতেছেন তার হাওই মিঠাই আত্মা,
সুরের মূর্ছনায় বিভোর হয়ে হেঁটে যাচ্ছে
এক পা এক পা করে অনন্তলোকে…
এক এক করে ধাপ ভাঙছে সিঁড়ির।
ষড়যন্ত্রে চাপ পড়ে, জিহ্বা শুকিয়ে
আরিষ্ঠতা নিচ্ছে, অক্সিজেন চাপ
কমে রক্তে কার্বনডাই-অক্সাইডের
চাপ হানা দিচ্ছে। তিনি আত্মহারা,
কায়া আছে তার, অন্তর নেই সেখানে।

তিনি ধপাস করে শুয়ে পড়েছেন
মায়ের পদতলে, আহা কী তার মাধুর্যরূপ?
আলতা পাড়ের সাদা শাড়ি
মা সাক্ষাৎ শ্যামাঙ্গিনী।
মা মা বলে চোখের জলে
নেমে এলো প্রশান্তি।
তৃপ্ত নয়নে আত্মা উড়াল
দেয় তাহার লাগি….

তার অপেক্ষায় উন্মুখ – অলোক মিত্র

চির-চেনা সেই মেঠো পথ, মাঠঘাট
দু’পাশে রাস্তার, সাজানো থরেথরে ধানক্ষেত
মাঝে তব জেগে আছে সরিষার ক্ষেত
আর সজনে ডগায় শোভিত
থোকা থোকা ফুলের নিষ্পাপ কুঁড়ি।

বসন্তের আগমনী পেলে
ডানা মেলে সাজাবে নিজেকে,
নূতনের সমারোহে।

জমির আইল ধরে হেঁটে চলি,
আম্রপল্লবের ফাঁকে উঁকিঝুঁকি দেয় মুকুল।
শুধু দক্ষিণা বাতাস যদি বয়ে যায়
সবুজের বীথিতলে হাসি ফোটে,
তারপর সুঘ্রাণে ডেকে নিবে
ভ্রমর, মৌমাছিদের দলে দলে।

পাতা ঝরে নূতনের আগমনে
বৃক্ষের শাঁখে শাঁখে নব যৌবনের
খেলা করে সুখ বনে বাঁদারে।

মন জুড়ে শুধু প্রতীক্ষা সবার
আমিও ওদের দলে সামিল হই।
এসো হে তব দুয়ারে,
এসো হে বসন্ত আজ বনে বনে,
আমার এ গৃহকোণে কিংবা মাঠে প্রান্তরে।

চিরহরিৎ ক্লোরোফিলে – অলোক মিত্র

সকাল থেকে জোছনা ঝরছে
মনের ভিতর গহীন বনে।
সবুজ বলেছে সে যত্রতত্র
ক্লোরোফিলে ডুব দিতে পারবে না।
প্রশ্ন তার একটাই,
মনের ভিতর আবার
জোছনা ঝরে নাকি?
চাঁদ কোথায়? পূবে না পশ্চিমে….
এলিয়েছে বিছানা, জলেতে
তার সংকরণ কী হয়েছে?
মনেতে আবার জল থাকে নাকি?
সমুদ্র কোথায়? কিবা তোমার
মরা গাঙ বলেশ্বরই বা কোথায়?
ইদানীং আমার মন ডুব দেয়
একগ্লাস চিরহরিৎ ক্লোরোফিলে,
তারপর জোছনা মাখে চাঁদনী পসরে।
রাধা আসে রাধা যায়,
রঙের সংকরায়নে আমি হই
রঙিন না হয় বর্ণিল হরিতকী
আমলকী বহেড়ায় ঔষধি বনে।

শাঁখাপলায় মোড়ানো – অলোক মিত্র

খড়কুটোয় প্যাঁচানো
নকশা যত সরছে,

বারবার মনে হচ্ছে-
শাঁখা পলায় মোড়ানো
তোর দুটো নূতন হাত।

অবিকল যেন
মা দুগ্গা আসছে…

পৃথিবীর তামাটে মেঘের পানে
তুলে দিবে নবান্ন…

সেজেছো অন্য সাজে
শাঁখা পলায় মোড়ানো
দুটো হাত তোর…

সাক্ষাৎ মা লক্ষ্মী…!
নাকি অন্নপূর্ণা।

সে এখন অনন্তধামে – অলোক মিত্র

কাল থেকে কেউ বলবে না —
চলে আয়,
চা খেয়ে আসি….

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসো-

স্টলে গেলাম
এত খোঁজাখুঁজি করলাম,
তবুও দেখতে পাইনি তাকে।

আর বোধয় দেখা হবে না
কথা হবে না,
আগামী বইমেলায়
দেখা হচ্ছে বহেরাতলায়।

আর বোধয় ফেরা হবে না
এক সাথে-
অপেক্ষা করা হবে না….

কবি, সে তো চলে গেছেন
অনন্তধামে…
এক একটা মেলা আসে
কবি চলে যায়।

হয়তো আর ইচ্ছে থাকলে
দেখা হবে না…

সে এখন অনন্তযাত্রায়….!

সময়ের বেণীবাঁধা হাতে – অলোক মিত্র

ইদানীং বেশ আছি, তোকে বলা হয়নি যে কথাটি
কারো জন্য জীবন কারো থেমে থাকে না।
যেমনি বসন্ত চলে গেলে,
নেমে আসে হুট করে বার্ধক্য৷
একাকীত্ব চলে গেলে,
নেমে আসে ঘোর সংসারী হওয়ার যাবতীয় চাপ।
এই চাপ নিতে নিতে একটা মানুষ কখন
যেন ফানুস হয়ে, উড়ে যায় আত্মা….
হাড় মাংস পড়ে থাকে জমিনে
পুড়ে ছাই হবে দগ্ধতায়
কিংবা মাটি হবে সারা দেহ খেয়ে।
ভালোবাসা নিছক একফোঁটা দুঃখ
কিংবা বিষাদ কিংবা সুখ ছাড়া আর কিছুই না,
যাকে বলি মায়া।
আসলে, কোন কথাই বলা হয়নি কিংবা শোনা।
এত ব্যস্ততার শুভ্র প্রহরে,
শুধু সময় কাটাই নানাবিধ ছলে।
কিংবা আমরা একেক জন হই
অসম্ভব অভিনেতা অভিনেত্রী।
আত্মস্থ করি ভূ-মণ্ডলের যাবতীয়
রসায়ন পাঠ কিংবা গতিবিদ্যায় হই গতিশীল।
জানি, সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে
আত্মার ক্ষয় নেই, দেহের ক্ষয় আছে
আমরা সবাই বড়ই অসহায়
সময়ের বেণীবাঁধা হাতে।

নলেন গুড়ের সন্দেশ, একটা ঈশ্বর – অলোক মিত্র

শুনেছি তোদের ঈশ্বর বাস করেন অনিয়মের ডেরায়
মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষে উইপোকার মতন থাকে ছড়িয়ে। একটা বস্তাবন্দী লাশ কেটে দেখতে ইচ্ছে করে
কোথায় তোর ঈশ্বর?
আমি তো দেখি ঈশ্বর থাকেন ঠাকুর পল্লীতে
কিংবা বেশ্যাপাড়ায় পুজো আরতির
সান্নিধ্য পেতে ভোগ আর বিলাসিতায়।
কখনো জিজ্ঞেস করেছিস ওকে?
তোর ঠাকুর বাড়ির সন্দেশ আসে কোথা থেকে?
সে জানে, দুর্নীতির ওই কালো টাকায়।
স্যুগারটা বেড়েছে ইদানীং ওর অনিয়মের নামতা পড়ে।
ঠাকুর জানে ওর ঈশ্বর থাকেন ভোগ-বিলাসিতায়
নলেন গুড়ের সন্দেশ খেয়ে।

ঠাকুরে লেগেছে চাঁদের হাওয়া – অলোক মিত্র

শয়তানের গোলে ঈশ্বরের আত্মাও কেঁপে ওঠে
আমি অনিয়ম দেখতে দেখতে অভ্যস্ত
হয়ে গেছি বেশ ইদানীং।
যেমনি অভ্যস্ত হয়েছি দুর্নীতির সাথে
বসবাস অযোগ্য নতজানু প্রশাসনে….
আমি ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনবো
আজ থেকে নাস্তিকে হবো সামিল।

ঝরা পাতাদের সংলাপ – অলোক মিত্র

কথা হচ্ছিল গতকাল
আর তো হবে না দেখা,
বহু পথ, লক্ষ সহস্রাধি ভুল পেরিয়ে
চিরবসন্তের ফেলা আসা অতীত
হাড়গোড় চাটে তৃপ্তির স্বাদ নিতে।

দেহ-মাংস থেকে ছড়িয়ে পড়েছে
অসংখ্য অণুজীব জীবনের,
বেঁচে থাকার লড়াইয়ে হবে সামিল।
একটা মৃতদেহ নিয়ে তাদের মধ্যে
টানটান উত্তেজনা কে কতটা
আমিষ শর্করা স্নেহে করবে কাড়াকাড়ি?
বসিয়েছে দাঁত, নূতন প্রাণের সঞ্চার…
হোক ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র তাতে কী?

কথা হচ্ছিল সেদিন…
চলে যাব মায়াকে ছেড়ে
দিতে নাহি চায়, তবু চলে যাব
কথা হচ্ছিল ফিস ফিস করে,
কথা হচ্ছিল, সংলাপগুলো
দ্রুত সুস্থতা নিয়ে বেঁচে থাকুক
কারো না কারো হৃদয়ে,
ভালোবাসা বেঁচে থাকুক।

অনন্তকাল ভূগর্ভস্থ যোনিপথ
ভেদ করে প্রত্যাদিষ্ট হোক একটা সকাল
আমি চোখ কচলে দীর্ঘ ঘুমে
বিরতি টেনে সোনাঝরা ধানের ক্ষেতের
আইল ধরে হেঁটে যাবো শ’ক্রোশ দূরে।
একটা লেজঝোলা পাখির নৈর্ঋতে
থাকবো উদম ময়ূরপঙ্খী মেলে।

ধুপের শেষ আরতির গন্ধ পাই – অলোক মিত্র

গতকাল, এই তো সেদিন
একটা নদীর সাথে কথা হোল আমার
এতো দীর্ঘক্ষণ। ওকে শুধালাম আমার
গোপন ব্যাধির নানাবিধ প্রণয়।
একটা সময় আমরা দু’জন
ভেসে ভেসে চলে এলাম বহুদূরে।
খানিকটা পথ গিয়ে মনে হোল
সে আমার বন্ধু হয়ে গেল।
আমি প্রণয়ে আর যাবো না
আমি সম্পর্কে আর জড়াবো না
আমার তো পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে,
আছে দীর্ঘদিন শোকতাপে থাকার
নানাবিধ মানসিক শারীরিক জটিলতা।

আমি ইদানীং স্ট্রেস নিতে খুব ভয় পাই,
আমার পেনিক ডিসর্ডার আছে।
সব কিছুতে এত ভয়,
আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে
সমাজের নানাবিধ ব্যাধি।
এই ধরুন উচ্চ রক্তচাপ অতিরিক্ত অম্বল
কিংবা রক্তে অতিরিক্ত স্যুগার
এই আর কী?
এসব কিছু আমি অর্জন করেছি,
আমি চাপ নিতে শিখে গেছি
আমি অনিয়ম করতে শিখে গেছি
আমি আমার নিজের সাথে
শৃঙ্খলা ভঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গেছি।

গতকাল নদী বলল, তুই নিঃশেষ হয়ে গেছিস।
এবার আয় চলে, গঙ্গার কাছে যাই
আমি ইদানীং শ্মশানের পোড়া কাঠে
মৃত হাড় মাংস মজ্জায় ধুপের শেষ আরতির
শেষ যজ্ঞের গন্ধ পাই।

রূপসী গাঙে একদিন – অলোক মিত্র

গতকাল বলেশ্বরীকে বললাম
আমায় ভালোবাসবি,
আমায় কথা দিবি।

দেখি নীরব নিথর বয়ে চলে
আমার কথা শুনছেই না,
আমি বললাম ও রূপসী
আমি ঝাঁপ দেব তোর মরাগাঙে।

চোখে দেখিস না ? ও মরদ
আমার রূপ যৌবন নেই
এখন আর সাজে,
শুকিয়ে কাঠ, চৌচির এ দেহ।

ভালোবাসতে দেহ লাগে বল তবে,
লাগে কী তোর ভরা যৌবন?
রূপে তোর আগুন না জ্বলুক
ফাগুন না আসুক চোখে।

আমি তোকেই ভালোবাসি
মরা গাঙ, ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ
পাড় ভাঙা এ বরষায়
এলোমেলো তোর যত্তসব সাজ।

বিরহের নামতা – অলোক মিত্র

অগ্নিতে ঘি দিয়েছি
জ্বলে উঠবে ঝলছে।
মনেতে মন দিয়েছি
পিরিত শিখাইবে কী বুঝলে?
কথায় কথা দিয়েছি
ভালবাসায় টান আসবে।
এখন দেখি সব ভুল
নদী বলে আমি জল।
বিরহী তোমার দুঃখ
কী করে ঘুঁজবে?

যে শহরে রবীন্দ্রনাথ নেই – অলোক মিত্র

একদা কবিতার শহরে বসেছে
স্বঘোষিত কবিদের হাট।
অহং ঈর্ষায় জ্বলে পুড়ে তারা,
চুনসুরকি পোড়ামাটির গৃহে
আমাকে করে প্রতিনিয়ত হেয়
একখণ্ড শশ্মানের পোড়াকাঠ।

আমি রবীন্দ্রনাথকে খুঁজি বাইশে শ্রাবণে
আরম্ভর প্রয়াণ আয়োজনে।
দেখি রবীন্দ্রনাথ বেচারা
সত্যেন্দ্রনাথকে আমাদের দায়িত্ব দিয়ে
নেমে পড়েছে কবিতার শহর ছাড়িয়ে
জীবনানন্দের শহরে হাঁটুসম
জলকাঁদা দু’চরণে মেখে।

দেখি কবি আছে শুধু বসে…
চেয়ারে চেয়ারে ছয়লাপ,
কবিতা নেই, কবির মহাপ্রয়াণে।

শহর জুড়ে বৃষ্টি – অলোক মিত্র

শহর জুড়ে বৃষ্টি নামুক
তুমুল শব্দে ভিজিয়ে দিক বেহুলা মন,
মন খেয়ালী নৌকোতে চড়ে
শুদ্ধরাগে ছুটছে মন।

গতকাল সন্ধ্যায় একঝাঁক তারা
এসে নেমে পড়ল আমার গায়,
ঠিক চন্দ্র তখন আটগাঁট বেঁধে
অলসতা ছেড়ে উঠল সবে।

জোছনা বিলাস ভাল্লাগে তাই
ছুটছি আমি আমার গাঁও,
রাতবিরাতে ঘুম কাটিয়ে
উঠছে সবে প্রাণের ওপর।

সোনাঝরা ক্ষেতে মুগ্ধ হেসে
প্রদীপ জ্বলে আমার গাঁও,
শহর জুড়ে বৃষ্টি আসুক
তুমুল শব্দে ভিজে হোক শীতল মন।

শুনেছি ওর একটা অতীত আছে – অলোক মিত্র

ভালোবাসার মানুষটার যদি একটা অতীত থাকে। কিংবা খুচরো কিছু স্বপ্ন থাকে বিষাদ মনের হায় হুতাশ জুড়ে। তার মানে এই নয়, সে মানুষটা নষ্ট। পথভ্রষ্ট।

অথচ, অনায়াসে তুমি তাকে বাজেয়াপ্ত করো তোমার মনের ভিতর থেকে৷ কথায় কথায় তাকে লগ্নভ্রষ্টা বলো আঙুল তুলে। এমন কী তাকে চরিত্রহীন বলতে পিছ পা হও না, শব্দবানের কষাঘাতে।

কী দারুণ! একটা সমাজ দাঁড়িয়ে আছে তার পুরুষতান্ত্রিক এক পা তুলে। সময় সময় খড়্গ
হাতে নামিয়ে রাখে, যত্রতত্র ভোগের অভিলাষের যত মন্ত্র।

আসলে যতই তুমি মুখে বলো, সমাজটাকে পাল্টে দিবে, এক নিমিষে। যদি বলি ওর অতীত আছে গ্রহণ কর, সমাজের শত ব্যাধির কারফিউ তুলে। তখন তুমি, পাশ কাটিয়ে চলে যাবে, ভ্রষ্টা বলে।

কথার কথা ধরে নিলাম, ওর একটা অতীত আছে। যদি হয় ও তোর বোন, পারবি ওকে আস্তকুঁড়ে ফেলে দিতে। যখন দেখবি, ওকে কেউ না কেউ বলছে লগ্নভ্রষ্টা কিংবা নষ্ট মেয়ে। দাঁত কামড়ে শুনতে পারবি এসব কথা মুখটি চেপে?

যদি ওর অতীত থাকে, কার কী তাতে যায় আসে? ভালোবাসায় যদি শ্রদ্ধা থাকে, কিসের এত প্রশ্ন ওকে নিয়ে? গ্রহণ কর, পুরুষতান্ত্রিক সমাজের অবহেলা আর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে।

অলোক মিত্র | Aloke Mitra

New Bengali Article 2023 | সংবাদ মাধ্যমের নিরপেক্ষতা

Godhuli | গোধূলি | রম্যরচনা | জয়ন্ত কুমার সরকার | Best 2023

New Bengali Story 2023 | তুতানের পৃথিবী | গল্পগুচ্ছ

Bengali Story 2023 | মন্টুর মা | গল্পগুচ্ছ ২০২৩

Shabdodweep Web Magazine | Pattern of Bengali Poetry | Aloke Mitra

Bengali poetry, also known as Bangla Kobita, has been a significant cultural expression for centuries. The pattern of Bengali poetry, which encompasses its rhythm, meter, and thematic structure, has evolved over time while maintaining its rich literary traditions. From classical to modern forms, the pattern of Bengali poetry plays a pivotal role in reflecting the unique identity of Bengali literature. In this article, we will explore the various patterns found in Bengali poetry, with a focus on how Bangla Kobita continues to inspire readers today. Additionally, we will highlight the contributions of writers like Aloke Mitra, whose poetry is regularly featured on Shabdodweep Web Magazine.

The Pattern of Bengali Poetry: An Overview

Bengali poetry follows distinct structural patterns, marked by both historical influences and cultural transformations. Historically, Bengali poets have utilized various metrical patterns to convey their emotions, stories, and philosophical ideas. The pattern of Bengali poetry can be categorized into traditional and modern forms, each offering a unique rhythm and poetic structure.

Traditional Patterns of Bengali Poetry

Bengali poetry is deeply rooted in the traditional metrical patterns, which often involve specific syllabic counts and rhythmic sequences. Some of the most recognized forms include:

Geetika: This form, characterized by its lyrical and melodic nature, is often used in devotional and romantic themes. The pattern of Bengali poetry in this genre often follows simple, rhythmic lines that evoke musicality.

Kabita: Classic Bengali poetry, often referred to as Bangla Kobita, is structured using fixed meter forms, such as the “Chhanda” pattern, where syllables are counted and arranged to create a specific rhythm.

Rabindra Sangeet: The songs and poems written by Rabindranath Tagore offer a fusion of rhythmic poetry and musicality. Tagore’s works set the foundation for modern Bengali poetry, influencing many writers to experiment with meter and structure.

Modern Patterns in Bengali Poetry

As Bengali literature evolved, poets began to experiment with free verse and unstructured forms. Modern Bengali poets moved away from the rigid patterns of classical poetry, giving rise to new expressions and formats.

Free Verse (Bishuddho Kobita): Modern Bengali poetry often breaks away from fixed metrical patterns, allowing poets to express themselves freely. Writers such as Sukanta Bhattacharya and Jibanananda Das were pioneers of this form, embracing irregular patterns and free-flowing verses.

Blank Verse: While not as popular as free verse, blank verse has also been used in Bengali poetry, providing a structured, yet flexible rhythm for narrative-driven pieces.

The pattern of Bengali poetry thus spans from traditional, rhythm-based forms to contemporary free verse, highlighting the adaptability and creativity of Bengali poets throughout history.

Bangla Quotes: Capturing the Essence of Bengali Poetry

One of the most remarkable features of Bengali poetry is its ability to condense profound ideas into concise Bangla quotes. These quotes, often inspired by the pattern of Bengali poetry, reflect the poet’s worldview and resonate with readers across generations. Bengali poets are known for their philosophical, reflective, and emotive expressions, which are captured in memorable lines.

Some of the most famous Bangla quotes come from iconic poets like Rabindranath Tagore, whose works are revered worldwide. These quotes not only highlight the beauty of the Bengali language but also reflect the socio-cultural backdrop in which these poets wrote. At Shabdodweep Web Magazine, we feature contemporary Bangla quotes from emerging writers who continue to uphold the literary tradition.

Aloke Mitra and His Contribution to Bengali Poetry

One of the distinguished contemporary poets featured regularly on Shabdodweep Web Magazine is Aloke Mitra. Known for his thought-provoking works, Aloke Mitra’s poetry resonates with both modern themes and traditional poetic patterns. His Bangla Kobita showcases his mastery over various patterns of Bengali poetry, blending the old and the new with ease.

Mitra’s work is deeply inspired by the cultural richness of Bengali literature, and he often uses familiar metrical patterns, while also experimenting with free verse. His Bangla Kobita published on Shabdodweep Web Magazine provides a perfect example of how the pattern of Bengali poetry evolves, and how new voices contribute to the continuing legacy of Bengali literature.

Bengali Literature: A Rich Heritage

Bengali literature, through its poetic patterns, serves as a vital mirror to the social and cultural fabric of Bengal. From its roots in Vedic poetry to the rise of the Bengali Renaissance, Bengali poetry has continuously adapted to reflect the changes in society. Writers and poets have used these patterns to express their emotions, critique social structures, and engage in dialogues about politics, culture, and philosophy.

The pattern of Bengali poetry serves not only as a vehicle for creative expression but also as a historical record. Whether it’s the poetic forms from ancient texts or the modern experimentation seen in today’s works, Bengali literature reflects the dynamic evolution of society. Shabdodweep Web Magazine continues to celebrate this tradition, publishing a wide array of Bangla Kobita that showcases the variety of poetic styles.

Why Read the Pattern of Bengali Poetry on Shabdodweep Web Magazine?

Shabdodweep Web Magazine is dedicated to bringing readers a rich assortment of Bengali literature, with an emphasis on the pattern of Bengali poetry. Whether you’re a lover of traditional Bangla Kobita or intrigued by the innovations in contemporary verse, our magazine offers a platform for both established and emerging poets. Aloke Mitra’s works, along with many other talented poets, are featured regularly, making Shabdodweep Web Magazine a great source for anyone interested in exploring the depth and diversity of Bengali poetry.

Our magazine publishes poetry that follows both traditional and modern patterns, ensuring that readers can enjoy a wide range of styles and themes. We also include insightful Bangla quotes that capture the essence of each poem, offering readers a deeper connection to the words and thoughts of the poet.

FAQ: Pattern of Bengali Poetry

What is the pattern of Bengali poetry?
The pattern of Bengali poetry refers to the rhythmic and metrical structure that governs how poems are composed. This includes fixed meter forms like Chhanda as well as free verse.

How has the pattern of Bengali poetry evolved?
Over time, the pattern of Bengali poetry has shifted from strict metrical forms in classical poetry to more flexible, free verse forms in modern works. This evolution mirrors the cultural and social changes in Bengal.

Where can I read Bangla Kobita and Bangla Quotes?
You can read a wide variety of Bangla Kobita and Bangla quotes on Shabdodweep Web Magazine, which features works from established and emerging Bengali poets like Aloke Mitra.

Why is the pattern of Bengali poetry important?
The pattern of Bengali poetry is essential because it provides structure and rhythm to the expression of ideas, emotions, and stories. It also reflects the cultural identity of Bengali literature.

How does Aloke Mitra contribute to the pattern of Bengali poetry?
Aloke Mitra’s poetry blends traditional metrical forms with modern free verse, offering readers a unique perspective on the evolving pattern of Bengali poetry. His works are featured regularly on Shabdodweep Web Magazine.

Conclusion

The pattern of Bengali poetry is a dynamic and evolving aspect of Bengali literature, reflecting both historical traditions and contemporary innovations. Whether you’re interested in Bangla Kobita or memorable Bangla quotes, Shabdodweep Web Magazine provides a wealth of content to explore. With contributions from talented poets like Aloke Mitra, our magazine continues to celebrate the rich heritage of Bengali poetry, offering a blend of classical and modern styles for every reader.

Visit Shabdodweep Web Magazine to dive deeper into the world of Bengali poetry and discover the magic of the pattern of Bengali poetry.


Sabuj Basinda | Follow our youtube channel – Sabuj Basinda Studio

Leave a Comment