Natun Bangla Galpo 2023 | এক জীবন পিপাসা ও এক বিন্দু জল | মনসুর আলি

Sharing Is Caring:
Natun Bangla Galpo 2023

এক জীবন পিপাসা ও এক বিন্দু জল – মনসুর আলি [Natun Bangla Galpo 2023]

নীরেনকাকা এ গাঁয়ের প্রবীণ মানুষ। বয়স হয়েছে মোটামুটি ভালোই। তা ৬৫ বছর তো হবেই। তালপুকুর গ্রামে লোকজন যে খুব বেশি তা নয়। ৫০-৫৫টা ঘর আছে গুনলে দেখা যাবে। গাঁয়ের উত্তর দিকে ফুটবল খেলার মাঠ। এখানে পাড়ার ছেলেরা বিকালে ফুটবল খেলে, আড্ডা দেয়, শীতকালে ঘুড়ি ওড়ায় আর ধানের মরসুমে লোকেরা ধান ঝাড়ে, গাদা করে খড় রাখে।

এখন গ্রীষ্মকাল। বৈশাখ মাস চলছে। লু-র মতো গরম বাতাস হু হু করে বয়ে যাচ্ছে। নীরেনকাকা সেই মাঠ দিয়ে হেঁটে ফিরছেন। তিনি গিয়েছিলেন পাশের গ্রামে তাঁর নাতনির বাড়ি। নাতনি বড় যত্ন করে দাদুকে। দু’দিন থেকে ঘরে ফিরছেন নীরেনকাকা। তিনি গাঁয়ে বলতে গেলে প্রায় সবার কাছে এই ‘নীরেনকাকা’ নামে পরিচিত। সবাই তো তাই বলেই ডাকে। এমন গরমের দিনে ছাতা নিয়ে না বেরনো খুব কষ্টের। নীরেনকাকা তা এই মুহূর্তে খুব ভালো টের পাচ্ছেন। তিনি মাঠের মাঝখান দিয়ে হেঁটে আসছেন। এমন সময় সামনে পড়ে গেল বিনুপিসি। বিনুপিসি জিতুর পিসি হন। মাঠে ছাতা মাথায় দিয়ে এই দুপুরে গোবর কুড়োতে এসেছেন। বয়েস তাঁর ৬০ বছর। এই বিনুপিসির কথা একটু বলা যাক।

সে অনেককাল আগের কথা। তা প্রায় আজ থেকে ৪০বছর আগের। তখন নীরেনকাকা ছিলেন বলিষ্ঠ জোয়ান। আর এই বিনুপিসি ছিলেন ২১বছরের অপরূপ সুন্দরী। তরুণ নীরেনকাকা এক বর্ষা বিকালে হবুদের পুকুরপাড়ে বসে ছিলেন। বসে ছিলেন বিনোদিনী মানে বিনু আসবে বলে। বিনু সেই ঘাটে প্রতিদিন বিকেলে কলসি কাঁখে জল নিতে আসে।

নীরেনকে বসে থাকতে দেখে বিনু জিজ্ঞেস করল, ‘ও নীরেনদা বসে আছ?’
নীরেন একমুখ হাসি টেনে বলল, ‘হ্যাঁ রে বসে আছি তুই আসবি বলে?’
বিনু লজ্জা পায়। বলে, ‘কী যে বলো! লোকে শুনলে ছি ছি করবে।‘
নীরেন একটু কাছে এসে দাঁড়ায়, ‘এই বিনু আমি তোকে আমার কথা বলেছি। আমি তোকে ভালোবাসি। আর এতে তোরও তো কোনও আপত্তি নেই। তোর হাসি-হাসি মুখ দেখে আমি বুঝে নিইচি। কী ঠিক বললুম নে?’
বিনু হতাশার সুরে বলে, ‘বাবা যে কালো ভাল্লুকটার সাথে আমার বিয়ে দেবে ঠিক করে রেখেছে। তোমায় ভালোবেসে আমি কি তোমায় পাব?’
জোয়ান নীরেন বলে, ‘তুই যদি বলিস, আমি তোরে নে পালাব। কেউ রুখতে পারবে না। যাবি তুই আমার সাথে? শহরে চলে যাব দু’জনে। খেটে খাব। কেউ আমাদের কিচ্ছুটি বলার সুযোগ পাবে না। নিজেদের মতো করে বাঁচব। যাবি তুই এই গরিব লোকের হাত ধরে?’
বিনু তড়িঘড়ি করে, ‘এখন আমায় যেতে দাও। জল নিয়ে চলে যাই। দেরি করলে মা বকা দেবে।‘ নীরেন পিছিয়ে এসে দাঁড়ায়। বিনু চলে যায়।

তার এক সপ্তাহ পরে বিনুর বিয়ে হয়ে যায় পাড়ার বাসিন্দা অমল দাসের ছেলে বিভাসের সাথে। বিভাস বাবার ব্যবসা দেখে। ওদের ফার্ণিচারের ব্যবসা। কাঠ কিনে আসবাব তৈরি করে বেচে। দোকান আছে বাজারে। অবস্থা ভালো। কিন্তু হলে কী হবে, বিভাসের স্বভাব-চরিত্র সুবিধের নয়। একমাস যেতে না যেতেই কাণ্ড বাধিয়ে বসল। এক বিধবা মহিলার সাথে লটরপটর। ব্যস। মায়াবতী নামে ওই মহিলা বিভাসকে জোর করতে থাকে তাকে বিয়ে করবার জন্যে। বিভাস মায়াবতীকে বিয়ে করে ঘরে আনল। বিনু হলো দুয়োরানি আর সে হলো সুয়ো। তো এই দুয়োরানির ওপর চলতে থাকে বিভাসের নানান রকম অত্যাচার আর অবিচার। এভাবে কাটল দশ বছর। তার পর বিনুর জায়গা হয়ে গেল তার বাপের বাড়িতে। ওরা মানে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা ওকে তাড়িয়ে দিয়েছে। এদিকে নীরেনের বিয়ে হয়ে গেছে। সে বিয়ে করেছে নবগ্রামের একটি ভালো মেয়েকে। নাম সবিতা। বিনু এরপর নীরেনের দিকে আর ফিরে চায়নি। তার মধ্যে এক ধরনের অপরাধবোধ কাজ করেছিল। একটা সময়ে সে নীরেনকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। তার ফল এখন তাকে ভোগ করতে হচ্ছে। নীরেনও তার সচ্চরিত্রের পরিচয় দিয়ে এসেছে। সেও বিনুর প্রতি আর তেমন আকর্ষণ প্রকাশ করেনি। দুটি নদী যেন দুটি দিকে বাঁক নিয়ে বয়ে যেতে শুরু করেছিল সেদিন হতে। সেই নীরেন আজ প্রৌঢ়। মাঠের মাঝখান দিয়ে চড়া রোদের মধ্যে দিয়ে একটা সাদা ধুতি আর একটা হালকা সবুজ পাঞ্জাবি পরে পায়ে একখানা চপ্পল পরে ক্লান্তভাবে হেঁটে আসছেন। তাঁর সাথে দেখা হয়ে গেল প্রৌঢ়া বিনুপিসির।

বিনুপিসি মুখ তুলে তাকিয়ে দেখলেন নীরেনদাদা। বললেন, ‘ও নীরেনদা এই ঝাঁ ঝাঁ রোদে কোথায় বেরিয়েছিলে?’
নীরেনকাকা বললেন, ‘এই একটু নাতনির বাড়ি গিইছিলুম গো বিনু। নবগ্রামে।‘
বিনুপিসি বললেন, ‘আজ গিয়েছিলে?’
নীরেনকাকা উদাস গলায় বললেন, ‘না না, দিন দুয়েক আগে। ছিলাম ওখানে। বিনু তুমি কেমন আছ এখন?’
বিনুপিসির চোখের কোণে জল এসে গেল। বললেন, ‘আর কী বলব? পোড়া কপাল আমার!‘
নীরেনকাকা আরও উদাস হয়ে যান, ‘সবই ভাগ্য। আর কী বলব বলো…!‘
বিনুপিসি কাপড়ের খুঁটে চোখের জল মুছলেন। বললেন, ‘তোমার সাথে বিয়ে হলি মনে হয় আমার এমন দশা হতো না। আজ এই তিরিশটা বছর পার করে দিলাম স্বামী-সংসার ছাড়া। একটা ছেলের শখ ছিল। তাও পাইনি। শয়তানটার সাথে দশ বছর ঘর করেছি, একটা বাচ্চাকাচ্চা নেয়নি। একটা ছেলে বা মেয়ে থাকলে আমার হয়ত বাঁচার একটা হিল্লে হতো। তাও হলো না। এখন শুধু দিন গুনি কবে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাব।‘
বিনুপিসি আবার চোখের জল মোছেন। নীরেনকাকার চোখেও জল। তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ। আর কী বলব। বয়েস পার হয়ে গেছে। আজ আমিও বৃদ্ধ আর তুমিও বৃদ্ধা। আজ চাইলেও আর আমরা ঘর বাঁধতে পারব না। আমার খবর শুনেছ কিছু? মানে আমার স্ত্রীর?’
বিনুপিসি বললেন, ‘তিনি চলে গেছেন। তা তো জানি সবাই।‘
নীরেনকাকা বললেন, ‘এই সাত বছর হলো সে মারা গেছে। ক্যানসার হয়েছিল। আজও আমি বেহায়ার মতো তোমার স্বপ্ন দেখি বিনু। মনে মনে ভাবি, আমি সেই জোয়ান নীরেন। তুমি আমার ঘরে আমার মনের মানুষ হয়ে ঘর করছ। আমি হাট করে এনেছি। তুই সেগুলো নিয়ে রান্নাঘরে রান্না করছ। আমার খাবার পাতে তুমি আরও একটু মাছের ঝোল ঢেলে দিচ্ছ। আমি সবিতার সাথে ঘর করলে কী হবে, তাকে মন থেকে মেনে নিতে পারিনি কোনও দিন। এই কথা আজ প্রথম তোমার সামনে স্বীকার করলাম। আর কাউকে কোনও কালে বলিনি। ওর আত্মা যদি আমার এই কথা শুনতে পায় হয়ত কষ্ট পাবে। কিন্তু যা সত্যি তাই বললাম।

Natun Bangla Galpo 2023

বিনুপিসির চোখ দিয়ে ঝরঝর করে জল ঝরছে। আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। নীরেনকাকা সামনে দাঁড়িয়ে। তাঁর চোখও ভিজে উঠেছে। মাথার ওপর সূর্যটা খুব রেগে গেছে। বিনুপিসির ওপর। সে উত্তপ্ত থেকে উত্তপ্ততর হয়ে উঠছে যেন ক্রমশ। বিনুপিসির ওপর যেন রাগ দেখাচ্ছে। তাকে যেন বলতে চাইছে, সময় থাকতে কেন অবহেলা করেছিলি নীরেনকে? সে তো ডেকেছিল। তার ডাকে কেন সাড়া দিলি না? এখন তোর জীবনে শুধুই কষ্ট থাকবে। যে ক’টা দিন বাঁচবি কেবল কষ্ট নিয়ে বাঁচবি। এটাই নিয়তি তোর। তোর চোখের জল দেখার কেউ থাকবে না। আমি সে জল শুষে নেব। কেউ দেখতে পাবে না সে অশ্রু। নীরেনকে কাঁদতে দেখে বিনুপিসি নিজে চোখ মুছে বললেন, ‘এই যে নীরেনদা কাঁদো কেন? যা হয়ে গেছে তাকে মেনে নেওয়া ছাড়া আর কী উপায়? ওসব ভুলে যাও। এই জীবনে আমাদের মিলন হলো না। তুমি দেখো পরের জীবনে আমি ঠিক তোমার ঘরের লোক হয়েই আসব। তুমি কেঁদো না।‘ এই বলে নিজের কাপড়ের আঁচল দিয়ে বৃদ্ধা বিনোদিনী বৃদ্ধ নীরেনের চোখ মুছিয়ে দিলেন। আর হাতের ছাতাখানা নীরেনকাকার হাতে দিয়ে বললেন, ‘খুব রোদ। এই ছাতাটা নাও। মাথায় দিয়ে ঘরে যাও। পরে ফেরত দেবে এখন।‘

নীরেনকাকা ছাতা নিয়ে ফেরার পথে পা বাড়ালেন। ভাবলেন, ‘নাঃ। ভালোবাসা মরেনি। বুকভরা পিপাসায় অন্তত একফোঁটা জল শেষ অবধি মিলল। সেই স্মৃতি নিয়ে নাহয় বাকি জীবনটা তিনি পার করে দেবেন।

মনসুর আলি | Mansur Ali Gazi

New Bengali Story 2023 | করিমের একদিন | তালাল উদ্দিন

New Bengali Story 2023 | তুতানের পৃথিবী | গল্পগুচ্ছ

Godhuli | গোধূলি | রম্যরচনা | জয়ন্ত কুমার সরকার | Best 2023

New Bengali Article 2023 | সংবাদ মাধ্যমের নিরপেক্ষতা

Shabdoweep Founder | Shabdodweep Magazine | Shabdodweep Web Magazine | Shabdodweep Writer | Shabdodweep Poetry | Natun Bangla Galpo 2023 | Natun Bangla Galpo 2023 book | Natun Bangla Galpo 2023 pdf book | Writer – Natun Bangla Galpo 2023 | Top Writer – Natun Bangla Galpo 2023 | Top poet – Natun Bangla Galpo 2023 | Poet list – Natun Bangla Galpo 2023 | Top poetry – Natun Bangla Galpo 2023 | Best seller – Natun Bangla Galpo 2023 | Full pdf book – Natun Bangla Galpo 2023 | Free download pdf – Natun Bangla Galpo 2023 | Audio book – Natun Bangla Galpo 2023 | Video book – Bangla Kabita 2023 | Video poetry – Bangla Kabita 2023 | Audio poetry – Natun Bangla Galpo | New Poetry book | Shabdodweep poetry book | Shabdodweep International Web Magazine | International Bengali poetry | Bengali Poetry publisher | Shabdodweep Publisher | Shabdodweep Publisher 2023 | Shabdodweep Video Publisher | Shabdodweep Audio Book | Shabdodweep Video Book | Shabdodweep Mp3 poetry | Audio Poetry mp3 | Audio Poetry wmv | Video poetry mp4 | Natun Bangla Galpo 2023 video series | Natun Bangla Galpo 2023 – web series | Natun Bangla Galpo 2023 – Latest version | Natun Bangla Galpo 2023 pdf book | web video – Natun Bangla Galpo 2023 | web reader – Natun Bangla Galpo 2023 | pdf reader – Natun Bangla Galpo 2023 | pdf publisher – Natun Bangla Galpo 2023 | Best web series – Natun Bangla Galpo 2023 | new pdf book – Natun Bangla Galpo 2023 | New story book – Natun Bangla Galpo 2023

Leave a Comment