Machipaat | মাছিপাত | রানা জামান | Bangla Galpo 2023

Sharing Is Caring:
Machipaat

রানা জামান – সূচিপত্র [Bengali Story]

মাছিপাত – রানা জামান [Machipaat]

দলের জন্য কী না করেছে নাশিদ! বিরোধী দলের কোনো ছাত্রনেতাকে রাস্তায় নামতে দেয় নি। পার্টিফান্ডে কত যে চাঁদা আদায় করে দিয়েছে, অবশ্য নিজেও রেখে দিয়েছে বেশি অংশ! সেই টাকা দিয়েই কিশোরগঞ্জ শহরে একটা পাঁচতলা বাড়ি করে ফেলেছে। মা বাবা ভাই বোন সবাই ঐ বাড়ির দুটো ফ্লোর দখল করে আছে। ছাত্রাবস্থায় বাড়ি করে ফেলায় পরিবারের সবাই সন্তুষ্ট ওর প্রতি। ছেলে বড় নেতা হলে আরো অনেক কিছু করতে পারবে!

আজ খুব ভোরে ঘুম থেকে জেগেছে নাশিদ। আজকের দিনটা ওর জন্য বিশেষ দিন। এক ডাকে মা উঠে ঢুকে গেছেন রান্নাঘরে।

বাবা ফজরের নামাজ আদায় করে ছেলের পাশে বসে বললেন, টেনশন করিস না বাপ! আমার মন বলছে উপজেলার নেতারা তোকেই এবার ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি বানাবে। তুই তো কম করলি না পার্টর জন্য।

নাশিদ বললো, সবার কাছে গিয়েছি বাবা। তুমি তো দেখেছো গত রাতে দুইটায় বাসায় ফিরেছি। নেতাদের কেউ আমাকে অপছন্দ করে না; এবং বলেছে আমাকেই বানাবে ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি।

আমি কি কারো সাথে কথা বলবো নাশিদ?

নাশিদ বাবার দিকে তাকিয়ে বললো, তুমি কার সাথে কথা বলবে বাবা? তুমি কাউকে চেনো না। আমাদের জেলায় কোনো মন্ত্রী নাই। কোনো মন্ত্রী বললে কাজটা সহজ হয়ে যেতো আমার জন্য।

নাশিদের বাবা সিদ্দিকুর রহমান বললেন, আমাদের এলাকার এমপি বললে হয় না?

গতকাল আমি এমপির কাছেও গিয়েছি। আমার সাথে হেসে কথা বলেছেন এমপি সাহেব।

কী বললেন এমপি সাহেব?

এমপি বললেন ইউনিয়ন কমিটি নিয়ে উনি মাথা ঘামান না। এটা উপজেলার মূল দলের নেতাদের কাজ। তবে বললেন, আমার কথা নেতাদের বলে দেবেন।

তাহলে আর টেনশন করছিস কেন? নাস্তা খেয়ে আল্লাহর নাম নিয়ে চলে যা। আজ তোদের উৎসব। যদি কোনো কারণে তোকে ইউনিয়ন কমিটির সভাপিত না বানায়, তাহলে মন খারাপ করিস না। এবার না বানালে আগামীতে বানাবে, এই বিশ্বাস রেখে পার্টির জন্য কাজ করে যাবি।

তখন মা লুৎফা আহমেদ নাস্তা নিয়ে কক্ষে ঢুকে বললেন, এই ক বছরে যা বুঝলাম তাতে পার্ট না করলে কোনো উন্নতি নাই। টিকে থাকতেও পারবে না কেউ। তোর বাপ পার্টি করলে আজ এই অবস্থায় থাকতে হতো না। এতদিনে তোর বাপ এমপি-মন্ত্রী হয়া যেতে পারতো।

স্ত্রীর কথা শুনে সিদ্দিকুর রহমানের মনটা খারাপ হয়ে গেলো খুব।

লুৎফা আহমেদ স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললেন, মন খারাপ হয়ে গেলো আমার কথা শুনে। কিন্তু কথাটা তো সত্য। তুমি কোনো পার্টি না করায় কোনো ভালো চাকরি পেলে না। সময় মতো প্রমোশন পেলে না। সারা জীবন কেরানীগিরি করে রিটায়ামেণ্টের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছো!

নাশিদ বললো, বাবা পার্টি করলে আমাকে এখন এতো পরিশ্রম করতে হতো না!

সিদ্দিকুর রহমান মিনমিনে কণ্ঠে বললেন, তখন বুঝতে পারি নাই যে দেশের অবস্থা এমন হয়ে যাবে। পার্টি করাটাই বড় পেশা হয়ে যাবে! আমি যা করতে পারি নাই, তুই করে দেখা! শুরু তো করেছিস।

মা নাশিদকে নাস্তা খাইয়ে দিতে শুরু করলেন। নাশিদ নাস্তা খেতে খেতে ভবিষ্যতে বড় নেতা হয়ে কী কী করবে, তা বলতে লাগলো মা-বাবার সাথে।

নাস্তা খাওয়া শেষ হলে বাসা থেকে বের হবার সময় মা লুৎফা আহমেদ বললেন, টাকা-পয়সা নিয়েছিস পরিমাণ মতো?

নাশিদ বললো, ওসব নিয়া চিন্তা করো না মা! আমি চাইলেই টাকা পেয়ে যাই!

পার্টি করিস বলেই ক্ষমতা খাটাতে পারছিস।

ইয়েস মাই মাদার!

বলে নাশিদ বেরিয়ে গেলো বাসা হতে। ও মোটরবাইকে চলাফেরা করে। মোটরবাইক চালিয়ে চলে এলো সম্মেলন-স্থানে। পুরুরা হাইস্কুলে আজ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে এই ছাত্র সম্মেলনের জন্য। দ্বিবার্ষিক সম্মেলন। আজকে যে কমিটি গঠিত হবে, তা আগামী দুই বছরের জন্য বলবৎ থাকবে, তথা ক্ষমতা খাটাবে। জুনিয়র ছাত্র/ছাত্রীরা ওকে সালাম দিচ্ছে; সিনিয়রা হাই/হ্যালো বলছে। ছাত্র-ছাত্রীরা আসতে শুরু করেছে। উঠতি নেতা-নেতৃরা খালি চেয়ারের সামনেই ডায়াসের সামনে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিচ্ছে। পাশে রান্নার আয়োজন চলছে। কাচ্ছি বিরিয়ানির সাথে মুরগীর রোস্ট, খাসির রেজালা, ভেজেটেবল এবং শেষে বোরহানির ও সফ্ট ডৃংক। আজকের আয়োজনের সব খরচ নাশিদের।

দশটার মধ্যে প্যান্ডেল ভরে গেছে ছাত্র-ছাত্রীতে। এখন প্রতিষ্ঠিত স্থানীয় ছাত্রনেতা ও ছাত্রীনেতৃগণ বক্তৃতা দিচ্ছে। জেলা ও উপজেলার মূল দলের নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে চলেছে নিশাদ। ওঁরা বারোটায় এসে কমিটি ঘোষণা দেবেন। সময় যতো ঘনিয়ে আসছে, ততো নিশাদের বুকের ধুকপুকানি বাড়ছে। পৌণে বারোটায় উপজেলা থেকে এক নেতা ফোন করে জানালেন যে তারা রওয়ানা দিয়েছেন; জেলা থেকে কোনো নেতা আসছেন আজকে। এই সংবাদে নিশাদের বুকের ধুকপুকানি একটু কমলো। নিশাদ ওর সাঙ্গপাঙ্গদের সাথে নিয়ে সম্মেলন-স্থানের প্রবেশপথে দাঁড়িয়ে আছে নেতাদের বরণ করার জন্য। রাস্তায় গাড়ি বহর দেখা যাচ্ছে। পাঁচটা গাড়ি ভর্তি হয়ে নেতা-নেতৃ এসেছেন উপজেলা থেকে-মুল দল, শাখা দল ও ছাত্র সংগঠনের নেতা-নেতৃগণও এসেছেন। মোট কুড়ি জন এসেছেন। ফুলের তোড়া ও মুহূর্মুহু শ্লোগানে মুখরিত করে বরণ করা হলো। আগত নেতা-নেতৃরা সরাসরি মঞ্চে উঠে নির্ধারিত আসনে বসলেন। ভাষণ দানের প্রকৃতি পরিবর্তন হয়ে গেলো। আগত নেতা-নেতৃগণ বক্তৃতা দিতে আরম্ভ করলেন। শেষে ডায়াসের সামনে গেলেন আজকের সম্মেলনে কমিটি ঘোষণার দায়িত্বপ্রাপ্ত মূল দলের উপজেলা সভাপতি মোফাখ্খার আলম।

মোফাখ্খার আলম শুরু করলেন ভাষণ প্রদান, সংগ্রামী সাথীরা…

মোফাখ্খার আলম আধা ঘণ্টা ভাষণ প্রদান করলেন। শ্রোতার পিণপতন নীরবতা পালন করে ওঁর ভাষণ শুনলো। মাঝে মাঝে বক্তার পেছনে সারি ধরে দাঁড়িয়ে থাকা অনুসারীর শ্লোগান দিলে শ্রোতাগণও গলা মিলিয়ে শ্লোগান দিলো। শেষে দুই বছরের জন্য ছাত্র সংগঠনের ইউনিয়ন কমিটি ঘোষণা করে ভাষণ সমাপ্ত করলেন মোফাখ্খার আলম। কমিটির সভাপতির নাম শুনে নাশিদের মাথা ভোঁ ভোঁ করতে লাগলো। একটা নতুন নাম, যে নাম বা যাকে ইতোপূর্বে এলাকার কেউ দেখে নি।সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া থেকে পলিটিক্যাল ম্যানেজমেণ্টে অনার্স শেষে করে এসেছে; নাম আসাদ আস্ জুবায়ের। নিশাদকে পূর্বের পদে অর্থাৎ সাংগঠনিক সম্পাদক পদেই রাখা হয়েছে। মুহূর্মুহু শ্লোগানে নতুন কমিটিকে বরণ করছে ছাত্র-ছাত্রীরা।

মোফখ্খার আলম চেয়ারে বসলে নিশাদ আস্তে আস্তে ওঁর পেছনে দাঁড়িয়ে আস্তে করে বললো, এটা কী হলো লিডার? সভাপতি হিসেবে আমার নাম ঘোষণার কথা ছিলো। আপনারা সবাই আমাকে কথা দিয়েছিলেন। গত দুই বছর দলের জন্য আমি কী না করেছি।

মোফাখ্খার আলম বললেন, ঢাকা থেকে শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ এটা নিশাদ। আমাদের কারো কিছু করার ছিলো না। দুই বছর কাজ করো। আগামীতে সভাপতির পদ পেতেও পারো!

কমিটি ঘোষণার সাথে সাথে ওর উচ্চাশায় পড়ে গেলো ওয়াসার ড্রেনের ময়লা পানি! এদিক ওদিক করে কামাই করা টাকা ঢেলেছে বৃষ্টির মতো। সভাপতির পদ না পাওয়ায় মন অত্যাধিক খারাপ হওয়ায় অভিষেক তথা পরিচিতি অনুষ্ঠানে না থেকে চলে এসেছে নরসুন্দা হোটেলের এই কক্ষে। হোটেলটা উপজেলা সদরে। মন খারাপ হলে নাশিদ হোটেলের এই কক্ষে চলে আসে। বিছানায় বসে থাকে চুপচাপ। আজ মনটা অত্যাধিক খারাপ থাকায় টেবিলের উপর বসে আছে নাশিদ। কান্না আসছে না। কিন্তু ওর কাঁদতে ইচ্ছে করছে।

একটা মাছি এসে নাশিদের চোখের সামনে উড়তে শুরু করেছে। হাত নেড়ে সরাতে চেষ্টা করলো নাশিদ। মাছিটা এবার এসে বসলো ওর নাকে। চুপচাপ থাকলে সমস্যা ছিলো না; ছয় পায়ে সুড়সুড়ি দিচ্ছে ওর নাকে। এমনিতেই মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে ছিলো, নাকে সুড়সুড়ি লাগতে থাকায় ডান হাত দিয়ে জোরে মারলো নাকে। আঘাতটা নাকে লাগলো বেশ জোরেই! মাছিটা উড়ছে মাথার উপরে, আর ও ব্যথায় টেবিল থেকে নেমে লাফাচ্ছে মেঝেতে। মাছিটা ফিরে এসেছে। নাশিদের নাকের সামনে ভনভন করে উড়ছে। নাশিদ মাছির গতিবিধির সাথে দুই চোখের তারা নাচাচ্ছে এবং হাত দুটোও মুঠো পাকাচ্ছে। মাছিটা খেলছে ওর সাথে। বসছে না কোথাও। রাগ বাড়ছে ওর। শেষে ডান ডালের উঁচু স্থানটায় বসে নাচাতে লাগলো পাছা! পাখা বন্ধ না করায় শব্দ হচ্ছে ভনভন! পরপর দুই হাতের ঘুষি বসিয়ে দিলো মাছির গায়ে। ভনভন! ভনভন!! মাছি উড়ে গেলো উপরে, আর উচ্চস্বরে ‘মাগো!’ বলে ডান গালে হাত দিয়ে বসে পড়লো মেঝেতে নিশাদ। নিজের হাতের ঘুষি এতো ব্যথার, এর আগে বুঝতে পারে নি। সুপারির মতো ফুলে গেছে গালটা। রাগ বিস্ফোরিত হলো ওর। পেছনে কোমরে গুঁজে রাখা পিস্তল বের করে গুলি করে দিলো মাছিটাকে লক্ষ করে। মোক্ষম নিশানা! মাছিটা পড়ে গেলো মেঝেতে। এই সাফল্যে ওর ক্ষোভ কিছুটা প্রশমিত হলো। তখন দরজার কলবেল বাজলো।

নিশাদ বললো, কে?

বাহির থেকে ম্যানেজার বললো, গুলির শব্দ শুনলাম নাশিদ ভাই। কারে মারলেন?

মাছি!
কী কইলেন লিডার?

তুমি ঠিক শুনছো। এখন বিরক্ত কইরো না! যাও!

নিশাদ পিস্তল হাতে ফের টেবিলের উপর বসে মাছিটার দিকে তাকালো। মাছিটা একবার নড়ে দুই টুকরো হয়ে উড়ে গেলো উপরে। চোখের ভুল মনে করে নিশাদ দুই চোখ রগড়ে ফের তাকালো। দুটো মাছি উড়ছে ওর নাকের সামনে। ভনভন শব্দ আগের চেয়ে বেশি এখন। মনে হচ্ছে ভনভন শব্দ মগজে ঢুকে দংশন করছে! গুলি করা ছাড়া অন্য কোনো ভাবনা ওর মাথায় এলো না। পরপর দুটো গুলি করতে হয়েছে ওকে। মাছি দুটো মেঝেতে মরে পড়ে আছে।

কলবেলের শব্দের সাথে সাথে ম্যানেজার করিমের গলা শোনা গেলো, এবার দুইবার গুলির শব্দ শুনলাম লিডার!
নিশাদ বললো, মাছি দুইটা ছিলো।

ঠিকাছে লিডার! গুলি লাগলে বইলেন! আমি গেলাম।

নিশাদ পিস্তলের নলে ফুঁ দিয়ে ধোঁয়া সরিয়ে ম্যাগাজিন খুলে দেখলো: এখনো চারটে গুলি আছে। টেবিলে বসে পা নাচাচ্ছিলো নিশাদ। মাছি দুটোর দিকে তাকিয়ে পা নাচানো বন্ধ হয়ে গেলো ওর। দুটো মাছি হয়ে গেলো চারটে! হচ্ছে কী এসব? মাছিদের বংশ বিস্তার কি এভাবে হয় নাকি? বিজ্ঞান পড়লে বুঝতে পারতো কোন জন্তুর বংশ বিস্তার কিভাবে হয়! মাছি তো জন্তু না, পোকা! চারটা মাছি উঠে গেলো উপরে। নিশাদ তাকিয়ে আছে চারটে মাছির দিকে। দুই চোখে চারটে মাছিকে অনুসরণ করা কঠিন কাজ! চারটে মাছি উড়ে গেলো চারদিকে। কোনটাকে অনুসরণ করবে ও? একটু ভাববার জন্য চোখ বন্ধ করলো। বিস্ফোরণের মতো ভনভন শব্দে তাকিয়ে ভীষণ চমকে উল্টে পড়ে গেলো মেঝেতে। চারটি মাছি-ই ওর নাকের সামনে উড়ছিলো তখন!

মাথাটা ঠুকে গেলো নিশাদের মেঝেতে। রাগের বোমা ফাটতে থাকলো ওর মেজাজে, রক্তে! ঠা ঠা ঠা ঠা! চারটি গুলি ছুটে গেলো নিশাদের পিস্তল থেকে। ভর্তা হয়ে গেছে চারটি মাছি-ই গুলি খেয়ে। নিশাদ সন্তুষ্ট। চারটি মাছির ভর্তা মেঝেতে পড়ে আছে পাশাপাশি। পিস্তলের গুলি শেষ, ঝামেলাও শেষ! পিস্তলটা একবার দেখে ছুড়ে ফেলে দিলো বিছানার উপর। মাছির ভর্তাগুলোকে নড়তে দেখে ফের চমকালো নিশাদ। ভর্তার প্রতিটি কণা থেকে একটা করে মাছির জন্ম হচ্ছে! একটা! দুইটা! তিনটা!.. আর গুণতে পারছে না! চার ভর্তা থেকে এক ঝাঁক মাছি হয়ে ওর চারপাশে উড়তে লাগলো। ভনভন! ভনভন!! যেন কানে সুই বিঁধছে! দুই হাতে জোরে দুই কান চেপে ধরলো; কিন্তু ভনভন শব্দের তীক্ষ্ণতা কমছেই না! মাছিগুলোকে মারতে হবে! পিস্তলে গুলি নেই, একটা গ্রেনেড হলে একবারে মেরে ফেলা যেতো! পকেট হাতড়ে মোবাইল ফোনটা না পেয়ে ইন্টারকমে ম্যানেজার করিমকে বললো, একটা গ্রেনেড লাগবে! এখনই পাঠিয়ে দিন করিম ভাই!

এবার ম্যানেজার কোনো উত্তর করলো না। ইণ্টারকমের রিসিভারটা ক্রাডলে রেখে ফের কান চেপে ধরলো নিশাদ। গ্রেনেড আসা পর্যন্ত বসে থাকা যাবে না- মাছি মারতে হবে। খাট থেকে মশারির একটা স্ট্যান্ডটা খুলে আঘাত করতে লাগলো মশার ঝাঁকে। কোনো আঘাত-ই ব্যর্থ হচ্ছে না! প্রত্যেকটা আঘাতে মাছি মরে মেঝেতে পড়ার সাথে সাথে দ্বিগুণ মাছি জন্ম নিচ্ছে। নিশাদ মাছি মেরে যাচ্ছে, এবং দ্বিগুণ হারে মাছি জন্ম নিচ্ছে। এক সময় দেখা গেলো নিশাদ হাঁটু পর্যন্ত ডুবে গেলো মৃত মাছির স্তূপে; কিন্তু মৃত মাছির স্তূপ থেকে জন্ম নিতে থাকলো মাছি এবং নিশাদ ডুবতে থাকলো মাছির সমুদ্রে!

ওদিকে ম্যানেজার করিম থানায় ফোন করে সব জানালে দলবল নিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর নিজাম চলে এলেন হোটেলে। নিশাদের কক্ষের সামনে এসে কলবেল টিপেও ভেতর থেকে দরজা না খোলায় ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলতে বললেন ম্যানেজারকে। ডুপ্লিকেট চাবির গোছা ম্যানেজারের সাথেই ছিলো। দরজা খুলে আঁতকে উঠে সবাই পিছিয়ে গেলো দুই কদম। কক্ষ ভর্তি মাছি! কোটি কোটি মাছি!

ইন্সপেক্টর নিজাম ম্যানেজার করিমকে জিজ্ঞেস করলেন, কী এটা? স্টুডেণ্ট লিডার নিশাদ কোথায়?

হোটেলের ম্যানেজার করিম কক্ষের ভেতরে তাকিয়ে বললো, এই কক্ষেই ছিলো স্যার!

তখন কক্ষের ভেতর থেকে নিশাদের কণ্ঠ শোনা গেলো, ম্যানেজার করিম ভাই, গ্রেনেড কোথায়? লক্ষ লক্ষ মাছি গ্রেনেড ছাড়া মারা যাবে না!

ম্যানেজার করিম ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দিকে তাকিয়ে বললেন, ঐ তো লিডার মানে নিশাদ ভায়ের গলা! তখন ইণ্টারকমে আমার কাছে গ্রেনেড চেয়েছিলো!

এই মাছির দঙ্গলের ভেতর থেকে কিভাবে ওকে উদ্ধার করবো?

ফায়ার সার্ভিসকে ডাকলে হয় না স্যার?

ইউ আর রাইট! এটা ওদের কাজ! আমি এখনই কল করছি!

নরসুন্দা থানার ওসি নিজাম ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সকে ফোনে জানালে দশ মিনিটের মধ্যে সাইরেন বাজিয়ে ফায়ার সার্ভিসের একাধিক গাড়ি চলে এলো হোটেলের সামনে। সাইরেনের শব্দ শুনে আশেপাশের উৎসুক জনতাও চলে এলো হোটেলের সামনে। কিন্তু কী হয়েছে এই হোটেলে কেউ কিছু বলতে পারছে না।

ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক রফিক ইউনিফর্ম ও হেলমেট পরিহিত অবস্থায় কয়েকজন ফায়ারম্যান সাথে নিয়ে কক্ষের সামনে এলেন। ওসির কাছ থেকে ঘটনা শুনে সবাইকে চুপ থাকতে বললেন।

তখন কক্ষের ভেতর থেকে নিশাদের কণ্ঠ শোনা গেলো ফের, করিম ভাই, গ্রেনেড কোথায়? আমি মশারির স্ট্যান্ড দিয়ে মাছি মেরে কূল পাচ্ছি না!

সহকারী পরিচালক রফিক বললেন, লোকটা ভেতরেই আছে! কিন্তু এতো মাছি আসলো কোত্থেকে?

ম্যানেজার করিম বললো, বলতে পারবো না স্যার! মনে হচ্ছে মাছিভূতের কাণ্ড!

আমি রুমের ভেতরে যাচ্ছি। মনে হচ্ছে লোকটা মাছির ঝাঁকের ওপারেই আছে।

সহকারী পরিচালক রফিক কক্ষের ভেতরে ঢুকতে যাবেন তখন মাছিগুলো একটা মানুষের আকৃতি নিয়ে হাত-পা নাড়াতে লাগলো।

সহকারী পরিচালক রফিক পিছিয়ে এসে বললেন, এর মানে কী? মাছিগুলো মানুষের রূপ নিলো কেন? এই অবস্থায় ভেতরে যাওয়া যাবে না!

ইন্সপেক্টর নিজাম বললেন, আপনাদের ফায়ার ব্লোয়ার আছে না এডি সাহেব?

আছে! ফায়ার ব্লোয়ার দিয়ে মাছি পুড়িয়ে ফেলুন!

সহকারী পরিচালক রফিক খুশি হয়ে বললেন, ঠিক বলেছেন আপনি ওসি ভাই! আমি এখনই ফায়ার ব্লোয়ার ইউজ করছি। সেলিম, গাড়ি থেকে ফায়ার ব্লোয়ারটা নিয়ে এসো!

সেলিম নামের ফায়ারম্যান ছুটে চলে গেলেন নিচে। একটু পরে নিয়ে এলেন একটা ফায়ার ব্লোয়ার। সহকারী পরিচালক রফিক চালিয়ে দিলেন ফায়ার ব্লোয়ার। মাছি পোড়া গন্ধ বের হচ্ছে কক্ষের ভেতর থেকে; মাছির সংখ্যা কমছে না কিছুতেই।

তখন ফের নিশাদের কণ্ঠ শোনা গেলো ভেতর থেকে, আগুনে মাছি মরছে না তো!

ইন্সপেক্টর নিজাম সহকারী পরিচালক রফিকের দিকে তাকিয়ে বললেন, এর মানে কী?

আমরা সবাই মাছি পোড়ার গন্ধ পাচ্ছি। এভাবেই মারতে হবে মাছিগুলাকে।

সহকারী পরিচালক রফিক ফায়ার ব্লোয়ারের গতি বাড়িয়ে দিলেন। তাতে মাছিগুলোর মানুষের আকৃতি আরো নিরেট হয়ে পিছিয়ে জানালার দিকে যেতে থাকলো। সহকারী পরিচালক রফিক ফায়ার ব্লোয়ার অন রেখে কক্ষের ভেতরে ঢুকলেন। মাছির দঙ্গল আগুনের আঁচ সইতে না পেরে জানলা দিয়ে চলে গেলো বাইরে।

তখন মাছিদের মধ্য থেকে নিশাদের কণ্ঠ শোনা যেতে লাগলো, মাছিরা আমাকে নিয়ে যাচ্ছে। আমাকে আটকাও তোমরা!

সবাই কক্ষে ঢুকলো। কিন্তু কক্ষ একদম ফাঁকা! নিশাদ নেই কক্ষের ভেতরে!

রানা জামান | Rana Zaman

New Bengali Poetry 2023 | পূর্ণা গাঙ্গুলী | কবিতাগুচ্ছ

New Bengali Novel 2023 | অকপটে অগ্রজকে | অতনু দাশ গুপ্ত

New Travel Story 2023 | লাচুং-নাথালু’র সীমান্ত ছুঁয়ে | জয়ন্ত কুমার সরকার

New Bengali Poetry 2023 | গোবিন্দ মোদক | কবিতাগুচ্ছ

Machipaat | Machipaat 2023 | Machipaat – new bengali story | Short film – Machipaat | Machipaat – short film | Latest story – Machipaat | Trending video story – Machipaat | Video story – Machipaat | Audio story – Machipaat | Trending audio story – Machipaat | Natun bangla galpo – Machipaat | Machipaat – natun bangla story | Trending story – Machipaat | Top story – Machipaat | Best story – Machipaat | Rana Zaman – Machipaat | Shabdodweep story – Machipaat | Machipaat – Shabdodweep Bengali story | Machipaat – Shabdodweep Bangla Galpo | Machipaat in pdf | Machipaat pdf story | Machipaat in Bangladesh | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Shabdodweep Founder

Leave a Comment