Karbalar Juddho – নাসির ওয়াদেন – সূচিপত্র
কারবালার যুদ্ধ – নাসির ওয়াদেন
পশ্চিম আকাশে সরু কাস্তের মতো চাঁদ উঠেছে। এই দিন কয়েকের চাঁদই মহরমের চাঁদ।দখিন পাড়ার একদল শিশু কিশোর ঝাঁক বেঁধে মর্সিয়া গেয়ে ধান,চাল, টাকাকড়ি যা দিচ্ছে তাই নিয়ে কোচরে রাখছে। এইসব দ্রব্য সামগ্রী বিক্রি বাটা করে হরবছরের মতো ইবারও পবিত্র জালসা মোবারক করা হবে। সিন্নি হবে চিকেন বিরিয়ানি। জৌলুসে ভরে উঠবে একটা ঝলমলে দিন। একবুক আশা নিয়ে কচিকাঁচারদল সুরে বেসুরে, মর্সিয়া গেয়ে চলেছে এক গেরাম থেকে আরেক গেরামে।
উত্তরপাড়ার মসজিদের পাশেই দরগাহতলা। সেখানে মহরম মাসের ১০ তারিখে আশুরার দিনে গাঁয়ের মেয়েরা সেদুয়া পুকুরে স্নান করে ভিজে কাপড়ে মাটির ঘোড়া আর সিন্নি দিয়ে যায়। মাজারের খাদেম হেকমত শেখ সেজেগুজে বসে সিন্নি গ্রহণ করে। জমানো সিন্নির অর্ধেকটা লোকদের বিতরণ ক’রে বাকিটা গামছায় বেঁধে ঘরে নিয়ে যায়। ওই সন্ধ্যের সময় মেয়েরা প্রদীপ হাতে নিয়ে আসে। মাটির তৈরি প্রদীপে সর্ষের তেল দিয়ে ছেঁড়া ন্যাকড়ার পলতে বানিয়ে দরগাহতলার মাজারে দীপ জ্বালে। কারবালার ময়দানে হাসেন হোসেনের বংশধর এইদিনে শাহাদাত বরণ করে। তাঁদের স্মরণে ওই দিন মুসলিম সমাজে শোক পালন করা হয়। গাঁয়ের সমস্ত লোকজন খিচুড়ি রান্না করে খাওয়াদাওয়া করে। খিচুড়ির সাথে মাটন, চিকেন যে যার সামর্থ্য মতো আহারের ব্যবস্থা করে থাকে।
— কি কোরছো হে, আফিয়ার মা,ধরো,ধরো, সিন্নির গামছাখ্যান ধরো। বলে, তাড়া দেয় হেকমত।
— আ মলো! মিনসে এসেই ক্যামুন চিল্লাচিল্লি শুরু করি দ্যায়ছে। বুলি কি, ওরকুম খেপা ষাঁড়ের মুতুন এ্যাতো হুকড়াছো ক্যানে? তুমার কি রৌ উঠ্যাছে?
— হ, হ উঠ্যাছে তো। দ্যাখো, দ্যাখো অ্যাজ কত্ত সিন্নি পইড়্যাছে লিজের চোখে দ্যাখো। তাও তো অ্যাজক্যাল মানুষ গুল্যান ক্যামুন বেধম্মী হুঙ যেছে । এইটুকুন ছুটো এ্যাকখ্যান গেরাম। মাত্তর এ্যাই রূপুষপুর গাঁয়ে শো দুয়েক ঘর। লোকজুন বড়োজোর হাজার, বারোশো হোবে। এ্যার মধ্যি দু ফেরকা। ই-দল বোলে হামরা আসল, খাঁটি, ওরা জাহান্নামী। ওরা বোলে হামরাই আসল তরিকায় আছিনু, ওরাই দোজোখে পুড়্যা মোরবে।
রান্নাঘর থেকে আফিয়ার মা আসমানী বিবি কাপড়ের ট্যারে হাত মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসে, বলে, কি বুলছো গো? ইব্বার জান খুলি বুলো।
— বিবিজানের এ্যাতোখুনে সমুয় হোলো। দ্যাখো, দ্যাখো, অ্যাজ কত্ত সিন্নি প্যায়াছি। সভাইকে দিঙ্ থুঙ্ সবকটাকে গামছায় বেঁধি নিঙ্ এল্যাম। বলে হেকমত গামছাটা বাড়িয়ে দেয় আসমানী বিবির দিকে।
— সিন্নি না হাতি। শুধু চিনি, খুরমা, বাস্সা দিঙ্ খালাস। মাঝেমধ্যে অসোগোল্লা খেতি কার মুন লাগে না বুলো। অতে কি প্যাট ভোরবে। বরঙচো যদি টাকা দ্যায় তাও কাজে লাগে। বুঝল্যা? প্রশ্ন ছুঁড়ে মারে খাদিমের দিকে।
— হ্, হ্, সব বুঝ্যাছি, সব। সাঁঝের বেলায় গাঁয়ের ম্যায়াগুল্যান অ্যাসবে। ওরা কেহু কেহু টাকা পায়সাও দিবে, বুঝ্যাছো। বলে আশ্বাস দেয় হিকু।
— হু, বুঝ্যাছি, দ্যাও তাড়াতাড়ি ঘরে রেখি এ্যাসি। এদিকে চুল্যার দাগি পুড়ি কইল্যা হুয়ে য্যাবে।
তুমি ওই দিকেই তাকাঙ্ থাকো। কখুন সাকিনা নাচবে, তখুন মধু ঝরবে। মুখ ঝামটা দিয়ে আসমানী বিবি বলে।
আরো বলে, দ্যাও, দ্যাও। ও গুল্যান যতনু করি রেখি দিমু, রেতের দিকে টুক করি অতুনকাকুর দুকানে দিঙ্ অ্যাসব্যা। দেখব্যা, কেহু যেনু দেখতি না পায়। যা পাওয়া যায়, তাতেই কম কীসের। একটু একটু করি জমায় সাগোর তৈয়ার হয়, পাহাড় গড়ে, বুঝ্যাছো। এতো সিন্নি ঘরে থুলে পিঁপড়াতে খ্যাবে। কুনু কাজেটাজে লাগবে না।
হেকমতের হাত থেকে বাজপাখির মতো ছোঁ মেরে সিন্নির গামছাখানাকে টেনে নিয়ে ঘরে ঢুকে আসমানী। ঘরের ভেতর উইএ খাওয়া একখানা কাঠের আলমারির ভিতরে রেখে দেয়। আলমারির ভিতরে রেখে হাত বের করে উল্টো দিকে ঘুরতেই দেখে হেকমত লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে। একটা ক্ষুধার্ত বাঘ কতদিন আহার না পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে আছে। চোখের সামনের শিকার দেখতে পেয়ে সে কিছুতেই হাতছাড়া করতে চায় না। ওর ঘোরালো চোখের দিকে তাকিয়ে আসমানী বুঝতে পারে, ওর বুকে এক ভয়ংকর ঝড় বইছে, এখুনি না সামলাতে পারলে লণ্ডভণ্ড কিছু একটা ঘটে যাবে।
হেকমতের কুমতলব বুঝতে পেরে আসমানী নিজেকে সাবধানী করে তোলে। জোরে জোরেই হাঁক ছেড়ে বলে, সরো, সরো। এখুনো রান্নাবান্না করা হয়নি। আমাকে ছাড়ো। ততক্ষণে হেকমত রীতিমতো আসমানীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আলোআঁধারিতে একটা যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে, ঘরে ঝিম মেরে থাকা বাতাস চোখমুখ ঢেকে ঘরে থেকে বেরিয়ে পড়তে পারলে বাঁচে। লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে যায় ওর। আসমানী রীতিমতো শরীরের জোর খাটিয়ে তার লম্বা হাত দুটো ছাড়িয়ে দেয় গতর থেকে।
— ছি,ছি। সমুয়, অসমুয় বলি তুমার জ্ঞান ন্যাই দেখছি। যখুন তখুন বুললেই হলো, এর লেগি অন্যজুনারও ইচ্ছার দরকার, বুঝ্যাছো?
আসমানীর হিংস্র চোখের চাহনি দেখে হেকমত দুহাত পিছনে সরে দাঁড়ায়। মনে ক্ষুধার তাড়না যতই তীব্র হোক না, বাঘিনীর দিকে এগিয়ে যেতে তার সাহস হয়না। ঝিমিয়ে পড়ে, চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।
গর্জন করে আসমানী বলে, অ্যাজ না,শোকের দিন। আশুরাবার, মহরমের দিন। মুছলমানের দুঃখু শুকুর দিন। এদিন কারবালার মাঠে হোসেন ও তার পরিবারের লোকজন শহীদ হুয়ছিল। তুমার শক তো দেখছি উথল্যাই উঠছে। না-পাক শরিলে বুঝি দরগাহ শরীপে য্যাবা। চারিদিকে শোকের ছায়া। আর তুমার রস উথল্যাই উঠছে।
লজ্জা পেয়ে হেকমত নিজের ভুল বুঝতে পারে। সত্যিই তো, সে এতক্ষণ কী করতে যাচ্ছিল।দিন,অদিন বুলি কতা। ভাল মুন্দ বলি দিন আছে তো।
দুই
ফোরাত নদীর তীরে মোয়াবিয়ার পুত্র ইয়াজিদের সাথে হাসেন হোসাইনের অসম যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে এজিদ বাহিনী এক প্রকার হোসেনের দলকে খতম করে। মায়মুনা দাসীর সহায়তায় হাসেনকে বিষ খাইয়ে কৌশলে খুন করে এজিদ। এই লড়াই নিছক বংশগত লড়াই ছিল না, এ লড়াই ছিল খলিফা পদের লড়াই। হযরত আলীর মৃত্যুর পর উমাইয়া বংশের মুয়াবিয়া খলিফা হতে চেয়েছিল। কিন্তু জনগণ তাকে খলিফা হিসেবে মানতে রাজি না হওয়ায় মুয়াবিয়া তার পুত্র এজিদকে খলিফা করতে চায়। কুফাবাসী এজিদকে খলিফা মানতে রাজি নয়,কিন্তু এজিদ এক ঘৃণ্য রণকৌশলের নীতি প্রয়োগ করে হোসেনকে খুন করে এবং খলিফা হতে চায়। রাজসিংহাসনে বসার জন্যই এই লড়াই। সাম্য-অসাম্যের লড়াই। ধর্ম-অধর্মের লড়াই। ন্যায়-অন্যায় বোধের লড়াই। এজিদ এই বিশাল সাম্রাজ্যের অধিপতি হতে চায়, অন্যদিকে কুফাবাসী এজিদের অত্যাচারে অত্যাচারিত হয়ে তাঁরা হোসেনকে আমন্ত্রণ জানায়। সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে হোসেন সপরিবারে কুফা গমন করেন। পথিমধ্যে এজিদের বাহিনী চতুর্দিকে তাঁদের ঘিরে ফেলে।
এক বিশাল প্রান্তরে তাঁরা তাবু খাটিয়ে অপেক্ষা করে এবং হোসেন যখন জানতে পারে যে, এটা কারবালার প্রান্তর; তখন তাঁর নানাজির কথা মনে পড়ে এবং এখানেই যে তাঁর নিয়তির লিখনে শোচনীয় পরাজয় হবে, তা তিনি উপলব্ধি করেন। শত্রুপক্ষ তাঁদের ঘিরে ফেলার সাথে সাথে পানীয় জল বন্ধ করে দেয়, ফোরাত নদীতে সৈন্য মোতায়েন করে এবং তৃষ্ণার্ত পরিবারের সদস্যরা একে একে শত্রুপক্ষের তীরে আহত হয়ে শাহাদাত বরণ করেন। আলী আকবর, আলী আসগার, জয়নাল আবেদিন, সাকিনা বিবি, জয়নব বেগম সকলকেই খুন করা হয়।
আকাশে তেজস্বী সূর্যের আলো। চারদিকের গাছপালা, লতাপাতা রোদের তেজে সিজে যাচ্ছে। আরবের বুকে বইছে উষ্ণ লু-বাতাস, লু-এর কবলে পড়ে মানুষজন পিপাসার্ত ও ক্ষুধার্ত। ফোরাত নদীর দুই পাড়ে শত্রু পক্ষের সৈন্য মোতায়েন করে পাহারা দিচ্ছে। হোসেন তিনটি শর্ত দিলেও এজিদ বাহিনী তা মানতে নারাজ। এই সময়ে হোসেন তৃষ্ণার্ত পরিবারের সদস্যদের জন্য এক মশক পানি আনতে ফোরাত নদীর জলে নেমে পড়ে, এক আঁজলা পানি মুখে দিতে গিয়ে পুত্রদের করুণ মুখ দেখে হাত থেকে পানি ফেলে দেয়। পাড়ে এসে দাঁড়াতেই মল্ল যুদ্ধ শুরু হলে একে একে সকলেই পর্যুদস্ত হয়ে যায়। অবশেষে আসরের নামাজ আদায় করতে যেয়ে সিজদারত অবস্থায় সিমার আক্রমণ করে। সিমার আনন্দে আটখানা। তরোবারির এক কোপে দেহ থেকে শির পৃথক করে ফেলে। এবং হোসেন শাহাদাত বরণ করেন।
জানা যায় যে, হোসেনের শরীরে ৪৬টি আঘাত ও ৪৭ টি তীরের চিহ্ন ছিল। সিমার হোসেনের শির ধড় থেকে আলাদা করে তসতরিতে ঢেকে বাদশাহ ওয়াবাইদুল্লা দরবারে প্রেরণ করে। সেই খণ্ডিত মস্তক দেখে সকলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং সঙ্গে সঙ্গে কুফায় দাফন করা হয়। এই মর্মান্তিক ঐতিহাসিক ঘটনা, সকরুণ কাহিনী মুছলমান সমাজ নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে আসছে। এক নিষ্ঠুর, নিদারুণ শোক কাহিনী,তার আত্মত্যাগ, জাতির প্রতি মহানুভবতাকে সম্মান জানিয়ে মুছলমান সমাজ আজকেও শোকবরণের মধ্যে আশুরার দিন অভুক্ত রেখে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
তিন
মর্সিয়া দলে একজন দলপতি থাকে। সে দলের মাস্টার হিসেবে পরিগণিত হয়ে দল পরিচালনা করে। তার নির্দেশ অন্য সদস্যরা যথাযথভাবে শোনে ও সকল নিয়মকানুন মান্য করে চলে। সেই দলের মাস্টার হলো মানসুর আলি। তারা দল বেঁধে চাঁদের পাঁচ তারিখ থেকে বাড়ি বাড়ি মর্সিয়া সুর করে গায়। সেই সুরে গেরাম, মাঠঘাট শোকে বিহ্বল ও মুহ্যমান হয়ে ওঠে। উতর পাড়ার দরগাহ শরীপে গিয়ে তেকোণা পতাকা তুলে মর্সিয়া গেয়ে সেলাম ঠুকে বের হয়। সারি বেঁধে দুই দল পরস্পরের দিকে মুখ করে মর্সিয়া গান শুরু করে।
হাতে একখানা খাতা নিয়ে মানসুর সুর তোলে,
আহা রে মহরমের চাঁদ,ক্যানে তুই উঠিলি
হোসেনের শিরখানা এজিদের কাছে পাটালি
এক আঁজলা পানির লেগি আলি আসগার মরিল
সাকিনা তুই বেধবা হলি, আবুল কাশেম শহীদ হইল
হায়রে ফোরাত নদী তুই একফোঁটা পানি না দিলি
আহা রে মহরমের চাঁদ ক্যানে তুই উঠিলি।
দুই দলের ছেলেরা দুই হাতে বুক চাপড়াতে চাপড়াতে ধ্বনি তোলে, দোহার কণ্ঠে, আহা রে মহরমের চাঁদ ক্যানে তুই উঠিলি, হায় হোসেন, হায় হাসেন, হায় হোসেন, হায় হাসেন।
আরবি সনের পহেলা মাস মহরমের মাস। মহরমের চাঁদ উঠলে গাঁয়ের এক শ্রেণীর মানুষ, আবালবৃদ্ধবনিতা শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। রাতের বেলা লম্ফ জ্বেলে দিদিমারা, তাঁদের কচিকাঁচা সন্তানদের কারবালা যুদ্ধের করুণ কাহিনী শুনিয়ে ঘুম পাড়ায়। শিশুসন্তানেরা অবাক হয়ে সেই কাহানী শুনে। পরিণতির কথা শুনে ভীষণ ভীত ও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ে, বর্গী সংসদ এলো ঘরের মতোই।মহরমের চাঁদ দেখা গেলে ছেলেদের দল কাঁচা বাঁশ কেটে লাঠি বানায়। ঝাণ্ডি তৈরি করে। চারদিন ধরে রিহার্সাল চলে, তারপর মাঠে নামা। পঞ্চম থেকে দশম দিন পর্যন্ত গাঁয়ে গাঁয়ে ঘুরে,বাড়ি বাড়ি থেকে সামগ্রী সংগ্রহ করে এবং সেই সংগৃহীত অর্থ দিয়ে বড় করে জালসা মেহফিল করা হয়ে থাকে। সেই জালসায় ভিন্ন জায়গা থেকে বড় আলেম আনা হয়।
মানসুর সেদিন তার দলবল নিয়ে পরিকল্পনা করছে এবারে বিক্রমগড়ের ফয়জাল মৌলানাকে আনা হবে।সেই পরিকল্পনা করে তারা। স্কুলের মাঠে ত্রিপল বিছিয়ে এমার্জেন্সি লাইট জেলে তাদের আলোচনা হয়। প্রথমে প্রস্তাব দেয় রমজান। রমজান বলে, আলী ভাই এবারও না হয় ফয়জাল মাওলানাকে আনা হোক। ওর নামডাকটা খুব বেশি। ওকে আনতে পারলে লোকে লোকারণ্য হয়ে যাবে। রমজানের প্রস্তাব শুনে মানসুর একে একে সকলের বক্তব্য শুনতে চায়। তখন সকলেই হাত তুলে সম্মতি জানায়। এক কোণে বসে ছিল দিলবাহার, সে একটু আলগা গুছের ছেলে। সব কাজেই উত্তর দেওয়া তার স্বভাব। সে বলে ওঠে, আচ্ছা! ইবার ফয়জাল সাহেবকে বাদ দিয়ে আরশিনগরের মাওলানা হায়দার আলীকে আনা যায় না? সঙ্গে সঙ্গে জয়নাল উত্তর দেয়। ওরে বাপরে! ওর ভিজিট কতো জানিস, মিনিমাম দশ হাজার ,অত টাকা পাবো কুথায়?
— তা ঠিক বুলেছ। তবে হায়দার আলীর চাহিদা বেশি। একে তো প্রতিবছর আনি, এবার না হয় নতুন মুখ আনা যাক। ওকে আনতে পারলে ভিড়ে ছয়লাপ হয়ে যাবে।
— আচ্ছা দেখা যাক না, গাঁয়ের মোড়লকে জানিয়ে রাখি। ওরা যদি কিছু ডোনেশনের ব্যবস্থা করে দ্যায়। উনি আসলে ভালই তো হয়। মুকিত মাস্টার আছে, রিয়াজুল মাস্টার তো পাঁচ হাজার দেবে বুল্যাছে।
ইবার সকলেই চিৎকার করে বলে উঠল, হায়দার আলীকেই আনা চাই।
চার
হাই ইস্কুলের মাঠ। মাঠের উত্তর দিকে ম্যারাপ বেঁধে পনেরো বাই বারো ফুটের মঞ্চ বানানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তুষারকে। ওর নিজস্ব প্যাণ্ডেল আছে, পয়সা কিছু কম নেবে। তুষার যত্ন করে জমকালো মঞ্চ বানিয়ে ফেলেছে। ইস্কুলে ঢুকার মুখে খুব সুন্দর পরিপাটি করে গেট তৈরি করা হয়েছে।মঞ্চে হরেক কিসিমের আলোর লাইট লাগানো হয়েছে। দুটো হ্যালোজেন বসানো হয়েছে মঞ্চের দুপাশে। আলোয় আলোকিত চারিদিক। মাটির উপর তিরপল আর ছেঁড়া চট বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। মাঝে বাঁশ বেঁধে মেয়েদের জন্য আলাদা বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এলাহী ব্যাপার। উপরে মাথায় তিরপলের আচ্ছাদন টাঙানো।
গাঁয়ের ছোটবুড়ো সকলেই আসতে শুরু করেছে। মাইকে কর্মকর্তার তরফ থেকে বারবার আহ্বান জানান হচ্ছে। মেয়েরা মঞ্চে উঠে কেউ কেউ গজল গাইছে। হেকমত মঞ্চের পাশে থেকেই সবকিছু তদারকি করছে। হঠাৎ রইসুদ্দি মাস্টারের মেয়ে, তাসমিনাকে দেখে হেকমত অবাক হয়। বলে, তুমি কার সাথে এস্যাছ মা মণি?
— হ্, দাদু, আমি আমার ভাই রজবের সাথে এস্যাছি।
— খুব ভালো বহিন। বেশ করাছো। তবে এদিকে ওদিকে যেও না ক্যামুন।
— ঠিক আছে। মাথা নেড়ে সম্মতি জানায় তাসমিনা।
— তুমার বাপ জানে?
— না, না। বাপ জানতে পারলে জিন্দা থুবে না।
পনেরো বছরের তাসমিনাকে নিয়ে রইসুদ্দি মাস্টারের খুব অহংকার। গাঁয়ের কোনো ছেলেমেয়ের সাথে মিশতে দেয় না। মুর্শিদাবাদের এক গার্ল মিশনে হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করে।মাসে ছ’মাসে ছুটিতে বাড়ি এলে ঘরবন্দী হয়ে থাকে। একবার তাসমিনাকে নিয়ে কি যে কাণ্ডকারখানা না ঘটেছিল। মঞ্চে সভাপতির আসন অলংকৃত করেছেন পীর মাওলানা গওসুল আজম নুর নবী সাহেব।তিনি ডুমুরজুড় হাই মাদ্রাসার হেড মুদারিস। একে একে মঞ্চে উপস্থিত হয়েছেন নামী-অনামী একাধিক ওলামায়ে একরাম। ওদিকে মাঠ ভরতি হয়ে গেছে,বসার ফাঁকফোকর নেই। লোকে গিজগিজ করছে মেহফিলে।
‘নারায়ে তকবির, নারায়ে ইসালাহ।’
মাইকে বারবার ঘোষিত হচ্ছে, ইব্যারে আসতেছেন পীরে পীর,কেবলা এ দস্তগীর আলহাজ্ব মাওলানা শেখ হায়দার আলী রিজভী সাহেব।
জিন্দাবাদ, জিন্দাবাদ।
‘জিন্দাবাদ’ ধ্বনিতে চারদিক মুখরিত। মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে মাওলানা। মুখভর্তি জাফরানি দাঁড়ি। ইয়া বড় জেব্বা,ঝুল পোশাক। দূর থেকে দেখলে মনে হচ্ছে আসমান থেকে হুর গেলেমান ধরায় নেমে এসেছে। মাইক হাতে নিয়ে বলেন, আস্ সাল্লামো আলাইকুম।
গোটা মজলিস থেকে উত্তর আসে, ওয়ালাইকুম ওয়াসাল্লাম।
শুরু হয়েছে ওয়াজ নসিহত। ইসলামী আহকাম আরকান নিয়ে বিশদ আলোচনা। দৈনন্দিন জীবনে কি কি কাজ করতে হবে,হারাম হালাল ইত্যাদি ইত্যাদি। একসময়ে মাওলানা সাহেব তুললেন, মুসলমানদের দুই মজহাবের প্রসঙ্গ। এই দুই দলের রেষারেষি, দ্বন্দ্ব চিরকালের। এরা ভাল, ওরা মন্দ, এসব কথা। কথা থেকে কুকথা বেরিয়ে আসে। আগুনে ঘি ঢেলে দিলে আগুন যেমন লকলক করে জ্বলে ওঠে, তেমনি মজলিসের একাংশ চিৎকার করে উঠল।
— আপনার ভাষুণ শুনতে এস্যাছি। ইসলামের কথা বলুন, দলটল, মজহাব টজহাব শুনতে এসিনি। ওসব বিভেদের কুতা বাদ দিয়া হাদিস কুরানের কতা বুলেন।
তিনি সমানে দুই দলের একে অপরের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক কথা বলতেই থাকেন। কথায় বলে, নিজের গুণ বিচারী, বিপক্ষের কু-আচারী। অকস্মাৎ মজলিসের মধ্য থেকে একখানা আধলা ইট এসে পড়ে মঞ্চে। মাইকের স্ট্যান্ড থাকায় ইট মাওলানা অবধি পৌঁছায়নি। তিনি চিৎকার করে উঠলেন, কে ওই নাস্তিক। ওই নাস্তিককে মজলিস থেকে বের করে দাও।
চারদিকে হৈ হট্টগোল শুরু হয়ে গেছে, রীতিমতো যুদ্ধ চলছে। এ যেন আর এক কারবালার যুদ্ধ। মাওলানা সাহেবকে একদল লোক ঘিরে ফেলেছে, চলছে কথা কাটাকাটি। ভিড় থেকে গালকাটা হিম্মত স্যাখ মঞ্চের উপর উঠে মাওলানার মাইক ডান হাতে ধরে চিৎকার করে, তুমাকে নাস্তিক পরমাণ কোরতে হোবে, না হলে তুমার একদিন কি হামার একদিন। ছেলেমেয়েরা যে যেদিকে পারছে দৌড়ে পালাচ্ছে, কে কার ঘাড়ে, মাথায় পা লাগিয়ে দৌড়াচ্ছে সে হিসেব নেই। চিৎকার, চেঁচামেচি ও কান্নার শব্দে ভরে গেছে মাঠ। এমন সময় এক জন ব্যক্তি চিৎকার করে উঠল,বলে তাসমিনাকে কুথা খুঁজি পাওয়া যেছে না।
নাসির ওয়াদেন | Nasir Waden
Mother’s Day History Information | মাতৃদিবসের উৎপত্তি, তাৎপর্য ও বাঙালি প্রতিক্রিয়া | 2023
The Jagannath God in Puri | পুরুষ-প্রকৃতি এবং জগন্নাথ
Sesh Parinati | শেষ পরিণতি | বিনায়ক ঘোষ | 2023
Women’s role in Christian society | খ্রীষ্টীয় সমাজে নারীর অবস্থান
battle of karbala sunni view | how many yazidis were killed in karbala | what is karbala in islam | who won the battle of karbala | where is karbala | karbala story | karbala massacre | 72 martyrs of karbala names | Karbalar Juddho History | Top Bangla Golpo Online Reading | Karbalar Juddho Story | Top Best Story Blogs | Best Story Blogs in pdf | Sabuj Basinda | High Challenger | Famous Bangla Golpo Online Reading | Shabdodweep Read Online Bengali Story | Shabdodweep Writer | Bangla Golpo Online Reading pdf | Famous Story – Read Online Bangla Galpo | Pdf Karbalar Juddho Reading | Karbalar Juddho Reading App | Full Karbalar Juddho | Bangla Golpo Online Reading Blogs | Best Story Blogs in Bengali | Karbalar Juddho in English | Karbalar Juddho Ebook | Full Bangla Galpo online | Read Online Bangla Galpo 2023 | New Bengali Web Story – Episode | Golpo Dot Com Series | Karbalar Juddho Video | Story – Read Online Bangla Galpo | Karbalar Juddho Audio | New Bengali Web Story Video | Read Online Bangla Galpo Netflix | Audio Story – Karbalar Juddho | Video Story – Karbalar Juddho | Shabdodweep Competition | Story Writing Competition | Bengali Writer | Bengali Writer 2023 | Trending Karbalar Juddho | Recent story Read Online Bangla Galpo | Top Karbalar Juddho | Popular Karbalar Juddho | Best Read Online Bengali Story | Read Online Bengali Story 2023 | Shabdodweep – Karbalar Juddho | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Read Online Bangla Galpo Download | Bangla Golpo Online Reading mp3 | Horror Adult Story | Read Online Bengali Story Collection | Read Online Bangla Galpo mp4 | Read Online Bangla Galpo Library | New Bengali Web Story Download | Full Live Bengali Story | Bengali Famous Story 2023 | Shabdodweep Bengali Famous Story | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Live Bengali Story – audio | Bengali Famous Story – video | Bengali Famous Story mp3 | Full Bengali Famous Story | Bengali Literature | Shabdodweep Magazine | Shabdodweep Web Magazine | Live Bengali Story Writer | Shabdodweep Writer | Story Collection – Read Online Bangla Galpo | Modern bangla golpo reading pdf free download | Modern bangla golpo reading pdf download | Modern bangla golpo reading pdf | Modern bangla golpo reading in english pdf | Modern bangla golpo reading in english | Modern bangla golpo reading book pdf | choto golpo bangla | Real Karbalar Juddho