Best Nostalgic Bangla Galpo 2023 | Jayanta Kumar Sarkar

Sharing Is Caring:

আসুক ফিরে পুরানো আড্ডা – জয়ন্ত কুমার সরকার [রম্যরচনা]

ঠাকুমার ঝুলি, গল্পদাদুর আসরের শ্রুতিমাধুর্য কিম্বা রূপকথার গল্পের স্বপ্নে বিভোর হওয়ার সেই আমেজ এখনকার ছেলেমেয়েরা অনুভব করতেই পারল না, আড্ডায় বলছিল প্রবীর। তখন গল্প শোনাতেন ঠাকুরমা-ঠাকুরদা কিম্বা মাসি-পিসি-মামা-কাকার মত অতি আপনজন। এখন কেউ কেউ এফ.এম চ্যানেলে সানডে সাসপেন্স শোনে, আমরাও শুনি। কথাগুলো চুপ করে শুনছিল চিন্ময়, চায়ের শেষ চুমুক শেষ করে বলল, ঠিক কথা, এখন ছোটবেলায় ঠাকুমার কোল ঘেঁষে বসে আদর-আবদার, আবেগে ভরা কণ্ঠস্বর আর খুঁজে পাওয়া যায় না ঠিকই, তবে দুধের স্বাদ ঘোলেও মেটাতে হয় মাঝে মাঝে। ঠাকুমার ঝুলি থেকে গল্প বের করার দুষ্টু নাতি-নাতনীরা আর ঠাকুমার পাশে বসে না, সময় নেই যে ওদের। একটু বড় হয়েছে যারা,তারা সানডে সাসপেন্স শোনে মোবাইল অ্যাপে। বেশ ভাল লাগে তারিণী খুড়োর গল্প, কিম্বা তারানাথ তান্ত্রিকের তন্ত্রবিদ্যা, যাদুবিদ্যা রহস্যে ঘেরা হাড় হিম করা ভৌতিক কাহিনী। আমি বললাম, গল্পের সঙ্গে মানানসই আবহসুর, কেমন ভয়ার্ত রোমাঞ্চকর অনুভূতি সৃষ্টি করে সেটা বল! ইতিমধ্যে সেকেণ্ড রাউণ্ড চা দিয়ে গেল বাবলু। আজকের আড্ডায় ঢপবাজ অতনু ভাগ্যিস নেই তাই, নইলে গল্পের গরুকে ঠিক গাছে চড়িয়ে ছাড়ত। চিন্ময়ের কথায় ভীষণ তোড়, এখন ওকে থামানো মুশকিল। বলে চলল চিন্ময়, রূপকথার গল্পে ভুত-প্রেত-দৈত্য-দানব, যক্ষ, পরী, রাজকন্যা, পক্ষীরাজ ঘোড়া এসব কাল্পনিক চরিত্রের সাথে‌ যাদুবিদ্যা, পঞ্চতন্ত্রের উপাদান, লোককাহিনী মিলেমিশে একাকার হয়ে শ্রুতিমধুর কাহিনীর জন্ম দেয়। সে ‘অনেক দিন আগের কথা’ শুনলেই স্মৃতি যেন নড়েচড়ে বসে! যাদুদণ্ড, রাজপুত্র, ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী, ঘুমিয়ে থাকা রাজকন্যে, সোনারকাঠি-রূপোরকাঠি, দুষ্টু রাক্ষস এসব নিয়ে তৈরি হয় রূপকথার গল্প। রূপকথা হল এক সনাতন ঐতিহ্যবাহী কল্পলোক, এসব কল্পলোকের কাহিনী মনে গেঁথে যায়, রক্তে-মজ্জায় মিশে রয়েছে আমাদের। ফ্যান্টাসীর জগতে মনের এই বিচরণ একটা সুখানুভূতির আবেশ সৃষ্টি করে, বড় হয়ে এসব গল্প-কাহিনী অবাস্তব মনে হলেও মন থেকে মুছে ফেলা যায় না, মনের গভীরে ছোটবেলার সেই বিস্ময়ে হতবাক হওয়ার নষ্টালজিক ছোঁয়ায় স্বপ্ন দেখি আমরা। আমাকে আড্ডায় বিশেষজ্ঞ’র ভূমিকায় থাকতে হয়, নাহলে আউট অফ কন্ট্রোল হয়ে একটা বিতিকিচ্ছিরি কাণ্ড ঘটবে। তাই বললাম,ঠিক,ঠিক! একদম হক কথা, রূপকথার গল্প কখনো বা ইতিহাসের চুপকথার সঙ্গে মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়, সেই সব কাহিনীও গল্পের মোড়কে আবেশিত করে আমাদের মনোজগত। অভিজিৎ এতক্ষণ চুপ করে শুনছিল। ও আবার সাংবাদিক, অনেক নুতন নুতন খবর শুনিয়ে তাক লাগিয়ে দেয় মাঝে মাঝেই। এখানে গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা বলা হয়নি। পাড়ার মধ্যেই থাকছি, কালচারাল আকাদেমি সকলের ঢিল ছোঁয়া দূরত্বে। আমাদের আড্ডায় পাঁচজন আছি, কারও কাছে কিন্তু কোন মোবাইল নেই। এটা নিখাদ গল্পগুজবের আড্ডা। এই আসরে যোগ দিতে চাইলে মোবাইল বাড়িতে রেখে আসতে হয়, বাড়িতে জানানো আছে কোথায় থাকছি। খুব জরুরী দরকার না হলে যেন না ডাকা হয়। অভিজিৎ বলল আমার আজ মুড অফ সকাল থেকেই। কেন রে, কি এমন হল, বাড়িতে শ্রীময়ীর সঙ্গে হয়েছে কিছু? বলল চিন্ময়। অভিজিৎ বলল, না তা নয়, হয়েছে কি, একটা রং নাম্বার এ ফোন হয়ে গিয়েছিল সকালে। তো যত আমি বলি, দাদা, ভুল হয়েছে বললাম না, রং নম্বর বলছি তো! ক্ষমা করবেন বললাম, তবুও এত কথা কেন বলছেন। রাখুন তো! হ্যাঁ, দাদা, ভুল নম্বরে ডায়াল হয়েছে, কে শোনে কার কথা, ভ্যান তাড়া করেই চলেছেন উনি।… কি বলছেন, আমি অসাবধান, হ্যাঁ, বলেছি তো, আমিই ভুল করেছি, সরি, ভেরি সরি,দাদা! আপনার ঘুম ভাঙানোর জন্য দুঃখিত। রাখুন তো মশাই! আর পারি না। বলে ফোনটা অফ করে দিলাম। এতগুলো বাঁকা কথা শুনে সকালের মেজাজটাই তেঁতো হয়ে গেল বুঝলি। ভুল কি হয় না কারও, বলতো তোরা! অপরিচিত নাম্বার, মিসড্ কল দেখে ঘুরে ফোন করার কি খুব দরকার ছিল ওনার! প্রয়োজন বুঝলে তিনিই তো আবার ফোন করবেন।

অসিত বলল, ঠিক তাই। ভেবে দ্যাখ, এখন মোবাইলে জগৎ উদ্ধার করছি আমরা, জীবনটা কেমন যান্ত্রিক হয়ে উঠছে। এক দশক আগেও টেলিফোন আর টেলিগ্রামই ছিল যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। আর ছিল চিঠি, পোষ্টকার্ড, ইনল্যাণ্ড লেটার। তখন ল্যাণ্ডলাইন ফোনে ক্রস-কানেকশন হত হামেশাই। আগে টেলিফোন অপারেটরকে ফোন করে চাহিদা মত নম্বর বলতে হত, অপারেটার যোগাযোগ করিয়ে দিলে তবেই কথা বলা যেত। পরে সরাসরি ডায়াল সিস্টেম শুরু হয়। চিন্ময় বলল, কখনো আবার ঠিক নম্বরে ডায়াল করলেও ক্রস-কানেকশন হয়ে বিভ্রাট ঘটত। কণ্ঠস্বর বুঝতে না পারলে ভেবে দ্যাখ কি কি হতে পারে! ফোন করলি হয়তো নিজের স্ত্রীকে, ক্রস-কানেকশন হয়ে অপর প্রান্তের মহিলা কণ্ঠটি যে অন্য কারও, বুঝতে পারলি না, নিজের স্ত্রী ভেবে কি বলতে কি বলে ফেলেছিস, বুঝ ঠ্যালা! সুরেশ বলল, এরকম ক্রস-কানেকশন নিয়ে মজাদার সিনেমা তৈরি হয়েছে বল তো, মনে কর একটু। আর ক্রস-কানেকশন হয়ে অপরিচিত তরুণ-তরুণীর তর্কযুদ্ধ বেঁধে যেত, আবার উল্টে প্রেম-পরিণয়ও ঘটত। আমি মনে করিয়ে দি, পুজোর ছুটির অলস দুপুরে আড্ডায় মাইকে শুনতাম না আমরা ,’রং নাম্বার’ ডায়াল হয়ে দুই বাঙালি-অবাঙালীর কথোপকথনের হাসির ফুলঝুরি ছুটত। সত্যি, রং নম্বরের মহিমা অপার! যাই হোক এটা নিয়ে মন খারাপ করিস না অভিজিৎ। সেদিনের মত আড্ডা শেষ হল। পরের আড্ডা পুজোর সময়। দেখা যাক সে আড্ডা কেমন জমে! আসছেন নাকি আমাদের পুজোর আড্ডায়, তবে শর্ত কিন্তু ঐ, নো মোবাইল!

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

এর পরের আড্ডাটা বসল পূজা মণ্ডপে সপ্তমীর সন্ধ্যায় এদিন অবশ্য মোবাইল য়ে ছুঁতমার্গ ছিল না। পূজার ক‘দিন মুক্তি। নিয়ম ভেঙ্গে মন যা চায়, খাওয়া-দাওয়া, বেড়ানো, পয়সা খরচেও দিলদার আদমী তখন আমরা। শুধু আমরা কেন আপনিও তো। করেন না একটু বেশী খরচ, ছেলেমেয়েদের মুখ চেয়ে নয়, একেবারে নিজের ভাল লাগার জন্য, পরিবারের খুশীর জন্য করেই থাকি আমরা, সকলেই। সেই অতনু আড্ডায় এল। পূজামণ্ডপে আমার পুরানো বন্ধুরা ষষ্টী, মুকুল, বাপী, জনার্দন তো ছিলই, তা ছাড়াও শেখর, প্রভাত সঞ্জয়, গৌরাঙ্গ, বাপী, বাবু, কৃষ্টি, সানু, কার্তিক এরাও ছিল। আজ অতনু শুরু করল। জানিয়ে রাখি গুলবাজ নামটা অতনুর ভাল লাগে, সেদিন রাগ করে বাড়ি চলে গেল। পরের তিনদিন আড্ডায় ছিল না পরে। অনেক খোসামোদ করে অতনুকে নিয়ে আসা হল। সেদিন তুই ছিলি না, ও পাড়ার ভোলাদার কাণ্ড শুনে তোরা হাসবি না কাঁদবি, বুঝে দেখ। পাগলা ভোলাকে সকাল থেকে খুঁজে হয়রান ও পাড়ার ছেলেরা। ভোলাকে শেষে পাওয়া গেল,রেল লাইনের ধারে, সঙ্গে দুটো টিফিন-ক্যারিয়ার। ছেলেরা বলর, এই ভোলাদা, রেল লাইনে কি করছ? ভোলাদার খেঁকিয়ে উত্তর, যা-ই করি, তাতে তোর বাবার কি রে ? না মানে তোমাকে নিয়ে তো চিন্তা হয় আমাদের। সকাল থেকে হাওয়া, তাই আর কি! ও: খুব চিন্তা না, আমার কি খবর রাখিস তোরা, পালা এখান থেকে, আমি মাথা দোব রেললাইনে, যা: পালা! ওঃ, তা মরতেই যদি এসেছ, সঙ্গে টিফিন ক্যারিয়ার কেন!ছেলেরা বলল। খেঁকিয়ে উঠে ভোলা, উঁ: খুব দরদ না! ট্রেন লেট করলে তোর বাবা খাওয়াবে ? পর পর কয়েক ঝলক হাসির রোল উঠল, সঙ্গে প্রথম রাউণ্ড চা নিয়ে হাসিমুখে হাজির বাবলু।

চিন্ময় এতক্ষন চুপ করে শুনছিল, উদাস ভঙ্গিতে শুরু করল, আজকের আড্ডায় জুনিয়ার গ্রুপের ছেলেরা আছে বেশি, তাই একটু একটু পাকামো করা সুযোগ পেয়ে গেল, বলছিল পুরানো দিনের গল্প, নিজের ভাল লাগার টুকরো টুকরো কথা আর স্মৃতির নুড়ি-পাথর। কিশোর বয়সের হারিয়ে যাওয়া সেই বেলাটায়, তখন রসের ফল্গুধারা বইত বাঙালি আড্ডার অন্দরমহলে, বলছিল চিন্ময়। এখন সেই নির্ভেজাল আড্ডা আর নেই, রসিক বাঙালির হাসিও উধাও। কিন্তু, তবুও, তবুও হাসি আসে, বুঝে শুনে। তাই নতুন কিছু হাসির চুটকি স্টক থেকে বের করার চেষ্টা করছিল চিন্ময়। বেশ উপভোগ্য চিন্ময়ের চটকদারি চুটকি কিম্বা রসালো গল্প। বলল, শুন তাহলে সেদিন কি হল, পাশের বাড়ির প্রতিবেশী শুধু রসিক নয়, রসরাজই বলা চলে বোসবাবুকে। বলছিল চিন্মায়, শুন তাহলে বোসবাবুর বাড়ির অন্দরমহলের তত্বতালাশের গল্প। না-না কোথাও যেতে হয় নি, সকালে চায়ের টেবিলে বসেই পাশের বাড়ির বোসগিন্নীর গলা পেলাম, তুমি ডালের বাটির বদলে জলের গ্লাসে রুটি ডোবাচ্ছো, স্বাদ পাবে কি করে! মোবাইল সরাও, সরাও বলছি ; বড় বড় লেকচার, না! ডালে নুন নেই, ঝাল নেই ; মাগো মাগো আমাকে বলে, ফেসবুকে এত কি আছে , বেশ করি, ফেসবুক করি; আঃ, থামো থামো, হয়েছে। বোসবাবুর গলায় কাকুতি! থামবো কি, বলি থামাচ্ছো কাকে, এই তো সেদিনও ভাতে ডাল না ঢেলে জল ঢাললে, বলি, খাবার সময় অন্তত মোবাইলটা সরাও। অ…….তা আমাকে শোনাচ্ছ তো, সেদিন যে তুমি চায়ে চিনির বদলে নুন দিলে, তার বেলা! ওপ্রান্ত চুপ, বোধহয় দম নিচ্ছেন শ্রীময়ী। চিন্ময় দম নিয়ে আবার শুরু করল, আরও আছে, শোন তাহলে, বোস বাবুর বিচ্চু ছেলে গাবলুর কান্ড শুনে হাসবি না কাঁদবি বুঝে উঠতে পারবি না। সেদিন বসার ঘরে গাবলু মোবাইলে ব্যস্ত। ওর দাদু বাইরে থেকে ঘরে ঢুকেই বললেন, এই তো বাবা গাবলু, আজ রাস্তায় তোর স্কুলের মাষ্টার আমাকে দেখে অমন ভিরমি খেয়ে পড়ে গেল, কেন বল তো? গাবলু, মুচকি হেসে বলল, অ….এই কথা, আগের দিন স্কুল কামাই করেছিলাম তো! তাই বলেছিলাম, দাদু টেঁসে গেছে। দাদু তো শুনে থ! প্রথমে বুঝে উঠতে সময় লাগল পরে উচ্চস্বরে হাসির কলরোল। আড্ডা বেশ জমে উঠেছে। চা এসে গেল দ্বিতীয় রাউণ্ড, সঙ্গে গরম পিঁয়াজী। আড্ডায় অলিখিত নিয়ম করাই আছে, যে শেষে আসবে সে ঐদিন চায়ের খরচ বহন করবে। তাই আজ খরচ সুব্রতর। সুব্রত এখন গুলবাজ নাম শুনলে রেগে যাচ্ছে বুঝতে পারছি আমরা। আজও মুখ ফসকে চিন্ময় বলে ফেলল, ঢপবাজ গুলবাজ শুনে খুব রেগে গেল। চোখ মুখ লাল, মুখখিস্তি শুরু করল। পর পর তিন দিন এল না আড্ডায়। খবর পেয়ে বাড়ি গিয়ে তোষামোদ করে নিয়ে আসতে হয়েছে। এখন সিরিয়াস মুখে আসে, বেশি কথা বলে না। কিছুতেই পুরানো সুব্রতকে ফিরে পাচ্ছিলাম না। আজ হঠাৎ দেখা গেল, আড্ডার শুরুতে সেই পুরানো ঢঙে কথা বলতে আরম্ভ করল সুব্রত, দত্তপাড়ার বাবলুদার ভাই কাবলুর কাল্ডকারখানা শোন তাহলে। বছর পঁয়তাল্লিশ-এর বিপত্নীক কাবলুদার দায়িত্ব সেরকম নেই, দাদার সংসারে থাকে ভাইপো-ভাইঝিদের ভালবাসে, ওদের নিয়েই সংসার কাবলুদা। রোজগার মোটামুটি, বড় এক আধুনিক ডিজিটাল ছাপাখানার ম্যানেজার কাবলুদা বিন্দাস থাকে। আগে খেয়ে পরে ভালভাবে বাঁচো, পরে ভবিষ্যতের সঞ্চয়, জীবন একটাই, সুতরাং নো চিন্তা ডু ফুর্তি… এই যার জীবনদর্শন, যে লোক সাধারণ অ্যানালগ মোবাইলও ছুঁয়ে দেখে নি কোনদিন, সেই কাবলুদা পাড়ার ছেলেদের পাল্লায় পড়ে শেষ পর্যন্ত স্মার্টফোন কিনে ফেলল। আর কেনার পর থেকে কাবলুদা পুরো বদলে গেল, গল্প-আড্ডা রিহার্সাল, চায়ের ঠেক রাতারাতি দখল করে ফেলল ঐ মুঠোফোন। এখন কাবলুদা ফোন অন্ত প্রাণ। উঠতে-বসতে-খেতে-নাইতে এমনকি বাথরুমেও ফোন নিয়ে যেতে হয় কাবলুকাকুকে। সেদিন হল কি শুনুন, মোবাইল সার্ফ করতে করতে বাড়ি ভুলে অন্য বাড়িতে মানে গাবলুদের ড্রয়িং রুমে ঢুকে পড়ল কাবলুদা। দরজা খোলাই ছিল, কানে হেডফোন কাবলুদা হ্যাঁ-না-হ্যাঁ-না বলতে বলতে একটা চেয়ারে বসেও পড়ল; গাবলু কিছু বলতে যাচ্ছিল, হাঁ হয়ে গেল, ভেতরের ঘর থেকে গাবলুর বুলটি পিসি মোবাইলে কথা বলতে বলতে এক পেয়ালা চা নিয়ে ঘরে ঢুকল আর কাবলুদার সামনের টি-টেবিলে পেয়ালাটা নামিয়ে দিয়ে ভেতরে চলে গেল, যেন আগে থেকে চায়ের অর্ডার দেওয়াই ছিল…. গাবলু আরও অবাক হল, ঘরের ভেতর থেকে হেডফোন কানে দাদু, ‘‘ভুল….ভুল….সব ভুল” বলতে বলতে বাইরে বেরিয়ে গেল; কি যে হচ্ছে, গাবলু কিছু বুঝে উঠতে পারছে না, সবাই এত মোবাইলে ব্যস্ত, তাকেই শুধু নিষেধ করে কেন! বাড়িতে মাস্টারমশাই গাবলুকে পড়াতে বসেছেন, ঢুলছে দেখে গাবলুর মাথায় এক গাট্টা দিলেন, ‘‘এত ঘুম কেন রে তোর?” মাথা চুলকে গাবলু বলল, ‘‘কি করবো স্যর……..শুধু পড়ার সময় নয় তো, ঘুমের আগে ঘুম পায়, ঘুমের পরেও ঘুম পায়, স্বপ্নেও ঘুম পায়; কি যে করি; রেগে ঘা কতক বসিয়ে উঠে চলে গেলেন মাস্টারমশাই। গাবলু পড়তে বসেছে দেখে, মা রান্নাঘর থেকে বললেন, ‘‘কিরে গাবলু, তোর মোবাইলের চার্জ শেষ না কি, পড়তে বসেছিস যে বড়?” উ: কি জ্বালা, আমার সবেতেই দোষ! মনে হয় সব কিছু ছেড়ে বনবাসে চলে যাই, কিন্তু…..উঃ.. ওখানেও তো সমস্যা, মোবাইল চার্জ করব কিসে! যা বুঝছি, লেখাপড়া আর ফেসবুক দুটো একসাথে হবে না।

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

পরের দিন মহাষ্টমী, দুপুরে সন্ধিপূজা, সন্ধিক্ষণে ছাঁচি-কুমড়ো বলি আখ বলি, পূজার আচার অনুষ্ঠান সব শেষ হল। বেলা তিনটার পর আমরা সবাই ফ্রি হয়ে গেলাম। দুপুরে একটু বিশ্রাম সেরে আকাদেমি ভবনে এলাম, একে একে চিন্ময়, অতনু, প্রবীর, সুব্রত সবাই এল। আজ প্রবীর শুরু করল। প্রবীর পেশায় মাস্টারমশাই, কম বয়স, একটু হি-ম্যান টাইপের চেহারা, ড্যাসিপুশি স্বভাবের, কিন্তু কবিতাও লেখে, আবৃত্তিও করে, আবার রেগে গেলে খিস্তিও করে। স্বপ্ন দেখে সুব্রত অন্য অনেকের মতই। বলছিল সুব্রত, স্বপ্ন নিয়ে আমার প্রচুর অভিজ্ঞতা। এমনিতে ঘুম কম আমার, হালকা ঘুমে স্বপ্নপরীরা আসে, কিছুক্ষণ মাথামুণ্ডুহীন বিক্ষিপ্ত ঘটনার কোলাজ, দুম করে ভেঙে যায় ঘুম, আবার আকাশ-পাতাল ভাবতে ভাবতে ঘুম নেমে আসে, আবার শুরু স্বপ্ন দেখা… আবার ঘুম…আবার স্বপ্ন….এরকম চলতে থাকে, শেষে ভোরবেলায় ঘুমিয়ে কাদা। তবে এ স্বপ্ন ঘুমের মধ্যে হয় না, বলছিল সুব্রত। স্বপ্ন মানে আগামীদিনের পরিকল্পনা, আশা আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন মানে ভবিষ্যৎ কষ্টের দিন থেকে ভয়, বীভৎস মুখ, মাথামুণ্ডুহীন ঘটনা থেকে ভয়ের আবহ, দু:খ, কান্না, মৃত্যু কিম্বা অতীতের কোন সুখানুভূতি। প্রকৃতপক্ষে স্বপ্ন দেখতে জানতে হয়, পরিকল্পনা নিশ্ছিদ্র হলে তবেই কাজ ভাল হয়, স্বপ্ন সার্থক হয়। অর্থ উপার্জনের স্বপ্ন, সুখী জীবনের স্বপ্ন, আরও বড় হওয়ার স্বপ্ন, আশা-নিরাশার দোলাচলে জীবন কাটে আমাদের, স্বপ্নই আগামী দিনের বেঁচে থাকার রসদ। বিভিন্ন মানুষের স্বপ্ন বিভিন্ন, কেউ বাড়ির স্বপ্ন, কেউ গাড়ির, ছাত্ররা ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির স্বপ্ন দেখে, ভাল চাকরী করে মোটা অঙ্কের মাইনে। স্বপ্নই সফল হওয়ার পথ দেখায়, যে স্বপ্ন দেখতে জানে না সে সফলতার পথ খুঁজে পায় না। স্বপ্নই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। স্বপ্ন দেখা অন্যায় নয়, স্বপ্ন আর বাস্তবতার তফাৎ বুঝতে পারাটা জরুরি। সাধ আকাশছোঁয়া আর সাধ্যের পরিসর ছোট হলে ব্যর্থতার গ্লানি জীবনকে তছনছ করে দেয়। অলীক স্বপ্ন জীবনকে অতিষ্ট করে তোলে। মাসমাইনে যাঁদের, মেপে খরচ করলে অসুবিধা হয় না, কিছু মানুষ ঋণ করেও ঘি খাওয়ার পক্ষপাতী। ভবিষ্যতের জন্য চিন্তাই মানুষকে বেশি ভাবায়, আগামীকালের জন্য খাওয়ার সংস্থান করে রাখা বা ভাবা তো অন্যায় নয়, কিন্তু ভবিষ্যতের কথা ভেবে বর্তমানকে অস্বীকার করলে বোকামি হয়ে যায়। এখন ভালভাবে বাঁচলে তবেই তো ভবিষ্যৎ, সঞ্চয় ভাল অভ্যাস, কিন্তু কিছু মানুষের কৃপণতা এমন জায়গায় পৌঁছায় যে টাকা জমানোর নেশায় ভাল খাওয়া-দাওয়া তো দুরস্ত চিকিৎসা না করিয়ে ধুঁকতে ধুঁকতে দিন পার করা, আর টাকার পাহাড় পাহারা দিতে দিতে জীবন শেষ। আগের দিনে, সেই বেলায়, পুজোয় একটা নতুন জামাপ্যান্টের জন্য মুখিয়ে থাকতাম। বাবা-ই পছন্দ করে কিনে দিতেন,কারণ সাধ্যে কুলিয়ে উঠতে হবে তো!। বরাদ্দ মেনে চলতেই হবে,মাসমাইনের সঙ্গে সামান্য কিছু বোনাস আর অ্যাডভান্স,তাই দিয়েই মেটাতে হত সাধ। সন্তানের সাধ পূরণ করতে না পারলে মায়ের অসহায় মুখ, সাধ্যে কুলিয়ে উঠতে না পারলে বাবার মানসিক বেদনা আগে বুঝতে পারতাম না, এখন বুঝি। সন্তানের আবদার মেনে নিতে গিয়ে ঋণের পরিমাণ মাত্রা না ছাড়ায় সেটাও দেখতে হয়। মনে হয় অন্যায় আবদার, মেনে নেওয়া উচিত নয়, কিন্তু ঐ, স্নেহ অতি বিষয় বস্তু যে! এখন হয়েছে আর এক মুশকিল, অনলাইন শপিং, এখানে পাওয়া যায় না বলে কোন কথাই হয় না। তাই যদি কঠোর হতে না পারেন, সাধ মেটাতে গিয়ে স্নেহের দোহাই দিয়ে ছাড় পাবেন না, পতন অনিবার্য।

এই সুন্দর পৃথিবীতে অমর কেউ নই আমরা। একদিন হঠাৎ করেই যাবার ডাক আসে। তাই বেলা শেষে মনে হয়, কি করলাম সারাজীবন, কত কি যে বাকি রয়ে গেল! স্বপ্ন তো অনেক কিছুই আসে, যার মানে সর্বদা খুঁজে পাই না, কোনটা অবাস্তব। কিন্তু দেখি, ভাবি যদি আর একবার বাঁচি, ফিরে পাই সেই বেলাটা। আরও যত্ন নিয়ে পড়াশোনা করে আরও ভাল চাকরি, আরও আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য পেতাম। আমাদের ভাল রাখতে গিয়ে বাবা কতটা ত্যাগ করেছেন তখন বুঝতাম না, অন্য সহপাঠীদের বৈভব দেখে মনঃক্ষুন্ন হতাম, বাবার কৃচ্ছসাধন অনুভব করতে পারতাম না। মায়ের কষ্ট খারাপ লাগত,কিন্তু সবটা অনুভূতিতে আসত না। ছেলেবেলায় রুগ্ন ছিলাম বলে মা আমাকে বেশি যত্ন করতেন। মায়ের স্নেহের মূল্য তখন বুঝতাম না, সামান্য কারণে রেগে গিয়ে মাকে কষ্ট দিয়েছি। এখন সব বুঝি, কিন্তু কিছু করার নেই, মা নেই যে! সংসার বড় কঠিন ঠাঁই। পরিবারের সকলকে ভাল রাখার দায় বড় বিষম দায়। বাবা কেন নিজের স্বাচ্ছন্দ্য ছেড়ে দিতেন এখন বুঝতে পারি। আমি চাকরি পেলাম, কিন্তু জীবন শুরুর আগেই বাবা চলে গেলেন। পরিবারকে সামলাতে গিয়ে মায়ের যত্ন যতটা নেওয়ার দরকার ছিল ততটা পারিনি। মা আমার অসহায়ত্ব বুঝতে পারতেন না। তখন মনে হত কি জন্য সংসার, কাউকেই খুশি করতে পারছি না! আর্থিক স্বচ্ছলতা জীবনের অনেক কিছু বদলে দিতে পারে। দু-একজন বন্ধু, ছেলেবেলার সঙ্গী খুব কষ্ট আছে, ওদের একটু সাহায্য করতে খুব ইচ্ছে করে, কিন্তু পারি না। তাই, আরও ভাল পড়াশোনা করে ভাল চাকরি, আর্থিক স্বচ্ছলতা অর্জন করতে পারলে খুশি হতাম। আমি সেটাই চাইব, যদি আর একবার বাঁচি, যদি ফিরে পাই আমার সেই বেলাটা, সেই স্বপ্নই দেখতে চাই।

জয়ন্ত কুমার সরকার | Jayanta Kumar Sarkar

New Novel Updates 2023 | অনুভূতির বান্দরবান (পর্ব ৩) | অতনু দাশ গুপ্ত

New Bengali Article 2023 | রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তি জীবনে নারী প্রেম

Bengali Article 2023 | জীবানন্দ মহাশয়ের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া

New Bengali Article 2023 | কৃষিভিত্তিক সমাজ ও মুঠ উৎসব

Best Nostalgic Bangla Galpo | Top Bangla Golpo Online Reading | New Read Online Bengali Story | Top Best Story Blogs | Best Story Blogs in pdf | Sabuj Basinda | High Challenger | Famous Bangla Golpo Online Reading | Shabdodweep Read Online Bengali Story | Shabdodweep Writer | Bangla Golpo Online Reading pdf | Famous Best Nostalgic Bangla Galpo | Pdf Best Nostalgic Bangla Galpo | Best Nostalgic Bangla Galpo App | Full Bangla Golpo Online Reading | Bangla Golpo Online Reading Blogs | Best Story Blogs in Bengali | Live Bengali Story in English |Bangla Golpo Online Reading Ebook | Full Bangla Galpo online | Best Nostalgic Bangla Galpo 2023 | New Bengali Web Story – Episode | Golpo Dot Com Series | Best Nostalgic Bangla Galpo Video | Horror – Best Nostalgic Bangla Galpo | New Bengali Web Story Audio | New Bengali Web Story Video | Best Nostalgic Bangla Galpo Netflix | Audio Bangla Golpo Online Reading | Video Bangla Golpo Online Reading | Shabdodweep Competition | Story Writing Competition | Bengali Writer | Bengali Writer 2023 | Trending Bangla Golpo Online Reading | Recent Best Nostalgic Bangla Galpo | Top Best Nostalgic Bangla Galpo | Popular New Bengali Web Story | Best Read Online Bengali Story | Read Online Bengali Story 2023 | Shabdodweep Bangla Golpo Online Reading | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Best Nostalgic Bangla Galpo Download | Bangla Golpo Online Reading mp3 | Horror Adult Story | Read Online Bengali Story Collection | Best Nostalgic Bangla Galpo mp4 | Best Nostalgic Bangla Galpo Library | New Bengali Web Story Download | Full Live Bengali Story | Bengali Famous Story 2023 | Shabdodweep Bengali Famous Story | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Live Bengali Story – audio | Bengali Famous Story – video | Bengali Famous Story mp3 | Full Bengali Famous Story | Bengali Literature | Shabdodweep Magazine | Shabdodweep Web Magazine | Live Bengali Story Writer | Shabdodweep Writer | Collection – Best Nostalgic Bangla Galpo

Leave a Comment