Bengali Story 2022 | বন্ধুর বিয়েতে গিয়ে | প্রবোধ কুমার মৃধা

Sharing Is Caring:
BENGALI STORY
Bengali Story

বন্ধুর বিয়েতে গিয়ে (১ম পর্ব) [Bengali Story]

সন্ধ্যা হতে তখন ও বাকি ।ফাল্গুনের গোধূলির রাঙা বেলায় বাড়িতেই ছিল পার্থ।হঠাৎ কলিং বেলটা বেজে উঠতে সে নিজেই গিয়ে দরজা খুলে চমকে উঠল ।’আরে বিশু,তুই? আয় আয় ঘরে আয়। ওঃ ,কত দিন পরে তোর সঙ্গে দেখা।’
‘কত দিন আর হবে, বোধহয় মাস ছয়েক ।’
‘তাই বা কম কী!’
ওদের দুজনের কথাবার্তার মাঝে পার্থের মা ঘরে ঢুকলেন ।
‘এই যে বাবা বিশ্বরূপ ‌,অনেক ‌দিন পর এলে, বাড়ির সবাই ভালো আছে তো?’
‘হ্যাঁ কাকিমা ,সবাই…..’ বলতে বলতে উঠে কাকিমাকে প্রণাম করে গিয়ে বসল।
অনেকক্ষণ অনেক কথা হলো, বিশুর একটু তাড়া ছিল, সে কাকিমায়ের হাতে একটা নিমন্ত্রণ পত্র ধরিয়ে দিয়ে মুখে ব্যাপারটি খুলে বলল ।আসছে ২৮শে ফাল্গুন তার বিয়ে। অনেকটা আচমকাই ঠিক হয়ে গেছে।

পার্থ এবং বিশ্ব একই কলেজে পড়াশুনা করত। বিশ্বরূপের বাড়ি সুন্দর বনের লাটে, সেই গরানকাটি ।গড়িয়ার নস্কর মেসে থেকে সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পড়ত।ডিগ্ৰী কমপ্লিট হয়ে যেতে গ্ৰামের বাড়িতে ফিরে যায় ।কলেজ জীবনে পার্থের সাথে বিশেষ ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ে, ‌ আরও তিন জনের সঙ্গে হৃদ্যতা থাকলেও পার্থের সাথে বন্ধুত্বটা নিবিড় ছিল। মেসে থাকা কালীন প্রায়‌ই পার্থদের গড়িয়ার বাড়িতে ‌ বিশ্বর যাতায়াত ছিল ‌।পার্থ ও দু’একবার গরানকাটিতে গিয়েছে ।

‘তুই রাতে থাকবি তো?’
‘না রে পার্থ, অর্কদের বাড়ি হয়ে আজ রাতেই ক্যানিং -এ বড় দিদির বাড়িতে যেতেই হবে, সময় খুব কম, তুই কিন্তু অন্তত দুটো দিন আগে যাস ভাই ।’ পার্থ কোন সম্মতি না দিলে ও বিশ্ব জানে ও ঠিক যাবে ।

বিয়ের দিন সকালে কুয়াশা কেটে গেলে দেখা গেল মাঝ আকাশে হালকা হালকা মেঘ ।বেলার দিকে অবশ্য মেঘ কেটে গিয়ে চড়া রোদ উঠল ।নদীপথে যাত্রী সমেত বর যাবে,তাই একটা লঞ্চ ভাড়া করা হয়েছিল ।বিকেল বিকেল বাড়ির ও পাড়ার মেয়েরা সাজসজ্জা শুরু করে দিল, পুরুষদের প্রস্তুত হতে দশ পনেরো মিনিট‌ই যথেষ্ট। দেখভালের প্রধান দায়িত্বটি ছিল পার্থের উপর, তার উপর আজ অর্ক এসে সঙ্গ নিয়েছে ।সন্ধ্যার পর বর সমেত যাত্রী সব ডোঙ্গাজোড়ায় কনে বাড়িতে পৌঁছে গেল।পথে কোন দুর্ভোগ ঘটল না , অবশ্য আরো আগেই পৌঁছানো যেত, জোয়ার না থাকার কারণে বিলম্ব হলো ।পাড়া গাঁয়ের বিয়ে অনুষ্ঠান দেখার অভিজ্ঞতা পার্থের ছিল না; যাত্রীদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি ছিল মহিলা। পার্থ দেখল,বছর বাইশের এক তরুণী বেশ দক্ষতার সাথে সব মেয়েগুলোকে সামলে নিল, পার্থ তাকে চেনে না, তবে তার ম্যানেজ করার ক্ষমতা তাকে মুগ্ধ করল ।

সবাইয়ের ভোজন পর্ব মিটে গেলে বর পক্ষের যাত্রীরা লঞ্চে ফিরে গেল ।বরের সঙ্গে থাকল বিশ্বর দুই জামাইবাবু ,পার্থ আর অর্ক ।বিয়ে পর্ব মিটতে অনেক রাত হলো।
নতুন জায়গায় রাতে ভালো ঘুম হয়নি পার্থদের ।দুপুরে বর-কনেকে নিয়ে বাড়ি ফিরে চান-খাওয়া করে পার্থ আর অর্ক গেল পাশের বাড়িতে একটু নিরিবিলি ঘুমুতে ।
রাত পোহালেই বৌভাত ।কর্ম কর্তারা সবাই মহা ব্যস্ত । এক ফাঁকে পার্থ অর্ককে সঙ্গে নিয়ে গেল বিশ্বর নতুন বৌয়ের সাথে আলাপ করতে । তনুজা অর্থাৎ. বিশ্বরূপের স্ত্রী সুন্দরবন কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিল ।তিন ভাইয়ের এক বোন, মুমূর্ষু ঠাকুর মায়ের নাতজামাই দেখার শেষ ইচ্ছাকে মান্যতা দিতে তনুজা শেষ পর্যন্ত বিয়েতে সম্মতি দেয় । উজ্জ্বল শ্যামবর্ণা মেয়েটির কথা বার্তায় এবং মিষ্ট ব্যবহারে দুই বন্ধু বেশ প্রীত হলো ।

বৌভাতের দিন কনেপক্ষ থেকে প্রায় শ’খানেক যাত্রী হলো ।বেশির ভাগ মহিলা ।পৌঁছাতে সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হয়ে গেল । বিশ্বদের আত্মীয় স্বজন,পাড়া প্রতিবেশী ও নিমন্ত্রিত অতিথি সব মিলে প্রায় তিনশ’ লোকের আয়োজন ।কনে পক্ষকে আপ্যায়নের দায়িত্ব পার্থদের ‌উপর থাকলেও পার্থ দেখল, বিয়ের রাতের সেই অপরিচিত তরুণীটিই প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বেশ চমৎকারভাবে সমাধা করল।একটা ব্যাপার পার্থ ও অর্ককে বেশ অবাক করল দেখে যে, মেয়েটি একেবারে সাধারণ সাজসজ্জায় অথচ বেশ পরিপাটি আদব কায়দায়, স্বচ্ছন্দ চলনে-বলনে,দ্বিধাহীন অনায়াস ভঙ্গিতে আর সবার থেকে স্বতন্ত্র একটা বৈশিষ্টে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে ।

পরের দিন প্রথম সকালেই অর্ক বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল ।পার্থ ও বিশ্বরূপের ছোট ভাই অরূপ লঞ্চঘাট পর্যন্ত সঙ্গে গেল ।

বন্ধুর বিয়েতে গিয়ে (২য় পর্ব)

ফেরার পথে অরূপ বলল,’পার্থদা, তোমাকে একটা অন্য পথে নিয়ে যাব।’

‘ঠিক আছে, তাই চল।’

পথটা অনেকটা জঙ্গলাকীর্ণ, ছায়াঘন ।পাতলা জঙ্গলের মধ্যে কয়েকটা গাছ পার্থের নতুন ঠেকল।জিজ্ঞেস করল,’অরূপ,এগুলো কী গাছ বল তো?’

‘ওতো গরাণ গাছ । আগে এখানে গরাণের জঙ্গল ছিল,সেই জঙ্গল কেটে সাফ করে গড়ে ওঠে জনবসতি।তাইতো এ গ্ৰামের নাম গরাণকাটি ।’

পার্থ মন দিয়ে অরূপের কথাগুলো শুনছিল। চলতে চলতে হঠাৎ তার নজর গেল অদূরে এক খামারে ।সেখানে ধান খড়ের কাজে ব্যস্ত ছিল তিনজন।একজন মধ্য পঞ্চাশের পুরুষ, এক কিশোর এবং এক অবিবাহিতা তরুণী ।সেই তরুণীটিই ছিল সর্বেসর্বা, বাকি দুজন তার‌ই নির্দেশনায় কাজ করছিল। একটু এগিয়ে যেতে পার্থ দেখল, এ তরুণী গত রাতের সেই মহিলা, যার পরিচালন ক্ষমতা এবং পারিপাট্য দেখে পার্থ মুগ্ধ হয়েছিল ।পার্থ তৎক্ষণাৎ অরূপকে জিজ্ঞেস করল,’অরূপ, এই ভদ্র মহিলা কাল তোমাদের বাড়িতে কাজকর্ম তদারকি করছিল না?’

‘হ্যাঁ পার্থদা, ওতো অতসীদি, সব কাজে দক্ষ, আমাদের মামার বাড়ির সূত্রে ওরা আমাদের দূর সম্পর্কের আত্মীয় হয়।’

‘পড়াশোনা করেছে কতদূর?’

‘অতসীদি বি এ পাস। জামতলা কলেজ থেকে গত বছর পাস করেছে।’

পার্থ বেশ কিছুটা বিস্মিত হল ।চুপচাপ দ্রুত হেঁটে কয়েক মিনিটের মধ্যে বাড়ি পৌঁছে গেল। সন্ধ্যায় বিশ্বরূপকে একান্তে পেয়ে অতসীর প্রসঙ্গটা তুলল পার্থ।

‘বিশ্ব,অতসী বলে মেয়েটা তোদের কেমন আত্মীয় হয়?’

‘ওঃ অতসী? …অতসী আমার বড়ো মামার শ্বশুরের ভাগনি।’

‘ওদের অবস্থা কেমন?’

‘কেন বলতো? হঠাৎ ওদের এতো খবর নিচ্ছিস কেন?’

‘না এমনি,মেয়েটা বেশ স্মার্ট, তাই।’

‘ওদের অবস্থা খুব ভালো নয়, ওরা বড়ো দুই বোন,একটা ভাই সবার ছোট, মূলত চাষবাসের উপর নির্ভর করে সংসার চলে।’

পার্থ কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থাকল। তারপর ধীরে ধীরে বলল,’ তোকে বলতে বাধা নেই বিশ্ব, মেয়েটিকে আমার খুব ভালো লেগেছে, মা সব শুনলে ওকে ঘরে তুলতে দ্বিধা করবে না; তবে বিষয়টা শুধু আমার ভালো ‌লাগার উপর নির্ভর করছে না, ওদের ও তো একটা পছন্দ অপছন্দ আছে।’

‘কী বলছিস তুই? ভালো করে ভেবে দেখেছিস? বিয়েটা নিছক ভালো লাগার বিষয় নয়, ভালো লাগা দু-চার মাস পরে ফুরিয়ে যেতে পারে, বিয়ে দুটি জীবনের সারা জীবনের সম্পদ, সেখানে ভালোর সঙ্গে মন্দ লাগা ও আছে, উভয়কেই মেনে নিয়ে মানিয়ে চলতে হয়।’

‘শোন বিশ্ব, মেয়েটির রূপ আমাকে মুগ্ধ করে নি ,খুব যে রূপসী তাও বলা চলে না, তবে ওর মধ্যে যে গুণের সমাহার দেখছি, তা আর পাঁচটা মেয়ের থেকে অনেক পৃথক।’

‘তোর পর্যবেক্ষণটা একেবারে ভুল নয়, ঠিক ধরেছিস ,অনেকের থেকে অতসী অনেক আলাদা ।তবে একটা কথা আছে,তোর বাড়িতে সবাই ‌ রাজি হবে তো?’

‘আশা রাখি, তবে সে দায়িত্ব আমার ।’

‘ঠিক আছে, আমি পিসেমশায়কে ডেকে কথা বলছি, আশা করি অমত হবে না।’

সকালে এক ফাঁকে বিশ্ব অতসীদের বাড়িতে গিয়ে ‌অতসীর বাবা তারক বাবুকে‌ ডেকে নিয়ে বাইরে এল। এখন‌ই সবার‌ উপস্থিতিতে আলোচনাটা ঠিক হবে না। দুজনে হাঁটতে হাঁটতে পার্থের প্রস্তাবটা তারক বাবুকে অবগত করল । শুনে অবধি তারক বাবু বড়ো অবাক হলো।

‘বলো কী বিশ্ব, ওনারা কলকাতার মানুষ, এও কি সম্ভব?’

‘ওসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না, এখন সব কিছু সম্ভব৷ ‌ তোমার‌ সম্মতি আছে কি না বলো ।’

‘অতসীকে না জিজ্ঞেস করে কিছু বলতে পারব না বাবা।’

দুজনে আবার তারক বাবুর বাড়িতে ফিরে এল। অতসী কী একটা কাজে রান্নাঘরে ছিল। বিশ্ব বলে উঠল,’ কিরে বোন, তোদের বাড়িতে এলাম আর তোরা যে যার কাজে ঘুরছিস।’

অতসী তখনই রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এল।

‘না দাদা, একটা কাজ করছিলাম, আর তুমি তো এসেই বাবাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলে ।তারপর নতুন বৌদি কেমন আছে বলো ।’

‘গিয়ে ‌একবার দেখে আসতে পারিস তো ।…..আয় এখানে এসে বোস, কথা আছে ।’

প্রস্তাবটা শুনে অতসী প্রথমটা ‌চুপ করে গেল ।তারপর ধীরে ধীরে মুখ খুলল,’ দেখ বিশ্বদা, আমাদের অবস্থা মোটেই ভালো নয়, তারা কলকাতার মানুষ, তাদের স্ট্যাটাসের সঙ্গে আমরা মেলাব কীভাবে?’
‘ও সমস্ত চিন্তা করিস না, আমি তো তাদের ঘরের ছেলের মতো ,বহুবার গিয়েছি সেখানে, তাদের স্ট্যাটাস তেমন কিছু আহামরি নয় বোন,তুই মানিয়ে নিতে পারবি । পার্থকে তো তুই দেখেছিস, এখন তোর মতামতটা বল।’

‘বাবা মা,ভাই বোনদের এড়িয়ে আমি একা মতামত দিতে পারি না বিশ্বদা।’

আলোচনা চলা কালীন বাড়ির সবাই এসে উপস্থিত হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সকলেই একপ্রকার সম্মতি দিয়েই দিল।

‘বিকেলে পার্থকে একবার নিয়ে আসব,’ বলে বিশ্ব উঠে পড়ল । পথে আসত আসতে বিশ্ব চিন্তা করে দেখছিল,ব্যাপারটা কেমন হতে পারে ।…..না, খুব খারাপ হবে না, অতসীর উপর তার অগাধ আস্থা আছে।

বিকেলে পার্থকে সঙ্গে নিয়ে বিশ্বরূপ গেল অতসীদের বাড়িতে । ওদের জন্য বারান্দায় একটা মাদুর পেতে বসতে দিল অতসীর বোন অপরাজিতা ।প্রায় সঙ্গে সঙ্গে তারক বাবু সেখানে একটা ছোট. জল-চৌকি টেনে নিয়ে এসে বসলেন । পার্থ একেবারে চুপচাপ ।সেই অবস্থায় উঠে গিয়ে তারক বাবুকে প্রণাম করল, দেখাদেখি বিশ্বও ।

একটু ঝিমিয়ে পড়া ভাব লক্ষ্য করে বিশ্ব বলে উঠল,’ পিসিমা অতসী এরা সব কোথায় গেল,সকালের ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলতে এসেছে পার্থ,আমাদের একটু তাড়াতাড়ি উঠতে হবে ।’
‘সবাই বাড়িতে আছে, এখন‌ই আসবে ।’

এরপর পার্থকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘তা বাবা, তোমাকে এই কাজের ক’দিন থেকেই দেখছি, তোমার কথা বিশ্বরূপের মুখ থেকে সব শুনেছি, দেখো বাবা, তোমরা শহরের মানুষ, এখানে কতটা ভালো লাগছে জানি না,তবে নিজের মেয়ে বলে বলছিনা, অতসীমা আমার সংসারের মেরুদন্ড ,তবু বিয়ে তো দিতে হবে।কলেজের পড়া শেষ করে আমার সাংসারিক কারণে আর বেশি এগুতে পারল না। কলকাতা থেকে অনেক দূরে বাস করি আমরা, আরো পড়াশোনা করার ইচ্ছা ছিল ওর, হলো না।’

দেখতে দেখতে সবাই এসে পড়ল, অতসীও। বেশ ঘরোয়া পরিবেশে আন্তরিকতার সঙ্গে আলোচনা শেষ হলো। ঠিক হলো পার্থের বাড়ির থেকে সবাই একবার দেখে যাবে। দেখা ও হবে, সুন্দরবনে পা রাখা ও হবে। সুসংবাদটা শুনে বিশ্বরূপের বাড়ির ‌সবাই অত্যধিক খুশি হল। অরূপ এবং তনুজা সব থেকে বেশি খুশি। দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গেই বেরিয়ে পড়ল পার্থ। লঞ্চঘাট পর্যন্ত সঙ্গে এল বিশ্বরূপ।
‘কাকু কাকিমাকে সমস্ত জানাস ঠিকমতো, দেখি, পারি তো এর ভিতর যাওয়ার চেষ্টা করব একদিন।…..আমার একবার যাওয়া দরকার।’

বন্ধুর বিয়েতে গিয়ে (শেষ পর্ব)

নববর্ষের প্রথম দিকটা। গ্ৰামে গঞ্জে চলছে বৈশাখী মেলা পার্বণ।পার্থেরা সপরিবারে দিন দুয়েকের ছুটি দেখে সুন্দরবনের পথে পা বাড়াল।লঞ্চ থেকে যখন গরাণ কাটির ঘাটে নামল তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে।পার্থ ছাড়া বাকিদের এতো দীর্ঘ সময় ধরে নদীপথে যাত্রাটা নতুন অভিজ্ঞতা দিলে ও কিছুটা একঘেয়েমি ‌এনে দিয়েছে। পার্থ নিজেকে মনে মনে এর জন্য কিছুটা অপরাধী ভাবছে। বিশেষ করে তার বোন পৃথার জন্য, সে বড়ো ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। মুখে কিছু না বললে‌ও মায়ের জন্য পার্থের কিছুটা অস্বস্তি হচ্ছে।

বিশ্বরূপরা সবাই বাড়িতেই ছিল। নবাগত অতিথিদের পেয়ে সবাই যেমন আনন্দিত, তেমনি বেশি মাত্রায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল। উভয় পরিবারের সদস্যবৃন্দের মধ্যে সৌজন্য বিনিময় এবং নমস্কার প্রতিনমস্কারের পালা মিটে গেলে শুরু হলো হালকা জলযোগের পর্ব ।
দীর্ঘ পথ ট্রেন এবং লঞ্চ যাত্রার ধকল জনিত ক্লান্তিতে রাতের ঘুম সবার ভালোই হলো। গভীর রাতে কাছে কোথাও মাইকে নাটক চলার শব্দ ভেসে আসছিল।তাতে খুব একটা বিঘ্ন ঘটেনি ।সকালে তারক বাবু এসে সবাইয়ের সাথে কুশল বিনিময় করে দুপুরে খাইদাই করার জন্য সবিনয়ে আমন্ত্রণ জানিয়ে গেলেন। বিশ্বরূপদের সপরিবার ও আজ ওখানে নিমন্ত্রিত। পৃথা অনেকটা আগে ভাগে অরূপ আর তনুজার সঙ্গে অতসীদের বাড়িতে পৌঁছে গেল।

দুপুরে নিমন্ত্রিতেরা সবাই একসাথে খেতে বসলেন, সঙ্গে অতসীর মা-বাবা ও ভাই।পরিবেশনের দায়িত্বে র‌ইলো অতসী, তাকে সাহায্যের জন্য থাকল তনুজা ও অপরাজিতা।পার্থের ‌বাবা মা সবার সাথে খাচ্ছেন বটে তবে তাঁদের চোখ ঘোরাফেরা করছে অতসীকে কেন্দ্র করে। অতসীর স্বচ্ছন্দ, সাবলীল কর্মদক্ষতা তাঁদেরকে মনে মনে মুগ্ধ করল।পৃথা তো আগেই অতসীতে মজেছে,বাকি আর কে?পার্থ আজ শুধু নীরব দর্শক ।অতসীকে পার্থ যত‌ই দেখছে তত‌ই যেন নতুন করে তাকে আবিষ্কার করছে।শহরবাসী নবাগত ‌ অতিথিদের মনোতুষ্টির অভিপ্রায়ে যথাসাধ্য আয়োজন করেছিলেন তারকবাবু। সবাই বেশ পরিতৃপ্তি সহকারে ভোজন পর্ব সমাধা করলেন।

অতসীরা তিন জনে খেয়ে এলে সবাই মিলে বসে অনেক সময় ধরে আলাপ আলোচনা এবং গল্প গুজব হলো।অতসী সেখানে সর্বক্ষণ উপস্থিত থেকে নতুন অতিথিদের সুবিধা অসুবিধার প্রতি সজাগ‌ দৃষ্টি রেখে চলছিল। পার্থের বাবা মা অতসীর মধ্যে কোন রকমের জড়তা লক্ষ্য করল না, যেন কতো দিনের পরিচিত আপনজন। পাশের পাড়ায় চলছিল বৈশাখী মেলা।অরূপ পার্থদেরকে নিয়ে মেলায় ঘোরার মতলবে উঠে পড়ল।

পরের দিন সকাল সকাল খাওয়ার পাট চুকিয়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল পার্থরা। বিদায়কালে তারক বাবু ও অতসী গল্পে গল্পে লঞ্চঘাট পর্যন্ত এসে গেল, পথে পার্থের বাবা শংকর বাবু তারক বাবুর হাত ধরে সনির্বন্ধ অনুরোধ করলেন ইতিমধ্যে একবার তাঁদের ওখানে ঘুরে আসার জন্য।‌ পার্থের মা তারক বাবুকে সম্বোধন করে বলেই ফেললেন,’চিন্তা করবেন না দাদা, অতসী মাকে আমরা আমাদের ঘরে তুলব।’
পৃথা অতসীর হাত ধরে নিঃশব্দে মুখের দিকে তাকিয়ে হাসি বিনিময় করল। অতসী পৃথাকে সাবধানে যাওয়ার নির্দেশ ‌ দিয়ে মা বাবাকে সাবধানে নিতে বলল পার্থকে।

সামনেই জ্যৈষ্ঠ মাস। জ্যেষ্ঠ ছেলে, তাই বৈশাখের শেষ লগ্নে বিয়ের আয়োজন হলো।অতসী ও জ্যেষ্ঠ সন্তান, ফলে তারক বাবুদের দিক থেকে কোনো আপত্তি উঠল না। নদী নালার পথ ঘাট।বেশি ঝুঁকি না নিয়ে মাত্র জনা দশেক বরযাত্রী নিয়ে পার্থ এলো বিয়ে করতে।মধ্য রাতে লগ্ন, তার বহু পূর্বে সবা‌ই নির্বিঘ্নে পৌঁছে গেল।

তারক বাবুর নিমন্ত্রিত আত্মীয় পরিজন আর পাড়া প্রতিবেশী মিলে শ’দুয়েক হবে।বিশ্বরূপদের পুরো পরিবারটি আজ এ বাড়িতে কোন না কোন কাজে ব্যস্ত । লগ্ন যখন মাঝরাতে, তখন বিয়ের আগে নিমন্ত্রিতদের ভোজন পর্বটি সমাধানের উদ্দেশ্যে রাত আটটা থেকে খাওয়ার আয়োজন করা হলো। বর যাত্রীদের রাত কাটাবার ব্যবস্থা হলো বিশ্বরূপদের ‌বাড়িতে। গরমের সময়, তার উপর খোলামেলা প্রকৃতির এলোমেলো হাওয়া; অতিরিক্ত বিছানা পত্রের প্রয়োজন‌ই হবে না। বিয়ে মিটতে রাত দুটো বাজল। এরপর খাওয়া দাওয়া মিটিয়ে উঠতে রাত তিনটে।

সকালে বিশ্বরূপ বার বার তাগাদা দিতে থাকল।অনেক দূরের পথ, যেতে বিকেল গড়িয়ে যাবে। মেয়ে বিদায় বলে কথা, গ্ৰামে ঘরে যা হয়ে থাকে, যা‌ই যাই করে সকাল ন’টা বেজে গেল। সম্প্রদান করার সময় তারক বাবু কান্না থামাতে পারছিলেন না, বুকটা তাঁর আজ ফাঁকা হয়ে গেল।বাবা মাকে জড়িয়ে অতসী নিজেকে সামলাতে পারল না, তনুজা ও আরো কয়েকজন সমবয়সী বৌদি-বান্ধবী মিলে তাকে সান্ত্বনা দিতে থাকল।ছোট ভাইয়ের গলা ধরে ভাই বোন দুজনেই কান্নায় ভেঙে পড়ল।সব থেকে করুণ অবস্থা তারক বাবুর, হাজার সান্ত্বনাতে ও তাঁকে সুস্থির করা যাচ্ছে না।তাঁকে যে কতটা হারাতে হচ্ছে তা’ কেমন করে কাকে বোঝাবে!

অতসীর সঙ্গে যাচ্ছে বোন অপরাজিতা। তারও চোখে জল। অনেকে মিলে লঞ্চ ঘাটের পথে এগিয়ে চলেছে। বর যাত্রী দল আগে আগে র‌ওয়ানা দিয়েছে অরূপের সঙ্গে।বিশ্বকে কাছে পেয়ে পার্থ তাকে বৌভাতের সকালে যেতে বলল। বিশ্ব তাকে জানাল যে, আগে ভাগে যাওয়া হবে না কারণ যে-ক’জন যেতে চায় তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে যেতে রাত হতে পারে। অতসী বিশ্বকে লক্ষ্য করে বলল,’বৌদিকে অবশ্য‌ই সঙ্গে নেবে বিশ্বদা।’

লঞ্চে স্টার্ট দিয়েছে, সবাই গিয়ে উঠে পড়ল। পার্থের হাত ধরে অতসী পাড়ের দিকে তাকাতে তাকাতে লঞ্চে উঠে গেল।ততক্ষণে লঞ্চ ছেড়ে দিয়েছে, অতসী চেয়ে চেয়ে দেখছে বাবা তার তখন ও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চোখের জল মুছছে।

প্রবোধ কুমার মৃধা | Probodh Kumar Mridha

Bengali Poetry 2022 | তালাল উদ্দিন | কবিতাগুচ্ছ ২০২২

Bengali Poetry 2022 | কবিতাগুচ্ছ ২০২২ | তালাল উদ্দিন

Bengali Story 2023 | পরিচারিকা পাপিয়া | প্রবোধ কুমার মৃধা

Bengali Story 2022 | নকুল পাগলা | প্রবোধ কুমার মৃধা

বন্ধুর বিয়েতে গিয়ে | বন্ধুর বিয়েতে মজার উপহার | বিয়ের গল্প | উৎসবের গল্প | বিবাহ বার্ষিকী | বিবাহ জীবন | বিয়ের গল্প | বন্ধুর গল্প | প্রেমের গল্প | বাংলা গল্প | সেরা গল্প ২০২২ | গল্পকার | সাহিত্যিক

bengali story | short bengali story analysis | short bengali story characteristics | short bengali story competition | short bengali story definition | Bengali Story Analysis | Best Bengali Story | Top Bengali Story | World Bengali Story | International Bengali Story | short bengali story english | bengali story competitions for students | bengali story competitions ireland | writing competitions ireland | bengali story writing practice | bengali story writing topics | trending topics for article writing 2022 | what is bengali story writing | bengali story trends 2022 | content writing topics 2022 | Bangla Prabandha | Probondho | Definite Article | Article Writer | Shabdodweep bengali story | Galpoguccha | Galpo | Bangla Galpo | Bengali Story | Bengali Article | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Shabdodweep Founder

Leave a Comment