প্রবোধ কুমার মৃধা – সূচিপত্র [Bengali Story]
নকুল পাগলা (১ম পর্ব) [Bengali Story]
প্রকৃত অর্থে পাগল সে ছিল না। সবকিছু স্বাভাবিক হলেও ব্রেনের কোথাও যেন কিছুটা ঘাটতি থেকে গিয়েছিল;আর সেই কারণে তার ব্যবহার আর পাঁচ জনের মতো প্রাণবন্ত ছিল না। তবে ছোট থেকে বড়ো অনেকেই একবাক্যে ডাকত নকুল পাগলা বলে, সে যে কারও দাদা, কাকা বা জ্যাঠা সে পরিচয় তার পাগলা শব্দের অন্তরালে হারিয়ে গিয়েছিল।একেবারে বয়স্করা তাকে নকুল নামেই ডাকত।এসব নিয়ে নকুলের কোন ওজর আপত্তি ছিল না। মূলত এত বড়ো নির্বিরোধী নিরীহ গোবেচারা মানুষ খুবই বিরল।
আমাদের গ্ৰাম থেকে একটা মাঠ পারে ছিল নকুলদের গ্ৰাম।স্কুল জীবনের শেষের দিক থেকে ওকে দেখে আসছি; কারণ, আমাদের গ্ৰামেই নকুল ছোট বেলা থেকে রাখালি করে বেড়াত কয়েকটি ধনী পরিবারে। তারপর রাখাল থেকে জনমজুর হয়ে উঠল। তখন আর নিজেদের বাড়িতে খুব একটা যেত না। বাড়িতে ওর দাদা-বৌদি আর মা ছিল, বাবা অনেক আগেই মারা যায়।
গ্ৰামে মণ্ডল পরিবারের দু-তিন জন তথাকথিত ধনী বাড়ির মধ্যে ছিল নকুলের গ্ৰাসাচ্ছাদনের পরিসীমা।চাষ এবং পোষের কাজের সময় তারা নকুলকে নিয়ে যেত তাদের আবাদ বাড়িতে, নদী নালা বেষ্টিত সুদূর লাট এলাকা সুন্দরবনে। বছরের বাকি সময়টা বাড়ি পাল্টে পাল্টে বিভিন্ন জনের বাড়ি হয়ে উঠত তার ডেরা, গর মরশুমে গ্ৰামে ঘরে তখন কাজ প্রায় থাকত না, টুকিটাকি গৃহস্থলির কাজ, বিশেষ করে গরু বাছুর দেখভালই ছিল মুখ্য,যার বিনিময়ে দু-বেলা হয়তো মিলত দুটো ভাত-রুটি আর বার দালানে মাথা গোঁজার আশ্রয়। তবে নকুল বোধকরি ছিল খুব সস্তার জনমজুর, সারা মরশুম খাটিয়ে নিয়ে মাত্র বিশ-ত্রিশটি টাকা তার হাতে ধরিয়ে দিত প্রায় সবাই। নকুল মুখ বুজে চুপ করে থাকত। সব মালিক পক্ষ যখন এরূপ করত তখন সে বোধহয় ধরে নিয়েছিল যে এটাই দস্তুর। আশে পাশের কৌতূহলী মানুষ জন তাকে জিজ্ঞেস করে যখন জানতে পারত ব্যাপারটা, তখন তারা নকুলকে অনত্র সরে পড়ার সুপরামর্শ দিত, তবে প্রয়োজনে নিজেদের বাড়ির কাজ তাকে দিয়ে করিয়ে নিয়ে সেই অনুরূপ ব্যবহারের নমুনা রাখত।
ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো বলে একটা প্রবাদ আছে, নকুল ছিল তাই। কার বাড়িতে বেড়াল মরে পড়ে আছে, ডাক নকুলকে, কোন পাড়ায় কুকুর মরে আছে রাস্তার উপর, তার হিল্লে করবে সেই নকুল; অর্থাৎ যার যখন তাৎক্ষণিক প্রয়োজন, তো খোঁজ খোঁজ নকুল পাগলাকে খোঁজ, খোঁজ পেয়ে ও যেত।
শরতের ভরা সরোবরে পানার দাম যেমন বাতাসে একবার এদিক তো পরক্ষণেই বিপরীত দিকে ভেসে ভেসে বেড়ায়, তেমনি করে নকুলও এর বাড়ি কিছু দিন তো ওর বাড়ি কিছু দিন করে করে তার যাযাবর জীবনটাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল, ইতিমধ্যে ওর মা গেল মারা। কয়েক দিনের জন্য দাদা-বৌদির সংসারের সামিল হতে হলো তাকে। মায়ের কাজকর্ম মিটে গেলে আবার ফিরে এল যাযাবর জীবনে। এই যাযাবর জীবনটাকে রপ্ত করে ফেলেছিল সে। উপায় ছিল না। শোনা যায় নকুল পাগলার বিয়ে হয়েছিল কয়েকবার। সে বিয়ে ছিল নিছক পুতুল খেলার সামিল। আমাদের জানার মধ্যে দেখেছি, ভূতকাঞ্চন কাকাদের ফ্যামিলির মেয়ে সন্ধ্যার সঙ্গে ওর বিয়ে হতে। তার আগে নাকি হয়েছিল দু’বার। এ গল্প শুনেছি পাড়ার কয়েকজনের মুখে। কিন্তু কোন নারী নকুলের জীবন সঙ্গিনী হয়ে জীবন কাটাবার ঝুঁকি নিতে পারেনি। পত্রপাঠ বিদায় নিয়ে অন্য জীবন সঙ্গীর হাত ধরে আটপৌরে জীবনে ফিরে গেছে।
অনেক কাজ তাকে করতে হতো,তবে একটা কাজ নকুলের খুব পছন্দ ছিল। প্রতিবছর গ্ৰামের কিছু লোকের সঙ্গে দুর্গোপুজোর আগে কুমোরটুলিতে কাজে যাওয়া। বাঁশ দড়ি নিয়ে দলবলের সঙ্গে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে প্রতিমা পৌঁছে দেওয়ার কাজ করত চার পাঁচ দিন ধরে। তারপর পুজো আরম্ভের ঠিক আগে আগে সহকর্মীদের সঙ্গে আবার ফিরে আসত পরের ঘরে ফেলে যাওয়া অস্থায়ী আপন বাসায়।
নকুল পাগলা (২য় পর্ব) [Bengali Story]
দুর্গো পুজো তখন কেটে গেছে ,তখনকার দিনে গ্ৰাম বাংলায় ওই বড়ো পুজোর কোন নামগন্ধই তেমন ছিল না ।পাঁচ সাতটা গ্ৰামের মধ্যে হয়তো একটা গ্ৰামে একটা পারিবারিক পুজো অনুষ্ঠিত হতো। হঠাৎ একদিন সকালে একটু বেলার দিকে নকুল পাগলা আমাদের বাড়িতে এসে হাজির ; চুপচাপ বড়দার কাছে দাঁড়িয়ে আছে ।আমরা সবাই ওকে খুব চিনতাম, নকুল ও আমাদের সবাইকে ভালো মতোই চিনত ,তবে বাড়িতে খুব একটা আসত না ; আর আমাদের কোন আবাদ বাড়ি চাষ ছিল না ।সংসারের যা কাজ কর্ম, বাবা মা এবং আমরা ভাই বোন মিলে সামলে নিতাম। কাজের জন্য বাড়তি লোকের প্রয়োজন ছিল না।
পরে জানলাম, ৮০টি টাকা বড়দার কাছে গচ্ছিত রাখতে এসেছিল। কেউ ওকে বলেছিল, না ও নিজে থেকেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জানি না, তবে ফিরল খুব খুশি মনে। ব্যাপারটির পিছনে অনেক কারণ ছিল। নকুলের সম্বল বলতে ছিল একটা মাঝারি মাপের পোঁটলা , তাতে থাকত এক জোড়া জামা গেঞ্জি, একটা ছেঁড়া কম্বল, গোটা দুই লুঙ্গি,একটা গামছা,কয়েকটি বিড়ি, একটা দেশলাই আর ছিল পয়সা রাখার তিন বর্গ ইঞ্চি মাপের একটা সূতির ব্যাগ। যখন যে বাড়িতে থাকত,রাতে পোঁটলাটা মাথার কাছে রাখত, সকালে আবার বাড়ির মধ্যে গৃহস্থের ঘরের বারান্দার এক কোণায় রেখে দিয়ে যেত। সব কিছু অক্ষত থাকলেও পয়সার ব্যাগটি ফাঁকা হয়ে যেত, সম্ভবত বাড়ির ছেলেপুলেদের কাজ।এনিয়ে নকুল পাগলা কার ও কাছে কোনদিন কোন নালিশ জানায়নি।
সেই সূত্রপাত। তারপর থেকে আমাদের বাড়িতে নকুলের নিঃশব্দ পদ চারণা যেমন বেড়ে গেল, তেমনি ওর প্রতি আমাদের সবাইয়ের একটা মায়া পড়ে গেল; যার জেরে বহু বাড়ি ঘোরা নকুল একদিন তার পোঁটলা সম্বলটুকু নিয়ে এসে উঠল আমাদের বাড়িতে। বাবা মা ওকে খুব ভালো বাসত. আর বড়দার ছিল নকুলের প্রতি একটা প্রচ্ছন্ন স্নেহ।।বড়দার প্রতি নকুলের ও একটা শ্রদ্ধা মিশ্রিত অগাধ বিশ্বাস গড়ে উঠেছিল ।এমনি করে নকুল একদিন আমাদের পরিবারের একজন হয়ে উঠল, আমাদের এতোগুলো মানুষের পরিপূরক হয়ে পড়ল। আগে থেকেই নকুলের বিড়ি খাওয়ার অভ্যাস ছিল।আমাদের এখানে এসে ছোট একটা হুঁকো আর পোড়া মাটির কলকে জোগাড় করল, গ্ৰামে ঘরে উনুনের আগুনের অভাব ছিল না, দিনে দু-তিন বার তামাক টানত আর তাতে অনেক সময় সঙ্গ দিত পাশের বাড়ির সুন্দর কাকা, তারও হুঁকো টানার খুব নেশা।
আগেই বলেছি, গ্ৰামে ঘরে তখন চাষ আর পোষ মরশুম ছাড়া বাকি সময়টা কোন কাজ প্রায় থাকত না।মাঠের পর মাঠ পালে পালে গরু ছাগল চরে বেড়াত, কোন ফল ফসল চাষের বালাই ছিল না ,গ্ৰীষ্মের প্রখর দাবদাহে ধুলো ওড়া মাঠগুলো মরুভূমির চেহারা নিত। অবসর সময়ে নকুল পাড়ায় পাড়ায় ঘুরতে বের হতো, ও ছিল সবাইয়ের চেনা।অনেকে অনেক প্রশ্ন করত,নকুল কিন্তু ওর স্বভাব সিদ্ধ ভঙ্গিতে অল্প কথায় হ্যাঁ না উত্তর দিয়ে ছেড়ে দিত ।প্রশ্নকর্তাদের ঘোর-প্যাঁচের মধ্যে ঢোকার মতো বুদ্ধি বা মানসিকতা নকুলের ছিল না । আমাদের বাড়িতে একপ্রকার স্থায়ী হয়ে যাওয়াতে অনেকের অনেক অসুবিধা হতে থাকল, কারণ ছোট খাঁট দায় দরকার থেকে শুরু করে বড়ো সড়ো কাজে কর্মে নকুলকে তারা আর আগের মতো করে পাচ্ছিল না,সাহস করে বড়দার কাছে বা মা বাবার কাছে সেই দাবি তুলতেই পারত না।নকুল ও বুঝে গিয়েছিল যে,লোকের বাড়িতে কাজে গেলে সেই পেটখোরাকি ছাড়া তো আর কিছু পাবে না, তাহলে কেন যাবে,এখানে তো দুবেলা তার খাওয়া জুটছে।
তবে একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল লক্ষণকার মা সুমিত্রা ঠাকমা; ঠাকমা মাঝে মাঝে আবদার ধরে বলত, ”ও ভাইরা, দাদারা, আমি নকুলকে দিয়ে দুটো দিন আমার ক’টা কাজ করিয়ে নেব।” ঠাকমার কথা ফেলার মতো দুর্মতি আমাদের কারো কোনদিন হয়নি। ঠাকমা ছিল আমাদের পারিবারিক বন্ধুর মতো যথেষ্ট দরদি,মায়ের সঙ্গে খুব হৃদ্যতা ছিল, বর্ষা-বাদলা,শীত-গ্ৰীষ্ম,দিনে অন্তত একটিবার আমাদের বাড়িতে হাজিরা দিয়ে মায়ের সঙ্গে,আমাদের সঙ্গে আসর মাতিয়ে বিভিন্ন ভঙ্গিতে মজাদার মজাদার একঝুল গল্প দিয়ে সবাই কে বেশ উৎসাহিত করে যাওয়াটা ছিল ঠাকমার প্রাত্যহিকের রুটিন। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে লোকের বাড়িতে গিয়ে আড্ডা দিয়ে গল্প করার অভ্যাস আমাদের পরিবারের কার ও ছিল না।আমাদের প্রচ্ছন্ন সেই অভাবটা পূরণ হতো ঠাকমা এলে; সারা গ্ৰামের প্রায় প্রতিটি বাড়ির হাঁড়ির খবর থেকে শুরু করে তাদের ঝি-জামাই মায় আত্মীয় কুটুমের সব খবর থাকত ঠাকমার সংগ্ৰহের ঝুলিতে, আর পরিবেশন দক্ষতাও ছিল বলিহারি। আমরা অবাক বিস্ময়ে তার মুখের দিকে মুগ্ধের মতো তাকিয়ে শুনতাম। ঠাকমার সংসারে যথেষ্ট অভাব ছিল কিন্তু সেই অভাবের কথা তার মুখে কোন দিন কাউকে বলতে শুনিনি।নকুল অনেক সময় উপস্থিত থেকে ঠাকমার গল্প মন দিয়ে শুনত আর মাঝে মাঝে নিঃশব্দে হাসতে হাসতে উঠে যেত।
নকুল পাগলা (৩য় পর্ব) [Bengali Story]
গ্ৰীষ্মের মাঝামাঝি। ধোষা হাট-কমিটির ব্যবস্থাপনায় চলছে পাঁচ দিন ব্যাপী বারোয়ারি যাত্রানুষ্ঠান।প্রতি বছর হয়। চিৎপুরের নামি-দামি দল এসে খোলা প্যান্ডেলে গান গেয়ে যায়। যাত্রা পেলে নকুলকে ধরে রাখা শক্ত। সেদিন ভোরে কখন ফিরে ঘুমিয়ে পড়েছে কেউ জানে না।অনেক বেলা হয়ে গেল, নকুল অকাতরে ঘুমিয়ে।সকালে খাওয়ার সময় পেরিয়ে গেল, শেষে বড়দা গিয়ে অনেক ডাকাডাকির পর নকুলকে জাগাতে সমর্থ হলো,অন্য কেউ গেলে ও কিন্তু উঠতই না ।
‘যা, দুটো খেয়ে স্নান করে আবার ঘুমো।’
নকুল আড়মোড়া ভেঙে হাই তুলতে তুলতে উঠে যায়।আরো যখন ওর কোন কারণে শরীর খারাপ থাকে বা জ্বর হয় তো ওকে আর সোজা করে বসানো যাবে না; দু-এক দিন এক নাগাড়ে শুয়ে শুয়ে কাটিয়ে দেবে, না স্নান ,না খাওয়া। সে এক অস্বস্তিকর অবস্থা, একটা জ্যান্ত মানুষ চোখের সামনে ওভাবে জড়ের মতো পড়ে থাকবে তা যেমন দেখা যায় না, চুপ করে থাকা ও যায় না।ইচ্ছা করলে উঠতে পারে, ডাক্তার বদ্দি দেখিয়ে দুপান ওষুধ পত্র খেতে পারে, কিন্তু সেই ইচ্ছাটাই ওর নেই।বাধ্য হয়ে দুটো জ্বরের ট্যাবলেট খাইয়ে দেওয়া হয়। ঘন্টা দুয়েক পরে দিব্যি সুস্থ ভালো মানুষ হয়ে উঠে পড়ে।
একটানা অনেক দিন থাকা হয়ে গেছে, হঠাৎ দুম করে একদিন বড়দার কাছে গিয়ে বায়না ধরল ওর দিদির বাড়ি যাবে।। কোথায় ওর দিদি,আর. কোথায় ওর বোন,আমরা কেউ জানি না।বড়দার সম্মতি ও কিছু পয়সা হাতে পেয়ে খুশি মনে বেরিয়ে গেল।চার-ছ’দিন এখন ওর ভাঙা বাসাটা ফাঁকাই পড়ে রইলো। আসলে ওর যাযাবর মনটা বেশিদিন এক জায়গার আবদ্ধ থাকতে পারে না, তাইতো লোকে ওকে পাগলা বলে।
ছোট ছোট ভাই বোনেরা ওকে নকুলদা বলেই ডাকত। বাকিরা ওকে সম্বোধন করত নাম ধরে।নকুল কিন্তু আমাদেরকে বড়ো বাবু, মেজবাবু শব্দবন্ধে পরিচয় করত।একমাত্র কেন জানিনা ,বৌদিকে ও মা বলে ডাকত। বৌদিকে দেখতাম নকুলের খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে খুব সজাগ থাকতে, কোথাও গেলে বা কোন জায়গা থেকে ফিরলে ওকে কিছু -না-কিছু খেতে দিত। নকুল ঘরের বা রান্নাঘরের একপ্রান্তে বসে নিঃশব্দে খুব যত্নসহকারে খাওয়া শেষ করত।মেলা-পার্বণ এলে বড়দা ওর হাতে কিছু কিছু পয়সা কড়ি মনে করে দিত।আমরা কিন্তু কোনদিন ওকে কোন টাকা পয়সা দিতাম না আর নকুল ও কোন সময় আমাদের কাছে কিছু চাইত না ; তবে বড়দা যে ওকে সময় মতো কিছু দেবে সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত থাকতাম। আর মা যে ওকে আমাদের খাদ্য-খাদকের অংশ কম হলে ও দেবে সে বিষয়ে সংশয় ছিল না।
কারো কাছে কিছু হাত পেতে চাওয়া,সে খাদ্যবস্তু হোক বা অর্থকড়িই হোক, এই ভিক্ষার প্রবৃত্তিটা নকুলের ছিল না, তার অভাব ছিল খুব, তাই বলে কোন দাবি বা চাহিদা তার স্বভাবে ছিল না।তবে কিছু দিলে যথেষ্ট আগ্ৰহ সহকারে গ্ৰহণ করতে দ্বিধা করত না।
বেশ কয়েক বছর নকুল রয়ে গেল আমাদের বাড়িতে, একটানা নয়,মাঝে মাঝে কিছু দিনের জন্য কোথায় উধাও হয়ে চলে যেত,আবার ফিরে আসত।এভাবে উদ্ভ্রান্তের মতো ঘোরাফেরার পরিণাম স্বরূপ তার শরীর ভাঙতে শুরু করল।এখন প্রায় সময় সামান্য কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ার প্রবণতাটা অনেক বেড়ে গেল।
নকুলের আপনজন আর অবশিষ্ট ছিল না, দাদা বৌদি ও মারা গিয়েছে; এখন ভাইপোদের হাতে সংসার। বাস্তুভিটে আর মাঠের কাঠা পাঁচেক জমির অংশীদার ছিল নকুল।তার অংশ পাওয়ার লোভে এক ভাইপো নকুলের সাথে যোগাযোগ শুরু করল মাঝে মধ্যে, শেষটায় ওকে বাড়িতে নিয়ে যেতে আগ্ৰহ দেখাল।এতদিন চলর শক্তি ছিল, সবাই তাকে কাজে কর্মে ডাকাডাকি করত,এখন আর কেউ ফিরে ও তাকায় না।আমাদের সংসারেও পরিবর্তন শুরু হয়ে গেছে, কাজের দৌলতে আমরা বেশির ভাগ জনই বাড়ির বাইরে। অতএব নকুলের ভাইপোর প্রস্তাবটা আমাদের কাছে সময়োপযোগী বলে সবার সায় পেল।অনেক দিন পর যাযাবর নকুল আবার আপন পৈতৃক ভিটেয় স্থিতি হলো।আজ বহু বছর পরে ও তার কথা, তার ছবিটা স্মৃতিতে বার বার এসে ভেসে ওঠে। সেবার গ্ৰামের বাড়িতে গিয়ে শুনলাম, নকুল আর বেঁচে নেই, সেটাই স্বাভাবিক, কারণ এমন নির্লোভ, নির্লিপ্ত,নির্মোহ আত্মার মানুষকে সৃষ্টিকর্তা বিধাতা বেশিদিন ধরার বুকে ফেলে রাখেন না, সময় থাকতে নিজের কাছে টেনে নেন।
প্রবোধ কুমার মৃধা | Probodh Kumar Mridha
Bengali Poetry 2023 | তালাল উদ্দিন | কবিতাগুচ্ছ ২০২৩
Bengali Poetry 2022 | তালাল উদ্দিন | কবিতাগুচ্ছ ২০২২
Bengali Poetry 2022 | কবিতাগুচ্ছ ২০২২ | তালাল উদ্দিন
Bengali Story 2023 | পরিচারিকা পাপিয়া | প্রবোধ কুমার মৃধা
শব্দদ্বীপের লেখক | শব্দদ্বীপ | সেরা বাংলা গল্প | গল্প ও গল্পকার | সেরা সাহিত্যিক | সেরা গল্পকার ২০২৩ | বাংলা বিশ্ব গল্প | বাংলা গল্প ২০২৩ | বাংলা ম্যাগাজিন | ম্যাগাজিন পত্রিকা | শব্দদ্বীপ ম্যাগাজিন
bengali story | short bengali story analysis | short bengali story characteristics | short bengali story competition | short bengali story definition | short bengali story english | bengali story competitions for students | bengali story competitions ireland | writing competitions ireland | bengali story writing practice | bengali story writing topics | trending topics for article writing 2022 | what is bengali story writing | bengali story trends 2022 | content writing topics 2022 | Bangla Prabandha | Probondho | Definite Article | Article Writer | Shabdodweep bengali story | Galpoguccha | Galpo | Bangla Galpo | Bengali Story | Bengali Article | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Shabdodweep Founder