Bengali Story Apps – Krishna Kishore Middya
অনিকেত কথা – কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা
আমার মত একজন কম পড়াশুনো ছেলে কিভাবে যে সুজলা সুফলা বাংলা থেকে মধ্য প্রদেশের এক প্রায় কলোনিতে এসে পড়েছি, ভাবতেই অবাক লাগে। আমাদের ছিল গরীবের সংসার । দাদা আমি আর দুই বোন, মা বাবা, খুব কষ্ট করে বাঁচা তথাকথিত এই নিম্ন সম্প্রদায়ের মানুষ হিসেবে। তার মধ্যে কী করে যে বিয়ের ভূত মাথায় চাপলো বুঝতে পারিনি। এক গরীব বন্ধুর অনুরোধ রাখতে গিয়ে আর এক গরীব ঘরের ছেলের পরিণয়, বাড়ির সকলের কাছে ভালো চোখে দেখা হল না। কিন্তু হয়ে যখন গেছে কী আর করি বলুন!
বেকার ছেলে সংসারে এক বোঝা, তার উপর যদি একজন বাড়তি সদস্য বাড়িতে আনে, মা বাবা এবং অন্যদের অস্বস্তি বাড়ে, সবাই সেটা মেনে নিতে পারে না। গল্পটা এভাবে শুরু করলেও অনিকেতের খুব কষ্ট হচ্ছিল গল্পের গাঁথুনি দিতে। ….. মধ্য প্রদেশ থেকে ফিরে এসে এক বন্ধু খবর দিল দেখা করতে ।বন্ধুটি ওই খানে এক ফার্মেসি চালাতো, নিজের লাইসেন্স ছিল এখন সে ওখানে থাকবেনা। অন্যের লাইসেন্স নিয়ে ফার্মেসি চালানোর বিধি সেখানে আছে। আমার তখন একটা কাজের খুব প্রয়োজন। আগু পিছু ভাবার মত সময় কোথায়! পরিবার থেকে প্রায় আলাদা হওয়ার অবস্থা। স্ত্রী বিনতা যেন সংসারে এক পরিচারিকা! সারাদিন সংসার ঠেলেও মন পাওয়ার মত যেন কোন ভূমিকা নেই তার! স্বামীর মুখ চেয়ে সে যে কতটা কষ্ট স্বীকার করে চলে, আমি তো বুঝি। আর কোন পথ না পেয়ে আমি মধ্যপ্রদেশ যাওয়াই ঠিক করি। আর কয়েকমাস পরে মা হতে যাওয়া বিনতা খবরটা শুনে যেন বিদ্যুতের ছেঁকা খেল। তবে কিছুক্ষণের মধ্যে সামলে নিয়ে সে আমার সিদ্ধান্ত মেনে নিল। আসলে সে জানতো, এই ছাড়া আর কোন সমাধান সূত্র সহজ নয়। ফার্মেসির ফ জানি না, তবু কোন এক অজানা শক্তির বলে বলীয়ান হয়ে আমার একটা জেদ চেপে গেল। সেদিন এক তপ্ত দিনের বিকেল, একটু আগে কাল বৈশাখীর সাময়িক তাণ্ডব শেষ হয়েছে। হাওড়া থেকে রাতের ট্রেন । আমাদের দূর গ্রাম থেকে আগে রওনা দিতে হয়। বিনতার চোখের জল আমাকে বিহ্বল করলেও প্রাণপণে আবেগের বন্যা আটকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ি। পিছনের দুঃখ ভেজা পথ পড়ে রইলো বিনতার জন্য।
তিনটি রাত পার করে, চতুর্থ দিনের দুপুরে ট্রেন থেকে নেমে এক অথৈ জলের সমুদ্রে ভাসছি যেন। স্কুল পালিয়ে হিন্দি সিনেমা দেখার দৌলতে যে টুকু হিন্দি শিখেছিলাম সেই জ্ঞান টুকু যে এমন ভাবে আমাকে বাঁচিয়ে দেবে ভাবতে পারিনি। ঈশ্বরের ছিল হয়তো এক অশেষ করুণা! রেল কামরায় পরিচয় হল এক উত্তর পঞ্চাশের ভদ্রলোকের সঙ্গে, তিনি সেনাবাহিনীতে কাজ করেন এবং যেখানে আমি যাচ্ছি সেইখানেই বাড়ি। ‘কাঁহা সে আয়া ভাই!’ বাংলা মুলুক, কথাটা শুনে তিনি একটু চুপ করে গেলেন। তারপর ধীরে ধীরে আমার কথা শুনে তাঁর বাড়িতে একটা ঘরে থাকার প্রস্তাব দিলেন। আসলে উনি বাড়িতে থাকার সুযোগ কম পান, কর্মসূত্রে। একজন কাউকে খুঁজছিলেন অন্তত বাড়ির বাচ্চাদের একটু দেখাশুনা করার জন্য।
ভাষার সমস্যাটা মোটামুটি ম্যানেজ করতে পারলেও খাওয়া দাওয়া ব্যাপারটা মানাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল তাও আবার স্বপাকে! ফার্মেসির দোকান কিভাবে যে চালাচ্ছি নিজেই বুঝতে পারছি না। তবে দেখলাম পয়সা আছে, একটু ধৈর্য ধরলে কপাল ফিরতে বেশি দেরি হবে না। কোন এক অদৃশ্য শক্তি যেন আমাকে পরিচালনা করছে। সব কিছু ঠিকঠাক চলার ফাঁকে আমার বাড়ি ওয়ালির শুচিবাই স্বভাব নিয়ে পড়ে গেলাম বিপদে। আমার সব রকম সাহায্য নিতে কোন কুণ্ঠাবোধ না হলেও পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই ভদ্র মহিলার ছুঁতমার্গিতা ছিল বাড়াবাড়ি পর্যায়ের। কল পাড়ে এঁটো থালা যত দূরে রাখি না কেন, তিনি আরও তফাৎ যেতে বলেন। জল তুলে দশ বার কলপাড় ধুয়ে দিয়েও স্বস্তি নেই। আমার ভিজে গামছা জামা দশ হাত দূরে শুকোতে দিলেও যেন তাঁর কাপড়ে ঠেকে যাচ্ছে। এইরকম সব অবাঞ্ছিত বিষয় কত সাবধানে মেনে চলতে পারি! ছুটিতে ভদ্রলোক বাড়িতে এলে ঘটনা গুলো না বলে পারলাম না।। ভদ্রলোক মাছি মারার ভঙ্গিতে সব উড়িয়ে দিয়ে বলেন, যে তার স্ত্রী ওই রকম, ওসব পাত্তা দিতে বারণ করলেন। ভিনরাজ্যে ভিন গোত্রের মানুষের মধ্যে কত সাবধানে চলতে হয়, একমাত্র ভুক্ত ভোগীরা জানে! অগত্যা ভদ্রলোকের কথা শিরোধার্য করে চলতে থাকি। এত সব শুচিবাই হলেও সব সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে একটা অদ্ভুত স্বভাব দেখে আমার খুব ঘৃণার উদ্রেক হয়। ঘরে ঘরে শৌচালয় আছে ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ প্রকল্পের ফলশ্রুতিতে। কিন্তু সকাল হলেই স্ত্রী পুরুষ সবাই হাতে একটা জলভরা গাড়ু নিয়ে মাঠ, ঝোপঝাড়, খালপাড় প্রভৃতি জায়গায় যায় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে। আবার এক সম্প্রদায়ের ছায়া অন্যরা সহ্য করতে পারে না। সব কিছু বিবেচনা করে আমার এই পরবাস শুধু মাত্র দুবেলা উদর পূরণ আর সংসারের জন্য।
ইতিমধ্যে খবর পেয়েছি, আমি পুত্র সন্তানের জনক হয়ে গেছি। বিনতা বাপের বাড়িতে সন্তানের জন্ম দিয়েছে শুনে আশ্বস্ত হলাম। যতই গরীব হোক না কেন, তারা স্নেহ দিতে জানে। প্রাইভেট হাসপাতালের একটা বেশ লম্বা ওয়ার্ডে, প্যাসেজের দুই পাশে দুটো বেড। ছোটো জীবনের গল্প শোনাচ্ছে অনিকেত। তার কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট হয়েছে সম্প্রতি। ঠিক ওপাশের বেডে আজ পাঁচদিন হোল একই অবস্থায় শুয়ে থাকতে হচ্ছে ছয় দশক পর করা এক প্রবীণ মানুষের। তাঁর ইউরিনাল ট্রাকে জটিল অপারেশন হয়েছে। আপাতত স্থিতিশীল। অখন্ড অবসরের ফাঁকে কেমন করে তাদের মধ্যে সূক্ষ্ম সুতোর বাঁধন হয়েছে মৌখিক পরিচয়ের সূত্র ধরে। প্রবীণ এক মনে তার হাসপাতাল – পড়শীর গল্প শুনছে আর মাঝে মাঝে চোখ উভয়ের চোখ অজান্তে ভিজে।
কাঁচা পয়সার লোভ বড় খারাপ কাকু। নিজের দিকে তাকালাম না । অচিরেই শরীর আমার রোগগ্রস্ত হয়ে পড়লো। কী হোল বুঝতে পারিনি অনেক দিন। দীর্ঘ ছ মাস পরে ঘরে ফিরে দেখি বাবা মা অন্য ভায়েরা যেন পরের মানুষ। একদিন পর শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে সন্তানের মুখ দেখলাম। বিনতা আমার দিকে চেয়ে থেকে কিছুক্ষণেই আমার অসুস্থতা বুঝতে পারলো। শ্বশুর শাশুড়ি সাধ্য মত আমার যত্ন নেওয়ার চেষ্টা করে বরাবর, তার অন্যথা হোল না আজও। বিনতার কোলে ছোট্ট অনন্ত কে দেখে মনটা আমার ভরে গেল বটে সেভাবে আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটল না শারীরিক অসুস্থতার কারণে। বিকেলে গেলাম সেই বন্ধুর বাড়ি, যে আমার ফার্মেসির ভার দিয়েছে। তার কাছে খুলে বলি সব কিছু। ঠিক হোল পরদিন কলকাতার ডাক্তারের কাছে যাওয়া হবে।
বেলা তখন দুপুর প্রায় ১টা বেজে গেছে। মাঘ মাসের দুপুরে, শীতহীন শহরে আমরা নির্বাক দুটো মানুষ হাঁটছি। কিছুক্ষণ আগে ডাক্তার আমার কী রোগ বলে দিয়েছে। দুটো কিডনি ড্যামেজ, ট্রান্সপ্লান্ট ছাড়া উপায় নেই। মনে হল আমার, দুটো দেহ কলকাতার রাস্তায় হাঁটছে, একজন জীবন্ত অন্যজন মৃত। দ্রুত এই সংবাদ আত্মীয় ও পরিবারের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লো। এখনও সাধারণ মানুষের মধ্যে ধারণা, কিডনি খারাপ হয়ে গেলে মৃত্যু অবধারিত। আত্মীয় তো বটে নিজের জনক জননী যেন ধরেই নিয়েছে অনিকেতের আয়ু আর বেশি নেই। এই মানসিকতার ঋণাত্মক প্রভাব নিবিড় সম্পর্কের বাঁধন যেন কোথাও আলগা হয়ে গেল। পরিচিত সকলের চোখে এক নিঃস্পৃহ দর্শন। ছেলেটি যেন মৃতদের দলে। একমাত্র সেই বন্ধু, বিনতা তার মা ও বাবা অনিকেতের সুস্থতার পক্ষে, যে কোন কষ্ট স্বীকার করতে পারে। স্ত্রী হয়ে স্বামীর বিপদে পাশে দাঁড়ানোর অমূল্য মানসিকতা অনিকেত কে এখনও স্বপ্ন দেখায়!
চিকিৎসা চলে, সময় বয়ে যায়। দেখতে দেখতে সন্তানের বয়স তিন বছর হয়ে গেল। এতদিন কাজ করে যে টাকা জমানো গিয়েছিল, সব প্রায় শেষ হোল তার চিকিৎসায়। ছোট্ট অনন্তের মুখে বাবা ডাক তাকে খুব বিচলিত করে। সে তো তিল তিল করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছে, সন্তানের কী হবে! একদিন তার সন্তান এক গুরুতর প্রশ্ন করে বসলো। ‘বাবা, সকলের বাবা কোলে করে কত আদর করে, তুমি করো না কেন! ‘কী করে সে বোঝাবে, দু কেজির ওজনও তার তুলতে বারণ। বুকটা তার দুঃখে আর যন্ত্রণায় চৌচির হয়ে যায়! কী করে বোঝাবে ছেলেকে! আবার মাঝে মাঝে বলে, – তুমি দুটো লজেন্স দিতে পারো না আমার! কচি কচি কথায় অভিযোগ।পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে সে বলে, – পারবো না! এই তো কত টাকা দেখ। শিশু টাকার কী বোঝে, সে বোঝে বাবার ভালোবাসা।
ইতিমধ্যে এক খলনায়কের উপস্থিতি মঞ্চে, বিনতার জামাইবাবু। অনিকেতের বাবা মা, তার শ্বশুর শাশুড়ি আর বিনতার মগজে ঢুকিয়েছে, – অনিকেতের জন্য মিছে মিছে পয়সা খরচ করে লাভ নেই। বিনতাকে অন্য সংসারের লোভ দেখায় সে। তার বাবা মা তো আগেই এই ভাবনার বশবর্তী হয়েই গেছে, বলার কোন প্রয়োজন ছিল না। বিনতা আর তার বাবা মা এই মন্ত্র কানে নেয়নি। ধন সম্পত্তি যে টুকু অবশিষ্ট আছে, তার বিনিময়ে অনিকেতের জীবন তারা চায়। দিনের বেশির ভাগ সময় তার বন্ধুর সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় যায়। সবটাই চিকিৎসা আর ফান্ড এর ব্যাপারে । ইতিমধ্যে ওরা কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছে , কিডনির আবেদন করে। কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে বোঝাতে পেরেছে। তাদের আবেদনের মর্মকথা। হাসপাতালের ডাক্তার কে বোঝাতে পেরেছে কতটা জরুরি তাদের এই বিষয়টা।
একসময় টাকা পয়সার বিষয়টি আশার আলো জ্বালিয়ে দিলেও কিডনির কোন খবর নেই। দুই বন্ধু পাগলের মত ঘুরে বেড়ায় , কোথাও ক্ষীণ আলোও দেখা পাওয়া যায় না। হঠাৎ এক সন্ধ্যা বেলায় বিহার থেকে একটা ফোন পেয়ে ওরা যেন হাতে চাঁদ পেল। ওই ভদ্রলোক বিনা পয়সায় একটা কিডনি দিতে রাজি হয়েছে, তখন ভাগ্য দিগন্তে আলোর রেখা। এক জটিল প্রক্রিয়া ও ধৈর্যশীল মানসিকতা এবং কিডনি দাতার উপস্থিতির মাধ্যমে শুরু হয়েছিল উভয়ের অস্ত্রোপচার সূক্ষ্ম ভাবে সময়ের নিখুঁত হিসেবে। চিকিৎসক গণ যেন তখন ঈশ্বরের দূত! স্ত্রী কোলের সন্তানকে নিয়ে কোন এক শুভানুধ্যায়ীর আশ্রয় পায় এই হাসপাতালের কাছাকাছি। আমার শ্বশুরের ছিল রাস্তার বিছানা, তিন রাত। সবাই উদগ্রীব এই ভাগ্যহীন জটিল রোগের রোগীর জন্য। যার আয়ুর ছিল না কোন স্থিরতা! সব চেয়ে দুঃখ জনক ঘটনা, রক্তের সম্পর্কের কেউ একদিনও উঁকি দিয়ে চোখের দেখা দেখেনি! মনে মনে বলি, হে ঈশ্বর আমি বাঁচি বা না বাঁচি, এমন নিষ্ঠুর মা বাবা যেন কারোর না হয়! অন্তর্ভেদী গল্পের অভিঘাতে প্রবীণ শ্রোতা নির্বাক!
কিডনি দাতা এবং গ্রহীতা টানা পাঁচদিন আই-সি-ইউতে থাকার পর জেনারেল বেডে স্থানান্তরিত হয়েছে। উভয়ের অবস্থা স্থিতিশীল হলে ডাক্তারদের মুখে হাসি। এই জেনারেল বেডে প্রবীণ আর নবীনের এক অদ্ভুত জীবন ছোঁয়া গল্পের পটভূমি। তারপর একদিন নবীন মানুষটির স্ত্রী সন্তান এসে হাজির, হাসপাতাল থেকে ছুটি। তাদের চোখের আনন্দাশ্রু প্রবীণের চোখে দু ফোঁটা বারি বিন্দু। …… দীর্ঘ বিরতির পর প্রবীণ হাঁটতে হাঁটতে কাছের বাজারে যাচ্ছেন। ভাদ্র মাসের ধারালো রোদ্দুর।। ছাতার আশ্রয়েও যেন অস্বস্তি বিস্তর। এমন সময় তাঁর ঝুল পকেটের মোবাইলটা বেজে উঠলো। কানে ধরতেই ওপার থেকে কথা ভেসে আসে, – কাকু আমি অনিকেত। প্রবীণ বলেন, – কেমন আছো বাপু! সে বলে, – ভালো আছি কাকু আপনাদের আশীর্বাদে। এই তো ছেলেকে কাঁধে করে নিয়ে দোকানে যাচ্ছি, লজেন্স খাবার বায়না যে!
প্রবীণের বুকের মধ্যে এক রাশ শরতের আলো ঝলমল করে ওঠে।
তাপভ্রষ্ট ধরিত্রী – কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা
তারিণী জ্যাঠামশাইকে কারা যেন বলেছে – আমাদের পৃথিবীর নাকি দুর্দিন আসছে। খুব তাড়াতাড়ি এর বিনাশ। বাজার যাওয়ার পথে নরেন মাস্টারকে দেখে ভদ্রলোকের সেই কথাটা মনে পড়ে গেল। দাঁড় করিয়ে জ্যাঠা সেই প্রশ্ন করলো নরেনকে। বিষয়টা শুধু হ্যাঁ বা না উত্তর দেওয়াও সম্ভব নয়। তাই মাস্টার তারিনিবাবুকে সামনের রবিবার নিজেদের বাড়িতে আসতে বললেন।
রবিবারের সকাল। জ্যাঠাকে তার পড়ার ঘরে বসালেন নরেন মাস্টার। প্রবীণ তারিণী বাবুর কোন কিছুর জানার প্রচণ্ড কৌতূহল। ‘আচ্ছা মাস্টার, আমাদের পৃথিবী কী সত্যিই বিপদের মুখে ! দিব্যি তো আছি বলে মনে হয়। তবে মাঝে মাঝে গরম বেশি লাগে, বৃষ্টি সময়ে হয় না, যখন দরকার তখন হয় না।আকাশে বেশি তারা দেখতে পাই না, টিয়া পাখির ঝাঁক, মৌচাক দেখতে পাই না। গাছপালা কমছে, ছায়া নেই, মাটির বাড়ি নেই।’ – ঠিক বলেছে জ্যাঠা। অনেকদিন ধরে পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন এবং লিখিত নথি প্রকাশ করে এই পৃথিবীর পরিবেশের অসঙ্গতির কথা বলছেন। আর এখন তো প্রায় খালি চোখে ও অনুভূতিতে সহজেই বোঝা যাচ্ছে প্রকৃতির পরিবেশে ভয়ানক অস্বচ্ছতা।
জ্যাঠার সংযোজন – ‘আমরা ছোট বেলায় দেখেছি, নির্মল আকাশ, বিমল বাতাস আর কি সুন্দর সবুজের সামিয়ানা, মধুর কুজন। সত্যি মাস্টার, কিছু একটা ঘটছে।’ আসলে পরিবেশ নিয়ে একসময় চিন্তার কোন কারণ ছিল না – মাস্টার বলে। পাহাড়, নদী, বন, মাটি, বাতাস, জল, সব জীবকুল, পতঙ্গকুল, পাখি, আর গাছ নিয়ে একটা সুন্দর পরিবেশ তৈরি হওয়ার জন্য অনেক কোটি বছর সময় লেগেছে এই পৃথিবীর। তারপর মানুষের আবির্ভাব অনেক কাল পরে। আর মানুষ বেশি বুদ্ধিমান হিসেবে জ্ঞান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দ্রুত উন্নতি করে পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণ এবং যুগপৎ ক্ষতি সাধন করতে শুরু করে শিল্পবিপ্লবের শুরু থেকে। আর আজকের পৃথিবী – পরিবেশ তার ফলশ্রুতি।
‘আমরা পুরনো মানুষ, পরিবেশটা কী একটু বুঝিয়ে বল, মাস্টার।’ – জ্যাঠার প্রশ্ন। গুছিয়ে বলার চেষ্টা করে নরেন মাস্টার। ‘মাটি, জল, বাতাস, গাছপালা লতা, সমস্ত প্রাণী, কীট পতঙ্গের সঙ্গে মানুষের সহাবস্থান হল পৃথিবীর পরিবেশ। বিশেষজ্ঞরা পরিবেশ কে আবার তিনটি পর্যায়ে ভাগ করেছেন। (১) ভৌত বা প্রাকৃতিক পরিবেশ। ধরিত্রীর সব জড় ও জীবের সমষ্টি। আলো, মাটি, জল, হাওয়া, গাছপালা আর জীবজন্তু সবকিছুকে নিয়েই এই প্রাকৃতিক পরিবেশ। (২) জীবজ পরিবেশ – যেখানে এই পৃথিবীর মানুষ সমেত সমস্ত জীবের পারস্পরিক মধুর সম্পর্কের মেলবন্ধন। এখানে উদ্ভিদ ও প্রাণী দুটো প্রধান উপাদান। এই পরিবেশে ছত্রাক ও ব্যাকটিরিয়া সংযুক্ত। (৩) সামাজিক পরিবেশ, যা সমাজবদ্ধ মানুষের তৈরি। তার আচার ব্যবহার, রীতিনীতি, অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা, সর্বোপরি মূল্যবোধ, বোধ, সবকিছুর শৃঙ্খলিত বন্ধন এই পরিবেশের মূল কথা। প্রথম দুটো পরিবেশ তৈরি করেছে ধরিত্রী নিজেই। আর এই আদি পরিবেশ সবসময় পরিবর্তিত হচ্ছে। শেষের পরিবেশ মানুষের তৈরি, সভ্যতা শুরু হওয়ার সময় থেকে। এটাও পরিবর্তনশীল।
তারিণী জ্যাঠামশাই সামনে পিছনে মাথা দোলাচ্ছে। বলে – ‘ভাবলে বেশ জটিল লাগে মাস্টার, তবে অনেকটা পরিষ্কার হল।’ কিন্তু মূল সমস্যাতে যেতে হলে আরো কিছু আলোচনা প্রয়োজন, জ্যাঠামশাই – নরেন বলে। সম্মতি নিয়ে মাস্টার পরবর্তী পর্যায়ে। পরিবেশের কথা যখন এলো, বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে ঢুকে পড়লাম। অঞ্চল ভেদে পরিবেশের বিভিন্নতা।একটা বিশেষ অঞ্চলের জন্মানো উদ্ভিদ, মানুষ ও প্রাণীকুল নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করে শুধু নয়, সেখানকার জড় পদার্থ, যেমন জল,বাতাস, মাটি,সূর্যের আলো, চাঁদের আলো সকলের সঙ্গেও আত্মীয়তার সূত্রে নিজেদের বেঁধে ফেলে। বাস্তুতন্ত্র হল পরিবেশের একক। স্থানিক বা আঞ্চলিক জীব-পরিমণ্ডল এক বাস্তুতন্ত্র। অবশ্যই সৌরশক্তির ওপর নির্ভর করে বাস্তুতন্ত্রের আবর্তন। এখানে জীব যতই ক্ষুদ্র হোক বা বৃহৎ হোক প্রত্যেকের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ধরা যাক, একটা বিশেষ ফলদায়ী গাছ। সে গাছের বাসিন্দা পিঁপড়ে, আর নানান কীট পতঙ্গ। আর শাখায় শাখায় নানান দেশীয় পাখি ও শীতের পরিযায়ী পাখি বাসা বাঁধে। সে গাছে যখন, ফুলের কুঁড়ি বা মুকুল ধরে, গাছের দেহবাসি পতঙ্গের সাহায্যে ঘটে পরাগ মিলন। ফলে ফলে ভরে যায় শাখা প্রশাখা। সেই গাছ যোগাচ্ছে অক্সিজেন, খাদ্যপ্রাণ সমৃদ্ধ ফল।ওই গাছের পতঙ্গের সাহায্যে চাষীর মাঠের সবজী খেতের ফোটা ফুলগুলোতে পরাগমিলন ঘটছে। আমরা পাচ্ছি টাটকা সবজি, চাষী পাচ্ছে তার উপযুক্ত মূল্য। সবজি খেতের উৎপাদনে সাহায্য করে নানান বন্ধু কীট পতঙ্গ, যারা আশপাশের জলাভূমি বা আগাছায় বাসা বেঁধে থাকে। ফলনের সার্বিক কাজে সূর্যালোক, বৃষ্টির জল কী পরিমাণ মদত যোগায় , তা বলাই বাহুল্য। মানুষের কাছে মৃত্তিকা হল প্রাণ ধারণের আধার। বিস্তীর্ণ খেতে ধান চাষ করে নিজেদের প্রয়োজনীয় শস্য ও বিক্রয় যোগ্য শস্য উৎপাদনের পর দেখা গেল ধানের খড় বিক্রি হচ্ছে না। কারণ খড় ক্রয়ের খরিদ্দার নেই। কেন নেই? – মাটির বাড়ির অভাব। বেশির ভাগ ইটের বাড়ি গ্রামে গ্রামে, ঘর ছাওয়ার দরকার নেই। ওদিকে চাষী চাষ করে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে, তার লাঙ্গল নেই, লাঙ্গলের গরু নেই যে খড় খাবে। অগত্যা মাঠে পুড়িয়ে দেওয়া বা ঘরের জ্বালানি করা ছাড়া অন্য পথ নেই। কুমারের মাটির হাঁড়ি কলসি তৈরিতে কিছু খড় প্রয়োজন হত, এখন হয় না। জ্বালানি মানে ধোঁয়া, ধোঁয়া মানে কার্বন গ্যাস মিশছে বাতাসে। তাহলে, প্রথমে শৃঙ্খল কাটলো বাস্তুতন্ত্রের তারপর বাতাসে দূষণ। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও চাহিদা পূরণের সাথে সাথে প্রাণচঞ্চল বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠলো। মানুষের আবাস ভূমি বাড়লো, কোথাও বা সবুজ গাছগাছালি ভরা ভূমি রূপান্তরিত হল কারখানাতে। দূষণের সূচনা পর্ব। জ্যাঠামশাই, এ পর্যন্ত বোঝা গেল! খুব সংক্ষেপে বললাম কিন্তু। তারিণী বাবু – ‘সবটাই তো আমার দেখা, কিন্তু এভাবে তো ভাবিনি বাপু কোনদিন!’ ঠিক বলেছেন জ্যাঠা, ভাবলে কোন তল পাওয়া যাবে না। এবারে আমরা ‘গ্রীনহাউস’ এ ঢুকবো। জ্যাঠামশাই অবাক হয়ে মাস্টারের দিকে শুধু চেয়ে থাকে। ‘আপনি স্কুলে পড়ার সময়, বিজ্ঞান বইয়ে কাচের জারের মধ্যে চারা গাছের পরীক্ষা দেখেছিলেন। গ্রীনহাউস মানে গাছপালার যত্ন নেওয়ার জন্য কাচের ঘর। কাচের ভিতর দিয়ে তাপ প্রবেশ করে, ঘরে পরিমিত তাপ থাকে, যে কারণে গাছটি বেঁচে থাকে। আমাদের এই ধরিত্রীকে ওই গ্রীনহাউস-এর মত ঘিরে রয়েছে বায়ুমণ্ডল। ধরার প্রাণশক্তি সূর্যরশ্মি বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তর ভেদ করে ভূ-স্তরে আসে। অবলোহিত শক্তি (infra red energy) রূপে মহাশূন্যে পুনরায় চলে যাওয়ার সময় বেশ কিছু তাপশক্তি পৃথিবীকে ঘিরে রাখা বায়ুমণ্ডলের মধ্যে রয়ে যায়। ফলত আমাদের বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা কিছু কিছু বাড়ে। বিশেষজ্ঞ ও ভূ-বিজ্ঞানীরা অভিমত দিয়েছেন, পৃথিবীটা একটা গ্রীনহাউস। এই গ্রীনহাউস সত্তা আছে বলেই, ধরিত্রীর বুকে প্রাণের সঞ্চার । না হলে হয়তো পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা হত আনুমানিক মাইনাস ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, জীবন সৃষ্টি সম্ভব ছিল না ।
‘তাহলে সমস্যাটা কোথায়, মাস্টারবাবু’ – তারিণী জ্যাঠা প্রশ্ন করে। ‘সমস্যাটা হল, বিগত কয়েক শতাব্দী ধরে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা বেড়ে চলেছে। কারণ হিসেবে উঠে এসেছে, অতিরিক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস নিঃসরণ। জীবাশ্ম ও কাঠের জ্বালানির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার এর ফলশ্রুতি। তাছাড়া পচা জৈব আবর্জনা ও ধানখেত থেকে নিঃসৃত গ্যাস মিথেন, ইলেকট্রনিক শিল্প, রঙ শিল্প, রেফ্রিজারেশন প্রক্রিয়া জাত ক্লোরোফ্লুরকার্বন, বনাঞ্চলের বিনাশ ও অতিরিক্ত রাসায়নিক সারে র ব্যবহার জনিত নাইট্রাস গ্যাস বৃদ্ধি, বায়ু মণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ঘটাচ্ছে। পৃথিবীর সার্বিক পরিবেশ রক্ষায়, ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ৫ জুন সুইডেনের স্টকহোম শহরে বিশ্বের ১১৪টি দেশের প্রতিনিধিরা এক সম্মেলনে সামিল হন। সেই থেকে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস প্রতি বছর সব দেশে পালিত হয়। তারপর বিগত এই পঞ্চাশ বছর ধরে অনেক বিখ্যাত পরিবেশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু প্রতিশ্রুতি মত তাপমাত্রা বৃদ্ধির ধারা কমানো সম্ভব হয়নি। কিন্তু বায়ু মণ্ডলের তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর বেশি বৃদ্ধি ঘটেছে। বলা হচ্ছে এই বৃদ্ধি ১.৫ এর মধ্যে ধরে রাখতে না পারলে সমূহ বিপদ এই পৃথিবীর। তাপমাত্রা বৃদ্ধি না বন্ধ করতে পারলে কয়েক দশকের মধ্যে জীব জগতের বিনাশ শুরু হবে – এই হল ভবিষ্যতবাণী। হিমবাহের গলন, সমুদ্রের জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, জলস্তর বৃদ্ধি ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। বর্তমানের প্রাকৃতিক দুর্যোগ, তাপমাত্রার অতি বৃদ্ধি, ধারাবাহিক বায়ুদূষণ জনিত রোগ বৃদ্ধি এবং নানাবিধ সমস্যার চিত্রমালা, মানব জাতিকে সত্যিই কি ভাবাচ্ছে! অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে মাটির পৃথিবী ক্রমশ কংক্রিটের হচ্ছে, হচ্ছে নদীর মৃত্যু, জলদূষণ, অরণ্যের বিনাশ। যানবাহনের নির্গত গ্যাসে, বিদ্যুৎ চুল্লির ধোঁয়ায়, নির্মাণ শিল্পের ধুলোয় মানুষ আজ গ্যাস চেম্বারের বাসিন্দা। বিশ্বের ধনী দেশগুলোর অপরিণামদর্শী মনোভাব, তাপমাত্রার বৃদ্ধি, যাকে বলা হচ্ছে ‘বিশ্ব উষ্ণায়ন’ এখন মানুষ তথা বিশ্ব প্রকৃতির কাছে এক অশনি সংকেত। যার সামনে কী মানুষের অসহায় আত্ম সমর্পণ!
তারিণী জ্যাঠামশাই নির্বাক শ্রোতা, নরেন মাস্টারের পড়ার ঘরে। তখন দুপুর হলেও গভীর ধোঁয়াশায় ঘেরা।
কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা | Krishna Kishore Middya
New Bengali Novel 2022 | ফিরি বিশল্যকরণী (পর্ব ৪) | উপন্যাস
New Bengali Novel 2022 | ফিরি বিশল্যকরণী (পর্ব ৫) | উপন্যাস
New Bengali Novel 2022 | ফিরি বিশল্যকরণী (পর্ব ৬) | উপন্যাস
New Bengali Novel 2023 | ফিরি বিশল্যকরণী (পর্ব ৮) | উপন্যাস
তাপভ্রষ্ট ধরিত্রী | ধরিত্রী দিবস | ধরিত্রী দিবসের তাৎপর্য কী | বিশ্ব ধরিত্রী দিবস ২০১৯ | ধরিত্রী সম্মেলন ২০২২ | বিশ্ব ধরিত্রী দিবস ২০২২ | ধরিত্রী সম্মেলন ২০২০ | বিশ্ব ধরিত্রী দিবস ২০২০ | বিশ্ব ধরিত্রী দিবস ২০২১ | বিশ্ব ধরিত্রী সম্মেলন কি | ২য় ধরিত্রী সম্মেলন কোথায় অনুষ্ঠিত হয় | বিশ্ব ধরিত্রী সম্মেলন প্রথম কোথায় অনুষ্ঠিত হয় | বাংলা প্রবন্ধ | বাংলার লেখক | প্রবন্ধ ও প্রাবন্ধিক | সেরা প্রবন্ধ | শব্দদ্বীপ | শব্দদ্বীপের লেখক | বাংলা ম্যাগাজিন | ম্যাগাজিন পত্রিকা | শব্দদ্বীপ ম্যাগাজিন
Bengali Story Bangla Golpo | Online Bangla Golpo | Online Er Prem | Ekusti Bangla Golpo | Short bengali story | Bengali story pdf | pratilipi bengali story | Short Stories for Children | English Stories for Kids | Moral Stories for Kids | story in english | story hindi | story book | story for kids | short story | story for girls | short story in english | short story for kids | Modern Bengali Story Apps | Bangla golpo pdf | Bangla golpo story | bangla romantic golpo | choto golpo bangla | bengali story | Sunday suspense golpo | sunday suspense mp3 download | suspense story in hindi | suspense story in english 200 words | English Bengali Story Apps
suspense story in english 300 words | Suspense story examples | suspense story in english 100 words | suspense story writing | very short suspense stories for students | Bengali Story Apps | Top Bangla Golpo Online Reading | New Read Online Bengali Story | Top Best Story Blogs | Best Story Blogs in pdf | Sabuj Basinda | High Challenger | Famous Bangla Golpo Online Reading | Shabdodweep Read Online Bengali Story | Shabdodweep Writer | Bangla Golpo Online Reading pdf | Famous Bengali Story Apps | Download Bengali Story Apps | Bengali Story Apps Download | Reading Bengali Story Apps | Bangla Golpo Online Reading Blogs
Best Story Blogs in Bengali | Live Bengali Story in English | Bangla Golpo Online Reading Ebook | Full Bangla Galpo online | Bengali Story Apps 2024 | New Bengali Story Apps – APK | Golpo Dot Com Series | Bengali Story Apps Playstore | Software – Bengali Story Apps | New Bengali Web Story Audio | New Bengali Web Story Video | Bengali Story Apps Netflix | Audio Bengali Story Apps | Video Story – Bengali Story Apps | Shabdodweep Competition | Story Writing Competition | Bengali Writer | Bengali Writer 2024 | Trending Bangla Golpo Online Reading | Recent Bengali Story Apps | Top Bengali Story Apps | Web Bengali Story Apps | Best Read Online Bengali Story | Read Online Bengali Story 2024
Shabdodweep Bangla Golpo Online Reading | Best Bengali Story Apps | Bengali Famous Story in pdf | Modern Online Bangla Galpo Download | Bangla Golpo Online Reading mp3 | Horror Adult Story | Read Online Bengali Story Collection | Modern Online Bangla Galpo mp4 | Modern Online Bangla Galpo Library | New Bengali Web Story Download | Full Live Bengali Story | Bengali Famous Story 2023 | Shabdodweep Bengali Famous Story | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Bengali Famous Story – video | Bengali Famous Story mp3 | Full Bengali Famous Story | Bengali Literature | Shabdodweep Magazine | Shabdodweep Web Magazine | Live Bengali Story Writer | Shabdodweep Writer | Story Collection – Bengali Story Apps