Bengali Poetry Folder Archive – Sujit Kumar Basu
কবিতা শ্যামাঙগী আজ – সুজিত বসু
পবিত্র শিশিরে ভেজা ভোরের আলোয় ভাসে গৌরাঙ্গী প্রতিমা
নিভৃতে গভীর রাতে সচন্দন পুষ্পহারে গৌরীকে সাজাই
অবৈধ এ সহবাসে অপযশ পার হয় আঙিনার সীমা
যা বলে বলুক লোকে, আমি তবু আরাধনা রোজ করে যাই
গোমুখীর গঙ্গা হয়ে নেমে আসে স্বচ্ছতোয়া কবিতা নির্ঝর
নির্মল ধারার স্রোতে অবগাহনের সুখ কবিরাই জানে
ধীরে ধীরে ম্লান হয় সে আনন্দ, জল দ্রুত ঘোলা হতে থাকে
সকালের সুবাতাস যেমন বিকেলে হয় কালান্তক ঝড়
কত আবর্জনা পাপ গায়ে মেখে নদী যায় সাগর সন্ধানে
গৌরীকে আমিই দিই কলঙ্ক কালিমা, ক্রমে শ্যামা করি তাকে
নিশ্বাস ক্রমশ রুদ্ধ, এলিজির রূপ নেয় প্রতিটি কবিতা
ঈর্ষা আর ঘৃণা নিয়ে বেঁচে থাকা, নিরন্তর কুটিল সন্দেহে
রঙের জৌলুস গেছে গৌরীর শরীর থেকে, রূপচর্চা বৃথা
কবিতা শ্যামাঙগী আজ, কালো গোলাপেরা ঝরে তার শ্যামদেহে।
আমার হাতেই অস্ত্রখানি – সুজিত বসু
তুষারে বুক তুষারে মুখ শীতল দেহ কুঁকড়ে থাকা
আমার ছিল এমনতরো অজস্রতা, আলোর দেহে
আজ জমেছে তুষারধারা, রক্ত কারা কি সন্দেহে
শুকিয়ে নিল ভয়ের হিমে, স্তনের চূড়ো সোনায় মাখা
কেউ দেখেছে, কেউ দেখেছে নাভিমূলের হীরক দ্যুতি
জ্বলতে থাকা, গোপন খাদে হিমের ভারে কে জানছো না
হারিয়ে গেছে তুষারফোঁটা, স্তনের বোঁটা কোন প্রসূতি
যত্নে ধরো কার অধরে, শুকনো ঠোঁটে কি লাঞ্ছনা
জন্ম থেকে অজন্মার এই গর্তে গভীর পাচ্ছি আমি;
যন্ত্র থেকে যন্ত্রণাতে, শরীর থেকে অন্ত্র যাতে
ছিন্ন হবে মহোৎসবে, অবসাদের অবশ স্বাদে
হারিয়ে যাবো, কাড়িয়ে খাবো, ক্লান্ত হ্রদে যেই না নামি
অমনি তুমি অট্টহাসে ছন্দভাষে বলবে জানি
তোমায় আমি খুন করেছি, আমার হাতেই অস্ত্রখানি।
মধুক্ষরা – সুজিত বসু
রুপোর খাতা, সোনার কালি গুলিতে আছি বসে
খাতায় পদচিহ্ন যদি রাজকুমারী আঁকে
আমার যথা সর্বস্ব নিমেষে দেবো তাকে
মত্ত হাওয়া খাতার পাতা ওড়ায় আক্রোশে
বয়েস হলো অনেক আর মনেও ধূ ধূ খরা
তবুও কেন বসেছি আজ কলমে ভরে কালি
আমায় নিয়ে খেলতে থাকে রাজকন্যা খালি
শুকনো ফুলে গাঁথে না মালা, হয় না স্বয়ম্বরা
প্রতীক্ষায় বেলা গড়ায়, শরীরে নামে জরা
আকাশ ঝেঁপে বৃষ্টি আসে, নদীতে বাড়ে জল
স্রোতের তোড়ে ভাসে আমার যা কিছু সম্বল
আসে না তবু রাজার মেয়ে কবিতা মধুক্ষরা
এল না রাজকুমারী, শুধু ডাইনি বুড়ি এসে
আমার হাড় মজ্জা খেয়ে ছড়িয়ে গেছে ঘৃণা
ধারালো দাঁতে রক্ত চুষে বলেছে অবশেষে
এ হাতে তুই কবিতা আর লিখতে পারবি না।
জোনাকিরা দীপ জ্বালে – সুজিত বসু
ঊষর মরুর বুকে কুয়াশার আবরণে জোনাকিরা দীপ
জ্বালে, শুধু জ্বেলে যায়, যদিও ট্রামের তারে আলোর ছলনা
আরোই প্রগাঢ় করে অন্ধকার, জ্বলে না প্রদীপ
অন্তহীন প্রতীক্ষায় বসে থাকি, অন্ধকারে প্রহরকে গোণা
দেখতে পাবে না কেউ অযাচিত এ সুযোগে যদি অনাবৃত
করিই নিজেকে আজ, অতীতের সব পাপ ধুয়ে নিতে পারি
জল তো অঢেল আছে, ঝরনা নদী সাগরেরা স্বতোৎসারিত
আলোকিত ভবিষ্যৎ হাতছানি দিয়ে ডাকে, জোনাকি দিশারী
শেকলে দুহাত বাঁধা, অবিচল পদক্ষেপে বন্দী তবু আসে
এইবার বিস্ফোরণ, এইবার ভেঙে যাবে আশ্চর্য পাথর
বিলাসের রাজপুরে কালো ছায়া,ভুরু বাঁকে ঘৃণা উপহাসে
আমরা ভুলি না তাতে, আমরা সঠিক জানি কিছু পরে ভোর
বিপথগামীরা ফেরে ধীরে ধীরে এক দুই, ফিরবে বাকিরা
অন্ধকার থাক তবু নিশ্চিত আশার আলো জ্বালে জোনাকিরা।
প্রবীণ নরকে – সুজিত বসু
প্রাচীন প্রবেশদ্বার, প্রবেশে নিষেধ নেই, রাত্রিতে সন্ধ্যায়
ঘুরে পরিশ্রান্ত হলে তারই হাতে জলপাত্র, যা থেকে তৃষ্ণার
নিবৃত্তি সহজে হয়, দাম কিন্তু পিপাসাকে আরো বাড়ানোর
পরিমাণে, মানুষের লজ্জা ঘৃণা কপটতা সব ঝরে যায়
যা কিছু মুখোশ ছিল সভ্যতার ঘুচে যায়, কাটে ঘুমঘোর
পোশাক খোলস ছেড়ে সহজেই নগ্ন হয় আদিম মানুষ
ডাকিনী অবাধে ছোঁড়ে মৃত মাংস মরা ধূলি, মায়া নেই তার
সারা রাত খেলা হয়, সেই সুপ্রাচীন খেলা গতানুগতিক
কেউ জয়ী হয় না তো, সকলেই বিদ্ধ হবে, অপেক্ষায় ক্রুশ
আশ্চর্য খেলার মোহে তবু আসে পথ ভুলে অজস্র পথিক
এসেই প্রণত হয় বিনীত হত্যার কাছে শান্ত নিবেদনে
সারাদিন যুদ্ধে যারা অবসন্ন বেদনায়, অন্তহীন শোকে
বিভ্রান্ত তারাই ভাবে কারাগারে নয়, তারা সেবার সদনে
এসেছে শান্তির জন্য, ঘুরেফিরে তারই কাছে , প্রবীণ নরকে।
বিদেশি মেট্রো – সুজিত বসু
পাতালে ছাই, পাতালে যাই, সুড়ঙ্গেরই অঙ্গে গুঢ়
কি ছাই জ্বালো মাথার মণি, কি ছাই জ্বালো বন জোছনা
বৃথাই আলো, কি তাই ভালো, দর্পে গভীর অনুশোচনা
দহনেরই সঙ্গী যেন এ ভঙ্গিতে স্কন্ধারুঢ
পাতাল সরীসৃপের ছায়া শঙ্খ কিছু করো ঘোষণা
বরফকায়া তুহিনছায়া, হিমাঙ্গিনি প্রান্ত স্কার্টের
হ্রস্ব করো, ভস্ম করো নির্লোম তায়, শ্বেত বদ্বীপে
জড়াও আমায় দুরন্ত নীল ঘুরন্ত এই যন্ত্রে কে টের
পাচ্ছে বলো শ্বেত প্রতিমা, জানছে কে আর মৃৎপ্রদীপে
মৃত্যুটুকু দিচ্ছো তুলে, ধবল উরুর এ উৎসবে
ডাকলে যদি, ভুরুর কাজল ছায়া কেন রাখলে তবে !
কচ্ছপ – সুজিত বসু
রাত্তিরে শোবার আগে রোজ তাকে বলি আমি, ‘সুজিত হে আর
কতকাল এইভাবে অনির্দেশ্য চলাফেরা, রুক্ষ নগরীর
সর্পিল উজান বেয়ে, কবে আর মায়াদন্ডখানি
দেখাবে নিপুণভাবে, শিবিরে তোমার যেন অধাতব তীর
কিছুই থাকেনি পড়ে, ’প্রতিবিম্ব হেসে বলে,‘জানি’:
মুখ ভরতি লতাগুল্ম , চুল ভরতি ঘন মেঘে মায়াবী শরীর
কেমন অস্পষ্ট হয়, আমার সুমুখ থেকে দূর বারান্দার
দূরান্তরে চলে যায়, দুচোখের ঘষা কাচে সাংকেতিক ছবি
ফুটিয়ে কোমলভাবে, আমার দুচোখ তবু ঝোলানো পরদায়
আবদ্ধ চিরটা কাল, যেরকম দমবন্ধ অ্যালার্মের ঘড়ি
বাজে নি তীক্ষ্ণতা ছুঁয়ে, সংকেত দাও নি কেউ, আমার কি দায়
রূপোলী আঁশের জাল বুনি কেন, আমায় এ অদ্ভুত নগরী
রাখো ভারানত করে, পিঠের খোলায় মোড়া রত্নের কচ্ছপই।
শব্দ – সুজিত বসু
দ্বীপে সারাদিন কানে বাতাসী নিস্বন
ঢেউয়ের মাতাল শব্দ, বাতিঘরে শিখা
ঝড়ে কাঁপে, তীরে দুই প্রেমিক প্রেমিকা
শব্দে তালাবন্ধ কানে নেই আর প্রেমের কূজন
দ্বীপে সারাদিন শব্দে মুখরিত তীরে ঝাউবন
শোনা হয় না কোনো কিছু, কিছু হয় না দেখা
চারিদিকে শব্দ তবু মানুষেরা নিঃসহায় একা
শব্দে শব্দে কেটে যায় নিঃশব্দ জীবন।
কিছুই থাকে না ছাপ – সুজিত বসু
রাত্তিরে আমার রোজ কিরকম ভাবে যেন ঘুম ভেঙে যায়
বৃষ্টিপাত বৃষ্টিপাত বরফ ঝরার শব্দে শিলা স্তূপীকৃত
বুকে জমে যেরকম অস্পষ্ট দুঃখের স্মৃতি, এই গাঢ় শীতও
যার জন্য সহ্য করা সে প্রিয় নারীর মুখ ছায়ায় ছায়ায়
ভরে যায় কিরকম, বুকে কিছু সাদা সাদা গুচ্ছময় তুলো
তুলে নেওয়া তুলে নেওয়া অকম্প নিশ্বাসে স্থির, কাচের পরদায়
কিছুই থাকেনা ছাপ, ঘরের আসবাব থেকে বাষ্পময় ধুলো
ঘনায় ঘনাতে থাকে, ঝাঁপ ফেলা ঝাঁপ ফেলা, যত কিছু দায়
উড়ে যাক পুড়ে খাক, বোতলের মুখ থেকে মুখরিত লাল
আগুনের বিন্দুগুলি অসহ্য রক্তিম হয়, দুঃখ ফোঁটা ফোঁটা
বিগলিত গলে পড়ে, কোনো কোনো রমণীর ঠোঁট স্তনবোঁটা
আস্বাদে মধুর ভাব, তুষার শিশিরে ভেজা ভোরের সকাল
রাত্তিরের বিছানায় কাঁটার মুকুট রাখে, জেগে জেগে ভাবি
বরফ ঝরার সঙ্গে ঝরে গেছে গোপনতা কুঠুরির চাবি।
অশুভ ঘটেছে কোনো – সুজিত বসু
শ্বেতাঙ্গিনী রমণীকে প্রশ্ন করি, ‘তোমার সম্প্রতি
অশুভ ঘটেছে কোনো? মলিনতা আমন্ত্রণে রুপোলি জংঘার
বিদ্যুতে কিছুটা খাদ মিশিয়েছে? স্তন থেকে ব্যথাতুর ক্ষার
নিস্বনে বয়েছে ঝরনা ভ্রষ্টা পদ্মটির মতো?’ সুবর্ণের জ্যোতি
জটিল কম্পিত ভয়ে নিভে যায়, রমণী লজ্জায়
অস্তগামী দীপ্তিটুকু মেখে নিয়ে লাল গালে আরো রক্ত ছবি
মশালে প্রায়ান্ধকারে দেখায় আমাকে তার সাদা সাদা গায়
কাঁটাদের সূচীমুখ কিরকম ফুটে আছে, কয়েকটি করবী
ঝরে মৃদু নম্রতায় সারাটি শহর জুড়ে, রমণীর বাহু
কুন্ঠায় স্কার্টের প্রান্তে, ভীষণ অজানা লাগে অশুভ শব্দটি
এ কেমন ভিনদেশি, কাঁপা ভীরু কন্ঠস্বর, অনধিকারীর
ছদ্মবেশে চেনাচেনা, পুরু শীত আচ্ছাদনে একান্ত জরায়ু
কি স্বচ্ছ কাচের খন্ড! প্রতিরোধে কাছাকাছি যে কোনো বাড়ির
অন্দরে যাবার আগে চোখে পড়ে বিস্ফারিত শূন্যতা করোটি ।
ময়ূরপঙ্খির নিচে – সুজিত বসু
ময়ূরপঙ্খির নিচে ফুটে থাকে এক গুচ্ছ সাদা অন্ধকার
এ কিছু রয়েছে পড়ে প্রবাল পান্নার খনি, মুক্তো হীরে গুঁড়ো
বাষ্পের ফেনার মতো ফুটে যায় কুয়াশারা অজস্র অপার
বুকের গভীর কেন্দ্রে, ময়ূরপঙ্খির নিচে এমন বেসুরো
এ কেমন বীণাধ্বনি, বিকল কলের বাঁশি, ম্লান সাইরেন
বিষাদে বেজেছে ধীর গভীর এ মধ্যরাতে, এই কি প্রয়াণ !
কুম্ভের মেলাতে খালি কলসি নিয়ে পড়ে থাকা, চন্দন ধূপের
মায়াবী সুগন্ধে ভুলে চুম্বকের আকর্ষণে রত্ন বুঝি প্রাণ
ফিরে পেয়ে ঢুকে পড়বে উপুড় কলসির মধ্যে, এ মৃত্যুকূপের
ভিতরে সাজানো হবে সাদা সাদা অন্ধকারে সাদাসিধে মালা
বিহ্বলা লতার ধ্বস্ত চ্যুত শিরোমণি দিয়ে, ময়ূরপঙ্খির
পালগুলি ফুলে ওঠে কুয়াশাপালঙ্ক হয়ে, নৌকো যায় ডুবে
অন্ধকারে খনিমধ্যে নৌকোটি বেহায়া আজ, শব্দিত বেহালা
বাজায়নি সে তো এই ধূসর নিস্তব্ধ ছুঁয়ে, থেকেছে নিশ্চুপে
তোমরা অদক্ষ মাঝি মেঝেতে বিছানা পেতে তলাও গভীর।
আমার ভ্রমর – সুজিত বসু
আমার ভ্রমর ভয়ংকর এক সর্বনাশী কলঙ্কিনী
রাক্ষসী প্রাণ কৌটোর থেকে বিচ্যুত হয়ে দুয়ার-প্রান্তে
এসেও ভোলেনি ঈর্ষা হিংসা ক্ষমা শূন্যতা, চায়নি জানতে
নির্মম স্নেহ, দু:খী স্বভাবে ভেঙেও আবার কলম কিনি
ভ্রমর সে আমার নিয়তি নিষ্ঠুর
উগ্র মমতায় কলমে এসে বসে
ছড়ায় যন্ত্রণা মন্দ্র নির্ঘোষে
আমারই ব্যর্থতা, আমারই অশ্রুর
চিহ্ন রেখে যায় করুণ কলঙ্কে
বেদনা ঝরে তার মত্ত আক্রোশে
ভ্রমর আমার কলঙ্কিনী ভ্রমর আমার সর্বনাশী
নির্মম এক ভীষণ লোলুপ ভ্রমর তুমি সর্বগ্রাসী
ক্ষুধায় আমায় গ্রাস করেছো, মন্ত্র জানো অত্যাচারী
আমার কাছে ভ্রমর বলো কিসের তুমি হে প্রত্যাশী
যতই বলি রক্তে আমার আমার ঘরেই আলপনা দিস
ভ্রমর তবু জেনে রাখিস
এত মধুর মৃত্যু দিলি বলেই তোকে টানতে পারি
বুকে, স্নেহের রূপ জেনেছি আর কি তোকে আজকে ছাড়ি
সব চেতনা লুপ্ত করে কালো ভ্রমর সারি সারি ।
দেওয়ালে মেয়ের ছবি – সুজিত বসু
শয্যার বাঁদিকে আমি নীলাভ দেওয়ালে তার শান্ত ছবি দেখি
বাম মানে বামপন্থী, প্রগতিশীলের চিহ্ন, অবচেতনের
ঘোরে বুঝি তাই ছিল, চিত্রপটময় তবু চোখে তার স্থির
কিসের সন্ধানী দৃষ্টি, বুকের গভীরে বামে নীল নলকূপ
শীতল স্টেথোস্কোপ হয়ে বসে, আমি তার স্পর্শ থেকে দূরে
যেদিকে যেভাবে যাবো, কোথায় নিস্তার আছে, গুপ্তচরজাল
বিছানো নগরী জুড়ে, মেট্রোর সঙ্গিনী চোখে তারই মতো ছায়া
তারই মতো প্রতিচ্ছবি, সমস্ত ছাপিয়ে ওঠে কুঠার কুঠার
আমার যদিবা কিছু প্রতিক্রিয়া হতে যাবে, প্রতিক্রিয়াশীল
শব্দটি কানের পাশে বেজে ওঠে বজ্রপাতে, ‘সাবধান দ্বার
বন্ধ হবে’ ধ্বনি হয় মাইক্রোফোনে, স্বয়ংক্রিয় মেট্রোর দুয়ার
গলার দুপাশ থেকে ক্রমশ নিবিড় হয়, হিমহিম ভয়ে
যেমনই এসেছি সরে ঘরের একান্ত কোণে নিরাপত্তাবোধে
তখনই দেওয়ালময় প্রতিধ্বনি, দৃষ্টি তার স্থির নির্নিমেষ।
বলে তো ছিল আগেই নিন্দুকে – সুজিত বসু
কি যে দিয়েছো, কিই বা দিতে পারো!
তরলঘন স্তিমিত ছায়া শরীরে হলো গাঢ়
সারাটি দিন সঙ্গিহীন, উত্তাপেও তুহিন হিম
ঝরেছে কার হিমেল নিশ্বাসে যে
লাভ তো হলো নীলাভ হ্রদ, তাহলে তাতে ঢেলে পারদ
অবশ কেন করো যে তুমি আমায়
রাতেও দিলে প্রখর রোদ অবিশ্বাসী আঘাতকারী সেজে
জানি তো স্নেহ সিঞ্চনও, পারি তো দিতে ইন্ধনও
অসাড় কেউ আমাকে তবু থামায়
জলার ধারে অন্ধকারে কে ও? কে ও? কে ও?
স্বপ্ন নাকি! কল্পনা কি ! জরায় জ্বরে জর্জরিত দেহ
বনে দহন প্রকট হোক, মৃদু অগ্নি নির্বাপক
সরিয়ে নিয়ে স্পষ্ট করে দিলে আর্তনাদ
সরালে তবু নিজে তো তুমি সরো নি
দগ্ধ বনে খুঁজেছি ফিরে শুধু বিশল্যকরণী
বনে তো আর কিছুই নেই, আমি শুধুই ভস্ম ধুই
ভূমিকম্পে ধসেছে মেঝে ছাদ
তালাটি ভেঙে খুলেছি ডালা, শরধনুক নিয়ে স্মরণ
হোক না শুধু বিস্মরণ, রত্নসিন্দুকে
উঁকি দিয়েছি,পড়েছি যেই ঝুঁকে
পাঁজর ভাঙে এতটা জোর, অশক্ত পা, নেই তো জোর
কাজ ওর তবে ফুরোলো অহর্নিশ-এ
যন্ত্রণাই নিয়েছি বুকে, শক্ত কঠিন সিসে
কিছুই নেই, তবু
শক্তিহীন পরেছো সাজ, কিছুই যদি না দেবে তবে
সেজেছো কেন প্রভু!
চিরটা কাল এভাবে আমি রয়েই যাবো অধম দীন প্রজা!
তখন থেকে পারি না আর, পারি না হতে সোজা
তখন থেকে রয়েছি নুয়ে, কাঁটা কনুয়ে
জালা ভর্তি জ্বালাই সিন্দুকে
তোমাকে আর কি বলি বলো, আমার মুখে জরা ত্রিবলি
মনে পড়েছে হঠাৎ, এসব বলে তো ছিল আগেই নিন্দুকে।
সুজাতা তোমার সঙ্গে – সুজিত বসু
সুজাতা তোমার সঙ্গে আজকে একটি ওয়ালজ নৃত্যে
মৃদু ঘূর্ণনে ঘুরে যেতে চাই, কোন সিডিটার বাজনা
শুনবে বলো না, জানুয়ারি মাসে এই মস্কোর শীত যে
সহ্য হয় না, আর কেন জানি সারা বুক জুড়ে কান্না
চেপে বসে যায় বাষ্পের মতো, আর পদার্থবিদ্যা
গবেষণাতেও মন তো বসে না, সুজাতা তোমার সঙ্গে
চলো বরফের বৃষ্টিতে ভিজি,হিমেল তুষারে সিক্তা
হলে তুমি বড়ো কষ্ট কি পাবে, তুমি পশ্চিমবঙ্গে
কোথায় রয়েছো জানাও এখনই, আমি রুশী প্রহেলিকা
ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ছুটে চলে যাবো এরোফ্লোটের প্লেনে
শিরিয়েমিতেভা বন্দরে জ্বালো কপালের লাল শিখা
সতর্কতার নিষেধকে আমি গ্রাহ্য করি না জেনে
কাচখন্ডকে রত্ন ভেবে যে ভুলের প্রায়শ্চিত্ত
এতদিন করা হয় নি বলেই হাত কেটে ভাসে রক্তে
একগলা জলে দাঁডিয়েও আজও রয়ে গেছি অতৃপ্ত
নবাবের মতো কবে যে বসাবে আমাকে বুকের তখতে
মুষ্টিযুদ্ধ জানি না তবুও তোমাকে যে করে চুম্বন
যে তোমাকে টানে মায়াচুম্বকে তাকেই বিরাশীসিক্কা
ঘুষি মেরে দেবো, চলো নেচে আসি ফুরোবার আগে যৌবন
সুজাতা আমায় আজ শুধু দাও এই অন্তত ভিক্ষা
আমি জানি চোখ কোটরে ঢুকেছে, কন্ঠার যত হাড়
বেরিয়ে প্রকট অশোভনভাবে, রুক্ষ কেশর চুল
উড়ে উড়ে জটা বেঁধেছে মাথায়, কতদিন যেন ফুল
ছুঁই নি ক্লিষ্ট, উপবাসী আছি, কতদিন অনাহার
তুমি সন্ন্যাসী বুদ্ধকে দিলে অন্ন পানীয় তুলে
আমিও তৃষিত প্রতি রাত্তিরে, জ্বলে মরি প্রতিদিন
যতই থাক না টেবিলে ভদকা শ্যামপেন ড্রাই জিন
সুজাতা তুমি কি ছোঁবে না আমায় চাঁপার কলি আঙুলে!
শীত – সুজিত বসু
শীত নিয়ে আসে হিমভয়
সে দেবে না সুখ
শীতে তার শেষ পরাজয়
জেনেও উৎসুক
কেন যে সে বসেছে নির্বোধ
জানে না তুষার
ছেয়ে দেবে ঘর তার, রোদ
প্রতিচ্ছবি অসহায়তার
ঘরের প্রতিটি কোণে হিম
স্তূপাকার জমা
শীতকাল নির্মম কঠিন
সে জানে না ক্ষমা
এই ঘোর শীতে তার হবে
স্মৃতিশক্তি লোপ
জড়পিন্ড হয়ে পরাভবে
সে আজ বরফ
নিভন্ত চুল্লির শেষ আভা
মরে যায়, মরে
শীত মেলে ধরে তার থাবা
তুষারের ঝড়ে
বসন্ত না এলে আজ ও যে
মরেছে নির্ঘাত
এই ভেবে বসন্তের খোঁজে
প্রার্থনার হাত
স্বর্গে প্রতি দেবতার কাছে
বাড়িয়েও ব্যর্থ হই আমি
তাঁরা বড়ো ব্যস্ত বলে কাজে
নরকে নেমেছি, আরো নামি।
পাথর ছোঁড়ার আগে – সুজিত বসু
ও খুন করেছে তাই শাস্তি দিলে ওকে
আমরা কেউ খুন বুঝি করিনি স্বপ্নকে!
ও করেছে প্রতারণা, ওকে বলো ঠক
অন্তত নিজের কাছে নই বুঝি আমরা কেউ ভণ্ড প্রতারক!
রমণী ধর্ষণে কেউ পাপী
আমরাও তো কল্পনায় কোনো অনিচ্ছুক রমণীকে
বিবস্ত্র করার পর বিধ্বস্ত সংগম শেষে শিহরণে কাঁপি
অনায়াসে পেয়ে যাই আনন্দ ক্ষণিকে।
আমাদের কাল্পনিক অপরাধ কাঁধে নিয়ে ওরা বাস্তবিক
ভয়ে পাংশু হয়ে আছে, ওরা অপরাধী
ওদের শাস্তিতে কেউ পাবে না ক্ষণিক
বেদনা দংশন জ্বালা, এসো না ওদের জন্যে আজ একটু কাঁদি
তোমরা যারা বসে আছো হাতে নিয়ে পাথরের স্তূপ
লোলুপ জিঘাংসা নিয়ে নীরব নিশ্চুপ
প্রতীক্ষায় বসে আছো আঘাত করার জন্য ওদের শরীরে
ধীরে বন্ধু ধীরে
আমাদের পাপ ওরা নিয়েছে মাথায়
তাই তো ওদের দু:খে হবো না কাতর
আমাদের সকলের মনের কালিমা নিয়ে ওরা চলে যায়
আমরা তবু লজ্জা ঘৃণা অপমানে হবো না পাথর
সবাই সহর্ষে দেবে কুমন্ত্রণা, সবাই শকুনি
চেয়ে থাকবে অকম্পিত, হাত কাঁপবে না আর কাঁপবে না পা’ও
পাথর ছোঁড়ার আগে শেষ বার তবু ভেবে নাও
ওরা ছাড়া আর কেউ নয় কিনা খুনি।
বিপথগামীরা – সুজিত বসু
কিছুই পারেনি দিতে তারা
রাত জেগে রাত জেগে ধূপ হয়ে পুড়ে গেছে যারা;
দুরন্ত ঘোড়ার মতো বল্গাহীন অবাধ্য স্বভাব
কয়েকটি যুবক ছন্নছাড়া
হিসেব করেনি কিছু, কিসে ক্ষতি, কিসে হয় লাভ;
রোগা রোগা শ্যামবর্ণা কয়েকটি যুবতী
যাদের হওয়ার কথা উচ্ছ্বাসের উষ্ণ প্রস্রবণ
তারা শুধু ঝরিয়েছে রক্তের ফোয়ারা
নিজেদের বুক থেকে, রক্ত দিয়ে করেছে আহুতি
চোখে সমুদ্রের ছায়া, খোলা আকাশের মতো মন
যুবক বিপথগামী, যুবতীও বিপথগামিনী
এ লেবেল গায়ে মেরে আমরা সব অনড় পাথর;
বিচার নির্ভুল ছিল ! সত্যিই ওদের ঠিক চিনি !
অলজ্জ মুখোশ এঁটে বসে আছি ভণ্ড তপস্বীরা;
বুকে হাত দিয়ে কেউ বলুক সে হয়েছে কাতর
যখন নিহত হলো ওইসব যুবক যুবতী
গুলিতে ঝাঁঝরা বুক, শরীরের ছিঁড়ে গেল শিরা
কি অন্যায় করেছিল, কেন এ ব্যাকুল পরিণতি!
যুবক নিস্পন্দ মৃত, যুবতী ধর্ষিতা সংজ্ঞাহীনা;
কাপুরুষ আমরা শুধু জানাই মিনতি
পায়ে পড়ি শাসকের, আমরা কেউ ওদের চিনি না।
শব্দবনে খেলা – সুজিত বসু
বর্ণগুলি ভীষণ জটিল, বর্ণগুলি খুব অচেনা
লাগছে আমার,ভালো তো খুব লাগছে না আর;
মনের মধ্যে শব্দচড়াই, উৎরাইরাও কেঁদে মরছে
তালি খুঁজছে জরির বুটি
লুটিয়ে পড়ে যন্ত্রণাঢেউ, পাথর তবু সরছে না তো;
কোথায় আমি খুঁজতে যাবো, কোথায় আমি তেমন কামার
গলাবে যার লাল আগুনে, গলাবে যার যাদুর গুণে
গলিয়ে দেবে শব্দে শব্দে নিঝুম ডাঙা,
মরুভূমির মধ্যে ঠিকই গড়বে সে এক স্নিগ্ধ কুটির;
অক্ষরের এই অশ্লীল জাল থেকে মুক্তি দাও স্মরণে
বর্ণশিলা জলে ভাসাবো, ভেসেই যাবো, সামনে মনের
পাথর তো নেই, বালিও আড়ি
আর করে না, পালিয়ে যাবো
একদিন ঠিক পালিয়ে যাবো নীল নগরে
পালিয়ে যাবো বর্ণবিহীন তেপান্তরে
চলে যাচ্ছি, বলে যাচ্ছি ফিরবো না আর, ডুবোপাহাড়ে
ধাক্কা লাগে, জ্ঞান ফিরলেই
খেলছি আবার নির্জনে সেই
আমার নিবিড় শব্দবনে।
কাঁটা – সুজিত বসু
গ্রামের পথে নগ্নপদে চলতে গেলে কাঁটা
ফুটতে থাকে পায়ে বারংবার
ফিরলে দেখি হাসছে কে নির্লজ্জ দুকানকাটা
একটু থেমে জানিয়ে দেয় সে হাসির কারণ তার
এখান থেকেই রোজ সকালে সবজি ট্রেনে চড়ে
পৌঁছোয় যে তোমার বাড়ি তার
খোঁজ কি রাখো , বলতে কিছুই পারিনা উত্তরে
কাঁটার ক্ষতে রক্ত আঁকে চিহ্ন যে লজ্জার।
জীবন তুষারস্তম্ভ – সুজিত বসু
মন্দাক্রান্তা ছন্দে এখানে জীবন তুষারস্তম্ভ
অলস গতিতে হেঁটে যায় ধীরে নিদ্রানীরব দিন
মেঘের মিনারে ছায়া রেখে যায় মানুষের উঁচু দম্ভ
অলস গতিতে হেঁটে যায় ধীরে নিদ্রানীরব দিন
কলুষ কুসুম এখানে ফুটবে, এ তার যোগ্য স্থান
ধুলোয় ধূসর পর্দা দিয়ে তা ঢাকার চেষ্টা ক্ষীণ
কলুষ কুসুম এখানে ফুটবে, এ তার যোগ্য স্থান
ফেনিলোচ্ছল জলতরঙ্গে ভাসমান
সুরাপাত্র
মত্ত জীবন, কলোচ্ছ্বাসের ছায়াভরা মুখ ম্লান
ফেনিলোচ্ছল জলতরঙ্গে ভাসমান
সুরাপাত্র
রামধনুরঙা ভোরের আকাশ ব্যথা বেদনায় মূক
ঘাসের শিশির সেই বেদনার স্বাক্ষর রাখে মাত্র
রামধনুরঙা ভোরের আকাশ ব্যথা বেদনায় মূক
আকাশচুম্বী মিনারে সাজানো মানুষের সেই দম্ভ
অহংকারের ভিতর হয়তো লুকোনো গোপন সুখ
আকাশচুম্বী মিনারে সাজানো মানুষের সেই দম্ভ
খাঁচায় বন্দী উদাসীন মন বিচরণে উন্মুখ
মন্দাক্রান্তা ছন্দে এখানে জীবন তুষারস্তম্ভ ।
দুহাতে কাদার তাল – সুজিত বসু
দুহাতে কাদার তাল ধরে নিলে মনে হয় প্রতিমা নির্মাণ
অচিরে সম্পন্ন হবে, প্রপাত শীতল ভেবে পা দিলে গরম
ধারালো পাথরে পায়ে কলঙ্কের কারুকাজ, তাতেই প্রদান ;
যা কিছু লাবণ্য ও শ্রী করতলে কলঙ্কিত তাই সূক্ষ্মতার
সঙ্গে এনে বসিয়েছি পাথরের খাঁজে খাঁজে, এখন নরম
সংকুচিত উপত্যকা, প্রবঞ্চক গিরিগুহা, ভীষণ কান্তার
সবার শিথিল ভঙ্গি, মৃৎশিল্পী জানে না এ কিসের প্রতীক;
প্রতীক্ষালয়ের মধ্যে নিষাদীও ছলনায় যাত্রিণীর রূপে
শরগুলি রেখে দিত প্রচ্ছন্ন চুলের ভাঁজে, পরিখা অলীক
ভেবে মৃৎশিল্পী ডোবে গভীর মৃত্যুর কূপে, কাদার এ তাল
স্পর্শ মাত্র হয়ে হয়ে ওঠে রত্নভান্ডারের তালা, অথচ কুলুপে
নিপুণ চাবির স্পর্শে বরণ সম্পন্ন হলে নিচের পাতাল
হাতছানি দিয়ে ডাকে, ফণা তোলে শরীরের অভ্যন্তরে সাপ
হোক বিষে নীল দেহ, দুহাতে মাংসল সুখে সুরেলা প্রলাপ ।
বৃত্তে – সুজিত বসু
বৃত্তে ঘুরি বৃত্তে ঘুরি বৃত্তে ঘুরি বৃত্তে
বৃত্তে ঘুরি আমরা সবাই, মিথ্যে ঘুরি মিথ্যে
ঘুরছে সবাই চরকিপাকে চরকি
বেশ করেছি ঘুরছি আমি ঘুরছি তাতে তোর কি
কল্পনাতে আঁকছি সবাই বৃত্ত
কেন্দ্র থেকে সবাই সমান দূরে
সবাই আছি চাকার পরিধিতে
অভাব অনটনের জ্বালা নিত্য
কেন্দ্র থেকে সবাই সমান দূরে
বৃত্তে ঘুরি বৃত্তে ঘুরি ফিরি
আমরা সবাই বৃত্তে ঘুরি বৃত্তে
মিথ্যে ঘুরি মিথ্যে ঘুরি মিথ্যে
বেকার ছেলে হতাশ খুঁজে খুঁজে
সকাল থেকে রাত অবধি চাকরি
অবশেষে মিথ্যে খোঁজা বুঝে
ক্লান্ত শুধু এপথ ওপথ ঘুরে
কেন্দ্র থেকে সবাই সমান দূরে
ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি ঝিরিঝিরি
সকাল থেকে হচ্ছিল বেশ, রাত ঘনালে বর্ষা
মুষলধারে নামলো আচম্বিতে
মায়ের কানের দুল বেচেছি, বেচবো বোনের মাকড়ি
আমরা সবাই চাকার পরিধিতে
শেষ প্রিয়জন যার উপরে ভরসা
করার কথা সে নিহত, তবুও হবে ঘুরতে
রুমাল দিয়ে দুচোখ বাঁধা, খেলা রুমালচুরি
বৃত্তে ঘুরি বৃত্তে ঘুরি বৃত্তে ঘুরি ঘুরি
ঘুরতে ঘুরতে হলাম ভীষণ ক্লান্ত
পেটের আগুন জ্বলছে ধূ ধূ, হয় না সে যে শান্ত
ঘুরতে ঘুরতে মরিয়া হয়ে ঠিক করেছি যুদ্ধে
নামবো এবার, ঘোড়ায় লাগাম এবার হবে জুততে
শাবল হাতে এক খাবলে ছিনিয়ে নেবো খাবারদাবার
মরিই যদি শাবল দিয়ে অন্তত কেউ খুঁড়তে
পারবে কবর, মরার খবর পেলেই যেন তোমরা
কান্নাকাটি করো না কেউ, ঘুরো না আর বৃত্তে
আমিই না হয় হার মেনেছি, তোমরা পারো জিততে।
দ্বীপ – সুজিত বসু
নিভৃত অলস কুঞ্জে পাইনের মৃদু দীর্ঘশ্বাস
ক্রান্তিবৃত্তে উড়ে যাওয়া পাখির পালক জলবায়ু
নিরালায় শীৎকারে প্রতিভাত গোপন সন্ত্রাস
ক্রান্তিবৃত্তে উড়ে যাওয়া পাখির পালক জলবায়ু
হরিদ্রাভ বেলাভূমে গোধূলিতে নূপুরের সুর
তুহিনশীতল দিনে লাজুক বাতির ক্ষীণ আয়ু
হরিদ্রাভ বেলাভূমে গোধূলিতে নূপুরের সুর
রন্ধ্রহীন অন্ধকারে অস্ফুটে অস্পষ্ট
কেকাধ্বনি
কটুগন্ধী তাম্রকূট জালে ছিন্ন বসন্ত মধুর
রন্ধ্রহীন অন্ধকারে অস্ফুটে অস্পষ্ট
কেকাধ্বনি
ধোঁয়া আর বিষবাষ্পে ভরে আছে সুনীল আকাশ
উপকূলে আবিষ্কৃত স্বর্ণহীন এক তাম্রখনি
ধোঁয়া আর বিষবাষ্পে ভরে আছে সুনীল আকাশ
বসন্তে হিমের শেষে ঘরে ফেরে এক দুই আরো বহু পাখি
নিভৃত অলস কুঞ্জে পাইনের মৃদু দীর্ঘশ্বাস ।
তিন মাতালের গল্প – সুজিত বসু
তিনটে মাতাল ফেরীর ঘাটে
সকাল গেল দুপুর গেল বিকেলও প্রায় গড়ায় গড়ায়
শ্মশান মশান ধুইয়ে লালে সূর্য্যি গিয়ে বসলো পাটে
বালির ধূ ধূ পেরিয়ে মরু তেপান্তরের শূন্যে নীরব
সন্ধ্যে প্রসাধনের শেষে শাড়ির আঁচল পরিপাটি
মাথায় তোলে ঘোমটা করে, লজ্জাবতী আস্তে হাঁটে
তিনটে মাতাল শূন্যি চোখে অথই নিঝুম ফেরীর ঘাটে
গুটিসুটি চুপটি মেরে তিনটে খালি বোতল হাতে
জাহাজ আসতে এখনও প্রায়
কয়েক দুপুর বিকেল সন্ধ্যে বৃষ্টি বাদল ঝড়ঝাপটা
এই ফাঁকে কি একটু আরো! বোতল ভাঙে রক্তপাতে
তিনটে মাতাল ফেরীর ঘাটে
আতালপাতাল পেরিয়ে এসে তিনটে মাতাল এখন কি সব
আবোল তাবোল বকছে, প্রথম
মাতাল মারে একটি খাবল দ্বিতীয় জনের ঝুলির থেকে
দ্বিতীয় তাকায় তীক্ষ্ণ চোখে সাঁতরানো জলপরীর দিকে
তিন নম্বর নির্লিপ্ত এসব দেখে
ছক নকশা কাগজপত্র হাতড়ে হাতড়ে অন্ধ ঘাঁটে
তিনটে মাতাল ফেরীর ঘাটে
রাত এদিকে ফুরিয়ে এলো, ঝিকমিকোনো তারার মালা
শুকিয়ে ফুলের পাপড়ি হয়ে ঝরনা ঝরায় পাতলা ফিকে
মিহিন আলোর ওড়না পরা নদীর জলে রক্তজবা
একটু একটু ফুটতে থাকে, এমন সময় বজ্রনাদে
কলের বাঁশি বিকট বাজে, অন্যপারে দ্বীপান্তরে
জাহাজ ছাড়ার শব্দে প্রথম মাতাল ওঠে উসখুসিয়ে
বনের থেকে ডালিম টিয়ে
শিসের শব্দে উৎকর্ণ,পেছন ফেরে প্রথম মাতাল
বালির সাদা বুকে সোনার টুকরো ওঠে ঝিলমিলিয়ে
এক নিশ্বাস বেরিয়ে এসে জমলো পাথর
সময় যে নেই ফুরিয়ে গেল কোথায় কবে কেমন করে
পাতাল শুধু সপ্তপাতাল
দ্বিতীয় মাতাল তারই মতো গভীর কোনো দু:খে কাতর
রঙিন ডানা বিছিয়ে দিয়ে ঘুমকাতুরে দুচোখ মেলে
জলপরী কি আলতো করে তাকিয়ে আছে তারই দিকে !
সময় যে নেই, ফুরিয়ে যাবেই, চোখের মধ্যে দ্যুতির জ্বালা
ছিটকে ভাঙে পুঁতির মালা
তৃতীয় মাতাল ছক গুটিয়ে মুখর হলো খুশির রবে
ফেরীর জাহাজ এতক্ষণে সত্যি সত্যি আসছে তবে।
সোনিয়াকে – সুজিত বসু
নামে যে পিঙগল ধাতু তার স্পর্শ এরকম ধাতব যান্ত্রিঙ্গ
দূরভাষ এনে দিতে পারে কি কখনো, পারে দিতে যত্ন সেবা !
এ যে শুধু কর্কশতা,এ যে শুধু তালকাটা বেসুরো বেঠিক
কথাবার্তা, কতোদূরে বাড়ি তার, কতোদূরে উলিৎসা লিসতেভা!
ট্রামের সুগোল চাকা চলে যায় ঘষে ঘষে বরফ চকচকে
রাস্তার তুহিনে জমা এ আমার হৃৎপিন্ড, কোমল বাষ্পের
ছোঁয়াটুকু জ্বরতপ্ত কপালে লাগার কালে পেয়ে যাই টের
এ কারো বাদামি কেশ সবৃন্ত রয়েছে ঝুলে মায়াবী কুহকে
তারপর ঝোড়ো হাওয়া, তুমুল বৃষ্টির শব্দ, সমুদ্র গর্জন
পাতালের তল থেকে উড়ে আসে উড়োঝুরো শ্যামগুল্মলতা
হীরে প্রবালের স্তূপ, মণিমুক্তো কতোশত, এক ঝুড়ি কথা
আলমাজ সিনেমার গুহা আজ গ্রাস করে কত লোকজন
তোমার চশমার কাচ কার জন্য ঝাপসা হয়, কার জন্য শোক
ভ্রূভঙ্গিমা কার জন্য, বাদামি চুলের গোছা নিরুদ্ধ আক্রোশে
দলিতা সাপিনী হয়, তুমি কার প্রতীক্ষায় জানালায় বসে;
যে মরুদেশের ছেলে পালিয়েছে ফেলে রেখে অবৈধ জাতক !
এখন জননীরূপ, অথচ স্তনের বৃন্তে দুধমধু ঘ্রাণ
নেই বলে অন্ধ শিশু শুষে নেয় কৃত্রিমতা, বোতলের বোঁটা
গন্ধকের ধোঁয়াভরা সারা ঘরে ধূপশিখা নিস্তেজ নিষ্প্রাণ
রাত বাড়ে প্রতীক্ষায়, ঘড়িতে বাজের শব্দ, রাত্তির বারোটা
হোমঅগ্নি জ্বলে যায়, জ্বলে জ্বলে খাক হয় ভস্মরাশি ছাই
রাত্রিবাসে মনে হয় ভৈরবী ভৈরবী আজ, পরনে কি শাড়ি
আমি অন্ধকারে যাই, আরো নির্জনতা চাই, পাতালে তলাই
তোমার আমার মধ্যে শুধু জেগে থাকে এক ধূ ধূ বালিয়াড়ি ।
বৃষ্টি খরা – সুজিত বসু
জানলা খুলে মেঘলা আকাশ
ঝরছে অঝোর বৃষ্টি ধারা
মাটির গন্ধে মাতাল বাতাস
মনটা তখন পাগলপারা
সকাল থেকে বৃষ্টি ঝরা
খিচুড়ি আর বেগুন ভাজা
মায়ের হাতের পোস্ত বড়া
পদ্মাপারের ইলিশ তাজা
গলির মোডে জলের নদী
কাগজের সে নৌকো ভেসে
চলতে চলতে হঠাৎ যদি
পৌঁছোয় রূপকথার দেশে
আরো কয়েক বছর পরে
স্পষ্ট যখন গোঁফের রেখা
মনে ময়ূর বৃষ্টি ঝরে
কেবল শোনা কুহু কেকা
গলির মোড়ে অপ্সরীরা
মুখ ঢেকেছে রঙ্গিন ছাতা
ভেজে শরীর অনাঘ্রাতা
চঞ্চল হয় প্রতি শিরা
পাতলা শাড়ির আড়াল থেকে
প্রস্ফুটিত সুগন্ধময়
শরীর তাদের, রেখে ঢেকে
চলতে পারা সম্ভব নয়
কাটলো আরো কয়েক বছর
বর্ষার এক মুখর রাতে
উলুধ্বনি, মাথায় টোপর
মিললে দুচোখ, মিলন হাতে
আবার ঝরে বৃষ্টি অঝোর
ছাতার নিচে শ্রী চারশো বিশ
কল্পনাতেও মন যে বিভোর
সে রাজ কাপুর ও নার্গিস
আরো কয়েক বসন্ত পার
মাঝবয়েসি দম্পতিরা
দেখা হয়না বৃষ্টিকে আর
চঞ্চল নয় কোনোই শিরা
শরীর মনে ভীষণ খরা
চোখের জ্যোতি কেবলই ক্ষীণ
আর দেখে না বৃষ্টি পড়া
কোথায় সেসব সোনালি দিন
এখন শুধু খবর পড়া
জি এস টি আর অর্থনীতি
দেখা হয় না বৃষ্টি ঝরা
বৃষ্টি এখন শুধুই স্মৃতি
অভিমানী হয়তো আছে
আজও, কিংবা শুধুই শ্রুতি
আসে না আর আমার কাছে
হারিয়ে গেছে অনুভূতি।
সুজিত বসু | Sujit Kumar Basu
19 types of Mashan Thakur | মাসান ঠাকুর | Ranabir Chanda
Rabindranath Thakur in social consciousness 2023 | Bengali Article
Buddhist philosophy and Sudhindranath’s poetic thought | 2023
Women’s role in Christian society | খ্রীষ্টীয় সমাজে নারীর অবস্থান
Bangla Kobita Abritti Songs | Mixed Kobita Bengali Kobita | Sound of bangla kobita lyrics | Sound of bangla kobita in english | Sound of bangla kobita mp3 download | bluetooth bandopadhyay kobita | bratati bandyopadhyay kobita lyrics | bratati bandopadhyay kobita mp3 download | Bangla Kobita Abritti | Best Bangla kobita MP3 Songs | Kobor Bangla Kobita.mp3 | Hits of Bratati Bandopadhyay | Bangla kobita music | Bangla Audio Book | Esho Abritti Kori | Bengali Recitation | Kobita Lyrics Poetry In Bengali | Shabdodweep Web Magazine | High Challenger | Shabdodweep Founder | Sabuj Basinda | Bengali Poetry | Bangla kobita | Bengali Poetry Folder Archive 2024 | Poetry Collection | Book Fair 2024 | bengali poetry | bengali poetry books
Bengali Poetry Folder Archive pdf | Bengali Poem Lines for Caption | bangla kobita | poetry collection books | poetry collections for beginners | poetry collection online | poetry collection in urdu | Bengali Poetry Folder Archive Ebook | poetry collection clothing | new poetry | new poetry 2023 | new poetry in hindi | new poetry in english | new poetry books | new poetry sad | new poems | new poems in english | new poems in hindi | Bengali Poem Lines for Caption in pdf | new poems in urdu | bangla poets | indian poetry | indian poetry in english | indian poetry in urdu | indian poems | indian poems about life | indian poems about love | indian poems about death | Best Bengali Poetry Folder | Best Bengali Poetry Folder 2023
story writing competition india | story competition | poetry competition | poetry competitions australia 2023 | poetry competitions uk | poetry competitions for students | poetry competitions ireland | Bengali Poem Lines for Caption crossword | writing competition | writing competition malaysia | Bengali Poem Lines for Caption in mp3 | writing competition hong kong | writing competition game | Best Bengali Poetry Folder pdf | Trending Bengali Poetry Folder Archive | Bengali Poetry Folder Archive – video | Shabdodweep Writer | bee poem | poem about self love | story poem | poetry angel | narrative poetry examples | poetry reading near me | prose poetry examples | elegy poem | poetry reading | poetry websites | protest poetry | prayer poem | emotional poetry | spoken word poetry | poem about god | percy shelley poems | jane hirshfield
spiritual poems | graveyard poets | chapbook | poems about life | poems to read | English Literature | Bengali Poetry Folder Archive examples | poems about life and love | elizabeth bishop poems | poems about women | sister poems that make you cry | famous quotes from literature and poetry | mothers day poems from daughter | poem about community | Bengali Poetry Folder Archive Ranking | positive Best Bangla Kobita Collection | Bengali Poem Lines for Caption about life struggles | toni morrison poems | good bones poem | google poem | funny poems for adults | inspirational poems about life | friendship poem in english | paul laurence dunbar poems | freedom poem | sad poetry about life | freedom poem | sad poetry about life
Natun Bangla Kabita 2023 | Kobita Bangla Lyrics 2023 book | New Bengali Poetry Folder Archive | Writer – Bengali Poetry Folder Archive | Top Writer – Natun Bangla Kabita 2023 | Top poet – Natun Bangla Kabita 2023 | Poet list – Kobita Bangla Lyrics 2023 | Store – Bengali Poetry Folder Archive | Bangla Full Kobita | Online Full Kobita Bangla 2023 | Full Bangla Kobita PDF | New Bangla Kabita Collection | Shabdodweep Online Poetry Story | Poetry Video Collection | Audio Poetry Collection | Bangla Kobitar Collection in mp3 | Bangla Kobitar collection in pdf | Indian Bengali poetry store | Bangla Kobita Archive | All best bengali poetry | Indian Bengali Poetry Folder Archive | Best Poems of Modern Bengali Poets | Best Collection of Bengali Poetry in pdf | Bengali Poetry Libray in pdf
Autograph of Bengali Poetry | India’s Best Bengali Writer | Shabdodweep Full Bengali Poetry Book | Bengali Poetry Book in Google Bookstore | Google Bengali Poetry Book | Shabdodweep World Web Magazine | Shabdodweep International Magazine | Top Poems of Modern Bengali Poets | Bangla Kobita in Live | Live Bengali Poetry Folder Archive | Bengali Poetry Recitation Studio | Sabuj Basinda Studio for Bengali Poetry | Bangla Kobita Sankalan 2023 | Shabdodweep Kabita Sankalan | New Bengali Poetry Memory | History of Bengali Poetry | History of Bangla Kobita | Documentary film of Bengali Poetry | Youtube Poetry Video | Best Bangla Kobitar Live Video
Live Video Shabdodweep | Bengali to English Poetry | English to Bengali Poetry | Bengali Literature | Full Bengali Life of Poetry | Bangla Kobita Ghar | Online Kabita Archive Library | New Bengali Poetry House | Full Bengali Poetry Collections PDF | Library of Bangla Kobita | Bengali Poetry and Story | Bengali Poetry Writing Competition | World Record of Bengali Poetry Writing | Peaceful Poetry | Online High Trend Bangla Kobita Selection | High Trend Bangla Kobita translation in english | High Trend Bangla Kobita | High Trend Bangla Kobita for instagram | romantic bengali poem lines | bengali short poem lyrics