Live Bangla Kabita Status | Best Shabdodweep Poetry

Sharing Is Caring:

Live Bangla Kabita Status – Prabir Kumar Chowdhury

বোধোদয় – প্রবীর কুমার চৌধুরী

বিশ্বাসের বুকে পদাঘাত করে
বুদ্ধির প্যাচে সমস্তই করছো জয়,
আমি যে হয়েছি ভুলে শরণাগত
পাহাড় প্রমাণ অন্যায়ে তুমি দুর্জয়।

বিবেক বিকিয়ে, সর্বস্ব ছিনিয়ে
প্রমাণ করেছো তুমি মহা বাহুবলি
পথের ভিখারি করেছো আমায়
মিথ্যা ছলনায় আজীবন ছলি।

তুমি বলেছিলে পাশে আছি আমি
মানবিকতা ও ন্যায়বার্তা সাথে নিয়ে
যোগ্যতার প্রতিদানে সবার অধিকার
আজ বুঝেছি ফাঁকি, ধাপ্পার বুড়ি ছুঁয়ে।

বুকেতে জমছে বারুদ, মস্তিষ্কে অনল
আমার বোনের ইজ্জত লোটে মহীয়ান
আর তো পারিনা,সহ্যর সীমা অতিক্রম
দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে উঠছে কলতান।

কত আর বঞ্চনা সইবো, সইবো গঞ্জনা
একই প্রতিচ্ছবি চতুর্দিকে কেটেছে ভ্রম
লক্ষ্মীরা হুঁকার দেয়, বুকের ক্রোধ ঝরে
পথে যে নামতেই হবে বাঁচাতে হবে সম্ভ্রম।

বোন আমার বৈধব্য নিলো – প্রবীর কুমার চৌধুরী

জানি যাবার কথা ছিল যেমন সবার থাকে
সময়ের অনেক আগেই নিয়তির অমোঘ ডাকে
তবে তুমি সহসাই বড় তাড়াতাড়ি গেলে –
বৈতরণীর ওপারে,অসম্পূর্ণ কর্তব্য ফেলে।

এতো যে আপনার, সম্পর্কের গভীর টান,
মায়ায় জড়ানো একত্রে থাকার আহ্বান
আপনার স্বজন, চিরদিনের বাঁধন, চিরটান
এক লহমায় সংসার বন্ধন হল খানখান।

রেখে গেলে যাকে, ছেড়েছুড়ে পথের বাঁকে
সেও ত নিঃস্ব, রিক্ত, স্বজনহীন একাকী থেকে
পাণ্ডুর বদনে, সম্বলহীন পথের ভিখারি আজ
না আছে সঞ্চয়, সম্বল,দেখ তার আজ কী সাজ?

ভয় হয়, কী হয়, কোথায় যায় নির্বোধ,হতভাগী
একান্ত তোমাতেই অনুরক্ত ও যে বড় অভাগী
স্বামী অন্তপ্রাণ, স্বামীই দেবতা স্বামীভিন্ন নেই জ্ঞান
তুমি ছাড়া পৃথিবীতে ওর তো নাই কোন অবস্থান ?

না আছে সহায়,সংস্থান, না আছে গর্ভের সন্তান –
না আছে অবলম্বন না আছে আপন কোন সংস্থান
তরীহীন মাঝ দরিয়ায় সাঁতরাবে আর কতক্ষণ বিহ্বল,
দিশাহীন,তোমার মতো কে করে নিরীক্ষণ?

হৃদয় তার বিদীর্ণ এয়তির চিহ্ন নিশ্চিহ্ন
আজ বোন আমার কেঁদেকুটে হচ্ছে ছিন্নভিন্ন
আর কখনো রাঙাবে না ও কপোল সিঁদুরে
তুমি দূরে, বহুদূরে নিরাসক্ত কায়াহীন সুদূরে।

পিতৃস্নেহে পেলেছি যারে কি করে দেখি সর্বনাশ
ঈশ্বর তাই বুঝি দুর্দিনে আমাকে রেখেছে দুরবাস
ভগ্নীপতি তুমি আমার, দাদার মতো চিরকাল –
মুকুলহীন বোন এখন বৈধব্যে কাটাবে অনন্তকাল।

বসন্ত উৎসব – প্রবীর কুমার চৌধুরী

ও দেহ স্পর্শে এখনও অধরা মাধুরী
উচ্চরিত হয়নি কখনো তোমাকে চাই
কাছে যাওয়ার হয়তো অক্ষম প্রচেষ্টা
সর্বনাশের নেশা ধরানো মিলন অঙ্গনে।
যৌবনের সন্ধিক্ষণে প্রেমের অবয়ব গড়তেই
শব্দের পর শব্দ সাজাই, ছন্দের মালা গেঁথে
ও কণ্ঠে পড়ানোর এও এক অনন্য প্রয়াস।

প্রভাতে প্রথম হাসে শিশিরের কণা
দুর্বার সোহাগ সঙ্গমে জাগে তৃণফুল
তৃপ্তির স্বাদে। এও এক অনন্য মিলন।
বসন্ত প্রেম আনে ছড়ায় যৌবনের দেহময় –
মনে,মনে সাড়া জাগে,দেহ আরক্ত বসন্ত হিল্লোলে ।
তুমিও কী পলাশের আভায় লালে লাল হও?
বুকেতে জোয়ার আসে বসন্ত মালতির সৌরভে।

আবিরে, আবিরে শরীরময় বসন্ত উৎসব
ধরণীর ধুলিমাখা পথে মেতে উঠে যৌবন।

কালবেলা – প্রবীর কুমার চৌধুরী

বিনিদ্র রজনী কাটে
মুখরিত প্রতিবাদে
মদমত্ত প্রতীকীর বিদ্রূপ –
শত প্রলোভন রেখার ছেদবিন্দুর
আমূল পরিবর্তন।

একা নয়,পদে পদ মেলাতে
একাধিক,অসংখ্য ,অজস্র মুখে মিলনের গান,
এ যেন বিধির বিধান।

রাত জাগে, নতুন ভোরের প্রত্যাশায়,
ধ্বংসের আশঙ্কায় বুক কাঁপে দুরু,দুরু
হে অমৃতের পুত্র শত আহ্বানে,
একবার, কেবলই একবার
তুমিই তো মুমূর্ষের ত্রাতা,দাও অভয় হস্ত।

বিভেদ,বৈষম্য,হাতিয়ারে রক্তাক্ত, বিদীর্ণ ধরা,
তারি-মাঝে সোপান বেয়ে নেবে আসে মানবতা,
এখনই প্রয়োজন কিছু আগামীর সঞ্চয়।

মনের ডাকঘরে হয়েছে ক্ষোভ জমা, মহৎ-এর অজস্র পত্র,
এতকাল ছলনা বাহুবলির হাত ধরে করে প্রবঞ্চনা,করে বারংবার নিষ্ঠুর আঘাত।
রাতভরে যে মিছিল চলেছে নগ্নপদে, দুচোখে –
অবজ্ঞা, প্রতিরোধে, প্রতিবাদ।

আজ দেখি গর্জে ওঠে সময় – অন্যায়, এ অন্যায় …।

নতুন করে মা হবি – প্রবীর কুমার চৌধুরী

(গদ্য)

চিরদিনের মতো ঘুম পাড়িয়ে দে মা,
আসবো আবার তোর সোহাগ ভরা কোলে ।
চাঁদমুখে তোর ওই মধুর হাসি,
স্নেহভরা মাতৃত্বের পবিত্র স্পর্শে –
সার্থক হোক আমার মানবজীবন।

(পদ্য)

ভাঙাস নে মা ঘুম আমার স্বপ্নভরা চোখে,
স্মৃতির ছেলেবেলা রয়েছে বার্ধক্যের বুকে।
সরিয়ে দিয়ে সকল ভয়, স্বপ্নে শুনি গান-
“খোকা ঘুমাল” শব্দগুলো হচ্ছে যেন ম্লান,
স্তনের সুধায় হয়েছি বড়, মাতৃস্পর্শে কল্যাণ।

(গদ্য)

বিতৃষ্ণায় ভরে যায় মন বিপন্ন বসুধা-
অস্থিরতা, অসহায়তা, কুড়ে, কুড়ে খায় জীবন।
নষ্ট সময়, নষ্ট মনের এখন বীভৎস দাপাদাপি,
আদ্যন্ত পরাজিত, বিপর্যস্ত শতাব্দী।
বিস্মৃত স্বাধীনতার স্বাভাবিক বাকস্পন্দন।

(পদ্য)

ওমা তোর চরণ দুটি ধরি, আহা মরি, মরি,
পক্ক অলোক, রাঙিয়ে আলোয়, মাতৃরূপ গড়ি।
তোর বুক ভরা ধন স্নেহ, শাসন, দে ফিরিয়ে দে,
সৎ, নিঃস্বার্থ মানুষ গড়ায় মাতরে আনন্দে,
স্নেহ, প্রীতি, ভালোবাসা শেখাস নিজ পছন্দে।

(গদ্য)

পাষাণ বুকে বেঁধে শব্দে আঁচড় কেটে যাই-
যুগান্তরের কলমে বঞ্চনা, বৈষম্য, বিভেদের মর্মনাদ।
অক্ষরের গায়ে বারুদ মাখাও, শোষণে নিপীড়িত জনজীবন,
কবিতাই একমাত্র গণতন্ত্রের শানিত তলোয়ার –
আজকের কবিতার প্রত্যেক শব্দেই ঝড় তুলুক নির্ভীক সত্যের প্রকাশ।

অপেক্ষায় – প্রবীর কুমার চৌধুরী

জেগে আছি অতন্দ্র প্রহরায়, পথ চেয়ে –
তুমি আসবে বলে বহু শূন্যতা বুকে নিয়ে।
তুমি আসবে বলে নিশীথের অন্ধকারে –
রেখেছি খুলে দার, দুহাত উপহারে ভরে।

তোমার কুটিরে হয়েছি আমি প্রেম শিকলে বন্দি
দুর্দম হৃদয়ের টান, মানে না মানা, অভিসন্ধি ।
তুমি আসবে বলে দুচোখ শুধু স্বপ্ন আঁকে,
চলে গিয়েও ফিরে আসি শুধুই মিলন সুখে।

পায়ে পেষা ভোরের শিউলি যতনে আমার বুকে –
নিয়েছ ভালোবেসে, কখনো চেয়েছো কি ঝুঁকে?
শবরীর প্রতীক্ষায় দিন গোনার হবে কি অবসান,
কবে নয়নে নয়ন মেলে দূর হবে অভিমান?

নেভে যদি দ্বীপ তবু এ আঁখির তারা জ্বলবে,
জানি এক নিশীথে এসে প্রাণের কথা বলবে।
দেবে সুখ, ভরে বুক চুপকথা চয়নে, চয়নে –
জেগে আছি একেলা,বিরহজ্বালা মননে

জাগুক চেতনা – প্রবীর কুমার চৌধুরী

ঈগলডানার অন্ধকারে চোখের মুক্ত আলোয় –
ছড়ানো যত কবিতার উর্ণ-কঙ্কাল সরিয়ে –
কাব্যহীন রাজপথে গড়ে উঠুক শব্দের আস্তানা,
সেখানে পরম সুখে বাস করবে প্রত্যাবর্তনের কবিতা।

শৈশব থেকে দীর্ঘশ্বাস তুলে ধরে জীবন – মরণের প্রশ্ন,
মুখরেখায় অশান্ত প্রতিবাদের বর্ণছটা,
কানা গলির অন্ধকারে কেন অদৃশ্য শৃঙ্খল,
কেন,কেন পবিত্র মাটিতে এত গলিত, দুর্গন্ধ শব?
অশান্ত সময়ের সান্ত্রী নীরব দর্শক, জিভহীন,
বাকরোহিত মুখ দৈনন্দিন ধর্ষণের শিকার, অসহায়তায়।
মানবতা ককিয়ে ওঠে – কার দোষ ?

তমসায় স্তাবকের উল্লসিত কোলাহলে দীর্ণ, শীর্ণ জনজীবন।
বাউণ্ডুলের হাতদুটি অবরুদ্ধ, দুঃসহ পরাজয়ে নতজানু,
এসো আবেগ ভুলে সাহসে পথচলি, আবেগ আজ জন্মশত্রু।
চেতনা – প্রবাহের ভিতর জেগে উঠুক ক্রোধ, প্রতিবাদ,
অগণিত সবুজপত্রে উচ্চারিত হোক অমোঘ সত্য নির্দ্বিধায়।
অন্ধকার কেটেই শুরু হোক নবজীবনের চলার পথ।

নতজানু মাথারা উঠে আসুক সাহস বেয়ে –
মৃত্যুর কোলে মাথা রেখে বার, বার উচ্চারিত হোক –
এ পৃথিবী আমাদের, আমরাই বাসযোগ্য করবো,
অসময়ে অনেককেই চলে যেতে হলো, কেন –
সেই কৈফিয়ত মানবতার দরজায় চাইবো।

ছদ্মবেশী – প্রবীর কুমার চৌধুরী

মিঠে বুলি, কোলাকুলি বড় মেকি বসেছে আনন্দ বাসর
বিষে ভরা, সব আত্মহারা চেনে না মৃত্যুর আসর।
এতো কেন, ভয় যেন কেবলই এসে জড়িয়ে ধরে ,
ভালো লাগে, প্রেম জাগে নকল তৃপ্তি থরে, থরে।

ভোরের সৌরভ, কোথায় গৌরব, পিছনে ঝুলছে হতাশার মালা,
বাস্তব সত্য,সবই আমিত্ব আসলে জপছে স্বার্থের জপমালা।

হাতে হাতে, ভাত পাতে তাতেও মাখানো কত রক্ত-
সাজানো হাসি, দুর্গন্ধ, বাসী, তাও পেতে সব অনুরক্ত।
কেমনে বলি, এযে অন্তর্জলি – খুঁজি শ্রেষ্ঠ মানবী তিলোত্তমা
রাতের রূপে, দেহ কাঁপে রক্তে লেখে সে মৃত্যুনামা।

অবশেষে – প্রবীর কুমার চৌধুরী

দুচোখের পাতার কেড়েছে ঘুম
তবুও বেদনায় আনন্দের ধুম
ঠোঁটে দিয়েছে কামসিক্ত চুম্বন
নিষিদ্ধ, দুর্দম কামনাই অবলম্বন।

তুমি তো রেখেছো অবহেলে
বহিরঙ্গ সাজাও ছলে বলে –
রোদনে ভরা সে বাঁশির সুর
বাজাও সংগোপনে বহুদূর।

কিরীটী শোভায় আত্মসুখী তুমি
মনবিতানে সৌরভহীন দুষ্টুমি
নষ্ট দুপুরে প্রখর তাপের দাবানলে
কত সংসার ভস্মীভূত খান্ডবানলে।

সময়ের প্রহসনে – প্রবীর কুমার চৌধুরী

জানালার বাইরে অজস্র মরা ইতিহাস-
চোরা পকেটে গুঁজে – মৃতাত্মার প্রচ্ছদ প্ৰহসন।
প্রায়ান্ধকারের দেওয়ালে টাঙানো নানা ক্যানভাসে –
থরে,থরে সাজানো চালচিত্রের মুখোশ –
কালকেউটের ফণা ভয় দেখায় বেনোজলে একাকীত্বের আঁধারে।

সদরে বসেছে সাজানো পাহারা, অন্দরে অকল্পনীয় তাচ্ছিল্য,
ছেঁড়া শাড়ীর ভাঁজ খুলে,খুলে নিলাম চলছে লোভনীয়,
অন্তঃপুর নেড়েচেড়ে দেখছে অন্তরীক্ষে গোপন মিনাবাজার ।
জানালার কার্নিশে ঘাম ঝরা সময়ের গানে –
মন ভরে দিন – রাত, শুধু দাম মেলে না, মেলে ঠিকাদারে।

জন্মের ঘাট ভয়াভয় ভঙ্গুর, অতলে তলায় নির্ভরতার সিঁড়ি,
উৎসবে, উৎসবে – জিনে খাওয়ানো গর্ভ নিরোধক বড়ি –
যথেচ্ছ স্বেচ্ছাচারে অসহায় স্বাধীনতা, সহসাই বিদ্রোহ করে –
সময়ের ব্যবধানে দায়মুক্তির চোঙা,চোঙা যুক্তির উপমায় –
ভিত – সচকিত সুখপাখি, ভয়ংকর আকাশপথে ভারসাম্যহীন উড়ছে।

গুটিকয় মানুষ ফুর্তির প্রাণে মিথ্যার ফানুস ওড়ায়,
অবুঝ সাদামাটারা দুই কানে শুনছে আর গোগ্রাসে গিলছে পাঁচন তন্ত্র। বিকল প্রতিশ্রুতির অসামঞ্জস্য মন্ত্রে-
গুঁড়ো,গুঁড়ো রঙিন আলোর ফুলঝুরি বিভ্রান্তের যাঁতাকলে পুড়ছে।
নতুন কবিতা জুড়ে,জুড়ে অনন্তের অক্ষর সেতুর –
মাঝখানে দাঁড়িয়ে দেখো শহিদেরা কাঁদছে।

ইতিহাস হয়ে – প্রবীর কুমার চৌধুরী

বসে নিশ্চুপ, অক্ষর মরমে
ম্যাজম্যাজে সন্ধ্যা ভাতঘুমে –
বৃথা নূর ছড়ায় জবর খবরে।

কিতাবের বুকে চুমুর ক্ষত
অর্থের তাড়সে মুখোশী যত
খণ্ডৎ সুরে থুতু মোছে শীৎকারে।

দুটি হাতে ভরা চেতনার বই
বাকবিতণ্ডায় ওঠে হইচই
প্রতিভারা আড়ষ্ট থাকে স্লেটে।

জানালা খুলে বাড়ায় ছিপ
বড়শিতে পরে বৃষ্টি টিপটিপ
চাটের মাছ ভেজে রাখে প্লেটে।

নোনা দেওয়ালের ইট সরায়
বেলোয়ারি ঝাড় দুঃখ বাড়ায়
খাপবন্দি জীবন সখা – সে ।

বারো ঘরের সে এক উঠোন
দরদ ভেঙে সব উৎপাটন
সুতোহীন দেহবল্লরী নগ্ন হাসে।

হয়তো একদিন – প্রবীর কুমার চৌধুরী

কিছু কিছু অভিমান হয়তো অবসানহীন,
ব্যথিত করে তোমায়, বুকে ধরে রাখো –
হয়তো অপ্রকাশিত থাকে লোক লজ্জায়,
হয়তো কিছু কথা, স্বপ্ন জাগায় তোমার চিরবঞ্চিত বুকে।

জীবদ্দশায় হয়তো মিলনের সম্ভাবনা ক্ষীণ
তবুও দুচোখ ভরা থাক আশায় স্বপ্ন রঙিন,
উন্মাতাল আবেগে চলার দিনগুলো থাক আলোকিত-
পথ – পথেই সাজাক বিবাহবাসর, অপেক্ষায় নির্নিমেষ।

ক্ষুরধার মিলনকাব্য রচি না আমি, থাকে না অন্তর্জালে
বুকের চাপা কথা ফিরে, ফিরে আসে কলমের ডগায়-
তীব্র উদ্বেগে ঝরে, ঝরে পড়ে পলাশে,শিমুল তলে।
তোমার বাচিক কণ্ঠস্বরে পরিব্যাপ্ত আঁধার আলো করে।

আমার গোলাপ ঝরেছে হাজার বছর ধরে
তোমার স্মরণীয় রুমালে রেখেছো বেঁধে,
ঢেউয়ের মতো তোমার বুকে ছড়াবে অন্তিমে
তুমি শবানুগমে ছড়িয়ে দিও প্রকাশ্যে আসার আগে।

হয়তো এক বসন্তে শ্মশানে উড়বে মুঠো,মুঠো কবিতার ছাই,
হয়তো আমিই কেবল সে হাতছানিতে নাই।
হাজার চোখে দেখবো সেদিন তোমার বিরোহী আঁখিজল
আমার তখন চিরদিনের ছুটি, তোমার পা-দুটি টলমল।

প্রতীক্ষায় – প্রবীর কুমার চৌধুরী

নষ্ট দুপুরে খেরোর খাতা খুলে প্রাত্যহিক জীবনের হিসাব কষি,
সংবাদে বিতৃষ্ণা, অধঃপাতে সমাপতন। বিশ্বাস হীনতায়-
নির্নিমেষ চেয়ে থাকি পথে – স্বচ্ছতার প্রতীক্ষায়।

আজ বড় একা লাগে এ বোহেমিয়ান সন্ধ্যায়,
আয়ুকালের সায়াহ্নে ধূসর স্টেশনে নিস্তরঙ্গ জনারণ্যে-
আমি তো প্রত্যক্ষ করি – নিরসন চায় উৎপীড়িত জনতা।

আমি প্রতিনিয়তই প্রত্যক্ষ করি –
উঠোন জুড়ে বাঘের অনুসন্ধিৎসু পায়ের ছাপ,
আমি তো এত কাল ধরে স্বপ্ন দেখেছি ঘুমে, জাগরণে-
পৃথিবীময় উঠানজুড়ে লক্ষ্মীদেবীর পদচিহ্ন, মমতার বিছানায় –
সুস্নিগ্ধ মায়ের স্তন্যপানরত দেবশিশুর নির্মল হাসি।
এই দুর্বোধ্য রহস্য ভেদের সফলতা বুকে করেই তো
বাঁচতে চেয়েছি।

এখন সর্বজন জনপ্রিয়তা কেবলই লোভ হয়ে নরকে নামায়,
আশুগৃহে জৌলুসে মোড়া পাপ অহর্নিশি দংশায় সারা অঙ্গে।
আমি শুধু বিবিধ স্বপ্নের সমাহারে মালা গেঁথে, গেঁথেই মুক্তির গলায় পরাতে চেয়েছি।
অযুথ বছর ধরেই এই মুক্তির অন্বেষণেই আকাশ পথে ছুটে বেড়ায় লক্ষ্য তারকা।

আগামী প্রজন্ম – প্রবীর কুমার চৌধুরী

কাল প্রভাতে নির্মল শ্বাস নিক আগামীর প্রজন্ম
সুখ-শান্তিতে নিমগ্ন থাক সার্থক হোক মনুষ্যজন্ম।
পুরাতন জাগুক, বস্ত্রাচ্ছাদিত নতুনের আবরণে,
সংস্কারমূলক উন্নয়ন থাক নব রূপরেখার রূপায়ণে।

চেতনার উন্মেষ দিকে, দিকে হোক মহাজাগরণে,
উদিত হোক নব আশা, প্রত্যাশা নব হৃদয়ে।
মিলনের ছন্দে মাতুক উত্তরসূরি দক্ষতার আরোহণে,
সততা বিকশিত হোক সার্থকতার অভিপ্রায়ে।

নাড়া দিক – চতুর্দিক, হাসি ঝরুক ব্যথিত,বঞ্চিত হৃদয়ে,
শিশুর মনে দৃঢ়তা জাগুক মাতৃআঁচলের মায়া কাটিয়ে
উচ্ছ্বাসে আঁকুক নতুন জীবন সত্য-শিবের দোরধরে –
হৃত সম্মান ফিরিয়ে আনুন ঘুরে, ঘুরে দেশদেশান্তরে।

আগামীর প্রজন্ম উজ্জ্বল করুক ভারত মহান দেশ,
রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দের কাব্য কথায় –
নানা ধর্ম,জাতের এক মহান স্বপ্নের এখনো আছে রেশ
আগামীর প্রজন্ম দৃঢ়তায় ভারত তুলবে সেরার তালিকায়।

মনের রঙে, রাঙিয়ে তুলবে প্রেম-প্রীতির যত কিছু অপূরণ,
না বলা কথা, বুকে চাপা ব্যথা নব সন্তানে হবে স্ফুরণ।
মহাবিদ্রোহী একে দেবে পদচিহ্ন প্রবল সে পরাক্রমী-
জন্ম – জন্মান্তর উজ্জীবিত হবে তাদেরই চরণ নমি।

বিদায় বিধুর – প্রবীর কুমার চৌধুরী

যেতে হবে বলেই তো জীবন এতো সুন্দর,
বেদনা বিধুর পিছু ডাক নষ্ট দুপুরের ভারাক্রান্ত মন-
সচেতন করে, নিপুণ অনুসরণ ক্ষিপ্রতায় আয়োজন,
মন উচাটন বিবসনা, কালক্ষয়ে নাহয় মন্থর ।

তমাল সারি সাজায়েছে খেয়া পথ, মায়াময়-
যত সঞ্চিত আপন, যাপনে, যাপনে বাঁধা পরে মন
স্মৃতির আঙিনায় চমকে, থমকে বড় মনোময় স্বজন
সাজায়ে রাখি যতনে, আগামী থরে, থরে মায়াহীন নির্ভয়।

বেলাশেষে গোধূলির আলো, সন্ধ্যায় ফেরার তাগিদ
আকাশ যানে বসি শুনিব বিদায় মূর্ছনা সংগীত ।

চালচিত্র – প্রবীর কুমার চৌধুরী

আর একবার নাহয় সমুদ্র সিঞ্চন করে অমৃত তুলে আনি,
গরলে ভরেছে কণ্ঠ – না আমি সে নীলকন্ঠ নই।

রোষে ভরেছে হৃদয় শ্রেষ্ঠ ছদ্মবেশী কামিনীর সঙ্গ
কৃত্রিম পুরুষাঙ্গে চালিয়ে নিচ্ছ সঙ্গম,
দুয়ারে দাঁড়িয়ে ভুজঙ্গ অবলোকনে বিষময় মৃত্যু ছোবল।

দেবতার দোর ধরে বাজাও শঙ্খ
সে শক্তিবানের কৃপাধন্য তুমি ,শোষণ দংশন।

খুশির বস্ত্র খুলে নাও আজও মহাভারত
কলিতে নির্বিষ, নির্জীব,শক্তিহীন শ্রীকৃষ্ণ,
শ্রীরাধা প্রেমে আকন্ঠ লীলায় গুরুচন্ডালিকা।

ষড়যন্ত্রের আর একবার জয়ধ্বনি তোল –
শরশয্যায় ব্রহ্মচারী ভীষ্ম, তৃপ্তিতে হাসছে শিখণ্ডীর ওষ্ঠ।

হতচেতন – প্রবীর কুমার চৌধুরী

একটা কথায় মরছি ব্যথায় তুমিও কি বোঝ অনুষঙ্গ
কালো দীঘল লোভে বিকল অহম বুকে মত্ত ভুজঙ্গ।
ভীষণ হাঁকডাক বাজায় জয়ঢাক আপন কেতন গর্বে অচেতন
রাখবে কোথায় থাকবে হেথায় সবই অসার যাবে নিকেতন।

শুধুই একবার নয়তো বারংবার মায়ের গর্ভে পূর্ণ মাসে
এই ভুলোকে, আলোয় আলোকে প্রথম দেখা মাতৃ প্রতিভাসে।

নাড়িছেঁড়া টান জানায় আহ্বান যেমন নদী আপন বেগে
স্রোতেই যায় সাগরে ধায় পাহাড় হতে ভূয়ে অনুরাগে।
উপরে সর্বশক্তিমান এত যে ভক্তি পান নাই কোন দম্ভ
কেন মানব হও দানব কর্মে আসে শুম্ভ-নিশুম্ভ ?

মুক্তি অথবা মৃত্যু – প্রবীর কুমার চৌধুরী

জনতার ভিড়ে মিশে ভালোবাসা ফেরি করতে বেড়িয়েছি,
সহসাই প্রতীয়মান প্রাত্যহিক দুপুরে ঘুমহীন চোখে –
অজানা অতৃপ্তির অসহ্য জ্বালা স্তন উদ্দ্যিত বুকে নিয়ে
তুমি হাইরাইজের ঝুল বারান্দায় দাঁড়িয়ে ।
অশ্রুসিক্ত ঝাপসা দৃষ্টির অন্তরালে মুখ লুকালে দ্রুততায়।

তোমার কালিমালিপ্ত দুচোখে সে মোদীরতা নেই,
আকর্ষণহীন অবয়ব, ঠোঁটে দুষ্প্রাপ্য মোনালিসা হাসি নেই,
চমকিত হই, তুমি ক্লান্তিতে যেন নিশ্চল, বধির মাটির প্রতিমা।
অথচ গেল বছরই বিবাহান্তে তুমি ছিলে সুখপিঞ্জরে মুক্ত বিহঙ্গ।
আর তোমার যাওয়ার পথে আমি ছিলাম মহা শূন্যতায় প্রাণহীন।

তোমার অভাবে একাকীত্বের আর অসহায়ত্বের –
অন্ধকারে, আমি হেঁটে চলেছি লক্ষ পায়ের মিছিলের অভ্যন্তরে,
মুখ থেকে নির্গত করেছি দীপ্ত শ্লোগান, কদম, কদম বাড়িয়েছি –
প্রতিবাদের পদক্ষেপ, আজ হাতে আমার অধিকারের প্ল্যাকার্ড,
তোমায় হারিয়ে পেয়েছি অসংখ্য বঞ্চিত মা, বোন, ভাইয়ের ভালোবাসা।

যদি প্রশ্ন করো এ জীবনে কি পেলাম আমি, তবে বলতে হয় –
তোমার প্রেমে বঞ্চিত হয়ে পথেই পেয়েছি নতুন ঘরের সন্ধান,
ভুখার মাঝে পেয়েছি অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াকু মন, মৃত্যুঞ্জয়ীর ঔদ্ধত্য।
আর পেয়েছি অসংখ্য বঞ্চিত, শোষিত, হতাশাগ্রস্ত মা, বোন, ভাই,
যাদের কেউ নেই তাদেরই আত্মীয় হয়ে স্বর্গীয় প্রেমের সান্নিধ্য।

মুচকি হেসে বিদ্রূপ করছ, ভাবছো ব্যর্থতায় পাগল হয়েছি ?
হ্যাঁ, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা সরকারি আমলা হতে পারতাম সে মেধা হয়তো ছিল,
কিংবা বাবার টাকায় প্রমোটার- কারণ ক্ষমতার আশীর্বাদও অজস্র ছিল।
কিন্তু দিক পরিবর্তন করলো চে গেভারা, নেতাজি সুভাষ, ভগৎ সিং, কিশোর ক্ষুদিরাম,
তুমিহারা রাতে অর্নেস্তো চে গেভারা এসে বলতেন ” মুক্তি অথবা মৃত্যু “।

চির শাশ্বত – প্রবীর কুমার চৌধুরী

ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য প্রকাশ পেলেই শ্রেণী গড়ে ওঠে
পাণ্ডিত্য, মৌলিক চিন্তা,মননশীলতা – এর ফলেই সৃষ্টি হয় শ্রেণী
জ্ঞানী-গুণী, ধর্ম প্রচারক, দেশনেতা, চিকিৎসক, কবি,সাহিত্যিক
এঁরাই সর্বোত্তম একেকটি শ্রেণী।

সকলের নীচে কাদের অবস্থান?
কাদের ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে সকল শ্রেণী ও স্তর?

নীরব অরণ্য,উত্তাল তরঙ্গ, নিষ্পাপ মাটি, পাথরানু বালি- চিরকালীন যারা মুক ও বধির,
কোনদিন এরা কথা বলেনি,বলবে না,
পৃথিবী সর্ব দেশেই এদের অস্তিত্ব,
কোনদিন মাথা তোলে না, চিরকাল পায়ের তলায় –
নীরবে অবস্থান, কিন্তু মহামূল্যবান।

যদিও চিরকালের দারিদ্র্য, তবুও মহাকালের কোলেই একদিন পরমানন্দে বিলীন হয়।
” ওম হরি ওম তৎসৎ “

রোদনে ভরা বসন্ত – প্রবীর কুমার চৌধুরী

মাগো, বিনি সুতোয় মালা গেঁথে পরাতে চেয়েছিলাম জীবনের গলায়,
এখন নিদাঘ,নিস্তেজ দুপুর, একাকীত্বের অবসাদে কেবলই তোমায় মনে পড়ছে।
তোমার লালপেড়ে শাড়ী, আলতা পায়ে, তোমার বুকের স্পর্শে –
স্নেহের চাদরে কত মুখ ঢেকে কেটে যেত আমার সারা বেলা।
আর এখন ? বিড়ম্বিত ক্ষত-বিক্ষত
বন্ধ্যা সময়ের অভিশপ্ত দুপুরে, সন্ধ্যায় আর রাত্রে ঘৃণ্য প্রেমের খেলা,
প্রতিবিম্বহীন আয়নায়,নিষ্ঠুর সময়ের ঘূর্ণিপাকে কেটে যায় অনুভূতিহীন নষ্টবেলা।
এ যেন আমার অহল্যার মত মৌন তপস্যা, শুধুই কঠিন,কঠোর অমাবস্যা –
রাতের ক্ষুধার্ত নিশাচরেরা দেয় হামাগুড়ি –
ঘন নিঃশ্বাস, বুকের পাঁজরের কান্না খুঁচিয়ে,
আমার দেহের হার-মজ্জা চুষে চুষে, শুষে শুষে-
চলে যায় পয়সায় জড়িয়ে আমার রাতের অতিথি।

মাগো, তবুও বেঁচে আছি, মৃত্যুরা স্পর্শ করেনি আমাকে আজও
চরকের মেলায় কেউ করেনি ধর্ষণ, কেউ নিয়ে যায়নি তুলে গোপনে,
তুমি জানতেও পারোনি মীনাবাজারে বিকিয়ে গেছে
এই রূপ,এই শরীর, এই সাধের জীবনের দাম মাত্র পঞ্চাশ হাজার ।
কত মাল চেনাচিনি, দর জানাজানি, আমায় হাজার হাতের ছোঁয়ায় –
আজ দেহহাটের পণ্য আমি, ফেরার পথ রুদ্ধ, বন্দী বন্ধ গুহায়।
আজও রয়ে গেছি- বসন্ত সেনা, বাসবদত্তার স্মৃতি আঁকড়ে,
এখন প্রতিটি রাতই আমার নিত্য নতুন ফুলশয্যা ।
প্রেমের পসরা সাজিয়ে আসে কাম প্রেমিকের দল –
আমার অস্তি-মজ্জার রক্ত-রস ছড়ায় নরম বারোয়ারি বিছানায়-
তখনও হয়তো ছড়িয়ে আছে সেখানে, আগের প্রেমিকের তৃপ্ত কামনার তপ্ত নিঃশ্বাস ।
তারপর, আমায় উল্টেপাল্টে ঘাটে, রক্ত নদীতে স্নান করায়,
ব্যথা, যন্ত্রণা আর চোখের জলের বিনিময়ে ঝটাফট তবিল উজাড় করে দেয় ঢাকতে ভাগ্যের পরিহাস।
আমার শিবরাত্রির জল ঢালা, ভক্তি বিহ্বল উপোষ – কেমন সার্থক হলো বল তো ?

মাগো এখন আমি যে পুরুষদের ঘৃণা করি,
কোন পুরুষ যেন না পায় মায়ের গর্ভ।
ভাবতে ব্যথায় ব্যথায় মন ভরে যায় –
এই পুরুষ-ই কারুর সন্তান, কারুর স্বামী, আবার কারুর স্নেহময় পিতা ।
এই পুরুষ-ই আবার বাড়ী ফিরে পবিত্রতার কথা বলে, প্রেম দেয়, কোলে তুলে নেয় সন্তান।
একি অভিশপ্ত প্রেম দিল জগতে বিধাতা? একি ছলনার মায়াজাল ?
আমার পুরুষ চেনা রইল বাকি, চিনলাম তার অঙ্গ –
মা হওয়া আর হোল নাগো, হলাম ভোগের সঙ্গ ।

মা তোমরা এখন সুখে আছো?
বাবুর পড়াশুনা, বাবার চিকিৎসা, তোমার সাতনরীর হারটা বাবা করে দিয়েছে ?
আমি হাড়িয়ে যাওয়ার পরদিন বাবা পঞ্চাশ হাজার টাকা তোমায় দিয়েছিল ?
ওইটাই আমার সান্ত্বনা ছিল,আমার আত্মবলিদানের বিনিময়ে আর্থিক বিকিরণ, উদ্গত তোমাদের হাসি।
সত্যি আমার চিন্তায় বাবা আর গ্রামের গোবিন্দ কাকু ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল।
এ গ্রাম, সে গ্রাম উজাড় করেছিল পাত্রের সন্ধানে। তখন আমার পনেরো বছর ।
গোবিন্দ কাকু বার বার বাড়ী এসে আমার পিঠে হাত বোলাত,আর-
বলত- রানী তুই আমার মেয়ের মত, তোকে ভীষণ ভালবাসি ।
পনেরো বছরের মেয়ে সে ভালবাসার মানে অনুভব করতাম-
সন্ধ্যা বেলায় বিবিতলার রাস্তা দিয়ে আসার সময়,
কাকু দাঁড়িয়ে থাকত, আমাকে কাছে ডেকে আদরের ছলে বুকে হাত দিত, একটি একটি পাতা খস্ত সদ্য প্রস্ফুটিত গোলাপের।

কি অদ্ভুত না পৃথিবীটা মা, সব পুরুষরাই কি এক ছাঁচে তৈরি ?
মেয়ে,বউ, নাতি, এমন কি মা সবাই কম,লালসার ভোগের সামগ্রী?
গোবিন্দ কাকু আজও আমার কাছে আসে,
ভালমন্দ খায়, রাত জাগে, তন্ন তন্ন করে আমায় ঘাটে।
আজও আমায় ভালবাসে, না না এখন মেয়ের মতো নয় ।
মা, সংসারের টাকা আমি নিয়মিত কাকুর হাতে পাঠাই।

মাগো, দোহাই বেশ্যার টাকা বলে ফিরিয়ে দিও না,
ওটা আমার ভালবাসা, ওতে আছে চোখের জল,
আর আছে ঘামের মধ্যে জমাট বাঁধা রক্ত।
ছেলের মতো ভাই যে আমার বড় হবে, মানুষ হবে এইটুকুই আজ স্বপ্ন ।
আর একটাই অনুরোধ যে দিন আমি চলে যাবো –
সেদিন তুমি দুফোটা চোখের জল ফেল,
একবার আগের মত সারা গায়ে হাতবুলিয়ে বল, আবার আসিস ফিরে আমার কোলে, মেয়ে হয়ে –
বর দেবো, ঘর দেবো,সিঁদুর দেবো, দেবো সুখের সংসার,
স্বামী ঘর করিস সুখে, করিস অহংকার ।
আর বাবুকে বল আমার মুখে অগ্নাহুতি দিয়ে যেন বৈতরণী পাড় করে দেয়।

মাগো, তীর বেঁধা পাখির মতো রক্তাক্ত
অহর্নিশ ভীষণ যন্ত্রণা, বুকের ভেতরে কে যেন চিরেচিরে দেয় লংকাবাটা,
আমার নীরব ক্লেদ মাখা জীবনে ঘুম হীন রাত, ঘৃণায় ভরেছে আমার আঙিনা,পথঘাট ।
প্রেমহীন প্রাণ যেন কোনমতে ক্ষয় করে ফেলা।
কত বন্ধু এগিয়ে আসে বাড়িয়ে দেয় সান্ত্বনার হাত-
বলে আমরা মেহনতি, আমরা খেটে খাওয়া মানুষ,
গণিকা নই,বেশ্যা নই, নই বারাঙ্গনা, আমরাও মানুষ – যৌন কর্মী ।
যদি প্রশ্ন কর -যৌন কর্মীর পরিচয় কি ?
তবে বলতেই হয়-
শরীর বিক্রি করি, সেই টাকায় বেঁচে থাকি, বাঁচিয়ে রাখি তোমাদের।
না শুধু শরীর বেচি না, সাথে –
লজ্জা,অপমান, ঘৃণা, মাতালের বিকৃত কামনার শোষণ আর নিষ্ঠুর অত্যাচার –
এগুলোর দাম পাই না, বিনামূল্যে দিতে হয়।
মনের জ্বালা জুড়াতে নেশা করি, মেটে না আগুন-
প্রেমশুন্য, কোল শূন্য, বুক শূন্য, যেন বাড়ে শতগুণ।
আমি যেন প্রেমের ফেরিওয়ালা, প্রতিটি রাতে অশ্রু লুকিয়ে প্রেম ফেরি করি –
হা হা হা অথচ আমার ঘরেই নেই আমার জন্যে একফোঁটা প্রেম।

মাগো, চারিদিকে পঙ্কিলতার আবর্তে শুধুই কামসাগর,
তার মধ্যে দেহ সর্বস্ব মানুষ অদ্ভুত তাড়নায় সাঁতার কাটছে
এর মধ্যেই মিথ্যার জন্ম,প্রেমের মৃত্যু, দুর্লঙ্ঘ লালসা, আর কত নিরুপায় পাপ,
অতৃপ্তরা ভাবে -এর মধ্যে যদি মনি মুক্ত পেয়ে যাই ।
যদি অশান্ত মনে সান্ত্বনার ঠিকানা মেলে, মৃত্যুসুখের আগে মেলে বাঁচার অমৃত।
মাগো আমরা এমন মেয়েমানুষ-
ভগবান যাদের স্তন দিয়েছেন, যোনি দিয়েছেন, শুধু গর্ভসুখ দেয়নি ।
তাইতো গর্ভের সন্ধানে ছুটে বেড়াই ।
পূর্ণাঙ্গ নারী হতে গিয়ে যাকে সামনে পাই আঁকড়ে ধরতে গেলেই ফস্কে যায়,
আবার ধরি ফসকায়।
এইভাবেই কেটে যায় বঞ্চিত জীবনের বাকি সারা বেলা ।
এক সময় নেমে আসে যবনিকা, কাল রাত্রির খেলা ফুরিয়ে যায় মৃত্যুর খেয়াঘাটে মাগো।

ওই যে একটা গান আছে না –
” মনের গহনে তোমার মুরতিখানি- ভেঙ্গে,ভেঙ্গে যায়, মুছে যায় বারে বারে “।

প্রবীর কুমার চৌধুরী | Prabir Kumar Chowdhury

New Bengali Article 2023 | লেখক বনাম সাহিত্যিক

New Bengali Article 2023 | আধুনিক কবিতা ও অনুবাদ কবিতা

Bengali Article 2023 | পরিবেশবাদী দৃষ্টিকোণ ও রবীন্দ্রনাথের ‘মুক্তধারা’ নাটক

Chandannagar Jagadhatri | চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজার প্রবক্তা কে ??

Kobita Lyrics Poetry In Bengali | Bangla kobita | Words of bangla kobita pdf | Words of bangla kobita for students | bangla kobita lyrics | bengali kobita for child | bengali poem in english | Bangla-English Poem Books | Bangla Poem for school Kids | Quotes by Jibanananda Das | Bangla kobita on Tumblr | Rahur Prem Bangla Kobita | Poem in Bengali | Shabdodweep Web Magazine | High Challenger | Shabdodweep Founder | Sabuj Basinda | Bengali Poetry | Bangla kobita | Live Bangla Kabita Status 2024 | Poetry Collection | Book Fair 2024 | bengali poetry | bengali poetry books | Live Bangla Kabita Status pdf | Bengali Poem Lines for Caption | bangla kobita | poetry collection books | poetry collections for beginners | poetry collection online | poetry collection in urdu | Live Bangla Kabita Status Ebook | poetry collection clothing | new poetry | new poetry 2023 | new poetry in hindi | new poetry in english | new poetry books | new poetry sad | new poems | new poems in english | new poems in hindi | Bengali Poem Lines for Caption in pdf | new poems in urdu | bangla poets | indian poetry | indian poetry in english | indian poetry in urdu | indian poems | indian poems about life | indian poems about love | indian poems about death | Best Bengali Poetry Folder | Best Bengali Poetry Folder 2023 | story writing competition india | story competition | poetry competition | poetry competitions australia 2023 | poetry competitions uk | poetry competitions for students | poetry competitions ireland | Bengali Poem Lines for Caption crossword | writing competition | writing competition malaysia | Bengali Poem Lines for Caption in mp3 | writing competition hong kong | writing competition game | Best Bengali Poetry Folder pdf | Trending Live Bangla Kabita Status | Live Bangla Kabita Status – video | Shabdodweep Writer | bee poem | poem about self love | story poem | poetry angel | narrative poetry examples | poetry reading near me | prose poetry examples | elegy poem | poetry reading | poetry websites | protest poetry | prayer poem | emotional poetry | spoken word poetry | poem about god | percy shelley poems | jane hirshfield | spiritual poems | graveyard poets | chapbook | poems about life | poems to read | English Literature | Live Bangla Kabita Status examples | poems about life and love | elizabeth bishop poems | poems about women | sister poems that make you cry | famous quotes from literature and poetry | mothers day poems from daughter | poem about community | Live Bangla Kabita Status Ranking | positive Best Bangla Kobita Collection | Bengali Poem Lines for Caption about life struggles | toni morrison poems | good bones poem | google poem | funny poems for adults | inspirational poems about life | friendship poem in english | paul laurence dunbar poems | freedom poem | sad poetry about life | freedom poem | sad poetry about life | Natun Bangla Kabita 2023 | Kobita Bangla Lyrics 2023 book | New Live Bangla Kabita Status | Writer – Live Bangla Kabita Status | Top Writer – Natun Bangla Kabita 2023 | Top poet – Natun Bangla Kabita 2023 | Poet list – Kobita Bangla Lyrics 2023 | Archive – Live Bangla Kabita Status | Bangla Full Kobita | Online Full Kobita Bangla 2023 | Full Bangla Kobita PDF | New Bangla Kabita Collection | Shabdodweep Online Poetry Story | Poetry Video Collection | Audio Poetry Collection | Bangla Kobitar Collection in mp3 | Bangla Kobitar collection in pdf | Indian Bengali poetry store | Bangla Kobita Archive | All best bengali poetry | Indian Live Bangla Kabita Status | Best Poems of Modern Bengali Poets | Best Collection of Bengali Poetry in pdf | Bengali Poetry Libray in pdf | Autograph of Bengali Poetry | India’s Best Bengali Writer | Shabdodweep Full Bengali Poetry Book | Bengali Poetry Book in Google Bookstore | Google Bengali Poetry Book | Shabdodweep World Web Magazine | Shabdodweep International Magazine | Top Poems of Modern Bengali Poets | Bangla Kobita in Live | Bengali Poetry Recitation Studio | Sabuj Basinda Studio for Bengali Poetry | Bangla Kobita Sankalan 2023 | Shabdodweep Kabita Sankalan | New Bengali Poetry Memory | History of Bengali Poetry | History of Bangla Kobita | Documentary film of Bengali Poetry | Youtube Poetry Video | Best Bangla Kobitar Live Video | Live Video Shabdodweep | Bengali to English Poetry | English to Bengali Poetry | Bengali Literature | Full Bengali Life of Poetry | Bangla Kobita Ghar | Online Live Bangla Kabita Status | New Bengali Poetry House | Full Bengali Poetry Collections PDF | Library of Bangla Kobita | Bengali Poetry and Story | Bengali Poetry Writing Competition | World Record of Bengali Poetry Writing | Peaceful Poetry | Online High Trend Bangla Kobita Selection | High Trend Bangla Kobita translation in english | High Trend Bangla Kobita | High Trend Bangla Kobita for instagram | romantic bengali poem lines | bengali short poem lyrics

Leave a Comment