New Bengali Article 2023 | হুগলী জেল ও কাজী নজরুল ইসলাম | প্রবন্ধ ২০২৩

Sharing Is Caring:
BENGALI ARTICLE
Bengali Article

হুগলী জেল ও কাজী নজরুল ইসলাম [Bengali Article]

১৯২২ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর নিজের পত্রিকা ‘ধূমকেতু’র দ্বাদশ সংখ্যায় প্রকাশিত হয় তাঁর লেখা কবিতা ‘আনন্দময়ীর আগমন’। আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ এই কবিতা তৎকালীন সর্বশক্তিমান ইংরেজ শাসনের ভিৎ নাড়িয়ে দিয়েছিল। আর এই কবিতার কারণেই ৮ই নভেম্বর রাজদ্রোহের অপরাধে নজরুলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল। ১৯২২ সালের ২৩শে নভেম্বর কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার করে কলকাতায় নিয়ে আসা হয় তাঁকে, হাজির করা হয় আলিপুর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে। ১৯২৩ সালের ১০ই জানুয়ারি কোর্টের রায়ে তাঁকে এক বছরের জন্য সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করে সেন্ট্রাল জেলে পাঠানো হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে বিদ্রোহের আগুন জ্বলে ওঠে সারা দেশে। এমনকি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নিজের ‘বসন্ত’ নাটকটি কবিকে উৎসর্গ করেন, ১৯২৩ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি।

নজরুলের প্রতি সাধারণ মানুষের এই আবেগ ও শ্রদ্ধা চিন্তায় ফেলে ইংরেজ শাসকদের। তাঁর জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে তাঁকে হুগলি জেলে স্থানান্তরিত করা হয়। আলিপুরে নজরুল রাজবন্দীর মর্যাদা পেলেও হুগলি জেলে তাঁকে সাধারণ শ্রেণির কয়েদীর অবস্থায় নামিয়ে আনা হয়। ব্রিটিশের বিরুদ্ধাচরণ করার অপরাধে নজরুল ইসলামকে জেলে যেতে হয়। তাঁকে বন্দি রাখা হয় এই হুগলী জেলে। তিনি এখানে বন্দি ছিলেন ২৪ এপ্রিল ১৯২৩ থেকে ২৮ জুন ১৯২৩ পর্যন্ত। তিনি জেলবন্দি থাকার সময় ব্রিটিশের জেলখানার তৎকালীন সুপার আর্সটন রাজবন্দীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালাতেন। বন্দীদের পায়ে থাকতো ডান্ডাবেড়ি, ভাতের পরিবর্তে খেতে দেওয়া হত মাড়, এই বৈষম্য ও নির্যাতনের প্রতিবাদে ১৯২৩ সালের ১৪ই এপ্রিল অনির্দিষ্ট কালের জন্য অনশনে বসেন নজরুল ইসলাম। তাঁর কালজয়ী কবিতা ‘শিকল পরার গান’ তিনি এই সময়ে রচনা করেন।

হুগলি জেলে কবি নজরুলের সঙ্গে মৌলভী সিরাজুদ্দিন এবং বাবু গোপালচন্দ্র সেনও অনশনে অংশ নিয়েছিলেন। ৩৯ দিন ব্যাপী এই অনশন অব্যাহত ছিল। কবির শরীরের কথা ভেবে তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীরা চিন্তিত হয়ে পড়লেও তিনি নিজে ছিলেন সংকল্পে অটল। এই সময় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিলং থেকে নজরুলকে অনশন ভাঙার অনুরোধ জানিয়ে টেলিগ্রাম করেন, যাতে তিনি লিখেছিলেন,

‘গিভ আপ হাঙ্গার স্ট্রাইক, আওয়ার লিটারেচার ক্লেইমস ইউ’।

কিন্তু জেল কর্তৃপক্ষ সেই টেলিগ্রাম ‘অ্যাড্রেস ইজ নট ফাউন্ড’ লিখে রবীন্দ্রনাথের কাছে ফেরত পাঠিয়ে দেন নজরুলকে না পড়িয়েই। নজরুলের এই অনশনকে সমর্থন জানিয়েছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশও। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও নজরুলের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। ১৯২৩ সালের ১৭ই মে তিনি হুগলি জেলে আসেন কবির সাক্ষাৎপ্রার্থী হয়ে কিন্তু তাঁকে কবির সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। এমনকি নজরুলের মা জাহেদা খাতুনকেও দেখা করতে দেওয়া হয়নি তাঁর সঙ্গে। এই খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে এবং দেশবাসীর উদ্বেগ বাড়তে থাকে। অবশেষে ২৯ দিন পর কুমিল্লার মাতৃসমা বিরজাসুন্দরী দেবীর অনুরোধে তাঁরই হাতে লেবুর রস পান করে অনশন ভঙ্গ করেন কবি।

নজরুল শুধু কবি ছিলেন না, ব্রিটিশদের কাছে ছিলেন প্রতিবাদী কন্ঠস্বর যাকে বার বার রোধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। নির্যাতিত হয়েছেন, অত্যাচারিত হয়েছেন তার পরেও আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি, সরে আসেননি, লড়াই চালিয়ে গেছেন তিনি সারাটা জীবন।

সেই ১৯৮২ সাল থেকে হুগলী জেলের ভিতর যে সেলে নজরুল বন্দি ছিলেন এবং ৩৯ দিন অনশন করেন, প্রতি বছর কবির জন্ম ও মৃত্যু দিনে কবির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে সেখানে অনুষ্ঠান হয়। প্রথম দু’ বছর জেলবন্দিরাও সেই অনুষ্ঠানে গান, আবৃত্তি পরিবেশন করে অংশ নেন। সম্ভবত সেটাই ছিল ভারতের কোনও জেলের ভিতর জেলবন্দিদের নিয়ে প্রথম অনুষ্ঠান। অন্তত পশ্চিমবঙ্গে তো বটেই। এ রাজ্যের সরকারি নথি তাই বলে। সে দিনের অনুষ্ঠানে ছিলেন ৬/৭ জন স্বাধীনতা সংগ্রামী। এই অনুষ্ঠান আজও করে আসছে হুগলী চুঁচুড়া নজরুল স্মৃতি সংরক্ষণ সমিতি।
জেলের ভিতর দু’ বছর অনুষ্ঠান করার পর নজরুলের থাকা সেই সেলে কবির একটি আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করে। সেটি আজও আছে। একই সঙ্গে জেলের বাইরে গঙ্গার ধারেও কবির একটি মার্বেল পাথরের মূর্তি স্থাপন করা হয়। সম্ভবত রাজ্যে এটাই নজরুলের প্রথম মূর্তি স্থাপন।
১৯৮২ সালের ২৪ মে, বাংলা ১১ জ্যৈষ্ঠ, সকাল ৮টা নাগাদ হুগলী জেলের ভিতর নজরুলের জন্মদিন পালন করা হয়েছিল। সেদিন কয়েক শত মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন।

একটা ঘটনা বলি:-

আমাদের রাজ্যে তো বটেই, সম্ভবত সারা ভারতে এমন কোনও জেল নেই, যেখানে মাথা নীচু না করে জেলের মূল ফটকের ভিতরে ঢোকা যায়, একমাত্র ব্যতিক্রম হুগলী জেল।
জেলের নিয়ম অনুযায়ী যে কোনও বহিরাগতকে জেলের ভিতরে প্রবেশ করতে হলে জেলের খাতায় নাম ঠিকানা লিখে তার পর ভেতরে ঢুকতে হবে। সেদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বেশ কয়েক জন স্বাধীনতা সংগ্রামী। তাঁরা একযোগে বলে উঠলেন, “ব্রিটিশের রাজত্বে মাথা নিচু করে জেলে ঢুকতে হয়েছে। তখন পরাধীন ছিলাম। এখন স্বাধীন দেশেও কেন মাথা নিচু করে জেলের ভিতরে ঢুকতে হবে। কিছুতেই মাথা নীচু করে ঢুকব না।” পরের বছর সত্যি, হুগলী জেলের প্রধান গেট কেটে উঁচু করে দেওয়া হল। যাতে কাউকে মাথা নীচু করে জেলের প্রধান ফটক দিয়ে জেলের ভিতর ঢুকতে না হয়।
আমাদের রাজ্যে তো বটেই, সম্ভবত সারা ভারতে এমন কোনও জেল নেই, যেখানে মাথা নীচু না করে জেলের মূল ফটকের ভিতরে ঢোকা যায়, একমাত্র ব্যতিক্রম হুগলী জেল।
এসব সম্ভব হয়েছে কাজী নজরুল ইসলামের প্রতি অমেয় শ্রদ্ধাঞ্জলি হিসাবে।

আর একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করি এটি বেশ মজাদার :—-

জেলের ভিতরে, নজরুলের সেলের সামনের ফাঁকা জায়গায় অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। বক্তাদের বলা শেষ। এবার গান, আবৃত্তির পালা। বৃন্দসংগীত হয়ে গেল। তারপরেই জেলবন্দিদের গান। এক বন্দি উদাত্ত কন্ঠে শুরু করলেন,

” কারার ঐ লৌহ কপাট ভেঙে ফেল কররে লোপাট”।

আর যায় কোথা। জেলার সাহেব, এক প্রান্তে দাঁড়য়ে অনুষ্ঠান শুনছিলেন। ছুটে চলে এলেন তাঁর অবস্থা অসহায়ের মতো। চোখে জল। বললেন, “আমার চাকরি চলে যাবে। ওরা জেলের ভিতরে কী গান গাইছে দেখুন।”
সেদিনের সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় মন্ত্রী শম্ভু ঘোষ এবং হুগলী জেলার ডি. এম. সুমন্ত্র চৌধুরী। তাঁরা দুজনই জেলারের রেজিস্টরে নোট লিখে দিলেন,

মন্ত্রী ও ডি. এম. অনুমতি সাপেক্ষে
এই গান গাওয়া হচ্ছে।

জেলারের ঘাম দিয়ে জ্বর নামল। আশ্বস্ত হলেন তিনি।

সৌম্য ঘোষ | Soumya Ghosh

New Bengali Article 2023 | অযোধ্যা গ্রামে প্রাচীন জমিদারদের আশ্চর্য স্থাপত্য নিদর্শন

New Bengali Article 2023 | প্রেমাবতার ঠাকুর হরনাথ ও সহধর্মিণী কুসুমকুমারী কথা

New Bengali Article 2023 | স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন

New Bengali Article 2023 | শ্রমের শোষণ

writing competition | writing competition malaysia | writing competition london | writing competition hong kong | writing competition game | writing competition essay | writing competition australia | writing competition prizes | writing competition for students | writing competition 2022 | writing competitions nz | writing competitions ireland | writing competitions in africa 2022 | writing competitions for high school students | writing competitions for teens | writing competitions australia 2022 | writing competitions 2022 | writing competitions uk | bengali article writing | bangla news article | bangla article rewriter | bengali article writing format | bengali article writing ai | bengali article writing app | article writing book | bengali article writing bot | bengali article writing description | article writing example | bengali article writing examples for students | article writing for class 8 | article writing for class 9 | bengali article writing format | article writing gcse | bengali article writing generator | article writing global warming | article writing igcse | article writing in english | bengali article writing jobs | article writing jobs for students | article writing jobs work from home | article writing lesson plan | article writing on child labour | article writing on global warming | bengali article writing pdf | bengali article writing practice | Bengali article writing topics | trending topics for article writing 2022 | what is article writing | content writing trends 2022 | content writing topics 2022 | Bangla Prabandha | Probondho | Definite Article | Bengali Article Writer | Short Bengali Article | Long Bengali Article | Bangla kobita | Kabitaguccha 2022 | Galpoguccha | Galpo | Bangla Galpo | Bengali Story | Bengali Article | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Shabdodweep Web Magazine | Shabdodweep Writer | Shabdodweep Founder

Leave a Comment