প্রদ্যোৎ পালুই – সূচিপত্র [Bengali Article]
স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন [Bengali Article]
নজরুল ইসলাম তাঁর ‘নারী’ কবিতায় লিখেছিলেন, “বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর / অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।” নারীর এই অবদান সত্ত্বেও জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কখনও নারীসমাজ পুরুষের সমান স্বাধীনতা এবং অধিকার পায় না। সবদিনই তাঁদেরকে পিতা, স্বামী, সন্তান বা অন্য কোন পুরুষ সদস্যের অধীনে থাকতে হয়। এমনকি জন্মের আগেই অনেক কন্যাসন্তানকে হারিয়ে যেতে হয় শুধু মেয়ে হওয়ার অপরাধে। সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সবক্ষেত্রেই নারীকে পুরুষের পিছনে রাখার প্রবণতা আজও চলমান। এই নিয়ে সারা বিশ্বজুড়ে আলোচনা কম হয় নি। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ এন্থার ডাফলো বলেছেন, “ইকোয়ালিটি ফর ইটস ওন সেক”। মতাদর্শের দিক থেকে পুরুষের সঙ্গে নারীদের সমানাধিকারের প্রশ্নে সকলেই প্রায় একমত। তা সত্ত্বেও রূপায়নের ক্ষেত্রে সেই মতামতের যথাযথ প্রতিফলন ঘটে না। সেখানে পুরুষের একচেটিয়া অধিকার। নারী করুণার পাত্রী।
নারীকে পিছিয়ে রাখার ক্ষেত্রে শাস্ত্রের গোঁড়ামিও লক্ষণীয়। পর্দা প্রথা, দেবদাসী প্রথা, জহর ব্রত, সতীদাহ প্রথা ইত্যাদি সামাজিক কুপ্রথা ধর্মের দোঁহাই দিয়ে নারীর ওপর একসময় চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এমনকি যুক্তিতর্ক, ন্যায়নীতি ব্যতিরেকে শাস্ত্র মতে বাল্যবিবাহ চলেছে একচেটিয়া। পুরুষদের বহুবিবাহকে ছাড়পত্র দেওয়া হলেও বিধবা নারীর বিবাহ শাস্ত্রসম্মত প্রমাণিত হওয়ার পরেও তার অনুমোদন মেলে নি। বিধবা নারীর বিয়ে দেওয়ার অপরাধে বিদ্যাসাগরকে একঘরে হতে হয়েছিল। সতীদাহ প্রথা বন্ধ করতে গিয়ে শাস্ত্রগোঁড়াদের কোপে পড়তে হয়েছিল রামমোহনকে। নিজের বৌদির সতীদাহ মেনে নিতে না পেরে প্রতিবাদ করায় গৃহত্যাগ পর্যন্ত করতে হয়েছিল। ঘরে-বাইরে এমন গোঁড়ামি আজও একেবারে মুছে ফেলা যায় নি। নারীদের স্থান অন্দরমহলে শিরোধার্য করে নারী শিক্ষাকে পুরুষদের সমান গুরুত্ব দেওয়া হয় নি। মহিলা হিসেবে প্রথম ডাক্তারি পড়তে গিয়ে কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়কে ঘরে-বাইরে কতটা হেনস্থা হতে হয়েছিল তা আমাদের অজানা নয়। যদিও আজকের দিনে গোঁড়ামি এবং মেয়েদের অধিকারকে খর্ব করার প্রচেষ্টা অনেকটা কমেছে, তবুও অনেকাংশেই তা পুরুষের সমকক্ষ হয়ে উঠতে পারে নি। আজও পণপ্রথার জন্য নারী নির্যাতন এবং বধূহত্যা অব্যাহত।
নারী স্বাধীনতা এবং নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি করতে হলে রাজনীতি এবং অর্থনীতিতে তাঁদের স্বাধীনতা প্রদান সর্বাগ্রে প্রয়োজন। রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ এবং স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে নারীকে অনেকখানি স্বনির্ভর করে তোলা সম্ভব। দেশে নারীর সংখ্যা পুরুষের প্রায় অর্ধেক হওয়া সত্ত্বেও স্বেচ্ছায় তাদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের অধিকার দশ শতাংশও নয়। কারণ পুরুষ প্রধান পরিবার এবং সমাজ নারীকে সহজে রাজনীতিতে প্রবেশাধিকার দিতে চায় না।২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে সাকুল্যে ৭৮ (১৪.৪০শতাংশ) জন মহিলা লোকসভায় গিয়েছেন। ২০২১ সালের নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় গিয়েছেন ৪০ (১৩.৬০ শতাংশ) জন মহিলা। এর প্রতিকারের জন্য দেশের আইনসভায় ৩৩ শতাংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের প্রস্তাব থাকলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বাধায় দীর্ঘদিন ধরে চূড়ান্ত অনুমোদন না পেয়ে তা ঠান্ডাঘরে অপেক্ষমাণ। এর মুলে আছে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা। আইন করে পঞ্চায়েত, পুরসভায় মেয়েদের জন্য আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হলেও তাঁরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার পান না। ক্ষমতাসীন মহিলার স্বামী, শ্বশুর, ছেলে, দেওর বা অন্য কোন নিকট পুরুষ আত্মীয় তাঁদের কাজ পরিচালনা করেন। বেশির ভাগ মহিলা সেই অলিখিত ক্ষমতা হস্তান্তর সমর্থনও করেন আত্মবিশ্বাসের অভাবে। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, মেয়েদের স্বাধীন এবং মুক্তচিন্তার অগ্রগতি আজও ঘটতে দেওয়া হয় নি।
আর্থিক স্বাধীনতা প্রাপ্তি নারীর অগ্রগতির আর একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। বাড়ির মধ্যে তাঁরা যে কাজ করেন সেজন্য তাঁরা কোন আর্থিক মূল্য তো পানই না, এমনকি সেটা কাজ হিসেবের মধ্যে ধরা পর্যন্ত হয় না। দায়দায়িত্ব থেকে তাঁরা সেই কাজ করতে বাধ্য বলে ধরে নেওয়া হয়। মেয়েরা যদি স্বাধীনভাবে নিজের পরিশ্রমে কিছু রোজগার করতে পারেন এবং সেই অর্থ খরচের উপর তাঁদের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকে তাহলে আর্থিক সক্ষমতা নারীর ক্ষমতায়নে অনেকখানি সাহায্য করবে সন্দেহ নেই।
বর্তমানে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রে কিছু মহিলা কাজ করলেও সব মিলিয়ে সংখ্যাটি ২৫-৩০ শতাংশের বেশি নয়। করোনাকালে তাঁদের অনেকেই কাজ হারিয়েছেন। পরে নুতন করে অনেকেই আর কাজের সন্ধান করেন নি। ফলে সেই সংখ্যা আরও কমেছে বলে বিশেষজ্ঞদের মত। কিন্তু যাঁরা কাজে যুক্ত আছেন তাঁরাও পূর্ণ স্বাধীনতা পান না। কারণ তাঁরা কেউ সংগঠিত নন, একা। তাই সকল মহিলার স্বনির্ভরতা ও রাজনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে একত্রিত প্রতিবাদী মানসিকতা তৈরি করা দরকার। তার জন্য স্বনির্ভর গোষ্ঠী একটি আদর্শ পদক্ষেপ। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে যেমন আর্থিক পথের দিশা মেলে, তেমনই বাইরে বেরিয়ে অফিস-কাছারি, ব্যাঙ্ক ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তাঁরা অনেকটা স্বচ্ছন্দ হতে পারেন। সহযোগী মানসিকতা এবং রাজনৈতিক সচেতনতা তৈরি হয়। শিক্ষা, স্বাস্থ্যের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে শেখেন। গোষ্ঠীতে থাকার ফলে রোজগেরে মহিলাদের প্রতিবাদী স্বর দৃঢ় হয়। ফলে সমাজ এবং পরিবারের স্বেচ্ছাচার সক্ষমতার জোরে তাঁরা মোকাবিলা করতে পারেন। যেহেতু নারীকে পুরুষের গৃহবন্দী করে রাখার মানসিকতার সঙ্গে লড়াই করে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে হয় তাই তাঁদের জোটবদ্ধ হয়ে এগিয়ে চলার পথ প্রশস্ত করতে হবে। কারণ প্রচলিত প্রথা এবং রীতিনীতি পুরুষতান্ত্রিকতার পক্ষে। মেয়েদের একা একা পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো কঠিন।
কেন্দ্রের আনন্দধারা প্রকল্পের মাধ্যমে মেয়েদের সংঘবদ্ধ এবং স্বনির্ভর করার প্রকল্প একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। এ রাজ্যেরও একটি পৃথক স্বনির্ভর গোষ্ঠী দপ্তর চালু আছে। এখনও পর্যন্ত সারা দেশে ৭৮ লক্ষের বেশি এবং পশ্চিমবঙ্গে প্রায় দশ লক্ষ স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। অধিকাংশ গোষ্ঠীই তৈরি হয়েছে মহিলাদের নিয়ে। প্রতি গোষ্ঠীতে গড়ে দশ জন হিসেবে ধরলেও দেশে সাত কোটি আশি লক্ষ মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য। সংখ্যাটি খুব কম নয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছে, নব্বই শতাংশ স্বনির্ভর গোষ্ঠী সরকারি সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার জন্য কেবল খাতায় কলমে চলে। বাংলায় তাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মেয়েদের স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে তৈরি হয়েছে প্রায় পাঁচশো কর্মতীর্থ যেখানে স্থায়ী স্টলের মাধ্যমে গোষ্ঠীর মেয়েরা নিজেদের উৎপাদিত দ্রব্য বিক্রি করতে পারেন, আলোচনা সভা ডাকতে পারেন, একত্রে বসে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কিন্তু কর্মতীর্থ পরিকল্পনা মোটেই সফল হয় নি। জনবসতি থেকে দূরে হওয়ায় সেখানে ক্রেতারা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ আছে। তাছাড়া নিজেদের পায়ে দাঁড়ানো থেকে পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাব দেখানোর ক্ষেত্রেও ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। ফলে গোষ্ঠীর আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। গোষ্ঠীর মাধ্যমে মেয়েদেরকে স্বনির্ভর করতে হলে আর্থিক সুযোগসুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি যথাযথ স্বনির্ভরতার জন্য প্রশিক্ষণ এবং গাইড করা দরকার। দেখা গিয়েছে, নারী আর্থিকভাবে সক্ষম হলে সংসারের প্রতি তাঁরা পুরুষের তুলনায় বেশি দায়িত্বশীল হন। সংসারের অভাব অনটন দূর করা থেকে সন্তানদের শিক্ষার অগ্রগতির পক্ষে সেটা সহায়ক হবে সন্দেহ নেই। ফলে অনেক পরিবারকে দারিদ্র সীমার ওপরে যেমন তুলে আনা সম্ভব হবে তেমনই শিক্ষার প্রসারও ঘটবে, যা দেশের উন্নতির পক্ষে সহায়ক।
প্রদ্যোৎ পালুই | Pradyut Palui
New Bengali Article 2023 | অঘোষিত প্রতিযোগিতার ফল
New Bengali Article 2023 | অযোধ্যা গ্রামে প্রাচীন জমিদারদের আশ্চর্য স্থাপত্য নিদর্শন
New Bengali Article 2023 | প্রেমাবতার ঠাকুর হরনাথ ও সহধর্মিণী কুসুমকুমারী কথা
Rabindranath Tagore’s love for art and literature
স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন | স্বনির্ভর গোষ্ঠী | স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও নারী উন্নয়নের নতুন দিক | নারী ক্ষমতায়ন | নারীর ক্ষমতায়ন | স্বনির্ভর গোষ্ঠীর রেজুলেশন | স্বনির্ভর গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য | নারীর ক্ষমতায়ন ২০২২ | নারীর ক্ষমতায়ন ২০২১ | মহিলাদের স্বনির্ভর প্রকল্প | স্বনির্ভর গোষ্ঠীর নাম | নারীর ক্ষমতায়নে সরকারের উদ্যোগ | স্বনির্ভর গোষ্ঠীর খবর | ভারতীয় নারীর ক্ষমতায়ন | কন্যাশ্রী প্রকল্প | পশ্চিমবঙ্গ স্বনির্ভর সহায়ক প্রকল্প | পশ্চিমবঙ্গের জন্য মাইক্রোফিনান্স | নারীক্ষেত্র – সত্যালাপ | নারী দিবসে পদযাত্রা | নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ | কর্মক্ষেত্রে শিক্ষিত নারী | নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নতি | নারীর ক্ষমতায়ন ও বর্তমান সমাজ | নারীর ক্ষমতায়ন এবং প্রতিবন্ধকতা | নারী অধিকার | রচনা : নারীর ক্ষমতায়ন | বাংলা প্রবন্ধ | বাংলার লেখক | প্রবন্ধ ও প্রাবন্ধিক | সেরা প্রবন্ধ ২০২৩ | শব্দদ্বীপ | শব্দদ্বীপের লেখক | বাংলা ম্যাগাজিন | ম্যাগাজিন পত্রিকা | শব্দদ্বীপ ম্যাগাজিন
bengali article writing competition | writing competition malaysia | writing competition london | writing competition hong kong | writing competition game | writing competition essay | writing competition australia | writing competition prizes | writing competition for students | writing competition 2022 | writing competitions nz | writing competitions ireland | writing competitions in africa 2022 | writing competitions for high school students | writing competitions for teens | writing competitions australia 2022 | writing competitions 2022 | writing competitions uk | bengali article writing | bangla news article | bengali article rewriter | article writing | bengali article writing ai | bengali article writing app | bengali article writing book | bengali article writing bot | bengali article writing description | bengali article writing example | article writing examples for students | article writing for class 8 | article writing for class 9 | bengali article writing format | article writing gcse | bengali article writing generator | article writing global warming | article writing igcse | article writing in english | bengali article writing jobs | article writing jobs for students | article writing jobs work from home | article writing lesson plan | article writing on child labour | article writing on global warming | article writing pdf | article writing practice | article writing topics | trending topics for article writing 2022 | what is article writing | content writing trends 2022 | content writing topics 2022 | Bangla Prabandha | Probondho | Definite Article | Article Writer | Short Article | Long Article | Bangla kobita | Kabitaguccha 2022 | Galpoguccha | Galpo | Bangla Galpo | Bengali Story | Bengali Article | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Shabdodweep Founder