Best New Modern Bangla Golpo 2023 | Maloy Hazra

Sharing Is Caring:

অজ্ঞাত শ্রমিক – মলয় হাজরা [New Modern Bangla Golpo]

“প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন। আমি কোনদিন আর এই পথে আসবো না,না জেনে এসে পড়েছি। আমায় এবারের মত ক্ষমা করে দিন”।

এক জোরালো বাইকের শব্দ। তন্ময় চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় সামনের বড় রাস্তায় ওঠার মুখে হঠাৎ থমকে যায়। বাইক আরোহী কিছুক্ষণ রুক্ষ দৃষ্টিতে তার দিকে পর্যবেক্ষণ করার পর নিজের গন্তব্যের দিকে চলে যায়। তন্ময়ের এই কয়েকদিন হলো একটা বদভ্যাস দেখা দিয়েছে প্রায়শই আনমনা ভাবে তাকে দেখতে পাওয়া যায় যেন এক গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে আছে। কলকাতা শহর সংলগ্ন এক নির্জন পল্লীতে তার বাস। অঞ্চলটি শহরের একপ্রান্তে ও কিছুটা আধা শহর প্রকৃতির। তন্ময় এই কয়েকদিন হলো এক নতুন চাকরিতে জয়েন করেছে, যা কিনা তার লোকালয় থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে। ঘরে আত্মীয়-স্বজন বলতে তার দুঃসম্পর্কের এক মামা ছাড়া আর কেউ নেই। বাবা-মা গত হয়েছে আজ প্রায় চার বছর হল। তন্ময় এরপর রাস্তার একপাশে একটা বেঞ্চে বসে পড়ে। আজকাল যেন এক অজানা হতাশায় তাকে ঘিরে ধরে রয়েছে। লোকজনদের কাছাকাছি থাকতে সে অসুবিধা বোধ করে। তার এই হতাশাগ্রস্ত চেহারা তার মামার চোখেও পড়েছে এবং তিনি তার এই অবস্থার কারণ জানতে চেয়েছেন। কিন্তু তন্ময় ব্যাপারটা ক্রমশ এড়িয়ে গেছে। অফিসের কলিগরা তাকে কিছুদিনের ছুটি নিয়ে কোন এক মনোরম স্থানে ভ্রমণের উপদেশও তাকে দিয়েছে কিন্তু এতেও তার আপত্তি রয়েছে। সুতপা সেদিন রাগ করে বলেই ফেললো “না, কোথাও যাস না, সন্ন্যাসী হয়ে যা, এটাই হলো তোর জন্য একদম মোক্ষম ওষুধ।বন্ধুদের কথা যখন শুনবি না তখন যা ভালো বুঝিস করিস” । তন্ময় এই কথাতেও অবশ্য কর্ণপাত করেনি।

কিছুক্ষণ বসে থাকার পর হঠাৎই বয়ে যাওয়া হিমেল হাওয়ায় তন্ময়ের শরীরটা যেন কিছুক্ষণের জন্য ঠান্ডা বাতাসের অনুভূতি পেল, তারপর পকেট থেকে লাইটার বার করে একটা সিগারেট ধরালো। অফিস থেকে ফেরার পথে এই বেঞ্চে বসে কিছুক্ষণ সময় সে সিগারেট খায়, এতে তার অন্য সময়ের মতো আনইসি ভাবটা কিছুক্ষণ লোপ পায়। সামনের চায়ের দোকানটা আজ কোন এক কারণে বন্ধ রয়েছে রোজকার মত তাই ভিড়টা সে লক্ষ্য করছে না,তাছাড়া অন্যান্য দিনের মতো আজ এই রাস্তায় লোকজনও যেন অনেকটা কম চলাচল করছে। এরপর তন্ময় সিগারেট শেষ করে তার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল। সামনের কল-কারখানা কে বাঁদিকে রেখে গলিতে ঢুকতে যাবে এমন সময় থেমে গেল। কিছুটা কৌতূহলবশতই থামতে হলো তন্ময়কে। খুব কাছেই অর্থাৎ কারখানার পিছন দিক থেকে আসা হাতুড়িপেটার বেমানান শব্দের কারণে তাকে থামতে হলো। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হল যে শব্দটির সাথে সাথে একটা চাপা কান্না শোনা যাচ্ছে অনেকটা আগে পরে মিলিয়ে। এক ভয়ঙ্কর আশঙ্কায় তার মুখমণ্ডল কিছুটা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ল এবং প্রায় তৎক্ষণাতই অতি দ্রুত বেগে এসে পৌঁছে গেল কল-কারখানার পেছন দিকটাতেই। তন্ময় যতটুকু শুনেছিল সে অনুযায়ী কল কারখানাটি আজ থেকে ছয় মাস আগে বেশ পুরোদমে চলত কিন্তু হঠাৎই বন্ধ হয়ে যায়, এক অজানা কারণে। এ কয়েক মাসে কারখানার পেছন দিকটা আগাছা ও লতা পাতায় ভরে গেছে।

তন্ময় সেখানে পৌঁছে যা দেখল তাতে সে কিছুটা আশ্বস্ত হলেও এক দিকে নজর পড়তেই অবাক হয়ে গেল। সেখানে কেউ হাতুড়ি না পেটালেও কারখানার ভেতরে দিক থেকে আসছে শব্দটা। আগে হাতুড়ি পেটার শব্দের মত মনে হলেও এখন সেটিকে কিছুটা ভারী জিনিসের ঘর্ষণের শব্দের মত মনে হলো। এবার অবশ্য কোনো কান্নার শব্দ পাওয়া গেল না। একটা ছোট বাল্ব জ্বলছে পেছনটাতে, সেই আলোয় তন্ময় একটি লোককে দেখতে পেলো। হতবাক তন্ময় লোকটিকে জিজ্ঞাসা করল “আপনি কে? অন্ধকারে এই জায়গায় কি করছেন?” কথাটা যেন লোকটির কানে গেল না তন্ময় লোকটির গায়ে হাত দিতেই সে নিমেষে দাঁড়িয়ে উঠে পেছনে ফিরল। তন্ময় খুব চমকে গেল এবং একটু ঘাবড়েও গেল কারণ লোকটি তার ডান হাতের আঙ্গুলগুলি সমানে কামড়ে চলেছে। তন্ময় তাই দেখে আমতা আমতা করে বলল “একি! আপনি এটা কি করছেন?” লোকটি এবার মুখ দিয়ে কি সব আওয়াজ করলো ও ইশারায় বোঝালো যে সে একইসাথে বোবা ও কালা।তন্ময় বললো –
“ও তাই বলুন কিন্তু এখানে কি করছেন?”
লোকটি কিছু না বলে তন্ময় হাত ধরে তাকে কারখানার ভিতরে নিয়ে চলল।

“কোথায় নিয়ে চললেন?”। তন্ময় বলে উঠলো কিন্তু লোকটি ইশারায় কি বলল তা সে বুঝতে পারল না।
কারখানার ভিতরে ঢুকে তন্ময় দেখল বহু পুরনো যন্ত্রপাতির সমাগম এবং যত্রতত্র ছড়িয়ে রয়েছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল গার্বেজ। লোকটি তাকে এমন একটি জায়গায় নিয়ে আসলো যেখানে কিছু কালো কালো জিনিস রাখা আছে, অন্ধকারে তা ঠিক দেখা যাচ্ছে না। লোকটিকে তন্ময়কে ইশারা করে দাঁড়াতে বলে ছুটে পালালো।

“কোথায় যাচ্ছেন আমাকে একা ফেলে ?” – বলল তন্ময়। কিন্তু লোকটি যেন শুনতে পেল না তাছাড়া সে শুনবেই বা কি করে সে যে কানে শুনতে পায় না।

এখানে একটা কথা বলে রাখা দরকার একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হয়ত তন্ময় লক্ষ্য করেনি যে কল- কারখানার সামনের নোটিশ বোর্ডে লেখা ছিল রেস্ট্রিক্টেড এরিয়া। সম্ভবত অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ার কারণে সে ভালো করে দেখেনি সিল করা জায়গাটা যেটা কিনা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মাথার খুলি ও মানুষের হাড়ের সংযুক্ত চিহ্ন দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল।তন্ময় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি করবে বুঝতে না পেরে চলেই আসছিল কিন্তু কি একটা মনে হতে সে সোজা গিয়ে দাঁড়াল সেই স্তূপটার সামনে এবং সেটা হাত দিয়ে দেখার চেষ্টা করতেই সে যা দেখলো তাতে তার পিলে চমকে গেল ! কারণ সেগুলি আসলে কিছুই না, মরা মানুষের দেহ। এই দৃশ্য দেখে সে তড়িঘড়ি সেখান থেকে পালাতে গেল কিন্তু তার আগেই তার পিছনে কি একটা ভারী আঘাত এসে লাগতেই সে বসে পড়লো।তন্ময় দেখল সেই বোবা লোকটিকে যে কিনা তাকে প্রমাণ সাইজের হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করেছে। ব্যাস তারপর চারিদিকে নিস্তব্ধতা ছড়িয়ে পড়ল।

কিরে সিধু আজকে দোকান খুললি যে? [প্রশ্ন করল এক জনৈক ভদ্রলোক।] সিধু উত্তর দেয় যে, আজ্ঞে বাবু এই সকালবেলাতেই দোকানটা খুলেছি, সন্ধ্যে নামার আগেই বন্ধ করে চলে যাই, রাতে কি দোকান খোলার জো আছে নাকি? ভদ্রলোকটি এরপর চলে যেতেই আরেকটি ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করল। আচ্ছা, ঠিক কি হয়েছে বলোতো ব্যাপারটা?

— পরপর চারটি খুন ঠিক বুঝলাম না।

সিধু গলার স্বর খাটো করে জানায়, কি বলব বাবু একটা ভারী দাগী আসামীর উৎপাত দেখা দিয়েছে, তার দাপটেই তো সন্ধ্যে নামতে না নামতেই রাস্তা দিয়ে লোকজনের যাতায়াত প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।

— তবে জানেন কি বাবু যেটুকু শুনেছি খুনি তার শিকারকে ছলেবলে কারখানার ভিতরের দিকে নিয়ে যায়,তারপর মাথা থেঁতলে খুন করে যেভাবে তন্ময় বাবুর করেছে।

“তা কেন সে এভাবে খুন করছে কিছু জানিস”

[সিধু মাথা চুলকে উত্তর দেয়] “আগে না দাদাবাবু”

কিছুক্ষণ পর রেডিওতে একটা খবরের অংশ শোনা গেল।

বর্তমানে কলকাতাসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় যে সিরিয়াল কিলার সবাই কে খুন করছে সে আসলে পেশায় একজন শ্রমিক। যতদূর জানা যাচ্ছে যে সেই শ্রমিক আসলে একজন মানসিক রোগী, তবে কী কারণে সে এই খুনগুলি পরপর করছে তা জানা যায়নি। রেডিওতে এই কথাগুলি শুনে সিধু ও চায়ের দোকানের লোকগুলির মুখের আদল পাল্টে গেল, তারা শুধু একে অপরের মুখের দিকে হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইল।

Bangla Word

ডিপ্রেশনিস্ট – মলয় হাজরা [New Modern Bangla Golpo]

আমি ধীমান, বয়স ৩০ বছর, পেশায় সরকারি চাকুরিজীবী, ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল একজন বড় বিজ্ঞানী হব কিন্তু তা স্বপ্নই রয়ে গেছে। জানেন খুব চেষ্টা করেছিলাম এবং অনেকটা দূরে চলেও গেছিলাম কিন্তু বিজ্ঞানী আর হয়ে উঠতে পারলাম না হয়ে গেলাম একজন সরকারি চাকুরিজীবী। ভেবেছিলাম এই জীবন আর রাখব না, কি দরকার যন্ত্রচালিতের মত বেঁচে থাকা, যেখানে নিজের ইচ্ছার কোনো দামই নেই। যা চাই তা পাই না,কিন্তু যা চাইনা তা পেয়ে যাই। মাঝে মাঝে মাথায় খুব পেইন হয়, খুব ইচ্ছা করে জানেন তো দিই মাথাটা ভেঙে, চেষ্টাও করেছি বহুবার, তা সে রেললাইনে রেলের তলায় কিংবা গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে, গলায় দড়ি আরো কত কি,কিন্তু সবেতেই বিফল হয়েছি যেমনটা হয়েছি গোটা জীবনটাতে। বাড়ি থেকে নিয়ে গেছিল মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে সেখানে গিয়ে লাভ তেমন হয়নি, শুধু কয়েক মাস নিয়ম মেনে কয়েকটি ওষুধের পাতাটুকুই তারপর যেমন চলার তেমনই চলেছে। আমি কিন্তু তারপর হাল ছাড়িনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এবার মরবো বিষ খেয়ে এবং এবারে সাফল্য অর্জন করবই তা সে যে প্রকারে হোক না কেন।

ঠিক এইবার এই ঘটল এক অবিশ্বাস্য কাণ্ড যা আমি একেবারেই আশা করিনি। সেই ঘটনা আমার জীবনে দারুণভাবে পরিবর্তন আনলো সেটাই আজ বলব আপনাদের। সেদিন ছিল ঘোর বর্ষার দিন, রাস্তায় লোকজন ছিল কম। ভাবলাম আজ নিশ্চয়ই শান্তিতে মরতে পারবো। গেলাম ওষুধের দোকানে, সঙ্গে নিয়ে ধার করা একটা প্রেসক্রিপশন যেটাতে একটা এমন ওষুধ ছিল যেটার দুটো বড়ি একসাথে খেলেই যে কোন মানুষ নির্ঘাত মারা যাবে। দোকানে আজ লোকজনও ছিল না খুব একটা, দোকান টা আমার চেনা, আমাদেরই পাড়ার এক বাসিন্দার। ইদানীং বেশ নাম করে ফেলেছে এই দোকান মারফত। কিন্তু দোকানের মালিককে তো দেখছি না ,তার বদলে রয়েছে একটা অপরিচিত মহিলা। বয়স আন্দাজ 30 কি তার কমই হবে, আমাকে দেখতেই ইশারায় প্রেসক্রিপশনটা চাইলো। আমি এরপর ওটা তার দিকে বাড়িয়ে দিলাম। মেয়েটি প্রেসক্রিপশনটা দেখেই একটু অবাক হলো মনে হল। তারপর বলল,” রোগী কে?”। “কেন আমি” আমি বললাম।মেয়েটি এরপর আমার দিকে কিছুটা সন্দেহের চোখে তাকিয়ে ঔষধটা খুঁজে বার করে দিল আমায়। আমি দোকান থেকে বেরিয়ে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললাম ।যেভাবে মেয়েটি আমার দিকে তাকাচ্ছিলো তাতে মনে হচ্ছিল আমি চোর বা ডাকাত এর বেশি কিছু নয়। ভাবলাম আজ আর বাড়ি যাব না বাড়ি গেলে কোন না কোন ভাবে কাজে ব্যাঘাত ঘটতে পারে, তাই সামনের লেকটাতেই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। সৌভাগ্যবশত অন্যান্য জায়গার মতো এখানেও লোকজন বেশ কম,তাই দেখে ধরিয়ে দিলাম রবিঠাকুরের গান – “আমার যাবার বেলায় পিছু ডাকে”

পাশের বেঞ্চিতে বসে কিছুক্ষণ ওষুধ টার দিকে তাকালাম আর ভাবলাম এটাই হলো আমার সাফল্যের চাবিকাঠি এরপর সিল টা কেটে ওষুধটা খেতে যাব এমন সময় আমার হাত থেকে কে যেন কেড়ে নিল সেটি, পেছনে ফিরতেই দেখি একটি অচেনা মেয়ে কে,ঠিকভাবে দেখতেই মনে পড়ে গেল সেই ঔষধের দোকানের মেয়েটি! কি ধূর্ত, এখানেও চলে এসেছে। আমি এরপর বললাম, “আপনি আমার থেকে ঔষধ তা কেড়ে নিলেন কেন?” সে বলল “ইচ্ছা হল তাই”। “এ কোন কথা হলো? দিন ওষুধটা”। “না দেব না, আগে বলুন কেন এটা খাচ্ছিলেন?আপনি তো এই ঔষধ এর যথার্থ রুগী নন”। আমার মাথাটা দারুণ গরম হয়ে উঠেছে, নিজেকে যতটা সম্ভব সামলে নিয়ে বললাম “আমার ইচ্ছা তাই আমি ওটা খাচ্ছি ,আপনি কে একথা বলার? দিন ঔষুধটা”।

“তাহলে শুনে রাখুন যে আমিও যথার্থ কারণ ছাড়া এই ঔষধ আপনাকে দিতে পারবো না”। এ তো ভারি ঝামেলায় পড়া গেল, কি করা যায়? “ঠিক আছে। দিতে হবে না আমি অন্য একটা কিনে নেব”।এরপর চলে যাবো এমন সময় মেয়েটি আমার হাত টেনে ধরল। আমি অবাক হয়ে পেছনে ফিরতেই সে বলল “রাগ করছেন কেন ? প্লীজ বসুন , আপনার সাথে অনেক জরুরী কথা আছে”। এরপর একপ্রকার জোর করেই মেয়েটি আমায় বেঞ্চে বসিয়ে দিল আর বলল, “আপনি হয়তো আমাকে চেনেন না কিন্তু আমি আপনাকে চিনি। এখন আবার জিজ্ঞেস করবেন না যে কিভাবে চিনি আপনাকে, তা বলতে পারব না”। “আপনি কেন এই ঔষধ কিনেছেন তাও আমার অজানা নয়”। আমি বিস্ময়ভাবে তাকিয়ে ছিলাম মেয়েটির দিকে, আর শুনছিলাম তার কথাগুলো।সে বলে চলল “নিজেকে কেন এইভাবে শেষ করতে চাইছেন? স্বপ্ন পূরণ হয়নি বলে? ভুল করছেন আপনার স্বপ্নের গতি টাকে একটু পাল্টান, দেখবেন তা ঠিক পূরণ হবেই”।

“আজ থেকে আমি আপনার বন্ধু, কি রাজি তো?” আমি শুধু যন্ত্রচালিত ভাবে মাথা নাড়ালাম ।”আমাদের দেখা হবে প্রতিদিন এই লেকে ঠিক বিকেল পাঁচটায় ,মিস করবেন না কিন্তু ।আজ যাই কাল আবার কথা হবে”।আমি বললাম,”তোমার নামটা তো জানা হল না” সে বলল “যে কোন একটা নামে ডাকলেই হবে”।এ কেমন কথা, যে কোন নামে ডাকলেই হবে, আজব মেয়ে তো।এরপর কথাটা বলে মেয়েটি এক প্রকার দৌড়ে দূরে মিলিয়ে গেল। মেয়েটি কে? কেনই বা আমায় মরতে দিল না? মনে অনেক প্রশ্ন জন্ম নিচ্ছে, তবে মেয়েটির সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে যেন ডিপ্রেশন অনেকটা কমে গেছে। শুধু অধীরভাবে কাল পাঁচটার অপেক্ষায় আছি।

পরদিন বিকেল পাঁচটা বাজতেই চলে গেলাম ওই লেকে ,ঠিক যেখানে দেখা হয়েছিল এই মেয়েটার সাথে। গিয়ে দেখি মেয়েটি আমার জন্য বসে আছে ওই একই বেঞ্চে, আমাকে দেখেই বলল” আসুন আপনার অপেক্ষাতেই ছিলাম”। বলে আমার হাতটা ধরে বেঞ্চে বসিয়ে দিল, যেন কতকালের চেনা আমি তার। “কালকের পর ডিপ্রেশন টা নিশ্চয়ই কিছুটা কমেছে?” “হ্যাঁ অনেকটা কিন্তু কিভাবে এরকম সম্ভব হল?”

“সবই জাদু বুঝলেন তো, আমি জাদু জানি কিনা”।আমি এরপর হেসে ফেললাম, আমায় হাসতে দেখে মেয়েটি বলল “দেখেছেন তো, কতটা স্বার্থপর আপনি? জাদু করে আপনার ডিপ্রেশন টা কমিয়ে দিলাম আর আপনি বিশ্বাস করছেন না, হাসছেন”।” না আপনার কথাগুলো শুনে হাসি পেয়ে গেল, যে রোগ বড় বড় ডাক্তার ঠিক করতে পারল না আর আপনি- এরপর মেয়েটি কথা কেড়ে নিয়ে বলল “এক নিমিষেই কমিয়ে দিলাম তাই তো? ওটাই তো হল আমার ম্যাজিক। যাইহোক যেটা বলার সেটা বলি আপনি তো দারুণ কবিতা লিখেন গল্প লেখেন বেশ ভালো তা সাহিত্য রাশি নিজেকে নিয়োজিত করেই দেখুন না কি হয় নিজের বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তাধারার গুলিকে গল্পে ও কবিতায় রূপ দেওয়ার চেষ্টা করুন দেখবেন সুফল পাবেন”।” কথাটা মন্দ বলনি তা অবশ্য করাই যায়”” তাহলে তাই করো,আমি কিন্তু অধীর ভাবে অপেক্ষা করবো তোমার লেখা গল্প ও কবিতা শোনার জন্য”। এরপর আর বেশিক্ষণ থাকেনি চলে গেছে। মেয়েটির কথা শুনে নিজেকে সাহিত্যের মধ্যে ডুবিয়ে দিলাম, লিখতে শুরু করলাম গল্প কবিতা প্রবন্ধ ও আরো অনেক কিছু।

এরপর দু মাস কেটে গেল সাহিত্য নিয়ে এত মেতে রইলাম যেদিন মেয়েটির সাথে আর দেখা হতো না তার কথাগুলো সত্যি জাদুর মত ফেলেছিল গল্প কবিতার মাধ্যমে আজ অনেক নামডাক হয়েছে।আমার নাম এখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে । এই দুই মাসে এতটা যে নাম করবো তা সত্যি ভাবিনি। সেই মেয়েটির জন্যই এসব হয়েছে। বন্ধু হয়ে জীবনে এসেছে এবং জীবনটাকে একটা নতুন রূপ দিয়েছে। কাল আবার যাবো ,বলে দেবো মনের কথাগুলো, টেনে নেব কাছে যেভাবে ও আমায় সেদিন কাছে টেনে নিয়েছিল। আজও ছিল সেদিনের মতো বৃষ্টি , চারিদিক নির্জন, ঠিক যেন সেই দিনটার কার্বন কপি, লেকের ভিতরটা এক মায়াবী কুয়াশার চাদরে ঢাকা। সামনের দেবদারু গাছটা কে ফেলে রাস্তাটার বাক নিতেই চোখে পড়ল তাকে, সেই হাসিমাখা মুখ বুক বিদীর্ণ করা দৃষ্টি, কাছে যেতেই সেদিনের মতো হাত ধরে বসিয়ে দিলো। কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবলো এবং বলল “আজকের ধীমানের সঙ্গে সেদিনের ধীমানকে যেন মিলাতেই পারছি না, সত্যি আজ আমি ভীষণ খুশি” আমি বললাম” সবই আপনার ম্যাজিক ম্যাডাম” এরপর সে হেসে বলল , “দেখলে তো আমার ম্যাজিক কতটা প্রভাব বিস্তার করেছে তোমার ওপর “
“হ্যাঁ দারুণভাবে কাজ করেছে, এখন আর আগের মত ডিপ্রেশন অনুভব করি না”।” বাহ তাহলে আমার কাজ শেষ,যেটা করতে এসেছিলাম তা আজ পূর্ণ হয়েছে ,এবার আমার মুক্তি, আমাকে যেতে হবে”।আমি বিস্মিত ভাবে বললাম, “যেতে হবে কেন? এখনো তো তোমায় আমার…. বলা শেষ হলো না তার আগেই ও বলল “চিন্তা করো না আবার কখনো ডিপ্রেসেড অনুভব করলে চলে এসো এই জায়গায়, ঠিক বিকেল পাঁচটায়, আজ আসি ভালো থেকো” বলে মেয়েটি তড়িঘড়ি বেঞ্চ থেকে উঠে পরল এবং সামনের দিকে এগিয়ে গেল।

আমি ঘটনার আকস্মিকতায় একেবারে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম, সজ্ঞানে ফিরতেই মনে পড়ল দৌড়ে গেলে হয়তো তাকে ধরতে পারব। আজকে আর তাকে পালাতে দেবো না ,তাই ছুটে গেলাম তার দিকে, যেদিকে সে চলে গিয়েছিল। কিছুটা এগোতেই তাকে দেখলাম, মনটা একটু আনন্দে ভরে উঠলো কিন্তু পাশের একটি গলিতে সে ঢুকে গেল। দৌড়ে সেখানে যেতেই আর পেলাম না তাকে ।এরপর তাকে অনেক খুঁজেছি কিন্তু আর পায়নি। মেয়েটির সাথে সাথে আমার ডিপ্রেশন একেবারেই চলে গেল মেয়েটি বলেছিল যে কোন একটা নামে ডাকলেই হবে,জানেন একটা নাম ঠিক করেছি তার জন্য, ডিপ্রেশনিস্ট, আমার প্রাণদাত্রী বন্ধু।মনে মনে এটাই প্রার্থনা করি যেন পৃথিবীর সমস্ত অবসাদগ্রস্ত মানুষেরা তার দেখা পায়,তার কোমল, জাদুকরী ও দৈবিক স্পর্শ যেন ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র, তাহলে দেখবেন সমগ্র পৃথিবীটা ডিপ্রেশন মুক্ত হবে।

মলয় হাজরা | Maloy Hazra

Natun Bangla Galpo 2023 | এক জীবন পিপাসা ও এক বিন্দু জল | মনসুর আলি

Natun Bangla Kabita 2023 | সুচন্দ্রা বসু | Top New Poetry

City and nature | শহর ও প্রকৃতি | New Bengali Article 2023

Ananta Bikeler Rupkathara | অনন্ত বিকেলের রূপকথারা | New Bengali Story 2023

Read New Modern Bangla Golpo | New Read Online Bengali Story | New Modern Bangla Golpo Blogs | Best Story Blogs in pdf | Sabuj Basinda | High Challenger | Best New Bengali Web Story 2023 | Shabdodweep Read Online Bengali Story | Shabdodweep Writer | New Modern Bangla Golpo in India | World’s New Modern Bangla Golpo Blogs | New Bengali Web Story in Online | Online New Modern Bangla Golpo | Full Read Online Bangla Golpo | New Bengali Web Story Blogs | Best Story Blogs in Bengali | Live Bengali Story in English | Live Bengali Story pdf | Full Bangla Golpo Read Online | New New Modern Bangla Golpo | New Modern Bangla Golpo – Episode | Golpo Dot Com Series | Horror Adult Story Video | Horror Live Bengali Story | Bangla Golpo Read Online Audio | Bangla Golpo Read Online Video | New Modern Bangla Golpo Netflix | Full Bangla Galpo Read | New Modern Bangla Golpo Download | Shabdodweep Competition | Bangla Golpo Read Online Competition | Bengali Writer | Bengali Writer 2023 | Trend New Modern Bangla Golpo | Recent New Modern Bangla Golpo | Top Live Bengali Story | Popular New Bengali Web Story | Best Read Online Bengali Story | Bangla Golpo Read Online 2023 | Shabdodweep Bangla Golpo Read Online | New Bangla Golpo Read Online | New Modern Bangla Golpo in pdf | Golpo Dot Com Download | Bengali Famous Story – audio | Horror Adult Story | Read New Modern Bangla Golpo | Live New Modern Bangla Golpo – video | New Bengali Web Story APK | New Bengali Web Story Download | Live Bengali Story mp3 | Full Live Bengali Story | Bengali Famous Story 2023 | Shabdodweep Bengali Famous Story | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Live New Modern Bangla Golpo – audio | Top New Modern Bangla Golpo | Bengali Famous Story – video | Bengali Famous Story mp3 | Full Bangla Golpo Read Online | Bengali Literature | Shabdodweep Magazine | Shabdodweep Web Magazine | Live Bangla Golpo Read Online | Shabdodweep Writer

Leave a Comment