মো: ওয়াসিউর রহমান – সূচিপত্র [New Bengali Article 2023]
শহর ও প্রকৃতি – মো: ওয়াসিউর রহমান [City and nature]
দেশের সবচাইতে ব্যস্ততম শহর এই ঢাকা। সেই আশির দশকের দিক হতে যখন প্রথম জ্ঞান হলো তখন থেকেই শুনে আসছি, ঢাকা শহর একটি মানুষ ঠাঁসা প্রাণান্ত শহর। এ শহরের সর্বত্রই ইট-কাঠ পাথরে ছাওয়া, আর এখানকার যেখানে সেখানেঃ নালা-নর্দমার পাশ দিয়ে, রেলের ধারে ঝুপড়ি বানিয়ে একদল মানুষ সংসার ফেঁদে বসে। এই বসতিগুলোর সহজ নাম বস্তি। এমন এক পুরোনো মহানগরে হয়তো বছর তিরিশ আগেও এখনকার চাইতে অনেক বেশী রূপ লাবণ্য ছিলো। এ লাবণ্য হয়তো বয়সের ভারে হারায়নি; বরং এতগুলো মানুষকে পালতে গিয়ে যে হাড় ভাঙ্গা খাটুনি হয়, তাতেই যেন অকালে নুয়ে পড়ার মতো এর জীর্ণতা ধরা দেয় শত যান্ত্রিক উন্নয়নের পরও।
সেই নব্বইয়ের দশকেও শহরের আনাচে কানাচে শোনা যেতো তক্ষকের ডাক, এখানে সেখানে ছোট খাটো ঝোপের ধারে দেখা যেতো বেজী ছুটে পালাচ্ছে। শহরের অনেক এলাকাতেই বড় কোন গাছের নিচে পাওয়া যেতো দোকান-পাট। এখন সেসব কথা একদম অলীক শোনাবে যে, হেঁটে হেঁটে চলে যাওয়া যেতো তেজগাঁও হতে নিউ মার্কেট অনায়াসেই, এমনকি নব্বইয়ের শেষ ভাগেও তেজগাঁও, গুলশান, শাহবাগ, নিউমার্কেট চষে বেড়িয়েছি পায়ে হেঁটেই। আশির দশকের শেষভাগ হতে নব্বইয়ের শুরুর দিকে; ঢাকা শহরের এমন ছেলেবেলায় তখন খুব একটা পাখি না চিনলেও, পাড়া বা মহল্লায় যারা হাস-মুরগি পালতেন, তাদের দেখতাম মুরগি বাচ্চা ফোটানোর পর তারা বেশ তটস্থ থাকতেন, চিল বাচ্চা ধরে নিয়ে যেতে পারে এমন আশংকায়।
যদিও এই শহরের অনেক অংশই পড়েছে মধুপুর ভাওয়ালের আদি সীমানার মধ্যে, তবুও ক্রমান্বয়ে মানুষের বসতির প্রসারের সাথে এই বাস্তুসংস্থান গুলো পুরোপুরি বিলুপ্ত। শহরের উত্তরদিকের গাজীপুরের অনেক শালবনই কমে গিয়েছে ক্রমবর্ধমান নগরায়ন ও শিল্পায়নের চাপে। ফলে এখন অনেক স্থানকে শালবনের আদি নিবাস ভাবতে বেশ কষ্টই হয়। তথাপি এ অঞ্চলের লাল এঁটেল মাটিকে মধুপর অঞ্চলের মাটি হিসেবে সহজেই সনাক্ত করা যায়।
তাই শাল-বন বিহারকেই ঢাকার নিকটস্থ বনাঞ্চল হিসেবেই বেছে নেয়া যায় বলে, শহরের ক্লান্তি ধুয়ে নিতে এই বনানীকেই বেছে নেয়া যেতে পারে। প্রখ্যাত লেখক হুমায়ুন আহমেদের হিমু উপন্যাসের হিমু বহুবার নাটকীয়ভাবে ছুটে গিয়েছে এই শালবনে। তবুও যেন শহরের স্পর্শ বড়ই নির্মম মনে হয়, যেখান দিয়ে এই শহুরে মানুষেরা হেঁটে গিয়েছি, এই বনানীর প্রান্তরে, ততবারই যেন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গিয়েছে অরণ্যের প্রগাঢ় নির্মল নীরবতা প্রশান্তি। নিসর্গের খোঁজে বেরোনো মানুষ কখন যেন নিজের অভ্যস্ততা থেকে বা বদভ্যাস জনিত স্বভাব হতেই এই স্বাধীন প্রকৃতির ঘাড়ে বেঁধে ধরে লাগাম। গাজীপুর জাতীয় উদ্যানের মাঝে কখনো পিকনিক দলের মাইকে বাজানো শব্দের ভিড়ে বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে বনের প্রাণ, আবার কখনো লোভী একদল মানুষ অরণ্যের নীরবতাকে কাজে লাগিয়ে নষ্ট করে অরণ্যের শান্তি। তবুও কখনো কখনো নীরবে পিকনিক দলের হট্টগোল পার করে, একাকী ডুব দিতে মন চায় এই সবুজ সমুদ্রে।
ঢাকা হতে সর্বোত্তরে জামালপুর ও ময়মনসিংহের শেরপুর গারোপাহাড় ও সিলেটের উত্তরদিকের শালবন, ঠাকুরগাঁও ও রংপুরের যে শাল বনাঞ্চল রয়েছে তার সকলই পত্রপতনশীল বন। এর অধিকাংশ গাছই হলো শাল গাছ, যাদের গড় উচ্চতা হলো ১২-১৫ মিটার পর্যন্ত। এই অঞ্চলের বন আর্দ্র নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া সম্বলিত পত্রপতনশীল বন। এখানকার সবচেয়ে উঁচু স্তরের গাছগুলোর মধ্যে শাল গাছের পরিমাণ প্রায় ৮০ ভাগ এর সাথে রয়েছে কাইকা, বিভিন্ন জাতের কড়ই, বট পাকুড় ইত্যাদি। বড় বড় শাল গাছ ছাওয়া এই বনের ভিতরের অনেক স্থান হয়ে থাকে অন্ধকার, যদিও ক্রমান্বয়ে কমে আসা এই ঘনত্ব চোখে পড়ার মতো।
জুনের কোন একদিন এই শালবনের ভিতর দিয়ে হেঁটে যাবার সময় মনে হলো একটু নাকি স্বরের আওয়াজ উউহুক উউহুক কানে আসছে, বোঝার চেষ্টা করতে থাকলাম কি ওটা, একেবারেই অরণ্যের গভীরে এমন শব্দ কিছুটা ছমছমে পরিবেশ তৈরি করছিলো। জংগল হতে একটা নিচু কেয়ারী নেমে গিয়ে আরেকটা উঁচু ধাপের উপরে গাছের সারি আর কিছু দূরে একটা লেক, এরই মাঝ দিয়ে দেখি একটা ঈগল ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে পাশেই কোন একটা শাল গাছের ডাল হতে। দ্রুত ক্যামেরা তাক করে শাটার চাপা শুরু করলাম, জঙ্গলের অন্ধকারে ছবি তোলার জন্যে ম্যানুয়াল মোডে বাড়ানো আইএসও আর কমানোর সুযোগ পেলাম না শুধু শাটার বাড়ানো হলো যতদূর সম্ভব। মোটে দুটো ছবি পেলাম, একটা ছবিতে ডানা সম্পূর্ণ নামানো আর একটাতে সম্পূর্ণ ওঠানো ব্যাস, আমি তাতেই খুশি, দুটো ছবিই যথেষ্ট। আরো কিছুদূর পা বাড়ানোর পর জঙ্গলের ট্রেইলের খেয়াল করে দেখি ঈগলের মল পড়ে আছে, মানে উপরেই বাসা। যে ঈগলটা উড়ে গেলো তার ছবি দেখে প্রথমে একটু চমকে উঠলাম! এ যে তরুণ মেটে মাথা কুড়া ঈগল!
মেটে মাথা কুড়া ঈগল ইংরেজিতে এর নাম Grey Headed Fish Eagle; এই পাখির নাম হতেই সহজে অনুমান করে নেয়া যায় এর খাদ্যাভ্যাস কি। এরা মূলত উষ্ণ আর্দ্র বনভূমিতে অথবা ভেজা স্থান বা জলাশয়ের আশে-পাশের বড় গাছসমূহে বসবাস করে। হুকের মতো বাঁকা অগ্রভাগ সম্বলিত চঞ্চু এদের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রা কে নির্দেশ করে। হালকা হলুদ বর্ণের তীক্ষ্ম চোখ এদের শিকারি হিসেবে দক্ষতার সাথে বেশ মানানসই। খয়েরী বর্ণের শরীরের ঊর্ধ্বাংশ ও নিচের অংশে সাদা বর্ণের সংমিশ্রণ, শক্তিশালী সুঠাম পেশী, সুউচ্চ গ্রীবার উপরে মেটে বর্ণের মাথা, কোটরে বসানো চোখ এদের রূপ-দর্শন যথেষ্ট অভিজাত ও সৌষ্ঠব করে তুলেছে। অরণ্যের গভীরে এর রোমাঞ্চকর ডাক অপার্থিব শিহরণ জাগায়; আর কিছু সময় বাদে যখন তরুণ ঈগল ডানা ছেড়ে উড়ে যায়, সে রূপ বর্ণনায় প্রকাশ করার নয়।
এখানে বলে রাখা ভালো, এর স্ত্রী ও পুরুষ একই রকম হলেও তরুণ কালে এদের বর্ণ হয় হালকা খয়েরী ও এর ফাঁকে ফাঁকে গাঢ় খয়েরীর পালকগুলো লম্বা লম্বা দাগের সৃষ্টি করে, তরুণের দেহের নিম্নভাগ পূর্ণ বয়স্ক পাখির মতো পুরোপুরি সাদা না হলেও প্রচুর পরিমাণে সাদা দাগ উপস্থিত থাকে। একটি ঈগলের মোল্টিং সম্পন্ন করে পূর্ণ রূপ পেতে কয়েক বছর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।
ঢাকা থেকে এতো কাছে, কোন এক সাপ্তাহিক ছুটির দিনে শালবনে বেড়াতে এসেই এর দেখা পাবো চিন্তা করিনি। খাদ্য শৃঙ্খলের সবচেয়ে উপরের এই প্রাণীটি শুধু শিকারিই নয়, এরা মৃতভোজীও। প্রথমে নাম শুনে মনে হবে এরা শুধুই মাছ খেকো, তা নয় কিন্তু। এরা মাছ, গাছে ও জংগলে বসবাসরত বিভিন্ন সরীসৃপ, ছোট পাখি এমনকি ছোট-খাটো স্তন্যপায়ীও শিকার করে এবং মৃতদেহ হতেও পুষ্টি সংগ্রহ করে থাকে। সুতরাং এদের অবস্থান খাদ্য শৃঙ্খলে সবার উপরে, আর মৃতজীবী তথা পরিবেশের এঁটোও পরিষ্কার করে, শকুনের পরিবারভুক্ত এই পাখিটি। এর পরিবারের নামঃ Accipitridae যার অন্তর্গত হলো ইউরোপ, এশিয়া, ও আফ্রিকার শকুনগুলো। এরা মূলতঃ শিকারি পরিবার, তবে মৃত গলিত দেহ খায়। আইইউসিএন মতে এরা প্রায়ই বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে বিবেচিত হয়। তবু এস্থানে এদের অবস্থান বেশ আনন্দের উদ্রেক ঘটায়। তথাপি সামনে পা বাড়াতেই নজরে পড়লো কৃষি জমি। ধানের কেয়ারগুলোতে পড়ে আছে কাটা ধানের নাড়া, এমন ক্ষেতের আইলে চোখে পড়লো কীটনাশকের ফেলে রাখা প্লাস্টিকের বোতল।
খাদ্যশৃংখলের সবচেয়ে উপরের প্রাণী আমরাও, আর এটাও মনে রাখা জরুরী কোন না কোন ভাবে খাবারে মিশে থাকা সামান্য রাসায়নিক আমাদের শরীরে আসলেও তা লক্ষ্যগুণ বেড়ে যাবার সম্ভাবনা আছে। তাহলে ঝুঁকি আমাদেরও থাকে। শাল বনের ত্রিশভাগেরও বেশী জমি আজ কৃষি-কাজে ব্যবহৃত হয়। এর সাথে ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলা শহর, ও কৃষি জমিতে শহরায়ন ঘটে যাওয়ায় প্রভাব পড়ে চলেছে বন-বনানী এমনকি প্রাকৃতিক জলা ও জলাশয়ের উপরেও। ইউএস এইডের তথ্য মতে দেশে এখন বন বাসস্থানের পরিমাণ শতকরা ৬ ভাগের নিচে নেমে এসেছে এবং ক্রমান্বয়ে কমেই চলেছে। যে প্রকৃতিতে নিহিত আছে সকল মহৌষধ, লুকিয়ে আছে হাজারো বন্ধু সে প্রকৃতি যদি নষ্ট হয়ে যায়, তবে এটা সত্যিই আশংকা জনক বিষয় একারণে যে, যোগান সংকুলানে কৃত্রিম ব্যবস্থাপনা একেবারেই সাময়িক।
সুতরাং সময় এখন নতুন করে ভাববার, যে আমরা ছেলেবেলা থেকে শালবনকে ভেবেছি শুধুই পিকনিক স্পট, বনের গভীরে লুকোনো থাকে আততায়ীর আতংক, সে বন গড়ে উঠুক এমনভাবে, যাতে এই শহরের নতুন প্রজন্মরা শিখতে পারে কি দারুণ একটা সম্পদ দাঁড়িয়ে আছে অদূরেই, যাতে ভালোবাসা থেকে যত্ন নিতে শিখে প্রকৃতির, যা থেকে জন্ম নিতে পারে সত্যিকারের দেশপ্রেমিক।
মোঃ ওয়াসিউর রহমান | Md. Wasiur Rahman
New Bengali Novel 2022 | ফিরি বিশল্যকরণী (পর্ব ৪) | উপন্যাস
New Bengali Novel 2023 | ফিরি বিশল্যকরণী (পর্ব ৮) | উপন্যাস
New Bengali Article 2023 | প্রেমাবতার ঠাকুর হরনাথ ও সহধর্মিণী কুসুমকুমারী কথা
New Bengali Article 2023 | বাংলায় শিল্পে বিনিয়োগ সামান্যই
city and nature | city and nature quotes | city and nature painting | city and nature wallpaper | my city and nature drawing | merging city and nature | City and nature article | City and nature – bangla article 2023 | City and nature – new journal | City and nature – video | City and nature – pdf 2023 | Shabdodweep Founder | Shabdodweep Web Magazine | Shabdodweep Article | Shabdodweep Writer | Bengali Article | New Bangla Article | Article Bengali in pdf | bengali article in pdf | Trending Pdf Article | Article about city | Article about nature | Nature Article in pdf | Article nature in pdf | Article city in pdf | Full BengalI Article | Shabdodweep Article | Shabdodweep Latest Article | Article Collection | Best Article Collection 2023 | Top Bangla Article | Top Latest Bengali Article | Top Latest Bangla Article | Trending Top Articles | Article Factory | Bengali Article Publication | Full time article writer | Short Article | Long Article | Shabdodweep Article List | Sabuj Basinda Studio | High Challenger | New Bengali Article 2023 | Collection Bangla Article | Collection of Article in pdf | Article Journey | Article Ebook | Shabdodweep Article in pdf | City and nature article – video | Viral topic | Trending topic collection | New Full Article Ebook | 2023 Article collection | Best Articles | English Article Translation | bengali article translation | Full article ebook 2023 | Best selling article | High Ranking Article | Top search articles | Top ranking articles 2023 | Top searched article collection | High ranking article view | Article library collection | 2023 city and nature records | Article records 2023 | Evergreen Articles | Historical articles | Documentary articles 2023 | Historical articles in pdf | Historical articles in pdf | Documentary articles in pdf | pdf collection of articles | Article online book | Online Trending articles | online article in google | top searchable articles | top 10 articles books | top new article challenges | challenges of writing articles | how to write articles | Learning Articles | Article Writing Tutorial | How to write a well article 2023 | How to be prefessional article writer | Article Ebook Google Library