New Bengali Story 2023 | খোঁজ | কুহেলী দাশগুপ্ত

Sharing Is Caring:
BENGALI STORY
Bengali Story

কুহেলী দাশগুপ্ত – সূচিপত্র [Bengali Story]

খোঁজ [Bengali Story]

৩৪/বি, নিমাই চাঁদ বড়াল লেন টা কোথায়? খুঁজতে খুঁজতে বিতানের অনেকটা ঘুরপাক খেতে হয়েছে। লালী মাসি অনেক কষ্টে খোঁজ এনে দিয়েছিল। খিদিরপুর বা একবালপুরের আশেপাশে কোথাও হবে। গুগল সার্চ করেও একদম সঠিক স্থানে ঝটিতে পৌঁছনোর উপায় হয় না! ওই এলাকার আশপাশ টা খবর করে কতজনকে জিজ্ঞাসা করল ! অনেকে চেনে না, কেউ আবার যে পথ দেখায় সেখানে অলিগলি টপকে খোঁজা যেন গোলক ধাঁধা। অবশেষে এক চায়ের দোকানদার খোঁজ দিল।
সোজা গিয়ে বাঁ দিকে সরু গলিতে শেষ বাড়ি। রতন সোমের বাড়ি। দোকানীর চোখে কৌতূহল। জিজ্ঞাসা করেন,
— কার কাছে যাবেন?

— সুধা মা, মানে মঞ্জরী কর। ওনার কাছেই যাব।

— ওও — মঞ্জুদি! এখানে সবাই মঞ্জুদি নামে চেনে।

— ও, আচ্ছা । অনেক ধন্যবাদ।
দোকানীর উৎসাহ কমে না।

— আপনার কে হন উনি? ওনার কেউ আছে কখনো শুনিনি। অনেক বছর ধরে দেখছি এ পাড়ায়। এই বয়সে ও প্রচুর অর্ডারি সেলাই করেন।আর সন্ধ্যের দিকে ওনার হাতে গড়া রুটি সাপ্লাই হয় অনেক বাড়িতে। বিতান কিছুটা বিব্রত। ওর সদ্য কেনা রয়াল এনফিল্ডটা যেন এই খোঁজের সাথে বেমানান।

— এতদিন খোঁজ পাইনি, তাই। ঠিক আছে, চলি।
বিতান এগিয়ে যায়। গলির মুখে বাইকটা সাইড করে রাখে। এতো সরু গলি! বাইক ঢোকানো মুশকিল। লোকজন যাতায়াত করতে অসুবিধে হবে। এদিককার সব বাড়িগুলো খুব পুরনো। শেষ বাড়িটার কাছে এসে কড়া নাড়ল। কোন কলিং বেল নেই। কয়েকবার দরজার কড়া নাড়ার পর, একজন বয়স্কা কেউ দরজা খুললেন। অবাক হয়ে তাকিয়ে বললেন,
— আজকের রুটির অর্ডার হয়ে গেছে, আর হবে না।

— না, মানে আমি মঞ্জরী করের খোঁজে এসেছি।

— আমিই মঞ্জরী কর। কি দরকার?
বিতান উচ্ছ্বসিত হয়ে প্রণাম করে।

— সুধা মা! আমি বিতান, তোমার আদরের গোপাল। চিনতে পারছ?
উফ্! কত খুঁজেছি তোমায়! কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে?
বৃদ্ধার চোখ ছলছল। গায়ে, মাথায় হাত বুলিয়ে দেখতে থাকে।

— গোপাল! কত বড় হয়ে গেছিস! চল, ঘরে চল। কি ভাবে খোঁজ পেলি
হাত ধরে নিয়ে ঘরে বসান।

— একটু জল বিস্কুট খা।

— ওসব পরে হবে। কতদিন পর দেখছি তোমায়! কত গল্প জমে! আগে দেখি তোমায়।

— কি আর দেখবি এই বুড়িকে? তুই কত বড় হয়েছিস! আমি এখনও ভাবতে পারছি না। আমার ছোট্ট গোপাল সোনা অ্যাত্ত বড় হয়েছে। কি করছিস বাবা! দাদা আর বৌদি কেমন আছেন?

— আমি একটা প্রাইভেট ব্যাংকে কাজ করি। বাবা চলে গেল তিন বছর হয়ে গেলো। মা আছে, ওরকম। অসুস্থ বরাবর। বাবা চলে যাওয়ার পর আরও ভেঙে পড়েছে। তোমার কথা খুব বলে। কত খুঁজেছি তোমায়! অমন করে না বলে চলে যেতে হয়! তোমায় নিয়ে যাব। এবার থেকে আমাদের সাথে থাকবে। আর কষ্ট করে কাজ করতে হবে না।

— তাই বললে কি হয় বাপ! আমি ভালো আছি রে। কাজ না করলে অকেজো হয়ে পড়ব।
বৃদ্ধা ঘরের দেয়াল আলমারির কৌটো খুলে বিস্কিট সাজান কাঁচের প্লেটে। কাঁচের গ্লাসে জল সমেত নিয়ে সামনে রাখেন।

— খেয়ে নে গোপাল। আর কিছু নেই বাড়িতে দেয়ার মতো।
বিতানের চোখ ছলছল করে ওঠে। নিজেকে সামলে নেয়।

— অনেক দিয়েছ। আমি কত খাব বল তো! তুমি যা দিয়েছ, সবটা খেয়ে নেব।
খেতে খেতে বিতান ঘরের চারপাশটা দেখে নেয়। অনেক পুরনো দিনের বাড়ি। পলেস্তারা জায়গায় জায়গায় খসে পড়েছে। জানালা দরজা নড়বড়ে। তবুও কত যত্নে গুছিয়ে রাখা! আসবাব তেমন নেই। একখানা চৌকি , দেয়াল আলমারি আর একটা বেতের মোড়া।
বিতান চৌকিতে বসে।

— কি দেখছিস বাপ! এগুলি সব বাড়িওলার। আমি ব্যবহার করি।

— একটা কথা জিজ্ঞেস করি সুধা মা? তুমি মা , বাবার ওপর অভিমান করে চলে এসেছ না? বাবা একদিন আমাকে বলেছে। মা এখন অনেক অন্যরকম। তোমার কথা বলে। চলো না গো, আমাদের সাথে থাকবে।
মঞ্জরী কর প্রসঙ্গ পাল্টাতে চান।

— বিয়ে করেছিস গোপাল?

— না গো। এখন কি! এই তো চার বছর হোল চাকরি করছি। একটু ঘুরে ফিরে নিই। তুমি না থাকলে আমার বিয়ের আয়োজন কে করবে!

— গোপাল আমার কত বুদ্ধি রাখে!
মাথায় হাত বুলিয়ে দেন বিতানের।

— আমায় জোর করিস না বাপ। এই বয়সে নতুন করে সব কিছু করা, মানে জীবন অন্য রকম হবে এমনটা আমার সইবে না। আমি এক রকম অভ্যেস করে ফেলেছি এভাবে থাকা।

— এভাবে একা একা! না, আমি আর এভাবে তোমায় থাকতে দেবো না।

— তুই রইলি তো। মাঝে মাঝে আসিস।

— তুমি আমার কথা ভেবেও যাবে না সুধা মা!

— ওরে! কেন এতো জোর করছিস? অন্য কোথাও গিয়ে ভালো থাকব না।

— তবে তুমি আর এতো কাজ করবে না। আমি তোমায় দেখব। তোমার গোপাল এখন রোজগেরে।

— আশীর্বাদ করি বাপ, অনেক বড় হবি। যখন আসবি, ভালোবেসে যা মন চায় আনিস। টাকার কথা বলিস না। আমার স্নেহের দাম কি শোধ করতে চাস!

— এমা! ছি! ছি! না, না। অমন ভাবতেই পারি না। তুমি কি আমার মায়ের চেয়ে কম? ঠিক আছে, আর কিছু বলব না। তাহলে একটা ফোন তোমায় দেব। এটা বারণ কোর না। আমি রোজ তোমার সাথে কথা বলব।

— এই বয়সে ওসব দিয়ে কি করব রে! ষাট পেরিয়ে গেলো।

— না, আমি আর শুনব না। এটা তোমাকে নিতেই হবে।
মঞ্জরী কর চুপ করে থাকেন।

— চায়ের দোকানদার বলছিলেন, তুমি অর্ডারি সেলাই কর, রুটি বানিয়ে সাপ্লাই দাও। এই বয়সে এসব তুমি করবে, আর আমি মানব কেন!

— আমার অভ্যেস হয়ে গেছে রে। না করলে , আমার সময় কাটবে না। ওসব নিয়ে ভাবিস না রে। তুই আসিস সময় করে, এতেই আমার ভালো লাগবে।

— কি আর বলব! আজ তবে চলি! একদিন ভবানীপুর বাড়িতে চলো ।

— সে হবে ক্ষণ। যাব। তুই সাবধানে থাকবি গোপাল।

বিতান এগিয়ে যায় দরজার দিকে। বাইরে বার হয়ে “আসি”বলে এগোয় গলির মুখে। একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকেন মঞ্জরী দেবী। চোখ ছলছল। অনেক কথা মনে পড়ে যায়। গর্ভের সন্তান আর স্বামীকে হারিয়েছিলেন এক বাস দুর্ঘটনায়। গুমরে থাকতেন। শ্বশুর বাড়িতে জা আর দেওরের বোঝা যেন! অনেক দেরী তে গর্ভে বাতি জ্বলেছিল। জায়ের কোলে তখন দু’টি বাড়ছে। ছেলে আর এক মেয়ে। এমন কপাল হবে তার ভাবতে পারেন নি। প্রতিবেশী অনিলা দিদি কাজ দিয়েছিলেন, এক মাসের ছোট্ট বিতানকে দেখাশোনার। বিতানের মাসি উনি। বিতানের মা মলিনা দেবী খুব অসুস্থ ছিলেন। হাঁটাচলার সমস্যা। নিম্নাঙ্গ অসাড় হয়ে পড়েছিল। আধবসা কাত হয়ে ছেলেকে স্তন্যপান করাতে পারতেন।মঞ্জরী কর সাথে থাকতেন। বাকি সব সামলে নিতেন। ধীরে ধীরে ভবানীপুরের ঘোষ বাড়িতে মঞ্জরী দেবী অপরিহার্য হয়ে উঠেছিলেন। আদর করে গোপাল ডাকতেন বিতানকে। বিমান বাবু বিতানের বাবা, সমীহ করতেন মঞ্জরী দেবীকে। দিদি ডাকতেন। বিতান বড় হচ্ছে, স্কুলে ভর্তি হোল। সুধা মা যেন ওর প্রাণ। ওর সব আবদার সুধা মায়ের কাছে। মলিনা দেবী অসন্তুষ্ট হতেন কখনও। গম্ভীর হয়ে যেতেন। মঞ্জরী বুঝতেন জীবন যার গতিশীল নয় ,তার অমন মেজাজ হবে। কিই বা বয়স এমন! শুধু একদিন শুনে ফেলেছেন,

— আমার সন্তান, আমার সংসার। অন্য কেউ দাপিয়ে বেড়াবে! কতক্ষণ কাছে পাই ছেলেকে! তুমিই বা কত সময় দাও!

— চুপ কর মলি। মঞ্জরী দি শুনলে কি ভাববে! ওনাকে ছাড়া কি উপায় বলো! বিতানকে কে দেখাশোনা করবে বলো! আমি তো আর কাজ ফেলে বাড়িতে বসে থাকতে পারি না। সবটাই তোমার।

— ও কে যাতায়াত করে কাজ করতে বলো। এখানে সবসময় থাকতে হবে না।

— কি বলছ! দরজা খুলতে ও কাউকে লাগে। তাছাড়া, ওনার কষ্টের কথা ও আমরা সব জানি। বিতানকে কত যত্নে আগলে রাখেন! তুমি একটু বোঝ।

— কি বুঝব! না কি, তুমি চাও ও এ বাড়িতে থাকুক। তোমার কিছু সুবিধে হয়।

— ছি! মলি, ছি! তুমি বাজে ইঙ্গিত করছ। আমি ভাবতেও পারছি না।…

নাহ্, আর শুনতে চাননি এসব কথা। পালিয়ে এসেছিলেন নিচের ঘরে। আদরের গোপাল তখন মায়ের কাছে ঘুমিয়ে। রাতের খাবার দেবে কি না জানতে গিয়ে এসব শুনে ফেলেছিলেন। মাথা নিচু করে রাতের সব কাজ সেরেছিল।সারা রাত দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি। পরদিন ভোরে বসার ঘরে একটা কাগজে লিখে এসেছিলেন “আমায় ক্ষমা করবেন দাদা। থাকতে পারলাম না। গোপাল অনেক বড় হোক। আশীর্বাদ করি।”

কত বছর আগেকার কথা! মঞ্জরী কর দেওর জা এর সংসারেও ফেরেননি। আটঘরা বাপের বাড়িতেও না। কাউকে কোন খোঁজ দিতে চাননি, তাই এই হারিয়ে যাওয়া। কয়েক বছর আগে নব্বই বছরের মাকে দেখতে গিয়েছিলেন। তখন সবাই এই নিরুদ্দেশ হওয়া নিয়ে কত প্রশ্ন করেছে! মুখ খোলেননি কারও কাছে। ছোট ভাইয়ের কাছে ঠিকানা জানিয়েছেন। অনুরোধ করেছেন, যোগাযোগ না রাখতে। মায়ার বাঁধনগুলো শিথিল করার চেষ্টা করেছেন। এত বছর পর আবার সামনে পুরানো অতীত। নতুন করে আর নির্ভরতায় জড়াতে চান না। মন প্রাণ দিয়ে গোপালের শুভ কামনা করেন।

কুহেলী দাশগুপ্ত | Kuheli Dasgupta

New Bengali Poetry 2023 | তৌহিদুল ইসলাম | কবিতাগুচ্ছ

New Bengali Poetry 2023 | প্রতিম ঘোষ | কবিতাগুচ্ছ

New Bengali Poetry 2023 | বারিদ বরন গুপ্ত | কবিতাগুচ্ছ

New Bengali Poetry 2023 | সুকান্ত মজুমদার | কবিতাগুচ্ছ

bengali story | short bengali story analysis | short bengali story characteristics | short bengali story competition | short bengali story definition | Best Bengali Story | Top Bengali Story | World Bengali Story | International Bengali Story | short bengali story english | writing competitions ireland | bengali story writing practice | bengali story writing topics | trending topics for article writing 2022 | bengali story trends 2022 | content writing topics 2022 | Bangla Prabandha | Probondho | Definite Article | Article Writer | Shabdodweep bengali story | Galpoguccha | Galpo | Bangla Galpo | Bengali Story | Bengali Article | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Shabdodweep Founder

Leave a Comment