New Bengali Story 2023 | ভালো লাগে | শওকত নূর

Sharing Is Caring:
BENGALI STORY
Bengali Story

শওকত নূর – সূচিপত্র [Bengali Story]

ভালো লাগে [Bengali Story]

অতিথির বেশভূষাই ছিল শুধু অদ্ভুত। পরনে স্যুট কোট, গলায় মাফলার, মাথায় ইংলিশ হ্যাট,পায়ে প্লাস্টিক নাগড়া,কাঁধে লম্বা জীর্ণ ঝোলা। পোশাক পরিচ্ছদের এই অসামঞ্জস্য তার ব্যক্তিত্ব, বোধ জ্ঞান সম্পর্কে অসামঞ্জস্যের ধারণা বয়ে আনলেও তার অভিজাত মুখমণ্ডল দ্বিধা দ্বন্দ্বের উদ্রেক ঘটায়। তার উপশম ঘটে যখন তিনি মুখ খোলেন। একান্তই সাদাসিধে তার কথাবার্তা। অদ্ভুত ঠেকবার মতো কোনও শব্দ বাক্য তার বাকযন্ত্র বিচ্যুত হয় না। এ জন্যে শুরুতেই বলেছি, তার বেশভূষাই শুধু অদ্ভুত। বাকি অভিব্যক্তি স্বল্পতম কথায় সারতে গেলে বলতে হয়, আদতে তিনি সাদামাঠা এক মানুষ, খানিকটা হাবাগোবা ধরণের বললে অত্যুক্তি হয় না। পাঠক হয়তো ভাবছেন,এইসব ঘোরপ্যাঁচ ছেড়ে আসল কথা কেন পাড়ছি না। পাড়ছি।

দিন দুই আগে প্রথম তার সাথে সাক্ষাৎ। বেলা তখন পড়ন্ত। মেঘনার প্রবল ভাঙন কবলিত পাড় ঘেঁষে জেগে ওঠা বিস্তৃত বালুচর ধরে হেঁটে লাল গোধূলি ছড়ানো লাল সূর্য দিগন্তে চোখ রেখে আমি পানির কিনারে বসে কী সব হিসেব নিকেশ কষছিলাম জীবনের। হঠাৎই একসময় ডানে চোখ যেতে দেখি অদূরে ঘোড়ায় চড়ে পানির কিনারা ধরে কেউ ধীরে এগিয়ে আসছেন। এই নির্জনতায় তাকে আমি পশ্চিমা রহস্যোপন্যাসের কোনও বিশেষ চরিত্রানুসারী ভেবে বসি। কিছুটা রোমাঞ্চে উৎকণ্ঠায় দৃষ্টি ধরে রাখি তার ধাবমানতায়। আমার থেকে হাত তিনেকের মতো দূরত্বে এসে আচমকা লাগাম টেনে ঘোড়া থামালেন তিনি। প্রথমেই আমার দৃষ্টি আবর্তিত হতে থাকে তার ওইসব সামঞ্জস্যহীন বেশভূষায়। খানিকটা যেন হোঁচট খেয়ে যাই ভেতরে। আমার সংশয়গ্রস্থতার ভেতর- বিষয়টি তিনি আঁচ করতে পারলেন কি পারলেন না তা ধরা গেল না। তবে দ্বিধা দ্বন্দ্ব উতরে মোটামুটি এক স্পষ্ট ধারণায় পৌঁছতে সহায়ক হলো তার কণ্ঠস্বর, বাইডি, নদীর ধারে বইসা আছেন?

জি। মুখ তুলে বললাম আমি।

কিছু চিন্তা করতাছেন?

করছি। কে আপনি?

ঘোড়াওয়ালা।

দেখতেই পাচ্ছি। অন্য পরিচয়?

মানুষ।

তাও দেখতে পাচ্ছি। কোত্থেকে আসছেন?

পাহাড়।

কোথায় যাচ্ছেন?

তিনি জানেন।

কে?

ওই যে তিনি, ওইদিকে যিনি থাকেন। ওপর দিকে হাত ওঠালেন তিনি।

পাহাড় থেকে নদীপাড় – বাকি গন্তব্য খোদা জানেন। বিড়বিড়ালাম আমি।

এরই মধ্যে ঘোড়া থেকে এক লাফে নামলেন তিনি। অনুচ্চ স্বরে বললেন, একটু বসি আপনার পাশে, নাকি?

বসুন।

সূর্যাস্ত! বসতে বসতে বললেন তিনি।

জি। বললাম আমি।

নদীতীরে সূর্যাস্ত।

জি। আপনার ঘোড়া পানি খাচ্ছে।

স্বচ্ছ পানি।

জি,পানিতে চমৎকার প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে।

আপনার পরবর্তী গন্তব্য?

জি,ওই যে গাঁয়ের এদিকটার শেষ বাড়ি। আঙুল তুলে দেখালাম আমি।

নিজস্ব?

জি না, ভাড়া থাকছি।

গ্রামে ভাড়া থাকতেছেন! বুঝা গেল না।

নদী সংস্কার কাজের সুপারভাইজার। বাড়ি দূরে হওয়ায় এখানে ভাড়া থাকতে হচ্ছে। তো উঠতে হচ্ছে এখন। আপনার তো –। দাঁড়াবার ফাঁকে বললাম আমি।

হুম, গন্তব্য অনির্দিষ্ট। উঠেন আপনি। চাইলে আমার ঘোড়ার পিঠে চড়াইয়া পৌঁছাইয়া দিতে পারি।

না না, ধন্যবাদ, চলি। পা তুললাম আমি।

ঠিক আছে, পথ সামান্য। হাঁইটাই তবে যান। বালুর চর ধইরা হাঁটবেন আর চিন্তা করবেন।

জি, চলি। পা বাড়ালাম আমি।

ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম, লোকটা নিমিষে ঘোড়ার কাছে গিয়ে এক লাফে চড়ে বসলেন ঘোড়ার পিঠে।ঘোড়া হাঁকিয়ে দ্রুত বেগে বালুচর পেরিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলেন নদীর বাঁকে।

তার সাথে দ্বিতীয় সাক্ষাৎ ঠিক দুদিন পর। ভোর বিহান। ভাড়া থাকা কাছারিতে আপাদমস্তক গরম কাপড়ে ঢেকে বসেছি আমি। ভয়ানক শীত পড়েছে।নাতিশীতোষ্ণ দেশে এমন শীত দৃষ্টান্ত-বিরল। সম্মুখের খোলা পশ্চিম দরজায় হু হু করে সাদা ধোঁয়াটে কুয়াশা ঢুকছে। মাথার ওপরকার চালে আম কাঁঠালের গাছ থেকে টুপ টুপ করে শিশির ঝরছে। সামনের বর্গাকার নিচু পালান এমন সুসম কুয়াশাচ্ছন্ন যে সেটি পালান নাকি পুকুর তা যেকোনো অচেনা আগন্তুক ব্যক্তির জন্য হতে পারে গোলক ধাঁধার বিষয়। পালানের পর যেসব বিচ্ছিন্ন বা সারিবদ্ধ গাছ আছে – খেজুর, কলা, নারিকেল, জাম্বুরা, জাম, জামরুল – প্রত্যেকে কুয়াশা-বিলীন।

থেকে থেকে দু চারটি ছাতারে বা শালিক শ্রেণির পাখির শীত-কিচির আর পথচারীদের মৃদু কাঁপা- কথন শোনা যায়। পাশেই উন্মুক্ত খড়ের গাদার গোড়ায় অবিবেচক পালকের দড়িবাঁধা হিম- কাহিল, ফ্যাকাশে-দৃষ্টি, কৃশকায় ছাগের দুর্বল ম্যা ডাক থেকে থেকে আমাদের বাড়ির খাদ্যে হত-রুচি এক ভৃত্যের ইচ্ছা বিরুদ্ধ বিস্বাদ খাবার গ্রহণ মুখ-দৃশ্যপটের কল্পস্রোত বয়ে আনছে। এরই মধ্যে অদৃশ্য সম্মুখ পথে উচ্চারিত হলো এখানে আসা অবধি প্রায় নিত্যকার তিতিবিরক্তিকর দুর্বোধ্য হাঁক: ভালো লাগে– এ – এ–, বড় বেশি ভালো লাগে!

প্রতি বারের মতোই মনে প্রশ্নোত্থান ঘটে, কী ভালো লাগে? কাউকেই প্রশ্ন করে কেন জানা যায় না কী ভালো লাগে ওই হাঁকিয়ের? একই ব্যক্তি প্রায় নিত্য গাঁময় হাঁক ছেড়ে বেড়াবে, ভালো লাগে—এ–,বড় বেশি ভালো লাগে–, অথচ কেউই বলতে পারবে না, বলবে না তার কী ভালো লাগে, কেন ভালো লাগে, কী বৃত্তান্ত-তাৎপর্য-, তাহলে কী হয়ে দাঁড়ায় সার্বিক বিষয়?

প্রতি ভোরের মতো আজও সংকল্পবদ্ধ ছিলাম হাঁকটি শোনামাত্র উঠে দাঁড়িয়ে দৌড়ে গিয়ে হাঁক ছাড়িয়েকে থামিয়ে জানতে চাইব, কী তার ভালো লাগে, কেন ভালো লাগে, ভালো লাগার কথাটি এভাবে উচ্চস্বর প্রচারণার মাহাত্ম্য কী প্রভৃতি। কিন্তু শীতালস্য তথা এতক্ষণ ধরে বসে তৈরি করা উষ্ণতা যেন আঠালো বস্তুর মতোই নিতম্বে লেগে থেকে স্থিতাবস্থা অব্যাহত রাখলো। মনে বরাবরের মতো শোকাফসোস বইছিল: আবারো পূর্ববৎ স্থবির ক্রিয়ায় প্রবৃত্ত রইলাম? কেন রইলাম? এভাবে কতদিন কৌতূহল চেপে থাকব?

এরই মধ্যে ঘোড়ার খুরধ্বনি তুলে গতদিনের সেই আগন্তুক অতিথি কুয়াশা ভেদ করে দুয়ারে দাঁড়ালেন। দ্বিতীয় সাক্ষাৎ! ঘোড়ার খুরাস্ফালনে তিনি কম্পমান কণ্ঠে বললেন, কী ভাব- তাছেন?

নানা কিছুই। কোত্থেকে? আমি ইষৎচিন্তিত প্রশ্ন রাখলাম।

ওই যে তখন গেলাম বাঁকের ধারে। সেইখান থেইকা।

তা সাতসকালে এদিকে? চেনা নাকি এ বাড়ি?

সব চেনা। ঘোড়া থেকে নামতে নামতে বললেন তিনি।

না, ভেবেছিলাম ওই বুঝি প্রথম এলেন – পাহাড় থেকে নদীতীরে।

ভুল। কিছুদিন বাইরে ছিলাম। এ গাঁও আমার রীতিমত চেনা।

তাহলে তো বেশ হলো। বসুন।

শীত প্রচণ্ড, কাঁপতেছি।

তাইতো দেখছি।

তামাকের ব্যবস্থা হবে? আমার আবার হুক্কাতে নেশা।

হুম– হুকো–। দেখি কাছারির ওপাশটাতে। এবাড়ির কর্তার বৃদ্ধ বাবা হুঁকো নেন দেখেছি। যদি একপাক এদিকে আনা চলে–।

হুক্কা কলকি না হইলেও চলবে। দুইটাই আমার ঝোলায় আছে। শুধু এক ছিলিম তামাক আর আগুনের মালশা। হুক্কায় টান না দেয়া পর্যন্ত আর কথা জমতেছে না। বেশুমার শীত!

আচ্ছা, বসুন দেখছি।

শীঘ্র হুঁকো তামাক সেবনের ব্যবস্থা দিলাম তাকে। হুঁকোয় সুখটান দিয়ে ধোঁয়ার কুণ্ডলী মিশিয়ে দিতে লাগলেন তিনি বাইরের কুয়াশা আস্তরণে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, পরাণে স্বস্তি ফিরল।এই হিমে বুছলেন, খুক্ খুক্! হুক্কা ছা-ড়াহ ছলে নাহ!খুক্! খুক্! ছাইলে ফরখ খরতে ফারেন! ফুখ্! উঃ -খুক্! খুখ্!

না না, আমার অভ্যাস নেই।

খি জানি খইতেছিলাম আমরা? খু-স-স—!সু—।

বলছিলাম ওই যে ভদ্রলোক প্রায় প্রতিদিনই হাঁক ছাড়েন, ভালো লাগে- এ-, বড় বেশি ভালো লাগে – এ-!

হ্যাঁ, মনে পড়ছে, দৌলত মিয়া।

ওনার ওই হাঁকের কী অর্থ? এ যাবৎ অনেককেই জিজ্ঞেস করেছি, কিন্তু কেউই বলে না কী ওনার ভালো লাগে। সবাই বোবাকালার মতো চলে যায়। আপনার জানা আছে কি না?

হুম, তার ভালো লাগে পরের দুঃখের কথা, সমূহ বিপদ আপদের কথা শুনতে। কারো বিপদ বিসংবাদ, দুঃখের কথা শুনলেই সে ওই হাঁক ছাড়ে।

এ কেমন কথা হলো? পরের দুঃখের কথা শুনতে ভালো লাগে! পরদুঃখহর্ষক!

ঠিক ধরছেন।

কিন্তু কেন?

সে নিজে অসুখী মানুষ। তাই অন্যের দুঃখের কথা শুইনা মনে আনন্দ পায়। উদযাপনে ব্যস্ত হয়।

ও–। কিন্তু সে নিজে অসুখী কেন?

ব্যবসায় অতিরিক্ত লাভের আশায় লোভের বশে জীবনের সর্বস্ব খোয়াইছে। বিরাট অংকের টাকা মাইর খাইছে। পথের ফকির হবার যোগাড়। মাথায়ও কিছু সমস্যা দেখা দিছে।

হুম। তা আজ কার কী হয়েছে? এই সাত সকালে হাঁক ছাড়ছে!

গ্রামের ওই মাথায় থাকে দহরম আলী দিশারি। তার বড় ছেলে মহরম আলী দিশারি চাকরি খোয়াইয়া গত রাত্রে বাড়ি ফিরছে। রাত্রেই খবরটা চাউর হইয়া গেছে। সাতসকালে হাঁকডাকের এইটাই কারণ।

ও বুঝেছি। তা চিৎকার করতে করতে প্রায়ই দেখি ওদিকে যায়। কোথায় যায় ওদিকে?

ওই বাঁকের ধারে ছোট্ট এক বন আছে। তার মধ্যেই নাকি ঢুকতে দেখেছে কেউ কেউ। ওদিকে যাওয়ার আগে অবশ্য সারা গ্রাম ঘুরে আর হাঁক দেয়।

আমি মাঝেমধ্যে ভাবি, থামিয়ে জিজ্ঞেস করি, কেন কী ভালো লাগে তার। আবার পরক্ষণেই বরাবর ভেবেছি, কেউই যেহেতু জানে না, কিছু বলতে পারে না এ বিষয়ে, সেহেতু তাকে জিজ্ঞেস করেও বোধ করি কোন লাভ হবে না। ফলে নিবৃত্ত হয়েছি।

জিজ্ঞাসা না কইরা ভালো করছেন। ভুলেও এরে থামাইয়া কিছু জিগাবেন না।

কেন, কী হবে জিজ্ঞাসা করলে?

আপনার বিপদআপদ কামনা করবে, বদ দোয়াও দিতে পারে। সেই দিনের অপেক্ষায় থাকবে কবে আপনার বিপদআপদ ঘনায়, আপনে কবে কাদায় আটকা পড়েন!

হুম।

কী চিন্তা করতেছেন?

তেমন কিছু না। তা আপনার কাজকর্ম সম্পর্কে তো কিছু জানা হলো না।

আমার কাজকর্ম খুবই মামুলি। এই যে গ্রাম, এখানকার মানুষগুলান নানা সমস্যায় জর্জরিত। তাদের মধ্যে প্রায় দ্বন্দ্ব কলহ লাগে, অনেকের অন্য বিষয়েও নানা সমস্যা থাকে। চেষ্টা করি তাদের সমস্যামুক্ত করতে।

হ্যাঁ, ওই যে গতকাল বসেছিলাম,তার ডান থেকে বিস্তৃত বোরোধানের জমি। শীঘ্র হয়তো পাক ধরবে ধানগুলোতে। ধান কাটা নিয়ে নাকি বিবাদ বিসংবাদ লাগে, লাঠালাঠি, খুনাখুনি হয়। কী সব শুনি প্রায়ই।

ঠিকই শুনছেন জানছেন। এইসব বিষয়েও আমি ভূমিকা নেওয়ার চেষ্টা রাখি। যতদূর পারি, চেষ্টা চালাই দুই পক্ষকে নিবৃত্ত করতে।

ভালো কাজ। বলা চলে আপনি পরদুঃখকাতর।

বলতে পারেন। তো উঠতে চাইতেছি এখন। আপনার মনে হয় কাজে বাইর হওয়ার সময় ঘনাইলো।

জি, আবার আসবেন, ধন্যবাদ।

কাছারি থেকে বেরিয়ে ঘোড়ায় চড়ে কুয়াশায় হারাতেই মুহূর্তে ঘোড়া ঘুরিয়ে কাছারির দিকে ফিরে আসেন অতিথি। উদগ্রীব ওঠার জন্য দাঁড়াতে যাচ্ছিলাম আমি। তিনি হাত ইশারায় বসতে বললেন। গলা ঝেড়ে বললাম, ফিরে এলেন, কোন সমস্যা?

ঝোলাটা ফেলে গেছি।

হুম – ওইতো পড়ে আছে। কথার ফাঁকে খেয়ালই করিনি। কষ্ট করতে হলো আপনাকে।

সমস্যা নাই। এইটুকুন ফেরত আসা কী আর এমন ব্যাপার?

দয়া করে তুলে নিন নিজ হাতে। দেখুন ভেতরে ঠিকঠাক আছে কি না।

তার দরকার হবে না, চলি।

জি, দেখা হবে।

তিনি আবারও ঘোড়ায় চড়ে কুয়াশায় অদৃশ্য হয়ে গেলেন।

সকালের নাস্তা সেরে বেরিয়ে পড়লাম কাজের উদ্দেশ্যে। যতদূর দৃষ্টি পৌঁছে, কুয়াশাবহে সামান্যতম পরিবর্তন নজরবিদ্ধ হয় না, যদিও সকাল দশটা পেরিয়ে গেছে। এতো ঘন কুয়াশা যে আকাশে সূর্যের অবস্থান উপলব্ধির উপায়টি নেই। নদীর ভাঙন রোধ কাজের তদারকি উদ্দেশ্যে যথাস্থানে হাজির হয়ে দেখলাম বৈরি আবহাওয়ার কারণে কর্মচারীদের সিংহভাগ অনুপস্থিত। যে ক’জন উপস্থিত তাদের নিয়ে কাজ আরম্ভ করা চলে না। ওদিকে গত ক’দিন ধরে আকাশে সূর্য ওঠা বলতে যা বোঝায় তা উঠছে বেলা দেড়টা দুইটা নাগাদ। আজও যে তার ব্যত্যয় ঘটবে না তা জোর দিয়েই বলা চলে । উপস্থিত কান মাথা আবৃত শীতসন্ত্রস্ত কর্মচারীদের আজকের মতো বিদায় দিয়ে চুপচাপ বসে রইলাম। এরই মধ্যে মনের ভেতর নানাবিধ ভাবনা- স্রোত বইতে শুরু করেছে:

আজকাল মানুষ মানুষের বিপদআপদ, দুঃখকষ্টে আনন্দিত হয়ে সেই আনন্দের ঘটা- প্রচারণায় মাততে শুরু করেছে। অথচ সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে হবার কথা উল্টোটি। ওদিকে কথিত ব্যক্তির প্রচারণা শেষের গন্তব্য নির্জন বন। কী করে সে বনে গিয়ে? চুপচাপ শুয়ে বসে থাকে? নাকি নির্জনতাকে নিরাপদ আশ্রয় করে একই শব্দ বাক্য আরো বেশি উচ্চ-শব্দে, আরো বেশি উল্লাসে উচ্ছ্বাসে, আরো বেশি আস্ফালনে-চিৎকারে বাকযন্ত্রচ্যুতির মধ্য দিয়ে বনের বাতাস ভারীতে পরম আত্মপ্রসাদে মাতে? বাইরের কুয়াশা যেমন ভারী দুর্ভেদ্য, আমার মনও তেমনি প্রশ্ন-কৌতূহল ভারে ভারী হতে থাকে। স্থান থেকে ঝটপট উঠে দাঁড়াই। অনতিবিলম্বে আমাকে বনে উপস্থিতিপূর্বক সে রহস্য ভেদ করে এই অস্থিরতার যবনিকাপাতে যেতে হবে। স্পষ্ট উপলব্ধিতে আসছে আমার বুক ঢিপ ঢিপ ক্রমবর্ধমানতায় ধাবিত হচ্ছে।বনের উদ্দেশ্যে পা বাড়াই যথাসম্ভব দ্রুত।

বনের বাহির সীমারেখা বরাবর কিছুক্ষণ হাঁটার পর মনে সন্দেহ দানা বাঁধতে লাগল, যে সন্দেহে তল্লাশি উদ্দেশ্যে এখানে উপনীত হওয়া, আদৌ কি তার বাস্তব সারবত্তা আছে? কই, কোনও সাড়াশব্দ তো ভেতরে পাওয়া যাচ্ছে না। ঢুঁ দিয়ে দেখব নাকি ভেতরে?ভাবলাম, কিছুক্ষণ কিছুদূর নাগাদ চোখ কান খোলা রেখে দেখা যাক ভেতরে সন্দিহান বিষয়ের কোনও আলামত মেলে কি না। এক পাশ দিয়ে ভেতরে ঢোকার পথের মতো পেয়ে হুড়মুড় ঢুকে গেলাম ভেতরে। সন্তর্পণে হাঁটলাম মিনিট দশেক। হঠাৎই নাকে তামাকের উৎকট গন্ধ ঢুকলে থমকে দাঁড়াই। ভাবি, নিশ্চয়ই ভেতরে আছে কেউ না কেউ। ধুপ করে বসে গন্ধটার নিশানা পেতে উদগ্রীব হলাম। ঠিক সামনের দিক থেকেই আসছে গন্ধ। মৃদু কথোপকথনেরও শব্দ কানে এলো ওদিক থেকে। বুক কেঁপে উঠল এই ভেবে, নিশ্চয়ই যা আবিষ্কার করতে এসেছি, তার দ্বারপ্রান্তে এসে গেছি। হামাগুড়ি দিয়ে সামনে এগোতে লাগলাম। হাত কয়েক যেতেই ঝোপের ফাঁকা দিয়ে সামনে বৃত্তাকার এক মাঠের মতো চোখে পড়ল।

দিব্যি দেখি একজনকে কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে গোল হয়ে বসে কারা হুঁকো সেবন করছে। মোট ক’জন তারা সংখ্যায়? গুনে দেখলাম দশ জন। ন’জন বৃত্ত ব্যাসে আধো হাত করে দূরত্ব নিয়ে বসা, একজন কেন্দ্রে স্থির। কেন্দ্রের জন একাই এক হুঁকো টানছে, ব্যাসের ন’জন মিলে একটি হুঁকো পর্যায়ক্রমে টানছে। ধোঁয়ায় রীতিমত ছেয়ে গেছে জায়গাটা। নাকে রুমাল দিয়ে অতি কষ্টে হাঁচি কাশি আটকে দেখতে থাকি দৃশ্যপট। হুঁকো পর্ব বুঝি শেষ। হুঁকো দুটি মাটিতে রাখা হয়েছে। সবাই মাথা পেছনের দিকে কাৎ করে ওপরের দিকে চেয়ে থাকার ভঙ্গিমা নিয়েছে। অকস্মাৎ মাঝের জন হুড়মুড় দাঁড়িয়ে গেল। শান্ত মাঝারি কণ্ঠে বলে উঠল, শিষ্যগন, এবার শুরু হোক তবে।

জি গুরু, শুরু হোক তবে। ন’ জন সমস্বরে চেঁচিয়ে বলল।

কেন্দ্র -গুরু বলল, নম্বর ১ দাঁড়িয়ে বয়ান করো কী হাসির খবর এনেছ আজ। বৃত্ত থেকে ঝটপট একজন দাঁড়িয়ে বলল, গুরু, আমাদের পাড়ার কাফরুল কাঙ্গালির মেয়ে, যাকে গাইঠাবাজি করে মাইক্রোফোন বাজিয়ে ঘটা করে শাদী দেয়া হয়েছিল, জামাই তাকে গতরাত্রে তালাক মেরেছে-এ- এ–, বাইন তা- লা–ক!

ভালো লাগে-এ–এ–, বড় বেশি ভালো লাগে- এ-এ—! বৃত্তের কেন্দ্রস্থ জন বিশেষ কণ্ঠ-ভঙ্গিমায় বলে উঠল।

ভালো লাগে-এ–এ–, বড় বেশি ভালো লাগে- এ-এ—। বৃত্ত ব্যাসের ন’জন একই সুরে সমবেত তাকে অনুসরণ করল।

হাঃ হাঃ হাঃ, হোঃ হোঃ হোঃ, হিঃই— হিঃ হিঃ হিঃ ! কেন্দ্রগুরু উৎকট অট্টহাসি হাসল।

হাঃ হাঃ হাঃ, হোঃ হোঃ হোঃ, হিঃই- হিঃ হিঃ হিঃ! বৃত্তব্যাসের ন’ শিষ্য সমবেত অনুরূপ তাকে অনুসরণ করল।

আমি তাদের কর্মকাণ্ডে থ’ হয়ে থাকি। এরপর বৃত্তের কেন্দ্রস্থ কথিত গুরুব্যক্তির একের পর এক সুখ- বার্তা জিজ্ঞাসার মুখে বৃত্ত-ব্যাসস্থ ন’জনের মুখে যেসব বার্তা ঘোষিত হতে লাগল, তার কতিপয় নিম্নরূপ:

”ভুয়া দালালের খপ্পরে পড়ে অমুকের ছেলে তমুক বিদেশের কারাগারে বন্দী হয়েছে -এ-এ—।”

“অমুকের হজের টাকা মার গিয়ে অমুক এখন যামু হাজিতে পরিণত হয়েছে -এ-এ—।”

“অমুকের ছেলে তমুকের বিকাশ ব্যবসায়ের এত লক্ষ টাকা কাল রাত্রে ছিনতাইকারীর ঝোলায় গেছে–এ- এ—।”

“অমুকের মেয়ের পেট থেইকা এক জোড়া আতুর পোলার জন্ম হইছে -এ-এ—।”

“অমুকের বড় ছেলে গতরাত্রে চাকরি খোয়াইয়া ঘরে ফিরছে -এ-এ–।”

“অমুকের নাতনির পেট থেইকা ৭ম কন্যা সন্তানের জন্ম হইছে -এ-এ—।”

প্রতিবার বার্তাভাষ্য শেষে একই রূপ গুরু-অট্টহাসির সাথে অনুরূপ শিষ্য-অট্টহাসিতে বন-বাতাস প্রকম্পিত হতে থাকে। নয়টি বার্তা-ভাষ্য ও দশটি অট্টহাসি শেষে খানিকক্ষণের জন্য নীরবতা নামে। পরদুঃখহর্ষকগন ওপরে তাকিয়ে কী যেন বিড়বিড় করতে থাকে। একসময় গুরুব্যক্তিটি ইশারায় হুঁকোর নির্দেশ করলে শিষ্যদের দু’জন তড়িঘড়ি হুঁকো দুটি নিয়ে জ্বলন্ত মালশা থেকে আগুন তুলে কলকি-তামাকে স্থাপনে ব্যস্ত হয়ে ওঠে।

এরপর আর কোনও দৃশ্যপটে মনোনিবেশের ইচ্ছে থাকে না আমার। ঝটপট উঠে বনের বাইরের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরি। হাঁটার ফাঁকে ভাবনাচ্ছন্নতার রেশ আপাদমস্তক আমাকে ছেয়ে ধরে। কিছুতে হিসেব মেলাতে পারি না, কী করে মানুষের কথায় কাজে এমনতর গরমিলটি হয়। যে ব্যক্তি একই দিন ভোরে নিজেকে ব্যক্ত করলেন পরদুঃখকাতর ব্যক্তি রূপে, তাকেই কি না একই দিন দুপুর না গড়াতে পাওয়া গেল একদল পরদুঃখহর্ষক ব্যক্তির দলনেতা রূপে! এই যদি হয় পৃথিবীর রীতি, আড়ালে আবডালে থাকতে থাকতে তারাই যদি একদিন জগত- সংখ্যাগরিষ্ঠ রূপে প্রকাশ্যে বেরিয়ে আসে, তবে সভ্যতা কোন পথে কোথায় পালাবার পথ খুঁজবে? ভাবতে ভাবতে কখন কাছারিতে এসে উঠি।

পরবর্তী ক’ দিন তাপমাত্রা আরও বেশি নিচে নেমে যাওয়ায় কুয়াশাচ্ছন্নতা দিনগুলোর সিংহভাগকে অসার, কর্ম-অনুপযোগী করে রাখল। নদী সংস্কার কাজে যাওয়া হয় না। গরম কাপড়ে কান মাথা ঢেকে কাছারিতেই প্রায় সারাদিন বসে থাকি। অজান্তেই উৎকর্ণ থাকি কবে কখন সেই তিতিবিরক্তিকর হাঁকটি আপাদমস্তক কাঁপিয়ে তোলে। চারদিন একইভাবে পার হলো; কোন হাঁক কানে উঠল না। ৫ম দিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা নাগাদ বাইরের ঘন কুয়াশায় দৃষ্টি ধরে থাকতে থাকতে সূর্যাস্ত গেল। হঠাৎই ঘোড়ার খুরধ্বনিতে চমকে উঠি। অতিথি এসেছেন।

কিছুক্ষণ একথা সেকথা আলোকপাতের পর অতিথি হুঁকোর প্রসঙ্গ ওঠালেন। আগের দিনের মতো উৎসাহ প্রাণচাঞ্চল্য না থাকলেও উঠে গিয়ে ওপাশের বারান্দা থেকে তামাক-মালশা নিয়ে আসি। কাছারির সামনে ফিরতেই অদূরে অন্ধকারে অশ্বখুরধ্বনি শুনি।শব্দটি দ্রুত বিপরীত পথের দিকে অশ্রুত হয়ে এলো। কাছারিতে দৃষ্টি ছুঁড়ে দেখলাম অতিথি নেই, তার ঝোলাটি পড়ে আছে। ভাবলাম, তিনি আরেকদিনের মতো ফিরবেন যথাশীঘ্র। তিনি ফেরেননি। বেহাত হবার ভয়ে ঝোলাটি একসময় সযত্নে তুলে রাখি।

কাজে অকাজে পরবর্তী দিন সাতেক পেরোলো। কোন হাঁক নেই, ঘোড়ার খুরধ্বনি, হ্রেষা নেই, ধানকাটা সহ যেসব বিবাদবিসংবাদের সমূহ সম্ভাবনা ও দিন তারিখ নির্ধারিত ছিল,সেগুলোতে কোথাও জন উপস্থিতি কিংবা টু শব্দটি হলো না। অষ্টম দিনে প্রবল কৌতূহলে সে উপবনে ঢুঁ দিই। সেই স্থানটিতে গিয়ে বিস্ময়ে দেখি ওখানটাতে কিছু বৃক্ষ চারা রোপণ করা হয়েছে। জনমানব নেই। ফিরে আসি ভাড়াগৃহে। লোকমারফত শুনতে পাই নানা স্থানের বিবাদীদের কোন কোন পক্ষ অন্যত্র স্থায়ী হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে অতিথি সম্পর্কে ন্যূনতম তথ্য মেলে না; যেন তিনি অচেনা অজ্ঞাত, এমন লোকের অস্তিত্বের কথা কেউ শোনেওনি কোনদিন।

দশম দিনে এক চরম দুর্ঘটনার সংবাদ ভীষণ মুষড়ে দিলো।যে প্রধান ঠিকাদারের হয়ে নদী সংস্কার কাজে লিপ্ত ছিলাম, অদূরের মফস্বল শহরে তিনি চাঁদাবাজদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। নদী সংস্কার কাজ আকস্মিক অনিশ্চয়তায় বন্ধ হলো। অতএব, এখান থেকে চলে যাওয়াই সারবত্তা।

অনেক ভেবেচিন্তে যাওয়ার সময় অতিথির ঝোলাটি হাতড়ালাম। স্রেফ কৌতূহল – যদি কোনও বার্তা ভেতরে থাকে , তার কোনও ঠিকানা, কোনও নির্দেশনা তো ঝোলাটি পৌঁছে দিতে পারি। ভেতরে একটি ভাজ করা কাগজ পেলাম। তৎক্ষণাৎ খুলে ফেললাম কাগজটির ভাজ। ভেতরের চকচকে বিচ্ছুরণকারী বস্তুটি নৈতিক ভীতিতে বুক কাঁপালো। সম্ভবত এটি হীরক খণ্ড। সেটির চেয়ে বরং কাগজের লেখাটি দৃষ্টি আকর্ষণ করল:

যুবক,

এ জীবনে দেখা হবে না আর। যা দেখেছো তা ঠিক হলেও যা ভেবেছ তা ভুল। ওখানে ওটিই শেষ দৃশ্য। বিবাদোদ্যত মানুষগুলোকে থামাতে হলে তাদের হাহাকারকে থামানো চাই, প্রশমন করা চাই। কখনো এক পক্ষকে প্রশমনের প্রয়োজন পড়ে, কখনো প্রয়োজন পড়ে দু পক্ষকেই। প্রয়োজন পড়ে তাদের ভেতর- সংষ্কারেরও। এখানে সহসা আর কোন হাঁক শুনবে না। সবাই কোন না কোনভাবে প্রশমিত। যদি পারো, সাথের বস্তুটি দিয়ে কোনও নিঃস্ব হাহাকারীকে সন্তুষ্ট করো, সংস্কার করো। বিদায়।

– অতিথি

শহরে ফিরে বস্তুটিকে একটি অভিজাত দোকানে দেখিয়ে নিশ্চিত হলাম তা হীরক। তার মূল্যটি নির্ধারণ করে তা ফেলে রাখলাম ঘরের কোণে। প্রথম দিন মৃত ঠিকাদারের পরিবার পরিজনকে দেখতে গিয়ে শুধু তাদের আহাজারিই শুনি। দ্বিতীয় বার তাদের দেখতে গিয়ে বুদ্ধিটি খুলে যায়। কারণ, আজ তাদের নিদারুণ দুর্দশার যত কথা শুনেছি। সরাসরি সাহায্য গ্রহণে তারা লজ্জিত, বিব্রত কিংবা অনিচ্ছুক হতে পারে ভেবে কিছু মিথ্যার আশ্রয় নিই, এই ভেবে যে বিধাতা তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে নেবেন। মৃতের পরিবার পরিজন যখন আমার সে মিথ্যে ভাষ্যে শুনলেন, আমি ঋণগ্রস্ত, মৃতের জীবদ্দশায় তার কাছ থেকে বেশ মোটা অংকের অর্থ ধার নিয়েছিলাম, আর আশু তা শোধ করতে ইচ্ছুক, তাদের হতাশাগ্রস্থ চোখমুখগুলো নিমিষে ভরসা-শক্তিতে যেন খানিক বলীয়ান হয়ে উঠল। নিরুপায় বানানো মিথ্যাটির জন্য বিধাতার কাছে আবারও মনে মনে ক্ষমা প্রার্থনা করলাম।

পরদিন সন্ধ্যা। হীরক বিক্রির যাবতীয় অর্থটি মৃতের পরিজনের হাতে সমর্পণ করে তাদের বাড়ি থেকে পথে বেরিয়ে আসি। খোলা পথ। শীত বিদায় নিয়ে সবে বসন্ত শুরু হয়েছে। সরাসরি পশ্চিমাকাশে চোখ যেতে দেখলাম একফালি বাঁকা সোনালী চাঁদ উঠেছে। কী এক ভালো লাগায় আপাদমস্তক যেন নেচে উঠল। দুরন্ত বাতাসে হু হু করে আমার মন উড়ছে। ইচ্ছে হলো দু’ হাত ঊর্ধ্বে তুলে সর্বশক্তিতে চিৎকার করে বলি, হে ঊর্ধ্বলোকের অদৃশ্য মালিক, তুমি কি দেখতে পাও, বুঝতে পারো, আজ আমার ভালো লাগছে, বড় বেশি ভালো লাগছে!

শওকত নূর | Shawkat Noor

Bengali Story 2023 | সন্ধ্যে নামার আগে | গল্প ২০২৩

Bengali Story | কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা | গল্পগুচ্ছ | 2022

Bengali Story 2023 | পরিচারিকা পাপিয়া | প্রবোধ কুমার মৃধা

New Bengali Story 2023| লোকের কথা | মনসুর আলি

bengali story | short bengali story analysis | short bengali story characteristics | short bengali story competition | short bengali story definition | Best Bengali Story | Top Bengali Story | World Bengali Story | International Bengali Story | short bengali story english | writing competitions ireland | bengali story writing practice | bengali story writing topics | trending topics for article writing 2022 | bengali story trends 2022 | content writing topics 2022 | Bangla Prabandha | Probondho | Definite Article | Article Writer | Shabdodweep bengali story | Galpoguccha | Galpo | Bangla Galpo | Bengali Story | Bengali Article | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Shabdodweep Founder

Leave a Comment