Best Bengali Story Demand | Shabdodweep Story Folder

Bengali Story Demand | Online Stories in bangla

উল্টোপাল্টা

(১)

মারাত্মক হাসি পাচ্ছে, বুঝলেন মশাই?! বেয়ারা, অদম্য হাসি। অথচ একটু আগেই সাংঘাতিক রাগ হচ্ছিল। নির্দিষ্ট কারোর ওপরে নয়, পরিস্থিতির ওপরে, নিজের কপালের ওপরে। যে ভদ্রমহিলা আমাদের বাড়িতে ঘরঝাঁট দেয় এবং রুটি করে দেয়, সে পনেরো দিন আসছে না। পারিবারিক বিপর্যয় ঘটলে কেনই বা আসবে? আমিই তাকে বলে দিয়েছি, যখন পারবে, তখন আসবে।

এ দিকে আমার খাওয়াদাওয়া নিয়ে অসুবিধা হচ্ছে এমনও নয়। দু’ দিন ভাত, এক দিন ম্যাগি এ ভাবে চলে যাচ্ছে। বেরোলে ইডলিফিডলিও কিনে আনি। মুশকিলটা হ’চ্ছে ঘর পরিষ্কার নিয়ে। ডান হাঁটুর অনড় ব্যথার জন্য এমনিতেই ভালো করে ঘর ঝাঁট দিতে পারি না। তার ওপর আমার দুটো খরগোশ আছে তো, তারা যা যা করে সবটা আমি ভালো করে সাফ করতে পারছি না। অবশ্য চেষ্টা করছি।

বাসন মাজতেই হয়। সকালে ডিম ভেজে রেখেছি। বেলা বারোটা বাজে। এখনো অবধি সেটা খাওয়া হয়নি। দেখি কখন খাই। রান্নার মধ্যে যাব না আজ। হোম ডেলিভারি এক টুকরো মাছ, ফুলকপির তরকারি আর ভাত দিয়ে যাবে। ওদের রান্নাটা ভালো।

এত হাসি পাচ্ছে কেন, সেটা এবার বলি। আমি মাঝেমাঝেই অপরাধ ও তদন্ত নিয়ে একটা জনপ্রিয় সিরিয়াল মোবাইলে দেখে নিই। ক্রাইম অ্যালার্ট নামে সেই সিরিয়ালের একেকটা পর্বে একেকটা সিনিয়র ইনস্পেক্টর তদন্ত করে। ক্রাইম অ্যালার্ট সিরিয়ালে রঞ্জিত কিছু একটা নামে গাবলুগুবলু একটা সিনিয়র ইনস্পেক্টর আছে। গাবলুগুবলু কিন্তু স্মার্ট এবং লম্বা, চেহারায় বিহারী জিন স্পষ্ট ও ভালো অভিনেতা এই লোকটাকে আমার বেশ লাগে। রঞ্জিত “কিছু একটা” বলে উল্লেখ করছি কারণ পদবীটা মাথায় থাকে না।

ডাইনিং টেবিলের ওপর পুরনো টেবিল ক্লথটা ছিঁড়েখুঁড়ে গেছে। কালকে সন্ধ্যায় বেরিয়ে একটা সস্তার টেবিল ক্লথ এনেছি। কমলা আমার প্রিয় রং কিন্তু কমলা পাইনি। সবুজের ওপর বড় বড় নীল ফুল দেওয়া একটা কিনেছি। ডাইনিং টেবিলটা পরিষ্কার করে নতুন এই ধ্যাবড়া সবুজ টেবিল ক্লথটা পাততে হবে। আজ নয় তো কাল পাততেই হ’বে। ও দিকে টেবিলটার নিচে অনেক ধুলো আর একটু একটু খরগোশের গুও ছড়িয়ে আছে।

এই ডাইনিং টেবিল ঘিরে বসে আমি আর রঞ্জিত কিছু একটা নামের সেই গাবলুগুবলু কিন্তু স্মার্ট বিহারী লোকটা কফি, কেক আর কবিরাজী কাটলেট খাচ্ছি – এমন একটা দৃশ্য সকাল থেকে আমার মাথায় আসছে এবং দমফাটা হাসি পাচ্ছে। আহা, কেমন হবে ব্যাপারটা! ধ্যাবড়া সবুজ জমির ওপর নীল ছাপ সত্তর টাকার টেবিল ক্লথ, তার ওপর দুটো কফির কাপ, চারপাঁচটা পেস্ট্রি; দুটো ফিশ কবিরাজী কাটলেট নিয়ে রঞ্জিত কিছু একটা এবং আমি বসে আছি। নিচে খরগোশের গু ছড়ানো। তার মধ্যেই আমরা গল্প করে যাচ্ছি। কল্পনা করে হাসি পায় না, বলুন?!

আমার বয়স পঞ্চাশ পেরিয়েছে। রঞ্জিত কিছু একটা আমার থেকে চার পাঁচ বছরের ছোট তো হ’বেই। তাতে কল্পনায় এক সঙ্গে কফি খেতে কী অসুবিধা?

(২)

আমার মা আগে গেছে, বাবা পরে। আমি একা থাকি। মা বাবা থাকলে থোড়াই খরগোশ রাখতে দিত! আমার মা সেই কবে অবসর নিয়েছিল। তার পর পনেরো বছর বেঁচে ছিল। মা ইস্কুলে পড়াত। গায়ে আঁচল জড়িয়ে ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাত বেরিয়ে যেত। তার অনেক পরে বাবা। বাবা একটা মাঝারি চাকরি করত। বাবার কাছে কাজকর্ম নিয়ে লোকজন আসত। বাড়ির নিভৃতি লাটে উঠত তবে লোক আসাটা ছিল বাবার কাছে একটা গর্বের ব্যাপার। একে তো মা বাড়ি থাকত না। তার ওপর লোকজন আসায় আমার লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটত কারণ ফ্ল্যাটটা ছোট। নানা প্রয়োজনে মহিলারাও আসত। কেউ কেউ অনেক ক্ষণ থাকত। কেউ কেউ তো পারলে থেকেই যায়! যেন তাদেরই বাড়ি। আর হ্যাঁ, চালাক পরিচারিকাও আসত।

মতলববাজ মেয়েরা খুব সহজে পুরুষদের দুর্বল জায়গাটা ধরে ফেলে। ফলে আমাদের হবিন রোডের ফ্ল্যাটে অনেক কিছু চলত। সব দেখতাম। তার আগেও ছোট্ট বয়স থেকে অনেক কিছু দেখেছি। ব্যাপার বোঝার পর থেকে আমার অসহ্য লাগত তবে মা বরাবর না জানার ভান করত।

একটু বড় হওয়ার পর মা-কে বলেছিলাম। মা শুনে ঠান্ডা গলায় বলেছিল- “পুরুষ মানুষের কোনো দোষ হয় না, এমন কী বিবাহিত পুরুষদেরও না।”

সেই সময়টায় আমরা থাকতাম হবিন রোডের কাছাকাছি সরকারি কোয়ার্টারে। তারপর এক সময় এখানে নিজেদের ফ্ল্যাটে চলে এলাম।

মা সব সময় গায়ে নরম শাড়ি জড়িয়ে থাকত। জ্ঞান হওয়ার পর থেকে দেখছি। মা হতদরিদ্র নিরন্ন পরিবারের মেয়ে ছিল। জীবনে কখনো ম্যাচিং ব্লাউজ পায়নি তাই একদম কৈশোর থেকে গায়ে আঁচল জড়ানোর অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল।

লোকের কাছে চেয়ে-চিন্তে মা ও তার ভাইবোনেরা মানুষ হয়েছে। মারাত্মক কষ্ট করে এম এ, বি এড পাশ করেছে। মা যখন এম এ পাশ করে গেছে সেই সময় পর্যন্ত মায়েদের ফার্ন রোডের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না। প্রাক-বিবাহ জীবনের ভয়াবহ দারিদ্র্য মায়ের মধ্যে একটা তীব্র হীনমন্যতার জন্ম দিয়েছিল। এই হীনমন্যতা কখনোই মা-কে ছেড়ে যায়নি। মায়ের মতে, বাবা মা-কে বিয়ে না করলে মায়ের বিয়েই হত না। এই কারণে বাবার কোনো দোষ মায়ের চোখে পড়ত না। তার ওপর বাবা মা ছিল সমবয়সী।

দুজনের অবিরত ঝগড়ার কারণ অবশ্য সেটা নয়। কারণটা ছিল বাবার দানবের মতো রাগ আর ঝগড়ুটে স্বভাব। তবে সামন্ততান্ত্রিক মানসিকতার লোকজন এটাকেই কারণ বলে মনে করত আর মজা পেত। হো’ক না কোনো স্কুলের ধুরন্ধর শিক্ষিকা বা যৌন আবেদনময়ী পরিচারিকা, মতলববাজ মেয়েমানুষেরাও মজা পেত। খালি খালি খোলাখুলি নষ্টামি। অন্তত এ ব্যাপারে মা কখনো বাবার সঙ্গে ঝগড়া করেনি।

বাবা অবশ্য যতটুকু সময় পারত, বাড়িতে ঝগড়া আর অশান্তি করত। সামান্য সামান্য কারণে আমাকে মারত। অনেক সময় মেয়েমানুষদের কাছে নিজের বীরত্ব দেখানোর জন্যও আমাকে মারত, বকত। একখানা নষ্ট সংসার ছিল বটে আমাদের! ধারাবাহিক অশান্তি দেখে এবং অনেক কিছু বুঝে বুঝেই তো ছোট্ট বয়স থেকে আমি অতিরিক্ত গম্ভীর।

হবিন রোডের সরকারি কোয়ার্টারের বাসিন্দা একটা লোক আমার সঙ্গে বদমাইশি করেছিল। শুনেটুনে মা ন্যাকড়ার মতন নরম শাড়িটা গায়ে আরো জড়িয়ে নিতে নিতে আমাকে বলেছিল- “বাবাকে বোলো না যেন!”

পলাশ নামে সেই বজ্জাত, লম্পট লোকটা গান গাইত। আবার গিটারও বাজাত। লোকটার মেয়েঘটিত দুর্নাম ছিল তবু গানটান করত বলে ক্ষুদ্র গণ্ডীর মধ্যে অনেকে শিল্পী বলে খাতিরও করত। মা মুগ্ধ হয়ে সেই লোকটার গান শুনত। মায়ের থেকে পলাশ অনেক ছোটো। লোকটার লাম্পট্য মায়ের চোখে পড়ত না। এমন কী, লোকটা তার নয়-দশ বছরের মেয়ের সঙ্গে অসভ্যতা করেছে জেনেও মায়ের মুগ্ধতা কাটেনি। ট্যারা, শয়তান পলাশ! লোকটা বিয়ে করার পর মায়ের মুগ্ধতা একটু একটু করে কমে গিয়েছিল।

(৩)

এবার স্নান টান করে নেব। ঘর গোছাতে হবে। ক্রাইম অ্যালার্টে রঞ্জিত দুই ধর্ষণকারীকে হাজতে নিয়ে এসে খুব পেটাচ্ছে। এ দুটো নির্মম অপরাধী একটা মেয়ের ওপর চরম অত্যাচার করে তারপর খুন করেছে। মেয়েটার চোখ দুটোও উপড়ে নিয়েছে। চূড়ান্ত বর্বরতা! রঞ্জিত একটা শয়তানের মাথা ধরে দেওয়ালে ঠুকে দিচ্ছে আর বলছে- “আমাকে আইন মেনে চলতে হয় তাই তোদের দু’ জনকে মেরে ফেলতে পারছি না। তবে আমার কনস্টেবলরা তোদের দেখে নেবে। তারপর তোদেরকে আদালতে তুলব আমরা।” কথা শেষ করে লাঠিধারী কনস্টেবলদের দিকে ইশারা করে সে হাজত থেকে বেরিয়ে এল।

আপাতত ক্রাইম অ্যালার্ট দেখা শেষ। এবার স্নানটান করে নেব। তার আগে একটু ঘর গোছাতে হবে। আমার আবার ধুলোয় প্রবল অ্যালার্জি। তাও যতটা পারি ঘর পরিষ্কার করতে হ’বে। এরই মধ্যে কাঁচের একটা শোকেসের তলা থেকে একটু বেরিয়ে থাকা মায়ের একটা পুরনো নরম শাড়ি ধরে দুই খরগোশ টানাটানি করছে। ওদের দিদা’র শাড়ির ওপর ওদেরই তো অধিকার বেশি! আমি তো শাড়ি পরি না। দেখো কাণ্ড, শাড়িটাকে পুরো বার করতে পারছে না ওরা।

মায়ের ন্যাকড়ার মতন শাড়িটা দেখে হঠাৎ আমার প্রচণ্ড রাগ হয়ে গেল। আমার জন্মের জন্য আমি দায়ী নই অথচ জ্ঞান হওয়ার পর নিজেদের সংসারে কত ধরণের যন্ত্রণাই না পেয়েছি। কত কত খারাপ দেখতে বাধ্য হয়েছি। বাইরের জগৎ থেকেও কম খারাপ অভিজ্ঞতা হয়নি তবে সেটার কথা ছেড়েই দিলাম। জীবন ভর্তি এই কষ্ট নিয়ে করবটা কী? নিজের এই নিরানন্দ জন্ম, নিজের কষ্টকর অস্তিত্বের জন্য রাগ, বাবা-মায়ের ওপর শৈশব থেকে জমে থাকা সমস্ত আক্রোশ ফেটে পড়তে চাইছে। ওই বেচারা কাপড়টাকেই নিজের অসহনীয় জীবনের প্রতীক বলে মনে হচ্ছে এখন। শাড়িটাকে টেনে বার করে ওদের দিয়ে দিলাম। “নে এটা তোদের। কেটেকুটে যত পারিস শেষ করে দে।”

জট

বৈশিষ্ট্যবর্জিত এক ভোরবেলায় ইমলি গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়ল। তাই নিয়ে বসতিতে হইহই। পুলিস এল, বডি নামাল, জমে থাকা ভিড়টাকে খানিক তড়পানিও দিল। ডুকরে কাঁদতে থাকা ইমলি’র মাকে বসতির মেয়েরা সান্ত্বনা দিচ্ছিল। বাবা-দাদা পুলিসের সঙ্গে সেঁটে রয়েছে। তাদের দেখে মনে হচ্ছে, পারলে ইমলির মৃত শরীরটাকেই খুন করে দিত। গেলি তো গেলি নিজের ফ্যামিলিকে এইভাবে ফাঁসিয়ে দিয়ে গেলি! দাদা ভিকি যাকে ঘরে আনবে বলে ঠিক করে রেখেছে, সেই ছমকছল্লোর সেয়ানা বাবা-মা এবার পিছিয়ে না যায়! দুই দাদার পরে একমাত্র মেয়ে, বেশ কিছু পাওয়া যেত। সব না ফস্কে যায়। ভিকি দাঁতে দাঁত ঘষল, কুত্তি! পরেশান করতে এসেছিল, ডাকা ডেলে চলে গেল। বহিন না শত্তুর!

ইমলির মা বিহারী, বাবা বাঙালি। তার বাইশ তেইশ বছর বয়স, মুখটা খুব কালো, বাকি শরীরের তুলনায় কালো। অনেকগুলো পাত্রপক্ষ “না” বলে যাওয়ার পর মা ইদানীং গজগজ করতে শুরু করেছিল, খালি নিজের কপালকে দোষ দিত। ছেলেটা লোহালক্কড়ের ব্যবসা করে রোজগার করছে, নিজেই নিজের রিস্তা ঠিক করে ফেলেছে। এখন যদি বাবা-মা মেয়ের বিয়ে না দিতে পারে তাহলে বৌকে এনে তুলবে কোথায়? আলাদা বাসা করে থাকার মুরোদ নেই অথচ বিয়ে করার শখ কত! বোনের বিয়েটা হতে দে’না বাপু। মেয়েটাও কেন যে আরেকটু গোরী হল না! তাহলে বিয়ে দিতে এত তকলিফ্ হ’ত না।

ও দিকে দেখো, ছেলে ভিকি কেমন গোরা আর খুবসুরত। না হয়, লেখাপড়াটাই জানে না। জিনস আর পিলা শার্ট পরে যখন বড় রাস্তা দিয়ে হাঁটে, কে বলবে ভদ্র ঘরের ছেলে নয়!

বাবা চুপ করে সব শুনত এবং আরো উদাস হয়ে যেত। বাবার সকলসুরত মন্দ নয়। গরীবের মেয়ে হলে কি হবে, মা সিলিয়া নিজে রীতিমতো ফর্সা। কঠোর পরিশ্রম করতে হয় বলে রঙ পুড়ে গেছে।

ইমলি নাইন ক্লাস অবধি পড়েছে। তাদের সমাজে মন্দ পাত্রী নয়। টেলারিং কোর্স পুরো না করলেও শাড়িতে ফলস বসিয়ে টুকটাক রোজগারও করছিল গত ছ’ সাত বছর। একদম নিজের ছোটো সংসারের বড় শখ হয়েছিল। হ’ল না! দিনরাত মায়ের আক্ষেপ আর সহ্য করতে পারছিল না সে। কিছু লিখে যায়নি অবশ্য। কাগজ-পেনের সঙ্গে কত যেন কারবার ছিল! ওর মোবাইল ফোনটা অবশ্য নিয়ে গেছে পুলিস। কে জানে ফেরত দেবে কিনা! পুলিসকে হাড়ে হাড়ে চেনে এসব জায়গার বাসিন্দারা।

ইদানীং ইমলির চুলে জট পড়ছিল। আঁচড়াতে ইচ্ছা করত না। গত হপ্তায় বিকেল বেলায় এক দিন সহেলিদের সঙ্গে কথাবার্তা হচ্ছিল। “জট ছাড়ানোর একটা তেল তো কিনলে পারিস, ওই যে লিবিয়ন না কি বলে।” শুনে ইমলি ঠোঁট উল্টে বলেছিল, পয়সা নেই। ওর দাদার বন্ধু প্রীত সে কথা শুনে ফেলে।

প্রীত অটো চালায়, ভালোই কামায়। ছেলেটা ভালো। নেশা-ভাং করে না। ভীষণ দয়ামায়া আছে। কখনোসখনো ইমলির দিকে নরম চোখে তাকাত বইকি তবে ইশারাইঙ্গিত করেনি। বন্ধুর বোনের লিবিয়ন কেনার পয়সা নেই শুনে তার ভারি মায়া হয়েছিল। একটা লিবিয়ন কিনে রেখেছিল প্রীত। কিন্তু দেওয়ার মওকা পায়নি। শুক্রবার কিনে রেখেছিল। শনি, রবি, সোম তিনটে দিন চলে গেল। দেওয়ার মওকা এল না। দুম করে বন্ধুর ঘরে ঢুকে তার বাবা-মায়ের সামনে তো আর দেওয়া যায় না। বন্ধুর সামনে তো নয়ই। ইমলির বডি নিয়ে যাওয়ার সময় প্রীতের চোখ ভিজে গিয়েছে। নিজেকে ডরপোক বলে মনে হচ্ছে তার। কেন যে হিম্মত করে উঠতে পারল না?

মঙ্গলবার ইমলি ঝুলে পড়ল। তার বিয়ে হচ্ছিল না। মা গজগজ করত, কখনো কখনো শাপশাপান্ত। মেয়ের বিয়ে দিতে পারছে না বলে বসতির অনেকে এসে তাদের সবাইকে খোঁচা দিয়ে যেত। শেষ যে পাত্রপক্ষ এসেছিল তারা মেয়ে দেখে পছন্দ না করলেও সাফ কথাবার্তা বলেছিল। ছেলের বাড়ী মানিকতলার ভেতরে আধা বসতিতে। ক্যাটারিংএর ব্যবসা শুরু করেছে। লাখ দুয়েক দহেজ চেয়েছিল।বাবা মায়ের অত জমানো নেই। মা বলেছিল- “কিসি তরহা এক লাখ দিতে পারি।” তা পাত্রের বাবা কিছুতেই রাজী হ’ল না। বলল, “মেয়ে সুন্দর নয়। ছেলেরও মোটেই পছন্দ নয়। তবে আমরা চেহারার খুঁত ধরব না। দু’ লাখ টাকা পেলে ছেলেও হাসতে হাসতে রাজী হয়ে যাবে। ভেবে দেখুন। কি ঠিক করলেন জানাতে দেরি করবেন না যেন।

সেদিন ওরা চলে যাওয়ার পরে মা খুব কেঁদেছিল। তারপর জোরে জোরে বলে ফেলেছিল, ইতনি বদসুরত লেড়কি না জানে ক্যায়সে হামারে ঘর পয়দা হো গ্যয়ি। হে বজরঙ্গবলী, মুঝে উঠালো। মায়ের পাশে দাদা গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়েছিল। বলেছিল- আমার তো ইমলিকে বোন বলে পরিচয় দিতে লজ্জা লাগে। একটা করে পাত্র না বলে আর আমার বিয়েটাও পিছিয়ে যায়। প্রত্যেকবার চা মিষ্টি খাওয়াতেও তো খরচ হয়। (মিষ্টি অবশ্য ভিকির টাকায় কেনা নয়। সব মায়ের কষ্টের রোজগার।) মনহুস লেড়কি কঁহিকি!

দিনকে দিন এসব নিশ্চয় আরো বাড়ত। বেঁচে থাকলে প্রতি দিন তাকে এসব সহ্য করতে হত। ইমলি তা চায়নি। তাই পালাবার জন্য চরম পথ বেছে নিল। তার বাবা চুপচাপ মায়ের রোনাধোনা শুনে যেত। আগে বিটি রোডে একটা পাইস হোটেল ছিল বাবার। অল্প হলেও স্থায়ী রোজগার ছিল। সকাল ছ’টা নাগাৎ বেরিয়ে যেত। খদ্দের খাইয়ে সব গুছিয়ে টাকাপয়সা গুনেগেঁথে বিকেল পাঁচটার পরে বাড়ী ফিরত। কায়িক শ্রম করা মানুষজন সেই হোটেলে খেতে আসত। রান্না করার জন্য একটা লোকও ছিল। সিলিয়া কাজের বাড়ীতে বেশ গর্ব করে বলত- মেরে পতি কা পাইস হোটেল হ্যায়। করোনা এসে সেটা শেষ করে দিয়েছে।

মা আগে দু’ বাড়ী বর্তন মাজার কাজ করত। পাইস হোটেল বন্ধ হওয়ার পর থেকে চার বাড়ী করে। বসতির অনেক মেয়ে আরো বেশি বাড়ীতে ঝাড়ুপোঁছা আর বর্তন মাজার কাজ করে। মা আরো করতে চাইলেও শরীরের জন্য পারে না। ইমলি নিজে অনেকবার বর্তন মাজার কাজ করতে চেয়েছে। মা যেতে দেয় না। অভাব থাকলেও মেয়েকে কামওয়ালি হ’তে দেবে না। ভিকি কোনও দিনও নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছু ভাবেনি। ভালো ঘরে বোনের বিয়ে দেওয়ার জন্য বিন্দুমাত্র চেষ্টা সে করেনি। খালি চিত্তির বাগানের ওই হিল পরা লিপস্টিক মাখা মেয়েটাকে ঘরে তোলার ধান্দা।

ইমলির চুলে জট পড়ছিল। সে যদি জানত, দাদার বন্ধু তার জন্য জটের মোক্ষম প্রতিষেধক কিনে এনেছে, তাহলে নিশ্চয় ঝুলে পড়ত না।

কুচ

আমার মামাতো দিদি কুহু শান্তিনিকেতন গিয়েছিল। মাত্র এক দিন ছিল তাই বেশি ঘোরাঘুরি হয়নি। ফেরার পর আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। ওখান থেকে আমার জন্য ভারি সুন্দর একটা মাটির প্রাণী এনেছে যার চোখে দুটো লাল কুঁচ ফল বসানো। কুহু অবশ্য প্রথমে কুচ উচ্চারণ করেছিল।

আমি বললাম, “কুচ নয় রে কুহু, কুঁচ!” কুহু আমার থেকে দু’ বছরের বড় মামাতো দিদি। বাবা মারা যাওয়ার পর তার পেনশনটা আমি পাওয়ার আগে অবধি ও আর ওর বর আমাকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করেছিল। তারপর পেনশন পেয়ে গেলাম। কোনো কালেই উঁচু নজর ছিল না আমার। বরাবর আমি অল্পে সন্তুষ্ট মানুষ। এখন দিব্যি আছি উত্তর কলকাতার এই ফ্ল্যাটে। খুব বড় না হলেও ফ্ল্যাটটা ভাগ্যিস নিজেদের।

ছাব্বিশ বছর বয়সে আমার বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছিল। তারপর অনেক দিন বাবা-মা ছিল। দু’ হাজার পনেরোতে মা, সতেরোয় বাবা চলে গেল। বাবা সরকারি চাকরি করত। আমার জন্য বাবা বিশেষ কিছু রেখে যায়নি যদিও লোকের কাছে জাঁক করে বলত- “মৌয়ের জন্য এত এত রেখে যাচ্ছি।” সে সব কল্পকথা সত্যিই বিচিত্র!

কুহুর মেয়ে জার্মানিতে চাকরি করে। ছেলে ইংরেজিতে এম এ পড়ছে, এ বছরই পাশ করে যাবে। ছেলেমেয়ে বড় হয়ে যাওয়ায় ওর এখন নিজের অনেক সময়। তবে ওরা থাকে সাদার্ন এভিনিউ আর আমি উত্তর কলকাতার পাইকপাড়ায়। ফলে আসাযাওয়া কম হয়। মূলত হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ।

কুহু অনেক দিন পর আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। ওর গাড়ির চালক ভুলুদা নিচে অপেক্ষা করছে। আমার প্রিয় খাবার দইবড়া নিয়ে এসেছে কুহু। আমি তারিয়ে তারিয়ে দই বড়া খাচ্ছি। কুহু কিছুতেই এটা খেলো না। ওকে কফি, ক্রিম ক্র্যাকার আর দুটো নরম পাকের সন্দেশ দিয়েছি। আমার খরগোশ তিনটে কাছাকাছি খেলছে।

মাটির প্রাণীটাকে নাড়াচাড়া করতে করতে আমি বললাম, “আমরা যখন সোনামুখীতে থাকতাম, আমাদের বাড়ির কাছেই একটা কুমোর এরকম মাটির জন্তুজানোয়ার তৈরি করত। এক দিন একটা কাঠবেড়ালির চোখে লাল টকটকে কুঁচফল বসাচ্ছিল আর আমি অবাক হয়ে দেখছিলাম।”

বাবার বদলির চাকরির সূত্রে অনেক বছর আগে আমরা সোনামুখীতে থাকতাম। আমার জন্ম অবশ্য কলকাতায়। ছোটবেলায় কুহু একবার সোনামুখীতে আমাদের কাছে গিয়েছিল। খুব ঝাপসা সে সব স্মৃতি আমাদের কাছে এখন। প্রাণীটার লাল চোখের দিকে তাকিয়ে আমি বললাম – “কুচ মানে স্তন। আবার কোনো কিছু কাটার সময়ও কুচ করে শব্দ হয় বল! শোন তাহলে কাটাকাটির আর নির্মমতার একটা ঘরোয়া গল্প।”

কুহু শুনতে রাজি।

“এই ঘটনা অষ্টাশি সালের। তোর কলির মানে আমার মায়ের ভয়াবহ নিষ্ঠুরতার গল্প।”

আমার মায়ের নাম ছিল কমলা, পিউ ছোট বয়সের আধোআধো বুলিতে সেটাকে সহজ “কলি” করে নিয়েছিল।

“তখন আমার বাঁ স্তন জুড়ে টিউমার। নিজেই সেটা বুঝে গিয়েছিলাম। এক পত্রিকায় স্তনের ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতন হওয়ার জন্য একটি লেখা পড়ে আমার মনে হয়েছিল, দেখি তো আমার এরকম কিছু আছে কিনা। সুযোগ পেয়েই নির্জন ঘরে নিজের বাম স্তন পরীক্ষা করে একটা পিণ্ডের অস্তিত্ব টের পেয়েছিলাম। বুঝে গিয়েছিলাম ওটাকেই টিউমার বলে। সতেরো বছর বয়সেই আমি নিজের শরীর সম্পর্কে সচেতন ছিলাম।

অষ্টাশি সালের জুন কী জুলাই মাসে হঠাৎ মা নিজেই কাগজ দেখে আমেরিকার মেরিল্যান্ডে বসবাসকারী একটা লোকের সঙ্গে আমার সম্বন্ধ করল। সেই পাত্র আমার চেয়ে তেরো বছরের বড়।

মা সবাইকে বলতে শুরু করল, মৌয়ের একটা খুব ভালো সম্বন্ধ এসেছে। এ সব কথা শুনে লোকজন নিশ্চয় আড়ালে হাসত কারণ তখন আমাদের নিজেদের বাড়ি পর্যন্ত ছিল না। আজ ভাবি কী করে মায়ের মাথায় এসেছিল, আমেরিকার ওই পাত্রের সঙ্গে আমার বিয়ে হবে! একে তো আমার মামুলি চেহারা, তার ওপর নিজেদের বাড়ি নেই, গয়না বলতে আমার কানে এক জোড়া সোনার রিং আর মায়ের এক গাছা সরু চুরি।

তখন আমরা থাকতাম হবিন রোডের সরকারি কোয়ার্টারে। চব্বিশ ঘন্টা জল আর সরাসরি কোনো বাড়িওয়ালা নেই বলে সেখানে যাওয়ার পর থেকে আমার বাবা-মা নিজেদের বড়লোক ভাবতে শুরু করেছিল। আগেকার ঘুপচি ভাড়াবাড়ির থেকে যেহেতু সরকারি কোয়ার্টার অনেক ভালো, মায়ের মাথাটা ঘুরে গিয়েছিল।

আমার মা হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে। শৈশব থেকে অভাব-অনটন ও অপমান ছিল নিত্যসঙ্গী। প্রাক-বিবাহ জীবনের ভয়াবহ দারিদ্র্য বিয়ের পরে হয়তো একটু লঘু হয়েছিল কিন্তু হীনমন্যতা কখনো মা-কে ছেড়ে যায়নি।

আমেরিকার সম্বন্ধ নিয়ে উত্তেজিত মা আমাকে বলতে শুরু করল, “আমরা তো তোকে ভালো খাবার, ভালো জামাকাপড় কিছুই দিতে পারিনি, ভালো জায়গায় বেড়াতে নিয়ে যেতে পারিনি; তাই বড়লোকের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেব, দেখবি কত ভালো ভালো খেতে পাবি, দামী দামী জামাকাপড় পরতে পারবি, কত জায়গায় বেড়াতে নিয়ে যাবে, কেমন রঙে-রসে-রূপে ভরে উঠবে জীবনটা।” এই সব কথা বলার সময় মায়ের চোখে লোভ খেলা করত।

আগেই বলেছি- তখন আমার ব্রেস্টে টিউমার। সেটা মা ভালো করেই জানত। সেই সময়েই অজানা অচেনা মেরিল্যান্ডের ওই লোকটাকে মা “জামাই” বলে উল্লেখ করতে শুরু করল। খালি বলত, “এবার তোর বিয়ে দিয়ে দেব, আমরা বড়লোক হয়ে যাব, বামপুরহাটের সবাই অবাক হয়ে যাবে।” অথচ আমি তখন একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। এরকমই এক দিন আমেরিকায় বিয়ের অবাস্তব চিন্তাভাবনা আমার মাথায় ঢোকানোর চেষ্টা করছিল মা। গায়ে রং ওঠা নরম সুতির শাড়ি পরা, পিঠের ওপর খোলা চুলের রাশি। আমার পোষাকের ওপর দিয়ে টিউমারে হাত দিয়ে মা বলছে- “দেখি কত বড় হল? ও কোনো ব্যাপার নয়, জামাই এসে টিউমারটাও অপারেশন করিয়ে দেবে।” ধরেই নিয়েছিল আমার আমেরিকায় বিয়ে হয়ে যাবে কারণ মা জীবনটাকে রূপকথা ভাবত।

কুহু অবাক হয়ে শুনছে। কলি নিশ্চয় তার কাছে অন্য রকম একটা মানুষ ছিল এত দিন।

আমি বলে চলি, “পার্লারকে মা বলত “দোকান”। মা পার্লারে যেত না। পয়সা কোথায়? বাড়িতেই চুল কালো করত। বিয়ে এবং বয়স নিয়ে একটা অদ্ভুত কমপ্লেক্স ছিল মায়ের যেহেতু সেই যুগ অনুযায়ী মায়ের বেশি বয়সে বিয়ে হয়েছিল। উনিশশো আটষট্টি সালে আঠাশ বছর বয়সে মায়ের বিয়ে হয়, চার বছর পরে একাত্তরে আমার জন্ম। আটষট্টি সালে মেয়েদের বিয়ের জন্য আঠাশ বছর বয়সটা কলকাতা শহরেও বেশি ছিল সামগ্রিক ভাবে। মায়ের সমস্ত সখীরই তার অনেক আগে বিয়ে হয়ে গিয়েছিল।

মায়ের কাছে পার্লারে গিয়ে চুল কালো করাটা ছিল একটা স্বপ্নের মতো ব্যাপার, বিলাসিতার চূড়ান্ত ধারণা। সেই সময় মা বলতে শুরু করেছিল, “আমেরিকা থেকে চিঠিটা আসা মাত্রই আমি দোকান থেকে চুলটা ঠিক করিয়ে আসব।”

মাঝেমাঝে আমার দিকে তাকিয়ে ন্যাকা ন্যাকা গলায় মা এটা বলত। আরও বলত, “আমেরিকা থেকে জামাই এসে পিঁড়ি পেতে খাবে।” দরিদ্র মানুষের দুরাশা চিন্তা কর! আসলে মায়েদের স্কুলের এক টিচার নলিনী রায়ের মেয়ের সেই কবে অল্প বয়সে কানাডায় বিয়ে হয়েছিল। মা ভাবতে শুরু করেছিল, নলিনীদির মেয়ের কানাডা-আমেরিকার মতো সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের দেশে হলে তার মেয়েরও আমেরিকায় বিয়ে হবে না কেন? আরে নলিনীদির গড়িয়াতে নিজেদের বাড়ি, ভালো অবস্থা আর আমাদের সরকারি কোয়ার্টারে বাস। বাস্তব-বর্জিত নির্বোধ হলে যা হয় আর কী!

পৃথিবীসুদ্ধু লোককে মা এই আমেরিকার সম্বন্ধের কথাটা বলে বেরিয়েছিল। পরিচারিকা চপলা মাসীর সঙ্গেও হাত-পা নেড়ে কত জল্পনাকল্পনা! এ দিকে তখন থেকেই আমি নিজের কথা নিজের কাছে রাখতে পছন্দ করি। তার ওপর বামপুরহাটের অনেকের সঙ্গে আমার বনত না। ওখানকার তেমনই একজন, যার মাথায় গোবর পোরা সেই পকাইদাকে পর্যন্ত মা এটা বলেছিল। পকাইদা এক দিন হাসতে হাসতে আমাকে বলছে- তুমি তো আমেরিকায় কাকে চিঠি লিখেছিলে। শুনে আমার গা পিত্তি জ্বলে গিয়েছিল। মনে হয়েছিল আমাকে বিক্রি করার জন্য মা হাটের মধ্যে বসিয়ে দিয়েছে। পকাইদার মুখ থেকে এটা শোনার পর বাড়িতে আমি কম চিৎকার করিনি।

এবার বাবার কথা বলি। মায়ের মতো এত বেশি উৎকট অসম্ভব স্বপ্ন না দেখলেও বাবাও কিছুটা আশা করেছিল বৈকি। তখন বাবা মাঝেমাঝে বলত, “মৌয়ের আমেরিকায় বিয়ে হলে অনেক ভালো ভালো মদ পাওয়া যাবে।” বাবা মদ খেতে ভীষণ ভালোবাসত। প্রায় রোজ খেত। ফ্রিজে হুইস্কি বা বিয়ারের ছোট একটা বোতল সব সময় থাকতই। কোনো আত্মীয় এসে ফ্রিজ খুললে মা তাই ভীষণ সতর্ক থাকত তবে কেউ কি বোকা নাকি?

যাই হোক, মেরিল্যান্ডে সম্বন্ধ করে এবং যাকে তাকে সে কথা বলে বেরিয়েও কোনো ফল হল না। আমেরিকা থেকে বিয়ের চূড়ান্ত চিঠি আর এল না। তখন মা বলতে শুরু করল, “ও সব ছেলে কী আর আমার মেয়ের মতো সাজগোজ না করা মেয়েকে পছন্দ করবে? নিশ্চয় কোনো উগ্র আধুনিকা মেয়েকে পছন্দ করে ফেলেছে। হাজার ঘাটের জল খাওয়া ওই সব ছেলে কী আর আসল ভালো মেয়ের কদর বোঝে?”

কুহু মন দিয়ে শুনছে। একটু থেমে কফিতে একটা লম্বা চুমুক দিয়ে আমি বলতে শুরু করলাম, “এর কিছু দিন পর উননব্বই সালে হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষা মিটে যাওয়ার পর আমার বাঁ দিকের ব্রেস্টে অপারেশন হয়। আমি তখন আঠেরো। দক্ষ সার্জন টিউমার ঠিক মতো বার করে ফেলেছিলেন। টিউমারের বায়োপসি করে ক্যান্সার পাওয়া যায়নি। ঘনিষ্ঠ এক প্রতিবেশীর মুখে শুনেছিলাম, আমার অপারেশনের সময় মা কাঁদছিল। তাতে আমার কী! মা নিজের সন্তানের প্রতি কত নির্মম ছিল সেটা তো আগেই বুঝে গিয়েছিলাম।”

ঘর জুড়ে নীরবতা। কুহুর চোখ কি চিকচিক করছে? এবার আমি বলি- “কুচ মানে ব্রেস্ট, স্তন, বুক কত কিছু। আবার কোনো কিছু সূক্ষ্মভাবে কাটার সময়েও কুচ করে একটা শব্দ হয়, তাই না!”

“অ্যানেসথেসিয়ার আগে অপারেশন টেবিলে সার্জন আমার বাঁ স্তন ভালো করে পরীক্ষা করতে করতে তাঁর সহকারী সার্জনকে বলেছিলেন – “কতকগুলো ডাক্ট তো ইনভল্ভব হবেই।” তারপর প্রবীণ অ্যানেসথেসিস্ট অ্যানেসথেসিয়া করলেন। আস্তে আস্তে আমার চেতনা অবলুপ্ত হতে শুরু করল।” কথাগুলো বিবৃতি দেওয়ার মতো করে বলছিলাম আমি।

সার্জন গতি পোদ্দার যখন আমার ব্রেস্টে সার্জিকাল নাইফ প্রয়োগ করেছিলেন তখন কিম্বা বায়োপসির জন্য মাংসপিণ্ডটা কাটাকুটি করার সময় হয়তো, হয়তো কুচ করে একটা শব্দ হয়েছিল। কিন্তু মায়ের মমতা ব্যাপারটাকে কত দিন আগে আমার মা নিজেই কুচ করে কেটে দিয়েছিল, বল!

আমি আর কুহু পরস্পরকে ঝাপসা দেখছি। ঘরের ভেতরের পরিবেশ যেন বেদনায় ভরে যাচ্ছে।

শুভশ্রী রায় | Suvasri Roy

New Bengali Article 2023 | লেখক বনাম সাহিত্যিক

Odisha Goddess Durga | ওড়িশার পটচিত্রে দেবী দুর্গা | 2023

মানব কল্যাণে রামকৃষ্ণ মিশন | Ramakrishna Mission | 2023

Andaman Cellular Jail | আন্দামানের কুখ্যাত সেলুলার জেল | 2023

Bengali Story Demand | Shabdodweep Web Magazine | Suvasri Roy

In the last few years, Bengali Story Demand has seen a remarkable rise. Readers across the globe are seeking more content in Bengali, especially short stories and contemporary works. Bengali literature, known for its rich cultural roots, emotional depth, and artistic brilliance, is now finding new life in digital platforms. At the heart of this transformation is the Shabdodweep Web Magazine, a growing space for quality storytelling and poetry in Bengali.

The Rebirth of Bengali Literature in the Digital Age

With the growing interest in regional languages and native storytelling, Bengali Story Demand has skyrocketed. Platforms like Shabdodweep Web Magazine are leading the way in preserving and promoting Bengali literature through modern formats. The magazine consistently publishes quality stories in Bangla, Bengali short stories, and bangla golpo (বাংলা গল্প) that resonate with a wide audience.

People want stories that reflect their own emotions, surroundings, and experiences. This has led to a huge increase in the demand for Bengali storytelling, both online and offline. The Bengali story writer community is thriving today like never before, with readers waiting eagerly for new content.

The Role of Shabdodweep Web Magazine

Shabdodweep Web Magazine plays a vital role in meeting the ever-growing Bengali Story Demand. It is a dedicated platform that focuses on high-quality storytelling. From modern tales to traditional bangla golpo (বাংলা গল্প), the magazine serves as a rich archive of Bengali short stories.

One of the standout writers featured in Shabdodweep is Suvasri Roy. Her stories reflect the real essence of Bengali life, relationships, emotions, and traditions. With a flair for words and deep cultural insight, Suvasri Roy has contributed significantly to the magazine, helping fulfil the rising Bengali Story Demand.

Why Bengali Short Stories are in High Demand

There are several reasons why Bengali short stories are in demand:

Brevity: Short stories are easy to read, perfect for busy lifestyles.

Emotionally Rich: Bengali storytelling often dives deep into human emotions, making it relatable.

Cultural Connection: Readers feel a personal connection to stories in Bangla that reflect their heritage.

Digital Access: With platforms like Shabdodweep, accessing quality Bengali literature is easier than ever.

As digital reading habits grow, so does the interest in regional content. Bengali literature is benefitting greatly from this trend.

The Importance of Bengali Story Writers

A Bengali story writer is not just a creator but a cultural ambassador. Writers like Suvasri Roy are helping preserve Bengali culture through words. Their storytelling is helping bridge generations and keep age-old traditions alive in a modern world.

Shabdodweep’s team carefully selects each story to ensure quality and relevance. From folklore-inspired tales to modern urban fiction, the magazine showcases the best in Bengali literature.

Stories in Bangla: A Global Demand

There is a growing global audience for stories in Bangla. Bengalis living abroad crave content that reminds them of home. This has expanded the reach of Bengali short stories and increased Bengali Story Demand outside India and Bangladesh.

Whether it’s nostalgia or the universal appeal of Bengali storytelling, the demand continues to rise. Shabdodweep Web Magazine is a pioneer in serving this audience with rich and meaningful content.

Final Thoughts

In conclusion, the Bengali Story Demand is not just a trend, it’s a cultural movement. Shabdodweep Web Magazine, with its focus on high-quality storytelling, experienced writers like Suvasri Roy, and dedication to Bengali culture, is at the forefront of this revival.

By offering meaningful, relatable, and emotionally rich stories in Bangla, Shabdodweep is not only meeting the demand but setting new standards in the world of Bengali literature.

Frequently Asked Questions (FAQ)

What is the current Bengali Story Demand?

The demand for Bengali stories is at an all-time high due to digital access, cultural relevance, and emotional connection. Shabdodweep Web Magazine helps meet this demand with quality content.

Why should I read Bengali stories on Shabdodweep Web Magazine?

Shabdodweep offers original and emotionally rich Bengali short stories, written by experienced writers like Suvasri Roy, that reflect true Bengali culture and life.

Who is Suvasri Roy?

Suvasri Roy is a well-known Bengali story writer featured on Shabdodweep. Her works are appreciated for their depth, simplicity, and cultural resonance.

Can I find bangla golpo (বাংলা গল্প) on Shabdodweep?

Yes, the magazine regularly publishes bangla golpo (বাংলা গল্প) that appeal to both traditional and modern readers.

Is Shabdodweep only for Bengali readers in India?

No. Shabdodweep caters to a global audience interested in Bengali literature, including Bengali-speaking communities abroad.

---

Sabuj Basinda | Follow our youtube channel – Sabuj Basinda Studio