অভিজিৎ পাল – সূচিপত্র [Goddess Durga]
ওড়িশার পটচিত্রে দেবী দুর্গা [Odisha Goddess Durga]
বঙ্গদেশের সঙ্গে ওড়িশার আধ্যাত্মিক-সম্পর্ক সুপ্রাচীন। বঙ্গের জাতীয় আধ্যাত্মিক-উৎসব দুর্গাপূজা, ওড়িশার রথযাত্রা। দুই প্রদেশের আধ্যাত্মিক ঐশ্বর্য বৃদ্ধি করেছেন দুই পৌরাণিক দেবতা—দেবী দুর্গা ও জগন্নাথ দেব। ওড়িশার পটশিল্পের প্রধান আরাধ্য দেবতা জগন্নাথ। অনেক পটশিল্পীই শুধুমাত্র ইষ্টদেবতা জগন্নাথের পট আঁকেন। শিল্প তাঁদের সাধনার নামান্তর। জগন্নাথের সূত্রে দুর্গা দেবী ওড়িশার পটচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ আসন পেতেছেন। ওড়িশার শাক্ততত্ত্বে জগন্নাথ সাক্ষাৎ মাতৃকাশক্তি তথা মহামায়া। জগন্নাথ পরম-পুরুষ, জগন্নাথই পরমা-প্রকৃতি। জগন্নাথই মাতৃরূপে জগতকে পোষণ করেন, পিতৃরূপে শাসন করেন। এছাড়াও ওড়িশার শাক্ততত্ত্বে জগন্নাথ বিমলার ভৈরব—সাক্ষাৎ শিব। তাই বৈষ্ণব ভাববিধৌত ওড়িশায় শক্তির আরাধনা চলে এত উৎসাহে। জগন্নাথও আশ্বিনের দেবীপক্ষের দশমীতে রাজরাজেশ্বর বেশ-শৃঙ্গার করেন। শ্রীমন্দিরে দেবীপক্ষের তিথিগুলিতে বিশেষ পূজার আয়োজন করা হয়। দেবীপক্ষেই শ্রীমন্দিরে ভগবতী বিমলার শাক্তাচারে বিশেষ পূজার আয়োজন করা হয়। এই সময়ে দুর্গা-মাধব মন্দিরে ভগবতীর বিরাট পূজার দ্রষ্টা ও পর্যবেক্ষক স্বরূপে উপস্থিত থাকেন জগন্নাথ। জগন্নাথ-সংস্কৃতির সঙ্গে শাক্ত ভাবধারার এই সুসম্পর্কের প্রভাব এসে লেগেছে তাঁদের পটচিত্রশিল্পে। ওড়িশার ঐতিহ্যবাহী পটচিত্রশিল্পে একাধিক আঙ্গিকে দেবী দুর্গার [Goddess Durga] চিত্রপট তৈরি করা হয়। ওড়িশার দুর্গাপটকে অনেকে পটেশ্বরী মাঈ বলেন। যদিও এই প্রবণতা ওড়িয়াদের মধ্যে খুব বেশি নেই। দুর্গা পট সাধারণ উলম্ব হয়। পটের কেন্দ্রে থাকেন দেবী দুর্গা। পটের প্রান্তে ঘন গাঢ় রঙের অনেকটা ফ্রেমের আকারে ব্রডার দেওয়া হয়। এই অংশে বিভিন্ন রঙের ফুল ও লতাপাতার নক্শা আঁকা হয়। অনেক পটে দুটি থেকে চারটি পর্যন্তও এমন ‘বেস ব্রডার’ দেওয়া হয়।
মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা দেবী [Goddess Durga]
পৌরাণিক আখ্যান অনুসারে অসুরপতি রম্ভাসুর ও মহিষের সন্তান মহিষাসুর ছিলেন ঘোরতর দেববিদ্বেষী। মহিষাসুর ব্রহ্মা প্রজাপতির তপস্যায় সিদ্ধ হয়ে বর লাভ করেছিলেন তিনি সমস্ত পুরুষের অবধ্য। এমন বর পেয়ে মহিষাসুর দেবতাদের পরাজিত করে স্বর্গ দখল করলে দেবতারা সম্মিলিত প্রয়াসে দেবী দুর্গার প্রকাশ ত্বরান্বিত করেছিলেন। মহিষাসুরকে বধ করে দেবী আদ্যাশক্তির এই দুর্গা-রূপ হয়ে উঠেছিল মহিষাসুরমর্দিনী। ওড়িশার মহিষাসুরমর্দিনী পটচিত্রে দেবী দুর্গার প্রকাশ মূলত দুই ধরনের। এক রকমের মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা পটে মহিষাসুর মুখ মহিষের মতো, দ্বিতীয় রকমের মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা পটে মহিষাসুরের মুখ ওড়িশা পটের রাক্ষস চরিত্রদের মতো বিকট। সাধারণত মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা পটে দেবী দুর্গার হাতের সংখ্যা দশ। তিনি এখানে দশপ্রহরণধারিনী দশভূজা। তাঁর দশহাতে থাকে—ত্রিশূল, শঙ্খ, চক্র, অসি বা খড়গ, ঢাল, তির, ধনুক, পদ্ম, নাগ, গদা। মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা পটে দেবী দুর্গাকে মহিষাসুরকে বধরত অবস্থায় দেখা যায়। এই পটে দেবী দুর্গা সাধারণত পুরুষ সিংহের কাঁধে দাঁড়িয়ে মুখোমুখি যুদ্ধরত অবস্থায় মহিষাসুরকে ত্রিশূলে বিদ্ধ করেন। সিংহের পুরুষভাব প্রকাশের জন্য সিংহের মুখে মানুষের মতো কালো রঙের গোঁফ আঁকা হয়। সিংহের গড়ন ওড়িশার ঐতিহ্যবাহী শিল্পের সঙ্গে প্রায় এক।
মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা পটের সিংহের গাত্রবর্ণ সাদা ও কেশরের রঙ সোনালী হলুদ। দেবী দুর্গার চোখে যুদ্ধজনিত ক্রোধের আগুন দেখা যায়। দেবীর গাত্রবর্ণ কোনো পটে কাঁচা হলুদের মতো, আবার কোথাও সাদার সঙ্গে হালকা কমলা রঙ মিশিয়ে তৈরি হওয়া ‘অফ হোয়াইট’ রঙের। মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা পটে দেবী সালঙ্কারা ও রক্তবর্ণের কাপড় পরিধান করেন। ওড়িশার ঐতিহ্যবাহী গহনায় দেবীকে সুসজ্জিত করেন শিল্পীরা। দুর্গা দেবীর মুকুটে চাঁদ শোভা পায়। দেবী এলোকেশী হলেও যুদ্ধরত অবস্থায় তার কেশরাশি সামনের দিকে এগিয়ে থাকে না। মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা পটে মহিষাসুরের বীরভাব বজায় রাখতে তাঁর হাতেও অসি ও ঢাল—দুটি অস্ত্র ধরে রাখতে দেখা যায়। মহিষাসুরের গাত্রবর্ণ সাধারণত সবুজ বা সাদা মিশ্রিত শ্যাওলা রঙের সবুজ করা হয়। এছাড়াও বৈচিত্র্য তৈরির জন্য কোনো কোনো পটে অসুরের গাত্রবর্ণ নীল, বেগুনী ও হালকা খয়েরী রঙের দেখা যায়। কোনো কোনো পটে মহিষাসুরের সঙ্গে মাথাহীন মৃত মহিষের অবয়বও দেখা যায়। ওড়িশার শারদীয় দুর্গোৎসবের সময়ে একক বিগ্ৰহে দুর্গা দেবীর উপাসনার রীতি রয়েছে। শারদীয় সর্বজনীন দুর্গোৎসবের মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা বিগ্ৰহের সঙ্গে ওড়িশার পটচিত্রের মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা পটের প্রায় একভাগ মিল খুঁজে পাওয়া যায়। একক মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা বিগ্ৰহে দুর্গা পূজা ওড়িশার নিজস্ব আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য। এর সঙ্গে বঙ্গের শারদীয় দুর্গোৎসবের বিগ্ৰহ সংস্থাপনের বিশেষ মিল নেই।
কোনো কোনো মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা পটে দেবী দুদিকে জয়া-বিজয়াও থাকেন। আবার কোনো কোনো মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা পটের চারিদিকে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব, ইন্দ্র, চন্দ্র, সূর্য, যম, কাল, অগ্নি, বায়ু, বিশ্বকর্মা, কুবের সহ বিবিধ দেবতার অবস্থান দেখা যায়। তাঁরা পটের চারিদিকে দাঁড়ানো বা বসা অবস্থায় দেবীকে বন্দনা করেন। মহিষাসুর বধের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য তাঁদের প্রত্যেকের হাতের ভঙ্গিতে প্রণামের মুদ্রা থাকে। আবার অনেক মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা পটে প্রত্যেক দেবতার হাতে লাল পদ্মও দেখা যায়।
সিংহবাহিনী দুর্গা পট [Goddess Durga]
পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী মহিষাসুর বধার্থে স্বর্গভ্রষ্ট সমস্ত দেবতার আহ্বানে আদ্যাশক্তি মহামায়া দেবী দুর্গা রূপে প্রকাশিত হয়েছিলেন। দেবীর আবির্ভাবের সময় দেবতারা দেবী দুর্গাকে অস্ত্র থেকে অলংকার, বসন থেকে বাহন তথা যে যাঁর শ্রেষ্ঠ উপকরণ দিয়ে সাজিয়ে তুলেছিলেন। এই সময়ে গিরিরাজ হিমালয় দেবীকে দিয়েছিলেন সিংহ। গিরিরাজের দেওয়া সিংহই দেবীর বাহনের মর্যাদা পেয়েছিল। আর একটি মতে দেবীর সিংহবাহিনী তত্ত্বে আসা যেতে পারে। দেবী পর্বতরাজের কন্যা গৌরী। সিংহ পার্বত্যপ্রাণী। দেবীর বাহন তাই সিংহ। দেবী দুর্গা তেজস্বিনী মহাশক্তি তাঁর ভার বহন করতে পারে একমাত্র তেজবান সিংহই। তাই দেবী সিংহবাহিনী। ওড়িশার পটচিত্রের সিংহবাহিনী দুর্গা পটে মূলত দুভাবে দেবী দুর্গাকে দেখা যায়। প্রথম, দেবী সিংহরাজের ওপর দণ্ডায়মান। দ্বিতীয় তিনি সিংহের ওপর বিরাজিত। উভয়ক্ষেত্রেই দেবীর বাহন সিংহের গাত্রবর্ণ সাদা। দেবীর গাত্রবর্ণ উজ্জ্বল হলুদ বা কাঞ্চনবর্ণ। সিংহবাহিনী দুর্গা পটে দেবীর মহিষাসুরের সঙ্গে সংগ্ৰামরত চিত্র তুলনামূলক কম দেখা গেলেও খুব অপ্রতুলও নয়। সিংহবাহিনী দুর্গা পটে দেবীর দশভূজা মূর্তি ও অষ্টভূজা মূর্তি উভয়ই দেখা যায়। সিংহবাহিনী দুর্গা পটে দেবী সাধারণত মাতৃরূপা। তাঁর ভীষণা রূপটি এখানে খুব বেশি প্রকটিত হয় না। নেত্র-অন্তে স্নেহ ও ঠোঁটে হাস্যরেখা এই পটের বিশেষত্ব। মহিষাসুরমর্দিনী পটের মতো রণং দেহি মূর্তি এখানে প্রায় অনুপস্থিত। সাধারণত রত্নবেদিকার অনুরূপ পদ্মের ওপর সিংহ ও সিংহের ওপর দেবী দুর্গাকে দেখা যায়। আবার অনেক সিংহবাহিনী দুর্গা পটে পদ্ম অনুপস্থিত থাকে। সিংহবাহিনী দুর্গা পটের আরও দুটি রূপ রয়েছে – একটি ধারায় দেবী দুর্গা শ্রীশ্রীচণ্ডী অনুসারে অজস্রভূজা অথবা অষ্টাদশভূজা। ভিন্ন ধারায় তিনি চতুর্ভুজা। দেবীর চতুর্ভুজা মূর্তির সঙ্গে দেবী বিমলার মিল রয়েছে।
অষ্টভুজা দুর্গা দেবীর পট [Goddess Durga]
দুর্গা দেবীর অষ্টভুজা মূর্তির প্রকরণ প্রায় সারা ভারতেই প্রচলিত। বঙ্গদেশে দুর্গা প্রাচীন সময় থেকেই দশভুজা। বঙ্গদেশের পার্শ্ববর্তী প্রদেশ ওড়িশাতেও বঙ্গদেশের প্রভাবে দশভুজা দুর্গার প্রকাশ ঘটেছে। ওড়িশার ঐতিহ্যবাহী পটচিত্রশিল্পে ও মূর্তিশিল্পে দুর্গা সাধারণত অষ্টভুজা। ওড়িশার দশভুজা দেবী দুর্গা হলেন মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা এবং অষ্টভুজা দেবী দুর্গা হলেন দুর্গম দৈত্যনাশী ও দুর্গতিনাশিনী দুর্গা। ওড়িশা পটশিল্পের অষ্টভুজা দুর্গা সিংহবাহিনী। এখানেও দেবীর গাত্রবর্ণ উজ্জ্বল হলুদ বা কাঞ্চনবর্ণ। তাঁর হাতের প্রধান অস্ত্র ত্রিশূল। এছাড়া তাঁর অন্য হাতগুলিতে ধনুক, তির, শঙ্খ, চক্র, গদা, পাশ, অঙ্কুশ ইত্যাদি থাকে। দেবীর মাথায় অর্ধচন্দ্র শোভা পায়। কোনো কোনো পটে দেবীর মাথায় ওড়িশার ঐতিহ্যবাহী চন্দ্র-সূর্য গহনা দেখা যায়। দেবী সাধারণত রক্তাম্বরা। এছাড়াও কমলা, নীল, সবুজ রঙের কাপড়ে তাঁকে কোনো কোনো পটে দেখা যায়। দেবীর বাহন পুরুষ সিংহের গাত্রবর্ণ সাদা ও তার বাহুতে অলংকার শোভা পায়। ওড়িশার অষ্টভুজা দুর্গা দেবীর পটে দেবী সৌম্যমূর্তি। অনেক অষ্টভুজা দুর্গা পটে দেবীর দুপাশে জয়া ও বিজয়া দেবীকে চামর ব্যঞ্জন করেন। আবার কোনো কোনো পটে দেবী দুর্গা তাঁর অষ্টসখী পরিবৃত অবস্থায় থাকেন।
সপরিবার দুর্গা পট [Goddess Durga]
ওড়িশায় শারদীয় দুর্গোৎসবের সময়ে একক দুর্গা দেবীর পূজার প্রচলন রয়েছে। বঙ্গদেশে সপরিবারে দুর্গা পূজা গ্ৰহণ করেন। বঙ্গে একক দুর্গা মূর্তি একেবারেই নেই তা নয়। বঙ্গের প্রাচীন সতীপীঠ বক্রেশ্বরে দেবী মহিষাসুরমর্দিনী রূপে একক বিগ্ৰহে পূজা গ্ৰহণ করেন। বঙ্গদেশের প্রভাবে ওড়িশায় শারদীয় দুর্গোৎসবের সময়ে কয়েকটি অঞ্চলে সপরিবারে দুর্গা দেবীর পূজার আয়োজন হয়। দেবীর সপরিবার পটচিত্রে উপস্থিত থাকেন দেবীর দুই পুত্র – গণেশ ও কার্তিক, দুই কন্যা – লক্ষ্মী ও সরস্বতী। বাংলার সপরিবার দুর্গাপটের থেকে ওড়িশার সপরিবার দুর্গাপটের পার্থক্য অনেকগুলি। দেবীর সপরিবার পটচিত্রে লক্ষ্মীদেবী শ্রীমন্দিরের শ্রীদেবীর অনুরূপ। এখানে দেবী লক্ষ্মী চতুর্ভুজা। সরস্বতী দেবীও এখানে চতুর্ভুজা। সপরিবার দুর্গাপটে লক্ষ্মী ও সরস্বতী দেবীর কপালেও দেবী দুর্গার মতো তৃতীয় নয়ন দেখা যায়। এই পটে ত্রিদেবী ত্রিগুণের প্রতীক। কোনো কোনো মতে সপরিবার দুর্গার পটচিত্রে দেবী সরস্বতী ও দেবী লক্ষ্মী সাক্ষাৎ দুর্গার অংশ বা সখী। সপরিবার দুর্গাপটে গণেশ ও কার্তিক উপস্থিত থাকেন। গণেশ ও কার্তিকের কপালেও তৃতীয় নয়ন দেখা যায়। এখানে গণেশ ও কার্তিক পুর্ণবয়স্ক যুবক। কোনো কোনো পটে গণেশের পঞ্চমুখ ও কার্তিকের ষড়ানন দেখা যায়। এই পটে গণেশ ও কার্তিকেরও চতুর্ভুজ দেখা যায়। সপরিবার দুর্গাপটে দেবী দুর্গার বাহন সিংহ, লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা, সরস্বতীর বাহন রাজহংস, গণেশের বাহন ইঁদুর ও কার্তিকের বাহন ময়ূরকে দেখা যায়। এছাড়া শ্রীমন্দিরের শ্রীদেবীর অনুসঙ্গবাহী গজরাজদের চিত্রও কোনো কোনো পটে আঁকা থাকে। বলাবাহুল্য, দুর্গা দেবীর সপরিবার পটচিত্র ওড়িশায় বহুল প্রচলিত হয়নি। ওড়িশায় আরেক রকমের সপরিবার দুর্গা পট দেখা যায়। এই রকমের পটে দেবী দুর্গা ও শিব কৈলাসে আনন্দরত। এই পটে দেবীর হাতে ত্রিশূল বা অন্য অস্ত্র দেখা যায় না। তাঁদের কোলে শিশু গণেশ ও কার্তিক খেলা করেন। এই রকমের পটে লক্ষ্মী ও সরস্বতী অনুপস্থিত। অনেক পটেই শিবের বাহন নন্দী ও দেবীর বাহন সিংহকে দেখা যায়। তবে এই রকমের পটগুলিকে সাধারণত শিবের পট বলা হয়।
চণ্ডী-উক্ত অষ্টমাতৃকা পরিবৃতা দেবী দুর্গা পট [Goddess Durga]
মার্কণ্ডেয় পুরাণের অন্তর্গত শ্রীশ্রীচণ্ডী অনুসারে দেবী দুর্গা রণচণ্ডী মূর্তিতে সংগ্ৰামে রত হলে তাঁর সঙ্গে সহযোদ্ধার পদ অলংকৃত করেন অষ্টমাতৃকা শক্তি। এঁরা দেবী দুর্গারই কায়ব্যূহ। অষ্টমাতৃকাশক্তি হলেন – ব্রহ্মাণী, বৈষ্ণবী, মাহেশ্বরী, ঐন্দ্রী, কৌমারী, বারাহী, নৃসিংহী ও চামুণ্ডা। এঁরা প্রত্যেকেই রুদ্ররূপা ও প্রচণ্ডা। একমাত্র চামুণ্ডা দেবী কোনো পুরুষ দেবতার প্রত্যক্ষ শক্তি নন। অষ্টমাতৃকাশক্তি সংলগ্ন পুরুষ দেবতারা হলেন যথাক্রমে – ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর, ইন্দ্র, কুমার, বরাহ, নৃসিংহ। পুরুষ দেবতার অনুরূপ গাত্রবর্ণ, বাহন ও অস্ত্র মাতৃকা দেবীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়। অষ্টমাতৃকা পরিবৃতা দেবী দুর্গার পটচিত্রে সাধারণত দেবী দুর্গা থাকেন কেন্দ্রে। তাঁর দুপাশে অবস্থান করেন জয়া ও বিজয়া। দুর্গা দেবীর [Goddess Durga] মাথার দিকের চারটি ব্লকে চারজন মাতৃকাশক্তি ও নিচের দিকের ব্লকে অন্য চারজন মাতৃকাশক্তিকে দেখা যায়। আবার কোনো কোনো পটে জয়া ও বিজয়া অনুপস্থিত থাকেন। সেক্ষেত্রে দেবীর মাথার দিকের তিনটি ব্লকে তিনজন মাতৃকাশক্তি, দেবীর দুপাশের দুটি ব্লকে দুজন মাতৃকাশক্তি ও দেবীর নিচের তিনটি ব্লকে বাকি তিনজন মাতৃকাশক্তি থাকেন। অষ্টমাতৃকা পরিবৃতা দেবী দুর্গা পটের অনুসরণে দেবী দুর্গাকে ঘিরে দশমহাবিদ্যার পটও পাওয়া যায়। তবে দুর্গা সংযুক্ত দশমহাবিদ্যা পট সংখ্যায় খুবই কম পাওয়া যায়। কারণ বিষ্ণুর দশাবতার পটের মতো পৃথকভাবে মহামায়া দেবীর দশমহাবিদ্যা পটের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।
জয়া-বিজয়া সহ দেবী দুর্গা [Goddess Durga]
পুরাণ অনুসারে দেবী দুর্গার নিত্যসঙ্গী জয়া ও বিজয়া। দেবীর সর্বাবস্থায় তাঁরা দুজন দেবীকে সবরকম সেবায় তুষ্ট রাখেন। এমনকি যুদ্ধেও তাঁরা ভগবতীর সহযোদ্ধা। জয়া ও বিজয়া দেবীরই অংশজাত। ওড়িশার মহিষমর্দিনী দুর্গা পট, দশভুজা দুর্গা পট, অষ্টভুজা দুর্গা পট, অষ্টমাতৃকা পরিবৃতা দুর্গা পট, দুর্গামাধব পট, বিমলা-দুর্গা পট ও সুভদ্রা দুর্গা পট – প্রায় সব রকমের দুর্গা পটেই জয়া ও বিজয়ার উপস্থিতি পটের বৈচিত্র্য নির্মাণে সাহায্য করে। পুরাণে জয়া ও বিজয়াকে দেবীর সহযোদ্ধা বলা হলেও ওড়িশার ঐতিহ্যবাহী পটচিত্রশিল্পে তাঁরা মূলত দেবীর সেবিকা। সমগ্র ওড়িশার দেবীর এই দুই সঙ্গীকে নিয়েও অজস্র কিংবদন্তি রয়েছে। কথিত জয়া ও বিজয়া দুই সখী সবসময় দেবীর সহগমনাগমন করেন।
দুর্গামাধব পটে দু্র্গা দেবী [Goddess Durga]
দুর্গামাধব-প্রকরণটি ওড়িশার একেবারে খাঁটি নিজস্ব নির্মাণ। দেবীপক্ষে দুর্গা দেবীর [Goddess Durga] দক্ষিণে জগন্নাথ অবস্থান গ্ৰহণ করে দুর্গা দেবীর পূজায় তিনিও অংশগ্রহণ করেন। কোনো কোনো মতে এই প্রকরণের পিছনে রয়েছে জগন্নাথের শক্তি রূপে দুর্গার পূজার ইতিহাস। শাক্ত ও শৈবতত্ত্বানুসারে জগন্নাথ সাক্ষাৎ বিমলা দেবীর ভৈরব তথা শিব। শাস্ত্রবচনানুসারে, “যো হরিঃ স হরঃ সাক্ষাৎ যো হরঃ স হরিঃ সদা।” অর্থাৎ হরি ও হর অভেদ। জগন্নাথের মধ্যে শিবের শিবত্ব ও বিষ্ণুর বিষ্ণুত্ব উভয়েই রয়েছে। তাই ওড়িশায় দুর্গামাধব পূজার রীতি বিসদৃশ নয়। পুরীতে দুর্গামাধবের মন্দিরও রয়েছে। দুর্গামাধব ওড়িশায় একটি জনপ্রিয় কাল্ট (cult)। দুর্গামাধবের জনপ্রিয়তা থেকেই ওড়িশার পটচিত্রে দুর্গামাধব বিগ্রহ এসেছে। দুর্গামাধব পটে জগন্নাথের বামভাগে সিংহবাহিনী দুর্গা অবস্থান গ্ৰহণ করেন। দুর্গামাধব পটে জগন্নাথের গাত্রবর্ণ কালো। পুরীর জগন্নাথদেবের অবয়ব অনুসারে যেভাবে ওড়িশার ঐতিহ্যবাহী পটচিত্রশিল্পে জগন্নাথকে আঁকা হয় সেভাবেই তাঁকে দুর্গামাধব পটে দেখা যায়। কোনো কোনো শিল্পী পটের বৈচিত্র্য নির্মাণে জগন্নাথের আসন রূপে পদ্মচিহ্নিত রত্নবেদিকার আয়োজন করেন। দুর্গামাধব পটচিত্রে দেবী দুর্গা সাধারণত চতুর্ভুজা। দেবীর ওপরের দুই হাতে থাকে – শঙ্খ ও চক্র। দেবী সামনের দুই হাতে ত্রিশূল ধারণ করে অসুরের সংহার করেন। তিনি কখনও সিংহবাহিনী, কখনও পদ্মের ওপর দণ্ডায়মান। দেবীর গাত্রবর্ণ উজ্জ্বল হলুদ আবার কখনও অরুণাভা। দেবী রক্তাম্বরা। দুর্গামাধব পটে জগন্নাথ ও দুর্গা উভয়ের গাত্রেই ওড়িশার ঐতিহ্যবাহী চন্দ্র-সূর্য গহনা সহ আরও অনেক ঐতিহ্যবাহী অলঙ্কার দেখা যায়। দুর্গামাধব পটে দেবীর ডানদিকে বিরাজ করেন গণেশ। আদ্যাশক্তির মাতৃরূপের দ্যোতক গণেশজননী ভাবকল্পটি।
বিমলা-দুর্গা [Goddess Durga]
দেবী বিমলা শাক্তমতে জগন্নাথের মহাশক্তি। সতীর দেহাংশ যেখানে যেখানে পড়েছে সেখানেই একটি করে সতীপীঠ গড়ে উঠেছে। পুরুষোত্তমধাম শ্রীক্ষেত্রও একটি সতীপীঠ। এখানে দেবী সতীর নাভিপদ্ম রক্ষিত হয়েছে। এই শক্তিপীঠের পীঠনায়ক ভগবান জগন্নাথ দেব ও পীঠনায়িকা ভগবতী বিমলা দেবী। বিমলা দেবীকে সামনে থেকে রক্ষা করেন জগন্নাথ। পীঠনির্ণয় তন্ত্রানুসারে, “উৎকলে নাভিদেশশ্চ বিরাজক্ষেত্রমুচ্চতে। বিমলা সা মহাদেবী জগন্নাথস্তু ভৈরব।।” অর্থাৎ, শ্রীক্ষেত্রে দেবীর নাভি ও পুরুষোত্তমের নাভি উভয়ই রক্ষিত হয়েছে। শ্রীমন্দিরে দেবী বিমলার শাক্তাচারে পূজা হয়। এমনকি শারদীয় দুর্গোৎসবের নবরাত্রিতে বিশেষ করে সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে বিশেষ পূজাও হয়। অন্য সময়ে অনুকল্পে পঞ্চমকার সাধনে দেবীকে তৃপ্ত করা হলেও এই সময় নির্দিষ্ট নিয়মেই সাধন করা হয়। এই শাক্ত-আচার পালিত হয় খুব গুহ্য পথে। এমনকি বলিপ্রিয়া বিমলাকে পুরুষ ছাগবলিও উৎসর্গ করা হয়। শ্রীমন্দিরে শাক্তধর্মের গুপ্ত প্রাবল্য রয়েছে। প্রতিদিন জগন্নাথের প্রসাদ বিমলা দেবীকে উৎসর্গ করার পরই তা মহাপ্রসাদে পরিণত হয়। বিমলার সংস্পর্শে আসার পরই মহাপ্রসাদের ওপর জনসাধারণের অধিকার জন্মায়। জগন্নাথ-সংস্কৃতিতে বিমলা সাক্ষাৎ আদ্যাশক্তি মহামায়া। তিনিই দুর্গা, তিনিই কালী, তিনি জগদ্ধাত্রী হয়েছেন। এমনকি সুভদ্রা দেবীও তাঁর অংশ। বিমলা-দুর্গা পটে দেবী বিমলা চতুর্ভুজা। তাঁর চার হাতে যথাক্রমে জপমালা, অমৃতকুম্ভ, নাগপাশ ও বরমুদ্রা থাকে। দেবীর এই অবয়বের সঙ্গে শ্রীমন্দিরের দেবী বিমলার সম্পূর্ণ মিল রয়েছে। বিমলা-দুর্গা পটে দেবীর গাত্রবর্ণ তপ্ত কাঞ্চনের মতো উজ্জ্বল। তিনি রক্তাম্বরা ও সালঙ্করা। দেবীর বাহন সিংহরাজকে কোনো কোনো পটে দেখা যায়। অনেক পটে বিমলা দেবীর দুদিকে জয়া ও বিজয়া থাকেন। আবার অনেক পটে দেখা যায় দেবীকে ঘিরে অষ্টসখী সেবারত। তবে শ্রীক্ষেত্রে দেবীর উগ্ৰরূপের যে পরিকল্পনা রয়েছে তা বিমলা-দুর্গা পটে সেভাবে দেখা যায় না। এখানে দেবী সাধারণত মাতৃরূপা সৌম্যতরা।
সুভদ্রা-দুর্গা [Goddess Durga]
স্কন্দপুরাণ অনুসারে, জগৎ সংসারের সমস্ত পুরুষই আদিপুরুষ জগন্নাথ ও সমস্ত নারীই আদ্যাশক্তি জগন্নাথের শক্তি দেবী। এই ব্যাপ্ত অর্থে সুভদ্রা, দুর্গা, লক্ষ্মী, ভূদেবী সকলেই এক ও অভিন্ন। এই ভাবনা থেকেই জন্ম নিয়েছে সুভদ্রা-দুর্গার অভেদ তত্ত্ব। তবে তত্ত্ব থাকলে সুভদ্রা-দুর্গা পট বহুল প্রচলিত নয়। বরং সুভদ্রা দেবীর সঙ্গে মহাবিদ্যা ভুবনেশ্বরীকে এক করে তোলার চেষ্টা হয়েছে। কিছু প্রাচীন পটচিত্রে সুভদ্রা দেবীর মুখাবয়ব সংযুক্ত দ্বিভুজা দেবী দেখা যায়। সুভদ্রার একটি হাতে ত্রিশূল অন্য হাতে লাল পদ্ম। সুভদ্রা-দুর্গা পটে দেবীর চূড়া থেকে পদকমল পর্যন্ত পূর্ণাবয়ব দেখা যায়। এই পটে সাধারণত দেবী গাঢ় রক্তাম্বরা।
হর-মনমোহিনী দুর্গা [Goddess Durga]
দুর্গা দেবীকে [Goddess Durga] আদ্যাশক্তির পার্বতী রূপের সঙ্গে এক করে দিয়েছে দেবীভাগবত। দুর্গাকে কেন্দ্র করে এই ধারণা প্রসারিত হয়েছে ওড়িশা ও বঙ্গদেশে। ওড়িশার কোনো কোনো পটে দেখা যায় দুর্গা দেবী “শিব সঙ্গে সদা রঙ্গে আনন্দে মগনা”। এই রকমের পটে দেবী হরজায়া রূপে উপস্থিত। দুর্গার মাধুর্যলীলার দ্যোতক হর-মনমোহিনী দুর্গা পট। একই ভাবধারায় পাওয়া যায় নটরাজের সঙ্গে নৃত্যরত দুর্গার পট ও বীণাধর শিবের শ্রোতারূপে দেবীর পট। অবশ্য এগুলি অপেক্ষাকৃত আধুনিক সময়ের সংযোজন। হর-মনমোহিনী দুর্গা পটে শিবের গাত্রবর্ণ সাদা। শিবের গলায় সাপ ও রুদ্রাক্ষ, মাথায় জটা, কটিতে কাপড়ের ওপরে বাঘের ছাল দেখা যায়। শিব সাধারণত চতুর্ভুজ। তাঁর চার হাতে যথাক্রমে ত্রিশূল, ডমরু, কুঠার ও মৃগরূপ অস্ত্র থাকে। দেবী এখানে কাঞ্চনবর্ণা, সালঙ্কারা, রক্তাম্বরা, পদ্মধারিনী। শিবের বাহন নন্দী ও দেবীর বাহন সিংহ কোনো কোনো পটে দেখা যায়। শিব-শক্তির একান্ত বিহাররত রূপ এই পটে ধরা থাকে। তাই সাধারণত এই পটে জয়া-বিজয়া বা অন্য কোনো চরিত্র উপস্থিত থাকেন না। আবার তাঁদের দাম্পত্যের পরিচায়ক পটে গণেশ ও কার্তিকের উপস্থিতি দেখা যায়।
অর্ধনারীশ্বর পটে দুর্গা [Goddess Durga]
পৌরাণিক তত্ত্ব অনুযায়ী, শিব ও শক্তি অভেদ। একই চিন্ময় সত্তার অর্ধেক পুরুষ, অর্ধেক প্রকৃতি। সাধারণভাবে বলা যায়, শিবের অর্ধাঙ্গ যেমন শক্তির, শক্তির অর্ধাঙ্গও শিবের। অর্ধনারীশ্বর পটে সাধারণত শিবের পট হিসেবে গণ্য করা হলেও এক্ষেত্রে আমরা দুর্গার পট হিসেবেও দেখতে পারি। কারণ এই ধরনের পটে শিব যতটা গুরুত্ব পান, ঠিক ততটাই গুরুত্ব পান দুর্গা। অর্ধনারীশ্বর পটে চৈতন্যরূপ একই দেহের অর্ধেকটা শিব, অর্ধেকটা শক্তি। সাধারণত দেহের ডান দিকে শিব ও বাঁদিকে দুর্গা অবস্থান করেন। এই বিগ্ৰহ চতুর্ভুজ। শিবের অংশে তাঁকে নাগহার, রুদ্রাক্ষ, ব্যাঘ্রাম্বর, শ্বেতাম্বরে দেখা যায়। শিবের মাথায় জটা থাকে। শিবের দুই হাতে মূলত ত্রিশূল ও ডমরু থাকে। শিব চন্দ্রকে ধারণ করেন। আবার কয়েকটি পটে শিব-বিষ্ণুর একাত্ম তৈরির জন্য ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে শিবের হাতে সুদর্শনও দেখা যায়। এখানেও শিবের গাত্রবর্ণ সাদা। অন্যদিকে দুর্গা দেবীর অংশে তাঁকে বনমালা, পুষ্পলতা, স্বর্ণগহনা, রক্তাম্বরে শোভিত দেখা যায়। তাঁর মাথায় থাকে সোনার মুকুট। দেবীর দুই হাতে থাকে পদ্ম ও অসি।
অভিজিৎ পাল | Avijit Pal
New Bengali Article 2023 | অঘোষিত প্রতিযোগিতার ফল
New Bengali Article 2023 | অযোধ্যা গ্রামে প্রাচীন জমিদারদের আশ্চর্য স্থাপত্য নিদর্শন
New Bengali Article 2023 | প্রেমাবতার ঠাকুর হরনাথ ও সহধর্মিণী কুসুমকুমারী কথা
New Bengali Article 2023 | স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন
ওড়িশার পটচিত্রে দেবী দুর্গা | চালচিত্র | পট্টাচিত্রা | বাংলার পটচিত্র শিল্পে দেবী দুর্গা | দুর্গার বাবার নাম কি | দেবী দুর্গার দশ হাত কেন | দেবী দুর্গার বাহন সিংহের নাম কি | দেবী দুর্গার বিভিন্ন রূপ | দুর্গার নাম | দুর্গার মার নাম কি | দেবী দুর্গার ১০৮ নাম | ওড়িশার পটচিত্র | অর্ধনারীশ্বর পটে দুর্গা | হর-মনমোহিনী দুর্গা | সুভদ্রা-দুর্গা | বিমলা-দুর্গা | দুর্গামাধব পটে দু্র্গা দেবী | জয়া-বিজয়া সহ দেবী দুর্গা | সপরিবার দুর্গা পট | মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা দেবী | সিংহবাহিনী দুর্গা পট | অষ্টভুজা দুর্গা দেবীর পট | সপরিবার দুর্গা পট | বাংলা প্রবন্ধ | বাংলার লেখক | প্রবন্ধ ও প্রাবন্ধিক | সেরা প্রবন্ধ ২০২২ | শব্দদ্বীপ | শব্দদ্বীপের লেখক | বাংলা ম্যাগাজিন | ম্যাগাজিন পত্রিকা | শব্দদ্বীপ ম্যাগাজিন
bengali article writing competition | writing competition malaysia | writing competition london | writing competition hong kong | writing competition game | writing competition essay | writing competition australia | writing competition prizes | writing competition for students | writing competition 2022 | writing competitions nz | writing competitions ireland | writing competitions in africa 2022 | writing competitions for high school students | writing competitions for teens | writing competitions australia 2022 | writing competitions 2022 | writing competitions uk | bengali article writing | bangla news article | bengali article rewriter | article writing | bengali article writing ai | bengali article writing app | bengali article writing book | bengali article writing bot | bengali article writing description | bengali article writing example | article writing examples for students | article writing for class 8 | article writing for class 9 | bengali article writing format | article writing gcse | bengali article writing generator | article writing global warming | article writing igcse | article writing in english | bengali article writing jobs | article writing jobs for students | article writing jobs work from home | article writing lesson plan | article writing on child labour | article writing on global warming | article writing pdf | article writing practice | article writing topics | trending topics for article writing 2022 | what is article writing | content writing trends 2022 | content writing topics 2022 | Bangla Prabandha | Probondho | Definite Article | Article Writer | Short Article | Long Article | Bangla kobita | Kabitaguccha 2022 | Galpoguccha | Galpo | Bangla Galpo | Bengali Story | Bengali Article | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Shabdodweep Founder