Bengali Story Demand – Suvasri Roy
উল্টোপাল্টা – শুভশ্রী রায়
(১)
মারাত্মক হাসি পাচ্ছে, বুঝলেন মশাই?! বেয়ারা, অদম্য হাসি। অথচ একটু আগেই সাংঘাতিক রাগ হচ্ছিল। নির্দিষ্ট কারোর ওপরে নয়, পরিস্থিতির ওপরে, নিজের কপালের ওপরে। যে ভদ্রমহিলা আমাদের বাড়িতে ঘরঝাঁট দেয় এবং রুটি করে দেয়, সে পনেরো দিন আসছে না। পারিবারিক বিপর্যয় ঘটলে কেনই বা আসবে? আমিই তাকে বলে দিয়েছি, যখন পারবে, তখন আসবে।
এ দিকে আমার খাওয়াদাওয়া নিয়ে অসুবিধা হচ্ছে এমনও নয়। দু’ দিন ভাত, এক দিন ম্যাগি এ ভাবে চলে যাচ্ছে। বেরোলে ইডলিফিডলিও কিনে আনি। মুশকিলটা হ’চ্ছে ঘর পরিষ্কার নিয়ে। ডান হাঁটুর অনড় ব্যথার জন্য এমনিতেই ভালো করে ঘর ঝাঁট দিতে পারি না। তার ওপর আমার দুটো খরগোশ আছে তো, তারা যা যা করে সবটা আমি ভালো করে সাফ করতে পারছি না। অবশ্য চেষ্টা করছি।
বাসন মাজতেই হয়। সকালে ডিম ভেজে রেখেছি। বেলা বারোটা বাজে। এখনো অবধি সেটা খাওয়া হয়নি। দেখি কখন খাই। রান্নার মধ্যে যাব না আজ। হোম ডেলিভারি এক টুকরো মাছ, ফুলকপির তরকারি আর ভাত দিয়ে যাবে। ওদের রান্নাটা ভালো।
এত হাসি পাচ্ছে কেন, সেটা এবার বলি। আমি মাঝেমাঝেই অপরাধ ও তদন্ত নিয়ে একটা জনপ্রিয় সিরিয়াল মোবাইলে দেখে নিই। ক্রাইম অ্যালার্ট নামে সেই সিরিয়ালের একেকটা পর্বে একেকটা সিনিয়র ইনস্পেক্টর তদন্ত করে। ক্রাইম অ্যালার্ট সিরিয়ালে রঞ্জিত কিছু একটা নামে গাবলুগুবলু একটা সিনিয়র ইনস্পেক্টর আছে। গাবলুগুবলু কিন্তু স্মার্ট এবং লম্বা, চেহারায় বিহারী জিন স্পষ্ট ও ভালো অভিনেতা এই লোকটাকে আমার বেশ লাগে। রঞ্জিত “কিছু একটা” বলে উল্লেখ করছি কারণ পদবীটা মাথায় থাকে না।
ডাইনিং টেবিলের ওপর পুরনো টেবিল ক্লথটা ছিঁড়েখুঁড়ে গেছে। কালকে সন্ধ্যায় বেরিয়ে একটা সস্তার টেবিল ক্লথ এনেছি। কমলা আমার প্রিয় রং কিন্তু কমলা পাইনি। সবুজের ওপর বড় বড় নীল ফুল দেওয়া একটা কিনেছি। ডাইনিং টেবিলটা পরিষ্কার করে নতুন এই ধ্যাবড়া সবুজ টেবিল ক্লথটা পাততে হবে। আজ নয় তো কাল পাততেই হ’বে। ও দিকে টেবিলটার নিচে অনেক ধুলো আর একটু একটু খরগোশের গুও ছড়িয়ে আছে।
এই ডাইনিং টেবিল ঘিরে বসে আমি আর রঞ্জিত কিছু একটা নামের সেই গাবলুগুবলু কিন্তু স্মার্ট বিহারী লোকটা কফি, কেক আর কবিরাজী কাটলেট খাচ্ছি – এমন একটা দৃশ্য সকাল থেকে আমার মাথায় আসছে এবং দমফাটা হাসি পাচ্ছে। আহা, কেমন হবে ব্যাপারটা! ধ্যাবড়া সবুজ জমির ওপর নীল ছাপ সত্তর টাকার টেবিল ক্লথ, তার ওপর দুটো কফির কাপ, চারপাঁচটা পেস্ট্রি; দুটো ফিশ কবিরাজী কাটলেট নিয়ে রঞ্জিত কিছু একটা এবং আমি বসে আছি। নিচে খরগোশের গু ছড়ানো। তার মধ্যেই আমরা গল্প করে যাচ্ছি। কল্পনা করে হাসি পায় না, বলুন?!
আমার বয়স পঞ্চাশ পেরিয়েছে। রঞ্জিত কিছু একটা আমার থেকে চার পাঁচ বছরের ছোট তো হ’বেই। তাতে কল্পনায় এক সঙ্গে কফি খেতে কী অসুবিধা?
(২)
আমার মা আগে গেছে, বাবা পরে। আমি একা থাকি। মা বাবা থাকলে থোড়াই খরগোশ রাখতে দিত! আমার মা সেই কবে অবসর নিয়েছিল। তার পর পনেরো বছর বেঁচে ছিল। মা ইস্কুলে পড়াত। গায়ে আঁচল জড়িয়ে ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাত বেরিয়ে যেত। তার অনেক পরে বাবা। বাবা একটা মাঝারি চাকরি করত। বাবার কাছে কাজকর্ম নিয়ে লোকজন আসত। বাড়ির নিভৃতি লাটে উঠত তবে লোক আসাটা ছিল বাবার কাছে একটা গর্বের ব্যাপার। একে তো মা বাড়ি থাকত না। তার ওপর লোকজন আসায় আমার লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটত কারণ ফ্ল্যাটটা ছোট। নানা প্রয়োজনে মহিলারাও আসত। কেউ কেউ অনেক ক্ষণ থাকত। কেউ কেউ তো পারলে থেকেই যায়! যেন তাদেরই বাড়ি। আর হ্যাঁ, চালাক পরিচারিকাও আসত।
মতলববাজ মেয়েরা খুব সহজে পুরুষদের দুর্বল জায়গাটা ধরে ফেলে। ফলে আমাদের হবিন রোডের ফ্ল্যাটে অনেক কিছু চলত। সব দেখতাম। তার আগেও ছোট্ট বয়স থেকে অনেক কিছু দেখেছি। ব্যাপার বোঝার পর থেকে আমার অসহ্য লাগত তবে মা বরাবর না জানার ভান করত।
একটু বড় হওয়ার পর মা-কে বলেছিলাম। মা শুনে ঠান্ডা গলায় বলেছিল- “পুরুষ মানুষের কোনো দোষ হয় না, এমন কী বিবাহিত পুরুষদেরও না।”
সেই সময়টায় আমরা থাকতাম হবিন রোডের কাছাকাছি সরকারি কোয়ার্টারে। তারপর এক সময় এখানে নিজেদের ফ্ল্যাটে চলে এলাম।
মা সব সময় গায়ে নরম শাড়ি জড়িয়ে থাকত। জ্ঞান হওয়ার পর থেকে দেখছি। মা হতদরিদ্র নিরন্ন পরিবারের মেয়ে ছিল। জীবনে কখনো ম্যাচিং ব্লাউজ পায়নি তাই একদম কৈশোর থেকে গায়ে আঁচল জড়ানোর অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল।
লোকের কাছে চেয়ে-চিন্তে মা ও তার ভাইবোনেরা মানুষ হয়েছে। মারাত্মক কষ্ট করে এম এ, বি এড পাশ করেছে। মা যখন এম এ পাশ করে গেছে সেই সময় পর্যন্ত মায়েদের ফার্ন রোডের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না। প্রাক-বিবাহ জীবনের ভয়াবহ দারিদ্র্য মায়ের মধ্যে একটা তীব্র হীনমন্যতার জন্ম দিয়েছিল। এই হীনমন্যতা কখনোই মা-কে ছেড়ে যায়নি। মায়ের মতে, বাবা মা-কে বিয়ে না করলে মায়ের বিয়েই হত না। এই কারণে বাবার কোনো দোষ মায়ের চোখে পড়ত না। তার ওপর বাবা মা ছিল সমবয়সী।
দুজনের অবিরত ঝগড়ার কারণ অবশ্য সেটা নয়। কারণটা ছিল বাবার দানবের মতো রাগ আর ঝগড়ুটে স্বভাব। তবে সামন্ততান্ত্রিক মানসিকতার লোকজন এটাকেই কারণ বলে মনে করত আর মজা পেত। হো’ক না কোনো স্কুলের ধুরন্ধর শিক্ষিকা বা যৌন আবেদনময়ী পরিচারিকা, মতলববাজ মেয়েমানুষেরাও মজা পেত। খালি খালি খোলাখুলি নষ্টামি। অন্তত এ ব্যাপারে মা কখনো বাবার সঙ্গে ঝগড়া করেনি।
বাবা অবশ্য যতটুকু সময় পারত, বাড়িতে ঝগড়া আর অশান্তি করত। সামান্য সামান্য কারণে আমাকে মারত। অনেক সময় মেয়েমানুষদের কাছে নিজের বীরত্ব দেখানোর জন্যও আমাকে মারত, বকত। একখানা নষ্ট সংসার ছিল বটে আমাদের! ধারাবাহিক অশান্তি দেখে এবং অনেক কিছু বুঝে বুঝেই তো ছোট্ট বয়স থেকে আমি অতিরিক্ত গম্ভীর।
হবিন রোডের সরকারি কোয়ার্টারের বাসিন্দা একটা লোক আমার সঙ্গে বদমাইশি করেছিল। শুনেটুনে মা ন্যাকড়ার মতন নরম শাড়িটা গায়ে আরো জড়িয়ে নিতে নিতে আমাকে বলেছিল- “বাবাকে বোলো না যেন!”
পলাশ নামে সেই বজ্জাত, লম্পট লোকটা গান গাইত। আবার গিটারও বাজাত। লোকটার মেয়েঘটিত দুর্নাম ছিল তবু গানটান করত বলে ক্ষুদ্র গণ্ডীর মধ্যে অনেকে শিল্পী বলে খাতিরও করত। মা মুগ্ধ হয়ে সেই লোকটার গান শুনত। মায়ের থেকে পলাশ অনেক ছোটো। লোকটার লাম্পট্য মায়ের চোখে পড়ত না। এমন কী, লোকটা তার নয়-দশ বছরের মেয়ের সঙ্গে অসভ্যতা করেছে জেনেও মায়ের মুগ্ধতা কাটেনি। ট্যারা, শয়তান পলাশ! লোকটা বিয়ে করার পর মায়ের মুগ্ধতা একটু একটু করে কমে গিয়েছিল।
(৩)
এবার স্নান টান করে নেব। ঘর গোছাতে হবে। ক্রাইম অ্যালার্টে রঞ্জিত দুই ধর্ষণকারীকে হাজতে নিয়ে এসে খুব পেটাচ্ছে। এ দুটো নির্মম অপরাধী একটা মেয়ের ওপর চরম অত্যাচার করে তারপর খুন করেছে। মেয়েটার চোখ দুটোও উপড়ে নিয়েছে। চূড়ান্ত বর্বরতা! রঞ্জিত একটা শয়তানের মাথা ধরে দেওয়ালে ঠুকে দিচ্ছে আর বলছে- “আমাকে আইন মেনে চলতে হয় তাই তোদের দু’ জনকে মেরে ফেলতে পারছি না। তবে আমার কনস্টেবলরা তোদের দেখে নেবে। তারপর তোদেরকে আদালতে তুলব আমরা।” কথা শেষ করে লাঠিধারী কনস্টেবলদের দিকে ইশারা করে সে হাজত থেকে বেরিয়ে এল।
আপাতত ক্রাইম অ্যালার্ট দেখা শেষ। এবার স্নানটান করে নেব। তার আগে একটু ঘর গোছাতে হবে। আমার আবার ধুলোয় প্রবল অ্যালার্জি। তাও যতটা পারি ঘর পরিষ্কার করতে হ’বে। এরই মধ্যে কাঁচের একটা শোকেসের তলা থেকে একটু বেরিয়ে থাকা মায়ের একটা পুরনো নরম শাড়ি ধরে দুই খরগোশ টানাটানি করছে। ওদের দিদা’র শাড়ির ওপর ওদেরই তো অধিকার বেশি! আমি তো শাড়ি পরি না। দেখো কাণ্ড, শাড়িটাকে পুরো বার করতে পারছে না ওরা।
মায়ের ন্যাকড়ার মতন শাড়িটা দেখে হঠাৎ আমার প্রচণ্ড রাগ হয়ে গেল। আমার জন্মের জন্য আমি দায়ী নই অথচ জ্ঞান হওয়ার পর নিজেদের সংসারে কত ধরণের যন্ত্রণাই না পেয়েছি। কত কত খারাপ দেখতে বাধ্য হয়েছি। বাইরের জগৎ থেকেও কম খারাপ অভিজ্ঞতা হয়নি তবে সেটার কথা ছেড়েই দিলাম। জীবন ভর্তি এই কষ্ট নিয়ে করবটা কী? নিজের এই নিরানন্দ জন্ম, নিজের কষ্টকর অস্তিত্বের জন্য রাগ, বাবা-মায়ের ওপর শৈশব থেকে জমে থাকা সমস্ত আক্রোশ ফেটে পড়তে চাইছে। ওই বেচারা কাপড়টাকেই নিজের অসহনীয় জীবনের প্রতীক বলে মনে হচ্ছে এখন। শাড়িটাকে টেনে বার করে ওদের দিয়ে দিলাম। “নে এটা তোদের। কেটেকুটে যত পারিস শেষ করে দে।”
জট – শুভশ্রী রায়
বৈশিষ্ট্যবর্জিত এক ভোরবেলায় ইমলি গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়ল। তাই নিয়ে বসতিতে হইহই। পুলিস এল, বডি নামাল, জমে থাকা ভিড়টাকে খানিক তড়পানিও দিল। ডুকরে কাঁদতে থাকা ইমলি’র মাকে বসতির মেয়েরা সান্ত্বনা দিচ্ছিল। বাবা-দাদা পুলিসের সঙ্গে সেঁটে রয়েছে। তাদের দেখে মনে হচ্ছে, পারলে ইমলির মৃত শরীরটাকেই খুন করে দিত। গেলি তো গেলি নিজের ফ্যামিলিকে এইভাবে ফাঁসিয়ে দিয়ে গেলি! দাদা ভিকি যাকে ঘরে আনবে বলে ঠিক করে রেখেছে, সেই ছমকছল্লোর সেয়ানা বাবা-মা এবার পিছিয়ে না যায়! দুই দাদার পরে একমাত্র মেয়ে, বেশ কিছু পাওয়া যেত। সব না ফস্কে যায়। ভিকি দাঁতে দাঁত ঘষল, কুত্তি! পরেশান করতে এসেছিল, ডাকা ডেলে চলে গেল। বহিন না শত্তুর!
ইমলির মা বিহারী, বাবা বাঙালি। তার বাইশ তেইশ বছর বয়স, মুখটা খুব কালো, বাকি শরীরের তুলনায় কালো। অনেকগুলো পাত্রপক্ষ “না” বলে যাওয়ার পর মা ইদানীং গজগজ করতে শুরু করেছিল, খালি নিজের কপালকে দোষ দিত। ছেলেটা লোহালক্কড়ের ব্যবসা করে রোজগার করছে, নিজেই নিজের রিস্তা ঠিক করে ফেলেছে। এখন যদি বাবা-মা মেয়ের বিয়ে না দিতে পারে তাহলে বৌকে এনে তুলবে কোথায়? আলাদা বাসা করে থাকার মুরোদ নেই অথচ বিয়ে করার শখ কত! বোনের বিয়েটা হতে দে’না বাপু। মেয়েটাও কেন যে আরেকটু গোরী হল না! তাহলে বিয়ে দিতে এত তকলিফ্ হ’ত না।
ও দিকে দেখো, ছেলে ভিকি কেমন গোরা আর খুবসুরত। না হয়, লেখাপড়াটাই জানে না। জিনস আর পিলা শার্ট পরে যখন বড় রাস্তা দিয়ে হাঁটে, কে বলবে ভদ্র ঘরের ছেলে নয়!
বাবা চুপ করে সব শুনত এবং আরো উদাস হয়ে যেত। বাবার সকলসুরত মন্দ নয়। গরীবের মেয়ে হলে কি হবে, মা সিলিয়া নিজে রীতিমতো ফর্সা। কঠোর পরিশ্রম করতে হয় বলে রঙ পুড়ে গেছে।
ইমলি নাইন ক্লাস অবধি পড়েছে। তাদের সমাজে মন্দ পাত্রী নয়। টেলারিং কোর্স পুরো না করলেও শাড়িতে ফলস বসিয়ে টুকটাক রোজগারও করছিল গত ছ’ সাত বছর। একদম নিজের ছোটো সংসারের বড় শখ হয়েছিল। হ’ল না! দিনরাত মায়ের আক্ষেপ আর সহ্য করতে পারছিল না সে। কিছু লিখে যায়নি অবশ্য। কাগজ-পেনের সঙ্গে কত যেন কারবার ছিল! ওর মোবাইল ফোনটা অবশ্য নিয়ে গেছে পুলিস। কে জানে ফেরত দেবে কিনা! পুলিসকে হাড়ে হাড়ে চেনে এসব জায়গার বাসিন্দারা।
ইদানীং ইমলির চুলে জট পড়ছিল। আঁচড়াতে ইচ্ছা করত না। গত হপ্তায় বিকেল বেলায় এক দিন সহেলিদের সঙ্গে কথাবার্তা হচ্ছিল। “জট ছাড়ানোর একটা তেল তো কিনলে পারিস, ওই যে লিবিয়ন না কি বলে।” শুনে ইমলি ঠোঁট উল্টে বলেছিল, পয়সা নেই। ওর দাদার বন্ধু প্রীত সে কথা শুনে ফেলে।
প্রীত অটো চালায়, ভালোই কামায়। ছেলেটা ভালো। নেশা-ভাং করে না। ভীষণ দয়ামায়া আছে। কখনোসখনো ইমলির দিকে নরম চোখে তাকাত বইকি তবে ইশারাইঙ্গিত করেনি। বন্ধুর বোনের লিবিয়ন কেনার পয়সা নেই শুনে তার ভারি মায়া হয়েছিল। একটা লিবিয়ন কিনে রেখেছিল প্রীত। কিন্তু দেওয়ার মওকা পায়নি। শুক্রবার কিনে রেখেছিল। শনি, রবি, সোম তিনটে দিন চলে গেল। দেওয়ার মওকা এল না। দুম করে বন্ধুর ঘরে ঢুকে তার বাবা-মায়ের সামনে তো আর দেওয়া যায় না। বন্ধুর সামনে তো নয়ই। ইমলির বডি নিয়ে যাওয়ার সময় প্রীতের চোখ ভিজে গিয়েছে। নিজেকে ডরপোক বলে মনে হচ্ছে তার। কেন যে হিম্মত করে উঠতে পারল না?
মঙ্গলবার ইমলি ঝুলে পড়ল। তার বিয়ে হচ্ছিল না। মা গজগজ করত, কখনো কখনো শাপশাপান্ত। মেয়ের বিয়ে দিতে পারছে না বলে বসতির অনেকে এসে তাদের সবাইকে খোঁচা দিয়ে যেত। শেষ যে পাত্রপক্ষ এসেছিল তারা মেয়ে দেখে পছন্দ না করলেও সাফ কথাবার্তা বলেছিল। ছেলের বাড়ী মানিকতলার ভেতরে আধা বসতিতে। ক্যাটারিংএর ব্যবসা শুরু করেছে। লাখ দুয়েক দহেজ চেয়েছিল।বাবা মায়ের অত জমানো নেই। মা বলেছিল- “কিসি তরহা এক লাখ দিতে পারি।” তা পাত্রের বাবা কিছুতেই রাজী হ’ল না। বলল, “মেয়ে সুন্দর নয়। ছেলেরও মোটেই পছন্দ নয়। তবে আমরা চেহারার খুঁত ধরব না। দু’ লাখ টাকা পেলে ছেলেও হাসতে হাসতে রাজী হয়ে যাবে। ভেবে দেখুন। কি ঠিক করলেন জানাতে দেরি করবেন না যেন।
সেদিন ওরা চলে যাওয়ার পরে মা খুব কেঁদেছিল। তারপর জোরে জোরে বলে ফেলেছিল, ইতনি বদসুরত লেড়কি না জানে ক্যায়সে হামারে ঘর পয়দা হো গ্যয়ি। হে বজরঙ্গবলী, মুঝে উঠালো। মায়ের পাশে দাদা গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়েছিল। বলেছিল- আমার তো ইমলিকে বোন বলে পরিচয় দিতে লজ্জা লাগে। একটা করে পাত্র না বলে আর আমার বিয়েটাও পিছিয়ে যায়। প্রত্যেকবার চা মিষ্টি খাওয়াতেও তো খরচ হয়। (মিষ্টি অবশ্য ভিকির টাকায় কেনা নয়। সব মায়ের কষ্টের রোজগার।) মনহুস লেড়কি কঁহিকি!
দিনকে দিন এসব নিশ্চয় আরো বাড়ত। বেঁচে থাকলে প্রতি দিন তাকে এসব সহ্য করতে হত। ইমলি তা চায়নি। তাই পালাবার জন্য চরম পথ বেছে নিল। তার বাবা চুপচাপ মায়ের রোনাধোনা শুনে যেত। আগে বিটি রোডে একটা পাইস হোটেল ছিল বাবার। অল্প হলেও স্থায়ী রোজগার ছিল। সকাল ছ’টা নাগাৎ বেরিয়ে যেত। খদ্দের খাইয়ে সব গুছিয়ে টাকাপয়সা গুনেগেঁথে বিকেল পাঁচটার পরে বাড়ী ফিরত। কায়িক শ্রম করা মানুষজন সেই হোটেলে খেতে আসত। রান্না করার জন্য একটা লোকও ছিল। সিলিয়া কাজের বাড়ীতে বেশ গর্ব করে বলত- মেরে পতি কা পাইস হোটেল হ্যায়। করোনা এসে সেটা শেষ করে দিয়েছে।
মা আগে দু’ বাড়ী বর্তন মাজার কাজ করত। পাইস হোটেল বন্ধ হওয়ার পর থেকে চার বাড়ী করে। বসতির অনেক মেয়ে আরো বেশি বাড়ীতে ঝাড়ুপোঁছা আর বর্তন মাজার কাজ করে। মা আরো করতে চাইলেও শরীরের জন্য পারে না। ইমলি নিজে অনেকবার বর্তন মাজার কাজ করতে চেয়েছে। মা যেতে দেয় না। অভাব থাকলেও মেয়েকে কামওয়ালি হ’তে দেবে না। ভিকি কোনও দিনও নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছু ভাবেনি। ভালো ঘরে বোনের বিয়ে দেওয়ার জন্য বিন্দুমাত্র চেষ্টা সে করেনি। খালি চিত্তির বাগানের ওই হিল পরা লিপস্টিক মাখা মেয়েটাকে ঘরে তোলার ধান্দা।
ইমলির চুলে জট পড়ছিল। সে যদি জানত, দাদার বন্ধু তার জন্য জটের মোক্ষম প্রতিষেধক কিনে এনেছে, তাহলে নিশ্চয় ঝুলে পড়ত না।
শুভশ্রী রায় | Suvasri Roy
New Bengali Article 2023 | লেখক বনাম সাহিত্যিক
Odisha Goddess Durga | ওড়িশার পটচিত্রে দেবী দুর্গা | 2023
মানব কল্যাণে রামকৃষ্ণ মিশন | Ramakrishna Mission | 2023
Andaman Cellular Jail | আন্দামানের কুখ্যাত সেলুলার জেল | 2023
Anandabazar Bengali Short Story | Bengali Short Story | Pratilipi Horror Stories in Bengali | Lifestyle Web Stories in Bangla | Trending online bangla golpo pdf free download | Short bengali story | Bengali story pdf | pratilipi bengali story | Short Stories for Children | English Stories for Kids | Moral Stories for Kids | story in english | story hindi | story book | story for kids | short story | story for girls | short story in english | short story for kids | Bengali Story Demand pdf | Bangla golpo pdf | Bangla golpo story | bangla romantic golpo | choto golpo bangla | bengali story | Sunday suspense golpo | sunday suspense mp3 download | suspense story in hindi | suspense story in english 200 words | Bengali Story Demand in english | Trending online bangla golpo pdf download
suspense story in english 300 words | Suspense story examples | suspense story in english 100 words | suspense story writing | very short suspense stories for students | Bengali Story Demand | Top Bangla Golpo Online Reading | New Read Online Bengali Story | Top Best Story Blogs | Best Story Blogs in pdf | Sabuj Basinda | High Challenger | Famous Bangla Golpo Online Reading | Shabdodweep Read Online Bengali Story | Shabdodweep Writer | Bangla Golpo Online Reading pdf | Famous Story – Trending Bengali Story Demand | Pdf Bengali Story Demand | Bengali Story Demand App | Full Bengali Story Demand Reading | Bangla Golpo Online Reading Blogs | Trending online bangla golpo pdf
Best Story Blogs in Bengali | Live Bengali Story in English | Bangla Golpo Online Reading Ebook | Full Bangla Galpo online | Bengali Story Demand 2024 | New Bengali Story Demand – Episode | Golpo Dot Com Series | Bengali Story Demand Video | Story – Bengali Story Demand | New Bengali Web Story Audio | New Bengali Web Story Video | Bengali Story Demand Netflix | Audio Story – Bengali Story Demand | Video Story – Bengali Story Demand | Shabdodweep Competition | Story Writing Competition | Bengali Writer | Bengali Writer 2024 | Trending Bangla Golpo Online Reading | Top Bengali Story Demand | Bengali Story Demand Web Story | Best Read Online Bengali Story | Read Online Bengali Story 2024 | Trending online bangla golpo book pdf
Shabdodweep Bangla Golpo Online Reading | New Bengali Story Demand | Bengali Famous Story in pdf | Modern Online Bangla Galpo Download | Bangla Golpo Online Reading mp3 | Horror Adult Story | Read Online Bengali Story Collection | Modern Online Bangla Galpo mp4 | Modern Online Bangla Galpo Library | New Bengali Web Story Download | Full Live Bengali Story | Bengali Famous Story 2023 | Shabdodweep Bengali Famous Story | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Bengali Famous Story – video | Bengali Famous Story mp3 | Full Bengali Famous Story | Bengali Literature | Shabdodweep Magazine | Shabdodweep Web Magazine | Live Bengali Story Writer | Shabdodweep Writer | Trending online bangla golpo free download