Bastu Vita Bikikini | Best Bengali Story | New Golpo

Sharing Is Caring:

বাস্তুভিটা বিকিকিনি – নাসির ওয়াদেন

আষাঢ় পেরিয়ে গেছে দিন কয়েক আগে। কাঠফাটা রোদে ঘাসগুলো পুড়ে হয়ে গেছে ন্যাবারোগে আক্রান্তের মতো। বৃষ্টির অভাবে চাষীদের আটকে পড়েছে চাষের কাজ। আকাশ ঝকঝকে তকতকে সাদা দাঁতের মতো চিকচিক করছে। মাঠঘাট করছে খাঁ খাঁ, পুকুরের পানিতে ছোট ছোট বিভিন্ন জাতের মাছ ছুটে বেড়াচ্ছে ইতিউতি। এক অগ্নিবলাকা তার লম্বা ঠোঁট নিয়ে মাছ ধরার অপেক্ষায় পুকুরের পানিতে ডোবানো লম্বা বাঁশের ডগায় বসে।

সবে শ্রাবণমাস এসে পড়েছে ঋতু চক্রের আয়নায়নে। এ বছর বৃষ্টিও কম। কোনো সরকারই এই অঞ্চলে কৃষির জন্য খাল কাটেনি। এলাকায় কোন ক্যানেল ট্যানেল নেই,তাই চাষের জল ঠিক মতো না-পাওয়ার কারণে চাষবাস ঠিক মতো হয়নি। অথচ কি মজার, সরকারী খাতায় উত্তর ময়ূরাক্ষী কেনেলভুক্ত হয়ে আছে সাতষট্টি থেকেই। ফলে চাষীদের কড়া গন্ডায় খাজনা গুনতে হচ্ছে হরবছরে। মাঝে মাঝে চাষীদের মনে অসন্তোষ জেগে উঠে, প্রতিবাদের ভাষাও ধ্বনিত হয় এলাকায়। আমলা, মন্ত্রীনেতা-নেত্রীদের জানিয়ে কোন কাজের কাজ হয়নি, শুধুই মিলেছে আশ্বাস। ব্যস এতটুকুই, তারপর যে কে সেই। বিরোধী রাজনৈতিক দল বিভিন্ন সময়ে এই জ্বলন্ত ইস্যুকে সামনে রেখে জনরোষ সৃষ্টির অপূর্ব কৌশল হাতছাড়া করতে চায় না। ওদিকে শাসক দলের নেতা-নেত্রীদের মুখে কোন সদুত্তর মেলেনা, নেতাদের কথা শুনতে শুনতে সাধারণ মানুষের মনে বিদ্বেষ বিতৃষ্ণা জন্মে। তাঁরা বলে যে, নেতাদের গায়ের চামড়া গন্ডারের মতো শক্ত আর ভোঁতা হয়ে যাওয়ায় তাঁরাও কর্ণপাত করে না।

কথায় আছে, “যা বলবি বোল, কান করেছি ঢোল”।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধে নামতেই সেদিন এই এলাকায় পশ্চিম আকাশে নৈর্ঋত কোণে এক কালোমেঘের আগমন দেখে চাষীদের মনে স্বস্তির বাতাস বইতে শুরু করে। সন্ধের মুখে গুঁড়ি গুঁড়ি ইলশে গুঁড়ির মত হালকা বৃষ্টি ঝরতে শুরু করতেই পথে ঘাটে মানুষ উৎফুল্ল হয়ে উঠে । রুক্ষ শুষ্ক মাটির বুকে বর্ষার প্রথম ছাট এসে পড়ে। চাষীর বুক অপার আশার আনন্দে ভেসে যায়। বাতাসের জোরের সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টিও সমান তালে পড়ছে। পল্লী জীবনে সুখ ও স্বস্তির আশার আলো ফুটে উঠছে, উল্লাসে ভাসছে চাষীর বুক-সাগর। সকাল সকাল গোয়ালঘর থেকে হাল বলদ বের করে চাষিরা মাঠের দিকে চাষ করতে শুরু করবে। সারা বছরের মুখের খাবার, সোনালি ফসল ঘরে তুলে পরিবার এক সুখের মুখ দেখবে। আনন্দ সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে যায় হল্লাদের হৃদয়।

রিয়াদ চাচা তার ভাঙ্গা ময়ূরপঙ্খী রিক্সাখানা স্টেশনের গা ঘেঁষে লাগিয়ে রেখেছে একখানা পলিথিনের চাদর বিছিয়ে। রেকসিনের সিটখানা যাতে না ভেজে, তার জন্য যত্ন করে রেখেছে ঢেকে। যেমন নব্য প্রসূতি মা তার সদ্যোজাত সন্তানকে যেভাবে বুকের ভেতর আগলে রাখে, চাচাও তার রিক্সাখানাকে অতি যত্নে বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচাতে এই প্রচেষ্টা চালিয়েছে।

বৃষ্টি বৃষ্টি পড়ছে তো পড়ছেই থামার কোন লক্ষণ নেই। সময় অনেকটা চলে গেছে তা কেও ঠাহর করতেই পারেনি। রাতের গাড়িও একটু দেরি করে এসেছে । হয়তো জল ঝড়ের জন্যই এমন বিপত্তি। মাঝে মাঝে মেঘের গর্জন আর বিদ্যুতের ঝলকানি তো চলছেই। আকাশের গায়ে কারা যেন মাঝে মাঝে মেঘের বুক চিরে লাল রক্তের ফোয়ারা বিদ্যুৎ রঙে ঝরিয়ে দিচ্ছে। ঘড়্ ঘড়্ ঘড়্ শব্দ করে অবশেষে আপ গাড়িখানি স্টেশনে এসে দাঁড়ালো। গভীর অন্ধকার চারদিককে গ্রাস করে ফেলেছে, ঝড়ের তাণ্ডবে বিদ্যুতের খুঁটি থেকে তার ছিঁড়ে পড়ে গেছে মাটিতে। এলাকায় বিদ্যুতের অভাব। লোডশেডিং চলছে কয়েকদিন থেকেই। এদিকে বিশেষতঃ মফস্বলে বিদ্যুৎ নিয়ে ভীষণ সমস্যা, সামান্য জল-ঝড় হলেই বিদ্যুৎ চলে যায়, দু-তিনদিন বিদ্যুতের দর্শন মেলে না। স্টেশন বাবু, তার ছোট্ট চারকোনা লন্ডনটি নিয়ে বেরিয়ে এলেন। কুলিরা দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিয়েছে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে কোথাও যদি মালপত্র নামানো উঠানো যায়।

— এই যে ভাই, এ গাড়িখানা কার বলতে পারো?

কাশিমনগরী গামছাখানা গায়ে জড়িয়ে এক কোণে বসে ছিল রিয়াদ চাচা। বলে — কেনে। হামার রিক্সা আচে বাবু, কতি যাবেন?
— রঘুনাথপুর ।
— চেনো ভাই, যেতে পারবে?
— আরে বলেন কি বাবু ! হামি তো ওই গাঁয়েরই
— লোক আচি। কেনে য্যেতে পারবো না বলেন তো? কাহার বাড়ি য্যাবেন বাবু?

New Bengali Web Story

আকাশে যেন চাঁদ হেসে উঠলো, হাতঘড়ির দিকে চেয়ে দেখলো রাত সাড়ে দশটা। এ অসময়ে কোন যানবাহন পাওয়া যায় না। ভেবেছিলেন হয়তো বউকে নিয়ে রাতটা স্টেশনেই কাটিয়ে দিতে হবে। মনে মনে বলল, যাক, তবুও একটা হিল্লে হলো। তিমিরবাবুর বউ রজনী ম্যাডাম হেসে বলল, যাক বাবা, বাঁচা গেল! হাতের কাছেই গাড়ি পেয়ে গেলাম। কেউ যেন ইচ্ছে করে হাতের কাছে স্বর্গটাকে এনে দিয়েছে। রিক্সাওয়ালার দিকে চেয়ে বলল– সুরাজ মাস্টারের বাড়ি যাবো। চেনো তাকে? তার বাড়িতে আমাদের নিয়ে যেতে পারবে?

— বলেন কি দিদিমণি? হামি তো ওদের পাড়াতেই থাকি। ভোরবেলা ওদের বাড়িতেও যাই। খুব ভালো লোক আচে ওনারা।
তিমিরবাবু মুচকি হেসে ওঠে বলেন — বুঝলে রজনী তোমায় না বলেছিলাম সুরাজ মাস্টার খুব ভালো মানুষ। তার কাছে একবার পৌঁছাতে পারলেই আমাদের আর কোন সমস্যা থাকবে না। তিনি সমস্যার সমাধান করেই ছাড়বেন। রিয়াদ চাচা তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। রিক্সাওয়ালার দিকে তাকিয়ে বাবু বলেন — তা কত ভাড়া লাগবে ভাই?

— তোবা তোবা, ভাড়ার কথা তুলবেন না বাবু, সুরাজ সাহেব শুনলে গোস্সা করবেন। তার বাড়ি নিঙে যাব, বেশি ভাড়া চাহিতে পারি।
— সেটা ঠিক, তবুও একটা চুক্তি থাকা ভালো। কি বলো রজনী?

রজনী মাথা নেড়ে বলে — ঠিক তাই। অনেকে তো এই সুযোগ নিয়ে অধিক চেয়ে বসে। তুমি ভালো মানুষ। তবুও ভাড়াটা পাকা করে নিতে চায়। পরে ঝামেলা করা ভাল কাজ নয়।

কোকিল কন্ঠী রজনী তার শাড়িখানায় হাত বুলিয়ে ঠিকঠাক করে নিচ্ছিল। এই সময় সরস কণ্ঠে বলে, হ্যাঁ, হ্যাঁ। আমরা কলকাতার লোক। তাই আগেভাগে ভাড়া ঠিক করে নিই। পরে বাবু ঝুট ঝামেলা হোক, এটা পছন্দ করি না।

— আরে তোবা, তোবা, এসব কুথা বুলবেন না দিদিমণি। হামরা গরিব হতে পারি, লেকিন বেইমান নেহি। বুঝলেন বাবু, ভাড়া হামি চাহিতেই পারবু না, হাপনারা যাহা দিবেন হামি তাই লিব।
— পঞ্চাশ টাকা দেব।
— বেশি বুললেন বাবু। হক কথা ভাড়া মাত্তর কুড়ি টাকা। তবে, সমুয়ে-অসমুয়ে, বেপদে-আপদে ভাড়া ডবল লাগে। তা আপনি যদি স্বেচ্ছায় দ্যান তাহুলে তাহি লিবো।

অন্ধকার ঘুটঘুটে রাস্তা। মুরারই-মহেশপুর ২৪৫ নঃ রোড দিয়ে পশ্চিম অভিমুখে চলতে শুরু করলো রিক্সা খানা। বৃষ্টির তেজ কমে গেলেও মাঝে মাঝে বৃষ্টির ছাট আসছে। পলিথিনের চাদরখানা জড়িয়ে মাথার হুড তুলে খানিকটা নিরাপদে বসে রয়েছে দম্পতি। রিয়াদ তার পাতলা গামছাখানা মাথায় জড়িয়ে আধোজলে ভিজতে ভিজতে সেই গায়ের দিকেই এগিয়ে চলেছে ভাঙাচোরা রাস্তার উপর দিয়ে । সামনের দিকের ছোট্ট লম্ফোটা হেডলাইটে ঝুলিয়ে দেওয়া আছে, এতে হয়তো পথ দেখা যাবে না সত্যি;কিন্তু বিপরীত দিক থেকে আসা কোন যানবাহন হঠাৎ করে ধাক্কা মারতে পারবে না। রজনী চাচার দিকে লক্ষ্য করে অন্ধকারে শব্দ ছুঁড়ে দেয়, বলে- সুরাজ মাস্টার কেমন লোক গো?

— খুব ভালো লোক।
— জানেন দিদি, ওরা একদিন খুব গরিব ছিল।
— কিন্তু এখন কিছুটা সচ্ছল। তিন ভাই ওরা। হঠাৎ করে একদিন ওদের বাবা ওদেরকে ছেড়ে চলি গেল। বড় ভাই সুরাজ লেখাপড়া ছেড়ে কাজের সন্ধানে চলে গেল বাহিরে। নাবালক ভাইদের লেখাপড়া শেখাতে তাদেরকে স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিল।
— শুনেছি। এখন ওদের অবস্থাটা ভাল ।
— ভালই তো। এখন মোটামুটি ভালোই, কিছু জমি জমাও করাছে। সজ্জন লোক ছিল ওর বাবা। পরোপকারী।
— সবাই বলে, ওরা ওদের বাপের আশীর্বাদে মানুষ হয়্যাছে, জমি জায়গায় কিন্যাছে। টাকা পয়সাও বেশ করাছে। মেহনত করলে তো প্যায়সা হোবে দিদিমণি, হোবে না বলুন?
— খুব কৃপণ বুঝি? বলে রজনী।
— না, না, ওকে ওইসব মানায় না। ওর মতুন মানুষ আশেপাশের পাঁচটি গেরামে ন্যাই।

বাবু স্মিত হাসি হাসে, মনে মনে ভাবছে তাহলে তার দূর সম্পর্কের আত্মীয় যে বলেছিল, সুরাজ মাস্টার খুব পয়সাওয়ালা, যেমন দাম্ভিক তেমনি মেজাজি, মাস্টারি আর ডাক্তারির টাকায় দালানকোঠাও করেছে। তবে কি নিছক ঠাট্টা করে বলেছিল তার আত্মীয়। তিমিরবাবুর দাদুরা অনেকদিন আগেই গ্রাম ছেড়ে কলকাতায় গিয়ে কাজ জুটিয়ে বসতি পাকা করে নেয়। বেশ অর্থবান হয়ে ওঠেন। কলকাতায় থেকে ওকালতি পেশা শুরু করে বেশ সচ্ছল হন ও প্রচুর টাকা রোজগার করেন। তাঁদের আর পেছন ফিরে তাকানোর ফুরসৎ নেই। ঊনষাট,ষাট সাল। তখন গাঁয়ে ভয়ানক অভাব। মানুষের দুবেলা দুমুঠো ভাত জোটে না, ঠিক মত খাবার খেতে পায় না। “ফ্যান দাও,ভাত দাও” বলতে বলতে একদল মানুষ কলকাতায় গিয়ে বিক্ষোভ মিছিলও করে। পুলিশের গুলিতে কিছু প্রাণ চলে যায়। চারিদিকে খাবারের অভাব, না-খেয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে। গাঁয়ে-গঞ্জে সাধারণ মানুষ খেতে না পেয়ে গৃহস্থের বাড়িতে ঢুকে লুটপাট শুরু করে দিচ্ছে। হাঁড়ি বাটি সামনে যা পাচ্ছে, তাই চুরি করে নিয়ে পালাচ্ছে, বিক্রি করে যা মেলে, তাই দিয়ে দুবেলা আহার জোগাড় করে বাঁচতে চায়।

এই সময়ে মহেন্দ্র বাবু সপরিবারে কলকাতায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। সেই যে গেলেন তো গেলেন, সাধ করে একদিনের জন্য হলেও গাঁয়ে ফিরে আসেননি। মারা যাওয়ার আগে একবার ভিটেখানা দেখে গিয়েছিলেন। তারপরই তিনি চলে যান পরপারে। সেও অনেক দিন আগের কথা। মহেন্দ্র বাবুর ছেলে সৌমেন্দ্র সরকারি অফিসে চাকরি করেন। তিনিও কোনদিন বাপের ভিটেয় পা মাড়াননি। কিছুদিন আগে বাবার মৃত্যু হলে, সৌমেন্দ্রবাবু সংসারের হাল ধরেন। পুত্র তিমির চাকরিবাকরি না পেয়ে ব্যবসার কাজে লেগে যায়। পুঁজির দাপটে ব্যবসা এখন লাটে উঠেছে। পয়সার বড় অভাব, তাই তার মনেও কোন শান্তি নেই। পুঁজি দিনদিন কমে যাচ্ছে ব্যবসায়। জিনিসপত্রের দামও আকাশছোঁয়া। এখন ব্যবসায় আরও বেশি বেশি করে পুঁজির দরকার।

এক অপরাহ্নে রজনীর বাবা পীযূষ বাবু মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। তিনি থাকেন বেহেলায়, দক্ষিণ কলকাতায়। বড় একখানা কাপড়ের দোকান চালান। বেশ ভালয় চলে। একমাত্র ছেলে সৌম্যজিৎ বিদেশে চাকরি করে। মাইনেও ভাল। বছরে একবার, পূজার সময় দেশে আসে। আত্মীয় স্বজনদের দেখা-সাক্ষাৎ করে ফিরে যায়।
— কী গো, বাবাধন, ব্যবসাপাতি চলছে কেমন?
তিমির জবাব দেয় — খুব ভালো চলছে না। পূঁজি দিনদিন কমে যাচ্ছে, কম্পিটিশনের বাজারে ভাল চলছে না। পুঁজি আরও লাগাতে হবে।
— হ্যাঁ, হ্যাঁ, ঠিক। পুঁজি না থাকলে ব্যবসাপাতি ভালো চলে না।
— ভাবছি এবারে দেশের বাড়িখানা বেচে দেব।কিছু টাকা পেলে ব্যবসাটা জোরদার হবে।
— ঠিক, ঠিক। বেয়াই মশাই তো বেঁচে থাকতে দেশের বাড়িখানা বিক্রি করতে রাজি হননি।
— তাছাড়া, দ্যাখ, ওখানে বাড়িঘর থেকে কোন লাভ নেই, বরং ওই টাকা দিয়ে এখানে ব্যবসা করলে কিছু লাভ পাওয়া যাবে।

এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের মাধ্যমে সুরাজ মাস্টারের সাথে তাঁদের বোঝাপড়া । বাড়িটি বিক্রি করে দেওয়ার প্রাথমিক কথাবার্তা সেরেই ফেলেছে। দেশের বাড়িতে গিয়ে কাগজপত্র দেখে মূল্যটা চূড়ান্ত করাটাই কেবলমাত্র বাকি।
— এই যি বাবু, এ্যসি গেলছি। ইবার নামতে পারেন। ওই যি দিখছেন লম্বা দোতলা বাড়ি, ওখানেই সুরাজ মাস্টার থাকে।

বাড়ির হতশ্রী দশা দেখে খানিকটা অবাক হয়ে যায় তিমির। কোথায় সেই রাজপ্রাসাদ,আর কোথায় তার সম্রাট! এ যে ছোট্ট একখানা চালার বাড়ি। ইট দিয়ে দেওয়াল বানানো, ওপরে খড়ের ছাউনি। তবে কি ভুল জায়গায় এসে পড়েছি। মনে মনে সার্ভে করে নেয় তিমির বাবু। জিগ্যেস করে — তুমি কি আমাদের ঠিক জায়গায় নিয়ে এসেছ?
রিয়াদ বলে — ক্যানে বাবু! ই টো তো সুরাজ মাস্টারের বাড়ি। কুনু ভুলটুল তো হয়নি।
— তোমারদের সুরাজ মাস্টার তো মাস্টারের সাথে সাথেই একজন কোয়াক ডাক্তারও।
— না তো, না-তো বাবু। ইনি তো ডাক্তোরি কোরে না। ভালো জামা কাটতে পারে। অনেক দূর থেকে লোকজন তার কাছে জামা-কাপড় সেলাই করতে আসে। এলাকায় সুরাজ মাস্টার বুলতে একবাক্যে একেই চেনে। এ গাঁয়ে তো আর কুনো মাস্টার ন্যাই।
রজনী বলে — তবে কি ভুল জায়গায় এসেছি?
— হাপনারা তো অঘনাতপুরের সুরাজ মাস্টারের বাড়ি আসতে চাহিলেন দিদি। ইনি একজন খুব ভালো নোক গো,,

দুচোখ কপালে তুলে তিমিরবাবু তার বউ রজনীকে বলে — আমরা অন্য জায়গায় এসে পড়েছি। এখন রাত সাড়ে এগারোটা। অন্ধকার ঘুটঘুটে রাত, মাথার উপর গুঁড়ি গুঁড়ি ইলশে বৃষ্টি। এখন কোথা যাই বলো তো?
— এখন কি হবে?
— বড্ড ভুল হয়ে গেছে। ঠিক মত ঠিকানাটা বললে এই ভোগান্তি পোহাতে হতো না।
রিয়াদ বলে — আপনি তো আমাকে অঘনাতপুরের সুরাজ মাস্টারের কথা বুললেন। ই গাঁয়ে তো একটোই সুরাজ মাস্টার,আর কুনো ওই নামে সুরাজ মাস্টার ন্যাই।

তখনও মাথার উপর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। ঝরেই চলছে। মাঝেমধ্যে বিদ্যুৎও চমকাচ্ছে। আলোর ঝলকানি দেখা দিচ্ছে কালো মেঘের ফাঁকে। এই সময়ে আর কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। বিচলিত চোখে তিমিরবাবু বলেন –কোথায় এখন থাকব ? কাউকে তো চিনি না, জানিনা। অজানা অচেনা মানুষকে থাকতে কেই বা দেবে?
–কুছু ভাববেন না বাবু। সুরাজ মাস্টার খুব ভালো মানুষ। আজ ওর বাড়িতে রাতটা কাটিয়ে দেন। কাল ভোর ভোর আপনাদের ঝাড়খণ্ডের অঘনাতপুরে পৌঁছে দিব। পেরায় ইখান থেকি চার ক্রোশ দূরে।

অবশেষে নিরুপায় হয়ে তাঁরা দুজনেই রিক্সা থেকে নেমে আসে। ব্যাগ থেকে ছাতা বের করে মাথায় ধরে। জল থেকে বাঁচতে দুজনে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়ায়। দরজায় টোকা দিতেই সুরাজ ভেতর থেকে জিগ্যেস করে, কে গো?
— আমি রিয়াজ চাচা গো। একবার বেরিয়ে আসো। দুজন লোক এসেছে গো, খুব বেপদে পড়েছে। দুয়ারটো একটুকুন খোল না।

রিয়াজ চাচার ডাক শুনে সুরাজ বাইরে বেরিয়ে আসে। হাতে পুরানো আমলের একটা হ্যারিকেন নিয়ে বৈঠকখানার দরজা খুলে দিয়ে বলে -কে গো চাচা, কুথাকার লোক?
— কোলকাতা থেকে আলছে গো। ভুল করি তুমার বাড়িতে এনাছি। ইনাদের জন্যি রাতটুকু থাকার একটু বেবস্তা করে দাও বাপু। আমার ছোট ঘরে কী-করে ওনাদের রাখি বলো।
— ঠিক আছে, চাচা।
— আপনারা ভেতরে আসুন।এই গরীবখানায় একটু কষ্ট করে রাতটা কাটাতে হবে।

রজনী ফিস্ ফিস্ করে স্বামীকে বলে, হ্যাঁ গো শেষে বেধর্মের বাড়িতে রাত কাটাতে হবে?
— চুপ, চুপ। ও শুনতে পাবে।
— ছ্যা, ছ্যা, আমি কিন্তু থাকতে পারব না। ওদের টয়লেটও নেই। আমি মরে যাবো।
— এছাড়া আর কী কোন উপায় আছে? এই বৃষ্টি রাতে কোথায় যাব? অন্য জাতের মানুষ হলেও, ওরা কি মানুষ নয়?
— তুমি যাই বল না বাপু, আমি কিন্তু কিছু খেতে পারব না। ওরা…

সুরাজ মাস্টার পুনরায় তাড়া দিয়ে বলে, আসুন, ভিতরে আসুন। কোন রকম হেজিটেট করবেন না। আপনাদের জন্য নতুন আয়োজন করা হবে। কিছু খেতে হলে বিশুদার দোকান থেকে আনিয়ে নেব। আর রান্না চাপাতে হলে মোড়ের কাছেই অনন্ত পণ্ডিতের বাড়ি। ও আমার বাল্যবন্ধু, একসাথে লেখাপড়া করেছি। ওই আলুসেদ্ধ, ডাল, বেগুন ভাজা ও ডিমের ঝোল রেঁধে দেবে।

ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়েই চলেছে। মাঝে মাঝে বিদ্যুতের ঝলকানি চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে। ছাতাখানা মাথার উপর ধরে ধীরে ধীরে তিমির বাবু ও তার বউ বৈঠকখানায় প্রবেশ করল।

নাসির ওয়াদেন | Nasir Waden

Orange Grove Tour India | Best 2023 | Travel Story

Best Porokia Bangla Galpo 2023 | পরকীয়ার পরাকাশে

Songs of Ramakrishna Mission | রামকৃষ্ণ মিশনের গানগুলো | Best 2023

Is Three Mile Island Still Dangerous? | Best Article 2023

Short bengali story | Bengali story pdf | pratilipi bengali story | Short Stories for Children | English Stories for Kids | Moral Stories for Kids | story in english | story hindi | story book | story for kids | short story | story for girls | short story in english | short story for kids | bangla golpo pdf | Bangla golpo pdf | Bangla golpo story | bangla romantic golpo | choto golpo bangla | bengali story | Sunday suspense golpo | sunday suspense mp3 download | suspense story in hindi | suspense story in english 200 words | Suspense story in english | suspense story in english 300 words | Suspense story examples | suspense story in english 100 words | suspense story writing | very short suspense stories for students | Bastu Vita Bikikini | Top Bangla Golpo Online Reading | New Read Online Bengali Story | Top Best Story Blogs | Best Story Blogs in pdf | Sabuj Basinda | High Challenger | Famous Bangla Golpo Online Reading | Shabdodweep Read Online Bengali Story | Shabdodweep Writer | Bangla Golpo Online Reading pdf | Famous Story – Bastu Vita Bikikini | Pdf Bastu Vita Bikikini | Bastu Vita Bikikini App | Full Bangla Golpo Online Reading | Bangla Golpo Online Reading Blogs | Best Story Blogs in Bengali | Live Bengali Story in English |Bangla Golpo Online Reading Ebook | Full Bangla Galpo online | Bastu Vita Bikikini 2024 | New Bengali Web Story – Episode | Golpo Dot Com Series | Bastu Vita Bikikini Video | Story – Bastu Vita Bikikini | New Bengali Web Story Audio | New Bengali Web Story Video | Bastu Vita Bikikini Netflix | Audio Story – Bastu Vita Bikikini | Video Story – Bastu Vita Bikikini | Shabdodweep Competition | Story Writing Competition | Bengali Writer | Bengali Writer 2023 | Trending Bangla Golpo Online Reading | Recent story Bastu Vita Bikikini | Top Story Bastu Vita Bikikini | Popular New Bengali Web Story | Best Read Online Bengali Story | Read Online Bengali Story 2023 | Shabdodweep Bangla Golpo Online Reading | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Modern Online Bangla Galpo Download | Bangla Golpo Online Reading mp3 | Horror Adult Story | Read Online Bengali Story Collection | Modern Online Bangla Galpo mp4 | Modern Online Bangla Galpo Library | New Bengali Web Story Download | Full Live Bengali Story | Bengali Famous Story 2023 | Shabdodweep Bengali Famous Story | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Live Bengali Story – audio | Bengali Famous Story – video | Bengali Famous Story mp3 | Full Bengali Famous Story | Bengali Literature | Shabdodweep Magazine | Shabdodweep Web Magazine | Live Bengali Story Writer | Shabdodweep Writer | Story Collection – Modern Online Bangla Galpo | Bastu Vita Bikikini – Propery sale purchase

Leave a Comment