Best Bangla Golper Ebook | Read Online Bangla Golpo

Sharing Is Caring:

Bangla Golper Ebook | Online Bangla Golpo Collection

সংবাদদাতা

বৈশাখ মাস প্রায় শেষ হতে চললো। এখনো বৃষ্টির দেখা নেই। কদিন হলো ভীষণ গরম পড়েছে।দিনে রাত্রে ঘুমানো দায়। গরমের দিন বলেই দুপুরে মাদুর, বালিশ নিয়ে বাড়ির সামনের বাগানে বিছানা পেতে শুয়ে থাকি।রোজ যে ঘুমাই, তা নয়। বেশিরভাগ দিনই একটু লেখালেখি করি। বাগানটা দারুণ ছায়া। জামরুল গাছের তলায় বিছানা পাতলাম। সাথে লেখার ডাইরি-কলম ছিলো। গল্পের একটা প্লট সকাল থেকেই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। কলম নিয়ে বসে গেলাম,আরম্ভটা বেশ সুন্দর লাগছে।

হঠাৎ জামরুল গাছে একটা কাক এসে বসলো। কাকটা আমার চেনা। চেনা মানে,রোজ ই প্রায় সকালে আমাদের বাড়িতে এঁটো কাঁটা খেতে আসে আর কি।
চোখাচোখি হতেই কাকটা কেমন হেসে ফেললো।

— কি লিখেছো গো খোকাবাবু ?

— এই তো একটা গল্প লিখছি।

— তুমি আবার গল্প – কবিতা লেখো নাকি ? তা বেশ বেশ, তোমার মতো অনেক কে দেখেছি গল্প- কবিতা সব লেখে।

— তুমি গল্প-কবিতা পড়ো না কি ?

— দুর বাবু, আমি পড়বো কি করে। আমি কি লেখাপড়া জানি।লোকে বসে বসে লেখে দেখি তাই।তা তুমি কি রকম গল্প লেখো ?

— তেমন কিছু না, মানুষের সুখ-দুঃখ নিয়ে একটু লিখি আরকি।

— আমি যদি লেখাপড়া জানতুম না, আমি ও গল্প লিখতুম। আমার কাছে অনেক বড় বড় গল্প আছে। অনেক মানুষ কে দেখছি না।

— তোমার গল্প আমাকে বলো, আমি লিখি।

— দেখো খোকা বাবু, তুমি অনেক কিছুই লেখো। মানুষের সুখ-দুঃখ, কিন্তু তোমার অনেক চেনা মানুষের খবর রাখোনি।তারা কি রকম মানুষ তাই তুমি জানো না।

— কি রকম ? চেনা মানুষের কথা মানে আমার বাড়ির কাছাকাছির মানুষ জন,পরান জেঠুর কথা বলতে চাইছো?

কাকটা, কক -কক -কক করে একটু হেসে নিলো।

— হ্যাঁগো, হ্যাঁ ওই যে -পরান মন্ডল ওই লোকটাকে চেনো? তুমি ঠিক চেনো না।

ভীষণ প্যাঁচালে। একজনের কথা অন্যজনকে লাগানোর ওস্তাদ। এর সঙ্গে ওর মামলা, ওর সঙ্গে তার মামলা। উনি শুধু সারাদিন সকলকে বুদ্ধি দিয়ে চলেছে। এদিকে আসামি তরফ কে বলছে তুমি এইটা করো। আবার ফরিয়াদি তরফ কে বলছে, তুমি ওইটা করো সব জব্দ হয়ে যাবে। কি চরিত্র বাবু, না জানলে তুমি বুঝতেই পারবে না।

আর একজনের কথা বলছি ছোট মিত্তির বাবু। চেনো লোকটাকে?

— হ্যাঁ হ্যাঁ- চিনবো না আবার ওনাকে ।

— শোনো, উনি একটি কৃপণের ধাড়ী।

টাকার বান্ডিল রোদে শুকায়। তুমি তো ওর পাশের বাড়ির লোক বিপদে দু টাকা ধার চাও, বলবে আমার কাছে নেই গো বাবু। যদি বল একটা ভালো জমি বিক্রি আছে নেবে? তাহলে সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যাবে । উল্টে তখন থেকে তোমাকেই পীড়াপীড়ি করবে। যাতে তাড়াতাড়ি দলিল-দস্তাবেজ হয়ে যায়। ঐতো অতো সম্পত্তি, তবু সব সময় মুখ শুকনো হয়ে আছে। মনে সুখ শান্তি নেই। তুমি দেখবে বলে রাখলুম। কত সম্পত্তি তো-সব ছেলেরা উড়োবে। একটুও থাকবে না। আর একজনের কথা বলি শোনো, ওই যে বাটুল তরফদার গো- লোকটাকে চেনো?

— হ্যাঁ চিনি তো, সত্যিই খুব ভালো লোক- খুব ধার্মিক ।

— বকধার্মিক! বাবা ,আমি ওকে চিনি না?

তুমি একটা কথা চিন্তা করো, আমিতো কাক। আমাকে এর বাড়ির তার বাড়ির এঁটো কুড়িয়ে খেতে হয়। ওই লোকটা আমাদের দেখলেই বেরো, দূর হ -দূর হ এইসব গালাগালি করবে। লোকটা কিন্তু সারাক্ষণ নামাবলী গায়ে দিয়ে ঘরে। ঘরে পূজা পাঠ করে। কিন্তু বাবু, তার ফাঁকেই যা খিস্তি পাড়তে পারে। না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবে না।
তোমাকে যদি তোমাদের আশেপাশের সব বাড়ির খবরা- খবর বলি আশ্চর্য হয়ে যাবে। চিন্তাই করতে পারবে না।
সে যাহোক তোমাদের ওই কলোনি পাড়ার খবর রাখো?

— তাতো জানি না! কি হয়েছে?

— মা মাসি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে সব তোমাদের ওই মানুষেরা।

— মানে একথা বলছো কেনো ?

— বলছি কি আর সাধে, রেগে যেও না।

ও পাড়ার ছেলেরা পাড়াটাকে তো প্রেমের বৃন্দাবন করে ফেলেছে। এ-বাড়ির মেয়ের সঙ্গেও বাড়ির ছেলের। এর বোনের সঙ্গে তার ভাইয়ের। অমুকের মায়ের সঙ্গে তমুকের বাবার। সে এক কেচ্ছা কান্ড। বলতে গেলে রাত শেষ হয়ে যাবে।

— তা তুমি এত খবর রাখো কি করে?

— আমি তো অনেকের বাড়ি যাই। মানে অনেকের হাঁড়ির খবর বলে দিতে পারি। তা যাকগে খোকাবাবু আজ চলি। কাল-পরশু আবার এসে বাকি গল্প তোমাকে শোনাবো। আমার গিন্নী আবার অপেক্ষা করে বসে আছে আমার জন্য। কোলে ছোট ছেলে তো। আমি গেলে তবেই সে খেতে আসবে। কাকটা উড়ে গেল।

আমি চুপচাপ বসে বসে ভাবছিলাম। এত কাছাকাছি থেকেও এই মানুষগুলোর সম্পর্কে জানতাম না।
পরপর চার দিন অপেক্ষা করলাম। কাক টা এলো না।
সেদিন এলো মুখটা ভীষণ শুকনো শুকনো। যেন কিছু একটা হয়েছে।

— কি ব্যাপার এতদিন পর হঠাৎ?
না গো খোকাবাবু আসতে পারিনি, মনটা ভীষণ খারাপ।

— কেন গো, কি হয়েছে?

— সে এক সাংঘাতিক ব্যাপার বাবু!

— কি রকম? কি এমন হয়েছে?

— বলতেও লজ্জা বাবু! আসলে আমি যে বাচ্চাগুলোকে লালন পালন করছিলাম নিজের বলে। সেগুলো আমার বাচ্চা নয়। কোকিলের। নিজে না খেয়ে বাচ্চাদের খাইয়েছি। অথচ একজন ও আমার বাচ্চা নয়!

— তুমি ভুল করছ, তোমার বাসায় এসব হতে পারে না?

— তুমি না বিশ্বাস করলেও আমি বিশ্বাস করি খোকাবাবু। আমি সব বুঝতে পেরেছি। আমাকে কি তুমি ওই উত্তর পাড়ার লোক ভেবেছো? আমার গিন্নী আসলে নষ্ট। ওকে নিয়ে আর চলবে না। ও থাকুক ওর বাচ্চা নিয়ে। আমি চলি। কাকটা চোখের জল মুছে উড়ে গেল ।

সিঁদুরে মেঘ

অনেকগুলো ভাই বোনের সংসারে নিতান্ত অবহেলায় দিন কাটছিলো সাবিনার। পরনের জামাকাপড় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করবে তার উপকরণ ও সব সময় পেতো না। পেটের খোরাকটা বেশিরভাগ সময়ে পুরোপুরি জুটতো না। তাতে কোন দুঃখ থাকতো না ওর। ময়লা ছেঁড়া পোশাকের মধ্যে থেকে ওর যৌবন উঁকি মারতো। পুরুষের চাউনিতে ও মাঝে মাঝে টের পেয়ে লজ্জাবোধ করত তাতে। পাশাপাশি সমবয়স্ক অন্য মেয়েদের দেখে ওর ভালো লাগতো। তাদের পোশাক প্রসাধনী দেখে মনটা ভারী হয়ে আসতো-আমাকে একটা ভালো জামা কিনে দাও না ? অনেক সংযমের বাঁধ ভেঙে ওর বাপকে বলেছিল কথাটা।

— এনে দেব রে মা, টাকা পেলেই আনবো। ছল ছল চোখে, মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কেমন ভীতির সুরেই বললে মোরশেদ।
— অনেকদিন থেকেই তো বলতেছ। কিছু ক্ষোভ ঝরায় সাবিনা।
— বুঝি রে মা, পেরে উঠি না। অপরাধীর মতো কুঁকড়ে যায় মোরশেদ।

সামান্য একজন দিনমজুরের জীবনে পেটের খোরাক জোটাতে প্রাণ জেরবার। ভালো কাপড় -ভালো জামা কার না মন চায়। কিন্তু চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গতি থাকে না। সাত ছেলে মেয়ে ও দুই স্বামী-স্ত্রী মিলে নয় জনের সংসার। দুবেলা আঠারো পাতের জোগাড় প্রতিদিন সম্ভব হয় না।
রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ। তাতেও লাইন লাগে এখন। মিস্ত্রি গুলোর চোদ্দ পুরুষ উদ্ধার করেও স্বস্তি পায় না মোরশেদ।
“শালারা এখন মেয়ে জোগাড়ে ছাড়া কাজ করতে পারে না, আরে বাবা- ছেলেরা যেখানে কাজ পায় না। তাদের বাদ দিয়ে মেয়ে নিয়ে কাজ ! যতসব নোংরামো, ছ্যাঁচড়াপনা। আর মেয়েগুলোও বেহদ্দ। চোখের শরম বলে কিছু নেই। মর মর সব, শ্লা দুনিয়া ফেনা হয়ে যাক। “মনে মনে গজরায় মোরশেদ।

সেদিন কাজ না পেয়ে অশান্তিতেই বাড়ি ফিরলো সকাল সকাল। দুপুরে উনুনে হাঁড়ি চড়ার উপায়ান্তর নেই। বউ মরিয়ম শুকনো মুখেই ঘরবার করতে থাকে।

— কিগো ফিরে এলে ? কাজ হয়নি ?
— নারে ‌, কাজ বড় মন্দা। এখন কাজের থেকে লোক বেশি।
— কি হবে ,এরকম করে ?
— ভাবতে পারিনি রে ! এ আমার পাপের প্রায়শ্চিত্তি।
— সাবিনা, রাজু, ওদের মনির সঙ্গে বলরামপুরে বাজি কারখানায় কাজে যাবে বলতেছিলো কাল থেকে।
— কে বলেছে যেতে ? মেয়েরা বাইরে পা দেওয়া মানে…
— তাহলে কি ঘরে শুয়ে থেকে, না খেয়ে মরবে ? একপ্রকার ক্ষিপ্ত হয়েই বলে মরিয়ম।

কথাগুলো ঘরের মধ্যে থেকে সবই শুনছিলো সাবিনা। এবার সে আস্তে আস্তে বাপ -মায়ের সামনে এসে দাঁড়ায়। কেমন যেন চমকে ওঠে মোরশেদ। চোখেমুখে কেমন এক অস্বাভাবিকতা সাবিনার। অসহায় বাপের সাহায্যের জন্যই সে কিছু করতে চায়। সে যদি ছেলে হতো তাহলে তাকে এই বয়সে কাজ করতেই হতো। কিন্তু মনের ভাষা মুখের ভাষায় সমন্বয় ঘটাতে পারলো না সে।

— আমি কাজে যাবো বাপ। স্বরটা কেমন তীক্ষ্ণ সাবিনার।
— না , মা। তোমাকে কাজে যেতে হবে না।
— খেতে পরতে ঠিকমতো দিতে পারবে না। কাজ করবো না। তবে কি শুধু শুকনো হবো। ফোঁস করে ওঠে সাবিনা।

মোরশেদ এ কোন সাবিনা কে দেখছে। বোবা হয়ে যায় তার মুখ। দীর্ঘ জীবনে আজ তার অসহায় চোখ দুটো ঝরনার ধারা বহায়, মরিয়াম আচলে চোখ মোছে। মোরশেদ মেয়ের চোখে- মুখে বিদ্রোহী ভাব খোঁজে। নিজের চোখ -কান কে সে নিজেই যেন বিশ্বাস করতে পারছে না। একথা সাবিনা বলতে পারে না।

— মরিয়াম, এভাবে মেয়েকে আগুনে ঠেলে দিও না। আকুল আকুতি মোরশেদের।
— পেটের জ্বালা নেভাতে সব সহ্য করতে হবে। মরিয়াম মোরশেদের আকুতির অর্থ বোঝার চেষ্টা করলো না ।

জোড়াতালির সংসারেও দুটো শিবির তৈরি হয়। মোরশেদ বাইরের জগৎটা ভালো করে চেনে। ঘরের মেয়েরা কাজের জন্য বাইরে বের হলে তারা আর ঘরের মেয়ে হয়ে থাকতে পারবেনা। ভাগাড়ের শেয়াল গুলো খুবলে খুবলে খেয়ে ফেলবে। এ যাবত সে যতো কাজে যাওয়া মেয়ে দেখেছে পরে পরে সকলেই কেমন বেপরোয়া। হাসাহাসি, গায়ে পড়ে ঢলাঢলি তাদের কোনো কুন্ঠা নেই।
মরিয়াম বাইরের জগৎ বোঝে না। অভাবের সংসারে দুটো পয়সা আসবে, ছেলেমেয়েদের পেট পুরে দুটো খেতে দেবে এটাই তার প্রধান চাহিদা। কাজ করে খাবে, চুরি তো করছে না। গরিবের ঘরে কাজ করে খেলে মানে বাধবে না।

দিন যায়। রাত যায়। পৃথিবীর বয়স বাড়ে। মরিয়ামের সংসার এখন কিছুটা আলোর মুখ দেখেছে। সাবিনা, ভাই বোনের দুজনার সপ্তাহের টাকা মায়ের হাতে তুলে দেয়। সন্ধ্যা মুখো বাড়ি ফিরে হাত- মুখের বারুদের রূপালী রঙের প্রলেপ তোলে, গন্ধ সাবান মেখে। মুখে স্নো মাখে, মাথায় ঠান্ডা তেল ঘষে, এসব নাকি ওর উপরি রোজগারের টাকায় কেনা। ওদের কাজে হিসেব কষে যে বাবু, সে ওকে খুব ভালোবাসে-পাঁচ-সাতশো কাজ রোজই বেশি লিখে দেয়। রাতে বিছানায় শুয়ে সাবিনা গুনগুনিয়ে গান গায়, ভাবে আরো কিছুদিন আগে যদি সে কাজে বের হতো- হাতে কতো পয়সা এসে যেতো। এবার কিছু কিছু জমিয়ে সে একটা কানের জিনিস কিনবে, কানে একটা কিছু না থাকলে মানায় না।

মরিয়াম মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে-তুই যদি আমার ছেলে হতিস আমার ভাবনা থাকতো না। সন্ধ্যার আগে রোজ চলে আসবি, দুর গায়ের রাস্তা দেরি হওয়া ভালো নয়। কিন্তু মাঝে মাঝে দেরি হয়ে যায় সাবিনার। বাবুর চাপিয়ে দেওয়া কাজকে ফেলে আসতে পারেনা, সকলে চলে গেলেও ও কাজ শেষ করেই আসে। ও বলে- যে আমাকে দেখে তার কথা তো রাখতেই হবে, তুমি বলো মা।

মরিয়াম সকাল-সকাল ছেলে মেয়েকে খাবার করে দেয়, দুপুরের খাবার বেঁধে দেয় টিফিন বাক্সে।
মোরশেদ বোবা চোখে তাকায় মেয়ের দিকে, দিনে দিনে পার্থক্য লক্ষ্য করে মেয়ের। শরীরের রক্ত হিম হয়ে আছে তার। সে যেন এক নখদন্ত- হীন সিংহ মাত্র। চেষ্টা করেও গর্জে উঠতে পারে না। কত অসহায় সে এখন। মেহনত করেও সংসার চালাতে পারে না, সারা সপ্তাহ কাজ জুটলেও সেই পয়সায় সকলের মুখের ভাত জোটে না। লাগাম তার হাত থেকে ছেড়ে গেছে টেনে ধরার ক্ষমতা আর পাচ্ছে না।
দিনে দিনে সাবিনার পরিবর্তন হতে থাকে। পোশাকে- আশাকে এখন বেশ ছিমছাম। পিছনের দিনের না পাওয়ার সাধ পুরোপুরি মিটিয়ে নিতে চলেছে সে, মাঝেমধ্যেই ভালো ভালো কাপড় কিনে আনে । সেদিন একটু রাতেই ফিরেছিল বাড়িতে, ভাইকে পাঠিয়ে দিয়েছিল অন্য সঙ্গীদের সাথে। কোথায় গেছে, দেরি হবে কেন ভাইকে কিছু বলেনি।

— তোর এত দেরি কেন রে সাবিনা ? ঘরে ঢুকতেই মরিয়াম জিজ্ঞেস করে।
— বই দেখতে গিয়েছিলুম। সাবিনা নির্ভয়ে উত্তর দিয়ে হাতের প্যাকেট খানা বিছানায় রাখে।
— কার সঙ্গে গেছিলি ? কি ওতে ? একটু যেন ঝাঁঝালো মরিয়াম।
— বাবুদের বউ, ওনার দুটো কুটুম্ব ছিলো-আমাকে যেতে বললে তাই গেলুম। ওটা বাবুদের বউ কিনে দিয়েছে সালোয়ার, কামিজ। কুটুমরা কিনলো বলে আমাকেও দিলে, বলে-এটা তুই পরবি ,তোকে ভালো মানাবে।

মোরশেদ বাড়ি ফিরলে দেখে মরিয়াম চুপ করে যায় ও প্রসঙ্গ যাতে আর না হয়।
স্বামীর কানে গেলে কথাগুলো, আস্ত রাখবে না আর।

এভাবেই চলছিলো দিনগুলো। বাপের আপত্তি সত্ত্বেও কাজে যাওয়া মেয়ে, মাঝেমধ্যে দেরিতে ফেরা, কেনাকাটা করা ,মুখে- হাতে মাখার জিনিস কেনা। এগুলো নাকি সপ্তাহের টাকা দেবার পর, সে উপরি রোজগারের টাকা থেকে কেনে। সেটাই বা কতো টাকা, হাজারো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে গিয়েও চুপ করে যেতে হয় মরিয়ামকে। স্বামীর কানে যাতে না পৌঁছয় কথাটা, শুধু সেজন্যই।

ক’দিন শরীর খারাপ থাকার জন্য সাবিনা কাজে যায় না। ওর ভাই একা বলে সেও যেতে চায় না। চিন্তা বাড়ে মরিয়ামের, সংসারে চাপ- না মেয়ের শরীর, কোনটাকে সামাল দেবে। মেয়ে কাজে যায়নি কদিন, মোরশেদ না বললেও বুঝে নিয়েছে। মনে মনে সে একটু আশ্বস্ত হয়। চেষ্টা করে একটু বেশি পয়সার কাজের, তাহলে আর মেয়েকে কাজে বের হতে দেবে না। ছুটির পর সে নানান ঠিকেদারের সঙ্গে দেখা করে, উপায় একটা বের করবেই। সেদিন রাতে একরাশ খুশি নিয়ে বাড়ি ফিরলো মোরশেদ। বাড়িটা কেমন যেন থমথমে মনে হলো মুহূর্তে, এমন কোন দিন তার হয়নি তো।

মরিয়ামকে ডেকে বলল – জানিস মরি – অনেক কটা দিন চেষ্টা চরিত্তির করে একটা ভালো ঠিকেদারের কাছে কাজ পেয়েছি, ভালো পয়সা দেবে। বুঝলি, তুই আর সাবিনাকে কাজে যেতে দিস নি। সোমত্ত হচ্ছে, বেফাঁস কিছু হলে আর মুখ দেখাতে পারবি না।
হঠাৎ ঝর ঝরিয়ে কেঁদে ওঠে মরিয়াম।

— কি হয়েছে রে ? কাঁদিস কেন ? বুকটা ব্যথায় যেন টনটনিয়ে ওঠে মোরশেদের।
— সব্বোনাশ হয়েছে গো, আমাদের সব্বোনাশ হয়েছে। পোড়ার মুখি কাল ঘটিয়েছে। কান্নায় ভেঙে পড়ে মরিয়াম।
মোরশেদ এক বিশাল ঢেউয়ের ধাক্কায় কোথায় যেন আছড়ে পড়ে। আচ্ছা অন্ধকারে সে দেখে একটা মানুষকে কতগুলো শেয়ালে টানাটানি করছে।

পরিযায়ী

সংসার-ছেলেমেয়ে রেখে ভিন-রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া মানুষগুলো পাল-পার্বণে ঠিক ঠিক বাড়ি ফেরে। জমানো রসদে ছেলে বউয়ের পছন্দসই জিনিস কেনে। ঘরে ফেরা এই মানুষগুলো কেমন যেন প্রাণ-প্রাচুর্যে যে ভরপুর থাকে । পড়শি-আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করে। দীর্ঘদিনের দেখা না হওয়ার ব্যাকুলতাই হয়তো অনেক অনেক কথা বলিয়ে নেয়। কাজের খবর। ভিন রাজ্যে থাকার সুবিধা ও অসুবিধার খবর । এমন তরো হাজারো কথা। একসময়ের মুখচোরা রিয়াসাদ আজ যেন কথার ফুলঝুরি ফোটাচ্ছে। আনপড় রিয়াসাদ সংসারের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য মাসের পর মাস বাড়ির বাইরে পড়ে থাকে। থাকতে হয়। কষ্ট পায়। কষ্ট হয়। সহ্য করে, সহ্য করতে হয়।

— পুরুষ মানুষের জীবনটাই তো খাটার জন্য। পরিশ্রম করো রোজগারের জন্য। সে নিজের এলাকায় হোক কিংবা বাইরে। যেতে তো হবেই, রিয়াসাদ বলতো।

সত্যিই আজ যেন রিয়াসাদদের জীবন পরিযায়ী পাখির মতো, কিছুদিনের জন্য বসবাস করে- আবার মায়া কাটিয়ে ফিরে যাও। যান্ত্রিক জীবন ব্যবস্থায় নিজেকে সঁপে দাও। এহেন রিয়াসাদ নিজের এলাকায় রাজমিস্ত্রি হিসাবে পরিচিত। অনেক বাড়িতেই তার হাতের ছোঁয়া আছে। কিন্তু এই পেশায় মানুষ বাড়তে থাকলে, কাজের বরাত ক্রমশ কমতে থাকে। ঘাটতি পরে রোজগারে। সংসারে অভাব অভিযোগ সহ্য করতে পারে না রিয়াসাদ। দলবল নিয়ে পাড়ি দিয়েছিল ভিন রাজ্যে – কেরলে। বছরের পর বছর চলে নতুন নতুন প্রজেক্ট এর কাজ। একটার পর একটা চলতেই থাকে। প্রজেক্ট এই থাকার জায়গা রান্না করে খাওয়া। যেন এক স্রোতস্বিনী নদীর মত জীবন। গতির সঙ্গে তাল রেখে চলা এক জীবন। শিকড়ের বন্ধনে জড়িয়ে থাকা এক চলমান গতিময় জীবন। বৈচিত্র্য ভরা জীবন থেকে মানুষ পালিয়ে থাকতে পারে না। বাবা-মা, আত্মীয়-পরিজন, পড়শি চেনা-জানা মানুষজন। নিজের আ-শৈশব কাটানো পরিবেশ। কেমন যেন একটা মোহময়। কাছে এলেই যেন প্রাণে একটা আলাদা পরশ-আলাদা একটা অনুভূতি।

রিয়াসাদের মতো মিল্লাতও গ্রামের বাড়িতে ফিরেছিলো পার্বণের জন্য। না – ঠিক বাড়িতে ফিরেছিলো না, বরং বলা যাক এসেছিলো। কিছু সময়ের জন্য, কিছুটা সময় কাটানোর জন্য। বিজয়ার কোলাকুলি দেখে মনটা বড় উতলা ছিল হয়তো বা। তাই ঈদের কোলাকুলিটা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারল না মিল্লাত। সদ্য কেনা অল্ট্রো গাড়িতে ছেলে মেয়ে বউকে নিয়ে বাড়িতে এসেছিল। ঈদের নামাজ পড়েছিল গ্রামের ঈদগাহে। বাড়ির লোকেদের আদর আপ্যায়নে ত্রুটি ছিল না ঠিকই, কিন্তু নিজেকে কেমন যেন কুটুম কুটুম মনে হচ্ছিল মিল্লাতের। ছেলে মেয়ে অন্যদের সঙ্গে ঠিকমতো মিশতে পারছিল না অথচ এই পরিবারের রক্তই তাদের শরীরে বয়ে চলেছে। বিয়ের পরই মিল্লাত প্রমোশন পেয়ে ব্যাংকের অফিসার পদে এলো। বন্ধুদের বলতো,-এটা আমার স্ত্রী ভাগ্যে পাওয়া। বউয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ও থাকতো, কেন জানিনা-নিজের পারফরমেন্স কে কোন পাত্তা না দিয়ে বউ ভাগ্যে এত বিশ্বাসী হলো মিল্লাত। সারাক্ষণই এমন নস্টালজিয়ায় ডুবে থাকতো।

কিছুদিন পর বাড়ির বাইরে নতুন ঘর বাঁধার পরিকল্পনা এলো মিল্লাতের। পুরনো বাড়ির ঘেরা টোপ থেকে একটু নিজেকে সৌন্দর্যে-স্বাচ্ছন্দ্যে আনার চেষ্টা করেছিলো। সবকিছু ঠিকঠাক চললেও প্রশস্ত রাস্তার অভাবে সেই গোপন আশা পরিপূর্ণতা পাচ্ছিল না। শত চেষ্টাতেও পাশের জন ,সে জায়গা ব্যবহার করতে দিলো না। বিনিময়ের চেষ্টা, ভালো দামের লোভ, পুরোপুরি নস্যাৎ করেছিল জমি ওয়ালা। বিরক্তিতে মনটা কেমন যেন তেতো হয়েছিল মিল্লাতের, প্রতিবেশীর মনে হিংসার আগুন দেখেছিল সে। অন্যদের চেষ্টাতেও যখন বিফল হল মিল্লাত, তখন পুরোপুরি বাড়ি তৈরীর পরিকল্পনা বাতিল করল মন থেকে। এই সন্ধিক্ষণে মিল্লাতের সংসারে এলো নতুন অতিথি। এক পুত্র সন্তান। মেঘলা আকাশে এক ফালি সোনালী রোদ্দুর, ছেলের মোহে অন্য সবকিছু ভুলে গেল যেন। নিজের পরিবেশ-প্রতিবেশী। নিজের ভূমি-পরিজন। এসবে কোনদিনই পরিবিষ্ট ছিলো না মিল্লাত। নিজেকে নিজের মতো রাখাকেই পছন্দ করতো। হাতেগোনা দুটো বন্ধু, তাও প্রয়োজন মত কথাবার্তা-তারপর নিজের মতোই। আজও সেই ধারা বজায় রয়েছে। ছোট্ট তুলতুলে শরীরটায় মোহাবিষ্টের মতো চোখ রেখে, দিনের পর দিন কেটেছে- রাতের পর রাত। ছোট্ট শরীরখানা হাতের মধ্যেই একটু একটু বেড়েছে। হাত-পা নেড়ে খেলেছে। তারপর একদিন দু হাত দিয়ে বাপের গলা জড়িয়ে ধরেছে। মিল্লাতের চোখে নতুন স্বপ্ন। ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করা, যেটা এই পরিবেশে হওয়া সম্ভব নয়।

দাদা বলেছিল, – কেন তুই কি তাহলে মানুষ হোসনি এখানে ?
— বাচ্চাদের তেমনি স্কুল কোথায়? আজকের দিনে পাতি স্কুলে পড়ে কিছু হবে না। মিল্লাত বলেছিলো।
দাদা ম্লানমুখে বলেছিলো, – দেখ কোথায় ভালো স্কুল পাস।

কিছুদিনের মধ্যেই বেহালায় ফ্ল্যাট নিলো মিল্লাত। আটতলা বাড়ির, ছ’তলায় দুটো বেডরুম, কিচেন ডাইনিং ,বাথরুম – এক চিলতে ব্যালকনি। সুন্দর করে সাজিয়ে নিলো সব কিছু, স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যমাত্রায় সূচ পরিমাণ ছাড় দিলো না মিল্লাত। রোজিকেও পছন্দ-অপছন্দের ভাগীদার হিসাবে শুরু থেকেই দেখে নিয়ে যাচ্ছে। রোজি অদ্ভুত রকমের খুশি। মাটি থেকে অনেক উঁচুতে থাকার স্বাদই আলাদা। প্রথম দিনে অনুভব করেছিল সে। খোলা জানালায় দাঁড়ালে দিগন্তের অনেকটাই দেখা যায়, আকাশটা যেন কতো কাছে- সিঁড়ি ভেঙে ওঠার ঝুঁকি নেই, তরতরিয়ে ওঠানামা লিফটে।

মিল্লাত রোজিকে বলেছিলো, – জীবন মানে চার দেওয়ালে বাক্সবন্দি হয়ে থাকা নয়। জীবন মানে টাকা রোজকার করো, সংসারে খাও-দাও আত্মীয় -পরিজন, পরিবেষ্টিত হয়ে দিন কাটানো নয়। এইভাবে চলতে থাকা মানুষগুলো কতো পিছিয়ে পড়ছে ভাবতে পারবে না। সকলেই কেমন সংস্কার আঁকড়ে পড়ে আছি আমরা। নতুন জেনারেশনের কোন ডেভলপমেন্ট নেই। চিন্তা-ভাবনা নেই। কেমন যেন গয়ংগচ্ছভাব।

অবশেষে মিল্লাত একদিন শহরবাসী হলো, ফ্ল্যাট বাড়ির বাসিন্দা হলো। সাজানো গোছানো নতুন বিষয় -বৈভবে রোজি কেমন বিভোর হয়ে রইলো। মিল্লাত ও সুখী জীবনের একটা নতুন ঠিকানা গড়ে তুলল। ফ্ল্যাট বাড়ির আদব-কায়দা একটু একটু করে রপ্ত করতে লাগলো।
অফিস থেকে ফিরে, একটু চা খেয়ে ছেলেকে নিয়ে পড়তো দুজনেই। “সাউথ পয়েন্ট” স্কুলে ভর্তি করেছে ছেলে অয়নকে। এখন থেকে ঠিকমতো তৈরি করতে না পারলে, জিনিয়াস হওয়া সম্ভব হবে না। অফিস কলিগ অমিতদাই পরামর্শ দিয়েছিলো ছেলেকে সাউথ পয়েন্টে ভর্তি করার। ওর মেয়ে ওখানেই পড়ে, অমিত দার রেফারেন্সেই ডোনেশনটা কম লেগেছে। মিল্লাতের আবাসনে ডি-ব্লকে ফ্ল্যাট। অমিতদার জি ব্লক। আবাসনের গেট থেকে স্কুলের গাড়ি এসে নিয়ে যায় সকাল সাতটায়, বিকেল চারটে স্কুল ফেরত দিয়ে যায়।গ্যাঁটের কড়ি ফেললে একটু নির্ঝঞ্ঝাট হওয়া যায় এ ব্যাপারে। তবে ইস্কুলের চাহিদা মতো যোগান না থাকলে, সে আবার মস্ত ঝঞ্ঝাট। ছেলে অয়ানকে তিলে তিলে গড়ে তোলার গণ্ডি ছেড়ে বাইরে আসার, অন্যদের অন্যদের সঙ্গে মেলামেশা-আড্ডা, পরিচিতি এ পর্যায়ে আসার মতো সময় বার করতে পারে না মিল্লাত।

আ-শৈশব জীবনের পদ্ধতিগত কোন তফাৎ আজও হলো না। নিজের প্রয়োজন টুকু ছাড়া, অ-প্রয়োজনীয় সময় খরচ করার মতো মানসিকতা কোন কালেই ছিল না, আজও নেই। অথচ মিল্লাত জানে-বোঝে, অন্যের কাজে যদি কেউ সময় বা মদত না দেয়। তার প্রয়োজনে- কাজে, অন্য কেউ সময় দেবে না। মানুষ সমাজবদ্ধ জীব, সমাজ- বহির্ভূত জীবন চাইলে বেঁচে থাকা যাবে, কিন্তু মরা চলবে না। কারণ মৃত্যুর পর নিজের কিছুই করার থাকেনা। তখন অন্যের সাহায্য ছাড়া শেষ যাত্রা অসম্ভব। বৈভব-সৌন্দর্যে ভরপুর মিল্লাতের সংসার। মেয়ের আগমনে চতুর্থ জন প্রাপ্তি ফ্ল্যাট বাড়ির।

কাজের মেয়ে শিলাদি বড় ভালো মানুষ। তারই সেবা যত্নে আদরে বড় হয়েছে মেয়ে অস্মিতা। তাকেও অয়নের স্কুলে ভর্তি করেছে মিল্লাত। ছেলে মেয়ে স্কুলে যায়। মিল্লাত অফিসে যায়। সকালের সময় থেকে বড় একা লাগে রোজির। কাজের মেয়ে শিলাদি কাজ ছেড়ে চলে গেলে চার দেয়ালে বাক্সবন্দি হয়ে যাওয়া রোজি। খাওয়া ঘুম আর টিভি দেখা ছাড়া কোন কাজ নেই। দিনের পর দিন এভাবে চলতে থাকা রোজি এবার ক্রমশ হাঁপিয়ে উঠতে থাকে। দরজার বাইরে এলে করিডোর সিঁড়ি আর লিফটের দরজা ছাড়া কিছুই দেখা যায় না। সকলেরই ব্যস্ত জীবন। অন্যদের দিকে তাকানোর সময় কোথায়, অথচ গ্রামের একান্নবর্তী পরিবারের মেয়ে রোজি সুখ খুঁজতে এসে কেমন অসুখে পড়তে শুরু করেছে। রোজির ভালো না লাগার সময়কে, অসুখী মন টাকে সারাতে-মিল্লাত নতুন “অল্ট্রো” গাড়ী নিলো। প্রতি রবিবার সহ ছুটির দিনগুলো বেরিয়ে পড়তো সারা দিনের মতো। হৈ- হুল্লোড় খাওয়া-দাওয়া সেরে রাতে বাড়ি ফিরতো সকলে। নতুন আনন্দের রেশ দুদিনেই ফিকে হয়ে যেতো, আবার মনটা সেই তেতো হয়ে থাকতো রোজির। মিল্লাত এবার মাঝেমধ্যে ছুটি নিয়ে বাড়িতে সঙ্গ দিতো রোজিকে, অনুভব করার চেষ্টা করলো স্ত্রীর একাকীত্বের। আত্মীয়-স্বজন, সমাগম হয়নি কোনদিন তেমন ভাবে, শ্বশুর-শাশুড়ি মাঝেমধ্যে এলেও থেকে যাওয়ার স্বপ্ন তারা দেখে নি কোনদিন। মেয়ের সম্পদ-বৈভবে চোখ ভরে নিয়ে চলে যেতো তারা। সুখ যে অনুভূতির, বাইরে থেকে বোঝবার কোন উপায় নেই। দুঃখী মন, অসুখী শরীর- তার মুখের ছবি বলে দেবে, কিন্তু সুখের সাগরে ভাসা নৌকো ফুটো থাকলে- বোঝা বড় দায়। মিল্লাত হয়তো বা বুঝেছিলো রোজির অসুখী মনটাকে। ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলো মিল্লাত রোজিকে নিয়ে, শারীরিক কোন সমস্যা নেই। কিন্তু “মেন্টালি ডিপ্রেশনে” ভুগছে, একাকীত্ব গ্রাস করেছে মনটাকে। সকলের মাঝে থাকতে হবে ওকে।

— আসলে, ছেলে- মেয়ে সকালেই স্কুলে চলে যায়, আমি অফিস বেরোলে- ফ্ল্যাটে ও একাই থাকে। দুই পাশের ফ্ল্যাটের দুজনেই চাকরি করে তারাও বেরিয়ে যায়। ফলে সারাদিন একাই থাকতে হয়। এক দমে ডাক্তারকে বোঝায় মিল্লাত।
— সমস্যা তো সেখানেই। আমরা সুখ খুঁজতে শহরে আসি, ফ্ল্যাট নিয়ে নিজের মতো করে বাঁচতে চাই । তারাই তো তলে তলে মরছি ।ডাক্তার বললে মিল্লাতকে।
— তাহলে এখন কি করনীয় ?
— ওষুধ ঠিকঠাক খাওয়ান। কিছুটা সময় সকলেই ওর সঙ্গে শেয়ার করুন। বছরে এক- দু’ বার লম্বা ট্যুরে বের হবেন। তাতে পরিবর্তন হবে মনের, আস্তে আস্তে কেটে যাবে এটা। আর বাড়ির কিছু কাজ নিজে হাত লাগাতে হবে, তাতে অনেক টাইম পাস হয়।
প্রেসক্রিপশন হাতে ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হলো মিল্লাত আর রোজি।

শহরের গতিময় জীবন ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে থাকে। মিল্লাতের ছুটির দিনে চারজনের কলবলানী ফ্ল্যাট বাড়িটা কিছুটা প্রাণ পায়‌। সপ্তাহের বাকি দিনগুলো আবার সেই নীরব- নিথর। সামনের ফেব্রুয়ারিতে মিলাদ ঠিক করেছে পাহাড়ে কোথাও বেড়াতে যাবে সে সিকিম বা গ্যাংটক। মাঝে মাঝে মিল্লাতেরও মনে হয়। ঝাঁ চকচকে ফ্ল্যাট বাড়ি জীবনটা এমনই। সবাই ব্যস্ত নিজ নিজ কাজে। কেউ কারো খোঁজ নেয় না, খোঁজ নেবার সময় থাকে না- আবার তেমন চেষ্টাও করা হয় না। ছেলে -মেয়ের খেলাধুলার কোন জায়গা নেই। সারাদিন ইস্কুল। সন্ধ্যে টিউশন। নিজের পড়া, একটু আনন্দ টিভির সামনে বসে। অবসর জীবনে সময় কাটানোর ভাবনা, এখন মিল্লাতও ভাবতে বসেছে। রোজির মত একাকীত্ব তখন থাকবে না। ওকে পাশে পাবে। দুজনে একসঙ্গে সময় কাটানো খুব কষ্টের হবে না।

ঈদগাহ থেকে বেরিয়ে আমারই মুখোমুখি মিল্লাত। অবাক বিস্ময় মুখের দিকে তাকিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলো আমাকে।
— কেমন আছো, মাষ্টার দা?
— আমি তো লাট খাওয়া ঘুড়ির মতো ঘুরতে ঘুরতে আবার সোজা হয়ে গেছি। কৌতূহল রেখে বললাম, – কিন্তু তুমি কেমন আছো? এতদিন পর হঠাৎ এমন দিনে।
— মনটা ভালো নেই গো মাস্টার দা।
— কেন, তোমার তো ভালোই থাকার কথা। ভালো চাকরি, ভালো বাড়ি, ছেলে মেয়ের তৈরি হওয়া স্ট্যাটাস। কম কিসে ?
— সুখের আসল সংজ্ঞা বলতে পারবে মাস্টারদা? হঠাৎ এমন প্রশ্নে আমি একটু অবাক।
— “এর সংজ্ঞা তুমি নিজেই ” । হয়তোবা কথাটা একটু ব্যঙ্গ হয়ে গেলো।

ম্লান হাসলো মিল্লাত। কিছুটা সময় একটু আনমনা হলো যেন। মুখের উপর অদ্ভুত একটা ছায়া খেললো। বলল, “বনে গিয়েও মনের হাত থেকে রেহাই পেলাম কোথায়”!

গামছাটা ডুবতে দিও না

রিয়াসাদ যখন ঘাটের ধারে পৌঁছালো, তখন ঘাট ফাঁকা। এক চিলতে ঝলমলে রোদ ঘাট খানা বুকে আগলে রেখেছে। অভ্যেস মতোই কোমরে কষা গামছা খানা খুলল।চার ভাঁজ করে একটু দূরে নিথর জলের উপর ছুড়ে দিল। ভিজতে ভিজতে গামছা খানা ক্রমশ: জলের ভেতর ডুবতে থাকে। মনের মধ্যে একটা ঢেউ কেমন যেন আছড়ে পড়ে রিয়াসাদের। চোখের সামনে ছবিগুলো দেখতে পায় রিয়াসাদ। যেন গামছার মত ক্রমশ ধীরে ধীরে অতলে তলিয়ে যাচ্ছে সে। একান্নবর্তী পরিবারে জন্ম ও বেড়ে ওঠা। আর সেজন্যই হয়তো বা ওর চিন্তা ভাবনা সমষ্টিগত।কিন্তু সময়ের অকাল স্রোতে ঋতুবদলের মতোই মানুষের চরিত্র বদলেছে। বদলেছে চিন্তা -ভাবনা। মুখের উপর সত্যকে মিথ্যা বলতে কোনো দ্বিধা করেনি। হ্যাঁ-কে,না করে দিতে কোন কুণ্ঠা নেই। এগুলো নাকি যুগের পরিবর্তন। রিয়াসাদ বিষন্ন হাসে। মনে মনে বলে – যুগের নামে নিজের পরিবর্তনকে আড়াল করা। কিন্তু কেন এ ধরনের লুকোচুরি? মানুষ ভালবাসার অধিকারে যে জিনিস পেতে পারে, ভণ্ডামি করে যুগের পরিবর্তন নাম দিয়ে- কেন ভণিতা করে সেটা পেতে চায়। কি লাভ হল এতে?
ওর বাবা বলতো, সরলতা মানুষের মনকে নিষ্পাপ করে। কৌশল, মনকে বিচ্ছিন্ন করতে শেখায়। কিন্তু বাঁচার লড়াইয়ে কোনটাই একক ভাবে চলে না। বেশি দিন চালানো যায় না। একটা সমন্বয়ের প্রয়োজন। সরলতা নিশ্চয়ই থাকবে, তবে পদ্ধতিগত কিছু কৌশল ও জানা দরকার। না হলে, কোন কোন কাজে ঠকতে হয়।

— দেখে শেখা, নয়তো ঠকে শেখা। এ দুটোই তো পদ্ধতি। তবে ঠকানোর থেকে ঠকা ভালো। নিজেকে শুদ্ধ করা যায়। রিয়াসাদ ওর বাবা কে বলতো।
আসলে ও এককভাবে কিছুই ভাবতে পারে না। নিজের জন্য কিছু করবে। নিজের করে নিতে হবে, এটা নাকি একপ্রকার দুশ্চিন্তা। ওর বন্ধু সমিরন একদিন বলেছিল – তুই চাকরি করিস, শাড়ির বিজনেস রয়েছে। কিন্তু সবই তো সংসারের ঢেলে যাচ্ছিস। গুছিয়ে রাখছিস না কেন।
পাগল কোথাকার। গুছিয়ে রাখা মানে? রোজগার তো খরচের যোগান। খরচা করতে হবে বলেই তো রোজগার করি।
সেটা ঠিক কথা। আমি, তুই কেন, সারা পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষই এটা জানে। কিন্তু আজ তুই একা আছিস। কিন্তু কাল যখন দোকা হবি তারপর ।
ধ্যুৎ- আগ বাড়িয়ে অতশত ভাবলে মানুষ তো এক পা নড়তে পারবে না। প্রতিটি পদক্ষেপেই তাহলে ভাবতে হবে, পা ঠিক পড়ছে কিনা। এভাবে জীবন চলেনা। কিছুদিন চলতে পারে, তবে স্থায়ী হবে না।
আমি তোকে বিচ্ছিন্নতাবাদ শেখাতে এসেছি ভাবছিস কেন? আমার জীবন দিয়ে দেখা, আমার অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করা জিনিস তোকে দিতে চেয়েছিলাম। আমিও তোর মতোই একদিন ভাবতাম।অনেক কর্জের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে , সকলের বোঝা মাথায় নিয়ে ছিলাম। সকলের বোঝা যখন আস্তে আস্তে হালকা করতে পারলাম। কিন্তু ঘাড়ের বোঝা ক্রমশ ভারী হয়ে উঠেছিল। দেনার দায়। অন্যেরা যখন বোঝা বইবার উপযুক্ত হল। আমার মত জনকে একটা মাটির বোঝা সমান করে দিলে। আর আমার দেনার বোঝা ঘাড় থেকে মাথায় চেপে বসল। আমি যখন দিশেহারা, কেউ আমায় সঙ্গ দেয় নি। তখন বরং বিদ্রূপ করেছে। তাই ভাবি এখন, আমার মতো কেউ যেন নিঃসহায় না হয়।
রিয়াসাদ কথার মাঝে কেমন উদাস হয়ে গিয়েছিলো। মেঘের কোলে ডানায় ভর করে তার মনটা বাতাসে ভাসছিলো। কখন যে সমিরন কথা শেষ করেছে যেন খেয়ালই করেনি।
কিরে? সমিরনের ডাকে যেন সম্বিত ফিরল।
বললে, ভেরি স্যাড। ব্যতিক্রম নিশ্চয়ই থাকবে। হারিয়েছিস কিছু-বা অনেক কিছু, কিন্তু সবথেকে বড় জিনিস হেরে যাবি না নিজে থেকে।

গামছা খানার অস্তিত্ব বজায় রেখেই হুড়মুড়িয়ে ঘাটের জলে নেমে, তুলে ফেললে তাকে।চান করে যখন বাড়ি এলো রিয়াসাদ ঘড়িতে আটটা বাজতে পাঁচ মিনিট বাকি।কোনরকমে খাওয়া সেরে বেরিয়ে পড়ল নটা পাঁচের ট্রেন ধরতেই হবে তাকে। সমিরনের কথাগুলো মাঝেমধ্যে ভাবে না, এমন কথা নয়। কিন্তু বিশ্বাস যে মানুষের জীবনে একটা পবিত্র গুণ। বিশ্বাস হারানো একটা মস্ত পাপ। বিশ্বাস কোন মানুষের জীবন থেকে হারিয়ে গেলে, সে নিজেই অকেজো হয়ে পড়বে। পড়তে বাধ্য হবে। কথাটা সত্যি, পৃথিবী যে ক্রমশ বদলে যাচ্ছে- কোন কোন ক্ষেত্রে অনুভব করতে হচ্ছে তাকে। চারপাশ কেমন যেন বেসুরো। চেনা মানুষগুলো মাঝে মধ্যে কেমন যেন অচেনা -অচেনা লাগে। কখনো-কখনো ব্যাপারগুলো কাকতালীয় মনে হয়েছে। আবার কখনো সত্য মিথ্যার বিভ্রান্তি তৈরি করেছে মনের মধ্যে।

দিনে-দিনে, তিলে-তিলে পৃথিবীর বয়স বেড়েছে। সেদিনের শিশু আজ কৈশোর পেরিয়ে যুবক। সবুজ পাতা গুলো হলুদ হয়ে ঝরে পড়েছে, কোনোটা বোটায় আলতো ভর করে স্থবির। যেকোনো সময়ে ঝরে যাবে। পুরনো রংচটা পৃথিবীতে কারা যেন নতুন পলেস্তারা করেছে। ঝকঝকে রং চাপিয়েছে। তাল মিলিয়ে মানুষগুলো কেমন যান্ত্রিক হয়ে উঠেছে। কেউ কেউ রিমোট হাতে জনাকয়েক মানুষকে পরিচালনা করছে। আবার রিমোটের বাইরে এদের কোনো ক্ষমতাই নেই। রিয়াসাদের জগৎটা একটু অন্য ধারণায় আবদ্ধ ছিলো। যেখানে কোন স্বার্থপরতা নেই। আত্মসাৎ নেই।মানুষ জন্ম টাই একে অন্যের কাজে লাগার অঙ্গীকারে আবদ্ধ থাকবে। থাকবে ভালোবাসা-স্নেহ-হৃদ্যতা, মায়া -মমতা। একটা একান্নবর্তী সংসার।কিন্তু বন্ধ চোখ খুলে এই সভ্য দুনিয়াটাকে দেখার চেষ্টা করলো যেই, বিদ্যুতের শক খাওয়ার মতই একটা ঝাঁকুনি খেতে হলো তাকে। একি দেখছে সে! তাহলে কি তার এতদিনের স্বপ্ন -বিশ্বাস এর কোন মূল্য নেই। রিয়াসাদ পুরনো ছবির স্মৃতি গুলো হাতড়াতে থাকে। ছোট ভাই বোনের লেখাপড়ার দায়। তাদের বড় করার স্বপ্ন। মেজোর কারখানা বন্ধ। তার সমস্ত দায়। তার ছেলেমেয়েদের নিজের মতোই ভালোবাসা। সকলের চাহিদা -যোগান একটা সমন্বয় রাখতে, নিজের কথা খেয়াল রাখতো না। সকলের মুখে হাসি দেখলে তার কোন দুঃখ কষ্ট থাকতো না।

সংসারের প্রয়োজনে এই বাড়িতে নতুন বউ চাই। রিয়াসাদ এর বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত কে নাকচ করতে না পেরে, মেজো ছেলেকেই বিয়ের টোপর পরিয়ে ছিলো ওর বাবা। অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে সম্পন্ন হয়েছিল বিয়ের কাজ। অনেকটাই দায়িত্ব নিয়েছিল রিয়াসাদ। কত বছর হয়ে গেল, অথচ আজও চোখের সামনে ভাসে ছবির মত দিনগুলো। সেবার ছেলেটার পায়খানা-বমি। হাসপাতালে দিনরাত কেটেছিল রিয়াসাদের। মেজোর তেমন দায়ই ছিল না। ডাক্তার যখন বলেছিলো, এখন আর তেমন কোনো ভয় নেই। বাড়ি নিয়ে যান। ওষুধগুলো ঠিক ঠিক খাওয়াবেন। আপনার মিসেস কে দেখিয়ে……
সরি স্যার। উনি আমার বউমা। মিসেস নন।
স্ট্রিমলি স্যরি। আপনার উপস্থিতি টা আমাকে ভুল করে দিয়েছে।

সকলে যখন রিয়াসাদের কাঁধে ভর করে নিজের পায়ে দাঁড়ালো। ওর নিজের সময়টা তখন মধ্য গগনের কাছাকাছি। বাবা-মায়ের ঐকান্তিক এবং শেষ প্রচেষ্টায় বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত পাল্টাতে হলো তাকে। তখনো এমন একটা সুখী সংসারের আস্তিনে কিছু বিষ বা গরল, লুকিয়ে রাখা আছে ভাবতেই পারেনি সে। মা বয়স জনিত কারণেই বৌমার দায়িত্বে সংসার দিয়ে বেশ আরামে কাটাতো। একজন সংসারে এলে সেবাযত্নের আধিক্য বাড়বে, ভেবেই বেশ আনন্দে বিভোর ছিলো। সবদিক বজায় রেখেই, কিছুটা আড়ম্ভরেই এই বিয়েবাড়ি সেজেছিলো। নতুন বউ বাড়িতে এলো। কিন্তু সুর কোথায় যেন তার কাটছিল বারবার। নজর এড়ায়নি রিয়াসাদের। তবুও না দেখার- না জানার ভান করেছিলো। নতুন মানুষ দু-চার বার যাতায়াতে নিজেই সামলে নেবে নিজের দায়িত্ব। বাবা-মাকে বুঝতে দেয়নি অশনি -সংকেতের। তবে মনের মধ্যে শুরু হয়েছিল রক্তক্ষরণ।

সেদিন বউ ওকে বলেছিল – এখানে আমার ভালো লাগে না।
— কেন, নিজের বাড়ির জন্য মন কেমন করছে?
— না, তা নয়। আমাকে ভুল বুঝো না। সত্যি বলছি, এখানে আমি মূল্যহীন অবস্থায় থাকবো আশা করিনি। অথচ তাই হলো আমার জীবনে।
কিছুটা চমকালো রিয়াসাদ। তবে মচকালো না। তার ধারণা ছিল যেটা একটু দেরিতে শুরু হবার, সেটা আসলে শুরু হয়ে গেলো। তবুও বললো – কি ব্যাপার ভালো করে বলো।
— অশান্তির ভয়েই তোমায় কিছু বলিনি। আমাকে সব সময় কেমন হেয় হয়ে থাকতে হয়। বাড়ির ঝি চাকর এর সঙ্গে যে ব্যবহার হয়, আমি তার থেকেও খারাপ ব্যবহার পাই। আমাকে যেভাবে কাজের ফরমাশ করা হয় বাড়ির কাজের মেয়েকে……. কথা শেষ করতে পারল না রুমি। তার চোখে ঝরণার ধারা।

রুমকে শান্ত করার জন্য রিয়াসাদ বলল – মায়ের আড়ালেই সবকিছু হচ্ছে নিশ্চয়ই। কোথাও একটু ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। তোমাকে এ নিয়ে বেশি ভাবতে হবে না। আমি সব ঠিক করে দেবো। যৌথ সংসারে অনেক ঝামেলা আসে। যায়। মন খারাপ করো না। কিন্তু পারেনি রিয়াসাদ। জটিলতার জট খুলতে সে নিজেই বিশবাঁও জলে। এখানে ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থের চেষ্টায় একজনের জীবন বিপন্ন হলে কারো কিছু এসে যায় না। মনে পড়ে বাবার কথা-“সংসার জীবনে পদ্ধতিগত কিছু কৌশল জানা দরকার। না হলে ভীষণ ভাবে ঠকতে হবে”। স্মৃতির পর্দায় ভেসে আসে বন্ধু সমিরনের মুখ। তার কথাগুলো কানের পর্দায় গুনগুন করে ওঠে।”আমি তোকে বিচ্ছিন্নতা শেখাতে এসেছি ভাবছিস কেন? আমার জীবন দিয়ে দেখা-হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করা জিনিস তোকে দিতে চেয়েছিলাম। যাতে আমার মত যন্ত্রণায় কেউ না পড়ে”। রিয়াসাদ ভাষা কাঠের মত হয়ে গেল। নিজের স্ত্রীর কাছে একজন পরিপূর্ণ পুরুষ হতে পারলে না। সংসারের একজন যোদ্ধা অন্যায়ের শিকার হয়ে, বিকলাঙ্গে পরিণত হলো। বিপর্যয় ক্রমশ তাকে ঘিরে ফেলতে লাগলো।কোন এক অজানা ঝড়ে তার দীর্ঘদিনের সাজানো বাগান শুকিয়ে গেলো। তিল তিল করে ব্যবসা গড়ে তোলা। ভাই গুলোকে দায়িত্বে রেখে তাদের স্বাবলম্বী করে তোলা। আস্তে আস্তে শেষ হয়ে গেলো। টাকা-পয়সার হিসাব মেলে না। চরম অশান্তি মুখে বলা হলো,-তোমার বিয়ের সময় যে টাকা খরচ হয়েছে তার কোন হিসেব নেই। দেওয়া যাবে না।
ব্যবসা শেষ হলো। ক’মাস পর হঠাৎ অফিসে চাকরির ছাটাইয়ের নোটিশ ঝোলানো। দিশেহারা রিয়াসাদ। অসহায় রুমি। উপেক্ষা। বঞ্চনা। প্রতারণা ওদের জীবনের একটা অঙ্গ হয়ে গেলো এই মুহূর্তে। শুধু “বিশ্বাস” এই মূলধন নিয়ে আবার নতুন করে গড়ার স্বপ্ন দেখলো তারা। চরম দুঃসময়ে এক বন্ধু নতুন করে বাঁচার রসদ যোগাবে, সহায়তা করবে বলে পাশে দাঁড়ালো। দিন যায়। রাত যায়। পৃথিবীর বয়স বাড়ে।

এভাবে মিথ্যা স্বপ্ন দেখে কি লাভ ? রুমি কষ্ট করেই কথাটা বলল রিয়াসাদকে। মিথ্যে বলছো কেন ? চেষ্টা তো চলছে।ভিত্তিহীন চেষ্টার পেছনে সময় চলে গেলে, সে সময়টা ফেরত পাবে না। মনে হয় আমরা মিথ্যে স্বপ্ন দেখছি। রুমি, বিশ্বাস তোমাকে করতেই হবে। বিশেষ করে মানুষকে ,আবার ঠকতে হবে তাইতো ? এভাবে তো জীবন চলে না। চাহিদা- যোগান এটার সমন্বয় তো চাই। তাহলে তোমার পাশে আমাকেও দাঁড়াতে দাও। আমিও কিছু করার চেষ্টা করি
তুমি এত বেশি ভাবো কেন বলতো ? কষ্টগুলো আমাকে সহ্য করতে দাও না।

হারানো পথের ঠিকানা খুঁজতে নিজেই কঠোরভাবে এগিয়েছিলো রিয়াসাদ। মিথ্যে স্বপ্ন দেখানোর ঘোর থেকে বেরিয়ে এসেছিল প্রতিজ্ঞা নিয়ে, কিছু তাকে করতেই হবে। আস্তে আস্তে তার রুক্ষ জমি আলোর ঠিকানা পেলো। হয়তো রিয়াসাদ হেরেছিলো রুমির মনের কাছে। তার ভবিতব্যের কাছে। কিন্তু ওর আজ ও দৃঢ় বিশ্বাস আছে, গামছাটা জলে পুরো ডুবতে দেবো না ।

সুখ

অফিস থেকে বাড়ি ফেরার মুখে প্রথম যেন পাড়াতে এ সময় লোডশেডিং দেখলো অমিত।
ঘুটঘুটে অন্ধকারে সারা ফ্ল্যাট বাড়িটাকে যেন পাতালপুরি মনে হল তার। মনিকা নিশ্চয়ই একা এই অন্ধকারে ভয় কাঠ হয়ে আছে। মনে হতে কেমন যেন নিজেই ভয় পেয়ে গেল। অন্ধকার হাতড়ে কলিংবেলের সুইচ নিতে গিয়ে মনে পড়ল কলিংবেলতো বাজবে না।
ঠুক ঠুক আওয়াজ তুলল দরজায় টোকা দিয়ে। মনিকার নাম ধরে চেঁচালো বার কয়েক। একটু সময় অপেক্ষা করার পর ভেতর থেকে ছিটকিনি খোলার শব্দ হলো। আর মুহূর্তে ছোট্ট এক ফালি আলো এসে পড়ল অমিতের মুখে।

— কতক্ষণ অন্ধকার রেখেছে এভাবে?
— সেই সন্ধ্যা থেকেই। এই মোম জ্বালিয়ে বসে আছি। কি ভয় করছিল!
— কেন কাজের মেয়েটা আসেনি আজ?
— সে তো সন্ধ্যার আগেই চলে যায়।

বাথরুমে ঢুকলো অমিত। হাতে মুখে সাবান বোলাল। পাজামা-পাঞ্জাবি পরে আরাম করে বসলো সোফায়। টিপট সামনে রেখে পাশে বসলো মনিকা। পুডিংয়ের শেষ টুকরো টুকু মুখে পুরে হাত তুলে নিতেই, যেন অবাক চোখে মনিকা বলে উঠলো, — কি হলো, ডিমটা খাও।
— না, আর খাবো না। চা দাও।

চায়ের কাপটা হাতে তুলে দিতে দিতে বলল মনিকা, — একটু সকাল-সকাল ফিরতে পারো না। সন্ধ্যাটা ভীষণ একা লাগে।
— ইচ্ছে থাকলেও উপায় থাকে না। বলে মৃদু হাসলো অমিত।

অথচ অমিত জানে মনিকা বাড়িতে ঠিকমতো এডজাস্টমেন্ট করতে না পারার জন্যই, সকলকে ছেড়ে চলে আসতে হয়েছিল। প্রথম সোদপুরের ভাড়া বাড়িতে। তারপর স্রোতের অনুকূলে পালতোলা ডিঙি ভাসিয়ে ক্রমশ–এগোতে এগোতে আজ এই সুন্দর সাজানো আলিপুরের ফ্ল্যাটে। কিছু মানুষ আছে, যারা মানুষের ভিড়ে সুখ পায়। মানুষের আকর্ষণই যেন মেলার আকর্ষণ। কিছু মানুষ আছে যারা একা একা থাকতে ভালোবাসে। তাদের কাছে লোকালয় বড় কঠিন জায়গা। মানুষের ভিড়ে তাদের সুখ যেন কোথায় হারিয়ে যায়। মনিকার জীবনটা মানুষের ভিড়ে সুখ হারানো অসুখ একটা। এই অসুখের তাড়নায় অমিতকে বারবার সরিয়ে আনার মন্ত্র পাঠে জর্জরিত করেছে।

–এভাবে অ্যাডজাস্টমেন্ট আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
–সবকিছুকে মানিয়ে চলা মানুষের বড়গুণ।
–সোনার পালঙ্কে কাঁটা বিছিয়ে শুয়ে- পালঙ্কে শোয়ার আরাম আমি চাইনা।
–হেঁয়ালি কথা তোমার মুখে মানায় না।
–জানা ঘটনা কে যারা মানতে চায় না। তাদেরকে বেশি বলতে ভালো লাগে না আমার।

অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ। অমিতকে ক্ষতবিক্ষত করেছে বারে বার। সারাদিন আহারের সন্ধানে দিগন্তের চারিদিকে ছড়িয়ে থাকা পাখিগুলো নিরাপদ আশ্রয়ে ফেরে। কিচির-মিচির শব্দ তোলে বাসায়। শত সহস্র কন্ঠের কলবলানি সারা দিনের কাছের হিসাব দেয় যেন ।এতে যে বিরাট সুখ। এই সুখের অনুভূতি বুকের উত্তাপকে ক্রমশ বাড়াতে থাকে। সুখের নীড়ে তারা একসময় ঘুমিয়ে পড়ে।

অমিত কর্মব্যস্ত সারাদিনের শেষে বাড়ি ফেরে। এটা তার কাছে যে কতটা নিরাপদ আশ্রয় তা সে নিজেই জানে না। কিচির-মিচির শব্দের বদলে কথার কচকচানি শোনে। সারা দিনের অজস্র অভিযোগ, অশান্তি একসঙ্গে ঢেলে দেয় কখনো মা, কখনো বা স্ত্রী। সুখের অনুভূতি বুকের কপাট হাট করে খুলে চলে যায়।প্রথম প্রথম বোঝানোর চেষ্টা করতো। কখনো মাকে কখনো বা স্ত্রী মনিকাকে। বাবাকে কখনো এসব ব্যাপারে কথা বলতে শোনেনি অমিত। একবার সে বাবাকে বলেছিল, — তুমি তো সারাদিন বলতে গেলে বাড়িতে রয়েছো, কিছু বলতে পার না ?

— বলতে ইচ্ছে করলেও – চেষ্টা করি না।
— তাহলে তো এভাবে থাকা মুশকিল।
— বনে গিয়েও মনের হাত থেকে শান্তি নেই- যতক্ষণ মনের কোণে বন আছে!

সেই প্রথম সেই শেষ। বাবাকে কোনদিন আর বলেনি কোন কথা। কোনদিন শোনাও যায়নি তার কথা। নীরব দর্শক হয়ে দেখেছে। কখনো বা ধারাভাষ্যের মতো যা কানে এসেছে তাই শুনেছে। একমুখ ধোঁয়া ছেড়ে অ্যাসট্রেতে ছাই ঝেড়ে ফেলে সোফায় গা এলিয়ে দিলে অমিত।
— বাবা আজ অফিসে টেলিফোন করেছিল।
— ও তাই বুঝি! কথাটায় কেমন যেন নিরুৎসাহের সুর ঝরে পড়ল।
— মা’র শরীরটা ভালো নেই। পিতুর মেয়ের বিয়ে, তাই কিছু টাকা দিতে হবে। ওদের অবস্থা তেমন ভালো নয়।

অমিত সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ে। চুপচাপ শব্দবিহীন সময় কাটে কিছুক্ষণ।
— কিছু বলছো না যে ?
— এতে আমার কি বলার আছে ? তোমাদের বোনের মেয়ের বিয়ে। দেওয়া না দেওয়া তোমার ব্যাপার। আমার এন্টারফেয়ারের প্রয়োজন মনে করি না‌।
— এভাবে তোমাদের, তোমার- বলছো কেন ? আমার মানে কি তোমারও নয় ?
— ওই বাড়ির সঙ্গে আমার সম্পর্কটা কিছুটা অর্থহীন। আর তুমি নিশ্চয়ই বোঝো, ওই নাগপাশ থেকে তোমাকে মুক্ত করার জন্যই। আজ তোমার স্ট্যাটাস কোথায় এসেছে।

মুখটায় একটা হালকা হাসির রেখা টানলো মনিকা। ঘনিষ্ঠ হয়ে বসলে এক মুহূর্ত। তারপর বুকের উপর মাথাটা রেখে যেন পরম শান্তিতে বললো, — আমি এভাবেই তোমাকে দেখতে চেয়েছিলাম। ঠিক আমার মনের মতো করে। অমিত পরম তৃপ্তিতে এ সময় হাত বোলাতে থাকে মনিকার মাথায়।
— সত্যিই মনিকা, তুমি আমার জীবনে আশীর্বাদের মতোই। তোমার জন্যই আজ পাকড়াশী সাহেবের এত কাছে আসতে পেরেছি। প্রমোশন পেয়েছি। তার দেওয়া ফ্ল্যাট পেয়েছি। বলতে গেলে সুখের সাগরে এসে পৌঁছেছি।

হঠাৎ ক্রিং..ক্রিং.. ক্রিং শব্দে টেলিফোন বেজে উঠলো। মুখে একটু বিরক্ত ভাব নিয়ে সোফা ছেড়ে উঠলো অমিত। রিসিভার তুলে বলল, — হ্যালো, অমিত বলছি। আরে- স্যার, আপনি? গুড ইভিনিং। ওদের ভাউচার তো আজ সকালেই পাঠানো হয়েছে স্যার। হ্যাঁ .. না- না, তা কেন ? হ্যাঁ, ভালো আছে স্যার। এইতো মনিকা বসেই আছে। আজ থাক। অন্য একদিন খেয়ে আসবো। থ্যাংক ইউ স্যার। গুড নাইট।
— কে ফোন করেছিল গো ?
— মিস্টার পাকড়াশী। তোমার কথা জিজ্ঞেস করছিলো। বলে ডিনারে চলে এসো মনিকে নিয়ে। বললাম আজ থাক অন্যদিন যাবো।
— তোমার পাকড়াশী সাহেবের সব ভালো। এখনো ব্যাচেলার ব্যাপারটায় খটকা লাগে। আরও ব্যাপারে কেমন যেন…
— কি ব্যাপারে?
— সব সময় তাকানোটা ভালো লাগে না। কেমন যেন লোলুপতা থাকে মাঝে মধ্যে। এটা একটা খারাপ লক্ষণ।
— দেখো আমার বসকে এভাবে দেখো না। ওর মতো মানুষের সান্নিধ্যে এসেই আমার যত পাওয়া। আর সুন্দরী মহিলার দিকে যে কোন চোখ একটু আটকে যেতেই পারে।সেটা কখনোই চোখের দোষ নয়।
— তাই বুঝি! তাহলে তোমার চোখও?
— না, তার কারণ। আমার চোখে পৃথিবীর একমাত্র সুন্দরী আপনি। আমার স্বপ্নের মোনালিসা “মনিকা”।
— অসভ্য। লজ্জায় দুহাতে মুখ ঢাকলো মনিকা।

মানুষের জীবনটা এমনই- ঠিক পাখির মতো। পাখির বাসার মতো। নিরন্তর ঝড়-বাদলায় খড়কুটো সংগ্রহ করা। বাসা তৈরি করা। বন্দী দশায় পাহারা দেওয়া। ভালবাসার উত্তাপে ডিম ফোটানো। ছোট্ট বাচ্চাকে স্নেহে- যত্নে- আদরে বড় হবার খোরাক দেওয়া। ওড়া ও শেখানো। এবং একসময় তাদের উড়ে যাওয়া। এতকিছুর পরও পাখিদের জীবনে নিঃসঙ্গ কোন বেদনা থাকে না। এটা নাকি তাদের প্রকৃতিগত। কিন্তু মানুষের?
খাটের উপর বসে দিনের শেষে সকালে দেওয়া খবরের কাগজে শেষবারের মতোই চোখ বোলাচ্ছিল নিরাপদ বাবু।
— অমিত আজও তো এলো না। কি হবে হ্যাঁ গো?

স্ত্রীর কথায় কাগজ থেকে চোখ তুললেন নিরাপদ বাবু বললেন, –তাতে হয়েছেটা কি? তুমি কি ভেবেছো, অমিত টাকা দেবে আর তবেই পিতুর মেয়ের বিয়ে হবে?
— তাহলে তুমি ওকে বলতে গেলে কেন?
— সেটা একটা কর্তব্য মনে করলাম তাই! যাতে পরে কোন অজুহাত না থাকে।

আবার চোখ রাখলো খবরের কাগজে। কালো- কালো অক্ষর গুলো সাজানো লাইন থেকে কেমন যেন এলোমেলো মনে হতে লাগলো। আসলে মনের উদ্বিগ্নতা- চাঞ্চলতা এনে দেয়। একটা অস্থির সময় মুহূর্ত ছুঁয়ে দেয় সারা শরীরকে। না, পিতুর মেয়ের বিয়ের জন্য কোন টাকা পাঠায়নি অমিত। যদিও তার ইচ্ছে ছিলো। বউয়ের মনের বিরুদ্ধে কোন কাজ করে- মনোমালিন্য তৈরি করতে চায় না সে। বাবার কথাটা মনে পড়লো অমিতের। বাবা বলতো।
— জীবনে উন্নতি করা মানে, সকলের সাথে নিজেকে আলাদা ভাবা নয়। সকলের মাঝে থাকাই উন্নতির সোপান। একা হয়ে যাওয়ার অর্থ দলছুট হওয়া। পালিয়ে যাওয়া। তাতে হয়তো আর্থিক উন্নতি হবে। তবে মানবিক উন্নতি হবে না। এটা মনে রেখো।
মাথা নিচু করে কথাটা শুনেছিলো অমিত। জাস্টিফাই করার মতো অবস্থায় ছিল না তখন। একটা তিক্ততা তৈরি হয়ে গিয়েছিল, তখন মনের কোনে।

দিন যায়। রাত যায়। উন্নতির অনেকটা ধাপ উপরে উঠেছে অমিত। প্রাচুর্যতায় একটা বৈভব তৈরি হয়েছে দুজনের সংসারে। তবুও সংসারটা কেমন যেন শ্রীহীন। একটা চাপা আক্ষেপ হয়তো বা মনের কোণে পোষা আছে মনিকার। সারাটা দিন বড় একা লাগে। এতো বড় ফ্ল্যাটে কাজের মেয়েটা কাজ ছেড়ে চলে গেলে, দুপুর থেকে রাত্রি পর্যন্ত বড় একা।
— আমি কি কোনদিন সত্যি মা হতে পারব না ? রাতের বিছানায় অমিতের কাছে করুন জিজ্ঞাসা।
— ডাক্তার তো তাই বলেছেন, তোমার সমস্যার কথা। তোমাকেও বলেছেন। আমি তো বাচ্চা দত্তক নিতে চেয়েছিলাম। তুমি না করেছিলে। কেমন অসহায় গলা অমিতের।
— এভাবে জীবন চলে না। আক্ষেপ মনিকার।
— এভাবেই তো বাঁচতে চেয়েছিলে। অমিতের গম্ভীর গলা।
চোখের জলে বালিশের কাপড় ভেজে মনিকার।

অনেকটা দেরি হলো আজ অমিতের বাড়ি ফিরতে। কপট রাগ দেখিয়ে মনিকা বললে, — এতো দেরি করলে কেন আজ ?
— একটু কাজ ছিল, তাই দেরি হয়েছে। হাতের ব্যাগটা সোফায় রেখে বললো অমিত।
— বাড়িতে একা অস্থির হয়ে উঠছি। মনে পড়ে না। তীব্র শ্লেষ মাখানো কথা মনিকার।
— মনে পড়ে। আজও পড়েছিলো। আর দেরি সে জন্যেই। অমিত বললে।
— কি বলতে চাও তুমি? মনিকার প্রশ্ন।
— নিচে যাও, মাকে নিয়ে এসেছি।
— কে তোমাকে নিয়ে আসতে বলেছে ? চিৎকার করে উঠলো মনিকা‌। যেমনি নিয়ে এসেছো- তেমনি ফিরিয়ে দিয়ে এসো। উপরে নিয়ে আসতে হবে না। ঝাঁঝের সঙ্গে বললে মনিকা।
— তোমার জন্যই নিয়ে এসেছি। যাও উপরে নিয়ে এসো ‌‌ নম্র উত্তর অমিতের।
— আমার জন্য দরদ দেখাতে হবে না। তোমার মাকে ফিরিয়ে দিয়ে এসো। না হলে আমি এই ফ্ল্যাট ছেড়ে চলে যাবো। তীব্র শ্লেষ মনিকার কথায়।
— আমার মা নয়- তোমার মাকে নিয়ে এসেছি। বাড়িতে একটু অশান্তি হয়েছে। আমাকে ফোন করেছিলো। চোখে চোখ রেখে বলল অমিত।
— আমার মা!

ছুটে নিচে নেমে যায় মনিকা। মা’কে ধরে সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠে। ঘরে ঢুকে বললে, — সরি! আগেই বলতে পারতে আমার মায়ের কথা।
— হ্যাঁ ঠিকই বলেছ। আগে বলা উচিত ছিলো। শুধু দেখছিলাম‌। টুপি বলে এতদিন মোজাটাকে মাথায় টেনে এসেছি। আসলে ওটা পায়ের জন্য। শুধুই মোজা।

জয়নাল আবেদিন | Joynal Abedin

মানব কল্যাণে রামকৃষ্ণ মিশন | Ramakrishna Mission | 2023

Andaman Cellular Jail | আন্দামানের কুখ্যাত সেলুলার জেল | 2023

নির্যাতিতা রহিমারা | Bengali Article 2023

Chandannagar Jagadhatri | চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজার প্রবক্তা কে ??

Bangla Golper Ebook | Shabdodweep Web Magazine | Joynal Abedin

Bengali literature has a long and rich tradition of storytelling, capturing the emotions, struggles, and beauty of life through its words. If you love reading Bengali stories, then a Bangla Golper Ebook is the perfect way to explore the finest tales of Bengali literature anytime, anywhere. Whether you enjoy classic short stories or modern narratives, a well-curated ebook can bring the magic of Bangla golpo (বাংলা গল্প) to your fingertips.

At Shabdodweep Web Magazine, we take pride in publishing the works of talented writers, including Joynal Abedin, who has contributed numerous memorable stories. In this article, we will explore the essence of Bangla Golper Ebook, its significance, and why you should start reading Bengali ebooks today.

Why Read a Bangla Golper Ebook?

In today’s digital age, ebooks have made reading more convenient than ever. A Bangla Golper Ebook allows you to enjoy the beauty of Bengali literature without carrying physical books. Here’s why you should start reading:

  1. Access to a Rich Collection of Bengali Stories
    A Bangla Golper Ebook gives you access to a vast collection of Bengali stories written by talented authors. From timeless classics to modern narratives, ebooks bring you the best of Bengali literature in a single file.
  2. Read Anytime, Anywhere
    Ebooks are portable, meaning you can read your favourite Bengali books anywhere – whether you’re at home, travelling, or taking a break at work.
  3. Cost-Effective & Eco-Friendly
    Unlike printed books, ebooks are often more affordable and environmentally friendly. You save money while also reducing paper waste.
  4. Support Emerging Bengali Writers
    By reading Bangla ebooks, you support upcoming authors and give them a platform to share their creativity. Writers like Joynal Abedin have contributed extensively to Shabdodweep Web Magazine, bringing fresh and engaging stories to readers.

Exploring Bengali Literature Through Bangla Golper Ebook

  1. Classic Bengali Literature in Digital Form
    Bengali literature has produced legendary writers like Rabindranath Tagore, Sarat Chandra Chattopadhyay, and Bibhutibhushan Bandopadhyay. Their masterpieces are now available in Bangla Golper Ebook format, allowing modern readers to enjoy their timeless works.
  2. Modern Short Stories with New Perspectives
    Apart from classics, modern Bengali authors are bringing new ideas and perspectives through short stories. Shabdodweep Web Magazine is known for publishing fresh and thought-provoking Bengali stories, including the works of Joynal Abedin. His storytelling style reflects deep emotions and real-life experiences, making his stories a must-read.
  3. Poetry, Fiction, and More in Bangla Ebooks
    Along with Bengali stories, Shabdodweep Web Magazine also features poetry, fiction, and experimental writing. If you love poetry, you will find an impressive collection of modern and classical Bengali poems in our publications.

How to Find the Best Bangla Golper Ebook?
If you are looking for the best Bangla Golper Ebook, here are some tips:

Choose Trusted Platforms – Websites like Shabdodweep Web Magazine offer high-quality Bangla ebooks with original content.

Look for Popular Authors – Writers like Joynal Abedin have crafted many engaging Bengali stories worth reading.

Explore Different Genres – Whether you enjoy drama, romance, or suspense, there’s a Bangla Golper Ebook for everyone.

Check Reviews – Before downloading an ebook, read user reviews to ensure a great reading experience.

Where to Read Bangla Golper Ebook?
You can find and read Bangla Golper Ebook on:

Shabdodweep Web Magazine – Your one-stop destination for the best Bengali stories, poetry, and literature.
Online E-Book Stores – Platforms like Amazon Kindle and Google Books offer many Bangla ebooks.
Free Bengali Literature Websites – Some online platforms provide free access to Bengali short stories and books.

At Shabdodweep Web Magazine, we regularly publish high-quality Bengali literature and feature works by leading story writers. Explore our collection today!

FAQ – Bangla Golper Ebook & Shabdodweep Web Magazine

What is Bangla Golper Ebook?
A Bangla Golper Ebook is a digital collection of Bengali stories available in an easy-to-read format. It includes classic and modern short stories from the best Bengali literature.

    Where can I find high-quality Bangla ebooks?
    You can find premium Bangla ebooks at Shabdodweep Web Magazine, which publishes works by top Bengali story writers, including Joynal Abedin.

    1. Who is Joynal Abedin, and why should I read his stories?
      Joynal Abedin is a talented Bengali writer known for his captivating storytelling. His works are published in Shabdodweep Web Magazine, making them easily accessible to readers worldwide.
    2. Can I download Bangla Golper Ebook for free?
      Some platforms offer free Bangla ebooks, but for high-quality and exclusive content, visit Shabdodweep Web Magazine, where you can find original stories by renowned authors.
    3. Why should I read Bengali literature on Shabdodweep Web Magazine?
      Shabdodweep Web Magazine is a trusted platform for authentic Bengali stories and poetry. We feature the best authors, including Joynal Abedin, to bring you high-quality Bangla Golper Ebook collections.

    Final Thoughts

    A Bangla Golper Ebook is an excellent way to explore the beauty of Bengali literature. Whether you love classic tales or modern Bengali stories, these ebooks bring a world of imagination to your device. Shabdodweep Web Magazine is committed to delivering the finest short stories and literary works, ensuring an enriching reading experience.


    Sabuj Basinda | Follow our youtube channel – Sabuj Basinda Studio

    Leave a Comment