Bengali Poetry Styles | Best Shabdodweep Bangla Kabita

Sharing Is Caring:

Bengali Poetry Styles – Sanjit Kumar Mandal

Bengali Poetry Styles | Collection of Bangla Kobita

দিশাহীন

তোমার জন্য কান্না একটা ছিলো
হয়তো ভুলেছ কবেকার সেই কথা,
আনমনা হয়ে পথ চেয়ে রোজ থাকি
অশ্রুসিক্ত সেই চোখে আজও ব্যথা।
দোহাই, তোমার বাহানাটা ভালো জানা,
জোড়া না লাগায় মন ভেঙে দুখানা,
একটা ভাঙা তো তোমার দিকেই আছে
অন্য দিকটা কাউকে দিতে যে মানা।

পাশ কাটিয়ে বাঁধন ছেঁড়াটা সোজা
পালিয়ে বাঁচে সবাই সেটা জানি,
বড্ড কঠিন প্রেমের জগতটাই
মানুষ চেনা কতনা সে হয়রানি।
আজও মেঘ ছুঁলে বৃষ্টি হয়েই যাই
মনের কথা গুছিয়ে বলি না তাই
সেদিন গুলোতে তুমি ই তো মেঘ ছিলে
তোমার স্বপ্নে আজও তাই ভিজে যাই।

আকাশ প্রদীপ জ্বালি আজও আমি তাই
দূরে তারার পানে আজও একা তাকাই
নির্মল নীলাকাশ খুঁজে বেড়াই
তোমাকে লুকিয়ে দেখবো ভেবেছি তাই।
দিশাহীন আজও বসে আছি একা একা
মন দিলে মন পাওয়া যায় নয় সোজা
বেদনার বালুচরে ঘুরে ফিরি একা
আজও বসে আছি তোমারই প্রতীক্ষায়।
ব্যথার বেদনা ঝরে পড়ে গানে গানে
সে ব্যথা শোনাই আকাশের চাঁদ তারায়
দিশাহীন পথে যেতে যেতে আজও ভাবি
কি করে ভুলতে পারলে তুমি আমায়।।

রেজারেকশন

রেজারেকশনে আবার এসো প্রভু
পৃথিবীতে আজ দারুণ দুঃসময়,
ভাইরাস আর যুদ্ধের ভয়ে জীবন স্তব্ধ আজ
পৃথিবীতে ফের এনে দাও সুসময়।
এ কালবেলায় আলো হাতে এসো প্রভু,
হিংসা ও দ্বেষ নাশকতা দূরে যাক
অবুঝ মানুষ জানে না কি দোষ তার,
মানুষ দেখুক তোমার মুখেই মানবতার স্বরূপ।

ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখেছিলে,
হাজার দুঃখ ব্যথাতেও ধীর স্থির,
কুকাজের ভুল সবাই কি বোঝে আর
মানুষ দেখুক তোমার মুখেই ক্ষমাসুন্দর মুখ।
যুদ্ধের ভয়ে থেমে গেছে কতো কাজ,
গতিময়তাই জীবন ফিরিয়ে আনে,
দুঃখ বিভেদ সব ভুলে যেতে দাও,
পৃথিবীতে ফের রেজারেকশন আনো।

গোটা পৃথিবীই আশায় আশায় থাকে,
তুমি এসে সব ভালো করে দিয়ে যাবে,
পৃথিবী মেতেছে ধ্বংসের উল্লাসে,
এ অন্ধকারে তুমি আলোক জ্বালাও।
বেথলেহেমের শিশু বড়ো হয়ে যায়,
কাঁটার মুকুটে তবু কতো উজ্জ্বল,
দয়া মায়া আর শান্তির বাণী দিলে,
তবু দেখো তুমি ক্রুশবিদ্ধই হও।

যুদ্ধ বিবাদ ভাইরাস ভয় গ্লানি ধুয়ে মুছে দাও
তোমার আশিসে রেজারেকশন হোক,
পৃথিবী আবার নতুন জীবনে ফিরুক
হে মহা জীবন এসো আনন্দময়।।

বৃদ্ধ বয়স

বয়স বাড়ে কালের ফেরে জোয়ান স্থবির হয়
খোকা খুকুর বয়স বাড়ে ওরাও প্রবীণ হয়।
কচি কাঁচার খুশী হাসার যা কলরব হয়
বয়স হলে আপন তালে গোমড়া মুখো হয়।
যৌবন ছিলো গর্ব ছিলো বন বাদাড়ে ঘোরা
পাহাড় নদী সুন্দরবন হেলায় বেরিয়ে পড়া।
বয়স কালে অচল হলে ঘরেই শুয়ে পড়া
হিল্লিদিল্লি করমণ্ডলী স্তব্ধ নড়াচড়া।
যৌবনেতে জল ঝাঁপাতে পুরী গোপালপুরা
ধলভূমগড় মানভূমগড় সিংভূম আলমোড়া।
কোভালাম বীচ গোয়ার সী বীচ অজন্তা ইলোরা
জয়পুর উদয়পুর আবুপাহাড়ে টেম্পল দিল ওয়াড়া।
তাজমহল আর কাশ্মীর হলো এবার কেদারনাথ
অনেক আশায় ঘুরে আসি গুহায় অমরনাথ।
ঔরঙ্গাবাদ ঘুরে দেখি আর এক তাজমহল
মহম্মদ বিনের ভুলভুলাইয়া দৌলতাবাদে অবাক হবি চল।
অর্ধ ভারত ঘোরা হলো তবু্ও মনে হয়
নেপাল ভুটান ঘোরা হলো কৈলাশেতে নয়।
এখন কোথাও যাবার কথা ভাবি না কো মনে
বাইরে যাবার হাওয়া খাবার ইচ্ছে মনে জমে।
বয়স কালে শরীর দোলে কে আপন কে পর
ভব নদী ডাকে যদি বৈতরণী ধর।
ঋতুর ফেরে চুপিসাড়ে বয়স বাড়ে বাড়ুক
মনের খামে অনেক দামে ছেলেমানুষি থাকুক।
এই জীবনের কান্না হাসি বুকের পরে রয়
মহা প্রস্থানেজীবন বীমা স্বর্গ আলোকময়।।

দখল

আমার পৃথিবী দখল হয়ে গেছে
শান্তিতে নেই সেটা অনুমান করো
যবে থেকে প্রেম উঁকি দিয়ে গেছে মনে
আমার পৃথিবী দখল হয়েছে জেনো।
নীল নির্জন হারায় বাস্তবতা
স্পর্শ কাতর মন শুধু তাকে চেনে
যদি সে হারায় মন তাই থাকে উতলা
শুধু তাকে চায় না পেলেই মেঘ জমে।

রাত্রির শেষে দিন আসে আসুক
আঁধারের শেষে মুখে আলোর হাসি
জমাট অন্ধকারকে যে বড়ো ভয়
আলোর স্পর্শে ফুলের মধুর হাসি।
শূন্য জগৎ শূন্য পৃথিবী যদি সে না থাকে পাশে
নীরবতা দিয়ে মনকে আড়াল করি
তার প্রেমাগুনে আনমনা হয়ে পুড়ি
বিরহীর বুকে ফুল পাখি নদী সব মিশে যায় বিষে।

ঋতু গুলো আসে মন কেমন করা
আগুন আর ঘি জ্বালায় পোড়ায় কাকে
শীতকাল এলে কার উষ্ণতা লাগে
বসন্ত এসে সব অভিমান ঢাকে।
আবার আমার পৃথিবী দখল হয়
সব মনোযোগ এলোমেলো হয়ে যায়
পৃথিবী দখল হলেও প্রেম কে না চায়
প্রেম আর জীবন একই রাস্তায় হাঁটে।

মুখে হাসি বুকে বল

মুখ ভার করা সময়ের মাঝে নিজেকে দেখতে পাই,
কতকিছু মুখে হাসি এনে দেয় হাসার সময় নাই।
নাই নাই করে বেলা বহে যায় খবর শুনতে পাই
রামগরুড়ের ছানারা হাসে না মুখভার থাকা চাই।
হারানো সময় পিছে চলে গেছে পিছনে তাকায় নাই
মুখ ভার করা সময়ের মাঝে হারিয়ে গিয়েছে তাই।
চেনা পরিজন অচেনা হয়েছে বন্ধু গিয়েছে ভুলে
ভাত খেতে কেউ ডাকেনা এখন কিল মারে কাছে গেলে।
মুখ ভার করা সময়ের মাঝে কার কাছে যাই বলো
একলা চলোর গানটা শিখেছি একলা চলাই ভালো।
বৃষ্টি বিহীন আকাশের মাঝে মুখভার মেঘ কই
আশার বৃষ্টি ঢালেনি তবুও আশা করে চেয়ে রই।
মুখ ভার করা সময়ের মাঝে হাসতে ভুলেছে সব
হোক কলরব কেউ বলে নাতো মুখ ভার করে সব।
মুখে হাসি আর বুকে বল চাই এই প্রাণ বাঁচাবার
হাসি মুখে যারা সব কিছু করে কুর্নিশ অনিবার।
বিরহ বেদনা শোক তাপ আছে মৃত্যুও আছে জানি
কষ্ট হলেও জীবনের শোধ হাসিটাকে তবু কিনি।
গোমড়া মুখোরা চিরকালই জানি বড়ো গম্ভীর হয়
হাসি মুখে করি ঝগড়া বিবাদ হাসি মুখে করি জয়।।

বর্ষ বিদায়

বর্ষ যায়, বর্ষ আসে, কালের নিঃশ্বাস সাথে
বিবর্ণ সময়ের ঘ্রাণ মেখে গায়,
কিছু হয়েছিল ভালো, কিছু বুঝি ছিল কালো
মহাকাল সময়ের নিক্তি মেপে যায়।

ফেলে যাওয়া দিনগুলি চলে যায় সব ভুলি
স্মৃতিটুকু নিয়ে শুধু থাকি,
আত্মার আত্মীয় সাথে সময় চিনেছি তাতে
আপনার দৈন্য সদা ঢাকি।
যদিবা ডেকেছি পিছে,জানি আমি সব মিছে
ভাবনার জাল বৃথা বুনি,
তুমি আছো মহাকাল বিছায়ে অনন্তজাল
সময়ের ব্যথা বুঝি দাম দিয়ে কিনি।

বল আরো কতকাল অপেক্ষায় কাটিবে কাল
কতখানি লেনাদেনা জানি,
মিটেছে কি সে হিসাব,লাভ ক্ষতি না জবাব
শূন্য ঝোলা বয়ে বৃথা আর কত টানি।
আলো দাও হে বিধাতা নক্ষত্র সেবিছে যেথা
মহাশূন্যে সে আলোকবর্ষে আছে থামি।
হেথাকার কাল কেন নাতিদীর্ঘ হয় জানো
সে হিসাব আমরা কি জানি।

দাও বল, দাও আলো,অমর প্রদীপ জ্বালো
অন্ন বস্ত্র বাসস্থান করে দাও ভালো
যে তুমি অন্তরে থাকো এবার সমুখে এসো
ভালো করে এইবারে তোমারেই চিনি।
বর্ষ যায়, বর্ষ আসে অনন্ত ভাবনা সাথে
ভালো কিংবা মন্দ হবে সে কেমনে জানি,
তবুওতো আসা চাই অপেক্ষা করেছি তাই
হাসিমুখে সম্ভাষণ জানাবো সে জানি।।

আমেজ

শীতের আমেজ হালকা হাওয়া উত্তুরে বাতাস-
বিন্দাস হেমন্তের বিদায় বেলায় স্তিমিত দিবাকর,
পর্ণমোচী বৃক্ষরাজি পাতা ঝরিয়ে বলে বিদায়,
গ্রীষ্ম বর্ষা শরত বসন্ত বিদায় নিয়েছে বলো কার প্রতীক্ষায়।
স্তিমিত সূর্য উঁকি দিয়ে তবু বলে-
আসি আসি বলে সে সত্যিই এলে চলে,
হাড়ের কাঁপন নাচন লাগাবে জানি,
দু-ফোঁটা বৃষ্টি ঝরিয়েই দেবে বেশী রাগ হয়ে গেলে পরে।

রাতের খিচুড়ি বেগুনি পাঁপর ভাজা-
কতো রকমের সবজি আনে তা জানো
সে এসেছে বলে স্বাদ বদলাতে পারো,
নইলে পটল কুমড়োর ঘ্যাঁট খেয়েছ তো যত পারো।
একঘেয়ে লাগে ঢেঁড়স পটল ঝিঙে
ফুলকপি বড়া হবে নাকি বলো চা-এ
শীতের বেগুন পোড়া খেতে কতো মজা,
পিঁয়াজ লঙ্কা টমাটোর সাথে মেখে।
গরমাগরম যা কিছুই খাও অমৃতের স্বাদ তাতে,
যত রকমের সবজির মজা শীতে।
কতদিন বলো নতুন আলুর দম ছিলো না-কো পাতে
খাওয়ার মজাটা শীত কাল এলে পাও,
খাওয়া আর ঘুমে আমেজ আনে সে বলো।
শীতের আমেজ কি আর কোনোকালে পাও?
বেড়াতে যাওয়াটা কতো সুন্দর বলো তাও-
ঘাম নাই তাই পথের ক্লান্তি বেলাগাম হয় নাই
শীতের আবছা কুয়াশা সকালে ধোঁয়া ওঠা কফি চাই।
খেজুরের রস পিঠে পায়েসের মজা কতো চাই বলো।
জয়নগরের মোয়া ও পাটালী গুড়
হরেক রকম পিঠেও মন মজালো
আর কি কি চাও আর কতো খাবে বলো,
শীতের সকাল রোদ পোহাতেও ভালো।
শীত কাল এলে বাঁচা ও মজা দুটোর জন্যে খাই
রসে আর বশে খেতে ও খাওয়াতে বাঙালির জুড়ি নাই।
সোয়েটার আছে মাফলার, টুপি হাতিয়ার কে না চায়,
কড়াইশুঁটির সিঙাড়া কচুরি আমেজটা বদলায়
শীতের রাতের উষ্ণ প্রিয়াকে আজও মন কাছে চায়
শীত আসে বলে সবার জীবন ছন্দটা খুঁজে পায়।

হাসপাতালে কোভিড কালে

এখানে কারোর প্রবেশাধিকার নেই
বন্ধ কাঁচের জানালায় রোদ কাঁদে-
বহু দূরে দূরে গাছপালাগুলো নড়ে,
বাইরে বাতাস বইছে তা বোঝা যায়।
আমি কোনো এক অজানা দ্বীপেতে একা
নিজভূমে পরবাসী হয়ে শুয়ে আছি।
ঘুম হয় না-কো তাই একা জেগে থাকা
ভোরের আগেই রাত ভোর হয় দেখি।
শব্দ নেইকো লোক চলাচল ও নেই,
গম্ভীর হয়ে ডাক্তার আর নার্স-দিদিরাই দেখে
পরীক্ষা নিরীক্ষা কারা করে চলে যায়,
কথা কম বলে কাজ বেশি করে দেখি।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খাটে দিনরাত,
ক্লান্তি-বিহীন পরিশ্রমেও পরিসেবা মুখ বুজে,
প্রাণের ঝুঁকি টা ওদেরও তো কিছু কম নয়
তবুও প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে খেটে যায়।
এদিকে আমার মনে ঝড় ওঠে ঝড় নামে,
মাঝে মাঝেই তো ব্রহ্মতালুটা ফেটে যাবে মনে হয়।
খিদে মরে গেছে, জ্বর ওঠে জ্বর নামে,
অক্সিজেনের লেভেলটা কমে যায়।
ব্লাড সুগারের অবস্থা ভালো নয়,
চারশো আশিতে উঠে বসে আছে সে,
সব কিছু যেন গলাতে আটকে আছে
ইন্সুলিনটা রোজ ওরা দিয়ে যায়।
ব্লাড প্রেসারটা তবুও সঠিক আছে,
হঠাৎ কিছুই হবে না অভয় দেয়।
বিধাতাকে ডেকে বলি ওগো দয়াময়
যদি নিতে হয় নিজে এসে রাখো পায়।

ছোট বেলার Christina Rossetti কবিতাটা মনে পড়ে-
Who has seen the Wind?
Neither I nor you
But when the leaves are trembling
The wind is passing through.

তবুও তো মনে হয়, একটু বাতাস লাগুক আমার গায়।
মধু বাতা ঋতায়তে মধু ক্ষরন্তি সিন্ধবঃ মনে ভাবি,
গঙ্গা নদীতে কত জল বহে যায়,
আমাদের এই পৃথিবী টা অতি সুন্দর।
হয়তো বাইরে সংগীত ধ্বনি বাজে
হাসপাতালের বন্ধ দুয়ারে সেই সুর ফিরে যায়,
আরও কতো কিছু আবোল তাবোল ভাবি,
শরীরে কষ্ট আছে তাই মন কাঁদে।
ব্যথা যন্ত্রণা মাঝে মাঝেই তো কাঁদায়,
কোনো লোক নেই একটু কথা বলার,
কবি যখন হাসপাতালের একলা সে বিছানায়
ঘুম আসে না-কো কষ্ট রাতের লোহা ঘেরা খাট টায়।
স্বাধীনতা নেই, পুরোপুরি এক বদ্ধ বন্দীশালা-
কষ্ট করেও এখানে বাঁচাটা দায়।
রুচি নেই মুখে হাসপাতালের খাবার কি খাওয়া যায়
অখাদ্য গুলো ফেলে দিই রোজ শরীর আরও ক্ষীণ হয়।
জীবন ভরেই প্রতিবাদী কবি বংশ পরম্পরায়
কলম স্তব্ধ হবে কি এবার হাসপাতালের কারায়।
ঝর্ণার মতো বইবে কলম আকাশে মুক্ত বায়,
ধরণীর ধুলোমাটি ভালোবাসি অভিমানের সিক্ততায়।
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আকাশ পাতাল ভাবনা
এদের জগতে ডাক্তার নার্স কেউ আপন কেউ পর না।
মুক্ত দুনিয়া দেখে যেতে চাই ভাইরাস ভয় মুক্ত
মঙ্গল করো হে প্রভু আমার ভয় করো অবলুপ্ত।
জীবন যখন শুকায়ে যায় তোমার করুণা চাই
তোমার যজ্ঞে আহুতি দেওয়ার পূর্ণতা যেন পাই।।

প্রতীক্ষার অবসান

পরিচয় দিলে না কখনো,
কৈলাশে না কি কোন হিমালয়ে থাকো-
যে রহস্যে ঢাকা থাকে তোমার ভুবন –
আমি তারই অধিবাসী অতি অভাজন।
নিজে থেকে হারিয়েছি তোমার ঠিকানা,
পুজো শেষে আঘাটায় ঘটে বিসর্জন।
অপলক আঁখি নিয়ে তাই চেয়ে থাকি-
শরতের কোনো এক শিউলি প্রভাতে হবে তব আগমন।
হবে দুর্গতি নাশ, মুছে যাবে ভয় ত্রাস, তোমার আসাতে।
সুমঙ্গল হবে জানি তব আবাহন।

জানি তুমি খোঁজ রাখো প্রতি দিনে রাতে-
তারা ভরা আকাশের কৈলাশ পর্বতে,
তুমি অনুরাধা মায়া শক্তির আধার, আদিদেব মহেশ্বর ,
জানে সব তপস্যায় রত আছে যুগ যুগান্তর।
এ পৃথিবী থেকে তাই দেখেছি তোমাকে-
শতভিষা, অশ্লেষা, মঘা দূর থেকে দেখে,
তুমি সব সাথীদের সাথে এসো চলে,
দেবী লক্ষ্মী সরস্বতী কার্তিক গণেশ
অসুর নিধন হবে লক্ষ্য একটাই
সারাটা বছর মা গো প্রার্থনা করেছি বসে তাই।
বাঙালি বঙ্গভূমে ভারতে সবাই,
তোমাকে দেখলে জানি পুণ্য হয় তাই
দেখা দিয়ে আর চলে যেও না সবাই
ভালোবেসে কাছে এসে থেকে যাওয়া চাই।

হে মাতঃ, জানিনা পূজা ভক্তি আর মুক্তি,
অজ্ঞান আজও তাই মানি না কো যুক্তি ধারণায়,
জানিনা তীর্থালয় পদ্মাসন পারণ ও ব্রত,
গভীর সুষুপ্তিতে মজে আছি এ ধরায়।
জানি না-কো উপবাস ব্রত তন্ত্রমন্ত্র,
কুলাচার হীন সদা কদাচারে লিপ্ত,
মুক্ত করো মা গো তুমি মুক্তি দাত্রী দুর্গতি নাশ করো,
অসুর বিনাশ করে অভয় দান করো।
জানি না-কো মা গো তব পূজা ও ধ্যান,
নেইকো কোনো শাস্ত্র মন্ত্র গুপ্ত তন্ত্র জ্ঞান,
দান দক্ষিণা জানিনা মা পুরো অজ্ঞান,
বিবাদে বিষাদে ডরি, ভাসে প্রমাদে প্রমোদে প্রাণ-
দয়া করো মা গো জগত জননী করো ত্রাণ মা গো করো ত্রাণ।
অধীর আগ্রহে আছে তৃষিত এ প্রাণ
ত্বরা করে এসো মা-গো জুড়াক এ প্রাণ
যত সব প্রতীক্ষার হোক অবসান,
করো ত্রাণ মা গো করো ত্রাণ।।

খেয়াল

কোনো এক দুপুরে খামোখা কি খেয়ালে
তোমার ধুসর ছবি দেখি ভাসে দেওয়ালে
একমুঠো স্মৃতি সব উদাসী হাওয়ায় দোলে
একটা পায়রা এসে বসে যেন আড়ালে।

স্মৃতি সোনা রোদ্দুর পড়ন্ত সে বিকেলে কোন কথা চায়
তোমার পুরানো ছবি কবে যে হারিয়েছিলো মন কে নাচায়।
জানি না তা ফিরে আসে কোন মহিমায়
আবারও হারিয়ে যাবে মন বুঝি তাই ভাবে বৃথা ছলনায়।

মন প্রজাপতি হয়,স্মৃতি গুলো দোল খায় ঠান্ডা হাওয়ায়
খামোখার খেয়ালে তুমি এলে দেওয়ালে, দমকা হাওয়ায়।
মন প্রজাপতি হয়, ভুলে যাওয়া বেদনায়, কি মায়া জড়ায়,
তোমাকে কি কখনো ই ভুলে যাওয়া যায় বলো হারালে কোথায়।

চেয়ে দেখি দেওয়ালে ছবি দেখি খেয়ালে পাখা মেলে দেয়
কোন শূন্যতে যায় মন ভাসে বেদনায় হারায় হারায়।
ইঙ্গিতে ডাকে যে ভুল করে ভাবি সে ধরা নাহি দেয়
দুচোখের নীরবতা ভীরু মনে বিলাসিতা কি আশা জাগায়।

হারানো সে দিনগুলো ফিরে কি আসবে বলো মোহিনী মায়ায়
কেন সেই দুপুরে খেয়ালীর নূপুরে মন ভেসে যায়
ঘুম ভেঙে যায়, আর ছন্দ হারায়, মন কাকে খুঁজে যায়
কেউ কি গো আসেনি কো মন চুরি হয়ে গেলো খোলা জানালায়।।

ফোড়ে

ফোড়ে ঘোরে দামও বাড়ে
ভ্রুক্ষেপ নেই কারো
মন্ত্রী যন্ত্রীর হেলদোল নেই
আমজনতা মরো।

আলু আনাজ চষে চাষি
বাজার অনেক দূর
ফোড়ে কেনে সস্তা দামে
লাভের বখরা গুড়।

ফলপাকড় সব গাছে ফলে
বাগান থেকে পাড়ে
ফোড়ে থাকে আড়ে আড়ে
সব খবরই করে।

বরজের পান আনে চাষি
ঘাড়ে মাথায় করে
ফড়ে চলে আগ বাড়িয়ে
দর দস্তুর করে।

মধ্যস্বত্ব ভোগী জমিদার
দাদন তুলে খায়
ফোড়ের কাজও তেমনি ধারা
মাঝের লুটে নেয়।

মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস আর
গরীব গুর্বোর বাঁশ
যে যার মতো হাল চষে তবু
অভাব বারোমাস।

বড়ো লোকের হেলদোল নেই
নেতার দরবার খাশ
আম জনতা নালিশ জানায়
কে দেয় কারে বাঁশ।।

টনক

হাওয়া বয় টনক নড়ে কাকতাড়ুয়া ঝড়ের মুখে পড়ে
মানুষ বুঝি এমনি করেই বাঁচতে শিখে যায়
তেমন তেমন হাওয়া বইলে মানুষ মানুষ হয়।
এমনি করেই দিন চলে যায় পার্বণ আসে যায়
যে যার জায়গা খোঁজার টনক নড়ে
পরিস্থিতির চাপে মানুষ মূক ও বধির হয়।
প্রতিদিনই জিনিসের দাম আগুন হয়ে যায়
মানুষের দাম আরও কমতে থাকে
গরীব মানুষ হতাশ মানুষ নিঃশব্দে ধোঁকে।
প্রতিবাদের ভাষায় কারা বেধড়ক মার খায়
রাত দুপুরে কারা যেন গলা টিপে ধরে
মানুষ বলে থোড়াই কেয়ার করে।
কারা যেন দুচোখ বুঁজে উসকে দেওয়া বুলি আউড়ে যায়
কেউবা আবার মওকা বুঝে আগুনে ঘি ঢালে
আদালতে পাহাড় প্রমাণ মামলা জমে যায়
মানুষ থাকে বিচার প্রতীক্ষায়।
হয়তো বিচার হবে মানুষ জানে তবুও তার দুশ্চিন্তা ভয়
দুদিন পরে শাস্তি মকুব হলে কি যে হবে
কেউ কি আছে ভরসা যোগানদার।
এই মানুষই সংঘবদ্ধ হয়, সংগঠিত মানুষ জয়ী হয়
কাকতাড়ুয়া ঝড়ের মুখে পড়ে
এই মানুষই সবার টনক নড়ায়।
দমন পীড়ন নতুন কিছু নয় ক্ষমতা দখল রাখতে সবাই করে
ভেতরে ভেতরে মানুষ হিসেব করে তৈরী হয়
গণতন্ত্রে পাঁচ বছরের বেশি আয়ু নয়।

রুখে দাঁড়া

ও মেয়ে তুই রুখে দাঁড়া দুর্গামূর্তি ধর,
দশহাতে নয় দু-হাত দিয়েই অসুর নিধন কর।
তোর চোখের ওই অগ্নিবাণে ভস্ম কর তুই দুষ্ট জনে,
পরমা শক্তি অশেষ গুণে দুর্গামূর্তি ধর।
ও মেয়ে তুই রুখে দাঁড়া দুর্গামূর্তি ধর।

দেখবে যারা কুদৃষ্টিতে চোখদুটো তার গালতে হবে,
মা, বোন, কন্যা, প্রেমিকারও শক্তি ভয়ংকর,
সংহার কর শক্তি দিয়েই রুদ্রমূর্তি ধর,
ও মেয়ে তুই অমানিশায় কালীমূর্তি ধর।
ও মেয়ে তুই রুখে দাঁড়া দুর্গামূর্তি ধর।

পথে ঘাটে বনের ধারে পুকুরে নয় খালের পারে,
পচাগলা দেহ ফেলে ওই অসুরের দল।
পাটের ক্ষেতে আখের ক্ষেতে চুপিসাড়ে জাপটে ধরে,
নিধন করতে এবার হাতে অস্ত্র ধরে চণ্ডীমূর্তি ধর।
ও মেয়ে তুই রুখে দাঁড়া দুর্গামূর্তি ধর।

চামুণ্ডার ওই ভীষণ তেজে অসুর মুণ্ড পড়বে খসে,
অগ্নিবাণে ঘুচাস মেয়ে সব অসুরের ছল।
জানিস নাকি অসুর যারা এ সংসারের জঞ্জাল তারা,
ছল করে তুই ঘোল খাওয়াবি অমৃতে গরল।
ওরে মেয়ে এবারে তুই সংহার মূর্তি ধর।
ও মেয়ে তুই রুখে দাঁড়া দুর্গামূর্তি ধর।

জানিস নাকি অসুর যারা কোনো শিক্ষা পায়নি তারা,
সব কাজে তাই অসভ্যেরা অত্যাচারীর দল।
মা বোনেদের দেখলে পরে ওদের জিভে লালা ঝরে,
ধর্ষণ খুন করলে এবার ওদেরই বধ কর।
ও মেয়ে তুই শিক্ষা দিতে বিদ্যামূর্তি ধর।
ও মেয়ে তুই রুখে দাঁড়া দুর্গামূর্তি ধর।

দিনের শেষে রোদের তাপে কর্মক্লান্ত কাজের চাপে,
সংসারে তুই দশভুজা মায়ের মূর্তি ধর।
ও মেয়ে তুই রুখে দাঁড়া অসুর যারা পালাক তারা,
ওরে মেয়ে এবারে তুই অসুর দলন কর,
ও মেয়ে তুই রুখে দাঁড়া দুর্গামূর্তি ধর।

বিসর্জন

দেখো যদি শান্ত হয়ে গেছি, বুঝে নিও গেছি বিসর্জন,
জলে পড়ে আছি, আর শ্রান্ত, ক্লান্ত, ধীর, স্থির-
নয় অস্থির, নড়াচড়া নেই, উপুড় বা চিৎ
নেই কোনো হাহুতাশ ঢেউ, ডাকছে না কেউ-
বিদায় নয়নজলে, ঝাপসা দুনয়ন।
গেছি বিসর্জন।
সিঁদুরের সব খেলা সাঙ্গ হলে পরে,
একাকী সুদূর পথে, চলেছি ভ্রমণ জনারণ্য থেকে দূরে বহুদূরে-
মুখে নিয়ে মিষ্টি আর পান, জলপথে জলযান-
মহাকাল স্রোতে ভেসে ভেসে, জীবনের পরপারে,
নিরুদ্দেশে একলা চলা, সব কিছু মায়া শেষ করে।
প্রিয়বন্ধু, একাংক্ষী কবি তুমিও তো চলে গেলে দূরে।
ঠিক যেন বেদনার পরপারে কৈলাশে গমন।

সব খেলা সাঙ্গ হলে পরে, বিসর্জিত হওয়া –
ভাবলেশহীন চলে যাওয়া, দিগন্তে বিলীন।
যতকিছু মর্মবেদনা ঘন অশ্রুত রোদন,
কখনো বা সবিলাপ শোকার্ত ক্রন্দন, নীলিমায় লীন,
চাওয়া পাওয়া হিসেবের ধূলিতে মলিন।
জীবন এখানে আর কথা বলে না-
একাংক্ষী বা কোনো কবি আর কোনো কথা লেখে না-
বিদায়ের সকরুণ বাঁশি, বাজিয়েছে সুরমূর্ছনা,
ব্যথার আলাপ, জোড়, মীড় ঝংকার –
বিসর্জনের গান, সবকিছু সব একাকার।
তবু লোকে গায়, একা একা চলে যায়, চলে যেতে হয়-
মহাকাল যে চিঠি পাঠায়- আকাশ গঙ্গায়,
স্নান সমাপন হলে পরে,
সময়ের বিলাপের গান, হৃদয় বিদীর্ণ করে।
সংসারের রঙ্গমঞ্চে অভিনয় শেষ হলে পরে,
মিথ্যে হাসি গান, প্রেমের বন্ধন, মান অভিমান –
জীবন, যৌবন, ধন, মান, যায় বিসর্জন।
সব চলে যায়, চলে যেতে হয়, এটাই নিয়ম।
তবু পিছু ডাকে একজন, সে হলো জীবন –
ডেকে বলে সমাদর করে,
যেতে আমি দেবো না তোমায়-
রেখে দেবো অন্তরে কাঙ্খিত কামরায়।
অন্তরে, আমাদের হৃদয়ের গূঢ় অন্তঃপুরে –
চিরকাল রবো অপেক্ষায়,
বিসর্জন হলেও তাই এসো ফিরে বারেবার।
ধরার এ ধূলি পরে বসন্তে শরতে শীতে এই বাংলায়।।

বিজয়া বিদায়

হে প্রিয় বন্ধু একাংক্ষী কবি সবার-
বিজয়া করতে গেলে কি জীবন ওপার,
অবহেলা নাকি কারো উপেক্ষা ভার,
বিসর্জনের বাজনা শুনেছ চিত্ত অন্ধকার।
একাগ্রতায় তীক্ষ্ণ একাংক্ষী –
একাংশু এসে খবর দিয়ে গেলো,
বিসর্জনের বাজনা শুনেছে মা-
আমাদের ছেড়ে একা একা চলে গেলো।

শুভেচ্ছা পাঠাতে ভোরের আকাশে কতো –
কবির সে গানে মুগ্ধ শ্রোতা যত,
জীবনের গানে নিজেই হারিয়ে গেলে,
আত্মত্যাগ কি এভাবেই করো প্রিয়!
শেষ বিদায়ের ব্যঞ্জনা ব্যথা ভরা-
দয়ালু হৃদয় দুয়ার খুলে ছিলো,
একটা সময় সবাই তো চলে যায়-
তুমি চলে গেলে বুক ভরা বেদনায়।

মহাকাল বুঝি পত্র পাঠিয়েছিলো –
বড়ো তাড়া ছিলো তাড়াতাড়ি গেলে তাই,
মোবাইল ঘাটা বারণ তো হয়েছিলো,
অভিমানে বড়ো শোধ নিয়ে গেলে তাই।
বুক চাপা ব্যথা বলতে চাওনি তুমি
তোমার বিদায়ে কার কিবা এলো গেলো –
যেখানেই যাও বিজয়া- বিদায় নিয়ে-
জানিগো বন্ধু থাকবেই তুমি ভালো।।

স্বপ্নের ঠিকানা

যাযাবর মন ঠিকানার খোঁজে উড়ে চলে বহুদূর
নদীনালা কতো পাহাড় পেরিয়ে পেরোয় সমুদ্দুর।
বাধা মানে নাকো হারানো ঠিকানা খুঁজে চলে বন্ধুর
জানে না কোথায় আবাস যে তার প্রাণের সে বন্ধুর।
বিদিশা উজ্জয়িনীর পথে সে পাটলিপুত্রে যায়
মগধ পেরিয়ে কেকয় হয়ে সে কৌশানি পথে ধায়।
হিন্দুকুশের বেড়া টপকিয়ে গান্ধার দেশে চলে
কুন্তীর দেশে পৌঁছিয়ে শেষে শকুনির দেখা মেলে।

কাবুল হতে সে কাবুলিওয়ালাকে সঙ্গী করতে চায়
মন ভরে নাকো পাখতুন হয়ে পারস্য দেশে যায়।
উজবেক তাজিকিস্তান হয়ে রাশিয়ার দ্বারে ঘোরে
তিব্বত মঙ্গোলিয়া পার করে চীনের পাঁচিলে চড়ে।
আফ্রিকা হয়ে ইউরোপ ঘুরে আমেরিকা ছুটে চলে
অরোরা বোরিয়ালিস যেখানে মেরুপ্রান্তরে ভোলে।
ঠিকানা বন্ধু এখনো পাইনি যাযাবর মন বলে
বিশ্ব ভ্রমণে ক্লান্ত এ মন স্বদেশেই ফিরে চলে।

সাগর পাহাড় নদী জঙ্গম সব দেখা শেষ হলে
যাযাবর মন ঠিকানার খোঁজে ফেরে বাংলার কোলে।
ঠিকানার খোঁজে দেশে দেশে ফিরে ঠিকানা সঠিক পেলে
স্বপ্নের ফেরে বহু দেশ ঘুরে স্বদেশেই দেখা মেলে।
সন্ধ্যা বেলায় তুলসী তলায় প্রদীপ জ্বালানো হলে
যাযাবর মন বন্ধুকে পায় সুদীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
বলে, বন্ধু তোমাকে বুকে রেখে দেবো ভালোবাসা দিও ঢেলে
বন্ধু বিনা যে এ প্রাণ বাঁচেনা তোমাকে পেয়েছি কোলে।।

সাঁতার

জীবন যখন সাঁতার কাটে তরঙ্গ উত্তাল
ঝড় উঠেছে জীবন নদীর ঢেউ উথাল পাথাল।
মনের মধ্যে প্রশ্ন ভাসে সব নদী কি এক?
সব নদী নয় নদ ও আছে বৈচিত্র‍্যে নামডাক।

একটা নারী একটা পুরুষ উথাল পাথাল মন
নদ ও নদী মেলে যখন ঢেউ ওঠে তখন।
পাওয়া না পাওয়ার তত্ত্ব তালাশ চলুক কিছুক্ষণ
নদ ও নদী এক হয়ে যায় যখন শাঁ যৌবন।

চাওয়া পাওয়ার দ্বন্দ্ব যখন সংসারে এমন
কেউ বেশী চায় কেউ কম চায় যেমনটা যার মন।
মনের মিলে নারী ও মেলে পুরুষ নদ তখন
আবেগ ভরা জোয়ার ভাটায় সাঁতার দেয় সুজন।

সোহাগ রাতের প্রতীক্ষাতে উদাসী হয় মন
মিলন মেলায় লীলা খেলায় স্নিগ্ধ ত্রিভুবন।
জীবন নদী সাঁতরে মেলে অরূপ ধন রতন
জোয়ার ভাঁটা ওঠা পড়া সংসারের নিয়ম।

দুঃখে সাঁতার সুখেও সাঁতার সাঁতরে চলে মন
সাঁতরে পাড়ে উঠলে পরে আলোর ত্রিভুবন।
প্রতিজ্ঞাতে দৃঢ় হলে আসে শুভক্ষণ
নর ও নারীর মিলন মেলায় সৃষ্টি হয় জীবন।।

আবেগ

ওড়নায় তোর স্পর্শটা লেগে আছে
খুলিনিকো সেটা এখনো জড়িয়ে আছি,
তোর ভালোবাসা রেখেছি বুকের পরে
প্রেমে ভিজে গেছি আজ ওঠেনিকো রোদ্দুর।
নির্জনে প্রেম ভালো লাগাটাই দামী
মজে আছি আজও তোর প্রেমে রোদ্দুর,
কিছু দুরন্ত আবেগ চিনেছি আমি
ভালোবাসা প্রেম উতলা সমুদ্দুর।

চুলগুলো উড়ে পড়ছে কপালে আজ
বিলি কেটে দিবি দেখা নেই কেন তোর,
অগোছালো আর এলোমেলো করে দিলি
অল্পেতে খুশী নয় যে সোহাগি তোর।
বাতাস হঠাৎ বইছে যে এলোমেলো
কি জানি বুঝিবা কাল বৈশাখী এলো,
আবেগের দ্বার খুলে দিলো যেন কেউ
বসন্ত বিলাপ করছে শরীরে মোর।

কে যেন গাইছে মেঘ মল্লার দূরে
আমি অপেক্ষা করছি যে শুধু তোর,
ঘনঘোর মেঘে বৃষ্টি ঘনায় ঘোরে
উতলা এ মন কাঁদালি কি খেলা তোর।
বাহিরে বৃষ্টি ভিতরে বৃষ্টি ঝরে
আবেগে এ মন কাঁপে থরথর করে,
হৃদয় দুয়ার খুলেছি যে তোর ই তরে
এ মরু হৃদয়ে বহুদিন পরে বৃষ্টি এসেছে জোর।।

প্রতিবাদী কন্ঠ

প্রতিবাদীদের খড়্গ কৃপাণ পাষাণের বুকে আছড়ে পড়ে
যে যেখানে পারে লুটপাট করে তোলাবাজী করে ধরাও পড়ে।
নিয়ম নীতি কে মানবে আর দুর্বৃত্তরা শাসন করে
পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতিতে সমাজ গড়ায় অন্ধকারে।
অন্ধকারের আস্তানাতে প্রতিবাদী স্বর গুমরে মরে
গুমরে মরে মানবিকতা, কেউ দেখে ফেলে বদ্ধ ঘরে।
বদ্ধ ঘরে হতাশ স্বরে তবুও ধর্না পথের ধারে
কে যায় ডেকে দলদাস হবি চাকরি পাবি ঘুষের পরে।

ঘুষের পথে বাস্তুঘুঘু স্বজন পোষণ দেদার করে
দেদার করে মস্তানি আর সবাইকে সে ফাঁসিয়ে ছাড়ে।
ফাঁসিয়ে ছাড়ে নিজেও মরে বিচার চলে আদালতে
আদালতের হুকুম জারি ঘুলঘুলিতে আইন ঘোরে।
আইন গড়া আইন ভাঙা সবাই যে যার মতই চলে
চলতে চলতে হোঁচট খেলে খানা খন্দে ডুবেই মরে।
ডোবে যখন সবাই তখন মরণ কামড় কামড়ে ধরে
কামড়ে ধরে দাঁতকপাটি ভায়রা ভাইরা লুকিয়ে পড়ে।

লুকিয়ে পড়ে শিক্ষা স্বাস্থ্য খাদ্য অর্থ দোসর তারই
দোসর তারি হেসেই মরি সামনে দেখি ভোটের তরী।
ভোটের তরী পাঁচ বছরের লম্বা মেয়াদ খড়্গধারী
কল কারখানা সে হবে না প্রকল্পের উদ্বোধন করি।
উদ্বোধনে সব পেয়েছি স্তোকবাক্য অসার ভারী
অসার ভারী আহামরি ব্যালট পেপার ছাপ্পা মারি।
ছাপ্পা মারি পছন্দ নয় একটা ভোটের মূল্য ভারী
মূল্য বুঝে পালটে গিয়ে গণতন্ত্রের ধ্বজাও ধরি।।

অপচয়

গরীবের দেশে অপচয় বেশী হয়
সব কিছুতেই নজর রাখো সম্ভব কারো নয়
হরির লুট আর লুটপাটে কতো জিনিসের অপচয়
উদ্বোধনের দুদিন পরে রাস্তা বেহাল সেতু ভেঙে পড়ে যায়।

উপর মহল নীচের মহল সব কিছু গিলে খায়
মাইনে যা পায় সন্তুষ্ট নয় আরও কিছু পেতে চায়।
কাজ পেতে গেলে মোটা নজরানা সবাইকে দিতে হয়
রাস্তার পিচ তাই উঠে যায় সেতু ভেঙে পড়ে যায়।

উন্নতি নয় ধোঁকাবাজি টাই চলছে সব সময়
সবাই বোঝে ওপরচালাকি সব কাজে নয়ছয়।
ভোটের গরমে উদ্বোধন আর শিলান্যাস ও হয়
ভোট মিটে গেলে শিল নোড়া সব উধাও হয়েই যায়।

সৎ ভাবে কেউ কাজ করে না কো উপরিটা পেতে চায়
জোর করে কেউ মাস্তানি করে কেউ তোলা তুলে যায়।
শিক্ষা স্বাস্থ্য খাদ্য বস্ত্র বাসস্থান ও পরিবহনে দুর্নীতি হয়
আর কি বাকি রইলো জানি না কে যে কাকে আটকায়।

যে যার মতো কাজ করে যায় সমন্বয় টা কোথায়
অপচয় তাই সব চেয়ে বেশী কে কাকে বোঝাতে যায়।
ন্যায় অন্যায় শিকেয় ওঠে ভাগ বাঁটোয়ারা চায়
কী দারুণ দেশ চলছে তো বেশ ঘাড়ে দেনা চেপে যায়।।

স্মরণ

চিরসখা হে,হে আমার কবেকার হৃদয় দেবতা
জানি আমি জানি, আমার এ লিপিকা খানি
পারিবে না কোনদিন চরণ ছুঁতে।
পারিবে না কোনোদিন তোমার হারানো দিনে
শরণ নিতে।
যেখানে রয়েছ তুমি যে অমৃত ধামে, স্নিগ্ধ অমরায়
শান্তিনিকেতনে, আকাশের মাঝখানে, গ্রহ তারকায়
সাধ্য কি সে খুঁজে পায় তুচ্ছ এ কবিতায়,
জীবনের গানে। তোমার সে অমৃত ভবনে,
যেথা তুমি বিরাজিছ সুমধুর কাব্যের সাধনে।
যেখানে তোমার যত প্রিয় বন্ধু সখা সনে
যে সুর দিতেছ তব গানে,
সে সুর বাজিবে সদা শয়নে স্বপনে মনে
এই মহা বিশ্বলোকে, মানুষের প্রাণে।
যে সুর বাজিছে সেথা, সুখে দুখে আনন্দে বিষাদে
মানে অভিমানে আর জীবনের বেঁচে থাকা গানে
ক্ষণিকের ক্ষণে ক্ষণে, তোমারই সে সুর শুনে শুনে
মোহময় সে সুরের মায়ার বাঁধনে
কেমন ঘুমায় বিশ্ব অন্তরের গূঢতম কোনে
নিভৃতে যতনে, যেন মহানন্দঘন প্রাণে
শান্তি পায় মহা শান্তি পায় যেন
তোমারই সে সুর করা বিশ্বপ্রেম গানে।

আমার লিপিকা খানি, করে শুধু কানাকানি
বাহির দ্বারেতে, পারে না চরণ ছুঁতে কোনমতে,
নিয়ে তার জীবনের শেষ শ্রদ্ধাখানি।
আজ কত বর্ষ হোলো হিসেব জানিনে,
জানিনেতো কত কিছু, সে কোন অমৃতলোকে
সদা বিরাজিছ প্রভু, কত আলোকবর্ষ দূরে
কত মহাজীবনের পথ আলো করে
বাঁধিয়াছ আপনার বাসা, সে কোন ভুবনে।

হে বন্ধু, হে সখা, হে বিশ্বকবি চিরসখা,
হে আমার জীবনের স্বর্ণরবি রেখা
কোন প্রভাতের মায়া সে কোন দ্যুলোকে
মুগ্ধ করি রাখিয়াছ অসীম পুলকে আমার কবিকে!
ওই গ্রহ তারকার মাঝে, কী সুরে গাহিছ কবি গান
মাটির এ পৃথিবীর প্রাণ, আরো চায় প্রভু
আরো কতো চায় যে তোমার সুধামাখা গান অফুরান,
তোমার সে লেখনীর চির সম্মান, বিশ্ব জগৎ হতে
শ্রেষ্ঠ কবির শিরোপা সম্মান।

জানি আমি জানি প্রভু
যত দুঃখ ব্যথা তুমি সহিয়াছ কভু
সহিয়াছে সে তোমার সুকুমার প্রাণ।
একে একে চলে যায় জীবনের শ্রেষ্ঠ মায়া
ছোট রবি শমী যার নাম।
চলে যায় সারদা দেবী, কাদম্বরী প্রিয়সখী
প্রিয় বান্ধবী, চলে যায় মৃণালিনী বড় অভিমানিনী
চলে যায় মাধুরীলতা,ঝরাপাতা ঝরে যায়
বড় অসময়।
তবু জগতের সেই পুরানো কবিতা খাতা
অপূর্ণ থাকেনা কোনদিন।
যত অশ্রু বেদনার সবটুকু দিয়ে তার
হিসেব মেটাতে হোলো সেই খাতাটার।
অনন্ত ব্যথার মাঝে কি কবিতা জন্ম নিল
কত ছন্দ কত সুর গান
কত শত বেদনার হাহাকারে দুলে ওঠে
জগতের প্রাণ, পরম বিস্ময়ে!
যেন ঋষি বাল্মীকির সেই মহাকাব্যের সমান।
সেই যেন শুচিস্নিগ্ধ সকরুণ রামায়ণ গান,
ব্যথিত অন্তর তবু মুগ্ধ হয় প্রাণ।

কতশত প্রেম আর বিরহের অমর কাহিনী
কত মুগ্ধতায় লেখে তোমার লেখনী
বিশ্বপ্রেমে কত তুমি পেয়েছ সম্মান।
আজ ভাবি মনে মনে নিশিদিন তুমি বিনে
কেমনে কে গাহিবে সে গান।
যত বন্দনার গাথা,হৃদয়ের যত ব্যথা
কুসুম কোমল কথা কে করিবে দান।

বিষাদ এসেছে কত, কত কেহ বলেছে প্রলাপ
তোমাকে থামিয়ে দিতে সত্যের হয় অপলাপ।
ছুঁতে তবু পারেনি তোমায়।
বিশ্বজোড়া বাঙালীর আশা আর ভালোবাসা নিয়ে,
হে আমার বিশ্বসেরা কবি
তুমি গেয়েছিলে গান।
যেমন বাঁশীর সুরে ভালো লাগা সুর তুলে
বিশ্বজয় করেছিলে তুমি মহাপ্রাণ।
সে যেন হৃদয়পুরে ঢেউ তোলে বারেবারে,
দোলা দিয়ে গেয়ে যায় সুমধুর গান।
সে যেন সে ঈশ্বরের দান, তৃপ্ত মন, তৃপ্ত প্রাণ,
সে যেন সে বিশ্বপারাবারে অমৃত সুধার সমান।

আজি এই বৈশাখের নব রবিপ্রাতে,
ফুল মালা চন্দনে আঁকি কোনোমতে
তোমার বিজয় রথে পুণ্য জন্মভূমি
কলকাতা, জোড়াসাঁকো পুণ্য বঙ্গভূমি।
ভারত মাতার সুপুত্র বলে চিনি,
জনগণ মন অধিনায়ক হে কবীন্দ্র শিরোমণি
মাতা সারদা দেবী ও পিতা দেবেন্দ্রনাথ জানি
এনেছে যে দেবশিশু ধরার আলোকে বিস্ময় মানি
এ ধরার ধূলি ধন্য রবিকবি নামে জানি।

হে রবি বিশ্বকবি, পঁচিশে বৈশাখের নব সুপ্রভাতে,
তোমাকে স্মরণ করি আনন্দের স্রোতে
জানি আজ নিদ নাহি বিশ্ব আঁখিপাতে,
তোমার ললিত বাণী স্মরণে প্রবোধ মানি
এ জীবন ধন্য মানি শ্রদ্ধা হৃদয়েতে।
গঙ্গাজলে গঙ্গাপূজা সারি কোনমতে,
হে রবি, প্রাণের কবি, শ্রদ্ধাভরা লিপিখানি
পাঠালাম তোমার জগতে।।

“আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর”

স্বর্গাদপি

জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী তুমি মাতা তুমি জননী,
সর্ব মঙ্গল স্বরূপিনী, মাতা চিন্ময়ী তুমি দেবী স্বরূপিণী।
করুণাময়ী, পুণ্যতোয়া, তুমি মা অমৃত স্তন্য দায়িনী,
স্নেহ, ক্ষমা, দাত্রী জগদ্ধাত্রী মা তুমি ছায়া মায়া প্রদায়িনী।
তুমি মাগো দেবী, তুমিই জননী, তুমি সর্ব মঙ্গল দায়িনী,
জনমদাত্রী তুমি মা বিধাতৃ নতুন প্রাণ প্রদায়িনী।
তুমিই ভাগ্য বিধাতা দেবী, তুমিই জ্ঞান স্বরূপিনী,
প্রণমি তোমারে মাতঃ দেবীজ্ঞানে, প্রথম জ্ঞান প্রদায়িনী।
জননী জাহ্নবী তুমিই মাতঃ তুমিই অমৃত দায়িনী,
তোমারি স্নেহে জীবন ধন্য তুমিই স্নেহ স্বরূপিনী।
জগদ্ধাত্রী জগদম্বিকে মাতা প্রাণবায়ু স্বরূপিনী,
স্নেহ দয়া মায়া মমতা করুণা তুমিই মা করুণাময়ী।
দিবা রাত্রে তুমি মা অন্নদা, দেবীমা অন্নস্বরূপিনী,
জীবনে মরণে, জ্ঞানে অজ্ঞানে তুমিই সেবিকা রূপিনী।
মোহ মায়া সব বিরাগ বেদনা, যাতনা সর্বং সহিনী,
তুমি নারায়ণী পরব্রহ্ম মা তুমি অপার ক্ষমা প্রদায়িনী।
স্বর্গ যদি কোথাও থাকে মা তুমিই স্বর্গ স্বরূপিনী,
সৃষ্টি রক্ষা কর তুমি মাগো জগতে তুমিই সৃষ্টি রূপিণী ।
প্রণমি মাগো শক্তি স্বরূপিনী জনক জননী জননী,
বিশ্বলোকে দেবতা, মানবে, দানবে পূজ্য মা জননী।।

গোপন কথা

ভীষণ একটা গোপন কথা বুকের ভিতর বন্দী আছে
গোপন ব্যথা গোপন করেই কান্না ঝরে সকাল সাঁঝে।
বুকের ভিতর তোলপাড় হয় বিশ্বজনে নীরব দেখে
গোপন কথার নিশান ওড়ে বক্ষমাঝে কষ্ট মুখে।

এক যে ছিলো রাজার দুলাল আসলো কাছে মিষ্টি হেসে
ময়ূর যেমন সব ভুলে সেই চিতা বাঘের সামনে আসে।
বনের হরিণ মুগ্ধ হলো রাজকুমারের রূপটি দেখে
ভাবলো না সে বুঝলো না হায় চিতাবাঘ যে সর্বনেশে।

ভালোবাসার বিষম জালে বনের হরিণ জড়ায় পাশে
সাক্ষী শুধু তরুলতা বনের পাখি পালায় ত্রাসে।
রাত ফুরালে বুঝতে পারে প্রেমের ফাঁদে বিপদ আসে
চিতা বাঘের প্রেম পরশে সন্তান তার পেটে আসে।

গল্প এখন অনেক বাকি রাজার খেলা শেষ হয়েছে
আংটি দিয়ে ভোলায় তাকে রাজ্যে কতো কাজ রয়েছে।
প্রেমের খেলা সারাবেলা আংটি দেখালে চিনবে শেষে
সন্তানের পিতার কি পরিচয় চিতাবাঘ নাকি রাজার বেশে।

প্রেমের খেলার সাথে সাথে সে সব ছবি বানায় হেসে
হরিণী সে জানেই নাকো ভয় লজ্জার সর্বনাশে।
পুরাণের সেই পরম্পরা আজও চলে এ সংসারে
ধর পাকড়টা হতেও পারে চিতাবাঘ তাই বিদেশ ঘোরে।

চিরকালই মরণ দশা মা বোনেদের আমার দেশে
চিতা বাঘরা বোকা বানায় রাজার দুলাল ছদ্মবেশে।
অনেক সময় ভক্ষকেরা নিজেরাই তো রাজার বেশে
আইন বিচার হাতের মুঠোয় পুড়িয়ে মারে কাজের শেষে।

শকুন্তলারা আজও কাঁদে গোপন কথা বুকে পোষে
রাজ সভাতে বিচার চেয়ে অঝোর কাঁদে দিনের শেষে।
আজকে যারা প্রমোদ মেনে নারী মাংসে ভোজন সারে
কোন আইনে ধরবে তাকে টাকার জোরে বিদেশ ঘোরে।।

হে ঈশ্বর

এসো অমৃতের পুত্র, যাও তুমি পৃথিবীতে যাও।
তোমার পবিত্র শিরে অমৃত চুম্বন দিয়ে পাঠাবো তোমায়।
ভালো থাকবেই তুমি, তোমার ললিত ভূমি,
ফুলে ফলে নদীজলে ভরাবে তোমায়।
জানি আমি জানি, অন্ধকার দূরে সরে যাবেই এবার।
সূর্য, চন্দ্র, গ্রহ তারা সকলে উজলধারা
দেখে নিও তুমি, এ জগৎ আলোময় হবেই তোমার।।

হে ঈশ্বর, তুমি আরও নিকটবর্তী হও-
অন্ধকার হতে সবে মুক্ত করে দাও।
অন্ধকার ছায়াপথ সুদূরে সরাও।
অমৃতের পুত্র যারা, ভালো থাকতে চায় তারা
অন্ধকার তমোনাশ করো দয়াময়।

হে ঈশ্বর, আলো দাও, আরও আলো দাও,
এসো আরও প্রাণপণে জড়াই তোমায়,
কিছু পাপ, অন্যায় করেছি কি করি নাই
কোনো ভেক ধরি নাই, সদা ব্যস্ত হয়ে যাই
সব কিছু ভুলে যাই, প্রভু বলে ডাকিনি তোমায়।
নিয়ে রাগ অভিমান, সদা ব্যস্ত হয় প্রাণ
জীবনের চড়া দাম মিটিয়েছি তাই।

হে ঈশ্বর, প্রাণে বল-সাহস যোগাও,
এ সভ্য সমাজ আজ, ভুলে গেছে সব লাজ,
তোমারই এ দুনিয়ায় কেউ কেঁদে মরে যায়,
মানবিক মন হায় ঘুরে মরে সাহারায়,
মিথ্যার দম্ভ জয়ে কেউ জয়ী হয়ে যায়,
পাপেতে পূর্ণ ধরা,ত্রাণ করো প্রভু বসুধায়।

হে ঈশ্বর, প্রাণে আলো জ্বালাও এবার,
জীবনের চারিভিতে আলো যেন জ্বলে ওঠে,
অমরাবতী যেন তার খুলে দেয় দ্বার।
নামুক অমৃতধারা, স্নিগ্ধ বায়ু, বারিধারা,
তোমার করুণাধারা মিলেমিশে সব যেন একাকার হয়।

হে ঈশ্বর, শেষ আশ্রয়, অমৃতকলস নিয়ে এসো আরবার।
তব প্রিয় পুত্র যারা, আজ তারা দিশাহারা
অদৃশ্য বিষাক্ত বিষ ঘোরে বিশ্বময়।
তোমার অমৃত পেলে, ভূলোক উঠবে দুলে
তোমারই সন্তান হবে সুধামৃত ময়,
হে ঈশ্বর, আরও একবার তুমি ক্ষমা করে দাও।।

গঙ্গা জলে গঙ্গাপূজা

প্রণাম তোমায় বিশ্বকবি সব সময়ে স্মরণ করি
তোমারই সেই “সোনার তরী” সোনার ধানে উঠলো ভরি,
“সন্ধ্যা সংগীত ” উঠলো বাজি আমরা তোমায় বরণ করি,
প্রাণ জুড়ালো কাব্যগানে হে রবিকবি তোমার চরণ পূজা করি।

“নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ ” হলো যখন “গোরা” বুঝি গাইলো তখন
“শেষের কবিতা”-রই বাণী, “প্রহাসিনী” মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনি।
“কড়ি ও কোমল” মিলিয়ে দিয়ে “মানসী” ওই যায় যে চলে
“বিদায় অভিশাপ” এর বেলায় “চণ্ডালিকা” কোথায় যে যায়
“চিত্রাঙ্গদা” শুনিয়ে দে যায় “শ্যামা” র কানে অভয় বাণী।
“চৈতালী” সে “ক্ষণিকা ” খুঁজি “রবিচ্ছায়া”-য় মুখ লুকালি।
পূজার সে “নৈবেদ্য” নিয়ে “চিত্রা” যে গায় “গীতাঞ্জলি”।
“গীতবিতান” “খেয়া”-য় তুলি “পূরবী” দেয় “পত্রপুট”-এর ঝাঁপি খুলি।
“পুনশ্চ”-রই “বনবাণী” “মহুয়া” ফুলের সুবাস মানি,
নাটক নভেল প্রবন্ধতে তোমার সোনার লেখনীতে
সোনার জলে সব অক্ষরে তোমার কলম ঝর্ণা ঝরে।
সব মানুষের দুঃখ ব্যথা তোমার কলম বললো কথা
তাইতো তুমি বিশ্বকবি সোনার বরণ অরুণ রবি
আনলে মালা জগৎ জিনে নোবেল প্রাইজ বঙ্গ জনে।
বাজলো সে সুর গানে গানে বিশ্ববাসী আজও জানে
তুমিই শ্রেষ্ঠ কবির কবি, কবিগুরু রবীন্দ্র রবি
বিস্ময়ে তাই মুগ্ধ প্রাণে সুখে দুখে স্মরণ করি
তোমার পায়ে প্রণাম করি গঙ্গাজলে গঙ্গাপূজা তাইতো সারি।।

একজনা

সব জলকণা বাষ্প হয়েছে জানি
বাষ্প ভাঙলে মেঘ হবে অভিমানী,
এতো তাড়াতাড়ি নাইবা ঝরলে রাণী
কিছু আনন্দ আবেগ রেখো বুকে।
এ হৃদয় জুড়ে তুমি আছো একজনই
আর যত কিছু সব থাক অজানাই,
দিনের সূচনা ভোরেই সেটা তো জানি
আজ রাতে নয় জ্যোৎস্না পড়ুক মুখে।

কতদিন তুমি ফুল হয়ে গেছ বনে
বকুলের মতো ঝরে পড়েছিলে মনে,
আমি দুলিয়েছি সে বকুল মালা গলে
সেদিনের গান মনেতে রেখে দিও।
হারানো দিনের কথা মনে রেখো প্রিয়
বসন্ত এলে তুমি বাজিয়েছ বীণা,
গান শেষ হলে বারতা পাঠাবো মেঘে
আকাশেতে দেখো রামধনু ওঠে কিনা।

যতদূরে যাই আকাশের তারা মিটিমিটি করে চায়
রাতের জোনাকি আলো জ্বেলে খোঁজে সাথীকে হৃদয়ে চায়,
সাথীহারা আমি কেমনে কাটাই এ আঁধার রাতি বলো
ঊষার লগনে ফুল চন্দনে কাছে ডেকে নিও প্রিয়।।

চিঠি

সুচরিতাসু,
এ চিঠি লিখছি আমি তোমাকে
আজকাল চিঠি লেখা হয় না,
হাই হ্যালো চলে মুঠো ফোনেতে
খামে চিঠি লেখা আর হয় না।
তবু আজ চিঠি লিখি তোমাকে
কতো দিন কোনো সাড়া পাই না,
বসন্ত এসে গেছে দুয়ারে
কোকিল কেন যে বনে ডাকে না।

জানি এক মাঘে শীত যায় না
সব গাছে পাতা ঝরে পড়ে না,
পলাশের দেখা আজও মেলেনি
তোমার ঠোঁটের করি তুলনা।
কপালের লাল টিপ জানালো
কবে নাকি পর হয়ে গিয়েছ,
বিয়ে করে আরও তুমি সুন্দর
এতো সুন্দরীদের চিনি না।

ফাগুন আগুন বুকে জ্বালালো
ফাল্গুনী হাওয়াতে কি বলে যায়,
ভালোবেসে তবু যাকে চেনো নাই
তাকে মন দিয়ে কেন কেঁদে যাও।
হয়তো এ চিঠি তুমি পাবেনা
ঠিকানাটা আজও বলে দাওনি,
যদি পারো লিখো আকাশের গায়
চিঠি পেয়ে উত্তর ভুলো না।

এখানেই চিঠি শেষ করলাম
ভালোবাসা আজও বুকে অম্লান,
মাঝে মাঝে দেখা দিও হৃদয়ে
ভালো থেকো আজ আমি চললাম।।

ইতি
সুজন বন্ধু।।

মিসড কল

অনেক দিনের পরে তোমার কল এসেছিল ফোনে
ধরতে পারিনি কেননা ফোনটা কোথায় ছিল তা জানিনে।
একদিকে খুশী মিসড কল দেখে আমাকে পড়েছে মনে
হয়তো এ শীতে পারবোনা ছুঁতে তবু উষ্ণতা মনে মনে।
আসলে জানো তো ফোন বাজে না কো মিউট করার গুণে
রাতে ফোন এলে ফোনটা বাজলে ঘুম উবে যায় ক্ষণে।
রাতের স্বপ্ন রাতে মিশে যায় ছায়া ছায়া কায়া ভাসে
কি জানি কি ত্রাসে কোন সর্বনাশে অশরীরী ছায়া আসে।

শুনি ফাল্গুন জ্বেলেছে আগুন আহ্বান বনে বনে
শিমূলে পলাশে দারুণ উল্লাসে মনে ভালোবাসা আনে।
কি কথা বলে সে আসে ভালোবেসে ফাল্গুনী রচি মনে
প্রিয়া কথা দিলে মন ভালো হলে শিহরণ লাগে প্রাণে।
দিন শুরু হলে শত কোলাহলে আনমনে কথা বলি
যদি কল আসে ভাসবো বাতাসে প্রেমানন্দে যাব গলি।
শিমূলে পলাশে পাখি এসে বসে মধুপের গান শুনি
কি জানি কি ভাসে আকাশে বাতাসে বিরহ বেদনা জানি।

আমরা দুজনে ভাবি নির্জনে হারাবো মউল বনে
ত্রয়োদশী চাঁদে রাগে অনুরাগে চকোরী কে ভালো চেনে।
সাধ আহ্লাদ নাই সাথে থাক তবুও তোমাকে পাবো
তাই রোজ ভাবি আমি কল করি তোমাকে এ গান শোনাবো।
ধ্রুব তারা দেখো আকাশের গায় রোজ চেয়ে থাকে বিরহীর প্রায়
একা চাঁদ জানে চকোরী কেমনে ভালোবাসা পেতে চায়।
একবার দেখো বিশ্বাস রাখো আর কল মিস হবে না
ভুল তো হবে না লাভ ইউ সোনা আর একটা কল করো না।
অনুমতি নেই তাই নিজে থেকে টেলিফোন আমি করিনা
এমন সময় কল করো তুমি কল মিস যেন করিনা।।

বিদ্যা

বিদ্যা করে বিনয় দান আর অবিদ্যাতে অহংকার
বিদ্যা সত্যনিষ্ঠ হলে মেলে সম্মান পুরস্কার।
সময় হলে বিদ্যা পাকে জ্ঞানেতে তার বিকাশ হয়
কৃষি বীজ বুনলে যেমন সময়ে আহার্য হয়।
ফসল বুনে প্রতীক্ষাতে যদি কিছু সময় যায়
তত্ত্বের অনুভূতি ও তেমন সময়ে প্রতিফলিত হয়।
এ বিশ্ব আজ বিনাশ হচ্ছে প্রতিদিনই হচ্ছে ক্ষয়
অধ্যবসায় বিনা কি কেউ পরীক্ষায় উৎরিয়ে যায়?

গণ টোকাটুকি চলে অধিকারের ই পর্যায়
টোকাটুকি আটকালে কেউ গণ হারে ধোলাই খায়।
পরিদর্শক শিক্ষকেরা কোথাও বা প্রহৃত হয়
সত্য বিদ্যা জ্ঞান ও বিনয় তাই অধরা থেকেই যায়।
সার কথা এর দেশ ও সমাজ একাধারে গোল্লায় যায়
অথর্ব হয় দেশ ও সমাজ চালিকা শক্তির পরাজয়।
দেখছি যত শুনছি ততো দুঃখিত তো হতেই হয়
দেশ ও সমাজ পিছিয়ে পড়ে সবার শেষে বিনাশ হয়।

যা দৃশ্যমান যা দেখি রোজ দৃষ্টি বিভ্রম মোটেই নয়
দৃশ্যমান সব বস্তু সকল অদৃশ্য তাই হয়েই যায়।
দর্শন আর অদর্শনের ফারাক বোঝা সহজ নয়
ভাব গুলো সব অ-ভাব হয়ে মনে দোলে বুঝতে হয়।
অস্থি রূপে যা দেখি সব কাল সকালে খেই হারায়
নাস্তিকেরা নগর জুড়ে নানা রকম খেল দেখায়।
এই দেহ মন জমি বাড়ি ধন প্রতিষ্ঠা পদাধিকার পায়
শাস্ত্র বলে কোনো কিছুই তোমার স্বাধিকারের নয়।
মন দিয়ে তাই সত্য বুঝতে বিদ্যা জ্ঞানের দরকার হয়
বিদ্যা বিনা সাধন পথে সব পণ্ডশ্রম অপচয়।।

জীবনের আঙিনায়

জীবনের আঙিনায় কতো বন্ধু আসে যায়
কার কতো কথা মনে রাখি,
যারা ভালোবাসা দেয় মনে সব জমা হয়
তারই জলছবি মনে আঁকি।
মনের গহীন কোণে স্মৃতি সব জাল বোনে
একে একে সবই মনে পড়ে যায়,
কার ছিলো ব্যবহার কার কতো অহংকার
কারা দাগ কেটে তবু চলে যায়।
যারা বেসেছিল ভালো জীবনে দিয়েছে আলো
কালো মেঘ তাই দূরে সরে যায়,
ফুল কলি আসে যায় সুবাস বিলিয়ে দেয়
কালো রাত আলো হয়ে ভেসে যায়।

বাতাসে দুলেছে ফুল মুগ্ধ হয় অলিকুল
বসন্ত বিলাসে হাসে মধু বায়,
শিমূল পলাশ হাসে মউলের নিঃশ্বাসে
ভ্রমর পাগল পারা হয়ে যায়।
আমি বসি স্মৃতি নিয়ে ভালোবাসি বলি প্রিয়ে
কিছুতেই মন যেন ভালো নয়,
পুরানো সে গান শুনে কার কথা পড়ে মনে
কতো স্মৃতি মনে দোলা দিয়ে যায়।
যারা দাগা দিয়ে যায় জানে না তো কি হারায়
কার তাল কোথা যেন কেটে যায়,
প্রেম যদি নাই দিলে ভালোবাসাটা ফুরালে
এ জীবন ভরে যায় বেদনায়।

ডাক

তোমাকে দেখেছি, যখনি ডেকেছি, অদ্ভুত নীরবতা,
জানান দিয়েছে, জেগে আছে শুধু রাত্রির গভীরতা।
নিশ্বাস ফেলি সে তোমারি বুকে, মগ্ন যে হতে চাই,
শুধু ঝিঁঝিঁ ডাকে, জোনাকিরা খোঁজে, হারানো তোমাকে চাই।

তোমার সুবাস মেখেছে বাতাস, হতাশ হয়েছে শ্বাস,
তুমি আছো কাছে, হারাওনি সাঁঝে, এ আমার বিশ্বাস।
আকাশ প্রদীপ জ্বেলেছি যখন,খুঁজব যে অনুক্ষণ,
বাতাবি ফুলের গন্ধে ভেসেছি, হারিয়েছি ত্রিভুবন।

শরীর তোমার দেখেছি যেদিন, তুমি ভিজেছিলে মনে,
সেদিন সাঁতার দিয়েছি সাগরে, ফিরে আসবো না জেনে।
উত্তাল জল মাতাল বুঝিবা, উল্লাসে নাচে ঢেউ,
সিক্ত সে রাতে, মনের গভীরে, আশা দোলা দেয় কেউ।

তুমি জানো তাহা, কি ছিল বারতা, গভীর বনানী মাঝে,
ফিস ফিস করে, বাতাস বলেছে, এসো আজ তুমি কাছে।
শুনেছি সে গান, নদী কলতান, আকুল হয়েছে বুঝি,
কূল ভাঙে আর কূল গড়ে, সে যে সময়ের পিছু পিছু।

যে বারতা শুনে,তোমারে সেদিনে, বুকে নিয়েছিনু টানি,
সে বারতা বুকে, তুমি হয়ে বাজে, মনের মাঝেতে শুনি।
চলে যায় দিন, বিরামবিহীন,কারো কথা নাহি শোনে,
কত আশা করে, ডেকেছি তোমারে, আজও একা আছি মনে।

তোমার যে ডাক, করেছে অবাক, মাতাল হাওয়ার দিনে,
ফাল্গুন নাকি চৈত্র সেদিন, ভরা বসন্ত মনে।
কৃষ্ণচূড়াতে লালে লাল ছিল,সেদিন গোধূলি বেলা,
শুরু হয়েছিল মাতাল হাওয়াতে, আমাদের পথ চলা।

আজিকে যখন তুমি আনমনা, ডেকে বলি শোনো কানে,
আমার সে ডাক, হয়ো না অবাক, আর কারো কথা শুনে।
হাতটা কেন যে টেনে নিয়েছিলে, বুঝিনিতো এতো দিনে,
সাড়া দিও তুমি, সে ডাকে আমার, জীবনে না হয় মরণে।

বীর সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ

হে বীর বিবেকানন্দ লহ নমস্কার
ভারত ভূমিতে জন্ম পবিত্র আত্মার,
গঙ্গা যমুনা সরস্বতী মিলনস্থল ;
সাধনার লীলাভূমি যত দেবতার।
আদর্শে অটল মন ও প্রাণ চঞ্চল,
বিলে নামে সম্ভাষিত সখারা সকল
একাগ্র, তন্নিষ্ঠ তার সে শৈশব কাল
সর্প ওঠে পদোপরি ধ্যানে অবিচল।

অনন্ত জিজ্ঞাসা মনে ঈশ্বর কোথায়?
পরমহংস শ্রীরামকৃষ্ণ কাছে যায়,
পরম নিশ্চিন্ত মনে সে পদে আশ্রয়,
নরেন্দ্র বিবেকানন্দ গুরু দীক্ষা পায়।
বেদ ধর্ম বেদ ব্রহ্ম বেদ জ্ঞান পূজা,
হিন্দু সন্ন্যাসীর দর্শনে জীবন সোজা।
দরিদ্র চন্ডাল নীচ সকলেই প্রিয়,
জাতি ধর্ম নির্বিশেষে উদার হৃদয়।
একাধারে দার্শনিক লেখক সংগীত
রামকৃষ্ণ পরমহংস প্রধান শিষ্য
শিকাগো তে হিন্দুধর্ম বেদান্ত প্রচার,
সদর্পে ভারত আত্মা পরিচয় দেয়।
পিতা বিশ্বনাথ দত্ত মাতা ভুবনেশ্বরী
ভুবন বিজয়ী বীর পেল বসুমতী।
মা’ র কাছে শুদ্ধা ভক্তি বর চেয়ে নেয়
স্বামী বিবেকানন্দ নামে প্রসিদ্ধ হয়।।

জীবন যে রকম

তবু চাঁদ হেসে ওঠে, কেঁদে ওঠে পেঁচা;
যে সৃষ্টির আদি ক্ষুধা আছে তার দেহে
সে জানায় বিদ্রোহ, ইঁদুর পড়েনি তার চোখে।

নিষ্ফল বেদনায় ভরে যায় ইঁদুরের মন।
তবু আয়ু বাড়ে এক রাত —
মায়া বাড়ে, ব্যথা বাড়ে,
ডিম্বকোষে মেশে শুক্রকীট,
আর একটি সন্ততি বাড়ে।
ভয় ও বাড়ে, — জানে শোষণ হবেই —।
তবুও তো মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা!!
সেটাও তো লড়তে হবে,যদি পারে টিকে যাবে।
নতুবা পেঁচার তীক্ষ্ণ নখর ভিন্ন করবে তাকে।
জীবন মৃত্যুর খেলা শোষণ আর অনটন সে জানে—
আরো সে যে জানে,মৃত্যু তার জীবনের সাথী।
মাঝে মাঝে অভিশাপ দেয় তবু হৃদয় নিঙাড়ি,
যারা আলো দিয়ে কেড়ে নেয়,
যারা প্রতিশ্রুতি দেয়—
উন্নত হবার আহ্বান যারা করে,
তারপরে ধীরে, কার্য সিদ্ধি হয়ে গেলে পরে
ফেলে দেয় সমাজের আঁস্তাকুড় পারে
নয় কোনো জঙ্গলে, নর্দমার ধারে!
স্বার্থপাশ যাদের আড়াল করে দেয়
বিবেকের সাথে মনের, ধনীর সাথে নির্ধনের
নেতার সাথে আম জনতার!

অভিশাপ তার ব্যর্থ হয়ে যায়—যখন সে দেখে,
চাঁদের সাথে পেঁচার শত্রুতা শুধুই জ্যোৎস্নায়!
অমাবস্যায় দুজনের হৃদ্যতা অন্ধকারে,
বিবেকের অন্তরালে, সকলের চোখের আড়ালে।
মানবিক শিশু কাঁদে সকালে বিকালে,
বিচারের আশায় আশায় কাটে দীর্ঘকাল,
কতো দিন চলে যায়, বছরও সে ঘুরে যায়
অসহায় হয়ে বসে ভাবে, কতকালে কাটবে আকাল,
বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে শুধু কাঁদে চিরকাল!

অসহায় ইঁদুর; পালাতে পারে না দূরে—
আছে খাঁচাকল!
নতুবা পেঁচা এসে বসে কোনো ডালে
ঘুট ঘুট করে ইঁদুরকে ডেকে পেঁচা বলে খাবো আমি তোকে আজ নয় কাল!!!

তাজ্জব কি বাত

বড়ি তাজ্জব কি বাত হ্যায় বাবু তাজ্জব কি বাত,
আপনা শিরপে ডান্ডা মারে লেড়কি কুপোকাৎ!
উপরসে ভি মামলা জোড়ে আমলা হামলা কে সাথ,
আপনা শিরকো আপনি ফাঁড়ে বড়ি তাজ্জব কি বাত!

দৌড়কে ভাগে লেড়কি রাত মে ফিরভি মারে লাথ!
রাজপুরী কি জঙ্গল পুরী নেহি সমঝে বাত।
ষোলহ সিলাই আপনা শিরপে উরি বাপরে বাপ,
মর গিয়া কি বাঁচা উহ্নে না জানে তফাৎ।

হায়রে দেশ মে সুসন্তান সব ক্যা সমঝে আপ,
দেশপ্রেমিক ভাইয়োঁ আপসব ক্যারিশ্মা কিবাত!
হিটলার নেহি তো মুসোলিনি নাম শুনা কি আপ,
হিন্দুস্থানি হ্যায় হম ভাইসব আপকা কৌনসা জাত?

লড়াই জারি রাখো ভাইসব বহেনকা শির ফাটোয়াত,
দেখো ক্যায়সে মামলা চলে ক্যা বিচার কি বাত।
ডক্টর হেকিম ক্যা বোলতা ভাই নেহি সমঝে বাত
রাত কি আন্ধার বিজলী নেহি থি গুন্ডোকা সাবাস!

আপনা দেশ মে আপ বিদেশী কিতনা মুসিবত,
দুনিয়াদারী শাসন জারী শুনো মেরী বাত।
টুকড়া টুকড়া হো জায়েগা দেশ ক্যা সোচতা হ্যায় আপ?
একতা হ্যায় ইয়ে বিচিত্রিতা মে এহি না সাবাস।

ধরম করম আপনা আপনা খানা পিনা ভি আপ
জিসকা য্যায়সা পসন্দ উসকা পোশাক আপনা সাথ।
এক জাতীয় সঙ্গীত হামারা হম এক দুসরোঁ কি সাথ,
একহি দেশ মাতা হামারা হম সব হ্যায় একসাথ।

“সারে জাঁহাসে আচ্ছা হিন্দুস্তান হামারা হামারা
সারে জাঁহাসে আচ্ছা, বন্দেমাতরম, জয় হিন্দ”

নতুন সূর্য

বুঝতে যখন পেরেছ বন্ধু ওঠো জাগো ঘুম ভাঙো,
আর দেরী নয় কন্ঠে তোমার বজ্রের ধ্বনি আনো।
প্রতিবাদ করো মিছিলে মিছিলে অন্যায় করো বন্ধ,
বলো বীর তুমি উন্নত শির অনাচার হোক স্তব্ধ।

দিকে দিকে তোলো আওয়াজ বন্ধু লড়াইয়ে ফেরো আবার,
ঘরের শত্রু বিভীষণদের চিনে নাও আরবার।
বিভেদের ডাক কেন দিলো ওরা ধর্ম কি করে কার,
হারিয়েছি সব হারাইনি তবু বিবেকের অধিকার।

সবাই রয়েছে মিলমিশ করে কেউ কারো পর নয়,
আজকে আবার কি হলো তোমার হলে এতো নির্দয়!
কিসের আইন কিসের বিচার কী চেয়েছে জনগণ,
কার বেড়া ভেঙে কাকে ডেকে আনো কার বা বিসর্জন!

মানুষকে কতো অমানুষ ভাবো সে হিসাব দিতে হবে,
এক দেহ মন একপ্রাণ মোরা সে কথা বুঝতে হবে।
ব্যবসাটা ওরা বুঝেছে সে জানি মুনাফা লোটার আশে,
ঘরে ও বাইরে ফাঁদ পেতে রাখে সে ফাঁদ ছিঁড়তে হবে।

এর মধ্যেই ঘাড়ে গর্দানে শুধু লুটে নেয় সব,
বেচে দেয় কতো সম্পদ সোনা জানে সারা দেশময়।
সকলেই জানে বড়ো বড়ো ঋণ কারা পায় কারা দেয়।
হাজার হাজার কোটি লুটে নিয়ে দেশকে পথে বসায়।

চুপ করে আর থেকো না বন্ধু তুলে নাও হাতিয়ার
বজ্রকন্ঠে জানাও তোমার প্রতিবাদ সোচ্চার।
যা খুশী করতে দেওয়া যায় নাকো বুঝে নাও অধিকার,
বিভেদের বাঁশি যতই বাজাক তুমি হও হুঁশিয়ার।

বুকেতে আঘাত করেছে যে জন আঘাত ফিরিয়ে দাও,
ঘুম ভাঙো তুমি জাগো হে বন্ধু ওদের বুঝিয়ে দাও।
জাগো হে তরুণ অরুণ আলোকে স্বাধিকার বুঝে নাও,
শপথের পথে নতুন সূর্য উঠবেই দেখে নাও।।

অতীতের স্মৃতি

অতীতের স্মৃতি নিয়তির মতো লাগে
নতুনের কাছে আশা করাটা কি ভালো,
কতো কি যে ভালো এলো আর চলে গেলো
গতিকটা বুঝি বেগতিকই মনে হয়।
বেগতিকে মরু বরফ গলছে জানো
অতি আর অনা বৃষ্টিতে প্রাণ যায়
শস্য ফসল কতো যে নষ্ট হলো
প্রকৃতির রোষ তাকে কি ঠেকানো যায়?

ঠেকানো যায়নি ভালো ও মন্দ যতো
হিমবাহ গলে সমুদ্রে মিশে যায়,
পানীয় জলের আকাল বুঝবে কবে
মানুষ ই বোঝে না মানুষ হবার দায়!
মানুষ হবার দায় কি একটু খানি
হাওয়ায় ভাসছে ভয়ানক ভাইরাস
কেউ কি রেহাই পাবে বলে মনে হয়
হায় হায় করে কেঁদে কে কোথায় যায়?

কেঁদে আর কোথা যাবে গো মানুষ ভাই
ইউরোপ চীন কাঁদে আমেরিকা তাই
দূষণ কাউকে ছেড়ে কথা বলে নাকো
অমরত্বের সাধনা বৃথাই যায়।
বৃথাই দেখছি দ্বন্দ্ব বিহীন আতঙ্ক হীন রাত
বাঁধন ছেঁড়া স্বাধীন মুক্ত কোথায় হলো সমাজ
নতুন বছরে মুক্ত পৃথিবী চাই
হে বিধাতা তুমি মুক্ত করো ভয়।।

সত্য

সব সময়ে কি সত্যিটা বলা যায়?
মিথ্যাই শুধু ব্যবহৃত হয় সত্যকে চাপা দিতে,
অশ্বথমা হত টা সত্যি নয়
ইতি গজ টাই আসল সত্য, অনুচ্চারিত রয়।
কতটা সত্য ব্যবহৃত হয় আজকে বিচারালয়ে
ধর্মের নামে শপথ সবাই নেয় সত্য বলবে বলে।
আসল সত্য চাপা দিতে কতো মিথ্যা কথা না চলে
ধর্মরাজের দণ্ড অবাক হয়।

চেপে রাখা রাগ বেরোতে সত্য চায়
ধামাচাপা দিতে ঘৃণাও মিথ্যা চায়
সত্য মিথ্যা মিথ্যা সত্য হয়
তদন্ত নয় স্বচ্ছ তাই বিচারেও ছাড়া পায়।
সত্য চাপতে মিথ্যার অভিনয়
মিথ্যার জয় সাময়িক তবু জয়টা সত্য নয়
সত্য বলতে যদিও সাহস চাই
সত্য চাপতে মিথ্যার গান গাই।
সৎ সাহসের দুনিয়া টা ছোট তাই
সত্যি বলার সৎ লোকের অভাব
মিথ্যা চলছে দাপটের সাথে দেখি
সত্যের অভাবে মরে সৎ লোকেরাই।।

প্রেম পরিণয় নয়

ছ’বছর প্রেম করার পরেতে বিয়ে
আট বছরের দাম্পত্য জীবনে এলো সে দুঃসময়
চৌদ্দ বছর পার হয়ে গেলে পরে
আইনি নোটিশে বিচ্ছেদ চাওয়া হয়।
ভালোবাসি বলা কথাগুলো ক্লিশে লাগে
তোকে ছাড়া এই জীবন টা বিষময়
লায়লার প্রেমে মজনু বিবশ হলে
তোকে ছাড়া দেখি বাঁচাটাই লাগে দায়।

দুজনেই জুটি বেঁধে অভিনয় করি
দুজনেরই পেশা অভিনয়ে সঙ সাজা
প্রথম জীবনে দুজনে লুটেছি মজা
তোকে বিয়ে করা ঠিক নয় আজ বুঝি।
চৌদ্দ বছর ক্লান্ত জীবন মনে হয় বনবাস
মুখোশ পরে অভিনয় করে সংসার ছারখার
ভালোবাসা টার বয়স হয়েছে বুঝি
বিয়ে আর প্রেমে হিসেব মেলানো ভার।

প্রেম ভালোবাসা বন্ধু মানাতে গিয়ে
মুখোশ দেখেছি মুখের মানুষ নেই
তোর নয় আরও সঙ্গী সাথীরা আছে
আমার যে আর তুই ছাড়া কেউ নেই।
সমাজ নিয়ম আজ আর কিছু নেই
তবুও বুকের কোনায় কঠিন ব্যথা
বিয়ে করাটা তো ছেলেখেলা নয় বুঝি
ইগোর লড়াইয়ে খেলা ঘর ভাঙা খেলা।

ডিভোর্স ফাইল তুই নিজে করেছিলি
বিচ্ছেদ আমি চাইনি তখনো আজও
তবু্ও তো তুই বিচ্ছেদ চেয়ে নিলি
ভালোবাসা নয় সম্ভোগ ছিলো যতো।।

মুক্ত বাতাস

মুক্ত আকাশ মুক্ত বাতাস চাই-
নেট জিরোতেই পৌঁছাতে হবে তাই,
পৃথিবীতে আজ দূষণের কালো ছায়া
মুক্ত হাওয়ায় শ্বাস প্রশ্বাস চাই।
নেট জিরো হবে প্রতিশ্রুতি টা শুনি-
জলবায়ু কণা দূষণ মুক্ত হবে,
এই মানুষেরই কীর্তি কাহিনী শোনো
আবহাওয়া দূষণ মানুষই ঘটিয়ে থাকে।

কারখানা গাড়ি বিষাক্ত ধোঁয়া ছাড়ে-
পরমাণু বোমা এখনও মানুষই বানায়,
তারাই রকেট বানায় যুদ্ধ করে
মানুষের লোভ সব সীমা ছাড়ায়।
দূষণ রোধের শপথ সবাই নেয়-
নেট জিরোতেই সবাই থাকতে চায়,
প্রতিশ্রুতি তো হিটলার রাও দেয়
ক’জন শপথ রাখে সেকথাও জানি।

কারখানা, গাড়ি মানুষেরই প্রয়োজনে-
দূষণ রোধও মানুষের ই কল্যাণে,
তবুও দূষণ মাত্রা ছাড়িয়ে যায়
পৃথিবীর লোক গিনিপিগ অসহায়।
গাছ কাটা হলো জন্মের অভিশাপ –
সবুজই পারবে এ পৃথিবী বাঁচাতে,
দূষণ রোধে গাছই পৃথিবী সহায়
গাছই পারবে মুক্তির শ্বাস প্রশ্বাস এনে দিতে।

গাছ কেটো নাকো গাছকে বাঁচানো চাই
পরম বন্ধু ফুল ফল ছায়া গাছই বিলায় ভাই,
একটি গাছ একটি প্রাণ সকলে জানুক তাই
এ পৃথিবীকে জানি বাঁচাতেই হবে তরুছায়ে প্রাণ জুড়াই।।

মারণ যজ্ঞ

যে আগুন শিখা মিশে আছে প্রতিবাদে
সে আগুন শিখা জ্বালিয়ে রাখাটা চাই,
যে দহনে আজও পুড়ছে মানুষ জাতি
দিকে দিকে আজ তারই প্রতিবাদ চাই।
মিছিলে মিছিলে ছয়লাপ চারিধার
শহীদ রক্ত ঢেলে গেছে দুর্বার,
লজ্জিত হোক যারাই যুদ্ধ বাজ
সভ্যতার আজ দারুণ দুঃসময়।

যে ধ্বংস প্রলয়ে নেমেছে অন্ধকার
বর্ষিত হোক জগতের ঘৃণা মাথার উপরে তার
লজ্জিত আজ মানুষের কারাগার
মহা মিছিলের হুংকার শোনা যায়।
প্রেরণা সাহস যোগাক বিশ্বে নির্ভীক দেশ প্রেমিক
জীবনের শেষ জয়গান গেয়ে যাক অমর সৈনিক
বিশ্বাস আর সাহসে বাড়ুক মনোবল জোরদার
মহা মিছিলের আওয়াজে উঠেছে শান্তির হুংকার।

মারণ যজ্ঞ বন্ধ হোক এবার
বিপন্ন সব নারী শিশু বৃদ্ধেরা,
যুদ্ধ থামাও যুযুধান আছো যারা
সব মানুষকে শান্তিতে শুতে দাও।
যুদ্ধ হয়তো থেমে যাবে একদিন
কাক শকুনের উদর পূর্তি শেষে,
শ্মশানে শৃগাল হায়েনারা সব হাসে
যুদ্ধ মুক্ত দুনিয়া কে দেখাবে ভাবি এসে?

শান্তি কামীরা সব একজোট হও
অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করতে হবে,
দাদা গিরি করে যারাই যুদ্ধ বাধায়
পৃথিবী থেকেই তাদেরকে সব মুছে ফেলে দিতে হবে।।

উপেক্ষিতা উর্মিলা

কত দিন, বলো কত দিন পথপ্রান্তে চেয়েছিলে তুমি নির্নিমেষ চোখে তৃষাতুরা, হে উর্মিলা! কত শত দীর্ঘশ্বাস বয়ে নিয়ে গেল কোথা উদাসী পবন , হিসাব আছে কি তার! নিদাঘের রৌদ্রতপ্ত ক্লান্ত দীর্ঘ দগ্ধ দিনে, নয়তো বা ঝিঁঝিঁ ডাকা বিষন্ন শ্রাবণে, হওনি কি কভু তুমি নিতান্ত উতলা? হওনি কি নিতান্ত উদাসী, কোনো এক ডাহুকের উচ্চকিত স্বরে? প্রিয়ার সঙ্গম তরে যে ডাকে কাতর স্বরে নিশি দিন ধরে! দিবসের শেষ যামে, গোধূলির রঙ যবে দিগন্তে আপনমনে অতি সযতনে রেখা টানে আকাশের গায়, সন্ধ্যার আগমনে ব্যাপ্ত হয় সবখানে সে ছবির শেষ আলিম্পন,অথবা প্রভাত কালে, শুচি স্নিগ্ধ স্নান সেরে, মনে মনে ডেকেছিলে লক্ষণ, লক্ষণ!

মৃদু স্বরে, সকলের শ্রুতি অগোচরে, সেই বাণী শুনেছিল শুধুমাত্র মলয় পবন? তোমার সে দীর্ঘশ্বাস ভেসে গিয়েছিল বুঝি দূর বৃন্দাবন। যেমন মেঘের দূত বাতাসে বাহিয়া, নিয়ে চলে যায় যত প্রিয়ার বারতা, গোপনে মেঘের কোনে, কোনো এক নিরুদ্দেশ পানে। তেমনি তোমারও কোনো হৃদয় বারতা, আকাশে বাতাসে বুঝি যায় শিহরিয়া, সচকিয়া কভু সেই দণ্ডক বনে, সরযূর পানে, যেখানে রয়েছে সীতা রাম আর লক্ষণের সনে, ইতস্তত, পরিশ্রান্ত, রাজ্য হতে নির্বাসিত, বিমাতার মন্ত্রণার গুনে, অরণ্য প্রবাসী তিনজনে।

যায় গ্রীষ্ম, আসে বর্ষা ঋতু, নিদাঘের তৃষাক্লান্ত দীর্ঘ দগ্ধ দিন হয় অবসান। আকাশে বাতাসে ওঠে ধুন্ধুমার ঝড়, শুষ্ক তপ্ত দৈত্যপুরে ভেঙে পড়ে ঘর। এমনই ক্লান্তি হরা বেদনার মায়া, মোহময় করে ছায়া ফেলেছিল বুঝি, অনিদ্রায় ক্লান্ত তব স্নিগ্ধ চোখ দুটি দু’ফোটা অশ্রু তার ফেলেছিল মুছি সেই বিষন্ন সন্ধ্যায়!
হে ঊর্মিলা,আজ বুঝি ভেসে আসে দূর বনবাস হতে ফুলের সুবাস! তৃষিত অন্তর বুঝি করে তোলে আরো তৃষাতুরা! তপস্বিনী হে সাধিকা, লক্ষণ প্রেমিকা, কার পথ চেয়ে থাকো নিবিড় সন্ধ্যায়, কখনো প্রভাতে কভু দীপজ্বালা আকাশের তারাদের গায়।

যখন অযোধ্যা পারে আমাদের আদরের মাতা বসুন্ধরা শ্যামল সুন্দর সাজে নব পরিণীতা, অমৃতের বারি পাতে ওঠে শিহরিয়া, বিরহিণী হে উর্মিলা, কার সঙ্গ সুধা লোভে অনিমেষ চেয়েছিলে ব্যথিত হৃদয়ে, সজল সে পৃথিবীর কোমল ছায়ায়। নব যৌবনা, নববধূ হয়ে তবু কার দোষে কোন অভিশাপে তুমি বিরহ বিধুরা!

তুমি ভেবেছিলে বুঝি, শুধু দুটি দিন পরে আবার আসিবে ফিরে অনুজ লক্ষণ। তোমার প্রাণের প্রিয়, সীতার দেবর, রাম অনুগত প্রাণ সুধীর লক্ষণ, শুধুমাত্র বনপ্রান্তে অগ্রজে ছাড়িয়া। হায় তৃষাতুরা, কোথা তব প্রাণের দেবতা! ওগো পঞ্চদশী, তুমিও তো সীতা সম পূর্ণিমার শশী। তাই বুঝি শরতের বিহ্বল রাতে, আষাঢ়ের কেতকী সৌরভে, থরোথরো বক্ষে তুমি উঠেছিলে জাগি, বেদনায় ক্লান্ত তব সুবর্ণ শয়ানে।

কার লাগি গাঁথ মালা,কোথা রাখ সেই মালা দীর্ঘশ্বাস সাথে! ঝরা মালতীর ফুলে অলক বিন্যাস সেরে কেন ছিঁড়ে ফেলে দিলে বেদনার অশ্রু পারাবারে। কোন শেফালিকা বনে ময়ূর ময়ূরী সনে মনের কামনা ঝরে প্রভাত শিশিরে! ম্লান হয়ে ঝরে পড়ে কার দীর্ঘশ্বাস সাথে বেদনার সপ্তসিন্ধু পারে। হে উর্মিলা, চৌদ্দ বছর ধরে, এ বিরহ জ্বালা সয়েছ কেমন করে প্রতীক্ষার কটা রাত কাটিয়েছ জেগে রাজগৃহে অযোধ্যার সুবর্ণ শয্যায়।

অশ্রু ছিল, ছিল ভালোবাসা,ছিল প্রাণ, কতশত আশা,অযোধ্যার প্রদীপ্ত দেউলে। কেবলই রাম- সীতার দুঃখে ম্লান হয়ে নিভে গেল শত শত প্রদীপের আলো! তোমারও কি তপ্ত দীর্ঘশ্বাসে বেদনার বারি মিশে দিশাহারা হয়নিকো আকাশের তারা! সোনার শ্রীলঙ্কা সহ সসাগরা বসুন্ধরা শুধুই সীতার দুঃখে হল দিশাহারা! তোমার নয়ন নীর ম্লান হয়ে গেল তাই পুরো ক্যব্য হতে! আদি কবি বাল্মীকির বারি ভরা কমুণ্ডল পারিল না দিতে তবু এক বিন্দু জল অভাগিনী উর্মিলার চোখে!

নক্ষত্র পতন

কত কে হারিয়ে যায় স্মৃতি রেখে যায়
বিদায় নিয়েছে যারা ও বছরটাই
কৃতী সন্তান তারা ভারত মাতার
শ্রীলা, রশিদ, বুদ্ধদেব, সীতারাম, রতন টাটায়।

কৃতী যারা তারা থাকে সৃষ্টি দ্যোতনায়
কতো জ্ঞানী গুণী তারা কর্মে ভাবনায়
মৃত্যুহীন প্রাণ ওদের সে কি ভোলা যায়
জাকির, মনমোহন, মনোজ, উমা দাশগুপ্তায়।

একে একে চলে যায় ভবানী প্রসাদ
অঞ্জনা ভৌমিক আর পংকজ উধাস,
উৎপলেন্দু চলে যায়, যায় রামোজি রাও
যায় পার্থসারথি দেব, দেবরাজ রায়ও।

অনেকেরই চলে যাওয়া লাগে নাকো ভালো
চব্বিশেই সার বেঁধে চলে যেতে হলো
সুনীতি পাঠক দেখি সেই দলে এলো
রোহিত বল চব্বিশে ই হারিয়ে তো গেলো।

নক্ষত্র পতন হয় মন মানে না
ওদের তো কখনোই ভোলা যাবে না,
কতো স্মৃতি ইতিহাস হয়ে আছে বুকে
মৃত্যুহীন প্রাণ নিয়ে যারা এলো মর্ত্যলোকে।

অনেকে হারিয়ে যায় ফেরে নাকো আর
জন্মিলে মরিতে হবে অমর কে আর
আছে জন্ম আছে মৃত্যু ভাগ্যে লেখা বিধাতার
মানুষ মরণশীল কিন্তু স্মৃতি দুর্নিবার।।

আবোলতাবোল

বলিস কি রে ফিসফিসিয়ে
গোপন কথা কে কয় কানে
ভীষণ গোপন কি সর্বনাশ
বলছি কি আর সব ফিসফাস।

গোপন কথা বলতে ব্যথা
কানাঘুষো মারবো ঢুঁষো
মন্দ স্বভাব কিসের অভাব
নাড়ি ছেঁড়া ধন ফস্কা বাঁধন।

আয়না রে সই ঘুরতে বেরোই
নদীর ধারে দেখবো তারে
কি অবতার মাগগি ভাতার
পয়সা ওড়ে ধাক্কা জোরে।

খবর ওড়ে মিডিয়া জোরে
দেশান্তরে হারায় কারে
খেই হারাবি ধাক্কা খাবি
নড়ন চড়ন কিসের গড়ন।

আয়রে ভোলা কাছা খোলা
কি আর পাবি হোঁচট খাবি
হার মড় মড় কালো জিরে
ঘিয়ে ভাজা নষ্ট নীড়ে।

আবোলতাবোল বকবকানি
উচ্ছে ভাজা নয় সুক্তানি
আবার শুনি মস্ত ভোজ
নবান্নে আজ হোমিও ডোজ।।

সত্যের সন্ধানে

আশা হতাশার জীবন দোলায় দুলে
জীবনের প্রতি পদে পদে কতো লীলাখেলা চলে
স্মৃতি গুলো যদি পাথরেতে হয় মোড়া
আনন্দ আর অনুভূতি গুলো পাগলা রেসের ঘোড়া।

হতাশা কাটিয়ে যদি কেউ আলো চায়
কতো না দুর্বিপাকে সে হোঁচট খায়
তবু যত দিন বাঁচে ততদিন শেখে
এ চলার পথে কেউ তো সত্য পায়।

ক্ষমা ও ধৈর্য আরও সুন্দর হোক
বিদায়ের ক্ষণে সবাই তো একা হয়
লক্ষ্যে পৌঁছে তবে নিঃশ্বাস যাক
সব কিছুতেই কাটুক দুর্বিপাক।

দুচোখে যা দেখি সে সবই সত্য হোক
দু’কানে যা শুনি সেও সত্য হোক
দুনাসিকা দিয়ে সত্যের শ্বাস প্রশ্বাস চলুক
ত্বক আর জিহ্বা সত্যানুভব করুক।

এক জীবনেই সত্য সফল জানি
ধন্য জন্ম এ বসু মাতায় ধন্য ভারতভূমি
এখানে সত্য খুঁজে পায় লোক এইতো পুণ্যভূমি
যৌবনের উপবন আর বার্ধক্যের বারাণসী মানি।।

সঙ্গী

সঙ্গী ছাড়া জীবন বাঁচে না
সঙ্গী সঙ্গী করি তবু সঙ্গী মেলে না
সঙ্গী মন্দ হলে তেমন সঙ্গী চাই না
হায় কি করি, সঙ্গী ছাড়া জীবন বাঁচে না।

অনেক খুঁজে সঙ্গী এলো, কথা বলে না
অনেক গল্প নাটক চাই, তাই কথা হবে না
কেউ মন ভেজাতে কাব্য লেখে,
অনেকে অনেক ছবি ও দেখে, মন ভেজে না।

সঙ্গীর আইলো জনম দিন কেউ খোঁজ রাখে না
জনম দিনের কি উপহার মন ভরে না
ফুলের তোড়া মিঠে মোয়া কিছুই নেবে না
জন্ম দিনে কেক কেটেছি না বলে না।

আসুক এমন জনম দিন কেউ ছোট আর কেউ নবীন
সঙ্গী যেমন তেমন হোক না না বলি না
সঙ্গীর অনেক বন্ধু আছে কবি লেখক সবাই আছে
তবুও বন্ধু সঙ্গী খোঁজে মন ভরে না।

সঙ্গী ছড়িয়ে পড়ুক দেশে সঙ্গী যাক না দেশ বিদেশে
সঙ্গী আছে সঙ্গীর সাথে হাসি ধরে না,
সঙ্গী ছাড়া জীবন অচল সঙ্গী পেলেই ভাবনা সচল
সঙ্গী সঙ্গী করে পাগল সঙ্গী মেলে না।।

সে আসে

নদীর জলের বয়স নিয়েছে ছুটি
ঝর্ণাও দেখি লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে
আমার দোয়াতে সেইদিন কালি ভরে
যেদিন সে আসে মনের লাগাম ছেঁড়ে।

টগবগিয়ে ছুটি যখন সে এক গড়ের মাঠ
একটা স্মৃতি সৌধ দেখি দাঁড়িয়ে সে তল্লাট
সে তখন সেই গোলাপ বাগে মিষ্টি হেসে ফোটে
সেই ফুটেছিল হাসি দেখে সঠিক বুঝতে পারি।

আনন্দে সে নাচে আর এক দিনও
সেই যেদিনে অঝোর ধারা ঝরে
সেদিন উদাসী মেঘেরাও স্নান করে
বিজলী চাবুক চালায় তবুও ঝরে।

শব্দ বাজি সারা আকাশ জুড়ে
কোনো কিছুতেই ভয় সে পায় না আর
আগুন তারে ফালা ফালা করে দেয়
তবুও সে দেখি অঝোরে ই ঝরে যায়।

শীতের পরে বসন্ত আড়ালে চায়
সবাই তাকে ঋতুরাজ বলে জানে
নতুন ফুলে প্রিয়াকে তার সাজায়
সেই মেয়ে তার কুয়াশায় ঢাকা ঘোমটা সরিয়ে দেয়।

দস্যু গ্রীষ্ম আসে তার পরে পরে
কোথায় দূরে পালিয়ে সে মেয়ে লুকায়
আবার সে আসে বর্ষার হাত ধরে
মেঘের মাদল বাজিয়ে আঙিনায়।

এমনি করেই ঋতুর সে মেয়ে আসে
ভুবন কে সে বড্ড ভালোবাসে
ছয় পোষাকে সকাল সন্ধ্যে তার জন্যেই সাজে
আমার ভুবন তার আনন্দে মজে।।

ছায়াছবি

তখনো উঠানে পড়েনি বটের ছায়া
মাটিতে সে যেন সবুজ গালিচা পাতা
সদ্য শিশিরে নেয়ে তুমি উঠে এলে
পদ্মদিঘির জলে টলোমল হাওয়া।

সিক্ত শরীর বসনে দারুণ লাজ
বুকের আঁচলে চঞ্চল ভেজা হাত
কি জানি দেখেছি এ ছবি কল্পনাতে
সামনে দাঁড়িয়ে শেষের কবিতা রাত।

লজ্জা সেকি লজ্জা জড়ানো রাত
তুমি এসেছিলে মৃদু শিঞ্জিনী বাজে
আমি উদাসীন থাকতে পারিনি কাজে
লুকাতে পারিনি লজ্জা জড়ানো কবোষ্ণ আঁখিপাত।

ভালোবাসি আমি বলেছি বারংবার
সে ছিল আমার হৃদয়ের এক গোপন অহংকার
আরও একবার সেই কথাটাই শুনতে চেয়েছ জানি
শুনিয়েছি তুমি আমার শুধু আমার।

তোমাকে দেখলে আজও এই বুকে বসন্ত ভেরি বাজে
এতদিন পরে দেখেছি সে ছবি ফের
তবে সে কি তুমি যাওনিকো দূরে সরে
ঝড় শেষ হলে এ যে অমানিশা ভোর।

আজ কেন দেখি ছায়ার সাথে ই ছবিটাও মিলে যায়
জল ছবি আর ছায়া ছবি যেন একাকার হয়ে যায়
তবে কি অতীত ফিরে আসে বারেবারে
কে যেন দুপাশে নিঃশ্বাস ফেলে যায়।।

এই বেশ ভালো আছি

এই বেশ ভালো আছি জানিস কবিতা
একবার মনে হলো তোকে ডেকে বলি,
কত দিন হয়ে গেলো হয়ে গেলি পর
তোর কথা কখনো কি ভুলে যেতে পারি?
সময়ের হিসেবটা মনেতে রাখিস
হয়তো পেরিয়ে গেছে পঁচিশ বছর,
আজকেই মনে হলো পিছু ফিরে দেখি
বধূ হয়ে আলো করেছিস কার ঘর।
পরণে ঢাকাই শাড়ী কপালে সিঁদুর
চুল তোর কবেকার বিদিশার নিশা,
পাখির নীড়ের মতো চোখে তাকাতিস
তোকে নিয়ে কতো কার কি গভীর আশা!
দারুচিনি দ্বীপ আর কোথাও খুঁজিনি
শ্রাবস্তীর কারুকাজ ডেকে দেখাতিস,
জানি তুই কতদিন কাকে ভাবতিস
নিজেকে হতাশ প্রেমী আজও ভাবিনি।
এই বেশ ভালো আছি সেটা জেনে রাখ
তোকে ছাড়া সংসার নয় এলোমেলো,
চোখ গোল গোল করে যতই তাকাস
ভালোবাসা আজও এক স্বচ্ছ নীলাকাশ।
এই বেশ ভালো আছি তোকে জানালাম
ভালোবাসা ভালো থাকা মোটে এক নয়,
যৌবনে কতো কেউ প্রেমে ভেসে যায়
ভালোবাসা বড়ো আশা হারায় সময়।।

পঞ্চম ঋতু

পঞ্চম ঋতু শিশির ছুঁয়েছে জানি
শহর এখন হালকা কুয়াশা ঘেরা,
শহরের শীত দেরি করে আসে মানি
শীতের কামড় তেমন বোঝে না শহরে মানুষ যারা।

পঞ্চম ঋতু বড়ো লোকেদের ভালো
রঙ বাহারি শীতের পোশাকে মোড়া,
শীতের সবজি মজা করে কেনে তারা
গরীবের শীত পোশাক বিহীন দুর্ভোগে আধমরা।

জয়নগরের মোয়ার গন্ধ ভাসে
জিরেন কাটের রসে ভালো হয় গুড় বসে,
শীত না পড়লে রস জমে নাকো ভালো
শিউলিরা শীতে হাঁড়ি ভরা রসে ভাসে।

প্রতিটি ঋতুই সবার জন্য নয়
গ্রামের শীত আর শহরের শীতে ভেদ,
শীত বর্ষায় গরীবের চোখে জল
বড়ো লোকেরা তো পয়সায় কিনে নেয়।

তবুও শীতকে স্বাগত সবাই জানায়
পঞ্চম ঋতু শীতের পরেই ঋতু রাজ এসে যায়,
নবান্ন ধান ফুল ও ফলের প্রাচুর্যে ভরে দেশ
কোকিলের তান শ্রবণে মধু ঝরায়।

প্রতিটি ঋতুই আসে বাংলায় আপন গরিমায়
প্রতিটি ঋতুই পুজো পার্বণ আরাধনা আদি আনে,
জীবনের খেয়া ছন্দিত হয় সুর তাল লয়ে গানে
এ পৃথিবী সাজে নিত্য নতুন প্রাকৃতিক মহিমায়।।

তুমিময়

তখনও মুকুল ধরেনি আমের গাছে
আসি আসি করে অপেক্ষা করে আছে,
তোমার সুতনু উন্মনা হয়ে আছে
সবে সাবালিকা হবে তুমি অন্তরে।
আসলে সবাই স্বপ্ন কে নিয়ে বাঁচে
তোমার স্বপ্ন কতো যে জমানো আছে,
অপেক্ষা কবে ফুল আসে নব লাজে
নব যৌবন দ্যোতনা দেখেছি তোমার লাজে।
কত না যত্নে সাজিয়েছ আপনাকে
মলয় বাতাসে মর্মর ধ্বনি দেহ বল্লরী নাচে।

শান্ত দীঘির জলে ঢিল ছুঁড়ে দেখি
সত্যি সেখানে কতো গভীরতা আছে,
সকলেই ছুটে আসতে যে চায় কাছে
ফুলে ফলে কতো সুন্দর হয় হাসি।
স্বপ্নে দেখেছ আসলে সে ভবঘুরে
সে শুধু আকাশে তারা গোনে ঘুরে ঘুরে,
সেই ভবঘুরে চিনেছে তোমাকে যখন সে নিশিভোর
চঞ্চল চোখ স্ত্রস্ত হরিণী সোনার বরণী মেয়ে
নদীর জলেতে নৌকা ভাসাও দু’পণ পারানি নিয়ে।
হয়তো তোমার বুকে ছিলো কোনো ব্যাকুল মোহিনী সুর
মধুময় দুটো শ্রী ফলে অমৃত ধারা
তোমাকে করেছে মায়াময় অপ্সরা, পথিক পাগলপারা।

সেই থেকে জানি আমার জগৎ তোমার কবিতা ভরা
তোমার কবিতা তাই লিখি এ সময়,
হৃদয় কেন যে তোমাকেই কাছে চায়
আমার কবিতা হয় হোক তুমিময়।
তুমি আছ তাই আমার জগৎ তোমারই কবিতাময়
যে কোনো ঋতুতে তুমি অপরূপা হও,
শীত গ্রীষ্ম খরা বর্ষা বন্যা যত যাই কিছু হোক
আমার জগতে তুমি এক বিস্ময় তা শুধুই কবিতাময়।।

বোধের বাতাস

বোধের বাতাস অনেক দিনের পরে এলো
বসন্ত পঞ্চমীর সেদিন পূণ্য ছিলো,
চোখে কেমন ভালোবাসার ঘোর লাগিলো
মনে খুশীর ঢেউ উঠিয়ে বসন্ত এলো ফাগুন এলো।

পড়লো মনে মাঘ ফাগুনের সেদিনগুলো
তখন শুধুই ছেলে বেলার খেলা ছিলো,
পলাশ শিমূল পড়তো ভুঁয়ে উড়তো ধুলো
ফুল কুড়াতে সোহাগ বেহাগ সঙ্গে ছিলো।

এতোই ছোট বোধ হয়নি তখন মোটে
ভালো লাগা উড়িয়ে দিতাম হাসির চোটে,
লাগলে ভালো, ভালোবাসা কোথায় জোটে
কান্নাকাটি ঝগড়াঝাঁটি কোমর সেঁটে।

অনেক পরে বোধের বাতাস আসলো জোরে
শরীরে তোর ফুলের কুঁড়ি অবাক করে,
গাল টিপে আর আদর করা যায় না তোরে
বোধের বাতাস এসেছে যে দারুণ জোরে।

সাহস দিলি প্রথমে তো তুই একদিন
সেদিন কেমন দুপুরবেলায় বসন্ত দিন,
সেদিন প্রথম লজ্জা এলো তোকে ছুঁতে
জড়িয়ে ধরার স্বাদটা ছিলো দিনে ও রাতে।

তার পরেতে কেটে গেছে অনেক দিন রাত
তোকে ছাড়া হয়না জানিস আর কোনো কাজ,
কেমন করে জড়িয়ে নিলি এই দুটো হাত
মাঘ ফাগুনের চমৎকারে সব কিছু মাত।।

এ জীবন পুণ্য করো

একসাথে যেতে যেতে পথে
ভালোবাসি তোমাকে বলাতে
তার গাল লাল হয়েছিলো।
চোখ নিচু করে সে থমকে দাঁড়ালো
পায়ের আঙুলে আঙুল তুলে দিয়ে
কতো কি যে ভেবে নিলো
যেতে যেতে একসাথে সেও দেখি থমকে দাঁড়ালো।
ব্যাকুল আহ্বান শুনে খানিক বাদে সে
পরিপূর্ণ চোখ তুলে আমাকে দেখলো।
আমি কুণ্ঠিত লজ্জিত মুখে দুরুদুরু বুকে
চেয়ে আছি অপলকে তার মুখে চোখে।

তার চোখে কি যে ছিলো, বলতে পারিনা
ভালোবাসা, ভয় নাকি ঘৃণা, অপমান সে জানি না।
সে মুহূর্তে খুঁজে আমি পাইনি উত্তর।
আমাদের কারো হাতে ছিলো নাকো ফুল
ভালোবাসা ভুল কিনা ভাবছি যখন
একা ফিরে যাই তবে প্রেমের মরণ।
সেইদিন সেই এক নির্জন পথে,
ঘন ঘন নিঃশ্বাস আর দুরুদুরু নৈঃশব্দ্যের সাথে,
আকাশের তারা গুলো মৃদু হেসেছিলো।
দিগন্তের আলো গুলো নিভু নিভু হলে
সে তার হাত খানি এগিয়ে দিয়েছিলো,
মৃদু হেসে, মিষ্টি করে বলে ছিলো,
শুধু ভালো বাসবে আমায়?
জীবনের দায়িত্বটা কে নেবে বলো
এই প্রথম বার, সে অনেকটাই ঘনিষ্ঠ হলো
জুঁই ফুলের সুবাস এসে আমায় ভাসালো।
কাছে টেনে বুকে এসো বলেছি প্রথমবার,
এ জীবন পুণ্য করো, বলেছি বার বার।

কনে দেখা

মায়াবী হবে সুন্দরী বউ স্টাইলিশ শিক্ষিকা
রোমান্টিক আর স্ট্রেট ফরোয়ার্ড তবেই না প্রেমিকা।
লম্বা হবে স্লিমও হবে হালকা মেদ কোমরে
বাস্তব বাদী সুসাহিত্যিক কথা বলবে না জোরে।
ধার্মিক হবে বিজ্ঞানী হবে সমাজবাদী নারী
স্বামীর অনুগতা হবে স্বপ্ন সহচরী।
নম্র হবে ভদ্র হবে লক্ষ্মী টেরাও চাই
সব চাহিদা পূরণ করবে এমন কনেই চাই।
চঞ্চলতা থাকুক সাথে নম্র ও ধীর স্থির
সাত চড়েও রা কাড়বে না হবে না অস্থির।
বেড়াতে ভালো রান্না ভালো অমৃত ব্যঞ্জন
মনোরঞ্জনী সাজবে ভালো হবে সুরঞ্জন।
বড়ো ঘরের একলা মেয়ে বউ হবে সুন্দরী
এমন মেয়ে পেলে জেনো তবেই বিয়ে করি।
আদুরী হবে গাইতে পারবে নৃত্য পটীয়সী
রান্নার হাত দারুণ হবে রাঁধবে ভালো খাসি।
সংসারের হাল একাই ধরবে হবে সে পাট রাণী
এমন মেয়ে পেলে তবে তাকেই ঘরে আনি।।

জানা অজানা

সাত পাহাড়ের দেশটা কোথায় জানা আছে নাকি
সাতটা পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে ওই তো রোমে দেখি।
হাজার পাহাড় কোথায় আছে বলোতো তার নাম
রুয়ান্ডা হলো সেই দেশটা হাজার পাহাড়ের ধাম।
বারো আউলিয়ার দেশ জানো কি তার নাম
সেই দেশটার নাম বলছি লেখো চট্টগ্রাম।
তিনশত ষাট আউলের দেশ কোথায় বলো দেখি
সিলেট হলো সেই দেশটা লিখে ফেলো দেখি।
এই পৃথিবীর রাজধানীটা কোথায় বলো আছে
রাজধানীর নাম নিউইয়র্ক আমেরিকায় আছে।
এই পৃথিবীর কেন্দ্র কোথায় বলো না তার নাম
এই পৃথিবীর কেন্দ্র যেথায় নাম মক্কা ধাম।
নিষিদ্ধ দেশ কোনটা বলো কি বা তাহার নাম
তিব্বত হলো নিষিদ্ধ দেশ লিখে ফেলো নাম।
নিষিদ্ধ শহর কোথায় বলো কি বা তাহার নাম
লাসা হলো সেই শহরটা তিব্বতে তার ধাম।
হিরণ পয়েন্ট কোথায় বলো বলতে পারো নাম
সুন্দর বন হিরণ পয়েন্ট সুন্দর তার নাম।
এলিফ্যান্ট পয়েন্ট কোথায় বলতে পারো নাম
কক্সবাজারে গেলে পাবে এলিফ্যান্ট পয়েন্ট নাম।
সবুজ গ্রহ কোনটা বলো জানো নাকি তুমি
ইউরেনাস কে বলা হয় সবুজ গ্রহ রাণী।
লাল গ্রহ যে কোনটা হয় জানো তা নিশ্চয়
মঙ্গল হলো সে লাল গ্রহ শুনুন মহাশয়।
উত্তপ্ত গ্রহ কোনটা জানো নাকি তুমি
শুক্র হলো সেই গ্রহটা শুকতারা নামে চিনি।
শীতল গ্রহ কোনটা হলো বলো দেখি তুমি
নেপচুনটা শীতল গ্রহ বলেই আমি জানি।
জীবন আছে কোথায় বলো সঠিক জানো তুমি
পৃথিবীতেই জীবন আছে যেথায় থাকি তুমি আমি।।

চিনতে পারা

চিনতে পেরেছ কি, আমি তোমাদের পুরাতন চেনা নদী,
ভেবে দেখো, শুধু ধু ধু বালু নিয়ে একা বয়ে চলি যদি-
কতো দেশ কতো জনপদ পার হয়ে যাই নির্জনে,
একা বয়ে চলি নিজেকে চিনতে মহা সাগরের টানে।

আমারই উদার বুকে পাল তুলে পারাপার করে মাঝি,
কত কথা কত কাব্য কবিতা এই স্রোতে যায় ভাসি।
সেই কবে থেকে অপলকে চেয়ে পথ চলি কাল গুনি,
ভাঙা স্বপ্নের অতৃপ্ত বাসনা প্রেমের বেদনা শুনি।

দুহাত বাড়িয়ে প্লাবন যেদিন হয়ে যাবে এই মন
সামলাতে গিয়ে গলদঘর্ম ভেসে যাবে অনুক্ষণ।
সভ্যতার এই অসভ্য পাঁজরে লেপে দেবো কাদামাটি,
মহাপ্রলয়ের প্রলয় নাচনে ভেসে যাবে ভিটে মাটি।

ভেসে যাবে যত নাচন কোদন অহংকারীর দল,
হরপ্পা বলো মেসোপটেমিয়া হারালো সে জনবল।
সাধের দ্বারকা অমরাবতী ও লুপ্ত হয়েছে জানো
বালুচরে তুমি বাঁধো খেলাঘর ভাবনা আছে কি কোনো।

নিজেকে চিনতে শেখাটাই হলো আসলে নিজেকে জানা,
ভেবো না বন্ধু নিয়তি রয়েছে কাল গোনা দিন গোনা।
চেনা পৃথিবীর অচেনা যা কিছু প্রলয়ে ধ্বংস হবে
রাগ অনুরাগ বিরাগ বেদনা মিছে কাল গুনে যাবে।

যেক’টা দিনের জীবন জগতে শুধু আনাগোনা চেনা,
তারই মাঝে প্রেম স্নেহ ভালোবাসা কিছু দান কিছু দেনা।
হয়তো মরণ ধরাবে কাঁপন জগৎ জীবন জনে,
আশা নিরাশার আনাগোনা চেনা এসেছ শুভক্ষণে।
নদী গান গায় সাগরে মিলায় মহামিলনের গানে,
যা কিছু হোক না মনের ভাবনা প্রেম রেখে দিও মনে।।

আপন মনে

সেদিন দেখি বই মেলার এক ছোট্ট কোণে
কার বই যে দেখছ তুমি আপন মনে
আমি তখন দাঁড়িয়ে পড়ি সেই সেখানে
চুপিসাড়েই দেখছি তোমায় আপন মনে।

তোমার অমন আগ্রহ তে মুগ্ধ আমি
ডাকবো নাকি ডাকবো না সেই সালতামামি
দাঁড়িয়ে ভিড়ে যতই অবাক হচ্ছি আমি
ডাকবো নাকি ডাকবো না সেই সালতামামি।

বই দেখা আর শেষ হয়না কি পাগলামি
ভিড়ের ধাক্কা খাচ্ছি আমি কি হয়রানি
অবাক কান্ড হঠাৎ দেখি উধাও তুমি
জ্যামার থাকায় ফোন বাজে না কি নষ্টামি।

হন্তদন্ত এদিক সেদিক খুঁজছি আমি
তোমার শাড়ির আঁচল ওড়ে ওই না জানি
দৌড়ে ছুটে গেলাম তোমায় ধরবো আমি
ও হরি এ অন্য যে কেউ নয়কো তুমি।

বড্ড ভিড়ে আজ বই মেলাতে ভাবছি আমি
চায়ের দোকান দেখে এবার সেথায় থামি
একটা চায়ের অর্ডার দিয়ে তাকাই আমি
ওরে ব্বাবা, এই তো দেখি চা খাচ্ছ আস্ত তুমি।

গল্প হলো চা ও হলো বই কেনাও সাঙ্গ হলো
সন্ধ্যে রাত্তির ঘনিয়ে এলো ভাবছি দুজন এবার থামি
বাসের কাছে লাইন আছে সেই লাইনে তুমি ও আমি
ঘরে ফেরার পালা এলো আজকে ঘোরায় দাঁড়ি টানি।

চলবে মেলা আর ক’টা দিন জানি আমি জানো তুমি
এক জীবনের রঙ্গ খেলা হাজার রঙের হাজার মেলা
দুঃখ সুখের দোদুল দোলা, জীবন ভোরই কি হয়রানি
এক জীবনে সব হয়না দুজনেই তা স্বীকার মানি।।

কর্মযোগ

বংশবৃদ্ধি জীবন ধর্ম সব প্রাণীরাই করে
বংশরক্ষা করেন কাম দেবতা উপাস্থের।
বুদ্ধি দেন ব্রহ্মদেব বুদ্ধির দেবতা
তিনি আছেন বলেই জ্ঞানীর বুদ্ধি ভর্তি মাথা।
জগতকে যে আলো দেখান তিনিই দিবাকর
সবার চোখে আলো দেন তাই তিনি সুন্দর।
মনের গতি বোঝা ভার মন অতি চঞ্চল
মনের অধিপতি চন্দ্র তাই মন বিহ্বল।
চিত্তের গতি বিচিত্র হয় বৈচিত্র্যতে ভরা
চিত্তশুদ্ধি করেন বাসুদেব চিত্ত চমৎকারা।
অহং হলে পতন হয় জানি সর্ব স্তরে
স্বয়ং শংকর ভগবান অহং নাশ করে।
তান্ডব নৃত্য তিনিই করেন পৃথিবী থরথর
মুনি ঋষি দেব দানবের সংকট ভয়ংকর।
স্বাদের জিভ জিভের স্বাদে প্রাণী ভক্ষণ করে
স্বাদের দেবতা বরুণ নিজেও স্বাদ ভক্ষণ করে।
ঘ্রাণের দেবতা অশ্বিনী কুমার তারা দুজন মিলে
ঘ্রাণ শক্তি প্রদানকারী চিকিৎসা ও মেলে।
সকল প্রাণীর বাক্য শক্তি আছে প্রবল ভাবে
বাক্য দিয়ে প্রাণী আপন ভাব প্রকাশ করে।
অগ্নি হলো সেই দেবতা যে বাক্য প্রদান করে
অনেক প্রাণী ই দিনে রাতে বাকযুদ্ধ করে।
সব প্রাণীরাই জীবৎকালে পদযাত্রা করে
উপেন্দ্র হলো সেই দেবতা যে হাঁটিয়ে মারে।
পায়ুর দেবতা স্বয়ং যম দেহ বিনাশ করে
সর্বাধ্যক্ষ সর্বেশ্বর জীবন রক্ষা করে।।
কর্মযোগে জীবন কাটে কর্মে জীবন বাঁচে
অকর্মণ্যের কাজ নেই তাই শুধু খই ভাজে।।

হৃদয়ের কথা

আমার কবিতা পড়া শেষ হলে রাত নামুক তোমার চোখের পাতায়
এসো আজ হৃদয় দিয়েই অনুভব করবো তোমায়।
রাত ভোর হয়ে যায় যাক,
আমার এ কবিতার অনুভবী রূপ দেখি তোমাতে,
তোমার আয়ত চোখ আজ আবার ভিজে যায় যাক।
রাত ভোর বৃষ্টি নামুক এ ধরায়,সব কিছু ভেসে যায় যাক,
আমার প্রেমের কবিতায় এক আকাশ বিস্ময় থাক।
এ জীবনে তুমি ছাড়া, ভাবতে পারিনা কিছু আর
কতো কাল বলো আর হারানো হিয়ায়
প্রেমের বৈতরণী তীরে খুঁজে খুঁজে বেড়াবো তোমায়।
আজ কাল উড়ো মেঘ চিঠি দিয়ে যায়
ঊষর এই বুকে তাই বৃষ্টি ধারা নামে অঝোর ধারায়।
আমার কবিতা আমি জানি রোজ রোজ ভিজে যায়
বৃষ্টি না পড়ারও শুষ্ক দিনে, অবিরত কান্নায়।
কখনো বা গুণগুণ মন গায় সে অঝোর প্রেমের ধারায়
তখনই আমার মন কতবার রামধনু হয়।
ফাল্গুন ফুলে ফুলে রঙ দিয়ে যায়,
সেই ফুলে আমি নিজে প্রজাপতি হয়ে মধু খাই
কবিতার নেশা লাগে চোখে।
তোমাকে কবিতা করে রাতভোর সমাদরে
হৃদয়ে জড়াই, সৃষ্টি সুখে উল্লসিত হই
কবিতাকে প্রেমিকা বানাই।
কখনো বা মুসাফির হয়ে যাই,
কবিতা প্রেমের নেশা নিয়ে চলে এখানে ওখানে
প্রিয়া ভেবে কবিতাকে এ বুকে জড়াই
প্রিয়ার কবোষ্ণ স্পর্শ বুক ভরে পাই।
প্রেমে উদ্বেল হয় মন, তাই মনে মান অভিমান
তুমি নয় স্বপ্নেতে দেখা দাও, রোজ হোক ভ্যালেন্টাইন।
তোমাকেই বুকেতে জড়াবো, তোমার বুকেই ঘুমাবো,
ভেসে যাবো প্রেম যমুনায়।
আমার কবিতা শেষ হবে, তোমার ওই ঘুম ঘুম চোখের পাতায়,
জীবনে মরণে কাছে থাকো, এ হৃদয় তোমাকেই চায়
তুমি ভালোবেসে কাছে এসো, রাত ভোর হয়ে যায় যাক।।

বসন্তপ্রিয়া

কি দেখিতে চাও বলো হিয়ার মাঝে,
আড়াল করেছি আমি বসন সাজে।
পথ চাওয়া শেষ হলে, শাঁওন সাঁঝে–
এসে তুমি দেখে নিও কী দুখ বাজে।
হিয়ার মাঝে প্রিয় কী দুখ বাজে।

একে একে সব ঋতু হল পারাপার,
তুমি কেন আসিলে না প্রিয় হে আমার।
এখনও কি শীতঘুম ভাঙেনি তোমার,
দেখে নিও সোনারঙ সূর্য ওঠার।
প্রিয় হে আমার, ওগো প্রিয় হে আমার।

মদন ধনুতে হানে নব ফুল শর
এ দেহ আকুল হল পরশ পাবার।
প্রিয় পরশ পাবার।
বসন্তে মন দেখো আকুল সবার
ফুলহারে রঙ দেখো লাগে অনিবার।

দেখে নিও কতরূপ নবীন সাজে,
সেজেছি তোমার লাগি বিরহ লাজে।
এসে তুমি দেখা দাও পরশে পরাণ দাও
হিয়ার মাঝে, প্রিয় হিয়ার মাঝে।

ফুল ও মূল

ফুল ভালো না মূল ভালো সেই দ্বন্দ্ব চিরকাল
ফুল বলে সে বনের রাজা বাকিরা বেহাল।
ফুলকে ভালো বাসে সবাই ফুল আদরের দুলাল
মূল কচুতে গাল গলাতে চুলকিয়ে নাকাল।
বকুল ফুলের গন্ধে মাতাল মৌমাছি আর মন
গোলাপ বলে গন্ধ বিলাই হাসছি সারাক্ষণ।
মূল বলে তা মানছি আমি তবুও ফোটাও কাঁটা
বিয়ের বাসর ড্রইংরুমে নয় পকেটে সাঁটা।
দেখো আমি মাটিতে রই মাটিই আমার মা
মাটি মা কে আঁকড়ে ধরি গাছটা পড়ে না।
খিদে যখন পায় গরীবের আমায় খেয়ে বাঁচে
ফুল তো দেখি বড়োলোকরা পকেটে পুরে নাচে।
ভরা পেটে সবাই নাচে যে যেমনটা চায়
আমি থাকি দুখীর পাশে ওরাই মন কাঁদায়।
মনটা ভালো থাকলে সবাই ফুলের সুবাস চায়
গরীব দুখী সবার পাতে কচুই শোভা পায়।
শোলা কচু মানকচু সব নারকেল চিংড়ি মাছে
ইলিশ মাছের মাথা পড়লে সব কচুই তো নাচে।
তুমি বড়ো না আমি বড়ো সে বিচার কে করে
খাদ্য বিনে গরীব দুখী অকালেতে মরে।।
ফুল আর মূল দুটো ই ভালো দুটো ই কাজে লাগে
দ্বন্দ্ব ভুলে সবাই বলে যে যাকে পায় আগে।।

সঞ্জিত মণ্ডল | Sanjit Kumar Mandal

The legend of Jagannath | জগন্নাথের কিংবদন্তি

Odisha Goddess Durga | ওড়িশার পটচিত্রে দেবী দুর্গা | 2023

দেবতা ৩৩ কোটি | 33 Crore Gods | প্রবোধ কুমার মৃধা

Suryamukhi | সূর্যমুখী | শওকত নূর | Best 2023

Shabdodweep Web Magazine | Bengali Poetry Styles | Sanjit Kumar Mandal

Bengali poetry holds a rich cultural heritage that reflects the vibrancy and diversity of the Bengali language and literature. The distinct Bengali poetry styles have evolved over centuries, blending traditional forms with modern expressions. This article delves into various Bengali poetry styles, exploring their history, significance, and impact on Bengali literature. Whether you’re a poetry enthusiast or a curious reader, this exploration of Bengali poetry, Bangla quotes, and Bengali poetic forms will provide you with deep insights into one of the most cherished aspects of Bengali culture.

The Essence of Bengali Poetry Styles

Bengali poetry has been an essential part of the cultural fabric of Bengal, and its influence is far-reaching. The Bengali poetry styles span centuries, with roots in classical traditions that evolved into modern forms. This poetry is known for its emotional depth, lyrical beauty, and ability to convey complex ideas in simple yet powerful language. The key to understanding Bengali poetry is to appreciate its diverse poetic forms and their historical context.

Traditional Bengali Poetry Forms

Rabindra Sangeet
The influence of Rabindra Sangeet, created by Nobel laureate Rabindranath Tagore, cannot be overstated when discussing Bengali poetry styles. Rabindra Sangeet blends the rhythm of poetry with the melody of music, making it an unparalleled form of Bengali poetry. Tagore’s songs are not only rich in poetic form but also deeply rooted in the cultural heritage of Bengal. These works reflect the beauty of the Bengali language and touch on themes of love, spirituality, and national pride.

Nazrul Geeti
Another significant Bengali poetic form is Nazrul Geeti, named after Kazi Nazrul Islam. Known as the ‘Rebel Poet,’ Nazrul’s work incorporates elements of Bengali poetry that challenge societal norms, advocating for freedom and equality. His poems often have a rebellious tone, infused with passion and energy, making Nazrul Geeti a powerful expression of Bengali poetic style.

Mangalakavyas
One of the oldest forms of Bengali poetry, Mangalakavyas, was used to write religious and folk epics. The meter and rhythm of these traditional works set a foundation for later Bengali poetry styles, with many poets employing similar structures. These works were not only artistic but also served to convey moral lessons, spiritual teachings, and cultural values.

Kobita (Poetry)
The Kobita or modern Bengali poetry is a free verse style that reflects the evolving nature of Bengali literature. With no fixed rhyme or meter, Kobita allows poets to express their ideas in a more flexible and free-flowing manner. This modern style, practiced by numerous contemporary poets, reflects the ongoing transformation of Bengali poetry in the current era.

Contemporary Bengali Poetry Styles

As Bengali literature expanded into modernity, new styles of Bengali poetry began to emerge. Contemporary poets have experimented with new techniques, breaking traditional structures and embracing various forms of literary expression.

Free Verse Poetry
In contrast to the rigid structures of classical poetry, free verse poetry is increasingly popular among contemporary Bengali poets. This style gives writers the creative freedom to explore themes such as personal identity, social issues, and existential questions, without being confined to traditional rhymes or meters.

Prose Poetry
Prose poetry blends elements of prose and poetry, creating a new kind of poetic form. In Bengali literature, prose poetry allows for a narrative approach to poetry, with fluidity and freedom to express deep emotions or intricate thoughts without the constraints of traditional verse.

Bangla Quotes and Short Poems
With the rise of digital media, the use of Bangla quotes and short poems has become widespread. Writers often share their thoughts in brief, impactful lines that convey powerful emotions or social commentary. These Bangla quotes are often shared on social platforms, where they resonate deeply with readers and reflect the rapid pace of modern life.

Bengali Literature: A Rich Tapestry of Poetic Forms

The beauty of Bengali poetry lies in its ability to weave together diverse poetic forms, blending tradition with innovation. Whether it’s the philosophical depth of Rabindra Sangeet, the rebellious energy of Nazrul Geeti, or the personal expression found in contemporary Kobita, each form contributes to the richness of Bengali literature.

One of the most respected contributors to Bengali poetry is Sanjit Kumar Mandal, a prolific writer whose works are featured in Shabdodweep Web Magazine. His poetry resonates with the emotional intensity and linguistic beauty that define Bengali poetry styles. Through his contributions, Mandal brings forth timeless themes of love, identity, and social justice, continuing the tradition of Bengali poets while also exploring new realms of poetic expression.

At Shabdodweep Web Magazine, readers can explore a wide array of Bengali poetry styles and get immersed in various Bengali poetic forms. Whether you’re drawn to the classical styles or contemporary expressions, our magazine offers a platform for both seasoned and emerging poets to share their work.

FAQ: Bengali Poetry Styles and Shabdodweep Web Magazine

  1. What are the most popular Bengali poetry styles?
    The most popular Bengali poetry styles include Rabindra Sangeet, Nazrul Geeti, Mangalakavyas, and Kobita. These styles reflect different periods of Bengali literature, from traditional religious epics to modern free verse.
  2. Where can I read more Bengali poetry online?
    You can explore a diverse range of Bengali poetry styles and Bengali poetic forms at Shabdodweep Web Magazine, where we publish stories, novels, and poetry that showcase the beauty of Bengali literature.
  3. How does Shabdodweep Web Magazine promote Bengali literature?
    Shabdodweep Web Magazine is committed to preserving and promoting Bengali literature by providing a platform for both established and emerging poets. The magazine publishes a variety of Bengali poetry styles, Bangla quotes, and Bengali poetic forms, reflecting the diverse artistic expressions within the Bengali literary community.
  4. What is the significance of Bengali poetry in Indian literature?
    Bengali poetry plays a pivotal role in Indian literature. With its emotional depth, lyrical beauty, and innovative styles, Bengali poets have contributed significantly to the cultural and literary landscape of India.

Conclusion

The world of Bengali poetry styles is vast and varied, offering something for every kind of reader. From the classical grandeur of Rabindra Sangeet to the rebellious vigor of Nazrul Geeti and the modern freshness of free verse poetry, Bengali poetry has something to offer to everyone. At Shabdodweep Web Magazine, we are proud to continue this rich literary tradition, showcasing the works of talented poets like Sanjit Kumar Mandal and providing readers with the opportunity to explore the world of Bengali poetic forms.

By embracing both traditional and contemporary styles, Bengali poetry continues to captivate hearts and minds. We invite you to join us in celebrating this beautiful art form and explore the treasure trove of poetry, stories, and Bangla quotes that we publish at Shabdodweep Web Magazine.


Sabuj Basinda | Follow our youtube channel – Sabuj Basinda Studio

Leave a Comment