Bengali Story 2023 | রূপশঙ্কর আচার্য্য | গল্পগুচ্ছ ২০২৩

Sharing Is Caring:
BENGALI STORY

মাতৃভক্তির ক্ষমতা [Bengali Story]

ভাঙা ডাস্টবিনে ছ্যাঁড়া কাপড়ে মোড়া অবস্থায় কে যেন শিশুটিকে ফেলে রেখে গেছে। শিশুটি ক্ষিদের জ্বালায় উঁ এ উঁ এ উঁ এ উঁ এ করছে। কিছু কুকুর বিড়াল তাকে ছ্যাঁড়া ছিঁড়ি করতে যাচ্ছে,এমন সময় একটি কুকুর ছোঁ মেরে শিশুটিকে নিয়ে ছুটে পালালো। অনেকে ভাবলো কুকুরটি বোধ হয় শিশুটিকে কামড়ে রক্তাক্ত করে খেয়ে ফেলবে কিন্তু তা হল না, সম্পূর্ণ তার বিপরীত হল — কুকুরটি অনেক দূরে একটি ভিখারিনীর কোলে দিয়ে কিছুক্ষণের জন্য কোথায় চলে গেল। এই কুকুরটা যে অন্যদের মত নয়, মায়ের মতো প্রাণ বাঁচালো তাই-ই কিছু বুদ্ধিজীবী মানুষ পূর্বে বুঝতে পারছিলেন না, পরে তা বুঝতে পারলেন। ভিখারিনী মা, ভিখারিনী হলেও নির্দয় নয়। কথায় বলে কু-সন্তান হলেও তার মা কখনো কু হতে পারবে না। সেই অর্থে শিশুটিকে নিজের সন্তান স্নেহে ধীরে ধীরে অনেক অনেক কষ্ট করে বড় করে।নিজের গর্ভধারিণী মায়ের মতোই এই মায়ের আঁচলে, কোলে সস্নেহে বড় হল। মা ভিক্ষে করে সন্তান কে বড় করে, কিন্তু ছেলে বড় হয়ে রবিন হুডের মতো বড়লোক দের থেকে ভিক্ষে করে বস্তির, গরীব মানুষের হাতে বিলিয়ে দেয় এবং মা বেটা মহা আনন্দে থাকতে শেখায় ওই গরীব মানুষ গুলি কে। বস্তির মানুষ এই ছেলেটির নাম দেয় সঙ্কেত। এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে সংকেত একটি তারই মতো দুঃখী মহিলার সংস্পর্শে আসে। মহিলাটি তার ক্যান্সার আক্রান্ত মাকে নিয়ে বসবাস করে বসতির একেবারে ধারে।সংসার চালাতে মাদকদ্রব্য বিক্রি করতে হয় তাকে। তাই লোকে মহিলাটিকে বাজারী মেয়ে বলে ডাকে।প্রায় অনেকেই বলে ওই বাজারী মহিলার কোনো চরিত্র আছে? কিন্তু সঙ্কেত ওই মহিলাকে হঠাৎই ভালোবেসে ফেলে।

একদিন সন্ধ্যায় বস্তিতে পরবের জন্য সঙ্কেত গিয়েছিল, সবাই খুব আনন্দ করলো। সে ওই মহিলার কাছে নিজের মনের কথা বলতে, মহিলাটি বলল, আমাকে সবাই বাজারী মেয়ে, কুলোটা, অসতী, চরিত্রের দিকে প্রশ্ন তোলে, আর তুমি আমায় ভালোবাসো? আমার অপরাধ আমি আমার অসুস্থ মাকে নিয়ে বাঁচতে চাই। পেট চালাতে আমি এই কাজ করছি, কিন্তু মাদক দ্রব্য বিক্রি করি বলে চরিত্রহীন তো নই, তবুও এই আমার গায়ে এই কালিমা দেওয়া হয়েছে। আর তুমি আমাকে বিয়ে করবে বলছো?? মহিলাটি বলল যদি প্রকৃতই আমাকে ভালোবেসে থাকো তাহলে প্রমাণ কর তোমার অতুলনীয়া মায়ের হৃৎপিন্ডটা আমায় উপহার দিয়ে। মহিলাটি সঙ্কেতকে এই কথা বলে যাতে এই অসম্ভব কাজ সে করতে না পেরে মহিলাটির জীবনের সঙ্গে জড়িত না হয় এবং সে নিজে যেমন গরীব বসতির মানুষের ঈশ্বর আছে তেমনি থাকে। শুধু শুধু তার সঙ্গে জীবন জড়িয়ে নিজেকে ছোট না করে। টলটল করে উঠল সঙ্কেতের মাথাটা। সে বেরিয়ে গেল মেয়েটির কাছ থেকে। আত্মরক্ষার জন্য ব্যবহৃত বজ্রমুষ্টিতে ছোরাটাকে ধরে তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখলো মনের কোনো দুর্বলতা মিশিয়ে আছে কিনা? না-নেই।

বাড়ি গিয়ে দেখলো তার সেই পঁচাশি-নব্বই বছর বয়স্কা মা ছ্যাঁড়া চ্যাটাটার উপর তার সারাদিনের পরিশ্রান্ত শরীর টাকে এলিয়ে দিয়েছে। আধো তন্দ্রা তাঁর চোখে। ধীরে ধীরে হামাগুড়ি দিয়ে প্রায় সরীসৃপের মতো মুক্ত ছোৱাটাকে হাতে নিয়ে মায়ের দিকে এগিয়ে গেল সঙ্কেত। দুইহাতে ছোৱাটাকে ধরে”মা”বলে বিঁধিয়ে দিতে গেল কিন্তু তড়িতাঘাতের মতো ছিটকে এল সঙ্কেত। না– এ অসম্ভব এ হতে পারে না। যে মা তাকে তিল তিল করে পরিশ্রম করে রক্ত ঝরিয়ে তাকে এই রোমাঞ্চকর বিশ্ব কে বিশ্বের আলো দেখতে শিখিয়েছে তাকে বধ করার কোনো অধিকার নেই। বেঁচে থাকার অধিকার সবার আছে। সে এক নুনের পুতুল হয়ে সাগর মাপতে যাবে কোন সাহসে? পিছিয়ে এলো সে। ধীরে ধীরে পেছন দিকে চৌকাঠ টা ডিঙতেই তার পশুবৃত্তিতেকে যেন একটা ছোবল দিল। না, হয় না। যদি সে এই মায়ের ছেলে হয় তাহলে ওই মহিলার কাছে মিথ্যাবাদী হয়ে যাবে?? না তা হয় না। ঘুরে দাঁড়ালো সঙ্কেত।আবার ছোৱাটাকে বজ্রমুষ্টিতে ধরে মায়ের দিকে এগিয়ে গেল এবং জয় মা বলে ছোৱাটাকে আমূল বিঁধিয়ে দিল মায়ের বুকে। এক ঝলকা রক্তের ছিটে মুখে এসে পড়ল সঙ্কেতের। ছোৱাটা নিয়ে গত বুকটাকে ফেঁড়ে দিয়ে সঙ্কেত দেখতে পেল ঐতো মায়ের হৃৎপিন্ড। দুই হাতে আঁচলা ভোরে হৃৎপিন্ডটা কে নিয়ে সঙ্কেত যখন উঠে দাঁড়ালো- দেখলো তার বিবেকে তাকে বিষধর সর্পের মতো দংশন করছে,আবার মনে হচ্ছে কে যেন তার গলাটা খুব জোরে চেপে দিচ্ছে, তার দম বন্ধ হয়ে আসছে। কে যেন বলছে তুই বিশ্বের সর্বোচ্চ মহাপাপ করেছিস তোর কোনো ক্ষমা নেই।

সে পড়ে গেল ছুটতে ছুটতে। হাত থেকে ধুলোয় পড়ে গেল মায়ের হৃৎপিন্ড, মায়ের হৃৎপিন্ডটি যেন মায়ের রূপ ধারণ করে তাকে উঠে দাঁড়াতে বলল, বললেন তুই আমার সন্তান প্রমাণ কর ওই মহিলার কাছে গিয়ে। মা যেন খোকাকে পড়ে গেলে আদর করে সেই ভাবে তাকে সাহস দিচ্ছেন। প্রাণপণে ত্বারস্বরে চিৎকার করে উঠল সঙ্কেত- মা মাগো এ আমি করলাম। ছুটতে ছুটতে পৌঁছালো সঙ্কেত ওই মহিলার কাছে গিয়ে বলল দেখো আমি আমার মায়ের হৃৎপিন্ড নিয়ে এসেছি। মহিলাটি দেখে অবাক প্রায় অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। সে বলল একি করেছো আমার কাছে তুমি যাতে না আর আসো তাই আমি এই কঠিন কথাটি বলেছিলাম। আজ আমাকে ভালোবেসে যা করলে হয়তো ভবিষ্যতে অন্য কোনো মহিলা ভালোবেসে আমাকেকে হত্যা করতে তুমি দ্বিধা করবে না। যে তার মাকে হত্যা করে মায়ের হৃৎপিন্ড আনতে পারে তার কাছে সবই সম্ভব। তুমি ফিরে যাও এক্ষুনি, তোমাকে বিশ্বাস করা যায় না।এই কথা শুনে সঙ্কেত পাগলের মতো হয়ে গেছে,ওই হৃৎপিন্ড নিয়ে সে বসতি থেকে বহু দূরে ছুটতে ছুটতে এক পাহাড়ের উপর থেকে পড়ে গেল। তার গোটা শরীর ছিন্ন ছিন্ন হয়ে গেল কিন্তু তার হাত থেকে তার মায়ের হৃৎপিন্ড ধরা হয়েই রইলো।

মাতৃস্নেহা [Bengali Story]

চিতা জ্বলছে মায়ের।চিতার আগুন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উপরদিকে উঠে যাচ্ছে। আগুনের ধোঁয়া উপর দিকে উঠতে উঠতে মহাকাশে মিলিয়ে যাচ্ছে।এইভাবে বুঝি মা স্বর্গে পৌঁছে যাবে!চিতার সামনে বসে বিমল ভাবছে তার অতীতের কথা গুলি আর তার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে পড়ছে।

মায়ের মুখে শুনেছে মায়ের গর্ভে থাকাকালীন ভূমিকম্পের ফলে তার অন্তঃসত্ত্বা মাকে ঘর চাপা পড়ে মারা যাওয়া থেকে রক্ষা করতে গিয়ে তার বাবা নিজে ঘর চাপা পড়ে মারা যান।তাই সে তার জন্মের পর থেকে মাকেই জানে। মা-ই তার জীবনের সব।বাবার মুখ দেখেনি কেবল ছবিতেই দেখেছে বাবাকে বিমল।

যে মা নিঃস্বার্থ ভাবে তার গর্ভে ধীরে ধীরে বড় করল কত যন্ত্রণা সহ্য করে যেন মরণ যন্ত্রণা সহ্য করে তাকে পৃথিবীতে এনেছে। মায়ের জন্যই এই সূর্য্যের আলো দেখেছে, মায়ের রক্ত-মাংস দিয়ে মা তার সন্তানের এই সুন্দর দেহ গঠন করেছে। ছোট থেকে সমাজের প্রতিটি মানুষের কাছে লাঞ্ছিত হয়ে তার সন্তান কে আগলে রেখে বড় করেছে। মায়ের স্বপ্ন ছিল তার খোকা বড় হয়ে তার মায়ের দুঃখ, যন্ত্রণা, কষ্ট, লাঞ্ছনা দূর করবে। বিমলের কাছে তখন তার মা-ই ছিল ঈশ্বর।

বিমলের কাছে ঐশ্বরিক শব্দ হলো “মা”।
“মা” এর অর্থ বিশ্লেষণ করা কোনো সন্তানের দ্বারা সম্ভব ??
ক্ষমতা বা স্পর্ধা সন্তানের থাকে নাকি?
এই শ্রুতিমধুর শব্দের সাথে অন্য কোনো শব্দের হয় না কোনো তুলনা।
সর্বোত্তম শ্রুতিমধুর শব্দেই রয়েছে সন্তানের সুস্থতা ও শান্তির রসদ।।

“মা”শব্দ এত শান্তির, আমাদের নিজের অজ্ঞাতসারে ও অজান্তেই উচ্চারিত হয় মাগো এবং সকল যন্ত্রণা যেন নিমেষে মিলিয়ে যায়।
বহু কষ্ট-যন্ত্রণা, সামাজিক লজ্জাবোধকে উপেক্ষা করে মাতৃক্রোড় থেকে পৃথিবীতে সন্তান জন্ম দেন মা।

পৃথিবীতে আসার পর থেকেই “মা”-এর মমত্বের স্পর্শ ও মায়ের স্নেহের সঙ্গে মায়ের নিজের সুখ কঠিন ভাবে বিসর্জন দিয়ে তাঁর সন্তানের সুস্থতা, মঙ্গল, সাফল্য কামনা করে আসছেন।

সন্তানের সুখের জন্য “মা” নিজের অস্তিত্বকে বিলীন করে দিতে দ্বিধাবোধ করেননি।। ছোট্ট শিশু “কান্না” দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করে তার কি প্রয়োজন, কি সমস্যা –কোনো উচ্চারণ না শুনেই “মা”সব বুঝতে পারেন মায়ের ও ঈশ্বরের কি লীলা বলা যাবে না।

শিশুর ভাষাহীন শব্দযুক্ত কান্না অর্থ মা-ই জানেন।

শিশুর কান্না–ক্ষিদে পেয়েছে।
কান্না-ভয় পেয়েছে।
কান্না-ঘুম পেয়েছে।
কান্না-অসুস্থ বোধ করছে।
কান্না-আদর পেতে চাই।

শিশুর প্রথম ঔষধ বা পথ্য হল মায়ের কোল বা আঁচল।। তাই তখন, বিমলের কোনো ক্ষমতাই নেই ‘মা”–এই শব্দের অর্থ ব্যাখ্যা করা।
মায়ের কোনো সংজ্ঞা হয় না ।
মা হলেন মা।
বিমল মনে মনে এইসব ভাবছে আর কেঁদে যাচ্ছে।
মা লোকের বাড়িতে রান্না করা, বাসন মাজা এইসব কাজ করে তার সন্তান কে পড়ালেখা শিখিয়েছে।

তার মা তার ছেলে কে ভালো কাজের সন্ধান করতে বলে। কারণ ছেলে বড় হোক, চাকুরী পেয়ে মায়ের স্বপ্ন পূরণ করুক এটাই মায়ের আশা।

যোগাযোগ করতে করতে একদিন শহরে ভালো এক ইন্স্যুরেন্সের কোম্পানিতে বিমল কাজ পায়। কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরার কাজ বলে মাকে ছেড়েই যেতে হয়। শহরে একটি ভদ্রলোকের সঙ্গে পরিচয় হয় এবং তাঁর সঙ্গে একটি বাসায় দুজনে বসবাস করে।সেই লোকটির পাল্লায় পড়ে যেন ধীরে ধীরে বিমলের ব্যক্তিত্বের পতন ঘটতে থাকে। টাকা-পয়সা দিয়ে নেশা করা, জুয়া খেলা,রেশ খেলা চলতো। শহরের পরিবেশ যেন তার ঈশ্বরসমা মা কে ভুলিয়ে দিল।

মা বারবার চিঠি লিখতে থাকে ছেলেকে।সে মায়ের চিঠির উত্তর দিত বাড়ি যাবে বলে বলত কিন্তু যেকোনো অজুহাতে অন্যায়ভাবে মায়ের কাছে যেত না। মায়ের স্বপ্ন ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকে।ছেলের না আসার শোকে মা মানসিক ও দৈহিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। না খেয়ে খেয়ে পেটে আলসার ও অগ্ন্যাশয়ের কঠিন রোগে পড়ে।

পাড়া প্রতিবেশী রা ছেলের ঠিকানা সংগ্রহ করে তাকে জোর করে বাড়ি নিয়ে আসে। প্রতিবেশীর একজন মাকে অবহেলার দায়ে পুলিশকে নালিশ করার ফলে প্রশাসন থেকে তদন্ত করতে আসে।

তার অসুস্থ মা তার সন্তানের কোনো দোষ দেখতে পায়না।পুলিশকে বলে খোকা আমার খুব ই ভালো, কাজের চাপে আসতে পারেনি। খোকা যে শহরে খারাপ সঙ্গ গ্রহণ করে মায়ের প্রতি চরম অন্যায় করেছে দিনের পর দিন তা মা অস্বীকার করলেন।

কিছুদিন পর খোকার কোলে মাথা রেখে তার মা ভেঙে যাওয়া স্বপ্ন কে স্বপ্ন ভেবেই কঠিন যন্ত্রণা নিয়ে মারা গেল বিমলের মা।
কে যেন বিমল কে ধাক্কা দিয়ে ডাকতে সে বর্তমানে যেন ফিরে এল।
কে যেন বিমলকে তার মায়ের চিতার সামনে নিয়ে গিয়ে মায়ের অস্থি অর্থাৎ মাতৃনাভী সংগ্রহ করে গঙ্গায় দেওয়ার জন্য রাখতে বলল।সে তা নিয়ে মায়ের চিতা জল ঢেলে অস্থি ভাসাতে গেল গঙ্গায়।

বিমল যেতে যেতে ধোঁয়াশার মত এক পরিবেশ উপলদ্ধি করল, সে যেন তার বিবেকের দংশনে অনুভব করল –হাজার হাজার লোমশ নখর হাত দুদিক থেকে তার গলা টিপতে আসছে। সে ভয়ে অস্থিটা তার বুকে চেপে ধরে ছুটতে থাকে আর বলতে থাকে বাঁচাও আমায় বাঁচাও আমি বাঁচতে চাই, আমি আর এই অন্যায় কখনোই করবো না।

হঠাৎ সে ভারসাম্য হারিয়ে মাটিতে পড়ে যায়। কিন্তু ধুলো মাটি লেগে যাওয়া মাতৃনাভী বা অস্থিটার দিকে তাকিয়ে দেখে সে এত অস্থি নয়, অস্থি কোথায়? এত আমার মায়ের মুখ।
ঐ অস্থি বা মাতৃনাভী থেকে তার মা যেন বলছে,

“খোকা এই খোকা খোকা রে তোর লাগেনি তো খোকা?

এ কী রে খোকা তুই পড়ে গেলি?
কই রে খোকা তোর লাগেনি তো বাবা?
কোথায় গেলি ছেড়ে বাবা? খুব কষ্ট পেয়েছিস না রে খোকা?
বল না, এ কিরে কথা বলছিস না কেন খোকা?
বল না তোর কোথায় লেগেছে?

তোর লাগেনি তো খোকা?

এই খোকা কথা বল না খোকা। খুব কষ্ট হয়েছে নারে খোকা। খোকা আ আ আ। লাগবে নারে লাগবে না। তুই এই রকম কত আঘাতই সয়েছিস। এতোটুকু আঘাতে তোর কষ্ট কিসের। তুই আমার সন্তান। তুই এত কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে বড় হয়েছিস খোকা। তুই আমার সন্তান। আমার সন্তান কখনো পিছপা হতে পারে না।

খোকা ওঠ, খোকা ওঠ, খোকা ওঠ।
খোকা ওঠ বাবা ওঠ।
ওঠ বাবা খোকা।
ওঠ ওঠরে খোকা ওঠ।
ওঠ বাবা ওঠ।”

বিমল চিৎকার করতে করতে উন্মাদ হয়ে ছুটতে ছুটতে বলছে,আমি খুনি আমি খুনি আমি আমার মাকে নিজেই খুন করেছি আমাকে তোমরা শাস্তি দাও বলতে বলতে ঐ গভীর গঙ্গায় অস্থি সহ ঝাঁপ দিল।স্রোতের টানে বিমলের তার মায়ের অস্থি-র সঙ্গে সলিল সমাধি হয়ে গেল।
প্রতিবেশীরা বিধাতার লেখন খণ্ডন করতে পারলো না।

অন্যায় কর্মের করুন পরিণতি [Bengali Story]

ছোটবেলা থেকে অপু তাদের বাড়ির কিছুটা দুরে একটি পোড়ো মন্দিরে তার বাবাকে আর কয়েকজন লোককে একসঙ্গে জাকজমক করে পুজো করতে দেখত। ছোটোবেলায় শৈশবকালে অপু বুঝতে পারত না পুজো কাকে বলে? যজ্ঞ কাকে বলে? কেন ঝাঁঝর, কাঁসি, ঘন্টা বাজে? শৈশবকালে তার মনে এই ধরণের কৌতূহল থাকত, সংশয় জাগতো। কখনও মাঝে মাঝে খেলতে খেলতে ওই দৃশ্য চোখে পড়লে ছুটে এসে মায়ের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ত। মায়ের আঁচল ধরে জিজ্ঞাসা করত ওই পোড়ো মন্দিরে কয়েকজন লোকের সাথে বাবা কী করছে? ঝাঁঝর, কাঁসর বাজছে কেন? মা কিন্তু সঠিকভাবে তাকে উত্তর দিতে পারত না। কিন্তু কি করবে কৌতূহলী মনে শিশুটিকে থামিয়ে দেওয়ার জন্য ধমক দিয়ে সরিয়ে দেবে? একবার দুবার তা করেছে। এর ফলে অপু যেকোন কথা যদি তা গুরুত্বপূর্ণও হয় ভয়ে তার মাকে বলতো না, মা বুঝতে পারত অপুর মনের কষ্ট, যন্ত্রণা।

মা তার ছোট্ট অপু কে ধমক দেওয়ার কারণে সে তার মনের মধ্যে কৌতূহল জেগে উঠলেও কৌতূহলীবশত আমাকে মানে তার নামে কোনো প্রশ্ন করত না। তাই মা কাছে ডেকে গল্পের মাধ্যমে তাকে বন্ধুর মতো স্নেহপরায়নতার মধ্য দিয়ে কৌতূহলী প্রশ্নের অপ্রাসঙ্গিক কিছু যুক্তি দিয়ে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করত।কিন্তু কখনই মূল বা আসল ঘটনা বলত না।

ধীরে ধীরে অপু বড়ো হল। সে বুঝতে পারল যে তার বাবা একজন দস্যু। ওই পোড়ো মন্দিরে মহাকালীর যাগযজ্ঞ পূজা আরাধনা করার পর তার বাবা চলে যেত একটি সুনির্দিষ্ট বড়ো দীঘির পাড়ে। যা প্রায় প্রত্যেকেরই এমনকি অপু ও অপুর মায়ের অজানা।

ওই দীঘির পাড়ের ধার দিয়ে একটি রাস্তা চলে যেত শহরের দিকে। খুব সহজেই গ্রাম থেকে সহজে শহরে যাওয়ার জন্য ওই রাস্তাটি উপযোগী ছিল। তাই প্রায় সকলেই সূর্যের আলো থাকাকালীন গ্রাম থেকে শহরে বা শহর থেকে গ্রামে যাতায়াতের জন্য ওই রাস্তাটি বা ওই বড়ো দীঘির পাড়টি ব্যবহার করত। বিকেল হয়ে যাওয়ার পরে খুবই ভয়ে ভয়ে তাড়াহুড়ো করেই রাস্তাটি অতিক্রম করতে হত। কারণ সন্ধ্যে হয়ে গেলে ওই জায়গাটি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠত। যা ছোট্ট অপুর বাবা এবং তাদের আরও সাঙ্গপাঙ্গ দস্যুবৃত্তি করা লেঠেলদের অত্যাচারে জায়গাটা আরও আরও বেশি ভয়ঙ্করী জায়গা হয়ে উঠত। সন্ধ্যের পর যদি ভুলবশত কোনো মানুষ ওই রাস্তা দিয়ে যেতে থাকে বা শহর থেকে গ্রামে যাবে এমন মানুষ ঠিকানা জানে শর্টকাট রাস্তা জানে, কিন্তু জানে না সন্ধ্যের পর ওখানে এত বড়ো ভয়ংকর কিছু ঘটতে পারে। ডাকাতের, ঠ্যাঙারের মারধর এবং লুন্ঠন যে কঠিন ভয়ংকর আকার ধারণ করতে পারে ওই স্থানে তা অনেকের অজানা থেকে যায়। যখন তারা ওই রাস্তা দিয়ে যায় তাদের ওপর চলে, অকথ্য গালিগালাজ,কঠিন মারধর, অত্যাচার। অনেকে প্রায় প্রাণের ভয়ে সমস্ত অর্থ জিনিসপত্র দিয়ে দেয়। অনেকে কষ্ট করে রোজকার করা জিনিস দিতে অগ্রাহ্য করলে প্রাণ হারায়। জায়গাটি ঠিক এইরূপ জায়গা।

অপু যখন ধীরে ধীরে বড়ো হতে শুরু করে,জ্ঞান হয়।ছয়-সাত বছর বয়স হয়,তখন বুঝতে পারে তার বাবার এই কঠিনতম অন্যায় অত্যাচারের কথা। এই কঠিনতম অসামাজিক পরিবেশে অপুর জীবনটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সেই ভয়ে তার মা অপুকে এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। অপুর বাবা যখন রাত্রে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সমগ্র শরীরে রক্তমাখা রূপে এর ওর লুন্ঠন করা অর্থ, সোনা আসবাবপত্র এমনকি বাসনপত্রও সংগ্রহ করে নিয়ে আসত,সেই ছোট্ট অপুর যথেষ্ট মনেতে প্রভাব পড়ত। প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হত। যন্ত্রণা দেখা দিত। এমনকি পিতার প্রতি তার ঘৃণ্য মানসিকতা তৈরি হতে শুরু করত,যা সঠিক নয়। যা পরিবারের ক্ষেত্রেও সঠিক নয়।শিক্ষার ক্ষেত্রেও সঠিক নয়। ওই ছোট্ট শিশু ধীরে ধীরে বড়ো হতে শুরু করছে তার ব্যক্তিত্ব গঠনের ক্ষেত্রেও সঠিক নয়।তাই বাধ্য হয়েই অপুর মা এই ডাকাতে স্বামীর কাছ থেকে গোপনে অপুকে তার আত্মীয়ের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিল। এত কষ্ট যন্ত্রণা নিয়ে মায়ের কাছ থেকে আত্মীয় বাড়ি যেতে অপুর খুব কষ্ট হয়েছিল, মনখারাপ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বারে বারে মা বুঝিয়েছিল তোমাকে বড়ো হতে হবে। তোমাকে আদর্শ মানুষ হতে হবে। পিতার এই ছত্রছায়া তোমাকে দেওয়া যাবে না। তাহলে তোমার মধ্যে কোনোরকম মনুষ্যত্ববোধ তৈরী হবে না। বিবেক কখনও জাগরিত হবে না। তুমি নিজের ভবিষ্যৎকে তৈরী করতে পারবে না। তোমার লক্ষ্য তোমার আদর্শ ভ্রষ্ট হয়ে যাবে। তাই যতই কষ্ট হোক।তুমি মানুষের মতো মানুষ হয়ে ফিরে এসো। দেখো সোনা,তোমার যেমন আমার কাছ থেকে যেতে কষ্ট হচ্ছে, তেমন আমি মা আমি অনেক কষ্ট করে বহু যন্ত্রণা সহ্য করে গর্ভে ধারণ করেছি, শুধু তাই নয়। জন্মগ্রহণ করার পর থেকেই এত জ্বালা, যন্ত্রণা, পারিপার্শ্বিক সমস্যা, প্রতিবেশীদের লাঞ্ছনা,তোমার পিতার সম্বন্ধে বহু কটূক্তি, এমনকি দিনের পর দিন নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তোমার পিতা আমার প্রতি অত্যাচার করেছে,কারণ আমি যেহেতু তার অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি। এত কষ্ট সহ্য করে আমি যখন তোমাকে ছয়-সাত বছর বয়স পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে রাখতে পেরেছি আরো কিছুদিন যন্ত্রণা-কষ্ট সহ্য করে হলেও তোমার ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য সেই পথ দেখিয়ে দিচ্ছি।তুমি যাও,এত কঠিন কঠিন কথা অপু বুঝতে না পারলেও এইটুকু বুঝতে পেরেছিল তার মাও কষ্ট করে তাকে এই অন্ধকার জগৎ থেকে আলো দেখানোর চেষ্টা করছে এবং একজন আদর্শ মানুষ তৈরি করার চেষ্টা করছে। মা যদি কষ্ট করে আমাকে কয়েকটা দিন ভুলে থাকতে পারে, কয়েকটা দিন দূরে সরিয়ে রেখে থাকতে পারে, আমিও কিন্তু কষ্ট করে মায়ের স্বপ্নপূরণ করার চেষ্টা করব এই বলে অপু সেই আত্মীয়ের বাড়ি চলে যায়।

ধীরে ধীরে সেখানে পড়ালেখা শেখে। ভালো পরিবেশে নিজের জীবনকে গড়ে তোলার চেষ্টা করে এবং মাঝে মধ্যেই মাকে চিঠি লেখে। মা এত ভালো করে পড়তে না পারলেও একটু একটু পড়ার মধ্যে তার সন্তান কি বলতে চেয়েছে বুঝতে পারে। যেগুলো বুঝতে পারে না পাশের বাড়ির একজন শিক্ষিতা বসবাস করে,তার কাছে গিয়ে অপুর সম্বন্ধে অপু কি লিখেছে চিঠিতে তা জেনে আসে এবং পরে মনে শান্তি পায়।

একদিন অপু চিঠি লেখে মা আমি তোমার স্বপ্নপূরণ করতে পেরেছি। আমি বড়ো ডিগ্রি নিয়ে এইখানে একটা ভালো চাকুরি পেয়েছি। আমি খুব শীঘ্র তোমার কাছে যাবো এবং তোমার যন্ত্রণা, কষ্ট দূর করে দেব। আর তুমি বাবাকে একটু বুঝিয়ে বলবে যেহেতু আমি চাকুরি পেয়েছি বাবা যেন এই অন্যায় কাজ হত্যা করা, মারধর করা, অসহায় পথচারী মানুষের অর্থ,জিনিসপত্র কেড়ে নেওয়া এই জাতীয় কাজ থেকে বিরত থাকে। এইগুলো অন্যায়, মহাপাপ, ছোটবেলায় আমি বুঝতে পারিনা ঠিকই, কিন্তু এখন আমি শিক্ষিত হয়েছি।একটা ভালো কাজ পেয়েছি।আমি যে স্কুলে পড়াশোনা করতাম,সেই স্কুলেই আমি ক্লার্কের চাকুরি পেয়েছি মা। তাই বাবা যেন এত বড়ো কঠিন, অন্যায় কাজগুলো থেকে বিরত থাকে। আর যেন এইসব না করে।

অপুর এই চিঠি পড়ে অপুর মায়ের চোখ দিয়ে জল বয়ে চলেছে। আনন্দে অশ্রু বয়ে চলেছে। তার মনে যথেষ্ট শান্তি এসেছে,যে না এই দৃঢ় সংকল্প করেছিলাম বলে আজ আমার সন্তান শিক্ষিত হয়েছে আমার স্বপ্নপূরণ করেছে,ক্লার্কের চাকুরী পেয়েছে। সে ফিরে আসছে, শুধু তাই নয় সে ফিরে এসে তার বাবাকে সংশোধন করবে,তার বাবাকে নতুন জীবন দেওয়ার চেষ্টা করবে এই প্রতিজ্ঞা করেছে। আমি তার মা হয়ে চেষ্টা করি তার বাবাকে পরিবর্তন করা যায় কিনা।

কিছুদিন বাদে অপু তার গ্রামে ফিরে আসে। সেই ছোটবেলায় চলে গিয়েছিল বলে অনেকে তাকে এখন চিনতে বা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিল। সে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে,পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে পরিচয় দিতে দিতে তার সোনার বাংলা,সোনার পল্লী কে প্রাণ ভরে অনুভব করল সে। গ্রামের সকলে অত্যন্ত খুশি আনন্দে গোটা গ্রাম ভোরে উঠেছে। বাড়ি ফেরার পর বাবারও মনটা খুশিতে ভোরে গিয়েছিল। অনেকদিন পরে বাড়ি ফিরেছে খোকা। সকলে একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া সেরে দুপুরে বিশ্রাম নেয়। বিকেলে অপু পাড়ার দিকে তার ছোটবেলার সাথীদের সঙ্গে দেখা করতে,গল্প করতে যায়। সকলে অনেকক্ষণ গল্পগুজব করে,আনন্দ করে সময়টা কাটায়। কিছুদিন ছুটি আছে এই ভেবে সকলের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব হবে,এই চিন্তায় অপু দুশ্চিন্তাহীন জীবন তৈরী করার উদ্দেশ্যে গ্রামে ফিরে যায়। আজ সে নিজের থেকে একটু আনন্দ পায় তাহলে হয়তো বাবা পরিবর্তন হলো!

এই ভেবে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করে বাড়ি ফিরে। বাড়ি ফিরে এসে দেখে তার বাবা বাড়িতে নেই। মাকে জিজ্ঞাসা করতে মা বলে তুই তো তোর বাবাকে জানিস। এইরকম সময় বাবা বাড়িতে থাকে? অপুর মনটা ভেঙে যায়। তাকে তার মা খেতে দেবে বলে ডাকে।সে বলে না আমি বাবাকে খুঁজে আনি। তারপর একসঙ্গে বসে খাবো।

অপু বেরিয়ে পড়ে,রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে বাড়িরই অর্ধ-কিলোমিটার দূরে যেতেই অত্যাচারিত কঠিন মাঠ,দীঘির পাড়,সেইখানে অগ্রসর হয়। দূর থেকে দেখতে পায় দীঘির পাড় যেন জঙ্গলে ভরে গেছে আর ওই জঙ্গলের ধার দিয়ে একটি সেই বহুকালের যে পুরোনো রাস্তা কম ব্যবহার করার জন্য সেই রাস্তাটাও যেন ধীরে ধীরে জঙ্গলে পরিণত হতে চলেছে।লোকজন এখন খুব কমই ওই রাস্তা দিয়ে যায়। একান্তই যারা ওই রাস্তার ঘটনা জানে না তারা ভুল করে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে হয় সর্বস্ব ত্যাগ করতে হয় আর নাহলে সর্বস্ব রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ ত্যাগ করতে হয়। অপু দূর থেকে দেখতে পায় জ্বলন্ত আগুনের শিখা, ভালো করে একটু কাছে গিয়ে গাছের আড়াল থেকে দেখতে পায় দুজন বিড়বিড় করে মন্ত্রপাঠ করছে,আগুন জ্বলছে আর আগুনে মাঝে মাঝেই কি যেন একটা দেওয়া হচ্ছে যাতে আগুনটা দাউদাউ করে জ্বলছে। অপু জানে সেখানে তার বাবা থাকে তাই সাহস নিয়ে অগ্রসর হয়। হঠাৎ অপুকে দেখতে পেয়ে দুইজন তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। অপু বারবার বোঝানোর চেষ্টা করে, যে আমি তোমাদের সর্দারের পুত্র সন্তান।ছোটবেলায় আমি বাইরে চলে গিয়েছিলাম। আজকেই সকালে এসেছি। দুপুরে একসঙ্গে আমরা খাওয়া দাওয়া করেছি। তোমাদের সর্দারকে জিজ্ঞাসা করো।তিনি নিশ্চয় চিনতে পারবেন। তাঁর সন্তানকে কি তিনি না চিনতে পারেন? ভুলে যেতে পারেন??

তারা দুজন কোনোমতেই অপুর কথা বিশ্বাস করে না। তারা মুচকি হেসে বলছে বিপদে পড়লে সবাই এই ধরণের সম্পর্ক স্থাপন করে। আমরা বিশ্বাস করি না, তোমার কাছে কী কী আছে দাও। বেশি বাড়াবাড়ি যদি করেছ তাহলে প্রাণটাও যেতে পারে। অনেক অনুরোধ করার পর একজন অপুকে গাছে বেঁধে রাখলো। আর একজন সর্দারের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, যে সর্দার একজন এসেছে তেইশ-চব্বিশ বছরের যুবক, সে নাকি পরিচয় দিচ্ছে আপনার পুত্র,বাইরে থাকত, আজ এসেছে,দুপুরে নাকি আপনার সাথে দেখা হয়েছে,একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া করেছেন।

এইসব কথা সর্দারের কানে প্রবেশ করেনি,কারণ সর্দার যে এখনো মায়ের আরাধনায় মেতে রয়েছে। সুরা পান করে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মাতাল হয়ে বলছে,মরণকালে সকলেই এই ধরণের কথা বলে থাকে।যদি বেশি বাড়াবাড়ি করে ও আমার হাতেই মারা পড়বে। এই বলে টলতে টলতে সর্দার ছেলেটির কাছে গিয়ে হাজির।একে নিশুতি রাত। যজ্ঞকুন্ড থেকে আলো এলেও বোঝা যাচ্ছে না, আবার নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মাতাল হয়ে রয়েছে সর্দার। যার চোখ সঠিকভাবে পড়ছে না তার ছেলের দিকে। ছেলেকে চিহ্নিত করার মতো তার ক্ষমতা নেই। এসে গর্জন দিয়ে বলছে কে তোমার বাবা?মৃত্যুর পূর্বে সবাই এই ধরণের কথা বলে। যা কিছু আছে তা দাও নাহলে হত্যা করে দেবো। সে অনুরোধ করে বাবা তুমি আমাকে চিনতে পারছ না?সর্দার তো কঠিন নেশাগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে,তার দিকে না তাকিয়েই চিৎকার করে নিজের হাতে থাকা ছোরাটা তার পেটে ঢুকিয়ে দিল। হাত পা বাঁধা অবস্থায় গাছের মধ্যেই ছেলেটি যথেষ্ট যন্ত্রণা, কষ্ট নিয়ে ছটফট করছে। সমগ্র রক্ত চতুর্দিকে থলকা থলকা করে ছিটকে পড়ল। ছটফট করতে করতে ছেলেটা লুটিয়ে পড়ার মতো অবস্থা। তার শরীরে একটিমাত্র হার আর ডানহাতে একটি আংটি ছিল যা তার মা তাকে দিয়েছিল। হারের মধ্যে একটি লকেট ছিল মা তারা মায়ের ছবি দেওয়া লকেট। সেই সমস্ত নিয়ে সর্দার টলতে টলতে বাড়ির দিকে রওনা দিল।

বাড়িতে গিয়ে ওইগুলোকে একধারে রেখে জামাকাপড় ছেড়ে সন্তানের কথা জিজ্ঞেস করতে থাকে। মা তার স্বামীকে দেখে তার পেছনে বোধহয় অপু আসছে এই কথা ভেবে থমকে দাঁড়িয়ে রয়েছে। মাতালরূপী সর্দার, যে অপুর বাবা তার মাকে ধমক দিয়ে বলছে, খেতে দাও। কি জন্য উঁকিঝুঁকি মারছো।কি হয়েছে তোমার? চমকে গিয়ে অপুর মা বলে, খোকা কোথায়?খোকা যে তোমাকে ডাকতে গিয়েছিল তোমারই গন্তব্যস্থলে। একসঙ্গেই তো এসে তিনজনে আনন্দ করে খাওয়া দাওয়া করবে বলে তোমায় ডাকতে গিয়েছিল।

এই কথা শুনে হঠাৎ সর্দারজী চমকে গেল। কয়েক মুহূর্তের জন্য তার নেশাভঙ্গ হল।সত্যিই কি খোকা ডাকতে গিয়েছিল?

হ্যাঁ গো সত্যি বলছি, খোকা ডাকতে গিয়েছিল।

সর্দারজী তখন সেই হার আংটি নিয়ে দেখতে থাকে। হঠাৎ করে অপুর মা হারটাকে ছিনিয়ে নিয়ে এইতো খোকার হার, এইতো সেই লকেট, মা তারার লকেট, এ কী করেছ,তুমি নিজের সন্তানকে হত্যা করেছে? বহু মানুষের ক্ষতি করেছ,বহু মানুষের প্রাণ নিয়েছ। ঈশ্বর আছেন,দেখো তোমার হাতেই তোমার সন্তানের প্রাণ চলে গেল।কাতস্বরে যন্ত্রণায়,ছটফট করতে করতে মা ভূমিতে মাথা কুড়তে কুড়তে অচেতন হয়ে গেল। হঠাৎ সর্দারজী নিজের পুত্রশোকে নিজের তরোয়ারী দিয়ে নিজের গলাটা কে কেটে ফেলল। মা যে সেই অচেতন হয়ে গেছে,আর চেতনা ফিরল না। পিতা নিজে গলা কেটে কাটা ছাগলের মতো হাত-পা নাড়তে নাড়তে ছটপট করতে করতে মৃত্যুবরণ করল।

আর শিক্ষিত অপু যাকে সকলে “অর্পণ মান্না” বলে জানে গোটা শহর। খুব ভালো পড়াশোনায়, সে একজন টপার ছাত্র। সে সেই দিঘীর পাড়ে রক্তাক্ত অবস্থায় নিথর হয়ে পড়ে রইল, গ্রামবাসীরা সহ্য করতে পারল না। শোকাচ্ছন্ন হয়ে গোটা গ্রাম নিস্তব্ধ হয়ে রইল। এ কী মায়ের অর্ঘ্য? মা তো কোনোদিন চায়নি, জীবের প্রাণ নিয়ে রক্ত নিয়ে আমাকে সন্তুষ্ট করো। মা কখনও চায়না। দিনের পর দিন যে অন্যায় করে এসেছে সর্দারজী, আজ তার ফল সমগ্র পরিবার দিল। এ মহান অর্ঘ্য কোন পিতা দিয়েছে?ডাকাতে মান্না এই মহান অর্ঘ্য দিয়েছে।

রূপশঙ্কর আচার্য্য | Rupsankar Acharya

Bengali Novel 2023 | ফিরি বিশল্যকরণী (পর্ব ৭) | উপন্যাস

Bengali Story 2023 | ওরাই আমাদের কর্ণধার (শিশুকিশোর) | গল্পগুচ্ছ ২০২৩

Bengali Story 2023 | লুনি বা টুনী | গল্পগুচ্ছ ২০২৩

Bengali Article 2023 | চিরায়ত ধর্মমঙ্গলের স্বাতন্ত্র্য | প্রবন্ধ ২০২৩

অন্যায় কর্মের করুন পরিণতি | মিথ্যা রটনা ও মানব হত্যা | অন্যের প্রতি জুলুম | আদর্শ সমাজ গঠন | নারী নির্যাতন প্রতিরোধ | প্রকাশ্য পাপাচার | প্রকৃতির সৃষ্টিকর্তা | জুলুমের শাস্তি | সৎকর্মের সুফল অসৎ কর্মের কুফল | মানুষের সম্মান ও মর্যাদা | শিরকের ভয়াবহ পরিণতি | যে অন্যের হক নষ্ট করে | মাতৃভক্তির ক্ষমতা | বাঙালির মাতৃভক্তি বনাম নারীভাবনা | বাইজিদ বোস্তামীর ঘটনা | বায়েজিদ বোস্তামী নামের অর্থ কি | ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর স্ত্রীর বয়স | ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কিভাবে পড়াশোনা করে | ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রবন্ধ রচনা | বিদ্যাসাগরের গল্প | ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অনুবাদ মূলক রচনা | ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের আসল নাম কি | বিদ্যাসাগরের মাতৃভক্তি রচনা | মাতৃভক্তি – কালিদাস রায় | মাতৃভক্তি সুসন্তানের নিদর্শন | নেতাজির মাতৃভক্তি | মাতৃভক্তি – বইফেরী | মাতৃভক্তি – আদর্শলিপি | মাতৃভক্তি শব্দটি কোন সমাস | শব্দদ্বীপের লেখক | শব্দদ্বীপ | সেরা বাংলা গল্প | গল্প ও গল্পকার | সেরা সাহিত্যিক | সেরা গল্পকার ২০২২ | বাংলা বিশ্ব গল্প | বাংলা গল্প ২০২২ | বাংলা ম্যাগাজিন | ম্যাগাজিন পত্রিকা | শব্দদ্বীপ ম্যাগাজিন

Matribhakti | Swamijir Matribhakti | bengali story | bengali story books for child pdf | bengali story books for adults | bengali story books | bengali story books for child | bengali story books pdf | bengali story for kids | bengali story reading | short bengali story pdf | short bengali story analysis | short bengali story characteristics | short bengali story competition | short bengali story definition | short bengali story english | short bengali story for kids | short bengali story generator | short bengali story ideas | short bengali story length | long bengali story short | long bengali story short meaning | long bengali story | long bengali story instagram | bengali story writing competition | bengali story writing competition topics | bengali story writing competition for students | story writing competition malayalam | bengali story writing competition india | bengali story competition | poetry competition | bengali story australia 2022 | bengali story competitions uk | bengali story competitions for students | bengali story competitions ireland | bengali story crossword | writing competition bengali story | writing competition malaysia | writing competition london | writing competition hong kong | writing competition game | writing competition essay | bengali story competition australia | writing competition prizes | writing competition for students | writing competition 2022 | writing competitions nz | writing competitions ireland | writing competitions in africa 2022 | writing competitions for high school students | bengali story for teens | writing competitions australia 2022 | bengali story competitions 2023 | writing competitions uk | bengali article writing | bangla news article | bangla article rewriter | article writing | bengali story writing ai | bengali story writing app | bengali story writing book | bengali story writing bot | bengali story writing description | bengali story writing example | article writing examples for students | bengali story writing for class 8 | bengali story for class 9 | bengali story writing format | bengali story writing gcse | bengali story writing generator | article writing global warming | bengali story writing igcse | article writing in english | article writing jobs | article writing jobs for students | article writing jobs work from home | bengali story writing lesson plan | bengali story writing on child labour | bengali story writing on global warming | bengali story writing pdf | bengali story writing practice | bengali story writing topics | trending topics for article writing 2022 | what is bengali story writing | bengali story trends 2022 | content writing topics 2022 | Bangla Prabandha | Probondho | Definite Article | Article Writer | Shabdodweep bengali story | Long Article | Bangla kobita | Kabitaguccha 2022 | Galpoguccha | Galpo | Bangla Galpo | Bengali Story | Bengali Article | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Shabdodweep Founder

Leave a Comment