Canvas of Bengali Poetry | Best Bangla Kobita Collection

Sharing Is Caring:

Canvas of Bengali Poetry – Shibaprasad Purakayastha

অবতার – শিবপ্রসাদ পুরকায়স্থ

সবাই নিজের হিসেব বোঝে
ভবিষ্যতের দিশা খোঁজে
এই অবতার লেখায় মজে
এড়িয়ে চলি নিজের সুখ
চোখে ভাসে মলিন মুখ।

ক্ষুধায় কাঁদে পথের ছেলে
রেখেছে মা ধুলায় ফেলে
হাত নাড়িয়ে জননী তার
জানায় গভীর মনের দুখ।

পরীর দেশে জরির কাজে
রাজা মহারাজায় সাজে
যাদের ছোঁয়ায় রোগ জীবাণু
কাড়বে বাবুর মনের সুখ।

আকাশ থেকে ধুলায় নামে
ঘাম ঝরে যায় আটকে জামে
নরক কুণ্ড ডাইনে বামে
দূষণে যায় আটকে বুক!

ধারণার বশে – শিবপ্রসাদ পুরকায়স্থ

আমার থেকে আমায় বেশি
এই জগতে কেউ জানে
কারো চোখে মন্দ হলাম
এ কথা না কে মানে।

ওদের কথা হয়তো বা ঠিক
সবার মতো এক ভেবে নিক
আঙুল তুলে নাচায় এ দিক
কৌতূহলী চোখ টানে।

আমি নিরেট সরল এমন
খুশী থাকি শিশুর মতন
কেউবা করে অবলোকন
বিদ্রুপে আমার পানে।

ভাঙা শিঙে দেখায় এক বাছুর
সহায় পেতে বড়ই আতুর
প্রেম বিলাতে নাচায় ‘ভাদুর’
যৌবনের উতাল গানে।

জ্ঞাতা – শিবপ্রসাদ পুরকায়স্থ

ওরে সকল জানা মন-
অজানা তোর নেইরে কিছুই
ভালোই তো কেমন?

জানার সুখে শুনি যেটাই
তাহাতে পিপাসা মেটাই
মাথার ওপর খড় বা পেটাই
হোক তা সে যেমন।

একনজরে পাংশুটে মুখ
নেয়রে পিছু না চাওয়া দুখ
ভাঙতে দেখি কঠিন এ বুক
চাই না রে এমন।

সব জেনে কী কাল হলো তোর
হৃদয় হারা প্রাণ পেলো দোর
ঘোরের মাঝে বেহুশ বিভোর
থাক একা কেমন!

ক্ষেদ – শিবপ্রসাদ পুরকায়স্থ

পেরিয়ে গেছি পাইনি দেখা
ঝাপসা নয়নে
নীরব ব্যথায় হৃদয় কাঁদে
অতীত চয়নে।

আমার সজন সুখের হউক
উজ্জ্বল প্রাণে ঝরনা বউক
অদেখা তে থাকব খুশি
নিরাশ স্বপনে।

মনে রাখা আর না রাখার
কী এসে যায় এসব ভাবার
পথ দেখিনা পিছিয়ে যাবার
ঈশানী শাসনে।

আমার সবাই ভোলার মতোই
রাখতে ধরে যতন যতই
সবার সাথে সবার খুশি
আমার পতনে।

আলো আঁধার – শিবপ্রসাদ পুরকায়স্থ

আঁধার আলোয় খেলছে জগৎ
বইছে ধারা নিরন্তর
সাদা কালোয় মিশেল জীবন
রাখলে করে দেশান্তর।

আঁধার জমা মনের কোণে
রাখলে ধরে সংগোপনে
আপন সুখের করলে সাধন
কেন যে হয় মনান্তর।

রবির কিরণ এড়িয়ে থেকে
নকল তাপে শরীর সেঁকে
রঙবাহারি সাহেব হলে
সেটাই করে প্রাণান্তর।

আয় বেরিয়ে থাকতে রে প্রাণ
খোলা বাতাস কর সুখে পান
মুক্ত আলোর তুই দাবিদার
ডাকছে উদার তেপান্তর।

সন্তোষীর মার পাঁচালি – শিবপ্রসাদ পুরকায়স্থ

নমো নমো করে দুটি কথা বলি আড়ে
মুখরা খুলিলে মুখ মেঘ ডেকে ছাড়ে।
ভূমিষ্ঠে দেয়নি মুখে একফোঁটা মধু
দুটিবেলা চেঁচামেচি করে প্রিয় বধূ।
থালা বাটি সব দিছি কিছু নাই আর
তবুও পাইনা মন এতটুকু তার।
সমস্ত কিছুর ভাগ দিছি তার বেশি
বড়দের সাথে করে তবু রেষারেষি।
নিছক কথায় আসে মাঝে মাঝে তেড়ে
প্রাণ নিয়ে সরে যাই যদি দেয় পেড়ে।
বলে ‘তুমি, কী দিয়েছ ছেলেটাই ছাড়া’
চাপতে পারিনি কথা ঢি-ঢি হলো পাড়া।
আমার ছেলেটা দেখ বসে বসে শোনে
এত কি বাড়তে পারে যদি তুলো ধোনে।
হাতে না মারলে বউ মারবে তো ভাতে
ছেলে যে কষ্ট পাবে কষ্ট পাবো তাতে।
সন্তোষী, ছেলেকে দাও ডানপিটে করে
বউকে ঘোরাতে রাজি আমি ধরে ধরে।
বউ যদি খোঁড়া হতো ভাববো না হয়
ছোট মুখে বড়ো কথা জীবনে না সয়।
প্রথমে নিজের ভুলে চেয়ে নেব ক্ষমা
মুখরা করার মূলে দোষী এ অধমা।
যেদিন বউমা এলো ঘোমটা দিয়ে বড়ো
মুখে নেই কোনো কথা লাজে জড়সড়।
দেখেই হয়েছে মায়া এরকম থাকে
জায়েরা নিশ্চিত ভাবে ঠকাবেই তাকে।
এ বাজারে কেউ কারো দ্যাখে নাকি পেট
আত্মবন্ধু সকলেই রক্তচোষা ‘কেঁট’।
বড়দের ভুল বুঝে করেছি কি ভুল
তারাতো মাটির ঢেলা এতো ভীমরুল।
চোখ ফুটে গিয়ে ছোট ঘোরাতেই চায়
সন্তোষী করোগো রক্ষা প্রাণ রাখা দায়।
সাধে সাধে নিরালায় তোমাকেই পূজি
ফলমূল এতো এতো আঁধারেতে গুজি।
এ সংসারে স্বার্থ ছাড়া কেউ কারো ডাকে
কেহবা ঐশ্বর্য পেতে পড়লে বিপাকে।
তা নাহলে পাঁচদিন নাও খেতে পাও-
ভুলেও তোমার দিকে তাকাবে না তাও।
বলবে না সন্তোষীমা আছো কীরকম
পেটে ক্ষিদে গায়ে জ্বালা ধরাবে এমন।
এইতো মা বর্তমান জগতের রীতি
বিনা স্বার্থে কারো সাথে বৃথাই পিরিতি।
তেত্রিশ কোটি দেবতা রয়েছে যেখানে
তবুও তোমাকে আনা তাকি অকারণে।
একটু ঘামালে মাথা বুঝবে সন্তোষী
দীন হয়ে এসেছিলে তারা রক্তচোষী।
গরিব ভক্তের প্রতি কই সেই মায়া
ভুরি ভোজে দেবালয়ে বাড়িয়েছ কায়া।
তেল দলে দলে মাগো হাত হলো ছাই
পাদুখানি ছেনে ছেনে দেহে বল নাই।
আসনে বসাবে যার দেখি একি দশা
বারে বারে ভুল করে যতেক ছাপোষা।
আসন পেতে না মাগো আমরা না হলে
সুখে দুখে তোমাকে মা পাশে পাবো বলে।
ধরাধামে সসম্মানে এনেছি তোমাকে
এ দাসী কাতর স্বরে তোমাকেই ডাকে।
আমার মতোই আছে আরো কতো দাসী
ঘাতিনী বৌয়ের হাতে মুখে নেই হাসি।
অবিলম্বে রক্ষা করো চারিহাত দিয়া
আসন সুদৃঢ় করো কাজ দেখাইয়া।
জীবন কেটেই যাবে প্রথম সুনামে
তারপরে ক্ষতি নেই বিধাতার বামে।
প্রথমে চটালে ভক্ত টলমল চটি-
পরে মা যতই করো বলবেই নটী।
সুপ্রসন্ন হও মাগো এ দীনার প্রতি
নতশিরে রাঙা পদে জানাই প্রণতি।
সন্তোষীর মায়ের কথা পাঁচালি ছন্দে
দীনুকবি লিখে যায় মনের আনন্দে।

ধার শোধ – শিবপ্রসাদ পুরকায়স্থ

বহু দূর থেকে জননী এসেছে চুকাতে ছেলের ধার
পূজোপকরণ মিশ কালো পাঁঠা না এনেই পারে আর।
একদিন আগে এসেই চালায় করবে রজনী বাস
ছাগটি চালায় নিরাপদ নয় সকলেরই বিশ্বাস।
থানের পূজারী তাকে বলেকয়ে রাখল তাহার ঘরে
কথা বলে নিল ক্ষতি হলে মাগো দাবী করবেনা পরে।
ভোরের আগে বাবার চালায় ছিল যারা ঘুমঘোরে
পূজারী তাদের ডেকেই বলল “পাঁঠা নিয়ে গেছে চোরে”।
ব্রতীকে দেখেই মন ভেঙে গেল কে জানন্ত এই হবে
পরের ঝামেলা ঘাড়েই না নিলে যা ভাবে ভাবতো তবে।
প্রবীণ পূজারী সান্ত্বনা দেয় “ওরে বেটি চুপ কর,
ঠাকুর চাইলে তোর পাঁঠা হয় নিজেই আসবে ঘর”।
অবুঝ মনকে বুঝাতে পারেনা কাঁদতে কাঁদতে বলে-
“অজেনা ভূমিতে কী ঘোর বিপদে ফেলেছ এ কোন ছলে,
তামাশা করেনি ঠাকুর তোমার পেচোখেচো যতো চর
ফিরিয়েই দাও হে পঞ্চানন এ দীনাকে সত্তর”।
ঘড়িতে তখন দশটার কাঁটা বারোটার দিকে ছোটে
ওটুকু সময়ে চোখের নিমেষে শতাধিক ব্রতী জোট।
চালার কোণায় সেই ভোর হতে তাকিয়ে বাবার পানে
আর কিছু পরে ঢাকের ধ্বনিতে আঘাত করবে প্রাণে।
চমকিয়া ওঠে পরিচিত ডাকে সেদিকে ফিরায়া চায়
বিগত রাতের হারানো পাঁঠাটি দাঁড়িয়ে কাছেই ঠায়।
পাগলিনী সম ছাগল জড়িয়ে বলে চিৎকার করি-
“এই সেই পাঁঠা,পেয়ে গেছি আমি” হৃদয় উঠিল ভরি।
পূজারী ঠাকুর বিজ্ঞের মতো বুঝিয়ে বলল “আরে,
নিজের বলছ বলাতো যায় না কারুর তো হতে পারে
চোরে চুরি করে ছেড়ে দিতে পারে এমন শুনিনি নিজে
যদি তাই হয় ঘোর কলিযুগে ঘটছে কখন কী যে”।
ছাগল পেয়েছে শুনে ছুটে এলো আমাদের যদি হয়
যে দ্যাখে সে বলে “না না, এ ছাগল আমাদের এটা নয়”
ভিড়ের মাঝেই একজন তবে দাবী করেছিল বটে
অবশেষে হার মানতেই হলো দাবিদার গেল হটে।
পূজারী পত্নী দাঁড়িয়ে ছিলেন ছাগলের ঠিক পাশে
দ্বাদশবর্ষী ছেলেটি খুঁজছে যদি সে এখানে আসে।
কেউ তো যখন নেই দাবিদার মোড়ল বলল “সবে
বিলম্ব করে কোনো লাভ নেই পুজো সেরে নাও তবে”।
পুকুরে ডুবিয়ে ছাগলের আনে সহজে গলাটি ধরে
পূজারী যখন সিঁদুর পরায় অধিক সোহাগ ভরে।
মনে হয়েছিল কিশোর চাহনি ছাগ মুখে শোভা পায়
মুখখানি যেন পূজারীর চোখে চেনা চেনা লাগে প্রায়।
সহসা কেন যে পূজারীর বুকে কী কারণে কেঁপে উঠে
খুব কি অজানা কারণ তাহার কি বলবে মুখ ফুটে।
তাড়াতাড়ি ছাগ ছেড়েই দিলেন,ঘাতক পেয়েছে তাকে
আটকে দিয়েছে ছাগের গলাটি যূপকাষ্ঠের ফাঁকে।
ধারালো কাতান দুইহাতে তুলে হানিল ঘাড়ের পরে
খণ্ডিত শরীর দেখে তো অবাক ওঠে হাহাকার করে!
অশান্ত মনেই থানেতে পূজারী ঈষৎ ঘুরিয়া দেখে –
লুটিয়ে পড়েন এতো তার ছেলে ছাগল বানালে একে!
কেন যে লোভের শিকার হলেন ভুগছেন পরিতাপে
হাতেনাতে ফল এভাবেই মেলে সত্যের অপলাপে।

অদ্ভুত অবতার – শিবপ্রসাদ পুরকায়স্থ

পাগল হয়েই গেছে যতদূর হবে
সম্ভবত অপদেব ভর করে রবে।
নাহলে ভূতের মুখে শুনি ‘রাম’নাম
নাস্তিক কীভাবে বলে কোথা ঘনশ্যাম।
নিশ্চিত লোভের বশে নেমেছে প্রচারে
ব্যবসায় মোটা পুঁজি এইভাবে পাবে।
যে যাই বলুক কিছু কাউকে না বলে
ছাপাখানা গড়ে যাবে প্রচারটা হলে।
অনেক বলবে জানি ‘দেখেছ কি নিজে
এইসব হিজিবিজি ছেপে হয় কি যে?’
চাঁদের মাটিতে বলি গিয়েছ কজন
নাওনি বিশ্বাস করি এটাও তেমন।
লেখনি প্রবন্ধ কতো ইনিয়ে বিনিয়ে
আমিও ছাপার লাভে চলেছি ছাপিয়ে।
পরোক্ষে বলতে পারো ‘আর বলো কেন
জ্ঞান দিতে আসা যতই অবতার যেন’।
অবতার এসেছে তো তার পূর্বাভাস
অনেকে পেয়েছে শুনি এটাই বিশ্বাস।
সম্প্রতি ঘটেই গেল এদেশের মাঝে
জাগ্রত মন্দির খানি রয়েছে মাদ্রাজে।
দেবকার্যে যুক্ত থাকা পূজারী প্রবীণ
ঘটনা চাক্ষুষ তিনি করেছ সেদিন।
সন্ধ্যারতি শেষ করে মুদিয়া নয়ন
করিয়া নিষ্ঠার সাথে ঈষ্ঠের স্মরণ।
যখন ফিরিবে ঘরে হলেন প্রস্তুত
এমতাবস্থায় দৃশ্য দেখিল অদ্ভুত।
সম্মুখেই সর্প সম ভেবেছিল ছায়া
ক্ষণেক বিলম্বে ধরে ব্রাহ্মের কায়া।
প্রথমে ভীষণ ভয় পরেই বিষ্ময়
দেহের উজ্জ্বল রূপ যেন জ্যোতির্ময়।
অভয় দিয়েই বলে সর্পরূপী দ্বিজ-
“ধর্মের রক্ষার হেতু আসিয়াছি নিজ।
আগামী প্রজন্মে সব মানব শিশুতে
প্রতিভ্রণে মিশে যাবো নীরবে নিশীথে।
আবার নিজের হাতে গড়িব পাণ্ডব
আগাছা গজিয়ে ওঠা দহিব খাণ্ডব।
শেষ করে দেব যতো অমানুষগুলো
ঘৃণা ভরে মানুষের যারা দূরে থুলো।
তাহাদের ছেড়ে দেবো মুখপোড়া করে
খুলে দেবো আছে যারা মুখোশটি পরে।
হায়রে সুবিধাবাদি কৌরবের দল
কম বেশি কারো নেই এই ধরাতল।
আমোদ আহ্লাদে কারো দিন যায় ছুটে
রোমন্থনে কাহারও নাড়ি যায় টুটে।
এহেন করুণ দৃশ্যে বাড়বাড়ন্ত অতি
চাইনা হলেও শত্রু ঘৃণ্য পরিণতি।
সবাই সমান হোক সৎ পথগামী
অসতের প্রতিকারে আসিতেছি নামি।”
তারপরে মহাকায়া পলকে মিলাল
পূজারীর মুখে শুনে খবর ছাপালো।
আকাঙ্ক্ষিত বিশ্বাসীরা হয়নি নিরাশ
সর্ব জাতি নির্বিশেষে করিছে প্রকাশ।
প্রচারের পত্র নয় মিলনের বাণী
ভালোবেসে কাছে আনে দিয়ে হাতছানি।
কতো জানা অজানায় ভাব গড়ে ওঠে
মহামিলনের ডাকে প্রচারপত্রে জোটে।
আহমদ গাজী এতো আহম্মক নন
তিনিও পেয়েছে কিছু সেই ভাষা কন।
কী পেয়েছে কী পায়নি বড়ো কথা নয়
মহামিলনের ডাক পেয়েছে নিশ্চয়।
আমার পুরবে আশা কখনো জানিনা
কিনে খেকো মানুষের বড়ো পালি কিনা-
শান্তি চাই মানসিক ভ্রান্তি যাক ঘুচে
মিলেমিশে থাকি যেন ভেদাভেদ মুছে।
জীবন সংগ্রামে সুখে দুখে স্থির থাকি
এরচেয়ে বেশি কেউ আশাবাদী নাকি।
অবতার রূপে এসো ওহে মহাজ্ঞানী
আঁখিতে আলোক দাও মুছে যাক গ্লানি !

বঞ্চিত সমাজ – শিবপ্রসাদ পুরকায়স্থ

প্রকৃতি দুর্যোগ পথে পল্লিবাসী কোনো মতে
পারিছে না হইতে বাহির
এক পক্ষ কাল ধরি চলিল এমন করি
ধূলিসাৎ দুর্বল কুটির।

নির্দয় প্রকৃতিপতি সাধিল অশেষ ক্ষতি
কী বর্ণিব ভাষাতে এমন
স্থির রহি এক স্থানে তাকিয়ে ভিক্ষুক পানে
চিন্তালোকে করেছি গমন।

ধূসরিত দেহটির কটিদেশ ছিন্নচীর
বাম কাঁধে ঝোলে ঝুলিখানা
ক্ষীণতর কণ্ঠস্বর কাঁপে অঙ্গ থরথর
সূর্যালোকে হেঁটে যায় টানা।

ভিক্ষুক দুয়ারে আসে কে না কহি রুঢ়ভাষে
“এখানে রয়েছে ধন পোঁতা
তাই তোর দেবো খেতে বসে আছি ওত পেতে
নিজের বাচ্চারা যায় কোতা”।

এরাও গরিব বটে স্বাভাবিক আছে চটে
ভিখিরি হয়েও সেটা বোঝে
এতো শুনে অবিচল দুচোখে গড়ায় জল
আবার নতুন বাড়ি খোঁজে।

গরিবের মর্মব্যথা সংগোপনে রয় গাথা
পাষাণ হৃদয়ে রাখে চাপি
কঠিন আঘাতে তায় যখনি প্রকাশ পায়
পাথার উথালে ওঠে কাঁপি।

কেহই করিবে সুখ আজীবন কারো দুখ
যেখানে সমান অধিকার
সেখানে ওদের হাত তুমি নও জগন্নাথ
দোষের সমান ভাগীদার।

অনেক বুঝেছি আমি হে মোর জগৎ স্বামী
কাকে দিয়ে কাহাদের শাস-
কাহারে বা রাখো দূরে কারে রাখো হৃদিপুরে
বুঝে গেছি করে ভালোবাসো।

কেহ খাদ্য ছুড়ে দেয় ক্ষুধাতুর তুলে নেয়
মেঘছোঁয়া অট্টালিকা পর-
কেহ সুখে নিদ্রা যায় কারো ঘন বরষায়
জলে ভরে সারা কুঁড়েঘর।

বড়ো হতে অভিলাষ সবার পুরে না আশ
মন খারাপের কথা জানি
দীন যে হতেছে দীন দুখের সাগরে লীন
ব্যাকুল হয়না প্রাণখানি।

তুমি নাকি দীনবন্ধু অপার করুণাসিন্ধু
নিজ চোখে দেখে যাও আজ
ক্ষোভে অভিমানে তবু তোমায় ভোলেনি প্রভু-
নিপীড়িত বঞ্চিত সমাজ!

পিশাচী সুন্দরবন – শিবপ্রসাদ পুরকায়স্থ

ওরে সুন্দরী সুন্দরবন
জলছবি সম আঁখি পারি না এড়িয়ে থাকি
শ্যামলের হাতছানি গৃহ হতে মন
টানিয়া বাহিরে আনে মায়াবিনী কোন !

ওই যে ব-দ্বীপ ঘেরা নদী
অপার মমতা ভরে কি জানি সোহাগ করে
স্রোতস্বিনীর স্রোতধারা বড়ই আমুদি
স্নিগ্ধতায় যেন আসে দুটি চোখ মুদি।

আশাহত বিষাদিত ক্ষণে
মনোমুগ্ধকর কূলে থাকিলে সময় ভুলে
নিজেকে হারিয়ে ফেলি ওরে প্রিয় বন
বারেবারে ছুটে আসি কীসের কারণ।

চিনেছি মায়াবী পিশাচী
সবুজের বেড়াজালে সুন্দরের অহংকারে
কচুর পাতায় প্রাণ ঝরে পড়া নীর
‘রক্তে রঞ্জিত বস্ত্র’ চিহ্ন প্রতীকীর।

কতো আশা ছিলো ফিরে গেলে
এসেছিল কথা দিয়ে ফিরে যাবে সুখ নিয়ে
আজও বউ পথ চেয়ে খুপিখানি জ্বেলে
শুনবে “কোথায় আছো, এই বুঝি এলে।”

প্রিয়কথা শুনিবে না আর
হোক মুখ ঠোকাঠুকি ভালোবাসা দিত উঁকি
বিরহের যাতনায় শুধু হাহাকার
প্রিয়মুখ ঢেউ ঠেলে দেখে না আসার।

স্বরূপ বোঝাই বড়ো ভার
সুন্দরবনে কী ওরে অসুন্দর বাস করে
রূপের অহংকারে ছুঁয়েছি আকাশ –
তোকে ঘিরে ভারী হয়ে মাটিতে বাতাস।

বিষধর যতো ফণীকুল
বাঘে কুমিরের ত্রাস কাড়ে জীবনের শ্বাস
কাঁটাভরা গাছ আর মৌমাছির হুল-
ভয়ংকর সুন্দরের নেইরে সমতুল।

সুন্দরীর নধর দেহটাই-
গরিব রক্তেই গড়া দুর্বলের শেষ লড়া
রক্ত পিশাচীর কাছে অব্যাহতি নাই
অপুত্রী তোর যে নেই মায়া মমতাই।

শক্তির শেষ প্রান্তে – শিবপ্রসাদ পুরকায়স্থ

লেপটে থাকার অসার চেষ্টা
পেটুয়ারা নাড়ে লম্বা লেজটা
ভালো নয় পরিণতির শেষটা
বড়ো একরোখা ভুখার দল,

যতো দিন যায় উগবেগ বাড়ে
শূন্যের দিকে খালি হাত নাড়ে
বেশ হতাশায় নিশ্বাস ছাড়ে
তলানিতে পড়ে সে মনোবল !

পুজোর থালায় সন্দেশ হয়ে
ভক্তকুলের গেছে চোখ সয়ে
মুখ ফিরিয়েছে সন্দেহ লয়ে
কাঁচা বাঁশে ঘুণ এড়ানো যায়,

আকণ্ঠ লোভ প্রাণবায়ু কাড়ে
নীতি ভ্রষ্টাকে সময় কি ছাড়ে
প্রশ্নের থেকে থাকতেই আড়ে
অক্টোপাসে কে বাঁচতে চায়!

মুখ ও মুখোশ একাকার হলে
কটাকে বোঝাবে অসত্য বলে
চোখ আর কান যদি যায় চলে
অন্ধের হাতি চেনানো যায়,
নীতি হীনতায় দগদগে ক্ষত
না দেখার ভাণে তারাই বা কত
ধ্বংসের পথে হাঁটছি বিগত-
সেই পুরোপুরি বিনাশ চায় !

হায়রে অবসর – শিবপ্রসাদ পুরকায়স্থ

একান্তই প্রয়োজন
প্রতিটি জীবনে অবসর
তা এলে মরণ হয়ে
সে কি আর হয়রে দোসর।

অবসর কারো করো
অনাহারে নীরবে মরার
মরে বাঁচা ঢের ভালো
কী বাহুল্য রয়েছে বলার।

অবসর কারো কাছে
স্বাধীনতা বলতে যেমন
খায় না মাথায় মাখে
ভেবেই পায়না সাধারণ।

কষ্টের বাঁচার চেয়ে
মন চায় পরপারে যেতে
মরিচ-ঝাঁপির মতো
ভিটে ছেড়ে হবে তাড়া খেতে?

অবসর প্রহসন
নিপীড়িত বঞ্চিতের কাছে
দৃষ্টির আড়ালে থেকে
অসহায় মানুষেরা বাঁচে !

সুনামি – শিবপ্রসাদ পুরকায়স্থ

সুনামি ধ্বংসের মেলা
প্রাণ নিয়ে হোলি খেলা
হেন দৃশ্যে সমব্যথী মানবিকতায়-
সাড়া পড়ে দেশে দেশে
সাহায্যের তরী এসে
দুর্গত জনের স্বার্থে কূলেতে ভিড়ায়।

বিবেক পেটায় ঢাক
দাম্ভিক শুনেই রাখ
সুনামির জন্ম শুধু সমুদ্রেই নয়,
বঞ্চিত মনের তলে
নীরবে প্রস্তুতি চলে
পুঞ্জিভূত বেদনায় বিস্ফোরণ ভয়!

সাদা ও কালোর দ্বন্দ্ব
ভাঙে জীবনের ছন্দ
জাতপাত ভেদাভেদে দলিতই যারা,
ছোট হতে হতে শেষে
বঞ্চিতের তলদেশে
সুনামি জানান দেয় ধ্বংসের ইশারা।

জ্ঞানপাপী অহংকারে
ছিটিয়েছে থুতু যারে
সেই থুতু জলোচ্ছ্বাসে দ্রুতলয়ে মেশে,
ভাঙে যদি তীরভূমি
জীবন সংকটে তুমি
ত্রাতার কৌলীন্য ভেবে দূরে যাবে ভেসে?

তোমার বংশের যারা
চাও ভেসে যাক তারা
সে শক্তি তোমার নেই দেখে লজ্জা করে,
আগলে রয়েছে যারা
‘ম্যানগ্রোভ’ সম তারা
সমাজের সবকিছু আছে বঞ্চিতেরা ধরে!

মাটির দেবতা – শিবপ্রসাদ পুরকায়স্থ

হরিজন দ্বারে এলে
ঢাকে আবরণ ফেলে
দেখে না দুচোখ মেলে
যদি কিছু চায়,
জীবনের অবশেষ
মেলে চলে উপদেশ
খুশি হলে হৃষিকেশ
স্বর্গ তারা পায়।

স্বার্থের সাধনা মেশে
যৌবন বার্ধক্যে এসে
মানুষের ভালোবেসে
স্বর্গ খুঁজে নাই,
গড়েছে যাদের থেকে
বসায় না কাছে ডেকে
লৌকিকতা দায়ে ঠেকে
অধিক এটাই।

সকলে আমরা চাই
নিঃস্বার্থের দৌড়ে নাই
তবু যদি বর পাই
কভু ঐশ্বরিক,
হবেই জীবন ধন্য
জানিনা কীসের জন্য
অমরায় হবো গণ্য
স্থায়ী নাগরিক।

স্বর্গের দেবাধিপতি
প্রসন্ন ভক্তের প্রতি
বলে যদি “দ্রুত অতি,
এসো দেবলোকে”
চিনি না যে স্বর্গলোক
যতই সুখের হোক
কী করে ভাবি অশোক
কর্ণে নাহি ঢোকে।

থেকে যাবো স্বর্গ ভুলি
অপূর্ণ বাসনাগুলি
পরিপূর্ণ করে তুলি
দীনের বাসনা,
নিরন্ন মানুষ যারা
অসহায় গৃহহারা
আমার দেবতা তারা
আমার ভজনা।

অতীত বর্তমান – শিবপ্রসাদ পুরকায়স্থ

পাথর খণ্ডে গড়া হাতিয়ার দিয়ে
কাঙ্ক্ষিত দেহে ঝরাত রক্তপাত
এখন তেমন সুচতুর লেখনীতে
অবাধ্যদের অনায়াসে কুপোকাৎ।

মানুষের ছিল একদা চিন্তা উঁচু
অরণ্য কেটে বাস উপযোগী করা
আকাশ চুম্বী বহুতল বাড়িগুলি
এখন চাইছে বন্যতা মেলে ধরা।

আদিমদিগের পৈশাচিকতা যাহা
সেই আচরণে স্বাভাবিক ছিলো তারা
রঙিন আলোকে উন্মাদনার সুখে
সভ্যতা আজ লজ্জায় দিশাহারা।

যখন হয়নি ভাষার সূচনা কোনও
আকার ইঙ্গিতে ভাব হতো বিনিময়
আজ ইঙ্গিতে নিমেষে প্রলয় ঘটে
প্রেমের ইশারা শারীরিক মনে হয়!

আমরাই যেন সভ্য হয়েছি অনেক
এগিয়ে গিয়েছি মানবিক গুনছাড়া-
ঘন কুয়াশায় অস্বচ্ছ পথে ঘুরে
মুক্ত দুচোখে চিনতে শিখিনি পাড়া !

পক্ষপাত – শিবপ্রসাদ পুরকায়স্থ

ভেসে আসা অনেক কথা শুনতাম,সত্যতা যাচায়ের সুযোগ ছিলনা -মা সেটাই করে দিল।

পরিযায়ী ভায়ের কাছে যখন ফিসফিস করে মা জানালো, তুই অনেক ভালো।

ভাইটা কী বোকা দেখ প্রশংসা কুড়োনোর ইচ্ছা একদম ছিল না,
মায়ের মুখের ওপর বলেই দিল- দাদার সম্পর্কে উলটাপালটা বলছ কেন?

আর, তোমাকে আমি চিনিনি, অস্ফুট উচ্চারণ।

মায়ের পক্ষপাতের অন্যতম করণ, ভায়ের ওপর মা নির্ভর করতে চায়। ওইতো চাকরি করে,
নিশ্চিত জীবন যাপন ওই দিতে পারে।

ভাই, ভাবল, নিজের সুবিধা মতো কিছু দিই বটে,মা এখানেই ভালো থাকবে!

আনন্দে লিখে যাই – শিবপ্রসাদ পুরকায়স্থ

কারো যদি ভুল দেখি লেখাতে
সকলেই জ্ঞান দেই শেখাত
শিক্ষানবিশ আর থাকে না
দোষত্রুটি গুরুকুলে দ্যাখে না।

যাকিছুই দেখা সারা দিনটায়
ধরা দেয় ভাবনায় চিন্তায়
দাগ কাটে ভাবুকের কলমে
সব কি গো গাঁথে আর মরমে?

বিষয় আর ছন্দের গাঁথুনি
যথাযথ হল কি না দ্যাখুনি
হাতেগোনা কবি ছাড়া সময়ে-
কালের স্মৃতিতে যাবে তা রয়ে।

কিছু পাঠকেরা মত জানাতে
প্রশংসায় কবিমন বাঁচতে –
ভর করে বীণাপাণি জ্বিহাতে
অসার বললে হ’ল কী তাতে।

আনন্দে লিখে যাই সকলে
সাহিত্য নয় করো দখলে
এর বেশী বলা যায় কী তারে
ফলাফল সময়ের বিচারে।

ছন্দছাড়া কবিকুলের প্রতি – শিবপ্রসাদ পুরকায়স্থ

আবেগ আটকে যায় ছন্দের বেড়ে
গদ্য কবিতা যায় সারা মাঠ তেড়ে
ওখানে দৈন্যের বাড়া
এখানে লাগাম ছাড়া
কবিকুল দোটানায় নেবে, কাকে ছেড়ে?

বাঁধা হলে যা দেবেই খায় শুনে থাকি
উদোমের রুচি হয় রাজসিক নাকি?
বাঁধা, মুখ চেপে খায়
ছাড়া,খাদ্য শুকে যায়
কবিকুল কোন শ্রেণি চেনা আর বাকি?

যে রাঁধে সে চুল বাঁধে সেটা যদি হয়
গদ্যের আগেই কেন ছন্দ চর্চা নয়?
নিরেট গদ্য না রোচে
ছন্দে বিরক্তি ঘোচে
কবিকুল না বুঝলে আগামীতে ভয়।

বিষয় আর ছন্দের যথাযথ হ’লে-
হৃদয়ে দোলা লাগে,যারা দোলাচলে
কোনটা আবেগ নয়?
জোর করে যেটা হয় –
কবিকুল পাঠে খুশী নিজে শ্রোতা হলে।

নিরেট গদ্য সে তো নিরেটের মতো
ছান্দসিক ছন্দে কাঁচা বলছিনা অত
ছন্দের আকালে গান
অকালে হারায় প্রাণ,
কবিকুল অন্নছাড়া ছন্দছাড়া নাতো।

অপরিণত মন – শিবপ্রসাদ পুরকায়স্থ

কেউ যদি তার নিজের কবর
আপন হাতে
খুঁড়তে থাকে,
করছে না ঠিক হিতৈষী তার
কঠোর ভাবে
বলবে তাকে ।

তা না করে তার ঘা যেথায়
খুঁচিয়ে যদি
বাড়ায় আরো,
ভালো মানুষ আদৌ সে নয়
থাকতে পারে
দ্বিমত করো?

প্রতিবেশীর পুড়তে দেখে
আত্ম হারায়
যেজন সুখে,
সেই আগুনের ফুলকি এসে
জ্বলতে পারে
তাহার বুকে।

প্রচার বিমুখ অতি প্রচার
মাত্রা ছাড়ায়
দুয়ের যদি,
মনের অসুখ ভাঙবে শরীর
গড়েনি কেউ
আজ অবধি।

কবর খোঁড়া শুরুটা হয়
হীন মননে
সেদিন থেকে,
বড়ো মনের মানুষ হলে
পরের সুখে
হাসতে শেখে।

ঘুরে দাঁড়ানো – শিবপ্রসাদ পুরকায়স্থ

থাকা যায় নির্বিকারে
পচে মরা নির্বিচারে
আশাহত দ্বারে দ্বারে
হয়েছি বিবাগী,
বলহীন বৃথা ছুটে
ফলহীন মাথা কুটে
শকুনেরা নেয় লুটে
করে ভাগাভাগি।

বিশ্বাসের ঘেরা টোপে
পড়ে লালসার কোপে
পরিস্থিতি ঠোঁটে চেপে
অস্তিত্ব বিকায়,
পীড়িত যাদের দ্বারা
কলির সাঁঝের তারা
কেশটুকু ছুঁতে পারা
স্বপনে মিলায়।

তলায় কোথাও এক
প্রিয় রঙে মিশে থাক
ওপর তলার ডাক
পেয়ে থাকে যারা-
রাজসিক খেয়ে দেয়ে
হেসে খেলে নেচে গেয়ে
আঁধারের পথ বেয়ে
বুকে হাঁটে তারা।

ওরা আর যাই হোক
নয় আমাদের লোক
হতে হবে একরোখ
ভিতটা নাড়াতে
খুবলে খেয়েছ মাস
হাড়ে গজিয়েছে ঘাস
তবু আজো চাপা আশ
ঘুরেই দাঁড়াতে !

মানবতার জয় হোক – শিবপ্রসাদ পুরকায়স্থ

জয় জয় জয় হোক জয় জয়কার-
গণদেবতার নাকি শুধু আপনার?
জয় জয় জয় চাই মানবিক জয়
কখনো সেটাই যেন মৌখিক না হয়।
জয় জয় জয় ধ্বনি ঘেরাটোপ থেকে
বিচ্ছিন্ন জীবনে আনে সংকীর্ণতা ডেকে।
জয় জয় জয় করে অতিথিরা দ্বারে
সন্দেহ তাদের প্রতি তাত্ত্বিক বিচারে।
জয় জয় জয় ডাকে গুরুভাই যতো
তাদের মধ্যেই ভেদ উঁচু নিচু কতো।
জয় জয় জয় কোন্ ধর্মমতে গড়া
মানুষের ছোট করে বৃথা শাস্ত্র পড়া।
জয় জয় জয় করি মহানন্দে তবে
আত্মার আত্মীয় হতে আসিয়াছি ভবে?
জয় জয় জয় করে যারা শুধু মুখে
স্বার্থ ছাড়া পাশে নেই কারো সুখে দুখে।
জয় জয় জয় লাগে বড়ো হাস্যকর
নরনারায়ণ দেখে কাঁদে না অন্তর।
জয় জয় জয় চাই ব্যক্তিগত ভাবে
সার্বিক জয়ের কথা এড়িয়ে কি যাবে?
জয় জয় জয় বলে যারাই চতুর
বড়ই লোলুপ তারা পার্থিব বস্তুর।
জয় জয় জয় বলে বাঁধো গাঁটছড়া
সমাজের উন্নয়নে চাই লেগে পড়া।
জয় জয় জয় হোক মানবের জয়
দিবারাত্রি জপমালা সেটা যেন হয়।
জয় জয়ে দূর করো প্রতিবন্ধকতা –
মানবের মূলমন্ত্র হোক মানবতা!

সন্ত্রাসবাদ – শিবপ্রসাদ পুরকায়স্থ

এই সবে চুল কেটে
স্বচ্ছন্দে এসেছে হেঁটে
তখনো নামেনি পেটে খেয়েছে তো এই,
যমের মতই ‘ষ্টোক’
গিলতে দেয়নি ঢোক
এ তার কেমন রোখ ভয় তো ভেবেই।

দেখিনি তো যমদূত
পিশাচ দানব ভূত
একদা ভেবেছি ধ্যুৎ যতো বাজে কথা,
সময়ে ঘুরেছে সব
সন্ত্রাসের অবয়ব
গ্রাস করে জনরব ঘোর নাশকতা।

শিক্ষিত সন্ত্রাস অতি
পারমাণবিক গতি
প্রখর সূর্যের জ্যোতি ঢেকে দিতে পারে,-
আর কী কী পারে দিতে
অশুভ সংকল্প চিতে
প্রাণ কাড়ে অঙ্গুলিতে পাইকারি হারে।

মারণে ওদের সুখ
লক্ষ্যে নেই ভুলচুক
যমের কাঁপবে বুক ওরা তার চেয়ে –
কঠিন মানববোমা
শরীরে বারুদ জমা
শেখেনি করতে ক্ষমা দ্যাখে না তো চেয়ে।

ওরাও তো শিশু ছিলো
কোমল প্রবৃত্তিগুলো
কারা অযতনে থুলো সেটাই ভাবায়?
ওরা কি সাম্যের কোলে
ঠাঁই পায়নি তা হলে
বঞ্চিতের ক্রোধানলে নাশকতা চায়?

বদলা ধ্বংসের জানি,
প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী
উভয়ের হানাহানি বিলুপ্তির মূলে!
গর্ব করি সভ্য বলে
ভাষায় কৃপণ রলে
সমাধান ধ্বংস হলে দেয় প্রশ্ন তুলে?

সকল দেশের ডেরা – শিবপ্রসাদ পুরকায়স্থ

জাতি-ধর্মে গর্ব করা সকলে চায় মুঠোয় ধরা
আপনভোলা আছে দেশ এক উদারতায় সেরা
ও সে দাস্যসুখে তৃপ্ত এ দেশ সকল দেশের ডেরা,
এমন অলস দেশটি খুঁজে আর পাবেনা তুমি
সকল দেশের ভোগের সে যে আমার লজ্জা ভূমি !

প্রশাসনিক গ্রহের ফেরে জনজীবন আঁধার ঘেরে
কোথায় গুলি তড়িৎ বেগে বর্ষে বিনা মেঘে
কারা অনাহারে ঘুমিয়ে পড়ে ভোটের ডাকে জেগে,
এমন অলস দেশটি খুঁজে আর পাবেনা তুমি
সকল দেশের ভোগের সে যে আমার লজ্জা ভূমি!

এতো ঠাণ্ডা মাথা কাহার বুদ্ধি ধরে ঘর ভাঙাবার
কোথায় শনির অনুপ্রবেশ সুখের পরিবেশে
কোথায় পরকীয়া প্রেমের রসে সংসার যায় ভেসে
এমন অলস দেশটি খুঁজে আর পাবেনা তুমি
সকল দেশের ভোগের সে যে আমার লজ্জা ভূমি!

ফুলের নামে নামটি রাখি মেয়ে তো নয় মা মা ডাকি
তাদের নিয়ে মধুচক্রে দেশ গিয়েছে ছেয়ে
নিশিপদ্মে রসিক ঘুমায় সুখে উদম খেয়ে,
এমন অলস দেশটি খুঁজে আর পাবেনা তুমি
সকল দেশের ভোগের সে যে আমার লজ্জা ভূমি !

প্রতিবেশীর ব্যক্ত প্রেমে কোথায় আসে নরক নেমে?
ও মা তোমার খেঁউড় ভাষায় দিন কলহ করি
তোমার, আদালতে বিচার চেয়ে হেঁটে হেঁটেই মরি,
এমন অলস দেশটি খুঁজে আর পাবেনা তুমি
সকল দেশের ভোগের সে যে আমার লজ্জা ভূমি !

(দিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘সকল দেশের সেরা’ কবিতার প্যারডি)

আজব দেশ – শিবপ্রসাদ পুরকায়স্থ

কোন দেশেতে কেরোসিনে
সতী হওয়া খুব সরল?
কোন দেশেতে জোঁকের মতো
মধ্যভোগী হয় সবল?
কোথায় বলে গরিব দলে
বসত ছাড়া করে রে?
সে আমাদের আজব দেশ
আজব দেশের আমরা রে।

কোথায় মামার গাড়ি চলে
লাঞ্ছিতা হয় মাঝহাটে?
কোথায় এতো প্রেমের বলি
প্রতারণার হাড়িকাঠে?
বাবুরা সব আকাশ ছোঁয়ায়
ভুখারা ফ্যান মাগে রে
সে আমাদের আজব দেশ
আজব দেশের আমরা রে।

কোন দেশেতে প্রতিশ্রুতি
ভোটের আগে সস্তা পান?
কোথায় এতো বাকচাতুরী
এঁচোড়ে পাকা হয় মহান?
রাজনীতি ও গুণ্ডানীতি
কোথায় কাঁধে কাঁধে রে?
সে আমাদের আজব দেশ
আজব দেশের আমরা রে।

কোন দেশেতে আকাল হলে
ব্যবসায়ীর ফুল্ল মুখ?
কোন দেশেতে ঘুম কেড়ে নেয়
ভিনদেশীদের জয়ের সুখ?
কোথায় এমন মহৎ রাজা
স্বজনপোষণ করে রে?
সে আমাদের আজব দেশ
আজব দেশের আমরা রে।

(সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘বাংলাদেশ’ কবিতার প্যারডি)

শিবপ্রসাদ পুরকায়স্থ | Shibaprasad Purakayastha

Bengali Story 2023 | রূপশঙ্কর আচার্য্য | গল্পগুচ্ছ ২০২৩

Bengali Article 2023 | দুর্গা পূজার কথকতা | প্রবন্ধ ২০২৩

Bengali Poetry 2023 | ডাঃ মাধাই মিদ্যা | কবিতাগুচ্ছ ২০২৩

Bengali Poetry 2023 | মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ | কবিতাগুচ্ছ ২০২৩

ঘুরে দাঁড়ানো | মানবতার জয় হোক | সন্ত্রাসবাদ | সকল দেশের ডেরা | আজব দেশ | কবিতাগুচ্ছ | বাংলা কবিতা | সেরা বাংলা কবিতা ২০২২ | কবিতাসমগ্র ২০২২ | বাংলার লেখক | কবি ও কবিতা | শব্দদ্বীপের কবি | শব্দদ্বীপের লেখক | শব্দদ্বীপ | বাংলা ম্যাগাজিন | ম্যাগাজিন পত্রিকা | শব্দদ্বীপ ম্যাগাজিন | ঘুরে দাঁড়ানো দূরের কথা | ঘুরে দাঁড়াতেই হবে | ঘুরে দাঁড়ানো বাংলাদেশ | ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প | জয় হোক মানবতার | জয় হোক বিশ্ব মানবতার | গাজায় মানবতার জয় হোক | ভারতে সন্ত্রাসবাদ | সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ | সন্ত্রাসের উৎপত্তি কোথায় থেকে | সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আইন | সন্ত্রাসবাদী সংগঠন | সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন | সন্ত্রাসবাদ কি অসমীয়া | সন্ত্রাসবাদের সংবাদ | সাইবার সন্ত্রাসবাদ | সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত বিষয় | সন্ত্রাসবাদ ও তার কুফল | আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ কী | বিপ্লবী সন্ত্রাসবাদ | সকল দেশের সেরা | ধন ধান্য পুষ্প ভরা | সকল দেশের সেরা গান | সকল দেশের সেরা কবিতার বিষয়বস্তু | আবৃত্তির জন্য সেরা কবিতা | আজব এক দেশ | আজব আইন | বাংলাদেশের আজব ঘটনা | আজব কাহিনী | আজব দেশের সব আজব নিয়ম

Shabdodweep Web Magazine | High Challenger | Shabdodweep Founder | Sabuj Basinda | Bengali Poetry | Bangla kobita | Canvas of Bengali Poetry 2024 | Poetry Collection | Book Fair 2024 | bengali poetry | bengali poetry books | Canvas of Bengali Poetry pdf | Bengali Poem Lines for Caption | bangla kobita | poetry collection books | poetry collections for beginners | poetry collection online | poetry collection in urdu | Canvas of Bengali Poetry Ebook | poetry collection clothing | new poetry | new poetry 2023 | new poetry in hindi | new poetry in english | new poetry books | new poetry sad | new poems | new poems in english | new poems in hindi | Bengali Poem Lines for Caption in pdf | new poems in urdu | bangla poets | indian poetry | indian poetry in english | indian poetry in urdu | indian poems | indian poems about life | indian poems about love | indian poems about death | Best Bengali Poetry Folder | Best Bengali Poetry Folder 2023 | story writing competition india | story competition | poetry competition | poetry competitions australia 2023 | poetry competitions uk | poetry competitions for students | poetry competitions ireland | Bengali Poem Lines for Caption crossword | writing competition | writing competition malaysia | Bengali Poem Lines for Caption in mp3 | writing competition hong kong | writing competition game | Best Bengali Poetry Folder pdf | Trending Canvas of Bengali Poetry | Canvas of Bengali Poetry – video | Shabdodweep Writer | bee poem | poem about self love | story poem | poetry angel | narrative poetry examples | poetry reading near me | prose poetry examples | elegy poem | poetry reading | poetry websites | protest poetry | prayer poem | emotional poetry | spoken word poetry | poem about god | percy shelley poems | jane hirshfield | spiritual poems | graveyard poets | chapbook | poems about life | poems to read | English Literature | Canvas of Bengali Poetry examples | poems about life and love | elizabeth bishop poems | poems about women | sister poems that make you cry | famous quotes from literature and poetry | mothers day poems from daughter | poem about community | Canvas of Bengali Poetry Ranking | positive Best Bangla Kobita Collection | Bengali Poem Lines for Caption about life struggles | toni morrison poems | good bones poem | google poem | funny poems for adults | inspirational poems about life | friendship poem in english | paul laurence dunbar poems | freedom poem | sad poetry about life | freedom poem | sad poetry about life | Natun Bangla Kabita 2023 | Kobita Bangla Lyrics 2023 book | New Canvas of Bengali Poetry | Writer – Canvas of Bengali Poetry | Top Writer – Natun Bangla Kabita 2023 | Top poet – Natun Bangla Kabita 2023 | Poet list – Kobita Bangla Lyrics 2023 | Archive – Canvas of Bengali Poetry | Bangla Full Kobita | Online Full Kobita Bangla 2023 | Full Bangla Kobita PDF | New Bangla Kabita Collection | Shabdodweep Online Poetry Story | Poetry Video Collection | Audio Poetry Collection | Bangla Kobitar Collection in mp3 | Bangla Kobitar collection in pdf | Indian Bengali poetry store | Bangla Kobita Archive | All best bengali poetry | Indian Canvas of Bengali Poetry | Best Poems of Modern Bengali Poets | Best Collection of Bengali Poetry in pdf | Bengali Poetry Libray in pdf | Autograph of Bengali Poetry | India’s Best Bengali Writer | Shabdodweep Full Bengali Poetry Book | Bengali Poetry Book in Google Bookstore | Google Bengali Poetry Book | Shabdodweep World Web Magazine | Shabdodweep International Magazine | Top Poems of Modern Bengali Poets | Bangla Kobita in Live | Live collection Bengali Poetry | Bengali Poetry Recitation Studio | Sabuj Basinda Studio for Bengali Poetry | Bangla Kobita Sankalan 2023 | Shabdodweep Kabita Sankalan | New Bengali Poetry Memory | History of Bengali Poetry | History of Bangla Kobita | Documentary film of Bengali Poetry | Youtube Poetry Video | Best Bangla Kobitar Live Video | Live Video Shabdodweep | Bengali to English Poetry | English to Bengali Poetry | Bengali Literature | Full Bengali Life of Poetry | Bangla Kobita Ghar | Online Live Bangla Kobita | New Bengali Poetry House | Full Bengali Poetry Collections PDF | Library of Bangla Kobita | Bengali Poetry and Story | Bengali Poetry Writing Competition | World Record of Bengali Poetry Writing | Peaceful Poetry | Online Canvas of Bengali Poetry Selection | Canvas of Bengali Poetry translation in english | Canvas of Bengali Poetry | Canvas of Bengali Poetry for instagram | romantic bengali poem lines | bengali short poem lyrics | bengali kobita caption for fb dp

Leave a Comment