Bengali Article of Ratna Shreya Mukherjee
Rabindranath Surrounded By Women | Bangla Prabandha
নারী পরিবৃত রবীন্দ্রনাথ
রবীন্দ্রনাথের জীবনে নারীর ভূমিকা ছিল গভীর এবং বহুবিধ। তিনি কেবল একজন কবি ও সাহিত্যিকই ছিলেন না, একজন সমাজ সংস্কারক হিসেবেও নারী জাগরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। তাঁর লেখায় ও ব্যক্তিগত জীবনে নারীরা প্রভাবশালী ছিলেন, যা তাঁর চিন্তা ও কাজের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল। রবীন্দ্রনাথের জীবনে নারীর ভূমিকা ছিল অসামান্য এবং উল্লেখযোগ্য। তাঁর জীবনের প্রতি মুহূর্তে বহু নারীর অবদান অনস্বীকার্য।
বিশ্বকবির এই নারী পরিবৃত দীর্ঘ জীবন-ইতিহাসে যে নারীর নাম সর্বাগ্রে স্মরণীয় তিনি হলেন কবির গর্ভধারিণী সারদা সুন্দরী দেবী। পনেরো সন্তানের জননী সারদা দেবী সন্তানদের দিকে সবসময় মনোযোগ দিতে পারতেন না। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন তাঁর চোদ্দোতম সন্তান। রবীন্দ্রনাথের জন্মের সময় সারদাসুন্দরী দেবীর বয়স ছিল চৌত্রিশ। কনিষ্ঠ সন্তান বুধেন্দ্রনাথের অল্প বয়সেই মৃত্যু হয়। তাই রবীন্দ্রনাথ বাড়িতে কনিষ্ঠ সন্তানের আদরেই বড় হন। তবে মায়ের আদর ছিল তাঁর অধরা। রবীন্দ্রনাথের আরেকটি লেখায় আছে,- ‘আমার বড় দিদিই আমাকে মানুষ করেছেন৷ তিনি আমাকে খুব ভালোবাসতেন৷ মার ঝোঁক ছিল জ্যোতিদা আর বড়দার উপরেই৷ আমি তো তাঁর কালো ছেলে৷’ স্পষ্টত বোঝাই যাচ্ছে, মায়ের সঙ্গে একটা গভীর রঙের-দূরত্ব রচিত হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের। শুধু রবীন্দ্রনাথ নয়, অন্য সন্তানদেরও।
সরলা দেবী চৌধুরানীর লেখা থেকে জানা যায়, “সেকালের ধনী গৃহের আর একটি বাঁধা দস্তুর জোড়াসাঁকোয় চলিত ছিল। শিশুরা মাতৃস্তন্যের পরিবর্তে ধাত্রী স্তন্যে পালিত ও পুষ্ট হত।” সুতরাং শিশু রবিও মায়ের কোলের পরিবর্তে ধাত্রী-মায়ের কোলেই প্রতিপালিত। তবে সারদাসুন্দরীকে সংস্কৃত রামায়ণ-মহাভারত পড়ে শোনাবার জন্য কখনো কখনো অন্যান্য পুত্রদের ন্যায় রবীন্দ্রনাথেরও ডাক পড়ত। অল্প বয়সেই সারদাদেবী রোগে আক্রান্ত হলে শেষজীবনে তাঁকে মাঝে মধ্যে বোটে করে গঙ্গায় বেড়াতে নিয়ে যাওয়া হলেও বাকি সময় অন্তঃপুরে তেতলার ঘরে থাকতেন যেখানে সন্তানদেরও প্রবেশাধিকার ছিল না। দীর্ঘ রোগভোগের পর ঊনপঞ্চাশ বছর বয়সে চলে যান সারদাসুন্দরী রবীন্দ্রনাথের তখন তেরো বছর সেই দিনটির কথা লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ,
— ”মার যখন মৃত্যু হয় আমার তখন বয়স অল্প। অনেকদিন হইতে তিনি রোগে ভুগিতেছিলেন, কখন যে তাঁহার জীবনসংকট উপস্থিত হইয়াছিল তাহা জানিতেও পাই নাই।”
গভীর রাতে সারদাসুন্দরী দেবীর মৃত্যু হলে পরের দিন সকালে রবীন্দ্রনাথ মায়ের মৃত্যুসংবাদ পান। একটি লেখায় তিনি জানিয়েছেন, –”প্রভাতে উঠিয়া যখন মা-র মৃত্যুসংবাদ শুনিলাম তখনো সে-কথাটার অর্থ সম্পূর্ণ গ্রহণ করিতে পারিলাম না। বাহিরের বারান্দায় আসিয়া দেখিলাম তাঁহার সুসজ্জিত দেহ প্রাঙ্গণে খাটের উপরে শয়ান। কিন্তু মৃত্যু যে ভয়ংকর সে-দেহে তাহার কোনো প্রমাণ ছিল না।”
সবার সঙ্গে শ্মশানে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথও। যেতে যেতে তাঁর মনে হয়েছিল, – “এই বাড়ির এই দরজা দিয়া মা আর একদিনও তাঁহার নিজের এই চিরজীবনের ঘরকন্যার মধ্যে আপনার আসনটিতে আসিয়া বসিবেন না।”
মাকে নিবিড়ভাবে না-পাওয়ায় বেদনা কবিকে ব্যথিত করলেও মায়ের সাথে দূরত্বের কারণে তাঁর সাহিত্য সাগরে মায়ের উপস্থিতি অতিশয় ক্ষীণ। এ প্রসঙ্গে একটি গদ্যে তিনি লিখেছেন, – “মাকে আমরা পাইনি কখনো, তিনি থাকতেন তাঁর ঘরে তক্তাপোশে বসে, খুড়ির সঙ্গে বসে তাস খেলতেন। আমরা যদি দৈবাৎ গিয়ে পড়তুম সেখানে, চাকররা তাড়াতাড়ি আমাদের সরিয়ে আনতেন, যেন আমরা একটা উৎপাত। মা যে কী জিনিস তা জানলুম কই আর। তাইতো তিনি আমার সাহিত্যে স্থান পেলেন না।”
মাতৃস্নেহ বঞ্চিত বালক রবির স্নেহ বুভুক্ষু জীবনে তাই নতুন বৌঠানের অবদান বিশেষ উল্লেখযোগ্য। রবীন্দ্রনাথের তখন সাত। ন’বছরের মাতঙ্গিনী জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের নববধূ হয়ে প্রবেশ করলেন। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে এসে নাম হল কাদম্বরী। বছর চারেক পর সোমেন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথের উপনয়নের সময় তেরো বছরের কাদম্বরীর উপর দায়িত্ব পড়ে দুই দেবরকে হবিষ্যান্ন রেঁধে খাওয়ানোর। সেই সময় থেকেই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে এক গভীর স্নেহ-মায়া-মমতার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, – ‘মনে পড়ে বৌঠাকরুণ আমাদের দুই ভাইয়ের হবিষ্যান্ন রেঁধে দিতেন, তাতে পড়ত গাওয়া ঘি। ওই তিন দিন তার স্বাদে, গন্ধে মুগ্ধ করে রেখেছিল লোভীদের।”
ওই সময় থেকেই দু’জনের মধ্যে গভীর বন্ধুতা সূচিত হয়। শাশুড়ি সারদাসুন্দরী দেবীর মৃত্যুর পর কাদম্বরী মাতৃহীন রবির রবির মায়ের মতো দেখভালের দায়িত্ব তুলে নিয়েছিলেন নিজের হাতে। নিম্নবিত্ত পরিবারের কন্যা বিয়ের আগে লেখাপড়া শেখার সুযোগ পাননি কাদম্বরী দেবী। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে এসে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের উৎসাহেই শিক্ষালাভ করে হয়ে ওঠেন ঠাকুরবাড়ির শিল্প-সাহিত্যের মধ্যমণি। একদিকে যেমন ছিলেন কল্পনাপ্রবণ, অন্যদিকে উদ্যমী, সাহসী। স্বামীর কাছ থেকে ঘোড়সওয়ারির শিক্ষা। সযত্নে সাজাতেন ঘর। সবই করেছিলেন ঠাকুরবাড়ির ঐতিহ্য মেনেই।
চোদ্দো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ অনুবাদ করেছিলেন ‘ম্যাকবেথ’ নাটকের অনুবাদ। সেখানেই ‘হেকেটি’র সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। খেলাচ্ছলে রাগানোর জন্য নতুন বৌঠানকে দিয়েছিলেন ‘হেকেটি’ নাম। ১৮৮১ সালে ‘ভগ্নহৃদয়’ গ্রন্থটি কবি উৎসর্গ করলেন ‘শ্রীমতী হে-কে’! এই ‘হে’ আর কেউ নন, নতুন বৌঠান।
তাঁর মন ছিল রোম্যান্টিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ। একটা সময় রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যের প্রতি কাদম্বরী দেবীর গভীর অনুরাগ ছিল। পড়তেন, আলোচনা করতেন রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে। তিনি নতুন বৌঠানকে পড়ে শোনাতেন বাংলা সাহিত্যের অনেক উপন্যাস, নিজের লেখা কবিতাও। শুনতে শুনতে দুপুরবেলায় হাতপাখা দিয়ে হাওয়া করতেন কাদম্বরী। নিঃসন্তান এই নারী স্বামীর উৎসাহে জড়িয়ে পড়েন ‘ভারতী’ পত্রিকার সঙ্গে। নিজগুণে ঠাকুরবাড়ির পারিবারিক সাহিত্যসভার কেন্দ্রেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তিনতলার ছাদে নিয়ম করে বসত সাহিত্যসভা। বাড়ির সদস্য ছাড়াও আসতেন বাড়ির বাইরের অনেকেই।কাদম্বরী দেবী রবীন্দ্রনাথের কবি-প্রতিভাকে বিকশিত করার চেষ্টা করতেন। তিনি শুধু রবীন্দ্রনাথের লেখার অনুপ্রেরণা এবং ভক্তই ছিলেন না, তাঁর লেখার সবথেকে বড় সমালোচকও ছিলেন। বলা যায়, রবীন্দ্রনাথের লেখক হয়ে ওঠার পেছনে তিনি ছিলেন অপরিহার্য। শিল্প-সাহিত্যের সঙ্গিনী।
কাদম্বরীর প্রিয় কবি ছিলেন বিহারীলাল চক্রবর্তী। মাঝেমধ্যেই তাঁকে নিমন্ত্রণ করে খাওয়াতেন। সেই আসরে ডাক পড়ত রবীন্দ্রনাথের। সন্ধেবেলায় কাদম্বরী বাড়িতে বসাতেন গানের আসর। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ বাজাতেন বেহালা, রবীন্দ্রনাথ গলা ছেড়ে গান ধরতেন। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ও কাদম্বরী মাঝে মাঝেই গঙ্গার ধারে কোনও বাগান বাড়িতে হাওয়া বদল করতে চলে যেতেন। সঙ্গী হতেন রবীন্দ্রনাথ। গান বাঁধতেন, গান গাইতেন তাঁদের উৎসাহে। কাদম্বরী নিজেও ছিলেন একজন সু-অভিনেত্রী এবং সুগায়িকা।
এরপর ১৮৮৩ সালের ডিসেম্বরে বিয়ে হয় রবীন্দ্রনাথের। বিয়ের ২ মাস পরেই অর্থাৎ ১৮৮৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘ছবি ও গান’ প্রকাশিত হয়। রবীন্দ্রনাথ বইটি উৎসর্গ করেছিলেন নতুন বৌঠানকেই। দু’জনের সম্পর্ক নিয়ে কৌতূহলের শেষ ছিল না। বাতাসে ভেসে বেড়াত মুখরোচক গল্প। যদিও তাঁরা কর্ণপাত করতেন না। একদিন চিরবিদায় নিলেন কাদম্বরী দেবী। জীবনে ছিল বহু অপ্রাপ্তি অপমান সহ্য করে, স্বামীর উদাসীনতার শিকার হয়েই নিয়েছিলেন স্বেচ্ছানির্বাসন চিরদিনের জন্য। ‘চিরসখা’ রবীন্দ্রনাথকে শূন্য করে দিয়ে। নতুন বৌঠানকে কোনও দিন ভুলতে পারেননি রবীন্দ্রনাথ। আজীবন বয়ে বেড়িয়েছেন তাঁর স্মৃতি। পরে স্বীকার করেছেন, — “খুব ভালবাসতুম তাঁকে। তিনিও আমায় খুব ভালবাসতেন। এই ভালবাসায় নতুন বৌঠান বাঙালি মেয়েদের সঙ্গে আমার প্রাণের তার বেঁধে দিয়ে গেছেন।”
কাদম্বরী দেবী মারা গেলেন, কিন্তু উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো তাঁর প্রতি রবীন্দ্রনাথের ভালোবাসা বেঁচে থাকলো, যতদিন তিনি নিজে বেঁচে ছিলেন। তাঁর রচিত গান, কবিতায় তাঁর এই ভালোবাসা ভাস্বর হয়ে রইল। রবীন্দ্র-জীবনের তৃতীয় নারী স্ত্রী ভবতারিণী দেবী, বিয়ের আমন্ত্রণপত্র লিখেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। গানে মাতিয়ে রেখেছিলেন বিয়ের আসর। তখন রবীন্দ্রনাথের বয়স বাইশ, ভবতারিণীর নয় বছর। বিয়ের পর ভবতারিণীর নাম হয় মৃণালিনী। যদিও রবীন্দ্রনাথ স্ত্রীকে আদর করে ডাকতেন ‘ভাই ছুটি’ বলে। বন্ধু এবং সাহিত্যসঙ্গিনী হওয়া তো দূরের কথা মৃণালিনীর সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক আদৌ গড়ে উঠেছিলো কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
মৃণালিনী ছিলেন গভীর ব্যক্তিত্বময়ী, সুদর্শনা। গৃহকর্মনিপুণা। খুব কম বয়সেই মৃণালিনী সংসারের গুরুদায়িত্ব তুলে নিয়েছিলেন নিজের কাঁধে। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ স্নেহ করতেন ছোট পুত্রবধূটিকে। মৃণালিনীকে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে মহর্ষি তাঁকে ভর্তি করেন কলকাতার লরেটো হাউসে। মৃণালিনী এক বছর সেখানে পড়াশোনা করেন। রবীন্দ্রনাথ পরে বাড়িতেই স্ত্রীর সংস্কৃত শেখার ব্যবস্থা করেন। অল্প বয়সে জন্ম দেন প্রথম সন্তান বেলা অর্থাৎ মাধুরীলতার। ভোজনরসিক কবির নিত্যনতুন রান্নার আবদার হাসিমুখে মেটাতেন রন্ধন পটীয়সী মৃণালিনী। সাংসারিক জীবনে ব্যস্ততার মাঝেই নীরবে করতেন সাহিত্যচর্চা, অনুবাদ। মৃণালিনীর চিঠি লেখার হাত ছিল চমৎকার। রবীন্দ্রনাথ যখন দূরে থাকতেন, চিঠির মাধ্যমে দু’জনের ভাবের আদান-প্রদান হত। তাঁকে লেখা রবীন্দ্রনাথের চিঠি পাওয়া গেছে ছত্রিশটি। তবে রবীন্দ্রনাথকে লেখা মৃণালিনীর দুটোর বেশি চিঠির খোঁজ পাওয়া যায় নি। ঠাকুরবাড়ির নাটকের দলের সঙ্গেও জড়িয়ে ছিলেন মৃণালিনী। ‘রাজা ও রানী’ নাটকে নারায়ণীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ ছিলেন দূর আকাশের তারা। মনে মনে বুঝতেন মৃণালিনী। তাই বিখ্যাত স্বামীকে কখনও বেঁধে রাখার চেষ্টা করেননি। তবে পরস্পরের প্রতি গভীর ভালবাসা ছিল। মান-অভিমান ছিল। ছিল নির্ভরতা। বারবার বাসা বদল করেছেন। বোলপুর শান্তিনিকেতনে আশ্রম গড়ে তুলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেইসময় স্বামীর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মৃণালিনী দেবী। বিক্রি করে দিয়েছিলেন নিজের গহনা। সেই টাকা তুলে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথের হাতে। নানাভাবে তিনি হয়ে উঠেছিলেন স্বামীর যোগ্য সহধর্মিণী। তবে মাত্র ২৯ বছর বয়সে পাঁচ সন্তানের জননী রোগভোগের পর ইহলোক ত্যাগ করেন। স্ত্রীর প্রতি ছিল তাঁর ভালবাসা কতটা গভীর, মৃণালিনীর মৃত্যুর পর উপলব্ধি করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।
এই তিন মুখ্য নারী ব্যতীত রবীন্দ্র পরিমন্ডল বহু নারীর বলয়ে আবৃত। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য রবীন্দ্রনাথকে বিলেতে পাঠালে বিলেতের পথে আহমেদাবাদে মাস তিনেক থেকে, আগস্ট মাসে গেলেন বোম্বাইয়ে। ইংরেজি ভাষা-সংস্কৃতি শেখার জন্য রবীন্দ্রনাথ সাত-আট সপ্তাহ অতিথি হিসেবে থাকেন সত্যেন্দ্রনাথের বন্ধু আত্মারাম পাণ্ডুরঙের পরিবারে। আত্মারাম পাণ্ডুরঙের ছোট মেয়ে বিলেতে শিক্ষিতা আনা তরখড়ের ওপর দায়িত্ব পড়লো রবীন্দ্রনাথকে ইংরেজ করে তোলার। আনা ছিলেন রবীন্দ্রনাথের দু’বছরের বড়ো। কিন্তু সুদর্শন কবির প্রেমে পড়তে তার বিলম্ব হয়নি।
রবীন্দ্রনাথও ইংরেজি শেখার জন্য ব্যাকুল না হয়ে কবিতা লিখে, গান রচনা করে, আনাকে ‘নলিনী’ নাম দিয়ে তাকে মুগ্ধ করতেই বেশি আগ্রহ দেখালেন। আনার সঙ্গে কোনো রকমের ঘনিষ্ঠতা না হলেও ‘নলিনী’ যে তাঁর হৃদয়ের ওপর আঁচড় কেটেছিলেন, সে কথা কেবল গান আর নাটকের ভাষায় নয়, বন্ধুদের কাছেও তা প্রকাশ করেন। আনার সঙ্গে ভালোবাসা অঙ্কুরিত হলেও পল্লবিত হয়নি। কিন্তু আনা অথবা রবীন্দ্রনাথ কেউই নলিনী নাম কখনো ভোলেননি। ‘নলিনী’ নামে গান লিখেছেন, কবিতা লিখেছেন। নাটক লিখেছেন। বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত মনে রেখেছেন। এ তো প্রেমই।
আনাও পরিবারের কাছে বিয়ের কথা বলেছিলেন। এর রবীন্দ্রনাথ বিলেতে চলে যান।
এরপর রবীন্দ্রনাথ লন্ডন হয়ে যান ব্রাইটনে। অতিথি হিসেবে বাস করতে আরম্ভ করলেন ডাক্তার জন স্কটের বাড়িতে। সে বাড়িতে স্ত্রী কন্যা পুত্র সমন্বিত সার্জন জন স্কটের পরিবার। কনিষ্ঠা কন্যা পঁচিশ বছরের লুসি রবীন্দ্রনাথের চেয়ে তিন বছরের বড়ো। তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয়েছিলো পরিবারের ছোট দুই মেয়ে ফ্যানি আর লুসির। সুদর্শন রবীন্দ্রনাথকে দেখে তার প্রেমে পড়ে ছয় বছরের বড়ো লুসি। রবীন্দ্রনাথেরও একটু পক্ষপাত ছিলো তাঁর চেয়ে এই মেয়েটির প্রতি। লুসি তাঁর কাছে বাঙলা শিখতে চান। রবীন্দ্রনাথও শেখাতে রাজি ছিলেন আঠারো আনা। তাঁকে তিনি আশ্বাস দেন যে, বাঙলা ভাষা ইংরেজির চেয়ে শেখা সহজ, কারণ বাঙলা বানান এবং উচ্চারণের মধ্যে পার্থক্য নেই ইংরেজির মতো। কিন্তু সাধারণ ‘কখন’-এর মতো শব্দ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখলেন, এর উচ্চারণ ‘ক খ ন’ নয়, বরং এর উচ্চারণ হলো : ‘কখোন্’, অথচ তিনটি অক্ষরই লেখা হয়েছে অ-কারান্ত বর্ণ দিয়ে। তখনই রবীন্দ্রনাথ প্রথম সচেতন হলেন বাঙলা ভাষাতত্ত্ব সম্পর্কে। বছর পাঁচেক পরে তিনি বাঙলা ভাষার প্রথম বর্ণনামূলক ব্যাকরণের সূচনা করেন বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের পত্রিকায়। শেষ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং একেবারে নতুন ধরনের বই প্রকাশিত হয় ‘শব্দতত্ত্ব’। সেদিক দিয়ে বিবেচনা করলে লুসির পরোক্ষ অবদান আজও রয়ে গেছে বাঙলা ভাষাতত্ত্বে। তিনিই রবীন্দ্রনাথকে প্রথম দেখালেন, বাঙলা বানান আর উচ্চারণ মেলে না।
লুসি রবীন্দ্রনাথকে বেশকিছু ইংরেজি, আইরিশ আর স্কটিশ গান শিখিয়েছিলেন। এর প্রভাবেই দেশে ফিরে তিনি এসব গানের অনুকরণে বেশকিছু গান রচনা করেছিলেন। অপেরা দেখে এসে দেশে ফিরেই ‘বাল্মীকি প্রতিভা’ আর কয়েক বছর পরে ‘মায়ার খেলা’ লিখেছিলেন।
স্কট পরিবারের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় বিষণ্ণ হৃদয়ের বর্ণনা দিয়েছেন কবি নিজেই –
“যত অশ্রু বরষেছি এই দুই দিন
যত হাসি হাসিয়াছি এই দুই দিন
এই দুই দিবসের হাসি অশ্রু মিলি
হৃদয়ে স্থাপিবে দিবে চির হাসি অশ্রু।”
তিনি দ্বিতীয়বার বিলেতে তিনি যান তাঁর স্মৃতিবিজড়িত ডক্টর জন স্কটের বাড়িতে। সেখানে গিয়ে শুনলেন, স্কট পরিবার চলে গেছেন দক্ষিণ লন্ডনের উপকণ্ঠে। কবির তখনকার মনের অবস্থার বর্ণনা, – “ভারী নিরাশ হৃদয়ে আমার সেই পরিচিত বাড়ি থেকে বেরলুম। মনে কল্পনা উদয় হলো, মৃত্যুর বহুকাল পরে আবার যেন পৃথিবীতে ফিরে এসেছি।”
বিদেশ থেকে ফিরে আসার পর সবাই তাকে উষ্ণতার সঙ্গে বরণ করে নিয়েছিলেন। বিশেষ করে, দীর্ঘ বিরহের পর কাদম্বরী দেবী তাঁকে পেয়ে উচ্ছ্বসিত হওয়াই স্বাভাবিক। মে মাসে জ্যোতিদাদা আর বউদির সঙ্গে গেলেন বোলপুরে। কিন্তু ততদিনে তার দিগন্তটা একটু প্রসারিত হয়েছিলো, তিনি আর একা কাদম্বরীর আদরের দেবর ছিলেন না। সে পরিবর্তন কাদম্বরী দেবী সম্ভবত অনুভব করতে পারলেন। করতে পেরে থাকলে তার আরও হতাশ এবং আরও নিঃসঙ্গ বোধ করার কথা। কিন্তু তাঁদের এ সময়ে ঘনিষ্ঠ হওয়ার তথ্যও জানা যায়। দুজনে মিলে ছাদের ওপরে তৈরি করলেন একটি বাগান ‘নন্দনকানন’। সেখানেই সময় কাটত দুজনার। দুজন পরস্পরের বন্ধু, পরস্পরের ভালোবাসা এবং সান্ত্বনা। ‘দুজনে মুখোমুখি গভীর দুখে দুখী’। এই সময়ে কাদম্বরী-রবীন্দ্রপ্রেম তার উতুঙ্গ শিখর স্পর্শ করেছিলো।
মৃণালিনী দেবী আর ভাতুষ্পুত্রী ইন্দিরা দেবী একই বয়সের। কিন্তু লেখাপড়া আর মননশীলতায় তাদের ব্যবধান ছিলো আকাশ-পাতাল। কাদম্বরী দেবী মারা যাওয়ার বছর তিনেক পরে রবীন্দ্রনাথ সেই ইন্দিরা দেবীকে চিঠি লেখা আরম্ভ করলেন। প্রথমে স্নেহের কথা, নিজের অভিজ্ঞতার কথা। জমিদারি দেখাশোনার কাজে তিনি যখন শিলাইদহ যেতে আরম্ভ করেন ১৮৮৭ সাল থেকে ৯৯ সাল পর্যন্ত তিনি এই তরুণী ইন্দিরাকে ২৫২টি চিঠি লিখেছেন এই একই সময়ে তিনি মৃণালিনী দেবীকে চিঠি লেখেন মাত্র ১৫টি। গ্রাম-বাঙলার অপরূপ রূপে মুগ্ধ হয়ে ইন্দিরা দেবীকে লেখা চিঠিতে কেবল নিসর্গের সৌন্দর্য বর্ণনা আর স্নেহসম্ভাষণ ছিল না, ভালোবাসার অঙ্কুরও দেখা দিয়েছিলো কবির হৃদয়ে ‘ছিন্নপত্রাবলী’তে যা এখনও অমলিন হয়ে আছে। এ প্রসঙ্গে তিনি একটি তাৎপর্যপূর্ণ উদ্ধৃতি দিয়েছিলেন ইন্দিরার বয়স যখন উনিশ তখনকার একটি পত্র থেকে-
— “এসব শিষ্টাচার আর ভালো লাগে না আজকাল প্রায় বসে বসে আওড়াই ‘ইহার চেয়ে হতেম যদি আরব বেদুইন!’ বেশ একটা সুস্থ সবল উন্মুক্ত অসভ্যতা! “
ইন্দিরার বয়স ছাব্বিশ, সাতাশ প্রমথ চৌধুরীর সঙ্গে বিয়ের পর চিঠির ভাষা এবং সম্ভাষণ দুই-ই পাল্টে গেল। এমনকি চিঠি লেখার ধারাও গেলো শুকিয়ে। এর অল্পদিন পরেই মৃণালিনী দেবী মারা গেলেন। মৃণালিনী দেবী মারা যাওয়ায় তিনি ব্যথা পেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর প্রতি কবির প্রণয় যে গভীর ছিলো, মনে হয় না। মৃণালিনী মারা যাওয়ার পর তার অভাব নিশ্চয় অনুভব করে থাকবেন। মাতৃহীন সন্তানদের বাড়তি দায়িত্বও পড়েছিলো তার কাঁধে। কিন্তু তার স্মৃতি তাকে ব্যাকুল করতো এমনটা ভাবা মুশকিল। আর মৃণালিনী যখন মারা যান, তখন তার বয়স সাতাশ, আর কবির বয়স মাত্র চল্লিশ। দেহের চাহিদার সঙ্গে অন্তরের খিদেয় কখনও কখনও নিশ্চয় ব্যাকুল হয়ে উঠতেন। কিন্তু কার অথবা কাদের জন্য, তা জানা যায় না।
কিন্তু অতি সুদর্শন কবি ও গায়ক রবীন্দ্রনাথের প্রতি নিশ্চয় বহু নারীই আকৃষ্ট হয়েছে। তিনি নিজেও কি আকৃষ্ট হননি বহু নারীর দিকে? বয়স যখন সত্তরের কোঠায়, তখন পেছনের দিকে তাকিয়ে তিনি লিখেছিলেন-
“শুধায়ো না, কবে কোন গান
কাহারে করিয়াছিনু দান”–
তাঁর সাতান্ন বছর বয়সে একটি তরুণী উদিত হন তার জীবনে যার নাম রানু অধিকারী। কাশীবাসী এক অধ্যাপকের উদ্ভিন্নযৌবনা সুন্দরী কন্যা। ব্যতিক্রমধর্মী ব্যক্তিত্ব। তার কাছে রবীন্দ্রনাথের দেবত্ব ছিলো অর্থহীন। সবাই গুরুদেব বলে সম্মান জানালেও তিনি সম্মানের দূরত্ব রাখেননি। নিজের থেকে ৪২ বছরের বেশি বয়সী এক জগদ্বিখ্যাত বুড়োর বন্ধুতে পরিণত করেন। তার চিঠিপত্রের মধ্যে নিজের ভালো লাগাটাকে লাগাম দিয়ে থামিয়ে দিতে চাননি। ষোলো বছর বয়সে রানু যখন শেষ পর্যন্ত বিয়ে করে কবিকে ছাড়লেন, তখন কবির মনে হয়েছিলো তার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল। তার সে সময়কার অব্যক্ত বেদনা প্রকাশ পেয়েছে কেবল তখনকার গান আর কবিতা থেকে। এর বহু বছর পরেও তার কথা মনে রেখে, তিনি গান লিখেছেন,
“ওগো তুমি পঞ্চদশী, পৌঁছিলে পূর্ণিমাতে”
এরপর রবীন্দ্রনাথের আরও এক প্রেমের ঘটনা ঘটেছিলো তখন তার বয়স তেষট্টি বছর। আর যার প্রেমে পড়েন তিনি এক বিদেশিনী, বয়স চৌত্রিশ। কবির পরিকল্পনা ছিলো ব্রাজিল হয়ে চিলিতে যাওয়ার। কিন্তু দৈবক্রমে জাহাজে তিনি দারুণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই ব্রাজিল যাওয়া মাত্র হলো, দেখা হলো না সেভাবে। কদিনের মধ্যে অসুস্থ অবস্থাতেই গেলেন আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আইরিসে। প্রথমেই সেখানে আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা দেওয়া হয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, এমনকি অন্য ক’টি দেশের পক্ষ থেকে। কিন্তু আবার অসুস্থ হয়ে পড়লেন। সেই পরিবেশে হোটেল থেকে নদীর ধারের একটি বাড়িতে গিয়ে তাঁকে আন্তরিকতা দিয়ে সেবা করেন ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো (১৮৯০-১৯৭০)। ১৯১৪ সালে অনুবাদে ‘গীতাঞ্জলি’ পড়ার পর থেকে তার কৌতূহল জাগে রবীন্দ্রনাথের প্রতি। মনে মনে কবিকে ভালোবেসে ফেলেন তিনি। তিনি সেই কবিকে পেয়ে অত্যন্ত মুগ্ধ হন। চৌত্রিশ বছর বয়সী ওকাম্পোর বিয়ে হয়েছিলো, কিন্তু বেশিদিন টেকেনি। রবীন্দ্রনাথের চেয়ে উনত্রিশ বছরের ছোট। তাঁকে দেখে তার ঘনিষ্ঠতা লাভের জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েন।
অন্যদিকে স্নেহ ও ভালোবাসার কাঙাল রবীন্দ্রনাথ ভিক্টোরিয়ার রূপে, গুণে, সেবাযত্নে আর ব্যক্তিত্বে অচিরেই মুগ্ধ হয়েছিলেন। প্রায় চল্লিশ বছর আগে আনা তরখড়কে বাঙলা নাম দিয়েছিলেন নলিনী। এবারে ভিক্টোরিয়া শব্দের কথা মনে রেখে তার নাম দিলেন ‘বিজয়া’।
কবির সঙ্গে তার বয়সের পার্থক্য উনত্রিশ বছরের। কিন্তু ভিক্টোরিয়া তেষট্টি বছর বয়স্ক কবির কপালে একটিও রেখা দেখতে পাননি। অপরপক্ষে, রবীন্দ্রনাথ ভিক্টোরিয়ার বয়স নিয়ে ভাবেনওনি। দেখেই দুজন দুজনকে ভালোবেসে ফেলেছিলেন। কিন্তু কেউ সে অর্থে কারও মন বুঝলেন না, হয়তো দুই ব্যক্তি বলেই নয়, দুই সংস্কৃতিও তার পেছনে কাজ করেছিল।
পঁয়ষট্টি বছরের তাঁর প্রণয়-জীবনের দীর্ঘ পথ তিনি অতিক্রম করেছিলেন, তার মধ্যে এক ধরনের প্যাটার্ন লক্ষ্য করা যায়। প্রথম জীবনে যে চার নারীকে তিনি ভালোবেসেছিলেন, তাদের সবার বয়সই, তার চেয়ে বেশি। ছেলেবেলায় তার যে মাতৃস্নেহের খিদে মেটেনি, সেই ঘাটতি হয়তো পূরণ করতে চেয়েছিলেন এসব নারীর ভালোবাসায়। কিন্তু কাদম্বরী দেবী আত্মহত্যা করার পর থেকে তার সেই প্রেমের চরিত্র পালটে যেতে আরম্ভ করে। বউদির মৃত্যুতে যে ভয়াবহ শূন্যতা দেখা দেয়, তা পূরণের চেষ্টা করেন অপ্রাপ্তবয়স্ক অশিক্ষিত গ্রাম্য স্ত্রী ভবতারিণী আর একই বয়সী সুন্দরী, বিদুষী, বহু ভাষাভাষী, বিলেত ফেরত স্মার্ট ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরার অপরিণত ভালোবাসার মধ্য দিয়ে। মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে তার প্রথম যৌবনে আট বছরের মধ্যে পাঁচটি সন্তান লাভ ছাড়া, নিঃসঙ্গতা অথবা সত্যিকার ভালোবাসার স্বাদ মিটেছিল বলে মনে করা শক্ত।।
রত্না শ্রেয়া মুখার্জ্জী | Ratna Shreya Mukherjee
Best Bangla Golper Ebook | Read Online Bangla Golpo
Best Bangla Kabita Words | Shabdodweep Poetry
Best Kobita Bangla Collection | Bengali Poetry Collection
Best Online Kobitar Pandulipi | Online Poetry Collection
Shabdodweep Web Magazine | Rabindranath Surrounded By Women | Ratna Shreya Mukherjee
Rabindranath Tagore, the lighthouse of Bengali literature, remains a subject of endless fascination. Among many intriguing aspects of his life, one theme that continuously sparks curiosity is the idea of Rabindranath Surrounded By Women. This concept is more than just a romantic or social commentary – it opens up a nuanced discussion on the intellectual, emotional, and creative relationships Tagore shared with the women in his life.
This article, written by Ratna Shreya Mukherjee, a renowned writer on Shabdodweep Web Magazine, explores the many layers of Rabindranath Surrounded By Women, examining how these relationships shaped his poetry, prose, and philosophy.
The Early Influence: Women in Rabindranath Tagore’s Childhood
To understand Rabindranath Surrounded By Women, we must start from his early days. Rabindranath Tagore was born into a large and culturally rich Bengali family in Jorasanko, Kolkata. His mother died when he was very young, and he was primarily brought up by the women of the household.
These women were not only caregivers but also sources of artistic inspiration. They sang, read, and engaged young Rabindranath in storytelling. His sister-in-law Kadambari Devi played an especially significant role. Her companionship and tragic early death left a permanent imprint on his psyche and writings.
The Muse and The Mind: Kadambari Devi’s Impact
Any exploration of Rabindranath Surrounded By Women cannot skip the deep emotional bond between Rabindranath Tagore and Kadambari Devi. She was a friend, confidante, and muse. Her appreciation for his poetry gave him confidence as a young writer.
After her mysterious suicide, Rabindranath went into a phase of deep mourning. The event fueled his literary expression and birthed some of his most poignant works. This emotional bond is a core element in understanding Rabindranath Surrounded By Women.
Marriage and Beyond: Mrinalini Devi and Other Relationships
Rabindranath Tagore married Mrinalini Devi when he was 22. Although their marriage was arranged, she supported his intellectual pursuits. In many of his personal letters, Tagore expresses appreciation for her patience and love.
However, Rabindranath Surrounded By Women does not end with familial or marital ties. Women like Victoria Ocampo (Argentina), Ranu Mukherjee, and others formed strong intellectual and emotional connections with him. These relationships were often non-physical yet deeply affectionate, showing how women influenced his creativity.
Women Characters in His Literature
A significant aspect of Rabindranath Surrounded By Women is reflected in the powerful female characters in his stories and plays. Characters like Bimala from Ghare Baire, Mrinal from Strir Patra, and Charulata from Nastanirh showcase complex, independent, and intelligent women.
These characters were not just figments of imagination but also mirrors to the real women who touched Tagore’s life. His empathy and understanding of feminine emotions made these characters immortal in Bengali literature.
Rabindranath’s Feminist Vision
Through the lens of Rabindranath Surrounded By Women, we also see his subtle feminism. In an era when women were confined to the home, Tagore envisioned them as thinkers, poets, and revolutionaries.
He founded educational institutions like Shantiniketan that encouraged co-education and gave women a voice. His poems and essays often questioned the patriarchal norms of the society, giving a progressive edge to his literary contributions.
Global Friendships and Cultural Bonds
Rabindranath Surrounded By Women also extends to his international connections. Women like Victoria Ocampo in Argentina developed a meaningful intellectual relationship with Tagore. She even published his works in Spanish, introducing him to a new audience.
Such bonds highlight how Rabindranath Tagore was admired and supported by women beyond geographical boundaries. These relationships were rooted in mutual respect and admiration for intellectual and artistic pursuits.
The Legacy of a Gender-Sensitive Visionary
Today, the narrative of Rabindranath Surrounded By Women continues to be explored in academic and literary circles. Ratna Shreya Mukherjee, through her articles in Shabdodweep Web Magazine, has shed new light on how Rabindranath Tagore’s interactions with women shaped his entire worldview.
Her writings celebrate not just the poet, but the women behind his poetry. From familial support to artistic collaboration, every relationship added depth to his work and helped define an era of Bengali literature.
Conclusion
The story of Rabindranath Surrounded By Women is not just a personal tale – it’s a reflection of how great minds are shaped by their surroundings. In Tagore’s case, women played a central role. They nurtured him, challenged him, inspired him, and even transformed him.
As Ratna Shreya Mukherjee beautifully illustrates through her writings in Shabdodweep Web Magazine, understanding the women around Rabindranath Tagore is essential to truly appreciate his literary genius. Their influence permeates his works, making him a poet of universal human emotions.
Frequently Asked Questions (FAQs)
What does “Rabindranath Surrounded By Women” mean?
The phrase refers to the deep personal, emotional, and intellectual connections Rabindranath Tagore had with the women in his life. It shows how these women influenced his upbringing, writing, and worldview.
How has Shabdodweep Web Magazine contributed to this topic?
Shabdodweep Web Magazine has published insightful articles by Ratna Shreya Mukherjee, who has done extensive research on Rabindranath Tagore’s relationships with women and their impact on his literature.
Who were the major women in Rabindranath Tagore’s life?
Important women include Kadambari Devi, Mrinalini Devi, Victoria Ocampo, and several female characters in his stories who reflect real-life inspirations.
Why is the topic “Rabindranath Surrounded By Women” important?
It helps readers understand the human side of Rabindranath Tagore and offers insight into how gender, culture, and emotion interplay in Bengali literature.
Who is Ratna Shreya Mukherjee?
Ratna Shreya Mukherjee is a well-known writer for Shabdodweep Web Magazine. She specializes in literary analysis and has written extensively on Rabindranath Tagore.
Follow our youtube channel – Sabuj Basinda Studio