Best Bangla Kabita Words | Shabdodweep Bengali Poetry

তুমি – সুশান্ত সেন

তোমার আসার কথা সাত রঙ্গা ফুল হয়ে একটা নগর গড়ে দিত,
তোমার হাসির বন অনেক শরৎ জুড়ে অফুরান হল বিগলিত,
সন্ধ্যার গোপন শ্বাস তোমার গায়ের গন্ধে হয়ে যেত অবুঝ পাগল,
প্রান্ত জুড়ে শাখা দল মর্মর ধ্বনির সাথে ফেলে দিত আকাশ আচল।

সেই আমি সেই তুমি কোনদিন ভাবিনি ত থাকব একাকী।
ভাবিনি ত একদিন রক্তাক্ত জীবন এসে বলে দেবে কিছু দেওয়া বাকি।

কে এখন বনভূমি খুঁড়ে খুঁড়ে ধরে এনে দেবে একটি হৃদয়,
হরিণ অবোধ শিশু, কাঠবিড়ালির মত খুঁজে চলে
অধরা প্রণয়,
সিংহের গুহায় এসে ফেরা ত যাবে না আর শূন্য নীল হাতে,
বসন্ত পূর্ণিমা নেই, নেই কোনো আবাহন আজ এই মায়াভরা রাতে।

ভালো লাগা – সুশান্ত সেন

এখন এই মধ্য রাত্রে কেউ যদি প্রেত ধরে
নিয়ে আসত
তাহলে কি রকম হত!

হাজার বার টেলিফোন করেও
কোনো লাভ নেই
কারণ যোগাযোগ কেটে গেছে।

শঙ্খ লাগা সন্ধ্যায় গা ধুয়ে কেউ বসে নেই
এখন কিছু ছুচিমুচী খেতে চাইলে
নিজেকেই হাত পুড়িয়ে করে নিতে হবে।

ভালো লাগার অনুরণন মিলিয়ে যায়
সন্ধ্যা পাখির মত
পূর্ব দিগন্তে।

আসুন – সুশান্ত সেন

আসুন সবাই মিলে এগিয়ে যাই , হাত লাগাই, চেষ্টা করে দেখি সূর্যমুখী ফুল ফোটাতে পারি কি না ফুল বাগানে ।
মাটি বারে বারে ছানি , সার মেলাই , ঠিক মত জল আর রোদ্দুর পেলে হাসতে থাকবে সার সার সূর্যমুখী, ফুল বাগানে ।

দিগন্ত জোড়া হলুদ ফুলের বাতাসে মাথা নাড়ানো দেখে প্রজাপতিরাও ফিরে আসবে যারা হারিয়ে গিয়েছিল কংক্রিট জঙ্গলের উৎপাতে।

চলো, এখনো সময় হারিয়ে যায় নি, এখনো চেষ্টা করলে বসন্তের বাতাস ফিরে পেতে পারি । এখনো ।

সময় অপেক্ষা করছে।

জল – সুশান্ত সেন

জল বাড়ছে।
অনেকক্ষণ ধরে – নিশ্চিত – জল বাড়ছে।

মাটির বাঁধ টিকবে আর কতদিন!

অর্থ না মাটি না শ্রম
সব জলাঞ্জলি দিয়ে
এগিয়ে আসছে কেউটে সাপ – অলক্ষ্যে।

পতাকা গুলো কেবল রাজনৈতিক দাবির কাছে নত,
প্রয়োজনের কাছে নয়।

জল বাড়ছে – নিশ্চিত জল বাড়ছে।

মাটির বাঁধ টিকবে আর কতদিন!

সারাৎসার – সুশান্ত সেন

রাম ছাগলের বন্ধু যখন রাজা হোলো
বললো হেঁকে গলা ঝেঁকে দরজা খোলো।

সবাইকে আজ আসতে হবে কিলার মাঠে
শিখাচ্ছি যা বলতে হবে সাথে সাথে,
অঙ্ক মেলার নানান সুযোগ দেবো তোমায়
দেখো ভাগ্য-লক্ষ্মী যদি মুখ তুলে চায়।

বেদম দমে ছুটছে দেখো ঘোড়া আমার
সময় তার নেই রে ভাই একটু থামার
তারই সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটতে হবে
এই কথাটাই সারাৎসার বোঝ সবে।

ছাগল রাজা হাসতে থাকে কাষ্ঠ হাসি
ছুটছে সবাই এই বুঝিবা পড়লো ফাঁসি।

ঠিক – সুশান্ত সেন

ঠিক ভাবে শুরু করা গেল না
না জীবন না ধরা পড়ল হাতি।

হাতি শব্দটি কেন জীবনের সাথী হল
সেই নিয়ে ভাবনা।

ঠিক ও বেঠিকের ভেতর নাচানাচি করে
বেশ এগিয়ে যাচ্ছে সময়।

আলুর বস্তা কাঁধে নিয়ে
ভার বইবার পরীক্ষা নিচ্ছে –
বর্ষা কালের জ্যাপসা গরম।

তবু ঠিক ভাবে শুরু করা গেল না জীবন টা।

কোথায় – সুশান্ত সেন

তারা’রা কোথায় থাকে পাতার জারিত ওম জুড়ে,
বিষণ্ণ রাত্রির কাছে কেন বারবার করে আবেদন,
একটু সময় দাও হে আমার মহাশূন্য মাতা
একটু সময় দাও।

কে যেন উদ্যম নেয় কে যেন দেখেছে স্বপ্ন
বালিয়াড়ি ভেঙে ভেঙে চালাবে সে উঠ
চামড়ার জোব্বা গায়ে দিয়ে ।

তাকে ডেকে বলে দাও মরুভূমি পার হলে
অসম্ভব তৃষ্ণা থাকে , চাবুকের হাতে।

ক্ষণিক দাড়াও তুমি প্রশ্ন করো মহাকাশে
জারিত তরঙ্গ শুষে নিয়ে।

কোথায় কেমন করে থেমে যাবে এমত উত্থান

রামরাজ্য – সুশান্ত সেন

রামরাজ্য কি রামরাজ্য থাকলো
রামচন্দ্রের মৃত্যুর পর !
তাহলে রামচন্দ্র পবিত্রতা পবিত্রতা
আর প্রজা-রঞ্জনের কথা বলে
সীতাকে কেন এত মনোকষ্ট দিলেন ?

আসলে তাঁর ছিল অমরত্বের লোভ
তাই জন্য তিনি সারা রামায়ণ ধরে
অনেক কাণ্ডকারখানা করলেন।

তাই এত যুগ পরে আমরা
অমর রহে অমর রহে বলে চিৎকার
করে চলেছি।

এখন – সুশান্ত সেন

ঠেলা গাড়ি, হ্যারিকেন, স্পিরিটের স্টোভ
লাল মেঝে, পেয়ারা গাছ
আম পেড়েছি একটা ঢিলে বোস বাড়িতে
এখন উঠান ফাঁকা বেজায়
ফাঁকা বেজায়।

জীবন দেখি খুব ছুটেছে
মামার বাড়ি কলকাতার উত্তরেতে
বনেদি, ঘরকে ঘর
বেবাক খালি বেবাক খালি।

এক্কা গাড়ি থমকে গেল
থমকে গেল দুতলা বাস
বেবাক খালি সন্ধ্যে বেলায় তুলসী তলা
বেবাক খালি বেবাক খালি।

আঘাত – সুশান্ত সেন

কতবার আঘাত দেবে !
যত আঘাত’ই দাও না কেন
বারবার তোমার কাছেই ফিরে আসবো,
তুমি জানো ।

তুমি জানো ভিক্ষুকের কোথাও যাবার জায়গা
থাকে না।

প্রার্থী যে জন্ম ভিক্ষুক
সে ত তুমি জানোই।
তাই বারবার ফিরে আসি।

তাই কি বারবার আঘাত দাও !

সময় – সুশান্ত সেন

অতিশয় দুর্বিপাকে পড়ে
ঘরের ভেতর বসে আছি
মন খুলে কথা বলা নেই
ঘুরে মরে বিষণ্ণ মৌমাছি।

জানালাটা বন্ধ করে রাখি
ভয় পাই প্রাণঘাতী বায়ু
হঠাৎ ঢুকে আসবে ঘরে
কেড়ে নেবে ঢাকা পরমায়ু।

হাতছানি খোলা আকাশের
যেতে হবে রোদ্দুরের কাছে
বসন্ত বাতাস এসে পড়ে
মনের পেখম তুলে নাচে।

অঙ্ক – সুশান্ত সেন

তুমি সিঁড়ি ভাঙা অঙ্ক শিখবে কি শিখবে না
এখন থেকে ভাবতে থাকো
ধাপ গুলো পর পর পেরোতে না জানলে
লক্ষ্য বস্তু অধরাই থেকে যায়।
তখন ধান ভাঙতে পান্তা ফুরায়।
নুন লঙ্কা পেঁয়াজ মেখে
পান্তা খাবার স্বাদ
অধরা থেকে যায়
সারা জীবন ধরে।
ঘুমিয়ে পড়তে থাকে দীপ্তি মেঘের আড়ালে।

মেঘ – সুশান্ত সেন

যত দিকেই যাই সামনে সাদা মেঘ
বৃষ্টির জল দিয়ে লেখা
পড়া যায় না।

কেবল শীত শীত অনুভূতি নিয়ে
কার্নিশে বসা পায়রা দুটোর মত
ভিজতে থাকি।

কিন্তু একা।

সাদা মেঘ ঘিরে রাখে
শীত শীত অনুভূতি।

এখানে – সুশান্ত সেন

এই ধরা’তেই বুদ্ধ খ্রীষ্ট এলেন
এই ধরা’তেই লেখা হলো বেদ
কোরআন কনফু ইত্যাদি সব মিলে
এক – বিংশে খাচ্ছি সবাই গিলে।

এক – বিংশে বিশ্বের তাপ বাড়ে
দুর্বিপাক ওড়ায় নিজের ধ্বজা
ইতিহাস নড়ে ঝড়ের তালে
চিন্তা তবু বাঁকা , হয় না সোজা।

নতুন মানুষ অন্তর্জালের জালে
পড়ছে ধরা, মন কি হলো নিঃস্ব
বাড়ুক বাড়ুক প্রজন্ম’দের ক্ষুধা
তারাই গড়বে নতুন এক বিশ্ব।

বারবার – সুশান্ত সেন

বারবার এক কথা বলো না
কেউ এখন আর কথা শুনবে না
কান গুলো সব বাজেয়াপ্ত হয়ে
রাজার খাজাঞ্চি খানায় জমা পড়েছে।

এখন আঁকশি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে
ছাই গুলো সরিয়ে আধ পোড়া কয়লা গুলো
বার করতে হবে।

তখন যদি বাতাস বইতে আরম্ভ করে
তখন হয়তো কথা গুলো শোনা যাবে।

বারবার এক কথা বলো না।

কে – সুশান্ত সেন

কে আসে কাছে
কে দরজায় কড়া নাড়ে
কে সকালের মন খারাপ করা সময়
ভালো করে দেয় !
সে কি কোন দূর দেশের হাওয়া
সে কি মনের মধ্যের কৌতূহল
সে কি অজানাকে জানবার নেশা ?

কে জানে!
শুধু উঠে বসি
লেখার খাতাটা কাছে টেনে নিই
নীল আকাশের মেঘের শোভার দিকে তাকাই।
মনের ভেতর এক অদৃশ্য অনুভূতি খেলা করে।
লেখা শুরু করি।

কে যেন বলল – এ এক ঘোড়ার ডিমের কবিতা।

চেষ্টা – সুশান্ত সেন

চেষ্টা করছি পারছি না
সেই ছোটবেলা থেকে
চেষ্টা করে চলেছি, পারছি না।
পারছি না মনের মত ফুল ফোটাতে
নানা প্রথা মত।
মাটি আনলাম, মাটি ছানলাম, গোবর মেশালাম,
চা পাতা ভিজিয়ে আর সাথে
কিনে আনা রাসায়নিক সার
সব মেশালাম –
সময় মতো জল দিতাম।

তবু কাজের কাজ কিছু হলো না।
ফুল আর ফুটলো না – মনের মত।

দেখা – সুশান্ত সেন

কি করে যেন সব পর পর ঘটে গেল
সে – হয়ে উঠলো পোকায় কাটা ফুল।
সরস্বতী নিজেকে তাই মনে করত।

মনিভূষণ আর সরস্বতীর আবার যখন দেখা হলো পঁচিশ বছর পর।
তখন সৃষ্টি হলো এক বেদনা ভরা অস্বীকার।

এই ভাবেই জীবন চলতে থাকে
এই ভাবেই বন্যার সৃষ্টি।

কি করে যেন মণিভূষণ আর সরস্বতীর আবার দেখা হয়ে গেল — পঁচিশ বছর পর।

লেখা ও পূর্ণতা – সুশান্ত সেন

প্রথম পরিচ্ছেদ থেকে শুরু করে
দশম পরিচ্ছেদ পর্যন্ত লেখার পর
মনে হলো
ছাই ভস্ম লেখা হয়েছে।
তখন লেখক লেখাটা কুটিকুটি করে ছিঁড়ে ফেললেন।
চতুর্থ পর্ব টি ছেঁড়া না পড়লে
বাংলা সাহিত্যের সম্পদ হয়ে থাকতো।
সে কথা লেখকটি বুঝতেই পারলেন না।

কি আর করা যাবে
কোন হাওয়া কোন পালে কখন এসে লাগবে
কেউ কি আগে থেকে বলতে পারে!

সৃষ্টি – সুশান্ত সেন

এই অপূর্ব সৃষ্টির মাঝে মানুষ কেবলই
প্রকৃতিকে হয়েছে বিস্মৃত।
দম্ভ ভরে করে তাকে পদানত
নিজ ভোগবাদী প্রয়োজনে।

নীরবে সময় লক্ষ্য করে এই অর্বাচীন পদক্ষেপ।
হিমালয় কাঁপে জোশিমঠে।

কখন ধ্বংসের মাঝে লুপ্ত হবে এ সভ্যতা
সময় রয়েছে তার প্রতীক্ষায় রাত্রিদিন।

সংরক্ষণ – বোঝে না যে ভোগবাদী।

মেঘ – সুশান্ত সেন

মেঘের চুল ধরে টানতে টানতে
সভার মধ্যে টেনে দ্রৌপদী করার মতলব দেখে
মেঘ গুলোকে সমুদ্রের দিকে ঠেলে দিলাম।

দক্ষিণ পূর্ব বাতাস তাকে পৌঁছে দিল
আন্দামান সমুদ্রে।

সেই থেকে কলকাতা আর তার
আসে পাশে বেজায় গরম।
গুলি চলছে আর হাত – বোমাও বেশ পড়ছে।

কেন – সুশান্ত সেন

গল্প একটা ভাবা হয় প্রতিদিন
গল্প একটা মনের মধ্যে জন্ম নেয় প্রতিদিন
সাঁতার জানি না তাই কেবল হাবুডুবু খাই
কিছুতেই তীরে এসে উঠতে পারি না।

স্বপ্ন একটা দেখি প্রতিদিন
স্বপ্ন দেখে সুখ সাগরে ভাসতে থাকি
স্বপ্নরা কেন শুধু রাত্তিরের
দিনমানে কেন স্বপ্ন দেখিনা !

যাত্রার সময় হয়ে এলো
এখন যেতে হবে দূর দেশে
গল্প আর স্বপ্ন পড়ে থাকবে অবহেলায়
নীল সমুদ্রের ঢেউ ডাকছে।

জীবন টা এই রকমই কেন
কেন সে হঠাৎ থেমে যায়
কেন শিউলি ফুল সকাল হলেই ঝরে পড়ে
কেন দিনান্ত অচেনা !!

পতিতা – সুশান্ত সেন

সে ত ছিল এক পরম অনধিকারি
ডাল ভাত খাওয়া নিটোল স্বপ্ন সন্ধ্যা
তার কাছে গিয়ে প্রতিকার চাওয়া হলে
হাতে তুলে দিল রাতের রজনীগন্ধা।

আমরা তখন খাদ্যের খোঁজে ত্রস্ত
হুশ নেই দেখি সমস্ত পাড়াপড়শির
কেউ ত জানেনা সন্ধ্যা এখন রাস্তায়
চটুল ভঙ্গি স্খলিত বসনে অস্থির।

শঙ্কা – সুশান্ত সেন

শঙ্কা অনেক ময়ূরবাহন
শঙ্কা ভরা গড়ের মাঠ
যাত্রা কেবল অবিশ্বাস্য
শঙ্কা ভরা সেগুন খাট।

শঙ্কা এসে পিটিয়ে মারে
বিপরীতের জায়গা নেই
কারা কি কি চিবিয়ে খাবে
ভাবছে বসে রাত্রিতেই।

ময়ূরবাহন ময়ূরবাহন
তোমার দুটো রাজা চাই
একই রকম দেখতে হবে
যেন দুটো যমজ ভাই।

একটা কুমির ছানাটাকে
দশটি বার দেখিয়ে শেষে
কাষ্ঠ হাসি দেখনদারি
নতুন ফন্দি গড়ছ হেসে।

সময় – সুশান্ত সেন

টুক করে সকালটা গিলে ফেলে
মধ্য দিনের আকাশ যখন ভুরু কুচকি’য়ে তাকাল
তখন পিছন পিছন যাওয়া বন্ধ করে
ভালো মানুষের মত মুখ করে
নদীর দিকে চেয়ে থাকলাম,
যেন নদীর সাথে আমার পরিচয় অনেক দিনের।

তখন নদী হঠাৎ দাঁড়িয়ে
ছপাৎ ছপাৎ করে মুখের ওপর কাদা জল ছিটিয়ে
চেঁচিয়ে লোকজন জড়ো করে
আমাকে দেখিয়ে বলে উঠলো –
এই লোকটি সারা দিন সারা রাত্রি
উন্নতি উন্নতি বলে ভুলিয়ে
আমার গায়ে ঘেমো হাত ধুয়ে ধুয়ে
আমাকে দূষিত করে চলেছে।

তখন হিমবাহ গলে আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল।

প্রয়োজন – সুশান্ত সেন

সত্য দ্রষ্টা কবি বলেছিলেন মানুষ প্রয়োজনের দাস হয়ে সারা পৃথিবীর বুক খুবলে খুবলে খাচ্ছে জন্তুর মতন। ভারসাম্য হারিয়ে একদিন প্রকৃতি হারিয়ে যাবে বিষণ্ণতায়, যাত্রা করবে প্রতিশোধের পথে। জাপানের পথে যেতে যেতে জাহাজে। (জাপান যাত্রী)
তাপমাত্রা বাড়ছে। আজ এই বৈশাখী দুপুরে একটু স্বস্তির জন্য খাবি খেতে খেতে এই কথাই মনে এসে গেলো।
শুনেছি আগামী দুই দশকেই আছড়ে পড়বে সমুদ্রের জল তটভূমিতে ।
আমার আর কবিতা লেখা হলো না।

দর্পণ – সুশান্ত সেন

দর্পণে অনেক মুখ, ঠিক আমার পিছনে
আমারই নানারূপ মুখ
দাঁড়াইয়া থাকে,
কিছু কিছু মুখ যায় চেনা
কিছু এমনই বিকৃত, যে তড়িঘড়ি করি অস্বীকার
বলে উঠি এ আমি নই
এই মুখ আমার তো নয়।
মুখ গুলি ক্রুদ্ধ কণ্ঠে ক্রুর হাসি হেসে বলে
জানো কি নিশ্চয়?
এই ভাবে দিবসে ও রাতে
নানারূপ মুখ এসে দাঁড়ায় দর্পণে
প্রশ্ন করে বারে বারে
চিনে নাও নিজের স্বরূপ।
কেঁপে উঠি, ধিক্কারেতে বলে উঠি
এতই নিকৃষ্ট কীট আমি?
অন্ধকার হয়ে আসে
দিনান্তে দর্পণ জুড়ে
মুখ – ছায়া কেঁপে কেঁপে যায়।

মেঘ – সুশান্ত সেন

আকাশে মেঘ জমে আছে, পাতলা পাতলা, ভ্যাপসা ভ্যাপসা, যেন জীবনের রস সব শুষে নিয়ে ছানিপড়া চোখে এক বৃদ্ধ। কোনো উদ্যম নেই, কোনো নড়াচড়া নেই, বাংলার আকাশে যা নিশ্চিত করছে ভগ্ন জীবনের। অনেক দিন আশায় আশায় থাকার পর যখন বৃষ্টি আসেনা অথচ আকাশ থাকে মেঘে ঢাকা, তখন আশাহীন চাষী যেমন মনে মনে গুমড়ে গুমড়ে ওঠে, সেই ভাবে এই প্রজন্ম মাথা নিচু করে বসে আছে, তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে বিগত কাল তাদের জন্য ধুলোমুঠি ছাড়া কিছুই রাখেনি।
কখন ওরা উঠে দাঁড়াবে ?

তুমি – সুশান্ত সেন

তুমি জানো বানিয়ে কথা বলতে পারি না
পারিনা কথা বলতে সাজিয়ে গুছিয়ে
তাই কথা গুলো ছোট ছোট হয়
কারো মনে দাগ কাটে না।
একদিন সন্ধ্যার আকাশে ধ্রুবতারা দেখে পাগল
হয়েছিলাম
তোমাকে ডেকে দেখিয়েছিলাম
সন্ধ্যার আকাশ
না বলতে পারা কথা গুলো তখন মূর্ত হয়ে
উঠেছিল,
আকাশে
তুমি কি অনুভব করেছিলে!
এখন রাত্রি এসেছে, স্তব্ধ রাত্রি
তাই কথা গুলি আরো ঘুমিয়ে পড়েছে
আর তো কথাগুলো শোনা যাবে না।

চাই – সুশান্ত সেন

বারবার বেশি বেশি করে চাই, জানি অল্প কিছু পেলেও ভিক্ষের ঝুলিটা ভরে উঠতে পারে, সেই আশায়। দিনের পর দিন যায় দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ঝুলিটা পূর্ণ হয় না। বিকেলের রোদ তেজ হারিয়ে
ম্রিয়মাণ হয়, তখন জানা যায় যে রাস্তায় যাবার কথা ছিল, ঠিকানা হারিয়ে, সেই রাস্তায় না গিয়ে ভুল রাস্তায় হেঁটে এসেছি সারাটা জীবন।

তাই আক্ষেপ করা ছাড়া আর কি করার আছে বাকি জীবনে। জানি ওত পেতে বসে আছে চিতা বাঘ, গাছের ডালে, ঝাঁপিয়ে পড়ার অপেক্ষায়।

পাশের বাড়ি – সুশান্ত সেন

পাশের বাড়ির ছেলেটি আর বাড়িতে নেই
তাকে আর দেখা যায় না,
বাগানের ঘাস বড় হয়
অবিন্যস্ত বেড়ে ওঠে,
ঘাস কাটার যন্ত্র নিয়ে ঘাস কাটতে
তাকে আর দেখা যায় না।
মেয়েটি বাড়িতে থাকে
একা একা,
সপ্তাহ শেষে আসেন মা বাবা
সপ্তাহ শেষে দু দিন ।

তারপর
সোম থেকে শুক্র
মেয়েটি একা হয়ে যায়,
মেয়েটি একা একা থাকে,
সোম থেকে শুক্রবার,
একদম একা একা।

ক্রিকেট – সুশান্ত সেন

দরজা খুলে কাউকে না পেয়ে
বাতাসে একটু নাকটা ঘষে
দূরত্ব’টাকে মেঘের আড়ালে রেখে দিলাম।
ঝিঁঝিঁ পোকা আর খেলার ডাক
একসঙ্গে শোনা গেল।
কি করি বুঝতে না পেরে
টিভিটা খুলতেই দেখি
শতরানের মাথায় দাঁড়িয়ে
ব্যাটস ম্যান একটু
দোনামনা করছে ।
একটু অনিশ্চিত জীবনের মতো।

ফুল – সুশান্ত সেন

ফুল তুলতে তুমি যেও না
বাগানে।

বাগানে অচেনা লোক ঘুরে বেড়ায়।

তারা তোমার সাথে কথা বললেই
আমার বুকের ভেতর
ঈর্ষা বা কিছু একটা
ধক ধক করে
ধাক্কা মারতে থাকে।

ফুল তুলতে তুমি যেও না।

কবিতা – সুশান্ত সেন

বহতা নদীর স্রোত কবিতার ন্যায়
জীবন যুদ্ধের কোনো সার্থকতা ছাড়া
নিপুণ হাতের এক সূচিশিল্প যেন
খেয়াল রসের কাছে মৃদু সমর্পণ।

তোমার কাছেই দেখি সময় কাটাই
তোমার কাছেই কি প্রেম রহিয়াছে
দিন শেষে দেখি এক প্রস্ফুটিত রূপ
কাছে যাই হাত ধরি করি নিবেদন।

হাত – সুশান্ত সেন

হাত ত বাড়িয়ে আছি
অনেকক্ষণ, তুমি কি সেই হাত ধরবে?

দক্ষিণের বাতাস কি জানে
সে কি আসবে!
ধরবে কি হাত!

স্নাত পৃথিবী একটা দুটো
ফুল ফুটিয়েছে শিমুল গাছে,
একটু পরেই ঝরে যাবে
আমি আছি অপেক্ষায়।

মাথা – সুশান্ত সেন

কবিতা বারবার কাছে ডাকে
মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে কাছে চলে যাই
অজানা স্পর্শের লোভে বুকে টেনে নেব বলে
আরো কাছে এসে দেখি
ও মাথার দিকে তাকিয়ে আছে।
তখন মাথার ভেতর বুনো মোষ
শিং বাগিয়ে তাড়া করেছে , দু চোখে আগুন।
হারেমে ঢুকে পড়েছিলাম বলে সম্রাট
হাত পা ভেঙ্গে নেকড়ের মুখে
ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন —
সেই মৃত্যু যন্ত্রণা নিয়ে
তোমার দিকে তাকিয়ে থাকি কবিতা,
আমার কবিতা।
মাথার ভেতর বুনো মোষ শিং বাগিয়ে
লাল চোখে তাড়া করতে থাকে।

অমৃতাক্ষর – সুশান্ত সেন

যখন প্রেমের কাছে বলি হয় সব
এবং রাত্রি ঘিরে মেঘেরা জন্মায়
ও মৃত হয়। তখন সমাধি মন্দির
ঘিরে গড়া হয় নব বাসস্থান ।
দাবি হীন কুণ্ঠা নিয়ে সারি সারি
মানব সন্তান মৃত হয়ে যায়।

শীতলপাটি – সুশান্ত সেন

শীতলপাটি বিছিয়ে রাখো মনের ওপর
যেন সে শান্ত থাকে
যেন সে অন্তর্দাহে দগ্ধ না হয়।
কাজ ও কাজের জন্য
অনুশোচনা ।
এই ভাবেই ছুটে চলেছে জীবনটা
নানা ঝকমারি সঙ্গে নিয়ে।
মনটা শান্ত রাখা
বেজায় শক্ত।

নৈকট্য – সুশান্ত সেন

শব্দহীন এ নৈকট্য কিসের বন্ধন দিয়ে ঘেরা
বিচার করেছি চুলচেরা
সব শেষে কি থেকেছে প্রেমের অমোঘ এক বাণী
নিয়ত আসবে কাছে ,কাছে টানা হাত’ই দু – খানি
হানাহানি স্তব্ধ হবে
বিশ্বপ্রেম জাগরিত হবে
ভ্রাতৃত্ব বন্ধন এসে দ্বারপ্রান্তে দাঁড়াবে নীরবে।

নেই – সুশান্ত সেন

বর্ণমালায় পাই না খুঁজে ভাব প্রকাশের ভাষা
মনের মাঝে বাড়তে থাকে অনন্ত পিপাসা
বিচ্ছুরিত চাঁদের আলো দেখা দূরের থেকে
পথটি ভরা কাঁকর দিয়ে যাচ্ছে এঁকেবেঁকে।
বাঁশি বাজায় সুরটি শুনি, উদাস হয়ে যাই
পারছি নাতো জ্বালিয়ে দিতে আঁধারে রোশনাই।
প্রকাশ করার ভাষা যেন অধরা এক চাঁদ
মনের মাঝে ঝরায় বাদল, মনেই গড়ে বাঁধ ,
নীল আকাশে মাদল বাজে আসে চলার ডাক
স্তব্ধ থাকে কালি কলম কল্পনা নির্বাক ।

ঘর – সুশান্ত সেন

ঘরের ভেতরে থাকে ঘর
মনের গহনে অন্য মন
কে যেন চায় সাজাতে ঘর
সর্বক্ষণ করে জ্বালাতন।

কত আশা কত ভালবাসা
ঘরটাকে নাড়ানাড়ি করে
সাজানো গোছানো সারাক্ষণ
বদলানো দক্ষিণে উত্তরে।

মনের ভেতর এক মন
কি এক অতৃপ্তি নিয়ে থাকে
প্রশ্ন করে নিত্য হয়রান
করে চলে কেন যে আমাকে!

এই সব ভাঙাগড়া নিয়ে
জীবনটা বেজায় জাগ্রত
থাকি আমি সেই অপেক্ষায়
সময় আসবে মনোমত

মানুষটা – সুশান্ত সেন

মানুষটা ছিল খুব সস্তা
রেজগী তে যেন ভরা বস্তা
দু হাজার নোট চোখে দেখেনি
টাকার মার প্যাঁচ শেখেনি।

দিন আনি দিন খাই করেই
জীবনের চাকা তার ঘোরেই
তার মাঝে ছিল তার সংসার
নিত্যই চাহিদা ও হাহাকার।

মানুষ টি জানে শুধু জনতা
ভিড়, ঘানিটানা, সমতা
ক্লেশ ভরা জীবন টা টেনে
সব দাবি নিত সে মেনে।

সুশান্ত সেন | Susanta Sen

Bengali Story 2022 | জয়ন্ত কুমার সরকার | গল্পগুচ্ছ ২০২২

Fathers Day History | পিতৃ দিবসের ইতিহাস ও বাঙালি আবেগ | 2023

Travel Story 2022 | আমার বেড়ানো | পণ্ডিচেরী | মহাবলীপূরম | তিরুপতিধাম | কন্যাকুমারী

Top Bengali Article 2022 | বসন্ত উৎসব | প্রবন্ধ ২০২২

Shabdodweep Web Magazine | Bangla Kabita Words | Susanta Sen

Bangla Kabita Words play a pivotal role in the world of Bengali Poetry. These words are more than just a medium of expression; they carry the essence of a rich cultural heritage that has been passed down through generations. From ancient rhymes to Adhunik Bangla Kabita (modern Bengali poetry), Bengali Literature has continually evolved, and today, the legacy continues to thrive in the works of contemporary poets. One such platform that celebrates this literary tradition is Shabdodweep Web Magazine, which publishes a variety of Bangla Kobita (Bengali poems) that resonate deeply with readers.

In this article, we will explore the significance of Bangla Kabita Words, the evolution of Bengali poetry, and how writers like Susanta Sen are contributing to this ever-growing field. Additionally, we will discuss how Shabdodweep Web Magazine offers a space for modern Bengali Literature, promoting both traditional and new forms of Bangla Kobita.

What Are Bangla Kabita Words?

Bangla Kabita Words refer to the words used in Bangla Kobita (Bengali poetry) that evoke emotions, paint vivid imagery, and create a lasting impact on the reader. These words are carefully chosen by poets to express complex ideas and feelings, often linking the past with the present. Bengali Poetry has always had a rich vocabulary, rooted in the cultural and historical context of Bengal.

These words are not just linguistic elements but are woven into the fabric of Bengali Literature, which has evolved through centuries, embracing various poetic forms. From Adhunik Bangla Kabita to traditional styles, Bangla Kabita Words reflect the diversity and depth of Bengali literature. Poets use these words to express the nuances of human emotions, social realities, and universal themes that are relevant across time.

The Evolution of Bengali Poetry

Bengali Literature has a long and illustrious history, with Bengali Poetry at its heart. Over the years, it has evolved to reflect the changing socio-political landscape, the development of language, and the personal experiences of poets. The earliest forms of Bangla Kobita were often written in classical forms, using highly structured meter and rhyme. These early works were deeply influenced by religious and philosophical themes, especially during the Bhakti and Reformation periods.

However, with the advent of modernism in the 20th century, Adhunik Bangla Kabita emerged as a significant genre. This period marked a departure from traditional forms and a move toward free verse, experimental structures, and a focus on individual expression. Poets like Rabindranath Tagore, Kazi Nazrul Islam, and Jibanananda Das became the pioneers of modern Bengali poetry, and their influence can still be seen in contemporary Bangla Kobita.

Today, Bangla Kabita Words are used in various styles, ranging from free verse to structured poetry, and continue to explore a wide array of themes—from personal introspection to socio-political issues. The poets of the new era are adding new dimensions to Bengali Poetry, making it accessible to a global audience while staying rooted in Bengali traditions.

Shabdodweep Web Magazine: A Platform for Modern Bengali Poetry

Shabdodweep Web Magazine is a prominent platform that publishes contemporary Bangla Kobita, showcasing the work of both emerging and established poets. The magazine plays an essential role in promoting Bengali Poetry, offering a space for new voices and innovative styles.

One of the poets featured regularly on Shabdodweep is Susanta Sen, a distinguished name in the world of modern Bengali poetry. Susanta Sen’s works are deeply introspective and explore the complexities of human relationships, personal growth, and societal change. His poetry often delves into the emotional and psychological aspects of life, using Bangla Kabita Words that are simple yet profound, connecting deeply with readers.

Shabdodweep Web Magazine provides a platform for poets like Susanta Sen to share their works, enriching the world of Bengali Literature. The magazine curates a collection of Adhunik Bangla Kabita, reflecting the diversity of themes that contemporary Bengali poets address, from love and loss to identity and social justice.

Why Bangla Kabita Words Matter in Bengali Literature

The significance of Bangla Kabita Words lies in their ability to communicate complex emotions and ideas in a way that resonates deeply with the reader. In Bengali Poetry, every word carries weight, as it is crafted with precision to evoke a specific image or feeling. Whether it’s the melancholy of a sunset or the joy of a childhood memory, Bangla Kabita Words have the power to transport readers to another world.

Bengali Literature has always had a profound influence on the cultural landscape of Bengal and beyond. Through poetry, the essence of the Bengali language and culture is preserved, while also adapting to the changing times. Bangla Kabita Words play an essential role in this process, as they are used by poets to explore the deep emotional and intellectual layers of human existence.

By embracing both traditional and modern forms, Bangla Kobita continues to evolve, allowing poets to address contemporary issues while maintaining the timeless beauty of the Bengali language. As Shabdodweep Web Magazine continues to publish a wide range of poems, it helps preserve the legacy of Bengali Poetry while nurturing new talent.

FAQ on Bangla Kabita Words

Here are some common questions about Bangla Kabita Words and how they relate to Bengali Literature, especially on Shabdodweep Web Magazine:

1. What are Bangla Kabita Words?
   Bangla Kabita Words are the carefully chosen words in Bengali poetry that convey deep emotions, ideas, and themes. These words create an emotional connection with readers and reflect the cultural and historical context of Bengali literature.
   
2. How does Shabdodweep Web Magazine contribute to Bengali Poetry?
   Shabdodweep Web Magazine plays a crucial role in promoting modern Bengali Poetry by publishing contemporary works of both emerging and established poets. It is a platform where poets like Susanta Sen share their emotional and thought-provoking poems.
   
3. What is Adhunik Bangla Kabita?
   Adhunik Bangla Kabita refers to modern Bengali poetry that emerged in the 20th century. It is characterized by free verse, experimentation with form, and a focus on individual expression, often reflecting contemporary social and personal issues.
   
4. Why are Bangla Kabita Words important in Bengali Literature?
   Bangla Kabita Words are significant because they capture the essence of human emotions and experiences. These words, when crafted into poems, create a lasting impact on readers, preserving the richness of Bengali Literature while adapting to modern sensibilities.
   
5. Can I read Bangla Kabita on Shabdodweep Web Magazine?
   Yes, Shabdodweep Web Magazine regularly publishes a variety of Bangla Kobita, including works by poets like Susanta Sen. It is a great platform to explore modern Bengali Poetry and discover new voices in the world of Bengali Literature.

Conclusion

Bangla Kabita Words are more than just elements of language; they are the soul of Bengali Poetry, capturing the depth of human experience. Through platforms like Shabdodweep Web Magazine, modern poets continue to contribute to the ever-evolving landscape of Bengali Literature. Whether you are a longtime fan of Bengali Poetry or a newcomer, the beauty of Bangla Kobita awaits you in every poem.

---

Sabuj Basinda | Follow our youtube channel – Sabuj Basinda Studio