Bengali Poetry 2023 | বিকাশ চন্দ | কবিতাগুচ্ছ ২০২৩

Sharing Is Caring:
BENGALI POETRY

বিকাশ চন্দ – সূচিপত্র [Bengali Poetry]

পাথুরে হৃদয়ে মেলে – বিকাশ চন্দ

চিতা ছুঁয়ে উঠে আসে আগুন হলকা
ক’দিন পরে চিৎ শয়ানে মাটি
সকল অলক্ষ্যে জাতি ধর্ম জলের প্রবাহ
আশ্চর্য অন্ধকারে নির্মল বাতাসে
কি খুঁজি অবিন্যস্ত সময়ে
কেউ আছো কি— কেউ আছো
যদি কেউ জ্ঞান চক্ষু দেবে

কেউ কেউ হেসেছিল আশ্চর্য অনিবার্যতায়
হয়তো দেখেছিল কেউ আলোর পুরুষ
অদেখা হাজারো পূর্ব পুরুষ কোথায়
ক্ষয়িষ্ণু সময়ে দেখি
চেয়ে আছেন মা বাবা
দু’চোখে আলোর দর্শনে
নির্বিবাদী ক্ষমাসুন্দর অবয়ব

অস্পৃশ্য সময়ে ও বিনীত প্রার্থনা বোঝে
কোনও একদিন নির্মম হত্যাকারী
সেও জানে বোধোদয় হ’লে সবাই হবেনা
সবাই হয়না কখনো বাল্মিকী
ক্ষয়ে যাওয়া সময়ে ক্রমাগত কখনো
হয়তো বা পাথুরে হৃদয়ে মেলে প্রাণের দর্শন

অভিঘাত – বিকাশ চন্দ

গাছেদের বল্কল আড়ালে দগ্ধ শরীর জমিন
কতবার উড়িয়েছো আগাছা নীরব অপমানে
মা বলে কেউ ডাকলে সব পাপ ধুয়ে যেতো
নিবিড় আড়ালে ভিজে গেছে অন্তর্গত চোখের জলে

অচেনা বহু শরীরের সাথে কখন নিমগ্ন মানুষ
আরও কত লক্ষ রয়েছে জীর্ণ অশনি শিবিরে
নির্বিষ চতুরালি খেলা জানে রাতের মালিকানা
হাঁটি হাঁটি পা পা এগোলে আলো জ্বেলে
এপারে অনিদ্রা আহার ওপারে কাঁটা তার

আনাড়ি দুপুরে অসহ্য জ্বলনে জ্বলে মুখ ছবি
দু’হাতের বাজুতে বাঁধা অক্ষয় জীবন অভিমানে
আমার চেনা ঘরে অক্ষয় আখর মালার শ্বাস
দরজার আড়ালে সন্দিগ্ধ ফাটলে হিস হিস শব্দ
আর কতটা বিষ ঢালবে ধমনি শোণিতে
শরীর জুড়ে আছে গত রাতের কয়েকটা পশুর গরল
অশ্রুময় চোখে ঠিকরে পড়ে আগুন অভিঘাত

নীল নীলিমার স্বরে – বিকাশ চন্দ

লুপ্ত সময় ফিরে গেছে আলো পথে ঘুমের ঘরে
প্রেম পসরা বিকি কিনি জানেন তিনি অন্তর্যামী,
সমুদ্র নীল উত্তাল উল্লাস ভেজা শরীর বালুচরে
নিজের ভেতর সোমরস স্রোত প্রাণে অন্তর্গামী।

তুমিও অবাক তাকিয়ে জানি পলক হীন আঁখি
সে ছিল আমার উচ্ছন্ন জীবন চলা নিসর্গ লোকে,
ঘাস গাছ ছায়া ফুলে খোঁজা নিজস্ব বোধে ফাঁকি
এখন কাটে রাত বিরেতে আর্তি শোনা বিশ্বলোকে।

সোহাগ রাতের জোনাকি বোঝেনি নিশীথ আঁধার
পাখির মতো আনন্দ ডাক শুনিনি তেমন আগে,
শূন্য আকাশে এখন বোধ হয় আলোক বর্ষ সাঁতার
খোঁজেও কি আদম রাত কে কেমন রাত জাগে !

নির্বান্ধব আলো অক্ষর ভালোবাসো মুক্ত পরিসরে
চির বসন্ত খোঁজে মায়া সে টান নীল নীলিমার স্বরে।

অদৃশ্য স্রোতের শরীরে – বিকাশ চন্দ

বহুবার ঘিরে ধরেছে উদোম বুকের ছন্নছাড়া কালো দাগ
ভয়ে কাঁপে পাঁজর জোড়া রক্ত কমল শূন্যে মেলেছে ডানা
গর্ভ পরব কাল জানে ধ্রুব আলো রয়েছে নীলপদ্ম সুখে
মহাজাগতিক ব্রত যাপন দেখেছে হিমকাল অর্ধনারীশ্বর
চতুর যোগীরাজ জানে যজ্ঞ হবি জাদু জোব্বা পোড়ায়

শূন্য সময়ের হাওয়ায় প্রতিবিম্ব জেগে থাকে অমল ছায়া
অকারণে কেউ কেউ ছড়িয়েছিল বাতাসে হেমলক
প্রাচীন মূর্তির চোখে মণিময় রক্তিম রোশনাই
এভাবেই কপালে ছুঁয়েছে ঠোঁট রাত স্বর্গ থেকে নক্ষত্র
আকাশ পৃথিবীর মাঝে ঝুলে থাকে আলোর পুষ্পধনু

ভেজা মাঠ শালুক কোঁচড় উবুড় গৌরী পট ছুঁয়ে অজুহাত
কুর্চি ফুলের বাগান মাঠের আলে কলমিলতা শাড়ির উড়ান
তবুও বেঁচে থাকা মাঠ খসড়ায় আদি ক্ষেত্রপাল জানে
অদৃশ্য স্রোতের শরীরে শরীর আদি পিতা আদি মাতা
অজাতক রক্তকরবী জানে আদিম প্রাণের মগ্ন সংলাপ

হিম অধ্যায় – বিকাশ চন্দ

তুষার মানবের কথা শুনেছি শুনিনি তুষার মানবী কথা
এখন সভ্যতা খুঁজে ফেরে রমণীয় অক্ষর অনুধ্যান
শব্দের শরীর জুড়ে নেমে আসে প্লাজমা ভিজে যায় নূপুর
লাল দোপাটি খুঁজতে কেন যে খুবলে নেয় লজ্জা কাঁচুলি
নম্র স্তনেতো জীবন অমৃত বিষ ভস্ম ওড়াচ্ছে চোখের নোনা জল

আঙুলের ডোগাতে প্রতিদিনই নাচে বিলাসী প্রত্ন প্রতীক
নির্মাণে কতবার কতজনের ছিঁড়ে ফেলে লজ্জা বস্ত্র
তবুও হিরণ্ময় সময় নিভু নিভু চোখে জ্বলে অসহ্য নীল তারা
আত্মহারা প্রজাপতি ওড়া উড়ি পুরুষ প্রকৃতি ভূমি স্পর্শ টান
তারও রঙিন পাখা ছিঁড়ে ফেলে মর্মান্তিক শব্দ শবের আর্তনাদ

অনাদি চরাচর সকল দুয়ারে সাহসী সংলাপ তক্ষকের
হাজারো রূপকথার কাল বোঝে না ঈশ্বর ও শিক্ষা চত্বর
প্রতিদিনের সূর্যাস্ত হিসেব হীন নিমগ্ন বেলায় পদ্মভুক বিষাদ
বারকোসে গলে পড়ে রাতের মতো আরক্ত সকল সম্মোহন
কোথায় খুঁজি আপনি-ও বলুন নির্বেদ ইতিকথায় হিম অধ্যায়

অনুকরণ [Bengali Poetry]

শস্যেরা কথা বলে নিশ্চুপ হেমন্তের সকাল
অনিবার্য সময় জানে সীমানা হীন জমিজমা
ছড়িয়ে ছিটিয়ে নিরাশ্রয় ঠিকানায়
অজস্র যন্ত্রণা ছিঁড়ে ফেলে লজ্জা বস্ত্র
পায়ের গোড়ালি থেকে জঙ্ঘা দেশ
ঘিরে আছে কালশিটে দাগগুলো
নিরাশ্রিতের শোকার্ত সর্বনাশ জানে পাথর প্রতিমা
নবান্ন সময়ে জহ্লাদের চোখে আগুন উল্লাস

চেনা শব্দেরা ভাষা বদলের গল্প বোঝে না
চেনা পথে জাল বোনে মাকড়সা সংসারী
চেনা মুখ বদলে যাচ্ছে বোঝে সকল সাপ
চেনা দুঃখগুলো প্রতিদিন প্রতিবাদী চোখের আগুন
চেনা সময়ে রক্তবীজ আবারও আগলে অকাল রক্তক্ষরণ

পৃথিবী জানে মাটির থেকে শুষে নেয় শেকড় প্রাণ রস
বিশ্বাসী বাকল জড়িয়ে আজীবন পিতৃব্য গাছের শরীর
ভবঘুরে বয়স কখনো শৈশব খুঁজে ফেরে
আর কতকাল বেঁচে থাকে জীবন অশুভ চিহ্ন এঁকে
শরীরী খোলোসের আড়ালে শুধুই মানুষের অনুকরণ

সনির্বন্ধ আলোয় নক্ষত্র ফুল [Bengali Poetry]

বুকের পাঁজর ভেঙে ডানা মেলছিল
এসব দেখেছিল গভীর মমতায়
মানুষের সন্তান সন্ততি খুঁজছিল সহাবস্থান
সশরীরী হাড় মাংস ছুঁয়েছিল গোপন রক্ত কথা
অসম্ভব প্রত্যাশা খুঁজেছিল অন্তত একটা শান্ত দিন
কেবলই প্রগলভতা গিলে নিচ্ছিল
স্মৃতি গর্ভের গোপন জন্মকথা

শৈশব মাটির ঘ্রাণ খুঁজেছিলাম আমার শরীরে
শরীরের রস টেনে বহুকাল ঠায় অনড় ভবিষ্যৎ
একাকী দাঁড়িয়ে সব ক’জন ঘিরে আছে স্বচ্ছতার জাল
চেনা পথে আমার প্রবৃত্তি টানে নিছক অস্তিত্ব
রাজা রানীর প্রতিশ্রুতি বোঝে বিষাদের কাল
কেবল পলাতক কাল হাঁটে আমার ছায়ায়
ধ্রুব সত্য বোঝে না আমার অলৌকিক আত্মা
অবিন্যস্ত শরীরে যৌবন বোঝেনি প্রেমের স্বরূপ

রূপসী ফসলে বিমর্ষ ঋতু একা বাঁচে উষ্ণতায়
সকল আস্তরণ ছিঁড়ে ফেলে বিনম্র আলোর হৃদয়
জন্ম মৃত্যুর সহাবস্থানে ফোটে সনির্বন্ধ আলোর নক্ষত্র ফুল

ভূমি সন্তানের গোত্র [Bengali Poetry]

শরীর তো সৌধ নয় হারিয়ে যাবে
নিছক নরক উল্লাসে
নিরবলম্ব মানুষ আছে ঠায় দাঁড়িয়ে
খুব চেনা সপ্তর্ষি নিজস্ব উজ্জ্বলতায়
কেবলই সৃষ্টি জানে মোহময় প্রেম পর্ব
তবুও কৃত্রিম ধারণা পুঁতে দেয় কানে কানে বীজ মন্ত্র
পাথরে ঈশ্বর জাগে অনন্তকাল
না চেনা হৃদয়ের স্পন্দন বাঁধে মানুষের সেতু
কণ্ঠনালি ছিঁড়ে কারা বন্ধ করে দিল কণ্ঠ স্বর
নাম হীন দেহলীলা দিব্যি বোঝে বোবা নীলাচল

তুলে আনে গর্ভ কেশর আদিম স্বর্গের রঙ বর্ণ
রক্ত মাংসের ভেতরে কোথায় থাকে অরণ্য ভ্রমণ
সারা রাত জুড়ে হাওয়ায় ভাসে পাখির ডানার শব্দ
ঠান্ডা হাওয়ার বুকে জেগে ওঠে চেনা কথা গান
আগুন রঙ পেরিয়ে ছুঁয়ে যায় মানুষের জমাট বুকের উত্তাপ
বিকৃত সময়ে সকল কথাই হয়ে যায় স্মৃতি ময়
ঋষি কাল বোঝে না জন্ম মৃত্যু মাটির শরীর
মানুষ ছাড়া কী-বা হ’তে পারে ভূমি সন্তানের গোত্র

অনন্ত সহবাস [Bengali Poetry]

সকল নদীর দূরত্ব ভাঙে নৌকো
আজীবন বিমূর্ত সময় খোঁজে মোহনার মাঝি
ভাঙা আয়নায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আত্মজনের মুখ
আমার শরীরের প্রত্যঙ্গে কোথায় পূর্ব পুরুষের বাস
কোনও ছাপ নেই তবুও বাতাসে দীর্ঘ নিঃশ্বাস
উদ্বাস্তু সংসারে খাঁচা বন্দী জীবন
সংসারী সুরে বাজে একতারা দোতারা যৌবনে
আশ্চর্য উজানে আমাদের সংসারী স্নান

মনমরা সময়ে ডেকেছিল দু’টো হরিণী চোখ
নোনা চাতরে গন্ধ মেখেছে শরীর কেয়াফুল নেশা
উঁকিমেরে দুটো ঠোঁট চেটে দেয় সাদা জিভ
শরীর ঢেকে দেয় হঠাৎই নীল কৃষ্ণ ছায়া
মায়াতরু ডালে শাখায় পাতায় কোন পাখি বলে শ্রীরাধা
ঘর বাঁধার ছলে উচ্ছন্ন বাসর ঘর
শরীর জুড়ে অন্ধকার কখন আলো ফোটে
হাতের মুঠোয় পূর্ণিমা চাঁদ গলে পড়ে জলে

নদী জানে নারী জানে বেহাল নাবিক সেও
নিরুপায় জলের শব্দে ভেসে যায় ছন্নছাড়া জীবন
কলাই থালায় মোটা লাল ভাত ধোঁয়া মাখে ক্ষিদে
ভাঙা ঘরে হলুদ মাখে হাত আঁচলে অনন্ত সহবাস

বিষণ্ণ আত্মার গান [Bengali Poetry]

নীল রঙের আকাশ ছায়ায় গোপন আত্মহত্যা
গান্ধীমূর্তির পাদদেশে ছড়িয়ে শব্দ অক্ষর দানা
খুঁটে খাচ্ছে বিষ পিঁপড়ে শরীর শিরা স্বপ্ন সুখ
শরীরের উন্মুক্ত পরিসরে নখের আঁচড়
শোভন সমাজের সঙ্গীতের মূর্ছনাগুলি
কেবলই কি দাঁড়িয়ে রৈখিক জীবন

ক্রমাগত টেনে নিচ্ছে কুশলী চিত্রপটের বেসাতি
মোবাইলের ছবিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে শাসক তর্পণ
গৃহহীন পরিসর চুপিসারে হারাবে অনন্ত রাতে
বশীকরণের কাজলে দুয়ারে দাঁড়িয়ে সংরক্ষণ কাল
সম্পন্ন শব্দেরা বহুগামী রাতের প্রহর গোনে
কেউ কেউ তরল সংজ্ঞায় অভিজাত শ্রেণির লম্বা হাত
ছুঁয়ে যায় নিটোল বুকের আরেকটি নিস্পন্দিত শব্দ
ধর্মতলায় ঘুরে ফেরে ধর্ম কথা বড় চরিত্রহীন

অবিন্যস্ত নীলাকাশে তখন গোধূলি ধুনির লাল
অবসাদ জানে দশ আঙুলের ফাঁকে গলে যায় প্রতি কথা
পোষা কাপালিক ভুলে গেছে পাপ পুণ্যের সিদ্ধি
পরাজিত ঈশ্বর শক্তি শোনে বিষণ্ণ আত্মার গান

বসন্ত পঞ্চমী বাতাসে [Bengali Poetry]

ঠোঁটের ছায়ায় হাসে বাসন্তিক আলো
সকল সত্ত্বার ভেতরে কেউ কেউ একাকী
বহুত্বের সিঁড়ি ভাঙে আলো হীন লাল চাঁদ
এভাবেই জড়িয়ে আছি দুবাহু জানে প্রিয়জন
সকল সুষমা বুকে আগলে মুহূর্তের গান
সময়ের নির্ভার চুম্বন ফুলে পরাগে
সুন্দরতম আলো পথ জানে পবিত্র অন্তর

আজো সৌভাগ্যের স্রোত প্রেমের বাঁধনে শিব জটাজালে
স্বপ্নমোহ ভালোবাসায় অন্তর্হিত অহংকারী ক্রোধ
জল ফলে ফুলে ঋতুচক্রে বসন্ত উদাসী সাজ
ব্যাধ ও ভুলেছে তার সংসারী ধারাপাত
তারও দুঃখ ছিল একপেশে জীবিকা বিষাদ
কান পেতে শোনে কণ্ঠ প্রিয় পাখিদের কোমল আলাপ
বুকে ভাসে নদী মাটি জলের স্বাভাবিক স্বরলিপি
হেমন্ত শীত বসন্ত পঞ্চমী বাতাসে নীরব সুরের দুপুর

রাধা প্রেম হলুদ বসন্ত বুকে [Bengali Poetry]

দু’বাহু জড়ালে বুকে ফেরে হারানিধি আত্মা
মানুষের গায়ের গন্ধে ফোটে পলাশ জারুল
সমস্ত ভাবনারা চেনে শিউলি বকুল শাপলা শালুক
তবুও পূর্ণিমা রাত চমকায় কুঠারের ধারালো ঘায়ে
অন্ধকার ঝাঁঝরা করে আবার মন ফকিরা ঘর
দোয়েল পাপিয়া বৌ কথা কও খোঁজে বসন্ত দুপুর

এপার ওপার বুকের ভেতর জল স্তম্ভের উচ্ছ্বাস
উদাস শিশিরকণা মুক্তা বিন্দু দুধ ধান শীষে
হেমন্ত হিমে ভালোবাসা ভোরের শীতের স্নান
উষ্ণতা ভেতরে স্পর্শ সুখ পরস্পর বেঁধেছে পরাণ
দু’পাশে দীর্ঘ সবুজ প্রাচীর সূর্য সিঁড়ি শোনে স্তব গান
দুধে ভাতে মাছে শাকে বসন্ত বরণী মুখ ডাকে আমন্ত্রণে

পাথরে পাথরে চকমকি খেলে রাতে আগুন আখর
আত্ম শপথে নিমের হাওয়ায় দোলে সূর্য বলয়
আনন্দ হৃদয়ে কতনা ধ্বনিময় সুর সালংকারা
দেহ বিনিময় জানে সাঁঝবাতি ভোরের শুকতারা
সবুজ পাখি জানে ওড়া উড়ি হাহাকার শুকনো পাতায়
রাধাপ্রেম হলুদ বসন্ত বুকে আবীর কুঙ্কুমে চন্দন ঘ্রাণ

ফুলমতি ধানের থোড় [Bengali Poetry]

রাতের জোনাকি দিনের বসন্ত অজস্র ফুলে চমৎকার
ব্রতকথা জড়িয়ে দিব্যি কতকাল অস্ফুট মর্ম মূলে
সে সব গানেদের কালাতীত কান্না সর্বহারা শ্লোকে
হয়তো অপেক্ষায় কপালে চোখে মুখে অজস্র চুম্বন রেখা

গাছেরা নেচেছে জল ছায়ায় মজা পুকুরের জলে
লতা গুল্ম বৃক্ষের জালে বৃদ্ধ বট জড়িয়ে প্রাচীন দেয়াল
হঠাৎই আকাশ মেখেছে গেরুয়া গোধূলি বসন্ত আলো
অন্ধরাতের বাসনা বোঝেনি কেমন অর্ঘ্য কোন বেদী মূলে
স্বর্ণমারীচ রঙে লুকোচুরি চাঁদ জাগে বিনিদ্র কোজাগরী

উদয়ন পথ খুঁজেছিল কোন দিন প্রণয় তাপস
আলতা রঙে ভিজিয়েছে সকল বুকের নোনা চাতর
সেই আমি এই আমি ভালোবাসি চাতকী তৃষ্ণা কাতর
অজস্র অচেনা শব্দ তবু যেন চেনা কথা স্বর
পরকীয়া সুখ আসে যায় ছুঁয়ে যায় পুরুষ ধর্মবোধ

কে কার জনম মরণ ফেলে রাখে আড়ালে আবডালে
রিপুগন্ধহীন শব্দেরা সুরে শ্বাসে ঘ্রাণে মধুরেণু টানে
হয়তবা ফুলমতি ধানের থোড় আছে ভিন গাঁয়ে

শরীরে বনের ফাগুন [Bengali Poetry]

কেউ স্বর্গ যানে চেপে আর দেখেনি নিষিদ্ধ উদ্যান
পাখি ফুল কুঁড়ি জানে নিষেধ কালের ফাগুয়ার রঙ
হিসেব মেলে না শেষ জন্মের তবু বলে ভালোবাসো
কালহীন মদন পর্ব পুড়ে যায় ঝলসে যায় মিলন পরব
শরীরে নেই চঞ্চল জল খেলা কপালে নেই শীতল হাত
অগোচরে শিবনেত্র আগুন পড়ে জন্ম ঠিকুজী প্রেম পত্রপুট

মাটির তলায় শেকড় বেছানো শরীর বেঁধেছে বৃক্ষপিতা
বৃক্ষমাতা ও জানে বল্কল ছিঁড়ে বাঁচে কুঁড়ি ফুল পাতার দেহ
অসম্পূর্ণ ফুলেরা খসে পড়ে রক্তহীন হা জন্ম কুণ্ডলী
সনাতন বাঘিনী থাবার ছাপ দেখে ত্রিলোচন
বুকে তৃষ্ণা আর শরীর জুড়ে বসন্ত রঙের কিরণ

রাধা রঙে উছলে ওঠে আবীর কোমল পায়ে নুয়ে
মায়া শব্দ মহাকাশ ছুঁয়ে উত্তাল সাত সমুদ্র তেরো নদী
পৃথিবীর সকল মোহনার এদিক ওদিক প্রাণময় জলের ঈশ্বর
আনন্দ সম্মিলনে আজও উদ্বাহু নদীয়া নাগর
ঘর ছাড়া মানুষের সাথে তবুও মেশে ঘরে ফেরা পাখি গান
পীত বসন্ত পুনর্জন্ম জানে শরীরে বনের ফাগুন

আত্মার প্রতীতি [Bengali Poetry]

নৃশংস আওয়াজ তুলেছে অচেনা প্রতিকৃতি
অনৃত বিশীর্ণ কথারা উড়ে যায় যুগান্তর বাঁকে,
দু’হাতে ছুঁয়ে আছি সমর্পিত স্থলপদ্ম
সুনীল শূন্যতায় শব্দময় দিন ফাঁকা মাঠ শস্য হীন,
জমাট বাঁধা মেঘ বৃষ্টি ঘূর্ণাবর্ত চুপিসারে ছুঁয়ে গেছে জন্ম দেশ
অসহায় বেপথু রাজা-রানি স্তব্ধবাক দেখেছে ধুন্ধুমার কাণ্ড,
দীর্ঘশ্বাসের ঝড়ে উড়ে যাচ্ছে আমার লুকোনো শরীরী প্রপাত
অভ্যস্ত ছিলাম না মুখের আড়ালে নিরুত্তর সংলাপে
ভেসেছে আকাশগঙ্গায় ছিন্নমূল শরীরী নিলাম।

জিঘাংসু শোকে মৌন তপস্যার নীল ব্রত
স্বপ্নিনী সেই আগুন পাখি মেশে আকাশ আগুনে,
কোন আত্মায় শরীর হীনতা ভালোবাসা কথা বলে
শরমে শাসনে কৃত্রিম শপথে ভাঙে পরমহংস অভিঘাত।

মাটিতে ফেলে গেছে বন্ধ্যা সময় অলৌকিক বন্য বাসর
প্রবাহে টেনেছে গ্রাম শহর অন্তরে বাহিরে পতিতা বাসরে,
ধুয়ে মুছে আবারও বংশ পরিচয় বাঁচে শরীর হীনতায়
শরীরে হারায় শরীর অধরা শাসন রীতি
অবাক ঈশ্বরী প্রথম পাপ বোঝে না আত্মার প্রতীতি।

দৃশ্যায়ন [Bengali Poetry]

অন্ধকার ভাঙে প্রতিদিন সংসারী উঠোনের বিবর্ণ ছায়া
জেগেছিল উজ্জীবন বিনষ্ট কুঁড়ির জন্ম যন্ত্রণায়,
গোধূলি সময়ের সচকিত স্তব আর আজানের সুর
অন্য কোথাও কাঁসর ঘণ্টা শাঁখের শব্দ শ্রীখোল কীর্তন,
ভেতরে আবহমান নশ্বর ঘরে ঈশ্বর ভ্রমণ
ষড়রিপু ঘিরে আছে ছয় ঋতুর শরীরে।

বহমান সংসার সকল বাঁচে আশ্বাসে মনের ভেতরে
কখন লোপাট হয়ে গেছে বোধিবৃক্ষের নিজস্ব গান,
ইচ্ছামতীর নীল জলে হাহাকার ফেরে মায়া বিসর্জনে
রাতের সে পাথুরে বাহুডোর বাঁধে অতল অন্ধকার,
আড়ালে আনত নির্মল হৃদয় ভরণী নিরুত্তর
কেবলই কথার ছলে জীবন জড়িয়ে বাঁচি।

সজল সময় বোঝে কোথাও জাগে অন্তহীন মরূদ্যান
নরকের বহুমুখ জেগে ফিরে আসা পথে,
আগলে আছে দরজা চৌকাঠ সংসারী শ্যাওলা আস্তরণ
রমণী রহস্য বোঝে চাঁদের কলা কুশলী সানন্দ প্রেম,
অচৈতন্য শরীরের খাঁজে জলে প্রদীপের আলো
অনাবৃত যাপন কাল জানে প্রতিদিন প্রেমের দৃশ্যায়ন।

অক্ষর নীলে পোড়ে স্বরলিপি [Bengali Poetry]

চিবুক ছুঁয়ে তৃতীয় লিঙ্গ এখন জেগেছে সংরাগে
জ্যোতির্লিঙ্গ গৌরী পট ঘিরে আছে ত্রিলোকে দীপান্বিতা,
পায়ের ছন্দে মঞ্জীর বোঝে না শরীরী অন্ধকার
মানুষের পৃথিবী জানে হৃদয়ে জাগে তৃতীয় দুহিতা।

অর্চনা কেবলই খোঁজে সমূহ আত্মদর্শন আত্মার অনুতাপ
লৌকিক বন্দনা হিরন্ময় সংসার বোঝে আর জানে স্থপতি,
আমরা সবাই আটকে হার্দিক বন্ধনে দেব দেহে মন্দিরে
বীণাপাণি শরীরে অক্ষরে নিশিপদ্মের ঘ্রাণ।

কল্পতরুর সন্ধানী চোখ জানে চতুর্দিকের হিংসা সান্ত্বনা খোঁজে
চন্দ্রাবলী চাঁদের চাঁদোয়া নীলে অবধারিত স্নিগ্ধ চন্দ্রকলা,
তবুও বৃক্ষ শরীরে ডালে পাতায় রক্ত মুখি ঢেউ
বাকল বদলেও অসাধ্য চরিত্র হনন কোথাও বা প্রজাপতি মরণ।
তর্জনী উঠলেই অপরাধী দাঁড়ায় করজোড়ে মানুষ প্রবৃত্তি
অস্থির জঠর তলে জানে কারা কখন সৌভাগ্যশালী,
উন্মনা শিহরণ আত্মভ্রমে আগুনে পোড়ে রূপশালী
প্রতিরাতে শিহরিত দংশনে অক্ষর নীলে পোড়ে স্বরলিপি।

রক্ত করবীর ইজেল [Bengali Poetry]

প্রচ্ছায়া জটিল হলে বাড়ে জীবনের ছায়া
আলেয়া টানে রাস্তা বদল চিৎকারে অচেনা কুকুর
না চেনা ঠাকুর দালানে নিয়ন্ত্রণে আত্মসুখী সব,
যতটা সততা ভক্তিতে ততটাই ভয়ানক যন্ত্রের যন্ত্রণা
ঘরে বাইরে হনন কালের ধ্বনি ছুঁয়েছে প্রতিধ্বনি
অবাধ্য চেহারায় যুবকও রক্ত ঋণ বোঝে।

আত্মসুখী পায়রা জানে উষ্ণ জল রক্ত প্রপাত
সকাল দুপুর সন্ধ্যা রাত্রি সকল হৃদয় কথা,
ইচ্ছে করে পিঠে গজিয়ে উঠুক দুটো আশ্চর্য ডানা
না হয় থাকুক পক্ষীরাজের চারটে পা আকাশে বিলীন,
আসলে এসব নিয়ে অনেকটা বেশরম
সামাজিক মানুষই বাঁচে ভুল করে নিজস্ব তৃপ্তিতে,
মায়ের দু’হাত জুড়ে হলুদ মাখা আঁচলে
আমিও লুকোই মুখ নিশ্চিত আশ্রয়ে বিনীত ব্রততি
পুণ্যবান রাজন্য বর্গের ভ্রূকুটিতে লালসা সংরাগ।

উন্মাদ সময়ে রক্তাক্ত হৃদয়ে এফোঁড়ওফোঁড় চিহ্ন
তুমি চমকে উঠেছিলে আমার চোখের জলে রক্তের মিশেলে
বোধি ঝর্ণায় হৃদপিণ্ডে রক্ত করবীর ইজেল।

মানুষের হাসি মুখে [Bengali Poetry]

বুকে হাত রেখে শুনি মধ্য রাতের গান
থোকা থোকা লাল শরীর জুড়ে কাঁটার অসুখ
তবুও অন্তরঙ্গতায় জড়িয়ে চন্দনের ঘ্রাণ।

প্রবাসী উঠোনে এসেছে গ্রীষ্ম বর্ষা হেমন্ত শীত বসন্ত
নববর্ষের সালতামামি শুয়ে আছে বটের ছায়ায়
আমরা পরস্পর বড়ই আপনজন নীরন্ধ্র সময়ে
ফুল পাতা ঘাসে ঢাকা স্তব্ধ নিরীশ্বর
একাকী শূন্য মেঘ শুনেছিল সবুজের হাহাকার
মধ্য রাতের উষ্ণতায় বেজে গেছে গোপনে ইমন কল্যাণ।

অবেলায় জল মাটির স্বভাব ঘিরেছে জন্ম ঘর
এখনো অভিশাপে ঝলসে যায় মানুষের মগ্ন বিলাস
উড়ে আসে ঝড়ো পাখি সন্তানের শব্দ স্বর খোঁজে
আরও অনেক পাখি লাল নীল কালো সাদা প্রাণ ময়
অজ্ঞাত মমত্ববোধে ছোটে আশ্রয়ে আশ্রমে মন্দিরে
মানুষের হাসি মুখে পাখিদের স্বরলিপি নিজস্ব জবানবন্দি।

অক্ষরে রক্ত চন্দনের দাগ [Bengali Poetry]

বোধিবৃক্ষের পাতায় তখন নির্বিকল্প রোদ
গাছের শাখায় বাসায় পাখিদের খোলা জন্ম চোখ
গাছের গোঁড়ায় শেকড়ে জড়ানো পাথর
অনড় শরীরে নাকি সকল ব্রহ্মাণ্ড
রাত দিন এভাবেই চন্দ্রকলা অভিসার

মানিক পীর নাকি দয়াল ঠাকুর হয়তো বা আলোর ঈশ্বর
সকল রাতের নীলে একাকার মন্দির মসজিদ গীর্জা
মাঠ জ্যোৎস্না ঢুকে পড়েছে জঙ্গলে গ্রামে শহরে
কুঁড়ে ঘরে অনন্ত অক্ষর লুটোপুটি
তিথি নক্ষত্র গ্রহ ফের ছেঁড়েনি জন্ম নাভি গিঁট

নিজের ছায়ায় গণ্ডি কেটে লিখেছি বিবেক বৈরাগ্য
অধুনা অনিন্দ্য কাল বোঝে না অতীত ইচ্ছে কথা
পাথর প্রতিমার রঙে বর্তমানের স্থপতি
জানবে কি ভবিষ্যতের পড়শি প্রতিবেশী
রুদ্ধ কালের কথায় খসে পড়ে প্রাচীন আস্তরণ
গদ্যের কথায় কবিতার শব্দের নীচে চিহ্নহীন রেখা
অন্নহীন অজস্র মৃত্যুর অক্ষরে রক্ত চন্দনের দাগ

ভালো মানুষের আলো [Bengali Poetry]

প্রতিদিন শুনতে হয় ভাসান উৎসবের বাজনা
প্রতি ঘরে দীর্ঘশ্বাস টেনে রাখে অশৌচ কাল
হীরক চাতুরী বোঝে জীন যাদু গল্প
অন্ধকারের ফাটলে নেমে গেছে শিকড়
বুকে হাত রাখলে অক্ষর বুননের শব্দ
নড়ে ওঠে ঠোঁট অস্ফুট ভালোবাসায়
অনবরত বেজে চলেছে বেঢপ কসরতে ঝনঝনানি

ফুরফুরে বাতাসের মেজাজে উড়ে যাচ্ছে
ঝরে পড়া মূর্তির শরীরের ধুলো বালি মাটি
শরীরে রক্তের ঢেউ উঠলে ফাটলে সেঁধিয়ে যায়
ধমনী শিরা ছুঁয়ে দেখে জন্ম শেকড়
অভিন্ন সময়ের অভিমান ঘিরে আছে পরস্পর
সচকিত ঘাস মাটি গাছ ফুল পাখি
সকল মানুষ বোঝে শুখা দিনের ভয়

একরোখা উৎসবের গল্প বুনতে বুনতে হতবাক
রঙ ছুট খেত খামার জমি বাড়ি সংসার জীবন
কাচ ঘর থেকে রঙ ফোয়ারা মেজাজে বোঝেনি
চোখের তারায় তারায় ভালো মানুষের আলো ফুটছে

স্বর্গযান [Bengali Poetry]

ব্ল্যাক বোর্ড জুড়ে ভ্যাক্সিন বিজ্ঞপ্তি
রাতের আলোর শ্যামা পোকা
ঢুকে পড়েছে সকল সংসারে
অক্ষরহীন পাঠশালায় অঘোষিত অশৌচ কাল
ইতর কালের পাথর গড়াচ্ছে পথে ঘাটে
সকল নিষেধের পথে
পাঁচ তারা হোটেলের স্বপ্ন টালমাটাল
ইতিহাসের পাতার অক্ষরগুলো কত রক্ত ধোয়া
অক্সিজেন যোগানেও নাভিশ্বাস অকাল তিল তর্পণ
অগ্নিমূল্য পণ্য পেট্রোল ডিজেল
পুড়ে যাচ্ছে আগুন হীন চিতা শরীর

হেমন্তের ধান শীষে ঢুকে পড়েছে নবান্নের দুধ
কালো ত্রিপল ছাউনির তলায় আধপেটা ভাতঘুম
স্বপ্নহীন ঠোঁটে জোড়া শালিকের শিস
মাঠ ভর্তি সরষের হলুদ ফুল তিল ফুল
বুকের ভেতর লুটোপুটি দু’চোখে কান্না জড়ো
শুধু ঠোঁটের কোনায় এক চিলতে তিলে
সকল আত্মা ভরো

হাতে হাত ছিল ছাড়িনি একবার ও কেউ
তবুও স্বর্গযানগুলোতে ভেসে যায় পিচ্ছিল নীল রাত

পরম্পরা [Bengali Poetry]

দম ভর্তি হাওয়ায় ভাসছে বুকের আখর মালা
অযুত হাতের সারি ঘিরে আছে অফুরন্ত আলোর জীবন,
উপুড় শরীরগুলো ফিরে দেখে ঘিরে আছে মুখের সারি
বাতাসে এখন শোকের সংলাপ তবুও আনন্দ গান,
জীবন বোধের ইচ্ছে কথায় লোহিত কণিকা টান
প্রতিদিন চিরঞ্জীবেরা পথে ঘাটে হাতে আত্মার উপাচার।

বাতাসের বিষণ্ণতা ছুঁয়ে গেছে গাছ পাতা কুঁড়ি ফুলে
অমৃত সময়ে কোঁচড়ে ঘুমোচ্ছে সকল ইচ্ছে কাল,
জমিনে জমেছে যত আত্মার বীজ জানে অশোক আলিঙ্গন
অচেনা বৌদ্ধ ভিক্ষু মানুষের উঠোনে অনন্ত নির্মাণে,
শূন্যের লাল তারা ভিজেছে রক্ত রঙে রাতের আসমান
মানুষ জমিনে আজও তুমুল বৃষ্টি পাত অনিন্দ্য সৃজনে।

ধরো হাত চলো যাই ক্লান্তি হীন পরিত্যক্ত পথে
আইবুড়ো জমিনে সবুজ অবনত শস্য শীষের দোল,
সূর্যোদয়ের পর প্রতিদিন ঘিরে ধরে ঈশ্বরের প্রলোভন
এক থালা ভাতের সুখে বাঁচে আত্মার ঝরা ফুল,
সকল আটচালার দরজা খোলা আহা হৃদয় নিকেতন
কোমল হাতে ঘিরে আছে সান্ধ্য প্রদীপ পুড়ে যায় পরম্পরা।

সময় আগলে শরীরী বিস্ময় [Bengali Poetry]

শূন্যতা বোঝে না ভাসে অতীত জীবন
পরকীয়া আলো বোঝে চাঁদ কলা অসীম উপাচার,
মায়াময় চাঁদ টিপ মেখেছে কপালে চুম্বন বিশ্বাসে
অবিষয়ী লজ্জা বেঁধেছে বাহুমূলে মোহন আনন্দ মায়া,
অজানা সাধন মার্গ ছুঁয়ে বরাভয় জানে সাধন পীঠ
বিচূর্ণ আলো সময় পথ নীল অন্ধকারে মগ্ন প্রতিমা।

শরীর ছুঁলে কাঁপে প্রদীপের আলোয় আশ্চর্য ত্রিনয়ন
মর্মকথা বোঝে কি সূর্য মন্দির গির্জা ঘণ্টা আজান সময়,
কত প্রার্থনা গান শোনে সকাল শরীরে স্বাভিমান দহন
চম্পা নদীর জলে শব্দ গান গোধূলির আলতো স্পর্শ,
জোড়া শালিক জানে কুঁড়ে ঘরে কান্না হাসি শরীর ছোঁয়া
মন্ত্রমুগ্ধ শরীর তখন জড়োসড়ো শীতে কাঁপে অসামান্য চুম্বন।

সান্ত্বনার ভাষা কাঁপে উধাও গাঙচিল ভেজা সমুদ্র হাওয়ায়
জঙ্গল জননী জানেও বা ফুলেদের অসহায় পরাগ রতি,
তপস্যায় উৎসর্গ প্রণতি আমাদের আয়ুকাল জানে
প্রতি সন্ধ্যা জানে উষ্ণতায় জ্বলে নিবেদিত রাতের আহুতি,
রাতের গভীরে স্নানে চলে সকল উত্তর পুরুষ
বাঁচাবে বলেই আত্মার সময় আগলে শরীরী বিস্ময়।

শ্রুতিকাল প্রণয় আলোকে [Bengali Poetry]

জন্ম কাল জানতো না অগ্নি ভূমি সর্বভুক ক্ষিধে
করুণা ভিজেছে একাকী ঘাসের মতো সকালে শিশিরে,
ধমনি জেনেছে প্রাত্যহিক বাঁচা সাম্প্রতিক শ্বাসে
স্বাধীন সময় ও জানে নিষ্পাপ বাতাসে নীল বিষ ভাসে,
উড়ে যায় নীলকন্ঠ পাখি জানে নিরামিষ আগুন
অনায়াস সম্পর্ক জড়িয়ে দু’হাতে অনন্ত সোহাগে বাঁচি
পাখির শিষে জল ঘরে জীবন ধারা কথা বুনছে দয়ালু শরীর।

সীমান্ত আলো জানে ছড়িয়ে রাতের পোশাক আসাক
অতীন্দ্রিয় কাল গুনছে পথে ঘাটে অজস্র শরীর পাশবিক,
কেউ হাঁটে কারা কারা পথ বাতি ছুঁয়ে নষ্ট জীবন
অন্যেরা অসহায় গাছের শরীর শেকড় জড়ানো দেহ,
কোথাও বিভুঁই তবু বুকে আগলে আত্মজা রক্তের টানে
যেখানেই থাকি উৎস টানে স্মৃতিময় পরমায়ু ত্বকের আড়ালে।

পৃথিবীর ক্যানভাস ভিজছে বৃষ্টি কান্নায় হতশ্রী কাগুজে ছবি
নাস্তিক নাকি আস্তিক গুমরে মরে হৃদপিণ্ডে প্রাণে,
পথে ঘাটে মেথর চণ্ডাল পশু পাবক মানুষ
এলোমেলো ছড়িয়ে ঝরা ফুল পাতা কফিন ছেঁড়া লজ্জা বস্ত্র,
হঠাৎই আকাশগঙ্গা স্রোত ভাসালো গ্রহ নক্ষত্র পথ
দু’হাত বাঁধনে পরস্পর মানুষের শ্রুতি কাল প্রণয় আলোকে।

সম্পর্ক অঙ্কুরে জন্ম বীজ [Bengali Poetry]

অক্ষর মালার কাছে বারে বারে ফিরে আসি
তবুও অক্ষরগুলো কাছে এলে কেমন প্রতিমা হয়ে যায়,
এভাবেই রাতগুলো অন্ধকার টেনে আনে মিলন মেলায়
তীর্থের পাখির চোখে দেখি অক্ষরগুলোর আলো চন্দ্রাতপ
অসফল সময়ে অনেকেই ঘিরে ধরে ফুলের নরম পাপড়ি।

দীর্ঘশ্বাস নিলে ঘ্রাণে আসে নতুন ধানের গন্ধ হেমন্ত হাওয়া
উদ্ভিদ শিকড়ে শরীরে ঝুলে আছে জন্ম ফুল,
নিরাশ্রয় সময়ের গর্হিত চিহ্ন বইছে গাছের শরীরে সংসারে
মানুষের উন্মোচন কাল বড় কেতাদুরস্ত বিষয় বাসনা বোধে,
শ্রীময়ী সংকেত টানে পছন্দের সহস্র মুখ অমোঘ শূন্যতায়।

জীবনের চারপাশে দেশান্তরি মানুষের মতো পাখিদেরও কথা
কিছু ভাষা ভেসে আসে ভেজা চোখে অনাবাসী ভবঘুরে,
বন জানে বসন্ত কথা আচট জমিন শিকড়ের টান গাছের শরীরে
অচেনা উচ্চারণ ভাসে চাঁদ গ্রহ নক্ষত্র নীহারিকা রাতে ঘুম ভাঙে,
নিঃশব্দে মানুষের ভেতর জমে থাকে নিদারুণ অক্ষর জন্ম ক্ষুধা।

হাড় পাঁজরের গুঁড়োয় আটকে আছে শব্দ ধ্বনি প্রকৃতির
বুকের ভেতরে ভরপুর অক্ষর প্রতিমার প্রিয় মুখচ্ছবি ভাসে,
প্রজন্মের ইতিহাস টেনে চলে সম্পর্ক অঙ্কুরে জন্ম বীজ।

জাতক পুরুষ [Bengali Poetry]

জ্যোতির্ময় সময় জানে আত্মার ভেতরে হৃদয়ে অসুখ
স্বপ্ন মেঘ বৃষ্টি মেলামেশা প্রিয় নদী মুখ মোহনা আগ্রাসী,
শরীর পাঁজর উজাড় একাকী জড়িয়ে মানব দেওয়াল
দরজা আগলে শূন্য হাতে নিথর পাথর চোখ।

উপচানো নদী জল ভাসানী বেলায় চর আঁচলে যাই
দু’দিকেই ছিল গাছ বাগান ছুঁয়ে গেছে দুঃখী ঘর,
জলের সংসারী মায়া বলেছিল শুনেছে কি কাকচক্ষু জল
ভেজা হৃদয়ে অক্ষত মহিমায় ভেসে যায় চৈতন্য গোধূলি ।

আগুন সময় আঁতকে ওঠে হরিণী শরীরে ঘ্রাণ টানে
বুক ভাসানো জলের খেলায় কোলে বাড়ে আজীবন ঋণ,
ভাসানী সময় তোর টানে গাঙচিলের নরম পালক উত্তাপ
মানুষের চোখের জল টুপটাপ খসে পড়ে জাতিকা আঁচলে।

শুভ লগ্ন এঁকেছিল জন্ম ঠিকুজী ঘর জানে বার্ধক্য বিমুখ কথা
কুণ্ডলী পাকানো পদ্ম নাভি পোড়ে জ্বলে ছিল বুকের অসুখ,
ঘরে বাইরে দেহের অসুখ হাজারো জ্বলন আত্মার উত্তাপে
ত্রিলোক জানে জল মাটি শরীরে জাগে জাতক পুরুষ।

মনোরম জন্ম আলো [Bengali Poetry]

পুনর্জাগরণের কাল ডাকে অবাক শব্দ স্বভাবে
হতবাক রাত পাখি আর ডাকেনি বারণ ও ছিলনা,
পিঠোপিঠি ঋতুচক্রের ডাকে ভেসেছে জেহাদি যুবক যুবতী,
অনাহুত ম্যাজিকওয়ালা একাই খেলে খুলি আর হাড়ে
একদিকে বরাভয় হাত অন্য দিকে থাবা নৃসিংহ দশা,
রাতের অন্ধকারে কোটরে অবাক পেঁচার চোখ
বুক ভর্তি ভয়ের ভেতরে হাতের স্পর্শে প্রাণের মানুষ।

ক’দিন আগেও দান পর্ব দেখেছে প্রভুর আগুন প্রাসাদ
দীর্ঘশ্বাস প্রহর গুনছে নারী শুনছে ধর্ষণ বিলাপ,
নির্বিবাদে ঢেউ গোনে হাল ভাঙা নৌকা শূন্য ভাসানে
অবেলার শঙ্খ চিল তারও ওপরে শকুনের ডাক,
দিনের সোনালী রোদ রাতের একাদশী প্রহরে লাল চাঁদ
নিশানায় ছিলনা কোন প্রাণঘাতী উদ্ভ্রান্ত সংকেত।

আহা নীল অশ্রু মোছে চোখ জানে অলৌকিক কৃষ্ণ ধারা
স্বয়ম্বৃতা বোঝে না হাজারো সংসারে যৌবনের আকাল দশা,
গ্রাম শহরে পার্কে শ্মশানে গোরস্থানে লোকায়ত সুর ভাসে
সক লোকে বলে এসব আমাদের আত্মার গর্ভাধান,
মাটি জল একাত্ম হ’লে ভাসে মনোরম জন্ম আলো।

বিকাশ চন্দ | Bikash Chanda

মহা রফিক শেখ | কবিতাগুচ্ছ ২০২৩ | Bengali Poetry 2023

তিন্নির ফড়িং আর মানুর কারসাজি | গল্পগুচ্ছ ২০২৩ | Bengali Story 2023

মোঃ ওয়াসিউর রহমান | কবিতাগুচ্ছ ২০২৩ | Bengali Poetry 2023

সুমিতা চৌধুরী | কবিতাগুচ্ছ ২০২৩ | Bengali Poetry 2023

বসন্ত পঞ্চমী বাতাসে | রাধা প্রেম হলুদ বসন্ত বুকে | ফুলমতি ধানের থোড় | শরীরে বনের ফাগুন | বসন্ত পঞ্চমী ২০২২ | সরস্বতী পূজা ২০২২ | শুভ পঞ্চমী | বসন্ত পঞ্চমী সরস্বতী | হলুদ বসন্ত | ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত | বসন্ত বরণ | রাধার গ্রামে হোলি | বসন্ত এলো আজি | বসন্ত বরণ উৎসব | বনে বনে বসন্তের ফুল | ওরে ভাই ফাগুন লেগেছে | আত্মার প্রতীতি | দৃশ্যায়ন | অক্ষর নীলে পোড়ে স্বরলিপি | রক্ত করবীর ইজেল | মানুষের হাসি মুখে | হারমোনিয়াম স্বরলিপি | স্বরলিপি পদ্ধতি কি | আকার মাত্রিক স্বরলিপি | বাংলা স্বরলিপি | বাংলা কবিতার স্বরলিপি | রক্তকরবীর তিনজন কারা | রক্তকরবী নাটকের দ্বন্দ্ব | রক্ত করবী কার লেখা | রক্তকরবীর নন্দিনী | মুক্তধারা নাটকের সমালোচনা | হাসির পোস্ট | হাসি মুখ লিরিক্স | হাসির প্রকারভেদ | হাসির উপকারিতা | হাসি নিয়ে রোমান্টিক ক্যাপশন | প্রবাহ দৃশ্যায়ন | সময় আগলে শরীরী বিস্ময় | শ্রুতিকাল প্রণয় আলোকে | সম্পর্ক অঙ্কুরে জন্ম বীজ | জাতক পুরুষ | মনোরম জন্ম আলো | অঙ্কুরোদগম কত প্রকার ও কি কি | বীজের অঙ্কুরোদগমের জলের ভূমিকা | বীজের অঙ্কুরোদগম উদ্দীপক হরমোন | বীজের অঙ্কুরোদগম ছবি | বীজ থেকে অঙ্কুর বের হওয়ার শর্ত কী | জাতক কাকে বলে | জাতক কাহিনী | কবিতাগুচ্ছ | বাংলা কবিতা | সেরা বাংলা কবিতা ২০২২ | কবিতাসমগ্র ২০২২ | বাংলার লেখক | কবি ও কবিতা | শব্দদ্বীপের কবি | শব্দদ্বীপের লেখক | শব্দদ্বীপ

bengali poetry | bengali poetry books | bengali poetry books pdf | bengali poetry on love | bangla kobita | poetry collection books | poetry collections for beginners | poetry collection online | poetry collection in urdu | poetry collection submissions | poetry collection clothing | new poetry | new poetry 2022 | new poetry in hindi | new poetry in english | new poetry books | new poetry sad | new poems | new poems in english | new poems in hindi | new poems rilke | new poems in urdu | bangla poets | indian poetry | indian poetry in english | indian poetry in urdu | indian poems | indian poems about life | indian poems about love | indian poems about death | Bangla kobita | Kabitaguccha 2022 | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | power poetry | master class poetry | sweet poems | found poem | poetry night near me | poem about myself | best poets of the 21st century | christian poems | prose poetry | poetry international | poetry pdf | free poem | a poem that tells a story | beat poetry | poetry publishers | poem and poetry | def poetry | heart touching poetry | poetry near me | prose and poetry | poem on women empowerment | identity poem | quotes by famous authors and poets | bee poem | poem about self love | story poem | poetry angel | narrative poetry examples | poetry reading near me | prose poetry examples | elegy poem | poetry reading | the tradition jericho brown | poetry websites | protest poetry | prayer poem | emotional poetry | spoken word poetry | poem about god | percy shelley poems | jane hirshfield | spiritual poems | graveyard poets | chapbook | poems about life | poems to read | found poem examples | poems about life and love | elizabeth bishop poems | poems about women | sister poems that make you cry | famous quotes from literature and poetry | mothers day poems from daughter | poem about community | 8 line poem | inspirational poetry quotes | poem about life journey | positive poems | short poem about life struggles | toni morrison poems | good bones poem | google poem | funny poems for adults | inspirational poems about life | friendship poem in english | paul laurence dunbar poems | freedom poem | sad poetry about life | poems about hope in hard times | allama iqbal best poetry | black female poets | african american poets | poems to comfort the grieving | poems about loneliness | romantic poetry in english | encouraging poems | joy harjo poems | best poetry lines | short poems on values of life | female poets | poetry quotes about life | poem about faith | dark poems | uplifting poems | new poetry | best poet in the world | modern love poems | poetry love poems | native american poetry | poem for a special woman | happy birthday poems for her | short inspirational poems | poem on father | poetry authors | motivational poems | cowboy poetry | i wish poems examples | poems about death of a loved one | best poems of all time | nice poems | lonely poems | public domain poetry | the road less traveled poem | birthday poems for her | black history poems | margaret atwood poems | memorial poems | sun poem | success poem | poem for my son | beautiful poems about life | poems about life struggles | deep poetry | easy poems | acrostic poem | heartbreak poems | poems about pain | black poets | poems about hope | poetry submissions | poems about love and pain | deep poems about life | meaningful poems | poem about nature beauty | poems about mothers love | smile poem | famous poems about life | feminist poems | poems about life and death | spoken poetry | 14 line poem | famous poems about friendship | bereavement poems | religious christmas poems | sonnet poem examples | poems about losing a loved one | my mother poem | poems about resilience | breakup poetry | poetry slam near me | the passionate shepherd to his love | Shabdodweep Founder

Leave a Comment