Bengali Poetry in West Bengal | Best Bangla Kobita

Sharing Is Caring:

Bengali Poetry of Gobinda Modak

Bengali Poetry in West Bengal | Read Bangla Kobita

আমার তুই

নাকে তোর নথ টানা
কানে ঝোলা দুল
বাহারি ওই খোঁপা জুড়ে
বেল কুঁড়ি ফুল।
দারুণ তো সাজিস তুই!

চোখ দুটো টানা টানা
কাজলের টান
ভ্রু-দু’টি আহা কী যে
মন আনচান।
ইচ্ছে করে হায় তোকে ছুঁই!

এক ঢাল চুল তোর
সুগন্ধিত বাস
চোখের তারায় তোর
আমার সর্বনাশ।
হয়তো আমার জন্যই তুই!

তোর কপালেতে টিপ
চমকায় আলো
তোর মরাল গ্রীবা
কী যে লাগে ভালো।
ইচ্ছে করে হায় তোকে ছুঁই!

তোর গম-রঙা দেহ
আহা কী ত্বক
দাঁতগুলো মুক্তো সারি
করে ঝকঝক।
আমার টলমল প্রেম যে তুই!

তোর শরীর ভরা ঢেউ
ডুরে ছাপা শাড়ি
দুই পায়েতে আলতা
আহা রংবাহারি।
না সেজেও সুন্দরী তো তুই!

তুই তাকালে ফুল ফোটে
হাসলে উঠে ঢেউ
তোর মনের গহীন নদী
আর জানে না কেউ।
তবু আমি জানি আমার তুই!

দু’জনে সুজনে, মধুর কুজনে

দু’জনে সুজনে — মধুর কুজনে
জীবনের গান গাই,
আছে ছোট বাসা, ছোট ছোট আশা
খেদ মনে কিছু নাই।

দু’জনে সুজনে — মধুর কুজনে
তুলি ভালোবাসা, ফুল,
অল্পেতে সুখী, বেশিটা না চাই
নেই এতে কোনও ভুল।

দু’জনে সুজনে — মধুর কুজনে
প্রেম ভালোবাসা গড়ি,
তুমি যে আমাতে, আমি যে তোমাতে
দু‘জনা দু’জনে মরি॥

কড়া গার্জেন

শখ হয়েছে মিনুর বরের
খাবে সে ডালপুরি,
নিদেনপক্ষে তেল মাখিয়ে
চানাচুর আর মুড়ি!

বরকে ডেকে মিনু বলে
রোগী তো অম্বলের,
গাদাগুচ্ছের ওষুধ বড়ি
খাচ্ছো তো রোজ ঢের!

এখন যদি তেল-খাবারে
নোলা তোমার বাড়ে,
দেখবে তবে বদহজমেই
পেটটা কেমন ছাড়ে!

তখন কিন্তু তোমায় দেবো
গাঁদার পাতার ঝোল,
শিঙি মাছ আর কাঁচকলা
সারাতে ওই অম্বল!

মিনুর কথায় চমকে উঠে
মিনুর বর বলে —
বউ মানেই ‘কড়া গার্জেন’
শাসন করে চলে!

রাম রাবণের যুদ্ধ

রাম রাবণের যুদ্ধ হবে সাজো-সাজো রব,
সারা পাড়া জুড়ে শুনি তার-ই কলরব!
পালায় বুদো রাম সাজবে মনু হবে লক্ষ্মণ,
মধুদা হবে বীর হনুমান, তাপস দশানন!
বরুণদা সীতা সাজবে, তাপস জাম্বুবান,
গৌরাঙ্গ-ভাই মন্দোদরী, মঙ্গল বিভীষণ!

কঞ্চি কেটে রাম বানাচ্ছে ধনুক আর তীর,
লক্ষ্মণ তাতে সামিল হলো সে-ও তো মস্ত বীর!
পিচবোর্ড আর তুলি দিয়ে রাবণ বানায় মাথা,
পাটে ভুষো কালি দিয়ে চুল বানায় সীতা!
সন্ধ্যাবেলায় হ্যাজাক জ্বেলে শুরু হল পালা,
বিশটা গাঁয়ের লোক জমেছে দর্শকদের মেলা!

ঢং!! করে ঘণ্টা বাজতেই রাবণ স্টেজে এলো,
বীরদর্পের আস্ফালনেই হ্যাজাক নিভে গেলো!
আবার হ্যাজাক জ্বালার পরে এলো লক্ষ্মণ রাম,
বড়ো বড়ো ডায়লগ দিয়ে পেল বেশ নাম!
অশোক-বনে সীতা-দেবী রাবণেরই ভয়ে,
চৌকির নিচে গুঁড়ি মেরে রয়েছে যে শুয়ে!

একটু পরেই বীর হনুমান হুড়মুড়িয়ে এলো,
তার আস্ফালনের চোটে স্টেজটা ভেঙে গেল!
অগত্যা তাই জমির উপর রাবণ যুদ্ধ করে,
গদা ঘোরায় বীর হনুমান, লক্ষ্মণ তীর মারে!
রাবণ বলে এত সহজে মরবো নাকো আমি,
খাতায় দেখো আমার চাঁদা সবার বেশি দামি!
অতএব বেশিক্ষণ ধরেই করবো আমি যুদ্ধ,
মেরে ফেলবো রাম-লক্ষ্মণকে ঐ বিভীষণ শুদ্ধ!

দর্শকদের মধ্যে উঠলো দারুণ কলরোল,
বাজছে বাঁশি ক্ল্যারিওনেট হারমোনিয়াম ঢোল!
উৎসাহ পেয়ে রাবণ তাই এমন যুদ্ধ করলো,
মারের চোটে রাম-লক্ষ্মণ মুখ থুবড়ে পড়লো!
অগত্যা রাম লক্ষ্মণ মিলে গেলো হাসপাতাল,
সীতার তখন শাড়ি খুলে লুঙ্গি পরার হাল!
অতএব রাবণ বধ হলো না, পালা শেষ হলো,
হাসতে হাসতে দর্শকরা বাড়ি ফিরে গেলো!

পউষের মাঠ পেরিয়ে

পউষের মাঠ পেরিয়ে
ছুট ছুট এক ছুট —
তুমি আমি, আমি তুমি
আবছায়া, রংরুট!
পাশে চলে ছুটে ছুটে
দুর্গা, অপু ভাই —
পেটকাটি, চাঁদিয়াল
আকাশে তো ঘুড়ি নাই!
নিঃসীম নীল আকাশ
শীতমাখা প্রান্তর —
হৃদয়ের খুব কাছে
প্রেমে পড়া যন্তর!
তবুও তো ছুটে চলা
পউষ মাঠ পেরিয়ে —
আমলকি, তালবন
সারা পাড়া বেড়িয়ে!
শীত শীত শীত হাত
উষ্ণতা শুধু চাই —
হৃদয়ে হৃদয় আছে
আর কিছু দাবি নাই!!

বিনিদ্র রাত্রির গানগুলো

কথাগুলোর সঙ্গে
কবিতার কোনও মিল ছিল না।
ছিল না বলেই আমি বিনিদ্র হতাম
শুধু তোমাকে দেখবো বলে,
ঘুমপাখি কতো রাত
আমাকে ডেকে ডেকে
ফিরে গেছে আলোর কাছে
আর আমি তোমার বিরহে
কাতর হবো বলে
দেওয়ালে টাঙিয়ে রেখেছি
একটা মৃত্যুনীল ক্যানভাস,
ইজেলে ভরেছি অবসাদ রঙ;
দু’হাতে বাতাস সরিয়ে সরিয়ে
খুঁজে গেছি লুকানো সেই ‘স্থান’টুকু
যেখানে গাঢ় স্বরে
নিঃশ্বাস নিতে নিতে
দেখে নেওয়া যায়
ছোট ছোট দুঃখ ভরা ছন্দ
অথবা ছন্দোবদ্ধ কোন শস্যক্ষেত।

চুম্বন

প্রথম চুম্বনে বিষ আছে
এ তথ্যে তুমি যদি
বিশ্বাস করো
তবে চুম্বনের আগে
সরিয়ে নিও
তোমার উপোসী দু’টি ঠোঁট
শুধু জেনে রেখো —
যতো তথ্য
আজ পর্যন্ত জমেছে
প্রণয়ের ইতিহাসে
তাতে জানা গেছে
এক আশ্চর্য সত্য এই যে —
প্রেমের প্রথম পাঠ ছিল চুম্বন।

পদচিহ্ন

বালিতে পা ফেলে ফেলে
কতজনই তো চলে যায়
রেখে যায় পদচিহ্ন,
সে জানে না।
কেউ ভাবে না
একদিন তার পদচিহ্ন ধরে ধরে
এগিয়ে যাবে আরও কিছু
দামাল বালক-বালিকা
অথবা কতিপয় সাহসী জান
আর বুক ভরা উদ্যম।
তখন বাতাসে বাজবে সেই গান —
চরণ ধরিতে দিও গো …

অভিভাবক

‘রাস্তায় হোঁচট খেতে পারি’
এই ভেবে তুমি আমাকে
হাত ধরে চলতে শিখিয়েছিলে।
‘মেলায় ভিড়ে হারিয়ে যাই যদি’
সেজন্য তুমি আঙুল ধরে
হাঁটতে শিখিয়েছিলে।
তোমার হাতের মুঠোর মধ্যে
আমার আঙুলগুলো ঘেমে উঠতো
আর আমি একটু একটু করে
পা ফেলে এগিয়ে যেতাম সামনের দিকে।
যে আঙুলটাকে বিশ্বাস করে পথ চলতাম
সে আঙ্গুলটাকে কবেই হারিয়েছি,
তবু জানি একটি অদৃশ্য আঙুল
আজও আমাকে আঁকড়ে ধরে
‘রাস্তায় হোঁচট খেতে পারি’ এই ভেবে।

শূন্যতা

রেললাইনের ধার থেকে
অনেক দূরে
আমার নিজস্ব কুটির
সন্ধ্যা উতরে গেলে
প্রেতের আত্মার মতো জানু পেতে
বসে থাকি কুটিরের ভাঙা বারান্দায়
ঝমঝম শব্দে চলে যায় রাত-ট্রেন
আলোকিত জানালাগুলো
চকিতে মিলিয়ে যায়।
মুহূর্তে টের পাই —
বড়ো বেশি খাঁ-খাঁ করছে
আমার কুটিরের ভিতরটা।

যখন অন্ধকার

ভেবেছিলাম —
একদিন রাত্রে জেগে উঠে
আকাশ দেখবো
তখন চরাচর জুড়ে পাহারা দেবে
গহন অন্ধকার
রাত-কুয়াশা ঝরে পড়বে
কোনও ভিনগ্রহ থেকে
সপ্ত-ঋষি ক্রমশঃ তারার খোলস ছেড়ে
নেমে আসবে আমার চুলের কোমলতায়
আর অন্ধকারের বাগানে বেজে উঠবে
আলোর দুন্দুভি
আমি চেয়ে থাকতে থাকতে টের পাবো –
কালো রাত্রির হৃদপিণ্ড ছিঁড়ে
বের হয়ে আসছে একটা সকাল-পাখি!

প্রস্তর স্বপ্ন

শব্দেরা যখন বেঁকেচুরে যায়
তখন আমার মন খারাপের পালা আসে
চাঁদ যখন নিভে যেতে চায়
তখন তরল থেকে কঠিন হয়ে ওঠে অন্ধকার
ফুলেরা ফুটে উঠবার অনেক আগেই
বাতাস বয়ে নিয়ে আসে সে ভীষণ সংবাদ!

ভালোবাসা ভেঙে গেলে জোড়া লাগে না
ভাঙা ভালোবাসা কাঁধে নিয়ে
দু’পায়ে দাঁড়িয়ে থেকেও টের পাই —
আমার পা দু’টো ক্রমশঃ প্রস্তর হয়ে উঠছে
আর বাতাসে ভেসে আসছে
একটানা একটা তীক্ষ্ণ শিষের শব্দ

এসময় আমি অপ্রতিহত গতিতে
আমার কলমকে ছুটিয়ে দিই
তখন খাদের কিনারে
পতনোন্মুখ অপেক্ষা করে
একটি আটপৌরে নুড়ির অচেনা অবয়ব
আর আমি পাষাণ পায়ে এগিয়ে যাওয়ার
স্বপ্ন দেখতে থাকি অবিরত!

দিনান্তের গান

সহস্র কোটি দিনান্তের গান শুনেও
তুমি একই সুর সেধে চলো —
কুলু কুলু কুলু কুলু …
বয়ে চলো পেয় বা অপেয় তৃষ্ণার জল নিয়ে
অভিমানে স্পর্শ করো তটরেখার কোমল স্তন
অথবা সুগন্ধি নাভি।
তুমি স্রোত-স্তোত্রে সাঙ্গ করো সূর্যপূজা
ভেঙে পড়ো নিজের খেয়ালে।

তুমি সকালের সুর মেখে নিতে নিতে
পা ছড়িয়ে বসে থাকো দ্বীপে-উপদ্বীপে
সাদা জলে সাদা হয়ে ছুটে যাও
শ্রাবণের মেঘ তোমার শরীরে ছায়া দেখে
ঝাঁপাতে চায় আবেগে … ভালোলাগায় …
তবুও ভারাক্রান্ত তুমি!
জানি না কবে তুমি রয়ে যাবে শুধু
শিশুর আঁকার খাতায় পেন্সিলের আঁচড়ে।

ওগো নদী —
ক্ষমা করো এ অসহায় কবির স্পর্ধাকে!

আলোর সন্তান

বোধিবৃক্ষের নিচে বসে আছি
অনন্তকাল পার হয়ে যায় তুলাদণ্ডে
নেমে আসে হিমায়িত জ্যোৎস্না
কিংবা অন্ধকার জড়ানো
কালো রাত্রির ঘুম
শরীরের মধ্যে দিয়ে জন্ম নেয়
আর এক শরীর …
চেতনার গুহাতে বোধ রচনা করে
আর এক স্বর্গোদ্যান
টের পাই —
ধীরে ধীরে জন্ম নিচ্ছে মানুষ,
অন্য এক আলোর সন্তান!

প্রেমে ও প্রতিশব্দে

শব্দ নিয়ে সময় নষ্ট করা
কোনওকালেই আমার স্বভাব ছিল না
তবুও দেখতাম —
বারান্দাকে প্রেম করতে চাইলে
ঘর এসে দাঁড়াতো ঘরের মাঝখানে
তারপর ঘরময় দরজা … জানালা …
আসবাবপত্র … সবকিছু।
আর একটু একটু করে
অসহায় হয়ে যেতে যেতে
আমি টের পেতাম —
প্রকাশ করবার মতো কোনও শব্দ
আমার মনে পড়ছে না।
অতএব আমি কোনওদিন প্রেম করেছি
একথাও যেমন সঠিক নয়
তেমনই আমি প্রেম করিনি কোনওদিন
এ কথাও অনেকটাই ভুল!
কেন না,
কখনও কখনও আমার মনে হয়েছে —
“ভুল” শব্দটাই ছিল
আমার প্রেমের সঠিক প্রতিশব্দ!

অকালপক্ক ভালোবাসা

কোনও ফুলওয়ালীকে
একদা ভালবেসেছিলাম
এ কথা মনে পড়লে
আজও রাঙ্গা হয় কর্ণমূল;
কেন না –
কিশোরবেলার ঢের আগেই
আমি পড়ে ফেলেছিলাম
ফুলওয়ালীর চোখের ভাষা
আর দেখে ফেলেছিলাম
তার পেলব বুকের খাঁজের
তিল-বিন্দুর চমৎকারিত্ব!
অতএব …

যখন গ্রহান্তরে

শিস দিয়ে যেমন
পাখি উড়ে যায়
দূরে … দূরান্তরে …
তেমনিই উড়ে যাবো
কোনও গ্রহান্তরে —
চন্দ্র সূর্য তারাদল পেরিয়ে
গেয়ে যাবো
অন্য কোনও মানবতার গান;
তারপর —
বিস্ময়াবেশের রেশ কাটলে
সবুজ হৃদয় ভাবতেও পারে
ফেরবার কোনও কথা!

বাসি খবর

সে-রকম কোনও খবর
আজকের কাগজে
চোখে পড়লো না।
পড়বে কি করে!
খুন, ধর্ষণ, মানবতার পরাজয়
— এসব খবর পড়তে পড়তে
আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি!
তাই রোববারের সকালে
বাজারে একটাই খবর —
খাসির মাংস সাতশো টাকা কেজি
অথবা খেলা দেখা শেষে
নিটোল একটা ভাতঘুম!

রান্নাবান্না

কর্তা বলে- বাজার থেকে
এনেছি দামে ঘি,
বৌমা তুমি ভালো ভালো
রান্না করবে কি!

বৌমা বলে রান্নাঘরটা
দেখিয়ে আমায় দিন,
তবে আপনি বাজার থেকে
খাবার কিনে নিন!

কর্তা বলে তার চেয়ে যাই
চলো সুন্দরবন,
ঘাস আর পাতা খেয়ে
ভরিয়ে তুলি মন!

হুতুমীর বিয়ে

গুবরে পোকা হেঁকে বলে
আজ হুতুমীর বিয়ে,
সব পোকারই নিমন্ত্রণ তাই
ভোজটা খাবে গিয়ে!

তাই গন্ধ পোকা স্টেজে উঠে
শোনায় মজার গান
উচ্চিংড়ি নাচতে থাকে
মুখে দিয়ে পান!

এমন সময় হুতুম আসে
বাদ্দি-বাজনা নিয়ে,
শোনো শোনো শোনো সবাই
আজ হুতুমীর বিয়ে!!

লিমেরিক : সুখেনের হবি

সুখেনের হবি ছিলো — গুবরে পোকা শোঁকা,
তাইতো নাকি জমাতো সে নানারকম পোকা;
একটি পোকা কামড়ে নিলো,
একটি পোকা ভেংচি দিলো,
তবুও পোকা ফেলে না সে এমনই সে বোকা!

ঝড় আসতে পারে জেনেও

ঝড় আসতে পারে জেনেও
পথিক পথে বের হয় –
সমুদ্র পেতেছে যে শয্যা
শিশিরে তার নেই ভয়।

ঝড় আসতে পারে জেনেও
পাখি কুটো দিয়ে বাঁধে বাসা –
মৃত্যুতে সব শেষ জেনেও
শেষ হয় না কারোরই আশা।

ঝড় আসতে পারে জেনেও
গাছ ফোটায় তাদের ফুল –
ভালোবাসাতে ব্যথা জেনেও
মানুষ ভালোবেসে করে ভুল।

ঝড় আসতে পারে জেনেও
দরজা খুলে রাখি আমি –
প্রেম চলে যায় পিছন দিয়ে
মুচকি হাসেন অন্তর্যামী!!

বিরহের অন্তরালে

সব শুকনো পাতা-ই ঝড়ে ওড়ে না
কিছু উড়ে যায় … কিছু পড়ে থাকে।
এই পড়ে থাকা বিরহ নিয়েই
আমার কাজ কারবার।
তাই নিরন্তর নকশী কাঁথা বুনি
বিরহের জালে …
ঝড় আসে … চলে যায় …
ঢেউ ওঠে … ভেঙে যায় …
আলো আসে … নিভে যায় …
পদাবলী কীর্তন গায় বোষ্টম ঠাকুর
খঞ্জনি বাজানোর লোকের অভাব।
তবু কিছু বিরহকে উড়িয়ে দিয়ে
কিছু বিরহকে বুকে রাখে গীতিকার
কেন না সব শুকনো পাতাই
ঝড়ে উড়ে যায় না!

সরীসৃপ

আজকাল সরীসৃপে বড্ড ভয় হয়েছে আমার।
নিদ্রায়, জাগরণে তাড়া করে ফিরছে
একটা ক্লেদাক্ত শরীরের শীতলতা –
যেন দরজার বাইরে পা রাখলেই
পায়ে জড়িয়ে ধরবে কোনও শীতল বেষ্টনী
এমনই এক অলীক ভয়ে আমার হাত-পা হিম
দড়িকেও সাপ ভাবছি!
টিকটিকি গিরগিটি দেখলেও গা ঘিনঘিন!
সাপের চোয়াল আমাকে মুখব্যাদান করছে
ঘুমের স্তরে স্তরে।
খেতে বসলে শীতল রক্তের সাপের
কর্কশ আঁশের কথা মনে পড়লেই
গা গুলিয়ে উঠছে আমার,
অথচ আমার চারপাশে কোনো সরীসৃপ নেই!

গতকাল রাত্রে চমকে উঠে ঘুম ভাঙলো আমার।
দেখলাম বুকে ভর দিয়ে এসে
বিছানার ও-প্রান্তের নগ্নিকাটি
লকলকে জিভ দিয়ে
চেটে খাচ্ছে আমার ঠোঁট দু’টো!
আমি চিৎকারও করতে পারলাম না –
ধীরে ধীরে আমিও সরীসৃপে পরিণত হলাম!

গমনাগমন

নারী গমনের আগে ও পরে কি হয়
বা কি হতে পারে
তার রূপক বর্ণনা বহুবার বহুভাবে
তোমাদেরকে জানিয়েছি
হে আমার প্রিয় বন্ধুসকল!
তবু শুনে রাখো –
প্রস্তুতিপর্ব চূড়ান্ত হলে
দু’হাতে যত্ন করে নাঙ্গা করি কামিনীকে
নীলাভ আলোর স্বল্পতায় –
আয়নাও চমকে ওঠে বিবসনাকে দেখে
তখন অধর-ওষ্ঠ ও যুগলশঙ্খ পেরিয়ে
ক্রমাগত পার হই নাভিকুণ্ড …
অস্থির রোমকূপ ও রোমে ভরা প্রান্তর …
কৃষ্ণ গহ্বরের সীমাহীনতা …
তারপর বিপুল উৎসাহ
দ্রুত ধাবমান অশ্বের হ্রেষাধ্বনি
ও ক্ষুরের শব্দ …
ক্রমাগত তাপগ্রহণ ও বর্জন
সাপ-লুডো খেলা …
সহজে জয় আসে না
কায়িক ও মানসিক শ্রমের চূড়ান্ত!
অবশেষে পালাবদল
আর একাকী হওয়ার চিরন্তন ইতিহাস!

যখন বিরহ

বুকের কাছে টেনে
সান্ত্বনা দেওয়ার মতো
কোনও ভাষা
জানা নেই আমার।
জানি –
সান্ত্বনা দিলেই
তোমার দু’চোখে ঝরবে
সাত সমুদ্রের স্বাদ।
এভাবেই একদিন –
পৃথিবীতে একা হয়ে যাবো আমি
আর অনায়াসেই হয়ে যাবে
জীবনটা বরবাদ!

শেষ চিঠি

তোমাকে লেখা শেষ চিঠিখানি ডাকে দেবার আগে
আমি দ্রুতচোখে দেখে নিই সমূহ ব্যাকরণ,
বানানের রকমফের আর সম্বোধনের খামতিটুকু ;
তারপর চিঠি ডাকে দিয়ে ঘরে ফিরি
তোমার কথাই ভাবতে ভাবতে …।

এরপর একদিন এসে যায় অপ্রত্যাশিত উত্তর,
লেফাফা খুলে টের পাই —
মুক্তো অক্ষরগুলো ধুয়ে গেছে ভাবনাজলে,
কাঁপা-কাঁপা হাতে যত্নে তুলে রাখি ভেজা অক্ষর
বীজ থেকে মহীরুহ হওয়ার আশায় আশায়।

মানচিত্র

মানব-মানচিত্রখানি খুলে বসেছি।
পুঙ্খানুপুঙ্খ দেখছি প্রতিটি অংশ।
পাহাড় পর্বত মালভূমি উপত্যকা নদ-নদীর বদলে
এদিক-ওদিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে
স্নেহ-ভালোবাসা দয়া করুণা স্বার্থপরতা,
ক্রূরতা হিংসা শঠতা কৃপণতা আর উদারতা,
রয়েছে মানবিকতা, প্রেম, স্বার্থত্যাগ ;
সহাবস্থানে নীচতা, দ্বেষ, কূপমণ্ডুকতা আর দ্বন্দ্ব !
অজস্র ধান্দাবাজি রেখা কিলবিল করছে
মস্তিষ্কের কোনও কোনও অংশে,
অজস্র নীলচে রেখা নির্দেশ করছে
ব্যথাতুর হৃদয়ের সমূহ ক্ষতমুখকে,
অজস্র আলোকিত রেখা শুভবুদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে,
সবুজ বিন্দুগুলি দিচ্ছে ভালোবাসার সংকেত ;
শুধু লাল নির্দেশিকাগুলোকে বুঝতে পারছি না !
তবু বসে আছি মানব-মানচিত্রখানির সামনে,
মনে মনে ভাবছি — পরীক্ষাগারে গিয়ে
বুকের অসুখের চিকিৎসা করানো ঠিক হবে কিনা !

পাত্রী দেখার ঝকমারি

ভাইয়ের জন্য পাত্রী দেখতে গেলাম পাত্রীর বাড়ি!
এই পাত্র-পাত্রী দেখা-দেখি ভীষণই ঝকমারি !!
সাজ-গোজ করে পাত্রী এসে বসলো আমার কাছে!
হঠাৎ আমার চোখের পাতা তিড়িং-বিড়িং নাচে !!
আমি পাত্রীকে দেখবো কি পাত্রী-ই আমায় দ্যাখে!
ট্যারা চোখে আমার দিকে স্থির তাকিয়ে থাকে!!
আমি বলি- “আমি নই, পাত্র আমার ভাই”!
পাত্রী বলে- “তুমিই ভালো, তোমায় আমি চাই”!!
বাবাকে ডেকে পাত্রী বলে “পাত্র আমার পছন্দ!
এইখানেতেই তুমি বাবা করো বিয়ের সম্বন্ধ” !!
এই না শুনে লজ্জায় আমি পালিয়ে গেলাম দূরে!
এক ছুট্টেই পৌঁছে গেলাম বাসস্ট্যান্ডের মোড়ে!!
বাসে উঠে টিকিট কাটবো হঠাৎ তাকিয়ে দেখি!
পাত্রী আমার পাশে বসে মুচকি হাসছে! সেকি !!
মধুর হেসে পাত্রী বলে — চিন্তা কিছুই নাই!
তোমার বাড়িই যাচ্ছি এখন দু’টো টিকিট চাই!!

চাচা! আপন প্রাণ বাঁচা

শোনরে যদু! শোনরে ভোলা!
খেলা নিয়ে নাকি জলঘোলা
হচ্ছে খেলার মাঠে!
সবুজ সংঘ গোল দিয়েছে
তরুণ সংঘ শোধ নিয়েছে
খেলা উঠেছে লাটে!!

ওদিকে তোরা যাসনা রে ভাই!
অনুরোধ করে বলছি যে তাই
হতে পারে মারামারি!
লাভ কি ভাই ওই সবে থেকে!
শুধু শুধু গায়ে ঝামেলা মেখে!
সোজা চলে যা বাড়ি!!

যেমন খুশি তেমন সাজে ভূত

ভূত পাড়াতে জবর খবর স্পেশাল আইটেম,
‘গো অ্যাজ ইউ লাইক’ হবে দারুণ মজার গেম!
‘যেমন খুশি সাজো’-তে তাই নামটি দেবে বলে,
ভূত-পেত্নী-দত্যি-দানো সবাই এলো চলে!
পৈতে পরে মামদোভূতে সাজলো গনৎকার,
স্কন্ধকাটা ভূত সাজলো মুদির দোকানদার!
চশমা এঁটে মেছোভূতে মাস্টার মশাই সাজে,
পেত্নী সাজে মহারানী অলংকারে, তাজে!
শাঁকচুন্নি দারুণ সেজে বিমান সেবিকা হয়,
ডাকাত সেজে জোলা ভূতে দেখায় ভীষণ ভয়!
ঢুলি সেজে গোদান ভূতে বাজায় বসে ঢোল,
মস্তান সেজে ধোঁয়া ভূতে বাধায় গন্ডগোল!
ময়রা সেজে মিষ্টি বানায় দু’জন সাহেব ভূত,
হর-পার্বতী সেজে আসে জীনের দুই পুত!
খড়ম পায়ে ব্রহ্মদত্যি সাজে মহেশ্বর,
টোনা আর টুনি ভূতে সাজে বউ আর বর!
মাঠ জুড়ে ভূতের কেত্তন ভীষণই অদ্ভুত,
এমন সময় লগুড় হাতে আসে যমদূত!
যমদূত-ই ফার্স্ট হলো বিচারকের রায়,
যমদূতটা সেজেছিল ক্যাবলা ভূতের ভাই!!

গাছ আমাদের বন্ধু

গাছ আমাদের মিতা ও ভাই
গাছই মাতা পিতা,
গাছকে সম্মান করতে শেখো
যেমন করো গীতা ।
প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে
গাছ আমাদের সাথী,
অক্সিজেন যোগাচ্ছে সে
সারা দিবস রাতি।
মুখের খাবার যোগাচ্ছে গাছ
ফল ফুলও দিচ্ছে ,
একই সাথে দূষিত বায়ু
সবই শুষে নিচ্ছে।
প্রকৃতির ভারসাম্য রেখে
গাছ যে দেয় সেবা,
মানুষের এমন শ্রেষ্ঠ বন্ধু
আছে আর কে বা!!

গাছ বাঁচলে তুমিও বাঁচবে

প্রকৃতি মানুষকে যতো দেয় উপহার
সবুজ বনভূমি হলো সব সেরা তার।
গাছ দেয় খাদ্য বস্ত্র, দেয় বাসস্থান
জীবন বাঁচাতে দেয় গ্যাস অম্লজান।
সুশীতল ছায়া দেয়, দেয় ফুল ফল
মেঘ আকর্ষণ করে আনে বৃষ্টির জল।
ভূমিক্ষয় রোধ করে এই বনভূমি
মাটিকে শীতল রেখে রোখে মরুভূমি।
পরিবেশের দূষণটা গাছ করে রোধ
তবু মানুষ গাছ কাটে এমনই নির্বোধ!
তাই নয় বন ধ্বংস বনসৃজন করো
পৃথিবী হোক বাসযোগ্য সেই ভাবে গড়ো।
সময় হয়েছে এবার বাঁচাও বনভূমি
তবে বাঁচবে বসুন্ধরা তবে বাঁচবে তুমি!

বাঙালি! তোর খুরে খুরে নমস্কার

ভালোবেসে সবকিছু আত্মীকরণ করে
অন্যের সংস্কৃতিকে আপন করে নিতে
অন্যের ধর্মকে আপন করে নিতে
সে এতোটুকুও ভাবে না …
অথচ নিজের কৃষ্টি সংস্কৃতি ঐতিহ্য
সব চুলোয় যাক!
কুছ পরোয়া নেহি, লেকিন …
হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন! বাঙালির কথাই বলছি,
বিশেষতঃ পশ্চিমবঙ্গের বাঙ্গালীদের কথা!
সেই কবে কবি বলে গেছেন —
বিদেশের কুকুর ধরি স্বদেশের ঠাকুর ফেলিয়া!
আর আজ তা বর্ণে বর্ণে ফলে যাচ্ছে!
অহো! কী দুঃসহ পরদেশপ্রীতি!
আহা! কী অত্যাশ্চর্য পরজাতিপ্রীতি!
বাঙালি! তোর খুরে খুরে নমস্কার!

যখন বসন্ত

কার সঙ্গে প্রেম করবে বলে বসন্ত আসে
তা তেমনভাবে আমার জানা নেই
ভেবেও দেখিনি এমন গূঢ় তত্ত্বকথা
তবুও বসন্ত এলেই
এলোমেলো বাতাসের মতো মন
সাজিভরা ফুলের মত ভাবনা
আর শিকড়-ছেঁড়া বসন্ত-বিলাপ
আমাকে করে তোলে বিরহের প্রতিমূর্তি!

প্রেম নেই জানি —
তবু অকারণ এই কাছাকাছি থাকা
আমাকে সাহস যোগায়
কাল্পনিক প্রেমিকপ্রবর হতে।
তাই নৌকার গুন টানি, পাল খাটাই
আর দু’পাড়ে দু’চোখ রাখি
যদি নজরে পড়ে —
ফুটে থাকা কৃষ্ণচূড়া ফুলের
থোকা-থোকা লাল-লাল যন্ত্রণার দাগ।

স্বার্থপরতার কাছাকাছি

ইচ্ছে হলে পাখি হয়ে উড়ে যেতে পারো
কিন্তু পড়ে থাকবে আকর্ষিত জমি
না বোনা বীজ আর ফসলের স্বপ্ন …
পড়ে থাকবে ঘাম-নিঃশ্বাসের ব্যর্থতা
আর অস্তিত্বের শিকড় …
পড়ে থাকবে কবিতা লেখার সরঞ্জাম
না লেখা কবিতা
আর ভাবনার মেঘ-মল্লার।

তবু তুমি উড়ে যেতে পারো
যেতে পারো নিজস্ব সংগ্রহশালা ছেড়ে
অন্য কোনও উদাসীর দেশে
উজ্জ্বল কোনও স্বপ্নের খেয়ালে …
শুধু অনুরোধ –
যেতে যেতে লিখে রেখো
যাত্রাপথের আনন্দ গান
আর চাওয়া-পাওয়ার নীতিহীন দিনলিপি।

ইচ্ছে হলে উড়ে যেতে পারো পাখি হয়ে …

প্রতিশ্রুতির নাগপাশে – গোবিন্দ মোদক

শ্রাবণের বৃষ্টি না আসলে
তোমার দেওয়া চিঠি খুলে দেখবো না
— এমন একটা আষাঢ়ে প্রতিশ্রুতি
তোমাকে দিয়েছিলাম
নিতান্ত কিছু না ভেবে দুর্বলতাবশতঃ।
অথচ দগ্ধদিনের যাত্রাপথ শেষে
আজও না এলো কোমল বৃষ্টি …
না সঞ্চারিত হলো মেঘের কাজল,
শুধু বুকপকেট জুড়ে হাঁসফাঁস করে উঠলো
রঙিন চিঠির খাম
ঘামে ভিজে ছিঁড়ে গেলেও
তাকে খোলা যাবে না,
কেন না নিতান্ত অজ্ঞ আমি
যে ভীষণভাবেই তোমার কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ
সাধ্যমতো সত্যধর্ম পালনের জন্য!

সব শেষের আলোটুকু

তারপর কি হলো?

তারপর আবার কি হবে! যা হবার তাই হলো!
আকাশ জুড়ে দিব্য চাঁদ উঠলো।
চাঁদের আলোর এক তৃতীয়াংশ
খোলা জানলাপথে তোমার ঘরে প্রবেশ করলো
তোমাকে আলোকিত করতে।
এক তৃতীয়াংশ গেলো তোমার শত্রুপক্ষের বাড়ি
তাদের মুখে ঝামা ঘষে দিতে
আর বাকি এক তৃতীয়াংশ গেলো মিত্রপক্ষের কাছে
তাদেরকে সাধুবাদ জানাতে!

ব্যাস! গল্প শেষ! তাহলে তুমি কি করলে?

আমি? আমি দাঁড়িয়ে রইলাম
সর্বাঙ্গে যুগের অন্ধকার মেখে
আর আমার বুক পকেটে ভাঁজ হয়ে পড়ে রইলো
জ্যোৎস্নার নামে লেখা চিঠির কাগজখানা।

সুন্দরের কাছাকাছি

সুন্দরের কাছে এলে
কেউ ভাবে —
ইস! আমি এতো কুৎসিত!
কেউ ভাবে —
আমিও কম সুন্দর নই!
দেখবার চোখে একই হলেও
অনুভূতি আলাদা।
তাই বুঝি পৃথিবীটা এত সুন্দর!
তাই বুঝি এতো পাখির কূজন!
তাই বুঝি বায়ু বয়, ফুল ফোটে;
আর নদী শোনায় —
বয়ে চলার জীবনদায়ী সুন্দর গান!

ফুল ফোটার অপেক্ষায়

কাঁটা আছে জেনেও
নিজের হাতে একটা গোলাপ গাছ পুঁতেছিলাম
কোনও এক আষাঢ় অপরাহ্ণে
বৃষ্টির অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও।

এখন শুধু লোভনীয় ক্লান্তিকর অপেক্ষা —
কবে ধরে উঠবে কুঁড়ি
আর ক্ষতবিক্ষত হবো জেনেও
তাকে ফোটাবার দুরন্ত আহ্বান!

গোলাপের কাঁটাময় হলেও
জানি —
পাঁপড়ির কোমলতার তুলনা পাওয়া ভার!

নয়ের ঘরের নামতা

ছোটবেলায় নয়ের ঘরের নামতা মুখস্থ করা
আমার কাছে ছিল
পৃথিবীর অন্যতম সুকঠিন কাজ।
বড়ো হয়ে বাইরে থেকে দরজার ছিটকিনি খোলার
রহস্যময় কৌশল আবিষ্কারের মতোই
তা জলভাত হয়ে গেল।
কিন্তু বড় বয়সে কোথায় নামতা
আর কোথায় সেই গুরুমহাশয়ের বেতের ভয়!
আজ ঊনিশ ঘরের নামতাও
না থেমে বলে দিতে পারি অনায়াস দক্ষতায়।

অথচ পঁচিশ বছর পেরিয়ে এসেও
মুখস্থ হলো না
তোমার শরীরের গলিঘুঁজির নামতা সমূহ!
তাই পদে পদে হোঁচট খাওয়ার ভয়!
আর তা যে মোটেও অমূলক নয়
তা তোমার চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না।

বনমানুষ

আমার দেহের সর্বত্র বেড়ে উঠেছে লোম
প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে।
বেড়ে উঠেছে গোঁফ ও দাড়ি।
ভীষণদর্শন করেছে আমায়।
মাথাভর্তি জটা-চুল তাকে শাণিত করেছে।
জানি —
এ অবস্থায় ভদ্রসমাজে যাওয়া চলে না।
নিদেনপক্ষে প্রয়োজন একজন নরসুন্দরের।
কিন্তু —
আমার থাবার নিচে লুকানো যে রোম,
তাকে সুন্দর করবে কোন নরসুন্দর?
হে প্রার্থিত দেবতা!
আমাকে বনমানুষ করে দাও!

নুন প্রসঙ্গ – গোবিন্দ মোদক

কিছু না ভেবেই
কথা দিয়েছিলাম —
পৃথিবীতে রেখে যাবো
তিন ভাগ জল।
কিন্তু এখন —
নুন আনতে পান্তা ফুরায়।
ফুরায় পান্তা ভাতের জল।
পড়ে থাকে শুধু নুন আর নুন।
তিন ভাগ জলের বেশিটাই
তাই লবণাক্ত হলো ….
হলো অমোঘ নিয়ম মেনেই।
অথচ কিছু না ভেবেই কথা দিয়েছিলাম।

প্রভাত

ভোরের বেলা শিশির কণা
যখন চুমু দিয়ে যায় ঘাসে,
পূব আকাশের কোণে তখন
সূর্য্যি মামা হাসে।

মধুর মধুর হাওয়া যে বয়
দোলে গাছের পাতা,
ফুলগুলি সব নৃত্য করে
ঘাসে দোলায় মাথা।

সবুজ পাতার ঝোপের মাঝে
হলুদ রঙের উঁকি,
ঘাসের বুকের মধ্যে থেকে
ছোট্ট ফুলের টুকি!

ঘুমের থেকে জাগো এবার
ছ’টা যে প্রায় বাজে,
প্রস্তুত হও লেগে পড়ো
নিজের নিজের কাজে॥

স্কুলের শাস্তি

ক্লাসে পড়া পারেনি তাই
নাইন বি’র প্রলয় ঘোষ,
সবার মাঝে কানটা ধরে
করল বিশ ওঠবোস।

হোমটাস্ক করেনি তাই
এইট-এর উদয় শীল,
গুনে গুনে আটখানা সে
খেলো খুব জোর কিল!

তপন দাস টেনের ছেলে
করেছিল কি ঠাট্টা,
সদা স্যার লাগালেন তাকে
গণ্ডা চারেক গাট্টা!

বাগানের থেকে ফুল কয়খানা
ছিঁড়েছিল গফফর,
হেড স্যার কষালেন তাকে
জোর এক থাপ্পড়!

লাস্ট-বেঞ্চে বসে যদু পাল
ডাকছিল হরবোলা,
উপহার পেলো অনায়াসে সে
জোর এক কানমলা!

আজব স্কুলে আজব ব্যাপার
শাস্তিটা সব ক্ষেত্রে,
ভালোবাসার চেয়ে বিশ্বাস খুব
চড়, থাপ্পড়, বেত্রে!!

টাকার জোরে

টাকার জোরে সব কেনা যায় সোনা রূপা হীরে
টাকাই একা দেখায় দিশা সমস্যারই ভিড়ে।
টাকার জোরে সব কেনা যায় বাড়ি জমি গাড়ি
টাকা থাকলেই দেওয়া যাবে মহাকাশে পাড়ি।
টাকার জোরে সব কেনা যায় সম্মান যশ মান
টাকার জোরেই খুব করা যায় বিতর্ক খান খান।
টাকার জোরে কাঠের পুতুল বাড়িয়ে দেবে হাত
টাকার জোরে আকাশ-পাতাল দিনকে করে রাত।
টাকার জোরে বিদেশ গমন ডিগ্রি টাকার জোরে
টাকার জোরেই দোষীর বিচার উল্টোদিকে ঘোরে।
টাকার জোরে মরা গাছেও তাজা ফল ধরে
ধর্মের কল টাকার জোরে তবুও নাকি নড়ে!
টাকার জোরেই মাটি টাকা, টাকা হয় মাটি
তবু টাকায় যায় না কেনা মায়ের স্নেহ, খাঁটি।

আমার কলম

আমার কবিতা লেখার কলমখানি
দাম তার দুই টাকা
সাধারণের চেয়েও সাধারণ
তবে কাজে ভীষণ পাকা।

তেতুলতলার হাটের থেকে
কিনেছি কলমখানা
বয়স তার দেড় কুড়ি আর
দেখতে লম্বা পানা।

এই কলমে লিখেছি কতো
ছড়া কবিতা পদ্য
রম্য-রচনা প্রবন্ধ আর
গল্প ভরা গদ্য।

পুরস্কার পেয়েছি কতো
এই কলমে লিখে
নাম ছড়িয়েছে কতোই আমার
দেশের দিকে দিকে।

ভাঙা হলেও কলমখানি
আমার কাছে ভালো
আমার চিন্তাধারা জুড়ে
ছড়ায় জ্ঞানের আলো।

আনন্দমেলা

আনন্দমেলায় দারুণ আনন্দ
আর জিনিয়াস জিন্দাবাদ,
ছোটদের মন গড়ে তোলবার
চিরন্তন সেই ছাঁদ।

মজার বিষয়ে মজা আঁকা
দারুণ গল্প ছড়া,
রবিবাসরীয় হাতে পেয়ে
আগেভাগে চাই পড়া।

সঙ্গেতে আছে খুদে নজরদার
বাঘের, ভূতের গল্প,
ইচ্ছে খুশির মজার ছড়া
সংখ্যায় নয় অল্প।

স্কুলের মুশকিল আসান
জাঁকালো জোকসে ঠাসা,
নেড়ি নম্বর ওয়ান কিংবা
মগজ মিটার খাসা!

সব মিলিয়ে আনন্দমেলা
আনন্দে ভরপুর,
ছুটির দিনের সকালবেলায়
বাজাও খুশির সুর॥

গোবিন্দ মোদক | Gobinda Modak

Bengali Poetry 2023 | সুভাষ নারায়ণ বসু | কবিতাগুচ্ছ ২০২৩

Bengali Poetry 2023 | বৃন্দাবন ঘোষ | কবিতাগুচ্ছ ২০২৩

Bengali Poetry 2023 | শিশির দাশগুপ্ত | কবিতাগুচ্ছ ২০২৩

Bengali Poetry 2023 | কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা | কবিতাগুচ্ছ ২০২৩

Shabdodweep Web Magazine | Bengali Poetry in West Bengal | Gobinda Modak

Bengali poetry has been an essential part of the cultural fabric in West Bengal for centuries. The state’s rich literary heritage, filled with passionate poets and their timeless creations, continues to inspire generations of readers and writers alike. The tradition of Bengali poetry in West Bengal has not only shaped the landscape of Bengali literature but also left an indelible mark on global literature. This article explores the evolution, significance, and contemporary expression of Bengali poetry in West Bengal, shedding light on notable poets, their works, and how they contribute to the legacy of Bengali literature.

The Evolution of Bengali Poetry in West Bengal

Bengali poetry has a long and illustrious history, starting from ancient texts like the Charyapada, a collection of mystical verses. Over the years, the style, themes, and structure of Bangla Kobita (Bengali poetry) evolved, adapting to the changing socio-political and cultural landscapes of Bengal.

Early Influences and Classical Poetry

In the early days, Bengali poetry was influenced by Sanskrit and Persian literature. The classical forms of Bengali poetry were mostly devotional and philosophical, with a focus on human emotions, nature, and the divine. Poets like Kazi Nazrul Islam, known as the “Rebel Poet,” infused Bengali poetry with a powerful voice against oppression, while Rabindranath Tagore, one of the most revered Bengali poets, introduced a fusion of lyrical beauty and deep spirituality.

The Bengal Renaissance and Its Impact

The Bengal Renaissance, which began in the 19th century, had a profound impact on the growth of Bengali literature. It was during this period that a poet like Rabindranath Tagore redefined the pattern of Bengali poetry, blending traditional forms with modern sensibilities. Tagore, in particular, used Bangla Kobita to express complex human emotions and nationalistic fervor, making Bengali poetry more accessible and impactful.

Modern Bengali Poetry: New Voices, New Forms

In the 20th and 21st centuries, Bengali poetry in West Bengal evolved into a more diverse field. Poets began experimenting with different forms, themes, and styles, ranging from classical to free verse. This period also saw the rise of poetry movements that dealt with topics such as social justice, feminism, and existentialism.

One of the defining characteristics of modern Bengali poetry is its adaptability. Poets like Sukanta Bhattacharya and Jibanananda Das pushed the boundaries of traditional poetry, creating works that resonated with both contemporary social issues and timeless human emotions.

Contemporary Bengali Poetry in West Bengal

Today, Bengali poetry in West Bengal continues to flourish, with poets exploring new avenues of expression while remaining grounded in the region’s literary traditions. Modern-day poets often experiment with narrative poetry, prose-poetry, and even digital formats to reach a wider audience. The themes of Bengali poetry have expanded to cover not only personal experiences and emotions but also political, environmental, and global concerns.

The Role of Shabdodweep Web Magazine

One of the platforms dedicated to preserving and promoting Bengali poetry in West Bengal is Shabdodweep Web Magazine. This online magazine is committed to showcasing contemporary poets who continue to contribute to the tradition of Bangla Kobita. With a focus on both established and emerging poets, Shabdodweep Web Magazine brings forth a rich collection of poems that reflect the depth and diversity of modern Bengali literature.

Writers like Gobinda Modak have been featured on the magazine, offering insightful works that bridge the gap between traditional and modern Bengali poetry. His poetry, like many others featured on the platform, provides a fresh perspective on the evolving patterns of Bangla Kobita in today’s world. The magazine serves as an important resource for those interested in exploring the ever-changing landscape of Bengali poetry.

Why Read Bengali Poetry in West Bengal?

The significance of Bengali poetry in West Bengal extends far beyond its literary value. Poetry in this region has always been a means of social and political commentary, offering a unique lens through which to understand the cultural, historical, and political context of Bengal. Whether it’s the romanticism of early Bengali poets or the social consciousness of modern poets, the diverse range of styles and voices adds richness to the literary tradition.

Understanding Bengali Literature Through Poetry

Bengali literature cannot be fully appreciated without acknowledging the essential role of poetry. Bangla Kobita has been a source of intellectual stimulation, emotional catharsis, and social critique. The language itself, with its nuanced expressions, lends itself beautifully to the art of poetry, making it an integral part of the Bengali identity.

A Cultural Exploration

Reading Bengali poetry in West Bengal allows readers to immerse themselves in the cultural heritage of the region. The poets of Bengal have always been deeply connected to their roots, often drawing inspiration from the natural landscape, folklore, and the historical events that shaped their society. The beauty of Bangla Kobita lies in its ability to transcend time and space, bringing readers closer to the heart of Bengali culture.

FAQ: Bengali Poetry in West Bengal

What is the importance of Bengali poetry in West Bengal?
Bengali poetry in West Bengal plays a central role in the state’s cultural and intellectual life. It offers a means of expression, both personal and societal, and helps preserve the rich literary heritage of the region.

Who are some famous Bengali poets?
Famous Bengali poets include Rabindranath Tagore, Kazi Nazrul Islam, Sukanta Bhattacharya, Jibanananda Das, and contemporary poets like Gobinda Modak, who contribute significantly to Bengali poetry today.

What themes are explored in Bengali poetry in West Bengal?
Bengali poetry in West Bengal covers a wide array of themes, including love, nature, spirituality, social justice, nationalism, and personal identity. It often reflects the socio-political changes of the time.

How can I explore Bengali poetry today?
You can explore Bengali poetry today through platforms like Shabdodweep Web Magazine, which features contemporary works by poets like Gobinda Modak and many others. The magazine offers a mix of traditional and modern styles, showcasing the evolving pattern of Bengali poetry.

Why should I read Bengali poetry in West Bengal?
Reading Bengali poetry in West Bengal offers a chance to connect with the region’s rich literary tradition, gain insights into Bengali culture, and appreciate the artistry of poets who have shaped the literary landscape of Bengal.

Conclusion

Bengali poetry in West Bengal remains a vibrant and essential part of the state’s cultural heritage. From the classical forms of poetry to the experimental works of contemporary poets, Bengali poetry continues to evolve while staying rooted in its rich literary traditions. Platforms like Shabdodweep Web Magazine play a crucial role in ensuring that modern Bangla Kobita and Bengali literature are preserved and accessible to future generations.

Whether you’re a long-time fan of Bengali poetry or a newcomer eager to explore, Shabdodweep Web Magazine offers a wealth of content that brings you closer to the heart of Bengali literary tradition. Explore the Bangla Kobita and immerse yourself in the world of Bengali poets who continue to shape the literary landscape of West Bengal and beyond.


Sabuj Basinda | Follow our youtube channel – Sabuj Basinda Studio

Leave a Comment