প্রবোধ কুমার মৃধা – সূচিপত্র [Shabdodweep Editorial]
সম্পাদকীয় – মার্চ সংখ্যা, ২০২৩ – প্রবোধ কুমার মৃধা [Shabdodweep Editorial]
শীতের শেষে আবার বসন্ত ফিরে এল। বনে বনে রঙ লাগল।রঙ লাগল মনে মনে। শুরু হলো দখিনা পবনের আনাগোনা। শীতের জড়তা কাটিয়ে প্রকৃতি আবার প্রাণচঞ্চল। দিকে দিকে তাই ‘রাঙা হাসি রাশি রাশি আশোকে পলাশে।’
সাড়ম্বর – সাহিত্য – উৎসবের রেশ মিলিয়ে যেতে আমরা আবার ফিরে এসেছি স্ব স্ব পত্রিকা অঙ্গনে। সারা বছরের পরিচিত চেনা পরিবেশে। এবারের সম্পাদকীয় কলমে গতানুগতিক ধারা ছেড়ে একটু অন্য বিষয়ের অবতারণা করতে চাই।আশা রাখি তাতে সহযোগী বন্ধুগণের সমবেত সহযোগিতা ও সমর্থন লাভ থেকে বঞ্চিত হবো না।
প্রথমতঃ খুবই দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে যে, শব্দদ্বীপ ওয়েব ম্যাগে লেখা আহ্বান বিজ্ঞপ্তিতে প্রতি বার-ই কবি বা লেখক বন্ধুদের প্রতি বিনীত আবেদন থাকে ‘বানানের প্রতি যত্নবান’ হওয়ার জন্য। কাকস্য পরিবেদনা! অনেকেই ব্যাপারটিতে নিজের থেকে যথেষ্ট সচেতন থাকলেও সবাই থাকছেন না। আপন সৃষ্টির প্রতি এতটা অবজ্ঞা কেন বুঝতে পারি না। একই শব্দের বানান ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন রকম। ‘জন্য’ অর্থ বোঝাতে প্রতিশব্দ ‘তরে’ র পরিবর্তে লেখা থাকছে ‘ত্বরে।’ দ্বন্দ্ব বানানটি যদিও বা ঠিক থাকে তো ‘দ্বান্দ্বিক’ হয়ে যাচ্ছে ‘দ্বান্দিক’। ‘ব’ ফলা বিলুপ্ত। দূরত্ব বোঝাতে ‘দূর’ বানান কোথাও ‘হ্রস্ব উ’, আবার কোথাও ‘দীর্ঘ ঊ’। প্রাণের ক্ষেত্রে ‘ন’, ‘ণ’ দুটোই এক সাথে চলছে। ‘ব্যথা’ বানানের দশা দেখলে চোখ ব্যথা করে। ‘সব্যসাচী’ বানানটি বহুরূপীর মতো ক্ষণে ক্ষণে রূপ পাল্টায়। এরকম নমুনা ভূরি ভূরি আছে। এছাড়া আছে স্বর বর্ণের বিকৃতি এবং অকারণ বিযুক্তি। যেমন – ‘বোয়ে’, ‘চোলেছি ‘, ‘কোরেছি’ ইত্যাদি। এখানে ‘অ’ স্বরবর্ণটি বিকৃত হয়ে ‘ও’ হয়েছে। যেমন হয়, কলু (কোলু)। সময়ে সময়ে এমন চলে বটে তবে ‘ক্রিয়াপদে’ সাধারণত চলে না। এছাড়া ‘এ’ বিকৃত হয়ে ‘অ্যা’ হয়ে যায়। যথা, খেলা (খ্যালা), মেলা (ম্যালা), দেখা (দ্যাখা) ইত্যাদি। এরূপ পরিবর্তন মাত্র কয়েকটি নিয়মের অনুবর্তী। আবার স্বরবর্ণ বিযুক্ত হওয়ার নমুনা পেলাম যেমন, অগোচরে হয়ে গেল অগচরে। ‘ও’ বিলুপ্ত হয়ে ‘অ’ হয়ে গেল। বানানটি অশুদ্ধ।
বাংলা বর্ণমালা এমনিতেই জটিল। এর উপর বাংলা ব্যাকরণে আছে অনেক বিধি বিধান। সবকুল বজায় রেখে বাংলা বর্ণ তথা শব্দ ভান্ডারকে অক্ষুণ্ণ রাখার দায়িত্ব যদি বাংলা সাহিত্যে-সেবী ব্যক্তিবর্গ সযত্নে পালন না করেন তো বাংলার ভাবী প্রজন্মের নিকট জবাবদিহির একটা দায়বদ্ধতা থেকে যাচ্ছে না কি? আর যে কোন ভাষার ব্যাকরণ হলো ভাষার সংবিধান, তাকে অমান্য করার সুযোগ কোথায়? পত্রিকা কর্তৃপক্ষের কাছে এই দায়িত্ব পালনের মতো সময় এবং সুযোগ দুটিরই অভাব। তাইতো পত্রিকার তরফ থেকে সবিনয়ে সেই দায়িত্ব পালনের ভার সম্পূর্ণভাবে রচনাকার বন্ধুদের উপর ন্যস্ত করেছেন।
আমার সুধী বন্ধুগণ! আপনাদের জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা কোনটারই ঘাটতি নেই জানি; কেবল অনবধানতবশতঃ এমনটি ঘটে থাকছে। একটু বাড়তি যত্ন নিলে বা সময় দিলে সাধারণ অসঙ্গতিগুলির হাত থেকে উত্তরণ অবশ্যই সম্ভব। অনেক সতর্কতা সত্ত্বেও দু-একটা অসঙ্গতি মাঝে মধ্যে আমারও হচ্ছে, তবে সংখ্যা প্রকাশের পর তেমন কিছু থাকলে টিম শব্দদ্বীপের সাহায্যে সেগুলি সংশোধন করে নিয়ে থাকি।
নতুন নতুন বন্ধু যারা শব্দদ্বীপের লেখক / লেখিকা তালিকা ভুক্ত হচ্ছেন তাদের মধ্যে এক-দুজনকে দেখছি অন্য সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করা সৃষ্টি থেকে দু-একটা আবার নতুন করে শব্দদ্বীপের জন্য পাঠাচ্ছেন এবং যথাসময়ে তা প্রকাশও পাচ্ছে, কারণ কা’র কোনটি ‘প্রকাশিত’ আর ‘অপ্রকাশিত’, নির্দিষ্টভাবে জানা পত্রিকা কর্তৃপক্ষের পক্ষে সকল সময় সম্ভব হয়ে ওঠে না, তবে বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে প্রতিবারে সতর্কভাবে সবাইয়ের গোচরে আনার আবেদন রাখা হয়।
আরো একটা বিষয় উল্লেখ না করে পারছি না, তা হলো, শব্দদ্বীপের তরফ থেকে যথাসময়ে সংশ্লিষ্ট বিষয় ভিত্তিক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে থাকা সত্ত্বেও কোন কোন বন্ধু এমন অনেক বিষয় জানতে চেয়ে ফেসবুক পেজে প্রশ্ন রাখছেন যার উত্তর যথাযথভাবে পূর্ব ঘোষিত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করাই থাকছে। সেই সমস্ত বন্ধুদের অনুরোধ করব, আপনারা বিজ্ঞপ্তিগুলি দয়া করে মনোযোগ সহকারে পাঠ করুন, তার মধ্যে আপনার জিজ্ঞাস্যের সব উত্তর পেয়ে যাবেন।
আর দীর্ঘায়িত করব না। অতিথি সম্পাদক হিসেবে আমার সময় শেষ। নবাগত অতিথি সম্পাদকের অপেক্ষায় থাকব। শব্দদ্বীপ এবং শব্দদ্বীপের সকল সদস্য বন্ধু এবং শুভানুধ্যায়ী বন্ধুদের সহৃদয় সহানুভূতি আন্তরিকভাবে কামনা করে এখানেই শেষ করলাম।
নমস্কারান্ত,
প্রবোধ কুমার মৃধা
সম্পাদকীয় – ফেব্রুয়ারি সংখ্যা, ২০২৩ – প্রবোধ কুমার মৃধা [Shabdodweep Editorial]
নতুন বছরে শব্দদ্বীপের অতিথি সম্পাদক হিসেবে দ্বিতীয় বারের জন্য সম্পাদকীয় কলম উপস্থাপনায় আবার এলাম একবার। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের প্রারম্ভে শব্দদ্বীপ আঙ্গিকগত কিছু পরিবর্তন ঘটিয়েছে তা’ নতুন করে আর বলার অপেক্ষা রাখে না, কারণ ইতিমধ্যে শব্দদ্বীপ ওয়েব ম্যাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল স্তরের লেখক-পাঠক-শুভানুধ্যায়ী সবাই অবগত হয়েছেন। একটা সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশের মধ্যে মুষ্টিমেয় দু-একজন ব্যক্তি মানুষের মহৎ একটা উদ্দেশ্য থাকে, সেই মহতী উদ্দেশ্য সাধন কর্ম কান্ডের অংশীদার হয়ে যাই আমরাও; তাই সংশ্লিষ্ট পত্রিকার ভালো-মন্দ, উন্নতি-অবনতির দায়ভার প্রকারান্তরে যে আমাদের উপর বর্তায় তা’ নতুন করে বলার প্রয়োজন হয় না।
সাহিত্যের আঙিনায় আমরা মিলিত হই ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতি ও ভিন্ন ভিন্ন বুদ্ধি-প্রবৃত্তি-রুচির মানুষজন, কিন্তু সাহিত্য এমন একটা নান্দনিক বিষয় যেখানে সবাই এক আত্মিক যোগ সূত্রে ঐক্যবদ্ধ হতে পারি। মানুষ পৃথক পৃথক অবস্থায় খন্ড খন্ড ভাবে নিজেকে প্রকাশ করে, যেমন, পর্যবেক্ষণকারী মানুষ রচনা করেন বিজ্ঞান, তেমনি চিন্তাশীল মানুষ রচনা করেন দর্শন। কিন্তু সাহিত্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে আমরা সমগ্ৰ মানুষটিকে পাই। কাননের পুষ্প চয়ন করে আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে গাঁথা হয় মালা।মানব মনের বিচিত্র ভাব মাধুরী থেকে ভাবনা আহরণ করে ভাষার শব্দ শৃঙ্খলে গড়ে ওঠে সাহিত্যের ইমারত। সাহিত্য সৃষ্টির মধ্য দিয়ে স্রষ্টার সমগ্ৰ সত্ত্বার আত্মপ্রকাশ ঘটে।
বাঙালি ভীষণ ভাব প্রবণ। দৈনন্দিন জীবনে বুদ্ধি-যুক্তি অপেক্ষা ভাবই তাকে তাড়িয়ে নিয়ে চলে অধিক সময়। ভাব যখন ঘনীভূত হয়ে ওঠে তখন তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে সংগীত অথবা সাহিত্যের মাধ্যমে। তখন তার কণ্ঠে আসে গান, ভাবনায় আসে কবিতা। হতে পারে তা বিক্ষিপ্ত বা বিচ্ছিন্ন, তবু তার উপযোগিতা সমাজের কাছে গ্ৰহণযোগ্য না হলেও ব্যক্তির আপন সত্তার কাছে মূল্য অপরিসীম। ভাব প্রকাশের শর্ত নিছক শিক্ষার উপর নির্ভর করে না। কারণ দস্যু রত্নাকরই একদিন রামায়ণ প্রণেতা বাল্মীকি হয়ে উঠেছিলেন। এখানে একটা বিতর্ক উঠতে পারে। প্রতিভা শিক্ষা সাপেক্ষ না শিক্ষা নিরপেক্ষ। এ-নিয়ে বিস্তর গবেষণা, বিস্তর কাটা-ছেঁড়া হয়েছে, পক্ষে বিপক্ষে যথেষ্ট মতামত সংগঠিত হয়েছে, কিন্তু কোন ক্ষেত্রেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
বাঙালি যে অতিমাত্রায় ভাব প্রবণ তা’ ছোট একটা নমুনাতেই প্রমাণ পাওয়া যায়। অন্য গোষ্ঠীর লোকজন দিনের শেষে কর্ম অন্তে ঘরে ফেরার পথে পুষ্টির জন্য নিয়ে যায় ফল কিনে, বাঙালি সেখানে তুষ্টির জন্য নিয়ে আসে ফুল কিনে। তার ভাবুক মনের সৌন্দর্য বিকাশের রসদ। শিক্ষা-সভ্যতা যত প্রসার লাভ করছে, সাহিত্যের প্রতি, সাহিত্য সৃষ্টির প্রতি মানুষের আগ্রহ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রমাণ মেলে মুদ্রিত কিংবা অনলাইন ম্যাগাজিনে নতুন নতুন কবি তথা লেখকদের ব্যাপক সংখ্যায় অংশগ্রহণ দেখে। ছোট হোক, বড়ো হোক, নামী কিংবা অনামী, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সাহিত্য স্রষ্টার আধিক্য চোখে পড়ার মতো। যার অধিকাংশই কবি। আসলে কবিতা হলো মানব মনের ভাবের সৃষ্টি, যত সহজে মনের মধ্যে কবিতা বা ছন্দের আবির্ভাব ঘটে, ততটা সহজে গল্প-প্রবন্ধ আসে না।
পূর্ণ উদ্যমে চলছে কলকাতা পুস্তক মেলা।করোনার ভ্রুকুটি স্তিমিত হয়ে যাওয়ার কারণে এবং বিগত দু-বছরের মতো বিধ্বংসী প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকার ফলে সকল স্তরের পুস্তক প্রেমী মানুষ জন এবছর খোলা মনে বাংলার বড়ো সাহিত্য উৎসবটিতে অংশগ্রহণ করতে পারছেন। বিভিন্ন পত্র পত্রিকার কর্তা ব্যক্তিগণ নিজ নিজ বিপণি কেন্দ্রগুলিকে নতুন নতুন পুস্তক-পত্রিকার সম্ভারে সাজিয়ে পুস্তক মেলা প্রাঙ্গণের জৌলুস বৃদ্ধি করেছেন। মেলা উপলক্ষে মেলা প্রাঙ্গণে প্রকাশনা সংস্থাগুলির মধ্যে গড়ে ওঠে নিবিড় সৌহার্দ্য। সাহিত্যের সার্বিক মঙ্গল সাধনায় এমন যোগাযোগ এবং পারস্পরিক বন্ধুত্বের বাতাবরণ সারা বছর বজায় থাকা দরকার, তাতে সাহিত্যের কল্যাণ সাধিত হয়।
ফেসবুকের সৌজন্যে বিপুল সংখ্যক নবীন লেখক / লেখিকা সাহিত্য জগতে অনুপ্রবেশ করছেন, এবং একটা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার লক্ষ্যে এগিয়ে আসছেন। বিষয়টি অভিনন্দন যোগ্য, তবে এই সমস্ত সম-মনস্ক বন্ধুগণ যদি পরস্পর নিরন্তর যোগাযোগ রেখে ভাব বিনিময় এবং সাহিত্য সংক্রান্ত আলাপ আলোচনার মাধ্যমে কাজ করেন তাহলে দ্রুত অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি ঘটে আর নিজ নিজ সৃজনশীল মৌলিক গুণগুলি পরিণত অবস্থা প্রাপ্ত হয়। কথাগুলি আমার আদেশ, উপদেশ বা পরামর্শ নয়। শব্দদ্বীপের অতিথি সম্পাদক হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতার সুবাদে লব্ধ এ আমার আন্তরিক আবেদন। আশা করি সহযোগী বন্ধুগণ ভুল বুঝবেন না। শেষে সবাইকে শব্দদ্বীপ ওয়েব ম্যাগের ফেব্রুয়ারির সাধারণ সংখ্যা প্রকাশের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে শেষ করছি।
নমস্কারান্তে,
প্রবোধ কুমার মৃধা
সম্পাদকীয় – জানুয়ারি সংখ্যা, ২০২৩ – প্রবোধ কুমার মৃধা [Shabdodweep Editorial]
ইংরেজি নতুন বছর পড়েছে। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ শুরু করেছে তার পথ চলা। নতুন করে মানুষের মনে নবীন আশার আভাস জাগছে। বিগত বছরে যা ঘটে গেছে তা ভুলে গিয়ে নবোদ্যমে বুক বাঁধার উৎসাহ সঞ্চারিত হচ্ছে মনের গহনে। শীতের শুরুতে দিকে দিকে চলছে রকমারি উৎসবের আয়োজন। দলবেঁধে বনভোজন, পাহাড়-জঙ্গল-সমুদ্র পর্যটন।
শুরু হতে চলেছে কলকাতা বইমেলা। পুজো সংখ্যা প্রকাশের হিড়িক মিটে যাওয়ার পর বাংলার বুকে বাংলা ভাষা তথা বাঙালির এতো বড়ো সাহিত্য উৎসব দ্বিতীয় আর নেই। বিভিন্ন ধরণের পুস্তক, ছোট বড়ো পত্রপত্রিকা প্রকাশ উপলক্ষে এই পুস্তক মেলার আয়োজন ও উৎসাহ ঘিরে সাহিত্যপ্রেমী মানুষজনের মধ্যে তৈরি হয় গভীর উন্মাদনা। পুস্তক মহোৎসবের এমন মিলন মেলার আকর্ষণে আট থেকে আশি সবার মধ্যে সৃষ্টি হয় এক ধরণের চঞ্চলতা। বিশেষত নবীন লেখক-লেখিকা যারা, বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয় তাদের গল্প, কবিতা, অনেকের নতুন গল্প গ্ৰন্থ বা কাব্য গ্ৰন্থ প্রকাশ পায় এই মেলা উপলক্ষে। সেজন্য অখ্যাত তরুণ সাহিত্যিকবৃন্দ সারা বছর ধরে অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করেন রাজধানী শহরের বুকে অনুষ্ঠিত পুস্তক মহোৎসব শুরুর মাহেন্দ্রক্ষণটির জন্য। নামী-দামী পত্রপত্রিকার পাশাপাশি বহু ছোট অনামী পত্রপত্রিকা বইমেলা উপলক্ষে প্রকাশ করে তাদের বিশেষ সংখ্যা। পিছিয়ে থাকে না ওয়েব ম্যাগাজিনগুলিও, তারা অনেকে এই সময়টাতে মুদ্রিত সংস্করণ প্রকাশে তৎপরতা দেখায়। সব মিলিয়ে সাহিত্যের সঙ্গে যুক্ত সকল স্তরের ব্যক্তিবর্গ অতিমাত্রায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
সাহিত্য মানুষের বিনোদনের সঙ্গী, অবসর যাপনের একান্ত বন্ধু। সদ্গ্ৰন্থ মানুষের জীবনকে সঠিক পথে চালিত করতে সহায়তা যুগিয়ে থাকে। বিশ্বের অনেক দেশে ব্যক্তিগত উদ্যোগে অথবা জনকল্যাণব্রতী কোন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সৌজন্যে তরুণ প্রজন্ম থেকে লেখক-লেখিকা গড়ে তোলার ব্যবস্থা আছে। একেবারে অদক্ষ, আনাড়ি অথচ উৎসাহী নবীন সাহিত্য সেবীগণ এতে উপকৃত হন। ধীরে ধীরে তাদের সাহিত্য সৃষ্টির নিপুণতা বৃদ্ধি পায়, যার ফলশ্রুতিতে নতুন প্রতিভার সন্ধান যেমন পাওয়া যায় তেমনি দেশের সাহিত্য ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। আমাদের এখানে তেমন কাজটা বর্তমানে পালন করছে বিভিন্ন লিটিল-ম্যাগাজিন সমূহ। বিশেষ করে দিকে বিদিকে প্রতিষ্ঠিত ওয়েব ম্যাগাজিনগুলির ভূমিকা এখানে প্রচুর কৃতিত্বের দাবি রাখে। অচেনা, অখ্যাত, অজ্ঞাত ব্যক্তিবর্গের পরিণত-অপরিণত রচনা সমূহ নির্দ্বিধায় প্রকাশ করে চলেছেন, যার কারণে, কাঁচা হাতের কাঁচা লেখাগুলো পাকা হয়ে ওঠার অনুশীলন মঞ্চ পেয়ে ভাবীকালের আঙিনায় নিজেদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ লাভ ঘটছে অনেকের। যে-সুযোগটি খ্যাতনামা মুদ্রিত পত্রপত্রিকায় পাওয়ার সৌভাগ্য হয়তো সবাই কখনোই লাভ করতে পারতেন না। ওয়েব ম্যাগাজিনের সৌজন্যে প্রকৃত বিদগ্ধজনেরা নিজেদের অভিজ্ঞতা বাড়িয়ে আপন সৃষ্টিকে আরো সমৃদ্ধ করে তুলতে সক্ষম হচ্ছেন। এটি খুবই ভালো লক্ষণ।
তবে এই সমস্ত পত্রপত্রিকা সমূহের (প্রিন্টেড কিংবা অনলাইন) উপর অলিখিত একটা গুরু দায়িত্ব বর্তায়, এবং সেটি তাদেরকে সুষ্ঠুভাবে পালন করা দরকার। দেখতে হবে সাহিত্যর শৈলী যাতে আদর্শ চ্যুত না হয়ে সঠিক দিশায় অগ্ৰবর্তী হয়। একাধারে পৃষ্ঠপোষক ও সমালোচক এই দ্বৈত ভূমিকায় দায়িত্ব পালন করতে হবে যথাযথ নিষ্ঠার সঙ্গে। নিছক আর্থিক লক্ষ্যে না গিয়ে নির্ধারিত নিয়ম নীতি মোতাবেক সামাজিক দায়িত্ব পালনের বিষয়টি আন্তরিকতার সাথে বাস্তবায়ন করুন এমনটাই আশা করব। অন্যথায় অযোগ্যেরা অকারণ যোগ্যতার দাবিদার হয়ে নিজেদের সঠিক মূল্যায়নে ভুল করে বসতে পারেন।
ওয়েব ম্যাগাজিন গোষ্ঠীর দলে শব্দদ্বীপ একটি। ২০২০-এর জুনে যার যাত্রা শুরু, অথচ এই স্বল্প সময়ের মধ্যে শব্দদ্বীপ আপন স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে সংযত, ধীর, প্রাজ্ঞচিত ভাবমূর্তির কল্যাণে বহির্বিশ্বের দরবারে নিজের পরিচিতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিঃশব্দে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। তার মূলে আছে শব্দদ্বীপ পরিবারভুক্ত শব্দশিল্পীবৃন্দের পরিণত মানের সৃষ্টিকর্ম এবং টিম শব্দদ্বীপের কর্ম কুশলীদের নিষ্ঠা, অনলস প্রচেষ্টা এবং সর্বোপরি আন্তরিক সদিচ্ছা। স্বনাম ও সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখতে নতুন বছরে ‘শব্দদ্বীপ’ অর্জিত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পত্রিকার আঙ্গিকগত দু’একটি পরিবর্তন ঘটিয়েছে। পাক্ষিক থেকে মাসিক পত্রিকায় রূপান্তর ও দৈনিক রচনা প্রকাশের উপর জোর দিয়েছে।
আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে হাতের মুঠোয় থাকা যন্ত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন ওয়েব ম্যাগাজিনের সন্ধান পেয়ে নিজেদের সৃষ্টিকর্মগুলি অবাধে মেইল মারফত পাঠিয়ে অতি সহজে তার উৎকর্ষ যাচাই করে নিতে পারছেন এবং সাহিত্য চর্চায় যুক্ত থেকে সাহিত্য অনুশীলনের মধ্য দিয়ে আপন আপন প্রতিভা বিকাশের সুযোগ লাভ করছেন বহু নবীন ও তরুণ লেখক-লেখিকা। শব্দদ্বীপ এমন অনাগত নবীনদের জানায় সাদর আহ্বান।
পরিশেষে শব্দদ্বীপের সঙ্গে যুক্ত সকল শুভানুধ্যায়ীকে জানাই ইংরেজি নব বর্ষের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা। শব্দদ্বীপ পরিবারের একজন হয়ে আশা করব, কামনা করব, উত্তরোত্তর শব্দদ্বীপের সার্বিক শ্রীবৃদ্ধি ঘটুক।
নমস্কারান্তে,
প্রবোধ কুমার মৃধা
সম্পাদকীয় – ডিসেম্বর ২য় সংখ্যা, ২০২১ – প্রবোধ কুমার মৃধা [Shabdodweep Editorial]
শব্দদ্বীপ পরিবারে আমার সহসাথী বন্ধু বর্গ এবং প্রিয় পাঠক/দর্শককুল, ২০২১ খ্রীষ্টাব্দের বিদায়লগ্নে এবং ২০২২ খ্রীষ্টাব্দ আগমনের প্রাক্কালে সবাইকে জানাই আন্তরিক অভিবাদন। আমাদের সমবেত প্রার্থনা থাকুক করোনা-ক্লিষ্ট ২০২১ এর আতঙ্ক কাটিয়ে ২০২২ আসুক নব ভরসার, নবীন আশার ডালি নিয়ে। আমাদের সুখী পরিবার, শব্দদ্বীপ সাহিত্য সংসার, নতুন নতুন বন্ধু সমাগমে হয়ে উঠুক মুখরিত। শব্দদ্বীপ এগিয়ে চলুক দুর্বার গতিতে।
সাহিত্য নিয়ে অনেক কথা হয়েছে, আজ ও সেই সাহিত্য দিয়েই সাঙ্গ করবো। দেখা যাচ্ছে, সাধারণের জিনিসকে বিশেষভাবে নিজের করে নিয়ে সেই উপায়েই তাকে পুনশ্চ বিশেষভাবে সাধারণের করে তোলাই সাহিত্যর কাজ।
সাহিত্য শব্দের মধ্যে একটি মিলনের ভাব বিদ্যমান। সে মিলন কেবল ভাবে-ভাবে, ভাষায়-ভাষায় বা গ্ৰন্থে-গ্ৰন্থে মিলন নয়, মানুষের সঙ্গে মানুষের, অতীতের সঙ্গে বর্তমানের, দূরের সঙ্গে নিকটের অন্তরঙ্গ যোগসাধন সাহিত্য ব্যতীত আর কিছুর দ্বারা সম্ভবপর নয়। অধিকন্তু সাহিত্য আমাদেরকে সংঘবদ্ধ করতে সহায়তা করে। যে দেশে সাহিত্যের অভাব, সে দেশের লোক পরস্পর সজীব বন্ধনে সংযুক্ত নয়, তারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন।
সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা আছে, তবে সেই শাখাসমূহকে প্রকাশ করার মাধ্যম দুটি, একটি গদ্য,অপরটি পদ্য। রাজা রামমোহন রায়ই প্রকৃতপক্ষে বঙ্গে গদ্য সাহিত্যের ভূমিপত্তন করেছিলেন। তৎপূর্বে আমাদের সাহিত্য কেবল পদ্যেই বদ্ধ ছিল। আশৈশবকাল আমরা গদ্য বলে আসছি, কিন্তু গদ্যে ভাব প্রকাশ যে কী দুরূহ ব্যাপার তা প্রথম দিকের গদ্যকারদের রচনা দেখলেই বোঝা যায়। পদ্যে প্রত্যেক ছত্রের পর একটা করে নিয়মিত ভাবের ছেদ পাওয়া যায়, কিন্তু গদ্যে একটা পদের সাথে আর একটা পদকে বেঁধে দিতে হয়, মাঝে ফাঁক রাখার জো নেই। ছন্দের একটা অনিবার্য প্রবাহ আছে; সেই প্রবাহের মাঝখানে একবার ফেলে দিতে পারলে কবিতা সহজে নাচতে নাচতে ভেসে চলে, কিন্তু গদ্যে নিজে পথ দেখে পায়ে হেঁটে নিজের ভার সামঞ্জস্য বজায় রেখে চলতে হয়, সে কারণে পদ-ব্রজ বিদ্যাটি রীতিমতো অভ্যস্ত না হলে চাল অত্যন্ত আঁকা-বাঁকা, টলমল এবং এলোমেলো হয়ে যায়। গদ্যের সুপ্রণালীবদ্ধ নিয়মটি আজকাল আমাদের অনেকের অনেকটা সড়গড় হয়ে গেছে, কিন্তু অদূর অতীতে এমনটি ছিল না।
দেখা যাচ্ছে, পৃথিবীর আদিম অবস্থায় যেমন কেবল জল ছিল, তেমনি সাহিত্যের আদিম অবস্থায় কেবল ছন্দ তরঙ্গায়িত কবিতা ছিল। তখন যে গদ্য রচনা করাই কঠিন ছিল তা নয়, লোকে অভ্যাস বশতঃ গদ্য প্রবন্ধ সহজে বুঝতে পারত না।
অতিথি সম্পাদক হিসেবে এই সম্পাদকীয় কলমটিই আমার ২০২১ সালের শেষ কলম। জানিনা, আমার সম্পাদকীয় কলমে শব্দদ্বীপ পরিবারভুক্ত বন্ধুদের ক’জনকে খুশি করতে পেরেছি। যদি এক জনকে ও খুশি করতে পেরে থাকি তো নিজেকে কৃতার্থ মনে করব; আর যে কর্তৃপক্ষ ভরসা করে নবাগত আনাড়ি আমাকে এই গুরু দায়িত্ব অর্পণ করে নিশ্চিন্ত ছিল, তাদের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি ন্যস্ত দায়িত্বটি যথাসাধ্য পালনের জন্য, কতটা পেরেছি তার শেষ কথা বলার দায়ভার আপনাদের সবার উপর ছেড়েই দিলাম। সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ করছি।
ইতি,
প্রবোধ কুমার মৃধা
সম্পাদকীয় – ডিসেম্বর ১ম সংখ্যা, ২০২১ – প্রবোধ কুমার মৃধা [Shabdodweep Editorial]
গ্ৰাম বাংলার মানুষ আমি,
পেলাম শব্দদ্বীপের ভিসা ।
সুযোগ সম্মান সবই দিল,
ধরালো সাহিত্যচর্চার নেশা।
ভালো বাসার আপ্যায়নে
করল আমায় ঋণী।
শব্দদ্বীপের একজন হয়ে
নিজেকে ধন্য মানি।
শব্দই ব্রহ্ম। শব্দদ্বীপ সেই শব্দরূপ ব্রহ্মের আরাধনায় নিয়োজিত।সচ্চিদানন্দ ব্রহ্মই নিজেকে প্রকাশ করছে আনন্দরূপ ও অমৃতরূপের ভিতর দিয়ে।
উপনিষদ বলছে,’আনন্দরূপমমৃতং যদ্ বিভাতি।’
যা’ কিছু প্রকাশ পাচ্ছে তাই-ই তাঁর আনন্দরূপ, তাঁর অমৃতরূপ। আমাদের পায়ের নীচের ধূলি থেকে আকাশের নক্ষত্র পর্যন্ত সমস্তই সত্য এবং সমস্তই সুন্দর,সমস্তই আনন্দরূপমমৃতম্। সত্যের এই দুই রূপ দেখে উপলব্ধ আনন্দকে ব্যক্ত করাই কাব্যসাহিত্যের লক্ষ্য। সত্যকে যখন শুধু চোখে দেখি, বুদ্ধিতে পাই, তখন নয়, কিন্তু যখন তাকে সম্পূৰ্ণ হৃদয় দিয়ে পাই তখনই তাকে সাহিত্যে প্রকাশ করতে পারি। তবে কি সাহিত্য কলাকৌশলের সৃষ্টি না হয়ে কেবল হৃদয়ের আবিষ্কার? না। এর মধ্যে সৃষ্টির ও একটা ভাগ আছে।সেই আবিষ্কারের আনন্দকে হৃদয় আপনার ঐশ্বর্য দ্বারা ভাষায় বা ধ্বনিতে বা বর্ণে চিহ্নিত করে রাখে, এতেই সৃষ্টি নৈপুণ্য, তাই-ই সাহিত্য, সংগীত এবং চিত্রকলা ।
সত্যকে মানুষ যেখানে নিবিড় রূপে অর্থাৎ আনন্দ রূপে, অমৃতরূপে উপলব্ধি করেছে সেখানেই আপনার একটা চিহ্ন কেটেছে, সেই চিহ্ন কোথাও মূর্তি, কোথাও মন্দির-মসজিদ, কোথাও বা তীর্থ, কোনও বা রাজধানী। সাহিত্য ও সেই রকম একটা চিহ্ন। এমনি করে মানুষ জলে-স্থলে, অন্তরীক্ষে, বসন্তে-বর্ষায়, ধর্মে-কর্মে-ইতিহাসে অপরূপ চিহ্ন স্বরূপ সুন্দরের সৌন্দর্যের প্রতি মানুষের হৃদয়কে নিয়ত আহ্বান করছে। দেশে দেশে, কালে কালে, জগতের সর্বত্রই মানুষ সাহিত্যের দ্বারা হৃদয়ের এই চিহ্নগুলি যদি না কাটত তবে জগৎ আমাদের কাছে আজ কত সংকীর্ণ হয়ে থাকত তা কল্পনা করা যায় না।
সাহিত্য আমাদের জানাচ্ছে, সত্যই আনন্দ, সত্যই অমৃত। সাহিত্য উপনিষদের এই মন্ত্রকে অহরহ ব্যাখ্যা করে চলেছে: ‘রসো বৈ সঃ ।রসং হোবায়ং লব্ধানন্দী ভবতি।’ তিনিই রস, এই রসকে হৃদয়ঙ্গম করে মানুষ আনন্দিত হয়। সাহিত্যের ভিতর দিয়ে যে উপাসনায় ব্রতী হয়েছি আমরা, তা কোন অংশেই তুচ্ছ নয় ।একটা কবিতা বা একটা গল্পের উপাচার ক্ষুদ্র হতে পারে তবে নগণ্য নয়। যার যতটুকু সামর্থ্য তা-ই সম্বল করে ব্রহ্মের আনন্দ রূপের রস আস্বাদনের অংশীদার হওয়ার গৌরব হোক আমাদের জীবন পথের পাথেয়। এতেই পাওয়া যাবে শান্তি, তৃপ্তি, সকল চাওয়ার পরিসমাপ্তি ।
শব্দদ্বীপের সঙ্গে আছি, শব্দদ্বীপের শ্রীবৃদ্ধি কামনা করি। আমাদেরকে সাথে নিয়ে শব্দদ্বীপ এগিয়ে চলুক আপন স্বাতন্ত্র্যের সমুজ্জ্বল মহিমায়। বৈশিষ্ট্যে, বৈচিত্র্যে, নান্দনিক বিশেষত্বে শব্দদ্বীপ ওয়েব ম্যাগাজিন দেশে-বিদেশে নবদিগন্তের এক স্বরূপ উদঘাটন করুক, আমরা শব্দদ্বীপ পরিবারের অন্তর্ভুক্ত সবাই সেই সফলতার অপেক্ষায় অনেক প্রত্যাশা নিয়ে অধীর আগ্ৰহ ভরে দিন গুনব।
সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদান্তে,
প্রবোধ কুমার মৃধা
সম্পাদকীয় – নভেম্বর ২য় সংখ্যা, ২০২১ – প্রবোধ কুমার মৃধা [Shabdodweep Editorial]
আমাদের দিনগুলো বোধ করি খুব তাড়াতাড়ি পার হয়ে যাচ্ছে, দিন ছোট হয়ে আসার কারণে নয়, আসলে আমরা সবাই আছি কাজের মধ্যে ।শব্দদ্বীপের সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালাবার প্রয়োজনে অনেক আগে থেকেই সলতে পাকানোর কাজটা সমাধা করে রাখতে হয়।মাসে চার দফায় লেখা প্রকাশের তাগিদে এই লেখালেখির কাজ নিয়ে আমাদের সময়টা কোথা থেকে যে অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে খেয়ালই থাকছে না।
একটা সৃষ্টি কর্মকে সর্বজন সমক্ষে প্রকাশ যোগ্য রূপে গড়ে তুলতে কতবার যে তার কাটা-ছেঁড়া করতে হয় এবং নতুন করে ভাবতে হয় তা’ ভাব-ভাবনার কারবারি মাত্রেই ওয়াকিবহাল।
অনেক গাছ আছে যে গাছে বোল ধরেই ঝরে পড়ে, ফল হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে না; তেমনি অনেক মন আছে যেখানে ভাবনাগুলো কেবলই আসে যায়, ঘোরাঘুরি করে কিন্তু ভাব আকার ধারণ করতে পারে না, তবে ভাবুক লোকের চিত্তে ভাবনাগুলি পুরোপুরি ভাব হয়ে উঠতে পারে।কিছু ভাবনা ঝরে যায় বটে, তেমনি অনেক ভাবনা আকার ধারণ করতে সমর্থ হয়।এভাবেই ভাবুক-মনের ভাবনাগুলো ভাব হয়ে উঠলে তবেই মানুষের মনের ভাবনা কৃতার্থ হয়।
এই ভাবনাগুলো সজীব পদার্থের মতো তার কৃতার্থতার তাগিদে একটা মন আর একটা মনকে খুঁজছে নিজের ভাবনার ভার নামিয়ে দেবার জন্য, নিজের মনের ভাবকে অন্যের মনে চারিত করার জন্য। এমনই করে এক মনের ভাবনা আর এক মনের মধ্যে সার্থকতা লাভের চেষ্টা গোটা মানব সমাজ জুড়ে চলছে এবং এই চেষ্টার বশে আমাদের ভাবনাগুলো স্বভাবতই এমন একটা আকার ধারণ করছে যা আর ভাবুকের একলার থাকছে না।
এই জন্য সাহিত্যে লেখক যার কাছে নিজের লেখাটি মেলে ধরছে, মনে মনে নিজের অজ্ঞাতসারে তার প্রকৃতির সঙ্গে নিজের লেখাটি মিলিয়ে নিচ্ছে।ঠিক এই কারণে দাশু রায়ের পাঁচালি কেবল দাশুরায়ের একার মনের কথা নয়, এতে একটি বিশেষ কালের, বিশেষ মণ্ডলীর, রাগ-অনুরাগ, ভক্তি-বিশ্বাস, রুচি প্রভৃতি প্রকাশ পেয়েছে।তবে স্বস্তি এই যে, জ্ঞানের কথা একবার জানলে আর জানতে হয় না, কিন্তু ভাবের কথা বারবার অনুভব করে ও শ্রান্তিবোধ আসে না।
সত্যি কথা বলতে কি, শব্দদ্বীপ সাহিত্য পরিবারভুক্ত সবাই আমরা পরস্পরের মধ্যে কথার আদান প্রদান, ভাবের আদান প্রদান ইত্যাদির মাধ্যমে যে নিবিড় একটা সম্পর্কের বাতাবরণ গড়ে তুলেছি তাতে সাহিত্য শব্দটির ধাতুগত অর্থের সার্থক বাস্তবায়ন পরিলক্ষিত হয়।সাহিত্যের দৌলতে তথা ভাব বিনিময়ের কারণে আমরা শব্দদ্বীপ সাহিত্য প্রাঙ্গণে সমবেত হতে পেরেছি সেটাই আমাদের বড়ো পাওনা।ভাবের আদান প্রদানই এখানে মুখ্য।
শব্দদ্বীপের প্রতি সংখ্যায় নতুন করে নতুন নতুন বন্ধুদের অংশ গ্ৰহণ আমাদের ভাব বিনিময়ের ক্ষেত্রটিকে আরও প্রসারিত করে তুলছে, এ বড়ো আনন্দের বার্তা।এভাবেই শব্দদ্বীপ আরও বিস্তার লাভ করুক,আরও এগিয়ে চলুক,দায়িত্ববান সদস্য হিসেবে এই হোক আমাদের সম্মিলিত অঙ্গীকার।
সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদান্তে,
প্রবোধ কুমার মৃধা
সম্পাদকীয় – নভেম্বর ১ম সংখ্যা, ২০২১ – প্রবোধ কুমার মৃধা [Shabdodweep Editorial]
উৎসব শেষে হেমন্তের হিমেল হাওয়া বহে আনছে শীতের আগমন বার্তা। ছুটির বাঁশির সুর বিলীয়মান; বেজে উঠেছে কাজের বাঁশির কলরোল।আপন জনের টানে ঘরে ফেরা মন কেমন করা মনটা ফিরে গেছে কর্মস্থলে, প্রকৃতি যেন আবার ব্যস্ত হয়ে পড়েছে প্রাত্যহিকের কর্মচঞ্চল চেনা ছন্দে।
উৎসবে হয় সুন্দরের আরাধনা। সুন্দর আনন্দ দেয়, তাই সাহিত্যে সুন্দরকে নিয়ে কারবার।সাহিত্যের বাইরে এই সুন্দরের ক্ষেত্র সংকীর্ণ; তবে সৌন্দর্য প্রকাশই সাহিত্য বা আর্টের এক মাত্র লক্ষ্য নয়।
বাক্যং রসাত্মকং কাব্যম্।
মানুষ নানা রকম আস্বাদনেই নিজেকে উপলব্ধি করতে চায় বাধাহীন লীলার ক্ষেত্রে, সেই বিচিত্র লীলাজগতের সৃষ্টি সাহিত্য। সাহিত্যের মধ্য দিয়ে মানুষ নিজের আনন্দকে প্রকাশ করতে থাকে। যে প্রকাশের মধ্যে, যে ভাবের মধ্যে লেখক নিজের ভাবনায় সমগ্ৰ মানুষের ভাব অনুভব করে, নিজের লেখায় সমগ্ৰ মানুষের বেদনা, মানুষের হাসি-কান্নার প্রকাশ ঘটায় ।সেখানেই তার লেখা সাহিত্য প্রকৃত সাহিত্যের মর্যাদায় উন্নীত হয়।
মানুষ আপনার প্রয়োজনের সংসারের ঠিক পাশে পাশেই একটি প্রয়োজন-ছাড়া সাহিত্যের সংসার রচনা করে চলেছে। যেখানে সে নিজের বাস্তব কোনো ক্ষতি না করে নানা রসের দ্বারা আপনার প্রকৃতিকে নানা রূপে অনুভব করার আনন্দ উপভোগ করে জগতের মধ্যে আমরা দুটো ব্যাপারের প্রকাশ দেখি, একটা কাজের প্রকাশ, একটা ভাবের প্রকাশ। তবে ভাবের প্রকাশ একেবারে প্রত্যক্ষ প্রকাশ। জগতের যা’ রস তা’ আমাদের হৃদয়ের মধ্যে প্রবেশ করছে এবং আমাদের হৃদয়ের রসকে বাইরে টেনে আনছে।
প্রকৃতিতে যেমন ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তার রূপের ভাব মাধুরীর পরিবর্তন হয়, আমাদের মানব জীবনে ও প্রতিনিয়ত সত্ত্ব, রজঃ এবং তমঃ গুণের চক্রাকার আবর্তনের ফলে হৃদয়ে নানা ভাবের, যেমন সুখভাব, দুঃখ ভাব ও মোহভাবের উৎপত্তি হয়, সাহিত্যে সেই ভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটে থাকে। তবে ভাবের ঘোরে যা’ মনে এল তাই আবোল তাবোল বকে গেলাম, তা’ কিন্তু সাহিত্য নয়, সেটা প্রলাপ, ভাবকে রসোত্তীর্ণ ক’রে সর্বজনগ্ৰাহ্য একটা বাণীরূপ পরিবেশনই সাহিত্যের স্বরূপ। আমরা নিজেদেরকে সেই মহান কর্মে ব্রতী করেছি, সেখানে কর্তব্য যেমন আছে, আছে দায়িত্ব ও ।
পরিশেষে আসি শব্দদ্বীপের কথায়; ক্ষীণকায়া পাহাড়ী ঝর্ণা যেমন সমতলে অবতরণ করে নিজের বিস্তৃতি এবং গভীরতা বৃদ্ধি করতে করতে সমুদ্রের উদ্দেশ্যে সামনে এগিয়ে চলে, আমাদের শব্দদ্বীপ সাহিত্য পত্রিকাটি ও ধীরে ধীরে শাখা-প্রশাখা বিস্তারের মাধ্যমে দেশ কালের গন্ডি ছাড়িয়ে বহির্বিশ্বের আঙিনায় আপন পরিচয়ের পরিধি ক্রমশ বিস্তার করে চলেছে। শব্দদ্বীপের এই জয়যাত্রার রথের রশি যে সারথির হাতে সেই নির্বিরোধী ভাই সুপম এবং তার কর্মনিষ্ঠ সহযোগিবৃন্দকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। সাথে সাথে কৃতজ্ঞতা জানাই সেই সমস্ত বন্ধু বর্গকে ,যাঁরা লেখালেখি/আঁকাআঁকি এবং পঠন / দর্শনের দায়িত্বে আছেন, তাঁদের গৌরবময় অংশ গ্ৰহণ পত্রিকাটির অগ্ৰগতির পথে শক্তির উৎস যা’ অস্বীকার করার উপায় নেই।
সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদান্তে,
প্রবোধ কুমার মৃধা
সম্পাদকীয় – অক্টোবর ২য় সংখ্যা, ২০২১ – প্রবোধ কুমার মৃধা [Shabdodweep Editorial]
বর্ষব্যাপী অপেক্ষার অবসান। শারদীয়া দুর্গোৎসবের সমাপ্তি। আবার একটা বছর ধরে অধীর আগ্রহ নিয়ে প্রতীক্ষার পালা।কাছে দূরে সকলকে জানাই শুভ বিজয়ার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।আশা করি সবাই বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যে ও কমবেশি নিজেদেরকে উৎসবের আনন্দের অংশীদার করতে পেরেছেন।
আমরা কিন্তু সবাই সবসময়ের জন্য শব্দদ্বীপের সঙ্গে ছিলাম, একদিনের জন্য ও বিচ্ছেদ ঘটে নি।একটা বিষয় লক্ষ্য করে খুবই ভালো লাগছে যে, শব্দদ্বীপ ওয়েব ম্যাগে যাঁরা লেখালেখির কাজে যুক্ত আছেন তাঁরা কিন্তু ধীরে ধীরে তাঁদের সৃষ্টিকর্মে যথেষ্ট পরিণত হয়ে উঠছেন।ইভেন্ট নামক মহড়া মঞ্চই তার উজ্জ্বল প্রমাণ।ইভেন্টের লেখাগুলোর মধ্যে অনেকেই বেশ মুন্সিয়ানার স্বাক্ষর রাখছেন।
আপশোসের বিষয় হলো, সাহিত্যের পাঠকের বড়ো আকাল।যাঁরা অনেক অনেক ইংরেজি গ্ৰন্থ পড়েছেন তাঁদের অনেকেই বাংলা লেখা ও লেখকের প্রতি কৃপা-কটাক্ষ করে থাকেন এবং তার মধ্য দিয়ে অনেকটা আত্মপ্রসাদ লাভ করেন।
আমাদের দেশে পাঠক সংখ্যা যৎসামান্য এবং তার মধ্যে এমন পাঠক ‘কোটিকে গুটিক’ মেলে কিনা সন্দেহ, যারা সাহিত্যের সুযুক্তি মতো জীবন ধারার লেশমাত্র পরিবর্তন করার চেষ্টা করেছেন।এক তো সাহিত্যের পাঠক কম, তার উপর বর্তমান প্রজন্ম সাহিত্য পাঠের আনন্দ লাভ অপেক্ষা স্মার্ট ফোনের বিনোদনের মধ্যে খুঁজে পেয়েছে তাৎক্ষণিক আমেজের সন্ধান।যা তাদেরকে তন্নিষ্ঠ করে রাখছে।
মানুষের হাজার কাজের মধ্যে সাহিত্য একটা কাজ।বিষয়ী লোকে সাহিত্যের মধ্যে বিষয় খোঁজে কিন্তু বিষয় বিশুদ্ধ সাহিত্যের প্রাণ নয়।তার মূল সত্ত্বা হলো ভাব।লোক যদি সাহিত্য থেকে শিক্ষা পেতে চেষ্টা করে তো পেতে পারে তবে সাহিত্য লোককে শিক্ষা দেবার চেষ্টা বড়ো একটা করে না।
সাহিত্যের মধ্য দিয়ে সৌন্দর্য সন্ধানীর সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। Truth is beauty অর্থাৎ সত্যই সৌন্দর্য। তবে সত্যেরই মধ্যে সৌন্দর্যের রস তখনই পাওয়া সম্ভব যখন অন্তরের সঙ্গে তার নিবিড় উপলব্ধি ঘটে।
মানুষ যা পেয়েছে, সাহিত্য তাকেই প্রতিবিম্বিত করে তা কিন্তু নয়,যা তার উপলব্ধির বাইরে, যা তার সাধনার ধন,সাহিত্যে মূলত তারই আকুতি অভিব্যক্ত হয়।বাইরের কর্মে যে প্রত্যাশা পূর্ণতালাভ করতে পারে নি,সাহিত্যে সৃষ্টির মধ্যে তারই পরিপূর্ণতার কল্পরূপ নানাভাবে ধরা দেয়।
সাহিত্যের সাথে পাঠকের, শিল্পকর্মের সাথে দর্শকের নিবিড় যোগাযোগের ঘটকালিটা করতে হবে লেখক/শিল্পিদের, তাঁদের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিকর্মের উৎকর্ষের মাধ্যমে।আমাদের সবাইয়ের আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকলে সফল আমরা হবই।
শব্দদ্বীপ একটা যৌথ পরিবার।সেই পরিবারের সদস্য আমরা।আমাদের মিলিত সহযোগিতায় দিনে দিনে শব্দদ্বীপের শ্রীবৃদ্ধি ঘটে চলেছে।অকুণ্ঠ সাধুবাদ জানাই দক্ষ সংগঠক ভাই সুপম এবং তার উপযুক্ত সহযোগী মন্ডলীকে,যাদের নিরলস ,নিরবচ্ছিন্ন কর্ম প্রচেষ্টার ফলে এতো বড়ো একটা কর্ম যজ্ঞ সুশৃঙ্খলিত ভাবে এগিয়ে চলেছে।ভবিষ্যতে নতুন নতুন আঙ্গিকের প্রত্যাশা নিয়ে শব্দদ্বীপের সাথে নিবিড়ভাবে আছি আমরা; এখানে মান অভিমানের প্রশ্ন নেই, শব্দদ্বীপের স্বার্থ আমাদের স্বার্থ,প্রয়োজনে সহযোগিতামূলক সদিচ্ছার অভাব হবে না আশা করি।
ধন্যবাদান্তে,
প্রবোধ কুমার মৃধা
সম্পাদকীয় – অক্টোবর ১ম সংখ্যা, ২০২১ – প্রবোধ কুমার মৃধা [Shabdodweep Editorial]
প্রস্তাবটা শুনে বেশ কিছুটা অবাক হয়েছিলাম।শব্দদ্বীপের সঙ্গে পরিচয় মাত্র তিন মাসের, তাও সামান্য অনামী এক গল্প লেখক হিসেবে।হঠাৎ শব্দদ্বীপ ওয়েব ম্যাগাজিনের কর্ণধার মন্ডলীর অন্যতম ভাই সুপম রায় যখন তিন মাসের জন্য অতিথি সম্পাদকের গুরু দায়িত্ব দেওয়ার বার্তা শোনাল,ভেবে পাচ্ছিলাম না কী করব?শেষে রাজি হয়ে গেলাম।এখন আমার সম্পাদকীয় শুভারম্ভের শুরুতেই শব্দদ্বীপের সকল সুধি লেখক/শিল্পী আগ্ৰহী পাঠক এবং সম্পাদক মন্ডলীর আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করি।
প্রকৃতির বুকে উদ্ভাসিত শরতের অমল মহিমা। নীল দিগন্তে বেজে উঠেছে ছুটির বাঁশি; আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছে আগমনীর সুর।ঘরের মেয়ে উমা_ধরায় আসছেন অসূরনাশিনী জগদম্বিকা রূপে। আমাদের শব্দদ্বীপ সাহিত্য পত্রিকা ও শারদীয়া শ্রদ্ধাঞ্জলির অর্ঘ্য সাজিয়ে নিয়ে আসছেন পূজা সংখ্যা PDF format -এ ,যার অংশীদার আমরা শব্দদ্বীপ পরিবারের সকল স্তরের শুভানুধ্যায়ী সদস্যবৃন্দ।
শব্দদ্বীপ একটি সাহিত্য পত্রিকা, আসছি সাহিত্যের কথায়।বাইরের জগৎ নিয়তই আমাদের মনের মধ্যে প্রবেশ করে আলাদা একটা জগৎ গড়ে তুলছে, যাকে আমাদের নিজস্ব ভালো লাগা,মন্দ লাগা,সুখ-দুঃখ প্রভৃতি হৃদয়বৃত্তির জারক রসে জারিত করে আপনার করে নিচ্ছি।আর এই হৃদয়ের জগৎ আপনাকে ব্যক্ত করবার জন্য সদা ব্যাকুল,ফলে মানুষের মধ্যে চিরকালই একটা সাহিত্যের আবেগ উপস্থিত।সেই সাহিত্যের মূল অবলম্বন হলো ভাব।সেই ভাবকে যিনি যতটা দক্ষতার সাথে তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমে প্রকাশ করতে সক্ষম,তিনি ততটাই শ্রেষ্ঠ সাহিত্য স্রষ্টার আসনে অধিষ্ঠিত হন।যুগে যুগে কালে কালে বহু মনীষী তাঁর অন্তরের ভাবকে আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে প্রকাশ ঘটিয়ে আপন কীর্তির মাধ্যমে অমর হয়ে আছেন।আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে আছে সহজাত সৃষ্টির সম্ভাবনা।তা প্রকাশের জন্য চাই অনুঘটক এবং উপযুক্ত মঞ্চ। শব্দদ্বীপ ওয়েব সাহিত্য ম্যাগাজিন আমাদের দিয়েছে বহুমুখী প্রকাশের সেই মুক্ত-মঞ্চের সুযোগ; যেখানে আমরা অনামী,অল্পখ্যাত লেখক/শিল্পীবৃন্দ আমাদের দক্ষতা অনুসারে স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হতে পারি। অঙ্কুরিত চারা গাছই একদিন বনস্পতি হয়ে ওঠে।সে জন্য চাই উপযুক্ত ও অনুকুল পরিবেশ।আমাদের মধ্যে কে সফল প্রতিভার অধিকারী,সময়ই তা প্রমাণ করে দেবে, তার জন্য চাই ধৈর্য,অধ্যবসায়, সাধনা ও অনুশীলন।আমরা ক্ষুদ্র হতে পারি তবে নিজেদেরকে তুচ্ছ মনে করার কোন কারণ নেই।
সবাই শব্দদ্বীপের সঙ্গে আছি, শব্দদ্বীপ ও আমাদের সঙ্গে আছে।সাহিত্য ও সংস্কৃতি জগতে শব্দদ্বীপ পত্রিকার নিত্য নূতন সৃজনশীল উদ্ভাবনী প্রয়াস আজ দেশে বিদেশে পাঠক/দর্শক মনে উত্তরোত্তর আগ্ৰহ সৃষ্টি করে চলেছে।
মাসে দুটি সাধারণ সংখ্যা ,দুটি ইভেন্ট আর প্রাত্যহিকের quote সমৃদ্ধ ওয়েব ম্যাগাজিনটি এগিয়ে চলেছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে,যার অগ্রগতির মূল কান্ডারী শব্দদ্বীপে নিবেদিত প্রাণ ভ্রাতৃপ্রতিম সুপম রায় এবং তার একান্ত একনিষ্ঠ সহযোগী বন্ধুগণ।সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানাই আন্তরিক প্রীতি ও শারদ শুভেচ্ছা।শারদোৎসব সবার জীবনে সুমঙ্গল নিয়ে আসুক।
ইতি,
প্রবোধ কুমার মৃধা
প্রবোধ কুমার মৃধা | Probodh Kumar Mridha
ট্যাটুর ইতিহাস ও আমরা | History of Tattoo | Reasons for using tattoos | 2023
Advantages & Disadvantages of Tattoo | ট্যাটুর উপকারিতা এবং অপকারিতা | Bengali Article 2023
Is it possible to remove tattoo | ট্যাটু রিমুভ কি সম্ভব? | 2023
Emblem of Ramakrishna Mission | রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতীকের অর্থ | নক্শা ও তাৎপর্য | 2023
Shabdodweep Editorial 2023 | Shabdodweep Editorial 2022 | Shabdodweep Editorial 2021 | New Shabdodweep Editorial | Recent Shabdodweep Editorial | All Shabdodweep Editorial | International Shabdodweep Editorial | National Shabdodweep Editorial | Top Shabdodweep Editorial | Best Shabdodweep Editorial | Shabdodweep Editorial Collections | Magazine Shabdodweep Editorial | Bengali Shabdodweep Editorial | Web Shabdodweep Editorial | Live Shabdodweep Editorial | Online Shabdodweep Editorial | Live Shabdodweep Editorial 2023 | Online Shabdodweep Editorial 2023 | Offline Shabdodweep Editorial | New Shabdodweep Editorial 2023 | Magazine Shabdodweep Editorial 2023 | Shabdodweep Founder