প্রদ্যোৎ পালুই – সূচিপত্র [Bengali Story]
খোঁজ – প্রদ্যোৎ পালুই
সকালে ঘুম থেকে উঠেই গঙ্গা ছুটল বাবুদের বাড়িতে আবার কাজ করতে যাবে কি না সেকথা জানতে। এখনও মহামারির দাপট কমে নি। তাই তাঁরা ঝুঁকি নিতে রাজি নয়। এখনই কাজে যেতে নিষেধ করে দিলেন। বলে দিলেন, মাসখানেক পরে দেখা করতে পারে। মহামারির দাপট আসা থেকে লালু এবং গঙ্গা দুজনেরই কাজ নেই। একমাসেরও বেশি অতিক্রান্ত। সংসার আর চলতে চায় না। কবে এই রোগের দাপট কমবে তার কোন ঠিক-ঠিকানা নেই। চিন্তিত দুজনেই।
অশান্তি ক্রমশ বাড়ছে। বাচ্চা দুটোর লেখাপড়া কবেই বন্ধ হয়ে গেছে। এখন দুবেলা দুমুঠো ভাতের যোগাড় করাই মস্ত বড় চ্যালেঞ্জ। একমাস সময়সীমা পেরোতেই গঙ্গা আবার ছুটল বাবুদের বাড়িতে। কাজে যোগ দেওয়ার জন্য সে মরিয়া। প্রথম বাড়িতে যেতেই দত্ত গিন্নি জানিয়ে দিলেন, “লকডাউনে কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। কবে খুলবে তার কোন ঠিক-ঠিকানা নেই। একমাস মাইনে পেয়েছিল তোর দাদাবাবু। এমাস থেকে মাইনে বন্ধ। কী করে তোকে কাজে রাখি বল তো? কষ্ট হলেও নিজেই করে নেব। এখন তোকে লাগবে না। দরকার হলে পরে খবর পাঠাব।”
চিন্তা বাড়ল গঙ্গার। দ্বিতীয় বাড়িতে যেতে চাটুজ্যে গিন্নি অবশ্য নিরাশ করলেন না। জানালেন, “আর একা একা সামলাতে পারছি না। যা হয় হোক, তুই আয় কাল থেকে। তবে মনে রাখবি, মাস্ক পরে আসা চাই। না হলে বাড়িতে ঢুকতে দেব না কিন্তু।”
ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানায় গঙ্গা। তার পরেও দাঁড়িয়ে আছে দেখে চাটুজ্জ্যে গিন্নি জানতে চান, “কী হল গঙ্গা, দাঁড়িয়ে আছিস কেন ?”
“আজ ঘরে রান্না হবেক নাই গো। কিছু টাকা দিতে পারবে বউদি?”
“টাকা! তোর সব পাওনা তো তখন মিটিয়ে দিয়েছিলাম।”
“দিয়েছিলে ঠিকই। তবু যদি কিছু আগাম দাও তো খুব ভাল হয়। এমাসের মাইনা থিকে কেটে লিবে।”
ফেরাতে পারলেন না চাটুজ্জ্যে গিন্নি। দুশো টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বিদায় করলেন গঙ্গাকে।একটা কাজ ছুটে গেল। রোজগারও কমে গেল। নূতন করে আবার কোথায় যে কাজ পাওয়া যাবে! লালুর হোটেলের কাজ এখনও চালু হয় নি। চিন্তা দিন দিন চেপে বসছে।
সেদিন লালু খবর পেল, সারদা হোটেল একবেলা করে খুলতে শুরু করেছে। খবর পেয়ে পরদিন সকালেই ছুটে গেল সেখানে। শিবু তখন রান্নার তোড়জোড় করছিল। লালু বলল, “কী রান্না কর শিবুদা?”
পিছন ফিরে তাকাল শিবু। “কী রে লালু, তুই এইচু। এখন সামান্য কটা করে মিল হচ্ছে দৈনিক। বিক্রি-বাটা ভাল হচ্ছে নাই, জানিস।”
“ঠিক আছে, বাবু কুথায় গো শিবুদা?”
“এখনও এসে পৌঁছায় নাই। এখুনি এসে যাবেক। বোস একটু।”
একটু পরেই এসে গেলেন মহেশ্বর মুখুজ্জ্যে। তাকে দেখে এগিয়ে গেল লালু। “বাবু, হোটেল তো খুলেচে। তাহলে আমিও এবার কাল থিকে কাজে লেগে যাই।”
“না, এখন তোর কাজে যোগ দিয়ে কাজ নাই। হোটেল একবেলা করে খুলছি। তাও খদ্দের নাই। সামান্য কটা করে মিল হচ্ছে। সেটা শিবু একাই করে ফেলতে পারবে।”
“আমি তাহলে এখন কী করব বাবু?” লালুর কপালে ভাঁজ।
“তুই কী করবি সেটা তোকেই ঠিক করতে হবে। আমি তো সবার দায় নিয়ে বসে নাই। অন্য কোথাও কিছু একটা খুঁজে নে।”
“খুঁজলেই কী কাজ পাওয়া যাবে বাবু? এখন কেউ কাজে লিতে চায় নাই। তোমার হোটেলে কাজ করতাম। এখন আমি কুথায় কাজ খুঁজব বল দিকিনি।”
“আপাতত লাগবে না এখানে। হোটেল ভাল করে চালু হলে খবর দেব। তার মধ্যে কোথাও কিছু খুঁজে পাস কি-না দেখ।”
“অনেক লোককে বলেচি, বাবু। কিন্তু কেউ এখন কাজে লিতে খুঁজে নাই।”
“সে আর আমি কী করব বল। দেখ আরও খুঁজে। কিছু একটা ঠিক পেয়ে যাবি।”
বেশি কথা বলে লাভ হবে না। উঠে পড়ল লালু। সারা রাস্তা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে লাগল, ‘কিছু একটা পেয়ে যাবি ঠিক।’ এই বাজারে কাজ পাওয়া কী এত সহজ! ক’মাসে অন্তত পাঁচ জায়গায় ঢুঁ মেরেছে। কেউ ‘না’ ছাড়া ‘হ্যাঁ’ করে নি। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে তার। কাজের আশা নাই। কিছু একটা করতে হবে। বাড়ির কাছে মোড়ের মাথায় বিকেল বিকেল ঘুগনি বানিয়ে নিয়ে বসতে শুরু করল সে। যদি কিছুটা অন্তত রোজগার হয়। প্রথম প্রথম বিক্রি হচ্ছিল বেশ। ক’দিন যেতে না যেতেই আরও একজন এসে বসতে শুরু করল। তাকে দেখে আরও একজন। যোগান বাড়লে যা হয়। দাম কমাতে হল। তাতেও বিক্রি নেই। একসময় লোকসান করতে করতে বন্ধ হয়ে গেল লালুর ঘুগনির দোকান।
এখনও দ্বিতীয় কোন বাড়িতে কাজের যোগাড় হয় নি গঙ্গার। সংসারে ভীষণ টানাটানি। একদিন এই নিয়ে দুজনে তুমুল ঝগড়া। রাগের মাথায় গায়ে হাত তুলল লালু। গঙ্গার রাগ উঠল চরমে। ছেলেমেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ল। বাপের বাড়ি চলে যাবে। চিন্তায় পড়ল লালু। এই অসময়ে গঙ্গা-ই ভরসা। বুঝতে পেরে ফিরিয়ে আনতে ছুটল সে পিছন পিছন। অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ফিরিয়ে আনতে পারলেও কথা দিতে হয়েছে, দশ দিনের মধ্যে যে কোন একটা কাজের যোগাড় করবে সে।
দশ দিন কেটে গেলেও কাজের সংস্থান করতে পারেনি লালু। সে মরিয়া হয়ে আবার ছুটে গেল সারদা হোটেলের মালিকের কাছে। কাতর অনুরোধ করল, কাজে নেওয়ার জন্যে। মহেশ্বর ভুরু কোঁচকালেন, “আমি তো কাজে নিতেই চাই, লালু। কিন্তু সেল না থাকলে আমি কী করতে পারি বল? আমি তো আর পকেট থেকে খরচ করে লোক রাখতে পারব না।”
“এখন তো বাস, টেরেন সব চলতে শুরু করেচে বাবু। অফিস-কাচারি খুলেচে। তবে ক্যানে সেল নাই বলচ?”
“আমিও তো ভেবেছিলাম, সবকিছু চালু হয়েছে। এবার হয়তো সেল বাড়বে। কিন্তু কোথায় কী? পাবলিক সম্ভবত এখন বাইরের খাবার খেতে চাইছে না। তুই এক কাজ কর লালু। আমার আশায় বসে থাকিস না। আগেও বলেছি, আবারও বলছি। পারলে কিছু একটা কাজ যোগাড় করে নে। আমার হোটেলটা এখানকার কলেজের উপরে ভরসা করে চলত। কলেজ কবে খুলবে তার ঠিক নাই। ফলে রাস্তার পাবলিক কিছু খেলেও ভাল সেলের আশা এখন দেখছি না।”
“আমি যে অন্য কুনো কাজ জানি নাই বাবু।”
“জানতে হবে। এই বাজারে একটি কাজের উপর ভরসা করে বসে থাকলে চলবে নাকি?”
কোন আশা না দেখে পিছন ফিরল লালু। কিন্তু কিছু একটা তাকে করতেই হবে। গঙ্গাকে সে কথা দিয়েছে। উঠতে বসতে ওর বাক্যবাণ আর সহ্য হয় না। বাড়ি ফিরে না গিয়ে সে পৌঁছাল ভুলুর চোলাই-এর ঠেকে। দুপুর গড়িয়েছে। ভুলু ততক্ষণে জিনিসপত্র গোছগাছ করছিল। লালুকে দেখতে পেয়ে বলল, “এই ভরদুপুরে কী মনে করে লালু?”
“একটা কথা শুধাইতে এইচি।”
“কী কথা?”
লালু চুপি চুপি নিজের দরকারি কথা সেরে নিয়ে বাড়িমুখো হল। বাড়ি পৌঁছাতে দুপুর গড়িয়ে গেছে। গঙ্গা দাঁত খিচিয়ে উঠল, “কুথায় ছিলে এতক্ষণ? দুপুর গড়িয়ে আইলে যে বড়।”
সকাল থেকে পেটে দানাপানি পড়ে নি। তবুও মেজাজ যথাসম্ভব নরম রেখে লালু বলল, “একটা কাজ খুঁজে পাইচি গঙ্গা।”
শুনে গঙ্গার মুড বদলে গেল। খুশি খুশি গলায় বলল, “সারদা হোটেলের কাজটা?”
“না, মুচিপাড়ার ভুলুর দোকান থিকে চুল্লু কিনে এনে বিকব। দৈনিক এক হাঁড়ি বিকতে পারলে নিজের মজুরিটা উঠে যাবেক।”
চোখ বড় বড় করে তাকাল গঙ্গা। “চুল্লু বিকবে? পুলিশ ধরে লিয়ে গেলে?”
“আর কিছু কাজ খুঁজে পাচ্ছি নাই যে। “লুকিয়ে লুকিয়ে বিকব। ধরতে পারবেক নাই।”
গঙ্গার চিন্তিত মন সায় দিতে চাইল না। আবার বাধা দিতেও পারছে না। এ এক কঠিন লড়াই। জীবন মরণ সংগ্রাম। হতাশ নয়ণে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকল সে লালুর মুখের দিকে।
আপন হতে বাহির হয়ে – প্রদ্যোৎ পালুই [Read Interesting Bangla Galpo]
স্টেশনে নেমে রাজদীপ রিক্সা স্ট্যান্ডের দিকে এগোল। তাকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে এল অনেকেই। কেউ কেউ বলল, ‘বাবু, যাবেন নাকি?’
রাজদীপ একটু এদিক ওদিক তাকিয়ে অটো বা টোটোর খোঁজ করতে গিয়ে নজরে পড়ল তারই বয়সী এক রিক্সাওয়ালার দিকে। চেনা চেনা মনে হচ্ছে। স্মৃতি হাতড়াতে গিয়ে মনে পড়ে গেল, এ তো বোধ হয় নান্টু। তার সঙ্গে ক্লাস ফাইভে ভর্তি হয়েছিল যোগেন্দ্র বিদ্যাপীঠে। পাশের পাড়ায় বাড়ি। একই রাস্তায় হেঁটে স্কুলে যেতে হত বলে রোজ দেখা হয়ে যেত। নান্টুর বুদ্ধি-সুদ্ধি খুব একটা ভাল ছিল না। ততোধিক খারাপ ছিল বাড়িতে পড়ার পরিবেশ। মা পরের বাড়িতে বাসন মাজার কাজ করত। বাবা রিক্সা চালাত। রোজগার খারাপ হত না। কিন্তু সন্ধ্যার পর এক পেট মদ গিলে টলতে টলতে বাড়ি ফিরত। এই নিয়ে ওর বাবা-মার মধ্যে ঝগড়া-ঝাটি লেগেই থাকত। সংসার একদম দেখত না। বাড়িতে তিনটে ছেলে মেয়ে-সহ পাঁচ জনের সংসার চালানোর সব দায়-দায়িত্ব ছিল ওর মায়ের। বেচারা খাবার যোগাড় করতেই হিমসিম খেত। তার সঙ্গে পড়াশোনা, ডাক্তার-বদ্যি আরও নানান খরচ চালানো চাট্টিখানি কথা নয়। পেরে ঊঠত না কিছুতেই। ফলে আর পাঁচটা দরিদ্র পরিবারে যা হয়, ওদেরও তাই হয়েছিল। সবার আগে কোপ পড়েছিল পড়াশোনায়। এক এক করে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সকলের স্কুলে যাওয়া।
রাজদীপের এসব কথা নান্টুর কাছ থেকে শোনা স্কুলে যাতায়াতের পথে। তারা তখন ক্লাস এইটে পড়ে। একদিন নান্টু তাকে কথায় কথায় বলেছিল, ‘জানিস, পরীক্ষার পরে আমি আর ইস্কুলে আসব না।’
রাজদীপ জানতে চেয়েছিল, ‘কেন স্কুলে আসবি না?’ তখনই সে বন্ধুর কাছে বাড়ির সমস্যার কথা খোলসা করে জানিয়েছিল। সত্যিই এইট পাশ করার পর থেকে নান্টু আর স্কুলে যায়নি। রাজদীপও এই নিয়ে আর কোন খোঁজখবর নেয়নি।
তারপর গড়িয়ে গিয়েছে অনেকটা সময়। রাজদীপ স্কুল লাইফ শেষ করে, কলেজ ডিঙিয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌকাঠ পেরিয়েছে একসময়। তারপর রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের প্রবেশানারি অফিসারের পরীক্ষায় পাশ করে একটা ব্রাঞ্চে এখন ডেপুটি ম্যানেজার পদে কর্মরত। এত সবের মাঝে অন্যান্য অনেকের মতো নান্টুর স্মৃতি কখন যে মন থেকে হারিয়ে গিয়েছে সেকথা তার মনে নেই। স্কুল ছাড়ার পর নান্টুর সঙ্গে আর কোনদিন দেখাও হয়নি। পড়াশোনা আর চাকরির সুবাদে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর থেকে বছরের বেশির ভাগ সময় সে বাইরে থাকে। যে কয়েকটা দিনের জন্যে বাড়িতে আসে সেই সময়টুকু ল্যাপটপ আর মোবাইল নিয়েই কাটিয়ে দেয়। বন্ধুমহলে আড্ডা দিতে খুব একটা বের হয় না। তার ওপর নান্টু তো তেমন ভাল বন্ধু ছিল না। না স্ট্যাটাসে, না পড়াশোনায়। শুধু স্কুল যাতায়াতে সঙ্গীর বেশী কিছু নয়। তাতেই সাময়িক যেটুকু বন্ধুত্ব হয়েছিল। ফলে নান্টুর কথা মনে রাখার মত তেমন কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল না। মনে রাখেও নি।
আজ হঠাৎ রিক্সা স্ট্যান্ডে তাকে দেখে একটু থমকে গেল রাজদীপ। এগিয়ে কথা বলবে কি-না ভাবছে, এমন সময় নান্টুই এগিয়ে এল, ‘বাড়ী যাবি নাকি, রাজদীপ?’
এবার নিশ্চিত হল নান্টু। সে বলল, ‘যাব তো। তা তুই এখানে?’
‘বাবার রিক্সাটা এখন আমিই চালাই।’
‘কেন, তোর বাবার কি হল?’
‘বাবা তো বছর পাঁচেক আগে মারা গেছে। আমিও কিছু কাজ পাচ্ছিলাম না। যখন যে ডাকত তখন তার কাজ করতাম। বাকী সময় বেকার। তাই বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে রিক্সা নিয়েই বের হই। দৈনিক যদি অন্তত কিছু রোজগার হয়।’
রাজদীপ কিংকর্তব্যবিমূঢ়। এক সময়ের ক্লাসমেট রিক্সায় করে তাকে টেনে নিয়ে যাবে। আর সে ঢুলু ঢুলু চোখে আরামে রিক্সায় বসে থাকবে। বিবেক ঠিক সায় দিল না। তাকে চুপ থাকতে দেখে নান্টু তাড়া লাগাল, ‘নে, যাবি তো ঊঠে পড়। দেরি করিস না। রোদ হয়ে গেছে খুব। তোকে ছেড়ে দিয়ে বাড়ি যাব, খিদে পেয়েছে। সকাল থেকে এখনও কিছু খাওয়া হয় নি।’
নান্টুর রিক্সায় না ঊঠলেও খালি রিক্সা নিয়েই সে বাড়ি যাবে খাওয়ার জন্য। ঊঠলে তবু যা হোক কিছু ভাড়া অন্তত পাবে। দ্বিধা কাটিয়ে রিক্সায় ঊঠে বসল রাজদীপ।
স্টেশন থেকে কিমি তিনেক রাস্তা। যেতে যেতে নানা কথা হল তাদের মধ্যে। বিভিন্ন কথা থেকে রাজদীপ জানতে পারল, রিক্সাটা নান্টুর নিজের নয়। দৈনিক কুড়ি টাকার ভিত্তিতে ভাড়ায় নেওয়া রিক্সা। টাকা যোগাড় করে কেনার সঙ্গতি নেই। ওর বাবাও ভাড়া নিয়েই রিক্সা চালাত। এখন নান্টু নিজে সেই রিক্সাটাই চালায়। রাজদীপের মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল। তাদের ব্যাঙ্কের এখানকার লোকাল ব্রাঞ্চ থেকে নান্টুর নামে একটা ব্যাঙ্ক লোনের ব্যবস্থা করে দিলে সেই টাকায় সে নিজের জন্যে একটা রিক্সার বদলে টোটো কিনে নিতে পারে। মাসে মাসে সামান্য কিছু করে কিস্তি শোধ করতে পারলে লোন শোধ হলে টোটোটা ওর নিজের হয়ে যাবে। অযথা দৈনিক কুড়ি টাকা করে দিয়ে বড় লোকের পেট ভরাচ্ছে। তার উপর টোটোর দাপটে এখন রিক্সার বাজারও নেই। প্রস্তাবটা দেবে কি সে নান্টুকে? দিলে নিশ্চয়ই ও লুফে নেবে। পকেট থেকে তো আর বেশি কিছু খরচা করতে হচ্ছে না। দৈনিক ভাড়ার টাকায় মাসিক কিস্তি দিলে বছর পাঁচেকের মধ্যে লোন শোধ হয়ে যাবে। পরক্ষণে ভাবল, কিনে নিয়ে যদি আর লোন শোধ না দেয়। তখন তো ব্যাঙ্কের কাছে সে নিজে দায়ী হবে। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ পুরো রেসপন্সিবিলিটি তার উপর চাপিয়ে দেবে। তার চেয়ে বরং থাক, যেমন চলছে, চলুক। এভাবেই ওরা চলতে অভ্যস্ত। ভাবলেও প্রস্তাবটা চেপে গেল রাজদীপ।
বাড়ির গেটের সামনে এসে রিক্সা দাঁড়াতে নেমে পড়ে রাজদীপ ভাড়ার কথা না জিজ্ঞেস করে পকেট থেকে একটা পঞ্চাশ টাকার নোট বের করে বাড়িয়ে দিল নান্টুর দিকে। মুচকি হাসল নান্টু। ‘তুই না —, আমরা একসঙ্গে একই ক্লাসে চার বছর যোগেন্দ্র বিদ্যাপীঠে পড়েছি। একসঙ্গে দৈনিক ইস্কুল থেকে বাড়ি ফিরতাম। কত গল্প করতাম। তুই তো একসময় আমার বন্ধু ছিলি, নাকি? তোর কাছে কখনও ভাড়া নিতে পারি। রেখে দে। ভাড়া লাগবে না।’
‘তা কি হয়। এই রোদ গরমে তুই আমাকে এতটা রাস্তা টেনে নিয়ে এসেছিস। রাখ টাকাটা।’
‘তাতে কি হয়েছে ! রোদে জলে লোকজনকে টেনে নিয়ে যাওয়াই তো আমার কাজ। ছাড়-ছাড়।’
টাকাটা নান্টুর পকেটে গুঁজে দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হল রাজদীপ। টাকা নিল না সে। রিক্সা ঘুরিয়ে বাড়ি চলে গেল।
কলিং বেল বাজাতে ছুটে বেরিয়ে এলেন সায়ন্তনী। ‘এসেছিস খোকা। আয়-আয়, বাবা। যা রোদ গরম।’ দরজা খুলে দিতে কোন কথা না বলে রাজদীপ বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়ল। দরজা বন্ধ করে সায়ন্তনী ছুটে গেলেন ফ্রিজ থেকে ঠাণ্ডা দই বের করতে। ছেলের হাতে ধরিয়ে দিয়ে সোফা দেখিয়ে বললেন, ‘আয়, এই সোফায় বোস। ফ্যানটা চালিয়ে দিচ্ছি।’ ছেলেকে বসিয়ে ছুটে গেলেন রান্নাঘরে। প্লেটে সন্দেশ সাজিয়ে ছেলের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, ‘নে বাবা, সেই ভোরবেলা কখন বেরিয়েছিস। গ্লাসটা নামিয়ে রেখে এই সন্দেশ কটা খেয়ে নে।’
‘না মা, এখনই খেতে পারব না। ট্রেনে ঝালমুড়ি খেয়েছিলাম।’
‘তাতে কি হয়েছে। ওই ক’টা ঝালমুড়িতে কি আর পেট ভরে! তুই সন্দেশ পছন্দ করিস। আজ আসবি বলে তোর বাবাকে দিয়ে আনিয়ে রেখেছি। ভাত খেতে এখনও অনেক দেরি। নে, খেয়ে নে।’
বাধ্য হয়ে প্লেটটা হাতে নিল রাজদীপ। ফ্রিজ থেকে বের করা ঠাণ্ডা সুস্বাদু সন্দেশ সায়ন্তনী তার হাতে দিয়েছেন খাওয়ার জন্যে। কিন্তু সন্দেশ খাওয়ায় তার মন নেই। অন্য সময় হলে সন্দেশ পেলে মন ভরে খায়। আজ কোন স্বাদ পাচ্ছে না। নান্টু ভাড়া ফিরিয়ে দিয়ে তার গালে সপাটে যে চড় কষিয়ে দিয়ে গিয়েছে সেই আঘাতে এখনও তার বেসামাল অবস্থা। চেষ্টা করেও কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারছে না।
মায়ের সঙ্গে টুকটাক গল্প করার পর দুপুরের লাঞ্চ সেরে একটু গড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করল রাজদীপ। কিন্তু ঘুম এল না। নান্টুর অমায়িক বন্ধুত্ব তাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। সে কী একটু সহানুভূতি দেখাতে পারত না? পারত না তাকে সুপারিশ করে একটু সাহায্য করতে? অসময়ে মানুষই তো মানুষের পাশে দাঁড়ায়। সে তাহলে কেন পারল না নান্টুর পাশে দাঁড়াতে? এতে তো তার কোন ক্ষতি হত না। তবুও কতো ভেবেছে! সন্দেহবশত পিছিয়ে এসেছে। অথচ নান্টু কিছুই ভাবল না। সে অনেক টাকা মাইনে পায় জেনেও অক্লেশে ভাড়া ছেড়ে দিল।
মোবাইলে খুটখাট করে দুপুরটা কাটিয়ে দিয়ে বিকেল হতেই রাজদীপ বেরিয়ে পড়ল নান্টুর সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশে। সায়ন্তনী মনে করিয়ে দিলেন, ‘তাড়াতাড়ি ফিরে আসিস কিন্তু। টিফিন বানিয়ে রাখব।’ মাথা নেড়ে ‘হু’ বলে বেরিয়ে গেল সে। গিয়ে পৌঁছাল নান্টুদের পাড়ায়। বাড়িটা ঠিক চেনে না। একজনকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিয়ে বাড়ির কাছে গিয়ে ডাকল, ‘নান্টু, বাড়িতে আছিস।’
নান্টুর মা বেরিয়ে এল দরমা দিয়ে ঘেরা এক ফালি ঘরের ভিতর থেকে। ‘ও তো এখন বাড়িতে নাই গো। রিক্সা নিয়ে বেরিয়ে গেছে। ফিরবে সন্ধ্যার পর।’
‘বাড়ি ফিরলে একটু আমার সঙ্গে দেখা করতে বলবে তো কাকীমা। জরুরি দরকার আছে।’
‘কে তুমি? তোমাকে তো চিনি না বাপু।’
‘আমার নাম রাজদীপ ঘোষ। স্কুলে নান্টু আমার সঙ্গে পড়ত। নাম বললে বুঝতে পারবে।’
এদিক ওদিক একটু ঘোরাঘুরি করে সন্ধ্যার পর বাড়িতে ঢুকল রাজদীপ। নান্টুর সঙ্গে কথা না বলে শান্তি নেই। খানিক পরে ডোরবেলের শব্দ। নিশ্চয়ই নান্টু এসেছে। সে গিয়ে দরজা খুলতেই নান্টু বলল, ‘ কি রে, সকালে তোকে পৌঁছে দিয়ে গেলাম। এরই মধ্যে আবার কিসের দরকার পড়ল?’
‘ভিতরে আয়। কথা আছে।’
‘না রে, আর ভিতরে যাব না। বল কি কথা?’
‘বলছিলাম, তুই তো ভাড়ার রিক্সা চালাস। রিক্সার এখন বাজার নেই। তাই ব্যাঙ্ক যদি লোন দেয় তাহলে রিক্সা বাদ দিয়ে একটা টোটো কিনবি?’
‘লোন! ব্যাঙ্ক আমাকে লোন দিবে?’
‘দেবে। আমি ব্যবস্থা করে দেব।’
খুশিতে রাঙা হয়ে ঊঠল নান্টুর মুখখানা। ‘সত্যি তুই লোনের ব্যবস্থা করে দিবি?’
‘দেব। মাসিক কিস্তিতে লোন শোধ করতে হবে। লোন শোধ হলে টোটোটা একসময় তোর নিজের হয়ে যাবে। শোধ করতে পারবি তো?’
‘নিশ্চয়ই পারব। দেখ, যদি হয় তো ভালই হবে। এখন টোটোর জ্বালায় রিক্সায় ভাড়া পাওয়াই যায় না। তাই ভাবছিলাম, ভাড়ার রিক্সাটা মালিককে ফেরত দিয়ে অন্য কোন কাজ করব। রিক্সা চালিয়ে একদম রোজগার নাই। সংসার চলে না।’
রাজদীপ একটা কাগজ বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ‘কী কী কাগজ লাগবে এতে সব লেখা আছে। কাগজগুলো জেরক্স করে রেডি রাখবি। আমি পরের বার এসে তোকে নিয়ে ব্যাঙ্কে যাব। আশা করছি কোন অসুবিধে হবে না।’
নান্টু নতুন এক আশা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেল। রাজদীপ তাহলে এখনও পুরানো বন্ধুত্বের কথা মনে রেখেছে। রাজদীপও অনেকটাই হালকা হতে পেরেছে। একটা অঘোষিত স্বার্থপরতা তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছিল। সেটা সরে গেল এতক্ষণে।
প্রদ্যোৎ পালুই | Pradyut Palui
ট্যাটুর ইতিহাস ও আমরা | History of Tattoo | Reasons for using tattoos | 2023
Is it possible to remove tattoo | ট্যাটু রিমুভ কি সম্ভব? | 2023
Advantages & Disadvantages of Tattoo | ট্যাটুর উপকারিতা এবং অপকারিতা | Bengali Article 2023
Fathers Day History | পিতৃ দিবসের ইতিহাস ও বাঙালি আবেগ | 2023
Read Online Bangla Golpo | New Read Online Bengali Story | Top Best Story Blogs | Best Story Blogs in pdf | Sabuj Basinda | High Challenger | Best Live Bengali Story Blogs 2023 | Shabdodweep Read Interesting Bangla Galpo | Shabdodweep Writer | Read Interesting Bangla Galpo in India | World’s Best Live Bengali Story Blogs | Read Interesting Bangla Galpo in Online | Online Interesting Bangla Golpo | Full Read Online Bangla Golpo | Read Interesting Bangla Galpo in Blogs | Best Story Blogs in Bengali | Live Bengali Story in English | Live Bengali Story pdf | Full Bangla Galpo online | New Read Interesting Bangla Galpo | Live Bengali Story – Episode | Golpo Dot Com Series | Read Interesting Bangla Galpo Video | Horror Live Bengali Story | Full Read Interesting Bangla Galpo | Read Online Bengali Story Video | Live Bengali Story Netflix | Full Bangla Galpo Read | Read Online Bengali Story Download | Shabdodweep Competition | Story Writing Competition | Bengali Writer | Bengali Writer 2023 | Trend Read Interesting Bangla Galpo | Recent Read Interesting Bangla Galpo | Top Live Bengali Story | Popular Full Bangla Galpo | Best Read Interesting Bangla Galpo | Read Interesting Bangla Galpo 2023 | Shabdodweep Bengali Famous Story | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Golpo Dot Com Download | Bengali Famous Story – audio | Horror Adult Story | Read Online Bengali Story Collection | Live Bengali Story – video | Live Read Interesting Bangla Galpo APK | Read Interesting Bangla Galpo Download | Live Bengali Story mp3 | Full Live Bengali Story | Bengali Famous Story 2023 | Shabdodweep Bengali Famous Story | New Bengali Famous Story | Read Interesting Bangla Galpo in pdf | Read Interesting Bangla Galpo – audio | Top Read Online Bangla Golpo | Bengali Famous Story – video | Bengali Famous Story mp3 | Full Bengali Famous Story | Bengali Literature | Shabdodweep Magazine | Shabdodweep Web Magazine | Live Bengali Story Writer | Shabdodweep Writer | Read Interesting Bangla Galpo Translation