শওকত নূর – সূচিপত্র [Bengali Story]
[Read Bangla Natun Galpo]
উদ্ভাসিত আলো – শওকত নূর
এক
নির্লিপ্ত অতিক্রম করে গেলেন তিনি আমাকে। বয়স ও বোধ পরিপক্বতার পথে ধাবমান জীবন প্রবাহে এই প্রথম কোনও ব্যক্তি, যাকে অতিক্রম কালে তার আপাদমস্তকে, বিশেষত তার মুখমণ্ডলে দৃষ্টি ধরে একটি বস্তু-নিরপেক্ষ ভাবলেশহীন অভিব্যক্তি আমি লক্ষ্য করি। কৈশোর উত্তীর্ণ হবার পর থেকে আমি সাধারণত অপরিচিত কোনও ব্যক্তির মুখমণ্ডলে সরাসরি দৃষ্টি ধরি না। বিশেষ কৌশলে ব্যক্তির অলক্ষ্যে আমার সকাশে তার অভিব্যক্তিটি দেখে নিই। সরাসরি মুখোমুখি হলে অধিকাংশের মুখাভিব্যক্তিতে কোনও নিয়ন্ত্রণ চিহ্ন পরিলক্ষিত হয় না। হেসে ফেলেন তারা আমার আপাদমস্তকে নজর করে, প্রত্যক্ষ তাচ্ছিল্য হাসি।
কিছু আছেন, যারা সংখ্যায় অতি নগণ্য, কিংবা সমাজে ব্যক্তিত্ববান ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত, তারা সামনাসামনি একটা স্থিরতা, নির্লিপ্ততা কিংবা কারুণ্য বজায় রাখার চেষ্টা করেন মুখমণ্ডলে, কিন্তু আড়ালে কোনও কৌশলগত স্থানে দাঁড়িয়ে বা বসে প্রতিবারেই লক্ষ্য করেছি, মুখোমুখি তাদের হাবভাবটা থাকে নেহায়েত অভিনয়। একটু নিরাপদ স্থানে গিয়েই তারা হেসে ফেলেন, তাচ্ছিল্য হাসি। অতিক্রমকারী যার কথা দিয়ে আমার জীবন-গল্প বয়ান শুরু করেছি, তিনি সুদর্শন, লম্বা, সুঠাম দেহের অধিকারী, বেশভূষায় কেতাদুরস্ত, বয়সে সদ্য যৌবন অতিক্রমকারী তথা প্রৌঢ়ত্বে সদ্য-যাত্রী।
তখন সকাল দশটা। আবহাওয়া পরিচ্ছন্ন, রৌদ্রোজ্জ্বল।নগর মহল্লায় পরস্পর বিপরীতমুখী পথে হাঁটতে আমরা অতিক্রম করি পরস্পরকে। তিনি সূর্যমুখী, আমি সূর্যের বিপরীতে। আমাকে অতিক্রমের পর একটা মুদি দোকানের সামনে দাঁড়িয়েছেন তিনি। আমি ঠিক তাকে অতিক্রম করেই পথপার্শ্বের এক খোলাদ্বার রেঁস্তোরায় ঢুকে পড়ি। এখান থেকে সরাসরি চোখে পড়ে তার দাঁড়ানো অবয়ব, যদিও স্থাপনাগত নানা জটিলতায় আমাকে তার এ মুহূর্তে দেখতে পাবার কথা নয়।
এরই মধ্যে গতানুগতিকের সব তাচ্ছিল্য শব্দই কানে উঠেছে বা উঠছে আমার। রেঁস্তোরার খোলা পথে পা রাখার পূর্বেই কানে উঠেছে বাইরের চুলায় স্থাপিত তাওয়ায় তেল ঢালিয়ে এবং পাশেই উঁচু স্থানের বেলনায় পরোটা ডলিয়ে কর্মচারীদের অস্ফুট হৃদ-বিদীর্ণকারী বহুল শ্রুত, বহুল সহ্যকৃত শব্দাবলী, বামন আইতাছে, বামন। এই বামনডার বয়ছ কত হইবার পারে?
হুম, কত আর হইব? পয়তিরিছ চল্লিছ তো হইবই। আবার বেছিও হইবার পারে। বামন তো, ধরা যায় না ছঠিক মতন।
চুল মোচে হিউজ পাক ধরচে, বিয়া করাইলে পোলাপাইন হইত এক ডজন, মাগার দেখতে তো দেহা যায় কেজি কেলাচের গ্যান্দা পোলাপইনগো লাহান, হাঃ হাঃ হাঃ।
আহহা, বিয়া করচে কি করে নাই তা জানছ ক্যামতে? কইরাও তো থাকপার পারে।
আরে ধূর! কই করব বিয়া? কেডায় মাইয়া দিব?
আহা, হ্যাতের সমগোত্রের কাউরে করব।
আরেন না, কুনু বিয়াছাদি করে নাই, আমি জানি। উই যে থাই রেছতুরেন আচে না জামটুলির মোড়ে, ওইহানে দারোয়ানের কাম করত আগে। দারোয়ান মানে কাছতমার দেইক্কা দরজা খুলত, আবার বাইর হওনের কালানে চাপাইত। ভালাই ফুটানি আচিল তহন। গলায় টাই ফুটাইত।
আরে ধুর, বামনের গলাত আবার টাই! হাঃ হাঃ হাঃ!
হাঃ হাঃ হাঃ!
ওই তরা অত হাচাহাচি করবার লাগছচ ক্যালা? কাম বাদ থুইয়া হাচাহাচি! এ্যালায় মনে জোর ফালাইয়া কাম কর। ওই কপাইল্যা, পাঁচ নম্বর টেবিলের বিছেছ কাছতমারেক খানা দে। রেঁস্তোরা মালিক হাঁক ছাড়লেন।
এমন তাচ্ছিল্য কানাকানি নতুন কিছু নয়। নিত্য দিনের সঙ্গী, অন্তত বছর বিশেকের। মূলত বয়স বিশ নাগাদ বৃদ্ধির প্রত্যাশা ছিল – আমার, বাবা মায়ের, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের। কিন্তু গুড়ে বালি। তারপর থেকেই বস্তুত প্রতিটি তাচ্ছিল্যোক্তি হৃদপিণ্ডে নীরব রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছে। বলতে গেলে প্রতিদিন অঝোরে কেঁদেছি, ঘুমহীনতায় নিরন্তর ছটফট করেছি প্রতিটি রাত। কতবার মনস্থির করেছি, হয় আত্মহত্যা করব, নয়তো কাউকে না বলে কয়ে কোথাও নিরুদ্দেশ হব – কোনও অজানালোকে, যেখানে কোনও তাচ্ছিল্য আমাকে নিত্য রক্তাক্ত ক্ষত বিক্ষত করবে না।
কিছু ধর্মীয় শিক্ষা ছেলেবেলায় ছিল আমার। তা থেকেই ধৈর্য ধরেছি, আত্মহননে নিবৃত্ত হয়েছি। দিনের পর দিন সহ্য করতে করতে যেন অনুভূতিহীন পাথরে পরিণত হয়েছি। আমাকে এসব আর খুব বেশি স্পর্শ করে না। আজকাল অন্যমনস্কতা আমাকে যেন কোন জগতে তুলে রাখে। কী যেন ভাবি আমি সারাক্ষণ, পথ হাঁটতে, কোথাও দাঁড়াতে বসতে। কী ভাবি আমি? কী আছে আমার ভাববার মতো? এখন কী ওই লোকটাকে নিয়ে ভাবছি? আমি এখান থেকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তাকে। গুরুগম্ভীর মুখাবয়বে দাঁড়িয়ে কী যেন ভাবছেন তিনি। কী ভাবছেন তিনি? আমার সংক্রান্ত কোনও বিষয়াদি কি?
নাস্তা শেষ করে উঠে দাঁড়াই আমি। টেবিলে থুতনি ঠেকিয়ে দৃষ্টি ছুঁড়ি সেই দোকানটির দিকে। দেখি সে ব্যক্তিটি কৌতূহলী ভঙ্গিমায় এদিকেই তাকিয়ে আছেন। আমি খাবারের বিল চুকিয়ে বেরিয়ে পড়ি রেঁস্তোরা থেকে। মাথা নিচু হাঁটা ধরি ওই দোকানটির বিপরীতে, যেদিক থেকে এদিকে এসেছি, সেদিকে। আমার দৃষ্টি একান্তই মাটির দিকে। আমি খুব ভালো মত জানি, চারপাশের কৌতূহলী চোখগুলো কিভাবে লুফে নিচ্ছে আমাকে। একদল স্কুল পড়ুয়া ছাত্র বোধ করি আমার ডান পাশ দিয়ে হৈ হল্লায় বিপরীতে যাচ্ছিল। প্রায় কাছাকাছি এসে দু’ একজন ফিসফিস করে বলল, লিলিপুট যায়, লিলিপুট। ডানেই একটি সবজির দোকান আছে জানি। ওখান থেকে একটা পরিপক্ব কণ্ঠ ভেসে এলো, বীরবাগুন, বীরবাগুন। আমগোর পাশের গেরামে আছে একজনা। কিছু করবার না পাইরা অহন আতুর সাইজা পথে উফুর হইয়া পইড়া চিল্লাইয়া বিক্কা করে। খোদার ছিস্টি, যারে যেমনতর বানাইছে। কী করবার আছে?
আমি নিশ্চুপ চলে এলাম কিছুদূর। এখানে একটা ফলের দোকান আছে। পাশেই ইলেকট্রিক থাম্বি। থাম্বির পেছনে দাঁড়িয়ে সতর্ক দৃষ্টি ছুঁড়লাম ছেড়ে আসা ওই রেঁস্তোরা ও দোকানের দিকে। দেখলাম, হেঁটে রেঁস্তোরার সামনে এসে দাঁড়ালেন ভদ্রলোক। হাঁটায় কিছুটা জড়তাগ্রস্ততা লক্ষ্য করা গেল। হয়তো তা বয়সজনিত কারণে। আমি ডানে বাঁয়ে হেলেদুলে হাঁটি। বয়স বাড়ার সাথে এই হেলনদুলনটা ক্রমশ বাড়ছে। তার ক্ষেত্রে তেমন কিছু নয়, মামুলি। কত হবে তার বয়স? হয়তো আমার চেয়ে কম। আমার যেখানে পঞ্চাশ, তার হয়তো পয়তাল্লিশ। দাঁড়িয়ে কী কথা বলছেন তিনি পরোটা ডলিয়ে, তাওয়ায় তেল ঢালিয়ে পরোটা নাড়াচাড়াকারীদের সাথে? আমার সংক্রান্ত কোনও কিছু কি?
এত লোকজন প্রতিদিন দেখি, কাউকে নিয়ে এ জাতীয় কোন প্রশ্ন জাগে না; আজ এত স্বল্পক্ষণের দেখায় এ লোকটিকে ঘিরে এতসব প্রশ্ন জাগছে কেন মনে? আমি কি স্বাভাবিক আছি? নিঃসন্দেহে নেই।অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে কোনও সাহায্য সহযোগিতা কি আমি অবচেতনে মানুষের কাছে প্রত্যাশা করছি? এ লোকটি কি তারই প্রত্যক্ষ নজির? প্রায় সপ্তাহ তিনেক হলো থাই রেঁস্তোরায় দরজা খোলা চাপানোর কাজটি আমার চলে গেছে। অপরাধ আমার কিছুই নয়; একবার শুধু এক অভিজাত কাস্টমারের হাঁটুতে অলক্ষ্যে আমার থুতনি বাড়ি খেয়ে গেছিল। বয়োঃবৃদ্ধ রেঁস্তোরা মালিক, যিনি দয়াধর্ম করে পথ থেকে তুলে এনে আমাকে চাকরিটি দিয়েছিলেন, মাস দুই হলো তিনি অসুস্থাবস্থায় বিশ্রামে গেছেন। তার সদ্য বিদেশ ফেরত যুবক ছেলে রেঁস্তোরা দেখভালে তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। আমি উপলব্ধি করছি, প্রথম দিন থেকেই তিনি আমাকে না পছন্দ করছিলেন এবং কারণে অকারণে আমার ভুল ধরে ভৎর্সনা করে আসছিলেন। কাস্টমারের হাঁটুতে থুতনির বাড়ি লাগাটা যেন আমাকে ছাটাইয়ের প্রশ্নে তাকে বড় এক অজুহাত জুগিয়েছে। পনের দিনের বেতন অনেকটা জোরপূর্বক দাক্ষিণ্য দিয়ে তিনি আমাকে বিদায় করেছেন। নিদারুণ হতাশায় নিত্যদিনভর আমি একটি নতুন চাকরি খুঁজে বেড়াচ্ছি। উল্লিখিত লোকটিকে কোনও মায়ালোকের সাহায্যকারী ভেবে আবিষ্ট হচ্ছি কি? সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে চলে আসি মহল্লার শেষ প্রান্তের পরিত্যক্ত শিশু পার্কে। এক গাছের গায়ে গা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে ভাবনায় ইতি টানার প্রয়াস করি। শ্রান্ত অবসন্ন ঘুমিয়ে পড়ি শীঘ্র।
যখন ঘুম ভাঙল তখন সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নেমেছে। ঘুমহীনতা নৈমিত্তিক হলেও নাওয়াখাওয়াহীন এমন বেঘোর ঘুমদশা সময় সময় পেয়ে বসে। কিছুক্ষণ ঝিম ধরে বসে থাকার পর বাসস্থানের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরি। নগর উপকণ্ঠের রেললাইন পাশের ছোটবড় দু’ প্রকোষ্ঠের বসতি-খুপরির ছোটটি আমার বাসস্থান। সেখানে এসেও ঘুমে গা এলিয়ে দিই। মাঝরাতের দিকে বিকট অট্টহাসির শব্দে ধরমড় জেগে উঠি। প্রায়শ এমন হয়। পাশের বড় কক্ষটিতে তরুণ বয়সী ক’জন গ্যারেজ কর্মী ও ফেরিওয়ালা থাকে। স্বল্পশিক্ষিত এরা প্রায়ই হলে সিনেমা দেখে রাত করে ঘরে ফেরে। উচ্চস্বরে সিনেমা কিংবা যাত্রাপালার সংলাপ আউরায় ।এ মুহূর্তে তা-ই করছে তারা। আমার হাই তোলার শব্দ শুনে একজন বলে উঠল, ও বামন মিয়া, ঘোম ভাঙল নাহি? চাকরি বাকরি খোয়াইয়া মানুষ ঘোম খোয়ায়, আমগো বামন মিয়ায় করে উল্টাডা। চাকরি খোয়াইয়া নাহে তেল মাইরা ঘোমায়। চাকরি একটা আছে, করবা নাহি? চাকার নাট বল্টু খুলবা আর লাগাবা। না, থাউক। এহে তো বামন, তার উফর বয়সটা বেশি। গ্যারেজের কাম লইয়া মালিকের লাত্থি গুতা খাইয়া মরবা।
ভাবি, স্বাভাবিক জীবন থাকলে নিশ্চয়ই এদের বয়সী সন্তানাদি থাকত আমার। নিশ্চয়ই এ ধরনের অসম্মান কষাঘাতে জর্জরিত হতে হত না। একটা সময় এমন অসম্মানে চুপিচুপি অঝোরে কাঁদতাম। এখন কান্না পায় না, বুকের মধ্যে কী একটা দলা পাকিয়ে থাকে। শুধু ছটফট করি। সারাদিনের ঘুমাবেশটা নিমিষে চলে গেল। ভাবছি নানা কথা- কিছুদিনের দারোয়ানী চাকরি মানস জগতে যে পরিবর্তন এনেছে, তাতে করে আবারো কি ফিরে যেতে সক্ষম হবো নানাস্তরের নিচুতর পেশায় – হোটেলে থালাবাসন ঘষামাজা, ময়লার ভাগারে বর্জ্য টোকানো প্রভৃতিতে? প্রাইমারি পর্যন্ত যেটুকু পড়াশোনা করেছিলাম তাতে শেখার ভিতটা ভালোই ছিল। বেশ বই পড়েছিলাম জীবনে, ছবিও এঁকেছি আড়ালে আবডালে। দারোয়ানী কাজে বেতন তোলার সময় দস্তখত দেয়া বাদে সবই যেন বৃথা। নানা ভাবনায় জেগে রইলাম ভোর অবধি।
সকাল দশটা নাগাদ বস্তিতে থাকার পর ক্ষুধা পেটে আবারও ওই হোটেলটিতে তন্দুরি রুটি খেতে যাবার চিন্তাটি দুর্বার হয়ে ওঠে। জেগে ওঠা সেই কৌতুহলটিও অবদমনে মারা পড়েনি বিগত ঘণ্টা চব্বিশে। মনের মধ্যে ঘুরেফিরে বারবার একই প্রশ্ন উত্থিত হচ্ছে – ওই লোকটি কি কাল ওই সময় কোনও কৌতুহল ঝেড়েছেন আমাকে ঘিরে? কিছু যদি জানা যায়! বস্তি থেকে ঝটপট বেরিয়ে হাঁটা ধরি সে রেঁস্তোরাটির উদ্দেশ্যে।
দুই
কী করে আমরা পরস্পর বন্ধু, সহযোগী তথা সহনিবাসী হলাম সে বর্ণনা নিস্প্রয়োজন। মাস ছয়েক হলো আমরা পরস্পর একসাথে আছি। আমার সে দিন-ক্ষণের ভাবনামত সহায়ক ব্যক্তিটি সত্যিই আমার চেয়ে বছর পাঁচেকের ছোট। শিক্ষিত, মার্জিত, অমায়িক এক ভদ্রলোক। পেশায় চিত্রশিল্পী কাম লেখক। শ্রদ্ধায় তিনি আমাকে জ্যেষ্ঠ এবং আমি তাকে তার ইচ্ছেয় কনিষ্ঠ সম্বোধন করি। শৈলনগরীর শেষ প্রান্তের উপত্যকা নিকটবর্তী দুই কক্ষের এক বাসায় আমরা থাকি।
আমার এ সহায়ক, পরম উপকারী, সহনিবাসী বন্ধু চিরকুমার এক রহস্যময় পুরুষ। কোনও কারণে তিনি নিজেকে ব্যক্ত না করতে বদ্ধপরিকর। অনেক জিজ্ঞাসাবাদে শুধু এটুকু জানা গেছে, তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ একজন বিদগ্ধ, অবহেলিত, চিরব্যথিত মানুষ খুঁজছিলেন সমব্যথী হিসেবে। আমার প্রতি তার দৃষ্টিপাত ছিল অনেকদিন আগে থেকেই। তার ভাষ্যে, বার দুই তিনি আমার ওই থাই রেঁস্তোরায় খেতে গেছেন। ওখানে আমার চাকরিচ্যুতির আদ্যপান্ত ঘটনা তিনি জানেন। উল্লিখিত সে অভিজাত কাস্টমারের হাঁটুতে মাথা লাগাজনিত কারণে আমাকে ভৎর্সনার বিশেষ মুহূর্তে তিনি ওই রেঁস্তোরায় আমার পাশের টেবিলেই খাদ্যগ্রহণরত ছিলেন। এক নিবিড় প্রত্যক্ষদর্শী।
মহিয়ান কনিষ্ঠের কক্ষটি বেশ বড়সড়- সুপরিসর। সারা কক্ষ জুড়ে শোভামণ্ডিত আছে তার কৃত তথা সৃষ্ট নানা শৈল্পিক নিদর্শন। বিশ্বের মহান বড় শিল্পীদের বিখ্যাত সব চিত্রকর্মও রয়েছে চারদিকের দেয়ালে। তার বুকশেলফটি সুবৃহৎ এবং বিশ্বের বড়বড় সব লেখক দার্শনিকদের সৃষ্টিকর্মে পূর্ণ। তার লেখার টেবিলে আছে অত্যাধুনিক কম্পিউটার। তিনি মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। এসব তিনি আমাকেও কিনে দিয়েছেন। অধিকন্তু তিনি শহরের নামকরা আর্ট স্কুলে ভর্তি করিয়ে আমাকে আর্ট শিখিয়েছেন। এরই মধ্যে আঁকার হাত বেশ দক্ষ হয়ে উঠেছে আমার। তিনি নিজেও আগে থেকে বেশ চমৎকার আঁকেন। কিন্তু তার প্রধান কাজ লেখালেখি হওয়াতে তিনি ছবি আঁকার পেছনে সময়ক্ষেপণে অনাগ্রহী।
দিন রাতের যে কোনও মুহূর্তে তার মাথায় লেখার সাথে জুড়ে দেবার মতো ধারণা আসে। তার জন্য একজন সার্বক্ষণিক সহযোগী শিল্পী প্রয়োজন। পরম গর্ব ও সৌভাগ্যের বিষয় এই যে আমিই হতে পেরেছি সেই শিল্পী। যখন তখন তার নির্দেশনায় ছবি আঁকি। কত বিচিত্র ধারণার রূপক যে সেসব ছবি! আঁকতে ডুবে গিয়ে নিজেকে যখন হারাই, মনে হয় জীবনের সব দুঃখ ব্যথাগুলো কোথায় কোন ফাঁকে যেন হাওয়ায় উবে গিয়ে আমাকে পরিণত করেছে এক সদাহাস্য জগত-সার্থক মানবে। হ্যাঁ, আমি এখন কেবলই হাসি, গ্লানি-মুক্তির হাসি।
কাজের অবসরে বেশ সময় অতিবাহিত করি আমরা। প্রায় বিকেলেই দু’জন চলে যাই উপত্যকায়। পড়ন্ত বিকেলগুলো কী যে অপূর্ব রঙ -রস- রূপ মাধূর্য নিয়ে নিত্য আবির্ভূত হয়! তিনি বসে ভাবেন, কখনো ডায়েরির পৃষ্ঠায় কলম চালান। আমি প্রায় দিনই লালাভ মেঘের দিকে দূরন্ত বাতাসে রঙিন ঘুড়ি উড়িয়ে দিই, অজস্র পাখিকে দু’হাতে খাদ্যশস্য আহার করাই, পাহাড়ি মেষপালকদের সাথে গল্প জুড়ি। বেশ পাহাড়ি সব মানুষগুলো। শ্বেত- শুভ্র তাদের দৃষ্টি – মন। সেখানে তাচ্ছিল্যের স্থান নেই, অহংকার গরিমার লেশ নেই। বেশ কাটে তাদের সাথে আমার।
সূর্যাস্তে আমরা যখন শহরে ফিরি, কনিষ্ঠ মহান প্রায়ই জিজ্ঞাসা করেন, কেমন লাগছে জীবন, আত্মহত্যার ইচ্ছে জাগে কি না প্রভৃতি। আমি হেসে উড়াই। বাসায় আমরা নিজ নিজ কক্ষে কাজে গভীর মগ্ন থাকি। কনিষ্ঠের লেখা সম্পন্ন হলে তিনি তা আমার কম্পিউটারে স্থানান্তর করেন। দু’জন মিলে লেখার পটভূমিকায় ছবি সেটিং দিই। লেখাগুলো কনিষ্ঠের ইচ্ছায় তার ও আমার ছদ্মনামে নানা মাধ্যমে চলে যায়, নিয়মিত ছাপা হয়। কখনো কখনো তিনি আমার আঁকা সর্বোত্তম ছবিগুলো পোস্ট দেন। প্রতিদিন অজস্র প্রতিক্রিয়া আসে দু’জনের মেইলে। আমরা তা দেখি।
ইদানিং ছবি আঁকার পাশাপাশি বইপাঠের মাত্রাটা আমি সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত করেছি। ফাঁকে ফাঁকে লেখার অভ্যাস গড়ে উঠছে- ছড়া কবিতা, খুদে-গল্প। বেশ প্রতিক্রিয়া আসে সেগুলোর। প্রায় কনিষ্ঠের গুলোর মতোই। কনিষ্ঠ মাঝেমাঝে বলেন, কী, কোন ভাবান্তর ঘটে নাকি? আমি মাথা ঝুঁকে না- সূচক জবাব করি। একদিন তিনি হাসিমুখে বললেন, চাইলে আপনি এ জীবন থেকে মুক্তি নিয়ে ভিন্ন জীবনে প্রবেশ করতে পারেন। সে ব্যবস্থা আমি করে দিতে পারি।
যেমন? আমি কৌতুহল ঝাড়ি।
আপনি চাইলে আমি আপনাকে সংসার জীবনে যাবার ব্যবস্থা করে দিতে পারি।
আমি জোরালো না-সূচক মাথা নাড়ি।
তবুও চূড়ান্তভাবে ভাববার সময় থাকছে। ভাবতে থাকুন। হেসে বললেন তিনি।
প্রায়শ ভাবি, আমি যেসবের অভাববোধে চিরকাল হা হুতাশে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছিলাম, এই মহান ব্যক্তি তার সবকিছুতে পরিপূর্ণ হওয়া সত্বেও চিরকাল একলা রয়ে যাবার ব্রতে যেখানে গ্লানিহীন সদাহাস্য জীবনে গা ভাসিয়েছেন, সেখানে সংসারে না যাবার শূন্যতায় আমার এত দুঃখ কিসের? আজ কোন দুঃখবোধ আমার নেই। আমি এখন নিজের কাছে নিজে এক পরিপূর্ণ মানব। আর এভাবেই পরিসমাপ্তিকামী।
আমরা নিয়মিত উপত্যকায় যাই। প্রায় দিনই যাই পড়ন্ত বেলায়। উপত্যকা শেষে পাহাড়ের ওপারে সূর্যের লুকিয়ে পড়া, ছড়ানো লালাভা, দিগন্ত পাটের খণ্ড বিখণ্ড লাল মেঘ, হাজারো পাখির ওড়াউড়ি, সাদা খরগোশের দৌড়ছুট, পাহাড়ি মেষপালক, মেষপাল, খাদ্য শস্য ছড়ানোর ফাঁকে অজস্র পাখির ঝাঁকে নিজের আপাদমস্তকে ঢাকা পড়ে যাওয়া, কনিষ্ঠের সদালাপ, ধ্যানমগ্নতা, লিখায় ডুবে থাকা কিংবা চমৎকার কবিতা আবৃত্তি, রঙিন ঘুড়ির সুতোয় টানাটানি- তামাম জগৎ ভুলে সময়গুলো এসবে কাটে অসাধারণ!
অন্ধকার ঘনাবার আগে আমরা আলাপচারিতায় পথ হেঁটে নগর আবাসে ফিরতে থাকি। হাঁটার ফাঁকে একদিন কনিষ্ঠকে বললাম, আমাকে তো বেশ পরামর্শ দিলেন। এবার আরো একবার পুরনো প্রশ্নটি করি, ঠিক আমাকে পরামর্শ ঝরাবার জেরে?
নিশ্চয়ই জ্যেষ্ঠ,করুন যে কোনও প্রশ্ন।
আপনার সংসারে না যাবার সিদ্ধান্তটি কি চিরন্তন? হেতুটি কি রহস্যময়ই থাকবে চিরকাল? লেখায় আপনি সমাজ অনুকরণীয়, মনুষ্য অনুসরণীয়- ব্যাপারটি তবে কেমন দাঁড়ায়?
বিষয়টি একান্ত ব্যক্তিগত- এই আঙ্গিকে নিজেকে অনুকরণীয় অনুসরণীয় হবার বিষয়ে পাঠক সকাশে কোথাও কোনও শব্দ বাক্যে কোনও পরামর্শ আমার নেই। প্রতিটি মানুষেরই ব্যক্তি-স্বাধীনতা থাকে, ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য, ব্যক্তি-জীবন থাকে, থাকবে।
জি, ধন্যবাদ।
জ্যেষ্ঠ, আগামীকাল একটু আগেভাগে আমরা উপত্যকায় হাজির হব। ছবি আঁকার যাবতীয় সাজসরঞ্জাম সমেত আসতে হবে। জীবনের এক অন্যতম বিশেষ লেখার পটভূমিকায় স্থাপন উদ্দেশ্যে এক অন্যতম বিশেষ ছবি আপনাকে আঁকতে হবে কাল।
যথাআজ্ঞা, কনিষ্ঠ মহান। সহাস্যে মাথা নেড়ে বললাম আমি।
পরদিন যথারীতি আমরা আগেভাগে উপত্যকায় গিয়ে হাজির হই৷ কনিষ্ঠ মহান কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে চারদিকে লক্ষ্যপাতের পর একটি উঁচু ঢিবিমত স্থানের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশে বললেন, জ্যেষ্ঠ, ওইখানটায় আমি আজ সূর্যের দিকে মুখ করে বসব। সূর্যাস্ত নাগাদ কিংবা তার পরেও হয়তো আমি বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকব। কিন্তু উদ্দীষ্ট ছবিটি শেষ হতে হবে সূর্যের পাটে যাবার প্রাক্কাল নাগাদ। দেখুন, আজকের শেষ হাসিটুকু ঝরিয়ে চলে যাচ্ছে সূর্য। ওপাশে আড়াল হলে স্তব্ধ হবে হাসিটুকু। পরবর্তী পর্বটা অন্ধকারের তথা কান্নার। এখানেই কিন্তু শেষ নয় ; কাল সকালে আবারও সে হেসে উঠবে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হলে পূনরায় কাঁদবে। মেঘ সরে গেলে এমনই হাসবে। জীবন এমনই।
জীবন জগৎকে সঠিক অর্থে উপলব্ধি না করেই, অকারণ অসঙ্গত নিজেকে ছোট তথা তুচ্ছ বিবেচনার নিরঙ্কুশ ভ্রান্তিতে অনেকে হতাশ হয়ে আত্মহননের প্রয়াস করেন। অথচ বেঁচে থাকার জন্য জগতে রয়েছে বিচিত্র অগুনতি পথ, অগুনতি নিয়ামক। মানুষ হিসেবে থাকা চাই সেসব আঁকড়ে ধরার মতো দৃঢ় চেতনা, একাগ্রতা, ধৈর্য, সৎসাহস। আমরা মানুষরা জগতের শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে জগৎ বর্ষিত হয়েছি। এ থেকে জীব জগতের অন্য সব সদস্যরা নিচুতার গ্লানিতে ঝরে যাচ্ছে না। তারা বুদ্ধিমত্তার অধিকারী হলেও নিশ্চয়ই তা যেত না। বিধাতা আমাদের শ্রেষ্ঠ করেছেন সামগ্রিক অর্থে। সে সামগ্রিকতায় মনুষ্যকুলের প্রতিটি সদস্য আছে। উঁচু নিচু, ধনী গরিব, সাদা কালো, সুবেশ- ভিন্ন বেশ প্রত্যেকে আছে। অথচ আমরা নিজেদের মধ্যে নানা চলকে উপচলকে বৈষম্য বিভক্তি সৃষ্টি করে শ্রেণিগতভাবে আলাদা আলাদা শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করি। কিন্তু এককভাবে আমরা সার্বিক চলকে শ্রেষ্ঠ কি? নিঃসন্দেহে নই। কেউ একদিকে সমৃদ্ধ তো অপর দিকে অসমৃদ্ধ। কেউবা ঠিক বিপরীতটি। পরস্পর পরস্পরের পরিপুরক হয়েই আমরা সামগ্রিক অর্থে শ্রেষ্ঠ। সেখানে কেউ কাউকে আমরা অযাচিত তাচ্ছিল্য-হেয় প্রতিপন্নের বৈধ অধিকার রাখি না। আর যদি কেউ সেই অন্যায়োচিত কাজটি করেই বসে, তা ভেবে নিজেকে নিঃশেষ করে দেবার কাজটি একান্ত নির্বুদ্ধিতা, আর গর্হিত অপরাধ।
দেখুন, মরুতে পানি স্বল্পতা প্রকট; শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি ঝরে যাওয়া রোধে ক্যাকটাসের পাতাসমুহ কাঁটায় রূপান্তরিত হয়। উটের গলায় থলের সৃষ্টি হয়। অভিযোজন! ক্যাটটাস কিংবা উট কাউকেই বিধাতা বিবেকবুদ্ধি আরোপ করেননি। অভিযোজনটি এ ক্ষেত্রে তাঁর স্ব-আরোপিত। তাঁর এ দৃষ্টান্ত হয়তো বিবেকবোধ আরোপিত শেষ্ঠতর জীব মানুষের প্রতি তাঁর অভিযোজন নির্দেশনারই মূর্ত প্রতীক। কী মনে হয় এখন? বেঁচে থাকার সার্থকতা বলতে কিছু কি তাৎপর্যময় হয়ে ওঠে জীবনে? দৃশ্যমান জগতে?
জি, কনিষ্ঠ। শুধু মানুষে মানুষে পরস্পর নিবিড় সাহচর্য প্রয়োজন, সঠিক উপলব্ধি প্রয়োজন, এই যা।
ঠিক। যাহোক, যে গল্পের পটভূমিকা উদ্দেশ্যে আজকের আঁকিতব্য ছবিটি হতে যাচ্ছে, সে গল্পটি হবে বিশেষ এক গল্প, অন্যতম তাৎপর্যময় একটি। আমার পূর্ণ আস্থা বিশ্বাস আছে আপনার হাতে তা চমৎকৃত হয়ে উঠবে।
কথা শেষে হেঁটে গিয়ে উল্লিখিত উপত্যকা ঢিবিতে সূর্য মুখো বসলেন কনিষ্ঠ। আমি আঁকতে শুরু করি।
একসময় পাহাড়ের ওপারে সূর্যাস্ত গেল। উপত্যকা ঢিবিতে তেমনই স্থির বসে রইলেন কনিষ্ঠ মহান। ধীরে ধীরে দিগন্তের লালাভাগুলো বিলীন হয়ে অন্ধকার নামলো। ছবি আঁকা শেষে দীর্ঘক্ষণ এক দৃষ্টে চেয়ে আছি আমি। প্রাণে বাজছে কনিষ্ঠ মহানের আজকে এতক্ষণ ধরে বলা যতসব তাৎপর্যময় কথা। অন্ধকারে কান ফেলে আমি চারদিকে যেন সেসবের প্রতিধ্বনি শুনতে পাই। তেমনই স্থির বসে আছেন তিনি। অন্ধকারে তার মূর্তিটি বিলীনতার পরিবর্তে যেন ক্রম মূর্ত হয়ে উঠছে।
হঠাৎ সেদিক থেকে দৃষ্টি ফেরাই আমি। চারদিকে তাকিয়ে কেন যেন মনে হলো, উর্ধ্বলোক থেকে চারপাশে বিস্ফারিত নেমে আসা এই অদৃশ্য অতি মিহি কৃষ্ণ-সূতা জাল যেন তথাকথিত শাশ্বত অন্ধকার নয়, যেন জ্যোতির্লৌকিক কোনও ছদ্মবেশধারী উদ্ভাসিত আলো!
শওকত নূর | Shawkat Noor
Adonis | অ্যাডোনিসঃ আধুনিক আরবি কবিতার রূপকার | 2023 Article
Mahagai | মহাগাই – শওকত নূর | 2023
Living next to tiger | বাঘের পাশে বাস করা | 2023
The legend of Jagannath | জগন্নাথের কিংবদন্তি
Read Bangla Natun Galpo 2023 | Top Bangla Golpo Online Reading | New Read Online Bengali Story | Top Best Story Blogs | Best Story Blogs in pdf | Sabuj Basinda | High Challenger | Famous Bangla Golpo Online Reading | Shabdodweep Read Online Bengali Story | Shabdodweep Writer | Bangla Golpo Online Reading pdf | Read Bangla Natun Galpo in pdf | Pdf Read Bangla Natun Galpo | Natun Read Bangla Natun Galpo | Full Bangla Golpo Online Reading | Bangla Golpo Online Reading Blogs | Best Story Blogs in Bengali | Live Read Bangla Natun Galpo | Bangla Golpo Online Reading Ebook | Full Bangla Galpo online | New Live Bengali Story | New Bengali Web Story – Episode | Golpo Dot Com Series | Horror Read Bangla Natun Galpo Video | Horror Read Bangla Natun Galpo | New Bengali Web Story Audio | New Bengali Web Story Video | Read Bangla Natun Galpo Netflix | Audio Bangla Golpo Online Reading | Video Read Bangla Natun Galpo | Shabdodweep Competition | Story Writing Competition | Bengali Writer | Bengali Writer 2023 | Trending Read Bangla Natun Galpo | Recent Bangla Golpo Online Reading | Top Read Bangla Natun Galpo | Popular Read Bangla Natun Galpo | Best Read Online Bengali Story | Read Online Bengali Story 2023 | Shabdodweep Bangla Golpo Online Reading | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Golpo Dot Com Download | Read Bangla Natun Galpo mp3 | Horror Adult Story | Read Online Bengali Story Collection | Read Bangla Natun Galpo mp4 | Read Bangla Natun Galpo Library | New Bengali Web Story Download | Full Live Bengali Story | Bengali Famous Story 2023 | Shabdodweep Read Bangla Natun Galpo | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Live Bengali Story – audio | Read Bangla Natun Galpo – video | Bengali Famous Story mp3 | Full Read Bangla Natun Galpo | Bengali Literature | Shabdodweep Magazine | Shabdodweep Web Magazine | Live Bengali Story Writer | Shabdodweep Writer | Collection Bangla Golpo Online Reading