Poila Baisakh 1430 | স্মরণে-বরণে ১লা বৈশাখ

Sharing Is Caring:
Poila Baisakh

স্মরণে-বরণে ১লা বৈশাখ – প্রবোধ কুমার মৃধা [Poila Baisakh 1430]

১লা বৈশাখ (পয়লা বৈশাখ) বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। সমগ্ৰ বাঙালি জাতির কাছে দিনটি ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণের দিন রূপে সাড়ম্বরে পালিত হয়। বাংলাদেশে পালিত হয় ১৪ই এপ্রিল, ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গে পালিত হয় ১৫ই এপ্রিল। বৈশাখ নামটি এসেছে বিশাখা নক্ষত্রের নাম থেকে, কারণ এই মাসে বিশাখা নক্ষত্রটি সূর্যের নিকটবর্তী অবস্থানে বিরাজ করে। বৈশাখ মাস বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষপঞ্জির ১ম মাস। শকাব্দ অনুসারে সৌরভিত্তিক রবিমার্গের দ্বাদশ রাশির প্রথম মেঘের অন্তর্গত পূর্ণচন্দ্রিকা প্রাপ্ত প্রথম নক্ষত্র বিশাখার নাম অনুযায়ী বছরের ১ম মাসের নাম হয় বৈশাখ। নক্ষত্র সমূহের নাম থেকে বাংলা সনের মাসগুলির নামকরণ হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া ভারতের অন্য অঙ্গরাজ্যে যে বাংলা বর্ষপঞ্জি প্রচলিত আছে তা সংস্কৃত গ্ৰন্থ ‘সূর্য সিদ্ধান্ত’‌-কে ভিত্তি করে রচিত। সেখানে উল্লিখিত মাসগুলির মধ্যে প্রথম মাসের নামও বৈশাখ। গ্ৰেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে এপ্রিল মাসের শেষার্ধ এবং মে মাসের প্রথমার্ধ নিয়ে বাংলা বৈশাখ মাস। বৈদিক পঞ্জিকাতে মাসটিকে ‘মাধব’ মাস ও বৈষ্ণব পঞ্জিকাতে ‘মধুসূদন’ মাস নামে উল্লেখ করা হয়েছে।

এই প্রসঙ্গে একটা বিষয়ের অবতারণা অনিবার্য হয়ে পড়ে যে বাংলা বর্ষপঞ্জি বা বঙ্গাব্দের প্রবর্তক বা উদ্ভাবক কে? কার আমল থেকে বাংলা সৌর বর্ষপঞ্জির ঐতিহাসিক প্রচলন শুরু হয়? বিষয়টি আজও অমীমাংসিত। কারণ এ-নিয়ে একাধিক মতবাদ প্রচলিত আছে এবং ঐতিহাসিক ও গবেষকগণের মধ্যে মতানৈক্য প্রকট।

  • বঙ্গাব্দের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিব্বতের রাজা স্রংসন-এর নাম কোন কোন ঐতিহাসিক উল্লেখ করেছেন। তাঁদের আরও অভিমত, রাজা স্রংসনের সময়ে বাংলার উত্তরাঞ্চলের অনেকটা অংশ তিব্বতি সাম্রাজ্য ভূক্ত ছিল।
  • অপর এক মতে বলা হয়েছে, সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ বাংলা সনের প্রবর্তক ছিলেন।
  • সপ্তম শতাব্দীর প্রারম্ভে প্রাচীন গৌড়ের রাজ চক্রবর্তী রাজা ছিলেন শশাঙ্ক। জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের সোমবার ১২ই এপ্রিল ৫৯৪ ও গ্ৰেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের সোমবার ১৪ই এপ্রিল ৫৯৪ বঙ্গাব্দের সূচনা তথা বাংলা দিনপঞ্জির উদ্ভব রাজা শশাঙ্কের হাত ধরে ঘটেছিল বলে কয়েকজন ঐতিহাসিকের অনুমান। পরবর্তী সময়ে মোঘল সম্রাট আকবর এটিকে কর বা রাজস্ব আদায়ের উদ্দেশ্যে পরিবর্তিত করেন।
  • মোঘল সম্রাট আকবরের পূর্ববর্তী সম্রাটগণ রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে হিজরি বর্ষপঞ্জিকে অনুসরণ করতেন। আবুল ফজল তাঁর ‘আকবর নামা’ গ্ৰন্থে উল্লেখ করেছেন যে চন্দ্র নির্ভর হিজরি বর্ষপঞ্জির ব্যবহার কৃষকশ্রেণির কাছে এক কষ্টদায়ক ব্যাপার ছিল। কারণ চান্দ্রবর্ষ ও সৌরবর্ষৈর মধ্যে ১১/১২ দিনের বা প্রায় এক পক্ষকালের ব্যবধান ছিল যার কারণে কৃষি ফসলের সাথে না মেলায় খাজনা পরিশোধ করতে প্রজাসাধারণের প্রবল সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো। তাই মহামতি আকবর জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফতুল্লাহ শিরাজিকে চান্দ্র ইসলামি বর্ষপঞ্জি ও হিন্দু সৌর বর্ষপঞ্জি একত্রিত করে পৃথক একটি বর্ষপঞ্জি তৈরি করতে বলেন। ‘আইন- ই- আকবরী’ থেকে জানা যায় এর‌ই মধ্য দিয়ে সম্রাট আকবর এমন একটি ত্রুটিমুক্ত এবং বিজ্ঞানসম্মত ‌‌সৌর সনের প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন যার গ্ৰহণযোগ্যতা জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে আদর্শ হয়ে উঠবে। অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মতে ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা বর্ষপঞ্জি তথা বাংলা সনের প্রবর্তন ক’রে সম্রাট আকবর তাঁর আন্তরিক উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়িত করেছিলেন।

নতুন এই বর্ষপঞ্জিটি প্রথমে ‘তারিখ-ই-এলাহি’ নামে পরিচিত ছিল। পরে ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ১০ই বা ১১ই মার্চ এটি বঙ্গাব্দ নামে পালিত হয়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে খাজনা আদায়ের ক্ষেত্রে নতুন বর্ষপঞ্জিটি অনুসৃত হয়েছিল ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই নভেম্বর থেকে। তখন এই সনের নাম ছিল ফসলি সন। পরে তা বাংলা সন বা বঙ্গাব্দ নামে চালু হয়। এই প্রসঙ্গে জেনে রাখা দরকার যে হিজরি সন ও বাংলা সনের মধ্যে তারতম্য কতটা। হিজরি সন চান্দ্র বছর ৩৫৪ বা ৩৫৫ দিনে হয়, সেখানে বাংলা সন গণনা হয় ৩৬৫ দিন হিসেবে।

BENGALI ARTICLE

১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে ড: মেঘনাদ সাহার নেতৃত্বে গঠিত ভারতীয় পঞ্জিকা সংস্কার কমিটির প্রধান হিসেবে ড: সাহা অঙ্ক কষে নিশ্চিত হয়ে ঘোষণা করেছিলেন যে মোঘল সম্রাট আকবর‌ই বাংলা সন তথা বঙ্গাব্দের প্রবর্তক। পরে অনেকের মতো উড়িষ্যার ইতিহাসবিদ কাশীপ্রসাদ জয়সোবাল ড: সাহার মতকে সমর্থন করেছিলেন। সাম্প্রতিক কালে বাংলা একাডেমি বাংলা বর্ষপঞ্জি সংস্কারের জন্য যে কমিটি গঠন করেছিলেন, অপরেশ কুমার ব্যানার্জি ছিলেন সেই কমিটির একজন সদস্য। তিনি জানান যে, পূর্বে বাংলা বছরের শুরু হতো অগ্ৰহায়ণ মাস দিয়ে। অগ্ৰ = আগে বা প্রথম, হায়ণ = বর্ষ বা ধান্য। বাংলার প্রধান ফসল ধান কাটা শুরু হতো, তাই মাসটির নাম হয় অগ্ৰহায়ণ।

সৌর পঞ্জিকা অনুযায়ী বাংলা বারো মাস পালিত হয়ে আসছে বহুকাল ধরে। সৌর পঞ্জিকা আরম্ভ হয় গ্ৰেগরীয় পঞ্জিকার এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি থেকে। সংস্কৃতির এক অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে সৌর বছরের প্রথম দিনটি অনেক আগে থেকেই পালিত হয়ে আসছে, বঙ্গ, কেরল, আসাম, নেপাল, মণিপুর, উড়িষ্যা, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু সহ ত্রিপুরায়। তবে বর্তমানের মতো সর্বজনীন উৎসবের চেহারা নিত না। নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ (Poila Baisakh) কেবলমাত্র আর্তব বা ঋতু কালীন উৎসব রূপে পালিত হয়ে থাকত।যার মূল তাৎপর্য ছিল কৃষিকাজ কারণ প্রযুক্তি প্রয়োগের যুগ শুরু না হওয়ার কারণে তখন সম্পূর্ণ ভাবে ঋতুর উপরেই নির্ভর করতে হতো কৃষকদের।

নববর্ষ উদযাপনের আধুনিক খবর প্রথম জানা যায় ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় প্রার্থনা করে ওই বছরের পয়লা বৈশাখ (Poila Baisakh) হোম, কীর্তন ও পুজোর আয়োজন করা হয়েছিল। অনুরূপ ঘটনা পুনরায় ঘটেছিল ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে। বাংলা দিনপঞ্জির বর্ষবরণ উপলক্ষে অধুনা ১লা বৈশাখ (Poila Baisakh) তারিখটি নববর্ষ উৎসব রূপে সাড়ম্বরে উদ্‌যাপনের সর্বজনীন রূপ ধারণ করেছে। ১লা বৈশাখ সমগ্ৰ বাঙালি জাতির জীবনে এক পরম পবিত্র দিন। পশ্চিমবঙ্গে মহাসমারোহে দিনটি উদ্‌যাপিত হয়। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া ভারতের অনেক অঙ্গরাজ্যে ১লা বৈশাখ (Poila Baisakh) বা পহেলা বৈশাখ (Poila Baisakh) ভিন্ন ভিন্ন নামে ভিন্ন ভিন্ন রূপে উৎসব আকারে পালিত হয়।

‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌সমগ্ৰ পশ্চিমবঙ্গে অঞ্চল ভেদে এবং জেলা ভেদে পয়লা বৈশাখ (Poila Baisakh) বর্ষবরণ উৎসবের আচারগত কিছু কিছু পার্থক্য থাকলেও মূল চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সমূহ প্রায় এক‌ই থেকে যায়। মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের অঙ্গ স্বরূপ স্নানের পর নববস্ত্র পরিধান, বয়ঃজ্যেষ্ঠদের প্রণাম, বিবিধ ভুরিভোজের আয়োজন, বাড়িতে বাড়িতে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরমান্ন ও মিষ্টান্ন বিতরণ,মঙ্গলদাত্রী লক্ষী ও সিদ্ধিদাতা গণেশের আরাধনা প্রভৃতি। ১লা বৈশাখ হালখাতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নতুন খাতা উদ্বোধন করে তার উপর মঙ্গল চিহ্ন স্বস্তিক আঁকা হয়। গ্ৰাম বা শহরের উপকণ্ঠে বিভিন্ন মন্দির প্রাঙ্গণে ১লা বৈশাখ থেকে শুরু হয় পক্ষকাল ব্যাপী বা মাসকাল ব্যাপী বৈশাখী মেলা। ভারত বা বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেখানে যেখানে প্রবাসী বাঙালিরা বাস করেন সেখানে সেখানেও উদ্‌যাপিত হয় পয়লা বৈশাখ (Poila Baisakh)।

ভারতীয়রা উৎসব প্রিয় জাতি। হাজারো উৎসব অনুষ্ঠানের মাঝে নববর্ষও একটি অন্যতম। নববর্ষ উৎসব বাঙালি ছাড়া ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের মানুষেরা বিশেষ করে যে অঞ্চলগুলিতে সৌর বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করা হয় সেই সমস্ত অঞ্চলের মানুষ জন পয়লা বৈশাখ (Poila Baisakh) পালন করে থাকে। তবে বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন নামে এবং পৃথক রীতিতে নববর্ষ উদ্‌যাপিত হয়। মর্নিং শোজ দা ডে। এই বিশ্বাসে বছরের প্রথম দিনটিকে বিশেষ শুচি ও সুন্দর ভাবে যাপন করতে চায় সবাই।

  • বহগা / রঙ্গালী বিহু‌: মণিপুর, আসাম এবং বাংলার কোন কোন অংশে পয়লা বৈশাখ (Poila Baisakh) উৎসব আঙ্গিকে উদ্‌যাপিত হয়।
  • বৈশাখী: পয়লা বৈশাখ (Poila Baisakh) ‌‌’বৈশাখী’ নামে উৎসবটি উদ্‌যাপন করা হয় উত্তর ও মধ্য ভারতে। দশম শিখ গুরু গোবিন্দ সিং ১৬৯৯ খ্রিষ্টাব্দে শিখ ধর্মে তা অনুসরণ করতে বলেছিলেন। পাঞ্জাব ও হরিয়ানার উত্তর দিক সহ দিল্লির কিছু অংশে পয়লা বৈশাখ (Poila Baisakh) দিনটি বিপুল ধুমধাম সহ পালন করা হয়।
  • পুঠান্ডু: তামিলনাড়ুতে নববর্ষ উপলক্ষে পুঠান্ডু উৎসব উদ্‌যাপিত হয়। প্রচলিত প্রথানুযায়ী নববস্ত্র পরিধান, পূজার্চনা, শুভেচ্ছা বিনিময়, উত্তম ভুরিভোজ প্রভৃতি থাকে এই উৎসবের অঙ্গ স্বরূপ।
  • বিশু: বিশু একটি নববর্ষ উৎসব।কেরল ও কর্নাটকের কিছু কিছু অংশে নববর্ষ উপলক্ষে বিশু উৎসব পালিত হয়। আতসবাজি, বিচিত্র আলোর রোশনাইয়ে আলোকিত করা হয় বাড়িঘর।অঞ্চল ভেদে বিশু উৎসবটি ‘বিশ্বুপদাক্কম’ নামে পরিচিত।

পরিশেষে বলা যায়, ১লা বৈশাখ (Poila Baisakh) বা নববর্ষ উদ্‌যাপন উৎসবটি যেখানে যে নামে উদ্‌যাপিত হোক না কেন, বিবিধের মাঝে মূলগত উপলক্ষ ও বৈশিষ্ট্য সমূহের মধ্যে যথেষ্ট সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। বাংলা নববর্ষের বহুল প্রচলিত ঐতিহ্যবাহী শুভেচ্ছা বাণী হলো – ‘শুভ নববর্ষ।’

(তথ্য সূত্র: সৌজন্যে গুগুল)

প্রবোধ কুমার মৃধা | Probodh Kumar Mridha

Bengali Article 2023 | আশা নিরাশার দোলাচলে বাঁকুড়া জেলার কাঁসা শিল্প

Bengali Article 2023 | দুর্গা পূজার কথকতা | প্রবন্ধ ২০২৩

Emblem of Ramakrishna Mission | রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতীকের অর্থ | নক্‌শা ও তাৎপর্য | 2023

Top Bengali Article 2022 | বসন্ত উৎসব | প্রবন্ধ ২০২২

writing competition | writing competition malaysia | writing competition london | writing competition hong kong | writing competition game | writing competition essay | writing competition australia | writing competition prizes | writing competition for students | writing competition 2022 | writing competitions nz | writing competitions ireland | writing competitions in africa 2022 | writing competitions for high school students | writing competitions for teens | writing competitions australia 2022 | writing competitions 2022 | writing competitions uk | bengali article writing | bangla news article | bangla article rewriter | bengali article writing format | bengali article writing ai | bengali article writing app | article writing book | bengali article writing bot | bengali article writing description | article writing example | bengali article writing examples for students | article writing for class 8 | article writing for class 9 | bengali article writing format | article writing gcse | bengali article writing generator | article writing global warming | article writing igcse | article writing in english | bengali article writing jobs | article writing jobs for students | article writing jobs work from home | article writing lesson plan | article writing on child labour | article writing on global warming | bengali article writing pdf | bengali article writing practice | Bengali article writing topics | trending topics for article writing 2022 | what is article writing | content writing trends 2022 | content writing topics 2022 | Bangla Prabandha | Probondho | Definite Article | Bengali Article Writer | Short Bengali Article | Long Bengali Article | Bangla kobita | Kabitaguccha 2022 | Galpoguccha | Galpo | Bangla Galpo | Bengali Story | Bengali Article | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Shabdodweep Web Magazine | Shabdodweep Writer | Shabdodweep Founder

Leave a Comment