জয়নাল আবেদিন – সূচিপত্র [Bengali Novel]
খুঁজে ফিরি বিশল্যকরণী (পর্ব ১৫) – জয়নাল আবেদিন [Online Bangla Novel Reading]
বনে গিয়েও মনের হাত থেকে রেহাই নেই শঙ্খের। কোনরকমে যেন বাঘের মুখ থেকে ফেরত আসা। শ্বশুরের জেরার মুখ থেকে পালিয়ে বাঁচা। কখনো- কখনো বেশ অসহায় বোধ করে শঙ্খ।জীবন কেমন যেন অক্টোপাসের কবলে জড়িয়ে পড়ছে। স্বাতী হয়তো না ফেরার দেশে। ছেলে -মেয়ের দেখভাল। তাদের ভবিষ্যৎ। কোন জবাব তার কাছে নেই। সারাক্ষণ মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে প্রশ্নের পর প্রশ্ন।
মেজর সাহেব সেদিন হঠাৎই জিজ্ঞেস করেছিলেন, – এনি প্রবলেম ফেস টু ইউ ?
— না স্যার, ঠিক আছি। ছোট্ট উত্তর।
— তাহলে সব সময় কেমন চিন্তিত, উদ্বিগ্ন থাকেন আজকাল।
— না স্যার, অসুবিধা নেই। কিছুটা এড়িয়ে গেল শঙ্খ।
সেদিন রাতে খাওয়ার পর বিছানায় কাত হয়ে শুয়ে। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো। উঠে গিয়ে ফোনটা রিসিভ করল।
— হ্যালো, মেজদা, বলো কেমন আছো তোমরা ? বাড়ির সবার খবর ভালো তো ?
মেজদার একটু গম্ভীর গলা, – আমাদের সব খবর -সবার খবর , খুব ভালো। কিন্তু তোমার কি খবর ?
— ভালো আছি। শুভ্র- অভ্র কে এ বছর শিলিগুড়িতে কার্মেল ইস্কুলে ভর্তি করেছি। ওরা খুব ভালো আছে ওখানে। বোডিংয়ে খুব কেয়ার নেয়। কেমন গড় গড়িয়ে বলে ফেলল শঙ্খ।
— বৌমা কেমন আছে? হঠাৎ এমন প্রশ্ন কিছুটা হতচকিত শঙ্খ। মেয়েটাকে তো এবার ইস্কুলে পাঠাতে হবে ? মেজদার প্রশ্নের খেলা।
শঙ্খের আমতা আমতা জবাব। সকলেই ভালো আছে। হ্যাঁ- ভেবেছি ওকে এবার কাছে- পিটে কোন স্কুলে দেব।
— বৌমা এখন কোথায় আছে ? কলকাতায় না মুর্শিদাবাদে ? ফোনের অপর প্রান্তের জিজ্ঞাসা।
— হঠাৎ এমন কথা কেন বলছ মেজদা? বাড়িতেই থাকার কথা। তবে একদিন বলেছিল, – কটা দিনের জন্য মায়ের কাছে ঘুরে আসবে।
— তোমার শ্বশুর শাশুড়ি তো কলকাতায় । তোমার ছেলে-মেয়ে আগলে বসে আছে। আর তার মেয়ে মায়ের বাড়ি বেড়াতে গেল। কেমন কাকতালীয় ঘটনা তাই না !
শঙ্খর এখন হাত-পা কাঁপার অবস্থা। মেজদাকে ছোট থেকেই ভীষণ ভয় পায়। ওর জেদ-লোভ মেজদা ভালো করেই চেনে। ওর লোভের কারণেই ওকে ভবানীপুরের একলা থাকার বাড়িটা ছেড়ে দিয়েছে মেজদা নিজেই।
— না, তা ঠিক নয়। ঘাবড়ে গিয়ে বললে, – শ্বশুর-শাশুড়ি এসেছেন তো ঘুরতে, দু-একদিনের মধ্যেই চলে যাবেন।
— মিথ্যে দিয়ে সত্যকে ঢাকার চেষ্টা করো না। অমিত কাকা দুদিন আগে তোমাদের বাড়িতে গিয়েছিল। সবকিছু দেখে -জেনে এসেই আমাকে বলেছে। কাকা মিথ্যে বলার লোক নয় নিশ্চয়ই তুমি জানো।
চুপসে যায় শঙ্খ। মেজদা, – খুব অসহায় অবস্থার মধ্যে আছি। আগামী সপ্তাহে দশ দিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি যাবো। তোমার কাছে গিয়ে সব জানাবো।
— আমাকে আর বেশি কিছু জানাতে হবে না। অনেকটাই জেনে গেছি। ঠিক আছে, বাড়ি এসো আবার কথা হবে।
ফোনটা রেখে বিছানায় এসে বসলে শঙ্খ।সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে। বোতল খুলে ঢক- ঢক করে জল খেলো। পৃথিবী বড় জটিল আস্তানা। সবকিছু সহজ ভাবলেও বাস্তবে তা সহজ নয়। ঘাত-প্রতিঘাত, চড়াই- উতরাই মানতে হবে। মানতে হয়। মসৃণ জীবন কিছুকালের জন্য থাকে অবশ্যই, তবে চিরকালের জন্য নাও থাকতে পারে। যথেচ্ছাচারিতা কোনকালেই পৃথিবী সহ্য করেনি। ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে হয়। কাঠের লোভে জঙ্গল সাফ করা চলছে। গাছপালা কেটে শহর ক্রমশ কংক্রিটের জঙ্গল তৈরি হয়েছে। মাটির তলা থেকে যথেষ্ট ভাবে জল তুলে পরিষেবার কাজ চলছে। লোভে পাপ -পাপে মৃত্যু । উষ্ণতা আজ চরম পর্যায়ে ।মাটির তলায় জল নেই। চারিদিক একটা হাহাকার।
রাত্রি বাড়তে থাকে। শঙ্খের চোখে ঘুম আসছে না। জীবনের ছবিগুলো নেত্রপটে সরে সরে যায়। কিছুতেই ভুলতে পারছে না। কেমন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে এ সময়টা। উঠে গিয়ে, গলায় একটু তরল পদার্থ ঢাললে। একটু যদি বা নেশার মধ্যে ঘুম আসে।জীবনে কিছু কিছু সময় আসে। মস্তিষ্ক সব কিছুকে সায় দেয় না। ঘুমোতে ইচ্ছা করছে আর ঘুমিয়ে পড়লাম, তা হয় না। মস্তিষ্কে জমে থাকা সমস্যাগুলো- সমাধানের চেষ্টায় অব্যাহত থাকে। তাই ভাবনার বিষয়বস্তু ও বারবার সামনে চলে আসে।
শঙ্খর ভুলে যাওয়ার প্রবৃত্তিটাকে টেনে- হিঁচড়ে বারংবার সামনে নিয়ে আসে নিজের মস্তিষ্ক। যে ভোলায়, সে যদি না ভোলে কিছু করার নেই। খুঁচিয়ে- খুঁচিয়ে মনের মধ্যে জড়ো করে স্বাতীর অসংখ্য স্মৃতি। ছবির মধ্যে ভেসে আসে এক জীবন্ত চরিত্র। ইচ্ছে করেও ভুলে থাকা যায় না। যাবে না।
কোন অন্যায় করার সময় মানুষের মন যতটুকু সতেজ থাকে, কাজ শেষ হলে চিন্তার জালটা ক্রমশ ঘিরে ধরে থাকে। মনের মধ্যে কেমন একটা ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়। ভাবনার স্রোত মস্তিষ্কে ঘুরে- ঘুরে ওঠা নামা করতেই থাকে। রাত্রি বাড়তে থাকে। কিছুটা নিস্তব্ধ সেনা আবাস। শুধু শঙ্খের চোখে আজ ঘুম নেই। জীবনে প্রথম এমন একটা অভিশপ্ত রাত পালন করতে চলেছে। মুখটা মানুষের মনের আয়না। মুখের প্রতিচ্ছবিতে অন্তরের অনেক অনেক ছবি ভেসে আসে। যারা দেখে বোঝার, ঠিকই বুঝে নেয়। জহুরী-জহর চেনার মতোই।
একজন বলেছিল, – আমি হাসতে ভালোবাসি কারণ, হাসিটাই তো দুঃখ লুকোনোর একমাত্র ঔষধি !
শঙ্খ আজ ভালো করে হাসতেও পারছে না, যে কৌশলে দুঃখটাকে লুকিয়ে রাখবে। স্বাতীর জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠার কারণ সে নিজেই। এটা ভালো করেই বুঝে গেছে সে। কিন্তু যে পদ্ধতিতে গিলেছে উগরানো এ জীবনে আর কখনোই সম্ভব নয়।
যদি স্বাতীর মৃত্যুই হয়, ঘটনায় বা অঘটনে যেভাবেই হোক। এই মৃত্যুর দায় শুধু শঙ্খের উপরই বর্তাবে। সেটা শঙ্খ ভালোভাবেই বুঝে নিয়েছে। আর এটা প্রমাণ হয়ে যাওয়া মানে, তার জেলের অন্ধকারে কাটবে বাকি জীবন ।চাকরি চলে যাবে। টাকা-পয়সা কিছু হাতে আসবে না। ছেলে-মেয়ের বাকি জীবন। সামান্য একটা লোভ- অতিরিক্ত কিছু-কিছু লালসা, জীবনকে তছনছ করে দিল। ভাবনার অস্বচ্ছতা বাস্তব জীবনকে খাদের কিনারায় এসে দাঁড় করিয়ে দেয়। পিছনে ফিরে আসার রাস্তা হারিয়ে যায় গভীর অন্ধকারে। সামনে যাবার রাস্তা শেষ মৃত্যুর হাত ধরে দাঁড়িয়ে। এক কঠিন পরিস্থিতি। কঠোর সময়। শঙ্খ বিছানা ছেড়ে ওঠে। ঘরের মধ্যে একটু পাইকারি করতে থাকে। অন্ধকার রাত্রি। রাস্তার আলোয় ব্যারাকের চারপাশে আলোকিত। দূরে কুকুর ডাকার একটানা শব্দ।
একটা সিগারেট ধরিয়ে দরজা খুলে বাইরে এসে দাঁড়ায়। ধু-ধু নিস্তব্ধ এলাকা। গভীর রাতে একা একা ব্যারাকের বাইরে থাকা নিষিদ্ধ। বেশি সময় দাঁড়ায় না শঙ্খ। সিগারেট শেষ করে রুমে ঢুকে পড়ে।একটা চরম সত্যকে ঢাকতে কত কত মিথ্যের জাল বুনতে হয়, শঙ্খ ভালো করেই জানে। কিন্তু সত্য একদিন না একদিন উদ্ঘাটিত হবেই। তখন কি হবে ? আজ ছেলে- মেয়ে ছোট, তাদের কোন জিজ্ঞাসার উত্তর না দিলে-তারা বাধ্য হয়েই চুপ থাকে। তারপর একদিন বড় হবে। তখন যদি মায়ের খোঁজে বেপরোয়া হয়ে ওঠে । এতো ছাই-গাদায় ছুঁচ খোঁজা নয়, জলজ্যান্ত একটা মানুষ।তাদের গর্ভধারিণী মা। খোঁজ তারা দুই ভাই একদিন না একদিন করবেই। সঠিক সন্ধান কিংবা সঠিক অনুসন্ধান করার পর আসল সত্যিটা যদি সামনে আসে। বাবা হিসেবে সেদিন ছেলেদের সামনে দাঁড়াতে পারবে শঙ্খ। ছেলেরা যদি এমন বাবাকে প্রত্যাখ্যান করে। তাহলে তার শেষ জীবনটা কেমন ভাবে কাটবে ? আর্থিক সঙ্গতি তো জীবনে সব নয়। একটা সাহচর্য শেষ জীবনে সকল মানুষের জন্য চাই। একা একা বাঁচা যায় না।
একটা অব্যক্ত যন্ত্রণা মাথা থেকে পা পর্যন্ত, দুরমুশ করছিল শঙ্খকে। চুপচাপ আবার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে। আজ দীর্ঘ জীবনের এক রাতে, চোখের কোনটা কেমন চিকচিক করে ওঠে । চিবুক বেয়ে ক’ফোঁটা গরম জল চলে যাবার অনুভূতি পায় শঙ্খ । হঠাৎ কেমন যেন নিজেকে হালকা লাগে এখন। এভাবে থাকতে- থাকতে কখন যে দু’চোখের পাতা জুড়ে যায় টের পায় না।
জয়নাল আবেদিন | Joynal Abedin
New Bengali Story 2023 | দায়-দায়িত্ব | প্রদ্যোৎ পালুই
New Bengali Story 2023 | খুনসুটি | প্রসেনজিৎ মজুমদার
New Bengali Article 2023 | সার্বজনীনতার খোঁজে
Bishnupur Fair | ফিরে দেখা – বিষ্ণুপুর মেলা (১৯৮৮-২০২১)
Online Bangla Novel Reading | Bangla Upanyas Online | Bangla Upanyas Online 2023 | New Online Bangla Novel Reading | Bangla Upanyas Online Read | Read Bangla Upanyas Online | Bangla Upanyas Online pdf | Download Bangla Upanyas Online | Bangla Upanyas Online Series | Shabdodweep | Sabuj Basinda | High Challenger | Shabdodweep – Bangla Upanyas Online | Bangla Upanyas Online – Joynal Abedin | Bangla Upanyas Online Show | Shabdodweep Writer | Shabdodweep Novel Writer | New Bengali Novel | Full Novel in PDF | Free Novel Download | Top Bengali Novel | Famous Bengali Writer | Best Selling Bengali Story | Pratilipi Story | StoryMirror Story | Bangla Upanyas Online Book | Sabuj Basinda Website | Top Bengali Writer | High Challenger Motivational Blog | Full Story in Bengali | Bengali Story Reader | New Bengali Story 2023 | Bangla Galpo | Natun Bangla Galpo | Natun Bangla Galpo 2023 | Story Writing Competition | Online Bangla Novel Reading 2023 | Writing Competiton 2023 | Shabdodweep Story Writing Competition | Full Web Stories | Bangla Galper Series | Online Bangla Novel Reading in Netflix Bangla | Download Online Bangla Novel Reading | Bengali Story in USA | Online Bangla Novel Reading in Bangladesh | Indian Bengali Story | Google Online Bangla Novel Reading | Search Online Bangla Novel Reading | Sera Bangla Galpo | 18+ Online Bangla Novel Reading | Adult English Story | Adult Bengali Story | Adult Bangla Galpo | Bangla Upanyas 2023 | Natun Bangla Upanyas | Shabdodweep Upanyas | Shabdodweep New Novel | Attractive Bangla Galpo | Attractive Bengali Story | Bangla Galpo Samagra | Bengali Story Collection | Story in Bangla | Bangla Galper Episode | Online Bangla Novel Reading Episode | Shabdodweep Forum | Shabdodweep Story Collection | Online Bangla Novel Reading APK | Online Bangla Novel Reading Website | Bengali Literature