Best Online Bangla Galpo App | Story Archive

Sharing Is Caring:

স্মোকার – কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা

হাসি দিয়ে মুখের আশঙ্কার দাগ মুছতে চাইছিল সে। ভাবছিল জনজীবনকে বিকল না করে, কী ভাবে জন আন্দোলন করা যায়। এরপর মনে মনে খানিকটা হেসে নিয়ে মুখের সাদা মুখোশ খুলে একটু বুক ভরে দম নিল। ভাবলো তার ভাবনাগুলোর কী কোন অর্থ আছে! নিজে এক মুখচোরা মানুষ, কথা বলতে ভয় পায়, সে কী করে গণ আন্দোলনের কথা চিন্তা করে। সত্যি তো এত একটা ভীরু মানুষ আন্দোলন শব্দটাকে নিয়ে নাড়াচাড়া করার সাহস পায় কী করে! অপরপক্ষে সমাজের সর্বস্তরের অসঙ্গতি দিন দিন তার মাথায় ঘা মারছে। এক মন বলে, চিন্তা তার ঠিক। পরক্ষণে ভাবে বর্তমান মানুষের স্বভাবে আন্দোলন নেই হয়তো। আবার ভাবে, ভাবতে ভাবতে খেই হারিয়ে ফেলে। এখন তার খুব শ্বাস কষ্ট হচ্ছে এই ভিড়ে ভরা রেল স্টেশনে বসে। ট্রেনের টাইম হয়ে গেলেও এখনও কোন খবর নেই। বিনন্দ তার নিজের কথাটা কী বেশি করে ভাবছে! যে আত্মীয় পরিজন ঘিরে তার চলমানতা তাদের নিয়ে ভাবনার কী ছেদ পড়ল! নিজেই প্রশ্নকর্তা আবার নিজেই তার উত্তরদাতা। ওই যে ডাক্তার বাবু বলছিলেন, ধোঁয়া ধুলো থেকে সাবধান থাকবেন। ‘আপনি কি স্মোকে আসক্ত? হলে সেটা ছাড়তে হবে আগে।’ বিনন্দ বলেছিল, – ডাক্তার বাবু সেই হাই স্কুলে যখন পড়তাম, এক সহপাঠী খুব জোরাজুরি করেছিল। তার জোরাজুরিতে একবার মাত্র সিগারেট মুখে দিয়ে একবার টান দিয়েছি। সেই প্রথম, সেই শেষ।’ পরোক্ষ ধূমপান আপনার বেশি ক্ষতি করছে, সঙ্গে ধূলো আর ধোঁয়া। ডাক্তার বাবু বলেছিলেন।

রাতে কষ্ট হলে ইনহেলার নিয়ে ঘুমোবার চেষ্টা করে বিনন্দ। মাঝে মাঝে রাতে বসে থাকতে হয়, শুয়ে পড়লে বেশি কষ্ট অনুভব হয়। বাড়ির মানুষের যাতে ঘুমের ব্যাঘাত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়। যতক্ষণ না ভোরের আলো ফুটে ওঠে ততক্ষণ কষ্টটা যেন বেশি হয়। দিনের আলোতে মনের সাহস বেড়ে যায় বোধ হয়, তখন সেভাবে কষ্ট বোঝা যায় না। এখন সে ভাবে, পরোক্ষ ধূমপান কী করে এড়িয়ে চলা যায়। বাড়িতে ভক্তিমতী গৃহিণী।। সন্ধ্যা আরতিতে ধুনো না দিলে তার আত্মতুষ্টি হয় না। বাইরে বেরিয়ে সে সময় বুক ভরে শ্বাস নিয়ে বাঁচি। একটু ধোঁয়া নাকে এলেই শুরু হয় কাশি। কিন্তু ইন্ডিরেক্ট স্মোক কী করে এড়িয়ে যাবে সে। সকালে বাজার যেতে পথে কত মানুষ । তার সামনে যে হাঁটছে একেবারে নাবালক ছেলে । হাতের দিকে চেয়ে দেখে সে, হ্যাঁ তার হাতে জ্বলন্ত সিগারেট, ধোয়ার গন্ধ নাকে আসছে। বিনন্দ দ্রুত তার সামনে যেতে চাইছে, ধোঁয়া থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য। কিন্তু পারে না দ্রুত হাঁটতে। কী রাস্তার হাল! একে তো রাস্তার অবস্থা কহতব্য নয়, তার ওপর জল জীবন মিশনের পাইপ ঢুকিয়ে সব রাস্তা খুঁড়ে দিয়ে অবস্থা বেহাল। নাকে তবু মাস্ক আছে, তার ভিতর থেকে সিগারেটের ধোঁয়ার ক্ষীণ স্রোত নাসিকা গহ্বরে। মাঝে একটা মুদির দোকান। সেখানে কিছু কেনার জন্য দাঁড়ালো । পাশে এক তাগড়া জোয়ান সিগারেট মুখে ধোঁয়া ছাড়ছে। কোন বিকার নেই। এখন যন্ত্রণাটা তার নিজস্ব। সেই ধোঁয়া থেকে মুক্তি পেতে যত দূর সম্ভব নাকটা চেপে ধরে থাকে, আর ডাক্তার বাবুর কথা ভাবে। ইনডিরেক্ট স্মোকিং করছেন।

সবজি বাজার রাস্তার দু ধার ঘেঁষে। পেঁপে কিনতে গিয়ে দর করছে বিনন্দ, কিন্তু ব্যাপারী মুচকি হাসছে তার মুখের মাস্ক দেখে। বলে কী না, – ‘এতো বোকা লোক থাকে, করোনা কবে চলে গেছে মুকে মাস।’ মাস্কের ভিতরে ক্রেতার মুখের হাসি পেঁপে ব্যাপারী দেখতে পেল কী! পথে বেরোলে, কোথাও যেতে হলে বিনন্দ এখনও মুখোশ ব্যবহার করে। মুখে ওটি না থাকলে কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। মানুষজন চেয়ে চেয়ে থাকে, তাতে কিছু যায় আসে না তার। অন্তত মুখের ওপর হ্যাঁচ করে কেউ হেঁচে দিলে কিছুটা বাঁচোয়া তো। নিজেই যুক্তি খাড়া করে। পাবলিক প্লেসে এখন আর সহজে জায়গা পাওয়া যায় না। যদি বা পেয়ে যায়, আগে দেখে নেয় পাশের জনের হাতে ধূম উদগীরণকারী বস্তুটি আছে কী না। থাকলে তো বসার কোন গল্প নেই। তবে মুশকিল হয়, কিছুক্ষণ পরে ওই ভদ্রলোকটি হয় সিগারেট ধরাচ্ছে নয়তো বা খইনি ডল দিয়ে কায়দা করে চাপড়াচ্ছে । সেই সময় আবার ডাক্তার বাবুর মুখ ভেসে ওঠে। কোমরে যন্ত্রণা হলেও বিনন্দ মহার্ঘ্য আসন ছেড়ে যায়।

এখন যেখানে সে যায় যে কোন ধোঁয়া যেন তাকে তাড়া করে। এ যুগের সব চেয়ে জঘন্যতম ‘আবিষ্কার’ বর্তমানের ‘ম্যাশিন ভ্যান’। বিনন্দর চোখে এই যানটি পৃথিবীর সব চেয়ে বেশি ভার বাহি যানের একটি। যেমন এর শব্দের আধিক্য তেমন ইট ভাটার চিমনির মত ধূম নির্গমন। একেবারে টন টন কালো ধোঁয়া নাকের মধ্যে চালান দিচ্ছে। কোথায় দাঁড়াবে মানুষ এক দণ্ড ! সেদিন আবার ডাক্তার বাবুর চেম্বার থেকে বেরিয়ে একটা নিরিবিলি জায়গা খুঁজছে, ব্যাগে করে নিয়ে আসা দু-মুঠো মুড়ি খাওয়ার জন্য। সকালে তাড়াহুড়োতে খাওয়া হয়নি। থানা থেকে ধরা নানান গাড়ির ‘ গ্যারেজ ‘ হয়ে গেছে জায়গাটা। মাঝখানে একটা নবীন বট বৃক্ষ, ছায়া মেলেছে শীতল। বিনন্দ দুটো প্রায় বাতিল গাড়ির মাঝে দাঁড়িয়ে মুড়ির কৌটোটা খুলে, চারিধারটা দেখে নিচ্ছে। অল্প কিছু মুখে দিয়ে দেখে তৃতীয় গাড়ির পাশ দিয়ে কী ‘সুন্দর’ সরু ধোঁয়ার কুণ্ডলী। দেখা গেল এক বিড়ি খোর বসে আছে লুঙ্গি পরে। অতএব সেখানে আর দাঁড়ানো হল না। রেল গাড়িতে বিড়ি – সিগারেট খাওয়া একটু কমেছে। তবে গাড়িতে ভিড় একটু কমলে মাঝে মাঝে নেশাখোরদের নেশা চাগে। তারা তখন মৌজ করে ধোঁয়া দেয় মগজের গোড়ায়। ভিড় হলে সেভাবে ধূম উদগীরণ করার সুযোগ মেলে না যে। যদিও নেশার সরঞ্জাম সব সময় পকেটে বিদ্যমান।

দেখতে দেখতে দুর্গা পূজা, লক্ষ্মী পূজা পার করে মা কালীর পূজা এসে গেল। জনমনে বিপুল সাড়া পড়ে গেল, মা কালী কে আবাহন করার জন্য। এখন আমাদের যে কোন পূজা, এক বা দুই দিনে সীমাবদ্ধ রাখা হয় না। বিনন্দ এখন থেকে ভাবতে বসেছে, কী করে মা কালীর ভক্তদের উৎপাত থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করা যায়। কম করে পাঁচ – ছয় দিন আগে থেকে উৎসবের মহড়া শুরু হয়ে যায়। কিশোর থেকে প্রবীণ আলো আর বাজি নিয়ে এক বিশাল অনুষ্ঠানের অপেক্ষায়। তা বাপু সাত দিন আগে থেকেই আর ‘পরিবেশ বান্ধব’ বাজি নিয়ে এতো ছেলেখেলা কেন! বাজি তো বাজি, সে কী করে পরিবেশ বান্ধব হয়, বিনন্দর মাথায় ঢোকে না।

সন্ধ্যা থেকেই আলোর নাচন আর নানান বাজি থেকে যে ধূম প্রকাশিত হচ্ছে স্ব স্ব ছাদ থেকে, তার বর্ণনা দিয়ে ব্যথা বাড়ানো যায় কিন্তু নিরাময় হয় না কোনোদিন। তবে মানুষের নাসিকা গহ্বরে যে বিষাক্ত ধোঁয়া অনর্গল প্রবেশ করে ওইসময়, কেউ কি অস্বীকার করতে পারে। এবং বিনন্দ যে পারেনা তার প্রমাণ সে ওই ‘মানুষের বিনোদনি সময়ে’ ঘরের মধ্যে থাকে নাকে মাস্ক পরে। তবুও কী নিষ্কৃতি আছে! ধোঁয়ার এমনই মাহাত্ম্য, সে সামান্য ছিদ্র পেলে ঢোকার ক্ষমতা রাখে। আর শুধু ঘরে ঢুকেই শেষ হয় না, চলে যায় মানুষের ফুসফুসের মধ্যে নাসিকা বাহিত পথ দিয়ে। বিনন্দ বাবু খুব চিন্তার মধ্যে আছে। সারাক্ষণ সেই একটাই চিন্তা, – ধোঁয়া থেকে বাঁচার উপায় কী! বায়ুমণ্ডলের বুকে বহমান বাতাস আমাদের জীবনকে রেখেছে সচল। সেই বায়ু স্তরে ধোঁয়ার উপস্থিতি, কোনোভাবে তাকে এড়ানো যায়না, যাবে না। ভাবনার বিরাম নেই, দূষিত বাতাসের দিকভ্রান্ত গতিরও বিশ্রাম নেওয়ার উপায় নেই।

আজ অফিস থেকে ফিরে অন্য দিনের মত সব কিছুই স্বাভাবিক মনে হোল, সংসারের এবং মনের। ঘুমুতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত সব ঠিক ঠিক ছিল। বিছানায় শুতে গিয়ে বিপত্তি, দম নিলেই বুকের মধ্যে বিচিত্র এক শব্দ। এই সময় ইনহেলার শেষ হয়ে গেছে, কিনতে মনে নেই ।টিউব লাইট বন্ধ করে দিলে সমস্ত আঁধার যেন হুড়মুড়িয়ে এসে বুকে চাপ দিচ্ছে। সুইচ অন করে আলোকে সঙ্গী করে স্বাভাবিক হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে বিনন্দ। ধীরে ধীরে শ্বাস প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখলে কী কিছুটা স্বস্তি মেলে! সে চেষ্টা করে দেখেও কোন সুরাহা মেলে না। একলা এই আলোকিত ঘরে কত মুখ তার মনে পড়ছে, তবে কী মৃত্যু …….!

বিনিদ্র রাত শেষ হয়ে আসে, বাইরে ভোরের পদধ্বনি। আলোকিত সূর্যের উপস্থিতি তাকে বাঁচার আশ্বাস যোগাবে! ইতিমধ্যে বুকের ভিতরের কোরাস বাঁশির শব্দ অনেকটা স্তিমিত। শ্বাস নিতে পারছে অনেকটা সহজ ভাবে। রাতে বাড়ির কাউকে ঘুম ভাঙিয়ে বিরক্ত করতে চায়নি সে, নিজের যন্ত্রণা অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার পক্ষপাতী নয়। দিন শুরু হোল আবার । সবাই প্রাত্যহিক জীবনের চেনা বৃত্তের মধ্যে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বিনন্দ আজ মনে এবং শরীরে অনেকটা শ্লথ। তবে ধীরে ধীরে নিত্যকার কর্মসূচিতে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করলেও, মনের মধ্যে ডাক্তার বাবুর প্রশ্নটা খচ খচ করে। ‘আপনি কি স্মোকার ?’ – মনে মনে হাসি পায় বিনন্দ হালদারের, – তাহলে তো মানুষ মাত্রেই স্মোকার!

নতুন মাস্টার – কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা

অনেক কাঠ খড় পুড়েছে। জীবন থেকে ভেসে গেছে চোদ্দটি বসন্ত। হতাশার ধারালো কিনারায় এসে একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার, দীর্ঘকালীন নিষ্প্রদীপ এর মধ্যে আলোর ঝিলিক। বাবার উৎকণ্ঠা, মায়ের মানসিক যন্ত্রণা লাঘব করে পোস্ট অফিসের পিয়ন ব্রাউন কালারের খামটি ধরালেন সেই বাবার হাতে। ভিতরের যন্ত্রণাটা রক্তপাত ঘটাচ্ছে অনেকদিন। ছেলেটার মুখের দিকে চেয়ে দেখতে পারছিল না বাবা। এক যান্ত্রিক জীবন নিয়ে হাঁটা বসা বলে মনে হত। আজ অনেকটা হালকা হল সুরঞ্জন।

বাড়ি থেকে তুলনামূলক কম দূরত্বে ছেলের প্রাইমারি স্কুল। মাসখানেক হল সে যোগ দিয়েছে ওই স্কুলে। বঙ্গীয় শিক্ষা অঙ্গনের এক করুণ ও হতাশাব্যঞ্জক সময়ে তার এই যোগ দেওয়া, কতটা কঠিন সে কথা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ বুঝবে না। আজকের সময়ে এই না বোঝার অভ্যেসটা মানুষের সহজাত হয়ে গেছে। আপনার বিপদ আপনার, আপনার যন্ত্রণা সেও নিজের, ভাগীদার তো কেউ নয়। বাবা ছেলের গল্প হয়, তার স্কুল, পড়ানো, সহশিক্ষক, প্রধানশিক্ষক ইত্যাদি বিষয়ে । অনেক কথা বলে আবার অনেক ঢেকে রাখে, বাবার টেনশনের কথা মাথায় রেখে। সেদিন দ্বিতীয় শ্রেণির একটা ক্লাস নিতে গেছে নতুন মাস্টার। সবাই এখন এই মাস্টারের সঙ্গে পরিচিত হয়নি। মাষ্টারমশাই জড়তা কাটানোর জন্য সকলের নাম, ধাম, জানতে চায়, জানতে চায় এখন কোন পর্যন্ত তাদের পড়া এগিয়েছে ইত্যাদি। ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে এক বালিকার দিকে মাস্টারের দৃষ্টি যায়। সবাই কথা বললেও সে কিন্তু চুপ চাপ। পাশের মেয়েটির সঙ্গেও প্রায় কথা নেই। চোখে মুখে এক অস্বাভাবিক চিহ্ন। ব্যাপারটা কী প্রথম দিন মাস্টার বুঝতেই পারলো না। মনে মনে ভাবে, শিক্ষক হয়ে ছাত্রকে না বুঝতে পারলে সে তো মাস্টারের দিক থেকে ঘাটতি।

রোজ কিন্তু ওই বালিকাটি স্কুলে আসে, সারাক্ষণ বেঞ্চিতে বসে থাকে, মিড ডে মিলের ভাত খায় অন্যদের সঙ্গে। তবে পড়াশুনোতে এক বিন্দু মন নেই যে। মন যেন তার উড়ু উড়ু। বুঝতে পারে মাস্টার মশাই। সেদিন ছুটি হওয়ার আগে ওই মনমরা ছাত্রীর পিছনের বেঞ্চের বেনী বাঁধা ছোট্ট ছাত্রীকে মাস্টার কাছে ডাকে। তার কাছে জানতে চায় তার বন্ধু ওই বালিকার কথা। মাস্টার তার কথা শুনে অবাক! কী সুন্দর মিষ্টি গলায় এবং বালিকা সুলভ অভিব্যক্তি মিশিয়ে সে শোনাল। – ‘ও খুব কষ্টে আছে ছার ! ওর বাবা নেই মা নেই, ভাই নেই।’ – ‘তারা কি মরে গেছে!’ মাস্টার জিজ্ঞেস করে। ‘ – বেণী দুলিয়ে সে বলে – ‘না না ছার, তারা কোথায় নাকি চলে গেছে, ওকে মামার ঘরে রেখে। ওর মামী নাকি খুব বকে, কাজ করায়।’

স্কুল ছুটির পর মাস্টার একা হয়ে যায়। ভাবে, বেণী দোলানো মেয়েটা কী সত্যি জানে ! ওর মা বাবা চলে গেছে! ওইটুকু মেয়েকে না নিয়ে কোথায় গেল ! গাড়ি ধরার জন্য মূল রাস্তায় যাওয়ার সময় মাস্টার দেখে, ক্লাস ফোরের এক ছাত্রীর সঙ্গে সেই বালিকা হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে। তাহলে কী , ওদের বাড়ির কাছে থাকে সে ! পরের দিন স্কুলে ক্লাস ফোরের ক্লাস ছিল । সেই ক্লাসে গিয়ে জিজ্ঞেস করে দেখলে হয় একবার। ক্লাস নেওয়া শেষ হলে, মাস্টার গতকালের দেখা ছাত্রীটিকে ডেকে নেয় তার টেবিলের কাছে। ঠিকই আন্দাজ করেছে নতুন মাস্টার। তোমাদের বাড়ির কাছে কী ওই রেখার বাড়ি ? – না না , ওর মামার বাড়ি আমাদের পাড়ায়। রেখার মামা আমার সঙ্গে স্কুলে পাঠিয়ে দেয়। আমি নিয়ে আসি আর নিয়ে যাই রোজ। ও খুব কম কথা বলে স্যার। সব সময় কী যেন ভাবে। আমাদের গ্রামের সব লোক জানে, ওর বাবা নাকি নতুন বিয়ে করে চলে গেছে কোথায়। তার কিছুদিন পরে ওর মা নাকি আবার বিয়ে করে চলে গেছে। যাবার সময় ওকে নাকি বলে গেছে, – তুই জামা প্যান্ট গুছিয়ে রাখিস , যে কোন দিন তোকে নিয়ে যাবো একটা ভালো বাড়িতে। সেই জন্য ও সব সময় ভাবে ওর মা আসবে যে কোন দিন। ওর ব্যাগে দেখবেন বই খাতা কিছুই নেই। আছে কয়েকটা জামা , প্যান্ট, লিপস্টিক, ইত্যাদি। দুপুরে ওর মামা মামী কাজে যায়, তাই স্কুলে রোজ আসে ভাত খাওয়ার জন্য।’ – ‘ছুটির দিনে কী করে, কোথায় খায়!’ – মাস্টার বলে। সে কথার উত্তর ছাত্রীটি জানে না।

আনমনা হয়ে যায় নতুন মাষ্টারমশাই। হয়তো খেতে পায়, নয়তো পায়না। পরের সপ্তাহে দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাস নিতে গিয়ে আবার সেই ছাত্রীটিকে নিবিড়ভাবে দেখে, আহা রে অভাগী বালিকা! মা বাবার সান্নিধ্যহীন জীবন, কত কষ্টের! এই রেখা, তুমি বই পড়ছো না , লিখছো না কেন , সবাই তো দেখ পড়ে লেখে। বলতে বলতে মাস্টার তার বেঞ্চের কাছে গিয়ে ব্যাগ খোলে। অন্যরা সবাই দেখে মাস্টারের কাণ্ড। তারা তো সবাই জানে, ওর ব্যাগে বই খাতা কিছুই নেই। নতুন মাস্টারও তাই দেখলো। যা আগের দিন শুনেছে। ক্লাস ফোরের ছাত্রীটি তো ঠিকই বলেছে। মাস্টার বলে, – কী তোমার বই খাতা নেই, স্কুল থেকে দিয়ে দেব । কাল থেকে লিখতে পড়তে হবে। সবাই চেঁচিয়ে বলে, – ও লেখে না পড়ে না ছার। শুধু দুপুরে খেতে আসে।

ক্লাস শেষ করে প্রধান শিক্ষকের ঘরে গিয়ে ঘটনাটা বললে, তিনি মাথা দুলিয়ে বলে, – ‘জানি জানি সবটাই জানি। শুধু আমি কেন সব মাস্টার মশাই জানে ওই মনমরা ছাত্রীটির কথা। কিন্তু কী করি বলুনতো! পড়তে বললে পড়ে না, লিখতে বললেও না। সবাই চেষ্টা করেছে, পারেনি।’ সরকারি Child line এ খবর দিয়ে ওকে একটা অনাথ আশ্রমে ভর্তি করানো যেতে পারে। নতুন মাস্টার প্রস্তাব দেয়। ‘আপনি ভাবছেন, আমি চেষ্টা করিনি। পাড়ার নেতারা তা করতে দিল কোথায়!’ নতুন মাস্টার কিছুই বুঝতে পারে না। আসলে ওই নেতার ছেলের সঙ্গে রেখার মা পালিয়ে গিয়ে অন্য সংসার পেতেছে, সেই ঘটনার প্রতিক্রিয়া জাত ক্ষোভ। প্রধান শিক্ষক খোলসা করে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ শোনালেন। ‘কিন্তু ওই বালিকার দোষ কোথায়!’ – নতুন মাস্টারের কথার জবাব না দিয়ে তিনি বললেন।’ আপনাকে এই বিষয় নিয়ে বেশি ভাবতে বারণ করছি, অনেক বিষয় এর সঙ্গে জড়িত, আপনি বুঝবেন না।’

নতুন মাস্টার শুনলেন, অন্য সব শিক্ষক এই সব ঘটনা জানেন আর ছাত্রছাত্রীরাও। অবাক হয়ে যায় সে। মায়ের স্নেহ, বাপের আদর বলে কী কিছুই রইলো না এই পরিবর্তিত আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর সমাজে। প্রবৃত্তির কাছে এ কী ধরণের আত্ম সমর্পণ! আর একটা ফুলের মত নিষ্পাপ শিশু বসে আছে প্রবৃত্তি তাড়িত মা অথবা বাবার জন্য ! আবার মা বাবার স্নেহ ছায়া বঞ্চিত শিশু একটা আশ্রয় পাবে, সে ব্যবস্থার প্রতি প্রতিহিংসা! নতুন মাস্টারের মাথা ঝিম ঝিম করে। তার সহ শিক্ষকের দল প্রধান শিক্ষকের মত ভঙ্গিতে পরামর্শ দেয়, এই ব্যাপারে না ভাবতে। নতুন মাস্টার আসে যায়, ক্লাস নেয়, কিন্তু ওই বালিকার দিকে মন অথবা চোখ গেলে অস্থির হয়ে যায়। অবোধ এক বালিকা এই বয়সে মানসিক রোগী হয়ে গেল! সমাজের কেউ কিছু ভাববে না ! একটা শিশু মন সর্বদা ভাবছে, আসবে, ফিরে আসবে তার মা, নয়তো তার বাবা। আবার সে ফিরে পাবে মায়ের কোল, বাপের নিশ্চিত আশ্রয়। এভাবেই হয়তো একদিন সে হারিয়ে যাবে এই সমাজের অন্ধকার গলিতে। কেউ তার খুঁজে পাবে না আর।

ছুটির পর নতুন মাস্টার আর দেরি করে না, বেরিয়ে যায় একলাটি । বুঝতে দেয় না যে সে মাঝে মাঝে বি ডি ও অফিসে যায়। বিডিও সাহেব তো সন্ধ্যে উজিয়ে অফিস করেন। একদিন সাহস করে তাঁর চেম্বারে ঢুকে নিজের পরিচয় দিল , সেখানে তখন কেউ নেই। ….. মন দিয়ে তিনি সব শুনলেন। এবং ঘটনাটা যে অল্প একটু জানেন, সে কথা স্বীকার করলেন। তবে নতুন মাস্টারের যুক্তি তিনি ফেলতে পারলেন না। তিন মাস পর হঠাৎ নতুন মাস্টারের ট্রান্সফার অর্ডার হয়ে গেল। সবাই তো অবাক । তবে বদলি হল অন্য জেলায়। কেউ কিন্তু কোন কারণ জানতে পারলো না এই বদলির। তবে নতুন মাস্টার জানতো।

তার ঠিক একমাস পরে নতুন মাস্টারের আগের স্কুলে একটা গাড়ি ঢুকলো। দুজন অফিসার ও দুজন পুলিশ কনস্টেবল হেড মাষ্টারের ঘরে গিয়ে সেই ছাত্রী রেখার খবর নিল, সে স্কুলে এসেছে কী না। তারপর রেখাকে নতুন জামা প্যান্ট পরিয়ে সব কাগজ পত্র হেডমাস্টারকে দেখিয়ে ও কপি দিয়ে রেখাকে নিয়ে তারা এক হোমে নিয়ে চলে গেল। সবাই অবাক হয়ে শুধু চেয়ে রইলো অনেকক্ষণ। কিছুক্ষণের মধ্যে রেখার মামার বাড়ির গ্রামে খবর চলে গেলে মামা মামী হাঁপ ছেড়ে যেন বাঁচলো। টেলিফোন সংযোগে নতুন মাস্টার বিডিও সাহেবকে ধন্যবাদ জানাল, কারণ তিনিই এই কর্মকাণ্ডের নীরব কারিগর। ঘটনাক্রমে রেখার হোমটি ছিল নতুন মাস্টারের স্কুলের থেকে মাইল দশেক দূরে। একদিন স্কুলে ছুটি নিয়ে নতুন মাস্টার ওই হোমে গেল। খোঁজ নিয়ে ও নিয়ম মেনে রেখার সঙ্গে সাক্ষাৎ হল তার। মন মরা মেয়েটার এ কী পরিবর্তন ! ওকে দেখে মাস্টার হতবাক। সে ছুটে এসে মাস্টারের পায়ে প্রণাম করতেই তাকে কোলে টেনে নিলেন সুপ্রতিম মাস্টার। …. ঘন্টাখানেক সময় কাটিয়ে ফেরার সময় মাস্টার দেখলেন রেখার চোখ দুটো ছল ছল।

কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা | Krishna Kishore Middya

Sunglass and our friendship | সানগ্লাসেই সৃষ্টি আমাদের বন্ধুত্ব | Bangla Galpo 2023

Bibarna 2023 | New Bengali Story | বিবর্ণ | শওকত নূর

Appearance of Jagannath and Patitapawan Srivigraha | 2023

Sir Isaac Newton Article 2023 | স্যার আইজ‍্যাক নিউটন

Anandabazar Bengali Short Story | Bengali Short Story | Pratilipi Horror Stories in Bengali | Lifestyle Web Stories in Bangla | Trending online bangla golpo pdf free download | Short bengali story | Bengali story pdf | pratilipi bengali story | Short Stories for Children | English Stories for Kids | Moral Stories for Kids | story in english | story hindi | story book | story for kids | short story | story for girls | short story in english | short story for kids | Online Bangla Galpo App pdf | Bangla golpo pdf | Bangla golpo story | bangla romantic golpo | choto golpo bangla | bengali story | Sunday suspense golpo | sunday suspense mp3 download | suspense story in hindi | suspense story in english 200 words | Online Bangla Galpo App in english | Trending online bangla golpo pdf download

suspense story in english 300 words | Suspense story examples | suspense story in english 100 words | suspense story writing | very short suspense stories for students | Online Bangla Galpo App | Top Bangla Golpo Online Reading | New Read Online Bengali Story | Top Best Story Blogs | Best Story Blogs in pdf | Sabuj Basinda | High Challenger | Famous Bangla Golpo Online Reading | Shabdodweep Read Online Bengali Story | Shabdodweep Writer | Bangla Golpo Online Reading pdf | Famous Story – Trending Online Bangla Galpo App | PdfOnline Bangla Galpo App | Online Bangla Galpo App App | Full Online Bangla Galpo App Reading | Bangla Golpo Online Reading Blogs | Trending online bangla golpo pdf

Best Story Blogs in Bengali | Live Bengali Story in English | Bangla Golpo Online Reading Ebook | Full Bangla Galpo online | Online Bangla Galpo App 2024 | New Online Bangla Galpo App – Episode | Golpo Dot Com Series | Online Bangla Galpo App Video | Story – Online Bangla Galpo App | New Bengali Web Story Audio | New Bengali Web Story Video | Online Bangla Galpo App Netflix | Audio Story – Online Bangla Galpo App | Video Story – Online Bangla Galpo App | Shabdodweep Competition | Story Writing Competition | Bengali Writer | Bengali Writer 2024 | Trending Bangla Golpo Online Reading | Top Online Bangla Galpo App | Online Bangla Galpo App Web Story | Best Read Online Bengali Story | Read Online Bengali Story 2024 | Trending online bangla golpo book pdf

Shabdodweep Bangla Golpo Online Reading | New Online Bangla Galpo App | Bengali Famous Story in pdf | Modern Online Bangla Galpo Download | Bangla Golpo Online Reading mp3 | Horror Adult Story | Read Online Bengali Story Collection | Modern Online Bangla Galpo mp4 | Modern Online Bangla Galpo Library | New Bengali Web Story Download | Full Live Bengali Story | Bengali Famous Story 2023 | Shabdodweep Bengali Famous Story | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Bengali Famous Story – video | Bengali Famous Story mp3 | Full Bengali Famous Story | Bengali Literature | Shabdodweep Magazine | Shabdodweep Web Magazine | Live Bengali Story Writer | Shabdodweep Writer | Trending online bangla golpo free download

Leave a Comment