সঞ্জিত মণ্ডল – সূচিপত্র [Bengali Story]
বিশু – সঞ্জিত মণ্ডল [New Bengali Web Story]
আমার নাম বিশু, এটা ডাকনাম, ভালো নাম বিশ্বনাথ, আমার পদবী দাস, মানে আমি জন্ম থেকেই দাসানুদাস। বেলেঘাটা খাল পাড়ে কবে ঠাঁই পেয়েছিলাম সে কথা আজ আর মনে নেই, মনে নেই তার কারণ শৈশব বলে আমার কিছু নেই। যে বয়সে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা বাবা মায়ের হাত ধরে পার্কে বেড়াতে এসে ছুটোছুটি করে, যে বয়সে কচিকাঁচারা সুভাষ সরোবরে সাঁতার শিখতে আসে সে বয়স টা আমার কোনো কালেই ছিলো না। ছিলো না তার কারণ আমি শৈশব থেকে একলাফে চোদ্দ বছরের কৈশোরে পৌঁছিয়েছিলাম। সত্যি বলতে কি আমার বয়স যে চোদ্দ বছর সেটা আমি থানায় গিয়ে জানতে পারি, পুলিশের কাছে।
তা চোদ্দ বছর বয়সে থানায় কেন? কেননা আমি খিদের জ্বালায় বেকারির ভ্যান থেকে একটা পাউরুটি তুলে নিয়ে বেবাক দৌড় লাগিয়েছিলাম, আর ক্ষুধার্ত শরীরে অতিরিক্ত জোরে ছুটে পালাতে গিয়ে ছিটকে পড়েছিলাম রাস্তায় দাঁড়ানো একটা পুলিশের গায়ে। আমাকে ধরে ফেলতে ওকে বিশেষ বেগ পেতে হয়নি, কারণ পড়ে গিয়ে পাউরুটি সামলে নিয়ে উঠে ফের দৌড় লাগাতে দেরি করেছিলাম। আমার হাতটা পেঁচিয়ে ধরে ওই পুলিশই আমাকে থানায় ঢুকিয়ে দিয়েছিলো। ডিউটি অফিসার জিজ্ঞেস করেছিলো, কি রে, কি করেছিস তুই? বলেছিলাম রুটি নিয়ে পালাতে গিয়ে পড়ে গেছিলাম, পুলিশটা এখানে ধরে আনলো। আমার অকপট স্বীকারোক্তি তে অফিসারের দয়া হলো, পুলিশটাকে ডেকে বললো, কি রে, যা বলছে সব সত্যি?
পুলিশটা বললো, সত্যি মিথ্যে জানি না, তবে ওর হাতের রুটিটা ছিটকে পড়েছিল দেখেছি।
অফিসার পুলিশকে আবার জিজ্ঞেস করলো, ওকে এখানে আনলি কেন? পুলিশ টা বললো, না আনলে এতক্ষণে ওর হাড়গোড় গুঁড়ো হয়ে যেত, মারমুখী রুটি ওয়ালা আরও পাঁচ ছয় জন ধর ধর করে ছুটে আসছিলো, মেরেই ফেলতে পারতো, বড়ো বড়ো কাপ্তানরা চার পাঁচ হাজার কোটি বেমালুম গায়েব করে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াবে আর এ বেচারা খিদের জ্বালায় একটা রুটি নিয়েছে বলে ওকে মেরে মেরে ফেলবে, সেটা সইতে পারলাম না স্যার, তাই ওকে থানার নিরাপদ আশ্রয়ে এনেছি।
অফিসার আমাকে বললো, কি রে, তোর বয়েস কতো? বললাম, জানি না। শুনে অফিসার হাসতে লাগলো। হাসি থামলে বললো, গোঁপের রেখা তো দেখা দিয়েছে, নিশ্চয়ই ইয়েটা পাকেনি এখনো। তো তোর বয়েস চোদ্দ পনের হবে হয়তো। যা পালা, আর কোনো দিন যদি দেখি সেদিন আস্ত রাখবো না কিন্তু।
পরেরবার সত্যিই আস্ত রাখেনি, অসম্ভব মার মেরেছিল। একটু বেশী ই হাত পাকিয়ে ছিলাম ছিনতাই করতে গিয়ে ধরা পড়ে গেলাম, বেধড়ক পিটানি খেলাম, কিন্তু একটা জেদ চেপে গেলো। প্রতিজ্ঞা করলাম, এবার থেকে এমন সূক্ষ্ম কাজ করবো যে পুলিশের বাপের সাধ্য নেই আমাকে ধরে। ইতিমধ্যে দু একটা মেশিন জোগাড় করেছি, মেশিনের দৌলতে কাজ সহজে আর তাড়াতাড়ি হয়ে যাচ্ছে দেখে দু-চারজন সাগরেদও জুটে গেছে। একটু আধটু নামডাক হচ্ছে। পার্টির দাদারা মাঝে মাঝেই একশান করতে ডাকছে। খেতে না পাওয়া হাড়গিলে বিশুর এখন রুটি চুরি করার দরকারই নেই। চাই কি মাঝে মাঝেই দু-এক পাত্তর ঢুকু ঢুকুর ব্যবস্থাও হয়ে যাচ্ছে। না খেতে পাওয়া রুটি চোর বিশুর দিন এখন দিব্যি কেটে যাচ্ছে।
এমনি একদিন এক অভাবনীয় কাণ্ড, সেদিন কলকাতার বাইরে একটা বড়ো কেস করে সবে আমার দোমড়ানো চালা ঘরে ঢুকেছি, কে যেন আমার নাম ধরে ডাকলো। ভাবলাম ধরা পড়ে গেছি, নিশ্চয়ই পুলিশ এসে গেছে, কি ভাবে পালাবো মতলব ভাঁজছি, আবার ডাক, ভালো করে শুনলাম, পুলিশ তো এমন মোলায়েম করে ভালো নাম ধরে ডাকবে না! পুলিশ হলে নামের আগে ইচ্ছেমতো কুকুর ছাগলের বাচ্চা ইত্যাদি জুড়ে দিয়ে ডাকে। এ ডাক তো সে রকম নয়, চালা ঘরের ফুটো দিয়ে দেখি, ও হরি, এ তো পিয়নবাবু! দরজা খুলতেই নাম জিজ্ঞেস করে সই করালো, তারপর হাতে একটা খাম গুঁজে দিয়ে চলে গেলো। ভয় ভয় করছে, এ কি গেরো রে বাবা, এসব কি উটকো ঝামেলা ঘাড়ে এসে চাপলো!
মুখে লজ্জা লজ্জা ভাব করে পাড়ার এক মাস্টার কে খামটা দেখালাম, মাস্টার খাম খুলে দু তিন বার চিঠি টা পড়ে বলল, কি ব্যাপার বল তো? তুই কি চাকরির দরখাস্ত করেছিলি? বললাম কই না তো, নিজের নাম টা-ই ভালো করে লিখতে পারি না তার আবার দরখাস্ত। তবে পাড়ার এক দাদুর সাথে কি একটা অফিসে গেছিলাম, তারা আমার নাম ধাম লিখে নিয়ে হাতে একটা কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বলেছিল, সময় হলে কল পাবে।
মাস্টার সব শুনে বললো, যা, জীবনটা তোর তৈরী হয়ে যাবে, সরকারি ব্যাংকে সুইপারের চাকরির জন্য তোর কল এসেছে, সামনের রোববার তোর ইন্টার্ভিউ আছে, সভ্যভব্য হয়ে যাবি, দেখিস, আবার বেশী ফিটফাট হয়ে যাস না, তাহলে সুইপারের চাকরি মিলবে না। পেয়ে গেলাম শালা চাকরি টা। হরিশ মুখার্জি রোডের উপর তিনতলা বাড়ির নীচের তলাটা ভাড়া দিয়েছে, সরকারি ব্যাংকের চাকরি টা আমার ওখানেই। আমার ডিউটি ৭টা থেকে, সাড়ে ৯টার মধ্যে আমাকে ঝাড়পোঁছ করে সবকিছু ফিটফাট করে রাখতে হবে, তারপরে বাবুরা সব আসতে শুরু করবে। খুব পিটপিটে বাবু সব, একটু এদিক ওদিক হলেই বিশু এদিকে আয়, বিশু আমার চেয়ারটা ওদিকে কেন? চেয়ারটা কি করে মুছেছিস, ওখানে কাগজ পড়ে আছে কেন? ভয়ে ভয়ে থাকি, নতুন সরকারি চাকরি, তাই তাড়াতাড়ি এসে পিছনের দরজা খুলে সব সাফসুতরা করে রাখি।
পিছনে আবার বাড়িওয়ালার উপর থেকে নীচে নামার সিঁড়ি। বাড়িওয়ালা এখানে ঘর জামাই, এই বাড়ি টা নাকি ওনার শ্বশুর মশাইয়ের, তার বিশাল সম্পত্তি, অপুত্রক, একমাত্র মেয়েকে নিজের কর্মচারীর সাথে বিয়ে দিয়ে এই বাড়ি টা তাকে উপহার দিয়েছে, তাই জামাই এখন বাড়ি ওয়ালা। এই জামাইয়েরও একটি মাত্র মেয়ে, তিনিও একমাত্র মেয়ের বিয়ে দিয়ে জামাইকে ঘর জামাই করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু জামাই উচ্চশিক্ষার জন্য শ্বশুরের টাকায় বিদেশে গেছে আজ প্রায় দশ বছর হলো। প্রথম প্রথম চিঠি পত্তর লিখতো তারপর চিঠিও বন্ধ হয়েছে সাত আট বছর হলো। কানাঘুষোয় শোনা যায় সে নাকি মেম সঙ্গিনী জুটিয়ে নিয়ে দিব্যি আছে।
মনে মনে এই সব ভাবছি আর ঝাড়পোঁছ করছি, পিছনের দরজাটা খোলা। হঠাৎ খসখস আওয়াজে চমকে পিছনে তাকিয়ে আমার হাড় হিম হয়ে গেলো, বাড়িওয়ালার সেই বিবাহিত মেয়ে আমার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। ধারে কাছে কেউ কোথাও নেই, থতমত খেয়ে সরে দাঁড়াতে গেলাম, মেয়েটি খপ করে আমার হাতটা ধরে নিজের শরীরের উপরে আমার হাতটা রাখলো। এই অভাবনীয় কাণ্ডে আমি বিস্ময়ে হতবাক, পা দুটো থরথর করে কাঁপছে। আমার বিস্মিত হবার আর একটু বাকী ছিলো, আমি হাত ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করতেই মেয়েটি পরিত্রাহি চীৎকার করতে শুরু করলো, কে কোথায় আছো বাঁচাও, —।
আমি বিশু, এক ঝটকায় নিজেকে মুক্ত করলাম, মেয়েটি ছিটকে গেলো, মেয়ের চীৎকারে বাড়িওয়ালা দুদ্দাড় করে নেমে এলো, আমাকে বললো, রাস্কেল, জুতিয়ে তোমাকে সিধে করে দেবো, তোমাকে পুলিশে দেবো, তোমার এতো দূর স্পর্ধা, তুমি আমার মেয়ের গায়ে হাত দিয়েছ? এখান থেকে ব্যাংক আমি তুলে ছাড়বো, এই কে আছো রাস্কেলটা কে বাঁধো।
ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হলেও আমি বিশু, শরীরে বদ রক্তই বেশী, বদ রক্তটা ঝড়াক করে মাথায় চড়ে গেলো, ব্যাংকের বন্দুক টা ভল্টে থাকে, কিন্তু লাঠি গার্ডের লাঠি আর বল্লম টা বাইরের ঘরে এক কোণে রাখা আছে, দৌড়ে গিয়ে বল্লমটা তুলে বাড়িওয়ালার বুকে ঠেকালাম। আমার ভয়ংকর রুদ্রমূর্তি দেখে বাড়িওয়ালা ভয়ে ভয়ে পিছু হটতে হটতে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলে মেয়েটি ভয়ে ভয়ে বললো, বিশুদা, বাবা আমাকে শিখিয়ে পড়িয়ে পাঠিয়েছিলো, যাতে বদনাম দিয়ে ব্যাংকটা এখান থেকে তুলে দেওয়া যায়, আমাকে ক্ষমা করে দিও, বলে সেও উপরে উঠে গেলো। বড়ো ফাঁড়া কাটলো, আর একটু হলেই বিশুর ভদ্দর লোক হবার সাধ চিরদিনের মতো ঘুচে যাচ্ছিলো।
সঞ্জিত মণ্ডল | Sanjit Kumar Mandal
Full Bangla Galpo 2023 | Krishna Kishore Middya
New Online Golper Boi 2023| Bipasha Chakraborty
New Bengali Kabita Collection 2023 | Gobinda Modak
New Poetry Bangla Word 2023 | Tapan Maity
Read Online Bangla Golpo | New Read Online Bengali Story | Top Best Story Blogs | Best Story Blogs in pdf | Sabuj Basinda | High Challenger | Best New Bengali Web Story 2023 | Shabdodweep Read Online Bengali Story | Shabdodweep Writer | Best Story Blogs in India | World’s Best Live Bengali Story Blogs | New Bengali Web Story in Online | Online Interesting Bangla Golpo | Full Read Online Bangla Golpo | New Bengali Web Story Blogs | Best Story Blogs in Bengali | Live Bengali Story in English | Live Bengali Story pdf | Full Bangla Galpo online | New Live Bengali Story | New Bengali Web Story – Episode | Golpo Dot Com Series | Horror Adult Story Video | Horror Live Bengali Story | New Bengali Web Story Audio | New Bengali Web Story Video | New Bengali Web Story Netflix | Full Bangla Galpo Read | Read Online Bengali Story Download | Shabdodweep Competition | Story Writing Competition | Bengali Writer | Bengali Writer 2023 | Trend New Bengali Web Story | Recent New Bengali Web Story | Top Live Bengali Story | Popular New Bengali Web Story | Best Read Online Bengali Story | Read Online Bengali Story 2023 | Shabdodweep Bengali Famous Story | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Golpo Dot Com Download | Bengali Famous Story – audio | Horror Adult Story | Read Online Bengali Story Collection | Live Bengali Story – video | New Bengali Web Story APK | New Bengali Web Story Download | Live Bengali Story mp3 | Full Live Bengali Story | Bengali Famous Story 2023 | Shabdodweep Bengali Famous Story | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Live Bengali Story – audio | Top Read Online Bangla Golpo | Bengali Famous Story – video | Bengali Famous Story mp3 | Full Bengali Famous Story | Bengali Literature | Shabdodweep Magazine | Shabdodweep Web Magazine | Live Bengali Story Writer | Shabdodweep Writer
ভীষণ ভালো লাগলো প্রিয় বন্ধুরা আমার আন্তরিক ধন্যবাদ আর অন্তহীন শুভেচ্ছা জানাই