কুহেলী দাশগুপ্ত – সূচিপত্র [Bengali Story]
ব্রাত্য সময়ের কাঁটা [Bengali Story]
বুল্টি চিরকালই হাঁদা আছিল। অধিক বাক্য ব্যয়, বৃথা বাক্য ব্যয়, অস্থানে বাক্য ব্যয় পূর্বক বারংবার তিরস্কৃত হইয়াও তাহার আক্কেল জ্ঞান হয় নাই।অভিভাবক সকল তাহাকে প্রগলভতার কারণ বশতঃ অধিক শাসন করিয়া থাকিত। তাহার ক্রোধের উদ্রেক হইলেও, মাতা ভিন্ন কাহারো নিকট মূল্য পাইতো না। বুল্টি নারী, পুরুষ নির্বিশেষে সকলের সহিত ভাব জমাইয়া ফেলিত ।শাসন বারণ সকলই হয়তো তাহার চর্বিযুক্ত চর্ম ভেদ করিতে পারিত না। বাল্যকালে একদা চৌকাঠে আছার খাইয়া পড়িয়া তাহার বাম গন্ডদেশে একখান ক্ষত হইয়াছিল। একমাত্র কন্যা, ভবিষ্যত কালে পাত্রস্থ করিতে হইবে, এই ভাবনায় তাহার পিতা মাতা ক্ষত স্থানে ঔষধ, দুগ্ধ সহিত বেসন, হরিদ্রা লেপন – এইরূপ সর্ব প্রকার চেষ্টায় বিফল হইলেন। ক্ষত স্থানটি যতুক চিহ্নের ন্যায় উহার বাম গন্ডে অবস্থান করিয়া অসোয়াস্তির কারণ হইলো।বয়সে খানিক বাড়বাড়ন্ত হইয়া বুল্টি স্বয়ং নানা প্রকার প্রসাধনের ব্যবহারে তাহার খুঁত ঢাকিবার প্রবল চেষ্টা করিতে থাকে। নানা প্রকার উক্তি শ্রবণ করিয়া বুল্টির চেষ্টার মাত্রা বাড়িতে থাকে। একদা এক দুর্সম্পক্কের অগ্রজ ভ্রাতা কহিল, উহার গন্ডদেশে পক্ষীতে বিষ্ঠা ত্যাগ করিয়াছে। এক জ্ঞাতি ভ্রাতা কহিল,পাত্র পক্ষের নিকট সুধা দিদিরে দেখাইয়া বুল্টিরে পার করিতে হইবে। সুধা দিদি হইল বুল্টির গাঁ নিবাসী পিসিমার একমাত্তর কন্যা। দর্শনে রূপবতী না হইলেও, বুল্টির ন্যায় খুঁতযুক্তা নয়।চঞ্চল মতি বুল্টির সহিত পিসিমা যারপরনাই নিজ কন্যার তুলনা করিয়া চলেন। মনে ক্রোধেক উদ্রেক হইলেও
বুল্টি এই সকল উপেক্ষা করিয়া চলে। চঞ্চলমতি বুল্টির অস্থির চিত্তের সমালোচনার ঝড় বহিয়া যায় একান্নবর্তী পরিবারের অভিভাবক মহলে। পিসিমা তাহাতে অগ্রণী ভূমিকায়। এইসকল ঝঞ্ঝাট লইয়াও বুল্টি প্রেমে পড়িল। বুল্টি পড়িল কি তাহার প্রেমে কেহ পতিত হইলো – তাহা কওয়া দুষ্কর। হেথায়, হোথায় বিবেচনাহীন এমন কম্ম শাস্তি যোগ্য অপরাধ। এক ছোকরা একদিন বুল্টিরে উদ্দেশ্য করিয়া একখানি প্রেমপত্র নিক্ষেপ করিলে,তাহা প্রেমজর পিতার কাঁখে পড়িল। সেই সময় পিতৃদেব আরাম কেদারায় দেহ রাখিয়া পত্রিকায় মনোনিবেশ করিয়াছিলেন। কন্যা রত্নটিরে কাছে ডাকিয়া খান দুই চাটি মারিয়া শাসাইলেন। প্রেম স্রোতে ভাটা পড়িল। আছারি বিছারি খাইয়া বুল্টি বাড়িয়া উঠিতেছিল।
দুর্ভাগ্য ক্রমে পিতা মাতার অকাল প্রয়াণে বুল্টির অভিভাবকত্বের হাত বদল হইতে হইতে পিতৃ স্থানীয় পিসেমশাইয়ের অধীনে তাহার অধ্যয়ন পর্ব চলিতে থাকে। যথা সময়ে বিবাহ যোগ্যা বুল্টিরে পাত্রস্থ করিবার ভাবনায় পিসেমশাই পত্রিকার পাত্রপাত্রীর কলামে দুই চারি বাক্য সম্বলিত বিজ্ঞাপন প্রেরণ করিলেন। পাত্তর পক্ষের যোগাযোগ আসিতে থাকে।সজ্জন পিসেমশাই কোন স্থানে যতুকের উল্লেখ করেন নাই। ওনার চেষ্টার অলক্ষ্যে কতক অতি সক্রিয় হিতাকাঙ্খীর দল কহিতে থাকে, ওই তো ছিড়ি !খালি দেখিতেই আসিবে। বিবাহ পর্ব অবধি গড়াইবে না। অমন সুচিন্তকের বাক্যে ফুল চন্দন লেপন করিয়া এক দল পাত্তর পক্ষ দফায় দফায় আসিয়া ভরপেট মিঠাই সেবন করিয়া শেষের বার কহিয়া গেল, গন্ডদেশের যতুক চিহ্ন প্রসাধনী দ্বারা ঢাকিবার চেষ্টা হইয়াছে। প্রথম ও দ্বিতীয়বারে যাহা পরিলক্ষিত হয় নাই। পিসেমশাই বুঝাইতে অক্ষম, কোন প্রসাধনের কারুকার্য হয় নাই। আবার যে সকল আসিয়া বুল্টিরে ঘরে নিতে বদ্ধ পরিকর, তাহারা পিসিমা ও পিসেমশাইয়ের মনঃপূত হয় না। এমনি করিয়া পাত্তর পক্ষের সম্মুখে উপবেশন করিতে করিতে বুল্টি এইবার প্রতিরোধ করিল, পাত্তর পক্ষরে পূর্বেই যতুক চিহ্নের বিষয়টি জানাইতে হইবে। নচেৎ বিবাহোত্তর নানা কু মন্তব্য শ্রবণ তাহার দ্বারা সম্ভবপর হইবে না। অরাজি থাকিয়া ও পিসেমশাই বুল্টির বক্তব্য মানিয়া লইলেন। যতুক সম্বন্ধে জ্ঞাত হইয়া ও কয়েক ঘর হইতে আগ্রহী হইয়া আসিলে, বিচক্ষণ পিসেমশাইয়ের নির্বাচিত এক মেধাবী ,প্রকৌশলী ,সুদর্শন পাত্রের সহিত বুল্টির বিবাহ স্থির হইল। পাত্র পক্ষের অনুরোধে পাত্র পাত্রীর কথোপকথনের সুযোগ করিয়া দেওয়া হইল। পাত্র স্বল্প বাক, মৃদুভাষী। বুল্টি তাহার পূর্বজ প্রেমের কথা উত্থাপন করিয়া কহিল, আপনার কিছু থাকিলে কহিতে পারেন। পাত্র মৃদু হাসিয়া কহিল, পূর্বের কথা কহিয়া সময়ের বৃথা অপব্যয়। অদ্যকাল হইতে বর্তমান ও ভবিষ্যতের কথাই ভাবিতেছি। শত্তুরের বাক্য গোবর শুদ্ধি করিয়া বুল্টি সুখে সংসার করিতেছে।
সোনার শেকল [Bengali Story]
“কি করে ও বাড়িতে আমার বিয়ে দিয়েছিলে তোমরা! একটুও ভাববে না! কোন পরিবেশে আমি বেড়ে উঠেছিলাম”! শ্রীতমা অভিযোগ করে তনুশ্রীর কাছে।
“একটু বুঝে চল মা, চট জলদি সব মনের মতো হয়না রে। ভালো ঘর ,বর দেখে বিয়ে দিয়েছিলাম তুই ভালো থাকবি বলে। মানসিকতার ফারাক তো থাকবেই। সেই দুরত্বটুকু কমিয়ে এনে সমাধান কর তোরা স্বামী স্ত্রী মিলে”। তনুশ্রী বলেন।
“তোমরা তো সমস্যাটাই বুঝতে চাইছোনা। সবেতেই ওদের নাক উঁচু ব্যাপার। হাজার গন্ডা পুষ্যি নিয়েছে। বাড়িতে কাজের দুটি বাঁধা লোক আছে। তবুও স্কুল থেকে ফিরে আমি ওদের তদারকি করলাম কিনা এই নিয়ে শাশুড়ি, ননদের নানা কথা। তোমাদের জামাই ফেরে সেই রাতে। তাকে কিছু বলব, সেই মুড তার থাকে না। ছেলেটাকেও তো সময় দিতে হয় বলো”? – শ্রী বলে।
-“সব বুঝলাম। তবে, এ সমস্যা মেটানোর উপায় তোকেই খুঁজতে হবে। তোর বাবা বেঁচে থাকলেও এ কথাই বলতেন। শোন শ্রী, সম্পর্ক গুলো শেকলের মতো জুড়ে থাকে। এবাড়ি ওবাড়ির বন্ধনের শেকল তুই আর বুবুন। ওর মা বোনের সাথে সম্পর্কের টান অবিচ্ছেদ্য, তেমনি আমাদের সাথে তোর । স্বামী স্ত্রীর কিছু কর্তব্য কর্ম থাকে দু’তরফের জন্য। এই দায়িত্ব বোধ থেকে বন্ধন আরও দৃঢ় হয়। ধরে নিলাম ওদের মাছ,পাখি, বেড়াল পোষা তোর পছন্দ নয়। তোর স্কুলের চাকরীর পরে ওসব নিয়ে মাথা ঘামাতে তোর ভালো লাগে না। ও বাড়িকে আপন করার সাথে ওদের ভালোবাসার জীবগুলোকেও মূল্য তোকে দিতে হবে। আমি কখনোই বলছি না নিজের পেশা, মা হিসেবে গোগোল দাদুভাইয়ের প্রতি কর্তব্যের কোন ঘাটতি থাক। তোর অসুবিধে ওনাদের বোঝানোর সুযোগ তোকে দিতে হবে। তুই স্কুলে থাকলে পিসিমণি আর ঠাম্মা মিলে দাদুভাইয়ের যত্ন, খেয়াল রাখে এটাও তোকে বুঝতে হবে মা। কোন বাড়িতে মতের অমিল হয়না!আমার সব সিদ্ধান্ত তোর পছন্দ হয়? তেমনি ও বাড়িতে তোর সব কিছু ওদের ভালো লাগবে, এমন তো না ও হতে পারে।তাই বলি ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখিস”। মা তনুশ্রী দেবী মেয়েকে বোঝানোর চেষ্টা করেন।
–“মা গো, তুমি তো সেই আদ্যিকালের মতো মানিয়ে চলার কথা বলছ। এ যুগে কেউ এভাবে ভাবে না। স্বাবলম্বী হয়ে ভেবেছিলাম নিজের মতো চলবো। তুমি আর দাদা মিলে বিয়ের শেকলে বাঁধলে। এখন সবদিক ব্যালেন্স করতে গিয়ে নিজের জন্য সময় কোথায়! আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে পড়ছি যেন”।মনের কষ্ট জানায় শ্রী।
–“ওরে অবুঝ মেয়ে, আমার মতো তুইও কারো মা। মা আর সন্তানের বন্ধন চিরকালের। সন্তানের মঙ্গল চেয়ে ওর কাছের সব সম্পর্কের মান্যতা তোকে দিতে হবে। শেকলের আংটার মতো সম্পর্ক গুলো জড়িয়ে থাকে। একটিও স্থান চ্যুত হলে শেকল ছিঁড়ে যায়। ভালোবাসা, মায়ার বাঁধনে সবাই আমরা সোনার শেকলে বাঁধা পড়ে আছি। হারিয়ে আফসোস করার চেয়ে আরো মজবুত ভাবে জড়িয়ে থাক মা।”।
মায়ের কথাগুলো শুনে শ্রীতমা আনমনা হয়ে ভাবে, গোগোলের জন্য তাকে আরো শক্ত হতে হবে।
বাতায়নে বসন্ত [Bengali Story]
শীত বুড়ি লেপের গরম ছেড়ে বেরুতেই চাইছে না। কনকনে উত্তুরে হাওয়ার শিরশিরানি লাগে। দুপুরে রোদের আদর মাখিয়ে দিতে রবি চলে মাঝ গগনে। আড়মোড়া ভেঙে ফুলদল সাথে গা ঝাড়া দেয় পত্র পল্লবিত শাখাগুলি। রৌদ্র স্নানে সতেজ হয় ওরা। লজ্জাবনত বধূর অবগুন্ঠন ছেড়ে রঙ বাহারে সেজে ওঠে মৌসুমী কুসুমকলির দল। আনমনা হৃদয়ে দোলা দিয়ে যায় এমন বাতাবরণ। কুসুমের রূপের ছটায় নেশা লাগে পতঙ্গপরি দলে। ফুলে ফুলে মৌতাত, পরাগায়ণ- প্রেমের নেশায় বিভোর তারা। পাখনা মেলে উড়ে বেড়িয়ে কুসুমের হৃদয়ে ভালোবাসার স্বপ্ন জাগায়।দলে দলে পাঁপড়ি মেলে কুসুমকলিরা সারা দিয়ে চলে বহ্নিপতঙ্গের মতো। একদিনের প্রস্ফুটিত প্রেম বাসি হয়েই ঝরে পড়বে জেনেও প্রেম রূপ কুঁড়ি কুসুমে পূর্ণ হয়। পতঙ্গের আকর্ষণে ভোর থেকেই প্রসাধনের ধুম লাগে।শিশিরের ছোঁয়া পেয়ে স্নিগ্ধ হয়,সকালের নরম রোদে মুক্ত দলসাথে প্রেমাস্পদের প্রতি আহ্বান জানায়।সুন্দরীদের অমোঘ আকর্ষণ রুধিবে, এ সাধ্য কার! দুষ্টুপ্রজাপতিরা একে একে, আবার কখনো ঝাঁকে ঝাঁকে ঘুরে বেড়ায় ফুলে ফুলে। অস্থির, চঞ্চল প্রেমীর দল মধুর আস্বাদ নেয় ফুলকুমারীর হৃদয় নিংড়ে। ক্ষণিকের ভালোবাসাও তাদের মোহাচ্ছন্ন করে। পুব থেকে পশ্চিমে রবির যাত্রাপথে প্রকৃতির বুকে চলে অবাধ প্রেম লীলা।দিন বয়ে যায়। ধীরে ধীরে মধ্য গগনে রবি প্রখর হতে থাকে। রবির তেজের উত্তাপ নিয়ে লেপের মায়া ছেড়ে মুক্ত হয় হিমিকা। দখিনা বাতাসে ভেসে আসা সুবাসিত কুসুমের আঘ্রাণ আর উদাসী মন বসন্তের চরণ ধ্বনি শুনতে পায়।কে জানে কোন মায়া জড়িয়ে থাকে বসন্তের আকাশ বাতাস জুড়ে!ধরনী সেজে ওঠে পলাশ রাঙা ভূষণে।কোকিলের স্বরে ও বাজে অভিসারের আমন্ত্রণ। ধরনী পূর্ণ হওয়ার তরে দিকে দিকে ছড়ায় যেন প্রেমের বারতা! আগামী সময়ে পালা বদলের ঋতুতে উজার করে ভরিয়ে দেবে যা কিছুধারণ তার সম্ভবে। এই তো ধারা প্রকৃতির। আকাশের বুকে একরাশ নীল আর বাতাসের কানাকানিতে বসন্ত বয়ে যায় আগামীর আহ্বানে।
হাত বাড়িয়ে রই [Bengali Story]
ব্যাংকের লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে থেকে খুব অস্বস্তি হচ্ছিল পরিমল বাবুর। আজ লাইফ সার্টিফিকেট জমা দেওয়ার শেষ দিন। আর কেউ তো নেই বাড়িতে , যে সাহায্য করতে পারে।একমাত্র ছেলে ব্রতীন চাকরির সুবাদে হিল্লী দিল্লী করে বেড়াচ্ছে। বউমা স্কুল ফেরত হয়ে সময় করতে পারে না।গিন্নী তো গেঁটে বাত নিয়ে সর্বদা গড়াচ্ছেন। একটু বসতে পারলে ভালো হোত,ভাবছিলেন তিনি ।এমন সময় হনহন করে এক যুবক এসে ঢিপ করে পায়ে হাত দিয়ে পেন্নাম।
–“তুমি কে বাবা চিনতে পারলাম না তো”!
–“আপনি পরিমল জেঠু তো?আমি শঙ্কর। শঙ্কর বিশ্বাস। সেই যে আপনার কাছে পড়তে যেতাম , মনে আছে জেঠু?আপনার শরীরটা মনে হচ্ছে ভালো নেই। আপনি আমার সাথে চলুন। একটু জিরিয়ে নেবেন”।
–“সে না হয় বুঝলুম। কিন্তু আমার লাইফ সার্টিফিকেট জমা দেওয়ার শেষ দিন আজ। তার কি হবে”?
–“”সব হবে জেঠু। আপনি চলুন আমার সাথে। আপনার কোন চিন্তা নেই। কাজ হয়ে যাবে”।
ওনাদের কথপোকথনে লাইনের বাকি লোকজন মনোযোগী হয়ে পড়েছিল। শঙ্কর পরিমল বাবুকে নিজের সুসজ্জিত রুমের সোফাতে নিয়ে বসায়।
—“জেঠু আমি এই ব্যাঙ্কের নতুন ম্যানেজার হয়ে এসেছি। আগে আসানসোলে ছিলাম।একটু চা হয়ে যাক জেঠু”। বেয়ারাকে ডেকে দু’কাপ চায়ের অর্ডার দেন ম্যানেজার শঙ্কর বিশ্বাস। দুজনের কুশল বার্তা বিনিময় চলতে থাকে।বাড়ির সকলের খোঁজ নিয়ে পরিমল বাবু জানতে পারেন, শঙ্করের বাবা শিবনাথ আর বেঁচে নেই। মা ,স্ত্রী আর একমাত্র কন্যা সন্তান নিয়ে তার পরিবার। তার কন্যাটি সবে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ছে।শঙ্কর পরিমল বাবুর কাজকর্ম সব গুছিয়ে দিয়ে নিজের গাড়িতে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
বাড়িতে ফিরে পরিমল বাবু সকলকে শঙ্করের আন্তরিকতার কথা বলেন অত্যন্ত আনন্দের সাথে। অনেক গুলো বছর পিছিয়ে গিয়ে কিছু ছবি ওনার মনে আলোড়ন তোলে। তাঁদের পাড়ার মোড়ে ছোট্ট বাজার বসতো রোজ সকালে। সেই বাজারে শিবনাথ মাছ নিয়ে বসতো । ছেলেটি পাশে বসে মাছের আঁশ ছাড়িয়ে দেয়া,হাত ধোয়ার জল তুলে আনা -ফরমায়েশ মতো সাহায্য করত বাবাকে। বিকেলে কখনো দেখা যেত ছেলেটি ছুটছে , খেলছে পাড়ার বন্ধুদের সাথে। পরিমল বাবু একবার জিজ্ঞেস করেছিলেন, “কি নাম তোর? কোন ক্লাসে পড়িস”?
–“আমি শঙ্কর। শঙ্কর বিশ্বাস। কোন কেলাসে পড়িনা তো!”
–“পড়বি?যদি সুযোগ পাস?”ছেলেটির বুদ্ধিদীপ্ত চোখের দিকে তাকিয়ে পরিমল বাবু জানতে চান।
–“বাবায় দিবে না”।মাথা নিচু করে বলেছিল শঙ্কর।
–“সে তুই ভাবিস না। বাবাকে আমি রাজি করাব”।
পরিমল বাবুর কথায় প্রথমে অরাজি শিবনাথ বলেছিল, “আমাদের ঘরে পড়া লেখা চলেনা দাদাবাবু। ছেলেটা সাথে থাকলি পরে কাজের সুবিধে হয়। আমাদের রোজকার আয়ে পেট চলে,অত টাকা কোত্থেইকে পাব?ও আপনি শুধুই ভাবতিছেন”।
–“যদি আমি পড়াই?তাহলে তো কোন অসুবিধে নেই। তুমি অমত কোর না শিবনাথ। ওর বুদ্ধিদীপ্ত চোখে আমি উজ্জ্বল ভবিষ্যত দেখতে পেয়েছি। কি রে শঙ্কর মন দিয়ে পড়বি তো”?
শিবনাথ আর না করতে পারেনি। সেই থেকে শুরু হাত ধরে এগিয়ে নেয়ার পালা। প্রাইমারী সেকশন থেকে মাধ্যমিক অবধি সবরকম সাহায্য দিয়ে পরিমল জেঠু এগিয়ে দিয়েছে। বাড়িতে ডেকে নিয়ে ও পড়া দেখিয়ে দিয়েছেন। তারপর মেধাবী শঙ্কর স্কলারশিপের টাকা ও কিছু টিউশনের টাকায় ভবিষ্যতের পথে এগিয়েছে। পরিমল বাবুরা পরে বাড়ি বিক্রী করে কলকাতায় ফ্ল্যাট কিনে চলে গেলে, যোগাযোগ আর ছিল না। এতদিন পর শঙ্করের উন্নতি দেখে পরিমল বাবুর মন ভরে গেল।শঙ্করের খেলে বেড়ানো শৈশবটা ও উনি মনে মনে ছুঁয়ে গেলেন।
নকশী কাঁথার মায়া [Bengali Story]
স্নেহের বাবু,
কতদিন হয়ে গেল ফোন করিসনা। কোন খবর বার্তা নেই। আমি হিসেব করে দেখেছি, প্রায় দু’বছর হতে চল্ল, কোন যোগাযোগ নেই। আগে তো প্রতি সপ্তাহে ফোন করতিস। হঠাৎ কি এমন হোল ! আমি বুড়ি মানুষ, কখনো ভুলভাল কিছু বলে থাকলে রাগ করতে আছে বাবা!সেই কবে এসেছিলি!তোকে দেখতে বড় ইচ্ছে করে। বিনিকে বলে রেখেছি, তুই এলে আমি রাঁধব। মেয়েটা কোন কাজ করতে দিতে চায় না। কত বসে থাকা যায় বলতো! মেয়ে জামাইয়ের বাড়িতে রয়েছি,লজ্জা করে । অনীক বাবা ভালো ছেলে। জামাই বলে মনে হয়না। ছেলের মতো দেখভাল করে। কিন্তু নিজের বাড়ি ছেড়ে এখানে রয়েছি। তোরা আমার একা থাকা মানতে পারিসনি। তোর বাবার কষ্ট করে করা বাড়িখানা অমনি পড়ে থাকবে? বিনি আর জামাই মাঝে মধ্যে গিয়ে পরিষ্কার করে আসে। এবার তুই এলে ওখানে থাকবো। তোর পছন্দের সব রান্না করব। ওহ্ বলতে ভুলেই যাচ্ছিলাম। তোর জন্য একটা নকশা তোলা কাঁথা বানিয়েছি। তুই তো ছেলেবেলা থেকে নকশা তোলা কাঁথা গায়ে দিতে ভালোবাসতিস। চোখে তেমন ভালো দেখতে পাইনা। ওই , এক আধটু যা দেখি তাতেই বানালাম। বিনি রাগ করে, চোখে চাপ পড়ছে বলে। ছানি কাটালাম তো। আর রাগ করে থাকিস না বাবা। বিনির মেয়েটা খুব ফুটফুটে হয়েছে।সামনে মুখে ভাত হবে। তুই এসে মামা ভাত খাওয়াবি তো!এবার রাখছিরে।
ইতি,
মা
চিঠিটা হাতে নিয়ে স্তব্ধ বিনির চোখের জল গড়িয়ে পড়ে পাতা খানি ভিজতে লাগলো। একটু আগেই তারা শ্মশানের কাজ মিটিয়ে ফিরল। গতকাল রাতে চৌষট্টি বছর বয়স্কা অনিমা দেবী সংসারের মায়া কাটিয়ে অনন্ত লোকবাসী হন। অনেককালের অ্যাস্থমা পেশেন্ট। কিছুদিন ধরে বাড়াবাড়ি রকম শ্বাস কষ্ট হচ্ছিল । একমাত্র ছেলে অনুজ ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটিতে পড়ছিল। উচ্চ শিক্ষার্থে তার বিদেশ যাত্রার পর প্রতি সপ্তাহে কথা হোত মা বোনের সাথে। দু’বছর আগে একটা অ্যাকসিডেন্ট এ তার মারা যাওয়ার খবর বন্ধুরা জানিয়েছিল। বিনি কিছুতেই এ খবর মা কে জানাতে পারেনি। আড়ালে দাদার জন্য চোখের জল ফেলেছে। মানসিক চাপে তার প্রথম একটা মিসক্যারেজ হয়েছিল। দু’বছর আগে থেকেই অনিমা দেবী রোজ একটু আধটু সূঁচের ফোঁড় তুলে কাঁথাখানি শেষ করেছিল। বাবুর খবর জানতে চাইলে বলতো, “মা, তুমি শুধুই ভাবছ এতো।পড়া শেষ করে দাদা নতুন চাকরিতে জয়েন করেছে, ভীষন কাজের চাপ, তাই সময় করতে পারছে না।”
চিঠিটা মা কখন লিখেছে বিনি জানতে পারেনি। মায়ের যত্নে ফুল তোলা কাঁথার ভাজে রাখা ছিল। এই কষ্ট গুলো চিরকাল বিনির বুকে ছাই চাপা আগুনের মতো ধিকি ধিকি জ্বলবে।
রক্তঋণ [Bengali Story]
–“ভাই তুই আজ যাবি তো মায়েরে দ্যাখতে”?পরি শুধোয়।
–“হ যাব। আগে বন্ধুর লগে প্ল্যান আছে। তাইরপর যাবনে। তা ছাড়া ভিজিটিং টাইমের আগে তো দেহা করতিও দিবে না”। বিজু কয়।
“অহন মা হাসপাতালে ভর্তি আর তুই বন্ধুর লগে প্ল্যান করস! কি করি মন চায় তর!মায়ের লাগি মন কান্দে না”?
–“মায়ের চিকিচ্ছে ত হতিছে। ভাল হই যাবে। তার জন্যি বসি কান্দলে মায়ে ভাল হই যাবে? তর কান্দন লাগে তুই কাঁদ। আমি স্বাদ আহ্লাদ ভাসাইদি কানতে পারবনে”।
দুই ভাই বোনের কথোপকথনের মাঝে পরির মন খারাপ হয়ে যায়। চোখ ছলছলিয়ে ওঠে।
ওদের মা সরমা কঠিন রোগ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি। রক্ত দিতে হয় বারবার। সরকারি হাসপাতালের পরিষেবার বাইরে আর কিছু করা সম্ভব নয় তাদের। বাবা তো সেই কবে মরে গেছে। তাদের অত মনেও নেই। পাড়ায় ছোট্ট মুদিখানার দোকান চালিয়ে সরমা ছেলেমেয়েদের ভরণপোষণ চালিয়ে যাচ্ছিল। বরাবরই সে দুর্বল ছিল। কোনকালে কঠিন রোগ বাসা বেঁধেছে শরীরে বুঝতে পারেনি। তাছাড়াও কোনভাবে এগিয়ে চলা সংসারে শরীর নিয়ে অত চিন্তার উপায় কই!
পরি জানে মায়ের অবস্থা ভালো নয়। ডাক্তার বাবুর সাথে কথা হয়েছে। অ্যানিমিয়া না কি বললেন তিনি। এভাবে রক্ত দিয়ে কতদিন রাখা যাবে! দু’ভাই বোন পালা করে মা কে দেখতে যায়। দোকানটা ও তো চালিয়ে যেতে হচ্ছে। টাকার দরকার। রাতে বিজু ফিরলে পরি বলে,”দুকানটারে বন্দক দিবি ভাই? মায়ের অবস্থা ভাল নয় রে। ডাক্তার বাবুর লগে কতা কয়েছিলাম। যদি আর ভালা কিছু করন যায়”।
–“হ, আমার লগে ও কতা হইছে। মায়ে ত মরবই, আইজ কাইল যে কুনোদিন। দুকান বন্দক দিলে ছাড়াতি পারুম ? আমার কুনো ইচ্ছা নাই”। বিজু বিরক্ত হয়। পরি ডুকরে কেঁদে ওঠে।
“তুই অ্যাত্ত স্বাত্থপর! মায়ে আমাগো লাগি কি না করছে! কুনোদিন নিজের কতা ভাবে নাই। মায়েরে ছাড়া ক্যামনে থাকি”!
বিজু কথা না বাড়িয়ে শুতে যায়। সারারাত দু’চোখের পাতা এক করতে পারে না পরি। ছেলেবেলাকার স্মৃতি মনে পড়তে থাকে। কান্না ভেজা চোখ ফুলে ওঠে। সকালে শেফালীদের বাড়ির ফোনে খবর আসে, পরি বিজুকে হাসপাতাল যেতে হবে। ভোর রাতে সরমা হার্টফেল করেছে। পরির চারপাশটা অন্ধকার বোধ হয়। গতকাল যদি সে যেত, জীবিতকালে শেষ দেখাটা ও পেতো। শেফালীর মা দেখতে গিয়েছিল। তার কাছে বার বার জানতে চেয়েছে সরমা, “পরি আয়ে নাই”? আনমনা হয়ে পরির নাম করে পানি চেয়েছে। শেফালীর মা পানি খাইয়েছে। তার সাথে কিছু কথা কয়েছে সরমা। “পরি আমার বুঝদার। অরে ভরসা করতি পারি। বিজুটা অখনো ছেলেমানুষ”।
শেফালীর মায়ের কাছে কথাগুলি শুনে চিৎকার করে কেঁদে ওঠে পরি। “মা গোওওও শ্যাষ দেখাটাও পাইলাম না!একটু পানি চায়ছিলা, দিতি পারি নাই মাগো। ক্যামনে থাকুম। জন্মের মতো ঋণী করি গ্যালা”।
–“কান্দি কি হবে? ম্যালা কাম আছে দিদি। হাসপাতাল চল”।থমথমে মুখে বলে বিজু।
রসনা বিলাসী [Bengali Story]
সোমনাথ বাবু চিরকাল ভোজন রসিক ব্যক্তি। রন্ধন প্রক্রিয়ার বৈচিত্র্য আনয়নের তরে তিনি নানা প্রকার মশলার ব্যবহারে গিন্নীকে উৎসাহিত করিয়া থাকেন। ওনার উৎসাহে পত্নী শোভা নিত্য নতুন পদ পরিবেশন করিয়া কত্তার রসনা বিলাসে স্বাদের বিভিন্ন মাত্রা যুক্ত করেন। প্রতিনিয়ত আমিষ , নিরামিষ নানা প্রকার পদ উদরস্থ করিয়া বিপুলাকার একখানা বপুর অধিকারী হইয়া সোমনাথ চাটুজ্জে মহাশয় পঞ্চাশ বৎসর বয়স্কালে মধুমেহ, উচ্চ রক্তচাপ প্রভৃতি রোগের অলঙ্কার শরীরে ধারণ করিয়াছিলেন। পুত্র, কন্যাদ্বয় আধুনিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করিয়া ছিপছিপে গড়নের অধিকারী হইয়া পিতার রসনা বিলাসের আধিক্যের কারণে চিন্তিত রহে। তাহার মাতার নিকট অভিযোগ করিয়া চলে, ওনার সহযোগিতার কারণে পিতার ভোজন বিলাসের এমন আধিক্য উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাইয়াছে। শরীর সচেতন না হইলে কঠিন ব্যাধিতে শরীর জর্জরিত হইবে।
শোভা দেবী পতির স্বাস্থ্য চিন্তায় খানিক অধীর হইলেও, কত্তা মহাশয়কে দুঃখী করিতে চাহেন না।শাঁখের করাতের ন্যায় শোভা দেবী দুই দিকের ভাবনার চাপে অস্থির হইয়া পড়েন। মাতাকে আনমনা দেখিয়া পুত্র পিনাকী পারিবারিক চিকিৎসক সত্যজিত ধাড়ার সহিত আলোচনা পূর্বক উপায় করেন, কি করিয়া সোমনাথ বাবুকে নিয়ম মাফিক খাদ্যাভ্যাসের অনুসারী করা যায়। কন্যা পিয়ালী ,ভ্রাতা ও মাতার সহিত যুক্তি করিয়া পরদিন শোভা দেবীকে সাংসারিক কাজকর্ম হইতে অব্যাহতি দিয়া পাক প্রণালী সাধন কল্পে রন্ধন শালার দায়িত্ব নেয়। সক্কাল বেলায় এক গেলাস ত্রিফলার রস দেখিয়া সোমনাথ বাবুর সমস্ত লালা রস শুকাইয়া যাইবার উপক্রম হয়। কন্যার সহিত তিনি আঁটিয়া ওঠেন না। অনিচ্ছা সত্বেও ত্রিফলার রস সেবন করিয়া গিন্নীর খোঁজ করেন।
কন্যা বলিয়া চলে, শোভা দেবীর অস্থি ক্ষয় হইতে হইতে বেশ ক্ষতিকারক পর্যায়ে পৌঁছিয়াছে। এমতাবস্থায় ডাক্তার বাবু ওনাকে পূর্ণ বিশ্রাম এবং সুষম আহারের পরামর্শ দিয়াছেন। স্নেহ যুক্ত ও শর্করা জাতীয় খাদ্যে হ্রাস টানিতে হইবে। অত্যধিক তৈল সহযোগে রন্ধন বর্জন করিতে হইবে। এসকল ফিরিস্তি শুনিয়া সোমনাথ চাটুজ্জে খানিকটা বিমর্ষ হইলেন। পত্নীর সন্ধানে গিয়া দেখেন, শোভা দেবী পালঙ্কে পা টানিয়া উপবেশন করিয়া বেলা বসুর রন্ধন প্রণালী পুস্তিকার পাতা ওল্টাইতেছেন। কুশল জানিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলেন চাটুজ্জে মহাশয়। গিন্নীর প্রতি ওনার অপরিসীম ভালোবাসা। এতকাল যাবৎ পরিবারের সকলের দেখভাল ও রসনা বিলাসী কত্তার রকমারি স্বাদের ফরমায়েশ গিন্নী পূরণ করিয়াছে। তাহার কল্যাণে এইটুকু কৃচ্ছ্রসাধন করা যাইতে পারে। মধ্যাহ্ন ভোজন কালে আহার্যের পরিমাণ ও পদ দেখিয়া ওনার ভিমড়ি খাইবার উপক্রম হয়। কন্যা রত্নটি মাত্র দুটি পদ রাঁধিয়াছে। ভাতের সহিত একবাটি সব্জি সেদ্ধ যাহা উনি কস্মিনকালেও সেবন করিতে চাহিতেন না ও নামমাত্র তৈল সহযোগে রাঁধা মুরগীর ঝোল। গিন্নীর স্বাদু রন্ধনের কথা মনে করিয়া সোমনাথ বাবু সবজির বাটি খানি টানিয়া লইলেন।
পাথেয় [Bengali Story]
হরিমতি একা ভাবে আর মনে মনে হাসে। আজ সে কত মান পাইছে বটে। এক সময় গেছে তার, যখন ক্ষুধা পেটে এবাড়ি, ও বাড়ি কত ঘুরেছে কামের খোঁজে। হগ্গলে ভাগায়ছে। মায়ের চরিত্তির ভালো নয় বলে, কেউ তাদের পালতি চায়তো না। বাপটা জীবনভর নেশা করি গেল, আর মায়েরে ঠ্যাঙায়তো। সে আর তার ভাই পরাণ এক ধারে ঠেঁসি ছিল। খুড়ি, জেঠী কেডা না তাগো দুয়ো দিছে!বাপের এমন মতি দেখি মা য্যান কার লগে ভাগছিল!ব্যাবাকে তো এমতিই কয়। কেডা জানে?মায়ে তো তাগো কতা ও ভাবে নাই। প্যাটের জ্বালায় লাথি ঝাঁঠা হজম করি হাসান চাচার হোটেলে কাম পাইছিল। পরাণ বাসন মাজার কাম আর হেয় নিজে মশলাপাতি সরঞ্জাম যোগানীর কাম। দুই বেলা খাতি দিত। বাইচ্যা গেলে বাপের লাগি ও খানা জুটতো তাগো। নেশাখোর বাপ তাগো ম্যালা দিনই না খাইয়া থাইকতো।কি করা যায়! এমতি করিই তাগো দিন গ্যাছে। হাসান চাচা মানুষটা তো মন্দ না। কামের ভুলে গাইল পাড়ত। হরিমতি বুঝতি পারছিল, প্যাট চালাতি হলি কিছু তো জানতি, শিখতি অয়। অকামের মাইনষেরে দাম দেয় ক্যাডা!হাসান চাচার হোটেল থেইক্যা তাগো পথ চলা শুরু।
আইজ হরিমতিরে পাড়া, বেপাড়ায় ক্যাডা না চিনে!তার রাঁধার সুখ্যাতি করে ব্যাবাকে। বিয়া বাড়ি, ভাত বাড়ি সবেতেই হরিমতির ডাক পড়ে। ক্যাটারিং না কি কয়,তারা ও ডাকে। পরাণ আর হরিমতির খানার কমতি নাই,থাওনের জাগা খাইন তারা ভাই বুইনে বানাইছে জব্বর। বরাত জোরে তারা জীবন পাইছে। কিন্তু সংসার বান্ধনের মন নাই। ভাই বুইনে মিলি আছে ভালা। সংসার তাগো খালি দুখ দিছে। সাপ লুডো খেলনের লাহান জীবনে তারা কষ্ট করি মই চড়ছে। নতুন করি সাপের প্যাটে যাতি আর মন চায় না। বাপ মরি তাগো মুক্তি দিছে। মায়ে তো কোনোদিন তাগো খোঁজ রাখে নাই। কি দোষ আছিল তাগো!আইজ সুখ পাইছে বলি পুরান কথা কিচ্ছু ভুলে নাই। লুডো খেলনের কালে ছক্কা পাওনের বরাত লাগে।আর জীবনে খাটতি না জানলে ভাইগ্য জোরে সব কিছু হয় না। হরিমতির ভাবনার মাঝে কখনো চোখ দুটি ঝাপসা হয়ে আসে।
অচলা [Bengali Story]
সাম্যকে হরিধ্বনি দিতে দিতে নিয়ে যাওয়ার আগে পলার শাখা ভেঙে সিঁদুর মুছিয়ে দেয়া হোল। এক নিমেষে জীবনের সব রঙ উবে গিয়ে যেন সাদা কাগজের সারি। তাতে নতুন গল্প লেখার শুরু। দশটি বছর ভালো মন্দের সবটাতেই জড়িয়ে থাকা। তাদের ফুটফুটে কন্যা নীলার বয়স সবে ছয়। অবুঝ এই বালিকার হাত ধরে পলাকে অনেকটা পথ এগিয়ে নিতে হবে।সাম্যর বৃদ্ধ পিতা ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছেন, চোখে জল টলটল করছে। অনেককাল আগে থেকেই তিনি বিছানা সর্বস্ব মানুষ। সন্ধ্যাদি সযত্নে আগলে রাখে তাই, উনি টিঁকে আছেন এতকাল। শাশুড়িমা গত হওয়ার পর থেকে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে উনি ধীরে ধীরে বিছানা নিয়েছেন। পলা শাশুড়িমা কে সচক্ষে দ্যাখেনি। সবার কাছে শুনেছে,উনি লক্ষ্মীমন্ত ছিলেন। পলাকে ভেঙে পড়লে চলবে না। নীলার ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাকে বাবার ভূমিকা ও নিতে হবে।
শ্মশানের কাজ মেটানোর পর পলার দাদা প্রবাল আর বাবা পিযূষ বাবু আসেন মেয়ের কাছে। সাম্যর দিদি রাই এর প্রভাব কিছুটা রয়েছে এই সংসারে। এ বাড়ির কাছাকাছি রাইয়ের শ্বশুরবাড়ি। তাই অবাধ আসা যাওয়া আর বক্তব্য ভাষণ চলে। পলা বুদ্ধিমতী, তাই বরাবর বুঝে চলে দিদিভাইকে।
–“সাম্যর শ্রাদ্ধ শান্তি মিটে গেলে, তোকে ওবাড়ি নিয়ে যাব বোন। এখানে এভাবে থাকবি কি করে”? প্রবাল বলে।
–“হ্যাঁ রে মা। তুই আমাদের কাছে গিয়ে থাকবি। নীলা দিদিভাই বড় হচ্ছে। আমরা সবাই মিলে ওকে আগলাতে পারব”। পিযূষবাবু বলেন।
সাম্যর দিদি রাই পাশের ঘরে ছিল। কোনভাবে শুনতে পেয়ে, চলে আসে এঘরে।
“পলাকে তো এখন যেতে দেয়া যাবে না মেসোমশাই। ভাই চলে গেল বলে, ওর দায়িত্ব ফুরিয়ে যায়নি। আমার বাবার কি হবে? যতই সন্ধ্যাদি দেখাশোনা করুক, একা হয়ে পড়লে বাবাকে আর বাঁচানো যাবে না”।
এসব শুনে প্রবাল একরকম বিরক্তি প্রকাশ করেই বলে,”দিদিভাই কিছু মনে করবেন না, মেসোমশাই আজ আছেন,তো কাল নেই। আপনারা কাছাকাছি থাকেন, সন্ধ্যাদি আছেন । দেখাশোনার সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এইটুকুন বাচ্চা নিয়ে বোন এই বাড়িতে অসুস্থ মানুষ কে কতটা আগলাতে পারবে!”
পলা কাছেই ছিল। এগিয়ে এসে বলে,”না রে দাদা, এবাড়ি ছেড়ে আমি কোথাও যাব না। সমস্যা হলে দিদিভাই আছে, বাবা আছে,তুই আছিস। সাম্য, সব কিছুর দায়িত্বভার আমার হাতে ছেড়ে গেছে। বাবা , তোমরা অযথা চিন্তা কোর না”। রাই আর কথা বাড়ানোর সুযোগ পায় না। একে একে সবাই চলে গেলে, পলা অসহায় বোধ করে। ওঘরে সন্ধ্যাদি রয়েছে শ্বশুরমশাইয়ের পাশে। তবুও পুরো বাড়িটা যেন ওকে গ্রাস করতে চায়।নীলা মা কে জড়িয়ে ধরে জানতে চায়,” বাবা কি আর ফিরবে না মা”?ছলছলে চোখে পলা বলে,”বাবা তো স্টার হয়ে গেছে, তাই রোজ সন্ধ্যেবেলায় তুমি আকাশে দেখতে পাবে।”
নীলাকে বোঝাতে গিয়ে পলা হারিয়ে যায় দশ বছর আগের স্মৃতিতে। আলতা রাঙা পায়ে ডান পা বাড়িয়েছিল বধূবরণের দিন। বাপের বাড়িতে কেউ কিছু শিখিয়ে দেয়নি।দিদিভাই অলক্ষ্মী বলেছিল।কথাটা পলার বুকে বিঁধেছিল। দশ বছরে সব কিছু একে একে নিজের করে পাওয়া। দিদিভাই বাদ সাধলেও পলার স্কুলের চাকরী নিয়ে সাম্যর কোন আপত্তি ছিল না।
কখনো মজা করে বলত সাম্য,”তুমি আমার গৃহলক্ষ্মী। অচলা হয়ে থেকো”। পলা হেসে বলত,”মা লক্ষ্মী চির চঞ্চলা”। মনে মনে ফেলে আসা দিন ছুঁয়ে যায় পলা। বাইক অ্যাকসিডেন্টে সাম্যর অকালে চলে যাওয়া, দিদিভাইয়ের অলক্ষ্মী সম্ভাষণ মনে করাচ্ছে। এই বাড়ির সবখানেই সাম্যর স্মৃতি ছড়িয়ে আছে। সাম্যর বৃদ্ধ অসুস্থ বাবাকে ফেলে চলে যাওয়ার কথা পলা ভাবতেও পারেনা। এতকাল সাম্যর ভালোবাসার শৃঙ্খলে জড়িয়ে থেকে সে আজ সত্যিই অচলা।
অন্য স্বাধীনতা [Bengali Story]
“জানো পিসি? বোম ফেলেছে, পুলিশ হ্যালো করেছে।”-জনে জনে বলে চলে ছোট্ট তুলি। দুপুরে ঘুমানোর আগে মায়ের মুখে গল্পশোনা। মুক্তিযুদ্ধের গল্প, পাক বাহিনী, রাজাকারদের কথা, দাদুর স্বদেশী আন্দোলনে সামিল হওয়া আর মুক্তিযুদ্ধের সময় অত্যাচারিত হওয়ার কথা। গল্পের মালা গেঁথে চলে শৈশব থেকে কৈশোরে এগিয়ে চলা । স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মেছে তুলি। স্কুলে “আমার সোনার বাংলা”-আকাশ বাতাস মুখরিত করে তোলে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিয়ে হয়েছিল তুলির মায়ের। বিয়ের পরই পাড়ি দিতে হয়েছে বাংলার অন্য পাড়ে। অশান্ত সময়ের অজানা বিপদ এড়িয়ে সবাই আশ্রয় নেয় কলকাতায় মেজপিসির বাড়ি। সেই সময় মিত্রপক্ষের দেশ ভারতের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশের মাটি ছেড়ে পাক বাহিনী ফিরে যায়। ইন্দিরা গান্ধীর কাছে চুক্তিপত্রে সই করার একটি ছবি ও দেখেছে তুলি। খুব ভক্তি জেগেছিল মনে। কত ক্ষমতা ওনার!
কিন্তু বেড়ে ওঠার কালে পদে পদে পায়ে বেড়ী তার। মা কে দেখেছে প্রতিনিয়ত মানিয়ে নিতে। মুখ বুজে সংসারের জাঁতাকলে পিষ্ঠ হোতে। এ কেমন স্বাধীনতা! দেশ কাল ভেদে শৃঙ্খল মুক্তি পায় না নারী! পরিণত মনে তুলি খোঁজে অন্য স্বাধীনতার ।
স্নানধারা [Bengali Story]
মাটির নিচের অন্ধকার গর্ভগৃহ ছেড়ে সে খোলসের আবরণ ভেদ করে মাথা তুলে ধরে খোলা আকাশের দিক চেয়ে। প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেয়। তার কচি, কোমল সবুজ গায়ে সকালের নরম রোদ এসে আদর মাখিয়ে দেয়। সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুর মতো আদর পেয়ে সে হাত পা ছড়িয়ে আমোদিত হতে চায়।অবাক চোখে পৃথিবীর চারপাশটা দ্যাখে!নড়বড়ে শরীরে বসুমাতাকে আঁকড়ে ধরে শেকড় ছড়িয়ে। সে জানে না তার আসল পরিচয়। কোন বৃক্ষ ফলের জঠরে সে বীজ রূপে পালিত হয়েছিল, কিভাবেই বা মা বসুধার গর্ভে সে স্থান পেয়েছিল-এসব জানার জ্ঞান তার ছিলনা। মাটির কোলে শেকড়ের টানে খাদ্য রস পেয়ে একটু একটু করে বাড়তে থাকে সে। রবিকিরণ তার পাতার শিরায় আহার উপকরণের যোগান দেয়। ধীরে ধীরে পল্লবিত হয় কচি কিশলয়। সকাল, দুপুর, বিকেল উর্ধ্বপানে সে মেঘেদের ভেসে চলা দেখে। আকাশের সীমাহীন ব্যাপ্তি তাকে উর্ধ্ব মুখী করে। গোমরামুখো ধূসর মেঘেরা কখনো তাকে স্নানধারায় ভাসিয়ে দেয় ভারী বর্ষণে। জলধারার স্পর্শে পত্রপল্লবে টুপ্ টাপ্ ছন্দ বাজে। নীল সাদা মেঘেদের আলিঙ্গন দেখে সে লজ্জায় গুটোতে চায়। দুপুরের তপ্ত রবিকিরণ রৌদ্র স্নানের উষ্ণতা দিয়ে তাকে আমোদিত করে। গোধূলি বেলায় অবাক বিস্ময়ে দেখে আকাশের বুকে অস্ত রবির লালিমা ছড়ানো রূপ মাধুর্য!দখিন হাওয়া ঝিরিঝিরি বয়ে, দোলা দিয়ে তার কানে কানে বলে,”এই তো শুরু,উর্ধ্বপানে এগিয়ে চলার!ওই যে নীলাম্বরী পরিধানে শোভিতা নভঃ নীলিমা, ওর পানে যতই ধাবিত হও, শেকড়ের টানে চিরকাল থেকো মাটির কাছাকাছি”।
উত্তুরে হাওয়ার স্পর্শে সে শিহরিত হয়। শীতের রাতে শিশির ভেজা জলে সে কম্পিত হয়। আবার সকাল রোদে নেয়ে উঠে নিজেকে সাজিয়ে তোলে। পৃথিবীর বুকে পালাবদলের ঋতুরা আসে একে একে। ঝড়ঝঞ্ঝায় নুইয়ে পড়ে ও আবার মাথা তুলে ধরে আকাশ পানে। চারদিকে চেয়ে দেখে ডালপালা ছড়িয়ে ছায়া দানকারী মহীরুহদের। কত পাখিদের আশ্রয় দিয়ে, ঝড়-বৃষ্টি মাথায় করেও তারা অবিচল থাকে! প্রকৃতির পরিবর্তনের রীতি ধারায় স্নাত হয়ে সে স্বপ্ন দেখে, এমনইভাবে কারো আশ্রয় হয়ে বেঁচে থাকার।
স্রোতস্বিনী [Bengali Story]
সমুদ্রের তীরে হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা পথ এগিয়ে এলাম। আজ পূর্ণিমা। পূর্ণ চাঁদের আলো গায়ে মেখে সিক্ত হব। ফেনিল স্রোতেরা কূলে এসে আছড়ে পড়ে লুটোপুটি খাচ্ছে পায়ে। নোনা বাতাসে আঁচল উড়িয়ে আজ আমি পাল তোলা নৌকো। আমি জাহ্নবী গুপ্ত।
জীবনের ওঠা পড়া কোন কিছুই আর আমার আত্মাকে ছুঁতে পারে না। নিজেরে হালকা করে নিয়ে ভাসতে শিখে গেছি যে!
একটা সময় ছিল, যখন প্রতি কথায়, প্রতি কাজে শুধু ভুলের মাশুল গুনেছি। তখন মনে হত, একটা অচল পয়সা ছাড়া আমি আর কিছু নই।সময়ের হাত ধরে চলতে ফিরতে গিয়ে কখন যে এতটা পরিণত হলাম, তার খবর রাখিনি। আবেগে ভেসে বেড়ানো মনকে প্রেম ছুঁয়ে নাড়া দিয়েছে বারবার। শরতের আকাশ, মেঘলা দিনের মন কেমনের বাতাস ,নদীর জলে ছলাৎ ছলাৎ শব্দ সবের মাঝেই হৃদয় জুড়ে ভালোবাসার জোয়ার বইতো। আনমনা হয়ে কল্পনায় খুঁজে ফিরেছি, কোথায় পাবো তারে? যে জন আছে হৃদ মাঝারে।
শুভদৃষ্টি আর মালা বদলের মাঝে যাকে পেলাম, সে সোমেশ। আমার শুভাকাঙ্খীদের নির্বাচিত কর্ম ব্যস্ত, উচ্চাকাঙ্খী পুরুষ। জীবন পথে এগিয়ে চলতে গিয়ে আমার না পারার পাল্লা ভারী হয়ে বেসামাল হয়ে পড়ি। সোম হয়তো আটপৌরে এই আমিকে গড়েপিটে নিতে চেয়েছিল! কিন্তু অতি আধুনিক সোমেশের বন্ধু পরিজনের সমাবেশে আমার গুটিয়ে যাওয়া মন প্রজাপতির পাখনা ছাড়িয়ে শুঁয়োপোকা হয়ে ঘুরে বেড়াতো। ইংরেজিতে খই ফোটা বুলির ঝড়ে স্থবির হয়ে থাকতো আমার জিহ্বা। সোমেশের চলন কেতা, জীবন যাপনে বেমানান আমি জাহ্নবী থেকে জানু হয়ে উঠতে পারিনি। লাটাইয়ে জড়ানো সুতোর বাঁধন ছিঁড়ে দিয়ে মুক্ত করে দিয়ে আমায় কৃতজ্ঞ করেছে ও।
মানিয়ে চলতে না পারা, হেরে যাওয়া নারী যেন দিশাহীন তরী! সোমেশ কিন্তু বলত মিস ম্যাচ। আমি ও তাই বলি। আমার অন্তরে স্রোতস্বিনী বইছে তার আপন খাতে। দিশাহীন পথে সে এগুবে না।
আমার স্কুল আর ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে বেশ আছি। কল্পনার ছবি ক্যানভাসে মুক্তি পায় তুলির আঁচড়ে। কল্পনায় খুঁজে ফেরা সাথী আজ আমায় চিনে নিয়েছে।বিকাশ আর আমি একটা আঁকার স্কুল চালাই। অ্যাকসিডেন্টে ওর একটা পা বাদ গেলেও , বাকি জীবন ওর হাত ধরে এগিয়ে নিতে পারব।
দুজনে পুরী এসেছি। বালিয়াড়িতে বসে দেখি উত্তাল সমুদ্রের বালির বুকে আছড়ে পড়া। চাঁদের আলো আমাদের বাসর সাজিয়েছে ফেনিল সৈকতে।হৃদয়ে কান পেতে শুনি, জোয়ার বইছে।
কুহেলী দাশগুপ্ত | Kuheli Dasgupta
Bengali Story 2023 | স্বপ্নের জোনাকিরা | গল্প ২০২৩
Bengali Story 2023 | ওরাই আমাদের কর্ণধার (শিশুকিশোর) | গল্পগুচ্ছ ২০২৩
Bengali Story 2023 | তিন্নির ফড়িং আর মানুর কারসাজি | গল্পগুচ্ছ ২০২৩
Bengali Story 2023 | ইচ্ছাপূরণ | গল্পগুচ্ছ ২০২৩
Bengali Story 2023 | রূপশঙ্কর আচার্য্য | গল্পগুচ্ছ ২০২৩
Bengali Story 2023 | সন্ধ্যে নামার আগে | গল্প ২০২৩
bengali story | short bengali story analysis | short bengali story characteristics | short bengali story competition | short bengali story definition | Best Bengali Story | Top Bengali Story | World Bengali Story | International Bengali Story | short bengali story english | writing competitions ireland | bengali story writing practice | bengali story writing topics | trending topics for article writing 2022 | bengali story trends 2022 | content writing topics 2022 | Bangla Prabandha | Probondho | Definite Article | Article Writer | Shabdodweep bengali story | Galpoguccha | Galpo | Bangla Galpo | Bengali Story | Bengali Article | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Shabdodweep Founder