New Bengali Story 2023 | গল্পগুচ্ছ | শ্যামাপ্রসাদ সরকার

Sharing Is Caring:

পাষাণী – শ্যামাপ্রসাদ সরকার

সুমনা তার ছোট্ট সংসারের সর্বময়ী কর্ত্রী। কদিন ধরেই একটা ওয়াটার পিউরিফায়ার মেশিন নিজের নতুন ফ্ল্যাটে কোম্পানির লোকই এসে লাগিয়ে যাবার কথা। এই ফ্ল্যাটটাতে দুমাস হল ওরা এসেছে। বেশ সস্তায় পেয়েছে ফ্ল্যাটটা। একদম নতুন নয়, তবে আগের মালিক বড়জোর একবছর ফেলে ছড়িয়ে থেকেছে। মোটামুটি নতুনই বলা চলে। সুপ্রতীম লোনটা আর একটু আগে পেলেই নববর্ষের সময়ই ওরা চলে আসতে পারত। শ্বশুরবাড়ী সেই রাজপুর ছাড়িয়ে। যৌথ-পরিবারে যে প্রাইভেসিটা কখনোই ছিলনা, নিজের ফ্ল্যাটে সেটা উসুল করবে এবার। কয়েকটা বাহারী পাতার টবের খুব ইচ্ছা ছিল, পেলমেট থেকে ঝোলা ভারী বাদামীরঙের পর্দা, পোর্সেলিনের ডিনার সেট আস্তে আস্তে এসবই পূরণ করে একচিলতে নিজের নীড় বানাতে পারবেনা?

সুপ্রতীম অফিস বেরিয়ে গেলে টুকিটাকি সেলাই নিয়ে সুমনা বসে। বাহারী টি – কোজি বা বালিশের ওয়ার এগুলো হাতেই বানাতে ভালবাসে। হাবড়ার বসন্তকুমারী শিল্পনিকেতনের শিক্ষা কাজে লাগে এতদিনে। একটা বাচ্চাকাচ্চা থাকলে এই সময়টি হয়তো অন্যভাবে কাটত। সবে দু বছর বিয়ে হয়েছে, এখন আর আগের মত কেউ হুট করে বাচ্চাকাচ্চা নেয় না।

ডোরবেলটা বাজল হঠাৎ। যাক্ জলের মেশিনের লোকটা এসেছে তাহলে। সুমতি উঠে দরজা খুলে অবাক ! সুপ্রতীম, এই সময়ে হঠাৎ ! শরীর-টরীর ঠিক আছে তো। চটজলদি লেবুর শরবৎ বানিয়ে ওর সামনে আনে ! ততক্ষণে জামাটামা খুলে গেঞ্জী আর হাফপ্যান্টে সুপ্রতীম ওর পিছনে এসে দাঁড়ায়। জাপটে ধরে তীব্রতম আশ্লেষে সুমনাকে । নটমল্লার রাগে বিলম্বিত থেকে দ্রুত লয়ে বেজে ওঠে সেতার। আলাপ থেকে ঝালায় বাজে ঝংকার। অনেকদিনের পর বৃষ্টি এলে যেমন হয়, তেমনই ঝড় বয়ে গেল সুমনার ভিতরে। ক্লায়েন্টের অফিস নাকি ওদের বাড়ীর কাছেই, তারই ফাঁকে নাকি তেনার অসময়ে আগমন ও প্রাণপ্রিয়াকে চমকে দেবার হঠাৎ ইচ্ছা। দুজনে একসাথে বসে দুপুরের খাবার খেয়ে আবার সুপ্রতীম বেড়িয়ে যায় ক্লায়েন্টের কাছে। সুমনা তারপর মুহূর্তটার ভালোলাগা আর তৃপ্তি নিয়ে ভাবতে বসে। অনেকদিন পর ঝড় উঠল আজ। কিন্তু একটা খটকা ! সুপ্রতীমের পিঠের বাঁদিকের ওপর একটা বড় আঁচিল আছে সেটা ওর খুব প্রিয় লাভস্পট, কিন্তু আজকের আদরের সময় পিঠে ঐ আঁচিলটা ও খুঁজে পেল না কেন !

***

নর্মদা নদীতটে শান্ত সমাহিত এক ঋষির আশ্রম। ঋষিপত্নী তখন পরমান্ন রন্ধনে ব্যস্ত। হঠাৎ অসময়ে ঋষির যেন গৃহে আগমন। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি কামনা করলেন ঋষিপত্নীর দেহ-সান্নিধ্য। বহুযুগের জটাধারী জিতেন্দ্রিয় ঋষির কামনার আগুনে পুড়তে পুড়তে তৃপ্তির অভিনয় করলেন ঋষিপত্নী আজ। একটি বিষয়ে তিনি সন্দিহান হলেন, যে দীর্ঘকাল উপবাসের পরেও রতিসঙ্গমে তো ঋষির দ্রুত স্খলন ইতিপূর্বে কখনো ঘটেনি !

***

বিকেলে সুপ্রতীম ফিরল একদম অন্য মানুষ হয়ে। সেই ঝড়ের দাপাদাপির কোনও উচ্যবাচ্যই সে আর করলো না। অন্যদিনের মত মাথা ধরেছে বলে বাম লাগিয়ে গা এলিয়ে টিভি চালালো। সুমনা তখন রান্নাঘরে রুটি সেঁকছে। সারাদিনের পর সুপ্রতীম যেন দুপুরটির কথা ভুলেই গেছে। নিজেকে খুব অপমানিত লাগে সুমনার।

***

সঙ্গমের অতৃপ্তি নিয়ে ঋষিপত্নী আবার রন্ধনশালায় পরমান্ন সহ সামান্য গোধূমচূর্ণের মন্ড প্রস্তুতিতে মনোনিবেশ করেন। ঋষি তখন যজ্ঞের সমিধ আহরণের নিমিত্তে তপোবনের অন্যপ্রান্তে নিষ্ক্রান্ত হলেন। ঋষিপত্নী খাদ্যের আয়োজন করে ঋষির জন্য প্রতীক্ষা করতে থাকেন। দ্বিপ্রহরের উপান্তে ঋষি এসে বিস্মিত হন ! কেন এই খাদ্যের আয়োজন অসময়ে? কোন অতিথি তবে এসেছেন তাঁর কুটিরে? ঋষিপত্নী বিস্মিত হন বেশী ! খানিক পূর্বেই তো তিনি সঙ্গম তৃপ্ত হয়ে সমিধ সংগ্রহের জন্য অরণ্যের গভীরে গেলেন ! এত বিস্মৃতিও কি সম্ভব?

***

যোগবলে ঋষি জানতে পারেন তাঁর বেশধারণ করে দেবরাজ ইন্দ্র এসে ভোগ করে গেছেন তাঁর স্ত্রীকে। আর রতিপ্রিয়া কামুক ঋষিপত্নী উপভোগ করেছে সেই স্বাদু বলাৎকার! ক্রোধে ঋষির ব্রহ্মোতেজ উদ্দীপিত হয়। উভয়কেই অভিসম্পাত করতে যজ্ঞোপবীত স্পর্শ করেন ঋষিবর।

***

সুপ্রতীমকে রাতে কাছে ডাকে সুমনা। তার পিঠে আঁচিলটাকে হাত দিয়ে খোঁজে সে। আঁচিলটা তো আছে এখন ঠিক জায়গায়। সে স্থির জানে, দুপুরের দামালপনার সময় ওটা সে খুঁজে পায়নি তখন! সুপ্রতীম সারাদিনের ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ে।

সুমনা নিদ্রাহীন জেগে থাকে বিছানায়। সে অনুভব করে তার পেলব নরম বিছানাটা আস্তে আস্তে কঠিন প্রস্তরবৎ হয়ে যাচ্ছে। পুরো এই দু-কামরার ফ্ল্যাটটাকে গ্রাস করে নিচ্ছে সেই পাথরের দেওয়াল। ও যেন নিজেই ক্রমে একটা পাথুরে ফসিল হয়ে যাচ্ছে, একা অন্ধকারে।

থির বিজুরী ওই – শ্যামাপ্রসাদ সরকার [New Bengali Story 2023]

রাত এগারটায় দীঘির ফোন পেয়ে চমকে ওঠে শ্রাবণ। কোনও বিপদ হল ! ফোনের যান্ত্রিক স্বরে দীঘির আকূতি ভেসে আসে –
‘প্লিজ একবার এস ! খুব তাড়াতাড়ি ‘।

দীঘি ওর ছোটবেলার বন্ধু তমোনাশের বউ। তমোনাশ আর শ্রাবণ ছিল হরিহর আত্মা যাকে বলে। পড়াশোনা, খেলাধুলা, সিনেমা সব একসাথেই চলত। দুজনের মা’ই জানত তাদের দুটো পাগল ছেলে।

বড় হয়ে শ্রাবণ জার্নালিজম নিয়ে পড়ে ‘সমকাল’ পত্রিকার সাব এডিটার আর তমোনাশ আই টি ইঞ্জিনিয়ার। তমোনাশ বিয়ে করল এই দেড় বছর আগে। দীঘি মেয়েটা বেশ ভাল। ওদের দুজনের নিবিড় বন্ধুত্বের মধ্যে দিব্যি মিশে গেছে। মনেই হয়না যে তমোনাশ আর শ্রাবণের সাথে ওর মাত্র দেড় বছরের সম্পর্ক।

তমোনাশের ফ্ল্যাটে পৌঁছে বুঝল ব্যাপারটা খুবই গুরুতর। তমোনাশ আজ বাড়ী ফেরেনি এখনো। এমনিতে আই টির লোকেদের রাত করে ফেরাটা অস্বাভাবিক নয়,কিন্তু আজকের ঘটনাটা অন্য। ড্রাইভারের হাতে একটা নোট পাঠিয়েছে তমোনাশ। স্পষ্ট বক্তব্য তার। এই জাগতিক মোহ মায়াময় জীবনে সে আগ্রহ হারিয়েছে। জীবনের উদ্দেশ্য তার কাছে স্পষ্ট নয় আজ। সেই সত্যের সন্ধানে চাকরি, সমাজ, দীঘি সবাই কে ছেড়ে ও চলে যাচ্ছে অন্য জীবনের সন্ধানে। টাকাপয়সা, বাড়ি, গাড়ি, ইনসিওরেন্স সব কিছুর মালিকানা দিয়ে গেছে দীঘিকে আলাদা একটা স্ট্যাম্প পেপারে লিখে !

চুপ করে বসে পড়ে শ্রাবণ। দীঘি ততক্ষণে কেঁদে কেঁদে প্রায় অচেতন। তমোনাশের সেলফোন বন্ধ ! গাড়ী নিয়ে ওর অফিসের দিকেই গেল সে। তমোনাশ আজ বেলা বার’টার পড়েই অফিস থেকে বেরিয়ে যায় । তারপর কেউ ফিরে আসতে দেখেনি।

ফেরার সময় থানায় একটা মিসিং ডায়রি করে আসে। সাংবাদিক হওয়ার সুবাদে খোঁজ খবরটা দ্রুত পাওয়ার ব্যবস্থা করতে করতে দুটো দিন কেটে যায়।
এ-দুদিনে রোজই একবার দীঘির কাছ থেকে সন্ধেবেলা ঘুরে যায়। ওর বাপের বাড়ি জামশেদপুর। বাবা মা মেয়েকে কিছুদিনের জন্য নিয়ে যেতে আসলেও ফিরিয়ে দিয়েছে সে । দীঘি এর শেষ দেখতে চায়।

লজ্জার মাথা খেয়ে দীঘিকে প্রশ্নটা করতেই হয় যে ওদের কনজুগ্যাল লাইফে কি কোনও সমস্যা… তাহলে..?

দীঘি ঠোঁট কামড়ে চুপ করে থাকে। তবে একটা আলোর দিশা দেখা যায়। আজকাল প্রতি শনিবার একটা বেদান্ত আশ্রমে যেত তমোনাশ যোগ আর স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের জন্য। দীঘিও কয়েকবার গেছে। শ্রাবণ খোঁজ নেয় সংস্থাটির। জানতে পারে এদের মেইন সেন্টার গৌরীকুন্ডে। ইতিমধ্যে পনের দিন অতিক্রান্ত ! দুদিনের সফরে দীঘিকে সঙ্গে নিয়ে রওনা দেয় সেখানেই। মন বলছে একটা খবর পেলেও পাওয়া যেতে পারে।

আশ্রমটা ছিম্ ছাম।অলকানন্দার ধার ঘেঁষেই । বৃদ্ধ মোহান্ত বললেন এখানে পূর্বাশ্রমের পরিচয় প্রকাশ করার নিয়ম নেই। একটু পর প্রসাদের ঘন্টা বাজবে তখন সবাই বাইরে আসবে। যদি তমোনাশ কে চিনতে পারেন বা সে যদি সত্যিই কথা বলতে আগ্রহী থাকে তবে পাঁচ মিনিট কথা বলা যাবে। অধীর আগ্রহে দীঘি চেয়ে থাকে করিডোরের দিকে। ঘন্টা বাজতে সাদা আলখাল্লা পড়া সাধুরা আসতে থাকে হাতে পাত্র নিয়ে।

এরমধ্যে তমোনাশও আছে। দীঘি ছুটে যায়, শ্রাবণ বাইরে অপেক্ষা করে। একটু রোগা হয়ে গেছে সে। দাড়ি রাখায় মুখটা যেন একটু করুণ। শান্ত স্বরে সে দীঘিকে ফিরে যেতে বলে। এখানে সে ভাল আছে। তমোনাশের এখানে পরিচয় আনন্দ মহারাজ নামে। পাঁচ মিনিটের মধ্যে স্খলিত চরণে দীঘি ফিরে আসে। গেটের কাছে এসে মাথা ঘুরে যায় যেন। শ্রাবণ দীঘির হাতটা ধরে হোটেলে ফিরে আসে। সারাটা পথ দীঘি চুপ করে থাকে। কোলকাতায় ফিরেও ওই প্রত্যাখ্যানের বিষাদের ছায়ায় নিষ্প্রভ হয়ে যায় সে ক্রমশঃ। প্রতিদিনের তার এই নিভে আসা হাজার আলোকবর্ষ দূরে নিভে আসা তারার মতোই। যার শেষ আলোটুকু এসে পৌঁছনোর আগেই একদিন সে নিভে যায় মহাজাগতিক নিয়মেই।

শ্রাবণ আজকাল নিয়মিত দীঘির কাছে যায়। মেয়েটার নির্বাক নিষ্প্রভ সত্ত্বা ওকে পীড়িত করে। যন্ত্রের মত কফি করে আনে দীঘি,আর তা দ্রুত খেয়েই উঠে পড়ে সে।মৌনতার অন্ধকারে আলো জ্বলবার প্রচেষ্টা প্রতিদিন ব্যর্থ করে সে ফিরে আসে।

টিভিতে খবরটা দেখে চমকে ওঠে শ্রাবণ। ভয়ংকর ক্লাউড বার্স্ট আর সাথে বন্যায় বিধ্বস্ত উত্তরাঞ্চল সহ বিস্তীর্ণ এলাকা।

কেদার, চারধাম, গৌরীকুন্ডের অবস্থা ভয়াবহ। দীঘির কাছে তৎক্ষণাৎ যাওয়া স্থির করে সে। পৌঁছে দেখে সেও টিভির সামনে পাথরের মত বসে আছে। শ্রাবণ বলে অবস্থা খুব খারাপ ওখানে! আমি দিল্লী টিমের সাথে যোগাযোগ করছি। খবর নিচ্ছি, তুমি প্লিজ একটু খাওয়াদাওয়া কর ! প্লিজ স্পিক আউট! ট্রমাটা কাটাও !

প্রকৃতি শান্ত হয় একদিন। ৫৭০০ মানুষের জীবনের বিনিময়ে স্বাভাবিক হয় প্রকৃতি। কাগজেও বেরিয়েছে বেদান্ত আশ্রমের কথাটাও। পুরো আশ্রমটাই ভেসে গেছে। একজনকেও খুঁজে পাওয়া যায়নি জীবিত বা মৃত।

দীঘিও সে খবরে আর বিচলিত হয় না । গত দু’মাসের এই জগদ্দল পাথরটা আসতে আসতে সরে গেছে। শ্রাবণই বরং আজকাল সহজ হতে পারে না দীঘির দিকে তাকালে। বুকের ভিতর রক্ত চঞ্চল হয়ে ওঠে। দীঘির ব্যবহার কিন্তু স্বাভাবিক।

তমোনাশের প্রসঙ্গ আজকাল উঠলে দীঘি রিয়্যাক্ট করে আগের মতোই।

শরৎকালের সাদা কাশফুলের মত দীঘি ফুরফুর করে ওড়ে শ্রাবণের মনে।এইসব ঘটনার আজ প্রায় তিনমাস হতে চলল। আজকে এরমধ্যে ব্যালকনিতে শ্রাবণ দেখছে টুপটাপ কোজাগরীর জ্যোৎস্না ঝরে পড়েছে।

শ্রাবণের খুব ইচ্ছে করে দীঘিকে ফোন করে বলতে তার গোপনতম ইচ্ছাটির কথা। সারাটা জীবন ওকে বুকে আগলে বাঁচবার কথা !
কিন্তু প্রত্যেকটা দিনরাত ও অপেক্ষা করে দীঘির কাছ থেকে একটা ফোনের !

সেই একটা যান্ত্রিক আওয়াজের অপেক্ষায় সে সারাটা জীবন বসে থাকতে আজ রাজি।

New Bengali Story 2023

প্রসাদী – শ‍্যামাপ্রসাদ সরকার [New Bengali Story 2023]

প্রসাদের মন আজ বড় প্রসন্ন। ডিহি কলকেতা থেকে এখনকার অন্যতম ধনকুবের ও তার প্রাক্তন মনিব মিত্তিরমশায় গত আশ্বিনে পত্রবাহক মারফৎ তার নামে নগদ দশ’টি তঙ্কা প্রণামী আর পত্নী সর্বাণীর জন‍্য একটি তাঁত বস্ত্রের নির্মিত শাটিকা পাঠিয়েছিলেন।

এই ভবের সংসারে নিত‍্য অনটন ও তার না-মঞ্জুরীর এই খেলাটি যদিও প্রসাদ নিজে বড় আহ্লাদের সাথে খেলতে পারে বলে কখনো কখনো বিপ্রতীপে তার স্বপত্নীর বাক‍্যবাণও ধেয়ে আসে আপাত নিশ্চেষ্টতার দোষে।

যদিও কবিজায়া নিজেও স্বামীটির এই অভয়পদাশ্রয়ী অন্তরটির খবর ভালো করেই রেখে থাকেন তবু কখনো কখনো নিজের বিচার বুদ্ধিসকল এসবই অভাবজর্জর গৃহসামগ্রীর ঢক্কানিনাদের প্রলাপে বেজে ওঠে নিরুপায় হয়েই।

তবে আগামী কয়েকমাস এই বদান‍্যতার অর্থে যেমন হবে সন্ততি-ত্রয়ের প্রতিপালন, খোড়ো দাওয়াটির আচ্ছাদন আবার তেমনই হবে কারণানন্দের উপাচার সহ আরাধ‍্যা ব্রহ্মময়ী দেবী কালিকার সামান‍্যতম পূজাযাপন। প্রতীক্ষিত কার্তিকী অমাবস‍্যার মহানিশা সে সমাসন্ন!

রামপ্রসাদ আসলে প্রকৃত একজন কবি মানসের সাধক। তার হৃদিপদ্মে যতটা আলো জ্বালিয়ে স্বয়ং দেবীরূপা উপস্থিত থাকেন তার বেশীটাই অনায়াসে ঝরে পড়ে আত্মস্থ শাক্তপদাবলীর পদাক্ষরে।

কৃষ্ণনগরাধীশ কৃষ্ণচন্দ্র স্বয়ং নিজে বৈষ্ণবভাবাপন্ন হলেও এই আপাত উন্মাদ ও অসংসারী কবিটিকে পরম সমাদর করে ” কবি রাজ ” উপাধি দিয়ে সামান‍্য কিছু খাসজমির বন্দোবস্ত করে কুমারহট্টে তার আপাত স্থিতিটি নিশ্চিন্ত করে দিয়ে নিজেও বেশ তৃপ্ত। নদে জেলায় জগন্মাতা শ্রী রাজরাজেশ্বরীর মন্দির প্রাঙ্গণে প্রায়শই ভক্তিগীতবাদ‍্যের বৈতরণী প্রবাহিত হয় বলে তিনি তাঁর প্রিয়বরেষু এই “কবি রাজ”-টিকেও সেখানে সযত্নে হাজির করেন তার আদ‍্যাক্ষরী পদসমূহ সাথে করে। তবে বহু অনুনয়েও এই বৈদ‍্যবংশীয় সাধক কবিটি রাজার অতিথিশালায় এসে ওঠে না। সে রহস‍্যময় তীর্যক দৃষ্টি মেলে বলে,
“আমার এই মায়ের পদতলে থাকার আনন্দটা হর্ম‍্যদালানে আজ পর্যন্ত কেই বা কখনো দিতে পেরেছে বা পেতে পারে !”

এই বলে সে তার সদ‍্য সমাপ্ত পদসুষমা বিনিন্দ ঠাট্ এর কলি গুনগুনিয়ে গেয়ে ওঠে,
“প্রসাদ আমি আমি, দীনভিখারী / সদা তারে হৃদে স্মরি/অবলীলায় মরতে পারি তবু দুর্গা বিনে রহিতে নারি…”

পঞ্জিকা মতে অমাবস‍্যার তিথিটি এই বছর সামান‍্য বিলম্বে উন্মীলন হয়েছে।
তাই বেশ রাতেই দেবীঘটে সিন্দুরের উপাচারের পর কবিরাজ বসেন ধ‍্যানাসনে। সর্বাণী রেকাবিতে সামান‍্য শীতল ভোগ আর কিছু ফল এনে প্রসাদের সামনে নামিয়ে রেখে যান স্থিরা প্রজ্ঞায়।

প্রসন্ন বদনে প্রসাদ একবার তাকান নিজের পত্নীটির অপাঙ্গে পরক্ষণেই আবার দেখেন দেবীমূর্তিটির স্মিতাননা রহস‍্য উদ্ভাসনে। আজ যেন ভিন্ন ভিন্ন রূপে এই মর্ত‍্য সংসারেই মাতা ও প্রিয়ার এই দুই পরিচয়ে এসে যেন একেশ্বরী স্বয়ং সর্বঘটে বিরাজ করছেন।

মধ‍্যরাত অতিক্রমণে এখন সামনের গঙ্গাতীর থেকে ভেসে আসছে হৈমন্তিক শৈত‍্য প্রবাহ। বহুদূরের এই মিশকালো অমাবস‍্যার নিশাটি যেন আজ কালীমাতার দেহকুসুমের মতই মসৃণ ও অন্ধকার বর্ণা।

জ্বলন্ত প্রদীপটি হাতে নিয়ে পিলসুজের উপর অতি সন্তর্পণে নামিয়ে দেন ভক্ত কবি রাজ রামপ্রসাদ। তারপর অতি সুমধুর কন্ঠে দেবভাষায় উচ্চারণ করে অন্তর্ম্মাতৃকান্যাসের মন্ত্র। যদিও প্রসাদ অব্রাহ্মণ, তাও দীক্ষা গ্রহণের পরে সে জেনেছে যে দেবী পূজার প্রারম্ভে স্বীয় কন্ঠস্থলে যে ষোড়শদল পদ্ম আছে, তারই ষোড়শ পত্রে অক্ষরাদির ন্যাস করতে হয়।

তাই সে ভক্তিনম্র কন্ঠে বলে ওঠে –
” ওঁ অং নমঃ, আং নমঃ, ইং নমঃ, উং নমঃ, ঋং নমঃ, ৠং নমঃ, ঌ নমঃ, ষ্টং নমঃ, এং নমঃ, ঐং নমঃ, ওং নমঃ, ঔং নমঃ,অং নমঃ, অঃ নমঃ!”

কিন্তু মন্ত্রোচ্চারণ এখানেই এসে থেমে যায়। এরপর হঠাৎই যেন ঘোর লেগে যায় প্রসাদের মনে। তার কণ্ঠনালী শুষ্ক হয়ে হারিয়ে যায় সংস্কৃতের জ্ঞাতব্য সব দুর্বোধ্য মন্ত্রসকল। সে নির্বাক ও বিহ্বল চোখে কেবল দেখতে থাকে আরাধ‍্যা দেবী মহাকালিকার স্মিতা আননটি।

কিছুক্ষণ এইভাবে সুতীব্র ভাবাবেশে থাকার পরে সার্ন্দ্রস্বরে সে অসমাপ্ত কাব‍্যগীতের পরবর্তী পাদপূরণের পঙক্তিগুলি গেয়ে ওঠে অবলীলায়,

” ….সতী হয়ে পতির বুকে,
কে পা দিয়েছে,
কোন সে লোকে।।।
না হয় দাস বলে দাও অভয়পদ
রামপ্রসাদের হৃদকমলে
দাস,দাস বলে দাও অভয়পদ
রামপ্রসাদের হৃদকমলে;”

গাইতে গাইতে এতক্ষণে তার গলায় যেন ঘোর নেমে আসে। দুটি চোখ বুজে ভাব-তন্ময় গলায় যেন সে আবেগ মন্থন করে। অতঃপর আরো কয়েকটি পদামৃতের ধারা এর ফলে বিগলিত হয়ে আসে,

” শিব নয় মা’র পদতলে
লোকে মিথ্যে কথা বলে।
(এর)মূল কথা মার্কন্ড মুনী।।
চন্ডীতে লিখেছে খুলে।।
শিব নয় মা’র পদতলে
লোকে মিথ্যে কথা বলে।
শিব নয় মা’র পদতলে।”

— এইভাবেই যেন তার একান্ত দেবী পূজার প্রকৃত উপাচারটি এক অন্তহীন প্রবজ‍্যাপথে থেকে যায় মধ‍্যরাতের অতিক্রমণে।

ইতিহাস সাক্ষী থাকবে যে, আগামীদিনে অনন‍্য সাধারণ এই শাক্ত কবি গীতিকারের সৃজনশীল আনন্দ ধ্বনির আবেশ পথ দিয়েই সকল সুর মূর্চ্ছনা একদিন এই ভাগীরথীরই পশ্চিমতীরস্থ অন‍্য এক নব-রত্নখচিত বিশাল রাজকীয় দেবীমন্দিরে আনবে নামা-মৃতের প্লাবন। আর সেদিনও যেন এই প্রসাদেরই মতো অন‍্য আরেক ভবরোগ-বৈদ‍্যের কন্ঠে সর্বদাই ওই একাক্ষরী মাতৃনাম ভেসে আসবে অহরহ। সেই কালাকালের পর্যায়ে তার থেকেই একদা আনীত হবে কালান্তরের ঐশী সাধনার মহাসংগীত ধ্বনি।

অবারিত – শ্যামাপ্রসাদ সরকার [New Bengali Story 2023]

১৮৮২, ৫ই আগস্ট একটি মনোরম সন্ধ‍্যাকাল। ইতিহাস বদলাচ্ছে একটু একটু করে। গঙ্গার পাশে ইংরেজের কেল্লার পাশাপাশি বাগবাজারে বলরাম বসুর বাড়িতেও একটি কেল্লা তৈরী হচ্ছে। আর সেখানকার সৈন্যসামন্তরাও প্রস্তুত হচ্ছেন আগামীদিনের ভারতবর্ষের জন্য। এদের মধ‍্যে লালচক্ষু রোহিত মৎস্যের মত একটি যুবক সবার মাথা ছাড়িয়ে উঠছেন। কেল্লার রাজা শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁকে আদর করে ” লরেন” বলে ডাকেন। ছেলেটি সিমলে পাড়ার ছেলে। বিদ্যাসাগর মশাইয়ের মেট্রোপলিটন ইস্কুলে সদ্য একটি মাস্টারির কাজ পেয়েছে সে।

আজ সন্ধ‍্যায় সেই ঐশী প্রেমের রাজাটি তাঁর রথে চেপে যাচ্ছেন বাদুড় বাগানে এক জ্ঞানের রাজার সাথে দেখা করতে। ভক্তিযোগ আজ কেমন করে জ্ঞানযোগে মেশে সেটা দেখতেই সবাই ভীষণ উদগ্রীব।

কেরাঞ্চি-গাড়িটি বিকেল বিকেল দক্ষিণেশ্বরের কালীবাড়ি থেকে বের হল। ঘন্টাখানেক পরে শ্যামবাজার পার করে ক্রমে আমহার্স্ট স্ট্রীটে এসে পড়ল। আজ বিদ্যাসাগর দর্শনে শ্রীরামকৃষ্ণের সাথে একই গাড়িতে আছেন ভবনাথ, হাজরা মশাই আর মাস্টার মহেন্দ্রনাথ। ভক্তেরা বলছেন এইবার বাদুড়-বাগানের কাছে এসে গেছি। ঠাকুর বালকের আনন্দে হাসিমুখে সারাটা রাস্তা গল্প করতে করতে এসেছেন। আমহার্স্ট স্ট্রীটে এসে হঠাৎ তাঁহর ভাবান্তর হল, যেন একটু আত্মমগ্ন হবার উপক্রম।গাড়ি তখন রামমোহন রায়ের বাগানবাড়ির কাছ দিয়ে যাচ্ছে। এমন সময় মাস্টার ঠাকুরকে দেখালেন – ” এইটি রামমোহন রায়ের বাটী।” ঠাকুর বিরক্ত হলেন; বললেন, “এখন ও-সব কথা ভাল লাগছে না।” আসলে ঠাকুর ততোক্ষণে ভাবাবিষ্ট হয়ে পড়েছেন।

বিদ্যাসাগরের বাড়িটির সামনে অবশেষে গাড়ি এসে দাঁড়াল। বাড়িটি দোতলা ও ইংরেজি ছাঁদে তৈরী। জমির মাঝখানে মূল গৃহটি ও তার চতুর্দিকে প্রাচীর। আর বাড়ির পশ্চিম ধারে সদর দরজা ও ফটক। ফটকটি আবার দক্ষিণদিকে। পশ্চিমের প্রাচীর ও দোতলা বাড়ির মাঝে বেশ কিছুটা কেয়ারি করা বাগান।এই পশ্চিমদিকের নিচের ঘর থেকেই সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে হয়। উপরে বিদ্যাসাগর থাকেন। সিঁড়ি দিয়া উঠেই উত্তরে একটি ঘর, তার পূর্বদিকে হলঘর। এই হলের দক্ষিণ-পূর্ব ঘরে বিদ্যাসাগরের শয়নকক্ষ।আবার এর ঠিক দক্ষিণে আর একটি ঘর বহুমূল্য পুস্তকে পরিপূর্ণ একটি লাইব্রেরী বিশেষ। দেওয়ালের কাছে সারি সারি অনেকগুলি তাক জুড়ে অতি সুচারুভাবে বাঁধানো বইগুলি সাজানো। হলঘরের পূর্বসীমান্তে টেবিল ও চেয়ার আছে। বিদ্যাসাগর যখন বসে কাজ করেন, তখন সেইখানে তিনি পশ্চিমাস্য হইয়া বসেন। যাঁরা দর্শনপ্রার্থী, তাঁরাও টেবিলের চতুর্দিকের চেয়ারেই বসেন। টেবিলের উপর লেখাপড়ার সামগ্রী – কাগজ, কলম। দোয়াত, ব্লটিং, অনেকগুলি চিঠিপত্র, বাঁধানো হিসাব -পত্রের খাতা, দু-চারটি বিদ্যাসাগরের পাঠ্যপুস্তক সাজানো। ওই চেয়ার-টেবিলের ঠিক দক্ষিণের ঘরে সাদামাটা একটি খাট-বিছানা আছে – সেইখানেই উনি রাত্রিবাস করেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ গাড়ি থেকে নামলেন। মাস্টার পথ দেখিয়ে তাঁদেরকে বাড়ির ভিতর নিয়ে যাচ্ছেন। উঠোনে ফুলগাছ, তার ভিতর দিয়ে আসতে আসতে ঠাকুর দিব‍্যভাবের বালকের মতন বোতামে হাত দিয়ে মাস্টারকে জিজ্ঞাসা করলেন, “ হ্যাঁ গা, জামার বোতাম খোলা রয়েছে, — এতে কিছু দোষ হবে না?” গায়ে একটি লংক্লথের জামা, পরনে লালপেরে কাপড়, তার আঁচলটি কাঁধে ফেলা। পায়ে বার্নিশ করা চটি জুতো। মাস্টার বললেন, “আপনি ওর জন্য ভাববেন না, আপনার কিছুতে দোষ হবে না; আপনার বোতাম দেবার দরকার নাই।” বালককে বোঝালে যেমন নিশ্চিন্ত হয়ে পথ চলে, ঠাকুরও তেমন নিশ্চিন্ত হয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে লাগলেন।
— ” কই গো বিদ্যেসাগর কই? আমি এয়েচি গো”

কি অকপট আহ্বান তাঁর কন্ঠে।

বিদ্যাসাগর তালতলার চটি ফটফটিয়ে নমস্কার করতে করতে বেরিয়ে এলেন। তাঁর মুখটি আপাত গম্ভীর হলেও এক অপার্থিব মায়া লেগে আছে। তিনি বললেন – ” আসুন! আসুন আসতে আজ্ঞা হোক!”

শ্রীরামকৃষ্ণ – “আজ সাগরে এসে মিললাম। এতদিন খাল বিল হদ্দ নদী দেখেছি, এইবার সাগর দেখছি।” (সকলে উচ্চরোলে হেসে উঠলেন)

বিদ্যাসাগর (সহাস্যে) – ” তবে নোনা জল খানিকটা নিয়ে যান! “

শ্রীরামকৃষ্ণ – ” না গো! নোনা জল কেন? তুমি তো অবিদ্যার সাগর নও, তুমি যে বিদ্যার সাগর! তুমি বাপু ক্ষীর-সমুদ্দুর!

বিদ্যাসাগর – ” তা বলতে পারেন বটে।”

একটু লঘু হাস্যরসের পর বিদ্যাসাগর চুপ করে রইলেন। ঠাকুর ওঁকে উদ্দেশ্য করে বললেন –

“তোমার কর্ম সাত্ত্বিক কর্ম। সত্ত্বের রজঃ। সত্ত্বগুণ থেকে দয়া হয়। দয়ার জন্য যে কর্ম করা যায়, সে রাজসিক কর্ম বটে – কিন্তু এ রজোগুণ – সত্ত্বের রজোগুণ, এতে দোষ নাই। শুকদেবাদি লোকশিক্ষার জন্য দয়া রেখেছিলেন – ঈশ্বর-বিষয় শিক্ষা দিবার জন্য। তুমি বিদ্যাদান অন্নদান করছ, এও ভাল। নিষ্কাম করতে পারলেই এতে ভগবান-লাভ হয়। কেউ করে নামের জন্য, পুণ্যের জন্য, তাদের কর্ম নিষ্কাম নয়। আর সিদ্ধ তো তুমি আছই।”

বিদ্যাসাগর – ” কিন্তু মহাশয়, সে কেমন করে?”

শ্রীরামকৃষ্ণ – “আলু পটল সিদ্ধ হলে তো নরম হয়, তা তুমি তো খুব নরম। তোমার অত দয়া! –

বিদ্যাসাগরকেও আজ কথায় পেয়েছে। তিনি বললেন – ” কিন্তু কলাই বাটা যে সিদ্ধ হলেতো শক্তই হয়! “

শ্রীরামকৃষ্ণ – “তুমি তা নও গো; শুধু পণ্ডিতগুলো দরকচা পড়া! না এদিক, না ওদিক। শকুনি খুব উঁচুতে উঠে, তার নজর ভাগাড়ে। যারা শুধু পণ্ডিত শুনতেই পণ্ডিত, কিন্তু তাদের কামিনী-কাঞ্চনে আসক্তি — শকুনির মতো পচা মড়া খুঁজছে। আসক্তি অবিদ্যার সংসারে। দয়া, ভক্তি, বৈরাগ্য বিদ্যার ঐশ্বর্য।”

বিদ্যাসাগর চুপ করে শুনছেন। সকলেই তাঁর সাথে একদৃষ্টে এই আনন্দময় পুরুষকে দর্শন ও তাঁহার কথামৃত পান করছেন।

বিদ্যাসাগর নিজেও মহাপণ্ডিত। যখন সংস্কৃত কলেজে পড়তেন, তখন নিজের শ্রেণীর সর্বোৎকৃষ্ট ছাত্র ছিলেন। প্রতি পরীক্ষায় প্রথম হতেন ও স্বর্ণপদক (Medal) বা ছাত্রবৃত্তি পেয়ে এসেছেন। ক্রমে সংস্কৃত কলেজের প্রধান অধ্যাপক হন। তিনি সংস্কৃত ব্যাকরণ ও সংস্কৃত কাব্যে বিশেষ পারদর্শিতা লাভ করেন। নিজের অধ্যবসায় গুণে নিজেই চেষ্টা করে ইংরেজি শিখে শেক্সপীয়র বা মিল্টন পড়তেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ -” দেখ! এই জগতে বিদ্যামায়া অবিদ্যামায়া দুই-ই আছে; জ্ঞান-ভক্তি আছে আবার কামিনী-কাঞ্চনও আছে, সৎ-ও আছে, অসৎও আছে। ভালও আছে আবার মন্দও আছে। কিন্তু ব্রহ্ম নির্লিপ্ত। ভাল-মন্দ জীবের পক্ষে, সৎ-অসৎ জীবের পক্ষে, তাঁর ওতে কিছু হয় না।যেমন প্রদীপের সম্মুখে কেউ বা ভাগবত পড়ছে, আর কেউ বা জাল করছে। প্রদীপ নির্লিপ্ত। আবার সূর্য শিষ্টের উপর আলো দিচ্ছে, আবার দুষ্টের উপরও দিচ্ছে। যদি বল দুঃখ, পাপ, অশান্তি – এ-সকল তবে কি? তার উত্তর এই যে, ও-সব জীবের পক্ষে। ব্রহ্ম নির্লিপ্ত। সাপের ভিতর বিষ আছে, অন্যকে কামড়ালে মরে যায়। সাপের কিন্তু কিছু হয় না।

বিদ্যাসাগর – “তবে ব্রহ্মের স্বরূপটি কেমন?”

শ্রীরামকৃষ্ণ – “ব্রহ্ম যে কি, মুখে বলা জায় না। সব জিনিস উচ্ছিষ্ট হয়ে গেছে। বেদ, পুরাণ, তন্ত্র, ষড় দর্শন – সব এঁটো হয়ে গেছে! মুখে পড়া হয়েছে, মুখে উচ্চারণ হয়েছে — তাই এঁটো হয়েছে। কিন্তু একটি জিনিস কেবল উচ্ছিষ্ট হয় নাই, সে জিনিসটি ব্রহ্ম। ব্রহ্ম যে কি, আজ পর্যন্ত কেহ মুখে বলতে পারে নাই।”

বিদ্যাসাগর – “বাহ্ ! এটি তো বেশ কথা! আজ একটি নূতন কথা শিখলাম।”

শ্রীরামকৃষ্ণ – ” দেখ না, এই জগৎ কি চমৎকার। কতরকম জিনিস – চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র। কতরকম জীব। বড়, ছোট, ভাল, মন্দ, কারু বেশি শক্তি, কারু কম শক্তি।”

বিদ্যাসাগর – ” তিনি কি কারুকে বেশি শক্তি, কারুকে কম শক্তি দিয়েছেন?”

শ্রীরামকৃষ্ণ – ” তিনি বিভুরূপে সর্বভূতে আছেন। পিঁপড়েতে পর্যন্ত। কিন্তু শক্তিবিশেষ। তা না হলে একজন লোকে দশজনকে হারিয়ে দেয়, আবার কেউ একজনের কাছ থেকে পালায়, আর তা না হলে তোমাকেই বা সবাই মানে কেন? তোমার কি শিং বেরিয়েছে দুটো? (হাস্য) তোমার দয়া, তোমার বিদ্যা আছে – অন্যের চেয়ে, তাই তোমাকে লোকে মানে, দেখতে আসে। তুমি এ-কথা মানো কি না?শুধু পাণ্ডিত্যে কিছু নাই। তাঁকে পাবার উপায়, তাঁকে জানবার জন্যই বই পড়া। একটি সাধুর পুঁথিতে কি আছে, একজন জিজ্ঞাসা করলে, সাধু খুলে দেখালে। পাতায় পাতায় “ওঁ রামঃ” লেখা রয়েছে, আর কিছুই লেখা নাই!”

বিদ্যাসাগর মৃদু মৃদু হাসছেন শ্রীরামকৃষ্ণের কথায়। আজ তাঁর বৈঠকখানাটি বৈকুন্ঠতূল‍্য হয়ে গেছে। ব‍্যক্তিগতভাবে নিজে সংশয়বাদী হলেও আজ শ্রীরামকৃষ্ণের কথাগুলি তাঁর কানে মধুবর্ষণ করছে।

হঠাৎ একটু থেমে শ্রীরামকৃষ্ণ বলে উঠলেন – ” আচ্ছা তোমার মনের ভাবটি কি গো?”

বিদ্যাসাগর (একটু ইতঃস্ততঃ হয়ে) – “সে না হয় একদিন আমি নিজে গিয়ে আপনাকে শুনিয়ে আসব!”

শ্রীরামকৃষ্ণ – “তা বেশ! দক্ষিণেশ্বরেই একবারটি এসো না হয়! “

বর্ধমান থেকে কিছু মিষ্টান্ন আনিয়েছিলেন গৃহকর্তা ঈশ্বরচন্দ্র। একটি রেকাবি করে তাই সাজিয়ে দিলেন অতিথিকে। শ্রীরামকৃষ্ণ তার থেকে একটি সন্দেশ তুলে নিলেন।

এই শ্রাবণ সন্ধ‍্যাটি আজ অতীত। মহাকালের অনন্ত পথে এক আনন্দময় পুরুষের সাথে এক জ্ঞানময় পুরুষের ঐতিহাসিক সাক্ষাৎকারটি অক্ষয় হয়ে থাকবে।

নাহ্, বিদ্যাসাগরের আর দক্ষিণেশ্বরে গিয়ে নিজের মনের ভাবটি তাঁকে জানিয়ে আসা হয়ে ওঠেনি। দ্বিতীয়বার আর তাঁদের দুজনের দেখাও হয়নি কখনো। তবুও ভাবতে ভাল লাগে এই দুই যুগ পুরুষ আমাদের ধূলিমাখা মাটির পৃথিবীতে, কল্লোলিনীর বুকে একটি মায়াবী সন্ধ‍্যাকাল উত্তরকালকে উপহার দিয়ে গেছেন।

তথ‍্য ঋণ

শ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত – শ্রীম কথিত

পরমপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণ – অচিন্ত‍্যকুমার সেনগুপ্ত

করুণাসাগর বিদ্যাসাগর – ইন্দ্রমিত্র

শ্যামাপ্রসাদ সরকার | Shyamaprasad Sarkar

Traditional Seth Family Durga Puja | চন্দননগরের ঐতিহ্যবাহী হরিহর শেঠ পরিবারের দুর্গাপূজা

Teachers day in honor of teachers | শিক্ষকদের সম্মানে শিক্ষক দিবস

History of Bengali Poetry | কবিতা কি ও কেন এবং তার ইতিহাস

New Bengali Story | কুহেলী দাশগুপ্ত | Kuheli Dasgupta

অবারিত | অবারিত বিপরীত শব্দ | আল অবারিত স্থান অর্থ | মস্যাধার অর্থ | প্রথম অর্থ | শিব সমার্থক শব্দ | গগন ললাট অর্থ | শিব অর্থ | তল্পিবাহক অর্থ | অবারিত দ্বার | অবারিত মানে কি ইংরেজি | অবারিত বাংলার অবহেলিত মানুষ | খেয়া – অবারিত | অবারিত – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | নরসিংদীতে ব্যবসার অবারিত সুযোগ | এই অবারিত মায়া ভরা পৃথিবী | চীনে অবারিত সুযোগ | মুক্ত বাজারের বারিত বিপর্যয় | অবারিত ব্যক্তি | অবারিত দুর্নীতির কারণ | স্বপ্নের অবারিত দুয়ার উন্মোচন | অবারিত মাঠ | অবারিত সওগাত | অবারিত শুভেচ্ছা | শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত | শ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত | শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ কথামৃত | রামকৃষ্ণ কথামৃত | রামকৃষ্ণ কথামৃত বাণী | রামকৃষ্ণ কথামৃত কার লেখা | কথামৃত অর্থ | কথামৃত কথা | রামকৃষ্ণ দেবের মৃত্যুর কারণ | শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ দেবের জীবনী | রামকৃষ্ণের গল্প | পরমপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণ | শ্রীরামকৃষ্ণকথামৃতের ইতিবৃত্ত | রামকৃষ্ণ পরমহংস | পরমপুরুষ শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ | সহিষ্ণুতার পরমপুরুষ | শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ দেবের জীবনী | রামকৃষ্ণ ও ইসলাম | রামকৃষ্ণ দেবের জন্মতিথি | রামকৃষ্ণ কথামৃত কার লেখা | রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতীকের অর্থ | গৃহী নামে রামকৃষ্ণের প্রিয় শিষ্য | সকলের রামকৃষ্ণ | ১৬৩ পরমপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণ | শ্রীরামকৃষ্ণের সন্ন্যাসী সন্তানেরা | করুণাসাগর বিদ্যাসাগর | ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর | ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জীবনী | বিদ্যাসাগর ষাট কী | বিদ্যাসাগরের অজানা তথ্য | বিদ্যাসাগরের ছাত্র জীবন | বিদ্যাসাগরের মৃত্যু দিন | ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনী | বিদ্যাসাগরের ছেলেবেলা | বিদ্যাসাগর চরিত কার লেখা | বিদ্যাসাগর উপাধি কে কে পেয়েছিলেন | বিদ্যাসাগরের অন্তরালে ঈশ্বরচন্দ্র | পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর | বিদ্যাসাগর ও ঠাকুর রামকৃষ্ণ | ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর স্কলারশিপ | শব্দদ্বীপের লেখক | শব্দদ্বীপ | সেরা বাংলা গল্প | গল্প ও গল্পকার | সেরা সাহিত্যিক | সেরা গল্পকার | বাংলা বিশ্ব গল্প | বাংলা গল্প | বাংলা ম্যাগাজিন | ম্যাগাজিন পত্রিকা | শব্দদ্বীপ ম্যাগাজিন | থির বিজুরী ওই | থির বিজুরী ঐ নয়ানে বয়ানে | নওল কিশোরী গো | থির বিজুরি | বারবধূ সুবোধ ঘোষ | পরশুরামের কুঠার গল্প | সুবোধ ঘোষ | মহানগর গল্পের প্রকাশকাল কত | বহুরূপী গল্পের উৎস | সম্রাট ও শ্রেষ্ঠী | বহুরূপী গল্পের নামকরণের সার্থকতা | থির বিজুরী ওই

new bengali story 2023 | new bengali story 2023 books for child pdf | new bengali story 2023 books for adults | new bengali story 2023 books | bengali story books for child | new bengali story 2023 books pdf | new bengali story 2023 for kids | new bengali story 2023 reading | short story | short story analysis | short story characteristics | short story competition | short bengali story definition | short story english | short story for kids | short new bengali story 2023 generator | bengali story 2023 | short story ideas | short new bengali story 2023 length | long story short | long story short meaning | long new bengali story 2023 | long story | long story instagram | story writing competition | story writing competition topics | story writing competition for students | story writing competition malayalam | story writing competition india | story competition | poetry competition | poetry competitions australia 2022 | poetry competitions uk | poetry competitions for students | poetry competitions ireland | poetry competition crossword | writing competition | writing competition malaysia | writing competition london | bengali story writing | bengali story dictation | writing competitions nz | writing competitions ireland | writing competitions in africa 2022 | writing competitions for high school students | writing competitions for teens | writing competitions australia 2022 | writing competitions 2022 | writing competitions uk | bengali article writing | bangla news article | bengali story news| article writing on global warming | article writing pdf | article writing practice | article writing topics | trending topics for article writing 2022 | what is article writing | content writing trends 2022 | content writing topics 2022 | Bangla Prabandha | Probondho | Definite Article | Article Writer | Short Article | Long Article | Bangla kobita | Kabitaguccha 2022 | Galpoguccha | Galpo | Bangla Galpo | Bengali Story | Bengali Article | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Shabdodweep Founder | Shabdodweep Bengali Writer | Shabdodweep Bengali Story | Updated Bengali Story 2023 | New Bengali Story 2023 book | New Bengali Story 2023 video series | New Bengali Story 2023 web series | Top New Bengali Story 2023 | New Bengali Story 2023 collection | Full story pdf – New Bengali Story 2023 | pdf collection – New Bengali Story 2023 | bool collection – New Bengali Story 2023 | video collection – New Bengali Story 2023 | new collection – New Bengali Story 2023 | video series – New Bengali Story 2023 | top New Bengali Story 2023 | best New Bengali Story 2023 | Indian collection – New Bengali Story 2023 | Bestseller – New Bengali Story 2023 | Read story -New Bengali Story 2023 | Shabdodweep pdf – New Bengali Story 2023

Leave a Comment