New Bengali Poetry 2023 | সুমিতা চৌধুরী | কবিতাগুচ্ছ

BENGALI POETRY

সিঁধেল চোর – সুমিতা চৌধুরী

কখন যেন ভো কাট্টা হয়ে যায় সিঁধেল চোরের ভূমিকা,
হঠাৎই বেপাত্তা হয়, নাম পরিচয়ের অহমিকা।
সুতো কাটে অনুরাগ, আদর্শ, ভালোবাসা, শ্রদ্ধার ফানুসের,
ধরা দেয় ছবির আড়ালের এক অবয়ব, কদর্য মানুষের।
সমাজ, সংসার, সাহিত্য জগতে, আজ এঁদেরই বেসাতি,
মুখোশ খুললে দেখা যায়, যেন লালসারই এক প্রতিকৃতি।
রঙিন মোড়কে সাজিয়ে, হাজারো মানবতার প্রদর্শন,
রাত নামলেই চেনা যায়, ভোল বদলের কতোই পণ্ডশ্রম!
রঙিন ঘুড়ির এই কাঁচের মাঞ্জায় কত- শত বলি যায়,
পাততাড়ি গোটানোর আগে, এই নরখাদকদের চেনা দায়!
সত্যের নির্মল আকাশে, এই ঘুড়িরা হয় সদাই ভো কাট্টা,
আবার কোনো রাতের মজলিসে জমায়, নতুন মৌরসিপাট্টা।
এ এক যাযাবর শ্রেণী, বদলায় ভেক, বদলায় বাসস্থান,
এই বহুরূপী সম্প্রদায়েই আজ ছেয়েছে জগতের সকল স্থান।
যারা এসে অহরহ, আজ তোমার আমার দুয়ারেই জোটে,
ভিক্ষার ঝুলি হাতে, আমাদেরই সর্বস্ব লোটে!
এদের পাতা ফাঁদে পড়লে ধরা, তুমিও ভো কাট্টা হবে,
প্রথম সাক্ষাতেই তাই কাটো জাল, সত্যাসত্যের অনুভবে।।

বহুরূপী – সুমিতা চৌধুরী

আজ মানুষ আর বহুরূপী সাজে না,
তার সত্তায় আজ বহুরূপীর বাস।
লোলজিহ্বায় ঝরছে শুধু সর্বগ্রাসী চাহিদার ক্ষুধা,
ধ্বংসাত্মক নৃশংসতার কটু বিষ,
মেরুদণ্ড নুয়ে মিশেছে মাটিতে,
সে আজ আদতেই সরীসৃপ।
মুহুর্মুহু রং বদলাতে নেই তার কোনো জুড়ি,
দামী পোশাক প্রসাধনের আড়ালে রয়েছে
এক পূতিগন্ধময় কদর্য অবয়ব,
মুখোশ দিয়ে ঢাকা মুখের সর্বত্রই
হিংস্র লোলুপতার ছায়া,
নেই বিবেকের বালাই মননে-চেতনে!
তার মাঝে সদা বাস করে এক অদৃশ্য দানব,
তার আগ্রাসী জঠর জ্বালায় ক্ষইছে সমাজ- সংসার,
তথা দেশ তথা বিশ্ব।
তবু সেই ক্ষুধার নেই অন্ত কোনো,
বরং প্রতি ধাপে প্রতি পলে তা বৃদ্ধি পায় গুণিতকে।
স্বার্থের তাগিদে সে যার হাত ধরে আজ বন্ধু রূপে,
কাল করে তারই নিধন আদিম বর্বরতায়!
আজ আর কেউ বহুরূপী সাজে না,
ঘরে ঘরে বহুরূপী করে বাস,
মুখ- মুখোশের আড়ালে।।

দড়ি ধরে মারো টান / রাজা হবে খান খান – সুমিতা চৌধুরী

মেধা আজ বিকিয়ে গেছে
অনৈতিকতার কাছে,
ঘুণে ধরা মেরুদণ্ডগুলো
কেবলই ভিক্ষা যাচে!

সভ্যতা আজ খিল দিয়েছে
স্বার্থান্বেষীদের বধ্যভূমে,
বুদ্ধিজীবীরা বুদ্ধিকে রেখে বন্ধক
রাজপাদুকা চুমে!

বীণাপাণি আজ শুধুই মূর্তি,
পূজার বেদিতেই তাঁর ঠাঁই।
বিদ্যা যে আজ গুমঘরে বন্দী,
তাই তাঁর প্রাণপ্রতিষ্ঠার বালাই নাই।

আছে আড়ম্বর, নিয়মনীতি,
জৌলুসেরই ছটায়।
রঙ ফানুসের রঙিন ভিড়ে,
কেবলই চোখ ধাঁধায়।

যা কিছু আছে দলিল দস্তাবেজ,
জমছে আস্তাকুঁড়ে।
ঘুণপোকাদের মহাভোজ আজ,
মানবতার শরীর জুড়ে।

বিদ্যার আলয় কুয়াশাচ্ছন্ন,
পথ হাতড়ে ফেরে।
ফাঁপা দেওয়াল আর নড়বড়ে ভিতে,
যেন দফন হবে অচিরেই।

তবু যেন আজও ক্ষীণ শোনা যায়,
এক মাস্টারমশাইয়ের সদর্প আহ্বান,
“দড়ি ধরে মারো টান
রাজা হবে খান খান”।।

এসো ধরি হাত – সুমিতা চৌধুরী

কিছু মানুষ থাকে নিত্য অবহেলায়,
পুরোনো আসবাবের মতো ঘরের কোণে পড়ে।
সমাজ- সংসার নেয় না কোনো খোঁজ,
গণ্য হয় তারা বাতিলের খাতায় ভরে!

হয়তো তারা আজ কালপ্রবাহে,
জীবন পথের কোনো ক্লান্ত সৈনিক।
তবু যে তাঁদেরও মন- প্রাণ আছে জীবন্ত,
তবু সমাজের চোখে সে শুধুই আজ এক পরজীবী, বল্মিক!

অসহায় জীবন দিন- রাতের চৌহুদ্দিতে,
নিত্য গোণে অশ্রু আর দীর্ঘশ্বাস।
কেউ থাকে না সঙ্গী- স্বজন মন ঘরের,
কেউ দেখে না তপ্ত শ্বাসের আশ!

অধিকার শুধু আইনের বন্ধ খাতায়,
কলমের আঁচড়ে মূল্যহীন পড়ে রয়।
অনাদরের, উপহাসের চৌকাঠে,
জীবনবোধ শুধুই বৈষম্যের কথা কয়।

একদিন যারা গড়েছিল পৃথিবীতে,
আপন বাসা, নিজের শ্বেদ-রক্তে সিঁচে,
সে ঘরেই আজ তাঁরাই পরিত্যক্ত,
জীবনের বোঝা বয় আপন অশ্রুতে ভিজে।

মন যাচে তাঁদের শুধু শ্রদ্ধা, সম্মান, ভালোবাসায়,
আপন জনের হৃদয়ের একটুকু স্থান।
করুণা, দয়াদাক্ষিণ্যের ভিক্ষাপাত্রে,
চায় না তাঁরা অবজ্ঞার রাজদান।

এসো আজ নয় তাঁদেরই হাত ধরি,
মনের উষ্ণতাটুকু দিই আপন স্পর্শে।
মনের মাঝের মানুষটাকে জাগাই একবার,
বিবেকের বাতি জ্বেলে মানবিকতার আদর্শে।

করি না হয় মনের আদানপ্রদান,
খানিক অনুভূতির মিঠে সুবাস বেটে।
হাতে হাত রেখে পার করি বন্ধুর পথ,
শেষ বেলার গোধূলি আলোয় পথ হেঁটে।

এভাবেই নয় জিনে নিই জীবনটারে,
অন্যকে পরিয়ে জয়ের মালাখানি।
সংকীর্ণ জীবন বৃহত্তর ক্যানভাসে,
পড়বে ধরা তখনই আপনায় আপনি।।

জ্বলুক মশাল বিবেকের – সুমিতা চৌধুরী

আছে চোখ রাঙানি,
আছে বিধি- নিষেধ,
আছে কতো প্রলোভন,
বকলমের অবিবেক,
তবু নিয়েছি বেছে বন্ধুর এই পথ।
কলমকে রেখেছি সত্যের কাছে অকপট।
কতো ব্যঙ্গোক্তি,
কতো তুচ্ছ- তাচ্ছিল্য,
হাজারো প্রতিবন্ধকতা,
কতোই মনোমালিন্য,
তবু শাণিত কলমে তুলেছি জনরব।
ঋজু শিরদাঁড়ায় বলেছি বারবার, “হোক কলরব”।
সমাজে থেকেও সমাজচ্যুত,
জলসার ভিড়ে একাকী,
দেখছি কতোই আড়ালের অর্থের খেল,
সম্মুখে “নিমন্ত্রণ” পোশাকি!
তবু বয়ে যাইনি আজো সে বন্যায়,
মনের মাঝের বিবেকের দায়ে।
এভাবেই মোর পথচলা,
কলমকে সাথী করে।
যদি কোনো স্ফুলিঙ্গে কারো জাগে বিবেক,
একটি দিনের তরেও।
সেদিনই হবে স্বার্থক পথচলা, আমার কলম মশালের।
এক স্ফুলিঙ্গ থেকে আরেক স্ফুলিঙ্গে,
ছড়াবে যেদিন আলো বিবেকের।
তাই ভয়কে করে জয়,
আপোসের পাহাড় লেঙ্গে,
বিদ্রোহের আগুনে সেঁকেছি নিজেকে,
সুখের আবাস ভেঙে।
বিদ্রোহী কবিকে বুকের মাঝে বরে জাগিয়েছি নিজ প্রত্যয়,
কলমকে হাতিয়ার করে অন্যায়ের প্রতিবাদে লিখিয়েছি নাম মুষ্টিমেয় ঐ সেনায়।।

বড়ো সাধ জাগে [Bengali Poetry]

বড়ো ইচ্ছে করে বয়সকালের সীমা ভুলে,
কল্পলোকের গল্পটা আজ সত্যি হোক।
ঝরঝর বারিধারায় মন ভিজিয়ে
পায়ে পায়ে হেঁটে চলি দূর অজানায়।
এক ছাতার তলায় আধভেজা তুমি আমি,
যে কথা হয়নি কখনো বলা,
সে কথার পরশ মেখে,
কিছু সময়কে করি মনের সান্নিধ্যে ভীষণ দামী।
একবার নাহয় করি মোরা প্রেমযাপন,
বৃষ্টিকে সাক্ষী রেখে আপন মনের ঘরে আরো একবার প্রেমকে করি আলিঙ্গন।
বৃষ্টি ভেজা সোঁদা গন্ধে আজও যে মন আকুল হয়,
বড়ো সাধ জাগে বর্ষা মাখতে, বৃষ্টি চাখতে,
টিনের চালে বৃষ্টিফোঁটার জলতরঙ্গ শুনতে,
সেই কাগজের নৌকাগুলো ভাসাতে আরেকবার।
জানি পৌঁছেছি বেলা শেষে,
তবু, মনের সাধ নাহয় হলোই বা পূর্ণ এই অবেলায় এসে।।

কিছুক্ষণ আরো নাহয় রহিলে কাছে [Bengali Poetry]

তারারা এখনো সাজিয়ে রেখেছে তাদের বাসর,
চাঁদও অভিসারে মেতেছে মেঘের সনে,
মোম জোছনায় ভিজছে চরাচর,
পিউকাঁহা আকুলস্বরে ডাকছে পিয়া বিহনে।
নিস্তব্ধ রাত বলছে কতো কথা,
মনগহিনে নিরালা সঙ্গোপনে,
জানি, বলবে ফুরায়েছে সকলি কথা,
তবুও বলো না “যাই”, বিদায় সম্ভাষণে।
জানি আসবে মোদেরও বিদায়ের পালা,
দুটি পথ হয়ে যাবে বিচ্ছিন্ন।
এখনো যে মধুযামিনী খানিক বাকি,
এখুনি ছিঁড়ো না এ অনুরাগের মালা।
নিশ্চুপে নয় বলুক আপন কথা,
আঁখি যুগল হারাক নাহয় ভাবের ঘরে,
উজাড় করুক মনের গোপন ব্যথা,
রচুক আপন ফুলসজ্জা ক্ষণিকের তরে।
এখুনি উঠবে পূব-দিগন্তে ভানু,
ভেঙ্গে যাবে স্বপ্নের এ বাসর।
আরেকটু পল থাকলে না হয় কাছে,
ভরুক কানায় কানায় অন্তর।।

মনের দ্বারে [Bengali Poetry]

কতদিন বসিনি তোমায় নিয়ে,
সংগোপনে একলা মনের কাছে।
মনের প্রদীপে দিইনি সলতেটুকু,
তবুও যেন ডাক দিয়ে যাও তুমি, বারে বারে সকল কাজের মাঝে।
বকুলতলায় জমেছে ঝরা পাতা,
বকুলফুল তোলা হয়নি আর,
মনের ভাঁজে জমেছে অনেক কথা,
কবে থেকে বন্ধ মনের দ্বার।
সাঁঝের প্রদীপ তেমনি জ্বালা আছে,
মালাখানি গাঁথা হলো কই!
সন্ধ্যামালতী ডাক দিয়ে বলে যায়,
“কথার মালা গাঁথবি কবে সই?”
বাতাস কেমন উদাস হয়ে বয়,
স্মৃতির পাতা মেলে ধরে সম্মুখে।
নীলদিগন্তে তারারা হাসে মিটিমিটি,
কানে কানে বলে, “আছিস কি তুই সুখে?”
তাই এসেছি আজকে সংগোপনে,
তোমায় নিয়ে একলা মনের কাছে।
তুমিও কি খোঁজো আমায় আজো,
তোমার সকল দিনের কাজের মাঝে?

মন আজ বেদুঈন [Bengali Poetry]

মন আজ হতে চায় বেদুঈন,
দিতে চায় সুদূর পানে পাড়ি।
অনন্ত পথ দিচ্ছে আশকারা,
প্রকৃতির মাঝে হারাবার হাতছানি তারই।
চল না হই উধাও আজ
মনের ডাকে মেতে,
হতে চাই আজ বাঁধনহারা
অজানা সংকেতে।
ঘরের বাঁধন ছিঁড়ে আজ
মনের আগল খুলে,
পথের ডাকে বেদুঈন মন
যাক না আজ সব ভুলে।
কে যাবি তোরা, আয় সকলে,
ঐ সোনামাখা রোদে,
পথ হারাবার নেশায় মাতি,
আমোদে- আহ্লাদে।
চল না কুড়োই কিছু রঙিন নুড়ি
মনের আবদারে,
স্মৃতির পাতায় জমা হোক কিছু সময়,
ভালোবাসার উপহারে।।

বৃষ্টি থামার শেষে [Bengali Poetry]

এখনো টুপটাপ ঝরছে জলের ফোঁটা,
টিনের চালে জলতরঙ্গের রেশ,
উদাস মন আঁকছে আলপনা,
মন যমুনায় সুখেরই আবেশ।
গাছের পাতায় লক্ষ হীরের দ্যুতি,
হাসছে যেন রোদের আদরে।
মনের আলসেতে ভালোবাসার অনুভূতি,
জমছে আদুরে মনের সুখের চাদরে।
বৃষ্টি শেষে মেঘেদের ভেলায়,
রামধনু আসে রংবাহারি সাজে।
মন বাউলের মিঠে সুর কানে বাজে,
মন লাগে না আর কোনো কাজে।
নিরালা দুপুর এসে দাঁড়ায় সংগোপনে,
সুখ-পাখিটা রূপকথার গল্প শোনায় এসে,
সেথা প্রিয় আসে যেন রাজপুত্তুর বেশে,
মনের ঘরে বৃষ্টি থামার শেষে।।

ছুটি চায় মন [Bengali Poetry]

ছুটি চায় মন,
এ কোলাহল থেকে বহু দূরে।
একলা অবকাশে,
হতে চায় স্মৃতির সাথে ভবঘুরে।
নীল ডানার ঐ পাখিটার সাথে,
মাখতে চায় জোছনা নিঝুম।
রাখালিয়া মোহন বাঁশির সুরে,
একাত্মতায় ভুলতে চায় কালঘুম।
মেঘ যেখানে ভেসে ভেসে,
দিগন্তে দেয় পাড়ি,
তারই সাথে সওয়ার হয়ে,
হারাতে চায় এ মায়াকানন ছাড়ি।
রামধনু যখন আকাশের গায়ে,
আঁকে আপন আল্পনা,
এ মনও যেন সেই সাত রঙের ভিড়ে,
আপনাকে করে কল্পনা।
ছুটি, ছুটি, ছুটি, খোঁজে মন,
সকল আগল ভেঙে।
জীবনের এই রোজনামচার,
পাহাড়টাকে ভেঙে।
কে যেন ঐ হাতছানি দেয়,
দূরপাণে হারানোর প্রাণখোলা।
মুক্ত বিহঙ্গ সম সাড়া দিতে চায় মন,
হতে চায় ফেরারী, পথভোলা।।

স্মৃতি যাপন [Bengali Poetry]

স্মৃতিরা আজ পিছুটানে বারবার,
যখনই থাকি একলা অবকাশে।
মন ফিরে যায় স্মৃতির পাড়ায় আবার,
যেখানে অনুভূতির মেলা আজও বসে।

সেখানে কতোই না লোকের বাস,
চেনা- অচেনারই ফেরে।
সুখ- দুখ, হাসি- কান্না, স্বপ্ন- আশ,
জড়িয়ে আছে আজও সেথা জীবনেরই আদরে।

এক লহমায় উধাও হয় বর্তমান,
অতীত যেন জলসা বসায় সেথায়।
নীলকণ্ঠ পাখি শিস দিয়ে গায় গান,
রামধনু রঙ দুই ডানাতে মেশায়।

ভাবনারা দেয় কোন সুদূরে পাড়ি,
কল্পনারই উড়ানে ভর করে।
জীবন যখন গোটাতে চায় পাততাড়ি,
স্মৃতিই তখন রঙিন আলপনায় দেয় ভরে।

তাই তো মোহনায় স্মৃতিই হয় সাথী,
তার সনেই করি আজ সহবাস।
রুক্ষ- ধূসরতা থেকে বাঁচতে দিনরাতি,
অতীত স্মৃতির চাষ করি বারোমাস।।

সৃজনী শ্রাবণ [Bengali Poetry]

শ্রাবণ ধারায় যাক না ধুয়ে
যতো মনের ক্ষত,
আসুক ফিরে আবার
সবুজ সজীবতা।
মেঘ পিওনের ব্যাগে থাকুক
শুধুই খুশির বার্তা,
মন খারাপের দিনগুলো সব,
উধাও হোক মাতাল হাওয়ার সনে।
জলতরঙ্গের রেশ বাজুক কানে
প্রেমালাপে বারবার,
মনের ময়ূর মেলুক পাখা
আবেশ বিভোরে।
সকল কলি ফুল হয়ে ফুটুক
বরণডালা সাজিয়ে,
মন বাউল ধরুক গান
বাজিয়ে তার একতারা।
যা কিছু মলিন বিধুরতার রেশ
যাক ঘুচে সবই আজ,
শ্রাবণ হোক প্রাণেরই উৎসব
নব সৃষ্টি সৃজনের আঙ্গিকে।।

ভিন দেশী সই [Bengali Poetry]

ঝরা পাতা বলে যায় কতো কথা তার,
কাল স্রোতে বয়ে গেছে ছবি যেন কার।
চুপি চুপি কান পেতে শুনি আমি সব,
জানি কার তরে মন করে হুহু রব।
চোখে দেখা পল কিছু সবে দেখে তায়,
মন জানে কতো কিছু বাকি থেকে যায়।
চরে জমা পলি থেকে চাষ করি জমি,
মন ঘর পূর্ণ হয়, পূর্ণ হয় ভূমি।
চারা গাছ ভূমি ফুঁড়ে সেথা উঠে আসে,
বীজ থেকে চুপ কথা ডানা মেলে হাসে।
ঝরা পাতা গান গায় সুখ দুখ নিয়ে,
হৃদি ভরে শুনি তাই, কানে পাশে গিয়ে।
এই ভাবে সই আজ মোরা দুই জনা,
ভিন দেশী হয়ে তবু যেন এক মনা।।

রক্তকরবী [Bengali Poetry]

রাঙা অনুরাগে ফোটে রক্তকরবী,
যেন ভালোবাসার আশ্রয় খুঁজে ফেরে।
রুধির ধারায় মেশে বুঝি প্রেমবাহ,
ফেরারী মনের লাগাম ধরে কে রে!

কতো কথাই উচ্ছ্বাসে বলে যায়,
কবরী ছুঁয়ে মনের নাগাল খুঁজে।
তরুণ রক্ত ছলকে ছলকে ওঠে,
তবু দিশেহারা মন রয় যে অবুঝে!

রক্তকরবী তুমি যে প্রেমেরই হেম,
অতৃপ্ত মনের যেন এক অধরা বাসনা।
তোমায় নিয়ে কবির ভাবনায়,
একটি গাথা রচে নিজ আশনা।

রক্তকরবী তুমি যে গভীর ব্যথা,
হৃদয় ফুঁড়ে রক্ত ঝরার তাগিদে।
তবু ফুরায়নি তোমার নেশা, মনের আশ,
ওহে প্রেম, তুমি একটি রক্তকরবী রেখো মোর সমাধিতে।।

শিশির ঝরছে [Bengali Poetry]

শিশির ঝরছে, পড়ছে ঘাসের ডগায়,
কেউ কি কাঁদছে অবোধ নীরবতায়?
চাঁদের ঐ চোয়ানো পেলব নীলে,
যাচ্ছে কি তার ব্যথার বিষ মিলে?

শিশির ঝরছে, পড়ছে ইতি উতি,
মনের দুয়ারে কড়া নাড়ছে স্মৃতি।
রাতের শরীরে তারাদের রোশনাই,
আর মনের মাঝে বিদায়েরই সানাই!

শিশির ঝরছে, পড়ছে শার্সিতে,
মন কি কাউকে খুঁজছে নিজ আরশিতে?
হায়রে মন, কেবলই হারিয়ে খুঁজে মরে,
বেঘর হয় এ জীবনে বারে বারে!

শিশির ঝরছে, পড়ছে লতায়-পাতায়,
শেষ গল্প কেউ লিখছে বুঝি খাতায়।
রজনীগন্ধা তাই গন্ধ দিচ্ছে ঢেলে,
কার জীবন তরী যে ছুটছে ত্বরায় পাল তুলে।

শিশির হাসছে, ভোরের সোহাগী রোদে,
লক্ষ হীরের দ্যুতির অম্লান জেদে।
রাত পুহিয়েছে, ফুরিয়েছে নয় একটি জীবনের গল্প,
নব-প্রভাতের নব-প্রকাশে নবজীবন যে সাজছে আবার অল্প-স্বল্প।।

জীবনের নীতি [Bengali Poetry]

কিছু বুকের ভাঁজে
পরতের পর পরতে জমা হয় নীল ব্যথা,
ধীরে ধীরে তা পরিণত হয় জমাট পাথরে,
সেখানে সুখেরা কখনো আসে না পথ ভুলেও।
সুখ তো ক্ষণিকের অতিথি,
যেন রঙবেরঙের পালক,
আপনমনে ভেসে বেড়ায় হাওয়ায়।
মুঠোয় ভরতে গেলেই দোমড়ায় মোচড়ায়,
ঝরে পড়ে অচিরেই।
সেই পালকরা কি কঠিন পাথরের বুকে মানায় কখনো?
জীবন নাকি সুখ দুখের সমাহার,
তবু দুটি আলাদা সরলরেখায় চলে,
কখনো এসে মেলে না একই পথে!
ঠিক তেমনই,
জীবন পথে হাঁটে কতো না মুখের মিছিল,
চেনা অচেনার মিশেলে।
কতোই না তাদের বৈচিত্র্য,
কতো না রঙের বাহার,
তবু সব রঙ মনের জমিতে দাগ কাটে না,
ফিকে হতে হতে মিলিয়ে যায় চিরতরে।
শুধু কিছু মুখ রয়ে যায় চেতনার গভীরে,
যেন তাদের রঙ মিশে যায় মন- মননে,
তারাই হয় ভাস্বর,
অবিস্মরণীয়, হাজার মুখের ভিড়েও।।

শীত সকাল [Bengali Poetry]

লেপের আদরে, কুয়াশার চাদরে,
আধো ঘুমঘোর ভাঙে শীত সকাল।
দাওয়ায় মিঠে রোদ এক্কা দোক্কা খেলে,
গাছিরা নিয়ে ফেরে খেজুরের মিঠে রস,
ধোঁয়া ওঠা পেয়ালায় জীবন খোঁজে উষ্ণতা।
ঘাসে ঘাসে তখনও লেগে থাকে শিশিরের পরশ,
সোনা রোদে লক্ষ হীরকের সাজে।
আড়মোড়া ভেঙে জেগে ওঠে পল্লী,
জাগে নিজ কর্মব্যস্ততায় নগরজীবন।
কোথাও পিঠে পুলির মিঠে আঘ্রাণ,
ছড়ায় আমেজ ছুটির বার্তায়।
শিরশিরে বাতাস বয় ক্ষণে ক্ষণে,
বনভোজনের আসর জমে ইতি উতি,
কত শত চেনা অচেনার ভিড় জমে তাতে।
উনুনের আঁচে জ্বাল দেওয়া রসের ঘ্রাণে,
মৌমাছিদের মৌতাত জমে,
রঙ বেরঙের প্রজাপতির মেলায়,
মনও যেন সাতরঙা পাখনা মেলে।।

নবান্ন [Bengali Poetry]

নিঙোনো উঠোনে আল্পনার সাজ
উৎসবের আঙিনায়,
প্রথম নতুন ধানের নৈবেদ্য,
নিবেদিত হয় দেবতার পায়ে।
হেমন্তের সোনালী ফসলের অর্ঘ্যে,
পালন হয় নবান্ন।
সন্তান যেন থাকে সদা দুধে ভাতে,
এই একান্ত কাম্য।
আত্মীয় পরিজনে মুখরিত হয়
এই মধুর পার্বণ,
চাষীদের এই খুশির পরবে,
তারা মন-প্রাণ করে অর্পণ।
হাজারো ব্যঞ্জনে সেজে ওঠে
মা লক্ষ্মীর নৈবেদ্যের ডালা,
সাধ্যমতো সকল আয়োজনে
নিষ্ঠা ভরে হয় নিয়ম পালা।
কোলাহল মুখর এই উৎসবে
বিভেদের নেই ঠাঁই,
জাত, ধর্ম, দীনতা ভুলে,
মিলন মেলায় মেলে সবাই।
মনের মাঝে ওঠে সবার
খুশিরই হিল্লোল,
শিশির ঝরা হেমন্ত মাঝে
“নবান্ন” যে প্রাণেরই বোল।।

মন কথাদের পাড়া [Bengali Poetry]

কথার শরীরে বাড়ছে এক মন,
আলতো আদরে জাগছে ধীরে ধীরে।
মিহি বরফের কণার মতোই,
কথারা যেন পড়ছে ঝরে ঝরে।
ফিসফিসিয়ে আলাপ সারছে কানে কানে,
যেন পিয়ানোর মিঠে টুংটাং সুরে।
আলগোছে কিছু সুর যাচ্ছে ভেসে,
দূর থেকে দূরে, আরো দূরে, বহু দূরে।
মন সেই তালে ভাসিয়েছে তার শরীর,
বহু বিভঙ্গে নাচছে যেন তার তালে।
যেন সভা জুড়ে বাজছে এক কনসার্ট,
মঞ্চ মধ্যে মধ্যমণি মন নাচছে দেখো ব্যালে।
টুপটাপ ঝরছে, পড়ছে, কথা ইতি উতি,
যত্নে চয়ন করছে তাদের মন।
নরম হাতের পেলব স্পর্শে,
বিনি-সুতোয় গাঁথছে মালা সে অনুক্ষণ।
কথার শরীরে বেড়ে উঠেছে মন,
কথারই মালা পরেছে আপন গলে।
জমেছে মন কথাদের এক নিরালা সন্ধ্যা,
যেখানে চাঁদের আতরে, ভালোবাসা ভেজা রাতও শরমে যাচ্ছে গলে।
মন কথাদের সে পাড়ায় আজ আমার নিমন্ত্রণ,
উপহারে এনেছি মেঘ বৃষ্টির আলাপন।
এসে দেখি কথার জোনাকে বইছে মন-ঝর্ণা,
হারিয়েছি আমি সেই আবেশ বিভোরে, জানি না কখন!!

সুমিতা চৌধুরী | Sumita Choudhury

Top Bengali Poetry 2022 | সুশান্ত সেন | কবিতাগুচ্ছ

New Bengali Story 2023| লোকের কথা | মনসুর আলি

New Bengali Poetry 2022 | কবিতাগুচ্ছ | নীলমাধব প্রামাণিক

New Bengali Article 2023 | বাংলায় শিল্পে বিনিয়োগ সামান্যই

story poem | poetry angel | narrative poetry examples | poetry reading near me | prose poetry examples | elegy poem | poetry reading | the tradition jericho brown | poetry websites | protest poetry | emotional poetry | spoken word poetry | poem about god | percy shelley poems | jane hirshfield | spiritual poems | graveyard poets | chapbook | poems about life | poems to read | found poem examples | poems about life and love | elizabeth bishop poems | poems about women | sister poems that make you cry | famous quotes from literature and poetry | mothers day poems from daughter | poem about community | 8 line poem | inspirational poetry quotes | poem about life journey | positive poems | short poem about life struggles | toni morrison poems | good bones poem | google poem | funny poems for adults | inspirational poems about life | friendship poem in english | paul laurence dunbar poems | freedom poem | sad poetry about life | Shabdodweep Founder

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *