New Bengali Poetry 2023 | মোঃ ওয়াসিউর রহমান | কবিতাগুচ্ছ

Sharing Is Caring:
BENGALI POETRY

মোঃ ওয়াসিউর রহমান – সূচিপত্র [Bengali Poetry]

প্রত্যাবর্তন – মোঃ ওয়াসিউর রহমান

আবারো অন্ধকার হয়ে আসছে আকাশ,
হয়তো বাকী থেকে গিয়েছিলো কিছু কাজ,
অব্যক্ত ছিলো কিছু আবেগ;
একটি একান্ত মৃত ভাবাবেগ।
বলা হয়নি কিছু কথা, পরে কখনো বলা হবে ভেবে, তাড়াহুড়ো করেই যেন নেমে আসা হয়েছিলো পথে।
সকাল নিরুদ্দেশ কবে থেকেই, তবু মেঘাচ্ছন্ন আকাশ কেন যে হঠাৎ মেতে ওঠে নিছক খেয়ালে,
বজ্রপাতের চিৎকারে জানান দেয় হারানো প্রভাতের শোকবানী আকাশে বাতাসে চারিদিকে।
অন্যকোন সকালের আসবে ভেবে কতকাল নিশ্চুপে হয়ে গেছে পার;
নিরুদ্দেশে বেরুনোর কথা বলেও বারবার বের হওয়া হলো না আর।
তবুও হয়তো পড়ে ছিলো এককোণে ভুলে যাওয়া চিরকুটের মতো কিছু দায়হীন প্রতিশ্রুতি ;
রোজ সকাল আসবে এই ভেবে বারবার জেগে উঠে, আবারো সংজ্ঞাহীন ব্যস্ততার পোষাকি।
পালটে গেছে যখন প্রতিটা রাস্তা, পাড়া, শহর, চেনা গলিতেই কখনো নিজেই বড্ড বেমানান।
দেরী হয়ে যাওয়াটা শুধুই এখন প্রসংগহীন, অপাংক্তেয় অস্তিত্ব শুধু তাচ্ছিল্যেই বর্তমান।
তাই একটি অন্ধকার আকাশ আজ আশা জাগায়,
পূবকোণে কুণ্ডলিত মেঘ জাগায় পুলক মৃত শহরে।
মৃতদের ধ্বংস লীলায় আজ জেগে উঠুক আকাশ, উড়ে যাক সমস্ত আবর্জনা ঝড়-কুজ্ঝটিকার আবর্তনে।
বলা হয়নি যা, করা হয়নি যে কাজ আজ মুক্তি পাক, জীবিতদের উজ্জীবিত সকালে;
ইট-চাপা ঘাস গুলো আজ ফিরে পাক জীবন, আবারো জন্ম নেয়া নতুন এক পৃথিবীতে।

স্বপ্ন সংক্রমণ – মোঃ ওয়াসিউর রহমান

স্বপ্ন গুলো এখন আর হারাবার ভয় নেই।
স্বপ্নের হাটবাজার বন্ধ, বন্ধ সব লেনদেন এখন।
স্বপ্ন দেখার জন্যে আলাদা আসন সংরক্ষিত এখন।
নীতিমালাও প্রযোজ্য, যার যা খুশি চাইলে দেখবে; তা কি হয়?
অবাধ্য কিছু ল্যাম্পপোস্ট তবু আলো জ্বেলে দাড়িয়ে থাকে, হতচ্ছাড়ার মতো!
আধো আলোয় প্রহরী দেখে জেগে থাকা সাদা কুকুরটি ডেকে ওঠে আজো!
শিশুরা হারায় শৈশব, তরুণরা হারায় তারুণ্য,
ব্যাপ্তি বাড়া স্বপ্ন গুলো হয়ে উঠে আজ অবৈধ।

মেঘ গুলো হয়ে যায় ময়লা তুলোর আস্তরণ।
টহল চলে অবিরাম, এখানে সেখানে রাস্তায় রাস্তায়
তবু ছদ্মবেশ মিলে মিশে একাকার হয়ে পড়ে স্বত্তায়।
সংক্রমণ মিশে যাক সর্বত্র, ক্রমাগত।

যখন মহামারী হয়ে উঠবে গোপন কামনা,
হতবিহ্বল নিয়মগুলো যেদিন ছত্রভঙ্গ হয়ে শিকার করবে নিজেদের,
ল্যাম্পপোস্টের নিচে স্তূপ হবে আততায়ীর নিকট নিহত পাহারাদারের লাশের,
ঠিক এমন একটি হারানো স্বপ্নের ভেতর, মিলনমেলা ঘটে সকল মৃত স্বপ্নের।
ক্রন্দনগুলো মিলে মিশে, মিলে মিশে গিয়ে হয় অট্টহাসি বিকট অকারণ;
এমন এক মহামারীতেই হবে সেই সব স্বপ্নের সাথে আমাদের আলিঙ্গন।

তবু্ও জোনাকিরা – মোঃ ওয়াসিউর রহমান

তবুও সকাল আসবে, রাত্রির তাড়নায়,
তবু্ও বাসনা রূপ নেবে অপ্রাপ্তির কামনায়।
সীমানা এখানেই শেষ, কাজগুলো দাঁড়ি টানে যেখানে,
ক্লান্তি জমা হয়, নরম বালিশে, যন্ত্রণার মোহর হাসে যক্ষের গুপ্তধনে।
কমে যায় সময়, কমে যায় প্রাণ,
অসময় উঁকি দেয়, ভুলে যায় গান।
রাত্রি নামে, সারাদিনের উন্মাদনায়,
আবারো জোনাকিরা আলো জ্বালে ভোর আসে।

খেয়ালী রোদ্দুর – মোঃ ওয়াসিউর রহমান

হয়তোবা তার পাখার ওম হয়ে আটকে থাকবে কিছুটা রোদ্দুর,
হয়তোবা রোদ্দুরটাকে সাথে করে নিয়ে যাবে অনেকদূর।
হয়তোবা রোদ্দুরটুকু রয়ে যাবে সারাজীবন, বয়ে যাবে অসংখ্য গল্প আজীবন,
হয়তোবা এ রোদ্দুরটুকুই তুলে রাখবে কালে কালে অজস্র জন।
হয়তো আরো অসংখ্য গল্প বয়ে নিয়ে যাবে এইটুকু খেয়ালী রোদ্দুর,
জানতেও পারবেনা কখনো,
সে নিজেই একটা ইতিহাস, শেষ দিনটুকুর!

স্তব্ধতার গল্প – মোঃ ওয়াসিউর রহমান

মেঘলা সন্ধ্যাগুলো বিদেয় নেয়, ফেলে রেখে কিছু ভুলে
একইভাবে রাত আসে বারবার, উস্কোখুস্কো এলেবেলে।
বলে ফেলা কথা গুলো তবু পড়ে রয়, শব্দহীন দিকভ্রান্ত,
চাঁদ জাগে, তবু থাকে পড়ে আলসে, চুপচাপ নিরাসক্ত।

জলকণা জমে থাক, মেঘগুলো ধরে রাখ, রাশভারী সংসারী জল,
বৃতিদলে ঝুলে থাক, কলি গুলো চেপে থাক, বন্দী পরাগের দল।

আজকের বারিধারা, মনে হয় যন্ত্রণা, ছিলোনা আমাদের কথামালা,
কাদাজলে মাখামাখি, মেনে নেয় নিয়তি, মেঘে ওড়া স্বপ্নমালা।
তবু ঝুমকোলতায় আলো জ্বলে, বেপরোয়া জল ভাসে, মুনিয়ারা দলে বেধে ঘুরে ফেরে।
আর কলতলায় সবুজ শ্যাওলা জমে, নতুন দিন চলে আসে, সেও হারায় জীর্ণতার কোটরে।
সব চলে আসে, সব চলে যায়, সব জমে থাকে,
একটি শিশিরে, এ নিঃসঙ্গতায়, যেন সে থমকে।

নির্লিপ্ত বসন্ত [Bengali Poetry]

একটি রৌদ্রোজ্জ্বল দিনেও মেঘ গুলো হয়তো আকাশের কোনখানে জমা হয়, একসময় এখানেই ঝরবে বলে।
সেরকম কোন এক ঝলমলে দিনে আমি মুখরিত হইনি,
কোন এক ফাগুনে হাতে ছিলোনা কোন ফুল।
লাল ফুলের মতো ফুটে থাকা তোমাকে দেখে মুগ্ধ হবার বদলে, বারংবার খুঁজেছি কি জেনো একটা ভুল!
কোন এক বসন্তে তুমি এসেছিলে তবু বিষন্ন, বিষাক্ত আমি তোমার উপর ছড়িয়ে দিইনি প্রেমের মায়াজাল।
দারুণ আবেশ মাখা প্রেমের গীত ও কাব্য কোনটাই সঞ্চয়ে ছিলোনা আমার, অন্ধকারাচ্ছন্ন যে সারাকাল।
কোনদিনই প্রেমিক হয়ে উঠতে পারিনি হয়তো, কেননা কোন চেষ্টাই ছিলোনা আমার।
দীর্ঘ ক্ষরা ও শুষ্ক ফেটে যাওয়া যে মৃত্তিকা সেখানে নদীও শুকিয়ে শেষ, তৃষিত যে চরাচর;
সেখানে বসন্ত অর্থহীন, ফুটন্ত গোলাপকে মনে হয় নিদারুণ উপহাস।
সমস্ত যে দৃষ্টিতে মরীচিকা একসময় নদীকে মিথ্যে ভাবে, নদীর গল্প সেখানে মিথ্যাচার।
তবুও বহমান যে স্রোত, পাহাড় থেকে শক্তি নিয়ে নেমে আসে, তাতে ভেসে চলে সবকিছু,
ভেঙে যায় যাক সমস্ত সাজানো বাগান, তবু্ও নিমজ্জিত করে চলে সমস্ত রুক্ষতা।
চরাচর হারায় দিক, অবুঝের দল ডাকে সর্বনাশা, কীর্তিনাশা কুহকিনী!
মুহূর্তেই গাল দেয় যেমন, অবুঝ মূর্খের দল, তেমনি সকলে নদীকে করে অবজ্ঞা।

তবুও পলি জমে সময়ের পরিক্রমায়।
বসন্ত হয়ে গেছে গেছে হেতু-হীন, কেন না সমস্ত সাজানো বসন্তই আজ অর্থহীন,
আজ সর্বত্রই হরিৎ প্রান্তরে অলক্ষ্যে ফোটে ফুল, ফলে ফসল;
স্রোতের বহময়তায় কখন যেন, – আগুনে ফাগুন হয়ে গেছে নির্বিকার ক্লান্তিহীন।

জ্বলন্ত স্বপ্নগুলো [Bengali Poetry]

হয়তো বছর কিছু ধরে, অথবা তারও কিছু সময় বেশী,
একে একে মিলিত হয়েছিলো কিছু সাধারণ মানুষ।
জাতি-ধর্ম বর্ণ নিরপেক্ষ কিছু সহজ সরল মানুষের দল, যাদের উদ্দেশ্য ছিলো অভিন্ন।
ধীরে ধীরে কিছু জনপদ মিলিত হয়েছিলো, গড়ে উঠলো কাঠামো।
স্বপ্ন বুনে চলেছিলো পাতার ফাঁকে ফাঁকে স্বপ্নচারীর দল, শুকনো পাতার বিছানে শুয়ে স্বপ্নের ফিসফিস কানে নিয়ে, আকাশ দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়তো প্রেমিকের দল।
তবুও স্বপ্নের সওদা বাজারে চলে আসে, কেউ জানতে পারেনি, আড্ডার জটলায় মানুষের ছায়ায় লুকিয়ে ছিলো অশুভ প্রেতাত্মার দল।
একে একে গ্রাস করে নেয় জনপদের সকল শান্তি।
স্বপ্ন পালটে যায় তাড়নায়, তাড়নার মোহ এনে পাশবিক আনন্দ ও যখন যন্ত্রণার নরক।
স্বপ্ন দেখা মন গুলো তবুও ঘাসের ফাঁক থেকে উঁচু করে মাথা, আশায় দূরে স্বপ্নের রাজপুত্রের জাহাজের মাস্তুল দেখা যাবে বুঝি!
তবুও ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়, স্বপ্নের রাজকন্যা আফ্রোদিতের সামনে!
আজো তাই পুরোনো প্রাসাদের দেয়ালে কান পেতে শুনে যাই আত্মার ফিসফিস, হারানো সময়ের।
হয়তো সময় এখন দেয়ালের গায়ে হঠাৎ করেই প্রতিচ্ছবি ফেলে সেই রাজকন্যার, দাঁড়িয়ে সিঁড়ির নিকট।
কখনো আবছায়ায় অসুস্থ মশাল হাতে অস্পষ্ট দেখা যায় প্রাচীন লম্পট যাজক!
আমি অনুসরণ করেছি রাজকন্যা, সেই শুকনো ফোয়ার পাশে দেখেছি তাকে, যখন সে নামিয়েছে ঘোমটা।
কলরব শুনি বুঝি আনমনে, ক্ষুব্ধ দাসেদের দাবী, ভেঙ্গে ফেলার গান, এ সমাজ ভেঙ্গে ফেলার প্রত্যয়।
জুতোর কালি মুখে মিশে যাক, সম্ভ্রান্তের!
আবারো ছুটে যাবে আগুন জ্বলন্ত চাকা, যাতে চড়ে আসবে সেই সাহসী যে বুহ্য ভেদ করে মুক্ত করবে সেই পাতায় মোড়ানো স্বপ্নগুলো।

আকাশ যেমনটা দেখায়, পানিতে [Bengali Poetry]

(রুমি অনুপ্রেরণা)

পোষাক ছুঁয়ে দেখা যায়, তবু পোষাকি হওয়া যায় কি!
প্রসঙ্গই পালটে যায়, সব খেই হারায়।
কবিতাতো অধরাই,
কেননা বর্তমান মোহময়।
কল্পনা, কখনোই নিখুঁত নয়।
কখনো ভাসে মানসপটে, কখনো নেই।
ফুলকে ফুল না ভেবে, অন্য কিছু ভেবেছি।

খোদা দেখিনি কেউ, কেন না, তিনিই দেখছেন সব।

যদি হয় সত্যি হৃদয়ের কথা, তাকে পাবে সেখানেও,
যদি লিখে রাখো একটুকরো কাগজেও।

আলো জ্বালি না [Bengali Poetry]

আলো জ্বালি না ভয়ে, যদি সে মিলিয়ে যায়!
আলো জ্বালি না ভয়ে, যদি জোনাকি নিভে যায়।
জোনাকিগুলো ঘুরে ফিরে, সবুজ কথা বলে নিঃশব্দে।
আলো জ্বালি না ভয়ে, কথাগুলো বুঝি ফুরিয়ে যাবে।

অন্ধকারে খুঁজে পাই বারবার, বন্ধ আলোর নায়ের পারাপার।
তাই প্রতিবার আধারে ফিরে পাই তারে, আরামদায়ক অসাড়তায় ছড়াতে পারে,
অনুভূতির উষ্ণতাগুলো ক্রমাগত ব্যাপনে।
যেমন রাত্রির তিমিরে জ্বল জ্বল করে অনাদি কালের নক্ষত্ররাজি।
কবেই জ্বলে পুড়ে হয়েছে শেষ তবু আছে, ওই আধার তাকে বুকে ঠিকই ধরে রেখেছে।
খুঁজে পায় সে তার অস্তিত্ব নিঃসীম প্রসারণে।

আলোকচ্ছটায় যে আতংক জাগে আজ!
বেরিয়ে আসে যদি সমস্ত আঘাতের দাগ।
যা লুকিয়ে রেখেছে এই অন্ধকার,
আলো জ্বালি না তাই ভয়ে,
হোঁচট খেয়ে যদি পড়ে যাই আবার!

কেমন কবিতা চাই? [Bengali Poetry]

কেমন কবিতা চাই তোমার?
সুফি শুদ্ধতার শুধু হৃদয় নিংড়ানো শুদ্ধ প্রেমের,
যে অনুভূতি শুধু পড়ে থাকে উচ্চতাপে প্রজ্বলনের পর চুল্লীর তলায়?
এমন না হলে মন ভরবে না?
বলবে না শুদ্ধ কবিতা তাকে?
নাকি চাই শুধু কাম আর শরীর সর্বস্ব কবিতা?
যা কামের জন্যে ঘৃণা করে বাস্তবতা কে, বা যে কাম প্রেম কেও ছাপিয়ে যায়?
চায় এমন কিছু শুধু চিত্তাকর্ষক বাক্য?
নাকি নিসর্গের আড়ালে খুঁজে চলা অজুহাতের কপট কাব্য ভরা বাক্যগুচ্ছ?
কি চাও তুমি? নাকি কিছুই চাও না!
অন্তত একটা খোরাকী তো দাও শুষ্ক মস্তিষ্কে!
একটা কিছু, অন্তত যন্ত্র সর্বস্ব কোন বেসুরো সুর,
যা কিনা ঘুরে বেড়াতে পারে রক্তের শিরা উপশিরায়,
অন্তত একটা মরফিনের সুই যদি এনে দিতে পারে স্থিরতা।
দলে দলে এসে পড়া শব্দের মিছিলে খানিক বাদে সবাই আগন্তুক,
অজস্র বাক্যের সাথে কপট করমর্দনে কি পেয়েছো? অযথা অহেতুক!
নাকি পেয়েছে তারা তোমাকে?
কবিত্বের দাবী নিয়ে কবিদের প্রতি ছুড়ে দেয়া সার্বক্ষণিক ছুড়ে দেয়া অবজ্ঞা কি প্রমাণ করেনি তোমার অজ্ঞতা?
তুমি কবিদের মতো ভাবতে পারোনি তাই এ খেদ?
নাকি তুমি কখনো কিছুর সাথে আছো, যা তোমার চারপাশে?
চারপাশের স্রোত তোমার গত হয়েছে কত জাননি।
পারনি কবিতার জোয়ারে ভাসতে, ভাসিয়ে দিতে শব্দের স্রোতে, অনুভূতির নৌকা।
নিরেট পাথর হয়ে তাই ডুবেছ অসাড়তায়,
শুকিয়ে মরেছে কবেই সবুজ ভাবনার ঘাস, জানেনি কেউ সেই আবেগের অকাল মৃত্যু।
প্রেম খুঁজে গেছো সাজানো বাগানে,
বুঝোনি শুদ্ধ কবিতা কিম্বা বেপরোয়া কবির সহজ শব্দে লুকোনো গভীর দীর্ঘশ্বাস,
প্রেমকামনাকে কাম ভেবে খুঁজে পাওনি সে চিঠি, যা পড়ার আগেই হারিয়েছে শূন্যতায়।
তাই চিরন্তন বিরহ কে করেছ কটাক্ষ।
কি চাও তুমি তবে? কেমন কবিতা তোমার চাই?
কবিতা চাওনি তুমি, অন্তত যে কবির ভাব কে হীন করেছ,
কিম্বা কপালে সেঁটেছ কুম্ভিলকটার কলঙ্ক অনায়াসেই।
কার ছুতোতে! তবে বলো কোন কবিকে ভালোবেসেছো? কথা বলেছো কার সাথে, মাঝরাতে আনমনে?
এসব কিছুই করোনি তুমি, রুমির বইয়ের সব পাতায় নেই আজ তোমার আঙ্গুলের ছাপ,
বর্ষার গান গুলো আটকা থেকে গেলো শুষ্ক পাতায়,
অভিমানী শিল্পীর অকাল প্রয়াণের হেতু তবে আজ থেকে যাক অজানা।
তবে! তবে আজ কি পড়বে?
নিজের লিখা, নিজের স্তুতি পত্রখানাই পড়ো!

সময় অসময় [Bengali Poetry]

চিরন্তন ভ্রান্তি

বাতাসে ঘুরপাক খাওয়া ধূলিকণা হঠাৎ এসে প্রশ্ন করলো, পুরোনো সময় গুলো ফিরে পেলে কি করতে?
কেউ বললোঃ ভুল গুলো শুধরে নিতাম।
কেউ বললোঃ আবার নতুন শুরু করতাম।
কেউ বললোঃ নিজেকে অন্যভাবে তৈরি করতাম।

আমি শুনি, বাতাস অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।
হাসির দমকে, আমার বুকে এসে জমা হয় এক রাশ শীতল বাতাস নিম্নচাপে,
তবু ঝড় নয়,
অজস্র মায়াবী বাতাসের রাশি তাদের সত্ত্বা নিয়ে এসে পড়ে একসাথে।

যেমনটা বাস স্টপে উঠে পড়ে একদল মানুষ।
কারো গন্তব্য কেউই জানে না, আর জানারই বা কি আছে!
একরাশ মায়া নিয়ে যেন বাসটা ছুটে চলে, নিজের মতো কোনো চালক ছাড়াই।
কেউ বুঝতে পারে না।
কোন এক বিকেলে যেমন রোদ তার সকল মায়া, মৃত্তিকাতে ঢেলে দিয়ে চায়।
মৃত্তিকা জানতেও পারে না।
আমার ইচ্ছে করে বুকের ভেতর বাতাসের রাশিগুলো স্পর্শ করি,
হাত বুলিয়ে স্পর্শ করি, কানে কানে শিখিয়ে দেই,
পুরোনো সময়গুলোকে– বলে এসোঃ “বদল বলে কিছুই নেই,
এটা শুধুই আপেক্ষিকতা, স্বর্গের মায়ার মতো অলীক।
পাবার মতো কখনোই কিছু নেই, সবই আছে হাতের মুঠোয়, সঠিক।
ছুঁয়ো তবু ধরো না, হারিয়ে যাবে নিজেই।
কোন কিছুরই শুরু নেই, শুরু শুধুই মরীচিকা, সব কিছুর শেষ আছে।
তাই শুরু করার কথা ভেবো না, কখনোই শুরু করা যায় না।
তাই প্রস্তুতি; আজ অকারণ প্রয়াস।“

যদি সুযোগ পেতাম,
শুধু কানে কানে, পুরোনো সময়কে একবার বলে আসতামঃ “তোমরাই সেরা।“
বলে আসতামঃ
“সূর্য কোনদিনই ডোবেনি, সে তোমাদের ভ্রান্তি,
সূর্য ডোবেনি, সে তোমাদের একান্ত ক্লান্তি।
সূর্য একবারই জ্বলেছে,
সে ডোবে না,
সূর্যাস্ত;– আসলে দেখার ভুল।“

সময়ের খেলা – আদি বা ভবিতব্য

বড়ই অদ্ভুত সময় বয়ে চলে,
যখন হরিৎ সর্বত্রই, যেমন এই বানর শিশু ছিল, যেমন ছিলো সমস্ত পুষ্প-দল;-
যেন আদি মানবেরা তাদের গন্ধ ব্যাপিত করে চলছে সেই অনাদিকাল হতে।
সে গন্ধ আজ পার হয়ে এসেছে এতোটা দূর!
অনাদি কালের আলোক রশ্মি আজো রয়েছে পথে,
আচম্বিতে যদি দেখা হয়ে যায়, একই ঘটনার চক্রে!
সময়ের রঙ যখন যেমন, কি আসে যায় তাতে,
নামুক রাত, আলিঙ্গনে হই কালো, সে বয়ে যাবে,
আমি রয়ে যাবে এই বর্তমানে,
পরতের পর পরত পড়ে, বর্তমানের স্তূপ-
আগামী সাজায় তাকে, আর অতীতের বহুরূপ।
অপার্থিবতা এসে ধরা দেয় পার্থিবতার ভিড়ে,-
নাকি পার্থিবতার আশ্রয় এই অপার্থিব জগতে!

সময়ের খেলা – বহমান

তবুও সকাল আসবে, রাত্রির তাড়নায়,
তবু্ও বাসনা রূপ নেবে অপ্রাপ্তির কামনায়।
সীমানা এখানেই শেষ, কাজগুলো দাঁড়ি টানে যেখানে,
ক্লান্তি জমা হয়, নরম বালিশে, যন্ত্রণার মোহর হাসে যক্ষের গুপ্তধনে।
কমে যায় সময়, কমে যায় প্রাণ,
অসময় উঁকি দেয়, ভুলে যায় গান।
রাত্রি নামে, সারাদিনের উন্মাদনায়,
আবারো জোনাকিরা আলো জ্বালে, ভোর আসে।

অন্ধকারে আলোর মায়া

কোন প্রাসাদে আজো শেষ মশালের আলোর আবছায়ার নীচে হচ্ছে কি একই ইতিহাস রচনা?
শুধু সেই একই রাজাগন বারবার? যাদের শিরস্ত্রাণ গুলো শুধু আলাদা! এর চেয়ে ভালো ছিলো ফকিরের গ্রাম, যেখানে কারো নেই কোন রুজি; তাই নেই খাজনারও খরচা। বহু অন্তরালের মায়াজালগুলোর উপহাসের হাসি তাই ঘুরে ফিরে প্রাসাদের ঘরে ঘরে।যেখানে ‘চিরন্তন’ ছিলো অর্বাচীন বাউণ্ডুলের মতো তাই কখনো স্তম্ভও মিলেছে ধুলোয়, আবার জমেছে ধুলো কখন মনের কোনে তাই শেষমেশ দেউলিয়া হয়ে অসহায় হয়ে চায় ফকিরের পানে! তবু মশালের আলো, দামী রেশমের টুপি, অথবা পরিশীলিত অভিজাত হয়তো ঝলমলে হয়েছিলো চাঁদের আলোয়, সেখানে ফকিরের মাঠগুলো ছিলো সবুজ অসংখ্য নক্ষত্রের আলোয়, যেথায় কক্ষ কক্ষান্তরের সীমা নেই, সীমা নেই হারাবার। কোন এক ক্লান্ত শহরের দূষিত লেকের চাঁদের আলোয়- ছায়া পড়া উঁচু অট্টালিকার দল যেন হয়ে যায় বিদ্রূপের বিষয়বস্তু!

তবু একদল হতচ্ছাড়া দুর্গন্ধ নাকে মেখে আজো খুঁজে ফেরে নিসর্গ, তবু কেউ পড়ে যায় নিজের ছায়ার প্রতি ঘেন্নার মায়ায়!

সবুজ প্রতীক্ষা

স্বপ্নগুলো যেন খুঁজে পেতে চায় আস্তানা, যেমন ভাবে একটা চিল খোঁজে, প্যাঁচা খোঁজে নির্বিঘ্নে আশ্রয়।

সারারাতের পচা গলার পরিশ্রমের পর চায় একটা স্নিগ্ধ ঘুমের সারাদিন।
যেমনটা আছে আমার মহামারী সর্বত্রই, সর্বাঙ্গ জুড়ে সংক্রমণ অর্বাচীন!

দেহখানাও বুঝি খুঁজে পেতে চায় সবুজ সতেজ প্রান্তটুকু, যদিও সবুজ জানে কতটা কঠিন টিকে থাকা।
শহুরে প্লেগের বিস্তারণে ভেঙ্গে পড়েছে সমস্ত প্রতিরোধ, বড় সংকুল হয়েছে আজ আজ টিকে থাকা।
কেবলই কৃত্রিম যন্ত্রের সাথে শুয়ে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের প্রতীক্ষা অন্তিম সময়ের।
অথবা কেই বা জানে কখন যেন টিপ্পনী কেটে পার হয়ে যাওয়া হয়েছে সেই মুহূর্তের।

এখন সবুজ শুধু শোভা পাক, করুণা সম্বল করে একচিলতে হার্বেরিয়ামে;
কেন না প্রাণ আটকে গেছে আজ লুকোনো ফসিলে অথবা কাচ ঘেরা মিউজিয়ামে।
আগ্রাসী দেয়াল বিস্তার চালায় আজ লোভের ফুঁৎকারে,
তবুও সবুজ লুকিয়ে খুঁজে চলে কিছু আশ্রয় অগোচরে।

প্রজাপতির ডানা, শুঁড়, দুই পা মেখে চলতে চায় আজো পরাগ;
দুষ্টু ছেলের দল তবু মেখে যেতে চায় কাদামাটি পানি ও অনুরাগ।
এখনো কি এই ঘুমের শহরে পেঁচা, অথবা রাতচরা সেজে ঘুরে বেড়ায় জীবনানন্দের ভুত?
বারংবার জমে যায় সেই একই প্রশ্নঃ কোনটা ছিলো জেগে যাওয়া আর কোনটা ছিলো ঘুম?

অবাধ্য হিসেবগুলো পড়ে থাক সাজানো সংসারে, পরিপাটি খাতার সূক্ষ্ম পাতায়।
আজ আন্দোলন শুরু হোক প্রজাপতি দলের প্রতিটি পাড়ায়, প্রতিটি রাস্তায় রাস্তায়।
প্রাণান্ত সংসারে এখন স্বপ্নেরা নিষিদ্ধ, সাজানো কপট মোহের প্রাসাদের পরিসীমায়।
পাষাণের পুরীতে তবুও স্বপ্নের কুসুম ঘুমায় হয়তো এখনো কোন প্রজাপতির প্রতীক্ষায়।

কথোপকথন (সক্রেটিসের প্রশ্ন ও দিয়েতিমার উত্তর) [Bengali Poetry]

: তবে কি ভালোবাসাই প্রথম ঈশ্বর? সুন্দর সবকিছুর স্রষ্টা?
: না ভালোবাসা তো ঈশ্বর নন।
: তবে যে বলো সুন্দর যা কিছু ভালোবাসার জন্যই সৃষ্টি?
: ভালোবাসা তো স্রষ্টা নন, ভালোবাসা যে সুন্দরকেই খুঁজে তাও তো নয়। তুমি তো সেটাই খুঁজো যা তোমার নেই।
: তবে কি ভালোবাসা কুশ্রী?
: সেটা তো অবান্তর।
: তবে?
: জানতে চাও?
: নিশ্চয়ই
: তবে শোন তোমার জানতে চাওয়াটিই হলো, তোমার জানা আর না জানার মধ্যবর্তী অবস্থা। যেমন ধরা যাক, না জানা মানেই যেমন নিরক্ষরতা নয়, আবার জানতে পারাও যে কাউকে সর্বজ্ঞানী করেছে তা জানা নেই।
: তবে এর সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক কি?
: হ্যাঁ আছে।
– ভালোবাসা জানা বা না জানার মধ্যবর্তী অবস্থান।
– ভালোবাসা একইসাথে দরিদ্র ও ধনী।
– ভালোবাসা একইসাথে বিনীত ও উদ্ধত।
– ভালোবাসা যা ধারণ করে তা হলো বারবার পরাজয়কে মেনে নেয়া, যা আর কেউ করেনি।
: আমি কিছুই বুঝিনি।
: ওই মহাবিশ্বের গ্রহ তারা একে অন্যের সাথে যেমন সংযুক্ত আবার মিলে যায়না।
: তবুও কিছু বুঝিনি!
: এবার তোমার প্রথম কথায় আসি, তুমি বলেছিলেঃ ভালোবাসা প্রথম ঈশ্বর… সে প্রসঙ্গেই বলছিঃ
না সে ঈশ্বর নন। ঈশ্বরের সৃষ্ট অনেকগুলো মর্মের অন্যতম এই ভালোবাসা।
: মর্ম?
: হ্যাঁ মর্ম যা দিয়ে আমাদের সকলের সাথে তিনি কথা বলেন।
: ভালোবাসা একই সাথে সুন্দর আবার সুন্দর নয়, আবার সুন্দর নয় মানেই নয় যে সে অসুন্দর।
ভালোবাসা শুয়ে থাকে মেঝেতে, ছেড়া কাঁথায়, চাইলেও সে পালংকে আসে না।
ভালোবাসার ঝুলিতে শুধুই হারের পুরষ্কার, তবু সে অহংকারী, কেননা সকল হারই তার একান্ত বিজয়।
ধার ধারে না সে সুন্দর বা অসুন্দরের, কেননা এ মর্ম জন্ম দেয় প্রতিটি উপলব্ধি। একে বাঁধা যায়নি কোন দিনে, রাখা যায়নি কোন পাত্রে, সে এমন একজন যে ধার ধারেনি কারো জানার বা না জানার, সে সংজ্ঞা নিরপেক্ষ, কেন না সে চির প্রাসঙ্গিক।
সে অমর নয় আবার নশ্বরও নেয়, বারংবার সে জন্ম নেয় তোমার আমার মর্মের ভিতর দিয়ে।

পুনরুজ্জীবন [Bengali Poetry]

আবার জেগে উঠবো বলে বিদায় নিচ্ছি, ঘাসের কোণে আজো শিশির জমে,
নিঃসঙ্গ দামা ঘুরে ফেরে পতঙ্গের খোজে, স্তব্ধতা আরো বাড়ে চোখ গেলো ডাকে।
এই যে নিস্তব্ধতার আয়োজন; আবার জন্ম নেবো বলে-
কুমের রঙ এর মতো লাল অস্তরাগ আর হবেনা ক্যাম্পের আগুন।
ঝলসানো হরিণ গুলো ঘুরবে ফিরবে সর্বত্র।
জমা হয়ে থাক অস্তরাগ, জমে থাক অনুরাগের মোম, আর চির ফাগুন।

কবিতার খাতা থেকে ট্রাম লাইন পর্যন্ত যে লাল রেখা কবি এঁকেছেন, সেখান থেকে ধার করে এনেছি এ লাল রঙ।
হারানো নিশানের লাল রঙ আজো উপহাস করে চলেছে যে নক্ষত্রদের, তারা আজ আর কালো আকাশে জ্বলজ্বল করবে না,
সার্বজনীন লোহিত আকাশ আবার আলিঙ্গন করবে স্বপ্নগুলোকে, লালে এসে থামুক সকল মিশ্রণ, শেষ রঙ।
কোন পাহারাদার নেই এখানে, নেই কোন সম্ভাবনা স্বপ্নের মাঝখানে ঘুম ভেঙ্গে যাবার।
রূপগুলো থেকে যাবে একই রকম, একই লাল গালিচা, স্বাধীন বাগান,
পোষা পায়রার বদলে মুক্ত হরিয়াল।

কপট চাঁদ হয়ে যাক দাস!
এরকম কিছুর জন্যেই শিকারি ঘুম একদিন আর ভাঙবে না,
এরকম কিছুর জন্যেই থাকবেনা আর পাপ পুণ্যের সংজ্ঞা।
মিথ্যে কথার বুলি আর শিকারির গুলিগুলো অর্জুনের বীজ হয়ে ফাটুক সশব্দে।
স্বপ্নের কোন মৃত্যু থাকবেনা, থাকবেনা কোন নিদ্রার প্রয়োজন, থাকবেনা তাই বিনিদ্র ক্লান্তি।
আবার ফিরে আসবো তাই থাকবেনা কোন গণ্ডি,
বদ্ধ চৌকাঠ আর আপোষ গুলো থাকবে বন্দী।
মৃত্যুগুলো হয়ে যাক জেগে ওঠার স্মৃতি।

কবিতা ও কবি [Bengali Poetry]

বহু আগেই ভেবেছিলাম কবিতা-কে ভুলে যাবো।
কেননা কবিতা লিখা মানেই বিক্ষিপ্ততায় হারিয়ে যাওয়া।
কবিতা মানেই টুকরো টুকরো চিত্র, ঘটনা সংলাপ, যা মনোযোগ নিয়ে যাবে অন্যত্র।
কবিতা মানেই অহেতুক অচেনা কিছুর সাথে বিনা সংলাপে বন্ধুত্ব!
কবিতা মানেই কি তবে অপ্রাসঙ্গিক কিছু প্রাসঙ্গিকতাকে সামনে নিয়ে আসা!
কবিতা মানেই অহেতুক ঝামেলায় জড়ানো, আর গায়ে পড়ে বাধানো ঝগড়া।
কেননা শব্দেরা মুক্তি পেতে চায় কবিতার জানালা গলে।
বহুবার ভেবেছি এবার থেকে একটু পরিপাটি হবো।
তবু শত প্রতিজ্ঞার পরও- হয়নি আপোষে মেনে নেয়া।
কবিতা লিখা মানেই বুকের আঙিনায় এক-বুক অস্থিরতার বাস।
কবিতা লিখা মানেই, মনের অঙ্গে-প্রত্যঙ্গে একরাশ অসুখের সর্বনাশ।
সর্বত্র প্রদাহের প্রশ্রয়, যন্ত্রণার স্বৈরাচার ছাড়া কবিতার কোন বীজ ই যখন উপ্ত হয়না, তখন কবিতাকে ছুড়ে ফেলে দিতে চেয়েছি বহুবার!
তবু তাড়না টেনে আনে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পোকামাকড়, গুছিয়ে রাখা যায় না কিছুই, সাজিয়ে বলা হয় না কোন লাইন।
কবিতা কি তবে কবির আত্মপ্রকাশ?
অসম্ভব! কেননা কবিতার নিকট কবি শব্দটাই বড় অর্থহীন আজ।
খুব প্রিয় বইটির মলাটও ছিঁড়ে যায়, পুনঃ পুনঃ ব্যবহারে।
ক্ষতবিক্ষত হয়, পাঠকের এঁকে যাওয়া বিরাম চিহ্নে।
তেমনি কবিতা নয় কারো বহিঃপ্রকাশ, কবিই কবিতার বহিঃপ্রকাশ!
কবিতাকে তাই ছুড়ে ফেলেছি বহুবার! তবু টুকরো টুকরো শব্দ বারংবার কীটের মতো অধিগ্রহণ করেছে!
সাজানো কথাটিকে গুছিয়ে বলতে দেয় নি এই কবিতা! বারংবার আঁক টানা অবয়বে ঢেলে দিয়েছে দোয়াতের কালি!
বারংবার সাজানো শব্দ গুলো হয়ে গিয়েছে হৃদয়ের গভীরে লুকোনো অনুভূতিগুলোর নির্লজ্জ বিলাপ!
বহু কিছুই বাদ দিয়ে হয়তো সাজানো যেতো সবকিছুই, আর সবার মতো!
তবুও শব্দের দলগুলো বরাবরই হতচ্ছাড়াদের মতো, এক দমকেই সবকিছু পালটে দিতে পারে সব!
হোক আজ সব ওলট পালট, চায়ের কাপে ভুল করে ঢেলে দেয়া যাক জল, অথবা বে-খেয়ালে উল্টো জামা পরে ঘুরে বেড়ানো যাক সমস্ত শহর!
কেউ হয়তো চোখ ছানাবড়া করে বলে উঠবেঃ একি! আপনার জামা!
খুব নির্লিপ্ত ভাবেই উত্তর দেয়া যাবে- ‘ও…’
কেননা কেউ জানেনি, শুধু আমি জেনেছি উলটো জামার পকেটে সুতো কেটে চলেছে তখনো কিছু লাইন!

দিশেহারা শব্দের দল [Bengali Poetry]

আঁকাবাঁকা বুনো পথটার বাকে আশ্রয় খুঁজেছিলো কিছু দিশেহারা শব্দ, খুব শক্ত করে বসানোর পরও লাগেনা যা-
পেছনে পড়ে থাকা চেনা কিছু গুচ্ছ তুলো বার বার ওড়ে, সারাদিন ধরে।
অথবা সামনের কিছু গুঞ্জনের দল, শব্দ পাওয়া যায় শুধু-
বোঝা যায় না, দেখা যায়না।
তবু কিছু কৌতূহলী খুঁজে ফিরবে হয়তোবা মানে।
হয়তো খুঁজে পাবে কিছু জীবনের গল্প, চাঁদ দেখার গল্প; আর কিছুটা পরেই।
তবু শব্দগুলো থেকে যায় দিশেহারা-
একইভাবে বারংবার।
হয়তোবা কোন বাঁকেই নিছকই কোন বন বেড়াল, শিকার থেকে মুখ তুলে তাকাবে আচম্বিতেই।
হয়তো কোন এক মাইক্রো সেকেন্ডেও পার হয়ে যাবে কিছু কাল।
হয়তোবা ঠিক তখনই কোন আলসে গুবরে পার হচ্ছিল ঘাস।
এমনি এক ছবি কখনো বা ভাসে, অন্য কারো সামনে, অথবা শুধুই এলোমেলো তুলোর টুকরো।
তবু এই একই ছবি আবারো অন্য কারো সামনে।
তাতেই কি? পথের বাক সেই একই রকম গুহার মতোই।
সেই শব্দগুলো ঠিক জ্বেলেছিলো তবু কিছু অদৃশ্য আলো।

শেষের আগে [Bengali Poetry]

অশরীরি অনুভূতিগুলো বাস্তব হয়ে আসে,
শুধু বাস্তবের চরিত্রগুলো আসলে অস্তিত্বহীন।
বাতাসে ঘুরপাক খায় অদৃশ্য কণা, মিশে থাকে অজস্র ধুলো, স্বাধীন পরাগের সাথে, চিত্ত হীন।

লিখে রাখে অসংখ্য অস্তিত্ব, মহাবিশ্বের, অতিপারমাণবিক বর্ণে, শব্দে।
ছন্দহীন তবুও সত্যবদ্ধ আবেগে।

আনমনে তবু কেন খুঁজে ফেরা অপাংক্তেয় উত্তর?
অশরীরি সংসার, কাল্পনিক অস্তিত্ব গ্রাস করে বারংবার।

এক একটা করে চরিত্রের মৃত্যু।
খুব দুপুরে প্রবল রোদ বলে যায়, আর একবার, শুধু আর একবার, শুষ্ক ঠোঁটে তবু শক্তি খুঁজে নাও আজ,
এখানে জিততেই হবে, তাই, আরেকবার,

আরেকবার দেখো খুঁজে পাও কিনা পুরোনো তাকে রাখা ভাজ করা চিঠি।
অথবা সেই পুরোনো শার্ট, লেগে আছে যাতে অজস্র মহাজাগতিক কণা।

বিচ্ছিন্নতার আশ্রয় [Bengali Poetry]

জেগে ওঠা মানেই যেন নিজেকে সবকিছু থেকে আলাদা করে ফেলা।
যেমনটা সূর্য প্রতিটি সকালেই নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে জাগে রক্তিম আভা নিয়ে।
মহাবিশ্বে ফিরে যাবার বেলার সেই আভা আবার মনে করিয়ে দেয়, সেই একই কথাঃ
জেগে ওঠা মানেই যেন নিজেকে সবকিছু থেকে আলাদা করে ফেলা।
প্রতিটি বিচ্ছিন্নতায় জড়িয়ে থাকে, নিজেকে ফিরে পাবার পূর্ণতা।
প্রতিটি বিচ্ছিন্নতায় জড়িয়ে থাকে, একরাশ নিরিবিচ্ছিন্ন অনুভূতি।
প্রতিটি বিচ্ছিন্নতা তাই এনে দেয় সম্যক ভাব, আদিগন্ত প্রশান্তি,
যেমনটা প্রশান্তভাবে খেয়ালী সাগর মগ্ন থাকে তার ক্রিয়ায়,
কখনো গম্ভীর অসীম নীলে, কখনো উন্মত্ত প্রবল ঝঞ্জায়।
প্রতিটি বিষন্নতা তাই বীজ ধারণ করে নিবিড় সুখের,
যেমন করে প্রতিটি প্রস্থান এনে দেয় নৈকট্য,
যেমন করে প্রতিটি বিস্মৃতি স্থায়ী করে এক একটি স্মৃতি।
ঝলমলে আলো তাই আজ এনে দেয় প্রবল অসুখ।
অট্টহাসির শব্দ যখন হৃদয়কে আবৃত করে বিষাদের চাদরে,
বিচ্ছিন্নতার ক্ষুদে ঘর তাই সাজানো থাকুক আপন খেয়ালে।

শরতের শশী [Bengali Poetry]

আবারো একটি সন্ধ্যা বার্তা নিয়ে আসে সারাদিনের দুর্ঘটনার, অথবা যুদ্ধের, অথবা হয়তো কিছু সমৃদ্ধির।
সবগুলোর যোগফল থেকে গড় করলে যেন একটা থমথমে ভঙ্গি নিয়ে এই চাঁদ সমস্ত দিনের গ্লানি মুখে মেখে।
হে সূর্য কর্তা সন্তানেরা স্নেহ চায়, তবু কেন ক্ষুব্ধ বেদনায়, ফিরে চাও আরেকবার, ফিরে চাই চাঁদের মোহনীয় রূপ আমার বাগানে জ্বলে চলবে ল্যাম্পপোস্টের মতো।

পার হয়ে গেছে সে সীমান্ত বহুবার,
বহুবার সকলের অলক্ষ্যে, পেরিয়েছে কাঁটাতার।
কেউ দেখেনি, জেনেছে শুধু তার ঠিকানা,
অকপটে সে, তবুও অলক্ষ্যে, সকলের অজানা।
কেউ নেয়নি খোজ একটুকরো কাগজের, একখণ্ড অনুমতি,
সীমারেখা তবুও অমোঘ, যেমন সংগমস্থলে আলাদা দুই নদী।

অভিসার নিরন্তর [Bengali Poetry]

তবুও বয়ে চলে স্রোত ক্রমাগত,
উড়ে চলে যেমন মেঘ অবিরত,
এপারের উষ্ণ বাতাস,
ওপারে পানি হয়ে ঝরে অবিরত,
সংকেত চলে যায়, আনমনে।

করে বাস নিয়মিত, একেলা ঘরে,
নাকি সবখানে, ময়দানে, মাঠে,
বাজারে, ঘাটে, একেলা পথে,
কেউ দেখেনি তাকে, রয়েছে নিশ্চুপে।
নিশ্চুপে আশ্রয়, নিশ্চুপে বাস,
নিশ্চুপে চেপে বসে, নিশ্চুপ থেকে।

এক আকাশ থেকে মেঘ চলে গেছে কতবার আরেক আকাশে, কেউ জানেনি।
আরেক আকাশ থেকে ঝরে গেছে কত, বারিধারায় তবু কারো মাটি ভেজেনি।
সব কিছুই বয়ে যায়, বয়ে যেতে হয়, থাকুক যতই কপট সীমানা,
বাহ্যিক রূপ নিয়ে, দাড়িয়ে, করতে চুরি, বারংবার, একই না বলা কথা।

বিহ্বলতা বার বার কেড়ে নিক সামর্থ্য,
এ একই রকম তীব্রতার চোম্বক স্পর্শে,
চলে যাক সে, পড়ে থাকবে পথ দুর্বোধ্য।

ভেসে আসা বাতাস বলে কানে কানে,পিছনে তাকিও না পথিক, কখনো হুতাশে,
আমার এলোমেলো ভুল বাক্য, অস্থির শরীর, ঘর্মাক্ত করতল কি বলেনি তোমাকে,
নিঃশব্দে, নিরাকারে, বহুদূরে, বহুদূরে
আমি আছি! আমি আছি! আমি আছি, তোমার পাশে।

নিসর্গে একদিন [Bengali Poetry]

অনেক পরিকল্পনা ছিলো, ছিলো অনেক জল্পনা-কল্পনা।
কথা ছিলো বন্ধুর সাথে একদিন
হারিয়ে যাবো সারাদিন, নাম না-জানা কোথাও।
যেখান থেকে ফিরে আসার পথ বার করা মুশকিল হয়ে যাবে।
অথবা এমন একস্থানে আটকে পড়া, যেখানে কাউকে প্রশ্ন করেও মিলবে না সদুত্তর।
অথবা দেখা গেলো, বন্ধুর দামী গাড়ির তেল গেছে ফুরিয়ে।
অন্ধকার রাতে, নক্ষত্রের আলোয়, ঝর্ণায় পা ডুবিয়ে কেটে যাবে সমস্ত রাত্রি।
তবু ফেরার কোন তাড়া থাকবেনা, থাকবেনা পিছুটান।

ফিরে যাওয়ার মানে কি?

আবারো একরাশ স্তুপকৃত আবর্জনার সংসারে- নোংরা খোজা?
নাকি আবার গিয়ে কোন লাশকাটা ঘরে শুয়ে শুয়ে অপেক্ষা করা ব্যবচ্ছেদের?
তার চেয়ে এই ঢের ভালো।
এখানেই আটকে থাকি চিরদিন, আমাদের দেহ দিয়ে জন্ম নিবে শৈবাল, ফার্ন, মস। লতানো গাছগুলো ছড়িয়ে দেবে তাদের ডালপালা আমাদের চতুর্দিকে! একরাশ প্রজাপতি খেলা করবে আমাদের চারপাশ।

যদি পথ ভুলে কেউ চলে আসে;
চমকে বলে উঠবে,-
“দ্যাখো, কি সুন্দর সমাধি!”

উপহার [Bengali Poetry]

এমন একটি উপহার কি দিয়ে যেতে পারবো সকলকে, যার পরে থাকবে না আর কোন কলঙ্ক?
কোন গ্লানি কিমবা হতাশা?
এমন কোন উপহার যার পরে আর কেউ ঘেন্না করবেনা আমাকে, মরে যাবার পরেও।
আমরা কতজন জেনেছি, কতজন ঘেন্না করে গেছি কতজনকে?
অরণ্যের মৃগও কখনো ঘেন্না করেনি বাঘকে, একমনকি চোখের সামনে মাকে খেয়ে ফেলতে দেখেও!
অথচ শিকারিগণ ঘেন্না করে চলেছে একে অন্যকে।
হরিণী বধ হয়ে দেয়নি উপহার সন্তানকে তার জীবন, বরং পেতে দিয়েছে তার সমস্তকে বাঘের তৃপ্তির নিকট।
আর বাঘ যদি ঘেন্নাই করতো, তবে এলো কেন তাকে বধ করতে?
শেরও পরম মমতায় তার ছেদন দন্ত ঢুকিয়ে জিভ দিয়ে চেটে খেয়েছে হরিণীর প্রথম রক্তচ্ছটা।
এও এক অনন্য উপহার, তবু হায় শিকারিরা ঘেন্না করি শিকারিদের।
তবে একটা উপহার হতে চাই, আর নয় শিকারির রাত্রি জাগরণের উৎকন্ঠা।
হোক একরাশ নিশ্চিত ঘুম উপহারের।

মোঃ ওয়াসিউর রহমান | Md. Wasiur Rahman

New Bengali Poetry 2023 | গোবিন্দ মোদক | কবিতাগুচ্ছ

New Bengali Article 2023 | হুগলী জেল ও কাজী নজরুল ইসলাম | প্রবন্ধ ২০২৩

New Bengali Novel 2023 | অকপটে অগ্রজকে | অতনু দাশ গুপ্ত

New Travel Story 2023 | লাচুং-নাথালু’র সীমান্ত ছুঁয়ে | জয়ন্ত কুমার সরকার

bengali poetry | bengali poetry books | bengali poetry books pdf | bengali poetry on love | bangla kobita | poetry collection books | poetry collections for beginners | poetry collection online | poetry collection in urdu | poetry collection submissions | poetry collection clothing | new poetry | new poetry 2022 | new poetry in hindi | new poetry in english | new poetry books | new poetry sad | new poems | new poems in english | new poems in hindi | new poems rilke | new poems in urdu | bangla poets | indian poetry | indian poetry in english | indian poetry in urdu | indian poems | indian poems about life | indian poems about love | indian poems about death | Bangla kobita | Kabitaguccha 2022 | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | power poetry | master class poetry | sweet poems | found poem | poetry night near me | poem about myself | best poets of the 21st century | christian poems | prose poetry | poetry international | poetry pdf | free poem | a poem that tells a story | beat poetry | poetry publishers | poem and poetry | def poetry | heart touching poetry | poetry near me | prose and poetry | poem on women empowerment | identity poem | quotes by famous authors and poets | bee poem | poem about self love | story poem | poetry angel | narrative poetry examples | poetry reading near me | prose poetry examples | elegy poem | poetry reading | the tradition jericho brown | poetry websites | protest poetry | prayer poem | emotional poetry | spoken word bengali poetry | poem about god | percy shelley poems | jane hirshfield | spiritual poems | graveyard poets | chapbook | poems about life | poems to read | found poem examples | poems about life and love | elizabeth bishop poems | poems about women | sister poems that make you cry | famous quotes from literature and poetry | mothers day poems from daughter | poem about community | 8 line poem | inspirational poetry quotes | poem about life journey | positive poems | short poem about life struggles | toni morrison poems | good bones poem | google poem | funny poems for adults | inspirational poems about life | friendship poem in english | paul laurence dunbar poems | freedom poem | sad poetry about life | poems about hope in hard times | allama iqbal best poetry | black female poets | african american poets | poems to comfort the grieving | poems about loneliness | romantic poetry in english | encouraging poems | joy harjo poems | best poetry lines | short poems on values of life | female poets | poetry quotes about life | poem about faith | dark poems | uplifting poems | new poetry | Shabdodweep Founder

Leave a Comment